নবম দশম শ্রেণির রসায়ন ষষ্ঠ অধ্যায় মোলের ধারণা ও রাসায়নিক গণনা

নবম দশম/এসএসসি রসায়ন ষষ্ঠ অধ্যায় মোলের ধারণা ও রাসায়নিক গণনা এর পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি,জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো।

এসএসসি রসায়ন ষষ্ঠ অধ্যায় মোলের ধারণা ও রাসায়নিক গণনা

এসএসসি রসায়ন ষষ্ঠ অধ্যায় পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি

মোল : কোনো মৌল বা যৌগের পারমাণবিক ভর বা আণবিক ভরকে গ্রামে প্রকাশ করলে তাকে ঐ মৌল বা যৌগের গ্রাম পারমাণবিক ভর বা গ্রাম আণবিক ভর বা একগ্রাম অণু বা একগ্রাম মোল বা সংক্ষেপে মোল বলে। যেমন : নাইট্রোজেনের আণবিক ভর ২৮। আণবিক ভরকে গ্রামে প্রকাশ করলে নাইট্রোজেনের গ্রাম আণবিক ভর ২৮ গ্রাম হবে। এ ২৮ গ্রাম ভরের নাইট্রোজেনকে একগ্রাম অণু নাইট্রোজেন বা একগ্রাম মোল নাইট্রোজেন বা এক মোল নাইট্রোজেন বলা হয়।

অ্যাভোগেড্রো সংখ্যা : কোনো বস্তুর এক মোলে যত সংখ্যক অণু থাকে সেই সংখ্যাকে অ্যাভোগেড্রো সংখ্যা বলা হয়। একে ঘ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা দ্বারা এর মান ৬.০২ × ১০২৩ নির্ণীত হয়েছে। অ্যাভোগেড্রো সংখ্যাটি তাপমাত্রা ও চাপের ওপর নির্ভর করে না। কারণ তাপমাত্রা ও চাপের পরিবর্তনের সঙ্গে গ্যাসের আয়তনের পরিবর্তন হয় কিন্তু ভর এবং অণু সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না।
২.০১৬ গ্রাম H2, ২৮ গ্রাম N2, ৩২ গ্রাম O2, ১৭ গ্রাম NH3, ৪৪ গ্রাম CO2-এর মধ্যে অণুর সংখ্যা N = ৬.০২ × ১০২৩
⇒ প্রমাণ তাপমাত্রা ও চাপ : রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে ২৫0C তাপমাত্রাকে প্রমাণ তাপমাত্রা এবং ১atm বায়ুমণ্ডলীয় চাপকে প্রমাণ চাপ বলে।

⇒ মোলার আয়তন : নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে, এক মোল পরিমাণ পদার্থের আয়তনকে গ্যাসটির মোলার আয়তন বলে। প্রমাণ তাপমাত্রা ও চাপে সব গ্যাসের (মৌলিক বা যৌগিক) মোলার আয়তন ২২.৪ লিটার।

⇒ স্থূল সংকেত : কোনো যৌগের অণুতে বিদ্যমান মৌলসমূহের পরমাণুগুলোর সংখ্যা যে ক্ষুদ্রতম পূর্ণসংখ্যার অনুপাতে আছে, তার সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে যৌগের স্থূল সংকেত বলা হয়। যেমন : বেনজিনে (C6H6) কার্বন (C) ও হাইড্রোজেন (H) পরমাণুর সর্বনিম্ন পূর্ণসংখ্যার অনুপাত ১ : ১। সুতরাং বেনজিনের স্থূল সংকেত CH। স্থূল সংকেত থেকে অণুতে কোনো মৌলের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না।

⇒ আণবিক সংকেত : যে সংকেত থেকে একটি মৌলের নির্দিষ্ট সংখ্যক পরমাণু অপর মৌলের কতটি পরমাণুর সাথে যুক্ত হয় তা জানা যায়, সেই সংকেতকে আণবিক সংকেত বলে।

⇒ গ্রাম পারমাণবিক ভর : কোনো মৌলের পারমাণবিক ভরকে গ্রামে প্রকাশ করলে তাকে ওই মৌলের গ্রাম পারমাণবিক ভর বলে। যেমন : কার্বনের পারমাণবিক ভর ১২। সুতরাং, ১২ গ্রাম কার্বনে ১ গ্রাম কার্বন পরমাণু আছে।

⇒ গ্রাম আণবিক ভর : কোনো মৌল বা যৌগের আণবিক ভরকে গ্রামে প্রকাশ করলে তাকে মৌল বা যৌগের গ্রাম আণবিক ভর বলে।
যেমন : কার্বন ডাইঅক্সাইডের আণবিক ভর ৪৪। কাজেই কার্বন ডাইঅক্সাইডের গ্রাম আণবিক ভর ৪৪ গ্রাম।

⇒ মোলার দ্রবণ : নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো দ্রবণের প্রতি লিটার আয়তনে এক মোল দ্রব দ্রবীভ‚ত থাকলে সে দ্রবণকে মোলার দ্রবণ বলে।

⇒ দ্রবণ : যেসব মিশ্রণে উপাদানগুলো সুষমভাবে বণ্টিত থাকে এবং একটি উপাদান থেকে আরেকটিকে সহজে আলাদা করা যায় না, তাদেরকে দ্রবণ বা সমসত্ত¡ মিশ্রণ বলা হয়।

⇒ দ্রবণের অংশ : প্রত্যেক দ্রবণের দুটি অংশ থাকে Ñ দ্রব এবং দ্রাবক। দ্রবণের মধ্যে যে উপাদানটি কম পরিমাণে থাকে তাকে দ্রব আর যে উপাদানটি বেশি পরিমাণে থাকে তাকে দ্রাবক বলে। যেমন : পানিতে চিনি মিশালে একটি দ্রবণ তৈরি হয়। এখানে চিনি দ্রব, পানি দ্রাবক এবং মিশানোর পর যা তৈরি হলো তা দ্রবণ

⇒ মোলারিটি : নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় প্রতি লিটার দ্রবণে দ্রবীভূত দ্রবের মোলসংখ্যাকে দ্রবণের মোলারিটি বলে। একে M দ্বারা প্রকাশ করা হয়। মোলারিটি দ্রবণের ঘনমাত্রা প্রকাশের একটি রীতি।

⇒ শতকরা সংযুতি : কোনো যৌগের শতকরা সংযুতি বলতে তাতে বিদ্যমান মৌলসমূহ কী অনুপাতে আছে তা বোঝায়। সাধারণত ভর হিসেবে কোনো মৌলের পরিমাণ শতকরা কত ভাগ তাই প্রকাশ করা হয় অর্থাৎ যৌগের ১০০ ভাগ ভরের মধ্যে উপাদান মৌলসমূহের আপেক্ষিক পরিমাণকে শতকরা সংযুতি বলা হয়। শতকরা সংযুতি নির্ণয়ের দুটি ধাপ আছে। প্রথমে বস্তুর আণবিক ভর নির্ণয় করতে হয়। এরপর মৌলের ভরকে যৌগের মোট আণবিক ভর দ্বারা ভাগ করে ১০০ দ্বারা গুণ করে মৌলের সংযুতি নির্ণয় করতে হয়

⇒ রাসায়নিক সমীকরণ : বিক্রিয়ক এবং উৎপাদ পদার্থের পরমাণুগুলোর মধ্যে সমতা বজায় রেখে প্রতীক ও সংকেতের সাহায্যে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়াকে সংক্ষেপে প্রকাশ করার পদ্ধতিকে রাসায়নিক সমীকরণ বলে।
যেমন : জিংক কপার সালফেটের সাথে বিক্রিয়া করে জিংক সালফেট ও কপার উৎপন্ন করে। এ বিক্রিয়াকে নিম্নোক্ত সমীকরণের সাহায্যে প্রকাশ করা হয় :

Zn + CuSO4 = ZnSO4 + Cu

⇒ Stoichiometry: রসায়নে অণু, পরমাণু, বিক্রিয়ক, উৎপাদ ইত্যাদির হিসাব নিকাশকে Stoichiometry বলে।

⇒ রাসায়নিক বিক্রিয়া : যে প্রক্রিয়ায় এক বা একাধিক ভিন্নধর্মী পদার্থ পরিবর্তিত হয়ে এক বা একাধিক ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থ উৎপন্ন করে তাকে রাসায়নিক বিক্রিয়া বলে। রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে পদার্থের অণুর গঠনের পরিবর্তন ঘটে কিন্তু পদার্থের মূল উপাদান এবং পরমাণু সংখ্যার কোনো পরিবর্তন ঘটে না।

⇒ বিক্রিয়ক এবং উৎপাদ : রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পদার্থ বা পদার্থগুলোকে বিক্রিয়ক বলে। বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থগুলোকে উৎপাদ বলা হয়। যেমন : জিংক অক্সাইডের সঙ্গে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের বিক্রিয়ায় জিংক ক্লোরাইড এবং পানি উৎপন্ন হয়।

ZnO + 2HCl = ZnCl2 + H2O

এ বিক্রিয়ায় ZnO ও HCl হলো বিক্রিয়ক আর ZnCl2 ও H2O হলো উৎপাদ।

⇒ লিমিটিং বিক্রিয়ক : কোনো একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া সংগঠনকালে একাধিক বিক্রিয়কের মধ্যে যে বিক্রিয়ক অবশিষ্ট থাকে না, তাকে লিমিটিং বিক্রিয়ক বলে। বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদের পরিমাণ হিসাব করার সময় লিমিটিং বিক্রিয়কের পরিমাণ থেকে হিসাব করা হয়।

⇒ অ্যানালার : সবচেয়ে বিশুদ্ধ রাসায়নিক পদার্থকে অ্যানালার বলে। এদের বিশুদ্ধতা প্রায় ৯৫.৫% পর্যন্ত হয়। এদের গবেষণার সময় বিশ্লেষণীয় কাজে ব্যবহার করা হয়।

⇒ তুঁতে : কপার সালফেটের আর্দ্র কেলাসকে তুঁতে বলে। যার সংকেত CuSO4.5H2O। এর বর্ণ নীল। আমরা বাজারে কাপড়ের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য যে নীল কিনি তাই তুঁতে। একে বøু ভিট্রিয়লও বলা হয়।

⇒ কেলাস পানি : যে পানি কোনো একটি যৌগের নির্দিষ্ট কেলাস গঠনের জন্য অপরিহার্য তাকে কেলাস পানি বলে। যেমন : তুঁতের কেলাস গঠনের জন্য ৫ অণু পানি অপরিহার্য। এজন্য তুঁতের সংকেত CuSO4.5H2O।

এসএসসি রসায়ন ষষ্ঠ অধ্যায় জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন \ ১ \ অণুর ধারণা সর্বপ্রথম কে প্রবর্তন করেন?
উত্তর : বিজ্ঞানী অ্যাভোগেড্রো সর্বপ্রথম অণুর ধারণা প্রবর্তন করেন।
প্রশ্ন \ ২ \ ২.০১৬ গ্রাম H2-এ অণুর সংখ্যা ৬.০২ × ১০২৩ হলে ৩২ গ্রাম O2-এ অণুর সংখ্যা কত হবে?
উত্তর : ৬.০২ × ১০২৩
প্রশ্ন \ ৩ \ রাসায়নিক বিক্রিয়া সমতা চিহ্নের পরের অংশকে কী বলে?
উত্তর : রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমতা চিহ্নের পরের অংশকে উৎপাদ বলে।
প্রশ্ন \ ৪ \ পরমাণুর ভরকে গ্রাম পারমাণবিক ভর দিয়ে ভাগ করা হলে কী পাওয়া যায়?
উত্তর : মোলসংখ্যা।
প্রশ্ন \ ৫ \ জলীয় দ্রবণ কাকে বলে?
উত্তর : দ্রবণে দ্রাবক হিসেবে পানি ব্যবহৃত হলে তাকে জলীয় দ্রবণ বলে।
প্রশ্ন \ ৬ \ অ্যানালার কী?
উত্তর : সবচেয়ে বিশুদ্ধ রাসায়নিক পদার্থকে অ্যানালার বলে।
প্রশ্ন \ ৭ \ ১ মোলার দ্রবণ কাকে বলে?
উত্তর : এক লিটার দ্রবণে ১ মোল পরিমাণ দ্রব দ্রবীভ‚ত থাকলে তাকে ১ মোলার দ্রবণ বলে।
প্রশ্ন \ ৮ \ অ্যাভোগেড্রো কোন দেশের নাগরিক ছিলেন?
উত্তর : অ্যাভোগেড্রো ইটালির নাগরিক ছিলেন।
প্রশ্ন \ ৯ \ জীববিজ্ঞানে মোল কী?
উত্তর : জীববিজ্ঞানে মোল হলো লোমবিশিষ্ট ক্ষুদ্র প্রাণী।
প্রশ্ন \ ১০ \ পদার্থের আয়তন কিসের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর : পদার্থের আয়তন চাপ ও তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে।
প্রশ্ন \ ১১ \ স্থূল সংকেত থেকে আণবিক সংকেত নির্ণয় করতে হলে কী জানা থাকতে হয়?
উত্তর : স্থূল সংকেত থেকে আণবিক সংকেত নির্ণয় করতে হলে যৌগটির আণবিক ভর জানা থাকতে হয়।
প্রশ্ন \ ১২ \ যৌগে মৌলসমূহের শতকরা সংযুতির সমষ্টি কত হয়?
উত্তর : যৌগে মৌলসমূহের শতকরা সংযুতির সমষ্টি হয় ১০০।
প্রশ্ন \ ১৩ \ রাসায়নিক বিক্রিয়াকে সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য কী ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : রাসায়নিক বিক্রিয়াকে সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য রাসায়নিক সমীকরণ ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন \ ১৪ \ বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদের পরিমাণ হিসাব করার সময় কিসের পরিমাণ থেকে হিসাব করা হয়?
উত্তর : বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদের পরিমাণ হিসাব করার সময় লিমিটিং বিক্রিয়কের পরিমাণ থেকে হিসাব করা হয়।
প্রশ্ন \ ১৫ \ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কী পরিমাণ উৎপাদ কম পাওয়া যায় তা কিসের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়?
উত্তর : রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কী পরিমাণ উৎপাদ কম পাওয়া যায় তা উৎপাদের শতকরা পরিমাণের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
প্রশ্ন \ ১৬ \ পানিবিহীন কপার সালফেটের বর্ণ কী?
উত্তর : পানিবিহীন কপার সালফেটের বর্ণ সাদা।
প্রশ্ন \ ১৭ \ রাসায়নিক দ্রব্য পরিমাপ করতে কোন যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়?
উত্তর : রাসায়নিক দ্রব্য পরিমাপ করতে নিক্তি যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়।
প্রশ্ন \ ১৮ \ রাসায়নিক বিক্রিয়া কোন নীতি অনুসরণ করে?
উত্তর : রাসায়নিক বিক্রিয়া ভরের সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করে।
প্রশ্ন \ ১৯ \ এক মোলার দ্রবণ কী?
উত্তর : এক মোলার দ্রবণের ক্ষেত্রে, এক লিটার বা এক ফস৩ দ্রবণে এক মোল পরিমাণ দ্রব দ্রবীভ‚ত থাকে।
প্রশ্ন \ ২০ \ শতকরা সংযুতি থেকে কীভাবে স্থূল সংকেত নির্ণয় করা হয়?
উত্তর : কোনো যৌগের অণুতে পরমাণুসমূহের শতকরা সংযুতিকে নিজ নিজ আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর দ্বারা ভাগ করে ভাগফলের অনুপাত থেকে স্থূল সংকেত নির্ণয় করা হয়।
প্রশ্ন \ ২১ \ রাসায়নিক সমীকরণ কী?
উত্তর : রাসায়নিক সমীকরণ হলো প্রতীক, সংকেত ও চিহ্ন দ্বারা রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে সংক্ষেপে প্রকাশ।
প্রশ্ন \ ২২ \ বিক্রিয়ক এবং উৎপাদের ভৌত অবস্থা কীভাবে লেখা হয়?
উত্তর : বিক্রিয়ক এবং উৎপাদের ভৌত অবস্থা যৌগের ডানপার্শ্বে প্রথম বন্ধনীর মধ্যে লেখা হয়।
প্রশ্ন \ ২৩ \ সমতাকৃত সমীকরণ থেকে কী হিসাব করা যায়?
উত্তর : রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমতাকৃত সমীকরণ থেকে বিক্রিয়ক ও উৎপাদের অণুর সংখ্যা, মোলসংখ্যা এবং ভরের হিসাব করা যায়।
প্রশ্ন \ ২৪ \ বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদের পরিমাণ কীভাবে হিসাব করা যায়?
উত্তর : বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদের পরিমাণ হিসাব করার সময় লিমিটিং বিক্রিয়কের পরিমাণ থেকে হিসাব করা হয়।
প্রশ্ন \ ২৫ \ তুঁতেকে উত্তপ্ত করলে কী হয়?
উত্তর : তুঁতেকে উত্তপ্ত করলে পানি বাষ্পীভ‚ত হয় এবং নীল বর্ণ দূরীভ‚ত হয়ে সাদা বর্ণে পরিণত হয়।

এসএসসি রসায়ন ষষ্ঠ অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন \ ১ \ ২H2(g) + O2(g) = ২H2O(g) এ সমীকরণ থেকে কী কী তথ্য জানা যায়?
উত্তর : ২H2(g) + O2(g) = ২H2O(g) এ সমীকরণ থেকে নিচের বিষয়গুলো জানা যায়
১. বিক্রিয়ায় H2, O2 এবং H2O- এর ভৌত অবস্থা জানা যায়।
২. বিক্রিয়াতে অংশগ্রহণকারী অণু বা মৌলসমূহের এবং বিক্রিয়া থেকে উৎপন্ন যৌগের নাম, প্রতীক, সংকেত, মোল সংখ্যা এবং শতকরা সংযুতি জানা যায়।
৩. বিক্রিয়কসমূহের অনুপাত এবং বিক্রিয়ক ও উৎপাদের অনুপাত জানা যায়।

প্রশ্ন \ ২ \ নিচের সংকেতগুলোর মধ্যে কোনটি শুদ্ধ এবং কোনটি অশুদ্ধ তা বের কর এবং অশুদ্ধ সংকেতগুলো শুদ্ধ করে লেখ :

  1. H2S, ii. H2­Cl, iii. Na(OH)2, iv. NaCO3, v. H(NO3)2,
    vi. CaHCO3, vii. (NH4)2SO4, viii. Fe2(SO4)3, ix. NaCl, x. Ca2Cl.

উত্তর : শুদ্ধ সংকেত :

  1. H2S, vii. (NH4)2SO4, viii. Fe2(SO4)3 ix. NaCl.

অশুদ্ধ সংকেত এবং এর শুদ্ধ রূপ :

অশুদ্ধ সংকেত অশুদ্ধ সংকেতের শুদ্ধ রূপ
ii.     H2Cl ii.     HCl
iii.    Na(OH)2 iii.    NaOH
iv.    NaCO3 iv.    Na2CO3
v.     H(NO3)2 v.     HNO3
vi.    CaHCO3 vi.    Ca(HCO3)2
x.     Ca2Cl x.     CaCl2

 

প্রশ্ন \ ৩ \ অ্যাভোগেড্রো সংখ্যার তাৎপর্য লেখ।
উত্তর : অ্যাভোগেড্রো সংখ্যার তাৎপর্য নিম্নরূপ:
র. কোনো পদার্থের গ্রাম আণবিক ভর থেকে ঐ পদার্থের একটি অণুর ভর নির্ণয় করতে অ্যাভোগেড্রো সংখ্যা ব্যবহৃত হয়।
রর. কোনো মৌলের গ্রাম পারমাণবিক ভর থেকে একটি পরমাণুর ভর নির্ণয় করতে অ্যাভোগেড্রো সংখ্যা ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন \ ৪ \ অ্যাভোগেড্রো সংখ্যা অনুযায়ী আণবিক ভরের সংজ্ঞা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কোনো মৌল বা যৌগের ৬.০২ × ১০২৩ সংখ্যক অণুর ভর গ্রামে যত হয়, ভরের সেই সংখ্যাকে ওই মৌল বা যৌগের আণবিক ভর বলে। যেমন : ৬.০২ × ১০২৩ সংখ্যক অক্সিজেন অণু থাকে = ৩২ গ্রাম অক্সিজেনে।
∴ অক্সিজেনের আণবিক ভর = ৩২।

প্রশ্ন \ ৫ \ NTP তে ৫.৬ লিটার অ্যামোনিয়ার মধ্যে কয়টি ঐ পরমাণু ও কয়টি ঘ পরমাণু আছে?
উত্তর :

NTP তে ২২.৪ লিটার অ্যামোনিয়ার মধ্যে অণুর সংখ্যা = ৬.০২ × ১০২৩ টি
NTP তে ৫.৬ ”    ”    ”   ”   ” = ৬.০২ × ১০২৩ × ৫.৬২২.৪ টি
= ১.৫০৫ × ১০২৩ টি
আবার, ১টি NH3 অণুর মধ্যে তিনটি H পরমাণু আছে।
∴ H পরমাণুর সংখ্যা = ১.৫০৫ × ১০২৩ × ৩ টি
= ৪.৫১ × ১০২৩ টি
আবার, ১টি NH3 অণুতে ১টি N পরমাণু আছে।
∴N পরমাণুর সংখ্যা = ১.৫০৫ × ১০২৩ টি।

প্রশ্ন \ ৬ \ ২.৭ম তরল অ্যামোনিয়াকে বাষ্পীভূত হতে দিলে তা আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপে ৩.৫৫৭ litre আয়তন দখল করে। অ্যামোনিয়ার আণবিক ভর বের কর।
উত্তর : ৩.৫৫৭ litre অ্যামোনিয়া গ্যাসের ভর = ২.৭g
∴ ১ litre ” ” ” = ২.৭৩.৫৫৭ g
∴ ২২.৪ ” ” ” =( ২.৭ × ২২.৪)/৩.৫৫৭ g
= ১৭ম
যেহেতু আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপে ১ mole গ্যাসের আয়তন = ২২.৪ litre; তাই এক্ষেত্রে ১ mole অ্যামোনিয়া = ১৭g। অর্থাৎ, অ্যামোনিয়ার আণবিক ভর = ১৭।

প্রশ্ন \ ৭ \ আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপে ৫০g CO2 গ্যাসের আয়তন কত?
উত্তর : CO2 গ্যাসের আণবিক ভর = C এর পারমাণবিক ভর × ১ + O এর পারমাণবিক ভর × ২ = ১২ × ১ + ১৬ × ২ = ৪৪
∴CO2 গ্যাসের ১mole = ৪৪g
∴ আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপে ৪৪g CO2 এর আয়তন = ২২.৪ litre
∴ আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপে ৫০g CO2 এর আয়তন = (২২.৪ × ৫০)÷৪৪ litre
= ২৫.৪৫ litre

প্রশ্ন \ ৮ \ একটি পানির অণুর ভর কত?
উত্তর : পানির আণবিক ভর = ১৮।
আমরা জানি, সকল পদার্থের ১mole-এ অ্যাভোগেড্রো সংখ্যার (N) সমান সংখ্যক অর্থাৎ ৬.০২ × ১০২৩ টি অণু থাকে।
সুতরাং, ১ mole পানি = ১৮g পানি।
৬.০২ × ১০২৩ টি পানির অণুর ভর = ১৮g
∴ ১ ” ” ” ” = ১৮÷(৬.০২ × ১০২৩ )g
= ২.৯৯ × ১০–২৩g।

প্রশ্ন \ ৯ \ এক গ্রাম পানিতে কতটি অণু আছে?
উত্তর : পানির ১mole = ১৮g পানি
আমরা জানি, যে কোনো বস্তুর ১ mole পরিমাণে ৬.০২ × ১০২৩ সংখ্যক অণু বিদ্যমান
অর্থাৎ, ১৮ম পানিতে আছে = ৬.০২ × ১০২৩ টি অণু
∴ ১ম ” ” = (৬.০২ × ১০২৩)÷১৮
= ৩.৩৪৬ × ১০২৩ টি অণু

প্রশ্ন \ ১০ \ ১g হীরকে কয়টি কার্বন পরমাণু বিদ্যমান?
উত্তর : হীরক কার্বনের একটি রূপভেদ। কার্বনের পারমাণবিক ভর = ১২
সুতরাং ১mole হীরক বা কার্বন = ১২g কার্বন।
১২g হীরকে আছে = ৬.০২ × ১০২৩ টি কার্বন পরমাণু
∴ ১ ” ” = (৬.০২ × ১০২৩)১২ ” ” ”
= ৫.০২ × ১০২২ টি কার্বন পরমাণু।

প্রশ্ন \ ১১ \ [Fe2 (SO4)3] অণুতে মোট পরমাণুর সংখ্যা কত?
উত্তর : [Fe2(SO4)3] অণুটি Fe2 ও (SO4)3 দ্বারা গঠিত। Fe2 দ্বারা বোঝা যায় ২টি Fe পরমাণু। SO4 দ্বারা বোঝা যায় ১টি S এবং ৪টি O পরমাণু। সুতরাং , (SO4)3 দ্বারা বোঝা যায়, (১ + ৪) × ৩ অর্থাৎ ১৫টি পরমাণু।
অতএব, [Fe2(SO4)3]-তে মোট পরমাণুর সংখ্যা = ২ + ১৫ = ১৭ টি।

প্রশ্ন \ ১২ \ গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন হিসাব করার সময় চাপ ও তাপমাত্রা উল্লেখ করতে হয় কেন?
উত্তর : গ্যাসের আয়তন চাপ ও তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল বলে গ্যাসীয় পদার্থের চাপ ও তাপমাত্রা উল্লেখ করতে হয়।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা হ্রাস করলে পদার্থের আয়তনও বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। অপরদিকে, চাপ বৃদ্ধি করলে গ্যাসের আয়তন হ্রাস পায়। অর্থাৎ তাপমাত্রা ও চাপ পরিবর্তনে গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন পরিবর্তিত হয়। তাই গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন হিসাব করার সময় চাপ ও তাপমাত্রা উল্লেখ করতে হয়

প্রশ্ন \ ১৩ \ স্থূল সংকেত থেকে আণবিক সংকেত নির্ণয় করতে হলে আণবিক ভর প্রয়োজন হয় কেন?
উত্তর : যৌগের মোট আণবিক ভর তার স্থূল সংকেতের আণবিক ভরের সরল গুণিতক বলে স্থূল সংকেত থেকে আণবিক সংকেত নির্ণয় করতে হলে আণবিক ভর প্রয়োজন হয়।
স্থূল সংকেত দ্বারা যৌগের অণুতে বিদ্যমান পরমাণুসমূহের অনুপাত প্রকাশ পায়। পরমাণুসমূহের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় আণবিক সংকেত থেকে। অর্থাৎ স্থূল সংকেত CH হলে আণবিক সংকেত (CH)n। তাই যৌগের আণবিক ভর জানা থাকলেই কেবল হ এর মান নির্ণয় করে আণবিক সংকেত নির্ণয় করা যায়। এ কারণেই স্থূল সংকেত থেকে আণবিক সংকেত নির্ণয়ে আণবিক ভর প্রয়োজন হয়।

প্রশ্ন \ ১৪ \ লিমিটিং বিক্রিয়কের সাহায্যে বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদের পরিমাণ হিসাব করা হয় কীভাবে?
উত্তর : বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদের পরিমাণ হিসাব করার সময় লিমিটিং বিক্রিয়কের পরিমাণ থেকে হিসাব করা হয়।
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় একাধিক বিক্রিয়ক থাকলে, বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক মেপে সরবরাহ করার সময় সকল বিক্রিয়ককে প্রয়োজন অনুসারে সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। কিছু বিক্রিয়ক আগেই শেষ হয়ে যায়, কিছু অবশিষ্ট থেকে যায়। আমরা জানি, বিক্রিয়ার সময় একাধিক বিক্রিয়কের মধ্যে যে বিক্রিয়ক অবশিষ্ট থাকে না তাকে লিমিটিং বিক্রিয়ক বলে। অতএব, বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদের পরিমাণ হিসাব করার সময় লিমিটিং বিক্রিয়কের পরিমাণ থেকে হিসাব করা হয়।

প্রশ্ন \ ১৫ \ আণবিক সংকেতের তাৎপর্য লিখ।
উত্তর : কোনো যৌগের আণবিক সংকেত থেকে একটি মৌলের নির্দিষ্ট সংখ্যক পরমাণু অপর মৌলের কতটি পরমাণুর সাথে যুক্ত হয় তা জানা যায়।
কার্বনের একটি পরমাণু অক্সিজেনের দুইটি পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়ে CO2 অণু গঠিত হয়। এক মোল কার্বন পরমাণু দুই মোল অক্সিজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়ে এক মোল CO2 অণু গঠন করে। কোনো পদার্থে যুক্ত মৌলের ভর থেকে মোলসংখ্যা হিসাব করে আণবিক সংকেত নির্ণয় করা যায়।

প্রশ্ন \ ১৬ \ কার্বনের দহন প্রক্রিয়াটি কীভাবে ঘটে?
উত্তর : কার্বনকে বায়ুর অক্সিজেনের উপস্থিতিতে দহন করলে কার্বন (রা) ডাইঅক্সাইড উৎপাদ। বিক্রিয়ক কার্বন কঠিন, অক্সিজেন গ্যাসীয় এবং উৎপাদ কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসীয় পদার্থ।

প্রশ্ন \ ১৭ \ যৌগে মৌলের শতকরা সংযুতি কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
উত্তর : নির্দিষ্ট যৌগে মৌলের শতকরা সংযুতি নির্দিষ্ট হয়।
মৌলের বা কোনো নির্দিষ্ট অংশের শতকরা সংযুতি নির্ণয়ের জন্য যৌগের আণবিক সংকেত লিখে আপেক্ষিক আণবিক ভর নির্ণয় করতে হবে। অতঃপর পৃথকভাবে প্রতিটি মৌলের ভর এবং প্রয়োজনে নির্দিষ্ট অংশের ভর নির্ণয় করে যৌগে মৌলের শতকরা সংযুতি নির্ণয় করা যায়।

 

 

 

Leave a Reply