ই-কমার্স মার্কেটিংয়ের ৭টি সেরা কৌশল

আপনার ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ে হতাশ? ফেসবুক অ্যাডে টাকা ঢালছেন, কিন্তু কষ্ট করে কাস্টমার আনলেও লাভ নামমাত্র? আরেকটা সমস্যা হলো, ফেসবুক অ্যাড ছাড়া অন্য পথে সফলতা পাওয়া নিয়েও অনেকের সন্দেহ—”এসব ইমেল বা টেক্সট মার্কেটিং আসলেই কাজ করে?”

সত্যি কথা বলতে, শুধু এক জায়গায় আটকে থাকলে আপনার ব্যবসা এক জায়গাতেই আটকে থাকবে। ই-কমার্স মার্কেটিং অনেকটা বাড়ি বানানোর মতো—শুধু একটা ভালো দেয়াল বানিয়ে রাখা যথেষ্ট নয়; দরজা, জানালা, ছাদের সবকিছু ঠিক জায়গায় লাগাতে হবে। তাই, চাই কম্বাইন্ড মার্কেটিং স্ট্রাটেজি, যেখানে একাধিক কৌশল একসাথে কাজ করে। আসুন, দেখে নিই বাংলাদেশে ই-কমার্স মার্কেটিংয়ে কাজ করা সেরা ৭টি কৌশল।

১. SEO (Search Engine Optimization)—আপনার ব্যবসাকে তুলে ধরুন গুগলে

ধরুন, আপনি শার্ট বা কেক বিক্রি করছেন। বেশিরভাগ মানুষ যখন কিছু কিনতে চায়, তারা গুগলে প্রথমে সার্চ করে: “ঢাকায় সেরা কেক ডেলিভারি” বা “পুরুষদের শার্ট কমদামে।”

SEO মানে আপনার ওয়েবসাইট বা পেজকে গুগলের প্রথম পেজে আনার বিশেষ চমৎকার কৌশল। আপনার সাইট যদি গুগলে উপরের দিকে থাকে, তাহলে ক্রেতারা ফেসবুক অ্যাড ছাড়া ঠিকই আপনাকে খুঁজে পাবে। এটা একবার ভালোভাবে সেটআপ করলে আপনি অনেকদিন ফল পাবেন—একদম বিনামূল্যে কারও সামনে আসবেন।

আর এই জন্য আপনাকে এসইও করাতে হবে আপানর ওয়েবসাইটের জন্য। এই জন্য প্রফেশনালদের সাহায্য নিতে পারে। আশার কথা বাংলাদেশে বিশ্বমানের ইকমার্স এসইও মার্কেটিং এজেন্সি আছে, যারা আপনার ব্যবসাকে গুগলসহ অন্য সার্চ ইঞ্জিনে র‍্যাঙ্কিং নিয়ে কাজ করতে পারবেন। 

২. ইমেল মার্কেটিং—পুরনো ক্রেতাদের ফিরিয়ে আনুন, নতুনদের হিট করুন

“ইমেল কি কাজ করে?”—বাংলাদেশে এই প্রশ্নটা কমন। অথচ ইমেল মার্কেটিং আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে সফল কৌশলগুলোর একটি।

যারা একবার আপনার কাছ থেকে কিছু কিনেছেন বা ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন, তাদের জন্য ইমেল হলো নিখুঁত কমিউনিকেশন টুল। আপনি ইমেইলে ডাবল ডিসকাউন্ট অফার দিন, নতুন প্রোডাক্টের আপডেট পাঠান বা আপনার সার্ভিস নিয়ে বিস্তারিত বলুন—ফলাফল অবশ্যই পাবেন। কারণ, যারা একবার আগ্রহ দেখিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয়বার কেনানো অনেক সহজ।

৩. ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং—বিশ্বাস তৈরি করার সেরা উপায়

আপনার ব্র্যান্ড যদি একজন জনপ্রিয় ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচিতি পায়, তাহলে তা বহুগুণে বেশি কার্যকর। ধরুন, ফেসবুক বা ইউটিউবের কোনো জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে রিভিউ দিলেন। তাদের ফলোয়াররা তাদের কথায় ভরসা করেন। ফলে আপনার পণ্য খুব দ্রুত একটা নির্দিষ্ট গ্রুপের মধ্যে পরিচিতি পায়।

বাংলাদেশে লোকাল ইনফ্লুয়েন্সারদের ব্যাপক প্রভাব আছে, বিশেষ করে ফ্যাশন, ফুড বা লাইফস্টাইল পণ্যের ক্ষেত্রে। ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে প্রচার মানে অনেকটা দারুণ রেকমেন্ডেশন পাওয়ার মতো!

৪. টেক্সট মার্কেটিং—বাংলাদেশে অবহেলিত, কিন্তু ভয়ংকর কার্যকর

আপনার মোবাইলে নিশ্চয়ই অনেক টেক্সট মেসেজ আসে—বড় বড় কোম্পানির ডিসকাউন্ট অফার বা নতুন কালেকশন জানায়। এটি শুধু বড় কোম্পানিগুলোর জন্য নয়, ছোট ই-কমার্স ব্যবসার জন্যও ক্রেজি কাজ করে।

ধরুন, আপনি ১০০ জন সম্ভাব্য ক্রেতার নাম্বার সংগ্রহ করেছেন। তাদের কাছে একটা সরাসরি টেক্সট পাঠান: “১০টা শার্ট কিনলে ১৫% ছাড় পাবেন, এই সপ্তাহে—অফার সীমিত!” এত সরাসরি মেসেজ দেখে কেউ কেউ সাড়া দেবেই।

৫. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং—ফেসবুক ছাড়াও অনেক দুনিয়া আছে

আপনার ই-কমার্স ব্যবসার জয়যাত্রার প্রধান হাতিয়ার অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়া, তবে কেবল ফেসবুক নয়। আপনার ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, বা এমনকি লিংকডইনকেও কাজে লাগান।

যে পণ্য আপনি বিক্রি করছেন, তার উপর ভিত্তি করে প্ল্যাটফর্ম বাছুন। উদাহরণস্বরূপ:

ফ্যাশন বা বিউটি প্রডাক্ট বিক্রি করলে ইনস্টাগ্রাম বা পিন্টারেস্ট দারুণ কাজ করে।

প্রোডাক্টের ব্যবহার দেখানোর মতো ভিডিও তৈরি করলে টিকটক বা ইউটিউবে সহজেই গ্রাহক পাওয়া যাবে।

৬. ব্র্যান্ডিং— ভবিষ্যতের বিনিয়োগ

অনেক ব্যবসায়ী ব্র্যান্ডিংকে “লাক্সারি কাজ” মনে করেন। আসলে, যদি ক্রেতারা প্রথম দেখায় আপনার নামে আস্থা পায়, তবে তারা শুধু একটা প্রোডাক্ট কিনবে না, বারবার আসবে।

আপনার লোগো, প্যাকেজিং, এবং কাস্টমারের সাথে সংযোগের ধরণ ব্র্যান্ডিংয়ের অংশ। ধরুন, আপনি পণ্য প্রতিটি ডেলিভারির সাথে ধন্যবাদ কার্ড পাঠাচ্ছেন, এতে একটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা তৈরি হচ্ছে। রিজেক্ট হওয়ার জায়গায় আপনি ক্রেতাদের মুগ্ধ করছেন।

৭. কম্বাইন্ড মার্কেটিং—একাধিক কৌশল একসাথে প্রয়োগ করুন

একটা ছোট গল্প শুনুন। একজন মাছ ধরতে গেল, একটা বড় জাল ফেলে রেখে অপেক্ষা করছে। অন্য কেউ একই সময় অনেকগুলো ছোট ছোট জাল ফেলে মাছ ধরছে। কে বেশি মাছ পাবে বলে মনে হয়?

একইভাবে, শুধু ফেসবুকের ওপর ভরসা না করে SEO, ইমেল, টেক্সট, এবং সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং একসাথে করলে আপনি আরও বেশি ক্রেতা ধরতে পারবেন। মার্কেটিং একা কোনো কৌশল নয়—এটা একটা দলগত খেলা, যেখানে প্রতিটা প্লেয়ার নিজের শক্তি নিয়ে খেলবে।

শেষ কথা

ই-কমার্স মার্কেটিংয়ের এই ৭টি কৌশল বাংলাদেশেও দারুণ কার্যকর। আপনার ব্যবসার লাভ বাড়াতে এবং ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা তৈরি করতে আজই এগুলোর বাস্তবায়ন শুরু করুন। বেশি কঠিন মনে হলে ধীরে ধীরে শুরু করুন। একটা ভালো সিস্টেম তৈরি করলেই দেখবেন, সেলস এমনভাবে বাড়বে আপনি নিজেও অবাক হবেন।

Scroll to Top