নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
সৈয়দ শামসুল হক
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে : ‘কখন আসবে কবি?’
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা।
ক. নূরলদীনের বাড়ি কোথায় ছিল?
খ. ‘যখন শকুন নেমে আসে এই সোনার বাংলায়’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. কবিতাংশের কবির চেতনার সঙ্গে নূরলদীনের চেতনাগত সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. প্রেক্ষাপটগত সাদৃশ্য থাকলেও কবিতাংশটিতে “নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়” কবিতায় কবির অভিব্যক্তির সার্থক রূপায়ণ ঘটেনি মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর। ১
২
৩
৪
১ নং প্রশ্নের উত্তর
নূরলদীনের বাড়ি রংপুরে।
উক্ত চরণে কবি সোনার বাংলায় পাকিস্তানিদের আক্রমণের বিষয়টিকে বুঝাতে চেয়েছেন।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। গোটা দেশটাই যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। লক্ষ লক্ষ মৃতদেহকে ভক্ষণ করতে নেমে আসে শকুনেরা। এটিই আলোচ্য অংশে প্রকাশিত হয়েছে।
অন্যায় অবিচারের হাত থেকে দেশকে ও দেশের মানুষকে মুক্ত করার প্রতিবাদী চেতনায় উদ্দীপকের কবির সাথে নূরলদীনের সাদৃশ্য রয়েছে।
এমন অনেক মানুষ আছে যারা সব সময় দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গল চান। তারা দেশের মানুষকে সকল অন্যায় অবিচারের কালো থাবা থেকে মুক্ত করতে চান। এ আকাক্সক্ষা থেকেই তারা গোটা জাতিকে সচেতন করে তোলেন। একটি স্বাধীন দেশ রচনার জন্য তারা জাতিকে নেতৃত্ব দেন।
আলোচ্য কবিতায় নূরলদীনকে কবি চিরায়ত প্রতিবাদের প্রতীকরূপে উপস্থাপন করেছেন। নূরলদীন এক ঐতিহাসিক চরিত্র। ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দে রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলে সামন্তবাদ-সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নেতৃত্ব দেন নূরলদীন। তাঁর সাহস, ক্ষোভ প্রতিবাদকেই এ কবিতায় কবি রূপায়িত করেছেন। উদ্দীপকের কবিও এ প্রতিবাদী চেতনার প্রতীক। তিনিই জনগণকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন।
প্রেক্ষাপটগত সাদৃশ্য থাকলেও কবিতাংশটিতে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার কবির অভিব্যক্তির সার্থক রূপায়ণ ঘটেনি’Ñমন্তব্যটি যথার্থ।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে অগণিত মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাঙালি জাতিকে মুক্তির পথ দেখান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই বাঙালি প্রতিবাদী হয়ে ওঠে, ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিসংগ্রামে।
আলোচ্য কবিতায় কবি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রূপদান করেছেন। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস এ বাংলা মৃত্যুপুরীতে রূপ নেয়। বাঙালি তার স্বপ্নকে রূপ দিতে, বাক্-স্বাধীনতাকে ফিরে পেতে স্মরণ করে ইতিহাসের প্রতিবাদী নায়ক নূরলদীনকে, তাঁর প্রতিবাদী সত্তাকে। উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি বলতে দেশ রচনার কবিকে বোঝানো হয়েছে, যা আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাঁর উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে জোয়ার জাগল। মানুষ যেন প্রাণ ফিরে পেল।
সুতরাং, বলা যায়, ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় এবং উদ্দীপক উভয়ের প্রেক্ষাপট হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। তবে যে প্রতিবাদী অভিব্যক্তি আলোচ্য কবিতায় রূপায়িত হয়েছে উদ্দীপকে তা ততটা স্পষ্ট নয়। আর এ কারণেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা যায়।
অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে গণতন্ত্রের পথ সুগম করেছেন নূর হোসেন। তারপর থেকে যে কোনো আন্দোলনে সংগ্রামে নূর হোসেনের কথা মনে পড়ে যায় অবলীলায়।
ক. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় জ্যোৎস্নার সাথে কী ঝরে পড়ে?
খ. “অতীত হঠাৎ হানা দেয় মানুষের বন্ধ দরজায়”- কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার কোন দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “ক্রান্তিকালে বাঙালি জাতি অতীত থেকে শক্তি সঞ্চয় করে”- উদ্দীপক ও ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আলোকে উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর। ১
২
৩
৪
২ নং প্রশ্নের উত্তর
জ্যোৎস্নার সাথে স্মৃতির দুধ ঝরে পড়ে।
“অতীত হঠাৎ হানা দেয় বন্ধ দরজায়” -কারণ দরজায় বিপদ এসে কড়া নাড়ছে, যার সাথে অতীতের ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে।
একই রকম কোনো ঘটনা যদি দুই বা ততোধিকবার মানুষের জীবনে ঘটে, তখন অতীতের একই ঘটনা স্মৃতি হিসেবে হাজির হয়। এ স্মৃতিতে মিল থাকে শিক্ষা, যার আলোকে মানুষ বর্তমানের মোকাবিলা করে। আলোচ্য লাইন দ্বারা অতীতের নূরলদীনের কথা স্মৃতি হিসেবে মনের বন্ধ দরজায় হানা দেয়াকে বোঝানো হয়েছে। কারণ, সে সময়ের মতো আজও দুঃসময় এসে হাজির হয়েছে।
উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনের ডাক দেয়ার দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে।
নেতা হলো সে, যার ডাক দেয়ার ক্ষমতা আছে, যে ডাক দিলে মানুষ সাড়া দেয় এবং সোচ্চার হয়। পৃথিবীর সব বিপ্লবই কোনো না কোনো নেতার ডাক দেয়ার ফসল।
উদ্দীপকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কথা পাওয়া যায়। নূর হোসেন এ আন্দোলনে শহিদ হন এবং এ মৃত্যুর অনুপ্রেরণায় সব জনতা জেগে ওঠে। শহিদ নূর হোসেনের রক্ত সাধারণ বাংলার মানুষের ধমনিতে চেতনার ডাক পৌঁছে দেয়। ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায়ও দেখা যায়, নূরলদীনও এক চাঁদনী রাতে মানুষকে ডাক দিয়েছিল। যে ডাকে মানুষ সচেতন হয়েছিল, শত্র“র বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। উদ্দীপকটি আলোচ্য কবিতার এ দিকটারই প্রতিনিধিত্ব করে।
“ক্রান্তিকালে বাঙালি জাতি অতীত থেকে শক্তি সঞ্চয় করে”- এ উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আলোকে গুরুত্ব বহন করে।
মানুষ যখন কোনো বিপদে পড়ে, তখন সিদ্ধান্ত নেয় অতীত অভিজ্ঞতা থেকে। কারণ, অভিজ্ঞতা হলো সবচেয়ে কার্যকরী জ্ঞান, যে জ্ঞানের ফলাফল নির্ভুলভাবে প্রয়োগ করা যায়।
উদ্দীপকে ’৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের কথা বলা হয়েছে। এ আন্দোলনে শহিদ নূর হোসেন বাংলার গণ-মানুষের প্রেরণায় পরিণত হয়। মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস খুঁজে পায়। ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় নূরলদীনকেও একই রকম অনুপ্রেরণাকারী হিসেবে পাওয়া যায়।
মানুষের চরিত্র কিংবা আদর্শ কখনো কখনো ইতিহাসে রূপান্তরিত হয় এবং এ আদর্শ পরবর্তীতে মানুষের অনুপ্রেরণা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। মানুষ সাহস পায় সংগ্রামে শত্র“র মুখোমুখি হওয়ার। উদ্দীপকের নূর হোসেন এবং কবিতার নূরলদীন দুজনেই এখন আমাদের ইতিহাসের সন্তান। তাঁরা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় বিপদের সময়। বাঙালি জাতি এ অনুপ্রেরণা পেয়ে শত্র“র সাথে যুদ্ধ করতে পিছপা হয় না। আর মানসিক শক্তির কারণে শত্র“কে পরাস্ত করে। এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয় যে, “ক্রান্তিকালে বাঙালি জাতি অতীত থেকে শক্তি সঞ্চয় করে।” তাই বলা যায় উক্তিটি যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বাঙালি জাতির রয়েছে সংগ্রামের এক দীর্ঘ ইতিহাস। যুগ যুগ ধরে সংগ্রাম করে বাঙালি তাদের বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসু, তিতুমীর, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, শেরে বাংলা, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক অবিসংবাদিত নেতা বাঙালির প্রাণে অমর হয়ে আছেন। তাঁরা বাঙালির প্রতিবাদী চেতনার মহান আদর্শ।
ক. দীর্ঘ দেহ নিয়ে নূরলদীন দেখা দেয় কোন আঙিনায়?
খ. “অভাগা মানুষ যেন জেগে ওঠে আবার।”- কেন?
গ. উদ্দীপকটি নূরলদীনের কীভাবে প্রতিনিধিত্ব করে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “তাঁরা বাঙালি প্রতিবাদী চেতনার মহান আদর্শ”- ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আলোকে পঙ্ক্তিটি বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
নূরলদীন দেখা দেয় মরা আঙিনায়।
অভাগা মানুষগুলো শত্র“র কবল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতার জন্য জেগে ওঠে।
শত্র“র শক্তি যখন বেড়ে যায়, তখন শত্র“ আগ্রাসী হয়ে পড়ে; সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে। এ রকম সময় যখন আসে, তখন নির্যাতিতরাও জেগে ওঠে, বাঁচার আশায় মুক্তির জন্য অস্ত্র ধরে। আলোচ্য উক্তি দ্বারা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এখন শত্র“র বিভীষিকা বেশি। তাই মানুষ আবারও সোচ্চার হয়ে উঠেছে।
উদ্দীপকে যেসব মহান নেতার কথা প্রকাশ পেয়েছে তাদের আদর্শ নূরলদীনের আদর্শকেই প্রতীকায়িত করে।
যাঁরা সৎ, সাহসী ও সমবেদনাবাদী, তাঁরা সত্যের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠে আওয়াজ তোলেন। শত্র“র বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে আমরণ সংগ্রাম করেন।
উদ্দীপকে বাংলার যেসব মহান নেতার কথা পাওয়া যায়, তাঁরা সাধারণ মানুষের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। সাধারণ মানুষের বিপদে তাঁরা নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। মানুষ তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেদের শত্র“র কবল থেকে মুক্ত করেছেন। ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় নূরলদীনও সাধারণ মানুষকে জেগে ওঠার আহŸান জানিয়ে একই আদর্শের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন, যা উদ্দীপকের মহান নেতার আদর্শের সাথে সামঞ্জস্য সৃষ্টি করে।
“তাঁরা বাঙালি প্রতিবাদী চেতনার মহান আদর্শ”-উক্তিটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার মূলভাবকে ফুটিয়ে তোলে।
মানুষ তাঁদের কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন, যাঁরা মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। এঁরা হলেন মহান মানুষ ও মহান নেতা। এঁরাই কালে কালে জনসাধারণের মনে প্রতিবাদী চেতনার উৎস হিসেবে জাগররূক থাকেন।
উদ্দীপকে এ বাংলার কিছু মহান নেতার কথা বলা হয়েছে। যাঁরা বাংলার মানুষের নেতা ছিলেন, বাংলার মানুষের নূরলদীনের সাহসী চরিত্রই এ কবিতার মর্মকথা, যা পরবর্তীতে অসংখ্য মানুষের স্মৃতির দরজায় সাহসের বাণী নিয়ে কড়া নাড়ে। এ বাংলায় নূরলদীনের মতো আরো অনেক নেতার জন্ম হয়েছে। যাঁদের পরিচয় উদ্দীপকে পাওয়া যায়। মানবতাবোধের বিচারে উদ্দীপকের নেতারা কিংবা কবিতার নূরলদীন প্রত্যেকেই বাঙালির প্রতিবাদী চেতনার মহান আদর্শ হিসেবে সবসময় বিবেচিত হবেন।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
“মানুষের প্রাণ থেকে পৃথিবীর মানুষের প্রতি
সেই আস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, ফিরে আসে, মহাত্মা গান্ধীকে
আস্থা করা যায় বলে।”
ক. নূরলদীন আবার একদিন কোথায় আসবে?
খ. কবি কেন নূরলদীনের আগমন প্রত্যাশা করেন?
গ. উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনের মধ্যে সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “অভাগা মানুষগুলোকে জাগিয়ে তুলতেই নূরলদীনরা বার বার ফিরে আসেন”- উদ্দীপক ও ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৪ নং প্রশ্নের উত্তর
নূরলদীন আবার একদিন বাংলায় আসবে।
যথার্থ নেতৃত্বদানের মাধ্যমে জাতীয় সমস্যার সমাধানের জন্য কবি নূরলদীনের আগমন প্রত্যাশা করেন।
অত্যাচারিত নিপীড়িত মানুষগুলোকে শত্র“র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য নূরলদীন তাদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। বর্তমানে দেশের জাতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য নূরলদীনের মতো সংগঠকের প্রয়োজন। তাই কবি তাঁর আগমন প্রত্যাশী।
উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনের সাদৃশ্য হচ্ছে তাঁরা উভয়েই মানুষের আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব।
১১৮৯ সনে নূরলদীনের ডাকে শোষিত মানুষগুলো একযোগে সাড়া দিয়েছিল। কেননা, তারা নূরলদীনের নেতৃত্বের উপর ভরসা রাখতে পারত।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, পৃথিবীর মানুষের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু সেই আস্থা আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তিনি তাঁর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষের আস্থাভাজন হতে পেরেছিলেন। অগণিত মানুষ তার উপর আস্থা রাখতে পারত। আবার ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনও ছিল একজন যোগ্য নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিত্ব, যার নেতৃত্বে সবাই আস্থা রেখে ১১৮৯ সনে উদাত্ত সাড়া দিয়েছিল। নূরলদীনও জানত তাঁর আহŸান শোনা মাত্রই শোষিত মানুষগুলো শত্র“র বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠবে। আর এ আশাই বাস্তবায়িত হয়েছিল সেদিন। মূলত একজন সৎ, বিশ্বাসী মানুষের উপরই আস্থা রাখা যায়। সুতরাং, বলা যায়, মহাত্মা গান্ধী ও আলোচ্য কবিতার নূরলদীন মানুষের আস্থাভাজন ছিলেন।
অভাগা মানুষগুলোকে জাগিয়ে তুলতেই বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ব্যক্তি নেতৃত্বদান করেছেন ।
১১৮৯ সনে নূরলদীন একজন যথার্থ নেতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি রংপুরের শোষিত মানুষগুলোকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার করে তুলেছেন।
উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধী মানুষের হারিয়ে যাওয়া আস্থা ফিরিয়ে এনেছিলেন নিজ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। অর্থাৎ, যখন এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যে, কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারত না বা কারো উপর আস্থা রাখতে পারত না সেই সময়ে মহাত্মা গান্ধী হাল ধরেছিলেন। আর সে সময়ের মানুষগুলোকে আস্থা রাখার মতো পরিবেশও তৈরি করেছিলেন। আবার, ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় নূরলদীনও অভাগা মানুষগুলোকে জাগিয়ে তুলেছিলেন নিজ কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীন একটি বিশেষ সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সে সময়ে তাঁর নেতৃত্বের জন্য হাজারো মানুষ অপেক্ষমাণ ছিল। আবার উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধীও একটি বিশেষ সময়ে মানুষের বুকে আশার সঞ্চার করেছিলেন। অর্থাৎ নূরলদীন যেমন অভাগা মানুষগুলোকে আশার আলো দেখিয়েছিলেন, তেমনি মহাত্মা গান্ধীও আস্থাহীন মানুষের মধ্যে আস্থাশীল হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বুকে এলেও একই ধরনের কাজ করেছেন। অর্থাৎ মানুষকে জাগিয়ে তুলেছেন। মানুষকে জাগিয়ে তোলার জন্য নূরলদীনরা পৃথিবীতে বার বার বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন আঙ্গিকে এসেছেন। তাঁরা মানুষের মনে জাগিয়ে তুলেছেন আশার আলো, মানুষকে করেছেন প্রতিবাদী। সুতরাং বলা যায়, অভাগা মানুষগুলোকে জাগিয়ে তুলতেই নূরলদীনরা পৃথিবীতে বারবার ফিরে আসেন।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কাজী নজরুল ইসলাম অসংখ্য রচনাবলিতে শোষণের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হওয়ার জন্য আহŸান জানিয়েছেন। তাঁর বিদ্রোহাত্মক কবিতা আমাদের যুগে যুগে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার প্রেরণা জোগায়।
ক. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কত হাজার লোকালয়ের কথা বলা হয়েছে?
খ. ‘কালঘুম যখন বাংলায়’- কথাটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনের সংগ্রামী মনোভাবকে কীভাবে প্রতিফলিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার পদ্ধতি ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম এবং ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরুলদীনের মনোভাব অভিন্ন” মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর। ১
২
৩
৪
৫ নং প্রশ্নের উত্তর
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় ঊনসত্তর হাজার লোকালয়ের কথা বলা হয়েছে।
‘কালঘুম যখন বাংলায়’ বলতে দেশের দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে মানুষের প্রতিক্রিয়াহীন অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে।
দেশের দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে বা দেশের ক্রান্তিকালে সাধারণ মানুষ তেমন কিছুই করতে পারে না। তাদেরকে সংগঠিত করার জন্য প্রয়োজন হয় যোগ্য নেতৃত্বের। মানুষের নিস্ক্রিয় মনোভাবকে ‘কালঘুম যখন বাংলায়’ কথাটির মাধ্যমে রূপায়িত করা হয়েছে।
উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম মানুষকে সংগ্রামী হওয়ার আহŸান জানানোর মাধ্যমে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনের সংগ্রামী মনোভাবকে প্রতিফলিত করেন।
নূরলদীন শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। আর এজন্যই তিনি শোষিত মানুষগুলোকে শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য ডাক দিয়েছিলেন। কেননা, কোনো সংগ্রামী নেতা কখনোই শোষকের শোষণ, নিপীড়ন সহ্য করতে পারেন না।
উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর অসংখ্য রচনাবলিতে শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার উদাত্ত আহŸান জানিয়েছেন। এ থেকে তাঁর সংগ্রামী মনোভাবের পরিচয় ফুটে ওঠে। তিনি বিদ্রোহাত্মক অনেক কবিতাও রচনা করেছেন, যা যুগে যুগে মানুষকে সংগ্রামী চেতনায় অনুপ্রাণিত করে। আবার, ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনও ছিলেন সংগ্রামী মানুষ। তাই তিনি ১১৮৯ সনে রংপুরে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছিলেন। যে ডাকে সাড়া দিয়েছিল হাজারো মানুষ। তিনি শোষকের বিরুদ্ধে, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে মানুষকে সোচ্চার করেছিলেন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম মানুষকে সংগ্রামী হওয়ার আহŸান জানানো মধ্যাদিয়ে আলোচ্য কবিতার নূরলদীনের সংগ্রামী মনোভাবকে প্রতিফলিত করেছে।
“মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার পদ্ধতি ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম এবং ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনের মনোভাব অভিন্ন”- মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম মানুষকে শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন লেখনীর মাধ্যমে। তাঁর সংগ্রামী মনোভাব ফুটে উঠেছে রচনাবলিতে। অন্যদিকে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীন মানুষকে সংগ্রামী হওয়ার আহŸান লেখার মাধ্যমে জানাননি, জানিয়েছেন সরাসরি। অর্থাৎ, তাঁরা দুজনই সংগ্রামী চেতনার অধিকারী। কিন্তু তাদের প্রকাশভঙ্গি আলাদা।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীন অত্যাচারিত, নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সংগ্রামী মনোভাব নিয়ে। তিনি তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। যে ডাকে সাড়া দিয়েছিল রংপুরবাসী। আবার, উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলামও বিদ্রোহাত্মক কবিতার মাধ্যমে শোষিত মানুষগুলোকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী হওয়ার উদাত্ত আহŸান জানিয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁরা ভিন্ন পদ্ধতিতে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। আর তাঁদের এরূপ কর্মকাণ্ডের মূলে রয়েছে নিজেদের সংগ্রামী চেতনা।
সুতরাং বলা যায়, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার পদ্ধতি ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম এবং আলোচ্য কবিতার নূরলদীনের মনোভাব অভিন্ন।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু যে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার প্রত্যয়ে আমরা স্বাধীনতার লাল সূর্যটাকে ছিনিয়ে এনেছিলাম তা আজও অপূর্ণ রয়ে গেছে। কেননা, সঠিক নেতৃত্বের অভাবে আমরা আমাদের স্বপ্নপূরণ করতে পারছি না।
ক. কার কথা সারা দেশে পাহাড়ি ঢলের মতো নেমে আসে?
খ. স্বপ্ন লুট হয়ে গেলে কবি নূরলদীনকে স্মরণ করেন কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি কীভাবে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে? বিশ্লেষণ কর।
ঘ. “আমাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য নূরলদীনের আগমন প্রয়োজন”- এ বিষয় ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আলোকে তোমার মতামত দাও। ১
২
৩
৪
৬ নং প্রশ্নের উত্তর
নূরলদীনের কথা সারাদেশে পাহাড়ি ঢলের মতো নেমে আসে।
লুট হওয়া স্বপ্ন নূরলদীন ফিরিয়ে আনতে পারবেন এ জন্য কবি নূরলদীনকে স্মরণ করেন।
নূরলদীন মানুষের স্বপ্নকে রূপায়িত করেছিলেন তাঁর সংগ্রামী চেতনার মাধ্যমে। শোষিত মানুষগুলোর স্বপ্নকে তিনি বাস্তবায়িত করেছিলেন। তাই কবির স্বপ্নগুলো যখন লুট হয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি নূরলদীনকে স্মরণ করেছেন, তাঁর শরণাপন্ন হতে চাইছেন। কেননা, একমাত্র নূরলদীনই কবির স্বপ্নকে ফিরিয়ে দিতে পারেন।
স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার বাস্তবতার মধ্য দিয়ে উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরে।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় নানামুখী বাস্তবতার কথা বলা হয়েছে। দেশের অরাজক অবস্থার কথা, স্বপ্ন লুট হওয়ার কথা, অত্যাচারীদের শোষণের কথা কবিতায় আলোচিত হয়েছে।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হয়ে গেলেও আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। যে স্বপ্ন বুকে নিয়ে আমরা স্বাধীন দেশ গঠনে তৎপর হয়েছিলাম, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। আবার ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায়ও স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার অভিব্যক্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে সোনার বাংলা আজ শকুন, দালালে ভরে গেছে। মানুষের স্বপ্ন লুট হয়ে যাচ্ছে। মানুষ নির্ভয়ে কথা বলতে পারছে না। স্বাধীন দেশে মানুষ স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে পারছে না। অর্থাৎ মানুষ তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারেনি। সুতরাং বলা যায়, স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার বাস্তবতার মধ্য, দিয়ে উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরে।
আমাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য নূরলদীনের মতো একজন সাহসী মানুষের আগমন প্রয়োজন।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি বার বার নূরলদীনের আগমন কামনা করেছেন। কেননা আমাদের বর্তমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর আগমন আবশ্যক। নূরলদীনের মতো সাহসী মানুষই আমাদের স্বপ্নগুলোকে রূপায়িত করতে পারবে।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলেও, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারছি না। এমতাবস্থায় আমাদের যোগ্য নেতার আবির্ভাব প্রয়োজন। আবার ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায়ও বলা হয়েছে, অভাগা মানুষগুলো আশায় বুক বেঁধে আছে, নূরলদীন আবার ফিরে আসবেন। কেননা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য নূরলদীনের বিকল্প নেই।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় নূরলদীনের আগমন বলতে বোঝানো হয়েছে নূরলদীনের মতো সাহসী কোনো ব্যক্তির আগমন। কেননা, নূরলদীন আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু তাঁর মতো সাহসী মানুষ এদেশবাসীর অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই কবি তাঁর মতো ব্যক্তির আবির্ভাব বার বার কামনা করেছেন। কেননা, অভাগা মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তনে, স্বপ্ন পূরণে তাঁর আগমন অত্যন্ত জরুরি। উদ্দীপকেও নেতৃত্ব শূন্যতার কথা বলা হয়েছে। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে দেশবাসী তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারছে না। তাই আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, আমাদের স্বপ্ন পূরণে নূরলদীনের আগমন প্রয়োজন।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
রাশেদের বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। রাশেদ প্রায়ই বাবার কাছে যুদ্ধের গল্প শোনে। একদিন রাশেদ বাবাকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা বাবা, তোমাদের ভয় হয়নি? একবারেও মনে হয়নি পাকিস্তানি সেনাদের সাথে যদি তোমরা না পার, তবে কী হবে?” তখন বাবা, বললেন, ‘না, ভয় করেনি’। আমরা তো হার নাÑমানা জাতি। বায়ান্নতে এদেশের সন্তানেরা মাতৃভাষার জন্য যদি আত্মত্যাগ করে মাতৃভাষাকে তার আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারে, তবে আমরা কেন পারব না? যুদ্ধের সময় আমাদের ভাষাশহিদদের স্মরণ করে আমরা মনে জোর পেতাম, সাহস পেতাম।”
ক. নূরলদীনের বাড়ি কোথায় ছিল?
খ. “আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায় ইতিহাসে, প্রতিটি পৃষ্ঠায়।” Ñবুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার কোন বিষয়টির প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার মূল সুর ধারণ করেছে।”মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ কর। ১
২
৩
৪
৭ নং প্রশ্নের উত্তর
নূরলদীনের বাড়ি ছিল রংপুর।
অতীতে অধিকার আদায়ে বাঙালির রক্ত ঝরা সংগ্রামের বিষয়টি আলোচ্য লাইনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিভিন্ন সময় বিদেশি শাসকেরা বাংলা আক্রমণ করেছে এবং এদেশ শাসন করেছে। তারা এদেশের মানুষকে নানাভাবে অত্যাচার করেছে। আর যখন বাঙালি তার অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছে, তখন সেই বিদেশি শাসকদের আঘাতে তার শরীর থেকে রক্ত ঝরেছে। এ বিষয়টিই আলোচ্য অংশে ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণার বিষয়টির প্রতিনিধিত্ব করে।
দেশের জন্য অধিকার আদায়ের জন্য মানুষের যে আত্মত্যাগ তা সত্যিই মহৎ। এই আত্মত্যাগের মধ্যে আছে এক অমিত প্রাণশক্তি। তাই আত্মত্যাগ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। এ অনুপ্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে মানুষ নিজ লক্ষ্যউদ্দেশ্যের দিকে অগ্রসর হওয়ার সাহস ও শক্তি পায়।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কৃষক-বিদ্রোহের নেতা নূরলদীনের কথা বিধৃত হয়েছে। কৃষক বিদ্রোহে তাঁর আত্মত্যাগ বাঙালির প্রেরণার উৎস। তাই যখন এদেশে শত্র“রা আক্রমণ করে, তখন তাঁর আত্মত্যাগের শক্তি বাঙালির মধ্যে সঞ্চারিত হয়। এ শক্তি নিয়েই তারা শত্র“র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। উদ্দীপকেও এই বিষয়টি লক্ষ করা যায়। রাশেদের বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যাঁরা শহিদ হয়েছেন তাঁদের আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে তিনি মুক্তি যুদ্ধ করেছেন।
“উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার মূলসুর ধারণ করেছে।” মন্তব্যটি যথার্থ।
কোনো মহৎ কাজ করতে গিয়ে কখনো কখনো মানুষ নিজ জীবন উৎসর্গ করে। এই আত্মোৎসর্গ পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে। এই অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে মানুষ মহৎ কাজে অংশগ্রহণের সাহস পায়।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় রংপুরের কৃষক বিদ্রোহের নেতা নূরলদীনের আত্মত্যাগ বাঙালির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। এ আত্মত্যাগ তাদের শক্তি জোগায়। তাই শত্র“র আক্রমণে যখন এদেশের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন নূরলদীনের আত্মত্যাগ তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অনুপ্রেরণা দেয়। উদ্দীপকেও আমরা এ বিষয়টি দেখতে পাই। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহিদদের আত্মত্যাগ পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের আত্মত্যাগের সুমহান প্রেরণাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের অন্যতম শক্তি।
আত্মত্যাগের শক্তি আর অনুপ্রেরণাই ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার মূলসুর। উদ্দীপকেও এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এভাবে উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার মূলসুর ধারণ করেছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মহব্বতপুর গ্রামের চেয়ারম্যান শাজাহান সাহেব। তিনি যে কোনো সমস্যার সমাধানে গ্রামের সবাইকে একসাথে হওয়ার আহŸান জানান। তিনি মনে করেন, “একতা সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায়”।
ক. অতীত হঠাৎ কোথায় হানা দেয়?
খ. কবি কেন সবাইকে গোল হয়ে আসার আহŸান জানিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের শাজাহান সাহেবের মনোভাবে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার কোন বিষয়টি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “একতা সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায়”Ñকথাটি কতটুকু যৌক্তিক? ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আলোকে উক্তিটির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৮ নং প্রশ্নের উত্তর
অতীত হঠাৎ হানা দেয় মানুষের বন্ধ দরজায়।
জাতীয় সংকট নিরসনের জন্য কবি সবাইকে গোল হয়ে আসার আহŸান জানিয়েছেন।
যেকোনো সংকট নিরসনে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এ সত্যটি কবি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। তাই তিনি সবার একত্রিত হওয়ার অর্থাৎ, গোল হয়ে আসার আহŸান জানিয়েছেন।
উদ্দীপকের শাজাহান সাহেবের মনোভাব ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার সমস্যা সমাধানে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণের বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
জাতীয় সমস্যা সমাধানকল্পে কবি সবাইকে অংশগ্রহণ করার আহŸান জানিয়েছেন। কেননা, সবার সম্মিলিত চেষ্টায়ই যেকোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব।
উদ্দীপকের শাজাহান সাহেব গ্রামের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সবাইকে একত্রিত হতে বলেন। কেননা, তিনি বিশ্বাস করেন ঐক্যবদ্ধভাবে যে কোনো সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। তাই তিনি সবাইকে একসাথে কাজ করার উদাত্ত আহŸান জানান। আবার ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায়ও কবি সবাইকে একসাথে এসে স্থির হয়ে বসতে মিনতি জানিয়েছেন। অর্থাৎ, সমস্যা নিরসনের জন্য সবাইকে একসাথে বসে পরামর্শ করার, এক্ষেত্রে কাজ করার আন্তরিক অনুরোধ জানিয়েছেন। কেননা, কবি জানেন সমস্যা সমাধানে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। উদ্দীপকের শাজাহান সাহেবের মনোভাবেও এই বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনিও চান সমস্যা সমাধানের জন্য সবাই একযোগে কাজ করুক। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের শাজাহান সাহেবের মনোভাব ‘নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার সমস্যা সমাধানকল্পে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণের বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
“একতা সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায়” কথাটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি সমস্যা সমাধানের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছেন। এছাড়াও নূরলদীন ১১৮৯ সনে রংপুরে যে ডাক দিয়েছিলেন, সেখানেও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরিচয় মেলে।
উদ্দীপকের মহব্বতপুর গ্রামের চেয়ারম্যান একতায় বিশ্বাস করেন এবং একতাকে সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায় বলে মনে করেন। আর ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায়ও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। কেননা, সংগ্রামী চেতনাকে বাস্তবায়িত করতে সকলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। তাই কবি সবাইকে স্থির হয়ে বসার জন্য বলেছেন। তিনি বার বার সবাইকে একসাথে বসতে অর্থাৎ, একসাথে পরামর্শ করার কথা বলেছেন।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার কবি সবাইকে গোল হয়ে, ঘন হয়ে আসতে বলেছেন। অর্থাৎ, গোল হয়ে পাশাপাশি বসার জন্য বলেছেন। এছাড়াও তিনি স্থির হতে বলেছেন। অর্থাৎ, সবাইকে ধীর-স্থিরভাবে পরিকল্পনা করে সামনে অগ্রসর হতে বলেছেন। কবিতার কেন্দ্রিয় চরিত্র নূরলদীনের কর্মকাণ্ডেও ঐক্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই নূরলদীন রংপুরবাসীকে শোষণের বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়ার আহŸান জানিয়ে ছিলেন। কারণ, একা কখনো কোনো কিছুর সমাধান করা যায় না।
সুতরাং ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আলোকে বলা যায়, উদ্দীপকের শাজাহান সাহেবের “একতা সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায়”Ñ কথাটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আজিমার বয়স তখন পাঁচ কি ছয়। সব কথা তাই ভালো করে মনেও করতে পারে না সে। শুধু এটুকু মনে পড়ে যে, তার বাবা একদিন হন্তদন্ত হয়ে হাট থেকে ছুটে এসেছিল বাড়িতে, আর বলেছিল দ্রুত গ্রাম ছেড়ে পালাতে। গ্রামে নাকি মিলিটারিরা এসেছে আর সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিচ্ছে। তারপর রাতের অন্ধকারে মা-বাবার হাত ধরে পালিয়ে এসেছিল কোথায় তা সে জানে না। কতদিন বাবা-মার মুখে সে আর হাসি দেখেনি। হাসি দেখবেই বা কীভাবে! খেয়ে না-খেয়ে পালিয়ে বেঁচে থাকার মধ্যে তো সুখ নেই; আছে অস্বস্তি, যন্ত্রণা আর দুঃখ।
ক. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি কীভাবে সবাইকে আসতে বলেছেন?
খ. কবি কেন সবাইকে গোল হয়ে, ঘন হয়ে সমবেত হওয়ার আহŸান করলেন?
গ. উদ্দীপকে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার কোন বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “পরাধীন দেশে মানুষের জীবন-যন্ত্রণার চিত্র উদ্দীপকে এবং ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় মূর্ত হয়ে উঠেছে।”Ñমন্তব্যটি মূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
৯ নং প্রশ্নের উত্তর
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি গোল এবং ঘন হয়ে সকলকে আসতে বলেছেন।
স্বদেশ বহিঃশত্র“র পদভারে সন্ত্রস্ত। চারদিকে উৎকণ্ঠা, বিপদের গন্ধ। তাই কবি সবাইকে সমবেত করে এ পরিস্থিতি থেকে উপায় খোঁজার আহŸান করেছেন।
ভিনদেশিদের অত্যাচারে বাংলার শ্যামল প্রকৃতি এবং সহজ-সরল মানুষের জীবনযাত্রা আজ হুমকির সম্মুখীন। দেশের এ রকম নাজুক পরিস্থিতিতে কবি সবাইকে সমবেত হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন। কারণ, তিনি সবাইকে সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য এমন একজন গণনায়কের কথা শোনাবেন, যে দেশের এ রকম সংকটময় মুহূর্তে গণজাগরণের সৃষ্টি করে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধ সংগ্রাম করেছিল। এ কারণেই কবি সবাইকে গোল হয়ে ঘন হয়ে বসতে বলেছেন।
উদ্দীপকে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার পরাধীন দেশে মানুষের জীবনচিত্র ফুটে উঠেছে।
স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও জীবনযাপনে যে আনন্দ, তা প্রত্যেককেই উপভোগ করতে চায়। কিন্তু নিজ দেশ শত্র“ দ্বারা আক্রান্ত হলে মানুষের মাঝে পরাধীনতার যন্ত্রণা এবং পরাধীনতার নাগপাশের মধ্যে ভয় আর শঙ্কা বিরাজ করে।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি পরাধীন দেশের মানুষের জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন যে, যখন দেশ পরাধীন, তখন দেশের মানুষের কাছে সবকিছুই নষ্ট মনে হয়। তখন কেবল মানুষই তার জীবনের সকল ছন্দ হারিয়ে ফেলে না, প্রকৃতিও হারিয়ে ফেলে তার স্বাভাবিকতা। তখন মানুষের কাছে মনে হয় সবকিছুই নষ্ট। উদ্দীপকেও আমরা পরাধীন দেশের মানুষের জীবনচিত্র দেখতে পাই। নিজ গ্রামে শত্র“রা আক্রমণ করলে আজিমার পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। দেশের পরাধীনতার সাথে সাথে তারা হারায় সমস্ত সুখ, স্বস্তি। সীমাহীন দুঃখ আর যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে তারা দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয়।
“পরাধীন দেশে মানুষের জীবন-যন্ত্রণার চিত্র উদ্দীপকে এবং ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় মূর্ত হয়ে উঠেছে।”Ñ মন্তব্যটি যথার্থ।
স্বদেশে অন্যের অধীন থাকার মতো কষ্টদায়ক সম্ভবত আর কিছু নেই। যখন বিদেশিদের হাতে থাকে স্বদেশের শাসনের ভার, তখন সে দেশ তো পরাধীনই। আর সে দেশে মানুষের স্বাধীনতা বলতে কিছু থাকে না। এক অনিশ্চয়তা, অস্থিরতার মধ্য দিয়ে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত অতিক্রান্ত হয়। তাই চারপাশের কোনো কিছুই তখন তাদের কাছে মঙ্গলজনক বলে মনে হয় না।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি বলেছেন যে, পরাধীন দেশে মানুষের জীবনের সব স্বপ্ন লুট হয়ে যায়। চারদিকে কেবল অনিষ্টতা। এই অনিষ্টতার মধ্যে মানুষের জীবনে নেমে আসে দুঃখ-যন্ত্রণা। উদ্দীপকেও আমরা পরাধীন দেশে মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার চিত্র দেখতে পাই। শত্র“র আক্রমণে নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে আজিমার পরিবার অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এ জীবনে নেই কোনো সুখ-শান্তি; আছে কেবল দুঃখ-যন্ত্রণা, ভয় আর অনিশ্চয়তা।
উদ্দীপক আলোচ্য কবিতায় পরাধীন দেশের মানুষের জীবনযাত্রার চিত্র ফুটে উঠেছে। মানুষ তার জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে দুঃখ-যন্ত্রণা ভোগ করছে পরাধীনতার নাগপাশে বন্দি হয়ে। আর এ আলোচনার পরিপ্রক্ষিতে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা যায়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
দরিদ্র কৃষক রাহাত ও তার সাথে আরও দশজন রহিম শেখের খেতে মাস চুক্তিতে কাজ করছে। রাহাতের ইচ্ছে মাস শেষে মজুরিটা পেয়ে সে ঘরের চালটা ঠিক করবে, না হলে এবারের বর্ষায় ঘরে থাকা মুশকিল হবে। কিন্তু দেখা গেল রহিম শেখ তাদের পুরো টাকা দিল না। বলল যে, “যা দিয়েছে তাই বেশি। আর এক টাকাও কেউ পাবে না।” রাহাত গর্জে উঠল, সাথে অন্যরাও। তারা বলল যে, “এ অন্যায় তারা কখনই মেনে নিবে না। রহিম শেখকে তারা ভয় পায় না।”
ক. নূরলদীন আবার একদিন কী বলে সবাইকে ডাক দিবেন?
খ. “রংপুরে নূরলদীন একদিন ডাক দিয়েছিল ১১৮৯ সনে” কেন?
গ. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার বাঙালির চরিত্রের একটি বিশেষ দিকের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, সমগ্র দিকের প্রতি নয়।”-মূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
১০ নং প্রশ্নের উত্তর
‘জাগো বাহে, কোনঠে সবায়…….’ বলে নূরলদীন আবার একদিন সবাইকে ডাক দিবেন।
রংপুরের কৃষক বিদ্রোহে নূরলদীনের নেতৃত্বদানের বিষয়টি আলোচ্য অংশে ফুটে উঠেছে।
রংপুরে ১১৮৯ সনে কৃষক বিদ্রোহের ডাক দিয়েছিলেন নূরলদীন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই কৃষকেরা তাদের অধিকার আদায়ে একত্র হয়ে সংগ্রাম করে। নূরলদীনই তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন করে তোলেন। তাঁর নেতৃত্বেই কৃষকেরা তাদের অধিকার আদায়ের পথে অগ্রসর হয়।
বাংলার কৃষকের অধিকার সচেতনতার বিষয়ে উদ্দীপকের সাথে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।
বাংলার কৃষকেরা অসহায় হলেও অন্যায়ের প্রতিবাদ তারা করতে জানে। নিজেদের অধিকার সম্পর্কে তারা সচেতন। তাই যখন কেউ তাদের অধিকার হরণ করতে চায়, তখন তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলে।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় নূরলদীন কৃষকদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন করে তোলেন। তাঁর ডাকেই কৃষকেরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে। কৃষকদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে অবশেষে নূরলদীন আত্মত্যাগ করেন। উদ্দীপকেও কৃষকদের অধিকার সচেতনতার সেই বিষয়টি লক্ষ করা যায়। অন্যের জমিতে কাজ করার পর মালিক তাদের ঠকালে তারা নীরবে সব মেনে নেয় না; এর বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করে।
“উদ্দীপকে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার বাঙালি চরিত্রের একটি বিশেষ দিকের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে , সমগ্র দিকের প্রতি নয়।” মন্তব্যটি যথার্থ।
অন্যায়কে মেনে নেয়ার প্রবণতা বাঙালি চরিত্রে অনুপস্থিত। তার সাথে কোনো অন্যায় হলে সে তা মেনে নিয়ে চুপ করে থাকতে পারে না। নিজের পরিণতি কী হবে এটা না ভেবেই সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি পরাধীন দেশের পটভূমিতে অধিকারহীনতা এবং অন্যায়-অবিচারের ইঙ্গিত দিয়েছেন। নূরলদীন অন্যায়ের বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। নূরলদীনের সে শক্তি, সাহস আর আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা নিয়েই বাঙালি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে এবং অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে। অন্যদিকে উদ্দীপকে কৃষকদের প্রতিবাদি মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হলে তারা সেটি মুখ বুজে সহ্য করে না। তারা রহিম শেখের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতা, বাঙালির নেতৃত্বদান, আত্মত্যাগ, প্রতিবাদী সত্তা এবং অধিকার সচেতনতার কথা আছে। আর উদ্দীপকের শুধু বাঙালির প্রতিবাদী সত্তার পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এদিক বিবেচন
ক জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
১. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতাটির রচয়িতা কে?
উত্তর : সৈয়দ শামসুল হক।
২. সৈয়দ শামসুল হক জ্যোৎস্নাকে কীসের সাথে তুলনা করেছেন?
উত্তর : ধবল দুধের সাথে তুলনা করেছেন।
৩. নিলক্ষার নীল আকাশে কীভাবে চাঁদ ওঠে?
উত্তর : তীব্র শিস দিয়ে চাঁদ ওঠে।
৪. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি কীভাবে সবাইকে আসতে বলেছেন?
উত্তর : গোল এবং ঘন হয়ে আসতে বলেছেন।
৫. হাজার হাজার তারা কোথায় দেখা যায়?
উত্তর : নিলক্ষার নীল আকাশে হাজার হাজার তারা দেখা যায়।
৬. নিলক্ষার নীল আকাশের নিচে কতটি লোকালয় আছে?
উত্তর : ঊনসত্তর হাজার লোকালয় আছে।
৭. কবি সবাইকে কাছে কী মিনতি করেন?
উত্তর : স্থির হয়ে বসার জন্য মিনতি করেন।
৮. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় অতীত কোথায় হানা দেয়?
উত্তর : অতীত মানুষের বন্ধ দরজায় হানা দেয়।
৯. দীর্ঘ দেহ নিয়ে কখন নূরলদীন দেখা দেয়?
উত্তর : যখন বাংলায় কালঘুম।
১০. সোনার বাংলায় যখন শকুন নেমে আসে, তখন কার কথা মনে পড়ে যায়?
উত্তর : নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়।
১১. ১১৮৯ সনে বাংলায় কী ঘটেছিল?
উত্তর : ফকির বিদ্রোহ ঘটেছিল।
১২. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় দালাল কারা?
উত্তর : দেশদ্রোহীরা।
১৩. কবি সবাইকে কোথায় আসার আহŸান জানান?
উত্তর : কবি সবাইকে প্রশস্ত প্রান্তরে আসার আহŸান জানায়।
১৪. কার কথা সারাদেশে পাহাড়ি ঢালের মতো নেমে আসে?
উত্তর : নূরলদীনের কথা।
১৫. অভাগা মানুষ কার আশায় জেগে ওঠে?
উত্তর : অভাগা মানুষ নূরলদীনের আশায় জেগে ওঠে।
১৬. নূরলদীন কোথায় ফিরে আসবে বলে সবাই মনে করে?
উত্তর : নূরলদীন বাংলায় ফিরে আসবে বলে সবাই মনে করে।
১৭. নূরলদীন আবার কবে ডাক দিবে বলে সবাই মনে করে?
উত্তর : কাল পূর্ণিমায়।
১৮. দীর্ঘ দেহ নিয়ে নূরলদীন কোথায় দেখা দেয়?
উত্তর : মরা আঙিনায়।
১৯. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় অভাগা মানুষের প্রত্যাশা কী?
উত্তর : নূরলদীনের প্রত্যাবর্তন।
খ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
১. ক্ষেত, মাঠ, নদী, বীজ, সংসার সবকিছুকে কবি নষ্ট বলেছেন কেন?
উত্তর : ক্ষেত, মাঠ, নদী, বীজ, সংসার সবকিছুকে কবি বিরুদ্ধ পরিবেশের কারণে নষ্ট বলেছেন।
বিরুদ্ধ শক্তির আগ্রাসন যখন চারদিক গ্রাস করে নিয়েছে, তখন কবির কাছে সবকিছু অস্থির, অসহ্য মনে হয়। বাংলার অবারিত ক্ষেত, মাঠ, নদী, সমাজ-সংসার সব কিছুর উপরই এ পরাশক্তির প্রভাব। কবি দেখতে পান এ প্রভাবে সকল কিছুই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রভাবে সুন্দর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সংসারে মানুষের মাঝে বাড়ছে কষ্ট, অশান্তি। তাই কবি, ক্ষেত, মাঠ, নদী, বীজ, সংসার সব কিছুকে নষ্ট বলেছেন।
২. ‘স্তব্ধতার দেহ ছিঁড়ে কোন ধ্বনি? কোন শব্দ?’উক্তিটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : ‘স্তব্ধতার দেহ ছিঁড়ে কোন ধ্বনি? কোন শব্দ?’- দ্বারা বাংলার জাগরণকে বোঝানো হয়েছে।
যখন শত্র“রা দেশকে জিম্মি করে সমস্ত কিছু শুষে নিচ্ছে, চারদিকে হাহাকার ধ্বনি প্রকম্পিত হতে হতে স্তব্ধতায় নিমগ্ন হয়ে গেছে, তখন সমস্ত স্তব্ধতাকে ছাপিয়ে ভেসে জাগরণের ধ্বনি। সে ধ্বনিতে মানুষের মনে শক্তি সঞ্চিত হয়। সে ধ্বনি মানুষকে সাহসী করে তোলে। সে জাগরিত ধ্বনি মানুষকে শত্র“র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শেখায়।
৩. কবি কেন সকলকে স্থির হয়ে বসার জন্য মিনতি করেন?
উত্তর : সবাইকে কবি শত্র“র বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়ার জন্য মিনতি করেন।
অতীতের ঘটে যাওয়া নানা ধরনের সংগ্রামী ইতিহাস কবি সবাইকে শোনাতে চান। কারণ অতীতের সেসব ঘটনার সাথে বর্তমানের বিপদের মিল রয়েছে। কবি চান অতীত সে ঘটনাগুলো শুনে মানুষ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হোক। তাই কবি মিনতি করেন সবাই যেন ঘন হয়ে উপস্থিত হয় এবং স্থির হয়ে বসে কবির কথা শুনে শত্র“র বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়।
৪. কবির কেন বার বার নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়?
উত্তর : কবির বার বার নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কারণ নূরলদীন ইতিহাসে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক প্রতিবাদী চরিত্র।
কবি অতীত সংগ্রামের ইতিহাসে কাতর। যখনই মনে পড়ে বাংলা দীর্ঘদিন দুর্দশাগ্রস্ত ছিল, বাংলায় অত্যাচার বৃদ্ধি পেয়েছিল, যখন বাংলা দেশদ্রোহীদের দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং বাংলার বাকস্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছিল, সে সব ইতিহাস মনে পড়লেই কবির নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়। নূরলদীন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিল, তাঁর উদাত্ত আহŸান দ্বারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। তাই কবি যখনই চারদিকে অরাজকতা দেখেন তখনই নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়।
৫. ‘যখন আমার কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়’- বলে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : কবি বাক্স্বাধীনতার হরণকে উলিখিত পঙক্তির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
বাংলা ভাষা যখন বাংলার মানুষের মুখ থেকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল, কবি সে সময়কার কথা বলেছেন। বাংলার মানুষের মাতৃভাষা কেড়ে নিয়ে উর্দু ভাষাকে বাংলায় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। বাক স্বাধীনতাকে যারা হরণ করতে চায় কবি তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ।
৬. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় ‘ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠায়’ বলে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় প্রতিটি সংগ্রামের ইতিহাসকে ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠা দ্বারা বোঝানো হয়েছে।
কবি সংগ্রামী চেতনার ইতিহাসকে বড় করে দেখতে গিয়ে ইতিহাসের প্রতিটি বিদ্রোহের কথা মনে করেন। কবির বিদ্রোহ, কৃষক বিদ্রোহ, নীলবিদ্রোহ, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি সব সংগ্রামের ইতিহাস মানুষের মনে লিপিবদ্ধ। ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠায় কবি এ সব বিদ্রোহের ইতিহাসের বর্ণনা দেখতে পান।
৭. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় অভাগা মানুষ কী প্রত্যাশা করে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার অভাগা মানুষ নূরলদীনের প্রত্যাবর্তন প্রত্যাশা করে।
নূরলদীন প্রতিবাদী চরিত্রের নাম। অভাগা মানুষ আশা করে সে একদিন আসবে। এসে তাদের পাশে দাঁড়াবে। সমাজে তাদের ওপর যত অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন হচ্ছে তার প্রতিবাদ করবে। তাদের দুঃখদুর্দশা দেখে নূরলদীন তা দূর করবে। তাই অভাগা মানুষ চায় নূরলদীনের প্রত্যাবর্তন।
৮. ‘স্মৃতির দুধ জ্যোৎস্নার সাথে ঝরে পড়ে’- বাক্যে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : ‘স্মৃতির দুধ জ্যোৎস্নার সাথে ঝরে পড়ে’- বলতে কবি অতীত স্মৃতিকে বুঝিয়েছেন।
বাংলার মানুষের অতীত ইতিহাস, সংগ্রামের ইতিহাস। সে সব স্মৃতি মানুষের মনের স্মৃতিকোঠরে বন্দি। আর জ্যোৎস্নাশোভিত রাতে সে সকল অতীত স্মৃতি মানুষের মনে আবার জেগে ওঠে। নিঃসঙ্গ মানুষ একা একা সে সব স্মৃতিকথা মনে করে অশ্র“ বিসর্জন করে। বলা যায় যে, বাংলার সৌন্দর্য যখন জ্যোৎস্নার আলোয় আরো সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়, তখন প্রতিটি মানুষই তার অতীত স্মৃতি মনে করে।