এইচএসসি বাংলা সাম্যবাদী সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

সাম্যবাদী

কাজী নজরুল ইসলাম

গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
শুধাও আমাকে “এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে
তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির বীজমন্ত্রটি শোন নাই
সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।”
এক সাথে আছি একসাথে বাঁচি আরও একসাথে থাকবই
সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবই।
ক. ‘যুগাবতার’ অর্থ কী?
খ. কবি কেন সাম্যের গান গেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার কোন দিকটি তুলে ধরা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দিষ্ট দিকটি হৃদয়ে লালন করার মাধ্যমে আমরা সুন্দর-সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে পারব।” বিশ্লেষণ কর। ১


১ নং প্রশ্নের উত্তর

 যুগাবতার এর অর্থ হলো বিভিন্ন যুগে অবতীর্ণ মহাপুরুষ।

 মানবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে কবি সাম্যের গান গেয়েছেন।
 কবি বৈষম্যহীন অসা¤প্রদায়িক সমাজ গড়ে তুলতে চান। কবির বিশ্বাস মানুষের হৃদয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু নেই এবং প্রতিটি মানুষই সমান মর্যাদার অধিকারী। মানুষে মানুষে সব ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়ে একটি নতুন সমাজ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে তিনি ‘সাম্যের গান’ গেয়েছেন।

 উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মানবতার স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে সাম্যবাদী সমাজ প্রতীক্ষার দিকটি তুলে ধরা হয়েছে।
 পৃথিবীতে আজ মানুষে মানুষে বিভেদ চরমে পৌঁছে গিয়েছে। অর্থ, ক্ষমতা, সম্মান আর মর্যাদার লোভে মানুষ উন্মাদ হয়ে উঠেছে। মানুষের হৃদয়সত্যই সব থেকে বড় সত্য।
 ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি জোর দিয়েছেন মানুষের অন্তরধর্মের ওপর। ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠীর দোহাই দিয়ে মানুষ আজ মানুষকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কবি এ সমাজ চান না। তিনি চান এমন এক সমাজ যেখানে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উদ্দীপকে আমরা ‘সাম্যবাদী’ কবিতার হৃদয়সত্যের উদ্বোধনের বিষয়টি লক্ষ্য করি। বাঙালি জাতির মানবতাবাদী চেতনা, তাদের হৃদয়সত্যের ওপর বিশ্বাসের কথাই আলোচ্য উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতি এক অসা¤প্রদায়িক সমাজ গড়ে তুলেছে। সুতরাং, উদ্দীপকে মূলত ‘সাম্যবাদী’ হৃদয়সত্য বিষয়টিই মুখ্য হিসেবে দেখা দিয়েছে।

 উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার সাম্যবাদী ও মানবতাবাদী চেতনার প্রকাশ ঘটেছে, যা হৃদয়ে লালন করার মাধ্যমে আমরা সুন্দর সুখী সমাজ গড়ে তুলতে পারব।
 সুখী সুন্দর সমাজ গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো মানুষে মানুষে সাম্য প্রতিষ্ঠা। যে সমাজে মানুষে মানুষে বিভেদ বিদ্যমান যে সমাজে আছে কেবল অশান্তি, হানাহানি। তাই সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা।
 ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবির বিশ্বাস মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে পরিচিত হয়ে ওঠার চেয়ে সম্মানের আর কিছু হতে পারে না। প্রতিটি মানুষ যখন এ স্বীকৃতি লাভ করে তখন মানুষে মানুষে কোনো বিভেদ থাকে না। তবে বিভেদহীন সমাজ তখনই গড়ে তোলা সম্ভব যখন প্রতিটি মানুষ অন্তর ধর্মকে স্বীকৃতি দেবে, যখন মানুষের মধ্যে মানবধর্মই প্রধান হয়ে উঠবে। উদ্দীপকে আমরা বাঙালি জাতির অসা¤প্রদায়িক ও মানবতাবাদী চেতনার পরিচয় পাই। ধর্মকে নয়, জাতিকে নয়, মানুষকে, মানুষের হৃদয়ধর্মকে প্রাধান্য দিয়েছিল বলেই বাঙালির জীবনে এত বড় বিজয় অর্জিত হয়েছে। আপামর বাঙালির প্রচেষ্টায় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে।
 উপর্যুক্ত আলোচনায় এ বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, সাম্য ও মানবতা এ দুটি সুখী সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য। তাই প্রতিটি বাঙালি এ দিকটি হৃদয়ে লালন করলেই সুখী সুন্দর সমাজ গঠন সম্ভব। উদ্দীপকে এবং ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় এ সমাজ গঠনের প্রত্যাশা ব্যক্ত হয়েছে।

 অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অনুপ একা বাড়িতে বৃদ্ধা মাকে রেখে তীর্থদর্শনে বের হলো। পথে গুরুতর অসুস্থ হয়ে সে এক ব্রা‏হ্মণের বাড়িতে আশ্রয় নিল। আশ্রয়দাতা ব্রা‏হ্মণের সেবা শুশ্রষায় সুস্থ হলে প্রায় দু’সপ্তাহ পরে অনুপ পুনরায় তীর্থভ্রমণে যাওয়ার উদ্যোগ নিল। ব্রা‏হ্মণ এবার অনুপকে বললেন, “এই দুর্বল শরীরে তীর্থে যেও না। কারণ তোমার হৃদয়ই তো প্রকৃত তীর্থস্থল।”
ক. ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় মগজে কী হানার কথা বলা হয়েছে?
খ. পুঁথিকে মৃত-কঙ্কালের সাথে তুলনা করা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকটির মূল বক্তব্য কোন দিক থেকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “আশ্রয়দাতা’ ও কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানসিকতা যেন একসূত্রে গাঁথা”-মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর। ১



২ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় মগজে শূল হানার কথা বলা হয়েছে।

 পুঁথি নির্জীব ও জড় বলে একে মৃত কঙ্কালের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
 মৃত ব্যক্তি ও কঙ্কাল চলাচল করতে পারে না। এরা অনড় ও অচলায়তনের প্রতীক। পুঁথি তথা শাস্ত্রগ্রন্থ বা কেতাব মৃতবৎ কঙ্কালস্বরূপ। জড়ত্ব ও নির্জীবতার জন্যই এসব পুঁথিকে মৃত-কঙ্কালের সাথে তুলনা করা হয়েছে।

 মানুষের অন্তরের ঐশ্বর্য প্রকাশের দিক দিয়ে উদ্দীপকের মূলবক্তব্য ‘সাম্যবাদী’ কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
 মানব হৃদয় অনন্ত ঐশ্বর্যের আধার। নীতি, জ্ঞান, প্রজ্ঞাসহ সবকিছুই মানুষের অন্তর হতেই উৎসারিত, যা উদ্দীপক ও ‘সাম্যবাদী’ কবিতা উভয়ক্ষেত্রেই আলোচিত হয়েছে।
 উদ্দীপকে তীর্থভ্রমণে যাওয়ার জন্য অনুপের আকুলতা প্রকাশ পেয়েছে। জাগতিক তীর্থভূমির দিকে মানুষের আকর্ষণ বেশি। কারণ, মানবহৃদয়ই সকল ঐশ্বর্যের কেন্দ্রবিন্দু অনেকেই তা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি মানুষের হৃদয়কে বিশ্বদেউল বা সকল তীর্থের পুঞ্জীভূত রূপ হিসেবে কল্পনা করেছেন। মানুষের হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা আছে বলে কবি বিশ্বাস করেন না। অন্যদিকে উদ্দীপকের মূলবক্তব্য হলো আপন অন্তরে প্রকৃত তীর্থস্থলের অবস্থান। অর্থাৎ, ‘সাম্যবাদী’ কবিতা এবং উদ্দীপক উভয়ক্ষেত্রেই মানুষের অন্তরের ঐশ্বর্য ও পবিত্রতাকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এদিক থেকে উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান।

 উক্তিটি আলোচ্য উদ্দীপক ও ‘সাম্যবাদী’ কবিতার আলোকে সঠিক ও যথার্থ।
 মানবহৃদয়েই সকল ঐশ্বর্যের অবস্থান। কিন্তু সংশয়গ্রস্ত মানুষ সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে তীর্থস্থান ভ্রমণে বের হয়। অথচ নিজের হৃদয়ই যে প্রকৃত তীর্থস্থল-তা তারা বুঝতে পারে না।
 উদ্দীপকে আশ্রয়দাতা ব্রা‏হ্মণকে আপন অস্তিত্বে বিশ্বাসী একজন দৃঢ় মানসিকতার মানুষ হিসেবে দেখা যায়। প্রতিটি মানুষের মনের মণিকোঠায় প্রকৃত তীর্থস্থলের অবস্থান রয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তাই তিনি অনুপকে তীর্থভ্রমণে যেতে নিষেধ করেন। ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবির কণ্ঠে খুব দৃঢ়তার সাথে উচ্চারিত হয়েছে, ‘এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।’ মানুষের অন্তরকে তাই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দেবালয় বলে অভিমত পোষণ করেছেন কবি।
 আলোচ্য উদ্দীপকে ব্রা‏হ্মণের মানসিকতা ও ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মনোভাব এক ও অভিন্ন। তাঁরা দুজনই হৃদয়ের পবিত্রতা ও ঐশ্বর্যে বিশ্বাসী। অতএব স্পষ্টতই ‘আশ্রয়দাতা’ ও কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানসিকতা যেন একসূত্রে গাঁথা উক্তিটি যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন মানুষ, মানুষের সৃষ্টি ধর্ম,
জাতি-বর্ণে হানাহানি ও কোন মানুষের কর্ম?
বৃথা ঘুরিনু তীর্থক্ষেত্রে খোদা-যিশু জিকির তুলি,
হৃদয়ে রয়েছে তোর স্রষ্টা কেন গেলে তা ভুলি?
ক. ইরানের নাগরিকদের কী বলে?
খ. ধর্মগ্রন্থ পাঠ পণ্ডশ্রম হয় কখন?
গ. উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তা তুলে ধর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার পূর্ণচিত্র নয়”Ñযুক্তিসহ উপস্থাপন কর। ১



৩ নং প্রশ্নের উত্তর

 ইরানের নাগরিকদের পার্সি বলে।

 ধর্মগ্রন্থের মূলমন্ত্র যে মানবতাবোধ তা আত্মস্থ না হলে সেই পাঠ পণ্ডশ্রম হয়।
 প্রত্যেক ধর্মের মানুষের জন্য পৃথক পৃথক ধর্মগ্রন্থ থাকলেও তার মূলমন্ত্র হলো নৈতিক শিক্ষা, মানবতাবোধ এবং সমতার দৃষ্টিভঙ্গি। ধর্মগ্রন্থের এ মূল সুর যদি মানুষের অন্তরে স্থায়ী আসন সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয় তবে তা পাঠ করা বৃথা। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মগ্রন্থের অভিন্ন নীতিশিক্ষা তথা মানবতার বোধ মানবমনে স্থান করে নিতে ব্যর্থ হলে ধর্মগ্রন্থ পাঠ পণ্ডশ্রম হয়।

 উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মানবহৃদয়ে স্রষ্টার অস্তিত্বের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
 ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি বলতে চেয়েছেন, সকল ধর্মগ্রন্থের মূলমন্ত্র মানুষের হৃদয়ে সংকলিত আছে-আর তা হচ্ছে নৈতিক শিক্ষা ও সমদর্শন। ধর্মশাস্ত্রের সুবচন, নীতিজ্ঞান এবং ধর্মক্ষেত্র সবই মানুষের আত্মার গভীরে বিরাজমান।
 উদ্দীপকেও জাতি-ধর্ম-বর্ণ প্রভৃতি বিভেদ সৃষ্টিকারী মানুষকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রত্যেক মানুষের অন্তরে যে মানবতা, সাম্যবোধ, তীর্থভূমি ও পবিত্র উপাসনালয় রয়েছে তা স্মরণ রাখার কথা বলা হয়েছে। উদ্দীপকে বিধাতার সৃষ্টি মানুষ আর মানুষের সৃষ্টি ধর্ম এ কথা বলার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে অন্তর্নিহিত ঐশ্বর্যের দিকটিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা ‘সাম্যবাদী’ কবিতারও মূলভাষ্য। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মানবহৃদয়ে স্রষ্টার অস্তিত্বের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

 উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার পূর্ণচিত্র নয়-মন্তব্যটি সঠিক ও যুক্তিযুক্ত।
 ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটি কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত মানবজাতির একত্ব প্রকাশক একটি রচনা। কবি এখানে মানুষ হিসেবে তাঁর পরিচয়ের মূল ভিত্তি খুঁজে পেয়েছেন অভিন্ন মানবতার বন্ধনে। তাই তিনি সাম্যবাদী। এক্ষেত্রে কবি মানুষকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছেন। তাঁর মতে মানবহৃদয় সকল ঐশ্বর্যের মূল।
 অন্যদিকে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক মানুষ সৃষ্টি এবং মানুষ কর্তৃক ধর্ম হওয়ার বিষয়টি আলোচ্য উদ্দীপকের মূল বিষয়বস্তু। কিন্তু ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় এ দুটো দিক ছাড়াও বিশ্বের মানব স¤প্রদায়কে এক ও অভিন্ন জাতি হিসেবে কল্পনা করে মনুষ্যজাতির একত্বের জয়গান গাওয়া হয়েছে। যে প্রেক্ষাপটে ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটি অভিন্ন জাতীয়তাবোধের পূর্ণচিত্র তা উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
 ‘সাম্যবাদী’ কবিতার বিষয়বস্তুতে বৈচিত্র্যময় অনুষঙ্গ উঠে এসেছে। মানবজাতির একত্ব, সাম্য এবং মানুষের শ্রেষ্ঠত্বসহ আরও নানা দিক আলোচিত হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে শুধু স্রষ্টা, মানুষ ও তার অন্তরের ঐশ্বর্যের দিকটিই উঠে এসেছে। অর্থাৎ, উদ্দীপকের বিষয়বস্তু সংক্ষেপিত ও খণ্ডিত। কাজেই প্রশ্নেলি­খিত মন্তব্যটি যৌক্তিক।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
পথিক বলেন, আমার হাতে বেদ, আমি হিন্দু সহযাত্রী কন, আমার হাতে কোরআন, এ যে জ্ঞানসিন্ধু। সঙ্গীটি বলেন, আমি মনেপ্রাণে বাইবেলের রক্ষক, অপরজন কন, আমার হাতে মহাপবিত্র গ্রন্থ ত্রিপিটক। সকলের হাতে পৃথক পৃথক ধর্মগ্রন্থগুলো, কে উত্তম, কে মধ্যম, কে অধম বলো?
ক. জিন বা মহাবীর প্রতিষ্ঠিত ধর্মমতাবলম্বী জাতিকে কী বলে?
খ. যেখানে সব বাধা-ব্যবধান এক হয়ে গেছে, কবি সেখানে সাম্যের গান গাইতে চান কেন?
গ. ‘সাম্যবাদী’ কবিতা রচয়িতার প্রত্যাশার সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য চি‎িহ্নত কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার আংশিক রূপায়ণ’ -মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। ১



৪ নং প্রশ্নের উত্তর

 জিন বা মহাবীর প্রতিষ্ঠিত ধর্মমতাবলম্বী জাতিকে জৈন বলে।

 বিশ্বব্যাপী এক মানবজাতির চেতনা মনেপ্রাণে পোষণ করেন সব বাধা-ব্যবধান এক হয়ে গেছে, কবি সেখানে সাম্যের গান গাইতে চান।
 সাম্যবাদী কবি হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম, খ্রিস্টান প্রভৃতি জাতিকে আলাদা চোখে দেখতে চান না। বরং গোটা মানবজাতিকে একজাতি হিসেবে কল্পনা করেন। এক্ষেত্রে সব বাধা-ব্যবধানকে তুচ্ছ মনে করেন বলে কবি সাম্যের গান গাইতে চান।

 উদ্দীপকটিতে নানা ধর্মস¤প্রদায়গত ভেদ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার মাধ্যমে মানুষ জাতির ঐক্যের দিকটিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা কবির প্রত্যাশার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
 সাম্যবাদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় এক মানবজাতির অভেদ ধর্মকে কল্পনা করেছেন। এ বিশ্বে বহু বর্ণ, ধর্ম গোত্র ও স¤প্রদায় আছে। নানা ধর্মের মানুষের জন্য আলাদা ধর্মগ্রন্থও আছে। কিন্তু ধর্মগ্রন্থের ভিন্নতা মানুষ জাতিকে ভিন্ন করতে পারে নি।
 উদ্দীপকের মানুষ নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থগুলোকে পবিত্র মনে করে। এগুলোর প্রতি তাদের শ্রদ্ধার কমতি নেই। কুরআন, বেদ, বাইবেল, ত্রিপিটক ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থের মূলবাণীগুলো তারা হৃদয়ে ধারণ করেছে। কিন্তু বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ দ্বারা মানুষকে উত্তম, মধ্যম ও অধম হিসেবে চি‎িহ্নত করা যায় না। এখানেই ‘সাম্যবাদী’ কবিতা রচয়িতার ধর্মের ভিত্তিতে নয়, মানবতার মহামন্ত্র দ্বারা অভিন্ন মনুষ্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যাশার সাথে উদ্দীপকের মূলকথার সাদৃশ্য চি‎িহ্নত করা যায়।

 “উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার আংশিক রূপায়ণ”-মন্তব্যটি যথার্থ।
 কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি সকল মানুষের একত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরেছেন। আপন অস্তিত্বে বিশ্বাসী কবি মানবহৃদয়ের ঐশ্বর্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। এক্ষেত্রে কবি তাই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো পুণ্যস্থান দেখেন না।
 উদ্দীপকটিতে শুধু মানুষের ব্যবহৃত ধর্মগ্রন্থ এবং এগুলোকে নিয়ে সৃষ্ট ভেদ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার মাধ্যমে সকল মত ও ধর্মের মানুষের একত্বের দিকটিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় এ বিষয় ছাড়াও মানবহৃদয়ের ঐশ্বর্যের দিকটিকে তুলে ধরা হয়েছে, যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
 সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় সকল মানুষের মধ্যে সাম্য তথা একত্বের দিকটি প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি উঠে এসেছে মানবহৃদয়ের ঐশ্বর্যের পবিত্রতার দিকটি। কিন্তু উদ্দীপকের বক্তব্যে মানুষের একত্বের চেতনা উপস্থিত থাকলেও কবিতায় আলোচিত অন্যান্য দিকগুলো উন্মোচিত হয় নি। তাই ‘উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার আংশিক রূপায়ণ’মন্তব্যটি যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ল²ীপুর জেলার টুমচর গ্রামে এক বাড়িতে বিয়ে অনুষ্ঠান চলাকালে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। বাড়ির ভেতর থেকে কিছু লোক বের হতে পারলেও অনেকেই আটকা পড়ে। মুজাহিদ নামের এক সাহসী যুবক আগুনের মধ্য দিয়ে অনেককে টেনে বের করে। এক পর্যায়ে সে নিজেই ভেতরে আটকা পড়ে যায়। দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও মুজাহিদের দেহ পুড়ে যায়। নিজের জীবন দিয়ে সে অনেকের প্রাণ রক্ষা করে।
ক. আরব দুলাল কে?
খ. “তোমার হৃদয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার।”-এ কথা বলা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকের বক্তব্য ‘সাম্যবাদী’ কবিতার কোন দিকটিকে নির্দেশ করে?-ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “মুজাহিদ ও শাক্যমুনির আত্মত্যাগ যেন একসূত্রে গাঁথা।”-উক্তিটি বিশ্লেষণ কর। ১



৫ নং প্রশ্নের উত্তর

 আরব দুলাল হলেন মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স)।

 প্রত্যেক মানুষের হৃদয়েই আত্মারূপে পরমাত্মা বা ঈশ্বর বিরাজমান বলে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।
 কবি মানবহৃদয়ের ঐশ্বর্যের প্রতি আস্থাশীল। তাঁর মতে, পৃথিবীর সকল গ্রন্থের পুঞ্জীভূত জ্ঞান মানবহৃদয় হতেই উৎসারিত। মানুষের হৃদয়ে পাপ-পুণ্য, ভালো-মন্দ সবকিছুরই অবস্থান। তাই মানবহৃদয়কেই সকল ধর্মের সবচেয়ে বড় উপাসনালয় বলা হয়েছে।

 উদ্দীপকের অপরের কল্যাণে আত্মোৎসর্গ করার মহৎ প্রচেষ্টা ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় উলি­খিত শাক্যমুনির জনকল্যাণের জন্য রাজ্য ত্যাগের দিকটিকে নির্দেশ করে।
 নিজের জীবনকে তুচ্ছ ভেবে অপরের প্রাণ রক্ষা করা মহত্তে¡র লক্ষণ। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে যে মানুষ নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেন তিনি মহামানব।
 উদ্দীপকের মুজাহিদ এক পরোপকারী ও সাহসী যুবক। নিজের জীবন উৎসর্গ করে সে অনেক মানুষের প্রাণ রক্ষা করার মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় রাজকুমার বুদ্ধদেব মানুষের মঙ্গলের জন্য রাজসুখ ত্যাগ করে পরমেশ্বরের ধ্যান করেন। আবার মানুষের দুঃখ-কষ্ট, রোগ-ব্যাধি ও জ্বালা-যন্ত্রণা দূর করার জন্য শাক্যমুনি রাজপাট পরিত্যাগপূর্বক স্রষ্টার সাধনায় নিজেকে সঁপে দেন। উদ্দীপকের মুজাহিদ মানুষের জীবন রক্ষার্থে নিজের প্রাণ ত্যাগের ঘটনাটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার শাক্যমুনির জনস্বার্থে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার দিকটিকে নির্দেশ করে।

 “মুজাহিদ ও শাক্যমুনির আত্মত্যাগ যেন একসূত্রে গাঁথা।”-উক্তিটি যথার্থ।
 অপরের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়েই মানবিকতার যথার্থ স্ফুরণ ঘটে। আলোচ্য উদ্দীপকে মুজাহিদের আত্মত্যাগ ও শাক্যমুনির রাজ্যত্যাগের মধ্যে এ পরামর্শই পরিলক্ষিত হয়।
 উদ্দীপকটিতে মুজাহিদ নামে এক পরহিতকারী সাহসী যুবকের কাহিনি প্রকাশ পেয়েছে। নিজ জীবনের মায়া তুচ্ছ করে সে আগুনের মাঝে আটকে পরা লোকজনকে উদ্ধার করেছে। আলোচ্য উদ্দীপকে পরহিতব্রতী সাহসী যুবক মুজাহিদের আত্মবিসর্জন তাই কবিতায় শাক্যমুনির রাজ্যত্যাগের কাহিনিকে নির্দেশ করে।
 রোগ-ব্যাধিগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা বুদ্ধদেবকে ব্যথিত করে। যন্ত্রণাকাতর কষ্ট লাঘবের নিমিত্তে স্রষ্টার কৃপাদৃষ্টি লাভের জন্য, বেদনাহত মানুষের দুঃখ দূর করার জন্য শাক্যমুনির রাজ্য ছাড়ার কথা ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে উদ্দীপকেও স্বীয় জীবনের মায়া ভুলে অপরের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার হতো আত্মত্যাগের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এক্ষেত্রে মুজাহিদ ও শাক্যমুনির আত্মত্যাগ যেন একসূত্রে গাঁথা। তাই উক্তিটি যথোপযুক্ত।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয়
পথের দুধারে আছে মোর দেবালয়।
ক. পারস্যের অগ্নি উপাসকদের ধর্মগ্রন্থের নাম কী?
খ. ‘মগজে হানিছ শূল?’-বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে-ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “দু’চরণের এ উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার একটি সমার্থক দলিল।”-উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর। ১



৬ নং প্রশ্নের উত্তর

 পারস্যের অগ্নি উপাসকদের ধর্মগ্রন্থের নাম আবেস্তা।

 আপন অন্তরে স্রষ্টাকে উপলব্ধি না করে বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করে সৃষ্টিকর্তার রহস্য উদঘাটনের ব্যর্থ চেষ্টাকে ‘মগজে হানিছ শূল’ বলা হয়েছে।
 মানুষের হৃদয়েই স্রষ্টার অবস্থান। আপন অন্তরে স্রষ্টাকে উপলব্ধি না করে নানা ধর্মগ্রন্থ ঘেটে দেখা পণ্ডশ্রম। তাই শুধু ধর্মশাস্ত্র না পড়ে আপন হৃদয়ে অনুসন্ধান চালানো হলে বিধাতার অস্তিত্ব উপলব্ধি করা সম্ভব হবে। অন্যথায় হৃদয়ের ঐশ্বর্যকে অবহেলা করে স্রষ্টাকে খুঁজে ফেরা মগজে শূল হানারই নামান্তর।

 দেবতাকে পেতে পথের প্রান্তে, অর্থাৎ অনন্তের পথে ধাবিত হওয়ার দরকার নেই বরং মানুষের হৃদয়েই তার অবস্থান-উদ্দীপকের এই দিকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় ফুটে উঠেছে।
 ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় মানুষের আপন অন্তরের ঐশ্বর্যকে স্বীকার করা হয়েছে। সেখানে সকল তীর্থ ও ধর্মগ্রন্থের সারাৎসার নিহিত রয়েছে। হৃদয়ের ঐশ্বর্যকে উপলব্ধি করতে পারলে তীর্থে নিজের ভেতর স্রষ্টার অস্তিত্বের উপলব্ধি হবে।
 উদ্দীপকটিতে মানুষের মাঝে দেবতার অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। অনেকে জগৎ সংসারের মায়া ছিন্ন করে তীর্থে তীর্থে ঘুরে বেড়ায় দেবতার নৈকট্য লাভের বাসনায়। এরূপ মানসিকতার লোকেরা ভুলে যায় যে জীবের মাঝেই অবস্থান করেন জগৎপতি। এজন্য দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার প্রয়োজন নেই। ‘সাম্যবাদী’ কবিতায়ও মানব হৃদয়ে বিশ্ব-দেউল বা সকল দেবতার অবস্থান রয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। কিছু মানুষ নিজ হৃদয়ের ঐশ্বর্য উপলব্ধি করতে পারে না। তাই তারা তীর্থস্থানে ঘুরে বেড়ায়। ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় প্রকাশিত এ সহজবোধটিই উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।

 “দু’চরণের এ উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার একটি সমার্থক দলিল।” -উক্তিটি সঠিক।
 ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মূলবক্তব্যে মানুষের হৃদয়ের ঐশ্বর্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মানুষের হৃদয়ের চেয়ে বড় মন্দির কিংবা কাবা নেই। মানুষের নিজ প্রাণেই সকল শাস্ত্র-পুঁথি-কেতাবের সন্ধান রয়েছে । এজন্য বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতে গিয়ে পণ্ডশ্রম করার প্রয়োজন পড়ে না।
 উদ্দীপকের বর্ণনায় দেবতার সান্নিধ্য লাভের বাসনায় অনেক মানুষ পথের প্রান্তে, অর্থাৎ দূরবর্তী স্থানে অগ্রসর হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেবতার খোঁজে তীর্থস্থানে যাবার দরকার নেই-কেননা, পথের দুধারে, অর্থাৎ আমাদের চারপাশের মানুষের মাঝেই দেবালয় আছে বলে উদ্দীপকটিতে বলা হয়েছে। ‘সাম্যবাদী’ কবিতার বিষয়বস্তু হলো আপন সত্তায় দেবালয়ের অবস্থান আর উদ্দীপকে দূরের তীর্থ নয় বরং চারপাশের মানুষের মধ্যেই স্রষ্টার অবস্থানের দিকটিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
 পরিশেষে উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে এক বাক্যে বলা যায়, দুই চরণের এ উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার একটি সমার্থক দলিল। সুতরাং, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি বস্তুনিষ্ঠ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
“শুনহে মানুষ ভাই
সবার ওপরে মানুষ সত্য
তাহার উপরে নাই।”
ক. বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘নজরুল রচনাবলি’ গ্রন্থের সম্পাদক কে?
খ. “এই হৃদয়ই সে নীলাচল।”-একথা বলার কারণ কী?
গ. উদ্দীপক ও ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মধ্যে সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের যে অমৃত সার্থক বাণী প্রকাশ পেয়েছে তা ‘সাম্যবাদী’ কবিতারও মূল উপজীব্য।” মন্তব্যটি-মূল্যায়ন কর। ১



৭ নং প্রশ্নের উত্তর

 নজরুল রচনাবলি গ্রন্থের সম্পাদক আবদুল কাদির।

 মানুষের হৃদয় মহাপবিত্র বলে মানবহৃদয়কে নীলাচল বা জগন্নাথক্ষেত্র বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
 বিবেকবান মানুষের হৃদয় মহৎ হয়। মহৎ হৃদয়ের অধিকারী মানুষেরা অপরাপর মানুষের জন্য নিজের অন্তরকে উন্মুক্ত রাখেন। হৃদয়ের জোরে তারা বিশ্বজয়ী হন। এরূপ হৃদয়ই তো সত্যিকার তীর্থক্ষেত্র।

 মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের মধ্য দিয়ে উদ্দীপক ও ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মধ্যে সাদৃশ্য প্রতীয়মান হয়।
 মানুষ হৃদয়ের ঐশ্বর্যে গরীয়ান। তাই সৃষ্টির অপরাপর কোনো কিছুই মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, সত্য ও সুন্দর নয়। উদ্দীপকে প্রকাশিত মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব, সৌন্দর্য, সত্যবাদিতার এ পরম স্বাভাবিক দিকটিই কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় ফুটে উঠেছে।
 মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের কাছে জাগতিক সংস্কার, পুঁথি, ধর্মগ্রন্থ উপাসনালয় প্রভৃতি কোনো কিছুই অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষের মর্যাদা সবার উপরে বিবেচিত। জগতের সবকিছুরই সৃষ্টি মানুষের কল্যাণের জন্য। তাই কোনো সামাজিক রীতি, ধর্মীয় ভাবধারা, জাগতিক মূল্যবোধ মানুষের চেয়ে অধিক মর্যাদাকর হতে পারে না। ‘সাম্যবাদী’ কবিতা ও উদ্দীপকে এ বক্তব্যের মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

 “উদ্দীপকে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের যে অমৃত সার্থক বাণী প্রকাশ পেয়েছে তা ‘সাম্যবাদী’ কবিতারও মূল উপজীব্য”-মন্তব্যটি সঠিক।
 ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের সাথে সাথে মানুষের একত্ব ও সাম্যের দিকটিও ঘোষিত হয়েছে, যা উদ্দীপকেরও মূল উপজীব্য। জ্ঞানের উৎকর্ষ এবং মানবহৃদয়ের ঐশ্বর্যের এ চিরন্তন ও অভেদ বাণীই ‘সাম্যবাদী’ কবিতা ও উদ্দীপকে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
 মানুষের স্থান সবার উপরে। সৃষ্টির সেরা জীব বলে মানুষ সত্য ও সুন্দরের প্রতীক। বিবেক-বুদ্ধি-আত্মমর্যাদা ও নৈতিকতার কারণে জগতে মানুষের প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বিরাজমান। মানুষের সৌন্দর্য ও গুরুত্ব সর্বজনস্বীকৃত। আলোচ্য উদ্দীপকে ফুটে ওঠা এ অকাট্য ও যৌক্তিক মন্তব্যটিই কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে। ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় মানুষের হৃদয়ে সকল ধর্মগ্রন্থ এবং তীর্থের অবস্থানের কথা বলার মধ্য দিয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বকেই স্বীকার করা হয়েছে। উদ্দীপকে সবার উপরে স্থান দেয়ার মাধ্যমে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বই স্বীকৃত হয়েছে।
 সুতরাং, সার্বিক আলোচনা শেষে বলা যায়, “উদ্দীপকে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের যে অমৃত সার্থক বাণী প্রকাশ পেয়েছে তা ‘সাম্যবাদী’ কবিতারও মূল উপজীব্য।” কাজেই মন্তব্যটি সার্থক।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
‘আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাইনি তোমায়
দেখতে আমি পাইনি।
বাহির পানে চোখ মেলেছি বাহির পানে
আমার হৃদয় পানে চাইনি।’
ক. কাজী নজরুল ইসলাম কত বছর বয়সে লেটো গানের দলে যোগ দেন?
খ. ঈসা-মুসা কীভাবে সত্যের পরিচয় পেলেন?
গ. উদ্দীপক ও ‘সাম্যবাদী’ কবিতার সাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. “আমরা আপন অস্তিত্বে বিশ্বাসী নই বলেই স্রষ্টাকে বাহিরে খুঁজে ফিরি”মন্তব্যটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার আলোকে মূল্যায়ন কর। ১



৮ নং প্রশ্নের উত্তর

 কাজী নজরুল ইসলাম বারো বছর বয়সে লেটো গানের দলে যোগ দেন।

 অন্তরের অন্তস্থল থেকে ঈশ্বরের ডাক শুনেই ঈসা-মুসা সত্য-সুন্দরের পরিচয় পেয়েছেন।
 ঈসা, অর্থাৎ খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের পরম পুরুষ যিশু খ্রিস্ট আর মুসা, অর্থাৎ বিখ্যাত নবি হযরত মুসা (আ) হৃদয় মন্দিরে বসেই সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ করেছিলেন। আপন অন্তরে সত্য ও সুন্দরের আহŸান পেয়েই ঈসা-মুসা সত্যের সন্ধান পান। মানবহৃদয় সত্য সন্ধানের প্রকৃত ও পরম স্থান, যেখানে বসে ঈশ্বরের সান্নিধ্য পাওয়া যায়, যা ঈসা-মুসা পেয়েছেন।

 উদ্দীপক ও ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মধ্যে সাদৃশ্য হলো আপন হিয়ার মাঝে লুকিয়ে থাকা পরমাত্মার সন্ধান না জেনে বাহিরে স্রষ্টার অস্তিত্ব খোঁজার চেষ্টা করা।
 ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় অমৃত হিয়ার নিভৃত অন্তরালে সৃষ্টিকর্তার হাস্যবদনে অবস্থান করার কথা প্রকাশ পেয়েছে। আর মানুষ আপন অন্তরে সেই স্রষ্টার অনুধাবন করতে না পেরে বাহ্যিক জগতে তাঁকে সন্ধান করতে থাকেন।
 উদ্দীপকে হিয়ার মাঝে লুকিয়ে থাকা পরম সাধনার ধন স্রষ্টাকে চিনতে না পেরে বাহির পানে ঘুরে বেড়ানোর কথা বলা হয়েছে। মানুষ আপন হিয়ার মাঝে অবস্থিত বিধাতাকে অনুধাবন করতে প্রায়শই ব্যর্থ হয়। তাই বাইরের কল্পলোকে বিধাতার অবস্থান কল্পনা করে। অথচ আপন অন্তরের ঐশ্বর্যের সন্ধান পায় না। উদ্দীপকের এ ভাবটি কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘সাম্যবাদী’ কবিতাতেও প্রকাশ পেয়েছে। এদিক থেকে উদ্দীপক ও ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মধ্যে সাদৃশ্য প্রতীয়মান।

 ‘আমরা আপন অস্তিত্বের বিশ্বাসী নই বলেই স্রষ্টাকে বাহিরে খুঁজে ফিরি’- মন্তব্যটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার আলোকে যথার্থ।
 ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি মানুষের আত্মশক্তি এবং এর সম্ভাবনার দিকটি তুলে ধরেছেন। প্রকৃতপক্ষে মানব হৃদয়ই সকল ঐশ্বর্যের আধার। তাই আপন অস্তিত্বকে অস্বীকার করে স্রষ্টাকে অšে¦ষণ বৃথা।
 উদ্দীপকে মানুষের হৃদয়ের গহিনে লুকিয়ে থাকা পরমাত্মার অবস্থান বুঝতে না পেরে বাহির পানে তাকে দর্শনের চেষ্টা করার কথা প্রকাশ পেয়েছে। মানুষ অজ্ঞতাবশত আপন অন্তরে পরম পুরুষকে অনুধাবন করতে প্রায়শই ব্যর্থ হয়। তাই তারা বাইরের জগতে স্রষ্টাকে দর্শনের চেষ্টা করে। অন্তরে পরমাত্মার অস্তিত্ব অনুধাবনে ব্যর্থতার দিকটি কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় ফুটে ওঠা কবির মনোভাবেরই প্রতিরূপ।
 মানবহৃদয়ে সকল কালের জ্ঞান, সকল ধর্ম এবং সকল যুগাবতারের অবস্থান রয়েছে বলে ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় যে দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ তা আলোচ্য উদ্দীপকের মূলবক্তব্যেরই অনুরূপ। উদ্দীপক এবং ‘সাম্যবাদী’ কবিতা উভয়ক্ষেত্রে অন্তরে অবস্থিত পরম পুরুষকে চিনতে না পেরে বাহির পানে চোখ মেলে খোঁজার কথা প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার আলোকে যথাযথ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
“সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে”-গানটিকে লালন ফকির মানুষের জাত-পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। জাতকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। মনুষ্যধর্মই মূলকথা। ধর্ম বা স¤প্রদায়গত পরিচিতির চেয়ে মানুষ হিসেবে পরিচয়টাই বড়। আর মানুষমাত্রই সমান। ছোটলোক-বড়লোক, উচ্চ-নীচ এসব কৃত্রিম ব্যবধান। অজ্ঞতাবশে মানুষ এসব নিয়ে অহংকার করে।
ক. ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি কীসের গান গেয়েছেন?
খ. “পেটে পিঠে, কাঁধে-মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও”-বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সামবাদী’ কবিতার ভাবার্থের দর্পণ।”-মন্তব্যটি যাচাই কর। ১



৯ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি সাম্যের গান গেয়েছেন।

 “পেটে পিঠে, কাঁধে-মগজে যা খুশি পুঁথি ও কেতাব বও” বলতে কবি পাণ্ডিত্য জাহিরে বা বিভেদ সৃষ্টিতে পুঁথি-কিতাবের আশ্রয় নেয়ার অসারতাকে বুঝিয়েছেন।
 সাম্যবাদী কবির কাছে মনুষ্যধর্মের বিভেদ ও অবমাননার কোনো মূল্য নেই। তাই বিভেদ-বৈষম্য সৃষ্টির অপপ্রয়াসে নানা পুঁথি-কিতাব টানাও তাঁর কাছে কোনো গুরুত্ব বহন করে না।

 উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার প্রথম অংশে উচ্চারিত কবির অসা¤প্রদায়িক মানবসমাজের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়েছে।
 ধর্মীয় গণ্ডিতে আমরা নিজ নিজ ধর্মের অনুসারী হলেও সবার মধ্যে একটা মানবতাবোধ আছে, তাই আমরা মনুষ্যজাতি। যারা বিশ্বমানবতাবাদে বিশ্বাসী তাদের জাতির একটি নাম হচ্ছে মানবজাতি।
 উদ্দীপকের আলোচনায় দেখা যায়, মানবতাবাদী লালন ফকির মানুষের পরিচয় হিসেবে জাতের পরিচয়কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। তাঁর কাছে মনুষ্যধর্মই মূলকথা। ধর্ম বা স¤প্রদায়গত পরিচিতির চেয়ে মানুষ হিসেবে পরিচয়টাই বড়। তিনি আরও মনে করেন, মানুষমাত্রই সমান।
 উদ্দীপকে লালন ফকিরের ভাবনা ও বক্তব্যে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার কবির মনুষ্যধর্ম সম্পর্কে চিন্তা ও দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে। ‘সাম্যবাদী’ কবিতার প্রারম্ভেই কবি সমতা বা সাম্যের গান গেয়েছেন। তার মানসভূমিতে হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের মধ্যকার সব বাধা-ব্যবধান বিলোপ হয়েছে। পার্সি-জৈন, ইহুদি-সাঁওতাল, ভীল-গারোর পরিচয়ে বিভেদ-বৈষম্যও লোপ পেয়েছে। সেখানে আজ মানুষ হিসেবে মনুষ্যত্বের পরিচয়ই মুখ্য হয়ে উঠেছে।

 “উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার ভাবার্থের দর্পণ।”মন্তব্যটি যথার্থ।
 পৃথিবীতে নানান স¤প্রদায়ের লোক বাস করে। ধর্মীয় গণ্ডিতে প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্মের অনুসারী হলেও সবার মধ্যে একটা অভিন্ন মানবতাবোধ রয়েছে। প্রকৃতির রাজ্যে আমরা একই উপাদানে গঠিত। আমরা একই পৃথিবীতে, একই আকাশের নিচে, একই মাটির আঙিনায়, একই চন্দ্র-সূর্যের আলোয় বাঁচি।
 উদ্দীপকে লালন ফকিরের মতে, মনুষ্যধর্মই মূলকথা। ধর্ম বা স¤প্রদায়গত পরিচিতির চেয়ে মানুষ হিসেবে পরিচয়টাই বড়। আর মানুষমাত্রই সমান। একমাত্র অজ্ঞতাবশেই মানুষ ছোট-বড়, জাত-পাত নিয়ে বড়াই করে। উদ্দীপকের এ বক্তব্যকে মনে হয় ‘সাম্যবাদী’ কবিতার ভাবার্থের দর্পণ। কেননা, ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনুষ্যত্বের জয়গানে, মানুষে মানুষে সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশায় উচ্চকিত। ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি সাম্যের গান গেয়েছেন। যে সমতাবিধানে হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, পার্সি-জৈন, শিখ-ইহুদি হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে মানুষের পরিচয়টা বড় হয়ে উঠেছে।
 কবি মনুষ্যত্বের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের প্রবর্তক পুরুষদের কীর্তি মহিমা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, মানুষের হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা কোথাও নেই। ‘সাম্যবাদী’ কবিতার এসব ভাবার্থ প্রদত্ত উদ্দীপক দর্পণের মতো ধারণ করেছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জগৎসংসারে সবাই সবার আপনজন, এক আদম-হাওয়ার সন্তান। সন্ধান করলে দেখা যাবে কোনো না কোনোভাবে একে অপরের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। এই আত্মীয়তার বন্ধন যে-আঁচলে বাঁধা সে আঁচলের খোঁজ পেলেই আসবে মুক্তি। বিধাতার সে আঁচল কোনো মৃত-পুঁথি-কঙ্কালের স্তূপ নয়, এটি অমৃত হিয়ার নিভৃত অন্তরালের দেবালয়।
ক. ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবির মতে আমাদের হৃদয় কী?
খ. পথে তাজা ফুল ফোটে কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার কোন দিকটিতে ইঙ্গিত করে? নির্ণয় কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার এক বিশেষ দিককে প্রতিকার করেছে মাত্র।”Ñ মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর। ১



১০ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবির মতে আমাদের হৃদয় সকলের দেবতার বিশ্ব-দেউল।

 ধর্ম-স¤প্রদায় নিয়ে বিভেদ ও কলহের জেরে পথে তাজা ফুল ফোটে, অর্থাৎ বুকের লাল রক্তে রঞ্জিত হয়।
 মানুষে মানুষে সমতা ও একতা প্রতিষ্ঠার লোক যেমন সমাজে আছে, তেমনি বিভেদ-বৈষম্য সৃষ্টির লোকেরও অভাব নেই। সমাজের এ বিভেদ সৃষ্টিকারী লোকেরা মানুষকে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, পার্সি-জৈন-ইহুদি-সাঁওতাল, ভীল, গারো-এমনই নানা শ্রেণি-স¤প্রদায়ে বিভক্ত করার অপপ্রয়াস চালায়। এর ফলে দোকানে এসব বিতর্কিত বিষয়ে দরকষাকষি চলে আর রাস্তায় বুকের রক্তে তাজা ফুল ফোটে।

 উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মানুষের অন্তরাত্মার তথা মানবাত্মার শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়-যেখানে স্বয়ং স্রষ্টার অধিষ্ঠান, তাকেই ইঙ্গিত করে।
 স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিরূপে মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। তাই সবার উপরে মানুষের মর্যাদা স্বীকার করতে হয়। মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে বিবেচনা করে তার গুরুত্ব অনুধাবন করা দরকার। প্রাণিকুলের মধ্যে অন্তরধর্ম বা অন্তরাত্মার কারণে মানুষের স্থান সবার উপরে।
 উদ্দীপকে বলা হয়েছে, জগৎসংসারে সবাই সবার আপনজন। এ আত্মীয়তার বন্ধন যে আঁচলে বাঁধা, সেই আঁচলের খোঁজ পেলেই আসবে মুক্তি। উদ্দীপকের এ কাক্সিক্ষত মুক্তির পথ সম্পর্কে ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় বলা হয়েছে, মানুষের মাঝেই সকল ধর্মগ্রন্থের সারকথা এবং অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎকালের জ্ঞান সঞ্চিত রয়েছে। সেটাকে পেতে হলে নিজের প্রাণ, অর্থাৎ অন্তরাত্মার উপলব্ধিকে খুঁজে পেতে হবে। নানা ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি, স¤প্রদায়ে বিভক্ত মানুষকে এক অভেদ মানুষরূপে গড়ে তুলতে কবি সকল মানুষকে সমানরূপে দেখার কথা বলেছেন। প্রদত্ত উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার এ দিকটিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

 “উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার একটি বিশেষ দিক, অর্থাৎ মানবের অন্তরাত্মা বা মানবাত্মা অনুসন্ধানের দিকটিকে প্রতিকার করেছে মাত্র।” মন্তব্যটি যথার্থ।
 মানুষ হিসেবে মানুষের উচিত সব বিভেদ ভুলে যাওয়া এবং পৃথিবীকে সকলের জন্য এক ও অভিন্ন পৃথিবী হিসেবে গড়ে তোলা। আর সবার উপরে সবার মনুষ্যত্বকে মূল্যায়ন করা।
 উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, জগৎসংসারে সবাই সবার আপনজন এ সত্যটি উচ্চারণ করা হয়েছে। সেই সাথে এক মানুষ যে অপর মানুষের আত্মীয়তার এক আঁচলে বাঁধা এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিধাতার সেই আঁচল যেকোনো মৃত-পুঁথি কঙ্কালের স্তূপ নয়, এটি যে অমৃত হিয়ার নিভৃত অন্তরালের দেবালয়-এ বিষয়টি বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। উদ্দীপকের এ বক্তব্য বিষয় ‘সাম্যবাদী’ কবিতার শুরুতে “গাহি সাম্যের গান-সেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান” পঙ্ক্তিদ্বয়ের উচ্চারণের সাথে সাথে “কেন খুঁজে ফের দেবতা-ঠাকুর মৃত-পুঁথি-কঙ্কালে? হাসিছেন তিনি অমৃত হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!” পঙ্ক্তিদ্বয়ে পরিপূর্ণরূপে ফুটে উঠেছে। কিন্তু এ পঙ্ক্তিগুলো ‘সাম্যবাদী’ কবিতার এক বিশেষ দিক মাত্র।
 ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় উপর্যুক্ত বিষয় ছাড়াও জগতের নানা ধর্ম-জাতি-গোষ্ঠী-স¤প্রদায় ও তাদের প্রবর্তক পুরুষ এবং গ্রন্থসমূহের পরিচয় ও নির্যাস আলোচিত হয়েছে। আলোচিত হয়েছে মানবাত্মার পরিচয় ও তার শ্রেষ্ঠত্বের। মানুষের বিভেদ-বৈষম্য দূরীকরণে প্রবর্তক পুরুষগণের মানবিক আচরণ ও শিক্ষা ফুটে উঠেছে। এছাড়া মানবের অন্তরাত্মায় স্রষ্টার বাস দেখিয়ে সবকিছুর উপরে মানুষের মনুষ্যত্বের পরিচয়কে বড় করে তোলা হয়েছে, যা প্রদত্ত উদ্দীপকে অনুপস্থিত। অতএব, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
প্রতিটি মানুষের মনের মন্দিরে বসবাস করেন মহান সৃষ্টিকর্তা। যেখানে সৃষ্টিকর্তার আবাস, তার থেকে উপযুক্ত পবিত্র কোনো উপাসনালয় থাকতে পারে না। মনের মন্দিরেই স্রষ্টার প্রতি আরাধনা হয় নিগূঢ়ভাবে। তাই জাগতিক যত মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা থাকুক না কেন, হৃদয়ের স্থান সবচেয়ে ঊর্ধ্বে।
ক. শাক্যমুনি কে?
খ. ‘বাঁশির কিশোর’ বলতে কবি কাকে বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকটিতে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার যে বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘সাম্যবাদী’ কবিতা উভয়ের মূলসুর এক ও অভিন্ন।”মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। ১



১১ নং প্রশ্নের উত্তর

 শাক্যমুনি হলেন বৌদ্ধধর্ম দর্শনের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ।

 ‘বাঁশির কিশোর’ বলতে কবি সত্য, ন্যায় ও প্রেমের যুগাবতার শ্রীকৃষ্ণকে বুঝিয়েছেন।
 হিন্দু ধর্মানুসারে বাল্যকালে মথুরার বৃদ্ধাবনে শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁর শৈশব-কৈশোর কাটান, তখন বাঁশি বাজানো ছিল তাঁর অন্যতম প্রিয় বিনোদন। শ্রীকৃষ্ণের এ বাঁশি বাজানো ও বাঁশিপ্রীতিকে উপলক্ষ করে বৈষ্ণব সাহিত্যের এক বিশাল ভাণ্ডার সৃষ্টি হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির সুরে মানুষ তো বটেই, পশু-পাখি পর্যন্ত বিমোহিত ও প্রেমরসে আপ্লুত হয়ে উঠত। এই শ্রীকৃষ্ণকেই কবি ‘বাঁশির কিশোর’ বলেছেন।

 উদ্দীপকটিতে ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় বর্ণিত জাত-পাত-ধর্ম-বর্ণ ও নানা স¤প্রদায়ে বিভক্ত বাইরের মানুুষের চেয়ে অন্তরের অন্তস্থলের নিভৃত কোণে বাস করা মানবিক হৃদয়সম্পন্ন মানুষের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
 মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষকে বিবেক-বিবেচনা ও বুদ্ধি সহকারে অন্যান্য জীব থেকে আলাদারূপে সৃষ্টি করেছেন। সেজন্য মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। পাপ-পুণ্য, ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় এটা মানুষের মনই নির্ধারণ করে।
 উদ্দীপকে বলা হয়েছে, প্রতিটি মানুষের মনের মন্দিরে বসবাস করেন মহান সৃষ্টিকর্তা। যেখানে সৃষ্টিকর্তার আবাস, তার থেকে উপযুক্ত পবিত্র কোনো উপাসনালয় থাকতে পারে না। মনের মন্দিরেই স্রষ্টার প্রতি আরাধনা হয় নিগূঢ়ভাবে। তাই জাগতিক যত মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা থাকুক না কেন হৃদয়ের স্থান সবার উপরে। উদ্দীপকের এ বক্তব্য ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মাঝের ও শেষের দিকের কয়েকটি পঙ্ক্তির প্রতি গুরুত্বারোপ করে, যেখানে মানুষের হৃদয়-মনকে সকলের দেবতার বিশ্ব-দেউল বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, “এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।” ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মানবের অন্তঃকরণের পরিশুদ্ধতার প্রতি, আন্তরিকতার প্রতি যে আবেগ, তার প্রতিই প্রদত্ত উদ্দীপকে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

 “উদ্দীপক ও ‘সাম্যবাদী’ কবিতা উভয়ের মূলসুর এক ও অভিন্ন।” প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ নয়।
 মানুষ মন্দির অথবা মসজিদে যায় স্রষ্টার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য। কিন্তু মন যদি অপবিত্র থাকে তাহলে কঠোর আরাধনা বা প্রার্থনা করেও স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করা যায় না। এজন্য সর্বপ্রথম দরকার মনের পবিত্রতা, যার দ্বারা স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব।
 উদ্দীপকে বলা হয়েছে, মানুষের হৃদয়ই হচ্ছে সমস্ত উপাসনালয়ের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান। কেননা, প্রতিটি মানুষের মনের মন্দিরে বসবাস করেন মহান সৃষ্টিকর্তা। যেখানে সৃষ্টিকর্তার আবাস, তার থেকে পবিত্র কোনো উপাসনালয় থাকতে পারে না। উদ্দীপকের এ বক্তব্যের সাথে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার মধ্যমাংশ ও শেষাংশের দিকের দু-একটি পঙ্ক্তির মিল রয়েছে। যেখানে মানুষের মানবাত্মাপূর্ণ হৃদয়-মনকে সকলের দেবতার বিশ্ব-দেউল বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে-“এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।” কিন্তু এ রকম দু-একটি পঙ্ক্তিই ‘সাম্যবাদী’ কবিতার পরিপূর্ণ অবয়ব বা মূলসুর নয়।
 ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় মূলত জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র ও নানা স¤প্রদায়ে বিভক্ত মানবসমাজের ঐক্য, সমতা এবং এর প্রয়োজনে নিজ সত্তার অনুসন্ধান ও আবিষ্কারকে তুলে ধরা হয়েছে। আলোচনা করা হয়েছে বিভিন্ন জাতি-ধর্মের মহান প্রবর্তকগণের মহান শিক্ষা, কীর্তি ও সাধনার কথা। প্রদত্ত উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার এসব বিষয় আসে নি। যে কারণে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা চলে না।

ক জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
১. ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটির রচয়িতা কে?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম।
২. কাজী নজরুল ইসলাম কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
৩. কাজী নজরুল ইসলাম পশ্চিমবঙ্গের কোন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
৪. কাজী নজরুল ইসলাম কোন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
৫. চুরুলিয়া কোন মহকুমার অন্তর্গত?
উত্তর : চুরুলিয়া আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত।
৬. কাজী নজরুল ইসলামের পিতার নাম কী?
উত্তর : কাজী ফকির আহমদ।
৭. কাজী নজরুল ইসলাম কত বছর বয়সে পিতাকে হারান?
উত্তর : আট বছর বয়সে পিতাকে হারান।
৮. কাজী নজরুল ইসলাম কত বঙ্গাব্দে নিম্ন প্রাইমারি পাস করেন।
উত্তর : ১৩১৬ বঙ্গাব্দে নিম্ন প্রাইমারি পাস করেন।
৯. কত বছর বয়সে লেটো গানের দলে যোগ দেন?
উত্তর : বারো বছর বয়সে লেটো গানের দলে যোগ দেন।
১০. কাজী নজরুল ইসলাম কত খ্রিস্টাব্দে বাঙালি পল্টনে যোগদান করেন?
উত্তর : ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বাঙালি পল্টনে যোগদান করেন।
১১. কাজী নজরুল ইসলাম কী হিসেবে বাঙালি পল্টনে যোগদান করেন?
উত্তর : একজন সৈনিক হিসেবে বাঙালি পল্টনে যোগদান করেন।
১২. কাজী নজরুল ইসলাম কত খ্রিস্টাব্দে মস্তিষ্কের ব্যাধিতে আক্রান্ত হন?
উত্তর : ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে মস্তিষ্কের ব্যাধিতে আক্রান্ত হন।
১৩. কাজী নজরুল ইসলামকে কখন ঢাকায় আনা হয়?
উত্তর : বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকায় আনা হয়।
১৪. কোন কবিকে বাংলাদেশের ‘জাতীয় কবির’ মর্যাদায় ভূষিত করা হয়?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলামকে।
১৫. ‘বাউণ্ডেলের আত্মকথা’ গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
উত্তর : ‘সওগাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
১৬. কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কবিতার নাম কী?
উত্তর : প্রথম কবিতার নাম ‘মুক্তি’।
১৭. ‘মুক্তি’ কবিতাটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
উত্তর : ‘বঙ্গীয় মুসলমান পত্রিকায়’ প্রকাশিত হয়।
১৮. ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি কত বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়?
উত্তর : ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি ১৩২৮ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়।
১৯. ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
উত্তর : ‘বিজলী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
২০. ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থটি কার রচিত?
উত্তর : ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থটি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত।
২১. ‘বাঁধনহারা’ উপন্যাসটি কার রচিত?
উত্তর : ‘বাঁধনহারা’ উপন্যাসটি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত।
২২. কাজী নজরুল ইসলাম কত সালে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হন?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৬০ সালে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হন।
২৩. কাজী নজরুল ইসলাম কোথায় মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
২৪. কাজী নজরুল ইসলাম কত খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
২৫. ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি কীসের গান গেয়েছেন?
উত্তর : ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি সাম্যের গান গেয়েছেন।
২৬. সকল কেতাব ও কালের জ্ঞান কোথায় রয়েছে?
উত্তর : সকল কেতাব ও কালের জ্ঞান মানুষের মধ্যে রয়েছে।
২৭. কবির মতে, এ হৃদয়ের চেয়ে বড় কী নেই?
উত্তর : কবির মতে, এ হৃদয়ের চেয়ে বড় মন্দির-কাবা নেই।
২৮. কোরানের সাম-গান কে গেয়েছেন?
উত্তর : কোরানের সাম-গান হযরত মুহাম্মদ (স.) গেয়েছেন।
২৯. আরব-দুলাল কোথায় বসে আহŸান শুনতেন?
উত্তর : আরব-দুলাল কন্দরে বসে আহŸান শুনতেন।
৩০. কে মহা-বেদনার ডাক শুনতেন?
উত্তর : শাক্যমুনি মহা-বেদনার ডাক শুনতেন।
৩১. ‘পণ্ডশ্রম’ অর্থ কী?
উত্তর : ‘পণ্ডশ্রম’ অর্থ বিফল পরিশ্রম।
৩২. বিভিন্ন যুগে অবতীর্ণ মহাপুরুষদের কী বলা হয়?
উত্তর : বিভিন্ন যুগে অবতীর্ণ মহাপুরুষদের যুগাবতার বলা হয়।
৩৩. বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক ও প্রচারক কে?
উত্তর : বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক ও প্রচারক গৌতম বুদ্ধ।
৩৪. মুসলমান, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের কাছে সমভাবে সম্মানিত পুণ্যস্থান কোনটি?
উত্তর : সমভাবে সম্মানিত পুণ্যস্থান জেরুজালেম।
৩৫. ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতা?
উত্তর : ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটি ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতা।
৩৬. শ্রীকৃষ্ণ কোন ধর্মের অনুসারীদের অবতার পুরুষ?
উত্তর : শ্রীকৃষ্ণ সনাতন ধর্মের অনুসারীদের অবতার পুরুষ।
৩৭. শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা কার মুখনিঃসৃত বাণী?
উত্তর : শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী।

খ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
১. কবি ‘সাম্যের গান’ গেয়েছেন কেন?
উত্তর : কবি মানুষকে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে ‘সাম্যের গান’ গেয়েছেন।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাদের মাঝে কোনো হিংসা-ভেদাভেদ-ঝগড়া-মারামারি থাকা উচিত নয়। মানুষকে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে কবি অসা¤প্রদায়িকতাকে সমর্থন করেছেন। মানুষের বড় পরিচয় সে মানুষ। এ বিষয়টিকে উপলব্ধি করে একটি হিংসা-বিদ্বেষহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কবি ‘সাম্যের গান’ গেয়েছেন।
২. “যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।”-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম ও খ্রিস্টানকে মানুষ হিসেবে সমান বিবেচনা করতে গিয়ে কবি কথাটি বলেছেন।
জাতের ওপর কোনো মানুষের হাত থাকতে পারে না। তাই একজন মানুষ হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ কিংবা মুসলিম স¤প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করতেই পারে। তাই বলে মানুষের মাঝে পার্থক্য থাকাটা শোভনীয় নয়। কারণ, মানুষের বড় পরিচয় সে মানুষ। এ বিষয়টি উপলব্ধি করাতেই কবি চরণটি ব্যবহার করেছেন।
৩. “কে তুমি?-পার্সী? জৈন? ইহুদী?” -কবি এগুলো বলেছেন কেন?
উত্তর : কবি মনে করেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবকিছু ভুলে মানুষের উচিত হবে মানুষকে মানুষ মনে করা।
পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতের স¤প্রদায় রয়েছে, ধর্ম রয়েছে এবং থাকবে-এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনচেতনাকে ধারণ করে মন্দিরতুল্য সত্য ‘মানুষের পরিচয়’ ভুলে যাওয়া আদৌ উচিত হতে পারে না। তাই কবি মানুষের চেতনায় সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের পরিচয় তুলে ধরতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র ভুলে যেতে বলেছেন।
৪. কনফুসিয়াস কেন বিখ্যাত?
উত্তর : কনফুসিয়াস চীনা মানুষের জীবন সংস্কারে অদ্বিতীয় ভূমিকা পালন করার জন্য বিখ্যাত।
কনফুসিয়াস একজন চীনা দার্শনিক ছিলেন। তিনি সব মানুষের মাঝে একতাবদ্ধ হওয়ার বাণী প্রচার করতেন এবং তাদের সচেতন করার উদ্দেশ্যে নানা উপদেশ দিতেন। তাঁর আদর্শে, চেতনায়, নিষ্ঠায় নির্দেশনায় চীন হয়ে ওঠে এক আদর্শ রাষ্ট্রে। তাই বলা যায়, তিনি চীনাদের মাঝে একতাবদ্ধ জীবন তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিলেন।
৫. “পেটে-পিটে, কাঁধে-মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও” চরণটিতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : কবি মানুষের হৃদয়কে বড় শিক্ষালয় হিসেবে বিবেচনা করেছেন বলে চরণটি ব্যবহার করেছেন। সব ধর্মের বড় বিষয় হলো কল্যাণ করা, উত্তম আচরণ করা, মিথ্যা না বলা ইত্যাদি। এ বিষয়গুলো সৃষ্টি হয় প্রত্যেকটি মানুষের হৃদয়বৃত্তকে ধারণ করে। শুধু বই-পুঁথি কাঁধে নিলে বা মগজে জ্ঞানকে ঢেলে মানুষ্যত্বের প্রকৃত বিষয়টি ফুটে ওঠে না। মানুষের জীবনাচরণের প্রকৃত শিক্ষালয় হলো তার হৃদয়। এ বিষয়টিকে বোঝাতেই কবি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।
৬. ‘কোরান-পুরান-বেদ-বেদান্ত’ চর্চাকে কবি কী হিসেবে দেখেছেন?
উত্তর : কোরান-পুরান-বেদ-বেদান্ত-এ বিষয়গুলো দ্বারা কবি অপ্রয়োজনীয় চর্চাকে বুঝিয়েছেন।
প্রত্যেকটি ধর্মগ্রন্থের মূল কথাই হলো পরোক্ষভাবে সত্য কথা বলা, সৎচিন্তা করা ইত্যাদি। আর এসব বিষয়ের সূচনাস্থান মনুষ্যহৃদয়। কবি বলেছেন এসব গ্রন্থ পড়ে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। কারণ মানুষের মনই সকল কল্যাণের মহৎকর্মের, সুখী জীবনের চিরন্তন উৎস। তাই কবি উলি­খিত ধর্ম-গ্রন্থ পড়াকে অপ্রয়োজনীয় চর্চা বলেছেন।
৭. ‘পণ্ডশ্রম’ কথাটি কবি কেন ব্যবহার করেছেন?
উত্তর : ‘পণ্ডশ্রম’ শব্দটিকে কবি এজন্য ব্যবহার করেছেন যে, এটি এমন শ্রমকে বোঝায় যা কোনো উপকারে আসে না।
অনেক ধর্মগ্রন্থ রয়েছে আমাদের সমাজে। সেগুলো পাঠ করে আমরা অনেক শ্রম দিচ্ছি ও সময় নষ্ট করছি। কবির মতে, এসব শ্রমের কোনো মূল্য নেই। কারণ, তিনি সকল কল্যাণকর ও উত্তম কাজের মূল স্থান হিসেবে হৃদয়কে জানতেন। তাই এসব ধর্মগ্রন্থ পড়া মানেই পণ্ডশ্রম।
৮. মগজে হানিছ শূল-বলতে কী বোঝ?
উত্তর : মানুষের হৃদয় হলো সকল পবিত্র ধর্মগ্রন্থের একমাত্র উৎসস্থান। এটিকে বোঝাতেই কবি চরণটি ব্যবহার করেছেন। মানুষ যেভাবে ধর্মগ্রন্থ পড়ছে, যেভাবে মগজে তাকে স্থান দেয়ার নানা চেষ্টা চালাচ্ছে তা আদৌ কল্যাণকর নয়। চাপ প্রয়োগ ও অনেক ধৈর্যে এগুলো পড়া মানেই মগজকে আঘাত করা। মানুষের হৃদয়ই বড় পবিত্র স্থান ও ধর্মের আধার। এ বিষয়টিকে বোঝাতেই কবি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।
৯. “তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান”-বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : কবি সকল কালের ও সকল কিতাবের জ্ঞান হিসেবে মানুষের চিত্তকে উলে­খ করেছেন। পৃথিবীতে অসংখ্য ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মের স্থান রয়েছে। সেগুলোতে নিত্যই আমরা যাই ও জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করি। কবি মনে করেন এর কোনো মানে হয় না। কারণ মানুষের হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো ধর্মীয় গ্রন্থ ও জ্ঞানের আধার থাকতে পারে না। এ বিষয়টিকে বর্ণনা করতেই কবি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।
১০. মানুষের মাঝেই সকল ধর্ম কথাটি কেন বলা হয়েছে?
উত্তর : মানুষের বিবেক থাকার দরুনই সকল ধর্ম মানুষের মাঝে কথাটি বলা হয়েছে।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তার বিবেক থাকার কারণে সে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা। বিবেক-বুদ্ধির মাধ্যমেই সকল ধর্ম-অধর্মকে অনুধাবন করা যায়। মানুষের হৃদয় ধর্মের আধার। এ কারণেই বলা হয়েছে মানুষের মাঝেই সকল ধর্ম।
১১. “তোমার হৃদয় বিশ্ব-দেউল সকলের দেবতার।” -কেন বলা হয়েছে?
উত্তর : প্রতিটি মানুষের মাঝে দেবতার অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে কবি চরণটি ব্যবহার করেছেন।
মানুষের হৃদয় যেমন মন্দির তেমনি দেবতাদের আশ্রয়স্থল। একজন ইচ্ছা করলেই কল্যাণকর কাজ বা অকল্যাণকর কাজ করতে পারে। এটি তার একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। বিবেক-বুদ্ধি দ্বারাই মানুষের ভালো বা মন্দ কাজ সংঘটিত হয়। কবির মতে, বিবেকই হলো মানুষের মাঝে অবস্থানরত দেবতা। প্রশ্নোক্ত চরণটি দ্বারা কবি এ বিষয়টিকেই বুঝিয়েছেন।
১২. “কেন খুঁজে ফের দেবতা-ঠাকুর মৃত-পুঁথি-কঙ্কালে?”-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মানুষের হৃদয়েই যে দেবতাদের আশ্রয়স্থল এ বিষয়টিকে বোঝাতেই কবি চরণটি ব্যবহার করেছেন।
মানুষের বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। তাঁরা সবসময় নির্জীব মৃত ও কঙ্কালতুল্য ধর্মগ্রন্থের মাঝে দেবতাদের খুুঁজতে থাকেন নিরন্তন। সেখানে যে আদৌ দেবতাদের অস্তিত্ব মাত্রও নেই এ বিষয়টি আদৌ উপলব্ধি করতে জানল না। সেই জড় পুঁথিতে দেবতা থাকেন না; থাকেন মানুষের হৃদয়ে। এ বিষয়টি বোঝাতেই কবি এ কথাটি বলেছেন।
১৩. “এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।” কেন?
উত্তর : কবি মানুষের হৃদয়কে পবিত্রতম স্থান হিসেবে উলে­খ করতেই এটি বলেছেন।
পৃথিবীতে অসংখ্য পবিত্র স্থান যেখানে প্রত্যহ আমরা যাচ্ছি নিজেদের আত্মাকে পবিত্র করতে। অথচ আমাদের হৃদয়ই যে পবিত্রতম জায়গা সে সম্পর্কে আমরা অবগত নই। এই হৃদয়ের বিচারই বড় বিচার। হৃদয়ের মর্যাদার তুলনায় রাজমুকুটের মর্যাদা কিছুই না। এ বিষয়টিকে প্রকাশ করতেই কবি উক্তিটি করেছেন।
১৪. “এইখানে বসে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়। কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : হৃদয়ই যে সকল সত্যের আধার এ বিষয়টিকেই কবি চরণটিতে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
বিবেকবর্জিত মানুষ আদৌ সত্যের দিশারি হতে পারে না, দেখাতে পারে না সুখী-সুন্দর জীবনের উৎস। মুসা ও ঈসা আল­াহর নবি ছিলেন। তাঁরা সদা সত্য ও কর্তব্যকে হৃদয়ের আসনে সমাসীন করেই মানুষের মাঝে তুলে ধরলেন সত্যের পরিচয়। তাঁরা মনে করতেন বিধাতার আসনই সত্য, আর সত্যের স্থানই হলো মনুষ্য হৃদয়। সত্য হৃদয়রাজকে উপস্থাপন করতেই কবি মুসা ও ঈসার প্রসঙ্গ এনেছেন।
১৫. “এই মাঠে হল মেষের রাখাল নবীরা খোদার মিতা।”- বলতে কী বুঝ?
উত্তর : সত্য চেতনা, সত্য জীবন ও সত্য হৃদয়কে তুলে ধরতেই কবি চরণটি ব্যবহার করেছেন।
আল­াহর নবিরা সত্য পথকে অবলম্বন করতেন। তারা হৃদয় মন্দিরকে পবিত্র রেখেছেন। ফলে আল­াহর সাথে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও গড়ে ওঠে। তাদের সত্য হৃদয়ই তাদের জীবনাচরণকে ফুলতুল্য পবিত্র মন্দির করেছে। সততার বিশ্বাসের হৃদয়কে উপস্থাপন করতেই প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।
১৬. শাক্যমুনি সিংহাসন ত্যাগ করলেন কেন?
উত্তর : মানুষের আর্তনাদে হৃদয় কেঁদে ওঠায় তাদের সহযোগিতার নিমিত্তে শাক্যমুনি সিংহাসন ত্যাগ করলেন।
যেকোনো বিবেকবান ব্যক্তি ইচ্ছা করলেই মানুষের দুঃখ-কষ্টে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেন। শাক্যমুনি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি মানুষের দুঃখ ও কষ্ট অনুভব করে সত্যের পথে নেমে এসে দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ান। এটি তার পক্ষে সত্য-সুন্দর সফল হৃদয়ের জন্যই সম্ভব হয়েছিল।
১৭. “এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।”-কবি এটি কেন বলেছেন?
উত্তর : মানুষের হৃদয়ই সবচেয়ে পবিত্র উপাসনালয়-এ বিষয়টিকে অনুধাবন করাতে কবি চরণটি ব্যবহার করেছেন।
একমাত্র বিবেকী শক্তিই মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীবের মর্যাদায় ভূষিত করেছে। সে চাইলেই কল্যাণকর কাজ করতে পারে, আবার অকল্যাণকর কাজও করতে পারে। মানুষের মন যেহেতু পবিত্রতম উপাসনালয়, সেহেতু দয়ার সমুদ্র তার হৃদয়। সে চাইলেই অন্যদের ক্ষমা ও উপকার করতে পারে। মানুষের মহৎ হৃদয়কে তুলে ধরতে কবি প্রশ্নোক্ত চরণটি ব্যবহার করেছেন।

 

Share to help others:

Leave a Reply