এসএসসি সাধারণ বিজ্ঞান নবম অধ্যায় দুর্যোগের সাথে বসবাস
পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব : বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যে লক্ষণীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। যেমনÑ
১. ঋতুর পরিবর্তন : জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঋতুচক্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হতে দেখা যাচ্ছে। শীতকাল সংকুচিত হয়ে পড়ছে এবং তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে কমে যাচ্ছে। গ্রীষ্মকালে অনেক বেশি গরম পড়ছে এবং তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে ৪৫Ñ৪৮ সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠছে।
২. বন্যা : জলবায়ুুজনিত পরিবর্তনের ফলে ঘন ঘন ও অসময়ে প্রলয়ংকরী বন্যা লক্ষ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের যে সকল অঞ্চল বন্যা প্রবণ নয়, যেমন যশোর, ঢাকা সে সকল অঞ্চলও এখন বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে।
৩. নদীভাঙন : সা¤প্রতিককালে নদীভাঙন অনেক বেড়ে গেছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বিগত তিন দশকে প্রায় ১,৮০,০০০ হেক্টর জমি শুধু পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা এই তিন নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে।
৪. খরা : জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় বৃষ্টিপাতের উপর প্রচণ্ড প্রভাব ফেলছে। এ কারণে বাংলাদেশে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
৫. পানির লবণাক্ততা : জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি মূল ভ‚খণ্ডে ঢুকে নদনদী ও ভ‚গর্ভস্থ পানি ও আবাদি জমি লবণাক্ত হয়ে পড়ছে।
৬. সামুদ্রিক প্রবাল ঝুঁকি : জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামুদ্রিক প্রবালের জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। ১৯৬০ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যে পরিমাণ প্রবাল ছিল, ২০১০ সালে তার প্রায় ৭০% বিলীন হয়ে গেছে।
৭. বনাঞ্চল : লবণাক্ত পানির প্রভাব, সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে বনাঞ্চল দিনকে দিন কমে যাচ্ছে।
৮. মৎস্য সম্পদ : জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মাছের বাসস্থান, খাদ্য সংগ্রহ এবং জৈবিক নানা প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে।
৯. স্বাস্থ্যঝুঁকি : জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের ফলে ঘন ঘন প্রলয়ংকরী বন্যায় পানিদূষণ ও পানিবাহিত রোগ, বিশেষ করে কলেরা, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।
১০. জীববৈচিত্র্য : জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে ৩০% জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ছে।
১১. সাইক্লোন : সাইক্লোনের মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক আকার ধারণ করছে।
পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টির কারণ : বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি স্থান এখন নানারকম পরিবেশগত সমস্যায় জর্জরিত। পরিবেশগত সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি। বর্তমানে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে করে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১০ বিলিয়ন। এর কারণে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি সব রকমের চাহিদা বেড়ে যাবে ও কর্মসংস্থানের উপর চাপ সৃষ্টি হবে। পরিবেশগত গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি সমস্যা হলো নগরায়ন। এটিও মূলত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সম্পৃক্ত। পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টির জন্য বর্তমান সময়ে দায়ী করা হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে। এর মূল কারণ হলো কার্বন ডাইঅক্সাইডসহ ওজোন, মিথেন, সিএফসি, নাইট্রাস অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প এই গ্যাসগুলোর বায়ুমণ্ডলে বেড়ে যাওয়া। এর ফলে প্রাকৃতিক উপায়ে গাছপালার দ্বারা কার্বন ডাইঅক্সাইডের শোষণ কমে যাচ্ছে। যার ফলে বায়ুমণ্ডলে এর পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বনশূন্য করা আরেকটি মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা। এর জন্যও দায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
দুর্যোগ সৃষ্টির কারণ, প্রতিরোধ, মোকাবিলার কৌশল এবং তাৎক্ষণিক করণীয় : মানুষের অবিবেচনাসুলভ বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্যোগ সৃষ্টি করছে। এসব দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি দুর্যোগের বর্ণনা নিচে উল্লেখ করা হলোÑ
১. বন্যা : নদনদী ভরাট হয়ে যাওয়া, ভারী বর্ষণ বা উজানে অববাহিকা থেকে পানি আসা, মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ইত্যাদি কারণে প্রায় প্রতিবছরই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে বন্যা প্রলয়ংকরী আকার ধারণ করছে। বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে নদনদী খনন করে এদের পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। দরকারি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিতে হবে। এছাড়া নদীর পাড়ে গাছ লাগানো, পানি প্রবাহের জন্য ¯øুইস গেট নির্মাণ ইত্যাদিও বন্যা প্রতিরোধ ও মোকাবিলার কৌশল হতে পারে।
২. খরা : খরার জন্য দায়ী কারণগুলো হলো বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়া, ভ‚গর্ভস্থ পানির যথেচ্ছ উত্তোলন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, উজান থেকে পানি প্রত্যাহার, পানি সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার অভাব, ওজোন স্তরের ক্ষয় ইত্যাদি। খরা মোকাবিলার জন্য করণীয় হলোÑ জলাশয়ের পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা; মাটিতে পানি কম থাকলেও জন্মাতে পারে যেমনÑ গম, পিঁয়াজ, কাউন ইত্যাদি চাষ করা। চাষাবাদে অনেক বেশি পানি লাগে এমন ফসল চাষে নিরুৎসাহিত করা যেমনÑ ইরি ধান; বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল করা ইত্যাদি।
৩. সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় : সাইক্লোন সৃষ্টির মূল কারণ হলো নিম্নচাপ ও উচ্চতাপমাত্রার প্রভাব। দুর্যোগ মোকাবিলা করা যায় ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাস প্রক্রিয়া জোরদার করে; উপক‚লীয় এলাকায় বাঁধ তৈরি করে; মজবুত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও প্রচুর গাছপালা রোপণ করে।
৪. সুনামি : সমুদ্র তলদেশে ভ‚মিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভ‚মিধস এবং নভোজাগতিক ঘটনা সুনামি সৃষ্টির কারণ। পূর্বাভাস প্রক্রিয়া জোরদার করে এবং জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানোর মাধ্যমে সুনামি মোকাবিলা করা যায়।
৫. এসিড বৃষ্টি : এসিড বৃষ্টি সৃষ্টির জন্য প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণ জড়িত। প্রাকৃতিক কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, দাবানল, বজ্রপাত, গাছপালার পচন ইত্যাদি। মনুষ্যসৃষ্ট কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে সালফার ডাইঅক্সাইড ও নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাসসমূহের নিঃসরণ। কয়লা পরিশোধন দ্বারা ও বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার করে এসিড বৃষ্টি মোকাবিলা করা যায়।
৬. টর্নেডো বা কালবৈশাখী : টর্নেডো বা কালবৈশাখীর জন্য লঘু বা নিম্নচাপ সৃষ্টি প্রধান কারণ। দুর্গত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সরবরাহ ও পুনর্বাসন কাজ করাই হলো এ দুর্যোগের সমাধান।
৭. ভ‚মিকম্প : ভ‚গর্ভের টেকটনিক প্লেট এর স্থান পরিবর্তনের ফলেই ভ‚মিকম্প সৃষ্টি হয়। ভ‚মিকম্প সহনশীল ঘরবাড়ি নির্মাণ করে এবং পূর্বাভাস প্রক্রিয়া জোরদার দ্বারা ভ‚মিকম্প মোকাবিলা করা যায়।
সুস্থ জীবনযাপনে মানসম্মত ও উন্নত পরিবেশের গুরুত্ব : বিশুদ্ধ বাতাস ও নিরাপদ পানি আমাদের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। নির্মল বাতাস ও সুপেয় পানির অভাবে জীবজগৎ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। বাতাস ও পানির মতো পরিবেশের প্রতিটি উপাদানই আমাদের জীবনধারণের জন্য আবশ্যক। এই পরিবেশ যদি মানসম্মত ও উন্নত না হয় তা সকল জীব বৈচিত্র্যের জন্য বড় রকমের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে ও আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন করে তুলতে হবে।
প্রকৃতি সংরক্ষণশীলতার তাৎপর্য : প্রকৃতি সংরক্ষণশীলতা হলো আমাদের প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা। আমাদের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ হলো পানি, বাতাস, মাটি, খনিজ সম্পদ, গাছপালা, প্রাণিজ সম্পদ, তেল, গ্যাস ইত্যাদি। আমাদের জীবনধারণের জন্য প্রতিটি সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি আমাদের প্রকৃতি সংরক্ষণে কার্যকর ভ‚মিকা না নিই, গাছপালা বনজ সম্পদ নিধন বন্ধ না করি, বাতাস, পানি ইত্যাদির দূষণ বন্ধ না করি, তাহলে আমাদের এই প্রকৃতি আর বাসযোগ্য থাকবে না এবং আমাদের কোনো অস্তিত্বও থাকবে না।
প্রকৃতি সংরক্ষণশীলতার বিভিন্ন কৌশল : প্রকৃতি সংক্ষণশীলতার বেশ কয়েকটি কৌশল আছে। এগুলো হলোÑ১. সম্পদের ব্যবহার কমানো,
২. দূষণ থেকে সম্পদ রক্ষা করা, ৩ একই জিনিস সম্ভাব্য ক্ষেত্রে বারবার ব্যবহার করা, ৪. ব্যবহৃত জিনিস ফেলে না দিয়ে তা থেকে নতুন জিনিস তৈরি করা, ৫. প্রাকৃতিক সম্পদ পুরোপুরি রক্ষা করা।
অনুশীলনীর বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর
১. কোন দুর্যোগটি শুধুমাত্র সাগরে সংঘটিত হয়?
ক কালবৈশাখী খ ভ‚মিকম্প
সুনামি ঘ বন্যা
২. গ্রিন হাউস গ্যাস বৃদ্ধির কারণÑ
র. যানবাহন
রর. শিল্প কারখানা
ররর. বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র
নিচের কোনটি সঠিক?
ক র ও রর খ রর ও ররর গ র ও ররর র, রর ও ররর
নিচের চিত্র অবলম্বনে ৩ ও ৪নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
৩. চিত্রে প্রদর্শিত কারখানা থেকে কোন গ্যাস নির্গত হয় না?
ক ঝঙ২ খ ঈঙ২ ঘঐ৩ ঘ ঘঙ২
৪. উপরের কারখানা হতে নির্গত গ্যাসের মাধ্যমে সৃষ্ট এসিড বৃষ্টি মানুষের কোন রোগটি সৃষ্টি করে?
ক বহুমূত্র অ্যাজমা গ ক্যান্সার ঘ হার্ট এ্যাটাক
গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর
৫. সামুদ্রিক প্রবালের জীবন-যাপনের উপযোগী তাপমাত্রা নিচের কোনটি?
ক ২০Ñ২৮ঈ খ ২০Ñ২৩ঈ ২২Ñ২৮ঈ ঘ ২২Ñ৩০ঈ
৬. বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যা নিচের কোনটি?
ক ৬৩ বিলিয়ন খ ৬৪ বিলিয়ন গ ৬৫ বিলিয়ন ৬৬ বিলিয়ন
৭. গ্রিন হাউজ গ্যাস বৃদ্ধির প্রাকৃতিক কারণ কোনটি?
ক শিল্প কারখানার ধোঁয়া দাবানল
গ যানবাহনের ধোঁয়া ঘ রেফ্রিজারেটর
৮. আমেরিকাতে ঘূণিঝড়কে কী বলে?
ক টর্নেডো খ টাইফুন গ সুনামি হারিকেন
৯. ভ‚মিকম্পের মাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের নাম কী?
ক স্পিডোমিটার খ ফ্যাদোমিটার রিখটার স্কেল ঘ ভার্নিয়ার স্কেল
১০. এসিড বৃষ্টিতে কোন কোন এসিড বেশি থাকে?
ক ফসফরিক এসিড ও হাইড্রোক্লোরিক এসিড
খ এসিটিক এসিড ও কার্বোলিক এসিড
সালফিউরিক এসিড ও নাইট্রিক এসিড
ঘ হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও কার্বোলিক এসিড
১১. সাইক্লোন তৈরি হতে সাগরের তাপমাত্রা কত হওয়া প্রয়োজন?
ক ২৮ সেলসিয়াস ২৭ সেলসিয়াস
গ ২৪ সেলসিয়াস ঘ ২২ সেলসিয়াস
১২. কোনটি ঝড়ের তীব্র গতিকে হ্রাস করে?
অমও খ ঐমও গ ঐমঈষ ঘ কও
১৩. বায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ কোনটি?
বৈশ্বিক উষ্ণতা খ কম বৃষ্টিপাত
গ অধিক শীত ঘ প্রচুর বৃষ্টিপাত
১৪. দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সাইক্লোনকে কী বলে?
ক ঘূর্ণিঝড় টাইফুন গ হারিকেন ঘ সুনামি
১৫. সাইক্লোন আমেরিকাতে কী নামে পরিচিত?
ক কিকক্লস খ ঘূর্ণিঝড় হারিকেন ঘ টাইফুন
১৬. মানুষের কোন রোগটি এসিড বৃষ্টির কারণে হতে পারে?
ক ম্যানিনজাইটিস খ জন্ডিস
গ ডায়াবেটিস অ্যাজমা
১৭. ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা কত বাড়তে পারে?
ক ০২-০৩ সেলসিয়াস খ ০৬-০৮ সেলসিয়াস
১১-৬৪ সেলসিয়াস ঘ ২১-৫২৫ সেলসিয়াস
১৮. ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ কত ছিল?
ক ২১৫ কি.মি./ ঘণ্টা খ ২২০ কি.মি./ ঘণ্টা
২২৫ কি.মি./ ঘণ্টা ঘ ২৩০ কি.মি./ ঘণ্টা
১৯. পরিবেশগত সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা কোনটি?
ক আবাদি জমি নষ্ট জনসংখ্যা বৃদ্ধি
গ খাদ্য সংকট ঘ বনভ‚মি উজাড়
২০. জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে কত ভাগ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে?
ক ১৫% খ ২০% গ ২৫% ৩০%
২১. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, দাবানল, বজ্রপাত ও গাছপালার পচন থেকে কোনটি ঘটতে পারে?
ক ঘূর্ণিঝড় খ সুনামি গ টর্নেডো এসিড বৃষ্টি
২২. ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ হলোÑ
র. বাতাসে সিলভার আয়োডাইড ছড়ানো
রর. সাগরে তেল ছিটানো
ররর. ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস প্রক্রিয়া জোরদার করা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক র খ রর গ ররর র, রর ও ররর
২৩. এসিড বৃষ্টি সৃষ্টির জন্য দায়ীÑ
র. কার্বন ডাইঅক্সাইড
রর. নাইট্রোজেন অক্সাইড
ররর. সালফার ডাইঅক্সাইড
নিচের কোনটি সঠিক?
ক র ও রর খ র ও ররর রর ও ররর ঘ র, রর ও ররর
২৪. বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মূল কারণÑ
র. কার্বন ডাই অক্সাইড এর বৃদ্ধি
রর. মিথেনের পরিমাণ বৃদ্ধি
ররর. অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি
নিচের কোনটি সঠিক?
র ও রর খ র ও ররর গ রর ও ররর ঘ র, রর ও ররর
২৫. সুন্দরবন রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেÑ
র. সুনামির
রর. ভ‚মিকম্পের
ররর. সাইক্লোনের
নিচের কোনটি সঠিক?
ক র ও রর খ রর ও ররর র ও ররর ঘ র, রর ও ররর
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ বিগত তিন দশকে বাংলাদেশের কত হেক্টর জমি প্রধান তিন নদীর বক্ষে হারিয়ে গেছে?
উত্তর : বিগত তিন দশকে প্রায় ১,৮০,০০০ হেক্টর জমি পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা এই তিন নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে।
প্রশ্ন \ ২ \ জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ত পানির কারণে বাংলাদেশ কী ঝুঁকিতে পড়বে?
উত্তর : জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ত পানির কারণে বাংলাদেশ ভয়াবহ খাদ্য ঝুঁকিতে পড়বে।
প্রশ্ন \ ৩ \ সাইক্লোন প্রতিরোধে কোন বন রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে?
উত্তর : সাইক্লোন প্রতিরোধে সুন্দরবন রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।
প্রশ্ন \ ৪ \ ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা কত বাড়তে পারে?
উত্তর : ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.১Ñ৬.৪ সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে।
প্রশ্ন \ ৫ \ পরিবেশগত সমস্যার প্রধান কারণ কী?
উত্তর : পরিবেশগত সমস্যার প্রধান কারণ হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
প্রশ্ন \ ৬ \ কী কী গ্যাস গ্রিন হাউস গ্যাস নামে পরিচিত?
উত্তর : কার্বন ডাইঅক্সাইড, ওজোন, মিথেন, সিএফসি, নাইট্রাস অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প গ্রিন হাউস গ্যাস নামে পরিচিত।
প্রশ্ন \ ৭ \ কার্বন দূষণ কী?
উত্তর : কার্বন দূষণ হলো বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।
প্রশ্ন \ ৮ \ শুষ্ক আবহাওয়া কখন বিরাজ করে?
উত্তর : একটি অঞ্চলে বাষ্পীভবন ও প্রস্বেদনের পরিমাণ বৃষ্টিপাতের চেয়ে বেশি হলে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে।
প্রশ্ন \ ৯ \ বাংলাদেশে সৃষ্ট খরার জন্য কাকে দায়ী করা হচ্ছে?
উত্তর : বাংলাদেশে সৃষ্ট খরার জন্য পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের মেরু অঞ্চলে সৃষ্ট এলনিনোকে দায়ী করা হচ্ছে।
প্রশ্ন \ ১০ \ জলোচ্ছ¡াস কোথায় হয়?
উত্তর : জলোচ্ছ¡াস সমুদ্র উপক‚লে হয়।
প্রশ্ন \ ১১ \ বাংলাদেশে কোন সময়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াস হয়?
উত্তর : বাংলাদেশে এপ্রিল-মে ও অক্টোবর-নভেম্বর এ সময়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াস হয়।
প্রশ্ন \ ১২ \ কালবৈশাখী কী?
উত্তর : কালবৈশাখী এক ধরনের ক্ষণস্থায়ী ও স্থানীয়ভাবে সৃষ্ট প্রচণ্ড ঝড় যা সাধারণত বৈশাখ মাসে হয়ে থাকে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ পরিবেশ দূষণ কী?
উত্তর : রাসায়নিক, ভৌতিক ও জৈবিক কারণে পরিবেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের যেকোনো ধরনের পরিবর্তনই হলো পরিবেশ দূষণ।
প্রশ্ন \ ১৪ \ মানুষের তৈরি গ্রিন হাউস গ্যাসের মধ্যে কোন গ্যাসের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি?
উত্তর : মানুষের তৈরি গ্রিন হাউস গ্যাসের মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
প্রশ্ন \ ১৫ \ গ্রিন হাউস গ্যাস কী?
উত্তর : যেসব গ্যাস ভূপৃষ্ঠের তাপের একটি বড় অংশ আটকে রাখে এবং বায়ুমণ্ডলের তাপ বৃদ্ধি করে সেসব গ্যাসকে গ্রিন হাউস গ্যাস বলে।
প্রশ্ন \ ১৬ \ সিএফসি কী?
উত্তর : সিএফসি একটি রাসায়নিক যৌগ যার পূর্ণ নাম ক্লোরোফ্লোরোকার্বন। এটি অ্যারোসলের টিনে এবং নানারকমের ফোম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন \ ১৭ \ পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলতে কোন গ্রিন হাউস গ্যাস সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে?
উত্তর : পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলতে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে।
প্রশ্ন \ ১৮ \ টর্নেডো কী?
উত্তর : টর্নেডো একটি প্রচণ্ড গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় যার সম্পর্কে কোনো পূর্বাভাস বা সতর্ক সংকেত দেওয়া যায় না। এটি কোনো স্থানে আচমকা আঘাত হেনে মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দেয়।
প্রশ্ন \ ১৯ \ বাংলাদেশে কখন টর্নেডো হয়?
উত্তর : বাংলাদেশে সাধারণত ফাল্গুনের শেষ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে টর্নেডো হয়।
প্রশ্ন্ \ ২০ \ দুর্যোগের কারণে কী কী পানিবাহিত রোগ দেখা দেয়?
উত্তর : দুর্যোগের কারণে ডায়রিয়া, আমাশয়, চর্মরোগ ইত্যাদি পানিবাহিত রোগ দেখা দেয়।
প্রশ্ন \ ২১ \ ভ‚মিকম্পের সময় পাকা দালানে থাকলে কী করবে?
উত্তর : ভূমিকম্পের সময় পাকা দালানে থাকলে বিমের পাশে এসে দাঁড়াবে।
প্রশ্ন \ ২২ \ টেকটনিক প্লেট কী?
উত্তর : আমাদের ভ‚গর্ভ কতগুলো ভাগে বিভক্ত যাদেরকে টেকটনিক প্লেট বলে।
প্রশ্ন \ ২৩ \ ভ‚মিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করা হয় কোন যন্ত্র দিয়ে?
উত্তর : ভ‚মিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করা হয় রিখটার স্কেলে।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ জলবায়ু পরিবর্তনে ঋতুচক্রে কী পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে?
উত্তর : জলবায়ু পরিবর্তনে ঋতুচক্রে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এখন আশ্বিন মাসেও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং তা অসময়ে বন্যার কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে শীতকাল ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। গ্রীষ্মকালে অনেক বেশি গরম পড়ছে এবং মাঝে মাঝে দেশের কোনো কোনো এলাকায় দিনের তাপমাত্রা ৪৫Ñ৪৮ সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। অন্যদিকে শীতের সময় কখনো কখনো তাপমাত্রা অনেক বেশি কমে যাচ্ছে।
প্রশ্ন \ ২ \ জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে ওচঈঈ তাদের মূল্যায়ন রিপোর্টে কী বলেছে?
উত্তর : জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত প্রভাব মূল্যায়নের জন্য গঠিত ওহঃবৎমড়াবৎহসবহঃধষ চধহবষ ড়হ ঈষরসধঃব ঈযধহমব (ওচঈঈ) তাদের চতুর্থ মূল্যায়ন রিপোর্ট (অজ৪) অনুযায়ী জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের প্রভাব অনেক মারাত্মক এবং তা ধীরে ধীরে বেড়েই চলছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা গত ১০০ বছরে প্রায় ০.৭৪ সেলসিয়াস বেড়েছে। এ রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী দুই দশকে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা গড়ে প্রতি দশ বছরে ০.২Ñ০.৩ সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যাবে।
প্রশ্ন \ ৩ \ জনসংখ্যা বৃদ্ধি বাংলাদেশে কী প্রভাব ফেলছে?
উত্তর : জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে হাজার হাজার একর আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি সব রকমের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে ও কর্মসংস্থানের উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। কর্মসংস্থানের চাপ সামলানোর জন্য নতুন নতুন শিল্প-কারখানা তৈরি হচ্ছে যার কারণে আবাদি জমিসহ বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বিপুল জনসংখ্যার জন্য চাহিদার ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন \ ৪ \ একটি এলাকার জনসংখ্যা কখন বৃদ্ধি পায়?
উত্তর : একটি এলাকায় যে কয়জন লোক মৃত্যুবরণ করে তার চেয়ে বেশি জš§গ্রহণ করে, তাহলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া বহির্গমনের ফলে একটি দেশের জনসংখ্যা কমে যায় আর বাইরে থেকে আগমনের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন \ ৫ \ অপরিকল্পিত নগরায়ন কী সমস্যা সৃষ্টি করছে?
উত্তর : অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে শহর এলাকায় আবাসন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে এবং এর ফলে আশপাশের আবাদি জমি ধ্বংস করে বা জলাভ‚মি ভরাট করে নগরায়ন করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই ভালো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি সরবরাহসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা না থাকায় জীবনযাপনে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
প্রশ্ন \ ৬ \ বনভ‚মি উজাড় হচ্ছে কেন?
উত্তর : বনভ‚মি উজাড় হওয়ার মূল কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, অন্ন, বস্ত্র ইত্যাদি সবরকম চাহিদা বৃদ্ধি পায়। আর প্রতিটি চাহিদাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বনভ‚মি উজাড়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
প্রশ্ন \ ৭ \ এসিড বৃষ্টি পরিবেশে কী ক্ষতি করে?
উত্তর : এসিড বৃষ্টি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। এমনকি এসিডের প্রতি সংবেদনশীল অনেক গাছ মরে যায়। এছাড়া কিছু অতি প্রয়োজনীয় উপাদান (যেমনÑ ঈধ, গম) এসিড বৃষ্টিতে দ্রবীভ‚ত হয়ে মাটি থেকে চলে যায় যা ফসল উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এসিড বৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পানিসম্পদ ও জলজ প্রাণীসমূহ। মাছের রেণু বা পোনা এসিডের প্রতি সংবেদনশীল। এসিডের মাত্রা বেশি হলে পুরো জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মানুষের শরীরের জন্যও এসিড বৃষ্টি ক্ষতিকর। মানবদেহে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের সমস্যা, অ্যাজমা ও ব্রঙ্কাইটিসের মতো মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করে এসিড বৃষ্টি।
প্রশ্ন্ \ ৮ \ কী কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে?
উত্তর : সূর্যের আলো পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে। উত্তাপের অনেকটা বিকিরিত হয়ে বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে হারিয়ে যায় মহাশূন্যে। এর ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ মোটামুটি একরকম থাকে। কিন্তু বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে অবস্থা এ রকম থাকে না। কার্বন ডাইঅক্সাইড পৃথিবী থেকে বিকিরিত তাপের খানিকটা ধরে রাখে। এতে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়লে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
প্রশ্ন \ ৯ \ কী ব্যবস্থা অবলম্বনের মাধ্যমে ভ‚মিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়?
উত্তর : ভ‚মিকম্প প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা এখনও মানুষের জানা নেই। তবে ভ‚মিকম্পের সময় আত্মরক্ষা এবং ভ‚মিকম্পের পর উদ্ধার ও ত্রাণকাজ সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতে হবে। ভ‚মিকম্পে করণীয় সম্পর্কে ধারণা, সচেতনতা ও প্রস্তুতি থাকলে প্রাণহানি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
প্রশ্ন \ ১০ \ খরা কৃষির জন্য একটি বিরাট হুমকিÑ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : খরার কারণে মাটির উপরের পানি শুকিয়ে যেতে থাকে। খরার সময়ে খুব জোরে যখন বাতাস বইতে থাকে তখন উপরের মাটি সরে যায়। শস্যের উপযোগী উপরিভাগের এ মাটি সরে যাওয়ার ফলে চাষাবাদে দারুণ অসুবিধা হয়। তাই খরাকে কৃষির জন্য একটি বিরাট হুমকি বলা হয়।
প্রশ্ন \ ১১ \ নদীভাঙন বাংলাদেশে কী সমস্যার সৃষ্টি করে?
উত্তর : নদীভাঙনের ফলে এদেশে হাজার হাজার একর আবাদি জমি, বসতবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর ফলে প্রতি বছর এদেশের হাজার হাজার মানুষ তাদের ভিটেমাটি ও কাজের সংস্থান হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। এতে নদী পাড়ের লোকজনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় মারাত্মক বিঘœ ঘটে। কাজের সন্ধানে তারা শহরে এসে ভিড় করে।
প্রশ্ন \ ১২ \ ভ‚মিকম্প প্রতিরোধে আমরা কী করতে পারি?
উত্তর : ভ‚মিকম্প প্রতিরোধে আমাদের করণীয় হলো :
ক. বাড়িঘর ও বড় স্থাপনা ভ‚মিকম্প সহনশীল উপাদান দ্বারা তৈরি করতে হবে।
খ. উচ্চমাত্রার ভ‚মিকম্পে স্থাপনার যেন কোনো ক্ষতি না হয় নির্মাণের সময় এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।
গ. উঁচু স্থাপনার ক্ষেত্রে হালকা উপাদান ব্যবহার করতে হবে।
ঘ. ভ‚মিকম্পের সময় আত্মরক্ষা এবং ভ‚মিকম্পের পর উদ্ধার ও ত্রাণকাজ সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতে হবে।
ঙ. ভ‚মিকম্পে করণীয় সম্পর্কে ধারণা ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য জনসাধারণকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ খরার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়?
উত্তর : খরার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়Ñ
ক. ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর পরীক্ষা করে মাটির নিচে থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ করে খরা মোকাবিলা করা যেতে পারে।
খ. বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে, যাতে দরকারের সময় ব্যবহার করা যায়।
গ. ব্যাপক বনায়ন সৃষ্টি করা গেলে মাটি পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে পারবে এবং মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
ঘ. পানির অপচয় রোধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
ঙ. বন উজাড় বন্ধ করতে হবে। এতে মাটিতে সূর্যকিরণ সরাসরি পড়ে শুকিয়ে যেতে পারবে না।
প্রশ্ন \ ১৪ \ মানুষের জীবনধারণের জন্য মানসম্মত ও উন্নত পরিবেশ দরকার কেন?
উত্তর : মানুষের জীবনধারণের জন্য মানসম্মত ও উন্নত পরিবেশ দরকার। আমাদের জীবনধারণের জন্য যেসব আবশ্যকীয় উপাদান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বাতাস ও পানি। বাতাস যদি কোনোভাবে দূষিত হয় এবং সেই দূষিত বাতাস যদি অক্সিজেনের সাথে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে তাহলে আমাদের শরীরে প্রাণঘাতি রোগের সৃষ্টি হয়। তেমনি পানিও যদি দূষিত হয় তাও আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি সৃষ্টি করে। এই পরিবেশ যদি মানসম্মত ও উন্নত না হয় তবে জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে ও আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন -১ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
নওশাদ মিয়ার বাড়ি বরগুনা জেলায়। তার বয়স ৭০ বছর। ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে তিনি ছাড়া সবাই মারা যান। ঘরবাড়ি সবকিছু ঝড়ে উড়ে যায়। ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল কয়েক মাইল দূরের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সা’দ সাহেব আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ায় তার বাড়িঘর ধ্বংস হলেও পরিবারের সকল সদস্য বেঁচে আছে। আত্মীয় পরিজনহীন অসহায় বৃদ্ধ নওশাদ মিয়া শুধুই আফসোস
করেন কেন তিনি সা’দ সাহেবের সাথে আশ্রয় কেন্দ্রে গেলেন না?
ক. সাইক্লোন কী?
খ. বৈশ্বিক উষ্ণতা ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উলিখিত ঘূর্ণিঝড় সিডর কীভাবে সৃষ্টি হয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. নওশাদ মিয়া ঘূর্ণিঝড়ের কবল হতে রেহাই পাবার জন্য কী কী পদক্ষেপ নিতে পারতেন? বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. নিম্নচাপজনিত কারণে প্রচণ্ড গতিবেগে ঘূর্ণনের আকারে যখন বাতাস প্রবাহিত হয় তাকে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় বলে।
খ. বৈশ্বিক উষ্ণতা হলো পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসগুলোর নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণেই বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে এবং জলবায়ুর নানাবিধ পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। যানবাহন, শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া, রেফ্রিজারেটর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ইত্যাদি থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস যেমন : কার্বন ডাইঅক্সাইড, ওজোন, মিথেন, সিএফসি, নাইট্রাস অক্সাইড, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি গ্যাস নিঃসরিত হয়। এ গ্যাসগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়িয়ে তুলছে।
গ. বরগুনা জেলায় ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড় সিডর একটি সাইক্লোনের নাম যা গভীর সমুদ্রে সৃষ্টি হয়।
মূলত নিম্নচাপ ও উচ্চ তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে- সাধারণত সাইক্লোন তৈরি হতে সাগরের তাপমাত্রা ২৭ সেলসিয়াসের বেশি হতে হয়। দুর্ভাগ্যবশত বঙ্গোপসাগরে প্রায় সারা বছরই তা বিদ্যমান থাকে। সাগরে বৃষ্টিপাতের ফলে সুপ্ত তাপ ছেড়ে দেয়, যা বাষ্পীভবন বাড়িয়ে দেয়। আবার এই সুপ্ততাপের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। ফলে বায়ুমণ্ডল অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এবং নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে আশপাশের বাতাস সেখানে ধাবিত হয়, যা বাড়তি তাপমাত্রার কারণে ঘুরতে ঘুরতে উপরে উঠতে থাকে ও সাইক্লোন সৃষ্টি করে। এ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের বেগ অনেক বেশি হয়। তবে বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ৬৩ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তা সাইক্লোন হিসেবে গণ্য করা হয়। এভাবে ঘূর্ণিঝড় সিডর সাগরে সৃষ্টি হয়।
ঘ. নওশাদ মিয়া ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রেহাই পেতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিতে পারতেন :
১. ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সময় পূর্বাভাস দেওয়া হয়। নওশাদ মিয়া ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস শোনামাত্র সপরিবারে নিকটবর্তী উঁচু ও মজবুত আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারতেন।
২. তিনি বাড়ির আশপাশে গাছপালা লাগাতে পারতেন। এতে ঘূর্ণিঝড়ের সময় বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারতেন।
৩. ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০Ñ১২ ফুট উঁচুতে পাকা ভবন নির্মাণ করতে পারতেন। এতে জলোচ্ছ¡াসের কবল থেকে রেহাই পেতেন।
৪. দুর্যোগের সংকেত সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিতে পারতেন। সংকেতের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা থাকলে তিনি পরিবার পরিজনদের হয়ত বাঁচাতে পারতেন।
সুতরাং নওশাদ মিয়া পূর্বাভাস শুনে কাল বিলম্ব না করে তাতে সাড়া দিলে আত্মীয় পরিজনদের হয়তো বাঁচাতে পারতেন।
প্রশ্ন -২ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
তুলি পড়ালেখা শেষ করে রাত ১২টায় ঘুমাতে গেল। হঠাৎ লক্ষ করল, তার শোবার খাট ও সিলিং ফ্যান কাঁপছে এবং ঘরের তাকে রাখা হালকা জিনিসপত্র নিচে পড়ে যাচ্ছে। তুলি পরদিন সকালে লক্ষ করল, আশপাশের কিছু পুরাতন বিল্ডিং ফেটে গিয়েছে, আবার কোনটি ভেঙ্গে গিয়েছে এবং হেলে পড়েছে। তুলি বুঝতে পারল রাতে এক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছিল।
ক. খরা কী?
খ. বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় কবলিত দেশ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. তুলির লক্ষ করা প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিভাবে সৃষ্টি হয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবার জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়? বিশ্লেষণ কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যখন মাটিতে পানির পরিমাণ কমতে কমতে পানিশূন্য হয়ে যায় এবং এর ফলে মাটিতে গাছপালা বা শস্য জন্মাতে পারে না তখন ঐ অবস্থাকে খরা বলা হয়।
খ. ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় কবলিত দেশ। বাংলাদেশের উত্তরে হিমালয় পর্বত এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর আর ফানেল আকৃতির উপক‚লীয় এলাকা বিদ্যমান। বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা প্রায় সারা বছরই ২৭ সেলসিয়াসের বেশি থাকায় প্রায়ই নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে আশপাশের বাতাস সেখানে ধাবিত হয় এবং ঘুরতে ঘুরতে উপরে উঠতে থাকে ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এ ঘূর্ণিঝড় তখন বাংলাদেশের ফানেল আকৃতির উপক‚লীয় এলাকার দিকে ধাবিত হয়। আর এজন্যই বাংলাদেশ নামক ভ‚খণ্ডটি প্রায়ই ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে।
গ. তুলির লক্ষ করা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো ভূমিকম্প।
ভূমিকম্প কিভাবে সৃষ্টি হয় তা সম্পূর্ণভাবে বলা মুশকিল। ধারণা করা হয় আমাদের ভূগর্ভ কতকগুলো ভাগে বিভক্ত, যাদেরকে টেকটনিক প্লেট বলে। এই টেকটনিক প্লেট কিন্তু স্থিতিশীল নয়, চলমান হতে পারে। এই টেকটনিক প্লেট স্থান পরিবর্তনের সময় একে অপরের সাথে সজোরে আঘাত লাগে, আর সেই আঘাতের ফলেই ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করা হয় রিখটার স্কেলে।
ঘ. উদ্দীপকের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় :
১. আমাদের দেশে বিশেষ করে শহরাঞ্চলে যেসব বড় বড় দালান-কোঠা তৈরি হয় সেখানে অবশ্যই ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২. বাড়িঘর নির্মাণের সময় ভারী জিনিসপত্রের ব্যবহার কমিয়ে হালকা জিনিস দিয়ে তৈরি করতে হবে।
৩. ঘর-বাড়ি বা অফিসে ৩-৪ দিনের পানি, খাবার, আলো না থাকলেও যাতে বাঁচা যায়, সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৪. এটাও মাথায় রাখতে হবে যে শুধু নিজে, পরিবার ও প্রতিবেশী ছাড়াও অন্যান্য লোকজনের ব্যাপারেও সুনজর রাখতে হবে।
৫. জরুরি এবং দ্রুত সাড়া দেয়ার প্রস্তুতি থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতাল, স্কুল বা পুলিশ বাহিনীর কথা বিবেচনায় রাখতে হবে।
৬. বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তাঘাট, যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন ইত্যাদি সব রকমের ব্যবস্থা রাখতে হবে দ্রুত ত্রাণ কাজের জন্য। সরকারিভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ কাজগুলো সম্পাদন করতে হবে।
৭. ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৮. ভূমিকম্পের ফলে সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে এবং তা মোকাবিলার জন্য একটি পরিকল্পনা আগে থেকেই গ্রহণ করতে হবে।