এসএসসি সাধারণ বিজ্ঞান দশম অধ্যায় এসো বলকে জানি
পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি
বস্তুর জড়তা : বস্তু যে অবস্থায় আছে চিরকাল সেই অবস্থায় থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা সেই অবস্থা বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম, তাই জড়তা। জড়তা দুই প্রকার :
১. স্থিতি জড়তা : স্থিতিশীল বস্তুর চিরকাল স্থির থাকতে চাওয়ার প্রবণতা বা ধর্মকে স্থিতি জড়তা বলে। স্থিতি জড়তার কারণে থেমে থাকা বাস হঠাৎ চলতে শুরু করলে যাত্রীরা পেছনের দিকে হেলে পড়ে।
২. গতি জড়তা : গতিশীল বস্তুর চিরকাল সমবেগে গতিশীল থাকতে চাওয়ার প্রবণতা বা ধর্মকে গতি জড়তা বলে। গতি জড়তার কারণে চলন্ত বাস হঠাৎ ব্রেক কষলে যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
বলের গুণগত ধারণা নিউটনের গতির প্রথম সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা : নিউটনের প্রথম সূত্র হলো, “বাহ্যিক কোনো বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থিরই থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সুষম দ্রæতিতে সরলপথে চলতে থাকবে।”
ধাক্কা, টানা বা বাধা দেয়া যা বস্তুর স্থিতি বা গতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় তাকে বল বলে।
নিউটনের গতির প্রথম সূত্র থেকে দেখা যায়, কোনো বস্তু নিজে তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। বস্তু স্থির থাকলে চিরকাল স্থির থাকতে চায় আর গতিশীল থাকলে চিরকাল সুষম দ্রæতিতে সরলপথে চলতে চায়। তাই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য বাইরে থেকে যা প্রয়োগ করতে হয় তাই বল।
জড়তার ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা : আমরা প্রাত্যহিক অনেক কাজেই জড়তার ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা অনুভব করি। যেমন :
১. থেমে থাকা বাস হঠাৎ চলতে শুরু করলে যাত্রীরা পিছনের দিকে হেলে পড়ে। এ ঘটনা স্থিতি জড়তার উদাহরণ। আবার চলন্ত বাস থেকে হঠাৎ নামতে গেলে যাত্রী সামনের দিকে ঝুঁকে না নামলে দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা গতি জড়তার উদাহরণ।
২. একটি গøাসের উপর একটি কার্ড বা শক্ত কাগজ রেখে তার উপর একটি পাঁচ টাকার কয়েন রেখে হঠাৎ কার্ডটিকে জোরে টোকা দিলে দেখা যায় কয়েনটি গøাসের মধ্যে পড়ে যায়। স্থিতি জড়তার কারণে কয়েনটি তার নিজস্ব স্থির অবস্থান বজায় রাখতে চায়। জোরে টোকা দিলে কার্ডটি গতিশীল হলেও কয়েনটি নিজের অবস্থান বজায় রাখতে গিয়ে গøাসের মধ্যে পড়ে যায়।
৩. গাড়ি চালানোর সময় চালককে জড়তার কারণে সিটবেল্ট পরিধান করতে হয়। সিটবেল্ট ছাড়া চলমান গাড়ির চালক যদি হঠাৎ ব্রেক প্রয়োগ করেন, তবে গতি জড়তার কারণে তিনি সামনে ঝুঁকে পড়বেন এবং স্টিয়ারিং ও উইন্ড স্ক্রিনে আঘাত পাবেন।
৪. শহরের ট্রাফিক সিগন্যালবাতিতে সবুজ-হলুদ-লাল বাতি ব্যবহার করা হয়। সবুজবাতি সামনে এগিয়ে যাওয়া, হলুদবাতি ধীরে যাওয়া এবং লালবাতি থামা নির্দেশ করে। হলুদবাতির ব্যবহার এখানে প্রয়োজন না হলেও স্থিতি বা গতিজড়তার ঝামেলা এড়াতে হলুদবাতি ব্যবহার করা হয়। দ্রæতগামী গাড়ির গতি জড়তা এড়াতে এবং থেমে থাকা গাড়ির স্থিতি জড়তা এড়াতে হলুদ বাতি ব্যবহার করা হয়। তা না হলে চালক এবং আরোহীদের আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকত।
৫. যদি কোনো বাস বা গাড়ি হঠাৎ বাঁক নেয় তাহলে মনে হয় আরোহীদের কেউ একপাশে ধাক্কা দিচ্ছে। এর কারণ বাস বা গাড়ির গতির দিকে আরোহীও গতিশীল ছিলেন, বাস বা গাড়ি হঠাৎ দিক পরিবর্তন করলেও জড়তার কারণে আরোহীর মূল দিক বজায় রাখতে চাওয়ার ফলে এক পাশে সরে যান।
বিভিন্ন প্রকার বলের প্রকৃতি : সাধারণত স্পর্শের ওপর ভিত্তি করে বলের প্রকৃতি নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে বল দুই প্রকার : স্পর্শ বল ও অস্পর্শ বল। যে বল কেবল দুটি বস্তুর ভৌত সংস্পর্শে এসে পরস্পরের ওপর ক্রিয়া করে তাকে স্পর্শ বল বলে। পেশিজ বল ও ঘর্ষণ বল স্পর্শ বলের অন্তর্গত।
দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে থেকে যদি একে অপরের ওপর দিয়ে চলতে চেষ্টা করে অথবা চলতে থাকে তাহলে বস্তুদ্বয়ের স্পর্শতলে এ গতির বিরুদ্ধে একটি বাধার উৎপত্তি হয়, এ বাধাকে ঘর্ষণ বলে। কিছু বল আছে যা বস্তুর ভৌত সংস্পর্শে না এসেও বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে। এ ধরনের বলকে অস্পর্শ বল বলে। এ ধরনের বল হলোÑ মাধ্যাকর্ষণ বল, চৌম্বক বল, তাড়িতচৌম্বক বল, দুর্বল নিউক্লিয় বল ও শক্তিশালী নিউক্লিয় বল।
এ মহাবিশ্বের সকল বস্তু পরস্পরের ওপর বল প্রয়োগ করে বা একে অপরকে নিজের দিকে টানে। এই বলকে বলা হয় মাধ্যাকর্ষণ বল। দুটি চুম্বককে কাছাকাছি আনলে এরা পরস্পরের প্রতি যে বল প্রয়োগ করে এবং কোনো চুম্বক অন্য কোনো চৌম্বক পদার্থে লোহা, নিকেল, কোবাল্ট, স্টিল ইত্যাদিতে যে বল প্রয়োগ করে তাকে চৌম্বক বল বলে।
দুটি আহিত (চার্জযুক্ত) কণিকার মধ্যে যে বল ক্রিয়াশীল তাকে তাড়িত চৌম্বক বল বলে। তাড়িত চৌম্বক বলের চেয়ে ১০১০ গুণ দুর্বল বলকে দুর্বল নিউক্লিয় বল বলে। যে শক্তিশালী আকর্ষণ বল নিউক্লিয়নগুলোর মধ্যে কাজ করে এবং নিউক্লিয়াসকে আটকে বা ধরে রাখে তাকে শক্তিশালী নিউক্লিয় বল বলে।
ব্যবহারিক জীবনে ঘর্ষণের সুবিধা : আমাদের ব্যবহারিক জীবনে ঘর্ষণের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আমরা নানাভাবে উপকৃত হচ্ছি।
১. ঘর্ষণ না থাকলে আমরা রাস্তায় হাঁটতে পারতাম না পিছলে পড়ে যেতাম।
২. কাঠে পেরেক বা স্ক্রু আটকানো যেত না। সম্ভব হতো না দড়িতে কোনো গিরো দেওয়া। আমরা হাত দিয়ে খাতা, কলম, বইসহ যাবতীয় জিনিস ধরতে পারতাম না।
৩. গাড়ি বা সাইকেলের টায়ার ও ব্রেকের ঘর্ষণের ওপর আমাদের জীবন নির্ভরশীল।
৪. বাতাসের ঘর্ষণ আছে বলেই প্যারাসুট ব্যবহার করে কেউ বিমান থেকে নিরাপদে নামতে পারে।
৫. দেয়াশলাই থেকে আগুন পাওয়া, সেতারার মধুর সুর সবই অসম্ভব হতো ঘর্ষণ না থাকলে।
৬. দেয়ালে ঠেস দিয়ে মই রাখার ব্যাপারটিও অকল্পনীয় হতো যদি ঘর্ষণ না থাকত।
স্থিতি ও গতির ওপর বলের প্রভাব : প্রত্যেক বস্তু যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় থাকতে চায় অর্থাৎ বস্তু স্থির থাকলে স্থির আর গতিশীল থাকলে গতিশীল থাকতে চায়। বস্তুর এ স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে বল প্রয়োগ করতে হয়।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র ব্যবহার করে বলের পরিমাপ নির্ণয় : নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রটি হলো, বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক। এই সূত্র থেকে আমরা বলের পরিমাপ নির্ণয় করতে পারি।
বস্তুর ভরবেগ হলো, ভর বেগ। ভরবেগের পরিবর্তনের হার = ভর বেগের পরিবর্তনের হার = ভর ত্বরণ। কারণ, বেগের পরিবর্তনের হার হলো ত্বরণ।
সুতরাং নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র থেকে আমরা পাই, বল = ভর ত্বরণ
পদার্থবিজ্ঞানে বলকে ঋ, ভরকে স এবং ত্বরণকে ধ দিয়ে নির্দেশ করা হয়।
সুতরাং, ঋ = সধ …………..(র)
এই (র)নং সূত্র ব্যবহার করে বলের পরিমাপ নির্ণয় করা যায়।
নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সাহায্যে সংঘটিত কয়েকটি জনপ্রিয় ঘটনা : নিউটনের গতি বিষয়ক তৃতীয় সূত্রটি হলো, “প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।”
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বল সব সময়ই দুটি ভিন্ন বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে-কখনই একই বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে না। প্রতিক্রিয়া বলটি ততক্ষণই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্রিয়া বলটি থাকবে। ক্রিয়া থেমে গেলে প্রতিক্রিয়াও থেমে যাবে। যেমন :
১. ক্রিকেটার যখন ব্যাট দিয়ে বলকে আঘাত করেন, তখন ব্যাটটি ক্রিকেট বলের ওপর একটি বল প্রয়োগ করে। এটি ক্রিয়া। ক্রিকেট বলটিও ব্যাটের ওপর একটি বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে। এটি প্রতিক্রিয়া।
২. কোনো বইকে টেবিলের ওপর রাখা হলে বইটির ওজন খাড়া নিচের দিকে ক্রিয়া করে। টেবিলটির প্রতিক্রিয়া বল সমান ও বিপরীতমুখী হওয়ায় বইটি টেবিলের ওপর থাকে।
৩. ভ‚মির ওপর দাঁড়ালে দেহের ওজনের সমান বল ভ‚মির ওপর প্রয়োগ করা হয়। এ বল ভ‚মির ওপর দেহের ওজনের ক্রিয়া। ভ‚মিও সমান বলে উপরের দিকে ঠেলে। ভ‚মির এ বল হলো প্রতিক্রিয়া। এ অবস্থায় ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল পরস্পরের সমান ও বিপরীতমুখী হয়।
৪. একজন মাঝি যখন নৌকা চালানোর সময় বাঁশের লগি দিয়ে ভ‚মিতে ধাক্কা দেন তখন ভ‚মিও লগির ওপর সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। এ প্রতিক্রিয়া বলের অনুভ‚মিক উপাংশই নৌকাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
৫. ফোলানো বেলুনের মধ্যস্থিত বাতাস এর ওপর বল প্রয়োগ করে। এ বল হলো ক্রিয়া। এ বলের ফলে খোলা মুখ দিয়ে বাতাস বের হয়ে যায়। বাতাসও বেলুনের ওপর সমান প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। ফলে বাতাস যে দিকে বেরিয়ে যায় বেলুন তার বিপরীত দিকে গতিশীল হয়।
৬. আধুনিক জেট বিমান, রকেট ইত্যাদিও চালানো হয় নিউটনের তৃতীয় সূত্র তথা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বলের ওপর ভিত্তি করে। রকেটে জ্বালানি পুড়িয়ে প্রচুর গ্যাস উৎপন্ন করা হয়। রকেট সেই গ্যাসের ওপর বল প্রয়োগ করে। এ বল হচ্ছে ক্রিয়া। এ ক্রিয়ার ফলে গ্যাস প্রচণ্ড বেগে রকেটের পেছন দিয়ে নির্গত হওয়ার সময় জ্বালানি ও রকেটের ওপর সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। ফলে রকেটটি জ্বালানির বিপরীত দিকে এগিয়ে যায়।
অনুশীলনীর বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর
১. গাছ থেকে একটি ফল মাটিতে পড়ল-এটি কোন বলের উদাহরণ?
মহাকর্ষ বল খ চৌম্বক বল
গ তাড়িত চৌম্বক বল ঘ দুর্বল নিউক্লিয় বল
২. বলÑ
র. বস্তুর দিক অপরিবর্তিত রাখে
রর. বস্তুর আকৃতি পরিবর্তন করে
ররর. স্থির বস্তুকে গতিশীল করে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক র ও রর খ র ও ররর রর ও ররর ঘ র, রর ও ররর
নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ ও ৪নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
২ঘ বলে একটি বস্তুকে ৪ মি/সে২ ত্বরণে মেঝেতে ছুড়ে দেওয়া হলো। বস্তুটি কিছুদূর যাওয়ার পর থেমে গেল।
৩. বস্তুর ভর কত?
ক ২০০ মস খ ৪০০ মস ৫০০ মস ঘ ৭৫০ মস
৪. কোন বলের কারণে বস্তুটি থেমে গেল?
ঘর্ষণ বল খ মহাকর্ষ বল
গ চৌম্বক বল ঘ তাড়িত চৌম্বক বল
গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর
৫. চলন্ত বাস থেকে হঠাৎ নামতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটার কারণ নিচের কোনটি?
ক বেগ খ বল গ গতি জড়তা
৬. ৭০ নিউটন বলে কোনো বস্তুকে ৮ মি.সে২ ত্বরণে নিক্ষেপ করা হলে, বস্তুর ভর কত?
ক ০.১১ গ্রাম ৮.৭৫ গ্রাম গ ৫৬০ গ্রাম ঘ ৮৭৫ গ্রাম
৭. নিচের কোনটি বলের একক?
ক ওয়াট খ গ্রাম গ জুল নিউটন
৮. জড়তার পরিমাপক কোনটি?
ক বল খ ওজন ভর ঘ স্থিতি
৯. একটি ফুটবলকে দেয়ালে সজোরে আঘাত করলে তা আবার উল্টো পথে ফিরে আসে। এর কারণ কোনটি?
ক ত্বরণ খ ঘর্ষণ প্রতিক্রিয়া বল ঘ ক্রিয়াবল
১০. একটি বস্তুর ভর ৪০ কেজি। এর ওপর প্রযুক্ত বলের মান ৬০ নিউটন। ত্বরণ কত?
ক ০.৬৭ মি./সে.২ ১.৫ মি./সে.২
গ ২ মি./সে.২ ঘ ২.৫ মি./সে.২
১১. নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রের ক্ষেত্রে কোনটি প্রযোজ্য?
ক ভর = বল ত্বরণ বল = ভর ত্বরণ
গ ত্বরণ = বল ভর ঘ বল = ভরত্বরণ
১২. কোনো বস্তুর ভর ২৫ কেজি। এর ওপর একটি বল প্রযুক্ত হওয়ায় এর ত্বরণ হলো ২ মি./সে.২। প্রযুক্ত বলের মান কত ছিল?
ক ৪০ নিউটন ৫০ নিউটন
গ ৬০ নিউটন ঘ ৭০ নিউটন
১৩. ১০ কেজি ভরের একটি বস্তুর ওপর ৮০ঘ বল প্রয়োগ করলে ত্বরণ কত হবে?
ক ২ স/ং২ খ ৩ স/ং২ ৪ স/ং২ ঘ ৫ স/ং২
১৪. নিচের কোন সম্পর্কটি সঠিক?
ক ভর = বল ত্বরণ খ ত্বরণ = বল ভর
বল = ভর ত্বরণ ঘ বল = ভর/ত্বরণ
১৫. একটি বস্তুর ভর ১০ কেজি। এর ওপর একটি বল প্রযুক্ত হওয়ায় এর ত্বলন হলো ২ মি./সে.২। প্রযুক্ত বলের মান কত?
ক ১০ নিউটন ২০ নিউটন গ ৩০ নিউটন ঘ ৪০ নিউটন
১৬. নিউটনের ১ম সূত্র থেকে কোন বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা যায়?
ক ভর ও ত্বরণ খ বল ও ভর বল ও জড়তা ঘ জড়তা ও ভর
১৭. একটি বস্তুর ভর ৪০ কেজি। এর ওপর একটি বল প্রযুক্ত হওয়ায় এর ত্বরণ হলো ৪ মি./সে.২। প্রযুক্ত বলের মান কত?
ক ১২০ নিউটন খ ১২০ জুল ১৬০ নিউটন ঘ ১৬০ জুল
১৮. বল-
র. বস্তুর গতির দিক পরিবর্তন করতে পারে
রর. গতিশীল বস্তুর গতি হ্রাস করতে পারে
ররর. বস্তুর ভর পরিবর্তন করতে পারে
নিচের কোনটি সঠিক?
র ও রর খ র ও ররর গ রর ও ররর ঘ র, রর ও ররর
নিচের উদ্দীপকটি লক্ষ কর এবং ১৯ – ২১ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
মিশু ১৫ম ও ২৫ম ভরের দুটি মার্বেল নিয়ে খেলছিল।
১৯. ১ম মার্বেলটির ওপর ৪৫ নিউটন বল প্রয়োগ করলে ত্বরণ কত হবে?
ক ০.৩৩ স/ং২ ৩০০০ স/ং২ গ ৬০ স/ং২ ঘ ৬৭৫ স/ং২
২০. একই পরিমাণ বল প্রয়োগ করলে মার্বেল কোনটির ওপর দিয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করবে?
মসৃণ মাটির মেঝে খ টাইলস এর মেঝে
গ পিচ রাস্তা ঘ ইটের রাস্তা
২১. মার্বেল দুটির ক্ষেত্রে-
র. ২য়টির ঘর্ষণ বল ১মটির অপেক্ষা বেশি
রর. ২য়টির গতিজড়তা কম হবে
ররর. মসৃণ মেঝেতে দুটির গতিবেগ একই হবে
নিচের কোনটি সঠিক?
র খ র ও রর গ রর ও ররর ঘ র ও ররর
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ২২ ও ২৩নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
কোনো একটি বস্তুর ভর ২০ কেজি এবং এর উপর ২ সেকেন্ড ধরে বল প্রয়োগ করে স্থির অবস্থা থেকে ৪ মি./সেকেন্ড বেগ সম্পন্ন করা হলো।
২২. উদ্দীপকে নিউটনের কোন সূত্রের প্রয়োগ রয়েছে?
১ম খ ২য় গ ৩য় ঘ ভরবেগ
২৩. বস্তুটিতে কত নিউটন বল প্রয়োগ করা হয়েছিল?
ক ১০ খ ২০ গ ৩০ ৪০
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ কিসের কারণে হাঁটতে গেলে আমরা হোঁচট খাই?
উত্তর : জড়তার কারণে আমরা হাঁটতে গেলে হোঁচট খাই।
প্রশ্ন \ ২ \ স্থিতি জড়তা কাকে বলে?
উত্তর : স্থিতিশীল বস্তুর চিরকাল স্থির থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা স্থিতি বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম, তাকে স্থিতি জড়তা বলে।
প্রশ্ন \ ৩ \ গতি জড়তা কাকে বলে?
উত্তর : গতিশীল বস্তুর চিরকাল সমবেগে গতিশীল থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা ধর্ম তাকে গতি জড়তা বলা হয়।
প্রশ্ন \ ৪ \ ঘর্ষণ কী?
উত্তর : দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে থেকে যদি একে অপরের ওপর দিয়ে চলতে চেষ্টা করে অথবা চলতে থাকে তাহলে বস্তুদ্বয়ের স্পর্শতলে এ গতির বিরুদ্ধে যে বাধার উৎপত্তি হয় তাকে ঘর্ষণ বলে।
প্রশ্ন \ ৫ \ ঘর্ষণ বল কয়টি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর : ঘর্ষণ বল দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
প্রশ্ন \ ৬ \ লুব্রিকেন্ট কী?
উত্তর : যেসব তেল বা গ্রিজের মতো পদার্থ ঘর্ষণ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয় তাকে লুব্রিকেন্ট বলে।
প্রশ্ন্ \ ৭ \ স্যুটকেসে চাকা লাগানো থাকলে কী সুবিধা পাওয়া যায়?
উত্তর : স্যুটকেসে চাকা লাগানো থাকলে স্যুটকেস টানা অনেক সহজ হয়।
প্রশ্ন \ ৮ \ ভারী বস্তুকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরের জন্য কী ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : ভারী বস্তুকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তর করার জন্য রোলার ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন \ ৯ \ বল বিয়ারিং কী?
উত্তর : বল বিয়ারিং হচ্ছে স্টিলের ক্ষুদ্র বল।
প্রশ্ন \ ১০ \ অস্পর্শ বলের উদাহরণ দাও।
উত্তর : মাধ্যাকর্ষণ বল, চৌম্বক বল, তাড়িত চৌম্বক বল, দুর্বল নিউক্লিয় বল ও শক্তিশালী নিউক্লিয় বল অস্পর্শ বলের উদাহরণ।
প্রশ্ন \ ১১ \ চৌম্বক বল কাকে বলে?
উত্তর : দুটি চুম্বককে কাছাকাছি আনলে এরা পরস্পরের প্রতি যে বল প্রয়োগ করে এবং কোনো চুম্বক অন্য কোনো চৌম্বক পদার্থে (লোহা, নিকেল, কোবাল্ট, স্টিল ইত্যাদি) যে বল প্রয়োগ করে, তাকে চৌম্বক বল বলে।
প্রশ্ন \ ১২ \ তাড়িত চৌম্বক বল কাকে বলে?
উত্তর : দুটি আহিত (চার্জযুক্ত) কণিকার মধ্যে যে বল ক্রিয়াশীল তাকে তাড়িত চৌম্বক বল বলে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ দুর্বল নিউক্লিয় বল কী?
উত্তর : যে বল তাড়িত চৌম্বক বলের চেয়ে ১০১০ গুণ দুর্বল তাকে দুর্বল নিউক্লিয় বল বলে।
প্রশ্ন \ ১৪ \ কী দ্বারা বল পরিমাপ করা হয়?
উত্তর : বস্তুর ভর ও ত্বরণের গুণফল দ্বারা বল পরিমাপ করা হয়।
প্রশ্ন্ \ ১৫ \ নিউটনের কোন সূত্র থেকে আমরা বলের পরিমাপ করতে পারি?
উত্তর : নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র থেকে আমরা বলের পরিমাপ করতে পারি।
প্রশ্ন্ \ ১৬ \ এক নিউটন কী?
উত্তর : যে পরিমাণ বল এক কিলোগ্রাম ভরের কোনো বস্তুর ওপর প্রযুক্ত হয়ে এক মিটার/সেকেন্ড২ ত্বরণ সৃষ্টি করে তাকে এক নিউটন বলে।
প্রশ্ন \ ১৭ \ বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার কিসের আনুপাতিক?
উত্তর : বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক।
প্রশ্ন \ ১৮ \ বল কী ধরনের রাশি?
উত্তর : বল একটি ভেক্টর রাশি।
প্রশ্ন \ ১৯ \ বল, ভর ও ত্বরণের মধ্যকার সম্পর্ক কী?
উত্তর : বল, ভর ও ত্বরণের মধ্যকার সম্পর্ক হলো, বল = ভর ত্বরণ।
প্রশ্ন \ ২০ \ চুম্বকের আকর্ষণ বল কী ধরনের বল?
উত্তর : চুম্বকের আকর্ষণ বল একটি অস্পর্শ বল।
প্রশ্ন \ ২১ \ বস্তুর স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে কী করতে হয়?
উত্তর : বস্তুর স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করতে হয়।
প্রশ্ন \ ২২ \ পেন্সিল ভোঁতা হয় কিসের কারণে?
উত্তর : পেন্সিল ভোঁতা হয় ঘর্ষণের কারণে।
প্রশ্ন \ ২৩ \ নিউক্লিয়ন কী?
উত্তর : পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটন ও নিউট্রনকে একত্রে নিউক্লিয়ন বলে।
প্রশ্ন \ ২৪ \ চৌম্বক পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর : যেসব পদার্থ চুম্বককে আকর্ষণ করে তাদের চৌম্বক পদার্থ বলা হয়।
প্রশ্ন \ ২৫ \ তাড়িত চৌম্বক বল চার্জযুক্ত কণিকার সাথে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত?
উত্তর : তাড়িত চৌম্বক বল দুটি চার্জযুক্ত কণিকার গুণফলের সমানুপাতিক এবং এদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ থেমে থাকা বাস হঠাৎ চলতে শুরু করলে বাসযাত্রী পেছনের দিকে হেলে পড়েন কেন?
উত্তর : থেমে থাকা বাস হঠাৎ চলতে শুরু করলে বাসযাত্রী পেছনের দিকে হেলে পড়েন জড়তার কারণে।
বাস যখন থেমে থাকে তখন যাত্রীর শরীরও স্থির থাকে। কিন্তু হঠাৎ বাস চলতে শুরু করলে যাত্রীদের শরীরের বাসসংলগ্ন অংশ গতিশীল হয় কিন্তু শরীরের উপরের অংশ জড়তার জন্য স্থির থাকে এবং পেছনে হেলে পড়েন।
প্রশ্ন \ ২ \ গাড়ি চালনার সময় চালককে সিটবেল্ট পরিধান করতে হয় কেন?
উত্তর : গাড়ি চালানোর সময় চালককে জড়তার কারণে সিটবেল্ট পরিধান করতে হয়।
সিটবেল্ট ছাড়া চলমান গাড়ির চালক যদি হঠাৎ ব্রেক প্রয়োগ করেন, তবে জড়তার কারণে তিনি সামনে ঝুঁকে পড়বেন এবং স্টিয়ারিং ও উইন্ড স্ক্রিনে আঘাত পাবেন। এ কারণে চালককে সিটবেল্ট পরিধান করে নিতে হয়।
প্রশ্ন্ \ ৩ \ ট্রাফিক সিগন্যালে সবুজ বাতির পর লাল বাতি না জ্বলে হলুদ বাতি জ্বলে কেন?
উত্তর : আমরা দেখতে পাই সবুজ বাতির পর সরাসরি লাল বাতি না জ্বলে হলুদ বাতি জ্বলে। এর কারণ সবুজ বাতির পর লালবাতি জ্বলে উঠলে দ্রুতগামী গাড়িকে থামার জন্য হার্ডব্রেক ধরতে হতো এবং এতে জড়তার কারণে চালক এবং আরোহীদের আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকত। হলুদ বাতি দেখে চালক ধীরে ধীরে থামার প্রস্তুতি নিতে পারেন।
প্রশ্ন \ ৪ \ নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে কীভাবে বলের সংজ্ঞা পাওয়া যায়।
উত্তর : নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে আমরা জানি যে, কোনো বস্তুই নিজের থেকে এর অবস্থান পরিবর্তন করতে চায় না। বস্তু স্থির থাকলে স্থির থাকতে চায়, গতিশীল থাকলে গতিশীল থাকতে চায়। বস্তুর অবস্থান পরিবর্তনের জন্য বাইরে থেকে কিছু একটা প্রয়োগ করতে হয়। যা বস্তুর অবস্থান পরিবর্তন করে বা করতে চায়, তাকেই বল বলা হয়। এভাবে নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে বলের গুণগত সংজ্ঞা পাওয়া যায়।
প্রশ্ন \ ৫ \ পেশিজ বলের দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : পেশিজ বলের দুটি উদাহরণ হলো :
১. এক বালতি পানি বহন করতে গেলে বালতির হাতল ধরে বল প্রয়োগ করতে হয়। এটি পেশিজ বলের উদাহরণ।
২. স্কুল ব্যাগ ওঠাতে চাইলে এর হাতলে ধরতে হয় এবং বল প্রয়োগ করতে হয়। এটি পেশিজ বল।
প্রশ্ন \ ৬ \ দৈনন্দিন জীবনে ঘর্ষণের তিনটি সুবিধা উলেখ কর।
উত্তর : দৈনন্দিন জীবনে ঘর্ষণের তিনটি সুবিধা হলো :
১. ঘর্ষণ আছে বলেই আমরা হাত দিয়ে খাতা, কলম, বইসহ যাবতীয় জিনিস ধরতে পারি।
২. গাড়ি বা সাইকেলের টায়ার ও ব্রেকের ঘর্ষণের ওপর আমাদের জীবন নির্ভরশীল।
৩. বাতাসের ঘর্ষণ আছে বলেই প্যারাসুট ব্যবহার করে কেউ বিমান থেকে নিরাপদে নামতে পারে।
প্রশ্ন \ ৭ \ ঘর্ষণের জন্য আমাদের অসুবিধা হয় এমন দুটি উদাহরণ উলেখ কর।
উত্তর : ঘর্ষণের জন্য আমাদের কম অসুবিধা হয় না। যন্ত্রপাতির যে সকল অংশ পরস্পরের সাথে ঘষা খায় সেগুলো ঘর্ষণের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ফলে সময়ের সাথে সাইকেল, রিকশা ও গাড়ির টায়ার ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। পেনসিল দিয়ে লিখতে থাকলে এর মাথা ভোঁতা হয়ে যায়।
প্রশ্ন \ ৮ \ শিশুদের খেলার স্লাইড মসৃণ থাকে কেন?
উত্তর : অনেক স্কুলে বা পার্কে শিশুদের খেলার জন্য স্লাইড থাকে। এটাকে খুব মসৃণ করে তৈরি করা হয়, যাতে শিশুরা সহজে পিছলে নামতে পারে।
প্রশ্ন \ ৯ \ যন্ত্রপাতির গতিশীল অংশে তেল বা গ্রিজ দেওয়া থাকে কেন?
উত্তর : তেল বা গ্রিজ তলগুলোকে মসৃণ করে এবং ঘর্ষণকে কমিয়ে দেয়। এ কারণে যন্ত্রপাতির গতিশীল অংশগুলো তেল বা গ্রিজ দ্বারা আবৃত থাকে যা ঘর্ষণকে কমায় এবং যন্ত্রপাতিকে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
প্রশ্ন \ ১০ \ দেয়াশলাইয়ের সাহায্যে আমরা কীভাবে আগুন পাই?
উত্তর : কোনো দেয়াশলাইয়ের কাঠিকে দেয়াশলাইয়ের বাক্সের পাশে টানা হয়, তখন দেয়াশলাইয়ের কাঠির মাথা এবং অমসৃণ তলের মধ্যকার ঘর্ষণের ফলে দেয়াশলাইয়ের কাঠির মাথার রাসায়নিক দ্রব্যাদি জ্বলে ওঠে। এভাবে আমরা আগুন পাই।
প্রশ্ন \ ১১ \ জুতোর সোল ঢেউ খেলানো থাকে কেন?
উত্তর : জুতো ও রাস্তার মধ্যবর্তী ঘর্ষণ বাড়ানোর জন্য জুতোর সোল ঢেউ খেলানো থাকে। এতে জুতো ভালোভাবে রাস্তাকে আকড়ে ধরে রাখতে পারে।
প্রশ্ন \ ১২ \ গাড়ির টায়ারে সুতো থাকে কেন?
উত্তর : গাড়ির টায়ারে সুতো থাকে যাতে টায়ার সড়ককে ভালোভাবে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারে এবং যাতে ভিজা রাস্তা থেকে গাড়ি পিছলে পড়ে না যায়।
প্রশ্ন \ ১৩ \ একটি বস্তুর ভর ২০ কেজি। এর ওপর একটি বল প্রযুক্ত হওয়ায় এর ত্বরণ হলো ২ মি/সে২। প্রযুক্ত বলের মান কত ছিল?
উত্তর : আমরা জানি,
ঋ = সধ এখানে,
= ২০ কেজি ২ মি/সে২ বস্তুর ভর, স = ২০ কেজি
= ৪০ নিউটন ত্বরণ, ধ = ২ মি/সে২
উত্তর : ৪০ নিউটন বল, ঋ = ?
প্রশ্ন \ ১৪ \ ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বলের বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর : ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বলের বৈশিষ্ট্য :
১. ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বল সবসময়ই দুটি ভিন্ন বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে-কখনই একই বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে না।
২. প্রতিক্রিয়া বলটি ততক্ষণই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্রিয়া বলটি থাকবে। ক্রিয়া থেমে গেলে প্রতিক্রিয়াও থেমে যাবে।
৩. এ ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বলদ্বয় বস্তুগুলোর স্থিরাবস্থায় বা গতিশীল অবস্থায় বা সাম্যাবস্থায় থাকা বা একে অপরের সংস্পর্শে থাকা বা না থাকার ওপর নির্ভরশীল নয়Ñ সর্বত্রই বর্তমান থাকে।
প্রশ্ন \ ১৫ \ নিউটনের গতিসূত্রগুলো বিবৃত কর।
উত্তর : নিউটনের গতিসূত্রগুলো হলোÑ
প্রথম সূত্র : বাহ্যিক কোনো বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থিরই থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সুষম দ্রæতিতে সরলপথে চলতে থাকবে।
দ্বিতীয় সূত্র : বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক।
তৃতীয় সূত্র : প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।
প্রশ্ন \ ১৬ \ ব্যাট দিয়ে যখন কোনো বলকে আঘাত করা হয় তখন কী ঘটে?
উত্তর : ব্যাট দিয়ে যখন বলকে আঘাত করা হয়, তখন ব্যাটটি ক্রিকেট বলের ওপর একটি বল প্রয়োগ করে। এটি ক্রিয়া। ক্রিকেট বলটিও ব্যাটের ওপর একটি বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে। এটি প্রতিক্রিয়া।
প্রশ্ন \ ১৭ \ ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : যখনই আমরা কোনো বল প্রয়োগ করি, তখনই একটি বিপরীতমুখী বলের উদ্ভব হয়। বল দুটির একটিকে আমরা ক্রিয়া বলি, অপরটিকে বলি প্রতিক্রিয়া। স্যার আইজ্যাক নিউটন বলেছেন যে, এ ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সর্বদা সমান ও বিপরীতমুখী। তিনি তার গতিবিষয়ক তৃতীয় সূত্রে বলেছেন ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’।
অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন -১ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
স্বপ্না বাসে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা যাচ্ছিল। বাসটির ভর ছিল ১৪০০শম এবং এটি ৪ মি/সে২ ত্বরণে চলছিল। চলন্ত বাসটিতে হঠাৎ ড্রাইভার ব্রেক চাপলে স্বপ্নাসহ যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল। আবার বাসটি যখন চলতে শুরু করল তখন তারা পিছনের দিকে হেলে পড়লো।
ক. স্পর্শ বল কাকে বলে?
খ. বল বলতে কী বুঝায়?
গ. বাসটির ওপর ক্রিয়াশীল বলের মান নির্ণয় কর।
ঘ. যাত্রীরা প্রথমে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লেও পরবর্তীতে পিছনে হেলে পড়ার কারণ বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যে বল কেবল দুটি বস্তুর ভৌত সংস্পর্শে এসে পরস্পরের ওপর ক্রিয়া করে তাকে স্পর্শ বল বলে।
খ. যা স্থির বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে তাকে গতিশীল করে বা করতে চায় এবং যা গতিশীল বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে তার গতির পরিবর্তন করে বা করতে চায় তাকে বল বলে। নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে বল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বল একটি ভেক্টর রাশি। কারণ এর মান ও দিক উভয়ই আছে। বলকে ঋ দ্বারা সূচিত করা হয়। বলের একক হলো নিউটন।
গ. এখানে, বাসের ভর, স = ১৪০০ শম
ত্বরণ, ধ = ৪ মি.সে২
বল, ঋ = ?
আমরা জানি, ঋ = সধ
= ১৪০০ শম ৪ মি.সে২
= ৫৬০০ শম মি.সে২
= ৫৬০০ নিউটন।
সুতরাং বাসটির ওপর ক্রিয়াশীল বলের মান ৫৬০০ নিউটন।
ঘ. যাত্রীরা প্রথমে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লেও পরবর্তীতে পেছনে হেলে পড়ার কারণ জড়তা।
সকল বস্তুর জড়তা থাকে। স্থিতিশীল বস্তুর চিরকাল স্থির থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা স্থিতি বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম, তাকে স্থিতি জড়তা এবং গতিশীল বস্তুর চিরকাল সমবেগে গতিশীল থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা ধর্ম তাকে গতি জড়তা বলা হয়।
যেহেতু গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে গতিশীল থাকতে চায়। এজন্য চলন্ত অবস্থায় যাত্রীদের শরীরের নিচের অংশ গাড়ির সাথে চলতে শুরু করে। কিন্তু শরীরের উপরের অংশ বাস সংলগ্ন না হওয়ায় ড্রাইভার ব্রেক চাপলে যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
আবার স্থিতিশীল বস্তু চিরকাল স্থির থাকতে চায়। বাস যখন থেমে থাকে তখন যাত্রীর শরীর স্থির থাকে। কিন্তু হঠাৎ চলতে শুরু করলে যাত্রীদের শরীরের বাসসংলগ্ন অংশ গতিশীল হয় কিন্তু শরীরের উপরের অংশ জড়তার জন্য স্থির থাকে এবং পেছনে হেলে পড়ে।
সুতরাং গতি জড়তার জন্য যাত্রীরা প্রথমে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লেও পরবর্তীতে স্থিতি জড়তার জন্য পেছনে হেলে পড়ে।
প্রশ্ন -২ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ত‚র্য দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে। একদিন সে বাসায় একটি ভারী টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে টেবিলকে টানতে শুরু করলো। কিন্তু চেয়ারসহ সে নিজেই টেবিলের দিকে সরে গেল। পরদিন সে একটি মার্বেলকে রুমের মসৃণ মেঝেতে নির্দিষ্ট বলে গড়িয়ে দিল। এরপর বাসার বাইরে পিচের রাস্তায় একই মার্বেলকে একই বলে গড়িয়ে দিল। তখন এটি তার চেয়ে কম দূরত্ব অতিক্রম করলো।
ক. নিউটনের গতিবিষয়ক দ্বিতীয় সূত্রটি কী?
খ. জড়তা বলতে কী বুঝায়?
গ. চেয়ারসহ ত‚র্য টেবিলের দিকে সরে আসলো কেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মার্বেলটির দুইটি স্থানে অতিক্রান্ত দূরত্ব ভিন্ন হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. নিউটনের গতিবিষয়ক দ্বিতীয় সূত্রটি হলো, বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক।
খ. বস্তু যে অবস্থায় আছে চিরকাল সেই অবস্থায় থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা সেই অবস্থা বজায় রাখতে চাওয়ার ধর্মকে জড়তা বলে।
সকল বস্তুর জড়তা থাকে। স্থিতিশীল বস্তুর চিরকাল স্থির থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা স্থিতি বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম, তাকে স্থিতি জড়তা এবং গতিশীল বস্তুর চিরকাল সমবেগে গতিশীল থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা ধর্ম তাকে গতি জড়তা বলা হয়।
গ. প্রতিক্রিয়া বল ও ঘর্ষণ বলের কারণে চেয়ারসহ ত‚র্য টেবিলের দিকে সরে আসল। নিউটনের গতিবিষয়ক তৃতীয় সূত্র, ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’। এ সূত্র অনুযায়ী ত‚র্য ভারী টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে টেবিলকে টানতে শুরু করায় টেবিলের দিক হতে তার দ্বারা প্রযুক্ত টানের সমান এবং বিপরীতমুখী একটি টান অনুভব করবে।
অপরপক্ষে, নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্র থেকে পাই, ঋ = সধ। এই সূত্রানুসারে ত্বরণের মান বল এবং ভরের অনুপাতের সমান। সুতরাং ভর অত্যন্ত বেশি হলে ত্বরণের মান খুব ক্ষুদ্র হয়। ত‚র্য টেবিলের ওপর যে টান প্রয়োগ করে তা টেবিলকে নড়াবার জন্য বা গতিশীল করার জন্য যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে টেবিল না নড়ার পেছনে আর একটি কারণ হলো ঘর্ষণ বল। ঘর্ষণ বল বস্তুর ভরের ওপর নির্ভর করে। টেবিলটি অনেক ভারী হওয়ার কারণে এটি প্রচণ্ড মানের ঘর্ষণ বলের সম্মুখীন হয় যা অতিক্রম করা ত‚র্যের প্রযুক্ত বলের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এক্ষেত্রে ত‚র্য টেবিলের ওপর যে বল প্রয়োগ করে তা হলো ক্রিয়া বা ক্রিয়াবল। ফলে টেবিলও তার ওপর প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে যা ক্রিয়ার বিপরীতমুখী এবং ক্রিয়াবলের সমান। এক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া বলের মান স্পষ্টত ঘর্ষণ বল অপেক্ষা বেশি ছিল। অর্থাৎ ঋ = সধ সূত্রানুসারে ত‚র্য এবং তার দেহ সংলগ্ন চেয়ারের ভর খুব বেশি না হওয়ার কারণে চেয়ারসমেত তার দেহে ত্বরণ তথা গতির সঞ্চার হয়েছে। এ কারণেই চেয়ারসহ ত‚র্য টেবিলের দিকে সরে আসল।
ঘ. মার্বেলটির দুইটি স্থানে অতিক্রান্ত দূরত্ব ভিন্ন হওয়ার কারণ হলো ঘর্ষণ বলের তারতম্য। পৃষ্ঠ যত বেশি মসৃণ, ঘর্ষণ তত কম।
ঘর্ষণ বল শুধু চলমান বস্তুকেই থামিয়ে দেয় না, স্থির বস্তুকেও গতিশীল হতে বাধা দেয়। কোনো অমসৃণ বা খসখসে পৃষ্ঠে কোনো মার্বেলকে গতিশীল করা তাই কষ্টকর।
প্রত্যেক তলে কিছু উঁচু নিচু খাঁজ থাকে যা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। এ উঁচু নিচু খাঁজ যত বেশি হবে অর্থাৎ তল যত বেশি অমসৃণ হবে, এক তলের ওপর দিয়ে অপর তলের গতি তত বেশি বাধা পাবে, সুতরাং ঘর্ষণ বল তত বেশি হবে।
রুমের মেঝে পিচের রাস্তার চেয়ে অনেক বেশি মসৃণ। তাই মসৃণ তলে মার্বেলটি অমসৃণ তলের চেয়ে বেশি দূর পর্যন্ত গেছে। অর্থাৎ রুমের মেঝ থেকে পিচের রাস্তার ঘর্ষণ বল বেশি। ঘর্ষণ বল বেশি হওয়ায় পিচের রাস্তায় মার্বেলটি কম দূরত্ব অতিক্রম করবে। অতএব, যেহেতু রুমের মেঝে এবং পিচের রাস্তার মসৃণতা এক রকম নয়। মসৃণতার ভিন্নতার কারণে মার্বেলটির দুটি স্থানে অতিক্রান্ত দূরত্ব ভিন্ন হয়।