নবম-দশম/এসএসসি রসায়ন চতুর্থ অধ্যায় পর্যায় সারণি এর পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি,জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো।
এসএসসি রসায়ন চতুর্থ অধ্যায় পর্যায় সারণি
চতুর্থ অধ্যায় পর্যায় সারণি পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি
– পর্যায় সারণি : বিভিন্ন মৌলের ক্রমপরিবর্তন দেখানোর প্রয়াসে মৌলসমূহকে যে সারণিতে সাজানো হয়, তাকে পর্যায় সারণি বলা হয়। ১৭৮৯ সালে বিজ্ঞানী ল্যাভয়শিয়ে ভৌত অবস্থার উপর ভিত্তি করে, ১৮৬৪ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী Rb নিউল্যান্ড মৌলসমূহের ভর অনুযায়ী, ১৮৬৯ সালে রুশ বিজ্ঞানী ডিমিট্রি ম্যান্ডেলিফ পারমাণবিক ভর অনুসারে ও ১৯১৩ সালে বিজ্ঞানী হেনরি মোসলে পারমাণবিক সংখ্যার উপর ভিত্তি করে পর্যায় সারণি প্রস্তাব করেছেন যা নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান পর্যায় সারণির রূপ লাভ করেছে।
– পর্যায় : পর্যায় সারণির আনুভ‚মিক সারিগুলোকে পর্যায় বা Period বলে। বর্তমান পর্যায় সারণিতে মোট ৭টি পর্যায় আছে। প্রতিটি পর্যায়ের মৌলগুলোর ধর্ম অভিন্ন তবে ক্রমপরিবর্তনশীল হয়। যেমন একই পর্যায়ে যতই ডানদিক যাওয়া যায়, ততই মৌলসমূহের মধ্যে ধাতুধর্ম হ্রাস পায় ও পরমাণুর আকার ছোট হয়।
– শ্রেণি বা গ্রুপ : পর্যায় সারণির লম্ব স্তম্ভগুলোকে বা উল্লম্ব সারিগুলোকে শ্রেণি বা Group বলে। সদৃশ ধর্মের মৌলগুলো একটি শ্রেণিতে স্থান পায়। বর্তমান পর্যায় সারণিতে মোট ১৮টি গ্রুপ আছে। আগে পর্যায় সারণির এ ১৮টি গ্রুপকে রোমান হরফের সংখ্যা ও I থেকে VIII দ্বারা প্রকাশ করা হতো। সপ্তম শ্রেণির পরের শ্রেণিকে শূন্য শ্রেণি বলা হতো। পূর্বের এ শ্রেণিকরণকে সর্বশেষ পর্যায় সারণির সংস্করণে ১৮টি গ্রুপে ভাগ করে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে যা IUPAC কর্তৃক গৃহীত হয়েছে।
– ডোবেরাইনারের ত্রয়ীসূত্র : রাসায়নিক ধর্মের সাদৃশ্য আছে এরকম তিনটি মৌলের মধ্যবর্তী মৌলটির পারমাণবিক ভর, অন্য দুটি মৌলের পারমাণবিক ভরের গড় মানের সমান হয়। যেমন Li, Na এবং K মৌল তিনটির মধ্যে রাসায়নিক ধর্মের মিল আছে। Li এবং K-এর পারমাণবিক ভর যথাক্রমে ৭ এবং ৩৯। অতএব Na-এর পারমাণবিক ভর (৭ + ৩৯)÷ ২ = ৪৬÷২ = ২৩। কিন্তু সূত্রটি খুব কমসংখ্যক মৌলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ায় বিশেষ গুরুত্ব লাভ করতে পারেনি। এরপর ১৮৬৪ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী Rb নিউল্যান্ড তার বিখ্যাত অষ্টক তত্ত¡ প্রকাশ করেন।
– নিউল্যান্ডের অষ্টক তত্ত¡ : মৌলগুলোকে ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক ভর অনুসারে সাজালে কোনো একটি মৌলের ধর্মের সাথে পরবর্তী অষ্টম মৌলের ধর্মের সাদৃশ্য দেখা যাবে। এটি অষ্টক তত্ত¡ নামে পরিচিত। যেমন :
Li(7) Be (9.02) B (10.8) C(12) N(14) O(16) F(19) Na(23) Mg(24)| । এক্ষেত্রে Li থেকে শুরু করে অষ্টম মৌল Na-এর ধর্মের এবং Be থেকে শুরু করে অষ্টম মৌল Mg-এর ধর্মের সাদৃশ্য রয়েছে। এভাবে প্রথম দিকের কতগুলো মৌলের ক্ষেত্রে এ সূত্র প্রযোজ্য হলেও ঈধ(২০) -পরবর্তী মৌলগুলোর ক্ষেত্রে এ সূত্র খাটে না।
– ম্যান্ডেলিফের পর্যায় সূত্র : ১৮৬৯ সালে রাশিয়ান রসায়নবিদ ডিমিট্রি ম্যান্ডেলিফ আবষ্কিৃত মৌলসমূহের পারমাণবিক ভরকে ভিত্তি ধরে পর্যায় সারণিতে উচ্চক্রমানুসারে সাজিয়ে দেখেন একই ধর্মবিশিষ্ট মৌলসমূহ একই কলামে স্থান পায়। তাই তিনি এভাবে সন্নিবেশিত মৌলসমূহের ক্ষেত্রে একটি সূত্র প্রতিষ্ঠা করেন। সূত্রটি ছিল “যদি মৌলসমূহকে ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক ভর অনুসারে সাজানো হয়, তবে তাদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।”
১৯১৩ সালে বিজ্ঞানী হেনরি মোসলে পারমাণবিক সংখ্যা আবিষ্কারের পর ম্যান্ডেলিফ তার পর্যায় সূত্র সংশোধন করেন। ম্যান্ডেলিফের সংশোধিত পর্যায় সূত্র হলো, “মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক সংখ্যা অনুসারে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।” এই পর্যায় সূত্রটিই আধুনিক পর্যায় সারণির ভিত্তি। এ কারণে ম্যান্ডেলিফকে পর্যায় সারণির Rbক বলা হয়।
– পর্যায় সারণির ভিত্তি : পর্যায় সারণি সৃষ্টির সময় মৌলসমূহের পারমাণবিক ভরকে ভিত্তি ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে পারমাণবিক সংখ্যাকে ভিত্তি ধরা হয়। বর্তমানে একথা স্বীকৃত যে পর্যায় সারণির সত্যিকার ভিত্তি হচ্ছে মৌলসমূহের ইলেকট্রন বিন্যাস। প্রতিনিধিত্বমূলক মৌলসমূহের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ স্তরে যতটি ইলেকট্রন বিদ্যমান, তা থেকে পর্যায় সারণিতে মৌলটির অবস্থান কত নম্বর গ্রুপে তা হিসাব করা যায়। আর ইলেকট্রন বিন্যাসে যতটি স্তর আছে মৌলটির অবস্থান তত নম্বর পর্যায়ে।
– পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে পর্যায় সারণিতে কয়েকটি মৌলের অবস্থান নির্ণয় : সাধারণভাবে কোনো মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ শক্তিস্তরে যে কয়টি ইলেকট্রন থাকে, মৌলটির অবস্থান তত নম্বর গ্রুপে হয়। তবে দুইটি ও তিনটি শক্তিস্তরে বিন্যস্ত যে সকল মৌলের সর্বশেষ কক্ষপথে দুটির বেশি ইলেকট্রন থাকে তাদের ক্ষেত্রে সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে উপস্থিত ইলেকট্রন সংখ্যার সাথে দশ (১০) যোগ করে গ্রুপ সংখ্যা নির্ণয় করা হয়। আবার, সবশেষ কক্ষপথে ৮টি ইলেকট্রন থাকলে সেই মৌল গ্রুপ-১৮ তে স্থান পায়।
নিচে একটি ছকের মাধ্যমে কিছু উদাহরণ দেখানো হলো :
মৌল ইলেকট্রন বিন্যাস শক্তিস্তরের সংখ্যা (ঢ) সবচেয়ে বাইরের কক্ষে মোট ইলেকট্রন সংখ্যা (ণ) পর্যায় সারণিতে পর্যায় (ঢ) অবস্থান
মৌল | ইলেকট্রন বিন্যাস | শক্তিস্তরের সংখ্যা (X) | সবচেয়ে বাইরের কক্ষে মোট ইলেকট্রন সংখ্যা (Y) | পর্যায় সারণিতে পর্যায় (X) | অবস্থান (Y + 10) |
1H | K-1 | 1 | 1 | 1 | 1 |
8O | K-2, L-6 | 2 | 6 | 2 | 16 |
11Na | K-2, L-8, M-1 | 3 | 1 | 3 | 1 |
15P | K-2, L-8, M-5 | 3 | 5 | 3 | 15 |
17Cl | K-2, L-8, M-7 | 3 | 7 | 3 | 17 |
18Ar | K-2, L-8, M-8 | 3 | 8 | 3 | 18 |
20Ca | K-2, L-8, M-8, N-2 | 4 | 2 | 4 | 2 |
– ভৌত ধর্মের সাদৃশ্য : পর্যায় সারণিতে বিভিন্ন মৌলের ঘনত্ব, গলনাঙ্K স্ফুটনাঙ্K তাপ ও তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা ইত্যাদি ভৌত ধর্মগুলোর পর্যায়বৃত্তি দেখা যায়। পর্যায় সারণির একই পর্যায়ে কঠিন মৌলগুলোর ঘনত্ব পারমাণবিক ভর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তারপর আবার কমতে থাকে। একই পর্যায়ে বামদিক থেকে ডানদিকে গেলে ধাতব গুণ কমতে থাকে, ফলে তড়িৎ পরিবাহিতা ক্রমশ হ্রাস পায়। অপরদিকে একই গ্রুপে যত উপর থেকে নিচে যাওয়া যায়, মৌলসমূহের ধাতু ধর্ম তত বৃদ্ধি পায়।
– রাসায়নিক ধর্মে সাদৃশ্য : পর্যায় সারণির একই শ্রেণির মৌলগুলোর রাসায়নিক ধর্ম একরকম হয়। যেমন : ১ গ্রুপের Li, Na, K Rb এবং Cs এর রাসায়নিক ধর্মে অনেক মিল দেখা যায়। আবার, ১৭ গ্রুপের F, Cl, Br এবংI এর মধ্যে রাসায়নিক ধর্মে খুবই সাদৃশ্য আছে। সাধারণভাবে দেখা যায় একই শ্রেণির উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায়, মৌলগুলোর রাসায়নিক ধর্ম নিয়মিতভাবে তত বাড়ে বা কমে।
– ক্ষার ধাতু : পর্যায় সারণিতে গ্রুপ-১এ অবস্থিত মৌলসমূহ যেমন : Li, Na, K Rb, Cs এবং Fr কে ক্ষার ধাতু (alkali metal) বলা হয়। এরা প্রত্যেকেই পানির সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন গ্যাস ও ক্ষার দ্রবণ তৈরি করে। এরা সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে অবস্থিত একমাত্র ইলেকট্রনটি প্রদান করে আয়নিক যৌগ (লবণ) তৈরি করে।
– মৃৎক্ষার ধাতু : গ্রুপ-২-এ অবস্থিত Be থেকে শুরু করে Ra পর্যন্ত মৌলসমূহকে মৃৎক্ষার ধাতু বলা (alkaline earth metal) হয়। এদের ধর্ম অনেকটা ক্ষার ধাতুর মতোই। এদের অক্সাইডসমূহ পানিতে ক্ষারীয় দ্রবণ তৈরি করে। এরাও সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরের ২টি ইলেকট্রন প্রদান করে আয়নিক যৌগ (লবণ) তৈরি করে। এই মৌলসমূহ বিভিন্ন যৌগ হিসেবে মাটিতে থাকে।
– অবস্থান্তর মৌল : পর্যায় সারণিতে গ্রুপ-৩ থেকে গ্রুপ-১১ পর্যন্ত গ্রুপে অবস্থিত মৌলসমূহ অবস্থান্তর মৌল (transition metal) হিসেবে পরিচিত। অবস্থান্তর মৌলসমূহের নিজস্ব বর্ণ রয়েছে। এরা ধাতব পদার্থ হিসেবে প্রচুর ব্যবহৃত হয়। সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন প্রদান করে আয়নিক যৌগ তৈরি করে। কোনো পর্যায়ের অবস্থান্তর মৌলসমূহের মধ্যে বামদিকের মৌল থেকে ডানদিকের মৌল দ্বারা গঠিত যৌগের বৈশিষ্ট্য আয়নিক থেকে সমযোজীতে পরিবর্তিত হয়।
– মুদ্রা ধাতু : পর্যায় সারণিতে গ্রুপ-১১-তে অবস্থিত মৌল-তামা (Cu), রুপা (Ag ও সোনা (Au) এদের ধাতব বৈশিষ্ট্যসহ উজ্জ্বলতা বিদ্যমান। ঐতিহাসিকভাবে এসব ধাতু দ্বারা মুদ্রা তৈরি করে তাদেরকে ক্রয়-বিক্রয় ও অন্যান্য প্রয়োRbে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এদেরকে মুদ্রা ধাতু (coinage metals) বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে এরা অবস্থান্তর মৌল।
– হ্যালোজেন : গ্রুপ-১৭ তে অবস্থিত মৌল F, Cl, Br, I এবং At এই ৫টি মৌলকে একত্রে হ্যালোজেন halogen বলে। হ্যালোজেন শব্দের অর্থ লবণ গঠনকারী salt maker)। এরা সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে একটি ইলেকট্রন গ্রহণের মাধ্যমে হ্যালাইড আয়ন তৈরি করে। হ্যালোজেনসমূহের মূল উৎস সামুদ্রিক লবণ। এরা নিজে নিজেই ইলেকট্রন ভাগাভাগির (electron sharing) মাধ্যমে দ্বি-মৌল অণু তৈরি করে।
– নিষ্ক্রিয় গ্যাস : পর্যায় সারণিতে গ্রুপ-১৮-তে অবস্থিত মৌলসমূহকে নিষ্ক্রিয় মৌল বলে। কারণ এদের সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তর প্রয়োRbীয় সংখ্যক ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকায় এরা ইলেকট্রন আদান-প্রদান বা শেয়ারের মাধ্যমে সাধারণত যৌগ গঠন করে না।
– পরমাণুর আকার : পরমাণুর আকার একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম। যে কোনো পর্যায়ে বামদিক থেকে ডানদিকে পরমাণুর আকার হ্রাস পায় এবং একই গ্রুপে উপর থেকে নিচের দিকে পারমাণবিক আকার বৃদ্ধি পায়।
– আয়নিকরণ শক্তি : একই পর্যায়ে বামদিক থেকে ডানদিকে মৌলসমূহের আয়নিকরণ শক্তি হ্রাস পায়।
– অপধাতু বা উপধাতু : যে মৌলের ধাতু ও অধাতু উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে তাকে অপধাতু বা উপধাতু বলা হয়। যেমন : বোরন (B), সিলিকন (Si), আর্সেনিক (As), টেলুরিয়াম (Te) ইত্যাদি।
– সক্রিয় ধাতু ও অধাতু : পর্যায় সারণির সর্ববামের ধাতুগুলো সক্রিয় ধাতু। যেমন : Na, K ইত্যাদি। অন্যদিকে, পর্যায় সারণির ডানদিক থেকে ২য় গ্রুপে রয়েছে সক্রিয় অধাতু। যেমন, F, Cl ইত্যাদি।
– রাসায়নিক ক্রিয়াশীলতা : পর্যায় সারণির বামদিকের গ্রুপগুলোর উপর থেকে যত নিচের দিকে নামা যায়, মৌলগুলোর রাসায়নিক সক্রিয়তা তত বাড়তে থাকে। কিন্তু পর্যায় সারণির ডানদিকে অবস্থিত একই গ্রুপের মৌলগুলোর ক্ষেত্রে উপর থেকে যত নিচের দিকে নামা যায়, মৌলগুলোর রাসায়নিক সক্রিয়তা তত কমতে থাকে। যেমন, ১৭ গ্রুপের হ্যালোজেন মৌলগুলোর মধ্যে ঋ-এর সক্রিয়তা সবচেয়ে বেশি এবং ও-এর সক্রিয়তা সবচেয়ে কম।
চতুর্থ অধ্যায় পর্যায় সারণি জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ আধুনিক পর্যায় সারণিতে কয়টি গ্রুপ আছে?
উত্তর : আধুনিক পর্যায় সারণিতে মোট ১৮টি গ্রুপ বা শ্রেণি আছে।
প্রশ্ন \ ২ \ পর্যায় সারণির উদ্ভাবক কে?
উত্তর : পর্যায় সারণির উদ্ভাবক রুশ বিজ্ঞানী ডিমিট্রি ম্যান্ডেলিফ।
প্রশ্ন \ ৩ \ ম্যান্ডেলিফের পর্যায় সারণির ভিত্তি কী ছিল?
উত্তর : ম্যান্ডেলিফের পর্যায় সারণির ভিত্তি ছিল মৌলসমূহের পারমাণবিক ভর।
প্রশ্ন \ ৪ \ পর্যায় সারণির তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম মৌলের নাম কী?
উত্তর : পর্যায় সারণির তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম মৌলের সোডিয়াম।
প্রশ্ন \ ৫ \ হ্যালোজেনগুলো পর্যায় সারণিতে কোন শ্রেণিতে অবস্থান করে?
উত্তর : হ্যালোজেনগুলো পর্যায় সারণিতে ১৭ নং শ্রেণিতে অবস্থান করে।
প্রশ্ন \ ৬ \ পর্যায় সারণির দ্বিতীয় পর্যায়ের মৌলগুলোর মধ্যে কোনগুলো ধাতু আর কোনগুলো অধাতু?
উত্তর : পর্যায় সারণির দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট আটটি মৌল আছে। যেমন Li, Be, B, C, N, O, F এবং Ne। এ পর্যায়ের মৌলগুলোর মধ্যে Li এবং Be ধাতু, বাকি সবগুলো অধাতু।
প্রশ্ন \ ৭ \ পর্যায় সারণির তৃতীয় পর্যায়ে কয়টি মৌল আছে?
উত্তর : পর্যায় সারণির তৃতীয় পর্যায়ে আটটি মৌল আছে।
প্রশ্ন \ ৮ \ পর্যায় সারণির সবচেয়ে ছোট পর্যায় কোনটি?
উত্তর : পর্যায় সারণির প্রথম পর্যায় সবচেয়ে ছোট।
প্রশ্ন \ ৯ \ পর্যায় সারণির পঞ্চম পর্যায়ে কয়টি মৌল আছে?
উত্তর : পর্যায় সারণির পঞ্চম পর্যায়ে ১৮টি মৌল আছে।
প্রশ্ন \ ১০ \ ক্ষার ধাতু কাদের বলা হয়?
উত্তর : পর্যায় সারণির ১ শ্রেণির মৌলসমূহকে ক্ষার ধাতু বলা হয়।
প্রশ্ন \ ১১ \ নাইট্রোজেন পর্যায় সারণির কোন গ্রুপে অবস্থিত?
উত্তর : নাইট্রোজেন পর্যায় সারণির ১৫ গ্রুপে অবস্থিত।
প্রশ্ন \ ১২ \ পারমাণবিক সংখ্যা কী?
উত্তর : কোনো মৌলের প্রোটন সংখ্যাকে তার পারমাণবিক সংখ্যা বলে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ পর্যায় সংখ্যা কী?
উত্তর : কোনো মৌলের যতটি শক্তিস্তরে ইলেকট্রন বিন্যাস থাকে, শক্তিস্তরের সে সংখ্যাই হলো পর্যায় সংখ্যা।
প্রশ্ন \ ১৪ \ নিকৃষ্ট ধাতু কোনগুলো?
উত্তর : অধিক সক্রিয় ধাতু (যেমন- লোহা, দস্তা প্রভৃতি) কে নিকৃষ্ট ধাতু (রহভবৎরড়ৎ সবঃধষং) বলে।
প্রশ্ন \ ১৫ \ গ্রুপ সংখ্যা কী?
উত্তর : সাধারণভাবে সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে অবস্থিত (কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত) ইলেকট্রন সংখ্যাই কোনো নির্দিষ্ট পর্যায়ে উক্ত মৌলের গ্রুপ সংখ্যা।
প্রশ্ন \ ১৬ \ ক্ষার ধাতু পানির সাথে কীরূপ বিক্রিয়া দেখায়?
উত্তর : ক্ষার ধাতু পানির সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন গ্যাস ও ক্ষার দ্রবণ তৈরি করে।
প্রশ্ন \ ১৭ \ হ্যালোজেন কী?
উত্তর : গ্রুপ-১৭ তে অবস্থিত মৌল-F, Cl, Br, I এবং At এই ৫টি মৌলকে একত্রে হ্যালোজেন বলে।
প্রশ্ন \ ১৮ \ হ্যালোজেনসমূহের মূল উৎস কী?
উত্তর : হ্যালোজেনসমূহের মূল উৎস সামুদ্রিক লবণ।
প্রশ্ন \ ১৯ \ কোনটি ব্যতীত রসায়ন চর্চা অসম্ভÍব?
উত্তর : পর্যায় সারণি ব্যবহার ব্যতীত বর্তমান যুগে রসায়ন চর্চা অবসম্ভব।
প্রশ্ন \ ২০ \ সিলিকন কী ধরনের মৌল?
উত্তর : সিলিকন এক ধরনের অপধাতব মৌল, যেটি ধাতু ও অধাতু উভয়ের বৈশিষ্ট্য বহন করে।
চতুর্থ অধ্যায় পর্যায় সারণি অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ পর্যায় সারণির একই গ্রুপের মৌলগুলোর ধর্ম একই রকমের হয় কেন?
উত্তর : একই গ্রুপের মৌলসমূহের ইলেকট্রন বিন্যাস একই রকম হয় বলে তাদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম একই রকম হয়।
মৌলসমূহের ইলেকট্রন বিন্যাসের ওপর তাদের রাসায়নিক এবং ভৌত ধর্ম নির্ভর করে। যেহেতু একই গ্রুপের মৌলসমূহের পরমাণুতে সর্ব বহিঃস্থ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন বিন্যাস একই রকমের হয়, তাই তাদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম একই রকমের হয়।
প্রশ্ন \ ২ \ পর্যায় সারণির উপকারিতা কী?
উত্তর : পর্যায় সারণির উপকারিতা নিম্নরূপ :
১. সদৃশধর্মী মৌলগুলো পর্যায় সারণির একই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কোনো একটি মৌলের ধর্ম এবং এর যৌগগুলোর ধর্ম জানা থাকলে অন্যান্য মৌলগুলোর ধর্ম এবং তাদের যৌগগুলোর ধর্ম সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।
২. মৌলগুলোর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম তাদের পারমাণবিক সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যায়ক্রমে পুনরাবৃত্ত হয়। তাই পর্যায় সারণিতে কোনো মৌলের অবস্থান জানা থাকলে ঐ মৌলটির বিভিন্ন ধর্ম যেমনÑ গলনাঙ্ক বা স্ফুটনাঙ্K রাসায়নিক সক্রিয়তা, ধাতব এবং অধাতব ধর্ম ইত্যাদি অনুমান করা যায়।
প্রশ্ন \ ৩ \ ৬৪/২৯ Cu মৌলটি পর্যায় সারণির কোথায় বসবে?
উত্তর : যেহেতু মৌলটির পারমাণবিক সংখ্যা ২৯, অতএব মৌলটির ইলেকট্রন বিন্যাস ২, ৮, ১৮, ১। এখানে মোট শক্তিস্তরের সংখ্যা ৪, তাই মৌলটি পর্যায় সারণিতে চতুর্থ পর্যায়ে অবস্থান করে। আবার মৌলটির সবচেয়ে বাইরের কক্ষে একটিমাত্র ইলেকট্রন আছে। অতএব, মৌলটি পর্যায় সারণির ১১ গ্রুপভুক্ত মৌল।
প্রশ্ন \ ৪ \ পর্যায় সারণির যেকোনো পর্যায়ের মৌলসমূহের পারমাণবিক আকার কীভাবে পরিবর্তিত হয়?
উত্তর : যে কোনো পর্যায়ে যতই ডানদিকে যাওয়া যায়, অর্থাৎ পারমাণবিক সংখ্যা যতই বাড়ে, পরমাণুর আকার ততই হ্রাস পায়। এর কারণ হচ্ছে একই পর্যায় পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে একটি করে ইলেকট্রন যুক্ত হয়,
কিন্তু ইলেকট্রনের স্তর সংখ্যা বাড়ে না। পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির অর্থ নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক আধানের বৃদ্ধি। ফলে ইলেকট্রনসমূহ নিউক্লিয়াস কর্তৃক আরো জোরে আকৃষ্ট হয়। এতে পরমাণুর ব্যাসার্ধ হ্রাস পায়।
প্রশ্ন \ ৫ \ অ্যাক্টিনাইডস বলতে কী বোঝ?
উত্তর : পর্যায় সারণির সপ্তম পর্যায়ের ৩নং গ্রুপে Ac এর পর Th থেকে Lr পর্যন্ত ১৫টি মৌল আছে। এ মৌলগুলোকে অ্যাক্টিনাইডস বলে। এ মৌলগুলোর মধ্যে Ac, Th, Pa, U প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। বাকি মৌলগুলো কৃত্রিমভাবে পরীক্ষাগারে তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যায়ের মৌলগুলো তেজস্ক্রিয়।
প্রশ্ন \ ৬ \ পর্যায় সারণিতে নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর একই গ্রুপ অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দেখাও।
উত্তর : He, Ne, Ar, Kr, Xe এবং Rnএ ৬টি নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এদের ধর্মের মধ্যে অনেক মিল আছে। যেমন :
১. সকল মৌলগুলো গ্যাসীয় এবং এক পরমাণুক।
২. এরা সহজে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। তাই এদের যোRbী শূন্য এবং এদের নিষ্ক্রিয় মৌল বলে।
৩. He ছাড়া সব গ্যাসের পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষে ৪টি ইলেকট্রন আছে। একমাত্র He পরমাণুর ক্ষেত্রে বাইরের কক্ষে ২টি ইলেকট্রন থাকে।
অতএব, যুক্তিসঙ্গত কারণেই পর্যায় সারণিতে নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলো একই গ্রুপে অবস্থান করে।
প্রশ্ন \ ৭ \ অবস্থান্তর মৌলের দুইটি প্রধান বৈশিষ্ট্য লিখ।
উত্তর : অবস্থান্তর মৌলের প্রধান দুইটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
র. অবস্থান্তর মৌলসমূহের নিজস্ব বর্ণ রয়েছে।
রর. অবস্থান্তর মৌালসমূহ ধাতব পদার্থের ন্যায় সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন প্রদান করে আয়নিক যৌগ তৈরি করে।
প্রশ্ন \ ৮ \ পর্যায় সারণির সুবিধাগুলো কী কী?
উত্তর : রসায়নশাস্ত্র অধ্যয়ন ও প্রয়োগকারীদের Rb্য পর্যায় সারণি একটি অপরিহার্য হাতিয়ার। পর্যায় সারণিতে সন্নিবেশিত মৌলের অবস্থানের মাধ্যমে তার ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম সম্পর্কে আমরা সহজেই ধারণা করতে পারি। বাহ্যিক দিক থেকে পর্যায় সারণিতে ছকে মৌলসমূহকে সন্নিবেশ করা হয়েছে মনে হলেও বাস্তবে এর তাৎপর্য অপরিসীম।
প্রশ্ন \ ৯ \ গাঢ় H2SO4 কে নিরুদক বলা হয় কেন?
উত্তর : গাঢ় H2SO4 এর সাথে পানি মেশালে প্রচুর তাপ নির্গত হয়। পানির প্রতি গাঢ় ঐ২ঝঙ৪-এর প্রবল আসক্তির কারণে তা বিভিন্ন যৌগ হতে পানি বের করে নিতে পারে। এRb্য, গাঢ় ঐ২ঝঙ৪ কে নিরুদক বলা হয়।
প্রশ্ন \ ১০ \ গ্রুপ-১ এর মৌলসমূহ একযোজী কেন?
উত্তর : গ্রুপ-১ এর মৌলগুলোর সর্ববহিঃস্থ স্তরে একটি ইলেকট্রন থাকায় এরা একযোজী।
গ্রুপ-১ এর ক্ষারধাতুগুলোর সর্ববহিঃস্থ স্তরে একটি করে ইলেকট্রন থাকায় রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় এরা ১টি ইলেকট্রন দান করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের স্থিতিশীল ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে। এRb্য, গ্রুপ-১ এর মৌলসমূহ একযোজী।