লালসালু
প্রশ্ন \১\ নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ওয়াসিকা গ্রামের এক দুরন্ত মেয়ে। বন্ধুদের সঙ্গে ছুটোছুটি করা, অবাধে সাঁতার কাটা তার আনন্দের কাজ। তার বাবা অভাবের তাড়নায় ওয়াসিকাকে পাশের গ্রামের এক বুড়ো লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন। লোকটি গ্রামের মাতব্বর। তাকে সবাই একাব্বর মুন্সি বলে ডাকে। মুন্সির কথা গ্রামের সবাই মানলেও চঞ্চল ও স্বাধীনচেতা ওয়াসিকা তার কথা মানে না।
ক. ধলা মিয়া কেমন ধরনের মানুষ ছিল?
খ. ‘সজোরে নড়তে থাকা পাখাটার পানে তাকিয়ে সে মূর্তিবৎ বসে থাকে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. ওয়াসিকা ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের একাব্বর মুন্সি ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ চরিত্রের সামগ্রিক দিক ধারণ করেনি মূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
১ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
ধলা মিয়া নির্বোধ এবং অলস প্রকৃতির মানুষ ছিল।
ছ অনুধাবন
প্রশ্নোক্ত বাক্যটি দ্বারা অপমানিত, ঈর্ষাকাতর মজিদের নির্লিপ্ত ভাবের কথা বোঝানো হয়েছে।
আওয়ালপুর গ্রামে নতুন এক পীরের আবির্ভাব ঘটে। সে গ্রাম তখন লোকে লোকারণ্য। পীরের কীর্তিকলাপ দেখতে মজিদও সেখানে যায় কিন্তু বেঁটে হওয়ার কারণে সে পীরের মুখ দেখতে পায় না, শুধু পাখা নাড়ানো দেখে। সবাই পীরকে নিয়ে ব্যস্ত, মজিদকে কেউ সমীহ করে না; এমনকি তাকে যারা চেনে তারাও না। এতে মজিদ অপমান বোধ করে। ওপরন্তু যখন মতলুব মিয়া পীরের গুণাগুণ ব্যাখ্যা করে এবং তা শুনে লোকজন ডুকরে কেঁদে ওঠে তখন মজিদ সজোরে নড়তে থাকা পাখাটার পানে তাকিয়ে মুর্তিবৎ হয়ে বসে থাকে।
জ প্রয়োগ
ওয়াসিকা লালসালু উপন্যাসের জমিলার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
আমাদের সমাজ নানারকম কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাসের নাগপাশে আবদ্ধ হয়ে অন্ধকারে তলিয়ে যেতে বসেছে। মানুষকে অবমূল্যায়ন, প্রগতিশীল চেতনার অভাব, অশিক্ষা, দারিদ্র্য ইত্যাদি সমাজের এই অসংগতির জন্য দায়ী, যা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
উদ্দীপকে দেখা যায় ওয়াসিকা নামের দুরন্ত এক কিশোরীর স্বপ্নালু জীবনকে দারিদ্র্য এবং নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা কীভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। সে বন্ধুদের সাথে ছোটাছুটি করত, আনন্দফুর্তি করত, অথচ তাকে বিয়ে দেওয়া হয় এক বৃদ্ধের সাথে, যা ওয়াসিকা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। গ্রামের লোকজন তার স্বামীকে মানলেও ওয়াসিকা তার কথা মানে না। এমনই একটি চরিত্র ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলা। সেও দুরন্ত কিশোরী। কিন্তু নারীলোলুপ ভণ্ডপীর মজিদের লালসার শিকার হয়ে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। গ্রামের সবাই মজিদকে ভয়-ভক্তি করলেও জমিলা ভয় পায় না। প্রায়ই তার কথার অবাধ্য হয়। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এখানেই।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
উদ্দীপকের একাব্বর মুন্সি ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ চরিত্রের সামগ্রিক দিক ধারণ করেনি। মন্তব্যটি যথার্থ।
সমাজে এমন কিছু মানুষ বাস করে যারা তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যেকোনো হীন কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না। প্রয়োজনে তারা ধর্মকেও নিজেরে স্বার্থে ব্যবহার করে। এ ধরনের মানুষের উপস্থিতি এবং কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের সমাজ তথা জীবনযাত্রা এতটা পিছিয়ে।
‘লালসালু’ উপন্যাসে ‘মজিদ’ চরিত্রটির মাধ্যমে সমাজের মুখোশধারী এবং ধর্মের নামে ব্যবসা করা মানুষের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মজিদ একজন ভণ্ড, মিথ্যাবাদী, নারীলোলুপ, হীনচেতা মানুষের প্রতিমূর্তি। সে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য পারে না এমন কোনো কাজ নেই। নিজের প্রয়োজনে সে ধর্ম এবং মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে কাজে লাগায়। সে এককথায় বহুমুখী নেতিবাচক চরিত্রের অধিকারী। অপরদিকে উদ্দীপটিতে একাব্বর মুন্সি শুধু মজিদ চরিত্রের নারীর প্রতি দুর্বলতা ও ক্ষমতাশালী ভাবটি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
উদ্দীপকের একাব্বর মুন্সি গ্রামের মাতব্বর। সবাই তাকে মান্য করে। তার কথা অনুযায়ী গ্রামের অনেক কিছু নির্ধারিত হয়। কিন্তু সে বিয়ে করে তার মেয়ের বয়সী ওয়াসিকাকে, যা ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদের জমিলাকে বিয়ে করার বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়। এই একটি বৈশিষ্ট্য ছাড়া একাব্বর মুন্সি চরিত্র উপন্যাসের মজিদ চরিত্রের অন্য কোনো বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেনি। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন\ ২ \ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মফিজ আলীর কোনো স্থির পেশা ছিল না। তার বাবা আরজ আলী ভূমিহীন কৃষক ছিল। ছেলেকে তিনি কলেজে পড়ানোর জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন। ঢাকায় গিয়ে মফিজ পড়ালেখা বাদ দিয়ে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। কথায় কথায় বলে আলাহ বলে কেউ নেই। এক সময় তার বাবা টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। দেখতে দেখতে তার চাকরির বয়সও শেষ হয়ে যায়। তারপর সে ফিরে আসে তার গ্রামে। মফিজ আলীর বর্তমান নাম হযরত শাহ সুফী মফীজ আলী ফরিদপুরী (র)। কামেল পীর হিসেবে তার খ্যাতি এখনও দেশ জোড়া।
ক. সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
খ. ‘তাই তারা ছোটে, ছোটে।’ কেন ছোটে?
গ. উদ্দীপকের মফিজ আলীর সাথে মজিদের তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ চরিত্রের মধ্য দিয়ে কী ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন তা ব্যাখ্যা কর। ১
২
৩
৪
২ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে জন্মগ্রহণ করেন।
ছ অনুধাবন
অভাবের তাড়না থেকে মানুষ ছোটে।
শস্যহীন জনবহুল এলাকা। ঘরে খাবার নেই। ভাগাভাগি, লুটতরাজ আর স্থান বিশেষে খুনখারাবিও চলে। কিন্তু তাতেও কুলায় না। অভাব যেন তাদেরকে ছায়ার মতো সব সময় ঘিরে থাকে, রাহুর মতো তাদেরকে গ্রাস করতে চায়। কিন্তু মানুষ যে ‘অমৃতস্য পুত্রাঃ’ অমৃতের সন্তান, সে যে কোনো কিছুর কাছেই হার মানতে নারাজ। যখন কোনো আশাই অবশিষ্ট নেই তখনও সে আশা করে। সেই আশায় ভর করে শস্যহীন জনপদের মানুষ ছোটে, নিরন্তর ছুটে চলে। সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ এমনই এক ভাগ্যান্বেষণী আশাবাদী মানুষ।
জ প্রয়োগ
উদ্দীপকের মফিজ আলী এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ চরিত্রে মিল ও অমিল দুটি দিকই লক্ষ করা যায়। মিলের মধ্যে দুজনই ধর্মকে পুঁজি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে। দুজনই জানে গ্রামের মানুষ হয় ধর্মান্ধ, নতুনা ধর্মভীরু অথবা ধর্মপ্রাণ কিন্তু ধর্মকে মুক্তদৃষ্টিতে দেখবার মানুষ সেখানে কম। মানুষের মাঝে পাপ ও পরকালের ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে মজিদ ও মফিজ দুজনেই নিজেদের আখের ভালোই গুছিয়ে নিয়েছিল।
উদ্দীপকের মফিজ আলীর সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের অমিলও কম নয়। খুব খেয়াল করলে স্পষ্ট হবে যে মফিজ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ভণ্ড, শঠ, প্রবঞ্চক, প্রতারক। গারো পাহাড়ে মজিদ অনেক কষ্ট করে জীবন অতিবাহিত করেছে। যখন সে আর পারছিল না, তখনই সে ভিন্ন পথ বেছে নেয়Ñআমরা বলতে পারি, ভিন্ন পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। গারো পাহাড়ে যে জীবন ও জীবিকার সাথে মজিদ সংশ্লিষ্ট ছিল, তা যদি সুখদায়ক না হলেও অন্তত সহনীয়ও হতো, তাহলে মজিদ সম্ভবত ভণ্ডামির আশ্রয় নিতো না। জীবন তার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল বলেই সে ভণ্ডামির আশ্রয় নেয়।
উদ্দীপকের মফিজ আপাদমস্তক ভণ্ড, ইতর, শঠ, প্রবঞ্চক। ঢাকায় গিয়ে বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে আঁতেল বনে যাওয়া কৃষকপুত্র মফিজ একদা আলাহ খোদার অস্তিতেই বিশ্বাস করতো না, সেই মফিজই চাকরির বয়স ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে আর কোনো উপায় না দেখে গ্রামে চলে আসে এবং পীর সেজে বসে। নাম বদলে রাখে হযরত শাহ সুফী মফীজ আলী ফরিদপুরী (রঃ)। ভণ্ডামি আর কাকে বলে! ‘লালসালু’র মজিদের প্রতি পাঠকের করুণা জাগলেও জাগতে পারে, কিন্তু উদ্দীপকের মফিজ আলীর প্রতি যে ঘৃণা জাগেÑ এতে কোনো সন্দেহ নেই।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ চরিত্রের মধ্য দিয়ে মানুষের অস্তিত্বের সঙ্কটকে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
অস্তিত্ববাদী কথাশিল্পী হিসেবে বাংলা সাহিত্যে তাঁর আসন অনেক ওপরে। তিনি লক্ষ করেছিলেন, মানুষ অর্থশাসিত সমাজের সৃষ্টি হলেও সে মূলত আবদ্ধ থাকে তার নিজেরই দেয়ালে। অস্তিত্বের জন্যে মানুষ কখনও দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে পড়ে আবার নিজেই জড়িয়ে পড়ে স্বয়ংসৃষ্ট নতুন কোনো দেয়ালে। অস্তিত্ববাদী কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ মজিদ চরিত্রটির ভেতর দিয়ে মানবচরিত্রের চিরন্তন এই বৈশিষ্ট্যের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
মজিদ অভাবগ্রস্ত জনপদের বাসিন্দা। জীবন-জীবিকার তাগিদেই সে একদা ছুটে বের হয়েছিল গারো পাহাড়ের কোনো অঞ্চলে। জীবন সেখানে কঠিন থাকার কারণে সে নাটকীয়ভাবে মহব্বতনগর গ্রামে প্রবেশ করেÑ বলা যায় পালিয়ে চলে আসে। মহব্বতনগরের ধর্মভীরু মানুষদের বশীভূত করে, মোদাচ্ছের পীরের মাজারের আড়ালে সেই বনে যায় সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী; এমনকি গ্রামের মোড়ল খালেক ব্যাপারীও তার করায়ত্ত। মজিদের ঘর-বাড়ি হলো, জমি-জমা হলো, পছন্দমতো বিয়েও করে সে। পার্শ্ববর্তী গ্রাম আওয়ালপুরে আরেক পীর সাহেবের আমদানি ঘটলে সে হটিয়ে দেয়; আধুনিক যুবক আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও সে পণ্ড করে দেয় সুকৌশলে।
বলাবাহুল্য, নিজের অস্তিত্বের সঙ্কটকে অনেক আগেই কাটিয়ে উঠেছিল মজিদ, ভেঙেছিল নিজের দেয়াল কিন্তু সে এবার অন্যের অস্তিত্বের জন্যে হুমকি হয়ে উঠে জমিলাকে বিয়ে করে। এটি মজিদের দ্বিতীয় পর্ব, বলা যায়, নিজেই জড়িয়ে পড়ে স্বয়ংসৃষ্ট দেয়ালে। প্রথম পর্বে যে মজিদ কুশলী সেনাপতি, দ্বিতীয় পর্বে সে মজিদকেই পাওয়া যায় পরাজিত সৈনিকের বেশে। গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজে মানুষের এই রূপ ও রূপান্তর মজিদের মধ্যে বহুকৌণিকভাবে রূপায়িত হয়েছে।
প্রশ্ন\ ৩ \ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
কাশেম মুন্সি মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে যখন চাকরি নিয়েছিল পনেরো বছর আগে, তখনও সে বিয়ে করেনি। ইতোমধ্যে সে বিয়ে করেছে, তিন কন্যা এবং দুটি পুত্রের পিতা হয়েছে কিন্তু বেতন বেড়ে মাত্র দুই হাজার টাকা হয়েছে। সামান্য টাকায় তার সংসার চলে না। কাশেম মুন্সি তাই বাড়তি আয়ের জন্যে গরিব মানুষকে ‘পানিপড়া’ দেয়, যদিও সে জানে এতে কোনো কাজ হয় না এবং এটা অনৈসলামিক কাজ; তবু সে এটা করে। কাজটা করতে তার খারাপ লাগে, তবু সে করে।
ক. মতলুব খাঁ কে?
খ. ‘মজিদ ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। যোগসূত্র হচ্ছে রহিমা।’Ñ কেন?
গ. উদ্দীপকের কাশেম মুন্সি চরিত্রটির সাথে মজিদ চরিত্রের মিল-অমিল কোথায়?
ঘ. ‘লালসালু’ উপন্যাস পাঠ করে মজিদ চরিত্রটি সম্পর্কে তোমার কি ধরনের প্রতিক্রিয়া জেগেছে? ১
২
৩
৪
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
মতলুব খাঁ হচ্ছে ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট।
ছ অনুধাবন
‘মজিদ ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। যোগসূত্র হচ্ছে রহিমা।’Ñ কথাটি দিয়ে মহব্বতনগর গ্রামের নারীসমাজে রহিমার গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।
মজিদ পুরুষ। ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যে পর্দাপ্রথা শরিয়তসম্মত। মজিদ এটি মেনে চলে। মহব্বতনগর গ্রামের এবং আশপাশের গ্রামের মানুষ তার কাছে যখন তখন ছুটে আসতে পারে, জানতে পারে কিন্তু নারীসমাজ মজিদের সামনে চাইলেই ছুটে আসতে পারে না। প্রকৃতিগত কারণেই নারীর আবেগ বেশি এবং তা প্রকাশ করার তাড়নাও প্রবল কিন্তু মহব্বতনগর গ্রামে নারীর আবেগ পরিস্ফুটনের কোনো সরাসরি পথ নেই, মজিদের কাছে পৌঁছাবার সরাসরি পথ নেই, যোগসূত্র হচ্ছে রহিমা। মহব্বতনগর গ্রামে রহিমার কদরও কম নয়। মজিদের স্ত্রী হিসেবে তার গুরুত্ব ও সম্মান সমাজে স্বীকৃত। মজিদ যদি মোদাচ্ছের পীরের মাজারের খাদেম হয়ে থাকে তাহলে রহিমা হচ্ছে তার আদর্শ সেবিকা।
জ প্রয়োগ
উদ্দীপকের কাশেম মুন্সি চরিত্রটির সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ চরিত্রটির মিল এবং অমিল দুটি দিকই লক্ষ করা যাবে।
প্রথমে মিলের দিক আলোচনা করা হবে পরে দৃষ্টিপাত করা হবে অমিলের জায়গায়। মিল এই যে, দুজনই ধর্মকে পুঁজি করে জীবন নির্বাহ করার পথ বেছে নিয়েছে। মজিদ মহব্বতনগর গ্রামের মানুষকে হাতের মুঠোয় বন্দী করেছে ধর্মের দোহাই দিয়ে, তথাকথিত মোদাচ্ছের পীরের মাজার লালসালু-কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছে সমাজের চোখ-কান-মুখ। কাশেম মুন্সিও পানিপড়া দিয়ে তার সাংসারিক ব্যয় নির্বাহ করে। দুজনই ধর্ম ব্যবসায়ী; গ্রামের সহজ সরল মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তারা প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে।
এবার দৃষ্টিপাত করা যাক অমিলের ক্ষেত্রগুলোয়। মজিদ একটা পর্যায় পর্যন্ত কাশেম মুন্সির মতোই গণ্য, যখন সে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে গারো পাহাড় থেকে মহব্বতনগর গ্রামে চলে আসে। কিন্তু গ্রামে সে যখন বাড়াবাড়ি শুরু করে দেয়, তখন সে আর উদ্দীপকের কাশেম মুন্সি এক রকম ধর্ম ব্যবসায়ী থাকে না। কাশেম মুন্সিকে পাঠক মমতা, করুণার চোখে দেখতে পারে আবার নাও দেখতে পারে কিন্তু মজিদকে দেখে আপাদমস্তক ভণ্ড হিসেবেই। কাশেম মুন্সির পানিপড়া দিতে খারাপ লাগে, সে জানে যে এটা অনৈসলামিক কাজ, তবু বেঁচে থাকার তাগিদে তাকে কাজটা করতেই হয়। কিন্তু মজিদের সে প্রয়োজন ছিল না। অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে কাশেম মুন্সি হয়তো সমালোচিত হতে পারে কিন্তু মজিদ অবিসংবাদিতভাবে নীচ, ইতর।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ একজন অস্তিত্ববাদী কথাশিল্পী। মানুষের অস্তিত্বের সঙ্কট এবং তা উত্তীর্ণ হয়ে অন্যকে সঙ্কটে ফেলার যে ধারাবাহিক জৈব প্রবৃত্তি মানুষের মধ্যে প্রবহমান, মজিদ চরিত্রটির মধ্য দিয়ে তিনি তা চমৎকারভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। তাই ‘লালসালু’ উপন্যাসটি পাঠ করার সময় মজিদ চরিত্রটি সম্পর্কে আমার ধারণা এক জায়গায় স্থির থাকে নি বরং তা বারবার বদল হয়েছে।
মজিদ সম্পর্কে আমার চারটি প্রতিক্রিয়া হয়েছে। প্রথম প্রতিক্রিয়াটি হচ্ছে : করুণা। মজিদ যখন গারো পাহাড়ে মানবেতর জীবনযাপন করতো, জীবনের সঙ্গে লড়াই করতে করতে সে যখন পর্যুদস্ত, ক্লান্ত, পরাজিত সৈনিকÑতখন তার জন্যে আমার রীতিমতো করুণা হলো। এটি উপন্যাসের একদম প্রথম পর্যায়।
উপন্যাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে তার প্রতি প্রবল ঘৃণা জাগে যখন সে তার ভণ্ডামি দিয়ে গোটা এলাকা করায়ত্ত করে ফেলে, জমিলার মতো একটি কিশোরী মেয়েকে বিয়ে করে তার ওপর অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। বাঁধভাঙ্গা ঘৃণায় আমি উদ্বেল হই মজিদ নামক এই ধর্ম ব্যবসায়ীর ওপর।
উপন্যাসের শেষে মজিদের প্রতি আমার প্রবল বিতৃষ্ণা জাগে, তার অসহায়তা আমি উপভোগ করি। কিশোরী বধূ জমিলাকে কোনো ভাবেই বাগে আনতে না পেরে রণক্লান্ত, পরাজিত, বিধ্বস্ত মজিদ তার প্রথমা স্ত্রী রহিমাকে যখন বলে, “বিবি কারে বিয়া করলাম? তুমি কী বদদোয়া দিছিলা নি?” তখন আমি রীতিমতো উপভোগ করি এবং আমার আত্মতৃপ্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে ওঠে যখন তার অনুগত প্রথম স্ত্রী রহিমাও তার অবাধ্য হয়ে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে, “ধান দিয়ে কী হইব, মানুষের জান যদি না থাকে? আপনে ওরে নিয়া আসেন ভিতরে।”
প্রশ্ন\ ৪ \ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বিধবা, নিঃসন্তান জয়তুন বেগমের সংসার আর চলছিল না। একদিন মাঝরাতে তিনি চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন এবং তারপর থেকেই তার সব আচরণ অস্বাভাবিক। দয়ারামপুর গ্রামের মানুষ বলাবলি করছে, স্বপ্নে তিনি এক বুজুর্গ ব্যক্তির কামিয়াবি হাসিল করেছেন। সবাই তার কাছে পানিপড়া আনতে যায়। জয়তুন বেগমের আয় রোজগার মাশালা মন্দ নয়।
ক. ‘সালু’ শব্দের অর্থ কী?
খ. হাসুনির মা দ্বিতীয় বিয়ে করতে অনাগ্রহী কেন?
গ. মজিদ এবং উদ্দীপকের জয়তুন বেগমের তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের উলিখিত জয়তুন বেগম চরিত্রটি বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৪ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
‘সালু’ শব্দের অর্থ লাল রঙের কাপড়।
ছ অনুধাবন
হাসুনির মার দ্বিতীয় বিয়েতে অনাগ্রহী থাকার কারণ বিচিত্র। তার দাম্পত্য জীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটি নিশ্চয়ই খুবই তিক্ত ছিলÑ দারিদ্র্যলাঞ্ছিত, সুবিধাবঞ্চিত, অশিক্ষিত সমাজে যেমনটি হয়ে থাকে।
স্বামীর স্ত্রীটিকে একটি প্রয়োজনীয় প্রাণী হিসেবেই ঘরে আসে এবং তাকে দিয়ে ষোল আনা খাটিয়ে নেয়। কাজে কর্মে একটু এদিক সেদিক ঘটলেই অমানুষিক নির্যাতনÑমানসিক তো বটেই, অনেক সময় শারীরিকভাবেও। শ্বশুরবাড়ির মানুষদের সম্পর্কে হাসুনির মায়ের বক্তব্য : “অরা মুনিষ্যি না।” রহিমা যখন তাকে জিজ্ঞাসা করে, সে আবার বিয়ে করবে কিনা, সে তখন বলে, “দিলে চায় না বুবু।” তার বৃদ্ধ বাবা-মা সারাদিন যেভাবে অকথ্য ভাষায় ঝগড়াঝাটি করে, তা-ও হাসুনির মার মনে বিয়ে সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করেছে।
জ প্রয়োগ
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ এবং উদ্দীপকের জয়তুন বেগম চরিত্র দুটির মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করলে আমরা মিল এবং অমিল দুটি দিকই দেখবো। প্রথমে আমরা মিলের দিকে দৃষ্টিপাত করতে চাই, পরে অমিল অংশ আলোকপাত করবো। মিলের কথা যদি বলতে হয়, তাহলে বলতে হবে, দুজনই ধর্ম ব্যবসায়ী। মজিদ এবং জয়তুন বেগমÑ দুজনই অশিক্ষিত মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে। মজিদ আয়ত্তে এনেছে মহব্বতনগর গ্রামের মানুষদের। এই কাজটা সে করেছে সুকৌশলে, ধীরে ধীরে। অপরদিকে জয়তুন বেগম নিয়ন্ত্রণে এনেছে দয়ারামপুর গ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষদের। মিলের মধ্যে দুজনই ধর্মজীবী এবং তাদের উত্থান হয়েছে নাটকীয়ভাবে।
অমিলের কথা আসলে প্রথমেই যে দিকটি স্পষ্ট হয়ে উঠে, সেটা হলো মজিদের ক্রমবর্ধমান লোলুপতার পাশে জয়তুন বেগমের অসহায় রূপটি। মজিদ স্পষ্টতই নিপীড়ক, শঠ, প্রবঞ্চক, প্রতারক, জোচ্চর, বাটপার, লম্পট, উদ্দেশ্যবাজ, ক্র‚র, কুটিল, হিংস্রÑ এবং সেই সঙ্গে ধর্ম ব্যবসায়ী। কিন্তু জয়তুন কেবলই ধর্ম ব্যবসায়ীÑ আর কিছু নয়। মহব্বতনগর গ্রামে থাকা খাওয়ার পাকা বন্দোবস্ত হয়ে যাওয়ার পরেও মজিদ ক্ষান্ত হয়নি বরং তার ব্যবসায় আরও বৃদ্ধি কীভাবে করা যায়, সেটা নিয়ে প্রতিনিয়ত চিন্তাভাবনা করেছে, প্রতিদ্ব›িদ্বদের দমন করেছে।
আওয়ালপুরের পীর, আক্কাস তার মিত্রপক্ষ ছিল না সে লড়াই করেছে দুর্দান্তভাবে যদিও শেষে জমিলা ও রহিমার কাছেই তার শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে। উদ্দীপকের জয়তুন বেগমের কোনো প্রতিপক্ষ দেখানো হয়নি এবং কাজটি নিতান্ত জীবন বাঁচানোর জন্যে করেছিলেন বলে তিনি পাঠকের সহানুভূতি পান মজিদ তা থেকে বঞ্চিত।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
মানুষ সমাজের সৃষ্টি। আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অভিঘাতে এক একজন মানুষ গড়ে ওঠে এক ভাবে। উদ্দীপকের জয়তুন বেগমও আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অভিঘাতে গড়ে ওঠে একটি জীবন্ত চরিত্র। ব্যাপারটি কিভাবে ঘটে, সেটি একটু বিশ্লেষণ করা যাক।
প্রথমত, জয়তুন বেগম যে এমন হলেন, তার জন্যে দায়ী তার অর্থব্যবস্থা। লক্ষণীয়, উদ্দীপকে বলা হয়েছে, তিনি বিধবা ও নিঃসন্তান। যদি তার স্বামী কিংবা সন্তান থাকতো, তাহলে বৃদ্ধকালে তাকে এই পানিপড়া ব্যবসায় নিশ্চয় নামতে হতো না। তিনি আর্থিক দিক থেকে অসহায়। তার আর কোনো উপায় ছিল না। তিনি যদি ভন্ড হতেন, তাহলে শুরু থেকেই পানিপড়া দিতেন, তা কিন্তু তিনি দেননি। তখনই দিয়েছেন, যখন দেয়ালে তার পিঠ ঠেকে গেছে। সুতরাং, অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত না থাকলে জয়তুন বেগম পানিপড়া দিতেন না।
দ্বিতীয়ত, জয়তুন বেগম যে এমন হলেন, তার জন্যে দায়ী আমাদের সমাজব্যবস্থা। আমাদের বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অনাথ বৃদ্ধা নারীর একা বেঁচে থাকা খুব কষ্ট যদি তার না থাকে স্বামী, না থাকে সন্তান, না থাকে কোনো সম্পদ। গ্রামের মানুষ মুখে মুখেই ‘আহা’, ‘উহু’ করে কিন্তু একজন বৃদ্ধাকে নিজগৃহে ঠাঁই দেয় না। এক্ষেত্রে সেই বিখ্যাত উক্তিটি স্মরণ করতে পারি“জগতে কে কাহার”? আমাদের সমাজব্যবস্থা যদি উন্নত হতো, যদি মানবিক হতো, তাহলে আমার মনে হয় না এই বৃদ্ধা পানিপড়া দেওয়া শুরু করতেন। সমাজই তাকে বাধ্য করেছে।
এবারে আমরা আলোকপাত করতে চাই, একটা দেশের সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা কীভাবে সে দেশের মানুষকে নির্মাণ করে। উদ্দীপকের চরিত্রটির নাম ‘জয়তুন বেগম’। নাম শুনে বোঝা যাচ্ছে তিনি প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা। তিনি থাকেন দয়ারামপুর নামক গ্রামেএ কথাও উলেখ আছে; যে গ্রামের মানুষের চিন্তাজগৎ মূর্ত হয়েছে ‘বুজুর্গ’ ‘কামিয়াবি’; ‘হাসিল’ ইত্যাদি শব্দরাজির আশ্রয়ে এবং যে গ্রামের মানুষ পানিপড়ায় আস্থা রাখে। পানিপড়া সংস্কৃতিতে আস্থা থাকার কারণেই জয়তুন বেগম সৃষ্টি হতে পেরেছেন নতুবা পারতেন না। অন্যভাবে বলতে গেলে বলতে হয়: টাকার অভাব না হলে কিংবা সমাজব্যবস্থা মানবিক হলে অথবা কুসংস্কৃতি না থাকলে উদ্দীপকের জয়তুন বেগম চরিত্রটি কখনই এমন চরিত্রে বাঁক নিতেন না। সুতরাং মানুষ আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক চাপের ফসল।
প্রশ্ন\ ৫\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা ফজিলাতুন নেসা বড্ড ঘুমকাতুরে। নয়টা পাঁচটা অফিস করে বাসায় ফিরলেই তার ঘুম পায়। পনেরো বছর যাবৎ তিনি সংসারের ঘানি টানছেন। স্বামী আবিদুর রহমান এম.এসসি পাস হলেও ঘরে বসে থাকেন। চাকরি নাকি পরের গোলামি। তার কাজ সারাদিন টেলিভিশনে হিন্দি নাচগান দেখা। গতকাল এশার নামাজ না পড়েই ফজিলাতুন নেসা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বলে আবিদুর রহমান তাকে অনেক গালমন্দ করেন। ভদ্রমহিলা সারারাত নফল নামাজ পড়ে পরের দিন অফিসে গেছেন।
ক. মহব্বতনগর গ্রামে মজিদকে সবার আগে কে দেখেছিল?
খ. আমেনা বিবির পা দেখে মজিদের গলার কারুকার্য আরো সূ² হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের ফজিলাতুন নেসার সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের রহিমা চরিত্রটির তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. ঔপন্যাসিক সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসে রহিমা চরিত্রটি কীভাবে উপস্থাপন করেছেন তা বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৫ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
মহব্বত নগর গামে মজিদকে সবার আগে দেখেছিল তাহের।
ছ অনুধাবন
আমেনা বিবি যখন মাজার পাক দেওয়ার জন্যে পালকি থেকে নামে, তখন অসতর্কতাবশত তার পায়ের কিছুটা অংশ উন্মেচিত হয়ে যায়, যা মজিদ দেখে ফেলে।
পায়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক বলেছেন: “সাদা মসৃণ পা, রোদ-পানি বা পথের কাদামাটি যেন কখনো স্পর্শ করেনি।” স্পষ্টতই আমেনা বিবির ফর্সা পা তাকে উত্তেজিত করে তোলে, তার ভেতর নিষিদ্ধ ভাব জাগিয়ে দেয়। এই ভাব অবদমন করার জন্যেই হোক আর খালেক ব্যাপারীর কাছে লুকানোর জন্যেই হোক অথবা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা কাটোনোর জন্যে হোক, সে মিহি সুরে দোয়া-দুরুদ পড়তে শুরু করে, গলার কারুকাজ আরও বাড়িয়ে দেয়। তবে এই আবেগের উৎস যে লিবিডো, এতে কোনো সন্দেহ নেই; কেননা লেখক স্পষ্ট করেই বলেছেন, “সুন্দর পা দেখে øেহ-মমতা ওঠে না এসে, আসে বিষ।”
জ প্রয়োগ
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমা এবং উদ্দীপকের ফজিলাতুন নেসা চরিত্রটির ভেতর মিল এবং অমিল দুটিই রয়েছে।
প্রথমে আমরা মিলের দিকগুলো আলোচনা করতে চাই, পরে আলোকপাত করা হবে অমিলের ক্ষেত্রগুলোয়। মিল এই যে, রহিমা এবং ফজিলাতুন নেসা দুজনই স্বামীর একান্ত অনুগত, নিতান্ত বাধ্যগত। লম্বা চওড়া শরীরের রহিমা তার শক্ত সমর্থ দেহ নিয়েও যেমন পদে পদে বেঁটে, দুর্বল, ক্ষীণস্বাস্থ্য মজিদের আজ্ঞাবহ দাসী; আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ফজিলাতুন নেসা নিজে চাকরি করে স্বামী সংসারের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করার পরেও তেমনই স্বামীর প্রতি বাড়াবাড়ি রকম অনুগত। এটাই তাদের মিল। দুজনের স্বামী অযোগ্য, তবু তারা দুজনই সমর্পিতা।
অমিল হলো, রহিমা অশিক্ষিতা, গ্রামীণ সমাজে বেড়ে উঠা নারী যে কিনা বিনা যুক্তিতেই স্বামীর যে কোনো কথাকে নির্বিচারে মেনে নেয় কিন্তু ফজিলাতুন নেসার ক্ষেত্রে এ কথা খাটে না। সে একজন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা। তার স্বামী এম.এসসি ডিগ্রিধারী হয়েও ঘরে বসে সারাক্ষণ টিভি দেখেন-তাও আবার হিন্দি নাচ-গান। উদ্দীপকে বলা হয়েছে; গতকাল এশার নামাজ না পড়েই ফজিলাতুন নেসা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন………” অর্থাৎ ফজিলাতুন নেসা নিয়মিতই পড়েন, কেবল ওই দিন ক্লান্তিবশত পড়তে পারেন নি- উদ্দীপকের প্রথম বাক্যেই তাকে ‘ঘুমকাতুরে’ বিশেষণ দেওয়া হয়েছে। অথচ এই জন্যে তার হিন্দি নাচ-গান দেখা স্বামী তাকে অনেক গালমন্দ করেন এবং ভদ্রমহিলা তার কোনো প্রতিবাদ না করে সারারাত নফল নামাজ পড়ে পরের দিন অফিসে যান। এটি কী ধরনের পতিভক্তির নমুনা? রহিমা পতিভক্ত কিন্তু এতটা নয়। জমিলাকে মাজারে বেঁধে রেখে আসার ব্যাপারটি সে পছন্দ করেনি। তখন থেকেই তার আনুগত্যে চিড় ধরেছে। মজিদকে সে স্পষ্ট কন্ঠে যখন বলে, “ধান দিয়া কি হইবো, মানুষের জান যদি না থাকে? আপনে ওরে নিয়া আসেন ভিতরে।” তখন আমরা বুঝি এই রহিমা আর আগের রহিমা নেই; এ নতুন রহিমা। ‘লালসালু’র রহিমার প্রতি পাঠকের সহানুভূতি জাগে, আর উদ্দীপকের ফজিলাতুন নেসার প্রতি জাগে বিদ্রূপ।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাসের চরিত্রগুলো স্কেচের মতো করে আঁকা হয়েছে। প্রায় সব চরিত্রই দেশ-কাল-পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাপিত এবং তুলনারহিত সৃষ্টি।
রহিমা সৈয়দ ওয়ালীউলাহর নির্মিত সকল চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। আর্য সমাজে এমন একটি কথা প্রচলিত ছিল যে পাক করলেই কেবল নারী হয়ে জন্ম নিতে হয়। সগদ্বিখ্যাত অনেক নারী ক্ষোভ ও দুঃখের সাথে নারী হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন শিল্পের নানা মাধ্যমে। সেগুলো যে খুব একটা বাড়িয়ে বলা নয়, তার প্রমাণ রহিমা চরিত্রটি। কৃষকায়, রোগা, বয়স্ক, খাটো, ভগ্নস্বাস্থ্য এই লোকটির কাছে রহিমার বাবা-মা নির্দ্বিধায় তাদের মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিল। অথচ তারা জানেই না কে এই মজিদ, কী তার পরিচয়? কোনো ভাবে মেয়েকে বিদায় করা গেছে স্বামী যেমনই হোক, পাত্রস্থ করা গেছে এই হলো বাবা মায়ের চিন্তা। যেমন বাবা-মা, তেমন তাদের সন্তান। রহিমাও তেমনই সমর্পিতা নারী। মজিদ যা বলে, তাই সই। সাত চড়ে তার রা নেই। সুতরাং বলা যায়, রহিমা একজন সনাতন গ্রামীণ বাঙালি নারী।
রহিমার মধ্যে গৃহস্থভাব প্রবল। ঘরের সব কাজকর্ম নিপুণ হাতে সে সামাল দেয়। উদয়াস্ত পরিশ্রম করে সে। রাতের বেলা সে মজিদের শুকনো পা-ও টিপে দেয়। বলা যায়, মজিদকে সুখে-শান্তিতে রাখার জন্যে সম্ভব সবকিছুই সে করেছিল। তার ভেতর সন্তানের জন্য একটা হাহাকার ছিল যেটা সে পূরণ করে নিয়েছিল জমিলাকে দিয়ে। জমিলাকে সে কখনও সতীন হিসেবে দেখেনি, দেখেছে কন্যা হিসেবে।
উপন্যাসের শেষে জমিলার বিদ্রোহী রূপ পাঠককে চমকিত, বিস্মিত, অভিভূত ও মুগ্ধ করে। সব কিছুরই একটা সীমা আছে যা পেরিয়ে গেলে বাঁধ ভেঙে যায়। মজিদ যখন জমিলার ওপর সীমাহীন নির্যাতন শুরু করে, তখন রহিমার এই বিদ্রোহী রূপ আমরা দেখি।
প্রশ্ন\ ৬\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
শামীমা সুলতানা একজন গৃহিণী। তার স্বামী আলমাস আলী কৃষিকাজ করে। এই দম্পতির কোনো সন্তানাদি নেই। বিয়ের বারো বছরের পরেও শামীমা সুলতানার গর্ভে কোনো সন্তানাদি না হওয়ায় আলমাস আলী স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে দ্বিতীয় বিবাহ করে। দ্বিতীয় স্ত্রী কুলসুম একটি পুত্র সন্তান জন্ম দিলে সংসারে অশান্তি দেখা দেয়।
ক. সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র পিতার নাম কী?
খ. মজিদের দ্বিতীয় বিবাহে আগ্রহের কারণ কী?
গ. ‘লালসালু’ উপন্যাসের রহিমা এবং উদ্দীপকের শামীমা সুলতানা চরিত্র দুটির মধ্যে মিল ও অমিল কী?
ঘ. উদ্দীপকের মধ্যে বাঙালি সমাজের কী ধরনের ছাড়াপতা ঘটেছে বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৬ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র পিতার নাম সৈয়দ আহমদউলাহ্।
ছ অনুধাবন
মজিদের দ্বিতীয় বিবাহের আগ্রহের কারণ ছিল অল্পবয়সী কোনো নারীর সঙ্গ লাভ।
মজিদের দ্বিতীয় বিয়ের উদ্দেশ্য মূলত অল্পবয়সী একজন নারীর সঙ্গ লাভের গোপন বাসনা থেকে উৎসারিত যদিও সে তা মুখে স্বীকার করেনি। সে মুখে বলেছে যে রহিমাকে একজন সঙ্গী এনে দেওয়াই তার কাজ। রহিমা নিঃসন্তান। অনেক বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও তার কোনো সন্তান হয়নি। এটি কার দোষে রহিমার না মজিদের সেটি কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষায় নির্ণীত হয়নি। তবু মজিদ নিজেই ধার্য করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যেমনটি করা হয়ে থাকে সব দোষ রহিমারই। তাই সে অজুহাত দেখিয়ে রহিমাকে বলে : “বিবি, আমাগো যদি পোলাপাইন থাকতো।” রহিমা হাসুনিকে পালকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব দিলে মজিদ রাজী হয় না। সে আসলে খুব কম বয়সী একটি মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। লেখক স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন : “মজিদের নেশার প্রয়োজন।”
জ প্রয়োগ
‘লালসালু’ উপন্যাসের রহিমা এবং উদ্দীপকের শামীমা সুলতানা চরিত্র দুটির মধ্যে মিল এবং অমিল দুটি দিকই লক্ষযোগ্য।
প্রথমে আমরা মিলের দিকগুলো আলোচনা করবো, পরে আলোকপাত করা হবে অমিল যেখানে আছে সেসব দিকে। মিল এই যে, রহিমা এবং শামীমা সুলতানা দুজনই প্রথম পর্যায়ে স্বামীর অনুগত এবং দুজনই গ্রামীণ, কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রতিনিধি। (যার কারণেই হোক) রহিমা এবং শামীমা সুলতানা দুজনই নিঃসন্তান এবং দুজনই স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়েতে অনুমতি দিয়েছে হয়তো মনে কষ্ট চেপে রেখেই, সাধারণত এসব ক্ষেত্রে যা হয়ে থাকে। এই দুজন নারী তাদের স্বামীদের দ্বিতীয় বিবাহ পর্যন্ত এক রকম।
তাদের মধ্যে অমিল শুরু হলো তাদের স্বামীরা যখন বিয়ে করে, তারপর থেকে। রহিমার ক্ষেত্রে যদি লক্ষ করি, তাহলে স্পষ্ট হবে যে, জমিলার ওপর মজিদ যখন থেকেই অত্যাচার করা শুরু করেছে, তখন থেকেই রহিমা ধীরে ধীরে স্বামীর অবাধ্য হতে শুরু করেছে এবং তার অবাধ্যতা উপন্যাসের শেষে চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যখন সে মজিদকে বলে, “ধান দিয়া কী হইবো, মানুষের জান যদি না থাকে? আপনে ওরে নিয়া আসেন ভিতরে।” অপরদিকে শামীমা সুলতানা স্বামীকে দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি দিলেও সতীনের গর্ভে সন্তান জন্ম নেওয়ার পরে সে বদলে গেছে। তখন সে আর স্বামীর অনুগত থাকেনি। নিতান্ত অনুগত স্ত্রী হয়ে উঠেছে নিত্য কলহপরায়ণ। তবে রহিমার সাথে শামীমা সুলতানার মূল পার্থক্য একটিই, সেটি হচ্ছে: রহিমা তার সতীনকে কখনই ঈর্ষা করেনি শামীমা সুলতানা তার সতীনকে ঈর্ষা করেছে সে পুত্রসন্তান প্রসব করেছে।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
বিন্দার মধ্যে থাকতে পারে সিন্ধার ব্যঞ্জনা, গোষ্পদে তরঙ্গিত হয় সমুদ্র গর্জন এটি কেবল কথার কথা নয়, বাস্তবেও এর অজস্র প্রমাণ রয়েছে। তার একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বর্তমান উদ্দীপকের কথাই বলা যেতে পারে। এ উদ্দীপকের মাত্র ৫টি বাক্যে বিধৃত হয়েছে আবহমান বাঙালি সমাজের একটি রূপরেখা।
প্রকৃতিগত কারণে স্বামী বা স্ত্রীর যে কোনো একজনের ত্র“টির জন্য সন্তান জন্ম নাও হতে পারে। এটি একটি নিত্যনৈমিত্তিক, স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু পুরুষশাসিত বাঙালি সমাজে বিশেষ করে গ্রামীণ অশিক্ষিত সমাজে ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়াই ধরে নেওয়া হয় যে এটি ঘটেছে নারীর ত্র“টির কারণে। তখন পুরুষটি আবার বিয়ে করে। তার স্ত্রী এটি মেনে নেয় অথবা সমাজের কারণে মেনে নিতে বাধ্য হয়। উদ্দীপকে আমরা তাই দেখেছি : আলমাস আলী ও শাসীমা সুলতানার কোনো সন্তান হচ্ছে না বলে আলমাস আলী দ্বিতীয় বার বিয়ে করেছে, শামীমা তাতে অনুমতি দিয়েছে।
দ্বিতীয় স্ত্রী ঘরে আসার পর তার ঘরে সন্তান জন্ম নিল লক্ষণীয় ‘পুত্র সন্তান’ তখন প্রথম স্ত্রী শামীমা সুলতানা ঈর্ষার আগুনে দগ্ধ হয়েছে। এটি খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। উদ্দীপকে শামীমা সুলতানার সতীনের নাম উলেখ করা হয় নি। সতীনের ভূমীকায় শামীমা এবং শামীমার ভূমিকার সতীন থাকলেও প্রতিক্রিয়া একই হতো। একজনের সাজানো ঘরে অন্য একজন উড়ে এসে জুড়ে বসলে কার সহ্য হয়। শামীমারও সহ্য হয়নি। বাঙালি সমাজটাই এমন।
আবেগ, স্বার্থ ও উদারতা এই তিনটি জিনিস সমান্তরালে যেমন চলতে পারে তেমনই এর বিপরীতমুখী গতিও প্রায়ই লক্ষণীয়। তাই সংঘর্ষ সেখানে অনিবার্য। আলমাস আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী শামীমা সুলতানার মতো বন্ধ্যা হলে হিসাব-নিকাশ অন্যরকম হতো।
প্রশ্ন\ ৭\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
২০১৪ সাল। সিএনজি ড্রাইভার আবুল মিয়া তার স্ত্রী হাসনা বানুকে নিয়ে কালাচানপুরে থাকে। বিয়ে করার সাত বছর পরেও তাদের যখন ছেলেপুলে হয় না, তখন আবুল মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। হাসনা বানু বেঁকে বসে। সে চায়, আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করে দেখা হোক, সমস্যাটা কার, তার নিজের নাকি তার স্বামী আবুল মিয়ার। এই নিয়ে প্রবল পারিবারিক বিবাদ চলে।
ক. হাসপাতালটি কোথায় অবস্থিত?
খ. ধলা মিঞা আওয়ালপুরের পীরের কাছে পানিপড়া আনতে অনিচ্ছুক কেন?
গ. রহিমা এবং উদ্দীপকের হাসনা বানু চরিত্রটির মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. ‘লালসালু’ উপন্যাসের সামাজিক বাস্তবতা এবং উদ্দীপকের সামাজিক বাস্তবতার ভিন্নতার প্রেক্ষাপট কী? ১
২
৩
৪
৭ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
হাসপাতালটি করিমগঞ্জে অবস্থিত।
ছ অনুধাবন
ধলা মিঞা আওয়ালপুরের পীরের কাছে গিয়ে পানিপড়া আনার ব্যাপারে প্রবল অনিচ্ছুক যদিও সে সেটা মুখে স্বীকার করে না। ধলা মিঞা খালেক ব্যাপারীর সম্বন্ধী খালেক ব্যাপারীর দ্বিতীয় স্ত্রী তানু বিবির বড় ভাই। সে তার ভগ্নিপতির গৃহেই আশ্রিত। কাজকর্ম করে না। বসে বসে খায়। খালেক ব্যাপারী তাকে টাকা পয়সা দিয়ে যখন গোপনে কাজটা করে দেওয়ার দায়িত্ব দেয় তখন সে সেটা গ্রহণ করে কিন্তু তিনটা কারণে করে না।
প্রথম কারণ, সে অলস কাজকর্ম করার ব্যাপারে তার কোনো আগ্রহ নেই; কোন ভাবে সেটা ফাঁকি দেওয়া যায়, সে সেটা ভাবে। দ্বিতীয় কারণ, আওয়ালপুরের মানুষের সাথে মহব্বতনগরের গ্রামবাসীর ইতঃপূর্বে মারপিট হয়েছে, পানিপড়া আনতে গেলে সে আবার মার খাবে কিনা এই ভয় সে পায়। তৃতীয় কারণটিই সবচেয়ে বড়। দুই গ্রামের মাঝেখানে থাকা ভুতুড়ে মস্ত তেঁতুল গাছটাকে। তাই তার এই অনিচ্ছা।
জ প্রয়োগ
‘লালসালু’ উপন্যাসের রহিমা এবং উদ্দীপকের হাসনা বানু চরিত্র দুটির মধ্যে মিল এবং অমিল দুটি দিকই লক্ষণীয়। মিল খুব কম, অমিলই বেশি। প্রথমে মিলের ক্ষেত্রটি আলোচনা করা যাক, পরে দৃষ্টিপাত করা যাবে অমিলের অংশে। মিল হচেছ রহিমা এবং হাসনা বানু উভয়েই নিঃসন্তান। বিয়ের পরেও তাদের সন্তানাদি হয়নি এবং তাদের উভয়ের স্বামীই দ্বিতীয় বিয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
অমিলের জায়গাটি ব্যাপক এবং বিচিত্র। রহিমা তার স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহ নির্বিচারে মেনে নিয়েছে কোনো রকম প্রতিবাদ প্রতিরোধ ছাড়াই এমনকি কোনো রকম প্রশ্নও তার মধ্যে উচ্চারিত হয়নি। সে সন্তানহীনতার জন্যে আসলে দায় কার। অন্য দিকে, হাসনা বানু রহিমার মতো নিঃশর্তে স্বামীর কাছে সমর্পণ করেনি। সে যৌক্তিক প্রশ্ন উত্থাপন করে জানতে চেয়েছে যে, তাদের সন্তানহীতার জন্য দায়ী কে? সে ডাক্তারি পরীক্ষার আয়োজন করার আহŸান করেছে। কিন্তু বলাবাহুল্য, তার স্বামী আবুল মিয়া তার এই দাবির প্রতি কর্ণপাত করে নি। ফলে পারিবারিক কলহ অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
পুরুষশাসিত বাঙালি সমাজে এটা মনে করা হয়ে থাকে যে, সমস্যা মূলত নারীর দিক থেকেই হয় পুরুষের সমস্যা নেই। রহিমা স্বামীপ্রাণা, পতিভক্ত সনাতন ঘরানার নারী; অন্যদিকে হাসনা বানু যুগের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত বাঙালি নারী যে তার অধিকারের ব্যাপারে সচেতন। হাসনা বানুর পতিভক্তি নেই, এমন কথা কিন্তু উদ্দীপকে ইঙ্গিত করা হয়নি কিন্তু যেখানে তার অধিকার ধূলিতে লুটিয়ে যাচ্ছে, সেখানে সে হয়তো সনাতন কোমল আদর্শ ছেড়ে কঠিন মূর্তিতেই আবির্ভূতা।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
লেখক হচ্ছেন তাঁর সমকালীন দেশ-কালের নিপুণ রূপকার। তাই সাহিত্যই হচ্ছে সবচেয়ে কালের নির্ভরযোগ্য ইতিহাস। সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ তাঁর সময়ের কথা বলেছেন, সেটা বিশ শতকের প্রথমার্ধ কিন্তু উদ্দীপকের শুরুতেই দেখা যাচ্ছে সময়টা একুশ শতকের প্রথমার্ধ। একশো বছরে সময় অনেক বদলে গেছে, বদলে গেছে সমাজের কাঠামো, বদলে গেছে সেই সমাজের মানুষগুলো। তাই ‘লালসালু’ উপন্যাসের রহিমা আর উদ্দীপকের হাসনা বানু ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি।
বিশ শতকের প্রথমার্ধের চরিত্র রহিমা স্বামীর অনুগত। মজিদ যখন দ্বিতীয় বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করে, রহিমা বিনা দ্বিধায় তা মেনে নেয়। সে প্রশ্ন তোলে না যে তাদের যে ছেলেপুলে হচ্ছে না, এর জন্য আসলে দায়ী কে? অন্যদিকে একুশ শতকের প্রথমার্ধের ঠিক একশো বছরের পরের চরিত্র হাসনা বানু একই অবস্থায় পড়ে ডাক্তারি পরীক্ষা করতে বলে যে আসলে সমস্যাটি কার তার নিজের, নাকি তার স্বামীর; কার জন্যে হচ্ছে না তাদের সন্তান? হাসনা বানু নিশ্চিত হতে চায়, সমস্যা যদি হাসনা বানুর দিক থেকেই হয়ে থাকে, তাহলে আবুল মিয়া বিয়ে করুক। আবুল মিয়া এতে রাজি নয় বলেই বিবাদের সূচনা।
দুজনের সামাজিক বাস্তবতার ভিন্নতার জন্য সময়ের পরিবর্তন একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। রহিমা এবং হাসনা বানুর মাঝে একশো বছরের ব্যবধান। সময় মানুষকে নির্মাণ করে ভিন্ন ভিন্ন রকম করে। চরিত্রের ওপর সময়ের একটা ভূমিকা থাকে, যেটা এই দুটি চরিত্রের ওপর প্রবলভাবে ছায়াপাত ঘটিয়েছে।
দুজনের সামাজিক বাস্তবতার ভিন্নতার জন্য সমাজের পরিবর্তন উলেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। রহিমা গ্রামীণ সমাজের প্রতিনিধি। তার বাড়ি মহব্বতনগর গ্রামে। অপরদিকে, হাসনা বানু নগর জীবনের প্রতিনিধি। তার বাড়ি ঢাকার অদূরে কালাচানপুরে। তাই তাদের বাস্তবতা ভিন্ন হতে বাধ্য।
প্রশ্ন\ ৯\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আমার ধারণাদুই দলের এই বিরোধের প্রধান কারণ দুইটি : তার একটি মোলাদের মধ্যে নিহিত, আর একটি তরুণদের মধ্যে। মোলাদের দোষ এইতাহারা নূতনের বিরোধী; তরুণ-দলের দোষ এই তাহারা পুরাতনের বিরোধী। মোলা-দল ভাবে : নূতন যাহা সমস্তই অনৈসলামিক। তাহাদের বিশ্বাস : নূতন-কিছু আসিলেই ইসলামকে কিছু-না-কিছু ক্ষতি না করিয়াই যাইবে না। এই উদ্ভট সজাগ বুদ্ধি তাহাদের মনের এক মস্তবড় দুর্বলতা। উদ্দেশ্য সাধু ও মহৎ হইতে পারে, কিন্তু এর মধ্যে একটা কাপুরুষতা লুক্কাইয়া আছে।
ক. গ্রামে স্কুল বসাতে চায় কে?
খ. ‘তোমার দাড়ি কই মিয়া’ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের মোলাদের এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের চেতনাগত বৈশিষ্ট্য একই।” মন্তব্যটি বিচার কর। ১
২
৩
৪
৯ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
গ্রামে স্কুল বসাতে চায় আক্কাস।
ছ অনুধাবন
‘তোমার দাড়ি কই মিয়া?’ উক্তিটি করে মাজারের খাদেম মজিদ।
আক্কাস শহর থেকে লেখাপড়া শিখে গ্রামে যায়। গ্রামের মানুষকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে সে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু ধর্মব্যবসায়ী মজিদ নিজের স্বার্থহানির ভয়ে এ প্রস্তাবে বাঁধ সাথে। ধর্মের দোহাই দিয়ে আক্কাসকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। বিচার সভায় মজিদ আক্কাসকে অপ্রতিভ করতে কৌশলে তার প্রতি ধর্মীয় অনুভূতির উক্ত কথাটি দ্বারা ঘায়েল করে। যাতে আক্কাস অপ্রতিভ হয়ে পড়ে। তার মুখে কোনো কথা যোগায় না।
জ প্রয়োগ
উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসে উপস্থাপিত ধর্মব্যবসায়ী ও প্রগতিশীল তরুণের চেতনার সাথে দ্ব›েদ্বর বিষয়টির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ধর্ম মানুষের মুক্তির পথ দেখায়। কিন্তু সেটা যদি অন্ধবিশ্বাস ও ধর্মব্যবসায়ীদের চেতনার ওপর নির্ভর করে তবে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। উদ্দীপকে এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসে এ বিষয়টি লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায় মোলা ও তরুণের মাঝে দ্ব›েদ্বর চিত্র। লেখক এর কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন। মোলা অর্থাৎ ধর্মের ধ্বজাধারীরা তরুণদের প্রগতিশীল চেতনাকেই ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না। তাদের মতে যা নতুন তাই অনৈসলামিক।
এমন দ্ব›দ্বমূলক ভাব লক্ষ করি ‘লালসালু’ উপন্যাসে ধর্মব্যবসায়ী মজিদ ও প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ আক্কাসের মাঝে। আক্কাসের স্কুল করার প্রস্তাব সে গ্রহণ করতে পারে না। ধর্মের ধুয়া তুলে সেটাকে বন্ধ করে গ্রামে পাকা মসজিদ নির্মাণের সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। উপন্যাসের এই দ্ব›দ্বমূলক ভাবের সাথে উদ্দীপকটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
“উদ্দীপকের মোলাদের এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের চেতনাগত বৈশিষ্ট্য একই।” মন্তব্যটি যথার্থ।
নতুন কিছু করতে গেলে বাধা আসে এটা চিরন্তন সত্য। সেটি যদি কোনো প্রগতিশীল চেতনার ধারক হয় তবে কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে সঠিকভাবে গ্রহণ করবে না এটাই স্বাভাবিক। উদ্দীপকে এমন বিষয়েরই অবতারণা ঘটেছে। যা উপন্যাসে উপস্থাপিত ভাবের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় মোলা ও তরুণের মধ্যে বিরোধের চিত্র। মোলার চেতনা যে নতুন মাত্রই অনৈসালামিক। তাদের বিশ্বাস নতুন কিছু আসলেই ইসলামকে কিছু-না-কিছু ক্ষতি করে যাবে। এই বুদ্ধি তাদের এক মস্তবড় দুর্বলতা ও কাপুরুষতা। এই মোলার চেতনাগত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করি উপন্যাসের মজিদ চরিত্রে।
উপন্যাসে মজিদের চেতনাতে লক্ষ করা যায় ধর্মান্ধতা, কাপুরুষতা, স্বার্থান্বেষী এবং শঠতা। সে ধর্মকে জীবিকা হিসেবে ব্যবহার করেছে। সমাজে সকল প্রগতিশীলতা ও নতুনত্বের সে ঘোর বিরোধী। তাইতো আক্কাস গ্রামে স্কুল দিতে চাইলে সে বিরোধিতা করে। খালেক ব্যাপারীর বৌকে তালাক দিতে বাধ্য করে। স্কুলের পরিবর্তে গ্রামে সে পাকা মসজিদ তৈরি করার প্রস্তাব করে এবং সিন্ধান্ত নেয়। ধর্মের নামে সবখানেই সে অনাচার করে। তাই বলা যায় উদ্দীপকের মোলা এবং মজিদের চেতনাগত বৈশিষ্ট্য একই।
প্রশ্ন\ ১০\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
পীর সাহেব তাঁর প্রধান খলিফার রুহে শেষ পয়গম্বর হযরত মোহাম্মদের রুহ-মোবারক নাযেল করিবার জন্য ঠিক তাঁর সামনে বসিলেন।
শাগরেদরা চারিদিক ঘিরিয়া বসিয়া মিলিত কণ্ঠে সুর করিয়া দরুদ পাঠ করিতে লাগিলেন। পীর সাহেব কখনও জোরে কখনও বা আস্তে নানা প্রকার দোয়া-কালাম পড়িয়া সুফী সাহেবের চোখে-মুখে ফুঁকিতে লাগিলেন।
কিছুক্ষণ ফুঁকিবার পর শাগরেদগণকে চুপ করিতে ইঙ্গিত করিয়া পীর সাহেব বুকে হাত বাঁধিয়া একদৃষ্টে সুফী সাহেবের বুকের দিকে চাহিয়া রহিলেন।
ক. পীর সাহেবের আগমন ঘটে কোন গ্রামে?
খ. ‘যত সব শয়তানি বেদাতি কারবার’- কে, কেন বলেছে কথাটি?
গ. উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের সমগ্র ভাব ধারণ করে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও। ১
২
৩
৪
১০ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
পীর সাহেবের আগমন ঘটে আওয়ালপুর গ্রামে।
ছ অনুধাবন
নবাগত পীর সাহেবের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে ভন্ডামী আখ্যা দিয়ে উক্তিটি করেছে মজিদ।
আওয়ালপুর গ্রামে হঠাৎ একজন পীরের আগমন ঘটে। কৌত‚হলবশত মজিদও সেখানে যায়। সেখানে গিয়ে মজিদ পীর সাহেবের জনপ্রিয়তা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। তাকে কেউ সেখানে গ্রাহ্য করে না। এমনকি যারা তাকে চেনে ভক্তি করে তারাও সেদিন তার দিকে ফিরে তাকায় না। পীরের নানা কেরামতির কথা সে শুনতে পায় তারপর যখন সে দেখে অসময়ে নামাজ পড়তে পীর সাহেব হুকুম দিয়েছে তখন সে সুযোগ কাজে লাগায়। সে পীরের কেরামতির অসারতা প্রমাণের জন্যে উক্ত উক্তিটি করে।
জ প্রয়োগ
উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসে বর্ণিত পীর সাহেবের আগমনের ঘটনাটির প্রতি ইঙ্গিত করেছে।
ধর্মভীরু মুসলিম সমাজে পীর আউলিয়াদের একটি বিশেষ স্থান আছে। তাদের মধ্যে সকলেই সৎ ও নিষ্ঠাবান নয়। ‘লালসালু’ উপন্যাসে এ বিষয়টি লেখক চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন যা উদ্দীপকেও লক্ষ করা যায়।
‘লালসালু’ উপন্যাসে তেমনই একজন ভন্ড পীরের কথা বলা হয়েছে। জনৈক পীর সাহেব এর তার সাগরেদের আগমন ঘটে আওয়ালপুর গ্রামে। কারণ তখন সেখানকার গৃহস্তের গোলায় ধান উঠেছে। মুরিদ মতলুব খাঁ তার চারপাশে লোকে লেকারণ্য থাকে। সেই লোকজনদের মধ্যে মুরিদ মতলুব খাঁ পীর সাহেবের গুণাগুণ বর্ণনা করে সহজ ভাষায়। সে নাকি সূর্যকেও দাঁড় করিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখে। এমনই এক দৃশ্যের অবতারণা ঘটেছে উদ্দীপকে। একই পীর তার অবস্থাসম্পন্ন মুরিদের বাড়ি আস্তানা গেড়ে মুরিদসহ ধর্মপ্রাণ মানুষদের কেরামত দেখায়। যতটা না তার ক্ষমতা তার থেকে বেশি ক্ষমতা তার সাগরেদদের। উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসে বর্ণিত ভাবটির প্রতিই ইঙ্গিত করেছে।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
না, উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করে না।
নিরস্তিত্বের জীবন বেদনা ও উত্তরণ প্রয়াসের শিল্প রূপায়ণে সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র ‘লালসালু’ এক অভিনব সৃষ্টি। বুর্জোয়া সমাজের সকল সংকটের প্রেরণায় নিঃসঙ্গ আত্মসন্ধানী জীবন চেতনা নিয়ে ঔপন্যাসিক তাঁর শিল্পীমানস গঠন করে উপন্যাসের জমিনে তার স্বার্থক রূপ দিয়েছেন। এসব চেতনার সম্পূর্ণ প্রকাশ ঘটেনি উদ্দীপকের স্বল্পতম জমিনে।
উদ্দীপকে শুধু এক ধর্মান্ধ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অশিক্ষিত সমাজে ভন্ড ধর্মব্যবসায়ীর স্বার্থসিদ্ধর পন্থাস্বরূপ মানুষের সাথে প্রতারণার বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। সমাজের ধর্মব্যবসায়ীরা কীভাবে সাধারণ সহজ সরল মানুষ ঠকিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে জনৈক পীরের মাধ্যমে সে দৃশ্যই দেখানো হয়েছ্ েউদ্দীপকের এ বিষয়টি ‘লালসালু’ উপন্যাসের অনেক বিষয়ের মধ্যে একটি মাত্র বিষয়।
‘লালসালু’ উপন্যাসে বহুমুখী ভাবের প্রকাশ ঘটেছে। এদের আর্থ-সামাজিক কাঠামোর মধ্যে জীবন প্রবাহের গতিময়তা, স্থবিরতা, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, কুসংস্কার, সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য; ধর্মভীতি, মানুষের নেতিবাচক মূল্যবোধ-ধর্মের ধ্বজাধারীদের ভন্ডামী ও প্রতারণা, নিরক্ষর অসহায় মানুষের তাদের কাছে আত্মসমর্পণ প্রভৃতি জীবনমুখী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে উপন্যাসে। যা উদ্দীপকে পরিলক্ষিত হয় না শুধু সমাজের ভন্ড ধর্মব্যবসায়ীর কর্মকান্ডের বিষয় ছাড়া। তাই বলা যায় উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের ভাবার্থের দর্পণ নয়।
প্রশ্ন\ ১২\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
তওবা, তওবা, কহেন কি মাস্টার সাব। খোদাভক্ত পীর, আলার ওলি মানুষ। দশ গাঁয়ে যারে মানে, তার নামে এত বড় কুৎসা! ভালো কাজ করলা না মাস্টার, ভালা কাজ করলা না। ঘন ঘন মাথা নাড়লেন জমির ব্যাপারী। পীরের বদ দোয়ায় ছাই অইয়া যাইবা! কথা শুনে সশব্দে হেসে উঠল মতি মাস্টার। কি যে কও চাচা, তোমাগো কথা শুনলে হাসি পায়। হাসি পাইবো না, লেখাপড়া শিখা তো এহন বড় মানুষ অইয়া গেছ। মুখ ভেংচিয়ে বললেন জমির ব্যাপারী। চাঁদা দিলে দিবা না দিলে নাই, এত বহাত্তরী কথা ক্যান?
ক. খালেক ব্যাপারী মসজিদের কত আনা খরচ বহন করতে চায়?
খ. ‘সভায় সকলে প্রথমে বিস্ময় হয়’ কেন?
গ. উদ্দীপকের মতি মাস্টার ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের মাত্র একটি ভাবকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে।” মন্তব্যটি বিচার কর। ১
২
৩
৪
১২ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
খালেক ব্যাপারী মসজিদের বারআনা খরচ বহন করতে চায়।
ছ অনুধাবন
গ্রামে স্কুল স্থাপন করতে চাওয়া নব্যশিক্ষিত ছেলে আক্কাসের বিচার হবে ভেবে সভায় উপস্থিত হলেও যখন তেমন কোনো শাস্তি বিধান হলো না দেখে সবাই প্রথমে বিস্মিত হয়।
গ্রামের মানুষকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্যে মহব্বতনগর গ্রামে একটি স্কুল স্থাপন করতে চেষ্টা করে। মজিদের কাছে ব্যাপারটি মোটেও ভালো লাগে না। সে এটাকে অমুসলিম কাজ বলে আক্কাসের বিচারের ব্যবস্থা করে। গ্রামের খালেক ব্যাপারীর বাড়িতে সভা বসে। সকলে তার শাস্তিবিধানের আশায় বসে থাকে। কিন্তু মজিদ যখন তাদের প্রত্যাশানুযায়ী শাস্তি ঘোষণা করে না তখন সভার সকলে প্রথমে বিস্মিত হয়।
জ প্রয়োগ
উদ্দীপকের মতি মাস্টার ‘লালসালু’ উপন্যাসের নব্যশিক্ষিত প্রগতিশীল চেতনার আক্কাস চরিত্রের প্রতিনিধি।
শিক্ষার আলো যেখানে পৌঁছায়নি সেখান কোনো সুস্থ জীবন আশা করা যায় না। অথচ বাংলাদেশে এই অভিশাপটা সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এজন্যে আমাদের দেশ এতটা পিছিয়ে। ‘লালসালু’ উপন্যাসের ঔপন্যাসিক এই বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে বাস্তবমুখী করে উপস্থাপন করেছেন।
উদ্দীপকে দেখা যায় নিরক্ষর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন একটি গ্রামের মতি মাস্টার আপ্রাণ চেষ্টা করে মানুষের মধ্য থেকে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে দূরীভুত করতে। সে সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করে তারা যে চেতনা নিয়ে এতদিন বেঁচে আছে সেটা ঠিক নয়। ভন্ডপীর খাদেমদের চেতনার বলয় থেকে সহজ সরল মানুষদের বের করার প্রয়াস পেয়েছে। এমনই একটা চরিত্র ‘লালসালু’ উপন্যাসের আক্কাস চরিত্র। সেও গ্রামের সাধারণ মানুষদের নিরক্ষরতার হাত থেকে মুক্ত করার জন্যে একটি স্কুল স্থাপন করতে চায়। কিন্তু ভন্ড ধর্মব্যবসায়ী মজিদ স্বার্থহানির আশায় তার সেই মহতি চেষ্টাকে সফল হতে দেয় না। উদ্দীপকের মতি মাস্টার এবং উপন্যাসের আক্কাসের সাদৃশ্য এক্ষেত্রেই দেখা যায়।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
“উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের মাত্র একটি ভাবকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে।” মন্তব্যটি যথার্থই হয়েছে।
শিক্ষা মানুষের অমূল্য সম্পদ। শিক্ষা ছাড়া জীবনের কোনো সত্য উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। সত্যকে মনের মধ্যে ধারণ করে উপন্যাসের আক্কাস গ্রামে একটা স্কুল স্থাপন করে মানুষের অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে একটু আলোর পরশ দিতে চিয়েছিল কিন্তু এ ধর্মান্ধ সমাজ সেটা হতে দিল না।
‘লালসালু’ উপন্যাসের এই দিকদিই উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে দেখা যায় পীর বা আলাহর অলিদের বিশ্বাস না করার জন্যে মতি মাস্টারকে তিরস্কার করে। জমির ব্যাপারী পীরের বদ দোয়ায় ছাই হয়ে যাবে এই কথাও তাকে শুনতে হয়। কিন্তু প্রগতিশীল চেতনার যুবক মতি মাস্টার সে কথা শুনে হাসে। মানুষের এই অন্ধবিশ্বাস দেখে তাদের প্রতি করুণা হয়। এদিকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের বহুমুখী ঘটনার মাত্র একটিমাত্র দিক।
‘লালসালু’ উপন্যাসে ঔপন্যাসিক জীবনাশ্রয়ী, বাস্তবমুখী অস্তিত্বের উন্মীলন ও পরাভব অঙ্কনের মধ্য দিয়ে এটিকে বাংলাদেশের অশিক্ষিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ চেতনাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। এখানে অশিক্ষা, ধর্মান্ধতা, সামাজিক বৈষম্য, ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতারণা, সহজ সরল মানুষের জীবনধারা অসামান্য শৈল্পীক নৈপুণ্যে উপস্থাপিত হয়েছে। যা উদ্দীপকে সম্পূর্ণভাবে উঠে আসেনি, শুধু শিক্ষার আলো বঞ্চিত গ্রামে আক্কাস যুবকের শিক্ষার আলো ছড়ানোর চেষ্টা করার বিষয়টি উঠে এসেছে। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।
প্রশ্ন\ ১৩\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বহিপীর- অতি আশ্চর্য; কিন্তু উহা সত্য। ব্যাপারটা হইতেছে এই; গত জুম্মা রাতে তাহেরা বিবি নামে একটি বালিকার সঙ্গে আমার শাদি মোবারক সম্পন্ন হয়। তিনি আমার এক পেয়ারা মুরিদের কন্যা। অত্যন্ত হাউস করিয়া তিনি আমার সহিত তাঁহার কন্যার শাদি দিয়াছিলেন। তিনিই কথা পাড়িয়াছেন। আমি ভাবিয়া দেখিলাম, নেক পরহেজগার মানুষ; বিষয়-আশয় তেমন না থাকিলেও বংশ খান্দানি। আমারও বয়স হইয়াছে, দেখভাল করিবার জন্য আর খেদমতের জন্য একটি আপন লোকের প্রয়োজন আছে। আমার প্রথম স্ত্রীর এন্তেকাল হয় চৌদ্দ বৎসর আগে। আমি পুনর্বার শাদি না করিয়া খোদার এবাদত আর মানুষের খেদমতই করিয়াছি। আমার সন্তান-সন্ততিও নাই, দেখাশুনা করিবার জন্য এক হকিকুলাহ্ আছে। কিন্তু সে আর কত করিতে পারে। দেখিলাম, বিবাহ করাটাই সমীচীন হইবে।
ক. তাহাদের নৌকা কোন সড়কটার কাছে এসে পড়ে?
খ. ‘উনি একদিন স্বপ্নে ডাকি বললেন’- মজিদ এ উক্তিটি কেন করে?
গ. উদ্দীপকের বহিপীর ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের ভাবার্থের।” মন্তব্যটির যৌক্তিকতা নিরূপণ কর। ১
২
৩
৪
১৩ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
তাহেরদের নৌকা মতিগঞ্জের সড়কটার কাছে এসে পড়ে।
ছ অনুধাবন
মজিদ জীবিকার তাগিদে প্রবেশ করে মহব্বতনগর গ্রামে। যেখানে অশিক্ষিত ধর্মপ্রাণ গ্রামবাসীর সামনে তার সেখানে আসার উদ্দেশ্যের কথা বলতে গিয়ে উক্ত কথাটি বলে।
মজিদ বলে, সে ছিল গারো পাহাড়ে। সেখানে সে সুখে শান্তিতেই ছিল। গেলো ভরা ধান গোয়াল ভারা গরু-ছাগল। সেখানকার মানুষের মাঝে ধর্ম-প্রচার করে তার জীবন ভালোই চলছিল কিন্তু হঠাৎ একদিন সে স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্নই তাকে এত দূরে নিয়ে এসেছে। খোদা-রসুলের নির্দেশেই মজিদ এই গ্রামে পদার্পণ করেছে, এই কথা সবাইকে বোঝাতেই মজিদ উক্ত কথাটা বলে।
জ প্রয়োগ
উদ্দীপকের বহিপীর ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ চরিত্রের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে।
‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ একটি প্রতিকী চরিত্র। কুসংস্কার, শঠতা, প্রতারণা এবং অবিশ্বাসের প্রতীক সে। নিজের স্বার্থের জন্য, জীবিকার তাগিদে প্রচলিত বিশ্বাসের কাঠামো ও প্রথাবদ্ধ জীবন ধারাকে সে টিকিয়ে রাখতে চায়।
উদ্দীপকের বহিপীর এই মজিদ চরিত্রেররই প্রতিরূপ। তাকে দেখি কন্যার বয়সী তাহেরাকে সে দ্বিতীয় বিয়ে করে। তাহেরা তার মুরিদ কন্যা। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর চৌদ্দ বছর পরে নারীলোলুপ বহিপীর আবার বিয়ে করে। তার এই বৈশিষ্ট্যে একজন পুরুষের নারীর প্রতি হীনম্মন্যতা ও নারীকে ভোগের সামগ্রী মনে করার মনোভাবটি ওঠে এসেছে। যেমনটি দেখা যায় ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ চরিত্রে। মজিদও ঘরে স্ত্রী থাকা সত্তে¡ও কন্যার বয়সী জমিলাকে বিয়ে করে। তার এই আচরণে স্বার্থপরতা ও শোষণের দিকটি প্রকাশিত হয়। ধর্মীয় অনুশাসনে সকলকে ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখলেও সে নিজের জৈবিক চাহিদা ও অর্থনৈতিক চাহিদা যে কোনো ভাবে পূরণ করে। যা দেখা যায় উদ্দীপকের বহিপীরের চরিত্রে।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
“উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের ভাবার্থের দর্পণ।” মন্তব্যটি আমার মতে যৌক্তিক নয়।
‘লালসালু’ একটি সামাজিক উপন্যাস। এখানে ঔপন্যাসিক বহুমুখী ভাবের অবতারণা ঘটিয়েছেন। যুগ যুগ ধরে গড়ে উঠা কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ভীতির সঙ্গে সুস্থ জীবনাকাক্সক্ষার দ্ব›দ্ব এ উপন্যাসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
উদ্দীপকে একজন ভন্ড পীরের জৈবিক চাহিদা চরিতার্থ করতে এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে একজন কিশোরী কিভাবে বলি হয় সে চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও অশিক্ষার বোকামির সুযোগ গ্রহণ করে সমাজের ধর্মব্যবসায়ীরা কীভাবে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে সে দৃশ্য দেখানো হয়েছে বহিপীরের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বর্ণনার মধ্য দিয়ে। এটা ‘লালসালু’ উপন্যাসে বর্ণিত একটি মাত্র দিক।
‘লালসালু’ উপন্যাসে ঔপন্যাসিক এই বাংলাদেশের সমাজ জীবনের যুগ যুগ ধরে শেকড়গাড়া কুসংস্কার, অন্ধ ধর্মবিশ্বাস ও ভীতির সাথে সুস্থ জীবনের দ্ব›দ্ব, গ্রামবাসীর সরলতা ও ধর্মবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভন্ড ধর্মব্যবসায়ী মজিদ তার প্রতারণার জাল বিস্তারের মাধ্যমে কীভাবে নিজের শাসন ও শোষণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তারই অনুপুঙ্খ বিবরণে সমুদ্ধ উপন্যাসটি। এখানকার একটা খন্ডাংশ মজিদের দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনা। এ সমাজের মানুষের ধর্মবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভন্ড ধর্মব্যবসায়ীরা কীভাবে নিজেরে স্বার্থ হালিল করে সে চিত্রটি উপস্থাপন ব্যতীত উদ্দীপকটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের অন্য কোনো বিষয় উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমার কাছে প্রশ্নের মন্তব্যটি অযৌক্তিক।
প্রশ্ন\ ১৪\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বহিপীর – (একটু রেখে) আপনি মত না দিলেও আপনার বাপজান দিয়াছেন। তাহা ছাড়া সাক্ষী সাবদ সমেত কাবিননামাও হইয়া গিয়াছে। এখন সেকথা বলিলে চলিবে কেন। (সুর বদলিয়ে) দেখুন, মন দিয়া আমার কথা শুনুন।
তাহেরা – (আবার বাধা দিয়ে) আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না। আমার বাপজান আর সৎমা আপনাকে খুশি করবার জন্য আপনার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। আমি যেন কোরবানীর বকরি। আপনি পুলিশে খবর দিতে পারেন, আপনি আমার বাপজানকে ডেকে পাঠাতে পারেন, আমার ওপর জুলুম করতে পারেন। কিন্তু আমি আপনার সঙ্গে যাবো না। আপনি আমাকে দেখেননি, আমিও আপনাকে দেখিনি। আর আপনাকে আমি দেখতেও চাই না।
খোদেজা – খোদা খোদা, কোথায় যাব আমি। পীরসাহেবের মুখের ওপর এসব কী কথা বলে মেয়েটা! শুনেই আমার বুকের ভেতরটা কাঁপে।
বহিপীর – আমার কথা শোনেন।
তাহেরা – না না, আপনার কোনো কথা আমি শুনতে চাই না।
ক. মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম কী?
খ. ‘আমি ভাবলাম তানি বুঝি দুলার বাপ’ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের তাহেরার সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলার চরিত্রের সাদৃশ্য কোথায়? আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের তাহেরা এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলা একই সামাজিক বৈসম্যের শিকার।” মন্তব্যটি বিচার কর। ১
২
৩
৪
১৪ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম জমিলা।
ছ অনুধাবন
‘আমি ভাবলাম তানি বুঝি দুলার বাপ’ কথাটি বলেছে মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা।
মজিদ তার ভবিষ্যৎ বংশধরের আশায় এবং নিজের জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্যে দ্বিতীয় বিয়ে করে মেয়ের বয়সী জামিলাকে। সে দরিদ্র ঘরের কন্যা এজন্যে সে খুব সহজেই জমিলাকে বিয়ে করতে পারে। ঠিক যেন বিড়ালের ছানা। তার বিয়ের সময় মজিদকে দেখে তার মনে হয়েছিল মজিদ বুঝি দুলার অর্থাৎ বরের পিতা। বিয়ের পর রহিমার কাছে জমিলা বলে আমি ভেবেছিলাম তানি বুঝি দুলার বাপ। আর তোমাকে মনে করেছিলাম শাশুড়ি। জমিলার উক্ত কথার মাধ্যমে নারীর অবমূল্যায়নের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
জ প্রয়োগ
উদ্দীপকের তাহেরার সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের জামিলা চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে প্রতিবাদী চেতনায়।
‘লালসালু’ উপন্যাসে নায়ক মজিদ কিন্তু নায়িকা কে? উপন্যাসের একটা বড় অংশ জুড়ে রহিমার উপস্থিতি থাকলেও একটু গভীরভাবে বিচার করলে দেখা যাবে তার চেয়ে জমিলার গুরুত্ব অনেক বেশি। ঔপন্যাসিক তাকে প্রতিবাদী চেতনার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপিত করেছেন। এই জমিলা চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে উদ্দীপকের তাহেরা চরিত্রের সাথে।
উদ্দীপকের তাহেরা একজন প্রতিবাদী নারী। জনৈক বাহিপীর তাকে কলমা পড়িয়ে বিয়ে করে সৎ মা ও বৃদ্ধ পিতার ইচ্ছানুসারে। কিন্তু তাহেরা সেটাকে মেনে নিতে পারে না। বহিপীর তাকে নিতে এলে তার সাথে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। সে জানায় তার মতে এ বিয়ে হয়নি এবং তার বাপ-মা পীরকে খুশি করার জন্যে তার সাথে বিয়ে দিয়েছে যা সে মেনে নিতে পারবে না। এমনই একটা প্রতিবাদী চরিত্র উপন্যাসের জমিলা। মাজারের খাদেম মজিদের বৌ হওয়া সত্তে¡ও তার মনে খোদাভীতি জাগাতে পারে না মজিদ। তার কোনো নিষেধ সে শোনে না। ঔপন্যাসিক তাকে এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের প্রতিবাদী চেতনার নারী হিসেবে তুলে ধরেছেন যা উদ্দীপকের তাহেরার সাথে সাদৃশ্য বিধান করেছেন।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
“উদ্দীপকের তাহেরা এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের জামিলা একই সামাজিক বৈষম্যের শিকার।” মন্তব্যটি সঠিক।
প্রাচীনকাল থেকে আমাদের সমাজ ব্যাবস্থায় নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রচলিত রয়েছে। এখানে নারীদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না। এই পুরুষ শাসিত সমাজ নারীকে ভোগের সামগ্রী ভাবে, পুরুষের সেবাদাসী ভাবে। তাদের চাওয়া-পাওয়ার, পছন্দ-অপছন্দের কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। তাহেরা এবং উপন্যাসের জমিলা একই সামাজিক বৈষম্যের শিকার।
উদ্দীপকের তাহেরা দরিদ্র ঘরের মেয়ে। ধর্মান্ধ পিতা স্বার্থানেষী নারীলোলুপ পীর সাহেবকে খুশি করার জন্য মেয়ের মতামতের তোয়াক্কা না করে তার সাথে বিয়ে দেয়। এখানে মেয়ের কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। নারীর প্রতি সামাজিক বৈষম্যের কারণে তাহেরা এই জুলুমের শিকার হয়েছে। এমনই বৈষম্যের শিকার হতে দেখি ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলাকে। সেও দরিদ্র ঘরের মেয়ে। তাকেও বলি হতে হয় ভন্ড এক ধর্মব্যবসায়ীর লালসার কাছে।
জমিলাকে বিয়ে করে মজিদ তার বংশ রক্ষার জন্যে কিন্তু সে কখনোই ভাবে নি এ বিয়েতে জমিলার কতটুকু সম্মতি রয়েছে। কারণ বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে অভ্যস্ত পুরুষ মজিদ কাপুরুষের মতো মেয়ের বয়সী জমিলাকে বিয়ে করে। জমিলাও কোরবানীর পশুর মতো এই পুরুষ শাসিত সমাজের বধ্যভূমিতে জীবন উৎসর্গ করে। তাই একথা নির্দ্বিধায় বলা য়ায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন\ ১৫\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
পাঁচুকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসান শিকদারের শ্বশুর কাসেম হালদার। দেখতে শুনতে বোকা কিসিমের মনে হলেও বদের একশেষ। মেয়েকেই শুধু হাসান শিকদারের ঘাড়ে গছিয়ে দেয়নি, নিজেও জামাইবাড়ির আজীবন ভোগদখল সদস্য বনে গেছে। হাসান চেয়ারম্যানও শ্বশুরের যাবতীয় সম্মান নাশ করে তার যাবতীয় অকামের দোসর শ্বশুরকে করে নিয়েছে। একদিন শেষরাতে শ্বশুরকে তারাকান্দি বাজার থেকে কয়েক প্যাকেট নিষিদ্ধ দ্রব্য খুব গোপনে আনতে বলে। অমাবস্যার রাতে পলাশপুরের শ্যাওড়া গাছতলা দিয়ে ‘তেনাদের’ এড়িয়ে ঝামার বাজার যাওয়ার ব্যপারে কাশেম হালদার খুব ভয় পেতে থাকে। সে নিজে না গিয়ে অন্যকে দিয়ে কাজটি সমাধাণ করার বুদ্ধি আটতে থাকে।
ক. মজিদের ঘর কিসের তৈরি?
খ. মজিদ ধলা মিঞার প্রস্তাবে রাজি হয়নি কেন?
গ. উদ্দীপকের কাসেম হালদার ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের অনুরূপ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের চেয়ারম্যান হাসান শিকদার আর ‘লালসালু’র খালেক ব্যাপারীর সমস্যা সমধর্মী না হলেও ঘটনা ফাঁস হলে উভয়ের পরিণতি সমরূপ হতে বাধ্য।” বক্তব্য বিষয়ে তোমার মতামত তুলে ধর। ১
২
৩
৪
১৫ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
মজিদের ঘর ইটের তৈরি।
ছ অনুধাবন
মজিদ সুদূরপ্রসারী চিন্তা করেই ধলা মিঞার প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
মজিদের ধারণা খালেক ব্যাপারী ও তার স্ত্রী আমেনা বিবি মজিদকে মানলেও ভেতরে ভেতরে আওয়ালপুরের পীরের প্রতি তাদের বিশ্বাস অর্জিত হচ্ছে। এজন্য সে রেগে যায়। বিশ্বাসের ভিত তৈরি হওয়ার আগেই মূলসহ তা ওপড়ে ফেলতে চায়। তাই সে ধলা মিঞার প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
জ প্রয়োগ
উদ্দীপকের কাসেম হালদার ‘লালসালু’ উপন্যাসের ধলা মিঞা চরিত্রের অনুরূপ।
‘লালসালু’ উপন্যাসের প্রভাবশালী চরিত্র খালেক ব্যাপারীর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর বড় ভাই ধলা মিঞা। খালেক ব্যাপারী খুব সুন্দর করে তার প্রথম স্ত্রী আমেনা বিবির ইচ্ছার কথা বলে ধলা মিঞাকে রাতের আঁধারে খুব গোপনে আওয়ালপুরে গিয়ে খুব সাবধানতা অবলম্বন করে পীরের পানি পড়া আনতে বলে।
ধলা মিঞাকে সহজ সরল মনে হলেও সে ধুরন্ধর প্রকৃতির। খালেক ব্যাপারী তাকে আমেনা বিবির জন্যে আওয়ালপুরের পীর সাহেবের কাছ থেকে পানি পড়া আনতে বললে সে ভিন্নতর মতলব আঁটে। সে মজিদের কাছ থেকে পানি পড়া নিয়ে আওয়ালপুরের পীর সাহেবের পানি পড়ার কথা বলার ফন্দি করে। সেজন্যে মজিদকে পানি পড়া আনা বাবদ খালেকব্যাপারীর দেওয়া টাকার অর্ধেক টাকা ঘুষ দেওয়ার চিন্তাও করে যাতে মজিদ পরে বিষয়টি ফাঁস না করে দেয়। ধলা মিঞার কুমতলবেই আমেনা বিবির কপাল ভাঙে, নিরীহ চরিত্রমতি আমেনা বিবিকে তালাক নিয়ে স্বামীর সংসার ছাড়তে হয়।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
“উদ্দীপকের চেয়ারম্যান হাসান শিকদার আর ‘লালসালু’র খালেক ব্যাপারীর সমস্যা সমধর্মী না হলেও ঘটনা ফাঁস হলে উভয়ের পরিণতি সমরূপ হতে বাধ্য।”- উক্তিটি যথার্থ সঠিক।
‘লালসালু’ উপন্যাসের প্রভাবশালী চরিত্র খালেক ব্যাপারী তার স্ত্রীর বড় ভাই ধলা মিঞাকে আমেনা বিবির জন্য রাতের আঁধারে, খুব গোপনে আওয়ালপুরে গিয়ে খুব সাবধানতা অবলম্বন করে পানি পড়া আনতে বলে। আরও বলে যে, সে যেন তার গ্রামের কথা গোপন করে করিমগঞ্জের কথা বলে এবং বলবে তার এক নিকটতম নিঃসন্তান আত্মীয়ার একটা ছেলের জন্য বড় শখ হয়েছে। শখের চেয়েও যেটা বড়া কথা, তাহলো শেষ পর্যন্ত কোনো ছেলেপুলে যদি না-ই হয় তবে বংশের বাতি জ্বালাবার আর কেউ থাকবে না।
মোট কথা ব্যাপারটা এমন করুণভাবে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে, শুনে পীর সাহেবের মন গলে যেন পানি হয়ে যায়। কিন্তু ধলা মিঞা আওয়ালপুরে যেতে চায় না, কারণ পানি পড়া নিতে তাকে আওয়ালপুরে যেতে যাত্রা শুরু করতে হবে শেষ রাতে, যাতে ভোর হওয়ার আগেই ধলা মিঞা মহব্বতনগরে ফিরে আসতে পারে এবং এ ব্যাপারে কেউ যেন টের না পায়। অন্যদিকে আওয়ালপুর ও মহব্বতনগরের মাঝপথের তেঁতুল গাছের তলা দিয়ে রাতের বেলা আসতে সে ভীষণ ভয় পায়। কারণ, তেঁতুল গাছটি ‘দেবংশি’ অর্থাৎ এ গাছে ভূত প্রেতের আড্ডা। তাছাড়া পীর সাহেবের সাঙ্গপাঙ্গদের হাতে মার খাওয়ার ভয়ও তার ছিল। এসব কারণেই সে আওয়ালপুরে যেতে চায় না।
পরিশেষে বলা যায়, ধলা মিঞার কুমতলব ও গোপনীয়তা ফাঁসের কারণে যেমন আমেনা বিবির কপাল ভাঙে, খালেক ব্যাপারীর নিরীহ চরিত্রমতি আমেনা বিবিকে তালাক দিয়ে সংসারে বিপর্যয় আনতে বাধ্য হয়। উদ্দীপকের কাসেম হালদারের অনুরূপ কর্মকান্ডে চেয়ারম্যান হাসান শিকদারের জীবনেও খালেক ব্যাপারীর অনুরূপ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। অর্থাৎ হাসান শিকদার থানা পুলিশে সোপর্দ করলে নানা দুর্ভোগের শিকার হতে পারেন।
প্রশ্ন\ ১৬\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
১৯২৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় ‘মুসলিম সহিত্য-সমাজ’ গঠিত হয়। এ সংগঠনের লেখকের দৃষ্টি ছিল যুক্তিবাদীর দৃষ্টি, চিন্তা-সংস্কারের দৃষ্টি এবং সমাজ-সংস্কারের দৃষ্টি। নতুন চিন্তার আভাসে রক্ষণশীলেরা চিরদিনই শঙ্কিত হয়ে ওঠেন, সেদিনও হয়েছিলেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ ইসলাম বিদ্বেষী।
ক. কখন বৈঠক ডাকা হলো?
খ. মসজিদের ব্যাপারে খালেক ব্যাপারী কেন বারো আনা খরচ বহন করতে চায়?
গ. ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ এর লেখকের সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্র কোনটি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ আর ‘লালসালু’র দাড়ি না থাকা একই রকম হামলার একই অস্ত্রবিশেষ।” মূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
১৬ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
সন্ধ্যার পরে বৈঠক ডাকা হলো।
ছ অনুধাবন
মজিদের তৈরি করা ফাঁদে পা দেওয়া খালেক ব্যাপারী গ্রামের মাতব্বর এবং সবচাইতে পয়সাওয়ালা লোক। আগেও সে মাজারের জন্যে অনেক পয়সা খরচ করেছে, গিলাফ বদলে দিয়েছে। এখন সে মসজিদের জন্যেও টাকা দেবে। কিন্তু বেশির ভাগ খরচ সে একাই বহন করতে চায় কারণ তার মনটা বড় অশান্তিতে আছে, সংসারেও তার বিরাগ এসেছে। আগের মতো দুনিয়ার কাজে সে শান্তি পায় না। সে জন্যে সে পরকালের চিন্তা করে এবং আলাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়।
জ প্রয়োগ
‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ এর লেখকদের সাথে ‘লালসালু’ উপন্যাসের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রটি হলো মোদাব্বের মিঞার ছেলে আক্কাস।
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাসে আক্কাস মোদাব্বের মিঞার ছেলে। সে ইংরেজি স্কুলে পড়েছে। তারপর বিদেশে গিয়ে বহুদনি থেকেছে। সেখানে চাকরি করে পয়সা জমিয়ে সে আবার গ্রামে ফিরে এসেছে। আক্কাস গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
উদ্দীপকের ১৯২৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ এর লেখকদের আদর্শ ও তাদের বিরোধী শক্তির কথা বলা হয়েছে। ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ এর লেখকদের দৃষ্টি ছিল যুক্তিবাদীয় দৃষ্টি, চিন্তা-সংস্কারের দৃষ্টি এবং সমাজ-সংস্কারের দৃষ্টি। পক্ষান্তরে নতুন চিন্তার আভাসে রক্ষণশীলেরা চিরদিনই শঙ্কিত হয়ে ওঠেন, সেদিনও হয়েছিলেন। তারা অভিযোগ করেন ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র লেখকরা ইসলাম বিদ্বেষী। উদ্দীপকের ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র লেখকদের অনুরূপ ‘লালসালু’ উপন্যাসের আক্কাসের এ ধারণা হয়েছে যে স্কুলে না পড়লে মুসলমানের ছেলেদের উন্নতি হবে না। গ্রামে মক্তব আছে বটে, কিন্তু মক্তবে পড়–য়ারা আধুনিক চেতনা থেকে পিছিয়ে থাকে। সে জন্যে আক্কাস মনে করে গ্রামে একটি স্কুল থাকা উচিত। মূলত আক্কাস একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে গ্রামে আসে। কিন্তু অবশেষে ধর্মের কারবারী মজিদের কারণে আক্কাস স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
উদ্দীপকে ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ আর ‘লালসালু’র দাড়ি না থাকা একই রকম হামলার একই অস্ত্রবিশেষ। প্রতিক্রিয়াশীল ভন্ড ধর্মব্যবসায়ী মজিদ দাড়ি না থাকার কথাটি বলেছে মোদাব্বের মিঞার ছেলে আক্কাসকে।
আক্কাস গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আধুনিক শিক্ষা গ্রামে চালু হলে মক্তবের লেখাপড়ায় পড়–য়াদের আগ্রহ কমে যাবে। তখন মজিদের মতো ধর্মের কারবারীদের অসুবিধা হবে। সে জন্যে মজিদ গ্রামে স্কুল হতে দিতে চায় না। মজিদের সুবিধা হলো এই যে, গ্রামের অজ্ঞ লোকেরা তাকে ভয় করে এবং তার কথায় ওঠে বসে।
উদ্দীপকে ১৯২৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকয় প্রতিষ্ঠিত ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ এর লেখকদের আদর্শ ও তাদের বিরোধী শক্তির কথা বলা হয়েছে। ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’-এর লেখকদের দৃষ্টি ছিল যুক্তিবাদীর দৃষ্টি, চিন্তা-সংস্কারের দৃষ্টি এবং সমাজ-সংস্কারের দৃষ্টি। পক্ষান্তরে নতুন চিন্তার আভাসে রক্ষণশীলেরা চিরদিনই শঙ্কিত হয়ে ওঠেন, সেদিনও হয়েছিলেন। তারা অভিযোগ করেন ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র লেখকরা ইসলাম বিদ্বেষী। উদ্দীপকের ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র লেখকদের অনুরূপ ‘লালসালু’ উপন্যাসের আক্কাস একজন প্রগতিপন্থী আধুনিক ছেলে। আক্কাসকে থামিয়ে দিতে মজিদ তৎপর হয়। মুসলমানের ছেলে দাড়ি রাখে না এ কথাটি বললে গ্রামের লোকেরা আক্কাসের বিরুদ্ধে যাবে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। মজিদ লোকজনদের সামনে এটি প্রমাণ করলো যে আক্কাস ইসলাম ধর্মের রীতিনীতি মানে না।
মূলত উদ্দীপকের রক্ষণশীলেরা এবং ‘লালসালু’র মজিদ নিজের প্রভাব বজায় রাখার জন্যে ইসলামের নামে এসব কথা বলে সমাজের প্রগতিপন্থীদের হামলা করে থামিয়ে দিতে চায়।
প্রশ্ন\ ১৭\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
৬৩০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ‘বিদায় হজ্জ’-এ মহানবি (স) সমগ্র মানবজাতিকে উলেখ করে বলেন, “শ্রবণ কর। মূর্খতা যুগের সমস্ত কুসংস্কার, সমস্ত অন্ধবিশ্বাস এবং সকল প্রকারের অনাচার আজ আমার পদতলে দলিত মথিত অর্থাৎ রহিত ও বাতিল হইয়া গেল। …….ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি করিও না। ইহার অতিরিক্ততার ফলে তোমাদিগের পূর্ববর্তী বহু জাতি ধ্বংস হইয়া গিয়াছে।”
ক. করিমগঞ্জে কী আছে?
খ. মজিদের মন থমথম করে কেন?
গ. উদ্দীপকে উলিখিত ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে?
ঘ. “মূর্খতা যুগের সমস্ত কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস এবং অনাচারের আদর্শ ভূমি ‘লালসালু’র মহব্বতনগর।” মন্তব্য বিষয়ের সাথে কি তুমি একমত ? তোমার মতামতের পক্ষে যুক্তি দাও। ১
২
৩
৪
১৭ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
করিমগঞ্জে একটি হাসপাতাল আছে।
ছ অনুধাবন
মহব্বতনগরের আশপাশে আওয়ালপুরে আগত জাঁদরেল পীরের আনাগোনায় মজিদের মন থমথম করে।
সে ভীতসন্ত্রস্ত। কারণ সে বুঝে গেছে যে, লোকজন মজিদের চেয়ে ঐ পীরকে বেশি শ্রদ্ধা ও ভক্তি করে। নতুন পীর সাহেব আসার পর মাজারেও লোকজন কম আসা-যাওয়া করে। লোকজন ছোট আওয়ালপুরের পীর সাহেবের কাছে। তাকে একটু দেখতে চায়, তার পায়ে একটু চুমু দিতে চায়। এসব দেখে শুনে মজিদ গম্ভীর হয়ে যায়। মাজারে মন থমথম করে।
জ প্রয়োগ
উদ্দীপকে উলিখিত ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদের আওয়ালপুরের পীরের সাথে সৃষ্ট দ্ব›দ্ব সংঘাতকে ইঙ্গিত করে।
মজিদ নিজে প্রতারক, ভন্ড ও ধর্মব্যবসায়ী। আওয়ালপুরের পীর সাহেবকেও সে বুঝেছে। সবচেয়ে বড় কথা নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি জিইয়ে রাখতে হলে মহব্বতনগর গ্রামবাসী যারা আওয়ালপুরের পীর সাহেবের কাছে গিয়েছে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই মজিদ আওয়ালপুরের পীরের কারসাজি ধরিয়ে দিয়ে নিজের প্রভাব রক্ষার জন্যে আওয়ালপুরে যায়। সহজ কথায় মহব্বতনগরের গ্রামবাসী মজিদকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে, সম্মান করেছে। এখন তারাই আবার আওয়ালপুরে ছুটছে, যা মজিদের জন্যে হুমকিস্বরূপ। তাই সে নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখার জন্যে আওয়ালপুরে যায়।
উদ্দীপকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স:)- এর বিশ্ব মানবতার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বিদায় হজ্জের ভাষণের সংকলিত অংশে দেখা যায়, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “সাধারণ! ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি করিও না।” অথচ স্বীয় স্বার্থ নিষ্কন্টক রাখার স্বার্থে উদ্দীপকের মজিদ আওয়ালপুরের পীর সাহেবের সাথে ধর্মীয় বিষয়ে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়। আওয়ালপুরের পীর সাহেবের নির্দেশে জোহরের নামাজের সময় বহুক্ষণ আগে শেষ হওয়ার পরও এক লোক সবাইকে কাতার বন্দি হতে বলে। নামাজ শেষ হওয়ার পরে মজিদ চিৎকার করে প্রতিবাদ জানিয়ে বলে, জোহরের নামাজের সময় বহু আগে পার হয়েছে। পীরের লোকেরা লাঠি দিয়ে সূর্যের ছায়া মেপে দেখে মজিদের কথা ঠিক। মজিদ তখন মহব্বতনগরের লোকদের তার সাথে ফিরে আসার জন্য বলে। লোকজনও তার সঙ্গে চলে আসে।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যে ‘লালসালু’ উপন্যাসের মহব্বতনগরকে যে মূর্খতা যুগের সমস্ত কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস এবং অনাচারের আদর্শ ভূমি বলা হয়েছে তার সাথে আমি একমত।
সমাজচেতন ঔপন্যাসিক এবং জীবন ঘনিষ্ঠ শিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাস চলিশের দশকের বাংলার প্রচলিত সমাজব্যবস্থার একটি নির্মম দর্পণ। গ্রাম-বাংলার ধর্মান্ধতার সুযোগে অন্তঃসারশূন্য একটি কবরকে কেন্দ্র করে মজিদ নামক জনৈক ভন্ডপীরের জীবনকাহিনীই এর মুখ্য বর্ণনার বিষয় হলেও তৎকালীন পলী বাংলায় মুসলিম সমাজজীবনের অতি বাস্তব চিত্র নিখুঁতভাবে চিত্রিত হয়েছে এখানে। উদ্দীপকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স:)- এর সমগ্র মানবজাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বিদায় হজ্জের ভাষণের সংকলিত অংশ দেওয়া হয়েছে। এখানে মহানবী (স:) বিশ্ব মানবতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “শ্রবণ কর। মূর্খতা যুগের সমস্ত কুসংস্কার, সমস্ত অন্ধবিশ্বাস এবং সকল প্রকারের অনাচার আজ আমার পদতলে দলিত মথিত অর্থাৎ রহিত ও বাতিল হইয়া গেল।” ‘অথচ ‘লালসালু’ উপন্যাসে আমরা মহব্বতনগর গ্রামের অন্ধবিশ্বাস এবং অনাচারের আদর্শভূমি রূপে দেখি।
তৎকালে এদেশের সামাজিক অবস্থা ছিল শিক্ষাবর্জিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে গ্রামের মানুষকে প্রতারিত করত। গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোর মধ্যে ছিল অন্ধ পীরভক্তি, স্বার্থবাদী ভন্ডপীরেরা গ্রামের লোকদের এ সরলতার সুযোগই গ্রহণ করত। পীরের কথা ছিল তাদের নিকট দ্বৈববাণীর মতো। এ কারণে ভন্ডপীর মজিদের কথায় খালেক ব্যাপারী তার নির্দোষ স্ত্রী আমেনা বিবিকে তালাক দিয়ে প্রচলিত বিশ্বাসের স্রোতে সে আপনাকে ভাসিয়ে দিয়েছে।
ওপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে, ‘লালসালু’ তৎকালীন সমাজের পীরভক্তি, ধর্মীয় ভন্ডামি, কুসংস্কার, মানুষের অজ্ঞতা ও মূর্খতার এক বাস্তব চিত্র। মহব্বতনগর গ্রামে আছে বহু মানুষের হৃদয়ের হাহাকার, আছে অনেকের ব্যর্থতার করুণ কাহিনী, ‘লালসালু’র রক্ত রঙিন আবরণে ঢাকা রয়েছে বহু বেদনা, বহু বঞ্চনার কাহিনী, বহু ব্যর্থ কামনার এক অবর্ণনীয় ইতিহাস।
প্রশ্ন\ ১৮\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বহিপীর=(দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে) এতক্ষণে ঝড় থামিল। তাহারা গিয়াছে, যাক। তা ছাড়া তো আগুনে ঝাঁপাইয়া পড়িতে যাইতেছে না। তাহারা তাহাদের নতুন জীবনের পথে যাইতেছে। আমরা কী করিয়া তাহাদের ঠেকাই। আজ না হয় কাল যাইবেই।
ক. ‘লালসালু’ উপন্যাসের শেষ বাক্যটি কী?
খ. মজিদ না ঘুমিয়ে দাওয়ার ওপর বসে থাকে কেন?
গ. উদ্দীপকের বহিপীরের অনুধাবনের অনুরূপ অনুধাবন মজিদ চরিত্রে তুলে ধর।
ঘ. “উদ্দীপকের বহিপীরের অনুধাবনের অনুরূপ অনুধাবন মজিদের ভিতর ক্ষণিকের জন্যে এলেও তা মজিদকে পাল্টাতে পারেনি।” মন্তব্য বিষয়ে মতামত তুলে ধর। ১
২
৩
৪
১৮ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে-চোখ।
ছ অনুধাবন
নিজের প্রভাব বজায় রাখার জন্যে মজিদ জোর করে অন্ধকার মাজার ঘরে জমিলাকে নিয়ে য়ায়। তারপর সে জমিলাকে একটা খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখে। তাকে বলে এক রাত মাজার পাকের কাছে থাকলে দুষ্ট আত্মা বাপ বাপ করে পালাবে এবং এভাবে জমিলার মনে খোদাভীতি ও স্বামীভক্তি আসবে। জমিলাকে মাজার ঘরে আটকে রেখে মজিদ ঘরের ভেতরের দাওয়ায় বসে থাকে। তার ধারণা জমিলার তীক্ষè আর্তনাদ একটু পরে শোনা যাবে। তাই সে না ঘুমিয়ে দাওয়ার ওপর বসে থাকে। কিন্তু জমিলার তীক্ষè আর্তনাদ দূরে থাক কোনো টু-শব্দ পর্যন্ত শোনা যায় না ।
জ প্রয়োগ
সংজ্ঞাহীন জমিলাকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার পর মজিদের মনে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তারই মাঝে উদ্দীপকের বহিপীরের অনুধাবনের অনুরূপ লক্ষণীয়।
জমিলাকে মাজার ঘরে আটকে রেখে মজিদ তার আর্তনাদ শোনার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু সারা রাতে অপেক্ষা করার পরও তার সে আশা পূরণ হয়নি। সারা রাত ধরে ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি থামলে রহিমার কথা মতো জমিলাকে আনতে যায় মজিদ। মাজারের ঝাপটা খুলে মজিদ দেখে জমিলা সালু কাপড়ে ঢাকা কবরের পাশে হাত-পা ছড়িয়ে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। তার চোখ বোজা, বুকে কাপড় নেই। আর মেহেদি দেওয়া একটি পা কবরের গায়ের সঙ্গে লেগে আছে। জমিলা সম্পূর্ণ সংজ্ঞাহীন। মজিদ তাকে পাজাকোলে করে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়। রহিমা তাকে চেয়ে চেয়ে দেখে। তারপর প্রবল আবেগের বশে জমিলার দেহে হাত বুলোতে থাকে। অদূরে বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মজিদ।
উদ্দীপকে সংকলিত বহিপীরের সংলাপ থেকে আমরা ধারণা করতে সক্ষম হই যে, তীব্র এক দ্ব›দ্ব-সংগ্রামমুখর অবস্থা পেরিয়ে বহিপীর পরিবর্তনকে অনুধাবন করেছেন। উদ্দীপকের অনুরূপ পরিবর্তন ক্ষণিকের জন্যে ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের মধ্যেও দেখা যায়। শুশ্র“ষারত রহিমা ও সংজ্ঞাহীন জমিলার দিকে তাকিয়ে মজিদের মনে হয়, মুহূর্তের মধ্যে যেন কেয়ামত হবে, নিমিষের মধ্যে তার ভেতরটা ওলটপালট হয়ে যাবার উপক্রম। একটা বিচিত্র জীবন আদিগন্ত উন্মুক্ত হয়ে ক্ষণকালের জন্যে প্রকাশ পায় তার চোখের সামনে। আর একটা সত্যের সীমানায় পৌঁছে জন্ম-বেদনার তীক্ষè যন্ত্রণা অনুভব করে মনে মনে।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
“উদ্দীপকের বহিপীরের অনুধাবনের অনুরূপ অনুধাবন মজিদের ভিতর ক্ষণিকের জন্যে এলেও তা মজিদকে পাল্টাতে পারেনি।” প্রশ্নোক্ত এ মন্তব্যের সাথে আমি একমত।
উদ্দীপকে সংকলিত বহিপীরের সংলাপ থেকে আমরা ধারণা করতে সক্ষম হই যে, তীব্র এক দ্ব›দ্ব-সংগ্রামমুখর অবস্থা পেরিয়ে বহিপীর পরিবর্তনকে অনুধাবন করেছেন। উদ্দীপকের অনুরূপ পরিবর্তন ক্ষণিকের জন্যে ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের মধ্যেও দেখা যায়। শুশ্র“ষারত রহিমা ও সংজ্ঞাহীন জমিলার দিকে তাকিয়ে মজিদের মনে হয়, মুহূর্তের মধ্যে যেন কেয়ামত হবে, নিমিষের মধ্যে তার ভেতরটা ওলটপালট হয়ে যাবার উপক্রম। একটা বিচিত্র জীবন আদিগন্ত উন্মুক্ত হয়ে ক্ষণকালের জন্যে প্রকাশ পায় তার চোখের সামনে। আর একটা সত্যের সীমানায় পৌঁছে জন্ম- বেদনার তীক্ষè যন্ত্রণা অনুভব করে মনে মনে।
ইতোমধ্যে আবার শিলাবৃষ্টিতে ধানের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এই দৃশ্য দেখে গ্রামের লোকেরা হাহুতাশ করতে লাগল। একজন বলে ওঠে, “সবইতো গেল। এইবার নিজেই বা খামু কি, পোলাপাইনদেরই বা দিমু কি? তখন মজিদ গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে বলে, “নাফরমানি করিও না, খোদার ওপর তোয়াক্কল রাখো।” ধর্ম-ব্যবসায়ী মজিদ মানুষকে ঠকানোর উদ্দেশ্যেই সান্ত্বনার বাণী ছড়ায়। মজিদ চরিত্রের এই দিকটি উদঘাটিত হয়ে যাওয়ায় একটি বিষয় আলোকিত হয়ে ওঠে যে, মজিদ শেষ পর্যন্ত মজিদই থাকে, মানুষ হয়ে আর ওঠে না। উপন্যাসে মজিদ চরিত্রের কোনো প্রকার উত্তরণ ঘটে না।
উপন্যাসের প্রথমে যে মজিদের আবির্ভাব হয়েছিল, মধ্যবর্তী অবকাশে, নানাবিধ ঘটনা ঘটবার পরও উপন্যাসের সমাপ্তিতে সে সেই মজিদই থেকে যায়।
প্রশ্ন\ ১৯\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সতীন সফুরার কাছে বিয়ের দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিল চৌদ্দ বছর বর্ষীয়া জুলেখা। “বুঝলানি ভইব, আমিতো পেরথম মনে করছিলাম, তানি বুঝি দুলার চাচা, খালু”। একথা বলেই জুলেখা বিচিত্রভাবে হাসতে থাকে। ঝরনার অনাবিল গতির মতো ছন্দময় দীর্ঘ সমাপ্তিহীন জীবন্ত সে হাসির শব্দ কানে যেতেই প্রায় ষাট বছর বয়সী জুলেখার স্বামী কলিম ফরাজি খেউ খেউ করতে করতে হাজির হলো। বেশরম, বে-শরিয়তি হাসির জন্য জুলেখাকে তীব্র ভর্ৎসনা করলো। ফরাজির আচরণে আগে থেকে দানা বাঁধা কষ্টের নুড়িতে জুলেখা যেন এক কঠিন পাথর বনে গেল।
ক. সে হঠাৎ জমিলাকে বুকে টেনে নেয় কপালে আস্তে চুমা খায়?
খ. মজিদের মনটা তৃপ্তিতে ভরে উঠে কেন?
গ. উদ্দীপকের জুলেখা ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি?
ঘ. “জুলেখার পাথর বনে যাওয়া আর জমিলার ঠাটাপড়া মানুষের মতো হয়ে যাওয়া, একই অনুভূতি থেকে উৎসারিত আঘাতের পরিণতি।” মূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
১৯ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
রহিমা হঠাৎ জমিলাকে বুকে টেনে নেয় কপালে আস্তে চুমা খায়।
ছ অনুধাবন
মজিদের মনটা তৃপ্তিতে ভরে উঠে, কারণ মজিদ দেখে তার মিথ্যে গল্পের একটা ফল হয়েছে। জমিলার চোখে ভীতির ছায়া দেখা যায়। মজিদ তখন ধারণা করে তার শিক্ষা সার্থক হয়েছে। মজিদ আরো তৃপ্ত হয় তখন যখন সে দেখে জমিলা অনেকক্ষণ ধরে নামাজ পড়ে। রহিমা ঘরের কাজ করে আসার পরও দেখা যায় জমিলা নামাজ পড়ছে। এতে মজিদ বেজায় খুশি হয়।
জ প্রয়োগ
উদ্দীপকের জুলেখা উপন্যাসের জমিলা চরিত্রের প্রতিচ্ছবি। বাংলা সাহিত্যের অপ্রতিদ্ব›দ্বী ঔপন্যাসিক সৈয়দ ওয়ালীউলাহÍ ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলার হাসির রূপ এখানে ব্যক্ত করা হয়েছে।
জামিলা মজিদের দ্বিতীয় বউ হিসেবে এ বাড়িতে এসেছে। মজিদের সঙ্গে তার বয়সের বিরাট ব্যবধান। মজিদ তার পিতার বয়সী। কিন্তু এর সঙ্গে তার বিয়ে হওয়াই হাসির বিষয়। সে কথা রহিমাকে বলতে গিয়ে জমিলা দারুণভাবে হেসে উঠে।
উদ্দীপকে আমরা দেখি, সতীন সফুরার কাছে বিয়ের দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিল চৌদ্দ বছর বর্ষীয়া জুলেখা। সে বলে সে প্রথমে মনে করেছিল তার স্বামীটি বুঝি দুলার চাচা বা খালু। একথা বলেই জুলেখার মতো ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলাও হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়েছে। হাসি আর থামে না। তার হাসি জীবন্ত। ঝরনা যেমন স্বচ্ছ গতিতে ছন্দময় ভঙ্গিতে এগিয়ে চলে এবং আসলে জমিলার এ হাসি তার জীবনের প্রতি একটি প্রচণ্ড কৌতুক।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
আশাহতের, বঞ্চিতের যে শোক তা উদ্দীপকের জুলেখাকে পাথর বানিয়েছে আর ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলাকে বানিয়েছে ঠাটাপড়া মানুষের মতো।
উপন্যাসের জমিলা মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী। অল্পবয়সী একটি বালিকা। তার জীবনে বাসনা-কামনা আছে। কিন্তু সে জীবনকে যেভাবে ভেবেছিল তার জীবন সেভাবে হলো না। তাকে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হলো পিতার বয়সী এক বুড়ো লোকের সঙ্গে। যার এক বউ আগে থেকেই আছে। সব মিলিয়ে তার জীবন তার কাছেই কৌতুককর মনে হয়।
উদ্দীপকে আমরা দেখি, সতীন সফুরার কাছে বিয়ের দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিল চৌদ্দ বছর বর্ষীয়া জুলেখা সে বলে সে প্রথমে মনে করেছিল তার স্বামীটি বুঝি দুলার চাচা বা খালু। একথা বলেই জুলেখা বিচিত্রভাবে হাসতে থাকে। ঝরনার অনাবিল গতির মতো ছন্দময় দীর্ঘ সমাপ্তিহীন জীবন্ত সে হাসি। কিন্তু এমনি সহজ সচ্ছন্দময় হাসিও স্বামীর বিধি-নিষেধ ও রক্তচক্ষুর আঘাতে স্তব্ধ হয়ে যায়। ফলে সে আগে থেকে দানা বাঁধা কষ্টের নুড়িতে এক কঠিন পাথর বনে যায়। উদ্দীপকের জুলেখার মতো ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলা প্রাণ খুলে হাসতেও পারে না। মজিদের শাসন চলে সর্বক্ষণ। খ্যাংটা বুড়ির ছেলের জন্য জমিলারও মন খারাপ হয়। মজিদ ওসব বোঝে না। মন খারাপ হলে দুনিয়াদারির কাজ কি চলবে না। কিন্তু জমিলা পাথরের মতো হয়ে গেছে। কোনোদিকে তার হুঁশ নেই। বজ্রাহতের মতো হয়ে গেছে সে। জীবনের প্রতি সুতীব্র অভিমানে যে হাসি তা অনেক সময় তীরের ফলার চেয়েও ধারাল এবং বেদনাদায়ক।
জীবনের আশা-আকাক্সক্ষা সব শেষ হয়ে যাওয়ায় উদ্দীপকের জুলেখা এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলা পাথর বনে যায়, বনে যায় ঠাটাপড়া মানুষ যাদের কোনো স্বপ্ন নেই।
প্রশ্ন\ ২০\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রাসু ডাকাত যেমন নৃশংস তেমনি দুর্ধর্ষ। নিজ দল ও এলাকায় তার অপ্রতিহত কর্তৃত্ব। প্রথম বিয়ের প্রায় বিশ বছর পর ডাকাতি করতে গিয়ে নরম লাজুক দেখতে এক ঘোড়শী সুন্দরী কন্যাকে লুট করে এনে বিয়ে করে রাসু ডাকাত। দেখতে নরম লাজুক মেয়েটিই একদিন থানার পুলিশ ডেকে এনে রাসু ডাকাতকে গ্রেফতার করায়। হতভম্ভ রাসু ডাকাত প্রথমা স্ত্রী রাশিদাকে উদ্দেশ্য করে বলল, এ কারে বিয়া করলাম? বিবি, তুমি বদদোয়া দিছিলা নি? রাশিদা বিয়ের দীর্ঘদিন পরে তাকিয়ে নতুন এক রাসুকে দেখে।
ক. কে ল্যাট মেরে বসেই থাকে?
খ. মজিদ আমেনা বিবির প্রতি ক্ষুব্ধ কেন?
গ. রাশিদার চোখে দেখা নতুন রাসু ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে?
ঘ. “রাসুর জিজ্ঞাসা আর মজিদের জিজ্ঞাসা একই সুতোয় গাঁথা।” মন্তব্যটি তুমি সমর্থন কর কি? মতের সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর। ১
২
৩
৪
২০ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
জমিলা ল্যাট মেরে বসেই থাকে।
ছ অনুধাবন
সন্তানহীনা আমেনা বিবি আওয়ালপুরের পীরের পানি পড়া খেতে চেয়েছিল সন্তান কামনায়। এ ঘটনা জানতে পেরে মজিদ ভীষণ ক্ষেপে যায়। মজিদ বুঝতে পারে সে মহব্বতনগরবাসীর মনে যে বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাতে যদি একবার ফাটল ধরে তবে আর রক্ষা নেই। এছাড়া আমেনা বিবি মজিদকে অবিশ্বাস করে আওয়ালপুরের পীরের পানি পড়া খেতে চেয়েছে বলে মজিদ মনে করে। তাই মজিদ আমেনা বিবির প্রতি ক্ষুব্ধ হয়।
জ প্রয়োগ
রাশিদার চোখে দেখা নতুন রাসু ‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমার চোখে দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলার প্রতিবাদে হতবুদ্ধি ও অসহায় এক নতুন মজিদকে দেখার ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে। বাংলা সাহিত্যের এক ভিন্ন স্বাদের উপন্যাস ‘লালসালু’। মজিদ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। উপন্যাসের এক পর্যায়ে নতুন এক মজিদকে দেখে তার স্ত্রী রহিমা।
মজিদ হাড়সর্বস্ব ছোটখাটো মানুষ হলে কি হবে, সে খুব প্রতাপশালী। মহব্বতনগরে সে হলো সবচেয়ে শক্তিমান লোক। তার স্ত্রী রহিমা বিশালদেহী, কিন্তু সে স্বামীকে খুব ভয় করে। স্বামীর প্রতি সে তার আনুগত্য অটুট রেখেছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, বিয়ের দীর্ঘ বিশ বছরেও রাসু ডাকাতের প্রথমা স্ত্রী রাশিদা যা পারেনি, দ্বিতীয় স্ত্রী বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তা পেরেছে। সে পুলিশকে দিয়ে রাসু ডাকাতকে গ্রেফতার করায়। হতভম্ব রাসু ডাকাত প্রথমা স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তার অসহায়ত্তের কথা জানায়, এতে করে সে বিয়ের দীর্ঘ দিন পরে এক নতুন রাসুকে আবিষ্কার করে।
উদ্দীপকের রাসুর দ্বিতীয় স্ত্রীর অনুরুপ মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা মজিদকে মানতে চায় না। সে ঘোমটা খুলে সকলের সামনে বেরিয়ে আসে, জিকিরের সময় তাই হয়েছে। জমিলাকে বিয়ে করে মজিদ ভুল করেছে কিনা এটিই রহিমার কাছে মজিদের জিজ্ঞাসা। মজিদকে বড় অসহায় মনে হয়। রহিমার ওপর মজিদ নির্ভরতা খুঁজে পায় যেন। খুব কোমল কন্ঠে পরমাত্মীয়ের মতো সে রহিমার কাছে তার দুঃখ প্রকাশ করে। মজিদের এ নতুন রূপ। কখনো মজিদকে সে এমন রূপে পায় নি, এমনভাবে কথা বলতে দেখেনি। উপন্যাসের এ পর্যায়ে এসে মজিদকে একজন অসহায় মানুষ হিসেবে পাওয়া যায়।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
মানুষ ভাবে এক হয় আর এক। এ কারণে মানুষ কখনো কখনো তার কৃতকর্মের ভুল আবিষ্কার করে এবং তার জন্যে অনুতপ্ত হয়।
উদ্দীপকের রাসু এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের জিজ্ঞাসা এমনি অনুতাপ বোধে গাঁথা। মজিদের ধারণা ছিল জমিলাকে বিয়ে করলে সংসারে আনন্দ ও বৈচিত্র্য বাড়বে। কিন্তু মজিদের এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। অল্পবয়সী উচ্ছল স্ত্রী জমিলাকে সে একেবারেই বশ করতে পারেনি। মজিদের বয়স এ মাজারের পরিবেশের সঙ্গে জমিলা মোটেও খাপ খাওয়াতে পারেনি।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বিয়ের দীর্ঘ বিশ বছরেও রাসু ডাকাতের প্রথমা স্ত্রী রাশিদা যা পারেনি, দ্বিতীয় স্ত্রী বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তা পেরেছে। সে পুলিশকে দিয়ে রাসু ডাকাতকে গ্রেফতার করায়। হতভস্ব রাসু ডাকাত প্রথমা স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তার সে অসহায়ত্তের কথা জানায়, এতে করে সে বিয়ের দীর্ঘ দিন পরে এক নতুন রাসুকে আবিষ্কার করে।
উদ্দীপকের রাসুর দ্বিতীয় স্ত্রী অনুরূপ মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা মজিদকে মানতে চায় না। সে ঘোমটা খুলে সকলের সামনে বেরিয়ে আসে, জিকিরের সময় তাই হয়েছে। মজিদ জমিলার ব্যবহারে খুব ক্রুব্ধ হয় ও দুঃখ পায়। সে বোঝে জমিলা তার কথামতো চলবে না। এ রকম একটা মেয়েকে সে কেন বিয়ে করলো এ অনুতাপে তার মন ভেঙে যায় এবং এ কথা সে রহিমাকে বলে। রহিমা তার প্রথমা স্ত্রী। প্রথমা স্ত্রী থাকতে আরেকটা বিয়ে করাতে রহিমা তাকে বদদোয়া দিয়েছে নিশ্চয়ই তা না হলে জমিলা এমন অবাধ্য কেন? মজিদের উক্তিতে এটি বোঝা যায় জমিলার ব্যাপারে সে খুব অসহায়। উপন্যাসের এ পর্যায়ে এসে মজিদকে একজন অসহায় মানুষ হিসেবে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন\ ২১\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
গত শীতে মিরা তার বান্ধবী রোজির গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়াছিল। বান্ধবীর বাবা খোনকার সাব। এলাকার ছোট হুজুর হিসেবে পরিচিত। একদিন গ্রামের এক তরুণীর দুষ্ট জিনের আছর ছাড়াতে খোনকার সাব বাড়িতে দরবার বসান। প্রথমে বেশ কিছুক্ষণ দুর্বোধ্য আরবি-ফার্সি বা উর্দু জবানে নানা ছন্দময় বুলির জেকের হলো। নতুন বলে মিরার কাছে পুরো ব্যাপারটা অস্বস্তিকর ও বিভ্রান্তিকর মনে হয়। দিশেহারা মিরা বান্ধবীর মায়ের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায়। কিন্তু স্বামীর প্রতি মহিলার আনুগত্য ধ্র“বতারার মতো অনড়, বিশ্বাস পর্বতের মতো অটল।
ক. কীসের পর জিকির শুরু হয়?
খ. জমিলা এশার নামাজ পড়তে এবং রাতের খাবার খেতে পারে না কেন?
গ. উদ্দীপকের মিরা ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের অনুরূপ তা নিরূপণ কর।
ঘ. “স্বামীর প্রতি মহিলার আনুগত্য ধ্র“বতারার মতো অনড়, বিশ্বাস পর্বতের মতো অটল” ‘লালসালু’ উপন্যাসের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
২১ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
যথেষ্ট দোয়া দরুদ পাঠের পর জিকির শুরু হয়।
ছ অনুধাবন
মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা বয়সে তরুণী। সে একটু ঘুমকাতুরে মেয়ে। সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দু চোখ ঘুমে জড়িয়ে যায়। মাগরিবের নামাজ কোনো রকমে পড়তে পারলেও এশার নামাজ সে পড়তে পারে না। রাতের খাবার খেতে পারে না এ কারণে। জমিলার ঘুম কাঠের মতো অর্থাৎ জমিলা একবার ঘুমালে আর উঠবার নাম করে না।
জ প্রয়োগ
উদ্দীপকের মিরা ‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলার অনুরূপ। মাজারে এক সন্ধ্যায় জিকির হয়। এ উপলক্ষে খিচুড়িও রান্না করা হয়। রান্নার দায়িত্বে থাকে মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমা। দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা রহিমার রান্নাবান্নার কাজ দেখে। বাইরে থেকে জেকেরের আওয়াজ আসতে থাকে। প্রথমে জেকের চলে আস্তে আস্তে, পরে তা বহু মানুষের সম্মিলিত আওয়াজে প্রচণ্ড গতি পায়। এতে জমিলার মনের মধ্যে কেমন একটা ভয় জাগে।
উদ্দীপকের মিরা তার বান্ধবী রোজির গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দুষ্ট জিনের আছর ছাড়াতে কথিত দরবারের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। দরবারে বেশ কিছুক্ষণ দুর্বোধ্য আরবি-ফার্সি বা উর্দু জবানে নানা ছন্দময় বুলির জেকের হয়। নতুন বলে মিরার কাছে পুরো ব্যাপারটা অস্বস্তিকর ও বিভ্রান্তিকর ঠেকে। সে দিশেহারা হয়ে উঠে।
উদ্দীপকের মিরার অনুরূপ মজিদের জেকেরের আওয়াজে তার দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলাও সচকিত হয়ে উঠে। ঝড়ের সমুদ্্েরর এক একটা ঢেউ যেমন তীরে আঘাত হানে, ঠিক তেমনি জেকেরের ঘন ঘন ধ্বনি জমিলার হৃদয়ে আঘাত হানে, জমিলার হৃদয় সমুদ্রের তীরের মতো শক্ত নয়। রহিমার মধ্যে বরং কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। রহিমা বহুবার জেকের শুনেছে। কিন্তু জমিলা কখনও জেকের শোনে নি। সে জন্যে প্রচণ্ড গতিসম্পন্ন জেকের জমিলাকে দিশেহারা করে তোলে, সে বিভ্রান্ত হয়ে রহিমার দিকে তাকায়।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
প্রশ্নোক্ত মন্তব্য উদ্দীপকের মিরার বান্ধবীর মায়ের ‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমার মতো স্বামীভক্তি সম্পর্কে সুন্দর একটা বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
মহব্বতনগর গ্রামে এসে মজিদ স্থায়ীনিবাস গড়েছে এবং রহিমাকে বিয়ে করেছে। চওড়াদেহী রহিমা তেমন সুন্দর নয়, কিন্তু সে শান্তশিষ্ট কর্মনিপুণা এক মহিলা। তাছাড়া স্বামীর মুখের ওপর সে কখনো কথা বলেনি। রহিমা সেবাযতœ ও পরিশ্রম দিয়ে সংসারকে আগলে রেখেছে; মজিদের মেজাজ-মর্জি সবই সে ভালো করে বোঝে এবং সেভাবে চলে। মজিদ পরে অল্পবয়সী তরুণী জমিলাকে বিয়ে করে। জমিলার রূপ যৌবনে আকৃষ্ট হয়ে সে দ্বিতীয় বিয়ে করে। মজিদ আশা করেছিল জমিলাকে বিয়ে করে সে আরো বেশি আনন্দ পাবে কিন্তু সে অচিরেই তার ভুল বুঝতে পারে। উদ্দীপকের মিরা তার বান্ধবী রোজির গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দুষ্ট জিনের আছর ছাড়াতে কথিত দরবারের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। দরবারে বেশ কিছুক্ষণ দুর্বোধ্য আরবি-ফার্সি বা উর্দু জবানে নানা ছন্দময় বুলির জেকের হয়। নতুন বলে মিরার কাছে পুরো ব্যাপারটা অস্বস্তিকর ও বিভ্রান্তিকর ঠেকে। সে দিশেহারা হয়ে উঠে।
উদ্দীপকের মিরার অনুরূপ মজিদের জেকেরের আওয়াজে তার দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলাও জিকিরের সময় রীতিনীতি ভয় উপক্ষো করে ঘরের বাইরে চলে আসে। ঝড়ের সময় সমুদ্রের তীরের মতো শক্ত নয়। রহিমার পার্থক্য বোঝা যায়। মজিদ অনুভব করে, এমন একটি মেয়েকে সে কেন বিয়ে করলো এ প্রশ্ন জাগে। তখন রহিমার সঙ্গে জমিলার পার্থক্য বোঝা যায়। মজিদ অনুভব করে, রহিমা এমন একটি মেয়ে যায় উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা যায়। স্বামীর প্রতি রহিমার ভক্তি বিশ্বাস কখনো টলেনি এবং সব সময় সে স্বামীর প্রতি অনুগত থেকেছে। স্বামীর প্রতি রহিমার আনুগত্য ধ্র“বতারর মতো অনড়, বিশ্বাস পর্বতের মতো অটল।
প্রদত্ত উদ্দীপকের মিরার বান্ধবীর মায়েরও স্বীয় স্বামীর প্রতি এমনটিই দৃশ্যমান। এটি আবহমান বাংলার স্ত্রীদের তাদের স্বামীর প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাসের চিরন্তন রূপ।
প্রশ্ন\ ২২\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
কুসুমি গ্রামের এক চপলা ষোড়শী। একটু ডানপিটে বলেও তার বদনাম রয়েছে। ডানপিটে মেয়ের বিয়ে দিতে সমস্যা হবে বলে হিতৈষীজনদের কথায় হরিকৃষ্ণপুরের হারেজ ফকিরকে আনা হয়েছে কুসুমির জিনের আছর তাড়াতে। ফকিরের দরবার বা আসনে কুসুমি সহজভাবেই বসল। হারেজ ফকির চোখ দুটো ভাটার মতো লাল করে মেঘগর্জনে বলে ওঠল দ্যাশের তাবৎ দুষ্ট জিন আমার নাম শুনলে বাপ বাপ করে পালায়। আমার সর্ষে বাণ, মরিচে বাণ, ঝাড়– দাওয়া আর পানি পড়ায় ভূত-পেতিœ থরথর করে কাঁপে। ফকিরের মিথ্যাচার ও বাগাড়ম্বরের এমনি পর্যায়ে কুসুমি বিরক্তি ও ঘৃণায় ফকিরের মুখে একদলা থুথু ছিটায়। স্তম্ভিত হতভম্ব ফকিরের কুসুমের মতো দেখতে কুসুমির প্রতি এক অজনা ভীতি দুর্দান্ত হয়ে উঠল।
ক. মাজারে জমিলাকে বেঁধে রেখে মজিদ কোন সুরাটি পাঠ করেছিল?
খ. জমিলা বেঁকে বসে কেন?
গ. কুসুমির প্রতি হারেজ ফকিরের মিথ্যা বাগাড়ম্বরতা ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন ঘটনার অনুরূপ?
ঘ. “কুসুমের মতো দেখতে কুসুমির প্রতি দুর্দান্ত হয়ে ওঠা এক অজানা ভীতি ফকিরের মতো ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদকেও প্রকম্পিত করে তুলেছিল।” যথার্থতা মূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
২২ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
মাজারে জামিলাকে বেঁধে রেখে মজিদ সুরা ফালাক পাঠ করেছিল।
ছ অনুধাবন
‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলা একমাত্র প্রত্যক্ষ প্রতিবাদী চরিত্র। প্রথমে সে বোঝেনি যে তাকে মাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে যখন বুঝলো তখন সে বেঁকে বসে। এর কারণ মাজার সম্পর্কে তার ভীতি।
প্রথমত, সে মাজারের ত্রিসীমানায় কখনো ঘেঁষেনি; দ্বিতীয়ত, মজিদ আজ যে গল্প বলেছে তাতে তার ভয় আরো বেড়ে গেছে। সে জন্যে মজিদের শক্ত হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে চায়।
জ প্রয়োগ
কুসুমির প্রতি হারেজ ফকিরের মিথ্যা বাগাড়মাম্বরতা ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলাকে শায়েস্তা করা কালে মজিদের মিথ্যা বাগাড়ম্বরতার অনুরূপ।
ভণ্ড, প্রতারক ও ধর্মব্যবসায়ী মজিদ জমিলাকে পাজাকোলা করে সোজা মাজার ঘরে নিয়ে আসে। মাজার ঘর অন্ধকার। জমিলা ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে অসাড় হয়। সে যেন চোখে কিছু দেখে না। চারদিকে চোখ হাতড়ায়। আলো দেখার একটা তীব্র ব্যাকুলতা তার মধ্যে জাগে। কিন্তু অন্ধকারের পর্দা আরো গাঢ় হয়। সব মিলিয়ে মাজার ঘরে এক ভৌতিক পরিবেশে জমিলার অবস্থা তথৈবচ।
উদ্দীপকে আমরা হারেজ ফকিরকে কুসুমির কাছে মিথ্যা বাগাড়ম্বরতা করতে দেখি। সে বলে, তার নাম শুনলে দেশের তাবৎ দুষ্ট জীন বাপ বাপ করে পালায়। তার সর্ষে বাণ, ঝাড়ু দাওয়া আর পানি পড়ায় ভূত- পেতিœ থরথর করে কাঁপে। উদ্দীপকের হারেজ ফকিরের মতো ‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ নিজের প্রভাব বজায় রাখার জন্যে জমিলাকে বলে সে যেভাবে বলবে জমিলা যেন সেভাবে কাজ করে। দুনিয়ার মানুষেরা সবাই মজিদকে মানে, এমনকি জীন-পরীরাও তাকে ভয় করে, কিন্তু জমিলা তার অবাধ্য। মনে হয় তার ওপর কিছুর আছর রয়েছে। মজিদ জমিলাকে এও জানায় যে, তার জন্যে মায়া হয়। জমিলাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে তারও মনে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মজিদ নিরুপায়। তবে মজিদ জিনের আছর ছাড়ানোর জন্যে জমিলাকে বিশেষ কষ্ট দিতে চায় না। শুধু এক রাতের জন্যে তাকে মাজারে বেঁধে রাখবে। তাহলে জমিলা দুষ্ট আত্মা থেকে মুক্ত হবে এবং আগামীকালই দেখা যাবে জমিলার মনে খোদার ভয় ও স্বামীভক্তি এসে গেছে।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
“কুসুমের মতো দেখতে কুসুমির প্রতি দুর্দান্ত হয়ে ওঠা এক অজানা ভীতি ফকিরের মতো ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদকেও প্রকম্পিত করে তুলেছিল।” প্রশ্নোক্ত ঐ মন্তব্যটি সঙ্গত কারণেই যথার্থ বলে আমি মনে করি।
মজিদের মুখে থুথু ফেলার পর মজিদ যখন জমিলাকে পাঁজাকোলা করে মাজারের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল তখনকার জমিলার অবস্থা দেখে মজিদের মনে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা-ই প্রশ্নোক্ত অংশে বর্ণিত হয়েছে।
উদ্দীপকে আমরা দেখি, কথিত জিনের আছর ছাড়াতে এসে হারেজ ফকির কুসুমির ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্যে মিথ্যা বাগাড়ম্বরতা শুরু করে। বিরক্তি ও ঘৃণায় কুসুমি ফকিরের মুখে একদলা থুথু ছিটায়। স্তম্ভিত হতভম্ব ফকিরের কুসুমের মতো দেখতে কুসুমির প্রতি এক অজানা ভীতি দুর্দান্ত হয়ে ওঠে। উদ্দীপকের অনুরূপ ‘লালসালু’ উপন্যাসে জমিলা এক সন্ধ্যায় মজিদের কথামতো নামাজ পড়তে শুরু করে। কিন্তু নামাজ পড়তে গিয়ে জমিলা জায়নামাজে ঘুমিয়ে পড়ে। এতে ভীষণ রাগ করে মজিদ জমিলাকে টেনে হিঁচড়ে মাজারে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু মাজারে যেতে জমিলার দারুণ ভয়। মজিদের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে না পেরে সে মজিদের মুখের ওপর থুথু নিক্ষেপ করে। এতে মজিদ হতভম্ব হয়ে পড়ে। পরে থুথু মুছে সে জমিলাকে পাঁজকোলা করে তুলে নিয়ে মাজারের দিকে যেতে থাকে।
এবার দেখা যায় জমিলা কোনো প্রতিবাদ করছে না কিংবা হাত ছাড়াতেও চাইছে না। সে নিস্তেজ হয়ে থাকে। মজিদের ইচ্ছে হয় তার লইট্টা মাছের মতো নরম দেহকে সম্পূর্ণ পিষে ফেলতে। কিন্তু খুব সতর্ক থাকে। এ প্রতিবাদী মেয়েটিকে তার ভয় হয়। কখন সে কি করে বসবে তা বোঝার উপায় নেই। মজিদ জমিলাকে বিষাক্ত সাপের সঙ্গে তুলনা করে। এখন চুপচাপ থাকলেও যে কোনো মুহূর্তে ফণা তুলতে পারে। সুতরাং, তার নিস্তেজ ভাব দেখে খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই বরং ভয়ের আশঙ্কাই বেশি।
প্রশ্ন\ ২৩\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
২০১৪ সাল। মনতোষ রায়ের স্ত্রী মারা গেছে মাস তিনেক হলো। তিনি দুই পুত্রের পিতা। বড় ছেলের বয়স আটারো বছর, ছোটটির বয়স নয়। কৃষ্ণপুর নিবাসী দরিদ্র নমঃশূদ্র হরিহর শীলের চৌদ্দ বছর বয়সী কন্যা নমিতাকে বিবাহ করতে গিয়ে মনতোষ বাবু গ্রামবাসীর গণধোলাই খেয়েছেন।
ক. জমিলা ঘরে আসার পরে রহিমা কোথায় শয়ন করে?
খ. মহব্বতনগর গ্রামের মানুষ মজিদকে মান্য করে কেন?
গ. ‘লালসালু’ উপন্যাসের মহব্বতনগর গ্রাম এবং উদ্দীপকের কৃষ্ণপুর গ্রামের মধ্যে তুলনা কর।
ঘ. ‘লালসালু’ উপন্যাসে তৎকালীন সমাজ কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে? ১
২
৩
৪
২৩ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
জমিলা আসার পরে রহিমা বারান্দার মতো ঘরটায় শয়ন করে।
ছ অনুধাবন
মহব্বতনগর গ্রামের মানুষ মজিদকে মান্য করে ভয় থেকে শ্রদ্ধা বা ভক্তি থেকে নয়। মজিদের পেছনে গ্রামবাসী মাছের পিঠের মতো তথাকথিত মোদাচ্ছের পীরের মাজার দেখতে পায়। গ্রামবাসীর ধারণা, তিনি ‘জিন্দা পীর’। তিনি সব কিছু দেখেন এবং শুনতে পান। বলাবাহুল্য, এসবই কুসংস্কার। এ ধরনের চিন্তাভাবনা ইসলামবিরোধীও বটে। গ্রামবাসী মনে করতো, মজিদ যেহেতু ওই পীরের একনিষ্ঠ খাদেম, সুতরাং তাকে মান্যগণ্য করা অবশ্য কর্তব্য। এই মনমানসিকতা থেকে মহব্বতনগর গ্রামের ধনী গরিব সবাই তাকে মেনে চলতো। মহব্বতনগর যেন লাল সালু-কাপড়ে আবৃত একটি গাম।
জ প্রয়োগ
সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যে কোনো সাহিত্যকর্ম বা সাহিত্যিককে মূল্যায়ন করবার সময় তাই দেশ-কাল-পরিপ্রেক্ষিত পর্যালোচনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সৈয়দ ওয়ালীউলাহর ‘লালসালু’ উপন্যাস রচিত হয়েছে বিশ শতকের প্রথমার্ধে; কিন্তু উদ্দীপকের সূচনাতেই বলে দেওয়া হয়েছে যে এর কালসীমা একুশ শতকের প্রথমার্ধ। সুতরাং কালগত ব্যবধান এক শতক। সমাজে এই এক শতকের পার্থক্য আমরা দেখতে পাবো।
বিশ শতকের প্রথমার্ধে ‘লালসালুতে মজিদ পৌঢ় বয়সে কিশোরী জমিলাকে বিয়ে করেছিল; কোনো সমস্যাই তার হয় নি। অপরদিকে উদ্দীপকে, একুশ শতকের প্রথমার্ধে মনতোষ রায় পৌঢ় বয়সে কিশোরী একটি মেয়েকে বিয়ে করতে গিয়ে গ্রামবাসীর কাছে গণধোলাই খেয়েছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ ব্যাপকভাবে বদলে গেছে বলেই এটি সম্ভব হয়েছে। মহব্বতনগর গ্রামের মানুষেরা ছিল অন্ধ। তাদের কাছে সমাজবিধিই ছিল একমাত্র বিধান যে বিধানের জোরে পুরুষ হয়ে ওঠে নারীর ভাগ্যবিধাতা। অপর দিকে একুশ শতকে পরিবর্তিত সমাজ কাঠামোতে আমরা দেখি, মানুষ জেগে উঠেছে। সমাজবিধিকে চ্যালেঞ্জ করে মানুষ ভাবতে শিখেছে, জাগ্রত করেছে তার বিবেককে সবার ওপরে যদিও দুই সামাজে মহব্বতনগরে এবং কৃষ্ণপুরে রয়ে গেছে সেই একই রকম আদিম মানুষ, আদিম প্রবৃত্তির তাড়না। তবু বলা যায়, সময়ের সাথে সাথে সমাজ এগিয়ে গেছে কিছুটা হলেও; যার প্রমাণ এই উদ্দীপক।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
সাহিত্য হচ্ছে সময়ের দর্পণ, কালের নিরপেক্ষতম ইতিহাস। সাহিত্যে সময়কালের অমোছনীয় ছাপ রয়ে যায়। সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাসে বিশ শতকের প্রথমার্ধের গ্রামীণ বাঙালি সমাজের রূপরেখা নিপুণভাবে অঙ্কিত হয়েছে।
‘লালসালু’ উপন্যাসে সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ বিশেষ একটি দেশ-কাল-পরিপ্রেক্ষিতের ফ্রেমে মানুষের অবয়ব আঁকতে চেয়েছেন, যে মানুষ অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে হক-নাহক যে কোনো উপায়ে বাঁচার চেষ্টা করে এবং ক্রমশ তার অপকর্ম মাত্রা ছড়িয়ে যায়। এই ব্যক্তিটি মজিদ। যে নিজেই অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগেছে একদা, সে নিজেই কিনা পরবর্তীতে অন্যদের অস্তিত্বের জন্যে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মহব্বতনগর গ্রামের বাস্তবতার মধ্য দিয়ে তৎকালীন সমাজের একটি বিশ্বস্ত ছবি আমরা পাই যা মালার মতো মজিদের যাবতীয় কর্মের সঙ্গে যুক্ত। তৎকালীন সমাজ ছিল কৃষিপ্রধান, প্রাতিষ্ঠানিক সীমাহীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন, ধনবৈষম্যপূর্ণ, পুরুষতান্ত্রিক, মোলাশাসিত, পীরভক্ত, শ্রেণিবৈষম্যপূর্ণ, ধর্মবিশ্বাসী, কলহপরায়ণ, জীবনরসিক……। মহব্বতনগরের মানুষ কৃষিকাজ করে। এ গ্রামের লোক সবাই-ই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন ব্যতিক্রম কেবল আক্কাস। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ বলেই মজিদ এখানকার রাজাধিরাজ সেজে বসে আছে। মহব্বতনগর গ্রামে ধনবৈষম্য খুবই স্পষ্ট। একমাত্র ধনী ব্যক্তি খালেক ব্যাপারী। মজিদের অবস্থা দ্বিতীয়। বাকিদের অবস্থা কহতব্য নয়। তৎকালীন সমাজ পুরুষতান্ত্রিক ছিল বলেই রহিমাকে দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে হয়; জমিলাকে কিশোরী বয়সে স্ত্রী হয়ে যেতে হয় বৃদ্ধ মজিদের ঘরে এবং সহ্য করতে হয় শারীরিক মানসিক নানা নির্যাতন; হাসুনির মার ঠাঁই হয় না। মোলাশাসিত সমাজে শাসক সেজে বসে থাকে ভন্ড ধর্মীয় নেতা। আওয়ালপুরে পীর এলে তাকে নিয়ে শুরু হয় মাতামাতি। মহব্বতনগরে মুসলমান এবং হিন্দুদের মধ্যে আশরাফ-আতরাফ ভেদ পরিলক্ষিত হয়েছে। সে সমাজের সবাইকে দেখি ধর্মের প্রতি প্রবল বিশ্বাস। কলহপরয়ণতা গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। ফলে মহব্বতনগর ও আওয়ালপুরের গ্রামবাসীর সঙ্গে মারপিটও বেঁধেছিল। এতকিছুর পরেও ‘লালসালু’র সমাজের মানুষ জীবনরসিক। মাঠে ফসল ফললে তারা গান গেয়ে ওঠে গলা ছেড়ে।
বস্তুত, ‘লালসালু’ উপন্যাস তৎকালীন গার্হস্থ্য জীবনের অনুপম আখ্যান। ।
প্রশ্ন\ ২৪\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
কার্ল মার্কসের তত্ত¡ অনুযায়ী অর্থই সমাজের মূল নিয়ন্তা। অর্থ যার কাছে থাকবে, সেই শাসন করবে সমাজ এবং সে তার পছন্দ মতো ঢেলে সাজিয়ে নেবে সমাজ, সংস্কৃতি এমনকি ধর্মও। এই কারণে মার্কস তাঁর বিখ্যাত মূলধন তত্তে¡ অর্থকাঠামোকে বলেছেন ‘ইন্টার স্ট্রাকচার’, আর সমাজ-সংস্কৃতি ও ধর্মকে বলেছেন ‘সুপার স্ট্রাকচার’।
ক. আক্কাসের বাবার নাম কী?
খ. আক্কাস কেন স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়?
গ. ‘লালসালু’ উপন্যাসের বাস্তবতার সাথে উদ্দীপকের তত্ত¡ কতখানি সঙ্গতিপূর্ণ?
ঘ. সৈয়দ ওয়ালীলাহ্ কী বাস্তববাদী লেখক? ১
২
৩
৪
২৪ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
আক্কাসের বাবার নাম মোদাব্বের মিঞা।
ছ অনুধাবন
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসে অনগ্রসর একটি গ্রামের আখ্যান রূপায়িত করেছেন।
এই গ্রামটির নাম মহব্বতনগর। এই গ্রামের মানুষকে ধর্মপ্রাণ না বলে কুসংসঙ্কারাচ্ছন্ন বলাই সংগত। তারা আধুনিক এবং যুগোপযোগী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত বলেই তাদের এমন অবস্থা হয়েছে। ওই গ্রামের মোদাব্বের মিঞার ছেলে আক্কাস কিছুটা ইংরেজি শিক্ষার সংস্পর্শে আসার কারণে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। সে বুঝতে পারে, গ্রামবাসীকে সচেতন করে তুলতে হলে তাদের মনে আধুনিক শিক্ষার দীপশিক্ষা জ্বালিয়ে দিতে হবে। তাই সে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
জ প্রয়োগ
‘লালসালু’ উপন্যাসের বাস্তবতার সঙ্গে উদ্দীপকের বাস্তবতা সঙ্গতিসম্পন্ন নয়।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে অর্থ সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাসে আমরা দেখি অর্থ নয়, সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করেছে ধর্ম নামধারী প্রচলিত কুসংস্কার। মার্কসের তত্ত¡ অনুযায়ী সমাজের শাসক হওয়ার কথা খালেক ব্যাপারীর; মজিদ থাকবে তার সহযোগী বা সম্পূরক শক্তি হিসেবে। কিন্তু এ উপন্যাসে আমরা ঠিক বিপরীত ব্যাপারটি লক্ষ করি। সমাজ শাসন করছে মজিদ, তাকে সহযোগিতা করছে খালেক ব্যাপারী।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এমন কেন হলো? কারণ হতে পারে দুটি। প্রথমত, অভিজাত এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন বলে সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র প্রকৃতপ্রস্তাবে গ্রামীণ বাস্তবতাকে প্রত্যক্ষ করার বা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়তো সেভাবে হয়ে ওঠেনি। যার অনিবার্য প্রভাব পড়েছে তাঁর সাহিত্যে। দ্বিতীয় কারণটি ঔপন্যাসিকের পরিকল্পনাগত। লেখক তাঁর এই উপন্যাসে ধর্মীয় কুসংস্কার কীভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছেন। এই উপন্যাস পাঠ করবার সময় পাঠক আঁচ করতে পারে, ধর্ম সম্পর্কে লেখকের এক ধরনের বৈরাগ্য, বিতৃষ্ণা আছে যা তিনি লুকিয়ে রাখতে পারেন নি। মজিদ নিঃসন্দেহে ধর্মজীবী, অসৎ, ভন্ড তাকে সমর্থন করার কোনো প্রশ্নই আসে না কিন্তু কখনও কখনও ধর্মীয় পরিমণ্ডলকে তিনি শ্লেষের মতো করে উপস্থাপন করেছেন। আমাদের মনে হয়েছে, ‘লালসালু’ উপন্যাসে যে বাস্তবতা, সেটা প্রকৃত বাস্তবতা নয়, বফরঃবফ বাস্তবতা। তাই তা উদ্দীপকের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় নি।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
বাস্তবতা একটি আপেক্ষিক ধারণা। এই অর্থে একজনের কাছে যেটি বাস্তব, অন্য জনের কাছে সেটি বাস্তব না-ও হতে পারে। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, সর্বজনীন বাস্তববাদ বলে কি কিছু নেই তাহলে? সেটি তাহলে কী? বাস্তবতা বলতে আমরা সর্বজনীন বাস্তবতাকেই বুঝে থাকি। সর্বজনীন বাস্তবতা হচ্ছে ওই বাস্তবতা সবার কাছেঅন্তত বেশিরভাগ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য। আমরা এই মানদণ্ডে যাচাই করে দেখতে চাই, সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ বাস্তববাদী লেখক ছিলেন কিনা।
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ নিশ্চয়ই বাস্তববাদী লেখকই ছিলেন, তবে সর্বজনীন বাস্তববাদী লেখক তাঁকে বলা সংগত হবে না। তিনি নির্দিষ্ট একটি তত্ত¡কে কাহিনির প্যাটার্নে দাঁড় করাতে চেয়েছেন, সেটি হচ্ছে অস্তিত্ববাদী তত্ত¡। এই অর্থে তিনি তাত্তি¡ক লেখক, দার্শনিক লেখক। নির্দিষ্ট দার্শনিক তত্তে¡র আদর্শে তিনি তাঁর গল্প-উপন্যাস-নাটক রচানা করেছেন সমাজ চিত্র অঙ্কন তাঁর লক্ষ ছিল না।
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র উপন্যাসে এই কারণে সমাজচিত্রে নানারকম অসঙ্গতি দেখা যায়। অল্প কিছু নমুনা এখানে তুলে ধরা যাক : (ক) মহব্বতনগর এমনিতেই প্রত্যন্ত গ্রাম কিন্তু তার বিলের পাশেই ‘মতিগঞ্জের সড়ক’। বাস্তবে অজ পাড়াগাঁতে ওই আমলে পাকা সড়কের অস্তিত্ব অকল্পনীয় বিশেষ করে তা-ও আবার বিলের পাশ। (খ) মজিদ গ্রামে ঢুকেই খালেক ব্যাপারীর বাড়িতে গিয়ে ধমকা ধমকি শুরু করে দেয়। শুরুতেই এত সাহস সে পেল কিসের ভিত্তিতে? (গ) খালেক ব্যাপারীকে পাঠক বুঝতে পারে যে সে মোটেই বোকা কিছিমের মানুষ নয়, বিশেষ করে ধলা মিঞাকে গোপনে পানিপড়া আনতে পাঠিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ার পর সে যেভাবে মজিদকে মোকাবেলা করে, তাতে বোঝা যে সে যথেষ্ট চিকন বুদ্ধির লোক; তাহলে সে কেন মজিদের ভন্ডামি বুঝতে পারে না? কেন সে মজিদের প্রভুত্ব মেনে নেয়? (ঘ) এ উপন্যাসে গ্রামীণ প্রকৃতির বাস্তবোচিত বর্ণনা নেই। (ঙ) এ উপন্যাসে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের ভাষার মিশ্রণ দেখা যায়……।
আসলে সৈয়দ ওয়ালীউলাহ বাহ্য বাস্থবতাকে মুখ্য না করে অন্তর্বাস্তবতাকে হয়তো প্রধান করে তুলতে চেয়েছেন। তাই তাঁর উপন্যাসের রসপরিণতি এ-রকম দেখতে পাই। এটিই হয়তো তাঁর পরিকল্পনার অংশ।
প্রশ্ন\ ২৫\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আম্বিয়া বিবির মুখের ঝাঁজ খুব বেশি। পাড়া-পড়শিরা আড়ালে আবডালে বলাবলি করে যে, তার জন্মের সময় নাকি তার বাবা-মা মুখে মধু দেয়নি। আঠারো বছর বয়সে স্বামীর ঘরে এসেছিলেন কিন্তু গত ছয় বছর হলো পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। রোগে-শোকে ভুগে কী না কী বলেন, তার ঠিক আছে নাকি? স্বামী হাসমত আলী গতবার ষোলো বছরের জয়নাবকে বিয়ে করে ঘরে এনেছেন। বলা যায়, হাসমত-জয়নব দম্পতি দরিদ্রগৃহেই সুখে আছে শুধু ওই আম্বিয়া বিবির বিরামহীন গালমন্দটুকু ছাড়া।
ক. সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র শেষ কর্মস্থল কোথায় ছিল?
খ. তাহের-কাদেরের বাবা এত তিক্ত স্বভাবের কেন?
গ. ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলা এবং উদ্দীপকের জয়নাবের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের হাসমত আলী চরিত্রটিকে তুমি কীভাবে মূল্যায়ন করবে? ১
২
৩
৪
২৫ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র শেষ কর্মস্থল ছিল প্যারিস।
ছ অনুধাবন
একজন মানুষের স্বভাব কেমন হবে সেটা নির্ভর করে নানা বিষয়ের ওপর : এর ভেতরে রয়েছে তার বংশীয় উত্তরাধিকার, আর্থ-সামাজিক পটভূমি, বয়স, পারিপার্শ্বিক প্রভাব ইত্যাদি।
তাহের-কাদেরের বাবা এত তিক্ত স্বভাবের কেন হলো তার কারণ অনুসন্ধান করলে আমরা তিনটি কারণ দেখতে পাই। প্রথমত, তার আর্থিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়ে গেছে। এক সৎ ভাইয়ের সাথে জায়গা জমি, সম্পত্তি নিয়ে মারামারি, মামলা-মকদ্দমা করে সে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এদিক থেকে তার মনে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, তার স্ত্রী তার সাথে দিনরাত অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে যা তার জন্যে অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অসম্মানের। বৃদ্ধ বয়সে না পারে সে গর্জন করতে, না পারে সে সহ্য করতে। ছেলেদের তাই সে উসকে দিয়ে বলে, ‘ঠ্যাঙ্গা বেটিকে ঠ্যাঙ্গা’। তাহের-কাদেরের বাবার তিক্ত মেজাজের পেছনে তৃতীয় যে কারণ লুক্কায়িত ছিল, সেটা খুব সূ²। মজিদ যখন মহব্বতনগর গ্রামে প্রবেশ করে, তখন তার ভন্ডামি আর কেউ বুঝতে না পারলেও তাহের-কাদেরের বাবাই একমাত্র তা বুঝতে সমর্থ হয়েছিল। তাই তার মেজাজ আরও বেশি তিক্ত হয়ে যায়। কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারেনি। অবদমিত এই ক্রোধের কারণে সে এক পর্যায়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েও যায়।
জ প্রয়োগ
সৈয়দ ওয়ালীউলাহর ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলা এবং উদ্দীপকের জয়নাব চরিত্র দুটির মধ্যে আমরা কিছু মিল এবং বেশ কিছু অমিল লক্ষ করি। প্রথমে মিলের দিকটি আলোচনা করা যাক এরপরে আমরা আলোচনা করবো অমিলের ক্ষেত্রসমূহ।
মিল এই যে, জমিলার বিয়ে হয়েছে মজিদের সাথে; উদ্দীপকের জয়নাবের বিয়ে করেছিল, তেমনি উদ্দীপকের হাসমত আলীও তার প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থাতেই দ্বিতীয় বিবাহ করেছে। জমিলা এবং জয়নাব দুজনেই শ্বশুর-বাড়িতে এসেছে সতীন হিসেবে। আর একটি মিল আমরা দেখতে পাই, দুটো বিয়েই হয়েছে পারিবারিক সম্মতি হিসেবে।
এবারে দুটি চরিত্রের ভেতর যে পার্থক্যগুলো রয়েছে আমরা তা দেখানোর চেষ্টা করবো। প্রথম অমির এবং বলা যায় সবচেয়ে বড় অমিল এই যে, স্বামীর ঘরে জমিলা সুখে দিনযাপন করে নি; অপরদিকে উদ্দীপকের জয়নাব হাসমত আলীর ঘরে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে এলেও সে স্বামীর সুখে সোহাগিনী হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, জমিলা দুখিনী নারী, জয়নাব সুখী। প্রশ্ন হতে পারে একই সমাজ কাঠামোতে একই পরিবার ব্যবস্থা একই ধরনের অর্থনৈতিক বৃত্তে থেকেও জমিলা কেন দুঃখ পেল চিন্তা-চেতনা আশা-আকাক্ষার মধ্যে ছিল দুস্তর ব্যবধান এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক টিকে থাকার জন্যে ন্যূনতম যে শ্রদ্ধাবোধ ভালোবাসা থাকা জুরুরি মজিদ-জামিলা দম্পতির ভেতর তা ছিল না। অপরদিকে হাসমত আলী-জয়নাব দম্পতির মধ্যে এগুলোর কোনোটারি কোনো রকম অভাব ছিল না। দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবেই হয়ত জয়নাব স্বামীর ঘরে এসেছিল কিন্তু স্বামীর কাছ থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীসুলভ ব্যবহার সে কখনও পায় নি হাসমত আলী তাকে ভালোবেসেছিল সেও ভালোবেসেছিল হাসমত আলীকে তাই তার সুখের পথে কোনো অন্তরায় সৃষ্টি হয়নি।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
দেখবার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এক একজন ব্যক্তির মূল্যায়ন একেক রকম লাল চশমা পরে তাকালেই সবকিছু যেমন লাল মনে হয়, সবুজ চশমায় সবুজ, নীল চশমায় নীল। কোনো চরিত্র মূল্যায়নের সময় পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী চরিত্রটি হয়ে উঠতে পারে পাঠকীয়, আবার তেমনই হয়ে যেতে পারে বিরক্তকরও। সাহিত্যতত্তে¡র এই সূত্রটি উদ্দীপকের হাসমত আলী চরিত্রটি মূল্যায়নের সময়েও প্রযোজ্য হবে। হাসমত আলী আমার চোখে কেমন হয়ে ধরা পড়েছে সেটি আমি লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করছি।
হাসমত আলীকে আমার স্বার্থপর, দায়িত্বহীন, লোলুপ, কৃত্রিম, পাষাণ প্রকৃতির মানুষ মনে হয়। কারও কারও কাছে হাসমত আলী হয়ত দুর্দান্ত স্বামী কিন্তু আমার কাছে তাকে সেরকম মনে হয়নি। উদ্দীপকের মধ্যে রয়ে গেছে বেশ কিছু চোরা স্রোত। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে, হাসমত আলী প্রথম স্ত্রী অম্বিয়া বিবির ঝগড়াঝাটিতে ত্যাক্তবিরক্ত হয়ে বুঝি দ্বিতীয় বার বিয়ে করেছে, ব্যাপারটা আসলে সেরকম নয়।
উদ্দীপকটি খুব সচেতনভাবে পাঠ করলে দেখা যাবে, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় পড়ে যাওয়ার পর থেকেই আম্বিয়া বিবির জীবনে তীক্ততা শুরু হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে তার মুখের ভাষায়। উদ্দীপকের এক জায়গায় বলা আছে, “ রোগে- শোকে ভুগে কী না কী বলেন, তার ঠিক আছে নাকি? ” আম্বিয়া বিবির মুখের যে ঝাঁজ তার কারণ দুটো একটি হলো তার শারীরিক অসুস্থতা, অন্যটি হলো মাত্র তেইশ বছর বয়সে সতীন ঘরে আসার জন্যে তার নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা।
আম্বিয়া বিবি প্রথম জীবন থেকেই তীক্ত স্বভাবের, এমন কোনো কথা উদ্দীপকে উলেখ করা হয়নি। তার জীবন শুরু হয়েছিল অন্য দশজন স্বাভাবিক নারীর মতোই। অসুস্থ’ হয়ে যাবার পরে তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় এবং তার স্বামী আবার বিয়ে করলে এবং তার চোখের সামনে সতীনকে নিয়ে মধুচন্দ্রিমা যাপন করলে তার সহ্য হয় না। তাই তার এই চিৎকার। হাসমত আলী তার অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা করেছে অথবা নিয়মিত সেবা-যন্ত্র করেছে অথবা নিতান্ত বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে এমন কোনো প্রমাণ উদ্দীপকে নেই। তার চেয়েও বড় কথা হাসমত আলী তার অসুস্থ স্ত্রীর সামনেই নিতান্ত অসভ্য এবং অমানবিকভাবে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে মধুচন্দ্রিমায় ব্যস্ত থেকেছে যা কোনো ভাবেই ক্ষমার যোগ্য নয়। সুতরাং, আমার কাছে হাসমত আলীকে একজন সুবিধাবাদী, নির্মম, অমানবিক মানুষ মনে হয়। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সে যে ব্যবহার করেছে প্রয়োজনবোধে সে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে একই ব্যবহার করবে। হাসমত আলীর এই আন্তরিকতা কৃত্রিম।
প্রশ্ন\ ২৬\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আকরাম চৌধুরী গ্রামের মোড়ল। পরপর তিনবার তিনি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানও হয়েছেন। তার প্রথম স্ত্রী জরিনা খাতুন বেশ সুন্দরী কিন্তু তার কোনো ছেলেমেয়ে হয়নি। আকরাম চৌধুরী তাই আরেকটি বিয়ে করতে চান। একই গ্রামের বাবুল মুন্সি তাকে অল্প বয়সী এক সুন্দরী পাত্রীর সন্ধান দিয়েছে। বাবুল মুন্সির স্থির কোনো পেশা নেই। সে এলাকার এক পীরের প্রধান খাদেম। গ্রামের মানুষ বলাবলি করছে, এ কাজ করার বিনিময়ে বাবুল মুন্সি বিশ হাজার টাকা উপহার নিয়েছে।
ক. খ্যাংটা বুড়ীর মৃত পুত্রের নাম কী?
খ. মজিদ ক্রমশ লোভী হয়ে ওঠে কেন?
গ. ‘লালসালু’ উপন্যাসের খালেক ব্যাপারী এবং উদ্দীপকের আকরাম চৌধুরীর চরিত্রের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. খালেক ব্যাপারীর চরিত্রটি বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
২৬ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
খ্যাংটা বুড়ীর মৃত পুত্রের নাম যাদু।
ছ অনুধাবন
মানব চরিত্রের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এই যে সে যত পায় সে আরও বেশি চায়। মজিদ চরিত্রের মধ্যে আমরা এই বৈশিষ্ট্যই লক্ষ করি। অস্তিত্ববাদী কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ তাঁর এই উপন্যাসে মানুষের অস্তিত্বের সঙ্কট এবং অস্তিত্বের সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার পর অন্যের অস্তিত্বের জন্যে মানুষ কীভাবে হুমকি হয়ে উঠে, তা দেখাবার চেষ্টা করেছেন। মজিদ মূলত তার এই অস্তিত্ববাদী তত্ত¡টির রূপায়ণ ঘটিয়েছে।
উপন্যাসে মজিদ প্রথমে অভাবী ছিল তাই সে মহব্বতনগর গ্রামে আশ্রয় নেওয়ার জন্যে এসেছিল। কিন্তু তার অভাব মিটে যাওয়ার পরেও সে তার ধর্ম ব্যবসা বন্ধ করে নি বরং তা আরও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। যে মজিদের চাল-চুলো ছিল না, সে মজিদের বাড়িঘর হলো, জমিজমা হলো, স্ত্রী হলো- তারপরেও তার লোভের শেষ হয় না। পুরো এলাকায় সে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে, পাশের গ্রামে এসেছিল আরেক পীর, কৌশল করে তাকে সে হটিয়েছে। এরপর সে বিয়ে করে কিশোরী জমিলাকে। গ্রামের মোড়ল খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রী আমেনা বিবিকেও সে তালাক দিতে বাধ্য করে। তার সামনে থাকে শুধু খালেক ব্যাপারী সুতরাং, বলা যায় মজিদের এই যে ক্রমবর্ধমান লোভ, তার পেছনে সক্রিয় ছিল মানুষের সাধারণ প্রবৃত্তি। যে যত পায়, সে আরও তত চায়।
জ প্রয়োগ
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাসের খালেক ব্যাপারী এবং উদ্দীপকের আকরাম চৌধুরী চরিত্র দুটির মধ্যে আমরা মিল এবং অমিল দুটি দিকই লক্ষ করি। প্রথমে আমরা মিলের দিকগুলো আলোচনা করব তারপর আলোকপাত করা হবে অমিলের অংশগুলো। শুরুতেই বলে দিচ্ছি, দুটি চরিত্রের মধ্যে মিলগুলো আপাতত বাহ্যিক আর অমিলটি চরিত্রের বৈশিষ্ট্যগত।
মিল এই যে খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রী আমেনা বিবি বন্ধা; অনরূপভাবে উদ্দীপকের আকরাম চৌধুরীর স্ত্রীও সুন্দরী কিন্তু তারও সন্তানাদি হচ্ছে না। সুন্দরী স্ত্রী নিয়ে ঘর সংসার করলেও দুজনের কেউই পিতা হতে পারেনি এই অর্থে তাদের দুজনের মনের কোণেই রয়ে গেছে গভীর বেদনা। এই বেদনা থেকে খালেক ব্যাপারী তার সম্বন্ধীকে রাতের অন্ধকারে গোপনে আওয়ালপুরের পীরের কাছে পানিপড়া আনতে পাঠিয়েছিল। একই দুঃখ থেকে আকরাম চৌধুরী দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে চায়। এবার আলোচনা করবো অমিলের ক্ষেত্রগুলো।
উদ্দীপকটি সচেতনভাবে পাঠ করলে আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে যে খালেক ব্যাপারী যে প্রকৃতির মানুষ আকরাম চৌধুরী ঠিক তার ভিন্ন ধাতুতে গড়া। একজন যদি হয় উত্তর মেরু অন্যজন তাহলে দক্ষিণ মেরু। মহব্বতনগর গ্রামের ওপর খালেক ব্যাপারীর প্রকৃতপক্ষে কোনোরূপ নিয়ন্ত্রণ ছিল না। সে ধনী হলেও বুদ্ধিমান নন এবং একান্তভাবেই সে মজিদ দ্বারা পরিচালিত। অপরদিকে উদ্দীপকের আকরাম চৌধুরী যথার্থ অর্থে মোড়ল গ্রামের মানুষকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় সেটা তার ভালোই জানা ছিল এবং কেবল জানা নয় কীভাবে তা প্রয়োগ করতে হয় তার প্রমাণ সে হাতেনাতে দেখিয়ে দিয়েছে বাবুল মুন্সিকে বিশ হাজার টাকা উপহার দেওয়া তার সেই কৌশলেরই দৃষ্টান্ত। খালেক ব্যাপারী নামেই মোড়ল কাজে নয় আকরাম চৌধুরী নামে এবং কাজে মোড়ল, আসল মোড়ল।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
একজন কথাশিল্পী যখন কোনো চরিত্র নির্মাণ করেন তখন ঐ চরিত্রটিকে তিনি স্থাপন করেন চরিত্রটির দেশ-কাল সমাজ-সংস্কৃতির পটভূমিতে। তাহলেই কেবল অঙ্কিত চরিত্রটি বাস্তব ও জীবন্ত হয়ে ওঠে। সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসে খালেক ব্যাপারীর চরিত্রটি নির্মাণ করবার সময় চরিত্রটিকে তার দেশ-কাল-সমাজ-সংস্কৃতির পটভূমিতে ফেলে রূপায়ণ করেছেন কিনা সেটা আমরা পরীক্ষা করে দেখতে চাই। সার্থক চরিত্র হিসেবে খালেক ব্যাপারীর নির্মিতির জন্যে এটি একটি অপরিহার্য শর্ত।
গ্রাম বাংলার সমাজ ও জীবনের সঙ্গে সামান্য পরিচয় আছে এমন যে কোনো পাঠকের কাছে খালেক ব্যাপারী চরিত্রটি একটি অবাস্তব চরিত্র বলে মনে হবে, আমার কাছেও মনে হয়েছে। মহব্বতনগর গ্রামের মোড়ল খালেক ব্যাপারী, ধনসম্পদেও সে ধনী। মজিদ যেদিন মহব্বতনগর গ্রামে নাটকীয়ভাবে প্রবেশ করলো, সেই প্রথম দিনেই সে কেবল পুরো গ্রামবাসীকেই গালমন্দ করেনি, খালেক ব্যাপারীকেও করেছিল। মোড়ল সাহেব ভন্ডের ভন্ডামি বুঝতে পারেনি এবং নীরবে গালমন্দ সহ্য করেছে। এরপর নামেই সে থেকে গেছে গ্রামের মোড়ল, প্রকৃতপক্ষে গ্রামশাসন করেছে মজিদ। আমরা দেখেছি বিভিন্ন সালিশে তাহের-কাদেরের বাবার বিচারে, আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপনের সময় খালেক ব্যাপারী কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি সিদ্ধান্ত এসেছে মজিদের কাছ থেকে। এমনকি আওয়ালপুরের পীরকে হটিয়েছে মজিদ একাই, খালেক ব্যাপারীর স্ত্রীকে পর্যন্ত তালাক দিতে বাধ্য করেছে। ‘লালসালু’ উপন্যাসে গ্রামের মোড়লকে পুতুল নাচের মতো নাচিয়েছে মাজারের খাদেম মজিদ সেটা কখনই বাস্তব নয়, হতে পারে না।
তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র উপন্যাসে বাস্তবতার এই লঙ্ঘন ঘটেছে কেন? তার সরল উত্তর এই যে গ্রামের সমাজ এবং ঐ গামের মানুষ সম্পর্কে সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র বাস্তব কোনো ধারণা কখনই ছিল না। তিনি অস্তিত্ববাদী তত্ত¡কে গ্রামের ওপরে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন কিন্তু গ্রামীণ জীবন সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতার অনেক কমতি ছিল।
খালেক ব্যাপারী চরিত্র হিসেবে বাস্তবসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি কিন্তু কাহিনীর প্রয়োজনে তার অবস্থান এই উপন্যাসে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন\ ২৭\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মধ্যরাতেরও পরে ট্রেনটি ঢাকা থেকে প্রায় এক’শ কিলোমিটার দূরের নদীভাঙন কবলিত এলাকার এক স্টেশনে পৌঁছাল। মুহূর্তে ট্রেনটি প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে থরথর করে কেঁপে উঠল। তারপরে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার নানা স্বর ও সুরের বিচিত্র ও ভয়াবহ কলরবে ট্রেনসমেত পুরো স্পেশনটি কাঁপতে থাকল। লোকজন ট্রেনটিতে উঠার জন্যে যেন পাগল হয়ে উঠেছে। কারও পোটলা, কারও পুত্র, কারও বা পরিবার অর্থাৎ স্ত্রী হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। যায়নাব তার বাবার দিকে তাকিয়ে ভয়ার্তস্বরে জানতে চায়, এরা নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় যেতে এরকম উন্মাদ হয়ে উঠেছে কেন?
ক. অন্যের পায়ের তলায় কী দুমড়ে যায়?
খ. ‘তাই তারা ছোটে, ছোটে’ কারা ছোটে? কেন ছোটে?
গ. উদ্দীপকের বক্তব্য ‘লালসালু’ উপন্যাসের যে বিশেষ দিকটি আলোকপাত করেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের যায়নাবের জিজ্ঞাসার জবাব ‘লালসালু’ উপন্যাসের শুরুতেই পরিস্ফুট হতে দেখা যায়।” বক্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর। ১
২
৩
৪
২৭ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
অন্যের পায়ের তলায় টুপিটা দুমড়ে যায়।
ছ অনুধাবন
অভাব ও অনাহারক্লিষ্ট গরিব মানুষ কাজের সন্ধানে ছোটে।
‘লালসালু’ উপন্যাসে চিত্রিত অঞ্চলটির ক্ষেত্রে শস্য নেই, কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। তাই জলবহুল সেই এলাকার লোকজন বেঁচে থাকার প্রয়োজনে দেশের নানা অঞ্চলে ছুটে বেড়ায়, শহর, গ্রাম, বন্দর, যত দুর্গম অঞ্চল হোক তারা সেখানে ছুটে যায় কজের আশায়। হোক না সে কাজ জাহাজের খালাসি, কারখানার শ্রমিক, ছাপাখানার মেশিনম্যান, মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিম।
জ প্রয়োগ
উদ্দীপকের বক্তব্য ‘লালসালু’ উপন্যাসের শস্যহীন জনবহুল অঞ্চলে নিশুতি রাতে ট্রেন পৌঁছার পরে জীবনের প্রয়োজনে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ার বিষয়টিকে আলোকপাত করেছে।
‘লালসালু’ সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র প্রথম উপন্যাস এবং এটি তাঁর একটি দুৎঃসাহসী প্রয়াস। জীবনের বাস্তবতা যেমন তেমনি সামাজিক বাস্তবতাও এর ভিত্তি। বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বর্তমান বৃহত্তর নোয়াখালি অঞ্চলের জনবহুলতা, শস্যহীনতা, দারিদ্র্য, অভাব ও ক্ষুধাক্লিষ্ট মানুষের জীবনযাত্রা দিয়ে এ উপন্যাসের শুরু।
উদ্দীপকে দেখা যায়, মধ্যরাতেরও পরে একটি ট্রেন ঢাকা থেকে প্রায় এক’শ কিলোমিটার দূরের নদীভাঙন কবলিত এলাকার এক স্টেশনে পৌঁছায়। অতঃপর মুহূর্তে আবাল-বৃদ্ধ বণিতার নানা স্বর ও সুরের বিচিত্র ও ভয়াবহ কলরবে ট্রেনসমেত পুরো স্টেশনটি কাঁপতে থাকে। লোকজন ট্রেনটিতে উঠার জন্য যেন পাগল হয়ে উঠেছে। এলাকা ছেড়ে ঢাকাগামী তাদের এ প্রচেষ্টা যায়নাবের কাছে উন্মাদগ্রস্ত ব্যক্তির আচরণের মতো মনে হয়েছে। ‘লালসালু’ উপন্যাসও অন্য অঞ্চল থেকে গভীর রাতে নোয়াখালি অঞ্চলে ট্রেনে পেঁৗঁছালে লোকজনের বর্হিমুখী উন্মত্ততা আগুনের হুলকার মতো ট্রেনটির দেহ যেন পুড়িয়ে দেয়। রেলগাড়ির খুপরিগুলো থেকে আচমকা জেগে উঠা যাত্রীরা কেউ বা ভয় পেয়ে, কেউ বা অপরিসীম কৌতূহলে মুখ বাড়ায়, দেখে আবছা অন্ধকারে ছুটোছুটি করতে থাকা লোকদের। যাত্রীদের ভিতর প্রশ্ন জাগে এভাবে কোথায় যাবে তারা? কীসের এত উন্মত্ততা? কীসের এত অধীরতা?
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
‘লালসালু’ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের বর্তমান বৃহত্তর নোয়াখালি অঞ্চলের জনবহুলতা শস্যহীনতা, দারিদ্র্য, অভাব ও ক্ষুধাক্লিষ্ট মানুষের জীবনযাত্রা দিয়ে শুরু।
বাংলা সাহিত্যের প্রতিভাবান ঔপন্যাসিক, আধুনিক ও নাগরিক রুচির অধিকারী, মননশীল লেখক সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্। ‘লালসালু’ তাঁর প্রথম উপন্যাস এবং একটি দুঃসাহসী প্রয়াস। জীবন বাস্তবতা যেমন তেমনি সামাজিক বাস্তবতাও এর ভিত্তি শস্যহীন জনবহুল গ্রামীণ জনজীবনকে এবং তার মানসিক চিন্তা-ভাবনা, সুখ-দুখ ও বিশ্বাস, সংস্কারগুলোকে উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে লেখক সামাজিক সমস্যাকে যেমন তুলে ধরেছেন তেমনি এসব সমস্যার কারণও উলেখ করেছেন।
উদ্দীপকে মধ্যরাতেরও পরে ঢাকা থেকে প্রায় একশ কিলোমিটার দূরের নদীভাঙন কবলিত এলাকার এক স্টেশনে গভীর রাতে একটি ট্রেন পৌঁছায়, সে ট্রেনে চড়ে জনতার এলাকা ত্যাগ করার উন্মত্ততা দর্শক হিসেবে যায়নাবের ভিতির বিরাট এক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। উদ্দীপকের অনুরূপ চিত্র দেখা যায় ‘লালসালু’ উপন্যাসের শুরুতে। সেখানে বৃহত্তর নোয়াখালি অঞ্চলের কোনো এক রেল স্টেশনে ট্রেন পৌঁছার পরে দেশত্যাগী জনতার উন্মত্ততা যাত্রীদের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। উপন্যাসের ভাষায়: কোথায় যাবে তারা? কীসের এত উন্মত্ততা, কীসের এত অধীরতা।
উদ্দীপকের যায়নাবের এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের যাত্রীদের একইধর্মী প্রশ্নের জবাব সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ ‘লালসালু’ উপন্যাসের শুরুতেই দিয়েছেন। লেখকের ভাষায় “শস্যহীন জনবহুল এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের বেরিয়ে পড়বার ব্যাকুলতা ধোঁয়াটে আকাশকে পর্যন্ত যেন সদাসন্ত্রস্ত করে রাখে। কিংবা ‘এরা ছোটে, ছোটে আর চীৎকার করে। গাড়ির এ-মাথা থেকে ও-মাথা। এতগুলো খুপরির মধ্যে কোনটাতে চড়লে কপাল ফাটবে তাই যেন খুঁজে দেখে।” অর্থাৎ জীবনের প্রয়োজনে, উন্নততর জীবনের সন্ধানে তাদের এ উন্মত্ততা।
প্রশ্ন\ ২৮\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ঢাকার প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মাজার অবস্থিত। সারা দিনরাত হাজারো লোক মাজারে আসে যায়। প্রধান সড়কের ওপর অবস্থিত এ মাজারের খাদেম সফদার মিয়া পরিষ্কার ধবধবে সাদা লুঙ্গি, সাদা পাঞ্জাবী আর সাদা কিস্তি টুপি মাথায় পরে এবং মেহেদি রঞ্জিত দাড়ির সাথে মিল করে গেরুয়া রঙের একটি পাগড়ি বা রুমাল গলায় পেঁচিয়ে অষ্টপ্রহর দানের টাকার দেখভাল করছে। গোলাপ শাহ কে? কী তাঁর জবীনবৃত্তান্ত? এসব বিষয় জিজ্ঞেস করলে সে কোনো জবাব দেয় না। জবাব দেয় না কয়েক গজ দূরের মসজিদ থেকে নামাজের জন্যে আজান ভেসে এলেও নামাজ পড়তে না যাওয়ার ব্যাপারেও।
ক. কী শুনে মৌলবীর চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে?
খ. মহব্বতনগরের লোকদের মজিদের ‘জাহেল, বেএলেম, আনপাড়াহ’ বলার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের সফদার মিয়া ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের কথা মনে করিয়ে দেয়? নির্ণয় কর।
ঘ. উদ্দীপকের সফদার মিয়া ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের চরিত্রের সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে না।” মন্তব্যটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
২৮ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
শিকারির নাম শুনে মৌলবীর চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
ছ অনুধাবন
মহব্বতনগর গ্রামে মজিদের নাটকীয়ভাবে আগমন ঘটে। তার নাটকীয় আগমনকে বিশ্বাসযোগ্য এবং গ্রামবাসীকে তার পদানত করতে মজিদ আলোচ্য মন্তব্য করে।
মজিদ বলে যে, স্বপ্নে একজন মোদাচ্ছেদ পীরের আদেশ পেয়েই সে এ গ্রামে এসেছে। উক্ত পীরের মাজারটি দীর্ঘদিন যাবৎ গ্রামবাসীর অযতœ ও অবহেলার শিকার। এ কাল্পনিক গল্পটি বর্ণনা করতে গিয়েই মজিদ ধমকের সুরে অনেকটা নাটকীয় ভঙ্গিতে মহব্বতনগরের লোকদের ‘জাহেল, বেএলেম, আনপাড়াহ’ বলে তিরস্কার করে।
জ প্রয়োগ
উদ্দীপকের সফদার মিয়া ‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ চরিত্রের কথা মনে করিয়ে দেয়।
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যসের কাহিনি নির্মাণে ঘটনা বিন্যাসের ভূমিকা যতোখানি না তার চাইতে চরিত্র বিশ্লেষণের ভূমিকা অনেক বেশি। ‘লালসালু’ এদিক দিয়ে চরিত্রনির্ভর উপন্যাস। আর একটিই এ উপন্যাসের চরিত্র যাকে লেখক বরাবর অনুসরণ করেছেন। দেখা যায়, যতো কিছু ঘটে এবং তাতে অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় সমস্ত কিছুর পশ্চাতে প্রত্যক্ষে হোক, পরোক্ষে হোক মজিদের নিয়ন্ত্রণ।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মাজার অবস্থিত। এ মাজারের খাদেম সফদার মিয়া বেশভূষায় জবরদস্ত আলেমের সুরত ধরে অষ্টপ্রহর দানের টাকার দেখভাল করছে। অথচ গোলাপ শাহ কে? কী তার জীবনবৃত্তান্ত এসব বিষয় জিজ্ঞেস করলে সে কোনো জবাব দেয় না। একটা অজ্ঞেয়, দুর্ঞ্জেয় রহস্যের বেড়াজালে সে মাজারকে, নিজেকে আড়াল করতে সচেষ্ট। উদ্দীপকের অনুরূপ ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদও নাটকীয়ভাবে মহব্বতনগর গ্রামে প্রবেশ করে কাল্পনিক মোদাচ্ছের পীরের গল্প ফেঁদে অজ্ঞ, কুসংস্কাচ্ছন্ন ও ধর্মভীরু জনতাকে তার হাতের মুঠোয় পুরে নেয়। কিন্তু এর পরে পুরো উপন্যাসে কোথাও সে মোদাচ্ছের পীর কে? কী তার পরিচয়? বা তার জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে কোনো কথা বলে না। বরং মাছের পিঠের মতো লালসালু কাপড়ে আবৃত নশ্বর জীবনের প্রতীকটির পাশে মহব্বতনগরের গ্রামবাসীর জীবন পদে পদে এগিয়ে চললো।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
উদ্দীপকের সফদার মিয়া ‘লালসালু’ উপন্যাসের নায়ক মজিদ চরিত্রের সামগ্রিক দিক নয়, বরং এক বিশেষ দিককে ধারণ করে।
‘লালসালু’ উপন্যাসে দুর্ভিক্ষক্লিষ্ট ভাগ্যান্বেষী দুস্থ মানুষ মজিদ। জীবন সংগ্রামে দিশেহারা হয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠার পথ খুঁজে পেতে মহব্বতনগর গ্রামে উপস্থিত হয়। গ্রামের একটু বাইরে টাল খাওয়া ভাঙা এক পুরনো কবরকে ‘মোদাচ্ছের পীরের মাজার’ ঘোষণা করে সে তার সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যতের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। তারপর মহব্বতনগর গ্রামবাসীর জীবনের ঘটনা দ্রুত এগিয়ে চলে সালু কাপড়ে ঢাকা মাছের পিঠের মতো কবরকে কেন্দ্র করে।
উদ্দীপকে ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মাজারের খাদেম সফদার মিয়ার কীর্তিকলাপ বর্ণিত হয়েছে। বেশভূষায় জবরদস্ত আলেমের সুরত ধরে অষ্টপ্রহর দানের টাকার দেখভাল করা সফদার মিয়া গোলাপ শাহ কে? কী তার জীবনবৃত্তান্ত? এ জাতীয় প্রশ্নের কোনো জবাব দেয় না। একটা অজ্ঞেয়, দুর্ঞ্জেয় রহস্যের বেড়াজালে সে মাজারকে, নিজেকে আড়াল করে রাখে। এমনি আড়াল করে রাখার প্রবণতা আমরা ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ চরিত্রেও দেখতে পাই। উদ্দীপকের সফদার মিয়া মজিদ চরিত্রের এটুকুমাত্র ধারণ করে। বাস্তবিক ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ চরিত্র ব্যাপক, গভীর ও তাৎপর্যময়।
‘লালসালু’ একটি চরিত্রনির্ভর উপন্যাস। আর একটিই এ উপন্যাসের চরিত্র যাকে লেখক বরাবর অনুসরণ করেছেন। দেখা যায়, যতো কিছু ঘটে এবং তাতে অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় সমস্ত কিছুর পশ্চাতে প্রত্যক্ষে হোক, পরোক্ষ হোক মজিদের নিয়ন্ত্রণ। মানুষের ধর্মকর্মের ক্ষেত্রেই শুধু নয় তার সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষেত্রেও মজিদের প্রবল উপস্থিতি। প্রদত্ত উদ্দীপকের সফদার মিয়ার চরিত্রে এসব কিছু অনুপস্থিত। তাছাড়া আজান-নামাজের ব্যাপারে ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ সফদার মিয়ার সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্র।
প্রশ্ন\ ৩০ \ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মাজারটি প্রধান সড়কের ওপরে অবস্থিত। নির্মাণকাজের জন্যে চারপাশের বেড়া দেওয়ায় রাস্তার চলাচলকারী যানবাহগুলো প্রায় সময়ই মাজারের বেড়া ঘেঁষে যায়। সেদিন এমনি একটি যাত্রীবাহী বাস মাজারের বেড়া ঘেঁষে যেতেই যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে থেমে পড়ে। সাথে সাথে মাজারের খাদেম গহের আলী রোষকষায়িত চোখে বাসের ড্রাইভারকে ধমকে উঠে বলে, “পাগলা পীরের মাজারের সাথে বেয়াদবি। আরও বড় আরও ভয়াবহ বিপদে পড়বি। বিপদ থেকে বাঁচতে চাইলে বাবার দরবারে যার যা আছে ফেলে যা।” মুহূর্তে বাসের জানালা গলে কালবৈশাখীর ঝড়ে পড়া আমের মতো অজস্র ধারায় ঝকঝকে পয়সা, ঘষা পয়সা, সিকি, আদুলি, সাচ্চা টাকা, নকল টাকা মাঝার প্রাঙ্গণে ঝরে পড়তে লাগলো।
ক. গারো পাহাড় মধুপুর গড় থেকে কত দিনের পথ?
খ. মহব্বতনগর গ্রামবাসীর কাছে মজিদের গারো পাহাড়ে বসবাসের বর্ণনা লিপিবদ্ধ কর।
গ. মজিদ চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্য উদ্দীপকের গহের আলীর মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে? চিহ্নিত কর।
ঘ. “উদ্দীপকে বর্ণিত সমাজ-মানস ‘লালসালু’ উপন্যাসের সমাজ মানসেরই প্রতিচ্ছবি।”- যথার্থতা মূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
৩০ নং প্রশ্নের উত্তর
চ জ্ঞানমূলক
গারো পাহাড় মধুপুর গড় থেকে তিন দিনের পথ।
ছ অনুধাবন
‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ মহব্বতনগর গ্রামে নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে গারো পাহাড়ে তার বসবাস সম্পর্কে এক চমৎকার গল্প ফেঁদে বসে।
মজিদ মহব্বতনগর গ্রামবাসীকে জানায়, সে মুধুপুর গড় থেকে তিন দিনের পথ গারো পাহাড়ে সুখে শান্তিতেই ছিল। গোলাভরা ধান, গরু-ছাগল। ওই অঞ্চলের লোকদের মন নরম। তারা আলাহ-রসুলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাদের খাতির-যতœ ও স্নেহ-মমতার মধ্যে মজিদের দিন ভালোই কাটছিল। কিন্তু একদিন স্বপ্নে এ গ্রামের মোদাচ্ছের পীরের আহŸানে সাড়া দিতেই সে সব ফেলে ছুটে এসেছে।
জ প্রয়োগ
মজিদ চরিত্রের উপস্থিত ঘটনাকে কাল্পনিক গল্প, রোমাঞ্চকর বর্ণনা, আর নাটকীয় উপস্থাপনার মাধ্যমে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার বৈশিষ্ট্য উদ্দীপকের গহের আলীর মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাসের শুরুটাই নাটকীয়। সেই সাথে মজিদের মহব্বতনগর গ্রামে প্রবেশটাও হয়েছে বেশ নাটকীয়। মজিদ সুচতুর এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। গ্রামের লোকেরা নাটকেরই পক্ষপাতি তা মজিদ উপলব্ধি করেছিল। এ জন্যেই মহব্বতনগর গ্রামে মজিদের প্রবেশ ও মোদাচ্ছের পীরের মাজার আবিস্কার হয়েছিল নাটকীয় ও চমকপ্রদ।
উদ্দীপকে দেখি, নির্মাণকাজের জন্যে প্রধান সড়কের ওপরে অবস্থিত মাজারের চারপাশে বেড়া দেওয়ায় প্রায় সময়ই মাজারের বেড়া ঘেঁষে যানবাহনগুলো চলাচল করে। একদিন এমনি এক যানবাহন যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে থেমে পড়ার সাথে সাথে মাজারের খাদেম গহের আলী মাজারের অলৌকিক ক্রিয়াকান্ডের রোমাঞ্চকর বর্ণনা দিয়ে যার যা আছে সব হাতিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদও গ্রামের একটু বাইরে টালখাওয়া ভাঙা এক পুরনো কবরকে ‘মোদাচ্ছেদ পীরের মাজার’ ঘোষণা করে এবং দীর্ঘদিন যাবৎ গ্রামবাসীর অযতœ ও অবহেলার শিকার কথিত পীরকে জড়িয়ে কাল্পনিক এক গল্প ফেঁদে নাটকীয় ভঙ্গিতে গ্রামবাসীকে জাহেল, বেএলেম, আনপাড়াহ বলে তিরস্কার করে। আর এমনিভাবে সে তার সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যতের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে।
ঝ উচ্চতর দক্ষতামূলক
“উদ্দীপকে বর্ণিত সমাজ মানস ‘লালসালু’ উপন্যাসের সমাজ মানসেরই প্রতিচ্ছবি” শীর্ষক মন্তব্যটি যথার্থ।
‘লালসালু’ উপন্যাসে প্রত্যক্ষ বাস্তবতাই প্রধান। লেখক আমাদের এমন এক গ্রামীণ সমাজে নিয়ে যান যেখানে যুগ যুগ ধরে মানুষের মনের চারদিকে ঘিরে আসে অসম্ভব শক্ত অথচ অদৃশ্য একটি বেষ্টনী মানুষ যেখানে সবকিছুই ভাগ্য বলে মেনে নেয়। অলৌকিকত্বে যেখানে তার অগাধ বিশ্বাস। সমস্ত ঘটনার মধ্যেই দৈবশক্তির লীলা দেখতে পায় সে, আর তাতে ভয় পায় এবং শ্র্রদ্ধাভক্তিতে কখনো কখনো আপ্লুত হয়ে পড়ে।
উদ্দীপকের খাদেম গহের আলী মাজারের বেড়া ঘেঁষে যাওয়া একটি যানবাহনের যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে থেমে যাওয়া ঘটনার ভিতরে মাজারের অলৌকিকত্ব আরোপ করে, বিপদের নানা ভীতি সঞ্চার করে যার যা আছে বাবার দরবারে ফেলে যাওয়ার কথা বলা মাত্র কালবৈশাখীর ঝড়ে পড়া আমের মতো মাজার প্রাঙ্গণে টাকা পয়সার স্তূপ জমে যায়। ‘লালবালু’ উপন্যাসেরও গ্রামের একটু বাইরে টাল খাওয়া ভাঙা পুরনো এক কবরকে ‘মাদাচ্ছের পীরের মাজার’ ঘোষণা করে সে কথিত পীরকে জড়িয়ে মজিদের কাল্পনিক গল্প, রোমাঞ্চকর বর্ণনা আর নাটকীয় উপস্থাপনে মোহিত, মুগ্ধ, ভীত, ভক্তরসে আপ্লুত হয়ে মহব্বতনগরের গ্রামবাসীসহ এ গ্রাম সে গ্রাম থেকে লোকেরা লাল সালুতে ঢাকা মাছের পিঠের মতো মাজারে দানের টাকার স্তূপ জমিয়ে দেয়।
‘লালসালু’ উপন্যাসে বলা হয়েছে, গ্রামের লোকেরা নাটকেরই পক্ষপাতি। সরাসরি মতিগঞ্জের সড়ক দিয়ে যে গ্রামে এসে ঢুকবে তার চেয়ে বেশি পছন্দ হবে তাকে, যে বিলটার বড় অশ্বত্থগাছ থেকে নেমে আসবে। লেখকের এ কথার বাস্তব প্রমাণ আমরা প্রদত্ত উদ্দীপকে লক্ষ করি। উদ্দীপক ও ‘লালসালু’ উপন্যাসের সমাজ মানস বিচার করে এ সিন্ধান্তে সহজেই আসা যায় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত সমাজ মানস ‘লালসালু’ উপন্যাসের সমাজ মানসেরই প্রতিচ্ছবি।
জ্ঞানমূলক
১. ‘লালসালু’ উপন্যাসটি কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়?
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসটি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
২. সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
৩. ‘চাঁদের অমাবস্যা’ ও ‘কাঁদো নদী কাঁদো’Ñএ দুটি উপন্যাসের রচয়িতা কে?
উত্তর: ‘চাঁদের অমাবস্যা’ ও ‘কাঁদো নদী কাঁদো’Ñএ দুটি উপন্যাসের রচয়িতা সৈয়দ ওয়ালীউলাহ।
৪. সৈয়দ ওয়ালীউলাহ কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউলাহ চট্টগ্রামের ষোল শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
৫. সৈয়দ ওয়ালীউলাহ কত খ্রিস্টাব্দে স্নাতক পাস করেন?
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউলাহ ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকপাস করেন।
৬. সৈয়দ ওয়ালীউলাহ কত খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বেতারে সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন?
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউলাহ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বেতারে সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন।
৭. সৈয়দ ওয়ালীউলাহ কোন কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন?
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউলাহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন।
৮. সৈয়দ ওয়ালীউলাহর পিতার নাম কী?
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউলাহর পিতার নাম সৈয়দ আহমদ উলাহ।
৯. সৈয়দ ওয়ালীউলাহ ইংরেজি কোন পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন?
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউলাহ ইংরেজি ‘দি স্টেটস্ম্যান’ পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন।
১০. ‘বহিপীর’ তরঙ্গভঙ্গ, ‘সুড়ঙ্গ’Ñএ নাটকগুলোর রচয়িতা কে?
উত্তর: ‘বহিপীর’ তরঙ্গভঙ্গ, ‘সুড়ঙ্গ’Ñএ নাটকগুলোর রচয়িতা সৈয়দ ওয়ালীউলাহ
১১. ‘লালসালু’ উপন্যাসে বর্ণিত মহব্বতনগরে শস্যের চেয়ে কী বেশি?
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে বর্ণিত মহব্বতনগরে শস্যের চেয়ে ধর্মের আগাছা বেশি।
১২. ‘নয়নচারা’ ও ‘দুই তীর’ এ দুটি গল্পগ্রন্থের রচয়িতা কে?
উত্তর: ‘নয়নচারা’ ও ‘দুই তীর’ এ দুটি গল্পগ্রšে’র রচয়িতা সৈয়দ ওয়ালীউলাহ।
১৩. ‘লালসালু’ উপন্যাসে বর্ণিত বক্তব্যে ভোরবেলায় ল্যাংটা ছেলেরা কী পড়ে?
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে বর্ণিত বক্তব্যে ভোরবেলায় ল্যাংটা ছেলেরা আমসিপারা পড়ে।
১৪. সৈয়দ ওয়ালীউলাহ কত খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউলাহ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
১৫. মহব্বতনগরের লোকজন কখন মাছ ধরতে বের হয়?
উত্তর: মহব্বতনগরের লোকজন নিরাকপড়া মাছ ধরতে বের হয়।
১৬. সৈয়দ ওয়ালীউলাহ কোথায় মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউলাহ প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন।
১৭. ‘তাই-তারা-ছোটে, ছোটে’Ñ‘লালসালু’ উপন্যাসে কারা ছোটে?
উত্তর: ‘তাই-তারা-ছোটে, ছোটে’Ñ‘লালসালু’ উপন্যাসে মহব্বতনগরের লোকজন ছোটে।
১৮. তাহের ও কাদের মাছ ধরার সময় মতিগঞ্জের সড়কে মোনাজাতের ভঙ্গিতে দাঁড়াতে কাকে দেখে?
উত্তর: তাহের ও কাদের মাছ ধরার সময় মতিগঞ্জের সড়কে মোনাজাতের ভঙ্গিতে দাঁড়াতে মজদিকে দেখে।
১৯. মজিদ মতিগঞ্জের সড়কে খোলা আকাশের নিচে কোন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েছিল?
উত্তর: মজিদ মতিগঞ্জের সড়কে খোলা আকাশের নিচে মোনাজাতের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েছিল।
২০. মহব্বতনগর গ্রামে মজিদ প্রথমে কার বাড়িতে আশ্রয় নেয়?
উত্তর: মহব্বতনগর গ্রামে মজিদ প্রথমে খালেক ব্যাপারীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
২১. মহব্বতনগর গ্রামের বিলে কী গাছ ছিল?
উত্তর: মহব্বতনগর গ্রামের বিলে অশ্বথ গাছ ছিল।
২২. ‘লালসালু’ উপন্যাসে মুহ‚র্তের পর মুহ‚র্ত কেটে গেলেও কার চেতনা নেই?
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে মুহ‚র্তের পর মুহ‚র্ত কেটে গেলেও মজিদের চেতনা নেই।
২৩. মহব্বতনগর গ্রামে প্রবেশ করার আগে মজিদ কোথায় দাঁড়িয়েছিল?
উত্তর: মহব্বতনগর গ্রামে প্রবেশ করার আগে মজিদ মতিগঞ্জের সড়কের ওপর দাঁড়িয়েছিল।
২৪. গ্রামের প্রান্তে শ্যাওলা ধরা কবরকে অবহেলায় ফেলে রাখায় কে মহব্বতনগরের লোকজনকে গালাগাল করে?
উত্তর: গ্রামের প্রান্তে শ্যাওলা ধরা কবরকে অবহেলায় ফেলে রাখায় মজিদ মহব্বতনগরের লোকজনকে গালাগাল করে।
২৫. কল্পিত মোদাচ্ছের পিরের মাজারটি মহব্বতনগরের কোথায় ছিল?
উত্তর: কল্পিত মোদাচ্ছের পিরের মাজারটি মহব্বতনগর গ্রামের প্রান্তের পুকুর পাড়ে ছিল।
২৬. কল্পিত মোদাচ্ছের পিরের কবরটির ভেতরটা দেখতে কীসের মতো?
উত্তর: কল্পিত মোদাচ্ছের পিরের কবরটির ভেতরটা দেখতে সুড়ঙ্গের মতো।
২৭. গারো পাহাড় থেকে মধুপুরগড় যেতে কত সময় লাগে?
উত্তর: গারো পাহাড় থেকে মধুপুরগড় যেতে তিন দিন সময় লাগে।
২৮. মজিদের দৃষ্টিতে, কারা অশিক্ষিত ও বর্বর?
উত্তর: মজিদের দৃষ্টিতে, গারো পাহাড়ের লোকজন অশিক্ষিত ও বর্বর।
২৯. মজিদ কার নির্দেশে মহব্বতনগর গ্রামে আসে?
উত্তর: মজিদ মোদাচ্ছের পিরের নির্দেশে মহব্বতনগর গ্রামে আসে।
৩০. ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদের মতে, খোদার দিকে নজর কম কাদের?
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদের মতে, খোদার দিকে নজর কম মহব্বতনগর গ্রামের লোকজনের।
৩১. কল্পিত মোদাচ্ছের পিরের মাজারটি মজিদ কোন প্রকার কাপড় দ্বারা ঢেকে দিয়েছিল?
উত্তর: কল্পিত মোদাচ্ছের পিরের মাজারটি মজিদ লালসালু কাপড় দ্বারা ঢেকে দিয়েছিল।
৩২. দিনে মহব্বতনগর গ্রামের কৃষকদের ঘরে কী আসে?
উত্তর: দিনে মহব্বতনগর গ্রামের কৃষকদের ঘরে মগরা-মগরা ধান আসে।
৩৩. ‘আনপড়াহ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘আনপড়াহ’ শব্দের অর্থ যাদের কোনো পড়াশোনা নেই।
৩৪. মহব্বতনগরের আলি ঝালি চওড়া বেওয়া মেয়েটি কে?
উত্তর: মহব্বতনগরের আলি ঝালি চওড়া বেওয়া মেয়েটি রহীমা।
৩৫. মজিদের প্রথম স্ত্রীর নাম কী?
উত্তর: মজিদের প্রথম স্ত্রীর নাম রহীমা।
৩৬. খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রীর নাম কী?
উত্তর: খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রীর নাম আমেনা।
৩৭. মহব্বতনগরে কার একটি মক্তব ছিল?
উত্তর: মহব্বতনগরে খালেক ব্যাপারীর একটি মক্তব ছিল।
৩৮. কার রূপ দেখে মজিদের রসনা হয়?
উত্তর: রহীমার রূপ দেখে মজিদের রসনা হয়।
৩৯. কে মাটিতে আওয়াজ করে হাঁটে?
উত্তর: রহীমা মাটিতে আওয়াজ করে হাঁটে।
৪০. মজিদের কোরআন পাঠের সময় চারদিকে কীসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে?
উত্তর: মজিদের কোরআন পাঠের সময় চারদিকে হাসনাহেনার মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
৪১. জমিতে বর্ষণহীন খরায় মহব্বতনগর গ্রামবাসীর কার কথা মনে পড়ে?
উত্তর: জমিতে বর্ষণহীন খরায় মহব্বতনগর গ্রামবাসীর খোদার কথা মনে পড়ে।
৪২. মহব্বতনগরের কৃষকেরা জমিকে কীসের মতো ভাগ করে?
উত্তর: মহব্বতনগরের কৃষকেরা জমিকে দাবার ছকের মতো ভাগ করে।
৪৩. কোন মাসে মহব্বতনগরের কৃষকদের জমিতে কচুরিপানা জড়িয়ে থাকে?
উত্তর: কার্তিক মাসে মহব্বতনগরের কৃষকদের জমিতে কচুরিপানা জড়িয়ে থাকে।
৪৪. মেঘশূন্য আকাশের জমাট ঢালা নীলিমার মধ্যে কী শুকিয়ে ওঠে?
উত্তর: মেঘশূন্য আকাশের জমাট ঢালা নীলিমার মধ্যে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ শুকিয়ে ওঠে।
৪৫. ‘বেওয়া’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘বেওয়া’ শব্দের অর্থ সন্তানহীনা বিধবা।
৪৬. রহীমা কী ভালোবাসে?
উত্তর: রহীমা ফসলের প্রাচুর্য ভালোবাসে।
৪৭. কোন দৃশ্য মজিদের কাছে ভালো লাগে না?
উত্তর: গ্রামবাসীর হাসি-গান মজিদের কাছে ভালো লাগে না।
৪৮. মহব্বতনগরের দুদু মিঞা কয় সন্তানের জনক?
উত্তর: মহব্বতনগরের দুদু মিঞা সাত সন্তানের জনক।
৪৯. মজিদের শক্তির মূল উৎস কী?
উত্তর: মজিদের শক্তির মূল উৎস ঝালত ওয়ালা মাজার।
৫০. কে গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল?
উত্তর: আক্কাস মিঞা গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।
৫১. মহব্বতনগরের কৃষকদের কখন খোদার কথা স্মরণ থাকে না?
উত্তর: মহব্বতনগরের কৃষকদের চারা ছড়াবার সময় খোদার কথা স্মরণ থাকে না।
৫২. শিলাবৃষ্টি হওয়ার রাতে মজিদ কাকে একাকী মাজারে বেঁধে রেখে আসে?
উত্তর: শিলাবৃষ্টি হওয়ার রাতে মজিদ জমিলাকে একাকী মাজারে বেঁধে রেখে আসে।
৫৩. শিলাবৃষ্টির পর সকালে কৃষকেরা জমিতে কী দেখে শঙ্কিত হয়ে ওঠে?
উত্তর: শিলাবৃষ্টির পর সকালে কৃষকেরা জমিতে কচি-নধর ধান দেখে শঙ্কিত হয়ে ওঠে।
৫৪. কখন ঝড়ের সাথে প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টি হয়?
উত্তর: বৈশাখের শুরুতে ঝড়ের সাথে প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টি হয়।
৫৫. মহব্বতনগরে কে জমিকে ধন মনে করে না?
উত্তর: মহব্বতনগরে মজিদ জমিকে ধন মনে করে না।
৫৬. মজিদ মহব্বতনগরে এসে কীসের ব্যবসা শুরু করে?
উত্তর: মজিদ মহব্বতনগরে এসে মাজার ব্যবসা শুরু করে।
৫৭. মহব্বতনগরের ক্ষতিগ্রস্ত মাঠের এক প্রান্তে একাকী দাঁড়িয়ে দাঁত খিলালকারী ব্যক্তিটি কে?
উত্তর: মহব্বতনগরের ক্ষতিগ্রস্ত মাঠের এক প্রান্তে একাকী দাঁড়িয়ে দাঁত খিলালকারী ব্যক্তিটি মজিদ।
৫৮. মহব্বতনগরের কৃষকেরা ধান কাটার সময় বুক ফাটিয়ে কী গায়?
উত্তর: মহব্বতনগরের কৃষকেরা ধান কাটার সময় বুক ফাটিয়ে গান গায়।
৫৯. মাটির প্রতি যাদের পূজার ভাব জেগেছে মজিদ তাদেরকে কী বলেছে?
উত্তর: মাটির প্রতি যাদের পূজার ভাব জেগেছে মজিদ তাদেরকে ভ‚ত-পূজারী বলেছে।
৬০. খরার সময় মহব্বতনগরের লোকজন খতম পড়াবার জন্য কার কাছে ছুটে যায়?
উত্তর: খরার সময় মহব্বতনগরের লোকজন খতম পড়াবার জন্য মজিদের কাছে ছুটে যায়।
৬১. কার সন্তানশূন্য কোলটি খাঁ খাঁ করে?
উত্তর: রহীমার সন্তানশূন্য কোলটি খাঁ খাঁ করে।
৬২. রহীমা অতি সঙ্গোপনে মজিদের কাছে কী আর্জি জানায়?
উত্তর: রহীমা অতি সঙ্গোপনে মজিদের কাছে সন্তান কামনার আর্জি জানায়।
৬৩. মহব্বতনগরের কোন লোকটি মরণরোগে যন্ত্রণা পাচ্ছে?
উত্তর: মহব্বতনগরের ছুনুর বাপ মরণরোগে যন্ত্রণা পাচ্ছে।
৬৪. মজিদ মহব্বতনগরের কাকে ‘কলমা না জানার জন্য অকথ্য ভাষায় তিরস্কার করে?
উত্তর: মজিদ মহব্বতনগরের দুদু মিঞাকে ‘কলমা না জানার জন্য অকথ্য ভাষায় তিরস্কার করে।
৬৫. মহব্বতনগরে এসে মজিদ কার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তোলে?
উত্তর: হব্বতনগরে এসে মজিদ খালেক ব্যাপারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তোলে।
৬৬. হাসুনির মায়ের পেশা কী ছিল?
উত্তর: হাসুনির মায়ের পেশা ছিল ধান ভানা।
৬৭. দিলে চায় না বলে কে শ্বশুর বাড়ি যায় না?
উত্তর: দিলে চায় না বলে হাসুনির মা শ্বশুর বাড়ি যায় না।
৬৮. ধানক্ষেতের তাজা রঙ দেখে হাসুনির মায়ের মনে কী জাগে?
উত্তর: ধানক্ষেতের তাজা রঙ দেখে হাসুনির মায়ের মনে পুলক জাগে।
৬৯. কাকে দেখে তাহের-কাদেরের বৃদ্ধ বাবার মেজাজ গরম হয়ে ওঠে?
উত্তর: হাসুনির মাকে দেখে তাহের-কাদেরের বৃদ্ধ বাবার মেজাজ গরম হয়ে ওঠে।
৭০. অন্যের আত্মার শক্তিতে কার খাঁটি বিশ্বাস নেই?
উত্তর: অন্যের আত্মার শক্তিতে মজিদের খাঁটি বিশ্বাস নেই।
৭১. কৃষকদের গোলায় ধান ভরে ওঠার সময় নোয়াখালি অঞ্চলে কারা সফরে আসে?
উত্তর: কৃষকদের গোলায় ধান ভরে ওঠার সময় নোয়াখালি অঞ্চলে পিরেরা সফরে আসে।
৭২. মজিদ কখন আউয়ালপুরে পৌঁছালো?
উত্তর: মজিদ সূর্য হেলে পড়ার সময় আউয়ালপুরে পৌঁছালো।
৭৩. কোথায় একজন বৃদ্ধ নতুন পিরের আগমন ঘটেছে?
উত্তর: আউয়ালপুরে একজন বৃদ্ধ নতুন পিরের আগমন ঘটেছে।
৭৪. আমেনা বিবি সন্তান কামনায় কার পানিপড়া খেতে চেয়েছিল?
উত্তর: আমেনা বিবি সন্তান কামনায় আউয়ালপুরের পিরের পানিপড়া খেতে চেয়েছিল।
৭৫. হাসুনির মা মজিদের কাছে কী দোয়া চায়?
উত্তর: হাসুনির মা মজিদের কাছে মওতের দোয়া চায়।
৭৬. কোন জিনিসটি বিষাক্ত সাপের রসনার চেয়েও ভয়ঙ্কর?
উত্তর: মানুষের রসনা জিনিসটি বিষাক্ত সাপের রসনার চেয়েও ভয়ঙ্কর।
৭৭. মজিদের দৃষ্টিতে, মহব্বতনগরের কাকে দোজখের লেলিহান শিখা স্পর্শ করেছে?
উত্তর: মজিদের দৃষ্টিতে, মহব্বতনগরের হাসুনির মায়ের বাপকে দোজখের লেলিহান শিখা স্পর্শ করেছে।
৭৮. “খেলোয়াড় চলে গেছে, খেলবে কার সাথে।”Ñ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ বাক্যে কোন খেলার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ঝগড়া।
৭৯. মজিদের দেওয়া হাসুনির মায়ের শাড়িটির রঙ কেমন ছিল?
উত্তর: মজিদের দেওয়া হাসুনির মায়ের শাড়িটির রঙ বেগুনি ছিল।
৮০. মজিদ মহব্বতনগরের কোন লোকটিকে শয়তানের খাম্বা বলেছে?
উত্তর: মজিদ মহব্বতনগরের তাহেরের বাপকে শয়তানের খাম্বা বলেছে।
৮১. শ্বশুরবাড়ির কোন জিনিস দেখে আমেনার কান্না আসতো?
উত্তর: শ্বশুরবাড়ির থোতামুখো তাল গাছটি দেখে আমেনার কান্না আসতো।
৮২. আউয়ালপুরের পিরের প্রধান মুরিদ কে?
উত্তর: আউয়ালপুরের পিরের প্রধান মুরিদ মতলুব খাঁ।
৮৩. মতলুব খাঁর মতে, আউয়ালপুরের পিরের কোন জিনিসটিকে ধরে রাখার ক্ষমতা আছে?
উত্তর: মতলুব খাঁর মতে, আউয়ালপুরের পিরের সূর্যকে ধরে রাখার ক্ষমতা আছে।
৮৪. ‘লালসালু’ উপন্যাসে উলিখিত হাসপাতালটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে উলিখিত হাসপাতালটি করিমগঞ্জে অবস্থিত।
৮৫. হাসপাতালের কাকে মজিদ ডাক্তার ভেবেছিল?
উত্তর: হাসপাতালের কম্পাউন্ডারকে মজিদ ডাক্তার ভেবেছিল।
৮৬. ‘লালসালু’ উপন্যাসে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কে সময়ে অসময়ে মিথ্যা কথা বলে?
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভণ্ড মজিদ সময়ে অসময়ে মিথ্যা কথা বলে।
৮৭. মহব্বতনগরের কে আউয়ালপুরের পির সাহেবের সাহায্য চায়?
উত্তর: মহব্বতনগরের আমেনা বিবি আউয়ালপুরের পির সাহেবের সাহায্য চায়।
৮৮. কত বছর আমেনা বিবি স্বামীর সাথে সংসার করার পর সন্তানহীনতায় তালাকপ্রাপ্ত হয়?
উত্তর: ত্রিশ বছর আমেনা বিবি স্বামীর সাথে সংসার করার পর সন্তানহীনতায় তালাকপ্রাপ্ত হয়।
৮৯. খালেক ব্যাপারী কার কথামতো আমেনা বিবিকে তালাক দেয়?
উত্তর: খালেক ব্যাপারী মজিদের কথামতো আমেনা বিবিকে তালাক দেয়।
৯০. মহব্বতনগরের কোন নারী বছর বছর সন্তানের জন্ম দেয়?
উত্তর: মহব্বতনগরের তানু বিবি বছর বছর সন্তানের জন্ম দেয়।
৯১. তানু বিবি কে?
উত্তর: তানু বিবি খালেক ব্যাপারীর দ্বিতীয় স্ত্রী।
৯২. আউয়ালপুরের পিরকে মজিদ কী নামে আখ্যায়িত করেছে?
উত্তর: আউয়ালপুরের পিরকে মজিদ ইবলিশ শয়তান নামে আখ্যায়িত করেছে।
৯৩. আমেনা বিবি কাকে দিয়ে পানিপড়া আনতে বলে?
উত্তর: আমেনা বিবি ধলা মিঞাকে দিয়ে পানিপড়া আনতে বলে।
৯৪. ধলা মিঞা কে?
উত্তর: ধলা মিঞা তানু বিবির বড় ভাই।
৯৫. আউয়ালপুর ও মহব্বতনগরের মাঝ পথে দেবংশি গাছটির নাম কী?
উত্তর: আউয়ালপুর ও মহব্বতনগরের মাঝ পথে দেবংশি গাছটির নাম তেঁতুল গাছ।
৯৬. মজিদের ধমকে কার মুখ হঠাৎ ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে?
উত্তর: মজিদের ধমকে ধলা মিঞার মুখ হঠাৎ ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে।
৯৭. মহব্বতনগরের কার গুণচর্চায় মজিদের কোনো আকর্ষণ নেই?
উত্তর: মহব্বতনগরের ধলা মিঞার গুণচর্চায় মজিদের কোনো আকর্ষণ নেই।
৯৮. মজিদের মতে, পেটের কয় বেড়িতে মেয়ে মানুষের সন্তান হয় না?
উত্তর: মজিদের মতে, পেটের সতেরো বেড়িতে মেয়ে মানুষের সন্তান হয় না।
৯৯. আমেনা বিবি সন্তান লাভের আশায় মাজারে কয় পাক ঘোরে?
উত্তর: আমেনা বিবি সন্তান লাভের আশায় মাজারে সাত পাক ঘোরে।
১০০. আউয়ালপুর থেকে ফেরার পথে কোথায় মজিদের একটা মূর্তি নজরে পড়ে?
উত্তর: আউয়ালপুর থেকে ফেরার পথে মোলা শেখের কাঁঠাল গাছ তলায় মজিদের একটা মূর্তি নজরে পড়ে।
১০১. মহব্বতনগরের কাকে চিনতে মজিদের এক পলকও দেরি হয় না?
উত্তর: মহব্বতনগরের হাসুনির মাকে চিনতে মজিদের এক পলকও দেরি হয় না।
১০২. মহব্বতনগরের কে কেরায়া নায়ের মাঝি হতে চায়?
উত্তর: মহব্বতনগরের কাদের কেরায়া নায়ের মাঝি হতে চায়।
১০৩. হাসুনির মায়ের জানাযা পড়ায় কে?
উত্তর: হাসুনির মায়ের জানাযা পড়ায় মোলা শেখ।
১০৪. হাসুনির মায়ের মন কী ভাবতেই ভয় ও বেদনায় নীল হয়ে ওঠে?
উত্তর: হাসুনির মায়ের মন মায়ের কবরের আজাব ভাবতেই ভয় ও বেদনায় নীল হয়ে ওঠে।
১০৫. মজিদের কথামতো আমেনা বিবি কোনদিন রোজা রাখে?
উত্তর: মজিদের কথামতো আমেনা বিবি শুক্রবার দিন রোজা রাখে।
১০৬. আমেনা বিবি কোন যানে চড়ে মজিদের মাজারে গিয়েছিল?
উত্তর: আমেনা বিবি পালকিতে চড়ে মজিদের মাজারে গিয়েছিল।
১০৭. পালকি থেকে নামার সময় আমেনার কোনটি দেখে মজিদের মনে কামভাব জেগে ওঠে?
উত্তর: পালকি থেকে নামার সময় আমেনার সুন্দর মসৃণ পা দেখে মজিদের মনে কামভাব জেগে ওঠে।
১০৮. মজিদের কাম বাসনাকে কোনটির সাথে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: মজিদের কাম বাসনাকে সাপের বিষের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
১০৯. মজিদের মাজারের গাত্রাবরণ কতদিন অন্তর বদলানো হয়?
উত্তর: মজিদের মাজারের গাত্রাবরণ দু-তিন বছর অন্তর বদলানো হয়।
১১০. মজিদের মাজারের গাত্রাবরণের খরচ কে বহন করে?
উত্তর: মজিদের মাজারের গাত্রাবরণের খরচ খালেক ব্যাপারী বহন করে।
১১১. খালেক ব্যাপারী কে?
উত্তর: খালেক ব্যাপারী মহব্বতনগরের জোতদার।
১১২. রূপালি ঝালটের বিবর্ণ অংশটা কার মনকে কালো করে রেখেছে?
উত্তর: রূপালি ঝালটের বিবর্ণ অংশটা মজিদের মনকে কালো করে রেখেছে।
১১৩. আক্কাস মিঞা কোন স্কুলে পড়াশোনা করেছে?
উত্তর: আক্কাস মিঞা করিমগঞ্জ স্কুলে পড়াশোনা করেছে।
১১৪. আক্কাস মিঞা কোথায় চাকরি করে পয়সা জমিয়েছে?
উত্তর: আক্কাস মিঞা পাট ও তামাকের আড়তে চাকরি করে পয়সা জমিয়েছে।
১১৫. মহব্বতনগরের লোকজন স্কুলের পরিবর্তে কী প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত?
উত্তর: মহব্বতনগরের লোকজন স্কুলের পরিবর্তে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত।
১১৬. মজিদ কৌশলে সভায় আক্কাসের স্কুলের পরিবর্তে কী প্রতিষ্ঠার কথা বলে?
উত্তর: মজিদ কৌশলে সভায় আক্কাসের স্কুলের পরিবর্তে নতুন মসজিদ প্রতিষ্ঠার কথা বলে।
১১৭. মসজিদ নির্মাণে খালেক ব্যাপারী একাই কত অংশ বহন করার কথা বলে?
উত্তর: মসজিদ নির্মাণে খালেক ব্যাপারী একাই বারো আনা বহন করার কথা বলে।
১১৮. মহব্বতনগর গ্রামে শিলাবৃষ্টির ভয় কাটানোর জন্য কারা মন্ত্র পাঠ করে?
উত্তর: মহব্বতনগর গ্রামে শিলাবৃষ্টির ভয় কাটানোর জন্য শিরালীরা মন্ত্র পাঠ করে।
১১৯. মহব্বতনগরের কার নীরবতা পাথরের মতো ভারী?
উত্তর: মহব্বতনগরের মজিদের নীরবতা পাথরের মতো ভারী।
১২০. মাজারের অনাবৃত কোণটা কোন জিনিসের মতো দেখাচ্ছিল?
উত্তর: মাজারের অনাবৃত কোণটা মৃত মানুষের চোখের মতো দেখাচ্ছিল।
১২১. কোন জিনিসটি মজিদের মনে ভাবান্তর আনে?
উত্তর: ফাল্গুনের দমকা হাওয়া মজিদের মনে ভাবান্তর আনে।
১২২. কার হাসি ঝরনার অনাবিল গতির মতো ছন্দময়?
উত্তর: জমিলার হাসি ঝরনার অনাবিল গতির মতো ছন্দময়।
১২৩. বিয়ের দিনে মজিদকে দেখে জমিলার কী মনে হয়েছিল?
উত্তর: বিয়ের দিনে মজিদকে দেখে জমিলার দুলার বাপ মনে হয়েছিল।
১২৪. শ্বশুরবাড়িতে আনার পর কার জন্য জমিলার প্রাণটা কাঁদে?
উত্তর: শ্বশুরবাড়িতে আনার পর নুলা ভাইয়ের জন্য জমিলার প্রাণটা কাঁদে।
১২৫. কে মজিদের মাজারে খোদার অন্যায়ের বিরুদ্ধে নালিশ করতে এসেছে?
উত্তর: খ্যাংটা বুড়ি মজিদের মাজারে খোদার অন্যায়ের বিরুদ্ধে নালিশ করতে এসেছে।
১২৬. কার মেহেদি দেওয়া একটা পা মাজারের গায়ে লেগে থাকে?
উত্তর: জমিলার মেহেদি দেওয়া একটা পা মাজারের গায়ে লেগে থাকে।
১২৭. কার চোখ দুটি পৃথিবীর দুঃখ বেদনার অর্থহীনতায় হারিয়ে গেছে?
উত্তর: জমিলার চোখ দুটি পৃথিবীর দুঃখ বেদনার অর্থহীনতায় হারিয়ে গেছে।
১২৮. জমিলার হাসি কেমন?
উত্তর: জমিলার হাসি মিহি সুন্দর।
১২৯. বিছানায় জমিলা কান পেতে কীসের আওয়াজ শোনে?
উত্তর: বিছানায় জমিলা কান পেতে ঢোলকের আওয়াজ শোনে।
১৩০. অবিশ্রান্ত ঢোলক বেজে চলেছে কোথায়?
উত্তর: অবিশ্রান্ত ঢোলক বেজে চলেছে ডোম পাড়ায়।
১৩১. জমিলার কখন ঘুম পাড়ার অভ্যাস?
উত্তর: জমিলার সন্ধ্যায় ঘুম পাড়ার অভ্যাস।
১৩২. মজিদ কাকে হ্যাঁচকা টানে ঘুম থেকে উঠায়?
উত্তর: মজিদ জমিলাকে হ্যাঁচকা টানে ঘুম থেকে উঠায়।
১৩৩. মজিদ হ্যাঁচকা টানে উঠানোর পর জমিলাকে কোথায় নিয়ে যায়?
উত্তর: মজিদ হ্যাঁচকা টানে উঠানোর পর জমিলাকে মাজারে নিয়ে যায়।
১৩৪. মজিদের মতে, কার দিলে খোদার ভয় নেই?
উত্তর: মজিদের মতে, জমিলার দিলে খোদার ভয় নেই।
১৩৫. জিকির অনুষ্ঠানে মজিদ কী পরিধান করেছে?
উত্তর: জিকির অনুষ্ঠানে মজিদ লম্বা সাদা আলখেলা পরিধান করেছে।
১৩৬. জিকির অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের জন্য কী রান্না হয়েছে?
উত্তর: জিকির অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের জন্য খিচুড়ি রান্না হয়েছে।
১৩৭. হঠাৎ কীসের আওয়াজে জমিলা বিচলিত হয়ে পড়ে?
উত্তর: হঠাৎ জিকিরের আওয়াজে জমিলা বিচলিত হয়ে পড়ে।
১৩৮. মজিদের মতে, কে তার সংসারে ফাটল ধরিয়ে দিতে এসেছে?
উত্তর: মজিদের মতে, জমিলা তার সংসারে ফাটল ধরিয়ে দিতে এসেছে।
১৩৯. জমিলা দেখতে কেমন?
উত্তর: জমিলা দেখতে ক্ষুদ্র লতার মতো।
১৪০. কার জন্য মজিদের খুব মায়া হয়?
উত্তর: জমিলার জন্য মজিদের খুব মায়া হয়।
১৪১. মজিদের দৃষ্টিতে কী চেয়ে চেয়ে দেখা এক রকম এবাদত?
উত্তর: মজিদের দৃষ্টিতে প্রকৃতির লীলা চেয়ে চেয়ে দেখা এক রকম এবাদত।
১৪২. মহব্বতনগরে এক রাতে ঝড়ের পর কী শুরু হয়?
উত্তর: মহব্বতনগরে এক রাতে ঝড়ের পর শিলাবৃষ্টি শুরু হয়।
১৪৩. কীসের অপেক্ষায় রহীমা গায়ে হাত দিয়ে চুপচাপ বসেছিল?
উত্তর: পরিষ্কার প্রভাতের অপেক্ষায় রহীমা গায়ে হাত দিয়ে চুপচাপ বসেছিল।
১৪৪. মজিদের মতে, কাকে তাড়াবার জন্য খোদা শিলা বৃষ্টি ছোড়ে?
উত্তর: মজিদের মতে, শয়তানকে তাড়াবার জন্য খোদা শিলা বৃষ্টি ছোড়ে।
১৪৫. এক রাতে মহব্বতনগরের আকাশ থেকে পাথরের মতো কী ঝরতে থাকে?
উত্তর: এক রাতে মহব্বতনগরের আকাশ থেকে পাথরের মতো খণ্ড খণ্ড বরফের অজস্র টুকরা ঝরতে থাকে।
১৪৬. শিলার আঘাতে মহব্বতনগরে কী ঝরে ঝরে মাটিতে পড়ে?
উত্তর: শিলার আঘাতে মহব্বতনগরে নধর কচি ধানের শীষ ঝরে ঝরে মাটিতে পড়ে।
১৪৭. মজিদ কল্পিত মাজারের কী বলে নিজেকে পরিচয় দেয়?
উত্তর: মজিদ কল্পিত মাজারের খাদেম বলে নিজেকে পরিচয় দেয়।
১৪৮. খালেক ব্যাপারীর মোট কতজন স্ত্রী ছিল?
উত্তর: খালেক ব্যাপারীর মোট ২ জন স্ত্রী ছিল।
১৪৯. মজিদের মোট কয়জন স্ত্রী ছিল?
উত্তর: মজিদের মোট ২ জন স্ত্রী ছিল।
১৫০. আক্কাস মিঞা কার ছেলে?
উত্তর: আক্কাস মিঞা মোতাব্বের মিঞার ছেলে।
১৫১. মজিদের সমস্ত অপকর্মের নিঃসন্দিগ্ধ সমর্থক কে ছিল?
উত্তর: মজিদের সমস্ত অপকর্মের নিঃসন্দিগ্ধ সমর্থক প্রথমা স্ত্রী রহীমা ছিল।
১৫২. মহব্বতনগরের মহিলারা কার কাছে তাদের সমস্যার কথা বলতো?
উত্তর: মহব্বতনগরের মহিলারা রহীমার কাছে তাদের সমস্যার কথা বলতো।
১৫৩. পোষা জীবজন্তু আহার না করলে কে দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠে?
উত্তর: পোষা জীবজন্তু আহার না করলে রহীমা দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠে।
১৫৪. মজিদ কার বিশ্বাসকে পর্বতের মতো অটল বলেছে?
উত্তর: মজিদ রহীমার বিশ্বাসকে পর্বতের মতো অটল বলেছে।
১৫৫. কে মজিদের ঘরের খুঁটি?
উত্তর: রহীমা মজিদের ঘরের খুঁটি।
১৫৬. মাজারে কে হাত-পা ছড়িয়ে চিৎ হয়েছিল?
উত্তর: মাজারে জমিলা হাত-পা ছড়িয়ে চিৎ হয়েছিল।
১৫৭. ‘লালসালু’ উপন্যাসে কার চোখ বিশ্বাসের পাথরে খোদাই করা?
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদের চোখ বিশ্বাসের পাথরে খোদাই করা।
১৫৮. সৈয়দ ওয়ালীউলাহ বাংলাদেশের কোন অঞ্চলের মানুষের কথা তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসে তুলে ধরেছেন?
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউলাহ বাংলাদেশের নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষের কথা তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসে তুলে ধরেছেন।
১৫৯. ‘লালসালু’ উপন্যাসের ঔপন্যাসিক নোয়াখালি জেলার কোন গ্রামের মানুষের কাহিনি তুলে ধরেছেন?
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের ঔপন্যাসিক নোয়াখালি জেলার মহব্বতনগর গ্রামের মানুষের কাহিনি তুলে ধরেছেন।
১৬০. মজিদ মহব্বতনগর গ্রামের পরিত্যক্ত কবরকে কার কবর বলে গ্রামবাসীকে জানায়?
উত্তর: মজিদ মহব্বতনগর গ্রামের পরিত্যক্ত কবরকে মোদাচ্ছের পিরের কবর বলে গ্রামবাসীকে জানায়।
১৬১. মজিদ রহীমার পেটে কয়টি বেড়ির কারণে সন্তান না হওয়ার কথা বলে?
উত্তর: মজিদ রহীমার পেটে চোদ্দটি বেড়ির কারণে সন্তান না হওয়ার কথা বলে।
১৬২. সতীন হলেও রহীমা জমিলাকে কোন দৃষ্টিতে দেখতো?
উত্তর: সতীন হলেও রহীমা জমিলাকে সন্তানের দৃষ্টিতে দেখতো।
১৬৩. ‘লালসালু’ উপন্যাসের নায়ক চরিত্রটি কে?
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের নায়ক চরিত্রটি মজিদ।
১৬৪. কোন জিনিসটি মজিদ তার পেছনে মাছের পিঠের মতো সর্বক্ষণ দেখতে পায়?
উত্তর: মাজারের ছায়া মজিদ তার পেছনে মাছের পিঠের মতো সর্বক্ষণ দেখতে পায়।
১৬৫. খরার সময় মহব্বতনগরের জমিগুলো কীসে পরিণত হয়?
উত্তর: খরার সময় মহব্বতনগরের জমিগুলো বিরান ভ‚মিতে পরিণত হয়।
১৬৬. কখন মজিদের ঘরে প্রচুর ধান আসে?
উত্তর: পৌষ মাসে মজিদের ঘরে প্রচুর ধান আসে।
১৬৭. জিকির অনুষ্ঠানের সময় কে ঘরের বাইরে চলে যায়?
উত্তর: জিকির অনুষ্ঠানের সময় জমিলা ঘরের বাইরে চলে যায়।
১৬৮. জিকির অনুষ্ঠানে মজিদ জমিলাকে কী বলে পরিচয় দেয়?
উত্তর: জিকির অনুষ্ঠানে মজিদ জমিলাকে কাজের বেটি বলে পরিচয় দেয়।
১৬৯. শত্র“র আভাস পাওয়া হরিণের মতো কার চোখ সতর্ক হয়ে ওঠে?
উত্তর: শত্র“র আভাস পাওয়া হরিণের মতো জমিলার চোখ সতর্ক হয়ে ওঠে।
১৭০. জমিলাকে কাছে পেয়ে রহীমার মনে কোন ভাব জাগে?
উত্তর: জমিলাকে কাছে পেয়ে রহীমার মনে শ্বাশুড়ির ভাব জাগে।
১৭১. রহীমার চালচলন কেমন?
উত্তর: রহীমার চালচলন বেসামাল।
১৭২. কার আগমন মুহ‚র্ত মহব্বতনগরের সমগ্র গ্রামকে চমকে দেয়?
উত্তর: মজিদের আগমন মুহ‚র্ত মহব্বতনগরের সমগ্র গ্রামকে চমকে দেয়।
১৭৩. মজিদ কাদের জাহেল, বে-এলেম ও আনপড়াহ বলেছে?
উত্তর: মজিদ মহব্বতনগরবাসীদের জাহেল, বে-এলেম ও আনপড়াহ বলেছে।
১৭৪. মহব্বতনগরের বৃদ্ধ সোলেমনের বাপ কীসের রোগী?
উত্তর: মহব্বতনগরের বৃদ্ধ সোলেমনের বাপ হাঁপানির রোগী।
১৭৫. মহব্বতনগরের কার গলার আওয়াজ মাঠ থেকেও শোনা যায়?
উত্তর: মহব্বতনগরের রহীমার গলার আওয়াজ মাঠ থেকেও শোনা যায়।
১৭৬. কারা জমিকে বুকের রক্ত দিয়েও রক্ষা করতে দ্বিধা করে না?
উত্তর: মহব্বতনগরের লোকজন জমিকে বুকের রক্ত দিয়েও রক্ষা করতে দ্বিধা করে না।
১৭৭. মহব্বতনগরের কৃষকেরা কোথা থেকে কেঁদে কেঁদে ফসল তোলে?
উত্তর: মহব্বতনগরের কৃষকেরা বিল থেকে কেঁদে কেঁদে ফসল তোলে।
১৭৮. কীসের তৃষ্ণায় কৃষকের অন্তর খাঁ খাঁ করে?
উত্তর: মাটির তৃষ্ণায় কৃষকের অন্তর খাঁ খাঁ করে।
১৭৯. কার চোখে মজিদ ভয় দেখেছে?
উত্তর: রহীমার চোখে মজিদ ভয় দেখেছে।
১৮০. মহব্বতনগরের কে পক্ষাঘাতে কষ্ট পায়?
উত্তর: মহব্বতনগরের খেতানির মা পক্ষাঘাতে কষ্ট পায়।
১৮১. ঝড় এলে কার হৈ হৈ করার অভ্যাস?
উত্তর: ঝড় এলে হাসুনির মায়ের হৈ হৈ করার অভ্যাস।
১৮২. গভীর রাতে রহীমা আর হাসুনির মা কী করে?
উত্তর: গভীর রাতে রহীমা আর হাসুনির মা ধান সিদ্ধ করে।
১৮৩. কার দেহভরা ধানের গন্ধ?
উত্তর: রহীমার দেহভরা ধানের গন্ধ।
১৮৪. জাঁদরেল পিররা আশেপাশে আস্তানা গাড়লে কে শঙ্কিত হয়ে উঠে?
উত্তর: জাঁদরেল পিররা আশেপাশে আস্তানা গাড়লে মজিদ শঙ্কিত হয়ে উঠে।
১৮৫. ‘লালসালু’ কোন জাতীয় উপন্যাস?
উত্তর: ‘লালসালু’ সামাজিক উপন্যাস।
১৮৬. মজিদ জমিলাকে মাজারের কোথায় বসিয়ে দেয়?
উত্তর: মজিদ জমিলাকে মাজারের পাদপ্রান্তে বসিয়ে দেয়।
১৮৭. কার হাত হতে দুষ্ট আনা ও ভ‚তপ্রেতও রক্ষা পায় না?
উত্তর: মজিদের হাত হতে দুষ্ট আনা ও ভ‚তপ্রেতও রক্ষা পায় না।
১৮৮. মজিদ কাকে নাজুক শিশু বলেছে?
উত্তর: মজিদ জমিলাকে নাজুক শিশু বলেছে।
১৮৯. জিকির করতে করতে কে অজ্ঞান হয়ে পড়ে?
উত্তর: জিকির করতে করতে মজিদ অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
১৯০. কখন থেকে একটানা ঢোলক বেজে চলেছে?
উত্তর: সন্ধ্যা থেকে একটানা ঢোলক বেজে চলেছে।
১৯১. রহীমার প্রশস্ত বুকে মুখ গুঁজে কে অঘোরে ঘুমাচ্ছে?
উত্তর: রহীমার প্রশস্ত বুকে মুখ গুঁজে জমিলা অঘোরে ঘুমাচ্ছে।
১৯২. মজিদের দৃষ্টিতে, কার বাপ-মা জাহেল কিছিমের মানুষ?
উত্তর: মজিদের দৃষ্টিতে, জমিলার বাপ-মা জাহেল কিছিমের মানুষ।
১৯৩. মজিদ কী দিয়ে দাঁত মেছোয়াক করে?
উত্তর: মজিদ নিমের ডাল দিয়ে দাঁত মেছোয়াক করে।
১৯৪. মজিদ কার মনের হদিস পায় না?
উত্তর: মজিদ জমিলার মনের হদিস পায় না।
১৯৫. কোন কারণে আমেনা বিবির সন্তান হয় না?
উত্তর: বন্ধ্যাত্বের কারণে আমেনা বিবির সন্তান হয় না।
১৯৬. মহব্বতনগর গ্রামের লোকেরা ধান ক্ষেতে কী নিয়ে বেড়ায়?
উত্তর: মহব্বতনগর গ্রামের লোকেরা ধান ক্ষেতে নৌকা নিয়ে বেড়ায়।
১৯৭. ‘লালসালু’ উপন্যাসে কাদের দিনমানক্ষণের সবর ফাঁসির সামিল?
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে মহব্বতনগরবাসীর দিনমানক্ষণের সবর ফাঁসির সামিল।
খ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
১. ‘মনে হয় এটা খোদাতালার বিশেষ দেশ।’Ñউক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: নোয়াখালি অঞ্চলের জনজীবনে অভাব-অনটন থাকা সত্তে¡ও ধর্মীয় কাজে কার্পণ্য না থাকায় লেখক ব্যঙ্গ করে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
নোয়াখালি অঞ্চলের মানুষের জীবনে অভাব থাকলেও দেখা যায় ভোরবেলায় মক্তবে কচিকণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে উঠে আমসিপারা পড়ার কোলাহল। পরনে কাপড় নেই, পেটে ভাত নেই, ল্যাংটা ক্ষুধাতুর ছেলেরা সেই কোলাহলের অংশীদার। তারা জীবনকে যতটা ভালোবাসে মৃত্যুকে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি ভয় পায়। তাই লেখক কিছুটা ব্যাঙ্গাত্বক ভাষায় বলেছেন, এটি হয়তো খোদাতালার বিশেষ একটি অঞ্চল যেখানে মানুষ এতটা ধর্ম সংলগ্ন।
২. মজিদ যে খেলা খেলতে যাচ্ছে তা সাংঘাতিক কেন?
উত্তর: পাছে তার ভণ্ডামি ধরা পড়ে যায়Ñএই ভয় ও সন্দেহের জন্যে মজিদ তার খেলাকে সাংঘাতিক বলেছে।
মজিদ ঠিকই জানে প্রাণধর্মের যাঁতাকলে পিষ্ট হবে একদিন তার প্রথা-ধর্ম। সকল বাধা ছিঁড়ে একদিন সত্য বেড়িয়ে আসবে। সে বোঝে যেদিন মানুষ সজাগ হবে সেদিন তার মিথ্যা ফাঁদ ভণ্ডামির দিন শেষ হবে; জয় হবে মানবতার সুনিশ্চিত।
তাই তিনি যে কুসংস্কারাচ্ছন্ন অশিক্ষিত, মূর্খ গ্রামবাসীদের নিয়ে সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে খেলায় নেমেছেন, তা বড়ই সাংঘাতিক।
৩. ‘কিন্তু তারও যে বাঁচবার অধিকার আছে সেই কথাটাই সে সাময়িক চিন্তার মধ্যে প্রধান হয়ে ওঠে।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা মজিদের নিজস্ব ভাবনার একটি দিক উদঘাটিত হয়েছে।
মজিদ সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার জন্য মধুপুর ছেড়ে নতুন আশায় মহব্বতনগর গ্রামে এসেছে। তার মূল সিদ্ধান্ত হলো টিকে থাকা ও সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার জন্য যা করা প্রয়োজন, তাই তাকে করতে হবে। ন্যায়-অন্যায়, সুনীতি, দুর্নীতি হলো মানুষেরই সৃষ্টি, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিতে তারও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাই সে মিথ্যা প্রতারণার কথা জেনেও এই কঠিন দুঃসাহসী কাজে নেমে পড়ে।
৪. ‘মাটি-এ গোস্বা করে’Ñএ কথার ভাবার্থ কী?
উত্তর: মাটিতে রহীমা শব্দ করে হাঁটার ফলশ্র“তিতে মজিদ এ উক্তিটি করে।
মাটিতে তৈরি দেহ একদিন মাটিতে মিশে যাবে। মাটিকে আঘাত করে হাঁটলে মৃত্যুর পর মাটি বদলা নিবেÑএমন কুসংস্কার একনও গ্রাম বাংলায় প্রচলিত। মজিদের প্রথমা স্ত্রী রহীমা মাটিতে আওয়াজ করে হাঁটলে তা মজিদের পছন্দ হয় না। তাই মজিদ স্ত্রীকে ধর্মের মোড়কে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য শাসন করেছে, মজিদ চায় রহীমার মনে যেমন স্বামীর ভয় থাকবে, অনুরূপ চলনেও।
৫. মজিদ রহীমার প্রতি গুরুগম্ভীর হয়ে পড়ে কেন?
উত্তর: রহীমাকে মজিদ তার ও মাজারের প্রতি ভয় সঞ্চার ও ধর্মের মোড়কে জড়ানো নিজের কথার মর্ম বোঝানোর জন্য গম্ভীর হয়ে পড়ে।
মজিদ মহব্বতনগরে স্থায়ী আসন পাতার পাশাপাশি রহীমা নামের এক যৌবন প্রাপ্ত তরুণীকে বিয়ে করে। কিন্তু সাদা-সিধে রহীমার চালচলন একটু বেসামাল। হাঁটার সময় মাটিতে শব্দ করে হাঁটে যা মজিদের পছন্দ নয়। তাই মজিদ তার প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য রহীমার প্রতি গুরুগম্ভীর হয়ে পড়ে।
৬. ‘কুৎসা রটনা বড় গর্হিত কাজ’Ñকেন?
উত্তর: কুৎসায় মানুষের মান-মর্যাদার হানি ঘটে বলে তা বড় গর্হিত কাজ।
অনেক সময় মানুষ শয়তানের ফাঁদে পড়ে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে আপন মানুষেরও কুৎসা রটনা করে। কিন্তু সে বোঝে না ভালো মানুষ কখনো কুৎসা রটনা করে না; কুৎসা বড় খারাপ কাজ। হাসুনির মায়ের মা স্বামীর বিরুদ্ধে যে কুৎসিত বক্তব্য দিয়েছে তা চরম কুৎসা। কুৎসা রটনাকারী সর্বত্র ঘৃণিত এবং মানুষের মধ্যে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ায়।
৭. ‘সে ঝংকার মানুষের প্রাণে লাগে, কানে লাগে।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউলাহ ‘লালসালু’ উপন্যাসের এই তাৎপর্য পূর্ণ উক্তিটি মজিদের কোরআনের আয়াত পড়ার ঝঙ্কারের প্রতি ইঙ্গিত করেছে।
তাহের-কাদেরের বাপের শালিসের দিন সুচতুর মজিদ কোরআনের আয়াত পড়ে তা ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে উপস্থিত উৎসুক জনতার মনে ধর্মের ভয় জোগানোর চেষ্টা করে এবং সফলতা লাভ করে। মজিদের সুরেলা গলার ঝঙ্কার দ্বারা ঘরময় যেন ঝঙ্কৃত হচ্ছিল এবং সে ঝঙ্কার উপস্থিত জনতার কানে বাজছিল এবং প্রাণকে স্পর্শ করছিল। অর্থাৎ মজিদের কোরআন পড়ার সুমধুর সুরে তারা মোহিত হয়ে পড়েছিল।
৮. যে জিনিস বোঝার নয়, তার জন্য কৌত‚হল প্রকাশ করা অর্থহীন কেন?
উত্তর: আলাহর মহিমা ও মর্ম বোঝা সকলের পক্ষে সম্ভব নয় বলে তার জন্য অহেতুক কৌত‚হল প্রকাশ করা অর্থহীন।
মজিদ মহব্বতনগরের লোকজনকে শিক্ষা দিয়েছে যে, জন্ম মৃত্যু, রোগ-শোক সবই আলাহর ইচ্ছায় হয়। সৃষ্টির মর্ম সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা বেশ কঠিন। তবে এটি বুঝতে হবে যে, আলাহ যা কিছু করেন তা মানুষের ভালোর জন্যই করেন। সেজন্য আলাহর কাজকর্মের ব্যাপারে বান্দার এত কৌত‚হল না হওয়াই ভালো। বস্তুত এটি মানুষকে দমিয়ে রাখার অপকৌশল।
৯. আলাহর ওপর এত ভরসা সত্তে¡ও মজিদের চোখে জ্বালাময়ী ছবি ভেসে ওঠে কেন?
উত্তর: মজিদের ভেতরে পশুবৃত্তির কারণেই তার চোখে জ্বালাময়ী ছবি ভেসে ওঠে।
সে যতই মুখে আলাহ, রসূল, দ্বীনের কথা বলুক, তার ভেতরে রয়েছে পশুবৃত্তি। তাই তো তার ঘরে যৌবন ব্যাপ্ত সুঠাম স্ত্রী থাকা সত্তে¡ও সে কাজের মেয়ে হাসুনির মার জন্য আকুলি বিকুলি করে, কামনার আগুনে পোড়ে। গ্রামবাসীর সাথে আলাহ রসুলের কথা বলতে গিয়েও চোখে তার ভেসে ওঠে ভোর রাতে দেখা হাসুনির মার জ্বালাময়ী দেহ, উন্মুক্ত গলা কাঁধ ও বাহুর উজ্জ্বলতা।
১০. মজিদের মন থম থম করে কেন?
উত্তর: মজিদের মন থম থম করে এজন্য যে, আউয়ালপুরের পির সাহেবের আগমনে সে সত্যি সত্যি ভয় পেয়েছে।
মজিদ ওপরে যাই বলুক, ভেতরে ভেতরে সে তার নিজের শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন। পির সাহেবের মতো তার রুহানী শক্তি নেই, আউয়ালপুরে পিরের আগমনে লোকজনতার মাজারে কম আসে। সবাই নতুন পিরকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে, তার পায়ে একটু চুমু দিতে চায়। এইসব দৃশ্য দেখে মজিদ গম্ভীর হয়ে যায় এবং মাজারের রুজি রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রমে তার মনটা থম থম করে।
১১. মজিদের ক্রোধ হয় কেন?
উত্তর: আউয়ালপুরে নতুন পিরের আগমনে তার মাজার ব্যবসার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে গ্রামবাসীর ওপর ক্রোধ হয়।
রাতে শোয়ার সময় মজিদের স্ত্রী রহীমা পির সাহেবের অলৌকিক শক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে। এতে মজিদ বোঝে ব্যাপারটা অনেক দূর এগিয়েছে। তাছাড়া পরদিন মজিদ দেখে তার এলাকার লোকজনও পিরের কাছে ছুটে চলেছে। এতে মজিদের মনে গাঁয়ের লোকজনের প্রতি ভীষণ ক্রোধ হয়। মূলত আউয়ালপুরের নতুন পিরের আগমনে মজিদের ভীত নড়ে ওঠে।
১২. ‘এ বিচিত্র বিশাল দুনিয়ায় কী যাবার জায়গার কোনো অভাব আছে?’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: গাঁয়ের লোকজনের প্রতি ক্রুদ্ধ মজিদের মনোভাবের পরিচয় আলোচ্য বাক্যটিতে প্রকাশ পেয়েছে।
আউয়ালপুরে নতুন পিরের আগমনে দলে দলে লোক ঐ পিরের কাছে যাওয়ায় মজিদের মাজারে লোকজন আসা কমে যায়। এতে মজিদ চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং গ্রামবাসীর এই ধরনের কাজ তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতরাই শামিল মনে করে। তাই ক্রুদ্ধ হয়ে মজিদ বলেছে, এখানে যদি তার ভালোভাবে থাকবার উপায় না থাকে, তাহলে অন্যত্র সে তার ভবিষ্যৎ দেখবে। বাক্যটিতে মুখোশের আড়ালে মজিদের প্রকৃত চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে।
১৩. মজিদ আউয়ালপুরে গেল কেন?
উত্তর: আউয়ালপুরের পির সাহেবের প্রসার ঘটলে তার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যাবেÑএকথা ভেবে মজিদ আউয়ালপুরে গেল।
মজিদ অত্যন্ত চতুর এবং ক‚টকৌশলী একজন মানুষ। সে বুঝতে পেরেছিল মহব্বতনগরের লোকদের ফিরিয়ে আনতে না পারলে তার ধর্মব্যবসায় মন্দা পড়বে। সবচেয়ে বড় কথা, একবার তার প্রতি কারো অবিশ্বাস বা সন্দেহ দেখা দিলে তা ক্রমান¦য়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, নিজের অবস্থান অটুট রাখার জন্য, নতুন পিরের কারসাজি সরিয়ে দেওয়ার জন্য সে আউয়ালপুরে যায়।
১৪. ‘যেন বিশাল সূর্যোদয় হয়েছে, আর সে আলোয় প্রদীপের আলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আলোচ্য অংশটুকু দ্বারা আউয়ালপুরের পির সাহেবের সঙ্গে মজিদের তুলনা করা হয়েছে।
মজিদ ধর্মকে ব্যবহার করে মহব্বতনগরের লোকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। কিন্তু সেই লোকজনই আউয়ালপুরের পিরের কাছে গিয়েছে। মজিদ আউয়ালপুরে গিয়ে দেখে মহব্বতনগরের বহুলোক ভিড়ের মধ্যে আছে কিন্তু কেউ আজ মজিদকে লক্ষ করছে না। পির যেন তাদের কাছে সূর্য আর মজিদ হলো ক্ষুদ্র প্রদীপ। সূর্যের প্রখর আলোয় প্রদীপের আলো যেমন ম্লাণ হয়ে যায়, তেমনি পিরের কাছে মজিদ আজ ক্ষীন।
১৫. পির সাহেব হামলা করতে চায়নি কেন?
উত্তর: আউয়ালপুরের পির আউয়ালপুরে স্থায়ী নয়। তাছাড়া তার বয়স হয়েছে তাই সে মহব্বতনগরে হামলা করতে চায়নি।
আউয়ালপুর থেকে মহব্বতনগর অনেকটা দূর, প্রায় তিন গ্রাম ব্যবধান। এত দূরে এসে হামলা করা তেমন সুবিধার হবে বলে পির সাহেব মনে করেন নি। তাছাড়া বয়সের কারণে এখন সে জরাক্রান্ত ও দুর্বল, যৌবনের তেজ নেই। এই বয়সে দাঙ্গা-হাঙ্গামা তার পছন্দের নয় বলে মহব্বতনগরে সে হামলা করতে উৎসাহ দেখায়নি।
১৬. মজিদের মনে অস্বস্তি কেন?
উত্তর: আউয়ালপুরে মজিদের মতো অনুরূপ এক ধর্মব্যবসায়ীর আগমনে তার মনে অস্বস্তি বিরাজ করে।
মজিদ আউয়ালপুরের পিরের সম্পর্কে মহব্বতনগরের লোকজনকে বুঝিয়েছে, ঐ পির আসলে ভণ্ড এবং বিপদগামী। মজিদের বক্তৃতায় আবিষ্ট হয়ে মহব্বতনগরের কিছু যুবক পিরের আস্তানায় হামলা করেছে। মজিদ আশঙ্কা করছে যে পির সাহেবের সাঙ্গপাঙ্গরা এ হামলার বদলা নেবে। কিন্তু কোনো খোঁজ খবর না পাওয়ায় মজিদের মনে রাত-দিন অস্বস্তি লেগে রয়েছে।
১৭. আমেনা আউয়ালপুরের পিরের সাহায্য চায় কেন?
উত্তর: আমেনা সন্তান কামনার জন্য আউয়ালপুরের পিরের সাহায্য চায়। খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রী আমেনা বিবি পীরের অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাসী। ব্যাপারীর সাথে বহুদিন ঘর করেছে সে, কিন্তু তার কোনো সন্তান হয় না। তার বিশ্বাস, পির সাহেবের পানিপড়া খেলে সে সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম হবে। সে জন্য আমেনা বিবি মাতৃত্ব পূর্ণ করার জন্য আউয়ালপুরের পিরের সাহায্য চায়।
১৮. ধলা মিঞা আউয়ালপুরে যেতে চায় না কেন?
উত্তর: আউয়ালপুর ও মহব্বতনগরের মাঝপথে দেবংশি তেঁতুল গাছটির ভয় এবং পিরের সাঙ্গপাঙ্গদের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে ধলা মিঞা আউয়ালপুরে যেতে চায় না।
খালেক ব্যাপারী তার সম্বন্ধী ধলা মিঞাকে আমেনা বিবির জন্য আউয়ালপুর থেকে গোপনে পির সাহেবের পানিপড়া আনতে বলে। ধলা মিঞা ভাবে পানিপড়া আনতে হলে শেষ রাতে যাত্রা শুরু করে ভোর হওয়ার পূর্বেই ফিরে আসতে হবে। পথের মাঝে তেঁতুল গাছের ভ‚তপ্রেতের আস্তানা এবং পির সাহেবের সাঙ্গপাঙ্গদের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে ধলা মিঞা আওয়ালপুরে যেতে চায় না।
১৯. ‘সে অন্দরের লোক, আর তার তাগিদটা বাঁচা মরার মতো জোরালো।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে এ লাইনটিতে আমেনা বিবির জন্য পানিপড়া আনার গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে।
আমেনা বিবির বিবাহের দীর্ঘ ত্রিশ বছর পরও তার সন্তান হয় না। এজন্য সে মাতৃত্ব হৃদয় পূর্ণ করবার জন্য পিরের সাহায্য চায়। পিরের পানিপড়া খেলে তার ইহজীবনের দুঃখ ঘুচে যাবে, সে সন্তানবতী হবে; পাবে মাতৃত্বের স্বাদ। তাই মজিদ নতুন পিরের কাছে মহব্বতনগরের লোকজনকে যেতে নিষেধ ও তার সাথে দাঙ্গা করা আমেনা বিবি মোটেও পছন্দ করেনি।
২০. ‘সজ্ঞানে না জানলেও তারা একটা, পথ তাদের এক’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এ লাইনটিতে মহব্বতনগরের দুই শক্তিশালী মানুষ মজিদ ও খালেক ব্যাপারীর প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।
মহব্বতনগরের দুই শক্তিশালী মানুষ মজিদ আর খালেক ব্যাপারী। খালেক ব্যাপারী বিস্তর জমি জমার মানুষ এবং সে গ্রামের মাতব্বরও। অন্যদিকে মজিদ হলো মাজারের খাদেম। খালেক ব্যাপারীর দৃষ্টিতে সে হলো সমাজের মূল। তাঁর কথায় সমাজ ওঠে বসে।
মজিদের যেমন খালেক ব্যাপারীর প্রয়োজন, তদ্রুপ অলৌকিক শক্তিধর যাকে গ্রামবাসী শ্রদ্ধা, ভয় ও ভক্তি করে, সে মজিদকে খালেক ব্যাপারী হটায় না। তাই বলা যায়, মজিদ আর খালেক ব্যাপারী একই পথের পথিক।
২১. হাসুনির মার মন বেদনায় নীল হয়ে ওঠে কেন?
উত্তর: মায়ের মৃত্যুর পর মজিদের কাছে কবরের আযাবের কথা শুনে হাসুনির মার মন বেদনায় নীল হয়ে ওঠে।
অশিক্ষিত ধর্মভীরু হাসুনির মার মায়ের বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যু হলে তেমন একটা শোক লাগে না তার। কিন্তু যখন সে মজিদের কথায় বোঝে যে, তার মায়ের কবরে আযাব হবে তখনই তার মনে হাহাকার জাগে। কবরে মায়ের একাকী যন্ত্রণাভোগে তার মনের মধ্যে বেদনা জেগে ওঠে।
২২. ‘বার্ধক্যের শেষ স্তরে কারো মৃত্যু ঘটলে দুঃখটা তেমন জোরালোভাবে বুকে লাগে না।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটুকু দ্বারা বৈজ্ঞানিক তত্তে¡র ভিত্তিতে শিশু, কিশোর বা যৌবন বয়সের মৃত্যু আর বার্ধক্যের মৃত্যুর মধ্যে শোকের তারতম্য তুলে ধরা হয়েছে।
অল্প বয়সে কারো মৃত্যু ঘটলে নিকটজনেরা খুব বেশি শোক করে। কেননা তার মরার বয়স হয়নি বা সে আরো বহুদিন বেঁচে থাকতে পারত। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে কারো মৃত্যু হলে নিকটজনেরা অধিক শোকাহত হয় না, কারণ তারা ধরে নেয় প্রকৃতির নিয়মে স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। তাই হাসুনির মাও তার বৃদ্ধ মায়ের মৃত্যুকে সেভাবে নিয়েছে।
২৩. আমেনা বিবির মনে আশার সঞ্চার হলো কেন?
উত্তর: মজিদ যখন মাজার প্রদক্ষিণের কথা বলে তখন আমেনা বিবির ভয় হলেও সন্তান প্রাপ্তির আশায় তার মনে আশার সঞ্চার হয়।
সরল প্রকৃতির মানুষ আমেনা বিবি সন্তান কামনায় অধীর। প্রথমে এসে আউয়ালপুরের পির সাহেবের পানিপড়া না পেয়ে নিরাশ হয়েছিল। সে ধরেই নিয়েছিল তার আর সন্তান হবে না। কিন্তু মজিদ অমন পেটের বেড়ির কথা বলল এবং সাতের বেশি বেড়ি না থাকলে তা খোলার ব্যবস্থার কথা জানাল, তখন তার মনে আশার আলো দেখা দিল।
২৪. “দুই তানিতে যে প্রচুর তফাৎ আছে সে কথা কী করে বোঝায়?”Ñকথাটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ ও খালেক ব্যাপারী দুইজনই ক্ষমতাধর মানুষ হলেও দুজনের ক্ষমতা দু ধরনের, সে বিষয়টি এখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
দুই তানির মধ্যে একজন মজিদ অন্যজন খালেক ব্যাপারী। রহীমার পেটে চৌদ্দ বেড়ি আছে মজিদ তা কী করে জানেÑএ হলো খালেক ব্যাপারীর স্ত্রী তানু বিবির জিজ্ঞাসা। রহীমার কাছে যখন জানল যে তার স্বামী তাই বুঝতে পেরেছে তখন তানু বিবির প্রশ্ন হলো খালেক ব্যাপারী আমেনা বিবির স্বামী হওয়া সত্তে¡ও কেন তার বেড়ির কথা জানে না। তানু বিবিকে বুঝতে হবে, মজিদ খোদার পথের মানুষ। সে খালেক ব্যাপারীর মতো সাধারণ মানুষ নয়। তাই মজিদের ক্ষমতা মাজার থেকে আসে বলে দুই জনের মধ্যে পার্থক্যও যথেষ্ট।
২৫. এক ঢিলের পথ হলেও ব্যাপারীর বউ হেঁটে যেতে পারে না কেন?
উত্তর: সারাদিন রোজা রেখে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তির জন্য এক ঢিলের পথ তবুও ব্যাপারীর বউ হেঁটে যেতে পারে না।
মজিদের নির্দেশ অনুযায়ী সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যাবেলায় নুন আর আদা খেয়ে মাগরিবের নামাজের পর আমেনা বিবি মাজারে আসে। পালকি থেকে নামার পর মাজারের দূরত্ব একঢিলের পথ হলেও সারাদিন অভুক্ত থাকায় শরীর-মন ক্লান্ত ও অবসন্নের কারণে মাজারে যাওয়ার বাকি পথ আমেনা বিবি হেঁটে যেতে পারে না।
২৬. মজিদের কাম বাসনাকে সাপের দংশের সঙ্গে কেন তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: কাম বাসনা মানুষের মনের বিবেচনা শক্তি নষ্ট করে এবং জ্বালা-যন্ত্রণা সৃষ্টি করে বলে মজিদের কামভাবকে সাপের দংশনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
পালকি থেকে নেমে যাওয়ার সময় আমেনা বিবির সুন্দর ফর্সা পা দেখে ভণ্ড পির, পরনারীতে আসক্ত মজিদের ভিতর কামভাব জেগে ওঠে। সাপে কামড়ালে সাপের বিষে যেমন মানুষের শরীরে জ্বালা-যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়, তেমনি কামভাব জাগলে মানুষের দেহে ও মনে যন্ত্রণা হয়। সেজন্য ধর্মের লেবাস পরা ভণ্ড মজিদের কামভাবকে সাপের বিষের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
২৭. ‘সে মুখ ফ্যাকাশে, রক্তশূন্য এবং সে মুখে দুনিয়ার ছায়া নেই।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে এ লাইনটিতে পালকি থেকে মাজারে যাওয়ার পর আমেনা বিবির ভয়ার্ত চেহারার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
বিনা আহারে রোজা রেখে, সারাদিন কুরআন পাঠ করে এবং আদা-নুন দিয়ে ইফতার করা আমেনা বিবির শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে অজানা আশঙ্কা যে, মাজার প্রদক্ষিণের পরও যদি সন্তান জন্ম দিতে ব্যর্থ হয়। একদিকে অভুক্ত দুর্বল শরীর আরেক দিকে ভয়-শঙ্কা সবÑমিলিয়ে আমেনার চেহারা রক্তশূন্য ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে। সে মুখ কোনো জীবন্ত মানুষের নয়, সে মুখে পৃথিবীর কোনো লক্ষণ নেই।
২৮. একটা প্রখর আলো তার ভেতরটা কানা করে দিয়েছে কেন?
উত্তর: মজিদ কর্তৃক আবিষ্কৃত মোদাচ্ছের পিরের মাজারের চারদিকে প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে এক মহাশক্তির প্রখর অত্যুজ্জ্বল আলো আমেনা বিবির ভেতরটা কানা করে দিয়েছে।
মাজারে পাক দিতে গিয়ে এক ভিন্ন রকম শক্তিতে আমেনা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তার মনে হয় সে অনুভ‚তিশূন্য, কোনো কামনা বাসনা নেই আর কোনো অভাব অভিযোগও নেই তার। যে সন্তানশূন্যতা তাকে এতদিন কুরে কুরে খাচ্ছে, তা যেন এক নিমিষেই অন্তর্হিত হয়ে গেছে। সন্তানের জন্য হাহাকার করা তীব্র বেদনা আজ অতীতের স্মৃতির মতো অস্পষ্ট ধ্বংসস্তূপ।
২৯. মজিদ এত নিষ্ঠুর কেন?
উত্তর: যে ধর্মের লেবাসে মজিদ নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার মানসে মহব্বতনগরে এসেছে, সেই লক্ষ্য অর্জনে ধীরে ধীরে ভণ্ড মজিদ নিষ্ঠুর হয়ে পড়ে।
চালাক মজিদ নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য মহব্বতনগর গ্রামে আসে, তার প্রতিষ্ঠার মূলে যে তাকে অবজ্ঞা করেছে বা উপেক্ষা করেছে, তাকে সে সরাবেই। যে তার বিরুদ্ধে গেছে, তাকে সে শাস্তি দেবেই। কারণ সে জানে কোমলতা দেখালে সে মহব্বতনগরে টিকে থাকতে পারবে না। তাই না খেতে পাওয়া তৃণমূল থেকে সমাজ চালকের আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে মজিদ ক্রমান¦য়ে নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে।
৩০. ‘খোদার কালামের সাহায্যে যে কথা জানা যায় তা মূর্খের রোজগারের মত সাফ।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে ভণ্ড, প্রতারক মজিদ প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে খোদার কালাম নিয়ে মিথ্যাচার করেছে, তা বাক্যটিতে ফুটে উঠেছে।
সুচতুর মজিদ তার প্রতিষ্ঠার পথে বিন্দুমাত্র যাকে বাধা মনে করেছে তাকে সমূলে উৎপাটিত করেছে। আমেনা বিবি আউয়ালপুরের পির সাহেবের পানিপড়া খেতে চেয়ে তাকে যে অপমান ও অবহেলা করেছে, তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য ব্যাপারীর মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়েছে। মজিদ ব্যাপারীকে বলে খোদার কালামের মাধ্যমে প্রাপ্ত কথাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা চলে না। এ কথা সূর্যের আলোর চেয়েও পরিষ্কার। সহজ কথায় সে ব্যাপারীকে বুঝিয়ে দেয়, আমেনার মনে পাপ আছে, তাকে নিয়ে ঘর সংসার করা যথার্থ হবে না।
৩১. খালেক ব্যাপারী মজিদের কথা ঠিক মনে করল কেন?
উত্তর: খালেক ব্যাপারী ধর্মভীরু বলেই মজিদের কথা ঠিক মনে করল। খালেক ব্যাপারী বিশ্বাস করে মজিদ কোরআন-কেতাব পড়া আলেম মানুষ বলে আমেনা বিবি সম্পর্কে যা জেনেছে, তা খোদার কালাম পড়েই জেনেছে। সে জন্য আমেনা বিবিকে তার অপবিত্রতার কারণে তালাক দিতে বলেছে। তার ধারণা আমেনা বাইরের দিক থেকে নির্দোষ ও তার আচার-ব্যবহারে আপত্তিকর কিছু না থাকলেও ভিতরে নিশ্চয় গলদ আছে, তা না হলে মজিদ তালাকের কথা বলত না।
৩২. ‘ওটা ছিল নিশানা, আনন্দ আর সুখের’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ লাইনটি দ্বারা স্বামীর বাড়ি যে আমেনা বিবির জন্য সুখের স্থান ছিল, তা ব্যক্ত হয়েছে।
মেয়েরা স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা শুনলেই আনন্দে বুকটা ভরে ওঠে। কিন্তু স্বামী কর্তৃক তালাক প্রাপ্তা হয়ে বাপের বাড়ি যাওয়ার সময় তার চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে, নেই কোনো ‘আনন্দ’। কিন্তু শ্বশুর বাড়ির একটা নিশানা ছিল তার আনন্দ আর সুখের, তা হলো থোতামুখো তালগাছ যার জন্য তার বুক কান্নায় ভাসতো। বিয়ের পর বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি আসার পথে পালকির মধ্যে থেকে তালগাছটি দেখলেই বুঝত সে স্বামীর বাড়িতে এসে গেছে।
৩৩. মজিদের মন অন্ধকার হয়ে আসে কেন?
উত্তর: মাজারের রক্ষক ও পির মজিদ এক রাতে মোমবাতির উজ্জ্বল আলোয় মাজারের গিলাফের ঝালরের একটি অংশ বিবর্ণ দেখে তার মন অন্ধকার হয়ে আসে।
মজিদ বোঝে মাজারের রহস্য যতদিন থাকবে, তার ক্ষমতাও থাকবে তত দিন। তাই মাজারের প্রতি তার টান প্রচণ্ড বলে মাজারের সামান্য ক্ষতি হলে তার মন খারাপ হয়। সে চায় মাজারটি সব সময় ঝকঝকে থাকুক। এ কারণেই মোমবাতির আলোয় মাজারের গিলাফের ঝালরের একটি অংশ বিবর্ণ এবং এক জায়গাতে সুতো খসে গেলে তার মন অন্ধকার হয়ে আসে।
৩৪. রহীমা মজিদের সামনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কেন?
উত্তর: দয়ালু খোদা এত কঠিন কেন এই ভেবে আমেনার জন্য রহীমা মজিদের সামনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
মজিদ খোদার কালামের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য জেনে আমেনাকে শাস্তি দিয়েছে। এ বিষয়টি রহীমার কাছে অস্পষ্ট। তাই আমেনার তালাকের দিন রহীমার মনটা সারাদিন খারাপ থাকে। তার প্রশ্ন একটাইÑতা হলো আমেনা তো অন্যায় কিছু করেছে বলে মনে হয় না। আবার মজিদ যখন বলেছে তা অবিশ্বাসও করা যায় না। ভীষণ দ্বন্দে¡ পড়ে যায় রহীমা এবং আমেনার জন্য তার খারাপ লাগে।
৩৫. আক্কাস মিঞা গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায় কেন?
উত্তর: সমাজের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে আক্কাস গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। গ্রামে মক্তব থাকা সত্তে¡ও স্কুলে না পড়লে মুসলমান ছেলের উন্নতি হবে না এবং আধুনিক চিন্তা থেকে বঞ্চিত হবে এই ধারণা থেকেই আক্কাস গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সে মনে করে গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা হলে সমাজের মানুষ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে। সমাজ থেকে সকল প্রকার কুসংস্কারে রবাহু দূর হলে মানুষ তার নিজের ভালোমন্দ বুঝতে শিখবে। এইসব কারণে আক্কাস মিঞা মনে করে গ্রামে একটি স্কুল থাকা উচিত।
৩৬. আক্কাস বৈঠক থেকে উঠে চলে যায় কেন?
উত্তর: বৈঠকের পরিবেশ পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত তার অনুক‚লে ছিল না বলেই অবাঞ্ছিতের মতো আক্কাস বৈঠক থেকে উঠে যায়।
আক্কাস মিঞা গ্রামবাসীর মঙ্গলের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা বৈঠকে উপস্থাপন করলে সুচতুর মজিদ তার দাড়ি নেই কেন এমন একটি অবান্তর প্রশ্ন করে তাকে চুপসে দেয়। তার পর মজিদ গ্রামে একটি পাকা মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব দিলে উপস্থিত সবাই এক বাক্যে সায় দিল। আক্কাস পুনরায় স্কুলের কথা তুলতে চেয়ে পিতার ধমকে চুপ হয়ে যায়। পরবর্তীতে সবাইকে মসজিদ করা নিয়ে আলোচনা করতে দেখে সে আসর থেকে উঠে চলে গেল।
৩৭. ‘তাঁর জীবনে শৌখিনতা কিছু যদি থাকে তা এই কয়েক গজ রূপালি চাকচিক্য।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের উদ্ধৃত লাইনে মাজারের প্রতি মজিদের মমতা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
মজিদ বাইরে থেকে এসে মহব্বতনগর গ্রামে অখ্যাত কবরকে সালু দ্বারা ঘিরে সুন্দর গিলাফ দিয়ে ধর্মের লেবাসে পির সেজে গ্রামবাসীর ভক্তি ও সম্মান পাচ্ছে। সুতরাং মাজারটি তার শক্তির মূল ভিত্তি এবং মাজারের কোনো রকম অবহেলা-অনাদার তার কাম্য হতে পারে না। এজন্য এক রাতে মোমবাতির উজ্জ্বল আলোয় গিলাফের একাংশ বিবর্ণ হয়ে গেলে সে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং মনে দুঃখ অনুভব করে। তাই মাজারের সৌন্দর্য ঠিক রাখতে সে তৎপর। কেননা মাজারটিই তার সৌখিনা।
৩৮. ‘যাদের ঘরে রাজা মেয়ে তাদের আর শান্তি নেই।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ বাক্যটি দ্বারা বন্ধ্যা মেয়েদের প্রতি সামাজিক ধ্যান-ধারণার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
সন্তান না হলে স্বামীর ঘরে মেয়েদের আদর কমে যায় এবং এ মেয়েকে সমাজ ভাবে অপয়া। আমেনা বিবি বন্ধ্যা হওয়ায় ব্যাপারী একদিকে যেমন তার প্রতি খুশি ছিল না, অপরদিকে দ্বিতীয় বিবাহ করতেও বিলম্ব হয়নি। পরবর্তীতে মজিদের চক্রান্তে ব্যাপারী তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ায় তার মনের শান্তি নষ্ট হয়। বন্ধ্যা মেয়েরা যে সামাজিক নির্যাতনের শিকার; আমেনা বিবির ঘটনাই তার প্রমাণ।
৩৯. ফাল্গুনের দমকা হাওয়া মজিদের মনে ভাব জাগায় কেন?
উত্তর: ফাল্গুনের দমকা হাওয়া ধুলো উড়াতে দেখে মজিদের ফেলে আসা দেশের কথা, স্বজনদের কথা ও পরিবারের কথা মনে পড়ে।
ধর্মব্যবসায়ী, প্রতারক, ভণ্ড, নিম্নরুচিসম্পন্ন মজিদ এদেশে তথা মহব্বতনগর গ্রামে বহুদিন ধরে বসবাস করছে। এক সময় সে টাকা পয়সাহীন গরিব মানুষ হিসেবে এ গ্রামে এসেছিল। কিন্তু আজ তার অনেক জায়গা জমি এবং মান-মর্যাদা ও ক্ষমতা। এখন সে বাতাসে উড়ে যাওয়া পাতা নয়, মাটিতে শিকড় গাড়া গাছ। তাই অতীতের সেই সব কষ্টের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে তার মনকে বেদনাময় করে তোলে।
৪০. কবরটি মজিদকে ভীত করে তোলে কেন?
উত্তর: ধর্মব্যবসায়ী মজিদ দশ-বারো বছর ধরে যে কবরটি নিয়ে ব্যবসা করছে সেই মানুষকে সে চেনে না। তাই মাজারের সালু কাপড়ের একটি অংশ উল্টে গেলে সে ভীত হয়ে পড়ে।
জীবনের প্রয়োজনে ধর্মকে পুঁজি করে মজিদ একটি অজানা কবরকে কামেল পিরের কবর বলে চালিয়ে তার ধর্ম ব্যবসা শুরু করেন। অল্প দিনের মধ্যেই সে মান সম্মান ও অর্থবিত্তের মালিক হয়ে যায়। কিন্তু কবরটি কার মজিদ তা জানে না বলে বাতাসে উন্মুক্ত সালু কাপড়ের একটি অংশ উড়ে গেলে সেই অনাবৃত অংশ মরা মানুষের চোখের মতো দেখালে তার ভিতরে ভীতি সঞ্চার হয়। আসলে মানুষ যতই ধূর্ত বা পশুবৃত্তির হোক, দুর্বল মুহ‚র্তে তার ভেতরের সুপ্ত বিবেকের জাগরণ ঘটে, তখন সে ভীত হয়ে পড়ে।
৪১. ‘মজিদের নীরবতা পাথরের মত ভারী’।Ñকথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: মহব্বতনগর গ্রামে মজিদ প্রভুর আসনে অধিষ্ঠিত হলেও সন্তানহীনতা তাকে পীড়া দেয়।
রহীমা বন্ধ্যা মেয়ে হওয়ায় তার সন্তান হবে না। এক রাতে এ কথা নিয়ে রহীমা ও মজিদ কথাবার্তা বলার পর দুজনার চুপ হওয়ার পর রহীমা ভাবতে বসে। মজিদের সন্তান চায় বলে সে কথা বলে না, নীরব হয়ে থাকে। মজিদ এই নীরবতা রহীমার কাছে পাথরের মতো ভারী মনে হয়। এ নীরবতার মধ্যে যেন ভাবনা আছে, সন্তান না পাওয়ার হাহাকারও আছে।
৪২. মজিদ দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে চায় কেন?
উত্তর: মহব্বতনগরের বিধবা রহীমাকে বিয়ের পর সন্তান না হওয়ায়, সন্তান লাভের আশায় মজিদ দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে চায়।
মজিদ ভাগ্যের সন্ধানে মহব্বতনগরে এসে প্রতারণার মাধ্যমে নিজের ভাগ্য ফেরায়। রহীমার সন্তান না হওয়ায় মজিদ রহীমাকে বলে তার জন্য একজন সাথী আনবে। অর্থাৎ সে দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায়। অন্যদিকে মজিদের সন্তান প্রয়োজনÑএ কথা সত্য হলেও অল্পবয়সী একটি মেয়েকে ভোগ করার বাসনাও লম্পট মজিদকে লালায়িত করে।
৪৩. ‘এখন সে ঝড়ের মুখে উড়ে চলা পাতা নয়, সচ্ছলতার শিকড় গাড়া বৃক্ষ।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ উক্তিটিতে এক সময়ে জীবিকার সন্ধানে পথে নামা মজিদের মহব্বতনগরে পাকাপোক্ত হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে।
বহুদিন পূর্বে ভাগ্য অনে¦ষণে মজিদ মহব্বতনগরে এসেছিল। তখন সে ছিল নিঃস্ব। কিন্তু এখন একটি মাজারকে কেন্দ্র করে এ গ্রামে পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর তার এই বর্তমান অবস্থাকে বুঝানো হয়েছে এভাবে-ঝরা পাতা উড়ে যায়; কিন্তু শক্ত শিকড়ওয়ালা গাছকে ঝড় উপড়ে ফেলতে পারে না। মজিদও গাছের মতো এই গ্রামের মাটিতে শক্তভাবে শিকড় গেড়েছে।
৪৪. মজিদ চমকিত হয় কেন?
উত্তর: মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলার হাসিতে মজিদ চমকিত হয়।
সংকীর্ণ ও জটিল প্রকৃতির মজিদ ধর্মব্যবসায়ী, ভণ্ড, প্রতারক এবং প্রথা-ধর্মে বিশ্বাসী। একদিন সে বাইরের ঘর থেকে প্রাণ ধর্মমুখর, উচ্ছ¦ল, চঞ্চল জমিলার হাসির ঝংকার শুনে চমকিত হয়। কারণ দীর্ঘদিন এখানে বসবাসকালে কেউ কোনোদিন এমন হাসি হাসে নাই বরং মাজারে যারা আসে তারা দুঃখের ফরিয়াদ নিয়ে আসে এবং প্রবলভাবে কাঁদে।
৪৫. “তানি বুঝি দুলার বাপ”Ñকথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: প্রশ্নোলিখিত এ উক্তিটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের প্রাণধর্মমুখর চঞ্চল জমিলা মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী রহীমাকে জানিয়েছিল।
বিয়ের আগে জমিলার মেজো আপা বেড়ার ফাঁক দিয়ে মজিদকে দেখেয়েছিল। দাঁড়িওয়ালা বেশি বয়সী মজিদকে জমিলা ভেবেছিল এ লোক নিশ্চয়ই বরের বাপ হবে। কিন্তু এর সঙ্গেই তার বিয়ের পর এ রকম পিতৃতুল্য অসমবয়সী মানুষকে জমিলা স্বামী হিসেবে ভাবতে পারেনি। তার দুঃখের কথা, অপছন্দের কথা হাসতে হাসতে সে রহীমাকে জানিয়েছে।
৪৬. “জমিলা যেন ঠাটা মানুষের মত হয়ে গেছে।”Ñএ বাক্যটি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: চঞ্চল প্রাণধর্মমুখর জমিলার পিতৃবয়সী মজিদের সাথে বিয়ের পর মজিদের প্রতিনিয়ত শাসন আর উপদেশে সে বজ্রাহতের মতো হয়ে গেছে।
অল্পবয়সী কিশোরী বধূ জমিলারও জীবনে কামনা বাসনা আছে। কিন্তু সে জীবনকে যেভাবে ভেবেছিল, তার জীবনটা সেভাবে হলো না। তার বিয়ে হয় পিতৃবয়সের এক বুড়ো লোকের সঙ্গে যার পূর্বের এক বৌ আছে। সব মিলিয়ে তার জীবনকে কৌতুকের মত মনে হয়।
৪৭. ‘চোখে বিন্দুমাত্র খোদার ভয় নেই, মানুষের ভয় তো দূরের কথা।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে এ লাইনটি দ্বারা জমিলার সাহসিকতা এবং গোয়ার্তুমির কথা ফুটে উঠেছে।
বিয়ের পর মজিদের কথামতো চলার জন্য মজিদ জমিলার ওপর পীড়ন করেছে, কিন্তু জমিলা বশে আসেনি। এখন সে মজিদের কোনো কথা শোনে না, তার দিকে তাকায় না, ভাবলেশহীন ভাবে এক জায়গায় বসে থাকে। মজিদ বৌয়ের দিকে আড়চোখে তাকায়, আর দেখে জমিলার চোখে মানুষের ভয়তো নেই, খোদার ভয়ও নেই। আসলে অস্তিত্ববাদী মানুষের অস্তিত্ব যখন বিপন্ন হয় তখন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বিন্দুমাত্র সময় লাগে না।’
৪৮. ‘শত্র“র আভাস পাওয়া হরিণের চোখের মতই সতর্ক হয়ে ওঠে তার চোখ।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ লাইনটিতে মজিদ যখন জমিলার রূপের প্রতি ইঙ্গিত করে এবং জীবনের শেষ পরিণতি মৃত্যুর ভয় দেখায়, তখনকার জমিলার অবস্থা বর্ণিত হয়েছে।
রাতে মজিদ ঘুমন্ত জমিলাকে আচমকা একটানে উঠানোর ফলে জমিলা ব্যথা পায় এবং ভীত-বিহŸল হয়ে পড়ে। পরদিন সকালে জমিলা সব কিছু উপেক্ষা করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করতে দেখে মজিদ আরও ক্ষিপ্ত হয় এবং জমিলার রূপের কথা তুলে নিজের দর্শন শোনায়-মৃত্যুর সাথে সাথে রূপের সমাপ্তি, জীবন অল্প দিনের। একথা শুনে জমিলা মজিদের দিকে ক্ষিপ্রগতিতে এমনভাবে তাকায় যেন শত্র“র আভাস পাওয়া হরিণের চোখে যেমন সতর্কতা, তার চোখেও তেমনি সতর্কতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
৪৯. ‘লতার মতো মেয়েটি যেন এ সংসারে ফাটল ধরিয়ে দিতে এসেছে।’Ñবুঝিয়ে দাও।
উত্তর: প্রশ্নোলিখিত এ বাক্যে প্রাণ ধর্মমুখর কিশোরী জমিলার আগমন ধর্ম ব্যবসায়ী মজিদের সংসারে শুধু উৎপাতই নয়, এক জীবন্ত প্রতিবাদÑতাই ব্যক্ত হয়েছে।
নেশার বশে মজিদ জমিলাকে বিয়ের পর প্রথম দিকে জমিলাকে বিড়াল ছানার মতো মনে হলেও অল্প দিনের মধ্যেই তার আসল রূপ বেরিয়ে আসে। সে মজিদের কোনো বাধা মানে না, মজিদের সামনে চুপ থাকলেও মজিদকে পছন্দ করে না। সহজ কথায় অনেক দিনের গড়া সংসারের নিয়মনীতিকে ভাঙন ধরায় সে। এক পর্যায়ে মজিদ জমিলাকে ভয় পেতে থাকে। আর এজন্য সে নিজের ভাগ্যকে দায়ী করলেও তার ভেতরের ক্ষোভ পুড়িয়ে দিতে চায় মজিদের সাজানো সংসারকে।
৫০. ‘বালুতীরে যুগ যুগ আঘাত পাওয়া শক্ত কঠিন পাথর তো সে নয়।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ বাক্যটিতে জিকিরের সময় জমিলার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হয়েছে।
মাজারে সন্ধ্যায় জিকিরের সময় রহীমা খিচুড়ি রান্না করে আর জমিলা রহীমার রান্নাবান্নার কাজ দেখে। বাইরে থেকে যখন বহুমানুষের সম্মিলিত জিকিরের আওয়াজ জমিলার কানে আসে তখন সে ভয়ে সচকিত হয়ে উঠে, কারণ জমিলা কখনো জিকির শোনেনি। ঝড়ের সময় সমুদ্রের এক একটা ঢেউ যেমন তীরে আঘাত হানে, ঠিক তেমনি জিকিরের ঘন ঘন ধ্বনি জমিলার হৃদয়ে আঘাত হানে। জমিলার হৃদয় সমুদ্রের তীরের মতো শক্ত নয়।
৫১. ‘তার আনুগত্য ধ্র“ব তারার মতো অনড়, তার বিশ্বাস পর্বতের মতো অটল।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: প্রশ্নোলিখিত এ বাক্যটি দ্বারা মজিদের প্রথম স্ত্রী রহীমার স্বামীভক্তির এক চমৎকার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
মজিদের প্রথম স্ত্রী রহীমা মজিদের ঘরে আসার পর থেকেই মজিদের খুব অনুগত। শান্তশিষ্ট কর্ম-নিপুণা এই মেয়েটি যেন সমস্ত শ্রম, ভালোবাসা আর সেবা দিয়ে খুঁটির মতো মজিদের সংসারকে আগলে রেখেছে। কিন্তু মজিদ পরে জমিলাকে বিয়ে করার পর জমিলার অবাধ্যতার কারণে মজিদ ভীত-শঙ্কিত। তাই জমিলা ও রহীমার মাঝে তুলনা করে বলেছে, রহীমাকে আমার খুব আপন মনে হয় কারণ তার ওপর সবকিছু নির্ভর করা যায়।
৫২. মজিদ জমিলাকে হ্যাঁচকা টান মেরে বসিয়ে দেয় কেন?
উত্তর: মজিদ জমিলাকে খোদাভীতির আড়ালে নিজের প্রতি অনুগত করতে সংসার সম্বন্ধে অজ্ঞ জমিলাকে হ্যাঁচকা টান মেরে বসিয়ে দেয়।
রাত গভীর হলে মজিদ দেখে জমিলা জায়নামাযে সেজদা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। এতে মজিদের ধারণা হয় জমিলার মনে খোদার ভয় নেই, থাকলে এভাবে সে ঘুমাত না। ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়ে মজিদ জমিলাকে এক হ্যাঁচকা টানে জায়নামায থেকে উঠিয়ে বসায়।
৫৩. জমিলা বেঁকে বসে কেন?
উত্তর: জমিলা কিশোরী হলেও যখন বুঝতে পারে মজিদ তাকে মাজারে নিয়ে যাচ্ছে, তখন সে বেঁকে বসে।
জমিলা প্রথমে বোঝে নি যে তাকে মাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে যখন বুঝল তখন সে বেঁকে বসে, এর কারণ মাজার সম্পর্কে তার ভীতি। প্রথমত, সে মাজারের ত্রিসীমানায় কখনও ঘেঁষেনি, দ্বিতীয়ত, মজিদ আজ যে গল্প বলেছে তাতে ভয় আরো বেড়ে গেছে। সেজন্য সে মজিদের শক্ত হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে চায়।
৫৪. ‘নাফরমানি করিও না। খোদার উপর তোয়াক্কল রাখো।’ Ñবুঝিয়ে লিখ।
উত্তর: ভণ্ড, প্রতারক ও ধর্মব্যবসায়ী মজিদ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে আলোচ্য অংশটুকু বলেছে।
মহব্বতনগরে প্রচণ্ড ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলে মজিদকে দেখে গ্রামবাসী হাহাকার করে ওঠে। মজিদ এ অবস্থায় তাদেরকে আশ্বাস দেয়; আলাহই মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন, খাদ্যের যোগান দেন। সেজন্য মানুষের উচিত আলাহকে স্মরণ করা। আসলে মজিদ বিশ্বাসের কথা বলে মানুষকে উদ্দীপ্ত ও ধর্মভাবাপন্ন করে রাখতে চায়।
৫৫. না ঘুমিয়ে মজিদ দাওয়ার ওপর বসে থাকে কেন?
উত্তর: জমিলাকে মাজারে একাকী বেঁধে রাখার পর মজিদের ধারণা জমিলা ভয়ে চিৎকার করবে, তাই মজিদ না ঘুমিয়ে দাওয়ার ওপর বসে থাকে।
মজিদ জমিলার ওপর নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে এবং শেষ পর্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ অন্ধকার রাতে মাজারে জমিলাকে বেঁধে রেখে আসে। মজিদের ধারণা জমিলা ভয় পেয়ে চিৎকার করবে। তাই ঘরের মধ্যে না গিয়ে দাওয়ায় বসে থাকে। কিন্তু মজিদের এ কৌশলও ব্যর্থ হয়।
৫৬. রহীমা মজিদের কথায় কোনো সাড়া দেয় না কেন?
উত্তর: রহীমা জমিলার বিপদে মজিদের কথায় কোনো সাড়া দেয় না। মজিদের প্রথম স্ত্রী রহীমা মজিদকে ভক্তি ও শ্রদ্ধা করে। কিন্তু মজিদ যখন জমিলাকে ঝড়-বৃষ্টির রাতে একাকী মাজারে বেঁধে রেখে আসে তখন তার একমাত্র চিন্তা জমিলা মাজারে কেমন আছে। শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত স্বামীভক্ত রহীমা স্বামীকে বলেই বসে, ‘ধান দিয়া কী হইব, মানুষের জান যদি না থাকে’। তাই জমিলার এই বিপদে রহীমার ভেতরটা ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে।
৫৭. ‘প্রকৃতির লীলা চেয়ে চেয়ে দেখাও এক রকম এবাদত’। Ñবুঝিয়ে দাও।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ বাক্যটিতে মজিদের প্রকৃতির বৈচিত্র্য দেখে সৃষ্টিকর্তার মহিমার উপলব্ধির কথা বলা হয়েছে।
যে রাতে মজিদ জমিলাকে মাজারে বেঁধে রেখে আসে, সেই রাতে মাজার ঘরে ছিল ভৌতিক পরিবেশ, আর বাইরের প্রকৃতিতে আসন্ন বিপদের অবস্থা। মেঘের গর্জন, বিদ্যুতের ঝলকানি, ঝড়, বৃষ্টি সব মিলিয়ে এক ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগে মজিদের ধারণা ছিল সে জমিলার আর্তনাদ শুনবে। মজিদ চেয়ে চেয়ে বাইরের প্রকৃতির ভয়াবহ রূপ দেখে এবং আলাহর মহিমা উপলব্ধি করে। প্রকৃতিকে যারা এভাবে দেখে, তারা প্রকৃতপক্ষে আলাহর এবাদত করে।
৫৮. ‘আর একটা সত্যের সীমানায় পৌঁছে, জন্ম বেদনার তী² যন্ত্রণা অনুভব করে মনে মনে।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ উক্তিটিতে ঝড়-বৃষ্টি শেষে সংজ্ঞাহীন জমিলাকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার পর মজিদের মনে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাই বিবৃত হয়েছে।
ঝড়-বৃষ্টির শেষে জমিলার সংজ্ঞাহীন দেহ ঘরে নিয়ে আসার পর রহীমার মনে জমিলার জন্য মায়া ছলছল করে ওঠে। মজিদের সব কথাই তখন গুরুত্বহীন মনে হয়। মজিদ দূর থেকে এসব দেখে তার চোখের সামনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। একটা সত্য প্রকাশিত হয়। সে বুঝে যায় জোর করে বা প্রভাব খাটিয়ে কারও মনে বিশ্বাসের জন্ম দেওয়া যায় না।
৫৯. ‘শুধু জীবন্ত হয়ে সেই ডালপালা শাখা-প্রশাখায় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ Ñবুঝিয়ে দাও।
উত্তর: এ উক্তিটি দ্বারা আমেনা বিবির তালাক দেওয়ার ঘটনাটি যে মানুষের মুখে মুখে জীবন্ত হয়েছে তা প্রকাশিত হয়েছে।
খালেক ব্যাপারী সহজ-সরল। স্বামীভক্ত, ধর্মভীরু ও নিঃসন্তান স্ত্রী আমেনা বিবিকে মজিদের চক্রান্তে তালাক দেয়। তালাক দেওয়ার ঘটনাটি গ্রামের মানুষের কানাঘুষায় নানা শাখা-প্রশাখার জন্ম দিয়েছে। আর এ ব্যাপারে যার যেমন খুশি রং ছড়াবেই এবং যাদের ঘরে নিঃসন্তান বৌ আছে তাদের মনেও সন্দেহ ঢুকেছে। খালেক ব্যাপারীর মতো তাদের মনেও শান্তি নেই, আর এর প্রভাব পড়েছে সমাজজীবনেও।
৬০. ‘রুপালি ঝালরের বিবর্ণ অংশটা কালো করে রেখেছে সে মন।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এ উক্তিটিতে মাজারের ঝালরের রূপালি ঔজ্জ্বল্য বিবর্ণ হওয়ায় মজিদের মনে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, তা বর্ণিত হয়েছে।
মজিদ বাইরে থেকে এসে কথিত মোদাচ্ছের পিরের মাজারকে কেন্দ্র করে মহব্বতনগর গ্রামে আস্তানা গেড়েছে। এক রাতে মোমবাতির শুভ্র আলোয় গিলাফের রুপালি ঝালরের এক প্রান্তের সুতা খসে যাওয়ায় মজিদ বিচলিত হয় এবং মনে দুঃখ অনুভব করে, কারণ মাজারটিই তার একমাত্র শক্তি। তাই মহব্বতনগরে প্রভুর আসনে টিকে থাকতে হলে তাকে মাজারের চাকটিক্য বজায় রাখতে হবে।