আবোল-তাবোল
সুকুমার রায়
অনুশীলনীর প্রশ্ন উত্তর
১. জেনে নিই।
আবোল-তাবোল কথা বলার মানে, মনের খেয়ালে কথা বলতে থাকা। আমরা কথা বলি যাতে অন্যে সে-কথা শোনে এবং শুনে কিছু একটা করে। যেমন, যদি বলি- মা, ভাত খাব। মা তখন আমায় ভাত দিতে ছুটবেন! কিন্তু যদি ভ‚তের মতো নাকি সুরে বলি ‘আঁউ মাঁউ খাঁউ ভাঁতের গন্ধ পাউ’ তখন মা ভাববেন, আমি খেলা করছি। সেটা তখন আবোল-তাবোল কথা হয়ে গেল, যে কথার অর্থ নেই, যে কথা দিয়ে কিছু বোঝাতে চাইছি না।
এটি সে-রকমই একটি ছড়া যা জোরে জোরে পড়লেই শুনতে মজা লাগে। একটা লোক মনের আনন্দে কেবলই বকবক করে কথা বলে চলেছে, ইচ্ছে হলে গানও গাইছে। যতক্ষণ না দুচোখে ঘুম নামল ততক্ষণ সে এমনটাই করে গেল।
২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
ঠেকায় তবলা ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ প্যাঁচ ঘুম
ঘনিয়ে এলো মনের মাঝে সাঙ্গ রাম-খটাখট
উত্তর :
শব্দ অর্থ
ঠেকায় – বাধা দেয়, মানা করে।
তবলা – একপ্রকার বাদ্যযন্ত্র।
ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ – এক কোপে কিছু কেটে ফেলার আওয়াজ।
প্যাঁচ – মোচড়, মোড়ানো।
ঘুম – তন্দ্রা, নিদ্রা।
ঘনিয়ে এলো – ঘন হয়ে এলো, জড়ো হলো।
মনের মাঝে – মনের ভিতরে।
সাঙ্গ – শেষ, সমাপ্ত।
রাম-খটাখট – খুব জোরেশোরে খটাখট শব্দ। (এই শব্দে আমরা বড় আকারের কিছু বোঝাই। যেমন- রামছাগল, রামবোকা, হাঁদারাম)।
৩. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
ঘনিয়ে এলো সাঙ্গ ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ ঠেকায়
মনের মাঝে প্যাঁচ
ক. তুহিন লেখাপড়ায় এতো ভালো যে ওকে …….. কে?
খ. লোকটি ………. করে গাছের ডালটি কেটে ফেলল।
গ. বসে থাকতে থাকতে তার ঘুম …………..।
ঘ. ……….. দেওয়া কথা বোঝা যায় না।
ঙ. তাড়াতাড়ি খেলাধুলা ……… কর, পড়তে বসতে হবে।
চ. পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করায় তার …………. আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়।
উত্তর :
ক. তুহিন লেখাপড়ায় এতো ভালো যে ওকে ঠেকায় কে?
খ. লোকটি ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ করে গাছের ডালটি কেটে ফেলল।
গ. বসে থাকতে থাকতে তার ঘুম ঘনিয়ে এলো।
ঘ. প্যাঁচ দেওয়া কথা বোঝা যায় না।
ঙ. তাড়াতাড়ি খেলাধুলা সাঙ্গ কর, পড়তে বসতে হবে।
চ. পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করায় তার মনের মাঝে আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়।
৪. প্রশ্নগুলোর উত্তর মুখে বলি ও লিখি।
ক) কী ছুটছে যাকে থামানো যাচ্ছে না?
উত্তর : আবোল-তাবোল কথার তুবড়ি ছুটছে যাকে থামানো যাচ্ছে না।
খ) ধাঁই ধপাধপ আওয়াজে কোথায় তবলা বাজছে?
উত্তর : মনের মাঝে ধাঁই ধপাধপ আওয়াজে তবলা বাজছে।
গ) কখন গানের পালা সাঙ্গ হলো?
উত্তর : ঘুম ঘনিয়ে এলে গানের পালা সাঙ্গ হলো।
৫. ছড়াটিতে যা বলা হয়েছে তা বর্ণনা করি।
উত্তর : একজন লোক মনের আনন্দে নানা অর্থহীন কথার ফুলঝুরি ছোটাচ্ছে। তাকে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। ঘুম আসার আগ পর্যন্ত সে এমন আবোল-তাবোল কথা বলেই গেল।
৬. ছড়াটি মুখস্থ করি ও বলি।
উত্তর : পাঠ্য বই থেকে কবির নামসহ ছড়াটি মুখস্থ কর এবং খাতায় লেখ।
৭. বই না দেখে ছড়াটি ঠিকমতো লিখি।
উত্তর : পাঠ্য বই থেকে ছড়াটি মুখস্থ করে বই বন্ধ করে খাতায় লেখ।
৮. কর্ম-অনুশীলন।
ছড়ার মতো করে দুইটি লাইন লিখি।
উত্তর : লঙ্কা খেয়ে পাখির ছানা,
ঝালের চোটে মেলল ডানা।
আবোল-তাবোল অতিরিক্ত প্রশ্ন ও উত্তর
🟥 নিচের শব্দগুলো দিয়ে বাক্য রচনা কর।
মন, প্যাঁচ, সাঙ্গ, গান।
উত্তর :
শব্দ বাক্য
মন – বাবলু মন খারাপ করেছে।
প্যাঁচ – দড়িটার প্যাঁচ খোলা যাচ্ছে না।
সাঙ্গ – স্যার এসে পড়ায় দুষ্টুমির পালা সাঙ্গ হলো।
গান – কোকিল মিষ্টি সুরে গান করে।
🟥 ডান পাশের বাক্যাংশের সাথে বাম পাশের বাক্যাংশের মিল কর।
রাম-খটাখট কথার প্যাঁচ
ঘনিয়ে এল মনের মাঝে
আজকে আমায় ঘুমের ঘোর,
কথায় কাটে ঠেকায় কে?
ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ
উত্তর : রাম-খটাখট – ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ
ঘনিয়ে এল – ঘুমের ঘোর,
আজকে আমায় – ঠেকায় কে?
কথায় কাটে – কথার প্যাঁচ
🟥 নিচের বানানগুলো শুদ্ধ করে লেখ।
ঘ্যঁচাং, সাঙ্ঘ, ঢেকায়, ততক্ষন, তবোলা।
উত্তর : ভুল বানান শুদ্ধ বানান
ঘ্যঁচাং – ঘ্যাঁচাং
সাঙ্ঘ – সাঙ্গ
ঢেকায় – ঠেকায়
ততক্ষন – ততক্ষণ
তবোলা – তবলা
🟥 নিচের শব্দগুলোর সমার্থক শব্দ লেখ।
কথা, ঘুম, সাঙ্গ, মন।
উত্তর : মূল শব্দ সমার্থক শব্দ
কথা – বচন, উক্তি।
ঘুম – তন্দ্রা, নিদ্রা।
সাঙ্গ – শেষ, সমাপ্ত।
মন – হৃদয়, অন্তর।
আবোল-তাবোল মডেল টেস্ট
নিচের কবিতাংশটি পড়ে ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর লেখ।
আজকে আমার মনের মাঝে
ধাঁই ধপাধপ তবলা বাজে-
রাম-খটাখট ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ
কথায় কাটে কথার প্যাঁচ।
ঘনিয়ে এলো ঘুমের ঘোর,
গানের পালা সাঙ্গ মোর।
১. সঠিক উত্তরটি উত্তরপত্রে লেখ।
১) মনের মধ্যে কী বাজছে?
(ক) সেতার (খ) তবলা
(গ) হারমোনিয়াম (ঘ) বাঁশি
২) ‘সাঙ্গ’ শব্দের যুক্তবর্ণটি কোন কোন বর্ণ দিয়ে গঠিত?
(ক) ঞ + ঘ (খ) ঙ + ঘ
(গ) ঞ + গ (ঘ) ঙ + গ
৩) এক কোপে কিছু কেটে ফেললে কেমন আওয়াজ হবে?
(ক) রাম খটাখট (খ) ধাঁই ধপাধপ
(গ) ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ (ঘ) প্যাঁচ প্যাঁচ
৪) ঘুম এলে কী হলো?
(ক) বকবক বন্ধ হলো
(খ) তবলা বাজানো শুরু হলো
(গ) বক বক শুরু হলো
(ঘ) চুপটি মেরে থাকা বন্ধ হলো
৫) কবিতাংশে উল্লিখিত লোকটি বলছে-
(ক) গুরুত্বপূর্ণ কথা (খ) আবোল-তাবোল কথা
(গ) ঘুমের ঘোরে কথা (ঘ) দুঃখের কথা
উত্তর : ১) (খ) তবলা; ২) (ঘ) ঙ + গ;
৩) (গ) ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ; ৪) (ক) বকবক বন্ধ হলো; ৫) (খ) আবোল-তাবোল কথা।
২. নিচের শব্দগুলোর অর্থ লেখ।
প্যাঁচ, ঘুম, সাঙ্গ, ঘনিয়ে এলো, তবলা।
উত্তর : শব্দ অর্থ
প্যাঁচ – যা সোজা-সরল নয়।
ঘুম – নিদ্রা।
সাঙ্গ – শেষ।
ঘনিয়ে এলো – ঘন হয়ে এলো।
তবলা – এক প্রকার বাদ্যযন্ত্র।
৩. নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
ক) কথায় কী কাটে?
উত্তর : কথায় কথার প্যাঁচ কাটে।
খ) লোকটি কতক্ষণ পর্যন্ত আবোল-তাবোল বকে গেল?
উত্তর : যতক্ষণ পর্যন্ত না লোকটির দুচোখে ঘুম নেমে এলো ততক্ষণ সে আবোল-তাবোল বকে গেল।
গ) প্যাঁচানো কথা দিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে।
উত্তর : প্যাঁচানো কথা দিয়ে বোঝানো হচ্ছে এমন কথাকে যা সহজে বোঝা সম্ভব নয়। অর্থাৎ যে কথা সহজ সরল নয়।
৪. কবিতাংশটির মূলভাব লেখ।
উত্তর : একটি লোক মনের খেয়ালে আবোল-তাবোল বকে চলেছে। ইচ্ছে হলে গানও গাইছে। দুচোখে ঘুম নেমে আসার আগ পর্যন্ত সে এমনটাই করে গেল।
এ অংশে পাঠ্য বই বহির্ভূত অনুচ্ছেদ/কবিতাংশ দেওয়া থাকবে। প্রদত্ত অনুচ্ছেদ/কবিতাংশটি পড়ে ৩ ধরনের প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। এখানে থাকবে- (৫) বহুনির্বাচনি প্রশ্ন (৬) শূন্যস্থান পূরণ (৭) প্রশ্নের উত্তর লিখন। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে।
পাঠ্য বই বহির্ভূত অনুচ্ছেদ/কবিতাংশ পরীক্ষায় কমন পড়বে না। তাই এটি এখানে দেওয়া হলো না। তবে পরীক্ষার প্রশ্নের পূর্ণাঙ্গ নমুনা (ঋড়ৎসধঃ) বোঝার সুবিধার্থে বইয়ের প্রথম দুটি অধ্যায়ে পাঠ্য বই বহির্ভূত অংশটি সংযোজন করা হয়েছে।
……………………………………………………………..
৮. নিচের যুক্তবর্ণগুলো কোন কোন বর্ণ দিয়ে গঠিত ভেঙে দেখাও এবং প্রতিটি যুক্তবর্ণ দিয়ে একটি করে শব্দ গঠন কর।
ঙ্গ, ন্ধ, ন্ত, ক্ষ, চ্ছ।
উত্তর :
ঙ্গ = ঙ + গ – ভঙ্গ
– ওয়াদা ভঙ্গ করো না।
ন্ধ = ন + ধ – বন্ধ
– চোখ বন্ধ করে ঘুমাও।
ন্ত = ন + ত – ক্লান্ত
– আমি খুব ক্লান্ত।
ক্ষ = ক + ষ – দক্ষ
– ছেলেটি ফুটবল খেলায় খুব দক্ষ।
চ্ছ = চ + ছ – খাচ্ছ
– তুমি কী খাচ্ছ?
৯. সঠিক স্থানে বিরমাচিহ্ন বসিয়ে অনুচ্ছেদটি আবার লেখ।
পদ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
১০. নিচের ক্রিয়াপদগুলোর চলিত রূপ লেখ।
থামাইয়া, ঠেকাইব, কাটিতেছে, আসিল, বাজিতেছে।
উত্তর : ক্রিয়াপদ চলিত রূপ
থামাইয়া – থামিয়ে
ঠেকাইব – ঠেকাব
কাটিতেছে – কাটছে
আসিল – এলো
বাজিতেছে – বাজছে
১১. নিচের শব্দগুলোর বিপরীত শব্দ লেখ।
থামা, ঘুম, সাঙ্গ, আনন্দ, জোরে।
উত্তর : মূল শব্দ বিপরীত শব্দ
থামা – চলা
ঘুম – জাগরণ
সাঙ্গ – শুরু
আনন্দ – দুঃখ
জোরে – আস্তে
১২. নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আজকে ঠেকায় আমায় কে?
রাম-খটাখট ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ
আজকে আমার মনের মাঝে
কথায় কাটে কথার প্যাঁচ।
ধাঁই ধপাধপ তবলা বাজে –
ছুটলে কথা, থামায় কে?
ক) কবিতার চরণগুলো সাজিয়ে লেখ।
খ) কবিতাংশটি কোন কবিতার অংশ?
গ) কবিতাটির কবির নাম কী?
ঘ) রাম-খটাখট বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর :
ক) কবিতার চরণগুলো নিচে সাজিয়ে লেখা হলো-
ছুটলে কথা, থামায় কে?
আজকে ঠেকায় আমায় কে?
আজকে আমার মনের মাঝে
ধাঁই ধপাধপ তবলা বাজে-
রাম-খটাখট ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচ
কথায় কাটে কথার প্যাঁচ।
খ) কবিতাংশটি ‘আবোল-তাবোল’ কবিতার অংশ।
গ) কবিতাটির কবির নাম সুকুমার রায়।
ঘ) রাম-খটাখট বলতে বোঝানো হয়েছে খুব জোরেশোরে খটাখট শব্দকে।