সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় অধ্যায়-৩ পরিবারে শিশুর বেড়ে ওঠা
অধ্যায়-৩ পরিবারে শিশুর বেড়ে ওঠা সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন- ১ অধরা ও অবন্তি দুই বান্ধবী। অবন্তিদের বাসায় তার একটি ছোট ভাই থাকে। অধরাদের বাসায় অবন্তি বেড়াতে গিয়ে দেখতে পায় যে একটি বড় ডাইনিং টেবিলে চাচা-চাচি, দাদা-দাদিসহ অনেকে খাচ্ছে এবং খাওয়া শেষে অবন্তি অধরাসহ দাদির গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ল। অবন্তির খুব ভালো লাগল। ক. সামাজিকীকরণ কী? খ. শিশুর ভাষা শিক্ষার প্রথম মাধ্যম ‘মা’-ব্যাখ্যা কর। গ. অবন্তিদের পরিবার কোন ধরনের পরিবার-ব্যাখ্যা কর। ঘ.“সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে অধরাদের পরিবারের ভ‚মিকা বেশি”এ বক্তব্যের সাথে তুমি কি একমত? তোমার মতামত দাও। ক শিশু যেভাবে সামাজিক হয়ে গড়ে ওঠে তাকে সামাজিকীকরণ বলে। খ শিশুর সামাজিকীকরণের প্রথম সূত্রপাত ঘটে মার কাছ থেকে। যেমন : শিশুর ভাষা শিক্ষার প্রথম মাধ্যম ‘মা’। এছাড়াও শিশুর খাদ্যাভ্যাস ও আচরণেও মার প্রভাব লক্ষ করা যায়। মা-ই শিশুকে প্রথম ঘুম পাড়ায়। পরবর্তীতে বর্ণ শিক্ষা, শব্দ শিক্ষা, ছড়া শিক্ষা সবকিছু মা-ই দিয়ে থাকেন। গ অবণ্ডিদের পরিবার একটি একক পরিবার। পরিবার একটি স্থায়ী সামাজিক সংগঠন। সকল সমাজেই পরিবার রয়েছে। সব পরিবারের ধরন একরকম নয়। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকেও পরিবারের ধরন ভিন্ন। যেমন : স্বামী-স্ত্রী ও অধিবাহিত সন্তান নিয়ে একক পরিবার গঠিত হয়। আবার সন্তান উপযুক্ত হলে বিয়ে করে আলাদা পরিবার গঠন করে। তখন আরেকটি নতুন একক পরিবার গঠিত হয়। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে একক পরিবারের সংখ্যা অনেক বেশি। তদ্রæপ উদ্দীপকের অবন্তি তার বাবা-মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে একটি পরিবারে বাস করে। এটা একক পরিবারেরই বৈশিষ্ট্য। অতএব, সুনিশ্চিতভাবেই বলা যায়, অবন্তিদের পরিবারের সাথে পাঠ্যবইয়ের একক পরিবার সম্পূর্ণ সাদৃশ্যপূর্ণ। ঘ হ্যাঁ, সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে অধরাদের পরিবারের ভ‚মিকা বেশি। উদ্দীপকের এ বক্তব্যের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে কয়েকটি একক পরিবার মিলে যৌথ পরিবার গঠিত হয়। যৌথ পরিবারে মা-বাবা, ভাই, বোন, চাচা-চাচি, দাদা-দাদি সবাই একত্রে বাস করে। যৌথ পরিবারের সকল সদস্যদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে শিশুর সামাজিকীকরণের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। তেমনি উদ্দীপকেও দেখা যায়, অধরাদের বাড়িতে তারা চাচা-চাচি, দাদা-দাদি, মা-বাবা সবাই একসাথে বাস করে। দাদির কাছ থেকে সে নানাধরনের গল্পও শোনে। যা তার সামাজিকীকরণে অনেক ভ‚মিকা রাখে। শুধু অধরার ক্ষেত্রেই নয় যৌথ পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে শিশুর পারস্পরিক আচার-আচারণিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে শিশু সহযোগিতা, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা বিভিন্ন গুণ অর্জন করার সামাজিক শিক্ষা পায়। যা শিশুর সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে যৌথ পরিবারের ভ‚মিকা অনেক বেশিউক্তিটি যথার্থই সত্য। প্রশ্ন- ২ রতœা ও রূপা চাচাতো বোন। একই বাড়িতে তারা দাদা-দাদিসহ বসবাস করতো। তাদের মধ্যে খুবই বন্ধুত্ব। রতœার বাবা চাকরি নিয়ে অন্যত্র বদলি হলে রতœা মা-বাবার সাথে চলে গেলো। রূপা দাদা-দাদীসহ অন্যদের সাথে বসবাস করতে লাগলো। অনেকদিন পর রতœা ও রূপার দেখা হলে তারা আগের মত মিশতে পারে না। রূপা মিশতে গেলেও রতœা এড়িয়ে চলতে চায়। রূপা সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে চায়। সবাইকে সহযোগিতা করতে চায়। এজন্য সবাই রূপাকে খুব পছন্দ করে। ক. সাধারণত শিশুরা ধর্মীয় শিক্ষা কোথায় পায়? খ. পরিবার চিরস্থায়ী সামাজিক সংগঠনব্যাখ্যা কর। গ. রতœার এরূপ আচরণের কারণ ব্যাখ্যা কর। ঘ.“রূপার আচরণে যৌথ পরিবারের আবদান সর্বাধিক”তুমি কি একমত? উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও। ক সাধারণত শিশুরা ধর্মীয় শিক্ষা পরিবার থেকে পায়। খ পরিবার থেকে মানবজাতি বিকাশ লাভ করেছে এবং তার সাথে সমাজেরও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। একই সঙ্গে বসবাসকারী কয়েকজন ব্যক্তির সমষ্টিকে পরিবার বলে। যা বিয়ে, আত্মীয়তা অথবা পিতা-মাতার সূত্রের বন্ধনে আবদ্ধ একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। তাই বলা যায়, পরিবার একটি চিরস্থায়ী সামাজিক সংগঠন। গ উদ্দীপকের রতœা বন্ধুদেরকে এড়িয়ে চলতে চায়। এর পেছনে নানাধরনের কারণ বিদ্যমান। একজন শিশু পরিবার থেকে বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ববোধ প্রভৃতি শিক্ষা গ্রহণ করে। বাংলাদেশের শহরের যেসব পিতা-মাতা উভয়ই চাকুরিজীবী, সেসব পরিবারে শিশুকে গৃহভৃত্যের বা আত্মীয় স্বজনের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। এসব পরিবারের পিতা-মাতা শিশুদেরকে সময় দিতে পারে না। ফলে শিশুর সামাজিকীকরণের বিকাশ ঘটে না। এছাড়াও পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, পিতা-মাতার বিচ্ছেদ, ভিন্ন গৃহে বসবাস, উভয়ের মৃত্যু প্রভৃতি শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণে বাধার সৃষ্টি করে। ফলে শিশুর আচরণে একাকীত্ববোধ, প্রতিহিংসা, পলায়ন মনোভাব, আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব প্রভৃতি দেখা দেয়। এসবই সামাজিকীকরণে সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে হয়ে থাকে। তদ্রæপ উদ্দীপকেও দেখা যায়, রতœার বাবা-মা চাকুরিজীবী হওয়ায় রতœার মধ্যে ব্যাপক একাকীত্ব সৃষ্টি হয়েছে যার কারণে যে বন্ধুদের সাথে মিশতে পারে না। এমনকি তাদেরকে এড়িয়েও চলে। অতএব বলা যায় যে, উদ্দীপকের রতœা সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের অভাবে এমন বন্ধুত্বহীন আচরণ করে। ঘ হ্যাঁ, রূপার আচরণে যৌথ পরিবারের অবদান সর্বাধিক। আমি এ বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত। যৌথ পরিবারে দাদা-দাদি, চাচা-চাচিসহ অন্যান্য সদস্যদের সাথে শিশুর পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ ধরনের সম্পর্কের মাধ্যমে শিশু পারস্পরিক সহযোগিতা, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা, সহনশীলতা, নিরাপত্তাবোধ, সমানভাগের অংশীদারসহ বিভিন্ন গুণ অর্জন করার শিক্ষা পায়। যা শিশুর সামাজিকীকরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মূলত পরিবার শিশুর সামাজিকীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। শিশুর জীবনের ভালো ও খারাপ অভ্যাস এসবই পরিবারেরই ফল। তদ্রæপ উদ্দীপকের রূপার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ লক্ষ করা যায়। কারণ সে তার বাবা-মা, দাদা-দাদিসহ একই পরিবারে বসবাস করে। এতে রূপার ভিতরে পরিবারের সদস্যদের ভালো আচরণগুলো ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। এছাড়াও যৌথ পরিবারের মধ্যে বসবাস করলে শিশুর মধ্যে সামাজিক নীতিবোধ, নাগরিক চেতনাবোধ, ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালোবাসা জন্মে। পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকের রূপার এরূপ বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে যৌথ পরিবারের অবদান যে সর্বাধিক তা অনস্বীকার্য। প্রশ্ন- ১ চার মাসের ছোট্ট নীলাদ্রিকে দাদু কোলে নিয়ে আদর করে বলেন, এ হচ্ছে চিরস্থায়ী সামাজিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এ ধরনের সংগঠন থেকে মানবজাতি বিকাশ লাভ করেছে এবং সাথে সাথে সমাজের কাক্সিক্ষত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ক. শহুরে পরিবারের প্রধান রূপ কী? ১ খ. পরিবর্তনশীল পরিবার বলতে কী বোঝায়? ২ গ. উদ্দীপকে কোন সামাজিক সংগঠন নির্দেশিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ৩ ঘ.উক্ত সংগঠনের ধরণসমূহ পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ৪ ক শহুরে পরিবারের প্রধান রূপ হচ্ছে ক্ষুদ্র পরিবার। খ পরিবর্তনশীল পরিবার বলতে মূলত ধরন পরিবর্তন হয়ে যে পরিবারের সৃষ্টি হয় সে পরিবারকে বোঝায়। যেমন : গ্রামীণ যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবারের সৃষ্টি হয়। অধিক জনসংখ্যা, পারিবারিক দ্ব›দ্ব, বিবাহ বিচ্ছেদ, নারীর কর্মসংস্থান প্রভৃতি কারণে পরিবারের এ ধরনের পরিবর্তন সূচীত হয়। গ উদ্দীপকে সামাজিক সংগঠন পরিবার সম্পর্কে নির্দেশিত হয়েছে। একই সঙ্গে বসবাসকারী কয়েকজন ব্যক্তির সমষ্টিকে পরিবার বলে। এটি বিয়ে, আত্মীয়তা অথবা পিতামাতার সূত্রের বন্ধনে আবদ্ধ একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এর সদস্যদের মধ্যে থাকে গভীর সম্পর্ক। যার মূলে রয়েছে স্নেহ, মায়া-মমতা এবং আবেগীয় সম্পর্ক। সমাজের প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবার নানারকম দায়িত্ব পালন করে থাকে। এদের মধ্যে বংশরক্ষা ও সামাজিকীকরণ অন্যতম। আবার সৃষ্টির শুরু থেকে আজপর্যন্ত পরিবারের ধরনে ও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া পরিবার হচ্ছে শিশু বেড়ে ওঠার প্রথম সূতিকাগার। এর মাধ্যমেই শিশুর সামাজিকীকরণ শুরু হয়। আদিম সমাজে পরিবার ব্যবস্থা যেমন ছিল বর্তমানে তেমনটি নেই। নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে পরিবার আধুনিক রূপ লাভ করেছে; যার প্রতিচ্ছবি উদ্দীপকে তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকে চিরস্থায়ী সামাজিক সংগঠন পরিবারের
সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় অধ্যায়-৩ পরিবারে শিশুর বেড়ে ওঠা Read More »