ত্রয়োদশ অধ্যায়
কেন্দ্রীয় ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারণা
যে ব্যাংককে কেন্দ্র করে দেশের মুদ্রাবাজার ও ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে ও পরিচালিত হয় তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে। অধ্যাপক সেয়ার্সের মতে, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা সরকারের অধিকাংশ অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদন করে এবং যা উক্ত কার্যাবলি সম্পাদনকালে বিভিন্ন উপায়ে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যাবলির ওপর প্রভাব বিস্তার করে সরকারের আর্থিক নীতি বাস্তবায়ন করে থাকে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্দেশ্য
১. বলিষ্ঠ মুদ্রাবাজার গঠন ও নিয়ন্ত্রণ
২. অর্থনৈতিক উন্নয়ন
৩. নোট ও মুদ্রা প্রচলন
৪. বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ
৫. দেশের মুদ্রা মান নিয়ন্ত্রণ
৬. ব্যাংকসমূহের ব্যাংকার
৭. নিকাশ ঘর হিসাবে কাজ করা
৮. ঋণ নিয়ন্ত্রণ
৯. সরকারকে পরামর্শ দেয়া
১০. মূল্যস্তর স্থিতিশীল রাখা
১১. সরকারের ব্যাংক
১২. জনকল্যাণ
১৩. সম্পদের সুষম বণ্টন
১৪. মূলধন গঠনের সহায়তা করা
১৫. সুসংগঠিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা
১৬. ব্যাংক ব্যবস্থার পথপ্রদর্শক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলি
ক. সাধারণ কার্যাবলি :
১. নোট ও মুদ্রা প্রচলন
২. মুদ্রাবাজারের অভিভাবক
৩. সহজ বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি
৪. ঋণ নিয়ন্ত্রণ
৫. মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ
৬. বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ
৭. মূল্যস্তর স্থিতিশীল রাখা
৮. বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল সংরক্ষণ
৯. ব্যাংক ব্যবস্থার উন্নয়ন
১০. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি
১১. সরকার কর্তৃক গৃহীত ঋণের তদারক।
খ. সরকারের ব্যাংক হিসাবে সম্পাদিত কার্যাবলি
১. ঋণের উৎস
২. তহবিল সংরক্ষণ
৩. হিসাব সংরক্ষণ
৪. লেনদেন সম্পাদন
৫. বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয়
৬. উপদেষ্টা
৭. তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
৮. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী
৯. সরকারের প্রতিনিধিত্ব।
গ. সকল ব্যাংকের ব্যাংকার হিসাবে সম্পাদিত কার্যাবলি
১. অনুমতিদান ও তালিকাভুক্তকরণ
২. কার্যরত ব্যাংকের নতুন শাখা
৩. নিকাশ ঘর
৪. ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল
৫. বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ
৬. হিসাবপত্র পরীক্ষা
৭. উপদেষ্টা ও পরামর্শ দাতা
৮. বাধ্যতামূলক তহবিল সংরক্ষণ
৯. অন্যান্য ব্যাংকের প্রতিনিধি
১০. ঋণ আদায়
১১. বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নয়ন।
ঘ. অন্যান্য কার্যাবলি
১. কৃষি উন্নয়ন
২. শিল্প উন্নয়ন
৩. সমবায় ব্যাংকের উন্নয়ন
৪. গবেষণা কার্যক্রম
৫. ঋণের ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গঠন ও ব্যবস্থাপনা
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সম্পর্ক
১. বিধিবদ্ধ রিজার্ভ
২. নিকাশ ঘর
৩. কার্যবিবরণী
৪. তথ্য সরবরাহকারী ৫. তারল্য
৬. অভিভাবক
৭. শেষ আশ্রয়স্থল
৮. সদস্যভুক্তির মাধ্যমে সুযোগ গ্রহণ ৯. ব্যাংকার-মক্কেল সম্পর্ক
১০. সহযোগী
১১. সব ব্যাংকের ব্যাংকার।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভ‚মিকা
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি স্থায়ী ও কার্যকর কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে ঘোষণা করা হলেও ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবদান অনেক। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধানত
১. নোট ইস্যু করে।
২. দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা করে।
৩. সরকারের হিসাব পরিচালনা করে।
৪. কৃষিঋণ ও শিল্পঋণ বিতরণে সরকারের নীতি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে।
৫. দেশের বৈদেশিক মুদ্রা হস্তান্তর ও স্থানান্তরে বিশেষ ভ‚মিকা রাখে।
৬. বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন রকম কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।
৭. সরকারের গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে।
অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-১ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
‘খ’ ব্যাংকে কর্মরত জনাব করিম সাহেব ঈদের জন্য ব্যাংক থেকে নতুন টাকার নোট তুলে আনলে তার ৭ বছরের কন্যা সব টাকার নোটের উপর ‘ক’ ব্যাংকের নাম লেখা কেন তা জানতে চায়।
ক. কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন ব্যাংকের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে?
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ হিসাবে কী জমা রাখে? ব্যাখ্যা কর।
গ. ‘ক’ ব্যাংক কী ধরনের ব্যাংক? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘খ’ ব্যাংকের তারল্য সংকটে ‘ক’ ব্যাংক কী ভ‚মিকা রাখবে? আলোচনা কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে।
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ হিসেবে আমানতি অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশ বাধ্যতামূলকভাবে জমা রাখে। ব্যাংকের আমানতকারীর স্বার্থরক্ষার্থে এবং পর্যাপ্ত তারল্যতা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রত্যেক তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংককে রিজার্ভ হিসেবে আমানতের নির্দিষ্ট অংশ জমা রাখতে হয়। অর্থাৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক যেন আমানতকারীর সাথে প্রতারণা করতে না পারে সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকে আমানতের অংশ বিশেষ জমা রাখার নির্দেশ প্রদান করে।
গ. ‘ক’ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো দেশের সর্বসাধারণের মঙ্গল সাধন করা।
দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংক ও মুদ্রা ব্যবস্থার নেতৃত্ব প্রদান করে। দেশের ব্যাংকিং খাতের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে ব্যাংক নোট ইস্যু করে থাকে। উদ্দীপকের ‘ক’ ব্যাংকটি সরকারের মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত একটি জনকল্যাণমূলক অমুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান। দেশের মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ, চাহিদা অনুযায়ী নোট ও মুদ্রা ছাপানো, ঋণ নিয়ন্ত্রণ ও সরকারের অনুক‚লে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা এই ব্যাংকের প্রধান কার্যাবলি। এছাড়া দেশের যাবতীয় বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও সরকারের পক্ষে ব্যাংক হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে ‘ক’ ব্যাংক দেশের আর্থিক ব্যবস্থা উন্নয়নে ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
সুতরাং, সম্পাদিত কার্যাবলির ভিত্তিতে ‘ক’ ব্যাংক একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ঘ. ‘খ’ ব্যাংকের তারল্য সংকটে ‘ক’ ব্যাংক ঋণের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে ভ‚মিকা রাখবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সকল ব্যাংকের ব্যাংকার বলা হয়। তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর কার্যাবলি তত্ত¡াবধান করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। তারল্য সংকটের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে সাহায্যে করে। উদ্দীপকে ‘খ’ ব্যাংক একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। অপরদিকে ‘ক’ ব্যাংক একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী ‘খ’ ব্যাংক বাধ্যতামূলকভাবে ‘ক’ ব্যাংকের নিকট তার মোট আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ জমা রাখে। তাই ‘খ’ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা, পরিচালনা, ও সমস্যা সমাধানে ‘ক’ ব্যাংক বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে। তারল্য সংকটের সময় ‘খ’ ব্যাংক যখন অন্য কোনো উৎস হতে অর্থ প্রাপ্তিতে ব্যর্থ হয় তখন একমাত্র ‘ক’ ব্যাংকই ঋণ প্রদান করে ‘খ’ ব্যাংককে তারল্য সংকট হতে মুক্তি দেয়। ‘ক’ ব্যাংক ‘খ’ ব্যাংকের রিজার্ভ তহবিল থেকে ‘খ’ ব্যাংককে ঋণ প্রদান করে। এছাড়া ‘ক’ ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকেও ‘খ’ ব্যাংককে ঋণ প্রদান করতে পারে। তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠতে ‘ক’ ব্যাংক ‘খ’ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে।
সুতরাং, ‘ক’ ব্যাংক মুদ্রাবাজারের অভিভাবক হিসেবে ‘খ’ ব্যাংকের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর আর্থিক সংকটের সময় ঋণ প্রদানের মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সচল রাখে।
প্রশ্ন-২ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রামগড়ে স্থানীয় এলাকায় কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক না থাকায় এলাকাবাসীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। এ বিষয়ে প্রশাসনকে অবগত করলে সেখানে ‘ক’ ব্যাংকের একটি শাখা চালু হয় এবং এলাকাবাসী সকলেই উপকৃত হয়। পরবর্তীকে ‘খ’ ব্যাংকের একটি শাখা কার্যক্রম শুরু করে। কিছুদিন পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘খ’ ব্যাংককে বন্ধের নোটিশ দেয়।
ক. কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিসের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পারস্পরিক লেনদেন নিষ্পত্তি করে?
খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনটি স্থিতিশীল রাখে ব্যাখ্যা কর।
গ. কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘খ’ ব্যাংককে কেন বন্ধের নোটিশ দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রামগড়ের মতো এলাকায় উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ক’ ব্যাংককে কীভাবে কাজে লাগাতে পারে? আলোচনা কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিকাশ ঘরের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পারস্পরিক লেনদেন নিষ্পত্তি করে থাকে।
খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্তর স্থিতিশীল রাখে। কারণ অস্থিতিশীল মূল্যস্তর অর্থনীতিতে মন্দাভাবের সৃষ্টি করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ সরবরাহ কাম্যস্তরে রেখে অর্থবাজার নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ ব্যাংক হার নীতি, খোলাবাজার নীতি, জমার হার পরিবর্তন ও নৈতিক প্ররোচনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে দেশের মুদ্রাবাজারকে স্থিতিশীল রাখে।
গ. ‘খ’ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন নীতি অনুসরণে ব্যর্থ হওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক উক্ত ব্যাংককে বন্ধের নোটিশ দেয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সকল ব্যাংকের ব্যাংকার বলা হয়। দেশে সুসংগঠিত ও নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখা এর অন্যতম উদ্দেশ্য। নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দান ও বিভিন্ন নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে এটি দেশের সমস্ত ব্যাংকিং ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করে। উদ্দীপকে ‘খ’ ব্যাংকের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন নীতি আরোপ করে। যেমন : আমানতের নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা, নিয়মিত কার্যবিবরণী কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো যাবতীয় হিসাবপত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো ইত্যাদি। কিন্তু ‘খ’ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট তাদের যাবতীয় হিসাব নিয়মিত জমাদানে ব্যর্থ হয় যা ব্যাংকটির হিসাব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বাধা দেয়। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট বাধ্যতামূলক রিজার্ভ সংরক্ষণেও ব্যর্থ হয়। সুতরাং, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরোপিত রীতিনীতি অনুসরণে ‘খ’ ব্যাংক ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘খ’ ব্যাংককে বন্ধের নোটিশ দেয়।
ঘ. রামগড়ের মতো এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ক’ ব্যাংককে সমাজ উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে।
একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রাণ সঞ্চারক হলো দেশটির ব্যাংকিং ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক উক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালনার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করে। উদ্দীপকে রামগড়ের মতো এলাকায় কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক না থাকায় সে এলাকার মানুষরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল। এমতাবস্থায় সেখানে ‘ক’ ব্যাংককের একটি শাখা চালু হলে সকলে উপকৃত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক উক্ত এলাকার উন্নয়নে ‘ক’ ব্যাংককে তার সহায়ক হিসেবে কাজে লাগাতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ‘ক’ ব্যাংকের মাধ্যমে সহজ শর্তে বিভিন্ন কৃষি ঋণ প্রদান করতে পারে। বিভিন্ন শিল্পে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ক’ ব্যাংকের মাধ্যমে উক্ত এলাকার স্থানীয় জনগণকে শিল্প স্থাপনে উৎসাহী করতে পারে। এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে এলাকার শিল্প ও কৃষি ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এলাকার বেকারত্বের সমস্যা সমাধান করতে পারে। তাছাড়া রামগড় এলাকার জনগণকে হিসাব খোলায় উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে তাদের অলস অর্থের যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে।
উদ্দীপকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ক’ ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাতে ঋণ প্রদান করে।
সুতরাং, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সচল রাখা ও জনগণের কল্যাণ সাধনে নিয়জিত রাখতে পারে।
প্রশ্ন-৩ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বিদেশ ফেরত মি. সুজিত তাঁর সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের একটি বড় ব্যাংকে গিয়ে একজন কর্মকর্তার পরামর্শ চাইলেন। কিন্তু কর্মকর্তা তাঁকে জানালেন, উক্ত ব্যাংক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। তিনি মি. সুজিতকে পার্শ্ববর্তী সাঙ্গু ব্যাংকে যোগাযোগ করে তাঁর জন্য উপযোগী ব্যাংক হিসাব খোলার পরামর্শ দেন। [স. বো. ’১৫]
ক. ব্যাংকিং কী? ১
খ. দ্রব্যের পরিবর্তে দ্রব্যের আদান-প্রদানকে কী বলে? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. মি. সুজিত কোন ধরনের ব্যাংকে গিয়েছিলেন? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. মি. সুজিতের জন্য ব্যাংক কর্মকর্তার পরামর্শ গ্রহণের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ কর। ৪
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যাংকের যাবতীয় কাজের সমষ্টি হচ্ছে ব্যাংকিং।
খ. দ্রবের পরিবর্তে দ্রব্যের আদান-প্রদানকে বিনিময় প্রথা বলে। বিনিময় প্রথাটি মুদ্রা প্রচলনের পূর্বের একটি প্রাচীন প্রথা। মানব সৃষ্টি ও সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের প্রয়োজন, কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক বন্ধনের পরিধি প্রসার লাভ করতে থাকে। তখন মানুষ পরস্পরের মধ্যে তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত দ্রব্যাদি বিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের চাহিদা পূরণ করত।
গ. মি. সুজিত একটি জনকল্যাণমূলক অমুনাফাভোগী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গিয়েছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য হলো সামগ্রিক অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধন। সাধারণত মুদ্রা প্রচলন, অর্থ সরবরাহ তথা ঋণ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ক্ষমতা ও দায়িত্বে এই ব্যাংক নিয়োজিত। এছাড়া সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ ও সামগ্রিক ব্যাংকিং কাঠামোর নেতৃত্ব প্রদানসহ বিভিন্ন দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক পালন করে থাকে।
পৃথিবীর সকল দেশেই একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থাকে যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। উদ্দীপকে মি. সুজিত চট্টগ্রামে এমন একটি বড় ব্যাংকে গিয়েছিলেন যে ব্যাংক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। ব্যাংকের এই বৈশিষ্ট্যটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই নির্দেশ করে। আর চট্টগ্রামের বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখাও রয়েছে।
সুতরাং, মি. সুজিত যে ব্যাংকে গিয়েছিলেন তা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি শাখা।
ঘ. মি. সুজিতের জন্য ব্যাংক কর্মকর্তার পরামর্শ গ্রহণ করে তাঁর সঞ্চিত অর্থ বাণিজ্যিক ব্যাংকে করাই যৌক্তিক।
বাণিজ্যিক ব্যাংক গ্রাহকের নিকট হতে তাদের সঞ্চিত অর্থ চলতি, সঞ্চয়ী ও স্থায়ী হিসাবের মাধ্যমে আমানত গ্রহণ করে। সঞ্চয়ী ও স্থায়ী হিসাবের আমানতকারীদের জমার অর্থের ওপর ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করে থাকে। চলতি হিসাবে সুদ প্রদান করা না হলেও সেখানে ভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়। উদ্দীপকে বিদেশ ফেরত মি. সুজিত তার সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় গিয়ে একজন ব্যাংক কর্মকর্তার পরামর্শ চাইলেন। ব্যাংক কর্মকর্তা তাকে সাঙ্গু ব্যাংক নামক বাণিজ্যিক ব্যাংকে যোগাযোগ করে তাঁর জন্য উপযোগী ব্যাংক হিসাব খোলার পরামর্শ দেন। এই ব্যাংককে অর্থ বিনিয়োগ করলে নির্দিষ্ট হারে সুদ পাওয়া যায়। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগের মত এটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এছাড়াও হিসাব খোলার কারণে ব্যাংক তার গ্রাহককে নানাবিধ সুবিধা প্রদান করে।
সুতরাং, মি. সুজিতের জন্য ব্যাংক কর্মকর্তার পরামর্শ মেনে নিয়ে তাঁর সঞ্চিত অর্থ সাঙ্গু ব্যাংক নামক বাণিজ্যিক ব্যাংকে বিনিয়োগ করাই যুক্তিযুক্ত হবে।
প্রশ্ন-৪ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জিয়ান জয়া ব্যাংকে টাকা জমা করে, অর্থ উত্তোলন করে, ঋণ নেয়, প্রাপ্ত চেকের অর্থ সংগ্রহের জন্য ব্যাংকে জমা দেয় এভাবে কত কাজ ব্যাংকটি তার পক্ষে করে দেয়। ঠিক তেমনি জয়া ব্যাংকও হেনা ব্যাংকে টাকা জমা রাখে, উত্তোলন করে, সহযোগিতা নেয়। হঠাৎ করে বাজারে ঋণ সরবরাহ কমে গেলে হেনা ব্যাংককেই দায়িত্ব নিতে হবে। আবার ঋণ সরবরাহ বেড়ে গেলেও হেনা ব্যাংকেরই দায়।
ক. বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কে? ১
খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরকারের ব্যাংকার বলা হয় কেন? ২
গ. উদ্দীপকে জয়া ব্যাংকের ব্যাংকার বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. বাজারে ঋণ কমে গেলে বা বাড়লে হেনা ব্যাংকের দায় জন্মে উদ্দীপকের আলোকে এ বক্তব্যের যথার্থতা বিশ্লেষণ কর। ৪
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হলেন গভর্নর।
খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের অর্থ জমা রাখে এবং সরকারের পক্ষে অর্থ লেনদেন করে। সরকারের নির্দেশে সরকারি ব্যয় পরিশোধ করে, হিসাব রাখে, সরকারের প্রতিনিধি ও উপদেষ্টা হিসেবে ভ‚মিকা রাখে এবং বিনা পারিশ্রমিকে সরকারের সমস্ত আর্থিক কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। এ জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরকারের ব্যাংকার বলা হয়।
গ. জয়া ব্যাংকের ব্যাংকার বলতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বোঝানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে এবং তাদেরকে পরামর্শ প্রদান করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট মক্কেল হিসেবে বিবেচিত হয়। এ জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সকল ব্যাংকের ব্যাংকার বলা হয়। উদ্দীপকের জিয়ান জয়া ব্যাংকে টাকা জমা রাখে, অর্থ উত্তোলন করে, চেকের অর্থ সংগ্রহ করে। এসব কাজ জয়া ব্যাংকটি জিয়ানের পক্ষে করে দেয়। আবার জয়া ব্যাংকও তার মোট জমার একটি নির্দিষ্ট অর্থ হেনা ব্যাংকের কোষাগারে জমা দেয়। সেখান থেকে হেনা ব্যাংক জয়া ব্যাংকসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের প্রয়োজনে ঋণ দেয়। জয়া ব্যাংক যাতে গ্রাহকদের অধিক হারে ঋণ দিতে না পারে সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। জয়া ব্যাংকের সাথে অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের লেনদেন নিকাশ ঘরের মাধ্যমে হেনা ব্যাংক নিষ্পত্তি করে থাকে। আবার প্রয়োজনে হেনা ব্যাংক জয়া ব্যাংককে যেকোনো প্রকার পরামর্শ দিয়ে থাকে। হেনা ব্যাংকের সম্পাদিত যাবতীয় কার্যাবলি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুরূপ।
সুতরাং, জয়া ব্যাংকের ব্যাংকার হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বোঝানো হয়েছে।
ঘ. বাজারে ঋণ কমে গেলে বা বাড়লে হেনা ব্যাংকের তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায় জন্মে- এই বক্তব্যটি যথার্থ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে হারে তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে ঋণ দান করে বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট থেকে তাদের প্রথম শ্রেণির বিল ও সিকিউরিটিজ বাট্টা করে তাকে ব্যাংক হার বলে। এ হারের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলকে ব্যাংক হার নীতি বলা হয়। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কল্যাণের লক্ষ্যে দেশের ঋণের পরিমাণ কাম্যস্তরে রাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব। জয়া ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সাধারণত মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ঋণ প্রদান করে। কিন্তু অনেক সময় কিছু কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ঋণ প্রদান করে। ফলে বাজারে ঋণদানকৃত অর্থের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে বাজারে অর্থের মূল্য কমতে থাকে এবং পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। মুল্যস্ফীতির কারণে মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে বাজারে যদি ঋণের পরিমাণ কমে যায়, তাহলে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ঋণের ব্যয় অত্যাধিক বেড়ে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ঋণ নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম ব্যাংক হার নীতি প্রয়োগ করে ঋণের হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
সুতরাং, বাজারে ঋণ কমে গেলে বা বাড়লে হেনা ব্যাংক তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর তার দায় ভার পড়ে।
প্রশ্ন-৫ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মি. রাহাত যে ব্যাংকে লেনদেন করেন সেই ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। আমানতের একটি অংশ ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশিত নানান নিয়ম ও খবরদারির মধ্যদিয়ে ব্যাংকটিকে চলতে হয়। এটা শুনে মি. রাহাত ব্যাংক ম্যানেজারকে বললেন, সম্পর্ক আছে বলেই কী খবরদারি মানতে হবে। ম্যানেজার সাহেব বললেন, এর নির্দেশনার বাইরে গিয়ে ব্যাংকিং করার সুযোগ নেই।
ক. বাংলাদেশ ব্যাংক কখন কার্যক্রম শুরু করে? ১
খ. বৈদেশিক বিনিময় হার নির্ধারণ সম্পর্কে ধারণা দাও। ২
গ. মি. রাহাত যে ব্যাংকে লেনদেন করেন তা কোন ধরনের বাণিজ্যিক ব্যাংক? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে ব্যাংকিং করার সুযোগ নেই ম্যানেজারের এ মতের সাথে কি তুমি একমত? মতের সপক্ষে যুক্তি দাও। ৪
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর কার্যক্রম শুরু করে।
খ. এক দেশ অন্যদেশ থেকে পণ্য দ্রব্য ক্রয় করে তার মূল্য বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করে থাকে। সেহেতু বিশ্বে প্রচলিত সকল দেশের মুদ্রার মান এক রকম নয় সে কারণে মুদ্রার সঠিক বিনিময় হার নির্ধারণ করা প্রয়োজন। আর এ কাজটি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্য সহজ করে থাকে।
গ. মি. রাহাত যে ব্যাংকের সাথে লেনদেন করেন তা একটি তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক।
ব্যাংক ব্যবস্থার অন্যতম একটি সংস্করণ হলো তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। প্রত্যেকটি তালিকাভুক্ত ব্যাংকের আমানতের একটি অংশ বাধ্যতামূলকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট জমা রাখতে হয়। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উক্ত ব্যাংকগুলোকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। উদ্দীপকে মি. রাহাতের লেনদেন করা ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সদস্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এজন্য তিনি দেখেছেন ব্যাংকটি আমানতের একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে থাকে। এ প্রকার ব্যাংকের যাবতীয় ব্যাংকিং কাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। তালিকাভুক্ত হওয়ার ফলে মি. রাহাতের লেনদেন করা ব্যাংকটি বৈধ ব্যাংকিং-এর সুবিধা পেয়েছে। তাছাড়া প্রতি বছর মি. রাহাতের লেনদেন করা ব্যাংকটির হিসাব নিরীক্ষণ করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। তালিকাভুক্ত ব্যাংক বলেই মি. রাহাতের ব্যাংকটিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক যাবতীয় নির্দেশনা ও খবরদারির মধ্যে টিকে থাকতে হয়।
ঘ. বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে ব্যাংকিং করার সুযোগ নেই- ব্যাংকের ম্যানেজারের এ মতের সাথে আমি একমত।
ব্যাংকসমূহের পথপ্রদর্শক হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মনীতি তৈরি করে অন্যান্য ব্যাংকসমূহকে সঠিক পথে পরিচালিত করে থাকে। উদ্দীপকে ব্যাংক ম্যানেজারের ভাষ্যমতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো যাবতীয় ব্যাংকসমূহের ধারক বা কর্তা। যদি কোনো ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তালিকাভুক্ত না হয়েই ব্যাংকিং করে তবে এতে ঐ ব্যাংকের ব্যাংকিং বিষয়ে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। উক্ত ব্যাংকটিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো রকম তথ্য প্রদান করে না এবং ঋণ দিয়েও সহায়তা দেয় না। ফলে স্বভাবতই ব্যাংকিং মূলধন এবং তারল্য সমস্যা দেখা দেয়। আবার যদি কোনো ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও এর নির্দেশনার বাইরে যায় তবে ব্যাংকটির যাবতীয় ব্যাংকিং কাজের আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং এর স্থায়িত্ব নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। এতে সহজেই ব্যাংকটি জনগণের আস্থা হারায়। অপরদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত হলে ব্যাংক যেকোনো সমস্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা পায়।
সুতরাং, ব্যাংকিং কার্যাবলি পরিচালনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে ম্যানেজারের বক্তব্যটিই সঠিক।
প্রশ্ন-৬ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
অনন্যা শুকতারা পাবলিকেশন্সের একজন নিয়মিত লেখক। সে ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে সেখান থেকে প্রাইম ব্যাংকের ওপর তৈরি একটি দাগকাটা চেক পেয়ে ঐ দিনই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে জমা দিল। পরের দিন অনন্যা ব্যাংক থেকে টাকা ওঠাতে গেলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা জানালো তাকে আরও দু’দিন অপেক্ষা করতে হবে। অনন্যা এর কারণ জানতে চাইলে ব্যাংক কর্মকর্তা জানালো দেশের প্রধান ব্যাংকের মাধ্যমে এ ধরনের লেনদেন নিষ্পত্তি হয় বিধায় একটু সময় লাগে।
ক. বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট বিভাগ কয়টি? ১
খ. বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কে লেখ। ২
গ. উদ্দীপকে দেশের প্রধান ব্যাংকের কোন ধরনের কাজের কথা বলা হয়েছে তা বর্ণনা করা কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ব্যাংকের এ ধরনের কাজে সহায়তা করা দেশের প্রধান ব্যাংকের পক্ষে কতটা যৌক্তিক তা তুলে ধর। ৪
৬নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট বিভাগের সংখ্যা ৯টি।
খ. বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকটি বাংলাদেশ সরকারের ব্যাংকার হিসেবে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করে। বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং সমাজের নেতা হিসেবে এটি কাজ করে যাচ্ছে। এর প্রধান অফিস ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সকল ব্যাংকের অভিভাবক হিসেবে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে।
গ. উদ্দীপকে দেশের প্রধান ব্যাংকের নিকাশ ঘরের কাজের কথা বলা হয়েছে।
নিকাশ ঘর হলো একটি স্থান যেখানে একই এলাকার ব্যাংকের প্রতিনিধিগণ বসে পরস্পরের ওপর উপস্থাপিত চেক, ড্রাফট, বিনিময় ও ব্যালেন্স নিষ্পত্তি করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের যাবতীয় আন্তঃব্যাংকিং কার্যাবলি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকাশ ঘরের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। উদ্দীপকে অনন্যা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে প্রাইম ব্যাংকের চেক জমা দিয়েছে। এ ধরনের লেনদেন নিষ্পত্তি করা হয় নিকাশ ঘর ব্যবস্থার মাধ্যমে। নিকাশ ঘর হলো ব্যাংকগুলোর মধ্যকার নির্দিষ্ট আর্থিক লেনদেনের দেনাপাওনা নিষ্পত্তির একটি ব্যবস্থা। নিকাশ ঘরের কাজ সাধারণত দেশের প্রধান ব্যাংক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে সম্পাদিত হয়। নিকাশ ঘরের মাধ্যমে অনন্যার চেকটির লেনদেন নিষ্পত্তি হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষ রয়েছে যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত সকল প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে প্রদত্ত চেক বা ড্রাফট বিনিময় করে থাকেন।
ঘ. ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এবং প্রাইম ব্যাংকের মধ্যে সৃষ্ট লেনদেনটি দেশের প্রধান ব্যাংক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে নিকাশ ঘরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়া অত্যন্ত যৌক্তিক।
নিকাশ ঘর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত। নিকাশ ঘর সর্বদা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করে। অর্থাৎ ব্যাংক ব্যবসায়কে গতিশীল ও শক্তিশালী করার জন্য যে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিনই কার্যকরভাবে সহায়তা প্রদান করে চলেছে সেটি হলো নিকাশ ঘর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং সমাজের অভিভাবক হিসেবে নিকাশ ঘরের মাধ্যমে আন্তঃব্যাংকিং চেক ও দায় দেনা নিষ্পত্তি করে। অর্থাৎ দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্য সম্পাদনে যেমন : চেক, ড্রাফট, বিল, চালান প্রভৃতি দলিল হতে দেনা-পাওনার সৃষ্টি হয়। এসব দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির জন্য তালিকাভুক্ত ব্যাংকের প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দিষ্ট একটি স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে একত্রিত হয় এবং তারই তত্ত¡াবধানে আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করে। উদ্দীপকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এবং প্রাইম ব্যাংক দুটি আলাদা ব্যাংক হলেও নিকাশ ঘরের মাধ্যমে তাদের মধ্যে লেনদেন নিষ্পত্তি সহজ হয়েছে এবং তারা সহজেই এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের অর্থ স্থানান্তর করতে পেরেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের আন্তঃলেনদেন নিষ্পত্তির দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকে বলে ঋণ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
সুতরাং নিকাশ ঘরের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের কাজে সহায়তা করা দেশের প্রধান ব্যাংক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য যুক্তিযুক্ত।
প্রশ্ন-৭ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জেডেক্স দেশটিতে গার্মেন্টস ও ওষুধ শিল্প লাভজনক বলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ দুই খাতে যথাক্রমে ৫৫% ও ৩৫% এবং অন্যান্য সব খাতে অবশিষ্ট ১০% ঋণ দেয়। এতে ব্যাংকের লাভ হলেও দেশের কয়েকটি নির্দিষ্ট খাত ছাড়া অন্যান্যরা বঞ্চিত হয়। তাই জেডেক্স দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃষি, চামড়া ও সফটওয়্যারসহ উল্লিখিত সব খাতে সমানভাবে ঋণ দেয়ার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আদেশ দেয়।
ক. বাংলাদেশ ব্যাংকে কতজন ডেপুটি গভর্নর থাকে? ১
খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংক কীভাবে ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায়? ২
গ. জেডেক্স দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন সম্পর্কের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আদেশ দিতে পেরেছে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. জেডেক্স দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সব খাতে সমানভাবে ঋণদানের আদেশ দেয়ার কারণ বিশ্লেষণ কর। ৪
৭নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশ ব্যাংকে ৪ জন ডেপুটি গভর্নর থাকে।
খ. দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার অভিভাবক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়নে সবসময়ই সচেষ্ট থাকে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন নিয়ন-নীতি নির্ধারণ করে এবং ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সকল স্তরে সক্রিয় সহযোগিতা দেয়। নতুন শাখা প্রতিষ্ঠা ও ব্যাংকিং কার্যক্রম স¤প্রসারণেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা প্রদান করে। এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায়।
গ. জেডেক্স দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক উক্ত দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অভিভাবক হওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আদেশ দিতে পেরেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল ব্যাংকের অভিভাবক হিসেবে নানান ধরনের কার্যাবলি সম্পদান করে। এসব কার্যাবলির মাধ্যমেই এটি যাবতীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। উদ্দীপকের জেডেক্স দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং দিকনির্দেশনার মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো লাভজনক খাত বলে গার্মেন্টস ও ওষুধ খাতে অধিক ঋণ দেয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশটির অন্যান্য খাতে। ঋণের সুবিধা না পাওয়ায় অন্যান্য খাতগুলো অর্থের অভাবে তাদের উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে ব্যর্থ হচ্ছিল। এমতাবস্থায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল অভিভাবক হিসেবে সম্পাদিত কাজের আওতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে সকল খাতে সমান ঋণ দেয়ার আদেশ দেয়।
ঘ. জেডেক্স দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধন করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঐ দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে সকল খাতে সমানভাবে ঋণদানের আদেশ দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো সর্বসাধারণের মঙ্গল নিশ্চিত করা এবং দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করা। এ উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে এবং তাদেরকে পরামর্শ প্রদান করে। দেশের অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ন্ত্রণকারী, একক ও অনন্যা ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উদ্দীপকে জেডেক্স দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ যদি সকল খাতে ঋণ দেয় তবে প্রতিটি খাতেই সমান উন্নতি হবে। প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ আহরণ এবং সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে। দেশের বিপুল জনশক্তির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হবে। ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিরও উন্নতি হবে। এসব কারণেই জেডেক্স দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঐ দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সকল খাতে ঋণ দেয়ার আদেশ দিয়েছে।
সুতরাং, জেডেক্স দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঐ দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সকল খাতে সমানভাবে ঋণ দিতে আদেশ দিয়েছে।
প্রশ্ন-৮ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. পরিসংখ্যান সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে কে? ১
খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাধারণ কার্যাবলিসমূহ লেখ। ২
গ. উল্লিখিত ঐউ ব্যাংকের গঠন ব্যবস্থাপনা ছকাকারে উপস্থাপন কর। ৩
ঘ. ঐউ ব্যাংকের উল্লিখিত কাজটি বিশ্লেষণ কর। ৪
৮নং প্রশ্নের উত্তর
ক. পরিসংখ্যান সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
খ. জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণ কার্যাবলি সম্পাদন করে যা নিম্নরূপ-
১. নোট ও মুদ্রা প্রচলন, ২. মুদ্রাবাজারের অভিভাবক, ৩ ঋণ নিয়ন্ত্রণ, ৪. বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি, ৫. মূল্যস্তর স্থিতিশীল রাখা, ৬. বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।
গ. ঐউ ব্যাংক নিকাশ ঘরের মাধ্যমে অন্যান্য ব্যাংকের আন্তঃলেনদেন নিষ্পত্তি করে। অর্থাৎ ঐউ ব্যাংকটি একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই এই ব্যাংকটি সরকারি মালিকানায় পরিচালিত এবং একটি পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যার নির্বাহী প্রধান গভর্নর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গঠন ও ব্যবস্থাপনা ছকাকারে নিচে দেখানো হলো :
চিত্র : ঐউ ব্যাংকের (কেন্দ্রীয় ব্যাংকের) গঠন ও ব্যবস্থাপনা
ঘ. ঐউ ব্যাংক তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিকাশ ঘরের দায়িত্ব পালন করে।
নিকাশ ঘর হলো একটি স্থান যেখানে একই এলাকার তালিকাভুক্ত ব্যাংকের প্রতিনিধিগণ বসে পরস্পরের ওপর উপস্থাপিত চেক, ড্রাফট, বিনিময় ও ব্যালেন্স নিষ্পত্তি করে। নিকাশ ঘরের প্রধান হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন নিষ্পত্তি করে।
কারণ প্রতিদিন গ্রাহকরা ব্যাংকসমূহে তাদের হিসাবে স্থানান্তরের জন্য প্রচুর চেক, পে-অর্ডার, ড্রাফট, আজ্ঞাপত্র, বিনিময় বিল, অঙ্গীকারপত্র ইত্যাদি জমা দিয়ে থাকে। ফলে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের নিকট প্রচুর অর্থ দেনা ও পাওনা হয়। যেকোনো ব্যাংকের জন্য এসব দেনা-পাওনা প্রতিটি ব্যাংকে গিয়ে নিষ্পত্তি করা খুবই ঝামেলা, ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ কাজ। তাই প্রতিটি ব্যাংক তাদের শাখা ব্যাংকসমূহ হতে এরূপ চেক, ড্রাফট ইত্যাদি পাবার পর সম্পূর্ণ পাওনা তালিকা প্রস্তুত করে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকাশ ঘরে হাজির হয় এবং পরস্পর তালিকা বিনিময় করে থাকে। অতঃপর বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধিগণ প্রত্যেকের বিবরণী একত্রিত করে সামগ্রিক বিবরণী প্রস্তুতপূর্বক দেনা-পাওনার উদ্বৃত্ত বের করে। তখন নিকাশ ঘরের পরিচালক বিশেষ কৌশলে তাদের মধ্যে দেনা-পাওনার নিষ্পত্তি করে দেন।
সুতরাং, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহের সহায়তাদানের উদ্দেশ্যে আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির জন্য সবসময় নিকাশ ঘরের দায়িত্ব পালন করে।
প্রশ্ন-৯ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জননী ব্যাংক তার চেক, ব্যাংক ড্রাফট প্রভৃতির লেনদেনের নিষ্পত্তির জন্য দেশের প্রধান ব্যাংকের কাছে পাঠায়। কিন্তু ডিসকভারি ব্যাংকটি এ ধরনের নিষ্পত্তিতে অংশগ্রহণ করতে পারে না।
ক. সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে কোন ব্যাংক? ১
খ. পল্লি ঋণ প্রকল্প বলতে কী বোঝ? ২
গ. দেশের প্রধান ব্যাংক কীভাবে জননী ব্যাংকের লেনদেনসমূহ নিষ্পত্তি করে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. ডিসকভারি ব্যাংক দেশের প্রধান ব্যাংকের সাথে লেনদেনের নিষ্পত্তিতে অংশগ্রহণ করতে না পারার কারণ বিশ্লেষণ কর। ৪
৯নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
খ. দেশের পল্লি অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য যে বিশেষ ঋণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয় তাকে পল্লি ঋণ প্রকল্প বলে। বাংলাদেশ গ্রাম প্রধান দেশ। তাই পল্লি ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের দুঃস্থদের বিশেষ করে মহিলাদের ভাগ্যোন্নয়নের চেষ্টা করা হয়।
গ. দেশের প্রধান ব্যাংক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিকাশ ঘরের মাধ্যমে জননী ব্যাংকের লেনদেনসমূহ নিষ্পত্তি করে থাকে।
দেশের সকল ব্যাংকের আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিকাশ ঘরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে। অর্থাৎ নিকাশ ঘর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত। নিকাশ ঘর সর্বদা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করে। উদ্দীপকে জননী ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত হওয়ায় গ্রাহকদের নিকট হতে গৃহীত চেক, ব্যাংক ড্রাফট প্রভৃতি সহজেই নিকাশ ঘরের মাধ্যমে ভাঙাতে পারে। এ কাজটি করা হয় প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে এবং তালিকাভুক্ত সবগুলো ব্যাংকের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে। নিকাশ ঘরের নেতৃত্বে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং আইন অনুযায়ী জননী ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করে।
ঘ. ডিসকভারি ব্যাংক দেশের প্রধান ব্যাংকের সাথে লেনদেন নিষ্পত্তিতে অংশগ্রহণ না করতে পারার কারণ হলো এটি একটি অতালিকাভুক্ত ব্যাংক।
যে সকল ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে তাকে অতালিকাভুক্ত ব্যাংক বলে। অন্যদিকে যে সকল ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে সদস্য হিসেবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে তাকে তালিকাভুক্ত ব্যাংক বলে। তালিকাভুক্ত সদস্য ব্যাংকগুলোই শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকাশ ঘরের সুবিধা লাভ করে। উদ্দীপকের ডিসকভারি ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত সদস্য নয় অর্থাৎ অতালিকাভুক্ত ব্যাংক। অতালিকাভুক্ত ব্যাংক হওয়ায় এ ব্যাংক নির্দিষ্ট তারল্য সংরক্ষণ করে না এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মনীতি পালন করে না। ব্যাংকটি তার সাপ্তাহিক লেনদেন ও হিসেবের বিবরণীও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয় না। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ডিসকভারি ব্যাংককে কোনো ধরনের সুবিধা বা পরামর্শ প্রদান করে না। ব্যাংকটি তার আর্থিক সংকটে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণের সুবিধা পায় না। তাছাড়া ব্যাংকটির প্রতিনিধি হয়ে। কোনো দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক পালন করে না তাই ডিসকভারি ব্যাংকের চেক, ব্যাংক ড্রাফট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকাশ ঘরের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুযোগ পায় না।
সুতরাং, নিকাশ ঘরের সুবিধাসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রদত্ত অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য ডিসকভারি ব্যাংকের উচিত বাংলাদেশ ব্যাংকে তালিকাভুক্ত হওয়া।
প্রশ্ন -১০ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভ‚মিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে গভর্নর মন্তব্য করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং সমাজের নেতা, রাজা ও সূর্য। বাংলাদেশ ব্যাংক রাজা হিসেবে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করছে। আজ এ ব্যাংক দেশের সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যাংকার রূপে পরিগণিত হয়েছে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করছে।
ক. কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সূর্যের সাথে তুলনা করেছেন কে? ১
খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবদ্ধ কার্যাবলিগুলো ব্যাখ্যা কর। ২
গ. গভর্নর কেন বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং সমাজের নেতা, রাজা ও সূর্য- বর্ণনা কর। ৩
ঘ. ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার’- উদ্দীপকের আলোকে উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর। ৪
১০নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ড. এস.এস.সেন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সূর্যের সাথে তুলনা করেছেন।
খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন ধরনের বিধিবদ্ধ কার্যাবলি রয়েছে। বিধিবদ্ধ কার্যাবলি হিসেবে এ ব্যাংক নোট ও মুদ্রার প্রচলন করে থাকে। এটি মুদ্রাবাজারের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে। সহজ বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টির পাশাপাশি এ ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক ব্যবসায় উন্নয়ন, মূল্যস্তর স্থিতিশীল রাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবদ্ধ কার্যাবলির আওতাভুক্ত।
গ. উদ্দীপকে গভর্নর বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং সমাজের নেতা রাজা ও সূর্য। ব্যাংক ব্যবস্থার অভিভাবক হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি একটি দেশের প্রধান ব্যাংক হিসেবেও পরিচিত। এ ব্যাংক ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। গভর্নর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভ‚মিকা শীর্ষক এক সেমিনারে মন্তব্য করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং সমাজের নেতা। রাজা ও সূর্য। তার এরূপ মন্তব্য করার কারণ হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেতা হিসেবে অন্যান্য ব্যাংককে পরিচালনা করে এবং নিয়ম-নীতি প্রণয়ন করে। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাজা হিসেবে ব্যাংকিং খাতের রাজত্ব করে থাকে। অপরদিকে এ ব্যাংক সূর্যের মতো অর্থ ও মুদ্রাবাজার জগতে আলো দেয়। এর ফলে অর্থ ও মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটে।
পরিশেষে বলা যায়, উপরিউক্ত কার্যাবলি সম্পাদন করে বলেই গভর্নর, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যাংকিং সমাজের নেতা, রাজা ও সূর্য বলেছেন।
ঘ. বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার- উদ্দীপকের এই উক্তিটি আমি যথার্থ মনে করি।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নরের ভাষায়, এ ব্যাংক দেশের সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যাংকার রূপে পরিগণিত হয়েছে। নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি ও তালিকাভুক্তির কাজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন শাখা খোলার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহের মধ্যে আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিকাশ ঘরের মাধ্যমে সহায়তা করে। ব্যাংকসমূহ যখন তারল্য সংকটে ভোগে তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ঋণদানের মাধ্যমে সহায়তা করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে অধীনস্থ ব্যাংকসমূহের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণে উপদেষ্টা ও পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করে। প্রয়োজনে ব্যাংকসমূহের হিসাবপত্র, পরীক্ষা এবং ঋণ আদায়েও এ ব্যাংক সহায়তা করে।
পরিশেষে বলা যায়, তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহের জন্য উপরিউক্ত কাজ সম্পাদন করে বলে বাংলাদেশ ব্যাংককে অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার বলা যথার্থ হয়েছে।
প্রশ্ন-১১ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
প্রগতি ব্যাংক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে দেশের অভ্যন্তরে অন্যান্য ব্যাংকের গঠনে, জমা ও ঋণ আদায়, নিকাশ এবং হিসাব নিরীক্ষায় সহায়তা করে। বিপদের সময় ব্যাংকগুলোকে পরামর্শও দেয়। কিন্তু গত বছর বিপদের সময় শিশির কো-অপারেটিভ ব্যাংককে এ ধরনের সহায়তা দেয়নি। [সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়]
ক. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলি কয় প্রকার? ১
খ. বাংলাদেশ ব্যাংককে জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন? ২
গ. শিশির কো-অপারেটিভ ব্যাংককে প্রগতি ব্যাংক সহায়তা না করার কারণ বর্ণনা কর। ৩
ঘ. প্রগতি ব্যাংকের কোন ভ‚মিকার কথা উদ্দীপকে বলা হয়েছে? মূল্যায়ন কর। ৪
১১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলি চার প্রকার।
খ. বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশের একটি অমুনাফাভোগী জাতীয় প্রতিষ্ঠান। মুনাফা অর্জন এরূপ ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্যে নয়। বরং একটি দেশের প্রচলিত মুদ্রার পরিমাণ কাম্য পর্যায়ে রেখে এবং ঋণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নই এর মুখ্য উদ্দেশ্য। তাই এটিকে জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বলা হয়।
গ. শিশির কো-অপারেটিভ ব্যাংকটি অতালিকাভুক্ত ব্যাংক হওয়ায় বিপদের সময় প্রগতি ব্যাংক এই ব্যাংককে সহায়তা করেনি।
দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার অভিভাবক এবং মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রক হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিপদের সময় প্রয়োজনীয় সহায়তা ব্যাংকিং ও বিশেষায়ন সুবিধা পাওয়ার জন্য সকল ব্যাংকেরই উচিত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত হওয়া। অতালিকাভুক্ত ব্যাংক হলো সেসব ব্যাংক যেগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত সদস্য নয়। উদ্দীপকে তালিকাভুক্ত না হওয়ায় প্রগতি ব্যাংক কর্তৃক কোনো নির্দেশনা শিশির কো-অপারেটিভ ব্যাংকটি মানে না বা মানতে বাধ্য নয়। অপরদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ প্রগতি ব্যাংক তার তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহের বাইরে দেশের অন্যান্য ব্যাংকসমূহকে কোনো ঋণ সহায়তা বা কোনো পরামর্শ প্রদান করে না। এ কারণেই শিশির কো-অপারেটিভ ও ব্যাংকটি প্রগতি ব্যাংক প্রদত্ত সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সুতরাং, অতালিকাভুক্ত ব্যাংক হওয়ায় শিশির কো-অপারেটিভ ব্যাংক নির্দিষ্ট তারল্য সংরক্ষণ করে না বিধায় এই ব্যাংকটি বিপদের সময় প্রগতি ব্যাংকের সাহায্য পায় না।
ঘ. প্রগতি ব্যাংকের সকল ব্যাংকের ব্যাংকার হিসেবে ভ‚মিকা পালনের কথা বলা হয়েছে।
প্রতিটি তালিকাভুক্ত ব্যাংক তার আমানতের একটা নির্দিষ্ট অংশ বাধ্যতামূলকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট জমা রাখে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উক্ত তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের প্রয়োজনে ঋণ প্রদান করে থাকে। এসব কাজ সম্পাদন করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার। উদ্দীপকে প্রগতি ব্যাংক দেশের অভ্যন্তরে নতুন ব্যাংক গঠনের অনুমতি দান এবং তালিকাভুক্তির কাজ করে থাকে। প্রগতি ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া নতুন ব্যাংক গঠন সম্ভব নয়। প্রগতি ব্যাংকে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখে। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের প্রয়োজনে ব্যাংকের অভিভাবক হিসেবে প্রগতি ব্যাংক ব্যাংকসমূহকে ঋণদান করে। ব্যাংকিং লেনদেন যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য নিকাশ ঘরের মাধ্যমে প্রগতি ব্যাংক আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন সম্পাদন করে। তাছাড়া প্রগতি ব্যাংক তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহের বিপদের সময় প্রয়োজনীয় সহায়তাও করে থাকে। দেশের ব্যাংকিং সাম্রাজ্যের নেতা হিসেবে প্রগতি ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়নে সবসময়ই সচেষ্ট থাকে। সুতরাং, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ প্রগতি ব্যাংকের নিকট থেকে নানা সুবিধা গ্রহণ করে বলেই এই ব্যাংককে সকল ব্যাংকের ব্যাংকার বলা হয়।
প্রশ্ন-১২ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
নবম শ্রেণির ছাত্র আশিকুর তার ব্যাংকার ভাই নিয়াজকে প্রশ্ন করল ভাইয়া, আমরা লেনদেনের জন্য যে মুদ্রা ব্যবহার করি তা কে সরবরাহ করে? নিয়াজ বলল মুদ্রা প্রচলন করার দায়িত্ব একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানের। এ প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ থাকে। প্রয়োজনে সরকারকেও ঋণ প্রদান করে। শুধু তাই নয় প্রতিষ্ঠানটি সরকারের আর্থিক নীতি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
[বিদ্যাময় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ]
ক. বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকের সংখ্যা কত? ১
খ. বিধিবদ্ধ রিজার্ভ বলতে কী বোঝ? ২
গ. নিয়াজ কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানের কথা বলেছে তার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি সরকারের পক্ষে যেসব কাজ করে তা বিশ্লেষণ কর। ৪
১২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সংখ্যা ১২ জন।
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংক তার আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ বাধ্যতামূলকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা রাখে। বাধ্যতামূলকভাবে জমা রাখা এ তহবিলকে বিধিবদ্ধ রিজার্ভ বলে। বাণিজ্যিক ব্যাংক যখন কোথাও থেকে ঋণ বা প্রয়োজনীয় তহবিল সংরক্ষণ করতে না পারে তখন এই বিধিবদ্ধ রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ প্রদান করে।
গ. নিয়াজ তার ছোট ভাই আশিকুরকে যে বিশেষ প্রতিষ্ঠানের কথা বলেছে তা হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
যে ব্যাংককে কেন্দ্র করে দেশের মুদ্রাবাজার ও ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে ও পরিচালিত হয় তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ম নীতি তৈরি করে অন্যান্য ব্যাংকসমূহকে সঠিক পথে পরিচালিত করে থাকে। এজন্য ব্যাংকসমূহের পথপ্রদর্শক বলা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। উদ্দীপকের নিয়াজের ভাষ্যানুযায়ী আমরা লেনদেনের জন্য যে মুদ্রা ব্যবহার করি তা প্রচলনের দায়িত্বও কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত। তাছাড়া সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ থাকে। নিয়াজের উল্লিখিত বিশেষ প্রতিষ্ঠানটি অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রামান সংরক্ষণেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। প্রতিটি স্বাধীন দেশে একটি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে। এ ব্যাংক সরকারি নিয়ন্ত্রণে গঠিত ও পরিচালিত হয়।
ঘ. উদ্দীপকের বর্ণনাকৃত বিশেষ প্রতিষ্ঠানটি হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি সরকারের পক্ষে নানা কাজ করে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করে থাকে। ব্যাংকটি সরকারের পক্ষে অর্থ সংগ্রহ, সরবরাহ ও সংরক্ষণ, হিসাব সংরক্ষণ, লেনদেন সম্পাদন ও বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ করে থাকে। সরকারের আর্থিক পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের অর্থ ও অন্যান্য সম্পদের তহবিল সংরক্ষণ ও তত্ত¡াবধানের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি দেশের সরকারের প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো সময় সরকারকে প্রয়োজনীয় ঋণদানে বাধ্য থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংকার হিসেবে সরকারের যাবতীয় আর্থিক নীতির বাস্তবায়নে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়। তাছাড়া ব্যাংকটি সরকারের হয়ে বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংক যেমন : এডিবি, আইডিবি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের পক্ষে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করে।
সুতরাং, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের পক্ষে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে জনগণের অশেষ কল্যাণ সাধন করে থাকে।
প্রশ্ন -১৩ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মি. মাসুদ ‘গ’ ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তার ব্যাংক দেশের অর্থ বাজারের গঠন, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে। এ ব্যাংক অর্থবাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ঋণের পরিমাণ সংকোচন ও স¤প্রসারণের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং পুরো অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। [রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা]
ক. নিকাশ ঘর কাকে বলে? ১
খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল বলা হয় কেন? ২
গ. মুদ্রা নিয়ন্ত্রক হিসেবে ‘গ’ ব্যাংককে কী বলা হয়? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ব্যাংকটি সরকারের পক্ষে যেসব কাজ করে তা বিশ্লেষণ কর। ৪
১৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যে কেন্দ্র বা স্থানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত¡াবধানে তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ তাদের মধ্যে আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন নিষ্পত্তি করে তাকে নিকাশ ঘর বলে।
খ. দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ যখন অর্থসংকটে পড়ে এবং কোনোভাবেই অর্থর যোগান দেয়া সম্ভব হয় না তখন সবশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তার দায়িত্বের আওতায় বাণিজ্যিক বা অধীনস্ত ব্যাংকসমূহকে ঋণ দিয়ে সমস্যার সমাধান করে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল বলা হয়।
গ. মুদ্রার নিয়ন্ত্রক হিসেবে ‘গ’ ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলা হয়।
কোনো দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের কর্তৃত্বে থেকে সে দেশের মূল্যস্তর ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানটিই হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করে। উদ্দীপকে মি. মাসুদ ‘গ’ ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তার ব্যাংক দেশের অর্থ বাজার গঠন পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ ‘গ’ ব্যাংক দেশের অভ্যন্তরে মুদ্রা সরবরাহ পরিস্থিতি কাম্যস্তরে বজায় রাখার জন্য মুদ্রামান সংরক্ষকের দায়িত্ব পালন করে। এতে বিদেশের বাজারে দেশীয় মুদ্রার মানও সম্মানজনক অবস্থায় থাকে। মুদ্রার মান নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে এ কাজগুলো করার একমাত্র অধিকার দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যা ‘গ’ ব্যাংক করছে। সুতরাং ‘গ’ ব্যাংক একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ঘ. উদ্দীপকের উল্লিখিত ‘গ’ ব্যাংকটি তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের পক্ষে নানান কাজ করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকার, জনগণ ও অন্যান্য ব্যাংকের প্রতি নানান দায়িত্ব পালন করে। এ ব্যাংককে সরকারের অন্যতম ঋণের উৎস বলা হয়। উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘গ’ ব্যাংকটি সরকারের পক্ষে নানান কাজ করে। গ ব্যাংকটি সরকারের ব্যাংক হিসেবে সরকারের আর্থিক সংকটে ঋণ প্রদান করে থাকে। সরকারের অর্থ ও অন্যান্য সম্পদের তহবিল সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা প্রদানও ‘গ’ ব্যাংকের অন্যতম কাজ। প্রয়োজন অনুযায়ী সরকারের বিভিন্ন ধরনের ব্যয় পরিশোধ করে থাকে। উদ্দীপকের ‘গ’ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে সরকারের যাবতীয় আয়-ব্যয় হিসাব সংরক্ষণ করে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে যে কোনো ধরনের লেনদেনও ‘গ’ ব্যাংক সম্পাদন করে। এছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্যও এ ব্যাংক সরকার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।
পরিশেষে বলা যায়, উপরিউক্ত কাজ ছাড়াও উদ্দীপকের ‘গ’ ব্যাংক সরকারের উপদেষ্টা, তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ প্রভৃতি দায়িত্ব পালন করে।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ কখন মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়?
উত্তর : সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝে যখন পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রকার ব্যাংকের আবির্ভাব হয় তখন মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
প্রশ্ন \ ৩ \ ব্যাংকিং সমাজের নেতা কে?
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে ব্যাংকিং সমাজের নেতা।
প্রশ্ন \ ৪ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী জাতীয় প্রতিষ্ঠান?
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি জনকল্যাণমূলক অমুনাফাভোগী জাতীয় প্রতিষ্ঠান।
প্রশ্ন \ ৫ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর : সর্বসাধারণের মঙ্গল নিশ্চিত করা এবং দেশের অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোই হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন \ ৬ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলিকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রশ্ন \ ৭ \ কোন ব্যাংক নিকাশঘর হিসেবে কাজ করে?
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের নিকাশ ঘর হিসেবে কাজ করে।
প্রশ্ন \ ৮ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখ্য উদ্দেশ্য কী?
উত্তর : জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত থাকাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখ্য উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন \ ৯ \ মুদ্রা বাজারের অভিভাবক কে?
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা বাজারের অভিভাবক।
প্রশ্ন \ ১০ \ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম কী?
উত্তর : বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’।
প্রশ্ন \ ১১ \ বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কে?
উত্তর : বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা প্রধান হিসেবে গভর্নর দায়িত্ব পালন করেন।
প্রশ্ন \ ১২ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কীভাবে মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে?
উত্তর : বাজারের অর্থ সরবরাহের হ্রাস-বৃদ্ধি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার মান তথা ক্রয়ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ এক ব্যাংকের সাথে অন্য ব্যাংকের লেনদেন নিষ্পত্তি করা হয় কার মাধ্যমে?
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এক ব্যাংকের সাথে অন্য ব্যাংকের লেনদেন নিষ্পত্তি করে নিকাশ ঘরের মাধ্যমে।
প্রশ্ন \ ১৪ \ দেশের নোট ও মুদ্রা প্রচলনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কোনটি?
উত্তর : দেশের নোট ও মুদ্রা প্রচলনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রশ্ন \ ১৫ \ বাংলাদেশে মুদ্রাবাজারের অভিভাবক কোন ব্যাংক?
উত্তর : বাংলাদেশে মুদ্রাবাজারের অভিভাবক হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রশ্ন \ ১৬ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মালিক কে?
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মালিক হলো সরকার।
প্রশ্ন \ ১৭ \ অর্থ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক কে?
উত্তর : অর্থ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক হলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রশ্ন \ ১৮ \ বাণিজ্যিক ব্যাংক কোথায় তালিকাভুক্ত হয়?
উত্তর : বাণিজ্যিক ব্যাপংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তালিকাভুক্ত হয়।
প্রশ্ন \ ১৯ \ সুসম্পর্কিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা সৃষ্টি করে কে?
উত্তর : সুসম্পর্কিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা সৃষ্টি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রশ্ন \ ২০ \ অমুনাফাভিত্তিক জাতীয় প্রতিষ্ঠান কোন ব্যাংক?
উত্তর : অমুনাফাভিত্তিক জাতীয় প্রতিষ্ঠান হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রশ্ন \ ২১ \ দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করে কে?
উত্তর : দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রশ্ন \ ২২ \ বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন ধরনের কাজ?
উত্তর : বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাধারণ কাজ।
প্রশ্ন \ ২৩ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনা করে কে?
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনা করে ব্যবস্থাপনা পর্ষদ।
প্রশ্ন \ ২৪ \ বাণিজ্যিক ব্যাংকের অভিভাবক কে?
উত্তর : বাণিজ্যিক ব্যাংকের অভিভাবক হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রশ্ন \ ২৫ \ সরকারের ব্যাংকার কে?
উত্তর : সরকারের ব্যাংকার হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা বাজারের অভিভাবক’ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা বাজারের অভিভাবক এবং মুদ্রার পূর্ণ নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুদ্রা বাজারের অভিভাবক বলা হয়। যে কোনো দেশের আর্থিক সমৃদ্ধি মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভরশীল। আর দেশের সমৃদ্ধি মানেই সরকারের সমৃদ্ধি। তাই সরকার তার দেশের সমৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় মুদ্রা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
প্রশ্ন \ ২ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণে থেকে কার্যাবলি পরিচালনা করে। সরকারের হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনেক কার্যাদি সম্পাদন করতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংকার, প্রতিনিধি ও পরামর্শক হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পাদন করে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক হিসেবে খ্যাত।
প্রশ্ন \ ৩ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার হিসেবে কাজ করে- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের নিকট থেকে জনগণের জমাকৃত অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশ নিজের কাছে জমা রাখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মধ্যকার দৈনন্দিন লেনদেনের মাধ্যমে যে দেনা-পাওনা সৃষ্টি হয় সেগুলোর নিষ্পত্তি করে। বিভিন্ন খাতে ব্যাংক প্রদত্ত ঋণ আদায়ে এ ব্যাংক সহায়তা করে থাকে। তাই বলা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার হিসেবে কাজ করে।
প্রশ্ন \ ৪ \ নিকাশঘর কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : যে অফিসে বা স্থানে বসে নির্দিষ্ট এলাকার তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহের মধ্যকার দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করা হয়, তাই নিকাশ ঘর। চেক, ড্রাফট, বিল, চালান, দলিল হতে ব্যাংকসমূহের দৈনন্দিন দেনা-পাওনা সৃষ্টি হয়। এসব দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নির্দিষ্ট স্থান বা অফিস ব্যবহার করে। এ অফিস বা স্থানই নিকাশ ঘর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে নিকাশ ঘর পরিচালিত হয়।
প্রশ্ন \ ৫ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণের মাধ্যমে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা শিল্পকে অর্থ প্রদান করে। কিন্তু দেশের মুদ্রামান ও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হলে অর্থের পরিমাণ বেশিও হতে পারবে না, কমও হতে পারবে না। অর্থাৎ সহনশীল পর্যায়ে থাকা আবশ্যক। যে পদ্ধতিতে সরকারের পক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের মুদ্রাবাজারে ঋণের পরিমাণ কাম্যস্তরে রাখে, তাকে ঋণ নিয়ন্ত্রণ বলে। সুতরাং বাজারে ঋণের পরিমাণ ভারসাম্য স্তরে ধরে রাখাই হলো ঋণ নিয়ন্ত্রণ।
প্রশ্ন \ ৬ \ পরিসংখ্যান বিভাগের কাজ কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি অন্যতম বিভাগ হলো পরিসংখ্যান বিভাগ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশ-বিদেশের অর্থবাজার, অর্থনীতি ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করে থাকে তথা সরবরাহ করার কাজটি পরিসংখ্যান বিভাগ সম্পাদন করে।
প্রশ্ন \ ৭ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : অর্থ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক ও ধারক হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুদ্রাবাজারকে শক্তিশালীকরণ এবং দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানোর উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন \ ৮ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন উদ্দেশ্যে গঠিত হয়? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মুনাফা অর্জন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য নয়। দেশে বিহিত মুদ্রার পরিমাণ ও ঋণের পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করে জনগণের কল্যাণ সাধনই এর প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
প্রশ্ন \ ৯ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেন বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল সংরক্ষণ করে?
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল সংরক্ষণ করে থাকে। কারণ একটি দেশের মুদ্রার বিনিময় হার নির্ভর করে সেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল সংরক্ষণ করে থাকে।
প্রশ্ন \ ১০ \ মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রক বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : মুদ্রাবাজারকে আপন গতিতে চলতে দিলে সেটি দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। মুদ্রাবাজারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।
প্রশ্ন \ ১১ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যাংকিং সমাজের নেতা বলা হয় কেন?
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের নেতা হিসেবে কাজ করে। নেতা যেমন তার সমাজকে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যায় তেমনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং সমাজকে দিক নির্দেশনার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যায়।
প্রশ্ন \ ১২ \ নোট ও মুদ্রা প্রচলন সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য ও সকল অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নোট ও মুদ্রা ইস্যু করে তাকে নোট ও মুদ্রা প্রচলন বলে। নোট ও মুদ্রা প্রচলন করার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশে যাবতীয় লেনদেন সম্পাদন করার জন্য বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ বৈদেশিক বিনিময় বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : যে কৌশলে বিভিন্ন দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক, বিনিয়োগ ও অন্যান্য লেনদেন নিষ্পত্তি করা হয় তাকে বৈদেশিক বিনিময় বলে। এক দেশের মুদ্রা অন্য দেশে চলে না। এক্ষেত্রে বৈদেশিক বিনিময় এক দেশের মুদ্রা অন্য দেশের মুদ্রায় রূপান্তরের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন হস্তান্তরযোগ্য দলিলের মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিময় কাজটি সম্পাদিত হয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক বিনিময়ে সহায়তা করে।
প্রশ্ন \ ১৪ \ ব্যাংক হার নীতির ধারণা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে হারে তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে ঋণ দান করে বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট থেকে তাদের প্রথম শ্রেণির বিল ও সিকিউরিটিজ বাট্টা করে তাকে ব্যাংক হার বলে। এ হারের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলকে ব্যাংক হার নীতি বলা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন \ ১৫ \ জমার হার পরিবর্তন নীতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : ব্যাংকের প্রচলিত আইনানুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের মোট আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক জমা রাখতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতির স্বার্থে এ হার বাড়িয়ে বা কমিয়ে ঋণের পরিমাণ কাম্যস্তরে রাখার কৌশল অনুসরণ করে। একে জমার হার পরিবর্তন নীতি বলে।