এসএসসি সাধারণ বিজ্ঞান চতুর্থ অধ্যায় নবজীবনের সূচনা
পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি
বয়ঃসন্ধিকাল : দশ বছর বয়স থেকে উনিশ বছর বয়স পর্যন্ত এই সময়কালে একটি মেয়েকে কিশোরী এবং একটি ছেলেকে কিশোর বলা হয়। মানুষের জীবনের এই সময়কে বয়ঃসন্ধিকাল বলে। এই সময়কালে বালক ও বালিকার শরীর যথাক্রমে পুরুষের এবং নারীর শরীরে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয় আট থেকে তের বছর বয়সের মধ্যে। ছেলেদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকাল শুরুর বয়স দশ থেকে পনেরো বছর। বয়ঃসন্ধিকাল হলো বাল্যাবস্থা ও যৌবনকালের মধ্যবর্তী সময়।
বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক পরিবর্তনের কারণ : বয়ঃসন্ধিকালে শরীরে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনের প্রভাবে শারীরিক পরিবর্তনগুলো ঘটে। ছেলে ও মেয়েদের শরীরে এ হরমোন এক রকম নয়। এ কারণে এদের শরীরে যে পরিবর্তন হয় তা ভিন্ন। মেয়েদের শরীরে প্রধানত দুটি হরমোন যথা : ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটায়। এসব হরমোনের প্রভাবে মেয়েদের দ্রæত দৈহিক বৃদ্ধি হয় এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আকারের বৃদ্ধি ঘটে। এসব হরমোনের প্রভাবে ঋতুস্রাব শুরু হয়। ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকালে টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবে শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। এ হরমোনের প্রভাবে ছেলেদের গলার স্বর ভারী হয়। মুখে দাড়ি ও গোঁফ গজায়। দ্রæত দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে এবং শুক্রাণু তৈরি হয়।
বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক ও আচরণিক পরিবর্তনে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর উপায় : বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক ও আচরণিক পরিবর্তনগুলোর সাথে ছেলেমেয়েদের খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করা উচিত। এ সময় পরিবর্তনগুলো যে স্বাভাবিক, এ বিষয়টি খুব স্পষ্ট করে বুঝতে হবে। এটি বুঝতে পারলে অস্বস্তি বা ভয় কমে যাবে। এ সময়ের পরিবর্তনগুলো নিয়ে খোলা মনে মা-বাবা বা বড় ভাই-বোনের সাথে আলোচনা করলে সংকোচ অনেকটা কেটে যায়। এতে একা থাকা বা লোকজন এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এছাড়া ভালো গল্পের বই পড়া, সাথীদের সাথে খেলাধুলা করলে মানসিক প্রফুল্লতা বজায় থাকে।
বয়ঃসন্ধিকালে দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার কৌশল : বয়ঃসন্ধিকালে দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার কৌশলগুলো হলোÑ
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং নিয়মিত গোসল করা।
২. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং বেশি পরিমাণে পানি পান করা।
৩. এ সময় দেহকোষ ও জননকোষের ভাঙাগড়া সর্বাধিক হয় বলে মাছ, মাংস, সবজি এবং ফলমূল বেশি পরিমাণে খাওয়া দরকার।
৪. সাধারণত বেশি বিশ্রাম নেওয়া দরকার।
৫. সহপাঠীদের সাথে খেলাধুলা করা ও মানসিক প্রফুল্লতা বজায় রাখা।
বয়ঃসন্ধিকালীন বিবাহে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং এর প্রভাব : বয়ঃসন্ধিকালীন বিবাহে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। এ বয়সে গর্ভধারণ করলে গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ, শরীরে পানি আসা, খুব বেশি ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, গর্ভপাত ইত্যাদি ঘটে থাকে। তাছাড়া মা ও সন্তানের মৃত্যু ঝুঁকিও বেশি থাকে। এর প্রভাবে মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠন সম্পূর্ণ হয় না। শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লেখাপড়ার অনীহা আসে। অনেক ক্ষেত্রে মানসিক চাপ বেড়ে যায়। এতে পরিবার এবং সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
টেস্টটিউব বেবি : কৃত্রিম উপায়ে দেহের বাইরে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে প্রাথমিক ভ্রƒণ সৃষ্টি করে তাকে স্ত্রীলোকের জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে শিশুর জš§ হলে তাকে টেস্টটিউব বেবি বলা হয়। পর্যায়ক্রমে কতগুলো পদ্ধতি অনুসরণ করে ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন ঘটিয়ে টেস্টটিউব বেবির জš§ দেওয়া হয়।
লিঙ্গ নির্ধারণের কৌশল : লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোসোমগুলোকে আখ্যায়িত করা হয় ঢ এবং ণ ক্রোমোসোম নামে। মানুষের ক্ষেত্রে মহিলাদের দেহকোষে ডিপ্লয়েড অবস্থায় ঢঢ সেক্স ক্রোমোসোম থাকে এবং পুরুষের দেহকোষে ডিপ্লয়েড অবস্থায় ঢণ ক্রোমোসোম থাকে। গর্ভধারণকালে ডিম্বাণুর মিলন যদি ঢ ক্রোমোসোমবিশিষ্ট শুক্রাণুর সাথে হয়, তাহলে কন্যা সন্তান হবে, কারণ তখন ঢঢ এক সাথে হবে। আর গর্ভধারণকালে ডিম্বাণুর মিলন যদি ণ ক্রোমোসোমবিশিষ্ট শুক্রাণুর সাথে হয়, তাহলে যে সন্তান হবে সেটি ছেলে সন্তান হবে, কারণ তখন ঢণ একসাথে হবে।
পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তি এবং জীবজগতে বিবর্তনের ধারণা : ধারণা করা হয় প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড সহযোগে সৃষ্টি হয় নিউক্লিওপ্রোটিন। এই নিউক্লিওপ্রোটিন থেকেই সৃষ্টি হয় প্রোটোভাইরাস এবং তা থেকে সৃষ্টি হয় ভাইরাস। এরপর সম্ভবত উদ্ভব হয় ব্যাকটেরিয়া এবং আরও পরে সৃষ্টি হয় প্রোটোজোয়া। পরে প্রোটোজোয়ানদের দেহে দেখা গেল সুগঠিত নিউক্লিয়াস। কিছু এককোষী জীবদেহে সৃষ্টি হলো ক্লোরোফিল। ফলে একদিকে যেমন খাদ্য সংশ্লেষ সম্ভব হলো তেমনি পরিবেশে অক্সিজেনের সৃষ্টি হলো। তখন সবাত শ্বসনকারী জীবদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকল। উদ্ভব হলো এককোষী থেকে বহুকোষী জীব।
জীবনের উৎপত্তির মূলে রয়েছে বিবর্তন। যে ধীর, অবিরাম ও গতিশীল পরিবর্তন দ্বারা কোনো সরলতর উদবংশীয় জীবের পরিবর্তন দ্বারা জটিল ও উন্নততর নতুন প্রজাতির বা জীবের উদ্ভব ঘটে তাকে বিবর্তন বলে। সময়ের সাথে কোনো জীবের পরিবর্তনের ফলে যখন নতুন কোনো প্রজাতি সৃষ্টি হয় তখন তাকে বলা হয় জৈব বিবর্তন।
পৃথিবীতে নতুন প্রজাতির উৎপত্তির ধারণা : ল্যামার্কের তত্ত¡ অনুযায়ী, অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণের কারণে এবং প্রতিটি প্রজšে§ নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জিত হওয়ায় ধীরে ধীরে একটি প্রজাতি থেকে অপর একটি নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়। আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীরা ল্যামার্কের এ মতবাদ গ্রহণ করতে পারেননি। কারণ বাস্তবে অর্জিত বৈশিষ্ট্য যে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চালিত হয় এর সপক্ষে বর্তমান বংশগতিবিদগণ কোনো প্রমাণ পাননি। ডারউইনের মতবাদ অনুসারে সুবিধাজনক প্রকরণযুক্ত প্রাণী ও উদ্ভিদ পরিবেশের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে এবং অযোগ্যদের তুলনায় বেশি হারে বংশবিস্তার করতে পারে। এদের বংশধরদের মধ্যে প্রকরণগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে যায়। এই বংশধরদের মধ্যে যাদের সুবিধাজনক প্রকরণ বেশি থাকে, প্রকৃতি আবার তাদের নির্বাচন করে। এভাবে যুগ যুগান্তর ধরে নির্বাচিত করে প্রকৃতি প্রাণী ও উদ্ভিদের নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করে। বর্তমানে বংশগতিবিদ, কোষতত্ত¡বিদ ও শ্রেণিবিদগণ নতুন প্রজাতির উৎপত্তির বিষয়ে মেন্ডেলের বংশগতি মতবাদের এবং ডারউইনের বিবর্তন মতবাদের ভিত্তিতে বলেন, ধীর গতিতে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হতে পারে।
অনুশীলনীর বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর
১. কোন পানিতে সর্বপ্রথম জীবের উৎপত্তি হয়েছিল?
ক নদীর খ ঝরনার
সমুদ্রের ঘ পুকুরের
২. প্রোটোভাইরাস সৃষ্টির আগে বায়ুমণ্ডলে যে গ্যাসটি ছিল তা হলোÑ
i, অক্সিজেন
ii, হাইড্রোজেন
iii. নাইট্রোজেন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক র ও ii খ র ও iii
ii ও iii ঘ র, ii ও iii
নিচের গ্রাফটি থেকে ৩ ও ৪নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
৩. গ্রাফের অ অবস্থানে কোন প্রাণীটি থাকবে?
ক মাছ ব্যাঙ গ সাপ ঘ কচ্ছপ
৪. প্লাটিপাসের অবস্থান গ্রাফের কোথায়?
ক অ ও ই খ ই ও ঈ ই ও উ ঘ ঈ ও উ
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ প্রকরণ কাকে বলে?
উত্তর : প্রতিটি জীবের প্রজাতির বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পার্থক্য দেখা যায় তাদের প্রকরণ বা ভেরিয়েশন বলে।
প্রশ্ন \ ২ \ আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম কাকে বলে?
উত্তর : বিভিন্ন প্রজাতির অন্তর্গত বিভিন্ন প্রাণী বা উদ্ভিদের মধ্যে আশ্রয়, খাদ্য, জনন ইত্যাদির জন্য যে সংগ্রাম ঘটে তাকে আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম বলে।
প্রশ্ন \ ৩ \ অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম কী?
উত্তর : একটি প্রজাতির অন্তর্গত বিভিন্ন প্রাণী বা উদ্ভিদের মধ্যে আশ্রয়, খাদ্য, প্রজনন ইত্যাদির জন্য যে সংগ্রাম ঘটে তাকে অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম বলে।
প্রশ্ন \ ৪ \ গর্ভধারণ কী?
উত্তর : পুরুষের শুক্রাণু যখন মেয়েদের ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় তখনই একটি মেয়ের গর্ভে সন্তান আসে অর্থাৎ, সে গর্ভধারণ করে।
প্রশ্ন \ ৫ \ সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে এর জন্য দায়ী কে?
উত্তর : সন্তান ছেলে বা মেয়ে হবে তার জন্য প্রধানত দায়ী সন্তানের বাবা।
প্রশ্ন \ ৬ \ মাতৃগর্ভে কোন পদ্ধতিতে ডিম্বাণু সৃষ্টি হয়?
উত্তর : মাতৃজনন কোষ থেকে মায়োসিস পদ্ধতিতে ডিম্বাণু সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন \ ৭ \ জীবনের আবির্ভাবের ২য় যুক্তি কী?
উত্তর : সমুদ্রের পানিতে এখনও অনেক সরল এবং এককোষী জীব বসবাস করে।
প্রশ্ন \ ৮ \ নিউক্লিওপ্রোটিন কী?
উত্তর : প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড সহযোগে সৃষ্টি হয় নিউক্লিওপ্রোটিন।
প্রশ্ন \ ৯ \ অভিব্যক্তি কী?
উত্তর : পৃথিবীর উৎপত্তি ও জীবনের উৎপত্তির ঘটনাপ্রবাহকে বলে রাসায়নিক বিবর্তন বা অভিব্যক্তি।
প্রশ্ন \ ১০ \ ভাইরাস কী?
উত্তর : ভাইরাস জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী অবস্থা।
প্রশ্ন \ ১১ \ ‘বায়োলজি’ শব্দটির প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর : ল্যামার্ক ‘বায়োলজি’ শব্দটির প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনিই সর্বপ্রথম অভিব্যক্তির ওপর বিশ্লেষণী তত্ত¡টি আবিষ্কার করেন।
প্রশ্ন \ ১২ \ ল্যামার্কবাদ বা ল্যামার্কিজম কী?
উত্তর : ল্যামার্কের তত্ত¡কে ল্যামার্কবাদ বা ল্যামার্কিজম বলে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ প্রকাশ বা পরিবৃত্তি কী?
উত্তর : জীব দুটির মধ্যে যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, তাকে প্রকাশ বা পরিবৃত্তি বলে।
প্রশ্ন \ ১৪ \ প্রাকৃতিক নির্বাচন কী?
উত্তর : যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় অনুক‚ল প্রকাশ বা অভিযোজনমূলক প্রকাশ সমন্বিত জীবেরা অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, তাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে।
প্রশ্ন \ ১৫ \ প্লাটিপাস কী?
উত্তর : প্লাটিপাস হলো একপ্রকার সংযোগকারী বা কানেকটিং লিংক (জীব)।
প্রশ্ন \ ১৬ \ নিটাম (এহবঃঁস) কী?
উত্তর : নিটাম (এহবঃঁস) হলো একপ্রকার সংযোগকারী উদ্ভিদ।
প্রশ্ন \ ১৭ \ ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন কাকে বলে?
উত্তর : দেহের বাইরে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন ঘটানোকে ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বলে।
প্রশ্ন \ ১৮ \ লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য সেক্স ক্রোমোজোমের সংখ্যা কত?
উত্তর : লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য সেক্স ক্রোমোজোমের সংখ্যা এক জোড়া।
প্রশ্ন \ ১৯ \ সংযোগকারী জীব বা কানেকটিং লিংক কী?
উত্তর : জীবজগতে এমন জীবের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়, যাদের মধ্যে দুটি জীবগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এ ধরনের জীবকে সংযোগকারী জীব বা কানেকটিং লিংক বলে।
প্রশ্ন \ ২০ \ ভ্রƒণ কাকে বলে?
উত্তর : ডিমের ভেতরে অথবা গর্ভের মধ্যে অবস্থিত শিশু প্রাণীকে এবং উদ্ভিদের বীজের মধ্যে অবস্থিত শিশু উদ্ভিদকে ভ্রƒণ বলে।]
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ ডারউইনের মতে প্রজাতি কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে? অথবা, প্রজাতি উদ্ভবের ব্যাপারে ডারউইনের মতবাদ বর্ণনা কর।
উত্তর : প্রজাতির উদ্ভবের ব্যাপারে চার্লস ডারউইন যে মতবাদ দেন তা হলো প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ। তাঁর মতে যেসব প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে সুবিধাজনক প্রকরণ দেখা যায়, প্রকৃতি তাদের নির্বাচন করে এবং তাদের লালন করে। সুবিধাজনক প্রকরণযুক্ত প্রাণী ও উদ্ভিদ পরিবেশের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে এবং অযোগ্যদের তুলনায় বেশি হারে বংশবিস্তার করতে পারে। এই বংশধরদের মধ্যে যাদের সুবিধাজনক প্রকরণ বেশি থাকে; প্রকৃতি আবার তাদের নির্বাচন করে। এভাবে যুগযুগান্তর ধরে নির্বাচিত করে প্রকৃতি প্রাণী ও উদ্ভিদের নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন \ ২ \ জীবনের উৎপত্তি যে প্রথমে সমুদ্রের পানিতে হয়েছিল এর যুক্তি কী?
উত্তর : জীবনের উৎপত্তি প্রথমে সমুদ্রে হয়েছিল। এ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যে যুক্তি রেখেছেন সেগুলো হলো : প্রথমত অধিকাংশ জীবকোষ এবং দেহস্থ রক্ত ও কোষের তরল অংশের সঙ্গে সমুদ্রের পানির খনিজ লবণের সাদৃশ্য। দ্বিতীয়ত সমুদ্রের পানিতে এখনও অনেক সরল এবং এককোষী জীব বসবাস করে।
প্রশ্ন \ ৩ \ বয়ঃসন্ধিকালে আচরণগত পরিবর্তনগুলো কী কী?
উত্তর : বয়ঃসন্ধিকালে আচরণগত পরিবর্তনগুলো নিচে উল্লেখ করা হলোÑ (র) প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করা। (ii) সে যে একজন আলাদা ব্যক্তিত্ব এ বিষয়ে বিভিন্ন আচরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা।
প্রশ্ন \ ৪ \ কীভাবে ব্যক্তজীবী উদ্ভিদের আবির্ভাব ঘটেছে?
উত্তর : উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বিলুপ্ত টেরিন্ডোস্পার্ম নামে এক ধরনের উদ্ভিদের জীবাশ্ম ফার্ন ও ব্যক্তজীবী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এ কারণে ফার্নজাতীয় উদ্ভিদ থেকে জিমনোস্পার্ম অর্থাৎ, ব্যক্তজীবী উদ্ভিদের আবির্ভাব ঘটেছে।
প্রশ্ন \ ৫ \ ঋতুস্রাবের সময়ে কিশোরীর কী কী করা উচিত?
উত্তর : ঋতুস্রাবের সময়ে কিশোরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ও নিয়মিত গোসল করা দরকার। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে। কোনো শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্ন \ ৬ \ মেয়েদের মাসিক শুরু হলে কী করতে হবে?
উত্তর : মেয়েদের মাসিক শুরু হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য প্রতিদিন গোসল করে পরিষ্কার শুকনো কাপড় পরা, জীবাণুমুক্ত নরম কাপড় বা স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে হবে। দিনে কয়েকবার এই প্যাড হালকা গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। প্রচুর পানি ও সকল রকম খাবার খেতে হবে।
প্রশ্ন \ ৭ \ গর্ভধারণের প্রথম কয়েক মাস মেয়েদের শরীরে কিরূপ লক্ষণ দেখা যায়?
উত্তর : গর্ভধারণের প্রথম কয়েক মাসে মেয়েদের শরীরে কিছু কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায়। যেমনÑ
i, মাসিক বা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া
ii, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
iii. মাথা ঘোরা
রা. বারবার প্রস্রাব হওয়া
া. স্তন বড় ও ভারী হওয়া
প্রশ্ন \ ৮ \ ব্যাকটেরিয়া কী?
উত্তর : ব্যাকটেরিয়া অতিক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক একটি জীব। এদের নিউক্লিয়াসে কোনো নিউক্লিয়ার আবরণী থাকে না। এরা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে কিংবা অনুপস্থিতিতে বাঁচতে পারে। এরা পরজীবী, মৃতজীবী কিংবা স্বভোজী হতে পারে।
প্রশ্ন \ ৯ \ জীবন্ত জীবাশ্ম বলতে কী বোঝ?
উত্তর : কতকগুলো জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করে কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়াই এখনো পৃথিবীতে বেঁচে আছে। অথচ এদের সমগোত্রীয় এবং সমসাময়িক জীবদের বিলুপ্তি ঘটেছে। এসব জীবদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে। যেমনÑ রাজকাঁকড়া।
প্রশ্ন \ ১০ \ অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের পরিণতি কী হয়?Ñ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : অপরিণত বয়সে মা হওয়ার মতো শারীরিক পূর্ণতা ও মানসিক পরিপক্বতা থাকে না। কম বয়সে বিয়ে হলে যেসব মেয়েরা মা হয় তারা নানারকম মানসিক ও শারীরিক জটিলতায় ভোগে। কারণ এ বয়সে মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠন সম্পূর্ণ হয় না। এছাড়া অপরিণত বয়সের একটি মেয়ের সন্তানধারণ ও জন্মদান সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারণা থাকে না। গর্ভধারণ করলে শুধু যে মেয়েটাই শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয়’ সদ্যোজাত শিশুটির জীবনও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এতে পরিবার ও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রশ্ন \ ১১ \ অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ করলে কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ করলে নিম্নরূপ সমস্যা দেখা যায়। যেমন Ñ (র) স্বাস্থ্যগত সমস্যা, (ii) শিক্ষাগত সমস্যা, (iii) পারিবারিক সমস্যা, (রা) আর্থিক সমস্যা, (া) গর্ভপাতজনিত সমস্যা।
প্রশ্ন \ ১২ \ অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
উত্তর : অপরিণত বয়সে গর্ভধারণে যেসব জটিলতা সৃষ্টি হয় তা সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, নাটক, গান প্রভৃতি গণমাধ্যমে প্রচার করে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করা যায়। কারণ বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে মেয়েদের বিয়ের জন্য বয়স হতে হবে কমপক্ষে ১৮ বছর, আর ছেলেদের ক্ষেত্রে হবে ২১। বিয়ের বয়স হওয়ার আগে ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেওয়া হলে তা হবে আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ এবং একে অপরিণত বয়স হিসেবে ধরা হবে। কাজেই আইন অমান্য করে অপরিণত বয়সে ছেলেমেয়ের বিয়ে দেওয়া যাবে না। তাহলে অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের কোনো সুযোগ থাকবে না।
প্রশ্ন \ ১৩ \ বয়ঃসন্ধিকাল বলতে কী বোঝ?
উত্তর : মানুষের জীবনকালে প্রথমে সে থাকে শিশু। পরবর্তীতে শিশু থেকে ধাপে ধাপে বৃদ্ধ অবস্থায় উপনীত হয়। সাধারণত ৫ বছর পর্যন্ত শৈশবকাল। ছয় থেকে দশ বছর পর্যন্ত বয়সকে বলা হয় বাল্যকাল। দশ বছর বয়সের পর একটি মেয়েকে কিশোরী এবং একটি ছেলেকে কিশোর বলা হয়। মানুষের জীবনের এই সময়কে বয়ঃসন্ধিকাল বলে।
প্রশ্ন \ ১৪ \ গর্ভধারণ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : গর্ভধারণ হচ্ছে শরীরের একটি বিশেষ পরিবর্তন। সন্তান গর্ভে এলেই শুধুমাত্র শরীরের এই বিশেষ পরিবর্তন ঘটে। পুরুষের শুক্রাণু যখন মেয়েদের ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় তখনই একটি মেয়ের গর্ভে সন্তান আসে অর্থাৎ সে গর্ভধারণ করে।
প্রশ্ন \ ১৫ \ সমসংস্থ অঙ্গ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : যে সমস্ত অঙ্গের আকৃতিগত পার্থক্য দেখা গেলেও অভ্যন্তরীণ কাঠামো পরীক্ষা করলে দেখা যায় যে এদের অস্থি বিন্যাসের মৌলিক প্রকৃতি একই ধরনের। এই সমস্ত অঙ্গগুলোকে সমসংস্থ অঙ্গ বলে। যেমন : পাখির ডানা, বাদুড়ের ডানা, তিমির ফ্লিপার, সিলের অগ্রপদ, ঘোড়ার অগ্রপদ, মানুষের হাত ইত্যাদি।
প্রশ্ন \ ১৬ \ লুপ্তপ্রায় অঙ্গ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : জীবদেহে এমন কতগুলো অঙ্গ দেখা যায়, যেগুলো নির্দিষ্ট জীবদেহে সক্রিয় থাকে কিন্তু সম্পর্কিত অপর জীবদেহে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে, এমন অঙ্গগুলোকে লুপ্তপ্রায় অঙ্গ বা নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলে। প্রাণিদেহের মধ্যে বহু লুপ্তপ্রায় অঙ্গ পরিলক্ষিত হয়। মানুষের সিকাম ও সিকামসংলগ্ন ক্ষুদ্র অ্যাপেনডিক্সটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। কিন্তু স্তন্যপায়ীভুক্ত তৃণভোজী গিনিপিগের দেহে এগুলো সক্রিয় অবস্থায় থাকে।
প্রশ্ন \ ১৭ \ কীভাবে বিবর্তনের মাধ্যমে পাখিজাতীয় প্রাণীর উৎপত্তি ঘটেছে।
উত্তর : সুপ্ত আর্কিওপটেরিকস নামে একরকম প্রাণীর জীবাশ্ম পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, এদের সরীসৃপের মতো পা ও দাঁত, পাখির মতো পালকবিশিষ্ট দুটি ডানা, একটি লেজ, লেজের শেষ প্রান্তে এক গুচ্ছ পালক ও চঞ্চু ছিল। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী থেকেই বিবর্তনের মাধ্যমে পাখিজাতীয় প্রাণীর উৎপত্তি ঘটেছে।
প্রশ্ন \ ১৮ \ প্রাকৃতিক নির্বাচন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : ডারউইনের মতে যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীবেরা অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতায় অধিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে এবং অধিকসংখ্যায় বেঁচে থাকে ও বংশবিস্তার করে তাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে।
প্রশ্ন \ ১৯ \ কোষীয় জীব আবির্ভাবের পর্যায়গুলো কী কী?
উত্তর : কোষীয় জীব সৃষ্টির পর্যায়গুলো হলো : (র) জৈব রাসায়নিক সংশ্লেষ (ii) নিউক্লিক এসিড ও প্রোটিন গঠন (iii) প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড সংযোগ (রা) নিউক্লিওপ্রোটিনের সৃষ্টি (া) নিউক্লিওপ্রোটিন থেকে প্রোটোভাইরাস (ার) প্রোটোভাইরাস থেকে ভাইরাস (াii) ভাইরাস থেকে ব্যাকটেরিয়া।
প্রশ্ন \ ২০ \ ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদের প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো কী কী ছিল?
উত্তর : ডারউইনের যেসব প্রতিপাদ্য বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্তে¡র ব্যাখ্যা করেছিলেন সেগুলো হলোÑ (র) জীবের অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি (ii) খাদ্য ও বাসস্থানের সীমাবদ্ধতা (iii) অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম (আন্তঃপ্রজাতিক; অন্তঃপ্রজাতিক ও পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম) (রা) প্রকরণ বা জীবদেহে পরিবর্তন (া) যোগ্যতমের জয় এবং (ার) নতুন প্রজাতির উৎপত্তি।
প্রশ্ন \ ২১ \ জীব বিবর্তনের প্রমাণগুলো কী কী?
উত্তর : জীব বিবর্তনের প্রমাণগুলো হলো :
(র) অঙ্গসংস্থানিক প্রমাণ
(ii) লুপ্তপ্রায় অঙ্গ
(iii) তুলনামূলক শারীরস্থানিক প্রমাণ
(রা) ভ্রূণতত্ত¡ঘটিত প্রমাণ
(া) জীবাশ্মঘটিত প্রমাণ ও
(ার) সংযোগকারী জীব সম্পর্কিত প্রমাণ।
প্রশ্ন \ ২২ \ প্রাচীন পৃথিবীতে কীভাবে জীবনের উদ্ভব ঘটেছিল?
উত্তর : পৃথিবীতে কীভাবে জীব সৃষ্টি হয়েছিল সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের অনুমান, প্রায় ২৬০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস ছিল; অহরহ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং বজ্রপাতের ফলে ও অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে এই যৌগ পদার্থগুলো মিলিত হয়ে অ্যামাইনো এসিড এবং নিউক্লিক এসিড উৎপন্ন করে। পরে অ্যামাইনো এসিড এবং নিউক্লিক এসিড মিলিত হওয়ায় নিউক্লিওপ্রোটিন অণুর সৃষ্টি হয়। এভাবে নিউক্লিওপ্রোটিন অণুগুলো ক্রমে নিজেদের প্রতিরূপ-গঠনের ক্ষমতা অর্জন করে জীবনের সূত্রপাত ঘটায়।
প্রশ্ন \ ২৩ \ জীবন সৃষ্টির পর্যায়গুলো একটি রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখাও।
উত্তর : জীবন সৃষ্টির পর্যায়গুলো রেখাচিত্রের সাহায্যে নিচে দেখানো হলোÑ
কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন
মিথেন, অ্যামোনিয়া, জলীয় বাষ্প
অ্যামাইনো এসিড
নিউক্লিক এসিড; প্রোটিন
নিউক্লিওপ্রোটিন
প্রোটোভাইরাস
প্রশ্ন \ ২৪ \ মানুষের ক্ষেত্রে লিঙ্গ নির্ধারণে কে দায়ী ‘বাবা নাকি মা’? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মানুষের পুত্র বা কন্যা হওয়া নির্ভর করে মানুষের সেক্স ক্রোমোসোম ‘ঢ’ ও ‘ণ’ এর মিলনের ওপর। স্ত্রীলোকের ডিম্বাণু ‘ঢ’ ক্রোমোসোম বিশিষ্ট। পুরুষদের শুক্রাণু দুই ধরনের ‘ঢ’ ও ‘ণ’ ক্রোমোসোম বিশিষ্ট। ঢ- শুক্রাণু ঢ -ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হলে কন্যা সন্তান (ঢঢ) এবং ণ শুক্রাণু ঢ ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হলে পুত্র (ঢণ) সন্তান জন্মাবে। সুতরাং পুত্র সন্তান সৃষ্টিতে ‘মা’র কোনো ভূমিকা নেই। লিঙ্গ নির্ধারণের অসমতার জন্য পুরুষ দায়ী। সুতরাং পুত্র সন্তান হবে নাকি কন্যা সন্তান হবে এর জন্য দায়ী বাবা।
প্রশ্ন \ ২৫ \ রাসায়নিক বিবর্তনের সঙ্গে জৈব বিবর্তনের পার্থক্য কী?
উত্তর : পৃথিবীর উৎপত্তি ও জীবনের উৎপত্তির ঘটনা প্রবাহকে বলা হয় রাসায়নিক বিবর্তন। আর জৈব বিবর্তন বলতে বোঝায় সময়ের সঙ্গে কোনো জীবের পরিবর্তন, যা সৃষ্টি করে নতুন কোনো জীবপ্রজাতি। রাসায়নিক বিবর্তন ভৌতজগতের সঙ্গে সম্পর্কিত কিন্তু জৈব বিবর্তন জীবজগতের সঙ্গে সম্পর্কিত।
প্রশ্ন \ ২৬ \ ডারউইন ও ল্যামার্কের মতবাদের দুইটি পার্থক্য লেখ।
উত্তর : ল্যামার্কবাদ ও ডারউইনবাদের তুলনামূলক চিত্র :
ল্যামার্কবাদ ডারউইনবাদ
১. ব্যবহার ও অব্যবহারের কারণে কোনো অঙ্গের পরিবর্তন ঘটে এবং এই অর্জিত পরিবর্তনগুলো বংশানুক্রমে সঞ্চারিত হওয়ায় অভিব্যক্তি বা বিবর্তন ঘটে। ১. জীবন-সংগ্রামের মাধ্যমে বেঁচে থাকার জন্য জীবদেহে বিভিন্ন ধরনের প্রকরণ বা ভেরিয়েশন দেখা যায়; যা বিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ।
২. দেহের নিষ্ক্রিয় অঙ্গগুলোর অতীতে ব্যবহার ছিল, কিছু অব্যবহারের কারণে বর্তমানে অঙ্গগুলো লুপ্তপ্রায়। ২. ডারউইনবাদে দেহের নিষ্ক্রিয় অঙ্গ সম্বন্ধে কোনো উলেখ নেই।
অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন -১ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মিসেস সান্তা সন্তানধারণে অক্ষম হওয়ায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার এ সমস্যা সমাধানের জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতিতে তার ডিম্বাণুর পরিস্ফুটন ঘটান। অন্যদিকে মিসেস সান্তার চাচাতো বোন মিতা পুত্র সন্তানের আশায় এখন পাঁচ কন্যা সন্তানের জননী।
ক. নিউক্লিওপ্রোটিন কাকে বলে?
খ. জীবন্ত জীবাশ্ম বলতে কী বুঝায়?
গ. মিসেস সান্তার ক্ষেত্রে ডাক্তার কোন বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করলেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মিতার একই রকম সন্তান হওয়ার বিষয়টিকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড সহযোগে যে জৈব রাসায়নিক পদার্থ সৃষ্টি হয় তাকে নিউক্লিওপ্রোটিন বলে।
খ. কতগুলো জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই এখনো পৃথিবীতে বেঁচে আছে; অথচ তাদের সমগোত্রীয় এবং সমসাময়িক জীবদের বিলুপ্তি ঘটেছে। এসব জীবদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে।
গ. মিসেস সান্তার ক্ষেত্রে ডাক্তার যে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন সেটি হলোÑ টেস্টউিউব বেবি জন্মানোর ব্যবস্থা। কৃত্রিম উপায়ে দেহের বাইরে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে প্রাথমিক ভ্রূণ সৃষ্টি করে তাকে স্ত্রীলোকের জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে শিশুর জন্ম হলে তাকে টেস্টটিউব বেবি বলা হয়। ডাক্তার মিসেস সান্তার ডিম্বাণু ও তার স্বামীর শুক্রাণু সংগ্রহ করে বিশেষ ধরনের পালন মাধ্যমে (ঈঁষঃঁৎব সবফরঁস) এদের মিলন ঘটান। এরপর পালন মাধ্যমে প্রাথমিক ভ্রূণ উৎপাদন করে, উৎপাদিত ভ্রƒণকে স্ত্রী লোকের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করেন। এরপর প্রসূতির পরিচর্যার দ্বারা মিসেস সান্তা সন্তান লাভ করবেন।
ঘ. আমরা জানি, মানবদেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোসোম থাকে। এই ২৩ জোড়ার মধ্যে ২২ জোড়াকে অটোসোম এবং বাকি এক জোড়াকে লিঙ্গ নির্ধারক বা সেক্স ক্রোমাসোম বলে।ডিপ্লয়েড অবস্থায় মহিলাদের দেহকোষে ঢঢ সেক্স ক্রোমাসোম থাকে এবং পুরুষের দেহকোষে ঢণ ক্রোমোসোম থাকে। মহিলাদের মাতৃ জননকোষ থেকে মায়োসিস পদ্ধতিতে যে চারটি ডিম্বাণু সৃষ্টি হয়, তার প্রত্যেকটিতে ১১ জোড়া অটোসোমসহ ‘ঢ’ ক্রোমোসোম থাকে। ফলে সব ডিম্বাণু হয় ‘ঢ’ ক্রোমোসোমবিশিষ্ট। পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণু গঠনের সময় চারটি শুক্রাণুর মধ্যে দুটি শুক্রাণুর প্রতিটিতে ১১ জোড়া অটোসোমসহ ‘ঢ’ ক্রোমোসোম এবং অপর দুটি প্রতিটি ১১ জোড়া অটোসোমসহ ণ ক্রোমোসোম ধারণ করে। ফলে পুরুষদের শুক্রাণু হয় দুই ধরনেরÑ‘ঢ’ ও ‘ণ’ ক্রোমোসোমবিশিষ্ট। গর্ভধারণকালে ডিম্বাণুর মিলন যদি ‘ঢ’ ক্রোমোসোমবিশিষ্ট শুক্রাণুর সাথে হয়, তাহলে কন্যাসন্তান হবে, কারণ এখন ‘ঢঢ’ একসাথে হবে। আর গর্ভধারণকালে ডিম্বাণুর মিলন যদি ‘ণ’ ক্রোমোসোমবিশিষ্ট শুক্রাণুর সাথে হয়, তাহলে যে সন্তান হবে সেটি ছেলে সন্তান হবে, কারণ তখন ‘ঢণ’ একসাথে হবে।
মিতার প্রতিবার গর্ভধারণের সময় তার ডিম্বাণুর সাথে তার স্বামীর ঢ-ক্রোমোসোমবিশিষ্ট শুক্রাণুর মিলনের ফলে কন্যা সন্তান হয়েছে। এক্ষেত্রে মিতার কোনো ভ‚মিকা নাই, কারণ সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ হয় বাবার সেক্স ক্রোমোসোম দ্বারা।
প্রশ্ন -২ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জামান বিবর্তন অধ্যায়টি ভালো বুঝতে না পেরে তার বাবার কাছে যায়। বাবা সমসংস্থ বিবর্তন সম্পর্কিত প্রমাণটি বুঝিয়ে দিলেন। এরপর জামান তার বাবার কাছে বিবর্তনের মতবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ল্যামার্কের মতবাদ ও ডারউইনের মতবাদ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন।
ক. সেক্স ক্রোমোসোম কাকে বলে?
খ. বিবর্তন বলতে কী বুঝায়?
গ. বাবা কীভাবে বিবর্তন সম্পর্কিত উলিখিত প্রমাণটি ব্যাখ্যা করেন।
ঘ. বাবার বুঝিয়ে দেয়া মতবাদ দুটির মধ্যে কোনটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য? তুলনামূলক আলোচনা করে মতামত দাও।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. দেহকোষে লিঙ্গ নির্ধারণে যে একজোড়া ক্রোমোসোম বিশেষ ভ‚মিকা রাখে তাদের সেক্স ক্রোমোসোম বলে।
খ. বিবর্তন কথাটির আক্ষরিক অর্থ হলো কোনো বস্তুর ধীর এবং ক্রমাগত পরিবর্তন। তাই বিবর্তন বলতে বুঝায় ধীর, অবিরাম ও গতিশীল পরিবর্তন দ্বারা কোনো সরলতর জীবের পরিবর্তন দ্বারা জটিল ও উন্নতর নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটাকে।
গ. জামানকে তার বাবা বললেন সৃষ্টির পর থেকে কোটি কোটি বছর ধরে জীবজগতের পরিবর্তন বা বিবর্তন ঘটেছে তার স্বপক্ষে একাধিক প্রমাণের মধ্যে সমসংস্থ অঙ্গ একটি প্রমাণ। পাখির ডানা, বাদুড়ের ডানা, তিমির ফ্লিপার, সিলের অগ্রপদ, ঘোড়ার অগ্রপদ, মানুষের হাত ইত্যাদি সমসংস্থ অঙ্গ। আপাতদৃষ্টিতে এদের আকৃতিগত পার্থক্য দেখা গেলেও অভ্যন্তরীণ কাঠামো পরীক্ষা করলে দেখা যায় যে এদের অস্থিবিন্যাসের মৌলিক প্রকৃতি একই ধরনের। বহিরাকৃতিতে যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে তা ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হওয়ার জন্যই ঘটেছে। পাখি ও বাদুড়ের অগ্রপদ ওড়ার জন্য, তিমির অগ্রপদ ফ্লিপার সাঁতারের জন্য, ঘোড়ার অগ্রপদ দৌড়ানোর জন্য ও মানুষের অগ্রপদ হাত কোনো জিনিস ধরা ও অন্যান্য সৃজনশীল কাজের জন্য পরিবর্তিত হয়েছে। সমসংস্থ অঙ্গগুলো থেকে বোঝা যায় যে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ তথা জীবগুলো উৎপত্তিগতভাবে এক, যদিও সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার ফলে বর্তমানে তাদের গঠন বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। তাই বিবর্তনবিদগণ মনে করেন যে সমসংস্থ অঙ্গবিশিষ্ট জীবগুলোর উৎপত্তি, একই পূর্বপুরুষ হতে ঘটেছে। এই তথ্য জৈব বিবর্তনকে সমর্থন করে। এভাবে জামানের বাবা সমসংস্থ অঙ্গের উৎপত্তি ও ক্রম বিকাশের দ্বারা বিবর্তনের প্রমাণটি ব্যাখ্যা করেন।
ঘ. জামানের বাবার বুঝিয়ে দেওয়া বিবর্তনের মতবাদ দুটির মধ্যে ডারউইনবাদ বা ডারউইনের মতবাদ গ্রহণযোগ্য।
আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীরা জৈব বিবর্তনে ল্যামার্কের মতবাদ গ্রহণ করতে পারেননি। কারণ বংশগতি বিদ্যার প্রসারের পর বংশগতিবিদগণ জীবের মধ্যে অনুসন্ধান করেছেন অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুক্রম। কিন্তু বাস্তবে অর্জিত বৈশিষ্ট্য যে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয় এর সপক্ষে বংশগতিবিদগণ কোনো প্রমাণ পাননি।
ডারউইনের দৃষ্টিতে প্রকৃতিতে সংঘটিত সাধারণ সত্যগুলো হলোÑ
১. অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি।
২. সীমিত খাদ্য ও বাসস্থান।
৩. অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম। ডারউইন লক্ষ করেন যে জীবকে তিনটি পর্যায়ে এই সংগ্রাম করতে হয়। যথা : অন্তঃপ্রজাতিক সংগ্রাম, অন্তঃপ্রজাতিক সংগ্রাম এবং পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম।
৪. প্রকরণ।
৫. যোগ্যতমের জয়।
৬. প্রাকৃতিক নির্বাচন : ডারউইনের তত্তে¡র এই প্রতিপাদ্যটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যেসব প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে সুবিধাজনক প্রকরণ দেখা যায়, প্রকৃতি তাদের নির্বাচন করে এবং তাদের লালন করে। সুবিধাজনক প্রকরণযুক্ত প্রাণী ও উদ্ভিদ পরিবেশের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে এবং অযোগ্যদের তুলনায় বেশি হারে বংশবিস্তার করতে পারে। এদের বংশধরদের মধ্যে প্রকরণগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায়। এই বংশধরদের মধ্যে যাদের সুবিধাজনক প্রকরণ বেশি থাকে, প্রকৃতি আবার তাদের নির্বাচন করে। এভাবে যুগযুগান্তর ধরে নির্বাচিত করে প্রকৃতি প্রাণী ও উদ্ভিদের নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করে। বর্তমানে বংশগতিবিদ, কোষতত্ত¡বিদ ও শ্রেণিবিদগণ নতুন প্রজাতির উৎপত্তির বিষয়ে ডারউইনের বিবর্তন মতবাদের ভিত্তিতে বলেন, ধীরগতিতে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হতে পারে। তাই ডারউইনের বিবর্তন মতবাদের গ্রহণযোগ্যতাকে আমি সমর্থন করি।
প্রশ্ন -৩ ল্ফ নিচের চিত্রটি লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. হানটিংটন’স রোগের কারণ কী? ১
খ. মানব ক্লোনিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে কেন? ২
গ. চিত্রের ‘চ’ অঙ্গাণুর রাসায়নিক গঠন ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. বংশগতিতে ‘চ’ অঙ্গাণুটির ভ‚মিকা বিশ্লেষণ কর। ৪
ল্ফল্প ৩নং প্রশ্নের উত্তর ল্ফল্প
ক. হানটিংটন’স রোগের কারণ পয়েন্ট মিউটেশন।
খ. মানব ক্লোনিং এবং নৈতিকতা নিয়ে বিতর্ক উঠছে। তাই এ ধরনের ক্লোনিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করার কারণ হিসেবে বেশি কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো :
১. ক্লোন করা শিশুটি সুস্থ হবে না বরং উল্টো প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গ হওয়ারও আশঙ্কা বেশি।
২. মানব ক্লোনিং হবে প্রকৃতির ওপর এক বড় ধরনের হস্তক্ষেপ।
৩. ধর্ম আর বিজ্ঞান এক নয়। মানুষের ক্লোনিং হবে ধর্মীয় অনুশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ।
এসব কারণেই মানব ক্লোনিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের চিত্রের চ অঙ্গাণুটি নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ক্রোমোসোম। ক্রোমোসোমের রাসায়নিক গঠনে দেখা যায় এর মধ্যে রয়েছে নিউক্লিক এসিড, প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদান। দু ধরনের নিউক্লিক এসিড ক্রোমোসোমে থাকে যথাÑ ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (উঘঅ) এবং রাইবো নিউক্লিক এসিড (জঘঅ)
ডিএনএ অণু দ্বিসূত্রকবিশিষ্ট লম্বা শৃঙ্খলের নিউক্লিওটাইড দিয়ে গঠিত পলিনিউক্লিওটাইডের একটি নিউক্লিওটাইড, একটি ফসফেট, একটি নাইট্রোজেন ক্ষারক ও শর্করা নিয়ে গঠিত। ডিএনএ অণুর আকৃতি অনেকটা প্যাচানো সিড়ির মতো। দুপার্শ্বের শর্করার সাথে দুটি করে নাইট্রোজেন ক্ষারক জোড় বেঁধে তৈরি করে সিঁড়ির ধাপ।
আরএনএ অণু এক সূত্রক এবং পলিনিউক্লিওটাইড। এর নাইট্রোজেন ক্ষারক হলো ডিএনএর মতো । শুধু পার্থক্য হচ্ছে ডিএনএতে পাইরিমিডিন ক্ষারক থাইমিন আছে, কিন্তু আরএনএতে থাইমিন এর পরিবর্তে ইউরাসিল আছে।
ক্রোমোজোমে দু ধরনের প্রোটিন থাকে। যথা : হিস্টোন ও নন হিস্টোন প্রোটিন।
উপরে বর্ণিত রাসায়নিক পদার্থগুলো ছাড়া ক্রোমোজোমে লিপিড ক্যালসিয়াম, লৌহ ম্যাগনেসিয়াম আয়রন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ অল্প পরিমাণে আছে।
ঘ. ‘চ’ অঙ্গাণুটি হলো ক্রোসোসোম যা বংশগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
ক্রোমোসোমের প্রধান উপাদান ডিএনএ। ডিএনএই জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত ধারক, যাকে জিন বলা হয়। বংশপরম্পরায় কোনো বৈশিষ্ট্যের নির্ধারক একককে জিন বলে। জীবজগতের বৈচিত্র্যের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে জিন। ক্রোমোসোমের গায়ে সন্নিবেশিত থাকে অসংখ্য জিন বা বংশগতির একক। জিনের রাসায়নিক রূপ হচ্ছে ডিএনএ। ডিএনএ বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে পরবর্তী বংশে সঞ্চালিত করে। ডিএনএ শেকল লম্বালম্বিভাবে স্ববিভাজনের (ঝবষভ ফঁঢ়ষরপধঃরড়হ) দ্বারা ভাগ হয়ে পরিপূরক দুটি পার্শ্ব কাঠামো গঠিত হয়। এভাবে একটা ডিএনএ অণু ভেঙে তৈরি হয় দুটি নতুন অণু। নতুনভাবে সৃষ্ট প্রতিটি অণুতে থাকে একটা পুরাতন ও একটা নতুন ডিএনএ পার্শ্ব কাঠামো, যার ফলে প্রতিটি নতুন ডিএনএ অণু হয় মূলটির হুবহু অণুলিপি। এভাবে ডিএনএ অণুতে রক্ষিত জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যের সাংকেতিক নীলনকশা পরিবর্তন ছাড়াই সংরক্ষিত হয় এবং পরবর্তী প্রজšে§ সঞ্চারিত হয়।
এ সবই সংঘটিত হয় ক্রোমোসোমে। ক্রোমোসোম ডিএনএ ও আরএনএ কে ধারণ করে বাহক হিসেবে। ক্রোমোসোম ডিএনএ ও আরএনএ কে সরাসরি বহন করে পিতা মাতা থেকে তাদের পরবর্তী বংশ ধরে নিয়ে যায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, এ অঙ্গাণুটিই মূলত বংশগতিতে মূল চালিকাশক্তির ভ‚মিকা পালন করে।
প্রশ্ন -৪ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মাতা পিতা
অটোসোম অঅ অটোসোম অঅ
+ +
ঢঢ ঢণ
মায়োসিস মায়োসিস
ক. কোন সময়কে বয়ঃসন্ধিকাল বলে? ১
খ. টেস্টটিউব বেবি বলতে কী বুঝায়? ২
গ. উপরিউক্ত তথ্যের আলোকে কীভাবে জননকোষ তৈরি হয় তা ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকের তথ্যানুযায়ী লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারী দায়ী নয়Ñবিশ্লেষণ কর। ৪
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মেয়ে ও ছেলেদের দশ বছর থেকে ঊনিশ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কালকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে।
খ. কৃত্রিম উপায়ে দেহের বাইরে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে প্রাথমিক ভ্রæণ সৃষ্টি করে তা স্ত্রীলোকের জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে শিশু জন্ম হলে তাকে টেস্টটিউব বেবি বলা হয়। দেহের বাইরে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন ঘটানোকে বলে ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন।
পর্যায়ক্রমে কতগুলো পদ্ধতি অনুসরণ করে ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন ঘটিয়ে টেস্টটিউব বেবির জন্ম দেওয়া হয়।
গ. উপরিউক্ত তথ্যের আলোকে কীভাবে জননকোষ তৈরি হয় তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো। আমরা জানি মানুষের ক্রোমসোম সংখ্যা ৪৬ অর্থা ২৩ জোড়া ক্রোমোসোমের মধ্যে মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ বিশেষ একজোড়া ক্রোমোসোম দ্বারা ঘটে। এ ক্রোমোসোমগুলোকে লিঙ্গ নির্ধারক বা সেক্স ক্রোমোসোম বলে। লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোসোমগুলোকে আখ্যায়িত করা হয় ঢ এবং ণ ক্রোমোসোম নামে। এক জোড়া লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোসোম ছাড়া বাকি ক্রোমোসোমগুলোকে অটোসোম বলা হয়। অটোসোমগুলোকে ইংরেজি অ বর্ণের দ্বারা বুঝানো হয়। মানুষের ক্ষেত্রে মহিলাদের দেহকোষে ডিপ্লয়েড অবস্থায় ঢঢ সেক্স ক্রোমোসোম থাকে এবং পুরুষের দেহকোষে ডিপ্লয়েড অবস্থায় ঢণ ক্রোমোসোম থাকে। এ জন্য মানুষ এবং অন্যান্য জীবে সূচক বর্ণের দ্বারা ক্রোমোসোমকে দেখানো হয় যেমন ২অ + ঢণ পুরুষে এবং ২অ + ঢঢ নারীর ক্ষেত্রে।
নারীদের ডিম্বাণুতে ২২টি (১১ জোড়া) অটোসোমের সাথে একটি করে ঢ ক্রোমোসোম থাকে এবং মাতৃ জননকোষ থেকে মায়োসিস পদ্ধতিতে যে চারটি ডিম্বাণু সৃষ্টি হয়, তার প্রত্যেকটিতে ঢ ক্রোমোসোম থাকে। ফলে সব ডিম্বাণু হয় ঢ ক্রোমোসোম বিশিষ্ট। পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণু গঠনের সময় চারটি শুক্রাণুর মধ্যে দুটি শুক্রাণুর প্রতিটিতে ১১ জোড়া অটোসোমসহ ঢ ক্রোমোসোম এবং অপর দুটি প্রতিটি ১১ জোড়া অটোসোমসহ ণ ক্রোমোসোম ধারণ করে। ফলে পুরুষদের শুক্রাণু দুই ধরনের ‘ঢ’ ও ‘ণ’ ক্রোমোসোম বিশিষ্ট। নিচের চিত্রের সাহায্যে জননকোষ শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সৃষ্টির প্রক্রিয়া দেখানো হলো :
চিত্র : মানুষের জননকোষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া
ঘ. উদ্দীপকের তথ্য অনুযায়ী মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণে নারী ও পুরুষের সেক্স ক্রোমোসোমের ভ‚মিকা বোঝা যায়।
নারীদের ডিম্বাণুতে অঢ এবং পুরুষের শুক্রাণুতে অঢ ও অণ ক্রোমোসোম থাকে। নারীরা শুধু এ ধরনের ডিম্বাণু তৈরি করে। অর্থাৎ সব ভ্রƒণে ঢ ক্রোমোসোম বহন করে। কিন্তু পুরুষরা দু ধরনের শুক্রাণু তৈরি করে। গর্ভধারণকালে ডিম্বাণুর মিলন যদি ‘ঢ’ ক্রোমোসোম বিশিষ্ট শুক্রাণুর সাথে হয় তাহলে কন্যাসন্তান হবে, কারণ তখন ‘ঢঢ’ একসাথে হবে। আর গর্ভধারণকালে ডিম্বাণুর মিলন যদি ‘ণ’ ক্রোমোসোম বিশিষ্ট শুক্রাণুর সাথে হয়, তাহলে যে সন্তান হবে সেটি ছেলে সন্তান হবে, কারণ তখন ঢণ একসাথে হবে। এভাবে সন্তানের লিঙ্গ কী হবে তা নিচের ছকের সাহায্যে দেখানো যায়।
পুংজনন কোষ
অঢ অণ
স্ত্রীজনন কোষ অঢ অঅঢঢ
মেয়ে অঅঢণ
ছেলে
অঢ অঅঢঢ
মেয়ে অঅঢণ
ছেলে
ছকে দেখা যাচ্ছে যে, স্ত্রীর ডিম্বাণু এককভাবে কখনো কন্যা সন্তানের জন্ম দিতে পারে না। কন্যা সন্তান তখনই হবে যখন পুরুষের ঢ ক্রোমোসোম ধারণকারী শুক্রাণুর স্ত্রীর ডিম্বাণুর সাথে মিলন ঘটবে।
সুতরাং পুত্রসন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য মায়ের কোনো ভ‚মিকাই নেই। অথচ আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কন্যা সন্তান হলে অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কারণে মাকে দোষারোপ করা হয়। কিন্তু উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, এতে নারীর কোনো ভ‚মিকা নেই। বিষয়টি সম্পূর্ণ ঢ ও ণ বহনকারী পুরুষের শুক্রাণুর সাথে ডিম্বাণুর মিলনের সম্ভাবনার ওপর নির্ভরশীল।
অতএব, উদ্দীপকের তথ্য বিশ্লেষণ করে এটা নিশ্চিত যে, লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারী দায়ী নয়।
প্রশ্ন -৫ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ফাঈমের বয়স ১৪ বছর। ইদানীং তার দেহে অনেক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। যেমন : দ্রæত লম্বা হওয়া, ওজন বৃদ্ধি হওয়া, শরীরে দৃঢ়তা আসা ও দাড়ি গোঁফ ওঠা ইত্যাদি।
ক. টেস্টটিউব বেবি কাকে বলে? ১
খ. জীবন্ত জীবাশ্ম বলতে কী বোঝায়? ২
গ. ফাঈমের উল্লিখিত পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য এসময় তার বাবা মার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ? যুক্তিসহ মতামত দাও। ৪
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃত্রিম উপায়ে দেহের বাইরে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে প্রাথমিক ভ্রূণ সৃষ্টি করে তাকে স্ত্রীলোকের জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে শিশুর জন্ম হলে তাকে টেস্টটিউব বেবি বলা হয়।
খ. যেসকল জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়াই এখনো পৃথিবীতে বেঁচে আছে, অথচ তাদের সমগোত্রীয় জীবদের বিলুপ্তি ঘটেছে, তাদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে।
যেমনÑ লিমিউলাস বা রাজকাঁকড়া নামক সন্ধিপদী প্রাণী। লিমিউলাসের জীবাশ্মের উদ্ভব ঘটেছিল প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে। এর সাথের অন্যান্য আর্থ্রোপোডাগুলো বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এরা আজও বেঁচে আছে। তাই এদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলা হয়। এরকম আরও জীবন্ত জীবাশ্ম পৃথিবীতে আজও বেঁচে আছে।
গ. ফাঈমের উল্লিখিত পরিবর্তনের কারণ তার বয়ঃসন্ধিকালীন হরমোন।
ছেলেমেয়েদের ১০Ñ১৯ বছরের সময়কালকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে। এ সময়ে ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়। বয়ঃসন্ধিকালে যেসব পরিবর্তন ঘটে তার জন্য দায়ী বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যেগুলোকে বলা হয় ‘হরমোন’। হরমোন শরীরের ভেতরে স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়।
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তনের জন্য যে হরমোন দায়ী তার নাম হলো টেস্টোস্টেরন। হরমোনের প্রভাবে তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। ছেলেদের গলার স্বর ভারী হয়। মুখে দাঁড়ি-গোঁফ গজায়, দ্রæত দৈহিক বৃদ্ধি হয়।
উদ্দীপকের ১৪ বছর বয়সী ফাঈমের দেহেও ইদানীং উপরিউক্ত পরিবর্তনগুলোই লক্ষ করা যাচ্ছে। বোঝা যায় যে সে এখন বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করছে। অর্থাৎ ফাঈমের উল্লিখিত পরিবর্তনের কারণ হলো বয়ঃসন্ধিকালীন হরমোনের প্রভাব।
ঘ. ফাঈমের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য এসময় তার বাবা মার বেশ কিছু সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
আমরা জানি, ছেলে মেয়েদের ১০Ñ১৯ বছর বয়সের সময়কালকে বলা হয় বয়ঃসন্ধিকাল। বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনের সময়ে অনেকে একা থাকতে পছন্দ করে। অনেকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক পরিবর্তনের সাথে ছেলে-মেয়েদের আবেগিক পরিবর্তন ঘটে। এ বয়সে তাদের যে মানসিক পরিবর্তন ঘটে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিশেষ করে বাবা ও মাকে সে পরিবর্তনের বিষয়গুলো মনে রেখে তাদের সাথে বন্ধুসুলভ ও সহানুভ‚তিশীল আচরণ করতে হবে। তাদেরকে মানসিক দিকসহ অন্যান্য সকল ব্যাপারে সহযোগিতা প্রদান করতে হবে এবং সাহস যোগাতে হবে।
উদ্দীপকের ফাঈমও বর্তমানে বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করছে। তাই তারও বেশ কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটছে। কাজেই এ সময় তার বাবা মাকেও তার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাই তার বাবা মায়ের উচিত খোলা মনে তার সাথে আলোচনা করা। ফাঈমকে বোঝাতে হবে যে, বয়ঃসন্ধিকালীন এসব পরিবর্তন স্বাভাবিক।
এটা বুঝতে পারলে ফাঈমের অস্বস্তি বা ভয় কমে যাবে। ফলে একা থাকা বা লোকজন এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাও কমে যাবে। এছাড়াও সংকোচ কেটে গেলে সাথীদের সাথে খেলাধুলা করলে মানসিক প্রফুল্লতা বজায় থাকবে।
এভাবে ফাঈমের বাবা-মায়ের উচিত তাকে মানসিক সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা। তাদের উপযুক্ত সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই ফাঈমের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা সম্ভব। এতে সে সুস্থ সবল মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে সক্ষম হবে।
প্রশ্ন -৬ ল্ফ নিচের উদ্দীপকগুলো পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
দৃশ্যকল্প-১ : ১৪ বছর বয়সী সবুজের গলার স্বর হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেলো। এছাড়া তার মধ্যে অন্যান্য দৈহিক পরিবর্তনও লক্ষ করা যাচ্ছে।
দৃশ্যকল্প-২ : ১১ বছর বয়সী নিতু ইদানীং কল্পনাপ্রবণ হয়ে উঠেছে। এছাড়া তার মধ্যে দৈহিক বেশ কিছু লক্ষণীয় পরিবর্তনও সূচিত হয়েছে।
ক. মানুষের শৈশবকালের মেয়াদ কত বছর? ১
খ. টেস্টটিউব বেবি বলতে কী বোঝায়? ২
গ. সবুজের দৈহিক পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. সবুজ ও নিতুর দৈহিক পরিবর্তনের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে কি? বিশ্লেষণ কর। ৪
৬নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মানুষের শৈশবকালের মেয়াদ ৫ বছর।
খ. সৃজনশীল প্রশ্ন -৪ (খ) নং উত্তর দেখ।
গ. সবুজের দৈহিক পরিবর্তনের কারণ হলো বয়ঃসন্ধিকালীন হরমোনজনিত প্রভাব।
সাধারণত ছেলেমেয়েদের ১০-১৯ বছরের সময়কালকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে। এ সময় ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়। তবে আবহাওয়া, স্থান, খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ও মানের তারতম্যের কারণে একএক জনের বয়ঃসন্ধিকালের সময়টা আলাদা হতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালে যেসব পরিবর্তন ঘটে তার জন্য দায়ী বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যেগুলোকে বলা হয় ‘হরমোন’। হরমোন শরীরের ভিতরে স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তনের জন্য যে হরমোন দায়ী তার নাম হলো টেস্টোস্টেরন। এ হরমোনের প্রভাবে তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। ছেলেদের গলার স্বর ভারী হয়। মুখে দাড়ি ও গোঁফ গজায়। দ্রæত দৈহিক বৃদ্ধি হয়।
অতএব, হরমোনজনিত পরিবর্তন ও প্রভাবের কারণেই সবুজের দৈহিক পরিবর্তন ঘটে।
ঘ. সবুজ ও নিতুর দৈহিক পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভিন্নতা রয়েছে। কারণ সবুজ ছেলে এবং নিতু মেয়ে।
সবুজ ও নিতু দুজনই বয়ঃসন্ধিকালে অতিক্রম করছে। ১৪ বছর বয়সী সবুজের গলার স্বর পরিবর্তন হয়েছে এবং তার ভিতর অন্যান্য দৈহিক পরিবর্তনও হচ্ছে। অন্যদিকে ১১ বছর বয়সী নিতু কল্পনাপ্রবণ হয়ে উঠেছে এবং তার মধ্যেও বেশ কিছু দৈহিক পরিবর্তন শুরু হয়েছে। সবুজ ও নিতুর এ পরিবর্তনগুলোর কারণ হলো বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে দেহে নিঃসৃত বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যাকে হরমোন বলে। হরমোনের প্রভাবে উদ্দীপকে উল্লিখিত দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো ঘটেছে। আমরা জানি, ছেলে ও মেয়েদের শরীরে হরমোন এক রকম নয়। এ কারণে এদের শরীরে ও মনে যে পরিবর্তন হয় তাও আলাদা। মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দুটি হরমোন দায়ী। এ দুটোকে বলা হয় ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন। এসব হরমোনের অভাবে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হয়, দ্রæত দৈহিক বৃদ্ধি হয় এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকার বৃদ্ধিসহ অন্যান্য পরিবর্তন ঘটে। এ হরমোনের কারণে মেয়েদের নিয়মিত ঋতুস্রাব বা মাসিক শুরু হয়। অন্যদিকে ছেলেদের বয়সন্ধিকালীন সময়ে দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো ঘটে টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবে। এ সময় তাদের শুক্রাণু তৈরী হয় এবং বীর্যপাত শুরু হয়।
অতএব, উপরিউক্ত বর্ণনাগুলো বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, সবুজ ও নিতুর দৈহিক পরিবর্তনের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।
প্রশ্ন -৭ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বৃষ্টিরা ছয় বোন। তার কোনো ভাই নাই। তাই তার দাদা-দাদি তার আম্মুকে নানা ধরনের কথা বলে। সে দশম শ্রেণির ছাত্রী হওয়ায় সবই বুঝতে পারে। সে তার আম্মুকে, বাবাকে নিয়ে ডাক্তারখানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ডাক্তার সাহেব তার মা-বাবাকে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের বিষয়টি বুঝিয়ে দেন।
ক. বয়ঃসন্ধিকাল-এর সময় কত? ১
খ. বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের আচরণের কী কী পরিবর্তন লক্ষ করা যায়? ২
গ. বৃষ্টির বাবা-মায়ের প্রতি ডাক্তারের যে বক্তব্য ছিল-তা ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. তুমি কি মনে কর, ছয়টি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে এককভাবে বৃষ্টির আম্মুই দায়ী? সপক্ষে তোমার যুক্তি দাও। ৪
৭নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বয়ঃসন্ধিকাল এর সময় দশ বছর থেকে উনিশ বছর বয়স।
খ. বয়ঃসন্ধিকাল ছেলেমেয়েদের আচরণে যে যে পরিবর্তন লক্ষ করা যায় সেগুলো হলোÑ
১. প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করা।
২. সে যে একজন আলাদা ব্যক্তিত্ব, এ বিষয়টি বিভিন্ন আচরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা
৩. প্রত্যেক বিষয়ে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা
৪. দুঃসাহসিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে প্রবৃত্ত হওয়া।
গ. বৃষ্টির বাবা ও মাকে ডাক্তার বললেন মানবদেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোসোম থাকে। এই ২৩ জোড়ার মধ্যে ২২ জোড়াকে অটোজোম এবং বাকি একজোড়া ক্রোমোসোমকে লিঙ্গ নির্ধারক বা সেক্স ক্রোমোসোম বলে। লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোসোমগুলোকে আখ্যায়িত করা হয় ঢ এবং ণ ক্রোমোসোম নামে। মহিলাদের দেহে কোষে ঢঢ এবং পুরুষের দেহকোষে ঢণ ক্রোমোসোম থাকে। নারীদের এবং মাতৃ জননকোষ থেকে মায়োসিস পদ্ধতিতে যে চারটি ডিম্বাণু সৃষ্টি হয়, তার প্রত্যেকটিতে ১১ জোড়া অটোসোমসহ ‘ঢ’ ক্রোমোসোম থাকে। ফলে সব ডিম্বাণু হয় ‘ঢ’ ক্রোমোসোম বিশিষ্ট। পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণু গঠনের সময় চারটি শুক্রাণুর মধ্যে দুটি শুক্রাণুর প্রতিটিতে ১১ জোড়া অটোসোমসহ ‘ঢ’ ক্রোমোসোম এবং অপর দুটি প্রতিটি ১১ জোড়া অটোসোমসহ ণ ক্রোমোসোম ধারণ করে। ফলে পুরুষদের শুক্রাণু দুই ধরনের Ñ ‘ঢ’ ও ‘ণ’ ক্রোমোসোম বিশিষ্ট হয়। গর্ভধারণকালে ডিম্বাণুর মিলন যদি ‘ঢ’ ক্রোমোসোম বিশিষ্ট শুক্রাণুর সাথে হয় তাহলে কন্যাসন্তান হবে, কারণ তখন ‘ঢঢ’ একসাথে হয়। আর গর্ভধারণকালে ডিম্বাণুর মিলন যদি “ণ” ক্রোমোসোম বিশিষ্ট শুক্রাণুর সাথে হয়, তাহলে যে সন্তান হবে সেটি ছেলে সন্তান হবে, কারণ তখন ‘ঢণ’ একসাথে হয়।
উপরিউক্ত প্রক্রিয়ায় মানবশিশুর লিঙ্গ নির্ধারিত হয়। উদ্দীপকের ডাক্তার সাহেব বৃষ্টির বাবা মায়ের প্রতি এ বক্তব্যই দেন।
ঘ. আমি মনে করি না, ছয়টি কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য এককভাবে বৃষ্টির আম্মুই দায়ী।
আমরা জানি, পুরুষের দুই ধরনের শুক্রাণু তৈরি হয়- একটি অঢ এবং অপরটি অণ কিন্তু মহিলাদের শুধু অঢ ডিম্বাণু তৈরী হয়। পিতার অঢ শুক্রাণুর মায়ের অঢ ডিম্বাণুর সাথে মিলনের ফলে কন্যা সন্তান হয় এবং মায়ের অঢ ডিম্বাণুর সাথে পিতার অণ শুক্রাণুর মিলনের ফলে পুত্র সন্তান হয়। বিষয়টি নিচের ছকে বুঝানো হলো।
পুংজনন কোষ
অঢ অণ
স্ত্রীজনন কোষ অঢ অঅঢঢ
মেয়ে অঅঢ
ছেলে
অঢ অঅঢঢ
মেয়ে অঅঢ
ছেলে
মানুষের জননকোষ সৃষ্টি
ছক থেকে বোঝা যাচ্ছে কন্যা সন্তান হওয়ার জন্য ‘মা’ মোটেই দায়ী নয়। এতে মায়ের কোনো ভ‚মিকা নাই। বিষয়টি সম্পূর্ণ ঢ ও ণ বহনকারী পুরুষের শুক্রাণুর সাথে ডিম্বাণুর মিলনের সম্ভাবনার ওপর নির্ভর করে।
অতএব, উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ছয়টি কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য বৃষ্টির আম্মু কোনোভাবেই দায়ী নয়।
র্গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর
৫. নিচের কোন প্রাণীকে সংযোগকারী জীব বলা হয়?
ক ব্যাঙ প্লাটিপাস গ বানর ঘ বাদুড়
৬. প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম হয় নিচের কোন সালে?
ক ১৯৭৯ খ ১৯৭৮ গ ১৯৬৯ ১৯৫৯
৭. কোনটি আদিকোষ?
প্রোটোভাইরাস খ প্রোটোজোয়া
গ ব্যাকটেরিয়া ঘ ভাইরাস
৮. কোন প্রাণীতে সরীসৃপ ও পাখি উভয়েরই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান?
আর্কিওপটেরিক্স খ প্লাটিপাস
গ লিমিউলাস ঘ স্ফোনোডন
৯. নিচের কোনটি সরীসৃপের ন্যায় ডিম পাড়ে?
ক স্ফোনোডন খ লিমিউলাস
প্লাটিপাস ঘ আর্কিওপটেরিক্স
১০. কোন ক্রমটি সঠিক?
ক নিউক্লিওপ্রোটিন অ্যামিনো এসিড ব্যাকটেরিয়া
নিউক্লিওপ্রোটিন প্রোটোভাইরাস ভাইরাস
গ প্রোটোভাইরাস নিউক্লিওপ্রোটিন ভাইরাস
ঘ ভাইরাস প্রোটোভাইরাস নিউক্লিওপ্রোটিন
১১. কত বছর সময়কালকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে?
৯ Ñ ১৫ খ ১০ Ñ ১৮ গ ১০ Ñ ১৯ ঘ ১২ Ñ ২০
১২. বয়ঃসন্ধিকালের মানসিক পরিবর্তন নিচের কোনটি?
ক শরীরে দৃঢ়তা আসা খ দ্রæত লম্বা হয়ে উঠা
আবেগ দ্বারা চালিত হওয়া ঘ প্রাপ্ত বয়স্কদের মতো আচরণ
১৩. দেহের বাইরে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন ঘটানোকে কী বলে?
ক ভিট্রোফার্টিলাইজেশন ইনভিট্রো-ফার্টিলাইজেশন
গ ফার্টিলাইজেশন ঘ স্পোরোলেশন
১৪. মেয়েদের শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তনের জন্য কয়টি হরমোন দায়ী?
২টি খ ৪টি গ ৬টি ঘ ৮টি
১৫. বয়ঃসন্ধিকালে কী ধরনের শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়?
দ্রæত লম্বা হয়ে ওঠে
খ দ্রæত ওজন হ্রাস পায়
গ ১০/১২ বছর বয়সে দাড়ি-গোঁফ ওঠে
ঘ মেয়েদের কোমরের হাড় সরু হয়
১৬. বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের জন্য কোন হরমোনটি দায়ী?
ক ইস্ট্রোজেন খ প্রজেস্টেরন
গ ইনসুলিন টেস্টোস্টেরন
১৭. মানুষের দেহে মোট কয়টি ক্রোমোসোম থাকে?
৪৬ খ ৪৪ গ ২৩ ঘ ২২
১৮. কে প্রথম টেস্টটিউব বেবি উদ্ভাবন করেন?
ক জয় ব্রাউন পেট্রুসি
গ ড. প্যাট্রিক ঘ রবার্ট এডওয়ার্ড
১৯. বয়ঃসন্ধিকালে শিশুদেরÑ
i, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য গড়ে ওঠে
ii, স্নেহ ও ভালোবাসার চাহিদা সৃষ্টি হয়
iii. নির্ভরশীলতা বেড়ে যায়
নিচের কোনটি সঠিক?
র ও ii খ ii ও iii গ র ও iii ঘ র, ii ও iii
২০. লিমিউলাসÑ
i, জীবন্ত জীবাশ্ম
ii, সন্ধিপদ প্রাণী
iii. সরীসৃপ প্রাণী
নিচের কোনটি সঠিক?
র ও ii খ র ও iii গ ii ও iii ঘ র, ii ও iii
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ২১ ও ২২ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
ইদানীং সুমনের গলার স্বর চিকন থেকে মোটা হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তার মধ্যে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে।
২১. সুমনের সম্ভাব্য বয়স কত?
ক ৮ Ñ ১০ বছর ১০ Ñ ১৫ বছর
গ ১৪ Ñ ১৭ বছর ঘ ১৭ Ñ ১৯ বছর
২২. বর্তমানে সুমনের দেহে কোন হরমোনটি সক্রিয় হয়েছে?
ক ইস্ট্রোজেন খ প্রজেস্টেরন
টেস্টোস্টেরন ঘ থাইরক্সিন
নিচের তথ্যের আলোকে ২৩ ও ২৪নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
নিউক্লিওপ্রোটিন অ ই
২৩. ‘অ’ অংশটির নাম কী?
প্রোটোভাইরাস খ ভাইরাস
গ প্রোটিন ঘ প্রোটোজোয়া
২৪. ‘ই’ চিহ্নিত বস্তুটি Ñ
i, স্ব-প্রজননক্ষম নয়
ii, জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী অবস্থা
iii. প্রোটোজোয়া থেকে উৎপন্ন হয়
নিচের কোনটি সঠিক?
র ও ii খ র ও iii গ ii ও iii ঘ র, ii ও iii