নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ২য় সারাংশ ও সারমর্ম
সারাংশ ও সারমর্ম কোনো পদ্য বা গদ্যের মূলভাব বা বক্তব্যকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করার নামই সারমর্ম বা সারাংশ। সাধারণত পদ্যের ভাব সংক্ষেপে প্রকাশকে সারমর্ম এবং গদ্যের বক্তব্য সংক্ষেপে প্রকাশ করাকে সারাংশ বলে। সারমর্ম বা সারাংশ লেখার সময় : ১. যে পাঠটুকুর সারমর্ম বা সারাংশ রচনা করতে হবে, সেটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। ২. বাড়তি বিষয় বর্জন করতে হবে। কখনো কোনো পাঠের মূল ভাব উপমা রূপকের আড়ালে থাকতে পারে, তা বুঝে মূল ভাব লিখতে হবে। ৩. সারাংশ বা সারমর্মে উপমা, রূপক-এসব বাদ দিয়ে লিখতে হবে। ৪. প্রত্যক্ষ উক্তি বর্জন করে পরোক্ষ উক্তিতে লিখতে হবে। ৫. মূল অংশে উদ্ধৃতি থাকলে প্রয়োজনে সেই উদ্ধৃতির ভাবটুকু উদ্ধৃতি ছাড়া লিখতে হবে। ৬. বাহুল্য বর্জনপূর্বক মূলভাব সংক্ষেপে লিখতে হবে। ৭. মূল বক্তব্যটি নিজের ভাষায় সাজিয়ে সহজ ও সাবলীল করে লিখতে হয়। সারাংশ ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই হলো জ্ঞানীর কাজ। পিঁপড়ে-মৌমাছি পর্যন্ত যখন ভবিষ্যতের জন্য ব্যতিব্যস্ত তখন মানুষের কথা বলাই বাহুল্য। ফকির-সন্ন্যাসী যে ঘর-বাড়ি ছেড়ে আহার-নিদ্রা ভুলে পাহাড়-জঙ্গলে চোখ বুঁজে বসে থাকে, সেটা যদি নিতান্ত গঞ্জিকার কৃপায় না হয়, তবে বলতে হবে ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে। সমস্ত জীব-জন্তুর দুটো চোখ সামনে থাকবার মানে হল ভবিষ্যতের দিকে যেন নজর থাকে। অতীতের ভাবনা ভেবে লাভ নেই। পণ্ডিতেরা ত বলে গেছেন, ‘গতস্য শোচনা নাস্তি’। আর বর্তমান সে-ত নেই বললেই চলে। এই যেটা বর্তমান সেই-এই কথা বলতে বলতে অতীত হয়ে গেল। কাজেই তরঙ্গ গোনা আর বর্তমানের চিন্তা করা, সমানই অনর্থক। ভবিষ্যৎটা হল আসল জিনিস। সেটা কখনও শেষ হয় না। তাই ভবিষ্যতের মানব কেমন হবে, সেটা একবার ভেবে দেখা উচিত। সারাংশ : বিচক্ষণ মানুষ কেবল ভবিষ্যৎ নিয়েই ভাবিত হন। অতীত গত হয়েছে বলে গুরুত্বহীন, আর বর্তমানও এত ক্ষণস্থায়ী যে তাও গুরুত্ব পেতে পারে না। বস্তুত ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করার জন্য ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নিয়ে ভাবনা-চিন্তাই দূরদর্শিতার লক্ষণ। শিক্ষা কেউ কাউকে দিতে পারে না। সুশিক্ষিত লোকমাত্রই স্বশিক্ষিত। আজকের বাজারে বিদ্যাদাতার অভাব নেই, এমনকি এক্ষেত্রে দাতাকর্ণেরও অভাব নেই এবং আমরা আমাদের ছেলেদের তাদের দ্বারস্থ করেই নিশ্চিত থাকি এই বিশ্বাসে যে, সেখানে থেকে তারা এতটা বিদ্যার ধন লাভ করে ফিরে আসবে যার সুদে তারা বাকি জীবন আরামে কাটিয়ে দিতে পারে, কিন্তু এ বিশ্বাস নিতান্ত অমূলক। মনোরাজ্যেও দান গ্রহণসাপেক্ষ, অথচ আমরা দাতার মুখ চেয়ে গ্রহীতার কথাটা একেবারে ভুলে যাই। এ সত্য ভুলে না গেলে আমরা বুঝতুম যে, শিক্ষকের সার্থকতা শিক্ষাদান করায় নয়, ছাত্রকে তা অর্জন করতে সক্ষম করায়। শিক্ষক ছাত্রকে শিক্ষার পথ দেখিয়ে দিতে পারেন, তার কৌতূহল উদ্রেক করতে পারেন, তার বুদ্ধি-বৃত্তিকে জাগ্রত করতে পারেন, মনোরাজ্যের ঐশ্বর্যের সন্ধান দিতে পারেন, তার জ্ঞানপিপাসাকে জ্বলন্ত করতে পারেন, এর বেশি আর কিছু পারেন না। সারাংশ : সুশিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রই স্বয়ংশিক্ষিত। অপরের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণের ভাবনা মস্ত বড় ভুল। আমরা শিক্ষকের কাজ ছাত্রকে লেখাপড়ার কাজে সাহায্য করা, তার হৃদয়ে জ্ঞানের পিপাসা বৃদ্ধি করা এবং কৌত‚হল সৃষ্টি করা। মানুষমাত্রই নিজে নিজের শিক্ষক। জ্ঞানের ব্যাপারে শিক্ষক সহায়ক মাত্র। অতীতকে ভুলে যাও। অতীতের দুশ্চিন্তার ভার অতীতকেই নিতে হবে। অতীতের কথা ভেবে ভেবে অনেক বোকাই মরেছে। আগামীকালের বোঝা অতীতের বোঝার সঙ্গে মিলে আজকের বোঝা সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়। ভবিষ্যৎকেও অতীতের মত দৃঢ়ভাবে দূরে সরিয়ে দাও। আজই তো ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎ কাল বলে কিছু নেই। মানুষের মুক্তির দিন তো আজই। আজই ভবিষ্যতের কথা যে ভাবতে বসে সে ভোগে শক্তিহীনতায়, মানসিক দুশ্চিন্তায় ও স্নায়বিক দুর্বলতায়। অতএব, অতীতের এবং ভবিষ্যতের দরজায় আগল লাগাওÑ আর শুরু কর দৈনিক জীবন নিয়ে বাঁচতে। [ঢা. বো. ১১, ব. বো. ১৩] সারাংশ : অতীতের ব্যর্থতার জন্য আফসোস করে বর্তমানকে নষ্ট করা উচিত নয়। বরং বর্তমানকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত সবচেয়ে বেশি। কারণ, আজকের সাধনাই সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে বিনির্মাণ করবে। কারণ হতাশা জীবন শক্তিকে নিঃশেষিত করে। এটা স্মরণ রাখা কর্তব্য যে, পৃথিবীতে যেখানে এসে তুমি থামবে, সেখান হতেই তোমার ধ্বংস আরম্ভ হবে। কারণ তুমিই কেবল একলা থামবে, আর কেউ থামবে না। জগৎ প্রবাহের সঙ্গে সমগতিতে যদি না চলতে পার তো প্রবাহের সমস্ত সচল বেগ তোমার উপর এসে আঘাত করবে, একেবারে বিদীর্ণ বিপর্যস্ত হবে কিংবা অল্পে অল্পে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে কালস্রোতের তলদেশে অন্তর্হিত হয়ে যাবে। হয় অবিরাম চল এবং জীবনচর্চা কর, নয় বিশ্রাম কর এবং বিলুপ্ত হও, Ñ পৃথিবীর এই রকম নিয়ম। [কু. বো. ০৮] সারাংশ : গতিময়তাই জীবন। গতির নিরন্তর ছন্দে প্রতিনিয়ত চলেছে জীবনপ্রবাহ। এই অবিরাম চলার মধ্যে যে গতি হারায় সেই হয়ে পড়ে নিশ্চল এবং মৃত। তাই জীবনের জন্য প্রয়োজন নিরন্তর চলমানতা। তা না হলে স্থবিরতা ও হতাশা গ্রাস করবে। রূপার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায় আর ক’টি লোক। শতকরা নিরানব্বইটি মানুষকেই চেষ্টা করতে হয়, জয় করে জিততে হয় তার ভাগ্যকে। বাঁচে সেই যে লড়াই করে প্রতিক‚লতার সঙ্গে। পলাতকের স্থান জগতে নেই। সমস্ত কিছুর জন্যই চেষ্টা দরকার। চেষ্টা ছাড়া বাঁচা অসম্ভব। সুখ চেষ্টারই ফল-দেবতার দান নয়। তা জয় করে নিতে হয়, আপনা আপনি পাওয়া যায় না। সুখের জন্য দু’রকম চেষ্টা দরকার, বাইরের আর ভিতরের। ভিতরের চেষ্টার মধ্যে বৈরাগ্য একটি। বৈরাগ্যও চেষ্টার ফল, তা অমনি পাওয়া যায় না। কিন্তু বাইরের চেষ্টার মধ্যে বৈরাগ্যের স্থান নেই। সারাংশ : প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রতিক‚লতার সঙ্গে সংগ্রাম করেই সৌভাগ্যকে ছিনিয়ে আনতে হয়। সৌভাগ্যবান সেই যে চেষ্টা করে, সংগ্রাম করে। যে চেষ্টা করে, সংগ্রাম করে সেই টিকে থাকে। বাঁচার অধিকার অর্জন করতে পারলেই সুখপাখি তার হাতে এসে ধরা দেয়। দুই ধরনের চেষ্টার মধ্যে বৈরাগ্য অন্যতম। বৈরাগ্যের জন্যও চেষ্টা দরকার। আজকের দুনিয়াটা আশ্চর্যভাবে অর্থের বা বিত্তের উপর নির্ভরশীল। লাভ ও লোভের দুর্নিবার গতি কেবল আগে যাবার নেশায় লক্ষ্যহীন প্রচণ্ডভাবে শুধু আত্মবিনাশের পথে এগিয়ে চলেছে। মানুষ যদি এই মূঢ়তাকে জয় না করতে পারে, তবে মনুষ্যত্ব কথাটাই হয়তো লোপ পেয়ে যাবে। মানুষের জীবন আজ এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে সেখান থেকে আর হয়তো নামবার উপায় নেই, এবার সিঁড়িটা না খুঁজলেই নয়। উঠবার সিঁড়িটা না খুঁজে পেলে আমাদের আত্মবিনাশ যে অনিবার্য তাতে আর কোনো সন্দেহ থাকে না। [চ. বো. ১৫, সি. বো. ১৫, কু. বো. ১২] সারাংশ : আজকের দুনিয়ায় লক্ষ্যহীন নেশার মতো মানুষ কেবল ধন-সম্পদ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা করছে। এই যে অর্থ ও সম্পদের দিকে মানুষের নেশা, সে-নেশা তার আত্মবিকাশের পথ সংকীর্ণ করবে। কাজেই আত্মবিনাশের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ওপরে ওঠার সিঁড়ির সন্ধান পাওয়া প্রয়োজন। মনুষ্যত্ব ব্যাপক হারে লোপ পেতে থাকলে আমাদের ধ্বংস সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী। জগতের অন্যান্য প্রাণীর সহিত মানুষের পার্থক্যের কারণÑ মানুষ বিবেক ও বুদ্ধির অধিকারী। এই বিবেক, বুদ্ধি ও জ্ঞান নাই বলিয়া আর সকল প্রাণী মানুষ অপেক্ষা নিকৃষ্ট। জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের উৎকর্ষ সাধন করিয়া মানুষ জগতের বুকে অক্ষয় কীর্তি স্থাপন করিয়াছে, জগতের কল্যাণ সাধন করিতেছে; পশুবল ও অর্থবল মানুষকে বড় বা মহৎ করিতে পারে না। মানুষ বড় হয় জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের বিকাশে। জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের প্রকৃত বিকাশে জাতির জীবন উন্নত হয়।
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ২য় সারাংশ ও সারমর্ম Read More »