পঞ্চম অধ্যায়
মূলধনি আয়-ব্যয় প্রাক্কলন
মূলধন বাজেটিং
যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য মূলধনী ব্যয়ের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। স্থায়ী সম্পত্তিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের হাতে অসংখ্য প্রকল্প থাকে। এসব প্রকল্প থেকে সর্বোৎকৃষ্ট নির্বাচন করার প্রক্রিয়াটি হলো মূলধন বাজেটিং। প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পত্তি যেমন : জমি, দালানকোঠা, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ক্রয় থেকে শুরু করে এসব সম্পত্তির প্রতিস্থাপন, ব্যবসায়ের স¤প্রসারণ যেমন : নতুন মেশিন স্থাপন, উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিকায়ন এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের আয়-ব্যয় প্রাক্কলন করে সম্ভাব্য লাভজনকতা বিশ্লেষণ করে তদনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
মূলধন বাজেটিংয়ের গুরুত্ব
কোনো প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ বিনিয়োগ প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সঠিক দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাকে তাই মূলধন বাজেটের ওপর যথেষ্ট নির্ভর করতে হয়। মূলধন বাজেটিং অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো :
মুনাফা সংক্রান্ত : কোনো প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অর্জন ক্ষমতার ওপর মূলধন বাজেটিং এর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানকে কাক্সিক্ষত ফলাফল এনে দেয়। অপরপক্ষে ভুল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলে।
বিনিয়োগের বিশাল আকার : সম্পত্তির প্রয়োজন যদি সঠিকভাবে নির্ধারণ করা না যায় তবে এটি প্রতিষ্ঠানের জন্য মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি করে। বিনিয়োগ অত্যধিক হলে অহেতুক খরচের উদ্ভব হয়, আবার কম হলে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে মূলধন বাজেট সর্বদা বিনিয়োগের ভারসাম্য রক্ষা করে।
ঝুঁকির ভিত্তিতে : ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ সিদ্ধান্তই অনুমান নির্ভর যেমন : কত টাকা পণ্যের উৎপাদন ব্যয়, উৎপাদন পরিমাণ, বিক্রির পরিমাণ ইত্যাদি। তাই প্রতিটি বিনিয়োগের ঝুঁকি নিরূপণ এবং এর গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
মূলধন বাজেটিংয়ের প্রয়োগ
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সব ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করা হয়। স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় থেকে শুরু করে ব্যবসায় প্রসার, ব্যবসায়ের আধুনিকায়ন, স্থায়ী সম্পত্তির প্রতিস্থাপন এবং নতুন পণ্য বাজারে আনা সংক্রান্ত সকল প্রকার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিংয়ের প্রয়োগ রয়েছে। মূলধন বাজেটিং প্রয়োগের কয়েকটি জনপ্রিয় ক্ষেত্র হলো
১. স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় : কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নতুনভাবে কাজ শুরু করার জন্য বা অন্য যে কোনো কাজের জন্য নতুন স্থায়ী সম্পত্তি যেমন : ভ‚মি, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, যানবাহন ইত্যাদি ক্রয়ের ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করা হয়।
২. ব্যবসায়ের পণ্য উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে স¤প্রসারণ : যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে তার উৎপাদন পদ্ধতি বদলাতে পারে। এক্ষেত্রে নতুন যন্ত্রপাতির দামের সাথে পুরাতন উৎপাদন পদ্ধতির বদলের কারণে কী পরিমাণ পরিচালনা খরচ কমানো যায় তার মধ্যে তুলনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মূলধন বাজেটিংয়ের সাহায্যে নিতে হয়।
৩. পণ্য বৈচিত্র্যায়ণ : পুরাতন ব্যবসায়ে বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে নতুন পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এক্ষেত্রে পরিবর্তিত আয়-ব্যয় প্রাক্কলনে মূলধন বাজেটিং ব্যবহার বা প্রয়োগ করা হয়।
৪. প্রতিস্থাপন ও আধুনিকায়ন : এক্ষেত্রে পুরাতন উৎপাদন পদ্ধতির সাথে নতুন পদ্ধতির বিভিন্ন ধরনের তুলনা করা হয়। উভয়ের পরিচালনা খরচ, বাজার মূল্য, মেয়াদ শেষের মূল্য প্রভৃতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এক্ষেত্রেও মূলধন বাজেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়।
মূলধন বাজেটিংয়ের প্রক্রিয়া
মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কতগুলো ধাপ রয়েছে যেগুলো এ প্রক্রিয়াকে অধিকতর কার্যকর করতে বিশেষভাবে সহায়ক। এ ধাপগুলো তথা মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠানের নীতি ও সিদ্ধান্তের ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। প্রতিষ্ঠানের আকার, বিকল্প প্রকল্পের প্রকৃতি, এদের সংখ্যা সম্ভাব্য জটিলতা ও অসামঞ্জস্যতা প্রভৃতি বিষয়গুলোর ওপর মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ার ধাপগুলো নির্ভরশীল। মূলধন বাজেট প্রণয়নে নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে হয় :
১. নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন : মূলধন বাজেটিং পদ্ধতির প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি হলো নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন করা। এ নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন দুইভাবে হতে পারে; আন্তঃপ্রবাহ বা ঘবঃ ঈধংয ওহভষড়ি এবং বহিঃপ্রবাহ বা ঘবঃ ঈধংয ঙঁঃভষড়।ি নগদ প্রবাহের সঠিক প্রাক্কলন নির্ভর করে পণ্যের ভবিষ্যৎ বছরগুলোতে বিক্রয়মূল্য এবং কী পরিমাণ বিক্রি হবে তার ওপর। ফলে নগদ বহিঃপ্রবাহ অনুমানে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বিক্রয় অনুমানের মতো বিভিন্ন ধরনের খরচ অনুমান যেমন : চলতি খরচ, স্থায়ী খরচ ইত্যাদি পূর্বানুমানেও সাবধান থাকতে হয়।
২. বাট্টা হার নির্ধারণ : মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বাট্টার হার নির্ধারণ একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে বিবেচিত। বাট্টার হার ভিন্নতার কারণে প্রকল্পের লাভ-লোকসানের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। নগদ প্রবাহ প্রাক্কলনের পর সেগুলোকে নগদ মূল্যে রূপান্তর করতে হয় বাট্টাকরণের মাধ্যমে। বাট্টাকরণ দ্বারা ভবিষ্যৎ নগদ প্রবাহকে বর্তমান মূল্যে রূপান্তর করা হয়। সাধারণত মূলধন খরচকে মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ায় বাট্টা হার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৩. মূলধন বাজেটিং পদ্ধতির নির্বাচন ও প্রয়োগ : নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন ও বাট্টা হার নির্ধারণের পর মূলধন বাজেটিং পদ্ধতি ঠিক করতে হয়। প্রকল্পের ধরন, ঝুঁকি এবং অন্যান্য বিষয় বিচার করে সঠিক পদ্ধতি দ্বারা মূলধন বাজেটিং করতে হয়।
মূলধন বাজেটিংয়ের পদ্ধতিসমূহ
প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে সঠিক দিক-নির্দেশনা দেয়ার ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিংয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলিত আছে। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ এবং সার্বিকভাবে লাভজনক বিনিয়োগ বা প্রকল্প নির্বাচন করাই মূলধন বাজেটিং পদ্ধতিসমূহের কাজ। মূলধন বাজেটিংয়ে যে সকল পদ্ধতি রয়েছে তা হলো :
১. গড় মুনাফার হার পদ্ধতি
২. পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি
৩. নিট বর্তমান মূল্য পদ্ধতি
৪. অভ্যন্তরীণ মুনাফার হার পদ্ধতি।
১. গড় মুনাফার হার পদ্ধতি : এটি মূলধন বাজেটিংয়ের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। গড় মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদন হতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে। বিক্রয় থেকে করসহ সব খরচ বাদ দিলে পাওয়া যায় নিট মুনাফা। প্রতি বছরের প্রত্যাশিত নিট মুনাফাকে মোট বছরের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে গড় মুনাফা এবং বিনিয়োগকে ২ দ্বারা ভাগ করলে গড় বিনিয়োগ পাওয়া যায়।
সূত্র : গড় মুনাফার হার = গড় নিট মুনাফাগড় বিনিয়োগ
২. পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি : ব্যবসায় বা প্রকল্পে বিনিয়োগকৃত অর্থ কত দিনে ফেরত আসবে তা পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি নির্দেশ করে। ব্যবসায় বিনিয়োগ বা প্রকল্প থেকে আগত আন্তঃপ্রবাহগুলো যদি সমান হয় তবে বিনিয়োগকৃত টাকাকে বার্ষিক নগদ প্রবাহ দিয়ে ভাগ করলে পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করা যায়। এক্ষেত্রে প্রকল্পের ভগ্নাবশেষ (ঝধষাধমব ঠধষঁব) মূলকে বিবেচনায় আনা হয় না। অপেক্ষাকৃত অনিশ্চিত, দীর্ঘায়ু ও ঝুঁকিবহুল প্রকল্পসমূহ নির্বাচনে এ পদ্ধতি বিশেষ উপযোগী। স্বাধীন প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রকল্পের মেয়াদের চেয়ে ছোট হলে গ্রহণ ও বড় হলে বর্জন করা হয়।
সূত্র : পে-ব্যাক সময় = বিনিয়োগবার্ষিক নগদ প্রবাহ
অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-১ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
শতদল কোম্পানি সর্বদাই মূলধন বাজেটিং-এর অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে প্রকল্পের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। স¤প্রতি উক্ত কোম্পানি এর সমবিনিয়োগের দুটি প্রকল্প ‘দিবা’ ও ‘নিশি’-এর পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করতে গিয়ে ৩য় বছরে ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ যথাক্রমে ০ ও -১০ পেল। ৪র্থ বছরে উভয় প্রকল্পের নগদ প্রবাহ ২০।
ক. মূলধন বাজেটিং-এর ব্যর্থতার দায়ভার নিতে হয় কাকে?
খ. নগদ আন্তঃপ্রবাহ ও নিট মুনাফার পার্থক্য নির্ণয়কারী উপাদানটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপক হতে প্রকল্প ‘নিশি’-এর পে-ব্যাক সময় নির্ণয় কর।
ঘ. দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য শতদল কোম্পানির কোন প্রকল্পটি বেছে নেওয়া উচিত?
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মূলধন বাজেটিংয়ের ব্যর্থতার দায়ভার নিতে হয় অর্থ ব্যবস্থাপককে।
খ. নগদ আন্তঃপ্রবাহ ও নিট মুনাফার পার্থক্য নির্ণয়কারী উপাদানটি হলো অবচয়। আয়-ব্যয় প্রাক্কলন শেষে নিট নগদ প্রবাহ বা নিট মুনাফা নির্ধারণ করা হয়। মোট আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে মোট মুনাফা দিয়ে পাওয়া যায়। মোট মুনাফা থেকে কর বাদ দিলে নিট মুনাফা পাওয়া যায়। নিট মুনাফার সাথে অবচয় যোগ করলে নগদ আন্তঃপ্রবাহ পাওয়া যায়।
সুতরাং পার্থক্য নির্ণয়কারী উপাদানটি হলো অবচয়। কারণ নিট মুনাফার মোট ব্যয়ের মধ্যে অবচয় অন্তর্ভুক্ত থাকে।
গ. প্রকল্প নিশি-এর পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করার জন্য পে-ব্যাক এর সূত্র প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
‘নিশি’ প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করা হলো :
বছর নগদ প্রবাহ ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ
০-৩ ০ -১০
৪ ২০ ১০
তৃতীয় বছরে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পেতে লাগবে ১০ টাকা। কিন্তু চতুর্থ বছরে নগদ প্রবাহ ২০ টাকা। অর্থাৎ ১০ টাকা ফেরত আসতে সময় দরকার ১০২০ = ০.৫ বছর।
পে-ব্যাক সময় = ৩ বছর + ১০২০ বছর
= ৩ বছর + ০.৫ বছর
= ৩.৫ বছর।
অতএব, প্রকল্প ‘নিশি’ এর পে-ব্যাক সময় ৩.৫ বছর।
ঘ. দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ‘দিবা’ ও ‘নিশি’ দুই প্রকল্পের মধ্যে যে প্রকল্পটির পে-ব্যাক সময় কম সেই প্রকল্পটিকে শতদল কোম্পানির বেছে নেওয়া উচিত হবে।
পে-ব্যাক সময় পদ্ধতিতে যে প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় যত কম সে প্রকল্পটি তত গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়, অনুরূপভাবে যে প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় যত বেশি সে প্রকল্পটি তত বেশি অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। উদ্দীপকে শতদল কোম্পানির উভয় প্রকল্পের নগদ প্রবাহ অসমান। সেজন্য ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ ব্যবহার করে পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করা হয়েছে। ‘দিবা’ প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় হলো তৃতীয় বছর। কারণ তৃতীয় বছরেই ‘দিবা’ প্রকল্পের নগদ অর্থ সম্পূর্ণ ফেরত আসে বলে তৃতীয় বছরে নগদ প্রবাহ ০। আবার ‘নিশি’ প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় ৩.৫ বছর। প্রকল্পে বিনিয়োগকৃত টাকা কত দিনে ফেরত আসবে পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি তা নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে ‘দিবা’ প্রকল্পটি থেকে ‘নিশি’ প্রকল্পের তুলনায় পে-ব্যাক সময় ০.৫ বছর বা ৬ মাস কম। অর্থাৎ দিবা প্রকল্পে ৬ মাস আগে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে।
সুতরাং, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য শতদল কোম্পানির ‘দিবা’ প্রকল্পকে বেছে নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন-২ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
শ্যাম্পু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘স্যাম্পী লিঃ’ ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা, রুচি প্রভৃতি বিবেচনা করে বড় সাইজের বোতলের পাশাপাশি মিনি প্যাক, মাঝারি প্যাক ও ক্ষুদ্রাকৃতির বিকল্প কন্ডিশনার তৈরির জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে চায়। আয়-ব্যয় প্রাক্কলন করে দেখা যায় ৫ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে প্রাথমিক বিনিয়োগ ৫ কোটি টাকা এবং বিক্রয়ের পরিমাণ যথাক্রমে ৭০ লক্ষ, ১.৪ কোটি, ২ কোটি, ২.৫ কোটি ও ১.৬ কোটি টাকা। অন্যান্য চলতি খরচ বিক্রয়ের ৪০% এবং কর ৩০%।
ক. মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ায় বাট্টা হার হিসেবে ব্যবহার হয় কোনটি?
খ. মূলধন বাজেটিং অনুমাননির্ভর কেন?
গ. উদ্দীপকের আলোকে প্রকল্পটির গড় মুনাফার হার নির্ণয় কর।
ঘ. ‘স্যাম্পী লিঃ’ কোম্পানির বিনিয়োগ ক্ষেত্রটির জন্য মূলধন বাজেটিং-এর গুরুত্ব মূল্যায়ন কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ায় মূলধন খরচকে বাট্টা হার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
খ. ভবিষ্যতের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে মূলধন বাজেটিং অনুমাননির্ভর হয়। দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তে সর্বদা ব্যবসায়ে ঝুঁকি থাকে। কারণ সব সময় আনুমানিক হারে বিক্রয় কিংবা পণ্যের উৎপাদন নাও হতে পারে। সে কারণেই ঝুঁকির গ্রহণযোগ্যতা যাচাই এবং ঝুঁকির নিরূপণে মূলধন বাজেটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গ. স্যাম্পী লিঃ-এর প্রকল্পটির গড় মুনাফার হার নির্ণয়ের জন্য গড় মুনাফার হার সূত্রের প্রয়োগ প্রয়োজন।
স্যাম্পী লিঃ-এর প্রকল্পটির গড় মুনাফার হার নির্ণয় করা হলো :
পরিমাণ (লাখ টাকায়)
১ম বছর ২য় বছর ৩য় বছর ৪র্থ বছর ৫ম বছর
বিক্রয় ৭০ ১৪০ ২০০ ২৫০ ১৬০
বাদ : চলতি খরচ
(বিক্রয়ের ৪০%)
২৮
৫৬
৮০
১০০
৬৪
মোট মুনাফা ৪২ ৮৪ ১২০ ১৫০ ৯৬
বাদ : কর ৩০% ১২.৬ ২৫.২ ৩৬ ৪৫ ২৮.৮
নিট মুনাফা ২৯.৪ ৫৮.৮ ৮৪ ১০৫ ৬৭.২
আমরা জানি,
গড় মুনাফা হার = গড় নিট মুনাফা গড় বিনিয়োগ ১০০
এখানে,
গড় নিট মুনাফা = (২৯.৪ + ৫৮.৮ + ৮৪ + ১০৫ + ৬৭.২) লাখ টাকা৫ বছর
= ৩৪৪.৪ লাখ টাকা৫ বছর
= ৬৮.৮৮ লাখ টাকা।
গড় বিনিয়োগ = বিনিয়োগ২
= ৫ কোটি২
= ২.৫ কোটি।
সুতরাং, গড় মুনাফা হার = ৬৮.৮৮ লক্ষ২.৫ কোটি
=০২৭৫৫ বা ২৭.৫৫%
অতএব, স্যাম্পী লিঃ প্রকল্পটি থেকে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ২৭.৫৫% হারে গড় মুনাফা পাবে।
ঘ. মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করে স্যাম্পী লিঃ যথার্থ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।
মূলধন বাজেটিং অর্থায়নের সাফল্যের চাবিকাঠি। প্রতিষ্ঠানের জন্য মূলধন বাজেটিং বাস্তবসম্মত ও সঠিক হওয়া আবশ্যক। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সবক্ষেত্রেই মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করা হয়। স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় থেকে শুরু করে ব্যবসায় প্রসার, ব্যবসায় আধুনিকায়ন, স্থায়ী সম্পত্তির প্রতিস্থাপন, নতুন পণ্য বাজারে ছাড়া সংক্রান্ত বিনিয়োগসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তে মূলধন বাজেটিং জড়িত। উদ্দীপকে স্যাম্পী লিঃ কোম্পানির মূল লক্ষ্য মুনাফা অর্জন। আর মূলধন বাজেটিংয়ের মাধ্যমে লাভের সম্ভাবনা যাচাই করে মুনাফা অর্জন নিশ্চিত করা যায়। এছাড়া স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়, সংযোজন, আধুনিকায়ন এবং প্রতিস্থাপন প্রভৃতির সিদ্ধান্তের জন্য মূলধন বাজেটিং গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। কারণ বড় আকারের বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে যদি ভুল হয় তবে তা সংশোধনের আর সুযোগ থাকে না। তাই এ বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের ভুলের কারণে স্যাম্পী লিমিটেডকে বিশাল অঙ্কের মাশুলও দিতে হতে পারে। কারণ তারা যদি অভিজাত কোনো এলাকায় মিনিপ্যাক সামগ্রী সরবরাহ করে থাকে তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ মিনিপ্যাক সামগ্রী নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরাই বেশি ব্যবহার করে থাকে। তাই এরূপ দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের জন্য মূলধন বাজেটিং অধিক গুরুত্বপূর্ণ। নতুবা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সুতরাং, ‘স্যাম্পী’ লিমিটেড কোম্পানির বিনিয়োগ ক্ষেত্রটি বিশাল আকারের বলে কোম্পানির জন্য অবশ্যই মূলধন বাজেটিং গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন-৩ নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আমিন ট্রেডার্স-৪,০০,০০০ টাকা দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের বিনিয়োগ করার কথা ভাবছেন। এমতাবস্থায় তিনি ‘শৈলী’ ও ‘শোভা’ নামক দুটি প্রকল্পের পাঁচ বছরের আয়-ব্যয় প্রাক্কলন করে নিচের তথ্যাদি পানঃÑ [স. বো. ’১৫]
প্রকল্প নগদ প্রবাহ (টাকা)
২০১৫ ২০১৬ ২০১৭ ২০১৮ ২০১৯
শৈলী ১,৫৫,০০০ ১,৭০,০০০ ১,০০,০০০ ১,৫০,০০০ ১,৬৫,০০০
শোভা ১,৩৫,০০০ ২,০০,০০০ ১,৩০,০০০ ১,৫০,০০০ ১,২০,০০০
ক. কী থেকে প্রতিষ্ঠানে নগদ আন্তঃপ্রবাহ ঘটে? ১
খ. অর্থায়নের সাফল্যের চাবিকাঠি কী? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. আমিন ট্রেডার্স-এর ‘শৈলী’ প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় নির্ণয় কর। ৩
ঘ. দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ‘আমিন ট্রেডার্স’-এর কোন প্রকল্পটি গ্রহণ করা উচিত বলে তুমি মনে কর? যুক্তি দাও। ৪
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বিক্রয় থেকে প্রতিষ্ঠানে নগদ আন্তঃপ্রবাহ ঘটে।
খ. মূলধন বাজেটিং অর্থায়নের সাফল্যের চাবিকাঠি। চলমান কেনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় শুরু করার পর উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন পড়ে। আর উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের প্রয়োজন থাকায় মূলধন বাজেটিংয়ের মাধ্যমে নতুন মেশিন ক্রয় করে পণ্যের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়।
গ. আমিন ট্রেডার্স-এর ‘শৈলী’ প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করার জন্য পে-ব্যাক এর সূত্র প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
বিনিয়োগ প্রকল্প মূল্যায়নের জন্য বিনিয়োগ পরিশোধ সময় পদ্ধতি হলো জনপ্রিয়, বহুল ব্যবহৃত ও সহজ পদ্ধতি। মূলধন বাজেটিংয়ের যে পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবসায়ে বিনিয়োগকৃত অর্থ কত দিনে ফেরত আসবে তা জানা যায় তাকে পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি বলে। একে বিনিয়োগ মূল্যায়নের প্রাচীনতম পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা হয়।
শৈলী প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় নিম্নরূপ :
বছর নগদ প্রবাহ ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ
০ ৪,০০,০০০ ৪,০০,০০০
২০১৫ ১,৫৫,০০০ Ñ ২,৪৫,০০০
২০১৬ ১,৭০,০০০ ৭৫,০০০
২০১৭ ১,০০,০০০ ২৫,০০০
২০১৮ ১,৫০,০০০ ১,৭৫,০০০
২০১৯ ১,৬৫,০০০ ৩,৪০,০০০
৩য় বছরে অর্থাৎ ২০১৭ সালে আন্তঃপ্রবাহ ১,০০,০০০ টাকা, কিন্তু প্রারম্ভিক বিনিয়োগ ফিরে পেতে মাত্র ৭৫,০০০ টাকা দরকার।
পে-ব্যাক সময় = ৩ বছর + (৪০০০০০ ৩৭৫০০০)১০০০০০ বছর
= ৩ বছর + ২৫০০০১০০০০০ বছর
= ৩ বছর + ০.২৫ বছর
= ৩.২৫ বছর
অতএব, আমিন ট্রেডার্স এর শৈলী প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় হলো ৩.২৫ বছর।
ঘ. দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য ‘আমিন ট্রেডার্স’ শৈলী ও শোভা প্রকল্পের মধ্যে যার পে-ব্যাক সময় কম হবে সেটি গ্রহণ করাই যুক্তিযুক্ত হবে।
পে-ব্যাক সময় পদ্ধতিতে যে প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় যত কম সে প্রকল্পটি তত গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। অনুরূপভাবে যে প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় যত বেশি সে প্রকল্পটি তত বেশি অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
নিম্নে আমিন ট্রেডার্স এর শোভা প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করা হলো :
বছর নগদ প্রবাহ ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ
০ ৪,০০,০০০ ৪,০০,০০০
২০১৫ ১,৩৫,০০০ Ñ ২,৬৫,০০০
২০১৬ ২,০০,০০০ ৬৫,০০০
২০১৭ ১,৩০,০০০ ৬৫,০০০
২০১৮ ১,৫০,০০০ ২,১৫,০০০
২০১৯ ১,২০,০০০ ৩,৩৫,০০০
৩য় বছরে অর্থাৎ ২০১৭ সালে আন্তঃপ্রবাহ ১,৩০,০০০ টাকা, কিন্তু প্রারম্ভিক বিনিয়োগ ফিরে পেতে মাত্র ৬৫,০০০ টাকা দরকার।
পে-ব্যাক সময় = ৩ বছর + (৪০০০০০ ৩৩৫০০০)১৩০০০০ বছর
= ৩ বছর + ৬৫০০০১৩০০০০ বছর
= ৩ বছর + ০.৫ বছর
= ৩.৫ বছর
অতএব, শোভা প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় হলো ৩.৫ বছর।
উদ্দীপকের আমীন ট্রেডার্স-এর শৈলী প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় ৩.২৫ এবং শোভা প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় ৩.৫ বছর। যেহেতু শৈলী প্রকল্পের তুলনায় শোভা প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় ০.২৫ বেশি। অর্থাৎ শোভা প্রকল্প বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পেতে শৈলী প্রকল্পের চেয়ে ৩ মাস বেশি সময় নেয়।
সুতরাং, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ‘আমিন ট্রেডার্স’-এর জন্য শোভা প্রকল্পটি গ্রহণ করা উচিত হবে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন -৪ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব আব্বাস ৫০,০০০ টাকা একটি প্রকল্পে বিনিয়োগের চিন্তা করছেন, যা থেকে আগামী ৬ বছর যথাক্রমে ১০,০০০ টাকা, ১৫,০০০ টাকা, ২০,০০০ টাকা, ১০,০০০ টাকা, ২০,০০০ টাকা এবং ৩০,০০০ টাকা পাওয়া যাবে। [কাজ -১ ; পৃষ্ঠা-৫৫]
ক. মুদি দোকানের জন্য ফ্রিজ কেনা কোন ধরনের সিদ্ধান্ত? ১
খ. মূলধন বাজেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ ব্যাখ্যা কর। ২
গ. প্রকল্পটির পে-ব্যাক সময় নির্ণয় কর। ৩
ঘ. প্রকল্পটি গ্রহণযোগ্য কিনা তা পে-ব্যাক সময় পদ্ধতির ভিত্তিতে আলোচনা কর। ৪
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মুদি দোকানের জন্য ফ্রিজ কেনা একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত।
খ. দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সব ক্ষেত্রেই মূলধন বাজেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন এবং বাট্টা হার নির্ধারণের পর মূলধন বাজেটিং পদ্ধতি নির্বাচন করতে হয়। বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্প মূল্যায়নের জন্য মূলধন বাজেটিং এর বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। প্রত্যেকটি পদ্ধতির কিছু সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্পের ধরন, ঝুঁকি এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে সঠিক পদ্ধতিটি নির্বাচন করতে হয়।
গ. প্রকল্পটির পে-ব্যাক সময় নির্ধারণের জন্য পে-ব্যাক সময়ের সূত্র ব্যবহার করতে হবে।
প্রকল্পটির পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করা হলো :
বছর নগদ প্রবাহ ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ
০ ৫০,০০০ ৫০,০০০
১ ১০,০০০ ৪০,০০০
২ ১৫,০০০ ২৫,০০০
৩ ২০,০০০ ৫,০০০
৪ ১০,০০০ ৫,০০০
৫ ২০,০০০ ২৫,০০০
৬ ৩০,০০০ ৫৫,০০০
উপরের ছকে লক্ষণীয় যে ১ম, ২য় ও ৩য় বছরে বিনিয়োগকৃত টাকার মোট ফেরত আসে ৪৫,০০০ টাকা। ৪র্থ বছরের আন্তঃপ্রবাহ ১০,০০০ টাকা কিন্তু প্রারম্ভিক বিনিয়োগ ফেরত মাত্র ৫,০০০ টাকা দরকার। অতএব ৫,০০০ টাকা ফেরত আসতে সময় দরকার ৫০০০১০০০০ = ০৫ বছর।
পে-ব্যাক সময় = ৩ বছর + ৫০০০১০০০০ বছর
= (৩ + ০৫) বছর
= ৩৫ বছর
অতএব, প্রকল্পটির পে-ব্যাক সময় ৩৫ বছর।
ঘ. পে-ব্যাক সময় মূলধন বাজেটিং এর একটি অন্যতম সহজ ও জনপ্রিয় পদ্ধতি।
পে-ব্যাক সময় পদ্ধতিতে যে প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় যত কম সে প্রকল্পটি তত গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। অনুরূপভাবে যে প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় যত বেশি সে প্রকল্পটি তত বেশি অগ্রণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ প্রকল্পে বিনিয়োগকৃত টাকা কত দিনে ফেরত আসবে পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি তা নির্দেশ করে। উদ্দীপকের প্রকল্পটির মেয়াদ ৬ বছর এবং বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০,০০০ টাকা। এর বিপরীতে ৬ বছর অসমান হারে নগদ আন্তঃপ্রবাহ পাওয়া যাবে। এ তথ্যগুলো দিয়ে প্রকল্পটির পে-ব্যাক সময় নির্ণিতি হয়েছে ৩৫ বছর। এ পে-ব্যাক সময় নির্দেশ করছে প্রকল্পে বিনিয়োগকৃত টাকা ৩৫ বছরে ফেরত আসবে। যেহেতু প্রকল্পটির মেয়াদ ৬ বছর এবং পে-ব্যাক সময় তার থেকে ২.৫ বছর কম সেহেতু প্রকল্পটি লাভজনক। অর্থাৎ ৩৫ বছরের মধ্যেই প্রকল্পটির বিনিয়োগ ফেরত আসবে এবং মেয়াদকালের বাকি সময় থেকে প্রাপ্ত অর্থ লাভ হিসেবে গোণ্য হবে।
সুতরাং, জনাব আব্বাসের প্রকল্পটি গ্রহণযোগ্য।
প্রশ্ন-৫ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রাহাত বেভারেজ লিমিটেড একটি জুস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। বাজারে উক্ত কোম্পানির প্রস্তুতকৃত জুসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কোম্পানিটি আর একটি নতুন উৎপাদন ইউনিট সংযোজনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল। কিন্তু নতুন ইউনিটটি সংযোজন করা কোম্পানির জন্য কতটা লাভজনক হবে তা মূল্যায়ন না করে কোম্পানি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল না। এজন্য কোম্পানিটি উক্ত প্রকল্পের সম্ভাব্য নগদ আন্তঃপ্রবাহকে নগদ বহিঃপ্রবাহের সাথে তুলনা করে সম্ভাব্য লাভজনকতা বিশ্লেষণ করে নতুন ইউনিটটি চালু করল।
ক. কোনটি অর্থায়নের সাফল্যের চাবিকাঠি? ১
খ. বাট্টা হার প্রয়োজন কেন? ২
গ. নতুন উৎপাদন ইউনিট প্রকল্পটি মূল্যায়নে রাহাত বেভারেজ লিমিটেড কোন ধরনের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার সাহায্য নিয়েছে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. রাহাত বেভারেজ লিমিটেডের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ কতটা যৌক্তিক বলে তুমি মনে কর। ৪
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মূলধন বাজেটিং অর্থায়নের সাফল্যের চাবিকাঠি।
খ. ভবিষ্যতের নগদ প্রবাহকে নগদ মূল্যে রূপান্তরের জন্য বাট্টা হার প্রয়োজন। অর্থের সময়মূল্য ধারণা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ বছরগুলোতে আগত নগদ প্রবাহের পরিমাণ সমান হলেও সেগুলোর বর্তমান মূল্য সমান নয়। নগদ প্রবাহ যত দেরিতে পাওয়া যাবে, তার বর্তমান মূল্য তত কম হবে। বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্প থেকে যেহেতু বেশ কয়েক বছর ধরে নগদ প্রবাহ পাওয়া যায়, সেহেতু মূলধন বাজেটিংয়ের মাধ্যমে সঠিক বিনিয়োগ সুযোগ নিতে হলে ভবিষ্যতে আগত নগদ প্রবাহগুলোর বর্তমান মূল্য নির্ণয় করতে হয়।
গ. নতুন উৎপাদন ইউনিট প্রকল্পটি মূল্যায়নে রাহাত বেভারেজ লিমিটেড মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ার সাহায্য নিয়েছে।
বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটুকু লাভজনক হবে বা আদৌ লাভজনক হবে কিনা সেজন্য মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়। এজন্য মূলধন বাজেটিংকে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া বলা হয়। উদ্দীপকে রাহাত বেভারেজ কোম্পানির জুসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন উৎপাদন ইউনিট প্রকল্পটি সংযোজনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। এরূপ ব্যবসায় স¤প্রসারণ একটি দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত। কোম্পানিটির জুসের চাহিদা বাজারে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য নতুন উৎপাদন ইউনিট সংযোজন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবসায় স¤প্রসারণ নিশ্চিত করেছে। ব্যবসায় স¤প্রসারণের ফলাফল দীর্ঘদিন ভোগ করা যায়। এক্ষেত্রে নতুন পণ্যের আয়ুষ্কাল, পণ্যের উৎপাদন খরচ, বাজার চাহিদা, পরিচালনা খরচ ও সম্ভাব্য আয় প্রাক্কলন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা মূলধন বাজেটিং-এর অন্তর্গত।
সুতরাং রাহাত বেভারেজ লিমিটেড-এর ব্যবসায় স¤প্রসারণের দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত গ্রহণে মূলধন বাজেটিং-এর সার্থক প্রয়োগ ঘটেছে।
ঘ. রাহাত বেভারেজ লিমিটেড বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোম্পানিটি মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ায় যে সহায়তা গ্রহণ করেছে তা অত্যন্ত যৌক্তিক।
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সবক্ষেত্রেই মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করা হয়। স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় থেকে শুরু করে ব্যবসায় প্রসার, ব্যবসায় আধুনিকায়ন, স্থায়ী সম্পত্তির প্রতিস্থাপন, নতুন পণ্য বাজারে আনা সংক্রান্ত বিনিয়োগসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তে মূলধন বাজেটিং জড়িত। উদ্দীপকে রাহাত বেভারেজ লিমিটেডের নতুন উৎপাদন ইউনিট চালু একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যয়বহুল প্রকল্প। এরূপ প্রকল্প লাভজনক না হলে কোম্পানিটিকে বড় অংকের মাশুল দিতে হতো। তাই কোম্পানিটি মূলধন বাজেটিংয়ের মাধ্যমে তার নতুন উৎপাদন ইউনিটটি চালুর লাভজনকতা যাচাই করেছে। দীর্ঘমেয়াদি সম্পত্তিতে বিনিয়োগের পর উক্ত সম্পত্তি থেকে ভবিষ্যতে মোট কত পরিমাণ আয় আসতে পারে তা হিসাব করে তা থেকে প্রাথমিক বিনিয়োগ বাদ দিলে বিনিয়োগের লাভজনকতা যাচাই করা যায়। প্রকল্পটির সার্বিক দিক বিবেচনা করে লাভজনক বিবেচিত হওয়ায় কোম্পানি উক্ত প্রকল্পটিতে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু রাহাত বেভারেজ লিমিটেড যদি মূলধন বাজেটিং না করেই প্রকল্পটি চালু করত তাহলে তাকে ব্যবসায়িক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হতো।
সুতরাং রাহাত বেভারেজ লিমিটেড তার নতুন উৎপাদন ইউনিটটি চালু করার পূর্বে মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ার সহায়তা গ্রহণ করা অত্যন্ত যৌক্তিক কাজ করেছে।
প্রশ্ন-৬ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ইমু ও শিমু প্রত্যেকে ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তাদের গ্রামে দুইটি তাঁতশিল্প কারখানা স্থাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ইমু কোনো প্রকার আয়-ব্যয়ের প্রাক্কলন না করেই তার কারখানাটি চালু করলেন। এর ফলে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বছর ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় ৫ম বছর তিনি তার কারখানা বন্ধ করে দেন। কিন্তু শিমু তার তাঁতশিল্প প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের প্রাক্কলন করে দেখলেন ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বছর উক্ত প্রকল্প থেকে তার আয় হবে যথাক্রমে ২০,০০০ টাকা, ২৫,০০০ টাকা, ৩০,০০০ টাকা ও ২৫,০০০ টাকা। শিমু আশা করেছিলেন ৪ বছরের মধ্যে তার বিনিয়োগকৃত টাকা উঠে আসবে। তিনি তার প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করে সন্তোষজনক ফলাফল না পাওয়ায় প্রকল্পটি চালু না করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
ক. মূলধন বাজেটিং কোন ধরনের প্রক্রিয়া? ১
খ. গড় মুনাফার হার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা ব্যাখ্যা কর। ২
গ. ইমুর তাঁতশিল্প কারখানাটি কেন বন্ধ হয়ে গেল? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. তাঁতশিল্প কারখানা চালু না করে শিমু যথার্থ বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন বিশ্লেষণ কর। ৪
৬নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মূলধন বাজেটিং একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া।
খ. গড় মুনাফার হার পদ্ধতি মূলধন বাজেটিং পদ্ধতির একটি সহজ পদ্ধতি। এই পদ্ধতি নগদ প্রবাহের পরিবর্তে নিট মুনাফা ব্যবহার করে। গড় মুনাফার হার পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ পদ্ধতিতে সব নগদ প্রবাহ সমমূল্যের বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ এ পদ্ধতি অর্থের সময়মূল্য বিবেচনা করে না। এ জন্য অনেক ক্ষেত্রেই এটি গ্রহণযোগ্যতা হারায়।
গ. ইমু মূলধন বাজেটিং না করে তার তাঁতশিল্প কারখানাটি চালু করায় পরপর চার বছর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলেই কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেল।
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মূল উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। যেকোনো ব্যবসায়ী দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য মূলধন বাজেটিংয়ের মাধ্যমে সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করে। যার মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের চাকা সচল থাকে। তাই মুনাফা অর্জনে মূলধন বাজেটিংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। উদ্দীপকে ইমু যদি মূলধন বাজেটিং বিশ্লেষণ করতেন তাহলে উক্ত কারখানা থেকে প্রাপ্ত সম্ভাব্য আয় সম্পর্কে একটি ধারণা পেতেন। অর্থাৎ ইমু সম্ভাব্য আয়সমূহকে বাট্টাকরণ প্রক্রিয়ায় নগদ মূল্যে রূপান্তর করে প্রকল্পটির নগদ আন্তঃপ্রবাহকে নগদ বহিঃপ্রবাহের সাথে তুলনা করে প্রকল্পটির লাভজনকতা বিশ্লেষণ করতে পারতেন। সেক্ষেত্রে তিনি সহজেই বুঝতে পারতেন যে তার তাঁতশিল্প কারখানাটি কোনো লাভজনক বিনিয়োগ প্রকল্প নয় এবং প্রকল্পটিতে বিনিয়োগ করা থেকে তিনি বিরত থাকতেন।
সুতরাং মূলধন বাজেটিং না করেই তাঁতশিল্প কারখানাটিতে বিনিয়োগ করায় পর পর চার বছর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বিধায় তিনি কারখানাটি বন্ধ করতে বাধ্য হন।
ঘ. শিমু মূলধন বাজেটিং-এর মাধ্যমে পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করে তার প্রকল্পের সন্তোষজনক ফলাফল না পাওয়ায় প্রকল্পটি চালু না করার সিদ্ধান্তটি যথার্থ হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের জন্য যে কোনো দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়া প্রয়োগ করতে হয়। কারণ মূলধন বাজেটিং না করে প্রতিষ্ঠানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে যদি কোনো কারণবশত সিদ্ধান্তটি ভুল হয় তাহলে তা সংশোধন করার কোনো সুযোগ থাকে না। তাই প্রতিষ্ঠানটিকে এই ভুলের জন্য বিরাট অংকের মাশুল দিতে হয়। উদ্দীপকে শিমুর তাঁতশিল্প কারখানাটি চালু একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত। তিনি মূলধন বাজেটিংয়ের পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রকল্পটির লাভজনকতা বিশ্লেষণ করেছেন। তার প্রকল্পের লাভজনকতা বিশ্লেষণ ফলাফল ছিল নিম্নরূপ :
বছর নগদ প্রবাহ ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ
১ম ২০,০০০ ২০,০০০
২য় ২৫,০০০ ৪৫,০০০
৩য় ৩০,০০০ ৭৫,০০০
৪র্থ ২৫,০০০ ১,০০,০০০
অর্থাৎ ৪ বছরে তার বিনিয়োগকৃত অর্থের মাত্র অর্ধেক অংশ উঠে আসবে। কিন্তু শিমু আশা করেছিলেন ৪ বছরে তার বিনিয়োগকৃত পুরো ২ লক্ষ টাকাই উঠে আসবে। মূলধন বাজেটিং এর ফলাফল বিচারে প্রকল্পটি লাভজনক না হওয়ায় প্রকল্পটি তার নিকট অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে এবং তিনি উক্ত প্রকল্পে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত রয়েছেন।
সুতরাং মূলধন বাজেটিংয়ের মাধ্যমে প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা, আয়-ব্যয়, নগদ প্রবাহ ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে শিমু প্রকল্পটি চালু না করার জন্য যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা যথার্থ এবং যৌক্তিক।
প্রশ্ন-৭ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
গ্রামীণ টিফিন কেক সকল স্কুলগামী বাচ্চাদের একটি প্রিয় খাবার। গ্রামীণ ফুডস কোম্পানি পূর্বে তার সকল খাবার হাতে তৈরি করত। কিন্তু খাবারের মান উন্নত করতে কোম্পানি স¤প্রতি জাপান থেকে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে খাবার তৈরির একটি স্বয়ংক্রিয় মেশিন আমদানি করেছে। গ্রামীণ ফুডস কোম্পানি অনুমান করল উক্ত মেশিন থেকে প্রস্তুতকৃত খাবার বিক্রি করে আগামী তিন বছর যথাক্রমে ১৫ লক্ষ, ২২ লক্ষ ও ২৬ লক্ষ টাকা আয় হবে।
ক. মূলধন বাজেটিংয়ের প্রথম ধাপ কোনটি? ১
খ. মূলধন বাজেটিং কে কেন ঝুঁকিযুক্ত সিদ্ধান্ত বলা হয়? ২
গ. গ্রামীণ ফুডস এর পে-ব্যাক সময় নির্ণয় কর। ৩
ঘ. গ্রামীণ ফুডস কীভাবে মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করেছে তা বিশ্লেষণ কর। ৪
৭নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মূলধন বাজেটিংয়ের প্রথম ধাপ হলো নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন।
খ. মূলধন বাজেটিং-এর অধিকাংশ অনুমানই ভবিষ্যতের ওপর নির্ভরশীল। কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে কিনা তা নির্ভর করে উক্ত প্রকল্প থেকে ভবিষ্যতে কী পরিমাণ নগদ আন্তঃপ্রবাহ ঘটবে তার ওপর। কিন্তু ভবিষ্যতের সকল তথ্য উপাত্ত অনুমান নির্ভর যা বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে। তাই মূলধন বাজেটিং সর্বদাই ঝুঁকিযুক্ত সিদ্ধান্ত।
গ. গ্রামীণ ফুডস এর পে-ব্যাক সময় নির্ণয়ের জন্য পে-ব্যাক সময়ের সূত্র প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
গ্রামীণ ফুডস এর পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করা হলো :
বছর নগদ প্রবাহ ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ
০ -৫০,০০,০০০ -৫০,০০,০০০
১ ১৫,০০,০০০ -৩৫,০০,০০০
২ ২২,০০,০০০ -১৩,০০,০০০
৩ ২৬,০০,০০০ ১৩,০০,০০০
পে-ব্যাক সময় = ২ বছর + ১৩০০০০০ ২৬০০০০০ বছর
= (২ + ০.৫) বছর
= ২.৫ বছর।
অতএব, গ্রামীণ ফুডস এর পে-ব্যাক সময় ২.৫ বছর।
ঘ. গ্রামীণ ফুডস উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিকায়নের জন্য মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করেছেন।
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য উৎপাদন পদ্ধতি প্রতিস্থাপন ও আধুনিকায়নের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে উৎপাদন খরচ কমানো এবং এর মাধ্যমে ব্যবসায়ের লাভ বৃদ্ধি করা। মূলধন বাজেটিং প্রতিষ্ঠানের মুনাফা সংক্রান্ত বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত, মেশিন প্রতিস্থাপন এবং ঝুঁকি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। উদ্দীপকের গ্রামীণ ফুডস তার যাবতীয় খাবার আগে কর্মচারীদের হাতে তৈরি করত। তাই তাকে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ একটা বিরাট অর্থ ব্যয় করতে হতো। গ্রামীণ ফুডস কোম্পানি তার চলতি খরচ কমানো এবং তার পাশাপাশি খাবারের মান উন্নত করার জন্য জাপান থেকে খাবার তৈরির একটি স্বয়ংক্রিয় মেশিন আমদানি করেছে। উক্ত মেশিন ক্রয় একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত। আর দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করা হয়। গ্রামীণ ফুডস কোম্পানি জাপান থেকে মেশিন আমদানির ক্ষেত্রে উক্ত প্রকল্পের আয়-ব্যয়, বিনিয়োগ সুবিধা, পরিচালনা ব্যয়, নতুন মেশিন থেকে ভবিষ্যতে নগদ আন্তঃপ্রবাহ ও দীর্ঘমেয়াদি সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করেছে। এ সকল কাজ মূলধন বাজেটিংয়ের অন্তর্গত।
সুতরাং গ্রামীণ ফুডস জাপান থেকে আধুনিক মেশিন আনয়ন করে ভবিষ্যত আয় করতে সক্ষম হবে, যা কোম্পানিটি মূলধন বাজেটিং প্রয়োগের মাধ্যমে অনুমান করতে পেরেছে।
প্রশ্ন-৮ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
একরামুল হক একটি প্রকল্পে ১,০০,০০০ টাকা বিনিয়োগের চিন্তা করছেন। যা থেকে আগামী ৫ বছরে তার আয় হবে যথাক্রমে ১৫,০০০ টাকা, ২০,০০০ টাকা, ২৭,০০০ টাকা, ৩৫,০০০ টাকা ও ৩০,০০০ টাকা। কিন্তু মূলধন বাজেটিংয়ের পে-ব্যাক সময় প্রক্রিয়া ব্যবহার করেও তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
ক. নিট মুনাফার সাথে অবচয় যোগ করলে কী পাওয়া যায়? ১
খ. পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়ন ব্যাখ্যা কর। ২
গ. একরামুল হক এর বিনিয়োগের পে-ব্যাক সময় বের কর। ৩
ঘ. একরামুল সাহেবের সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার কারণ মূল্যায়ন কর। ৪
৮নং প্রশ্নের উত্তর
ক. নিট মুনাফার সাথে অবচয় যোগ করলে নগদ আন্তঃপ্রবাহ পাওয়া যায়।
খ. ব্যবসায় স¤প্রসারণের জন্য চলমান পণ্যের পাশাপাশি নতুন পণ্য বাজারে ছাড়ার কৌশলকে পণ্য বৈচিত্র্যায়ণ বলা হয়। পণ্য বৈচিত্র্যায়ণ এর উদ্দেশ্য হলো নতুন ক্রেতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাজার স¤প্রসারণ করা। পণ্য বৈচিত্র্যায়ণের জন্য নতুন পণ্যের আয়ুষ্কাল, পণ্যের উৎপাদন খরচ, বাজার চাহিদা, পরিচালনা খরচ ও সম্ভাব্য আয় প্রাক্কলন করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
গ. একরামুল হকের বিনিয়োগের পে-ব্যাক সময় নির্ণয়ের জন্য পে-ব্যাক সূত্রের প্রয়োগ প্রয়োজন।
একরামুল হকের বিনিয়োগের পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করা হলো :
বছর নগদ প্রবাহ ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ
০ -১,০০,০০০ -১,০০,০০০
১ ১৫,০০০ -৮৫,০০০
২ ২০,০০০ -৬৫,০০০
৩ ২৭,০০০ ৩৮,০০০
৪ ৩৫,০০০ – ৩,০০০
৫ ৩০,০০০ ২৭,০০০
পে-ব্যাক সময় = ৪ বছর + ৩০০০৩০০০০ বছর
= (৪ + ০.১) বছর
= ৪.১ বছর
অতএব, একরামুল হকের পে-ব্যাক সময় ৪.১ বছর।
ঘ. পে-ব্যাক সময় পদ্ধতিতে যেসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেগুলোর জন্যই তিনি পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করার পরও কোনো সঠিক নির্দেশনা না পাওয়ায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
পে-ব্যাক সময় পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা হলো এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারী কর্তৃক সর্বোচ্চ বা আদর্শ পে-ব্যাক নির্ধারণে অসুবিধা সৃষ্টি হয়। প্রকল্প গ্রহণ করা হবে না বর্জন করা হবে তা বিনিয়োগকারীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু এই সময় নির্ধারণের কোনো স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম নেই। উদ্দীপকে একরামুল হকের পে-ব্যাক সময় ৪.১ বছর। পে-ব্যাক সময় নির্ণয় করার পরও তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। কারণ পে-ব্যাক পদ্ধতি মূলত কোনো লাভের হার নয়, এটা একটি সময়কাল। তাই এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিনি তার বিনিয়োজিত মূলধন উঠে আসার সময় সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছেন কিন্তু প্রকল্পটি কতটা লাভজনক তা এই পদ্ধতিতে জানা সম্ভব নয়। তার হাতে যদি দুই বা ততোধিক প্রকল্প থাকত তাহলে যে প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় সবচেয়ে কম সেটা তিনি গ্রহণ করতে পারতেন। কিন্তু তার নিকট একটি মাত্র প্রকল্প থাকায় তিনি বেশ সমস্যায় পড়েছেন। এছাড়া পে-ব্যাক সময়ের কোনো আদর্শ মানদণ্ড নেই। তাই পে-ব্যাক সময় ঠিক কত হলে প্রকল্পটি একরামুল হকের জন্য গ্রহণযোগ্য হতো সে ব্যাপারেও তিনি কোনো ধারণা পাচ্ছেন না। তাছাড়া পে-ব্যাক অর্থের সময়মূল্য বিবেচনা করে না। তাই তিনি ভবিষ্যতে প্রকল্পটি থেকে যে পরিমাণ আয় প্রাপ্ত হবেন তাকে বর্তমান নগদ বহিঃপ্রবাহের সাথে তুলনা করে কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগও তিনি এখানে পাচ্ছেন না।
সুতরাং পে-ব্যাক প্রকল্পের মুনাফা পরিমাপ না করায় এবং প্রকল্পের জীবনচক্রে প্রাপ্ত সমস্ত নগদ আন্তঃপ্রবাহগুলোকে হিসাবে না আনায় একরামুল হক সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
প্রশ্ন-৯ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সতেজ বাজার ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার একটি জনপ্রিয় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। এখানে উন্নতমানের এবং রুচিসম্মত পণ্যদ্রব্য সুলভমূল্যে পাওয়া যায় বলে দিন দিন তার গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। তাই গ্রাহকদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সতেজ বাজার ঢাকার মৌচাক এলাকায় একটি শাখা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন শাখাটি চালু করতে সতেজ বাজার ১০,০০,০০০ টাকা ব্যয় করবে এবং আশা করছে প্রকল্পটি থেকে প্রথম তিন বছরে যথাক্রমে ৩,০০,০০০, ৫,০০,০০০ ও ৪,০০,০০০ টাকা আয় হবে। অন্যান্য চলতি খরচ প্রতি বছর আয়ের ৪০% এবং কর ৩০% অনুমান করা হয়েছে।
ক. বিক্রয় থেকে প্রতিষ্ঠানে কোন প্রবাহ ঘটে? ১
খ. গড় মুনাফা হার থেকে পে-ব্যাক সময় পদ্ধতি আলাদা কেন? ২
গ. সতেজ বাজার এর গড় মুনাফার হার নির্ণয় কর। ৩
ঘ. দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতেজ বাজার কীভাবে লাভবান হতে পারে বলে তুমি মনে কর? ৪
৯নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বিক্রয় থেকে প্রতিষ্ঠানে নগদ আন্তঃপ্রবাহ ঘটে।
খ. গড় মুনাফা হার এবং পে-ব্যাক সময় উভয়ই মূলধন বাজেটিং এর পদ্ধতি হলেও একটি অপরটি থেকে আলাদা। কারণ গড় মুনাফা হার পদ্ধতি বের করা হয় গড় নিট মুনাফাকে গড় বিনিয়োগ দিয়ে ভাগ করে। কিন্তু পে-ব্যাক সময় বের করা হয় বিনিয়োগকে বার্ষিক নগদ প্রবাহ দ্বারা ভাগ করে। এছাড়া গড় মুনাফা হার পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অর্জনের ক্ষমতা জানা যায়। অপরদিকে পে-ব্যাক সময় পদ্ধতির মাধ্যমে প্রকল্পে বিনিয়োগকৃত টাকা কত দিনে ফেরত আসবে তা জানা যায়।
গ. সতেজ বাজার এর গড় মুনাফা নির্ণয়ের জন্য গড় মুনাফা হার সূত্রের প্রয়োগ প্রয়োজন।
সতেজ বাজার এর মৌচাক শাখার গড় মুনাফার হার নির্ণয় করা হলো :
১ম বছর ২য় বছর ৩য় বছর
বিক্রয় বাবদ আয় ৩,০০,০০০ ৫,০০,০০০ ৪,০০,০০০
বাদ : চলতি খরচ ৪০% ১,২০,০০০ ২,০০,০০০ ১,৬০,০০০
মোট মুনাফা ১,৮০,০০০ ৩,০০,০০০ ২,৪০,০০০
বাদ : কর ৩০% ৫৪,০০০ ৯০,০০০ ৭২,০০০
নিট মুনাফা ১,২৬,০০০ ২,১০,০০০ ১,৬৮,০০০
আমরা জানি,
গড় মুনাফার হার = গড় মুনাফা গড় বিনিয়োগ ১০০
এখানে,
গড় বিনিয়োগ = ১০০০০০০২ = ৫,০০,০০০ টাকা।
গড় মুনাফা = ১২৬০০০ + ২১০০০০ + ১৬৮০০০৩
= ৫০৪০০০৩ টাকা
= ১,৬৮,০০০ টাকা।
সুতরাং, গড় মুনাফার হার = ১৬৮০০০৫০০০০০
= ০৩৩৬ বা ৩৩.৬%
অতএব, সতেজ বাজার এর মৌচাক শাখার গড় মুনাফা ৩৩.৬%।
ঘ. দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতেজ বাজার মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে লাভবান হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সব ক্ষেত্রেই মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করা হয়। স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় থেকে শুরু করে ব্যবসায় প্রসার, ব্যবসায় আধুনিকায়ন, স্থায়ী সম্পত্তির প্রতিস্থাপন এবং নতুন পণ্য বাজারে ছাড়া সংক্রান্ত সকল প্রকার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং-এর প্রয়োগ রয়েছে। উদ্দীপকে সতেজ বাজার মৌচাক এলাকায় নতুন শাখা চালু করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হতে পারে। নতুন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্য থেকে কত আয় হবে, কত ব্যয় হবে তা বের করে নতুন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এজন্য মূলধন বাজেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ বিভিন্ন বিনিয়োগ সিদ্ধান্তগুলোর জন্য মূলধন বাজেটিং পদ্ধতির সাহায্য নিতে হবে। কারণ প্রত্যেকটি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তই দীর্ঘমেয়াদি এবং এতে ঝুঁকির বিষয়টি জড়িত। এজন্য বিভিন্ন অবস্থার যথার্থ মূল্যায়ন করে, তুলনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করে সতেজ বাজার প্রতিষ্ঠানটি তার নগদ প্রবাহে স্থিতিশীলতা আনয়ন করে সে অনুযায়ী স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবে। একাধিক শাখা চালু করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে বাজার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে।
সুতরাং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সংক্রান্ত সকল বিনিয়োগ মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন করে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি তার মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধি করে লাভবান হতে পারবে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন-১০ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে সিনহা গ্রæপকে বর্তমানে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য নিজের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিষ্ঠানটি স¤প্রতি চীন থেকে ৬০,০০,০০০ টাকা মূল্যের একটি মেশিন ক্রয় করেছে। প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে মেশিনটির উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে আগামী ৫ বছর যথাক্রমে ৪,০০,০০০ টাকা, ৫,৫০,০০০ টাকা, ৭,০০,০০০ টাকা, ১১,০০,০০০ টাকা ও ৯,৫০,০০০ টাকা মুনাফা হবে। মেশিনটির আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ বছর।
ক. প্রতিষ্ঠানের সাফল্য কিসের ওপর নির্ভর করে? ১
খ. নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন বলতে কী বোঝায়? ২
গ. সিনহা গ্রæপের নগদ আন্তঃপ্রবাহ নির্ণয় কর। ৩
ঘ. সিনহা গ্রæপের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নগদ প্রবাহ প্রাক্কলনের তাৎপর্য মূল্যায়ন কর। ৪
১০নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রতিষ্ঠানের সাফল্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।
খ. নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। নগদ প্রবাহ প্রাক্কলনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নগদ প্রবাহ প্রাক্কলনের জন্য প্রতিষ্ঠানকে বিক্রয় পুর্বানুমান, চলতি খরচ পূর্বানুমান, মূলধনী ব্যয় এবং অন্যান্য ব্যয় নির্ধারণ করতে হয়।
গ. সিনহা গ্রæপের নগদ আন্তঃপ্রবাহ নির্ণয়ের জন্য নিট মুনাফার সাথে অবচয় যোগ করতে হবে।
সিনহা গ্রæপের নগদ আন্তঃপ্রবাহের পরিমাণ নির্ণয় করা হলো।
অবচয় = ৬০০০০০০৫ বছর
= ১২,০০,০০০ টাকা
(প্রত্যেক বছরের জন্য সরলরৈখিক পদ্ধতিতে)
বিবরণ ১ম বছর ২য় বছর ৩য় বছর ৪র্থ বছর ৫ম বছর
নিট মুনাফা ৪,০০,০০০ ৫,৫০,০০০ ৭,০০,০০০ ১১,০০,০০০ ৯,৫০,০০০
যোগ : অবচয় ১২,০০,০০০ ১২,০০,০০০ ১২,০০,০০০ ১২,০০,০০০ ১২,০০,০০০
নগদ আন্তঃপ্রবাহ ১৬,০০,০০০ ১৭,৫০,০০০ ১৯,০০,০০০ ২৩,০০,০০০ ২১,০০,০০০
অতএব, নতুন আমদানিকৃত মেশিন বাবদ সিনহা গ্রæপে আগামী পাঁচ বছর যথাক্রমে ১৬,০০,০০০ টাকা, ১৭,৫০,০০০ টাকা, ১৯,০০,০০০ টাকা, ২৩,০০,০০০ টাকা ও ২১,০০,০০০ টাকার নগদ আন্তঃপ্রবাহ ঘটবে বলে আশা করা যায়।
ঘ. দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি ক্ষেত্রে সিনহা গ্রæপ যে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া প্রয়োগ করছে তা হলো মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়া।
নগদ প্রবাহ মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ নগদ প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্প নির্বাচন করা হয়। এ কারণে নির্ভুলভাবে নগদ প্রবাহ নির্ণয়ের ওপর মূলধন বাজেটিং এর সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে। প্রতিটি বিকল্প বিনিয়োগ প্রস্তাবের নগদ প্রবাহ পৃথকভাবে নির্ণয়ের পর প্রকল্পগুলো মূল্যায়নের জন্য প্রস্তুত হয়। উদ্দীপকে সিনহা গ্রæপের নগদ প্রবাহ নির্ণয় করতে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় পূর্বানুমান, চলতি খরচ, পূর্বানুমান, মূলধনী ব্যয় এবং অন্যান্য ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। বিক্রয় থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে নগদ আন্তঃপ্রবাহ ঘটে এবং চলতি খরচ, মূলধনী ব্যয় এবং অন্যান্য খরচ পূর্বানুমান থেকে নগদ বহিঃপ্রবাহ ঘটে। নগদ প্রবাহের সঠিক প্রাক্কলন নির্ভর করে পণ্যের ভবিষ্যৎ বছরগুলোতে বিক্রয়মূল্য এবং কতগুলো পণ্য বিক্রয় হবে তার ওপর। এ কারণে ভবিষ্যৎ বিক্রয়মূল্য ও পণ্য বিক্রির সংখ্যা অনুমান করা হয়। অনুমানে ভুল হলে সেটির প্রভাব সিনহা গ্রæপের নগদ প্রবাহকে প্রভাবিত করবে। এছাড়া গ্রæপকে তার প্রত্যেক চলতি খরচ এবং স্থায়ী খরচ অতি সাবধানতা অবলম্বন করে পূর্বানুমান করতে হবে। কারণ এসব খরচ অনুমানে ভুল হলে মূলধন বাজেটিং ভুল সিদ্ধান্ত দিবে এবং সিনহা গ্রæপ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সুতরাং উদ্ভাবিত প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ এবং সেই বিনিয়োগ থেকে প্রকল্পের মেয়াদকালীন সময়ে কী পরিমাণ আন্তঃপ্রবাহ হবে তা সিনহা গ্রæপ মূলধন বাজেটিং এর মাধ্যমে প্রাক্কলন করতে পারবে।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ কিসের আয়-ব্যয় প্রাক্কলন করতে হয়?
উত্তর : প্রত্যেকটি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের আয়-ব্যয় প্রাক্কলন করতে হয়।
প্রশ্ন \ ২ \ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সকল ক্ষেত্রে কোনটি প্রয়োগ করা হয়?
উত্তর : দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সকল ক্ষেত্রে মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করা হয়।
প্রশ্ন \ ৩ \ উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিকায়নে কোনটির প্রয়োগ লক্ষণীয়?
উত্তর : উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিকায়নে মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ার প্রয়োগ লক্ষ্যণীয়।
প্রশ্ন \ ৪ \ মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্তের জন্য কিরূপ তহবিল প্রয়োজন?
উত্তর : মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্তের জন্য বড় অংকের তহবিল প্রয়োজন।
প্রশ্ন \ ৫ \ কোন ধরনের সিদ্ধান্তে ভুল হলে কারবারকে বড় অংকের মাশুল দিতে হয়?
উত্তর : মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্তে ভুল হলে কারবারকে বড় অংকের মাশুল দিতে হয়।
প্রশ্ন \ ৬ \ মূলধন বাজেটিংয়ের অনুমান কিসের ওপর নির্ভরশীল?
উত্তর : মূলধন বাজেটিংয়ের অধিকাংশ অনুমান ভবিষ্যতের ওপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন \ ৭ \ উৎপাদন পদ্ধতির যান্ত্রিকীকরণ কী ধরনের সিদ্ধান্ত?
উত্তর : উৎপাদন পদ্ধতির যান্ত্রিকীকরণ একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন \ ৮ \ কী থেকে আন্তঃনগদ প্রবাহ পাওয়া যায়?
উত্তর : অর্জিত আয় থেকে আন্তঃনগদ প্রবাহ পাওয়া যায়।
প্রশ্ন \ ৯ \ কোন প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতের নগদ প্রবাহকে নগদ মূল্যে রূপান্তর করা যায়?
উত্তর : বাট্টাকরণ প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতের নগদ প্রবাহকে নগদ মূল্যে রূপান্তর করা যায়।
প্রশ্ন \ ১০ \ মূলধন বাজেটিং পদ্ধতিসমূহের কাজ কী?
উত্তর : মূলধন বাজেটিং পদ্ধতিসমূহের কাজ হলো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ এবং সার্বিক লাভজনক বিনিয়োগ বা প্রকল্প নির্বাচন।
প্রশ্ন \ ১১ \ মুনাফার সাথে অবচয় যোগ করে কী পাওয়া যায়?
উত্তর : মুনাফার সাথে অবচয় যোগ করে নগদ আন্তঃপ্রবাহ পাওয়া যায়।
প্রশ্ন \ ১২ \ কোথায় মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করা হয়?
উত্তর : দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সব ক্ষেত্রেই মূলধন বাজেটিং প্রয়োগ করা হয়।
প্রশ্ন \ ১৩ \ কী কারণে নগদ বহিঃপ্রবাহ ঘটে?
উত্তর : প্রতিষ্ঠানের মোট খরচের মাধ্যমে নগদ বহিঃপ্রবাহ ঘটে।
প্রশ্ন \ ১৪ \ মোট বিক্রয় অনুমান কী?
উত্তর : প্রতিটি পণ্যের ভবিষ্যতে বিক্রয়মূল্যে এবং প্রতিবছর কতগুলো পণ্য বিক্রি হবে তার পূর্বানুমান।
প্রশ্ন \ ১৫ \ মোট খরচ কী?
উত্তর : মোট খরচ হলো প্রতিষ্ঠানের চলতি খরচ এবং স্থায়ী খরচের সমষ্টি।
প্রশ্ন \ ১৬ \ স্থায়ী খরচ কী?
উত্তর : স্থায়ী খরচ হলো অফিস ভাড়া, বিমা খরচ, অবচয়সহ অন্যান্য খরচের সমষ্টি।
প্রশ্ন \ ১৭ \ মূলধন বাজেটিং পদ্ধতি নির্বাচনের উপায় কী?
উত্তর : বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্পের ধরন, ঝুঁকি এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে সঠিক মূলধন বাজেটিং পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হয়।
প্রশ্ন \ ১৮ \ কোন পদ্ধতি প্রত্যাশিত নগদ প্রবাহের পরিবর্তে প্রত্যাশিত নিট মুনাফাকে বিবেচনা করা হয়?
উত্তর : গড় মুনাফার হার পদ্ধতিতে প্রত্যাশিত নগদ প্রবাহের পরিবর্তে প্রত্যাশিত নিট মুনাফা বিবেচনা করা হয়।
প্রশ্ন \ ১৯ \ নিট মুনাফা কী?
উত্তর : বিক্রয় থেকে করসহ সব খরচ বাদ দিলে যা পাওয়া যায় তাই নিট মুনাফা।
প্রশ্ন \ ২০ \ গড় মুনাফা হার কী?
উত্তর : প্রত্যাশিত বার্ষিক গড় নিট মুনাফাকে গড় বিনিয়োগ দিয়ে ভাগ করলে যা পাওয়া যায়, তাই গড় মুনাফার হার।
প্রশ্ন \ ২১ \ কোন পদ্ধতি অর্থের সময়মূল্য বিবেচনা করে না?
উত্তর : গড় মুনাফা পদ্ধতি অর্থের সময়মূল্য বিবেচনা করে না।
প্রশ্ন \ ২২ \ প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও টিকে থাকা কিসের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর : দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের ওপর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও টিকে থাকা নির্ভর করে।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ ভবিষ্যতের নগদ প্রবাহকে কীভাবে নগদ মূল্যে রূপান্তর করা হয়?
উত্তর : অর্থের সময়মূল্য অনুযায়ী ভবিষ্যৎ বছরগুলোতে আগত নগদ প্রবাহের পরিমাণ সমান হলেও সেগুলোর বর্তমান মূল্য সমান হয় না। অর্থের সময়মূল্য অনুযায়ী, নগদ প্রবাহ যত দেরিতে পাওয়া যায় সেটির বর্তমান মূল্য তত কম। বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্প থেকে যেহেতু বেশ কয়েক বছর ধরে নগদ প্রবাহ পাওয়া যায়, সেহেতু মূলধন বাজেটিংয়ের মাধ্যমে সঠিক বিনিয়োগ সুযোগ নিতে হলে ভবিষ্যতে আগত নগদ প্রবাহগুলোর বর্তমান মূল্য নির্ণয় করতে হয়। বাট্টাকরণ প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতের নগদ প্রবাহকে বর্তমান মূল্যে রূপান্তর করা হয়।
প্রশ্ন \ ২ \ মূলধন বাজেটিংয়ের সঠিক পদ্ধতি কীভাবে নির্বাচন করতে হয়?
উত্তর : প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে মূলধন বাজেটিংয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। এসব পদ্ধতিসমূহের প্রত্যেকটির কিছু সুবিধা এবং কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্পের ধরন, ঝুঁকি এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানের জন্য সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন করতে হয়।
প্রশ্ন \ ৩ \ মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। নগদ প্রবাহ প্রাক্কলনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নগদ প্রবাহ প্রাক্কলনের জন্য প্রতিষ্ঠানকে বিক্রয় পূর্বানুমান, চলতি খরচ পূর্বানুমান, মূলধনী ব্যয় এবং অন্যান্য ব্যয় নির্ধারণ করতে হয়।
প্রশ্ন \ ৪ \ মূলধন বাজেটিংকে কেন মূল্যায়ন প্রক্রিয়া বলা হয়?
উত্তর : উদ্যোক্তাকে ব্যবসা পরিচালনার বিভিন্ন সময় স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়, স্থায়ী সম্পত্তি প্রতিস্থাপন, উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিকায়ন, নতুন পণ্য বাজারে ছাড়া ইত্যাদি বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। এসব বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটা লাভজনক বা আদৌ লাভজনক হবে কিনা তা মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে যাচাই করা হয়। তাই মূলধন বাজেটিংকে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া বলা হয়।
প্রশ্ন \ ৫ \ ব্যবসায় আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন কেন?
উত্তর : ব্যবসায় আধুনিকায়ন বলতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধাকে নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে আধুনিক মানসম্পন্ন করা বোঝায়। ব্যবসায় আধুনিকায়ন করা হলে ব্যবসায়িক কার্যকলাপ যেমন : সহজ উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যবহার, উৎপাদন ব্যয় হ্রাস, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি যথাযথভাবে সম্পাদিত হয়। এতে ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়।
প্রশ্ন \ ৬ \ নিট নগদ প্রবাহ কী?
উত্তর : কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রকল্পে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে প্রকল্পটির সাথে সংশ্লিষ্ট নগদ বহিঃপ্রবাহ ও নগদ আন্তঃপ্রবাহের পার্থক্যকে নিট নগদ প্রবাহ বলে। নিট নগদ প্রবাহ ধনাত্মক হলে প্রকল্পটি লাভজনক বলে বিবেচিত হয়।
প্রশ্ন \ ৭ \ ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : একটি প্রকল্পে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে প্রকল্পটি হতে সম্ভাব্য কয়েক বছরের নগদ আন্তঃপ্রবাহ অনুমান করা যায়। বিনিয়োগ হতে সম্ভাব্য নগদ আন্তঃপ্রবাহগুলো পর্যায়ক্রমে প্রতি বছর বছর পূর্ববর্তী সকল নগদ আন্তঃপ্রবাহের সাথে যোগ করে যে নগদ প্রবাহ পাওয়া যায় তাকে ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ বলে।
প্রশ্ন \ ৮ \ বিনিয়োগের লাভজনকতা বিশ্লেষণ সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : প্রতিষ্ঠানের মূলধন ইচ্ছেমতো যে কোনো খাতে বা প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয় না। কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগ করার পূর্বে বিনিয়োগটি হতে কী পরিমাণ নগদ প্রবাহ হবে বা পে-ব্যাক সময় কত ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করার মাধ্যমে প্রকল্পের লাভজনকতার বিষয়টি মূল্যায়ন করা হয়। প্রতিষ্ঠান যাতে মূলধন বিনিয়োগ করে লোকসানের সম্মুখীন না হয় তাই বিনিয়োগের লাভজনকতা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রশ্ন \ ৯ \ গড় নিট মুনাফা সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর : ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের একটি প্রকল্প হতে নির্দিষ্ট কয়েক বছরের সম্ভাব্য নিট মুনাফার পরিমাণগুলোকে যোগ করে নির্দিষ্ট বছর দিয়ে ভাগ করলে যে নিট মুনাফা পাওয়া যায় তাকে ঐ প্রকল্পটির গড় নিট মুনাফা বলে। গড় নিট মুনাফা গড় মুনাফার হার নির্ধারণের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
প্রশ্ন \ ১০ \ মূলধন রেশনিং সম্পর্কে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠান তার সীমাবদ্ধ তহবিল সবচেয়ে লাভজনক প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারে তাকে মূলধন রেশনিং বলে। এক্ষেত্রে মুনাফা অর্জন ক্ষমতা অনুসারে প্রকল্পসমূহকে সাজানো হয় এবং এ থেকে সর্বোচ্চ আয় অর্জনকারী প্রকল্পগুলোকে নির্বাচন করা হয়। মূলত, মূলধন রেশনিং-এর মাধ্যমে সর্বোত্তম প্রকল্পে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রশ্ন \ ১১ \ প্রকল্প ঝুঁকি বলতে কী বোঝ?
উত্তর : মুনাফা বা লাভের আশায় মানুষ প্রকল্প গ্রহণ করে। তবে ব্যবসায় জগতে নানা প্রকার অনিশ্চয়তা বিদ্যমান যা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন, বিপণন এবং মুনাফার লক্ষ্য অর্জনে অনিশ্চয়তার জš§ দেয়। প্রকল্প থেকে মুনাফা অর্জনের এ অনিশ্চয়তা বা ঝুঁকিকে প্রকল্প ঝুঁকি বলে।
প্রশ্ন \ ১২ \ সিদ্ধান্তে ভুল হলে সেটি সংশোধন করার সুযোগ থাকে না। সংশোধনের সুযোগ থাকলেও বড় অংকের মাশুল দিতে হয়। এ সম্পর্কিত একটি উদাহরণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : উদাহরণস্বরূপ একটি কোম্পানি ঢাকার অদূরে একটি জায়গায় তাদের কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় এই ভেবে যে, সেখানে সময়মতো বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সরবরাহ পাবে। কারখানা স্থাপনের পর দেখা গেল সরকার নতুন বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমতাবস্থায় কারবারটি কারখানার উৎপাদন শুরু করতে পারবে না। কিন্তু কারবারটিকে হয়তো এ কারণে ব্যাংক থেকে বড় আকারের ঋণ নিতে হয়েছে, যার সুদ ব্যাংকে নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে। ফলে এ রকম একটি ভুল সিদ্ধান্ত কারবারটিকে ব্যর্থ করে দিতে পারে।
প্রশ্ন \ ১ \ জনাব সিফাত একজন শিল্পপতি। স¤প্রতি তিনি মিনা ও মিঠু নামে দুটি প্রকল্পে বিনিয়োগের চিন্তা-ভাবনা করছেন। প্রকল্প মিনা ও মিঠুর মেয়াদকাল ৩ বছর এবং প্রাথমিক বিনিয়োগ প্রতিটিতে ১ কোটি টাকা করে।
পূর্বানুমান প্রকল্প মিনা প্রকল্প মিঠু
প্রথম বছর বিক্রয় ২০ লাখ ৩০ লাখ
দ্বিতীয় বছর বিক্রয় ৫০ লাখ ৬০ লাখ
তৃতীয় বছর বিক্রয় ৮০ লাখ ৯০ লাখ
চলতি খরচ বিক্রয়ের ৩৫% বিক্রয়ের ৩৫%
কর হার ৪০% ৪০%
[মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর]
গড় মুনাফার হার অনুযায়ী সিফাতের জন্য কোন প্রকল্পটি গ্রহণ যুক্তিযুক্ত হবে বলে তুমি মনে কর।
সমাধান :
জনাব সিফাতের প্রকল্প ‘মিনা’-এর নিট মুনাফা নির্ণয় :
বিবরণ প্রথম বছর দ্বিতীয় বছর তৃতীয় বছর
বিক্রয় ২০,০০,০০০ ৫০,০০,০০০ ৮০,০০,০০০
বাদ : চলতি খরচ (বিক্রয়ের ৩৫%) ৭,০০,০০০ ১৭,৫০,০০০ ২৮,০০,০০০
১৩,০০,০০০ ৩২,৫০,০০০ ৫২,০০,০০০
বাদ : কর হার ৪০% ৫,২০,০০০ ১৩,০০,০০০ ২০,৮০,০০০
নিট মুনাফা ৭,৮০,০০০ ১৯,৫০,০০০ ৩১,২০,০০০
জনাব সিফাতের প্রকল্প ‘মিঠু’-এর নিট মুনাফা নির্ণয় :
বিবরণ প্রথম বছর দ্বিতীয় বছর তৃতীয় বছর
বিক্রয় ৩০,০০,০০০ ৬০,০০,০০০ ৯০,০০,০০০
বাদ : চলতি খরচ (বিক্রয়ের ৩৫%) ১০,৫০,০০০ ২১,০০,০০০ ৩১,৫০,০০০
১৯,৫০,০০০ ৩৯,০০,০০০ ৫৮,৫০,০০০
বাদ : কর হার ৪০% ৭,৮০,০০০ ১৫,৬০,০০০ ২৩,৪০,০০০
নিট মুনাফা ১১,৭০,০০০ ২৩,৪০,০০০ ৩৫,১০,০০০
জনাব সিফাতের প্রকল্প ‘মিনা ও ‘মিঠু’ এর গড় মুনাফার হার নির্ণয় :
প্রকল্প মিনা প্রকল্প মিঠু
আমরা জানি,
গড় মুনাফা হার = গড় মুনাফাগড় বিনিয়োগ
এখানে,
গড় মুনাফা = ৭৮০০০০ + ১৯৫০০০০ + ৩১২০০০০৩
= ৫৮৫০০০০৩
= ১৯,৫০,০০০ টাকা।
গড় বিনিয়োগ = ১০০০০০০০২
= ৫০,০০,০০০ টাকা।
গড় মুনাফা হার = ১৯৫০০০০৫০০০০০০
= ০৩৯ বা ৩৯%। আমরা জানি,
গড় মুনাফা হার = গড় মুনাফাগড় বিনিয়োগ
এখানে,
গড় মুনাফা = ১১৭০০০০ + ২৩৪০০০০ + ৩৫১০০০০৩
= ৭০২০০০০৩
= ২৩,৪০,০০০ টাকা।
গড় বিনিয়োগ = ১০০০০০০০২
= ৫০,০০,০০০ টাকা।
গড় মুনাফা হার = ২৩৪০০০০৫০০০০০০
= ০৪৬৮ বা ৪৬.৮%।
মন্তব্য : একাধিক প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক অর্থাৎ যে প্রকল্পের গড় মুনাফার হার সবচেয়ে বেশি তাকেই প্রথম গ্রহণ করা হয়। সুতরাং গড় মুনাফার হার অনুযায়ী সিফাতের জন্য প্রকল্প মিঠু গ্রহণ অধিক যুক্তিযুক্ত হবে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন \ ২ \ রাকিব ট্রেডার্স একটি নতুন প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের প্রাথমিক খরচ হয়েছে ১,০০,০০০ টাকা। রাকিব ট্রেডার্স এ প্রকল্প থেকে করও অবচয় ধার্যের পূর্বে ১ম থেকে ৫ম বছর পর্যন্ত যথাক্রমে ৪২,০০০ টাকা, ৪৪,০০০ টাকা, ৪৬,০০০ টাকা, ৪৮,০০০ টাকা ও ৫০,০০০ টাকা পাবার আশা করে। করের হার ৪০ শতাংশ ও সরলরৈখিক পদ্ধতিতে অবচয় ধার্য করে থাকে। রাকিব ট্রেডার্সের প্রকল্পের গড় মুনাফার হার নির্ণয় কর।
সমাধান :
রাকিব ট্রেডার্সের প্রকল্পের নিট মুনাফা নির্ণয় :
বিবরণ ১ম বছর ২য় বছর ৩য় বছর ৪র্থ বছর ৫ম বছর
আয় ৪২,০০০ ৪৪,০০০ ৪৬,০০০ ৪৮,০০০ ৫০,০০০
বাদ : অবচয় [সরলরৈখিক পদ্ধতিতে ১,০০,০০০ ৫ = ২০,০০০ প্রতিবছর অবচয়]
২০,০০০
২০,০০০
২০,০০০
২০,০০০
২০,০০০
২২,০০০ ২৪,০০০ ২৬,০০০ ২৮,০০০ ৩০,০০০
বাদ : কর (৪০%) ৮,৮০০ ৯,৬০০ ১০,৪০০ ১১,২০০ ১২,০০০
নিট মুনাফা ১৩,২০০ ১৪,৪০০ ১৫,৬০০ ১৬,৮০০ ১৮,০০০
গড় মুনাফা = ১৩২০০ + ১৪৪০০ + ১৫৬০০ + ১৬৮০০ + ১৮০০০৫
= ৭৮০০০৫
= ১৫,৬০০ টাকা।
গড় বিনিয়োগ = ১০০০০০২
= ৫০,০০০
গড় মুনাফা হার = গড় মুনাফাগড় বিনিয়োগ
= ১৫৬০০৫০০০০
= ০৩১২ বা ৩১.২%
অতএব, রাকিব ট্রেডার্সের প্রকল্পের গড় মুনাফা হার ৩১.২%।
প্রশ্ন \ ৩ \ নিডো কোম্পানি দুইটি প্রকল্পের তুলনামূলক বিচার করছে। উভয় প্রকল্পের প্রাথমিক নগদ বিনিয়োগ ১,০০,০০০ টাকা এবং উভয়ের কর্মক্ষমতা ৫ বছর। কোম্পানির আয় করের হার ৪০%। সরল রৈখিক পদ্ধতিতে অবচয় ধরা হবে। প্রকল্পের বাৎসরিক নগদ প্রাপ্তি নিম্নরূপ :
প্রকল্প নগদ প্রাপ্তি (টাকা)
প্রথম বছর দ্বিতীয় বছর তৃতীয় বছর চতুর্থ বছর পঞ্চম বছর
প্রকল্প-১ ৪০,০০০ ৪০,০০০ ৪০,০০০ ৪০,০০০ ৪০,০০০
প্রকল্প-২ ৬০,০০০ ৩০,০০০ ২০,০০০ ৫০,০০০ ৫০,০০০
প্রদত্ত তথ্যগুলোর আলোকে উভয় প্রকল্পের বিনিয়োগ ফেরত কাল (পে-ব্যাক সময়) নির্ণয় কর এবং উভয় প্রকল্পের গড় মুনাফার হার নির্ণয় কর।
সমাধান :
নিডো কোম্পানির দুইটি প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় ও গড় মুনাফা হার নির্ণয়ের জন্য নিট নগদ আয় (ঘবঃ ঈধংয ইবহবভরঃ) নির্ণয় করতে হবে।
নিডো কোম্পানির প্রকল্প-১ এর (নিট নগদ আয়) নির্ণয় :
বছর নগদ আন্তঃপ্রবাহ অবচয় করযোগ্য মুনাফা কর ৪০% কর পরবর্তী মুনাফা নিট নগদ আয় (ঘঈই)
টাকা টাকা টাকা টাকা টাকা টাকা
১ ২ ৩ ৪ = (২-৩) ৫ ৬ = ৪-৫ ৭ = ৩ + ৬
১ ৪০,০০০ ২০,০০০ ২০,০০০ ৮,০০০ ১২,০০০ ৩২,০০০
২ ৪০,০০০ ২০,০০০ ২০,০০০ ৮,০০০ ১২,০০০ ৩২,০০০
৩ ৪০,০০০ ২০,০০০ ২০,০০০ ৮,০০০ ১২,০০০ ৩২,০০০
৪ ৪০,০০০ ২০,০০০ ২০,০০০ ৮,০০০ ১২,০০০ ৩২,০০০
৫ ৪০,০০০ ২০,০০০ ২০,০০০ ৮,০০০ ১২,০০০ ৩২,০০০
মোট ৬০,০০০ ১,৬০,০০০
অবচয় (প্রতি বছর) = নগদ বিনিয়োগ ৫ বছর
= ১০০০০০৫ = ২০,০০০ টাকা।
নিডো কোম্পানির প্রকল্প-২ এর (নিট নগদ আয়) নির্ণয় :
বছর নগদ আন্তঃপ্রবাহ অবচয় করযোগ্য মুনাফা কর ৪০% কর পরবর্তী মুনাফা নিট নগদ আয় (ঘঈই)
টাকা টাকা টাকা টাকা টাকা টাকা
১ ২ ৩ ৪ = (২-৩) ৫ ৬ = ৪-৫ ৭ = ৩ + ৬
১ ৬০,০০০ ২০,০০০ ৪০,০০০ ১৬,০০০ ২৪,০০০ ৪৪,০০০
২ ৩০,০০০ ২০,০০০ ১০,০০০ ৪,০০০ ৬,০০০ ২৬,০০০
৩ ২০,০০০ ২০,০০০ ০ ০ ০ ২০,০০০
৪ ৫০,০০০ ২০,০০০ ৩০,০০০ ১২,০০০ ১৮,০০০ ৩৮,০০০
৫ ৫০,০০০ ২০,০০০ ৩০,০০০ ১২,০০০ ১৮,০০০ ৩৮,০০০
মোট ৬৬,০০০ ১,৬৬,০০০
নিডো কোম্পানির উভয় প্রকল্পের পে-ব্যাক সময় নির্ণয় :
ক্রমযোজিত নিট নগদ আয় নির্ণয় :
প্রকল্প-১ প্রকল্প-২
নিট নগদ আয় ক্রমযোজিত নিট নগদ আয় নিট নগদ আয় ক্রমযোজিত নিট নগদ আয়
১. ৩২,০০০ ৩২,০০০ ৪৪,০০০ ৪৪,০০০
২. ৩২,০০০ ৬৪,০০০ ২৬,০০০ ৭০,০০০
৩. ৩২,০০০ ৯৬,০০০ ২০,০০০ ৯০,০০০
৪. ৩২,০০০ ১,২৮,০০০ ৩৮,০০০ ১,২৮,০০০
৫. ৩২,০০০ ১,৬০,০০০ ৩৮,০০০ ১,৬৬,০০০
প্রকল্প-১
পে-ব্যাক সময় = ৩ বছর + ১০০০০০০ Ñ ৯৬০০০ ৩২০০০ বছর
= ৩ বছর + ৪০০০০ ৩২০০০ বছর
= ৩.১২৫ বছর অর্থাৎ ৩ বছর ৪৫ দিন (প্রায়)। প্রকল্প-২
পে-ব্যাক সময় = ৩ বছর + ১০০০০০০ Ñ ৯০০০০ ৩৮০০০ বছর
= ৩ বছর + ১০০০০ ৩৮০০০ বছর
= ৩.২৬৩ বছর অর্থাৎ ৩ বছর ৪৭ দিন।
গড় মুনাফার হার নির্ণয় :
প্রকল্প-১
গড় মুনাফা = ৬০০০০৫ = ১২,০০০
গড় বিনিয়োগ = ১০০০০০২ = ৫০,০০০
গড় মুনাফা হার = ১২০০০৫০০০০
= ০২৪ বা ২৪%। প্রকল্প-২
গড় মুনাফা = ৬৬০০০৫ = ১৩,২০০
গড় বিনিয়োগ = ১০০০০০২ = ৫০,০০০
গড় মুনাফা হার = ১৩২০০৫০০০০
= ০২৬৪ বা ২৬.৪%।
প্রশ্ন \ ৪ \ শান্ত ট্রেডার্স বলপেন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। উক্ত প্রতিষ্ঠানটি কিছু নতুন কলম তৈরির জন্য ‘জেল পেন’ ও ‘বিট পেন’ দুটি প্রকল্পের যে কোনো একটিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিল। দুটি প্রকল্পের ব্যয়ই ১,০০,০০০ টাকা। প্রকল্প দুটির নগদ আন্তঃপ্রবাহ নিম্নরূপ :
বছর জেল পেন বিট পেন
২০১০ ৬০,০০০/- ৫০,০০০/-
২০১১ ৪০,০০০/- ৩০,০০০/-
২০১২ ৩০,০০০/- ৮০,০০০/-
শান্ত ট্রেডার্স-এর বিনিয়োগকৃত টাকা কত দিনের মধ্যে ফেরত আসবে দেখাও। বিনিয়োগের জন্য শান্ত ট্রেডার্স এর কোন প্রকল্পটি নির্বাচন করা উচিত? উত্তরের সপক্ষে মতামত দাও।
সমাধান :
ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ নির্ণয়
বছর জেল পেন বিট পেন
নগদ প্রবাহ ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ নগদ প্রবাহ ক্রমযোজিত নগদ প্রবাহ
২০১০ ৬০,০০০ ৬০,০০০ ৫০,০০০ ৫০,০০০
২০১১ ৪০,০০০ ১,০০,০০০ ৩০,০০০ ৮০,০০০
২০১২ ৩০,০০০ ১,৩০,০০০ ৮০,০০০ ১,৬০,০০০
জেল পেন-এর পে-ব্যাক সময় নির্ণয় :
পে-ব্যাক সময় = ১ বছর + ১০০০০০০ Ñ ৬০০০০ ৪০০০০ বছর
= ১ বছর + ৪০০০০ ৪০০০০ বছর
= ১.১০ বছর অর্থাৎ ১ বছর ৩৬ দিন। বিট পেন-এর পে-ব্যাক সময় নির্ণয় :
পে-ব্যাক সময় = ২ বছর + ১০০০০০০ Ñ ৮০০০০ ৮০০০০ বছর
= ২ বছর + ২০০০০ ৮০০০০ বছর
= ২.২৫ বছর অর্থাৎ ২ বছর ৩ মাস।