অনুধাবন শক্তি ও অনুচ্ছেদ
অনুধাবন শক্তি
লিখিত যে কোনো বিষয়ে কোনো না কোনো মানুষ পাঠ করে থাকে কিন্তু যে অংশটুকু পড়ে তার মূলভাব সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারে তাকে বলা হয় তার অনুধাবন দক্ষতা। একটি পাঠে কিছু শব্দ থাকে, কিছু নতুন বিষয় থাকতে পারে যার অর্থ বা ধারণা জানা না থাকলে পাঠটির পূর্ণ ধারণা লাভ সহজ হয় না। তাই একটি পাঠ সম্পূর্ণরূপে বুঝতে হলে পাঠ সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ও জানতে এবং বুঝতে হয়। আবার তা কেবল মুখস্ত করলে সেটি বেশিদিন মনে নাও থাকতে পারে। সেই জানা জ্ঞান অন্য কোনো পাঠের সাথে বা জ্ঞানের সাথে মেলাতে পারার ক্ষমতাও থাকতে হয়। এ ভাবেই অনুধাবন দক্ষতা পরিপূর্ণভাবে অর্জিত হয়।
[ পাঠ্য বই থেকে ]
১. দিনের বেলা সোনার থালার মতো সূর্য তার কিরণ ছড়ায় চারপাশে। এমনি সময়ে সচরাচর আকাশ নীল। কখনো সাদা বা কালো মেঘে ঢেকে যায়। ভোরে বা সন্ধ্যায় আকাশের কোনো কোনো অংশে নামে রঙের বন্যা। কখনো বা সারা আকাশ ভেসে যায় লাল আলোয়। রাতের আকাশ সচরাচর কালো হয়, কিন্তু সেই কালো চাঁদোয়ার গায়ে জ্বলতে থাকে রূপালি চাঁদ আর অসংখ্য ঝকঝকে তারা ও গ্রহ।
ক. দিনের বেলা আকাশের রং কেমন থাকে?
খ. রাতের বেলা আকাশে চাঁদ ও তারা দেখা যায় কেন?
গ. দিন ও রাতে আকাশে রঙের যে পার্থক্য দেখা যায় তা লেখ।
ঘ. তোমার দেখা আকাশের সঙ্গে অনুচ্ছেদের আকাশের মিল ও অমিলগুলো তুলে ধর।
উত্তর :
ক. দিনের বেলা আকাশের রং নীল থাকে।
খ. রাতের আকাশ সচরাচর কালো হয়। সেই কালো চাঁদোয়ার গায়ে জ্বলতে থাকে রূপালি চাঁদ আর অসংখ্য ঝকঝকে তারা ও গ্রহ। এ কারণেই এদের দেখা যায়।
গ. দিনের বেলা সাধারণত সোনার থালার মতো সূর্য তার কিরণ দেয়। এসময় আকাশের রঙ নীল হয়। আর রাতের আকাশে সচরাচর কালো হয়। কালো চাঁদোয়ার গায়ে জ্বলতে থাকে রূপালি চাঁদ আর ঝকঝক করতে থাকে অসংখ্য তারা ও গ্রহ।
ঘ. আমার দেখা আকাশের সঙ্গে অনুচ্ছেদের আকাশের মিল হলো : দিনের বেলা সোনার থালার মতো সূর্য কিরণ দেয় বলে সচরাচর আমার দেখা আকাশ নীল হয় এবং রাতের আকাশ সাধারণত কালো হয় এবং অসংখ্য তারা ও গ্রহ জ্বলতে থাকে। আর অমিলের দিক হলো, দিনের আকাশ অনেক সময় মেঘাচ্ছন্ন থাকে, সূর্যের কিরণ দেখা যায় না এবং রাতের আকাশও কখনো কখনো কালো মেঘে ঢাকা থাকে বলে তারা ও চাঁদ দেখা যায় না।
২. কলকাতার এক নোংরা বস্তিতে মাদার তেরেসা প্রথম স্কুল খুললেন। বেঞ্চ-টেবিল কিছু নেই, মাটিতে দাগ কেটে শিশুদের শেখাতে লাগলেন বর্ণমালা। অসুস্থদের সেবার জন্য খুললেন চিকিৎসাকেন্দ্র। ধীরে-ধীরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন অনেক মানুষ। মাদার তেরেসার কাজের পরিধি ক্রমাগত বেড়ে চলল। তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন আরও অনেকে। তাদের নিয়ে তিনি গড়লেন মানবসেবার সংঘ ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’।
ক. মাদার তেরেসার গঠিত সংঘটির নাম কী?
খ. মাদার তেরেসাকে কেন মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল?
গ. মাদার তেরেসা কীভাবে মানবসেবায় এগিয়ে আসলেন? সংক্ষেপে বুঝিয়ে দাও।
ঘ. ‘মানব সেবার জন্য অর্থের দরকার নেই, দরকার সদিচ্ছা’Ñ উক্তিটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তর :
ক. মাদার তেরেসার সংঘটির নাম ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’।
খ. কলকাতার নোংরা বস্তিতে তেরেসা প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেন এবং অসহায় শিশুদের বর্ণমালা শেখানোর ব্যবস্থা করলেন। তাছাড়া অসুস্থদের সেবার জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র খুলেন। মাদার তেরেসার মানবসেবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষ ধীরে ধীরে মাদার তেরেসাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন।
গ. মানবসেবার জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন মাদার তেরেসা। তিনি প্রথমে কলকাতার নোংরা বস্তিতে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং শিশুদের বর্ণমালা শেখানোর ব্যবস্থা করেন। এছাড়া তিনি যখন অসুস্থদের সেবায় চিকিৎসাকেন্দ্র খুললেন, তখন অনেকে তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এবং তার কাজের পরিধি ক্রমাগত বেড়ে যায়। তাদের নিয়ে তিনি ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’ নামে একটি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন।
ঘ. অর্থই সব কাজের মূল তা নয়, বরং সদিচ্ছা থাকলে অনেক অসাধ্য সাধন করা সম্ভব।
অনেকের অর্থ আছে কিন্তু সদিচ্ছা নেই। সে অর্থের কোনো মূল্য নেই। অপর দিকে অর্থ না থাকলেও প্রবল মনোবল ও সদিচ্ছা থাকলে অনেক সময় অনেক কাজ করা সম্ভব। সদিচ্ছা থাকার ফলেই মাদার তেরেসা মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরেছেন। পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা সত্তে¡ও মাদার তেরেসা মানবকল্যাণে অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
৩. রাজার দল এখন আর নেই। গুপ্ত-খড়গ, পাল-সেন, পাঠান-মুঘল, কোম্পানি-রানি এদের কাল শেষ হয়েছে। আজকের দুই কবিও হয়তো দুই প্রান্তে বসে কবিতা লিখছেন। একজন লিখছেন সমৃদ্ধির কথা, বিলাসের কথা, আনন্দের কথা; আরেকজন ছবি আঁকছেন নিদারুণ অভাবের, জ্বালাময় দারিদ্র্যের, অপরিসীম বেদনার।
ক. কিসের দল এখন আর নেই?
খ. কাদের দিন শেষ হয়েছে? কেন?
গ. দুই কবির মিল কোন দিক থেকে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘দুই কবির মধ্যে মিল থাকা সত্তে¡ও বিস্তর ব্যবধান।’Ñ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর :
ক. রাজার দল এখন আর নেই।
খ. গুপ্ত-খড়গ, পাল-সেন, পাঠান-মুঘল, কোম্পানি-রানি এদের কাল শেষ হয়েছে। কারণ, কালের বিবর্তনে রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা পরিবর্তনের ফলে তাদের দিন শেষ হয়েছে।
গ. দুই কবির মিল হলো তারা দুজনেই কবিতা লিখছে এবং ইতিহাস জানিয়ে যাচ্ছে।
কালের বিবর্তনে গুপ্ত-খড়গ, পাল-সেন, পাঠান-মুঘল, কোম্পানি-রানি হারিয়ে গেলেও কবির সৃষ্টি হারিয়ে যায়নি। তাই কবির সৃষ্টিকর্ম কালের বিবর্তনে না হারিয়ে বরং বিবর্তনের সাথে সাথে খুঁজে নিয়েছে তার নতুন রূপ। এটাই তাদের দুজনের মধ্যে মিল।
ঘ. দুই কবির মধ্যে মিল হলো, তারা দুজনই কবিতা লিখছে। কিন্তু তা সত্তে¡ও তাদের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান এখানেই যে তারা ভিন্ন বাস্তবতার কবিতা লিখছেন।
একজন লিখছেন সমৃদ্ধির কথা, বিলাসের কথা, আনন্দের কথা। আর অন্যজন লিখছেন বা ছবি আঁকছেন নিদারুণ অভাবের, দারিদ্র্যের অপরিসীম বেদনার। ধনী ও গরিবের যে বিস্তর ব্যবধান, তা দুই কবির সৃষ্টকর্মের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
অতিরিক্ত অংশ
৪. নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো এবং অনুধাবন করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সৌভাগ্য আকাশ থেকে পড়ে না। জীবনে সৌভাগ্য অর্জনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম ও নিরন্তর সাধনার দরকার হয়। সব মানুষের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা আছে। পরিশ্রমের দ্বারা সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। যে মানুষ কর্মকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে, জীবন সংগ্রামে তারই জয় হয়েছে। কর্মের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি জীবনে সফল সৈনিক হতে পারে। কর্মহীন ব্যক্তি সমাজের বোঝাস্বরূপ। অন্যদিকে, শ্রমশীলতাই মানব জীবনের সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। আমাদের জীবনে উন্নতি করতে হলে, জীবনে সুখী হতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই।
ক. ‘সৌভাগ্য’ শব্দের বিপরীত শব্দ কী?
খ. সৌভাগ্য অর্জনের জন্য কী করতে হয়?
গ. কে সমাজের বোঝা?
ঘ. জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে হলে কিসের প্রয়োজন?
উত্তর :
ক. ‘সৌভাগ্য’ শব্দের বিপরীত শব্দ হচ্ছে ‘দুর্ভাগ্য’।
খ. সৌভাগ্য অর্জনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম ও নিরন্তর সাধনা করতে হয়।
গ. কর্মহীন ব্যক্তি সমাজের বোঝা।
ঘ. জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে হলে কর্মকাকে জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পরিশ্রমই উন্নতির মূল চাবিকাঠি। কর্মের প্রতি একনিষ্ঠ ব্যক্তিগণই জীবন সংগ্রামে সফল হয়েছেন।
৫. বাংলা সনের প্রথম মাসের নাম বৈশাখ। পয়লা বৈশাখ বাঙালির নববর্ষ। নববর্ষ সকল দেশের, সকল জাতিরই আনন্দ উৎসবের দিন। শুধু আনন্দ উচ্ছ¡াসই না, সকল মানুষের জন্য কল্যাণ কামনারও দিন। আমরাও সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্রত্যাশা নিয়েই মহাধুমধামের সঙ্গে আমাদের নববর্ষ উদ্যাপন করি। একে অন্যকে বলি শুভ নববর্ষ।
ক. ‘আনন্দ’ শব্দের বিপরীত শব্দ কী?
খ. ‘উচ্ছ¡াস’ শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করো।
গ. বাংলা সনের প্রবর্তক কে?
ঘ. বাংলা নববর্ষের মতো সার্বজনীন আরো একটি উৎসবের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর :
ক. ‘আনন্দ’ শব্দের বিপরীত শব্দ হলো ‘কষ্ট’।
খ. ‘উচ্ছ¡াস’ শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ হলো- উৎ + শ্বাস।
গ. বাংলা নববর্ষের ইতিহাস এখনো সুস্পষ্টভাবে জানা সম্ভব হয় নি। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও পণ্ডিতের মতে মুঘল সম্রাট বাদশাহ আকবর বাংলা সন চালু করেন।
ঘ. বাংলা নববর্ষের মতো আরও একটি সার্বজনীন উৎসব হলো বিজয় উৎসব।
আমাদের মহান বিজয় দিবস অর্থাৎ ১৬ই ডিসেম্বর আমরা এই উৎসব করে থাকি। এদিন সারা দেশ লাল সবুজে সেজে ওঠে। সর্বস্তরের বাঙালি এই উৎসবে আনন্দের সাথে অংশ নেয়।
৬. আমাদের দেশের উন্নতির প্রধান অন্তরায় আমাদের জনসংখ্যা সমস্যা। এই জনসংখ্যা সমস্যাকে জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে দেশের উন্নতি সম্ভব। তাদেরকে প্রয়োজনীয় কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে দিতে হবে। কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। জনগণ কায়িক পরিশ্রমের মর্যাদা পেলে তারা কায়িক পরিশ্রমের দিকে আগ্রহী হবে। পরিশ্রমী জনগণ দ্বারা দেশের ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব।
ক. ‘উন্নতি’ শব্দের বিপরীত শব্দ কী?
খ. কারিগরি শিক্ষা বলতে কী বোঝ?
গ. ‘জাতি’-এর দুটি প্রতিশব্দ লেখো।
ঘ. ‘জনসংখ্যা সমস্যা’ আমাদের দেশের উন্নতির প্রধান অন্তরায়- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর :
ক. ‘উন্নতি’ শব্দের বিপরীত শব্দ হলো অবনতি।
খ. কারিগরি শিক্ষা বলতে বোঝায় হাতে-কলমে লাভ করা বিশেষ শিক্ষা।
একজন ব্যক্তি তার আত্মপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যখন বিশেষ কোনো কর্মে প্রশিক্ষিত হন তখন সেই শিক্ষাকে কারিগরি শিক্ষা বলে। এই শিক্ষা হাতে-কলমে গ্রহণ করা হয় এবং শিক্ষা শেষেই জীবিকা অর্জনের যোগ্যতা অর্জিত হয়।
গ. ‘জাতি’ শব্দের দুটি প্রতিশব্দ হলো- বর্ণ এবং শ্রেণী।
ঘ. জনসংখ্যা সমস্যা থেকে তৈরি হচ্ছে আরও নানা ধরনের সমস্যা যা জাতির উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীতে অন্যতম। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণের জন্য দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ও প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ মোটেই যথেষ্ট নয়। ফলে দেশে বাড়ছে বেকার সমস্যা, অপরাধ প্রবণতা ইত্যাদি। আর এগুলো আমাদের উন্নতির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছে।
অনুচ্ছেদ রচনা
বাক্য মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম। কিন্তু সব সময় একটি বাক্যের মাধ্যমে মনের সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। এজন্য প্রয়োজন একাধিক বাক্যের। মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার জন্য পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত বাক্যের সমষ্টিই অনুচ্ছেদ। অনুচ্ছেদে কোনো বিষয়ের একটি দিকের আলোচনা করা হয় এবং একটি মাত্র ভাব প্রকাশ পায়। অনুচ্ছেদ রচনার ক্ষেত্রে কয়েকটি দিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। যেমন-
ক) একটি অনুচ্ছেদের মধ্যে একটি মাত্র ভাব প্রকাশ করতে হবে। অতিরিক্ত কোনো কথা লেখা যাবে না।
খ) সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো বাক্যের মাধ্যমে বিষয় ও ভাব প্রকাশ করতে হবে।
গ) অনুচ্ছেদটি খুব বেশি বড় করা যাবে না।
ঘ) একই কথার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ঙ) যে বিষয়ে অনুচ্ছেদটি রচনা করা হবে তার গুরুত্বপূর্ণ দিকটি সহজ-সরল ভাষায় সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে।
[ পাঠ্য বই থেকে ]
ছবি আঁকা
মানুষ ভাবতে ভালোবাসে। মানুষের মনে যেসব ভাবনা খেলা করে ছবিতে সেসবের শিল্পময় প্রকাশ ঘটে। কে কখন ছবি আঁকা শুরু করেছিল তা বলা মুশকিল। তবে মানুষের আঁকা সবচেয়ে পুরোনো ছবির কথা জানা যায়। ১১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে স্পেনে আলতামিরা নামক এক গুহায় প্রথম মানুষের আঁকা ছবির সন্ধান মেলে। যেকোনো মানুষই ছবি আঁকে। এমন কোনো মানুষ নেই যে জীবনে কোনো দিন ছবি আঁকেনি। যেকোনো ছবি, হতে পারে তা কোনো পশু, পাখি, মাছ, আম, জাম, কাঁঠাল, পেঁপে, এ কোনো না কোনোটি মানুষ জীবনে একবার হলেও এঁকেছে। আঁকতে আঁকতে অনেকের ছবি আঁকাটাই নেশা হয়ে যায় এবং জীবনে ছবি আঁকা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না। ছবি-আঁকা নিয়েই তাদের স্বপ্ন, ছবি-আঁকাই তাদের পেশা হয়ে যায়। তারা নিজেদের প্রতিভার প্রকাশ ঘটায় ছবি-আঁকার মধ্য দিয়ে। পৃথিবীতে অনেকে বিখ্যাত হয়েছেন শুধু ছবি এঁকে।
ফেরিওয়ালা
রাস্তায় রাস্তায় হেঁটে নানা ধরনের সামগ্রী বিক্রি করে বা ফেরি করে যে জীবিকা নির্বাহ করে, সে-ই ফেরিওয়ালা। ফেরিওয়ালা আমাদের নিত্যদিনের পরিচিত ব্যক্তি। প্রতিদিনই আমরা দেখি তারা মহল্লায় মহল্লায়, রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের জিনিস, মাছ, তরকারি, ফল, খাবার, কাপড়-চোপড় বিক্রিয় করে। তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আমাদের বাসার সামনে হাজির হয়। বাজারের চেয়ে কম দামে তাদের কাছ থেকে এসব কেনা যায়। অনেক সময় নানা ধরনের গান গেয়ে তারা ক্রেতার মন জয় করার চেষ্টা করে। অনেক ফেরিওয়ালা আবার চুড়ি, ফিতাসহ নানা ধরনের খেলনা বিক্রি করে। যাওয়া-আসার মধ্যদিয়ে অনেক ফেরিওয়ালা অনেক পরিবারের সঙ্গে আন্তরিকতার সম্পর্ক গড়ে তোলে। তারা আমাদের চাহিদা মতো অনেক জিনিস দূরের শহর থেকেও এনে দেয়। এভাবে তারা আমাদের সময় ও শ্রম বাঁচায়। সমাজে যে যে-কাজই করুক না কেন, কাজকে ছোট করে দেখার কোনো কারণ নেই। সকল কাজই গুরুত্বপূর্ণ। ফেরিওয়ালাদের সম্মান দেখানো আমাদের মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব।
শীতের পিঠা
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। শীতকাল তাদের মধ্যে অন্যতম। শীতকালে নতুন ধান ওঠে। সেই ধানে ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর উৎসব শুরু হয়। নতুন চালের গুঁড়ো আর খেজুর রসের গুড় দিয়ে বানানো হয় নানা রকম পিঠা। নানান তাদের নাম, নানান তাদের রূপের বাহার। ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা আরও হরেক রকম পিঠা তৈরি হয় বাংলার ঘরে ঘরে। পায়েস, ক্ষির ইত্যাদি মুখরোচক খাবার আমাদের রসনাকে তৃপ্ত করে শীতকালে। এ সময় শহর থেকে অনেকে গ্রামে যায় পিঠা খেতে। তখন গ্রামাঞ্চলের বাড়িগুলো নতুন অতিথিদের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে। শীতের সকালে চুলোর পাশে বসে গরম গরম ভাপা পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। গ্রামের মতো শহরে শীতের পিঠা সে রকম তৈরি হয় না। তবে শহরের রাস্তাঘাটে শীতকালে ভাপা ও চিতই পিঠা বানিয়ে বিক্রি করা হয়। এছাড়া অনেক বড় বড় হোটেলে পিঠা উৎসব হয়। পিঠা বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান।
সকাল বেলা
সকাল বেলা আমার খুবই প্রিয় একটা সময়। আমি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে আমার বাড়ির পাশে নদীর তীরে হাঁটতে যাই। সেখান থেকে সকালের সূর্যোদয় খুবই সুন্দর লাগে। সকালের শীতল বাতাস আমার দেহমন জুড়িয়ে দেয়। নানারকম পাখির কলকাকলিতে পরিবেশটা মুখরিত হয়ে ওঠে। এ সময় কৃষকেরা গরু নিয়ে হাল চাষ করতে বের হয়। গ্রামের মসজিদে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে সমস্বরে কোরান তেলাওয়াত করে। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে আমি বাড়ি ফিরে নাস্তা করে পড়তে বসি। তারপর বন্ধুদের সাথে মিলে স্কুলে যাই। ছুটির দিনে সকার বেলা আমি বাবাকে নানা কাজে সাহায্য করি। সকাল সকাল বেলা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলে আমার সারাটা দিন খুব ভালো কাটে।
ঘরের সামনের রাস্তা
আমার ঘরের সামনে একটি পায়ে হাঁটা রাস্তা আছে। ঘর থেকেই রাস্তাটি দেখা যায়। রাস্তাটি শুরু হয়েছে পাশের গ্রাম থেকে। একটি বড় রাস্তার সঙ্গে গিয়ে এটি মিশেছে। সারাদিনই এ রাস্তা দিয়ে মানুষ যাওয়া-আসা করে। কত রকমের মানুষ যে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে তার হিসেব নেই। অফিসের কর্মচারী, কৃষক, ছাত্রÑছাত্রী, দিনমজুর, ফেরিওয়ালা প্রভৃতি পেশার মানুষ সকাল বেলা তাদের কর্মক্ষেত্রে যায় এ রাস্তা দিয়ে। কাজ শেষে বিকেলে আবার ফিরে আসে তাদের বাড়িতে। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখি সবার আনাগোনা। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা-একেক ঋতুতে রাস্তাটি একেক রূপ ধারণ করে। পূর্ণিমার রাতে চাঁদের আলোয় রাস্তাটি অপরূপ লাগে। তখন মনে হয় রাস্তাটি যেন চলে গেছে কোন অজানার দেশে। আমার জীবনের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে এ রাস্তা।
অতিরিক্ত অংশ
বাংলা নববর্ষ
নববর্ষ সকল দেশের সকল জাতিরই আনন্দ উচ্ছ¡াস ও মঙ্গল কামনার দিন। বাংলাদেশেও পয়লা বৈশাখে সকলের কল্যাণ প্রত্যাশা করে মহা ধুমধামের সাথে নববর্ষ উদ্যাপিত হয়। প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল বাঙালি এই উৎসব পালন করে থাকে। বাঙালির জাতিসত্ত¡া বিনির্মাণে এবং স্বাধীনতা অর্জনে নববর্ষের তাৎপর্যপূর্ণ ভ‚মিকা রয়েছে। সম্রাট আকবরের সময় বাংলা সনের গণনা শুরু হয় বলে ধরণা করা হয়। জমিদার ও নবাবেরা নববর্ষে পূণ্যাহ আয়োজন করতেন। পরবর্তিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নববর্ষ পালন করায় সে আয়োজন দেশময় ছড়িয়ে পড়ে। নববর্ষে হালখাতা, বৈশাখী মেলা, ঘোড়দৌড় এবং বিভিন্ন লোকমেলার আয়োজন করে সাধারণ মানুষ। সংস্কৃতি সংগঠন ছায়ানট নববর্ষে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ আয়োজন করে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এছাড়াও নানা বর্ণিল আয়োজনে দিনটিকে বরণ করা হয়। ছেলেরা পাজামা-পাঞ্জাবি এবং মেয়েরা নানা রঙের শাড়ি পড়ে উৎসবে মাতোয়ারা হয়। এই দিনে প্রত্যেক বাঙালি নিজের, বন্ধুর, পরিবার ও দেশের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে।
ছাত্রজীবন
ছাত্রজীবন মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। বিদ্যাশিক্ষার সূচনা থেকে মানুষ জীবনের যে সময়টুকু স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো শিক্ষালয়ে অতিবাহিত করে, তা-ই ছাত্রজীবন। ‘ছাত্রনং অধ্যানং তপ’ অর্থাৎ অধ্যয়নই হচ্ছে ছাত্রজীবনের একমাত্র তপস্যা। এই বিষয়টি প্রত্যেক ছাত্রকে স্পষ্টভাবে মনে রাখতে হবে। ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার ও জাতির আশা-ভরসার প্রতীক। দেশ ও জাতিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার গুরুদায়িত্ব ভবিষ্যতে ছাত্রদের ওপরই বর্তায়। সে গুরুদায়িত্ব সার্থকতার সাথে বহন করার জন্যে তাদেরকে উপযুক্ত হতে হবে। আধুনিক বিশ্বের নানান খবরাখবর সংগ্রহ এবং তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা একজন ছাত্রের জন্যে অত্যন্ত জরুরি। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে ছাত্রদের অংশগ্রহণ থাকা প্রয়োজন। কর্মজীবনে প্রবেশের সোপান হচ্ছে ছাত্রজীবন। ছাত্রজীবনের সফলতা ও ব্যর্থতার ওপর কর্মজীবন অনেকাংশে নির্ভরশীল। এ সময় থেকেই জীবন সংগ্রামের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। একজন ছাত্রকে অবশ্যই কুসংসর্গ ত্যাগ করে সততা, সংযম ও পরিশ্রমের সমন্বয়ে আদর্শ মানুষ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
সততা
সততা মানবচরিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি গুণ। সর্বদা সত্য কথা বলা, সৎপথে চলা এবং কোনো অন্যায় কাজে লিপ্ত না হওয়ার নামই সততা। একথায় সত্যের অনুসারী মানুষের সৎ থাকার গুণকে সততা বলা হয়। এই গুণ অর্জনের চেষ্টা ও চর্চা একজন মানুষকে পৌঁছে দিতে পারে মর্যাদা ও গৌরবের আসনে। নিষ্ঠার সঙ্গে নিরলস অনুশীলনের মাধ্যমে এই গুণ অর্জন করা যায়। আর এই গুণ যিনি অর্জন করতে পারেন তিনিই সমাজে আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে থাকেন। সততাকে তাই মানবচরিত্রের অলঙ্কার বলা হয়। সততার সুফল শত ধারায় বিকশিত। জীবনকে সুন্দর সফল ও সার্থক করার জন্য সৎ থাকার অভ্যাস করতে হয়। সৎগুণসম্পন্ন মানুষ কখনোই অন্যায় ও অবৈধ কাজে লিপ্ত থাকতে পারে না। সৎ লোক মাত্রই চরিত্রবান ও মহৎ হয়ে থাকে। তাই সে সবার বিশ্বাসভাজন ও শ্রদ্ধেয় হয়। সততা মানুষের নৈতিকতাকে সমুন্নত করে। সৎ ব্যক্তি কখনোই অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। একটি সমৃদ্ধ ও আদর্শ জীবন গড়ার জন্য সততার বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের উচিত ছাত্রজীবন থেকেই সৎ গুণগুলো অনুশীলন করা। তাহলেই তারা পরিবার ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
একুশে ফেব্রæয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনের এক উজ্জ্বলতম দিন। ১৯৫২ সালের এ দিনে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় রাজপথে প্রাণ দিয়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। তাদের সেই আত্মত্যাগের বিনিময়েই নিশ্চিত হয়েছে মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলার অবারিত অধিকার। সেই ঐতিহাসিক ভাষা শহিদদিবস ২১শে ফেব্রæয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেব স্বীকৃতি লাভ করেছে। কানাডা প্রবাসী বাঙালিদের সংগঠন ‘মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’ প্রথম ২১শে ফেব্রæয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপিত হয়। বিশ্বের ২৭টি দেশ এ প্রস্তাবকে সমর্থন জানায়। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর ২১ তম অধিবেশনে ২১শে ফেব্রæয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে বিশ্বের সকল দেশ এই দিনটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করছে। বাংলাদেশের শহিদদের মহান ত্যাগ এভাবে বিশ্ববাসীর স্বীকৃতিলাভ করেছে। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য এটি একটি বিরল গৌরব। বাংলা ভাষা শহিদ ভাইদের জীবনের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি। তাই এই ভাষাকে আমরা শ্রদ্ধা করব, শুদ্ধভাবে এ ভাষার চর্চা করব। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এটিই হোক সকলের শপথ।
দুর্নীতি
জাতীয় জীবনে উন্নতির অন্যতম অন্তরায় দুর্নীতি। আমাদের জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রকোষ্ঠে দুর্নীতি এমনভাবে প্রবেশ করেছে যে, আজকাল একে এড়িয়ে আমাদের চলাই দায়। অফিস-আদলতে, পেশায়-নেশায়, ঘরে-বাইরে, রাজনীতি কিংবা ধর্মনীতি সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির সর্বগ্রাসী প্রভাব বিদ্যমান। দুর্নীতি যেন সভ্য সমাজে স্বাভাবিক বিষয়। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে পরপর বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দুর্নীতির কারণে বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে, সাহায্যের হাতও গুটিয়ে নিচ্ছে ধনী দেশগুলো। দুর্নীতির অবাধ বিস্তার সামাজিক ক্ষেত্রে নব্য ধনিকশ্রেণীর সৃষ্টি করছে, জন্ম দিচ্ছে নানামুখী বৈষম্য। সন্ত্রাস নামক যে ভয়ংকর দানব সমাজকে নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে তার পেছনেও রয়েছে দুর্নীতির প্রভাব। দুর্নীতি জন্ম দিয়েছে মূল্যবোধহীনতা যা সমাজকে অবক্ষয়ের অতলে ডুবিয়ে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দুর্নীতি এক দুরারোগ্য ব্যাধি, দুর্বিষহ অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। এর করাল গ্রাসে জাতীয় উন্নতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। মেধা ও পরিশ্রমের যথাযথ মূল্যায়ণ হচ্ছে না। বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। স্বনির্ভর জাতি গড়ে তোলার জন্য দুর্নীতি নামক এই অভিশাপকে রুখতে হবে এখনই। সকলের সম্মিলিত অঙ্গীকারই পারে এর প্রভাব কমিয়ে আনতে।
আমার মা
পৃথিবীতে মা আমাদের সবচেয়ে আপনজন। অনেক কষ্ট স্বীকার করে তিনি আমাদের জন্ম দেন। অনেক স্নেহ-মমতায় বড় করে তোলেন। আমার কাছে আমার মা সবচেয়ে প্রিয়। মাকে ছাড়া আমি একটি মুহূর্তের কথাও ভাবতে পারি না। মা আমাকে অনেক ভালোবাসেন। সব সময় আমাকে নিয়ে ভাবেন। আমি দুপুরে স্কুল থেকে বা সন্ধ্যায় মাঠ থেকে ফিরতে দেরি করলে মা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। আমাকে না খাইয়ে কখনো খান না। আমার অসুখ হলে মা আমার যতœ করেন। রাত জেগে আমার পাশে বসে থাকেন। মা-ই আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু। আমি মায়ের কাছে কোনো কিছুই গোপন করি না। মা আমাকের কখনোই বকেন না। ভালো পথে চলার জন্য সব সময় পরামর্শ দেন। মা আমার সেরা শিক্ষক। আমার পড়া তৈরিতে তিনি সাহায্য করেন। কঠিন বিষয়গুলো মা সহজেই বুঝিয়ে দেন। আমি মাকে কখনোই কষ্ট দিই না। সবসময় মায়ের কথামতো চলতে চেষ্টা করি। বাড়ির ছোটোখাটো কাজে মাজে সাহায্য করি। আমার মাকে আমি অনেক শ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি।
পরিবেশ দূষণ
মানুষসহ অন্যান্য জীবজন্তু পরিবেশ ও প্রকৃতির অংশ। প্রকৃতির দানেই মানুষ নানা অঙ্গিকে নিজের জীবনকে সাজিয়ে তুলেছে। অথচ অবিবেচক মানুষদের কারণেই পরিবেশ আজ ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে পরিবেশ দূষণের পেছনে মানুষের ভ‚মিকাই সবচেয়ে বেশি। জনসংখ্যার বিষ্ফোরণের কারণে প্রাকৃতিক সম্পদ- বায়ু, পানি, মাটির ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ছে। বনজ সম্পদ ধ্বংসের রীতিমতো উৎসব চলছে বিশ্বজুড়ে। ফলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাতাসে ধুলোবালি, কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া, কীটনাশক ইত্যাদির উপস্থিতি বাড়ছে আশংকাজনকভাবে। কলকারখানার বর্জ্য, কীটনাশক ইত্যাদি পানিকে করে তুলেছে বিষাক্ত। হাজারো রকমের উৎকট শব্দের কারণে শব্দ দূষণ ঘটছে। নষ্ট হচ্ছে মনের শান্তি। ক্ষতিকর রাসায়নিক ও যত্রতত্র আবর্জনা ফেলায় দূষিত হচ্ছে মাটি। এভাবে দূষিত হতে থাকলে এক সময় পরিবেশের ভারসাম্য সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে এই বিশ্ব জীবের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব আজ মারাত্মক হুমকির মুখে। তাই পরিবেশ দূষণ যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সবারই ভ‚মিকা রাখা উচিত। সকলের সচেতনতাই আমাদের পরিবেশকে সুস্থ ও সুন্দর করে তুলতে পারে।