এইচএসসি বাংলা লোক-লোকান্তর সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
লোক-লোকান্তর আল-মাহমু গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। আমারও মন চৈত্রে পলাতক, পলাশে আর আমে ডালে ডালে সুবজ মাঠে মাঝবয়সী লালে দণ্ড দুই মুক্তি-সুখে জিরায়: মাটির কাছে সব মানুষ খাতক। … … … একটি গানে গহন স্বাক্ষরে জানো কি সেই গানের আমি চাতক? ক. “লোক-লোকান্তর” কোন জাতীয় কবিতা? খ. ‘আমার চেতনা যেন একটি শাদা সত্যিকার পাখি’চরণটির মধ্য দিয়ে কী প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকে ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতার সাদৃশ্য দিকটি ব্যাখ্যা কর। ঘ. উদ্দীপক ও ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতায় পাখি-রূপকের মধ্য দিয়ে যে চেতনা ব্যক্ত হয়েছে তা বিশ্লেষণ কর। ১ ২ ৩ ৪ ১ নং প্রশ্নের উত্তর ‘লোক-লোকান্তর’ আত্মপরিচয়মূলক কবিতা । ‘আমার চেতনা যেন একটি শাদা সত্যিকার পাখি’ কথাটির মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে নিরুদ্বিগ্ন শান্তির আবহ, যা সৃষ্টির উন্মোচনে নিরন্তর সাধনার উৎস। কবির কাব্যবোধ ও কাব্যেচেতনা শাদা এক সত্যিকার পাখির সাথে তুলনীয়। শাদা সমস্ত রঙের মিলিত রূপ, অনন্য অসাধারণ তার আকর্ষণ ও কর্মপ্রেরণা। সবুজ অরণ্যের প্রাণশক্তি আর চন্দনের সুগন্ধ তাঁর চিরদিনের অনুপ্রেরণা ও সৃজনশক্তির উৎস। কবি তাই তাঁর কাব্যচেতনায় ধারণ করেছেন শাদা এক পাখি আর অন্তরে লালন করেছেন তাঁর অনুপম কবিসত্তা, যা রূপ-সৌন্দর্য বর্ণবৈচিত্র্যের একক সত্তা। কবি তাঁর উৎসাহ ও প্রেরণা কাব্যসৃষ্টির মধ্যে আত্মমগ্ন হন, একই সাথে বিচ্ছিন্নতায় বেদনাপ্লুত হন। উদ্দীপকে ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতার বৈচিত্র্যময় অপরূপ প্রকৃতির উচ্ছ¡াসের মধ্যে কবি নিজ কাব্যপ্রেরণার উচ্ছ¡াস ও উৎসের সন্ধান পেয়েছেন, এটাই ব্যক্ত হয়েছে। কবিসত্তা ও অনুপম কাব্যসৃষ্টির উৎস বর্ণ বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। প্রকৃতির কাছে থেকেই কবি তাঁর কবিতার বিষয় ও উপাদান আহরণ করেন। প্রকৃতি তাঁর মন ও মননে কাব্যসত্তার উন্মেষ ঘটায়, অনুপ্রাণিত করে এবং কাব্য সৃষ্টির মধ্যে মগ্নতার আবহ তৈরি করে দেয়। কবি প্রকৃতির প্রত্যেকটি উপাদান পর্যবেক্ষণ করেন, তার সৌন্দর্য উদ্ধার করেন, তার মাধুর্য ও সুর আত্মস্থ করেন এবং তারপর কবিসত্তার ভালো লাগাকে পুষ্ট ও সমৃদ্ধ করেন। তাঁর ভেতরে চেতনার বসবাস তখন প্রাণের মধ্যে, প্রকৃতির মধ্যে, সৃষ্টির মধ্যে নিশ্চিত হয়ে যায়। উদ্দীপকেও প্রকৃতির বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য-মাধুর্য প্রতিটি স্তরে প্রতিটি ক্ষেত্রে বহমান। সকাল-সন্ধ্যা-দুপুরে তার রূপের পরিবর্তন হয়, আসে বাধা-বন্ধনহারা ছন্দ-মাতন; শিউলি ফুলে আর দূর্বাঘাসে তার মাতন জাগে। কবিসত্তার অনুরণনে কবির মধ্যে জাগে ভাবোচ্ছ¡াস, কবি আনন্দ-উদ্বেল হয়ে তাঁর চারপাশের প্রকৃতির মধ্যে আনন্দ-রহস্য অনুভব করেন। সে রহস্য ও আনন্দ তাঁকে কাব্যসৃষ্টিতে প্রেরণা জোগায়। সুতরাং উদ্দীপকে ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতার কাব্য প্রেরণার উচ্ছ¡াসের দিকটিই ব্যক্ত হয়েছে। উদ্দীপকে ব্যক্তি ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতায় পাখি-রূপকের মধ্যে একই চেতনা ব্যক্ত হয়েছে। উদ্দীপকে পাখি প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় রূপের অনুপম উচ্ছ¡াস প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে রয়েছে লোকালয়ের জীবনঘনিষ্ঠ নানা শিল্পিত উপাদান, যা কাব্য সৃষ্টির উৎস হয়ে এসেছে এতকাল। ঊষা-দুপুর-সন্ধ্যায় প্রকৃতির রূপ ও রং পরিবর্তন, পরিবেশের বৈচিত্র্য কবির ভাবুক মনেও প্রভাব ফেলে। জীবনের পথে চলতে আসে নানা সমস্যা-বাধা; তা গতি ছন্দে প্রভাব ফেলে অথবা ইতিবাচক মাতন জাগায়। পাগলার মেলা, গাজনের মেলা আমাদের ঐতিহ্যের স্মারক, আশ্বিনের শিউলি ফোটার এবং ঝরে পড়ার মনোরম দৃশ্য এবং শিশিরভেজা দূর্বাঘাসের হাসি স্বাভাবিকভাবেই কবিচিত্তকে উজ্জীবিত করে। এভাবে প্রকৃতি-পরিবেশ- ঐতিহ্যের অনুপ্রেরণায়ই কবি তাঁর সৃষ্টিতে আত্মমগ্ন হন। ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতায়ও আমরা কবির অস্তিত্বজুড়ে চিরায়ত বাংলার প্রকৃতি রূপ ও সৌন্দর্যের প্রভাব লক্ষ কবি। সবুজ অরণ্য, বনচারী বাতাসের খেলা, চন্দনের ডাল, কাটা সুপারির রং, লবঙ্গফুলের রূপ কবিকে মোহমুগ্ধ করে রাখে। বনঝোপের উপর রঙের বিচিত্র খেলা দেখে কবি চোখ ফেরাতে পারেন না, কাব্য সৃষ্টির আনন্দ তাঁকে উন্মনা করে তোলে। তিনি প্রকৃতির মধ্যেই খুঁজে পান সৃষ্টির রহস্য, তাকে নিয়েই চলে কবির কাব্যসৃষ্টির আত্মমগ্ন খেলা। উদ্দীপকে প্রকৃতির যে বৈচিত্র্য উপস্থাপিত হয়েছে, তা রঙে-রূপে-বৈশিষ্ট্যে বিভিন্ন ও অনন্য। এতে আছে এদেশের ঐতিহ্যের প্রকাশ, যা ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতার কবিভাবনাকে সহজেই আরও পুষ্ট করেছে। অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। ‘তবু সেই সুনিশ্চিত বাণী অস্পষ্ট স্বপ্নের মতো অনুভূতি ঘিরে স্পর্শ তার রেখে যায়, প্রলোভন রেখে যায় আরও, আমি তাকে পাইনি আমার চেতনার সহজ সন্ধানে। ক. ‘আমার চেতনা’ কী? খ. ‘আমার চেতনা যেন একটি শাদা সত্যিকার পাখি’বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? গ. উদ্দীপকের সাথে ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতার কী বৈসাদৃশ্য আছে, তা তুলনামূলক আলোচনা করে বুঝিয়ে দাও। ঘ. ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতায় কবির পাওয়ানা পাওয়ার কোনো দ্ব›দ্ব নেই।’ ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতা অনুসরণে এর সপক্ষে তোমার যুক্তি তুলে ধর। ১ ২ ৩ ৪ ২ নং প্রশ্নের উত্তর ‘আমার চেতনা’ হলো কবির কবিসত্তা বা কাব্যচেতনা। ‘আমার চেতনা যেন একটি শাদা সত্যিকার পাখি’Ñ বলতে কবি তাঁর কবিসত্তা বা কাব্য বোধকে এক সত্যিকার পাখির প্রতিমায় উপস্থাপন করেছেন। পাখি প্রাণচাঞ্চল্য ও প্রাণস্ফ‚র্ততার প্রতীক। সে স্বাধীন ও স্বচ্ছন্দ, গতিশীল ও সাবলীল। নিজের পছন্দমতো নিজের প্রয়োজনে সে নীল আকাশে পাখা মেলে, চলে যায় বহু দূর আবার ফিরে আসে নীড়ে। শাদা রং সব রঙের মিশেল, সব রং নিয়ে শক্তিশালী এক শান্তির প্রতীক। শাদা সব কিছুর সাথে মিশে থাকে, আবার সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক হয়ে যায়। কবির কাব্যচেতনারূপ পাখি তখন হয়ে ওঠে প্রাণময় এক অস্তিত্ব আর কবিসত্তা সুন্দর ও রহস্যময়তার স্বপ্নজগতের প্রতীক। প্রাণের মধ্যে, প্রকৃতির মধ্যে সৃষ্টির মধ্যে তার বসবাস। শাদা পাখি-রূপ কবি সৃষ্টির প্রেরণায় চিরকালই উদ্বুদ্ধ হন। পাখির মতো নতুন নতুন রূপময়তার রহস্যে মগ্ন হওয়ার মধ্যেই তাঁর আনন্দ ও তৃপ্তি। উদ্দীপকের সাথে ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতার এক উজ্জ্বল ও চমৎকার বৈসাদৃশ্য আছে। কেননা উদ্দীপকের কবি প্রকৃতি-রহস্যের খুব সামান্যই তার সৃষ্টির মধ্যে ধরে রাখতে পেরেছেন আর অন্যদিকে ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতার কবি প্রকৃতি রহস্যকে উন্মোচন করে তা সৃষ্টির মধ্যে ধারণ করে আনন্দে আত্মমগ্ন হন। ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতায় কবির কাব্যবোধ ও কাব্যচেতনা শাদা পাখির রূপে স্বাধীন ও স্বচ্ছন্দ। তাঁর অস্তিত্বজুড়ে কেবল চিরায়ত গ্রাম বাংলার অফুরন্ত রং ও রূপের উৎসারণ। মাটি আর আকাশে মেলে ধরা তাঁর নিসর্গ-উপলব্ধির অনিন্দ্যপ্রকাশ। এই অনিন্দ্যসুন্দর রূপ ও রংকে কবি ধারণ করে, তাঁর সৃষ্টিতে। এ সময় তাঁর কাছে একমাত্র সত্য তাঁর চেতনার জগৎ, আর সব মিথ্যা। সৃষ্টির মগ্নতার মধ্যেই তাঁর অপার তৃপ্তি আর আনন্দ। অন্যদিকে উদ্দীপকের কবির কাছে প্রকৃতির বিপুল রহস্য আর পরিমেয় সৌন্দর্যের আস্বাদন পরম আকাক্সিক্ষত। তিনি সেই অপার রূপের, অপরিমেয় সৌন্দর্যের ও অশেষ রহস্যের কিছু দ্যুতি লাভ করেছেন। সেই রহস্যময় জগতের রং-রূপ-তাল-লয়-ছন্দ অনুভব করেছেন। কিন্তু তাঁর নিজ সৃষ্টির মধ্যে তা ধারণ করতে পেরেছেন সামান্যই। এজন্য তাঁর হৃদয়জুড়ে আনন্দ ও তৃপ্তি নেই আছে কেবল আক্ষেপ। তাই সংগত কারণেই আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকের সাথে ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতার বৈসাদৃশ্য উজ্জ্বল ও স্পষ্ট। সৃষ্টির মধ্যেই কবির আনন্দ। সৃষ্টির প্রকাশ পরিপূর্ণ হলে কবি আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। তখন কবির অন্তরে পাওয়া না পাওয়ার কোনো দ্ব›দ্ব থাকে না, কোনো অতৃপ্তি বা আক্ষেপ থাকে না। তা ছাড়া সৃষ্টির আনন্দেই কবি নতুন সৃষ্টিতে অনুপ্রাণিত হন। প্রকৃতির রূপ-সৌন্দর্য ও রহস্য উন্মোচনে মুগ্ধ ও কৌত‚হলী কবি অপার আনন্দ অনুভব করেন। এই আনন্দই তাঁর পরম পাওয়া। এ সময় কবির মধ্যে পাওয়ানা পাওয়ার কোনো দ্ব›দ্ব থাকে না, বরং থাকে অপার তৃপ্তি। ‘লোক-লোকান্তর’ কবিতার কবি
এইচএসসি বাংলা লোক-লোকান্তর সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর Read More »