ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ২য় প্রবন্ধ রচনা

প্রবন্ধ রচনা
য় প্রবন্ধ কী : কোনো একটি বিষয়কে ভাব ও চিন্তার মধ্য দিয়ে ভাষায় প্রাণবন্ত করে প্রকাশ করাই হচ্ছে প্রবন্ধ।
য় প্রবন্ধের প্রকারভেদ : বিষয়ভেদে প্রবন্ধকে প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়।
যথাÑ ১. বর্ণনামূলক; ২. ঘটনামূলক; ও ৩. চিন্তামূলক।
য় প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন : প্রবন্ধ রচনার সময় কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করা প্রয়োজন। তাহলে প্রবন্ধের মান বৃদ্ধি পায় এবং পরীক্ষায় অধিক নম্বর পাওয়া যায়। এক্ষেত্রেÑ
১. প্রবন্ধের বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।
২. চিন্তাপ্রসূত ভাবগুলো অবশ্যই ধারাবাহিকভাবে সাজাতে হবে।
৩. প্রত্যেকটি ভাব উপস্থাপন করতে হবে পৃথক অনুচ্ছেদে।
৪. একই ভাব, তথ্য বা বক্তব্য বারবার উল্লেখ করা যাবে না।
৫. রচনার ভাষা হতে হবে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল।
৬. উপস্থাপিত তথ্যাবলি অবশ্যই নির্ভুল হতে হবে।
৭. বড় ও জটিল বাক্য যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে।
৮. নির্ভুল বানানে লিখতে হবে।
৯. সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ ঘটানো যাবে না।
১০. উপসংহারে সুচিন্তিত নিজস্ব মতামত উপস্থাপন করতে হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
ভূমিকা : বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি ভাষা সৈনিক। তিনি জাতির পিতা। বাঙালির অধিকার ও স্বতন্ত্র মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু করে এ দেশের গণ-মানুষের মুক্তির জন্য পরিচালিত সকল আন্দোলনের তিনিই ছিলেন প্রধান চালিকাশক্তি। তাঁর নেতৃত্বেই উনিশশো একাত্তর সনে আমরা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি এবং দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি বজ্রকণ্ঠের অধিকারী। তিনি সেই সৃষ্টি সুখের উল­াসে কাঁপা মহান পুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান। এ জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও আত্মত্যাগ চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।
জন্ম : বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চের এক শুভক্ষণে গোপালগঞ্জ (সাবেক ফরিদপুর) জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা-মাতা : শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শিক্ষা : বঙ্গবন্ধু ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন গোপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুল থেকে। তিনি বিএ পাস করেন কোলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।
নেতৃত্ব : তিনি ছাত্রজীবন থেকেই দেশ ও দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। ছাত্রজীবনেই তিনি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং সুভাষচন্দ্র বসুর সান্নিধ্য লাভ করেন ও রাজনীতি সংলগ্ন হয়ে ওঠেন। মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। তৎকালীন যেসব ছাত্র ও তরুণের প্রচেষ্টায় এ পরিষদ গঠিত হয় তাঁদের মধ্যে বিশিষ্ট ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ ভাষার দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হলে শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, কাজী গোলাম মাহবুবসহ অধিকাংশ ছাত্রনেতা গ্রেফতার হন। দীর্ঘকাল বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেন। ফলে বারবার তাঁকে জেল খাটতে হয়। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্র“য়ারি লাহোরে বিরোধী দলে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু পূর্ব-পাকিস্তানে বাঙালির সব ধরনের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য ৬ দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন। ৬ দফা আন্দোলনকে দমন করবার জন্য পাকিস্তানি শাসকরা শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
এই ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় পাকিস্তানি শাসকদের উদ্দেশ্য ছিল শেখ মুজিবুর রহমান ও সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দকে গোপন বিচারের মাধ্যমে তাদের ফাঁসি দেওয়া। এভাবে নেতৃত্বশূন্য করে আন্দোলন থামিয়ে দেওয়াই ছিল তাদের লক্ষ্য।
১৯৬৯ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের জোয়ারে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসন টিকে থাকতে পারেনি। ২২শে ফেব্র“য়ারি আইয়ুব খান আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে সব রাজবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। কারামুক্ত শেখ মুজিবকে ২৩শে ফেব্রয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বিশাল গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সমাবেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের শতকরা আশি ভাগ আসনে বিজয়ী হয়। কিন্তু তাঁকে সরকার গঠন করতে দেওয়া হয় না। বাধ্য হয়ে তিনি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন।
২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ও ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণ। নয় মাস যুদ্ধের পর ত্রিশ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় বাঙালির বিজয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনিই জাতিসংঘে বাংলায় প্রথম ভাষণ দান করেন। এভাবে শুধু বাঙালি জাতি নয়, বাংলা ভাষার মর্যাদাকে তিনি বিশ্বের মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
পরলোকগমন : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যদের আক্রমণে ও নিষ্ঠুর আঘাতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, এ জাতির প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। টুঙ্গিপাড়ায় পারিবারিক গোরস্তানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। যে মাটির সান্নিধ্যে ও যে প্রকৃতির পরিচর্যায় তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন, বেড়ে উঠেছিলেন, সেই মাটির সান্নিধ্যে, প্রকৃতির শীতল স্নেহে ও একান্ত স্পর্শে তিনি শেষশয্যা গ্রহণ করেছেন।
উপসংহার : জাতির মহান নেতা হতে হলে যে সমস্ত গুণের প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর তার সবই ছিল। তিনি ছিলেন সাহসী ও স্বাধীনতাপ্রিয়। সকল প্রকার নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং অধিকার অর্জনের সংগ্রামে আপোসহীন। কোনো প্রকার ভীতি কিংবা দ্বিধা তাঁকে কখনো বিচলিত করেনি। বাংলা ছিল তাঁর দেশ, বাংলা ছিল তাঁর ভাষা এবং তিনি নিজেকে বলতেন ‘আমি বাঙালি’। কবির উপলব্ধিই যথার্থ, কোনটি বাঙালির মনের কথা :
যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌরী, যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।
আমার প্রিয় খেলা
ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয় ও অভিজাত খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেটকে খেলার রাজাও বলা হয়। রেকর্ড ভাঙা এবং রেকর্ড গড়ার খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেট নিয়ে সমগ্র বিশ্বে এখন উত্তেজনা। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা প্রতিদিন বাড়ছে। আমার প্রিয় খেলা ক্রিকেট।
ক্রিকেটের জন্ম : কবে প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু হয় তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। তবে মনে করা হয় ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ইংল্যান্ডে ক্রিকেট খেলা আরম্ভ হয়। হাম্পসায়ারের অন্তর্গত হ্যাম্পারডন নামক স্থানে প্রথম ক্রিকেট দল গড়ে ওঠে। পরে তা সমগ্র ব্রিটেন এবং সকল ব্রিটিশ উপনিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশসহ অনেক দেশে ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
প্রকারভেদ : ক্রিকেট খেলা দুধরনের। একটি হলো ওয়ান ডে ম্যাচ বা একদিনের খেলা, অন্যটি টেস্ট ম্যাচ বা পাঁচ দিনের খেলা। এখন আবার শুরু হয়েছে টুয়েন্টি টুয়েন্টি ম্যাচ। বিশ্বে বিখ্যাত টেস্ট মর্যাদার দেশগুলো হলো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ।
উপকরণ : ক্রিকেট খেলার মুখ্য উপকরণ কাঠের ব্যাট ও বল। ব্যাট দৈর্ঘ্যে আড়াই ফুট ও প্রস্থে সাড়ে চার ইঞ্চি হয়। প্রায় সাড়ে তিন ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট চামড়ায় মোড়ানো কাঠের বল ব্যবহার করা হয়। খেলার জন্য কাঠের তৈরি তিনটি দণ্ড প্রয়োজন। এগুলোকে উইকেট বলে। বিপরীত দিকে একইভাবে আরও তিনটি উইকেট থাকে। উইকেটের মধ্যে ব্যবধান সমান রাখার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট মাপের দু-টুকরো কাঠ উইকেটের উপর বসানো হয়। একে বেল বলে। এ ছাড়া পায়ে পরার জন্য তুলার তৈরি এক প্রকার পুরু প্যাড ও হাতে পরার জন্য গ্ল্যাভস বা হাতমোজা প্রয়োজন।
মাঠের আকৃতি : ক্রিকেট মাঠ বৃত্তাকার। সাধারণত এর ব্যাসার্ধ হয় ৭০ গজ। মাঠের মাঝখানে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় পিচ। পিচের দৈর্ঘ্য হয় ২২ গজ।
নিয়ম-কানুন : দুটি দলের মধ্যে ক্রিকেট খেলা হয়। প্রতি দলে এগারো জন করে খেলোয়াড় থাকে। ক্রিকেট খেলা পরিচালনার জন্য দুইজন আম্পায়ার থাকেন। ক্ষেত্রবিশেষে তৃতীয় আম্পায়ার দেখা যায়।
খেলা আরম্ভের পূর্বে দুজন আম্পায়ার এবং দু’দলের দুজন অধিনায়ক মাঠে নামেন। মুদ্রা ছুড়ে দিয়ে টসের মাধ্যমে এক দল জয়ী হয়। টসে জয়লাভকারী অধিনায়ক ইচ্ছে করলে ব্যাটিং বা ফিল্ডিং যে কোনোটি বেছে নিতে পারেন। উভয় দলকে একবার করে ব্যাট করতে হয়। ফিল্ডিংকারী দলের সমস্ত খেলোয়াড় মাঠের ভেতর অধিনায়কের নির্দেশ মেনে তাদের নিজস্ব স্থানে অবস্থান করেন। যে দল প্রথম ব্যাটিং করবে সে দলের দুজন খেলোয়াড় ব্যাট হাতে দু উইকেটে গিয়ে দাঁড়ান। তাঁদের মধ্যে একজন বল পেটান, অপরজন প্রয়োজনবোধে রান সংগ্রহ করার জন্য দৌড়ান। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা ব্যাটসম্যানদের আউট করার চেষ্টা করেন। বল নিক্ষেপকারীকে বোলার বলে। একজন বোলার পরপর ছটি বল করতে পারেন। ছটি বলে এক ওভার হিসেব ধরা হয়। ব্যাটসম্যান অতি সতর্কতার সাথে বল মারেন। সুযোগ মতো বল ব্যাটের আঘাতে দূরে পাঠান।
ব্যাটসম্যান যখন বল দূরে পাঠান, তখন অপর দিকের উইকেটে অপক্ষেমান খেলোয়াড় ও ব্যাটসম্যান একে অন্যের পাশে দৌড়ে এলে এক রান হয়। বল গড়িয়ে সীমারেখা পার হলে চার রান হয়। আর বল না গড়িয়ে মাঠের উপর দিয়ে সীমানা অতিক্রম করলে ছয় রান হয়।
বল যদি উইকেটে লাগে তাহলে ব্যাটসম্যান আউট হন। একে বোল্ড আউট বলে। ব্যাট দিয়ে আঘাত করার পর তা মাটিতে পড়ার আগেই বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় ধরে ফেললে ব্যাটসম্যান আউট হন। একে কট আউট বলে। এ ছাড়া ব্যাসম্যান রান আউট বা স্টাম্প আউটও হতে পারেন। এক দলের সবাই আউট হয়ে গেলে বা নির্ধারিত ওভার শেষ হয়ে গেলে অন্য দল ব্যাটিং করতে নামে।
ক্রিকেট খেলার জয়পরাজয় নির্ধারিত হয় রানের সংখ্যা বা নির্দিষ্ট সময়ে কতজন ব্যাটসম্যান নট আউট থেকে যায়, তা হিসেব করে। এ খেলায় যে দল রান, ওভার, সময় ও উইকেট রক্ষায় সক্ষম হয়, সে দলই জয়লাভ করে।
ক্রিকেট খেলার আনন্দ : ক্রিকেট খেলার চমক ভিন্ন মাত্রার। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য সাজানোর মতো মাঠে ফিল্ডার সাজানো খুবই কুশলতার ব্যাপার। ক্রিকেটের উত্তেজনা বেড়ে যায় যখন ব্যাটসম্যানের নৈপুণ্যে সেই ব্যূহ তছনছ হয়ে যায় ছক্কা ও চারের মারে। ছক্কা ও চারের মারে রান তোলার উত্তেজনাই আলাদা। বোলিংয়ের দাপট বা ফিল্ডারদের হাতে ব্যাটিং বিপর্যয় উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনাকে চরমে পৌঁছে দেয়। একদিনের ক্রিকেটের উত্তেজনা আলাদা। বর্তমানে টি-টুয়েন্টি (২০ ওভার) ম্যাচ সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ খেলা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
উপকারিতা : অন্যান্য খেলার মতো ক্রিকেট খেলা আনন্দদায়ক ও স্বাস্থ্যকর। এ খেলা একাধারে খেলোয়াড়দের শৃঙ্খলাবোধ, পারস্পরিক সমঝোতা, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, দায়িত্বজ্ঞান ও সতর্কতার শিক্ষা দেয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেশের ক্রীড়াদলকে শুভেচ্ছাদূত বলে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলোয়াড়গণ এ খেলায় পারদর্শী হয়ে উঠছেন। বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভবিষ্যত উজ্জ্বল।
অপকারিতা : ক্রিকেট খেলা যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। কাঠের বল বেশ শক্ত। বোলার সজোরে বল নিক্ষেপ করলে তা কোনো খেলোয়াড়ের শরীরে লাগলে মারাত্মকভাবে আহত হতে পারে, মাথায় লাগলে অনেক সময় মৃত্যুর কারণও হয়ে দাঁড়ায়। ক্রিকেট খেলা অত্যন্ত সময়হরণকারী, এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়। তাছাড়া ক্রিকেট বেশ ব্যায়বহুল খেলা।
সবকিছুরই ভালো-মন্দ দুটি দিক থাকে। ক্রিকেটের ভালো দিকই বেশি। মন্দ যে দিকগুলোর কথা বলা হলো, সেদিকে আমরা সচেতন থাকব।
উপসংহার : আধুনিক যুগে যত খেলা রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেট। ক্রিকেট খেলা যেমন আনন্দদায়ক, তেমনি ব্যয়সাপেক্ষ ও সময়সাপেক্ষ। সময় ও অর্থের অধিক ব্যয়ের কারণে অনেক সমালোচক একে অপচয় বলে মনে করেন। তবু বিশ্ব আজ ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত। এর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া।
আমার দেখা নদী
নদীর কথা উঠলেই একটি নদীই আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার নাম শীতলক্ষ্যা। শীতলক্ষ্যা আমার প্রিয় নদী। আমাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে ঠিক শীতলক্ষ্যার নদীর পাশেই। শীতলক্ষ্যা আমার জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।
শীতলক্ষ্যা নদীর রূপ একেক ঋতুতে একেক রকম। গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপে যখন পানি শুকিয়ে যায় তখন নদীর দুই পাশে জেগে ওঠে চর। সেখানে কৃষকেরা আলু, মরিচ, পেঁয়াজ ইত্যাদি চাষ করে। আমরা সকালে গরু-ছাগল চরাতে নিয়ে যাই সেই চরে। দুপুর বেলা নদীতে দাপাদাপি করে গোসল করি। চরের বালিতে শুয়ে বিশ্রাম নিই, আবার ঝাঁপিয়ে পড়ি নদীতে। যারা বয়সে একটু বড়, তারা বাজি ধরে সাঁতরে নদী পার হয়। আমরা হাততালি দিয়ে তাদের উৎসাহ দিই। নদীর বুক চিরে যখন বড় বড় জাহাজ চলে যায়, আমরা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকি। মায়ের মুখে শুনেছি, এ নদীতে এক সময় কুমির ছিল। কিন্তু এখন আর কুমির দেখা যায় না, তবে মাঝে মাঝেই শুশুক ভেসে উঠেই আবার ডুব দেয়।
বর্ষাকালে শীতলক্ষ্যা নদী কানায় কানায় ভরে যায়। এ সময় নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকে। বড় বড় ঢেউ তীরে এসে আঘাত করে। অনেক সময় নদীর পানি বেশি বেড়ে গেলে দুই পাশে গ্রাম, ফসলের মাঠ সব ডুবে যায়। তখন আমাদেরকে হয় ঘরের চালে, অথবা নৌকায় আশ্রয় নিতে হয়। এ সময় নদীর রূপ দেখলে আমার ভয় করে। তবে বাবা প্রায়ই ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে খুব সহজেই চলে যায় দূরদূরান্তে। আমরা বাড়িতে ঢুকে পড়া পানিতে সাঁতার কেটে গোসল করি।
শরৎকালে শীতলক্ষ্যা আবার অন্য রূপ ধরে। তখন নদীর দুই পাশে, যতদূর চোখ যায় কাশফুল ফুটে থাকে। কাশবনের ভেতরে অনেক পাখি বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। আমরা বিকেল বেলা নৌকায় চড়ে নদীর বুকে নেমে পড়ি। সন্ধ্যাবেলা যখন পাখিরা বাসায় ফিরে আসে, তখন তাদের কলকাকলিতে চারপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে। আমরা নৌকার পাটাতনে শুয়ে সন্ধ্যায় আকাশ দেখি। সে এক অপরূপ দৃশ্য। রাতে কাশবনে শেয়াল ডাকে হুক্কা হুয়া করে।
শীতকালে অনেক বেলা পর্যন্ত শীতলক্ষ্যার বুকে কুয়াশা জমে থাকে। এ সময় নদীটাকে অনেক রহস্যময় লাগে। এ সময় নদীতে চর জাগা শুরু হয়। আমরা খাড়ি পেরিয়ে চলে চলে যাই মাছ ধরতে। সন্ধ্যা হতে না হতেই নদীটি কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে।
শীতলক্ষ্যা নদী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। এ নদীতেই রয়েছে বাংলাদেশের প্রধান নদীবন্দর। নদীর পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কলকারখানা। অনেক বড় বড় জাহাজ চলে যায় নদী দিয়ে। তবে শীতলক্ষ্যা নদী দিন দিন দূষিত হয়ে যাচ্ছে, যা আমাকে খুবই কষ্ট দেয়।
শীতলক্ষ্যাকে কেন্দ্র করেই এর দুই তীরের মানুষের জীবন গড়ে উঠেছে। আমি এই নদীকে ছাড়া একটি দিনও কল্পনা করতে পারি না। শীতলক্ষ্যা যেন আমার জীবনেরই অংশ।
সত্যবাদিতা
সত্যবাদিতা একটি মহৎ গুণ। একজন সত্যবাদী মানুষ কখনো মিথ্যা বলেন না। চরম বিপদেও তিনি সত্যকে আঁকড়ে থাকেন। সত্যবাদি সমাজে ও রাষ্ট্রে আদর্শ মানুষ হিসেবে বিবেচিত। তাঁকে সবাই সম্মান করে।
সত্য কথা বলার গুণকে সত্যবাদিতা বলে। সত্যবাদিতা মানুষের চরিত্রের অলংকারস্বরূপ। সত্য সথা বলতে পারলে অন্যান্য গুণ মানুষের মধ্যে এমনিই চলে আসে। সত্য কথা বললে হয়তো সাময়িক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু এর পরিমাণ সবসময়ই ভালো হয়। সত্যবাদী মানুষ কখনো খারাপ কাজ করতে পারে না। তিনি খুবই নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসী হন। সবাই তাঁকে বিশ্বাস করে ও ভালোবাসে। একজন মিথ্যাবাদীও সত্যবাদীকে পছন্দ করে। পক্ষান্তরে মিথ্যাবাদীকে কেউ পছন্দ করে না। সে সমাজে সবার কাছে হেয় হয়। কেউ তাকে সম্মান করে না। প্রবাদ আছে যে, মিথ্যাবাদীর সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো, সবাই তাকে অবিশ্বাস করে তা নয়, বরং সে-ই কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না।
ইতিহাসে যারা স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের সবাই ছিলেন সত্যবাদী। মহানবি হযরত মুহম্মদ (সা.) ছিলেন সত্যবাদিতার আদর্শস্বরূপ। তাঁকে সবাই আল-আমিন বা বিশ্বাসী বলে ডাকত। তাঁর শত্রæরাও তাঁকে বিশ্বাস করত। তাঁর কাছে তাদের সম্পত্তি গচ্ছিত রেখে যেত। মহাত্মা গান্ধী একদিন তাঁর বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করেন। কিন্তু পরে তিনি অনুশোচনায় বিদ্ধ হয়ে বাবাকে তাঁর চুরির কথা বলে দেন। এতে তাঁর বাবা তাঁর উপর খুবই রাগ করেন। কিন্তু গান্ধী তাতেও সত্যের পথ থেকে সরে আসেননি। তিনি সারাজীবন যা সত্য বলে জেনেছেন তা-ই পালন করেছেন। কখনোই মিথ্যার কাছে মাথা নত করেননি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও সবসময় সত্যের পথে থেকেছেন। মিথ্যার সাথে কখনোই আপোস করেননি। সত্যের পথ ত্যাগের জন্য তাঁকে অনেক লোভ, অনেক ভয় দেখানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি কখনোই সত্যের পথ থেকে পিছপা হননি।
অল্প বয়স থেকেই সত্যবাদিতার চর্চা করতে হয়। কোনো ভুল বা দোষ করলে তা স্বীকার করার মনোবল আমাদের অর্জন করতে হবে এবং পরবর্তীতে আর তা না করার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সত্যবাদিতার জয় সুনিশ্চিত। মিথ্যা কথা বলে অন্যায় সুবিধা পাওয়ার চেয়ে সত্য কথা বলে কষ্ট স্বীকার করা অনেক ভালো। সত্যবাদিতা শেখার প্রথম পাঠশালা হলো পরিবার। পরিবারে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে, শিশুরা যাতে কখনো মিথ্যা কথা না শেখে। তাদের সামনে সত্যবাদিতার আদর্শ স্থাপন করতে হবে।
সত্যবাদিতা মানুষের চরিত্রকে সুন্দর ও মহৎ করে তোলে। আমাদের সবাইকে সত্যবাদিতার চর্চা করতে হবে। আমরা মনে রাখব সত্যের জয় হবেই। মিথ্যা বললে সাময়িক সুবিধা হয়তো পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু তার পরিণতি হয় ভয়ঙ্কর। একজন সত্যবাদী মানুষ পৃথিবীর অমূল্য সম্পদ।
আমার পড়া একটি বইয়ের গল্প
আমি বই পড়তে খুবই ভালোবাসি। স্কুলের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আমি অনেক বই পড়ে থাকি। আমার আব্বা-আম্মা আমাকে প্রায় নতুন নতুন বই উপহার দেন। একদিন আব্বা আমার জন্য একটি বই নিয়ে এলেন। বইটির নাম দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। বইয়ের নাম ‘আম আঁটির ভেঁপু’। গল্পের বইয়ের নাম এমন হতে পারে আমি কখনোই ভাবিনি। আমি আব্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আব্বা, আম আঁটির ভেঁপু?’ আব্বা বললেন, ‘‘আমের আঁটি থেকে এক রকম বাঁশি বানানো যায়, তাকে ভেঁপু বলে।” আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘আম আঁটির ভেপুর সঙ্গে গল্পটির সম্পর্ক কী?’ তিনি বললেন, ‘পড়ে দেখে, বুঝতে পারবে।’
আমি বইটি হাতে নিয়ে উৎসাহের সঙ্গে দেখতে লাগলাম। বইটির লেখক বিভ‚তিভ‚ষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচ্ছেদে একটি মেয়ে একটি ছেলের হাত ধরে খোলা মাঠে ধরে দৌড়ে যাচ্ছে। বাতাসে মেয়েটির চুল উড়ছে। ছেলেটির হাতে একটি বাঁশি। আমি বইটি পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ি। সামনে গ্রীষ্মের ছুটি, তাই পড়ালেখার তেমন চাপ ছিল না। আমি বইটি নিয়ে পড়তে বসে যাই।
‘আম আঁটির ভেঁপু’ এক কিশোরী ও তার ছোট ভাইয়ের গল্প। মেয়েটির নাম দুর্গা ও ছেলেটির নাম অপু। তারা নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের প্রান্তে ভাঙা বাড়িতে বাস করে। তাদের বাবা হরিহর মানুষের বাড়িতে পূজা করে যা আয় করে তাই দিয়ে সংসার চালায়। মা সর্বজয়া। তাদের সাথে আরও থাকেন এক বৃদ্ধ পিসি। এই নিয়ে তাদের সংসার। বাবার আয়ে তাদের সংসার ভালোভাবে চলে না, অভাব অনটন লেগেই থাকে। কিন্তু তাদের মধ্যে ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। ‘আম আঁরি ভেঁপু’ এক দরিদ্র কিন্তু ভালোবাসাময় পরিবারের কাহিনী।
দুর্গা খুবই খেতে ভালোবাসত। কিন্তু তার চাহিদা মতো খাবার দিতে পারত না তার মা-বাবা। তাই সে নানা জায়গা থেকে খাবার নিয়ে খেত। খাবারের প্রতি আকর্ষণের জন্য দুর্গাকে প্রায়ই মায়ের হাতে উত্তম-মধ্যম খেতে হতো। দুর্গা ছিল খুবই ডানপিটে মেয়ে, তাই মায়ের পিটুনি তার গায়েই লাগত না। সে টোটো করে বনজঙ্গলে ঘুড়ে বেড়াত। কিন্তু অপু ছিল লাজুক প্রকৃতির, দুর্গা ছাড়া তার আর কোনো বন্ধু ছিল না। দুর্গা মারলেও সে দুর্গার পিছে পিছে ঘুরত। দুর্গা অপুকে নানা জায়গা থেকে ফলমূল এনে দিত। এতে অপু খুশি হতো।
একদিন দুর্গাদের গরু হারিয়ে গেলে, অপুর আর দুর্গা সেটা খুঁজতে খুঁজতে অনেক দূরে পর্যন্ত চলে যায়। গ্রামে ছেড়ে মাঠ পেরিয়ে তারা চলে যায় রেললাইনের উপরে। এ যেন একটা নতুন দেশ আবিষ্কার। তারা বিদ্যুতের থামে কান পেতে শব্দ শোনে। যখন দূর থেকে তারা ট্রেন আসতে দেখে, তখন দৌড়ে গিয়ে ট্রেনের পাশে দাঁড়ায়। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে ট্রেনের দিকে।
অপুদের এক প্রতিবেশী ধনী। তাদের বাড়ির এক মেয়ের বিয়েতে অপু ও দুর্গা যায় নিমন্ত্রণ খেতে। সেখানে একটি পুঁতির মালা হারিয়ে গেলে সবাই দুর্গাকে দোষারোপ করে এবং তাদের মেরে তাড়িয়ে দেয়। আমার মনে হলো যেন তাদের সাথে আমিও ছিলাম। আমাকে যেন বিয়েবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমার দুচোখ গড়িয়ে পানি পড়তে লাগল। এমন সময় মা আমাকে দেখে আদর করে জড়িয়ে ধরল। আমি খুবই লজ্জা পেলাম।
অপুর মধ্যে যেন আমি আমাকেই খুঁজে পাই। অপু লাজুক প্রকৃতির হওয়ায় তার কোনো বন্ধু নেই। সে একা একাই বাড়ির পাশের বাগানে ঘুরে বেড়ায়। হাতে লাঠি নিয়ে যোদ্ধা সেজে সে গাছপালার সাথে যুদ্ধ করে। দুর্গা অপুকে মাকাল ফল এনে দিলে অপুর যেন সাতরাজার ধন হাতে পায়। অপুর সঙ্গে আমিও বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াই। অপু তার বাবার সঙ্গে সন্ধ্যায় সময় পড়তে বসে। এ সময় দূর থেকে ভেসে-আসা ট্রেনের শব্দে উদাস হয়ে যায় সে।
বইটি পড়ে আমি যেন কোথায় হারিয়ে যাই। অপুর বাবা নতুন কাজের সন্ধানে শহরে যায়। এমন সময়েই ঘটে সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা। দুর্গা ও অপু একদিন বৃষ্টিতে ভেজে। তারপর দুর্গার জ্বর হয় এবং সেই জ্বরে দুর্গা মারা যায়। এতে অপু প্রচণ্ড আঘাত পায়। দুর্গা ছাড়া অপুর পৃথিবী একেবারে ফাঁকা।
অপুর বাবা ফিরে এসে ওদেরকে নিয়ে কাশী চলে যায়। একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য অপুকে ছেড়ে যেতে হয় অতি চেনা, অতি আপন এই ভাঙা বাড়িটি। জিনিসপত্র গোছানোর সময় অপু একটি কৌটায় পুঁতির মালাটি খুঁজে পায়। সে বুঝতে পারে যে, দুর্গাই মালাটি চুরি করে এনে এখানে লুকিয়ে রেখেছিল। অপু মালাটি ফেলে দেয়, যাতে কেউ এটা দেখতে না পায়। এভাবে যেন দুর্গার দোষ পৃথিবীর কাছ থেকে আড়াল করে।
আমি আমার অল্প বয়সে অনেক বই পড়েছি। কিন্তু ‘আম আঁটির ভেঁপু’ আমার হৃদয়কে যতখানি স্পর্শ করেছে, ততখানি অন্য কোনো বই পারেনি। সারা জীবন এই বইটির কথা আমার মনে থাকবে। আমার প্রিয় বইগুলোর মধ্যে সবার উপরে থাকবে ‘আম আঁটির ভেঁপু’।
জাতীয় ফল কাঁঠাল
সূচনা : দৃষ্টিকাড়া ফুল আর অজস্র উপাদেয় ফলে বাংলার প্রকৃতি ভরপুর। প্রকৃতির অসংখ্য ফল ভোজন-রসিক বাঙালিকে তুষ্ট করে। এসব ফলের বিচিত্র নাম, ভিন্ন রূপ, নানা স্বাদ ও গন্ধ। গ্রীষ্মের ফল কাঁঠাল। এ ফল গন্ধ, স্বাদ ও আকৃতিতে বাঙালির অতিপ্রিয়। কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল।
আকার-আকৃতি : জঙ্গল থেকে বাইর অইল এক ব্যাটা
গায়ে তার একশো একটা কাঁটা\
প্রচলিত এই ধাঁধাটির অর্থ হলো কাঁঠাল। গায়ে কাঁটার আবরণে কাঁঠার ফলরাজ্যে নিজের স্বাতন্ত্র্যই ঘোষণা করে। আকৃতিতে এটি অনেক বড়। এক কেজি থেকে বিশ কেজি পর্যন্ত হতে পারে একটি কাঁঠালের ওজন। কাঁচা কাঁঠাল সবুজ বা সবুজাভ হলুদ কিংবা হলদেটে রঙের হয়ে থাকে। কাঁঠাল গাছ এবং ফল দুটোতেই থাকে সাদা দুধের মতো কষ। কাঁঠাল গাছ মাঝারি থেকে বড় হয়ে থাকে। একটি গাছে ধরে অনেক অনেক কাঁঠাল। গাছের গোড়া থেকে শাখা পর্যন্ত কাঁঠাল ফলে।
প্রাপ্তিস্থান : কাঁঠাল বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই পাওয়া গেলেও গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ময়মনসিংহ এবং যশোর অঞ্চলে এর ফলন বেশি হয়। মূলত লৌহ-সমৃদ্ধ লাল মাটিতে কাঁঠাল ভালো জন্মে। পাহাড়ি কাঁঠালের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট ও বান্দরবানের পাহাড়ে বিশেষ আকারের কাঁঠাল জন্মে। স্বাদেও এ এলাকার কাঁঠাল সমতলভ‚মির কাঁঠাল থেকে পৃথক। দেশের চাহিদা মিটিয়ে কাঁঠাল বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
ব্যবহার্য অংশ : কাঁঠাল অসংখ্য কোষ-সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় তা কেটে রান্না করে খাওয়া হয়। কাঁঠালের সব অংশই ব্যবহার করা যায়। কাঁঠালের কোষ এবং বিচি মানুষের উপাদেয় ও পুষ্টিকর খাবার। এর ছাল গবাদিপশুর খাবার। কাঁঠালের বিচি ভেজে কিংবা রান্না করে খাওয়া যায়।
পাকা কাঁঠালের গন্ধ ও স্বাদ অতুলনীয়। কবির ভাষায় :
কঁাঁঠাল কণ্টকে ঘেরা ভিতরেতে কোষ,
তার তরে এ ফল কেবা দেয় দোষ।
কাঁঠাল পাকার পর এর মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত হয়ে ওঠে। গাছের চারদিক পাখি বা কীট ছুটে আসে এর আস্বাদ নিতে।
চাষ পদ্ধতি : কাঁঠাল উঁচু জমির ফল। যেখানে বৃষ্টির পানি জমে না, সেখানে কাঁঠাল গাছ ভালো জন্মে। বীজ এবং কলমের মাধ্যমে কাঁঠাল গাছের বংশবৃদ্ধি ঘটানো যায়। বীজ থেকে চারা উৎপন্ন করলে সেই চারা এক স্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে রোপন করলে উৎপাদন ভালো হয়।
অপকারিতা : মুখরোচক হলেও কাঁঠাল একটি গুরুপাক খাদ্য। বেশি কাঁঠাল খেলে পেটের পীড়া হতে পারে। কাঁঠালের আঠা খুবই বিরক্তিকর। হাতে আঠা লাগলে আর কাঁঠালের কোষ ছাড়াতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু কাঁঠালই ফলের মধ্যে সবচেয়ে আমিষ সমৃদ্ধ ফল।
উপসংহার : কাঁঠাল বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশের উঁচু এলাকায় সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে কাঁঠালের উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি আমাদের সচেষ্ট হওয়া উচিত। তাছাড়া কাঁঠালের জুস বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণ করে বাজারজাত করা যেতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের জাতীয়ভাবে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ
ভ‚মিকা : পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের একটি জাতীয় পশু রয়েছে। এ পশু হলো বাঘ। একে বলে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ বন সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাওয়া যায়। সুন্দরবনের অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাট জেলায়।
আকৃতি : বাঘ বিড়াল প্রজাতির প্রাণী। বাঘ আকারে ও শক্তিতে অনেক বড়। বাঘের গায়ের রং হলুদ। হলুদের মধ্যে কালো কালো ডোরা কাটা দাগ থাকে। বাঘ সাধারণত বারো ফুট লম্বা এবং চার ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। এদের দাঁত খুবই তী² ও ধারালো হয়। পায়ের থাবায় তী² ও ধারালো নখ লুকানো থাকে। বিড়ালের মতো প্রয়োজন এরা সেই নখ বের করে আক্রমণ করতে পারে। এদের পায়ের তলায় নরম মাংসপিণ্ড আছে। যার ফলে তারা নীরবে চলাফেরা করতে পারে এবং সহজে শিকার ধরতে পারে। এদের গায়ের চামড়া খুবই শক্ত ও ঘন লোমে ঢাকা। বাঘের পেছনের পায়ে জোর খুব বেশি। লাফ দিয়ে এরা অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে । বাঘের মাথা গোলাকার ও বেশ বড়। এদের চোখ উজ্জ্বল এবং তাদের বেলা জ্বলজ্বল করে জ্বলে। বাঘ অন্ধকারে দেখতে পায়।
স্বভাব : বাঘ অত্যন্ত হিংস্র প্রাণী। এরা বনে থাকে। এরা খুবই শক্তিশালী ও ভয়ংকর হয়। অনেক বড় বড় প্রাণীকে এরা সহজে শিকার করে। বাঘের শক্তি ও রাজকীয় ভাবভঙ্গি দেখে একে বনের রাজা বলা হয়। বাঘ খুব দ্রæত দৌড়াতে পারে। এরা সাঁতার কাটতে পারে খুব ভালো। সুন্দরবনের বাঘের সুনাম পৃথিবীর জুড়ে। এ বাঘের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম জুড়ে হয়েছে রয়েল টাইগার। বাঘ সাধারণত হরিণ, শূকর, গরু, ছাগল শিকার করে থাকে। শিকার না পেলে এরা অনেক সময় মানুষ শিকার করে। বাঘিনী সাধারণত বছরে দুই থেকে পাঁচটি বাচ্চা দেয়। বাচ্চাদের প্রতি বাঘের মায়া খুব কম। ক্ষুধা পেলে এরা বাচ্চাদের খেয়ে ফেলতে পারে। বাঘিনী বাচ্চা বড় না হওয়া পর্যন্ত লুকিয়ে রাখে।
উপসংহার : বাঘকে হিংস্র পশু মনে হলেও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বাঘের দরকার রয়েছে। বাঘ তৃণভোজী প্রাণী খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তৃণভোজী প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তারা বনের গাছপালা খেয়ে উজাড় করে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের গৌরব। এদেরকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
জাতীয় পাখি দোয়েল
ভ‚মিকা : “… কোকিল ডাকে কুহু কুহু
দোয়েল ডাকে মুহু মুহু
নদী যেথায় ছুটে চলে
আপন ঠিকানায়
একবার যেতে দে-না আমার ছোট্ট সোনা গাঁয়।”
বাংলাদেশ অসংখ্য রূপ-রং-কণ্ঠের পাখির সমারোহে সমৃদ্ধ। যে পাখির গান আর ডালে ডালে নেচে বেড়ানো দেখে মনে চঞ্চলতা জাগে তার নাম দোয়েল। বাংলার অতি পরিচিত এক পাখি। দোয়েল বাংলাদেশের গানের পাখি হিসেবেও স্বীকৃত।
আকৃতি : আকৃতির দিক থেকে দোয়েল ছোট পাখি। এরা সাধারণত ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। স্ত্রী ও পুরুষ দোয়েল রং, আকার ও চেহারায় পৃথক হয়। পুরুষ দোয়েলের মাথা, ঘাড়, গলা, বুক ও পিঠের পালক চকচকে নীলাভ কালো। নিচের বাকি অংশের পালক সাদা। এদের ডানা কালচে বাদামি রঙের, তার মাঝে পিঠঘেঁষে সাদা ছোপ আর টানা দাগ। লেজ লম্বা, সরু থেকে মোটা লেজে মাঝের দুটো পালক কালো, বাকি অংশ সাদা, এদের চোখ বা ঠোঁট কালো এবং পা গাঢ় সিসা রঙের। স্ত্রী দোয়েলের রং অনেকটা বাদামি ও ধূসর, দেখতে ময়লা বালির মতো। দোয়েল সবসময় তার লেজ উঁচু করে রাখে।
খাদ্য ও বাসস্থান : পোকা-মাকড় দোয়েলের প্রধান খাদ্য। আকারে ছোট বলে এদের তেমন খাদ্যের প্রয়োজন হয় না। দোয়েল শস্যকণা খেয়ে থাকে। এদের শিমুল ও মাদার ফুলের মধু খেতেও দেখা যায়। দোয়েল ঝোপঝাড়ে একাকী বা জোড়াসহ বাসা বেঁধে বাস করে। মানুষের বসতের কাছাকাছি দেয়াল কিংবা গাছের গুঁড়িতেও বাসা বাঁধে। দোয়েল গাছের ডালে বাসা বাঁধতে পারে না। এরা খড়-কুটো বা শুকনো ঘাস জমা করে বাসা তৈরি করে।
প্রকৃতি : দোয়েল চঞ্চল এবং অস্থির প্রকৃতির পাখি। নাচের ঢঙে এরা লাফিয়ে চলে। মাটি থেকে দশ ফুট উচ্চতার ভেতরে এরা অল্প দূরত্বে উড়ে চলে। এদের দীর্ঘক্ষণ শূন্যে ভাসতে দেখা যায় না।
বিশেষত্ব : দোয়েলের বিশেষত্ব এর মোহন সুরে ও সংগীতে। আকর্ষণীয় এই আদুরে পাখিটি সুন্দর সুরে গান করে এবং আস্তে আস্তে শিস দেয়। বসন্তকালে এদের নাচ ও গানে মন ভরে ওঠে। কোকিল সবচেয়ে পরিচিত তবে অতিথি গানের পাখি। আর এরা আমাদের একান্তই প্রকৃতির গানের পাখি। সারাদিন, এমনকি সন্ধ্যার পরও দোয়েল গান গায়।
কেন জাতীয় পাখি : বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে দোয়েলের রূপ, রং, স্বভাব, গান মিশে আছে। দোয়েল তার সহজাত চঞ্চলতায় গাছের ডালে বসে যখন গান করে ও শিস দেয়, তখন বাঙালি বাংলার অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। বাংলার সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা প্রকৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বলেই দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি।
উপসংহার : বাংলাদেশের সর্বত্র দোয়েল পাখি দেখা যায়। প্রকৃতির প্রতিক‚লতা, তাপমাত্রা, বৃদ্ধির কারণে জীববৈচিত্র্য যে ক্ষতি হচ্ছে, তাতে এ পাখিও রেহাই পাচ্ছে না। দোয়েল তথা সব পাখির জন্ম, বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব।
অতিরিক্ত অংশ
আমাদের দেশ
সূচনা : ‘সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভ‚মি।’
সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। সবুজে ঘেরা, পাখি ডাকা দেশটির রূপের কোনো শেষ নেই। কবির দেশ, বীরের দেশ, গানের দেশ, মায়ের দেশ- এরকম অনেক নামে এ দেশকে ডাকা হয়।
অবস্থান : বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন দেশ। এর সীমান্তের অধিকাংশ জুড়ে আছে ভারত। আর সামান্য অংশে মিয়ানমার। দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর।
স্বাধীনতা লাভ : ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
জনসংখ্যা : জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি।
ভাষা : বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এদেশে অনেক জাতি-গোষ্ঠীর লোক বাস করে। এদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব ভাষা। তবে বাংলা-ই আমাদের রাষ্ট্রভাষা।
ভ‚-প্রকৃতি : বাংলাদেশের প্রায় সবটাই সমভ‚মি। সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার কিছু অংশে পাহাড় রয়েছে। এছাড়া রয়েছে শত-সহস্র আঁকাবাঁকা নদ-নদী।
ঋতুবৈচিত্র্য : বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রতি দুই মাসে একটি করে ঋতুর পালাবদল ঘটে। একেক ঋতুতে প্রকৃতি একেক সাজে সেজে ওঠে। প্রতিটি ঋতুর সৌন্দর্যই অতুলনীয়। এদেশের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূল কারণ এই ঋতুবৈচিত্র্য।
জনজীবনের বৈচিত্র্য : বাংলাদেশে আছে নানা ধর্মের, নানা পেশার লোকজন। বাঙালি ছাড়াও দেশে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে। তাদের আছে নিজস্ব জীবনযাপন পদ্ধতি। সব ধরনের মানুষ এদেশে মিলেমিশে থাকে।
অর্থনৈতিক অবস্থা : বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। অর্থাৎ সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে পরিচিত হওয়া থেকে এখনও আমরা অনেক পিছিয়ে। তবে আমাদের অর্থনীতি খুবই দ্রæত বিকাশ লাভ করেছে। এ দেশ মূলত কৃষিনির্ভর হলেও বিভিন্ন শিল্পখাত থেকে আমরা অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি।
প্রাকৃতিক সম্পদ : বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ। গ্যাস আমাদের প্রধান সম্পদ। এছাড়াও রয়েছে কয়লা, চুনাপাথর প্রভৃতি।
উপসংহার : বাংলাদেশ আমাদের গর্ব ও অহংকার। অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এদেশকে স্বাধীন করেছি। দেশকে আমরা মায়ের মতো ভালোবাসি।
স্বদেশপ্রেম
সূচনা : মানুষ স্বাভাবিকভাবেই তার জন্মস্থানকে ভালোবাসে। জন্মস্থানের আলো-জল-হাওয়া, পশু-পাখি ও সবুজ প্রকৃতির সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জন্মস্থানের প্রতিটি ধূলিকণা তার কাছে মনে হয় সোনার চেয়েও দামি।
মানুষের এই উপলব্ধিই হচ্ছে স্বদেশপ্রেম।
স্বদেশপ্রেমের সংজ্ঞার্থ : স্বদেশপ্রেম অর্থ হচ্ছে নিজের দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, ভাষার প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করা। দেশের প্রতি প্রবল অনুরাগ, নিবিড় ভালোবাসা এবং যথার্থ আনুগত্যকে দেশপ্রেম বলে। জন্মভূমির স্বার্থে সর্বস্ব ত্যাগের সাধনাই স্বদেশপ্রেম ।
স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ : স্বদেশ অর্থ নিজের দেশ। নিজের দেশকে সবাই ভালোবাসে। মাকে যেমন সবাই নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে, তেমনি স্বদেশের প্রতিও সবার ভালোবাসা সকল স্বার্থের ঊর্ধ্বে। প্রত্যেক মানুষেরই কথায়, চিন্তায় ও কাজে প্রকাশ পায় স্বদেশের প্রতি নিবিড় মমত্ববোধ। এই বোধ বা চেতনা হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত।
স্বদেশপ্রেমের অনুভূতি : দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ থেকে জন্ম হয় স্বদেশপ্রেমের। পৃথিবীর সব জায়গার আকাশ, চাঁদ, সূর্য এক হলেও স্বদেশপ্রেমের চেতনা থেকে মানুষ নিজের দেশের চাঁদ-সূর্য-আকাশকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে ভালোবাসে। স্বদেশপ্রেমের অনুভূতি সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয় দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হলে। তখন স্বদেশপ্রেমের প্রবল আবেগে মানুষ নিজের জীবন দিতেও দ্বিধা করে না। কেননা সে জানে, দেশের জন্য ‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।”
ছাত্রজীবনে স্বদেশপ্রেম : ছাত্ররাই দেশের ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। দেশের উন্নতি ও জাতির আশা পূরণের আশ্রয়স্থল। তাই দেশ ও জাতির প্রতি গভীর মমত্ববোধ ছাত্রজীবনেই জাগিয়ে তুলতে হবে। দেশকে ভালোবাসার উজ্জীবন মন্ত্রে দীক্ষিত হতে হবে। ছাত্রদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে পারলেই দেশের স্বার্থে প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করার আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
বাঙালির স্বদেশপ্রেম : পৃথিবীতে যুগে যুগে অসংখ্য দেশপ্রেমিক জন্মেছেন। তাঁরা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করে অমর হয়ে আছেন। বাংলাদেশেও তার অজস্র দৃষ্টান্ত রয়েছ। প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে বিদেশি শক্তি প্রভুত্ব বিস্তারের চেষ্টা করেছে, আর স্বদেশপ্রেমিক বাঙালি দেশের স্বাধীনতা ও সম্মান রক্ষার্থে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি স্বৈর-শাসকের হাতে বাংলা-ভাষার জন্য রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, বরকতের আত্মদান দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মদান করেছে অসংখ্য ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, সাংবাদিকবুদ্ধিজীবী, মা-বোনসহ সাধারণ মানুষ। অকুতোভয় শত-সহস্র এ সৈনিকের দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এখনো এদেশের লক্ষকোটি জনতা দেশের সামান্য ক্ষতির সম্ভাবনায় বজ্রকণ্ঠে গর্জে ওঠে।
স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম : স্বদেশপ্রেম মূলত বিশ্বপ্রেমেরই একটি অংশ। কেননা বিশ্বের সব মানুষই পৃথিবী নামক এই ভূখণ্ডের অধিবাসী। তাই স্বদেশপ্রেমের মাধ্যমে সকলেরই বিশ্বভ্রাতৃত্ব, মৈত্রী ও বিশ্ব-মানবতাকে উচ্চকিত করে তুলতে হবে।
উপসংহার : দেশপ্রেম একটি নিঃস্বার্থ ও নির্লোভ আত্মানুভূতি। কোনো প্রকার লোভ বা লোভের বশবর্তী হয়ে দেশকে ভালোবাসা যায় না। প্রকৃত দেশপ্রেমিকের কাছে দেশের মঙ্গলই একমাত্র কাম্য। দেশের জন্য তাঁরা সর্বস্ব দান করতে পারেন। তাঁদের শৌর্য-বীর্য ও চারিত্রিক দৃঢ়তা আবহমানকাল ধরে জাতিকে প্রেরণা যোগায়। কাজেই ব্যক্তিস্বার্থ নয়, দেশ ও জাতির স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দিতে হবে। দেশ গড়ার কাজে, দেশের জন্য মঙ্গলজনক কাজে আমাদের সকলকে নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে। সর্বোপরি দেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে সমগ্র বিশ্বকে ভালোবাসতে শিখতে হবে। তবেই অর্জিত হবে স্বদেশপ্রেমের চূড়ান্ত সার্থকতা।
অধ্যবসায়
সূচনা : ব্যর্থতা কেউ চায় না। সবাই সাফল্য খোঁজে। কিন্তু কেউই সব কাজে একবারে সফল হয় না। সফলতার জন্য বারবার চেষ্টা করতে হয়। কোনো কাজে সাফল্য লাভের জন্য বারবার এই চেষ্টার নামই অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া জীবনে উন্নতি লাভ করা যায় না। অধ্যবসায়ই হচ্ছে মানবসভ্যতার অগ্রগতির চাবিকাঠি।
অধ্যবসায় কী : অধ্যবসায় শব্দের আভিধানিক অর্থ অবিরাম সাধনা, μমাগত চেষ্টা। কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অবিরাম সাধনা বা μমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াকে বলে অধ্যবসায়। ব্যর্থতায় নিরাশ না হয়ে কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের সাথে অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছানোর মধ্যেই অধ্যবসায়ের সার্থকতা নিহিত।
অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা : ব্যর্থতাই সফলতার প্রথম সোপান। ব্যর্থতা থেকে সাধনার শুরু, আর সফলতার মাধ্যমে তার শেষ। তাই মানবজীবনে সাধনা বা অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। অধ্যবসায়ী মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে। এমনকি অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করতে পারে। তাই মানবজীবনে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় : ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। ছাত্রজীবনই ভবিষ্যৎ গড়ার উপযুক্ত সময়। এ সময় ব্যর্থ হলে সম্পূর্ণ মানবজীবনই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। যে ছাত্র অধ্যবসায়ী, সাফল্য তার হাতের মুঠোয়। অলস ছাত্র-ছাত্রী মেধাবী হলেও পড়াশোনায় কখনো সফল হতে পারে না। কঠোর অধ্যবসায় ছাড়া কোনো কাজেই জয়ী হওয়া যায় না। ছাত্রজীবনেই এই সত্য উপলব্ধি করে নিজেকে অধ্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে কবি কালীপ্রসন্ন ঘোষের বিখ্যাত উক্তি :
পারিব না একথাটি বলিও না আর,
কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার,
একবার না পারিলে দেখ শতবার।
অধ্যবসায় ও প্রতিভা : অধ্যবসায় প্রতিভার চেয়ে অনেক বড়। মনীষী ভল্তেয়ারের ভাষায়, ‘প্রতিভা বলে কোনো কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।’ ডালটন বলেছেন, ‘লোকে আমাকে প্রতিভাবান বলে; কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া আর কিছু জানি না।’ বিজ্ঞানী নিউটনের উক্তি, ‘আমার আবিষ্কার প্রতিভা-প্রসূত নয়, বহু বছরের অধ্যবসায় ও নিরবচ্ছিন্ন সাধনার ফল।’ এ থেকেই বোঝা যায়, অধ্যবসায় ও পরিশ্রম ছাড়া শুধু প্রতিভার কোনো মূল্য নেই। প্রতিভাবান ব্যক্তিরা অধ্যবসায় দ্বারাই নিজের কাজকে সুসম্পন্ন করে তোলেন। আবার অধ্যবসায়ের দ্বারা অনেকে প্রতিভাবান হিসেবে সুনাম অর্জন করেন।
অধ্যবসায়ের উদাহরণ : পৃথিবীতে যেসব মনীষী সাফল্যের উচ্চ শিখরে অরোহণ করে অমরত্ব লাভ করেছেন, তাঁরা সকলেই ছিলেন অধ্যবসায়ী। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ও ফ্রান্সের বিখ্যাত ঐতিহাসিক কার্লাইল অধ্যবসায়ের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। রবার্ট ব্রুস বারবার ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়েও যুদ্ধ-জয়ের আশা ও চেষ্টা ত্যাগ করেননি। ষষ্ঠবার পরাজিত হয়ে তিনি যুদ্ধ চিন্তায় মগ্ন আছেন, এমন সময় দেখতে পেলেন একটি মাকড়সা বারবার কড়িকাঠে সুতা বাঁধবার চেষ্টা করছে এবং ব্যর্থ হচ্ছে। এইভাবে ছয়বার ব্যর্থ হয়ে সপ্তমবারে মাকড়সাটি সফল হলো। এই দেখে রবার্ট ব্রুসও সপ্তমবার যুদ্ধ করে ইংরেজদের পরাজিত করেন এবং স্কটল্যন্ডের ওপর নিজের আধিপত্য বিস্তার করেন। মনীষী কার্লাইল তাঁর লেখা ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসের পাণ্ডুলিপি এক বন্ধুকে পড়তে দিয়েছিলেন। বন্ধুর বাড়ির কাজের মহিলা সেটিকে বাজে কাগজ ভেবে পুড়িয়ে ফেলেন। কার্লাইল এতে একটুও দমে যাননি। তিনি আবার চেষ্টা করে বইখানা লিখে বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছিলেন। সম্রাট নেপোলিয়ান, আব্রাহাম লিঙ্কন, μিস্টোফার কলম্বাস প্রমুখ মনীষীর জীবনও অধ্যবসায়ের এক বিরাট সাক্ষ্য। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় অধ্যবসায়ের গুণেই আজ বিশ্ববিখ্যাত। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য অধ্যবসায়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা বাঙালিমাত্রই তাঁদের জন্য গর্বিত।
উপসংহার : অধ্যবসায় হচ্ছে জীবনসংগ্রামের মূল প্রেরণা। এ সংগ্রামে সফলতা ও ব্যর্থতা উভয়ই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে অধ্যবসায়ী মানুষ জীবনের সব ব্যর্থতাকে সাফল্যে পরিণত করতে পারে। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, জীবনে সাফল্যের জন্য অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই।
আমাদের গ্রাম
সূচনা : ‘আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান
আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ।’
আমাদের গ্রামের নাম ঘোপাল। গ্রামটি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানায় অবস্থিত। গ্রামের এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ফেনী নদী।
সৌন্দর্য : আমাদের গ্রামটি ছবির মতো সুন্দর। আম, কাঁঠাল, বটসহ নানা রকম গাছ গাছালিতে গ্রামটি ঘেরা। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। বিভিন্ন মৌসুমে ফোটে নানারকম ফুল। গ্রামের মেঠো পথ, সোনালি ধানক্ষেত, ছায়া ঢাকা বাঁশঝাড় দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। প্রকৃতি যেন আপন খেয়ালে গ্রামটিকে সাজিয়েছে।
গ্রামের মানুষ : আমাদের গ্রামে প্রায় দেড় হাজার লোকের বাস। এখানে আছে নানা পেশার, নানা ধর্মের মানুষ। গ্রামের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে। কেউ ঝগড়া-বিবাদ করে না।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : আমাদের গ্রামে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জীবনের প্রথম পাঠ শুরু করে। প্রাথমিক পাঠ শেষ করে ভর্তি হয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। আমাদের গ্রামে একটি সেচ্ছাসেবক নৈশ বিদ্যালয় আছে। যাঁরা লেখাপড়া জানেন না, গ্রামের শিক্ষিত যুবকেরা তাঁদের সন্ধ্যার পর লেখাপড়া শেখান। আমাদের গ্রামে কোনো নিরক্ষর লোক নেই।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান : আমাদের গ্রামে যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানও। যেমন- পোস্ট অফিস, দাতব্য চিকিৎসালয়, কৃষি অফিস ইত্যাদি।
যোগাযোগ ব্যবস্থা : আমাদের গ্রামের পূর্ব পাশ দিয়ে নদী বয়ে চলেছে। গ্রামের তিন পাশে রাস্তা রয়েছে। দক্ষিণের রাস্তায় বড় গাড়ি চলে। সব রাস্তায় রিকশা-ভ্যান চললেও গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ হেঁটে চলাচল করে।
আর্থিক অবস্থা : আমাদের গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। গ্রামের মাঠে মাঠে ফলে প্রচুর ধান, পাট, গম, মসুর, সরিষা, আখ ইত্যাদি। বড় বড় পুকুরগুলোতে নানা রকম মাছের চাষ হয়।
সামাজিক অবস্থা : অর্থনৈতিক দিক থেকে আমাদের গ্রাম সচ্ছল। গ্রামের সবাই স্বনির্ভর বলে চুরি-ডাকাতি খুন-খারাবির কোনো বালাই নেই। গ্রামের শতভাগ লোকের অক্ষরজ্ঞান থাকায় কোনো রকমের কুসংস্কার নেই।
উপসংহার : আমাদের গ্রামকে আমরা সবাই মায়ের মতো ভালোবাসি। গ্রামের উন্নয়নে সবাই মিলেমিশে কাজ করার চেষ্টা করি।
আমাদের বিদ্যালয়
সূচনা : “বিদ্যালয়, মোদের বিদ্যালয়,
এখানে সভ্যতারই ফুল ফোটানো হয়।”
বিদ্যালয় হচ্ছে ভালো মানুষ গড়ার কারখানা। আমি যে বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করি তার নাম জয়পুর সরোজিনী উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।
অবস্থান : আমাদের বিদ্যালয়টি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার ঘোপাল গ্রামে অবস্থিত। বিদ্যালয়ে আসার জন্য ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। আশপাশের যে কোনো গ্রাম থেকে সহজেই আমাদের স্কুলে আসা যায়।
বিদ্যালয়ের পরিবেশ : বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে। বিশাল প্রাঙ্গণে দুটি দীর্ঘকায় চারতলা ভবন। তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি শাখা রয়েছে। প্রতি শাখার জন্যই রয়েছে আলাদা ও পরিপাটি শ্রেণিকক্ষ। অধ্যক্ষ ও দুজন উপাধ্যক্ষের নিজস্ব মনোরম কক্ষ রয়েছে। বিভিন্ন অংশে বিভক্ত একটি বড় অফিস রুম আছে। পঞ্চাশ জন শিক্ষকের জন্য রয়েছে তিনটি সুন্দর কক্ষ। সেখানে বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে। বিদ্যালয় ভবনের সামনে আছে বিশাল মাঠ।
ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকমণ্ডলী : আমাদের বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৮০০। শিক্ষকগণ আমাদেরকে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে পড়ান। আমরাও তাঁদের গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি।
লাইব্রেরি : আমাদের বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটি বেশ সমৃদ্ধ। এখানে নানা ধরনের বই রাখা আছে। লাইব্রেরি থেকে বই ধার করে বাড়িতে নিয়েও পড়া যায়।
খেলাধুলা : আমাদের বিদ্যালয়ের সামনে আছে বড় একটি খেলার মাঠ। এখানে আমরা নানা রকম খেলাধুলা করি। বিদ্যালয়ে একজন ক্রীড়া শিক্ষক আছেন। তিনি নিয়মিত খেলাধুলা ও শরীরচর্চা পরিচালনা করে থাকেন।
সৃজনশীল কর্মকাণ্ড : আমাদের বিদ্যালয়ে অনেকগুলো ক্লাব আছে। যেমন- বিতর্ক ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব, আবৃত্তিচর্চা ক্লাব, শরীরচর্চা ক্লাব ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে থাকি।
অনুষ্ঠান : আমাদের বিদ্যালয়ে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের বিদ্যালয়টির বেশ সুনাম রয়েছে। প্রতি বছর ফেব্রæয়ারি মাসে আমাদের বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে নানা রকম আয়োজন থাকে।
ফলাফল : প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় প্রতি বছর আমাদের বিদ্যালয় থেকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী অ+ পায়। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফলও সবার নজর কাড়ে।
উপসংহার : আমাদের বিদ্যালয়টি একটি আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরূপ একটি বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
ভ‚মিকা : মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জাতীয় জীবনের উজ্জ্বলতম অধ্যায়। মহান এই সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি প্রমাণ করেছে যে তারা কোনো অন্যায়ের সামনেই মাথা নত করে না। আর এর ফলাফল হিসেবে আমরা পেয়েছি স্বাধীন স্বদেশ ভ‚মি।
পটভ‚মি : ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা এই উপমহাদেশ ছেড়ে চলে গেলে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তানের দুটি অংশ ছিল- পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী অর্থাৎ বাঙালিদের উপর নানাভাবে শোষণ ও নির্যাতন চালাত। সব ক্ষেত্রে বাঙালিদের বঞ্চিত করত। নিরীহ বাঙালি ধীরে ধীরে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম শুরু করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করলেও পাকিস্তানি সামরিক সরকার শাসনভার হস্তান্তর করল না। ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন।
মুক্তিযুদ্ধের বিবরণ : ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানিরা বর্বর আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৭ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। ১১টি সেক্টরে দেশকে ভাগ করে কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-পুলিশ আনসার সবাই মিলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৪ঠা ডিসেম্বর ভারতীয় মিত্রবাহিনী আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মিলিত হয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তাদের সম্মিলিত আক্রমণে হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। পরাজয় বুঝতে পেয়ে তারা দেশদ্রোহী রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের সহায়তায় এদেশের অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা : মুক্তিযুদ্ধের ফলে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বীকৃতি। পেয়েছি আমাদের ন্যায্য অধিকার। তবে এতসব অর্জনের মাঝে হারানোর বেদনাও আমাদের রয়েছে। স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন ত্রিশ লক্ষ দেশপ্রেমিক জনতা। নির্যাতনের শিকার হয়েছে অসংখ্য মা-বোন। তাই মুক্তিযুদ্ধ আমাদের একই সাথে গর্বের ও বেদনার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
উপসংহার : মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায়। এর চেতনাকে নিজেদের মাঝে ধারণ করার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবেই আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারব।
স্বাধীনতা দিবস
সূচনা : স্বাধীনতা মানে মুক্তি, বন্ধনহীনতা। দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ছিলাম পরাধীন একটি জাতি। ১৯৭১ সালে ২৬শে মার্চ তারিখে সেই শৃঙ্খল থেকে চিরতরে মুক্তির লড়াই শুরু হয়। শত্রæর হাত থেকে স্বদেশ ভ‚মি তখনও মুক্ত না হলেও মনে মনে আমরা নিজেদের সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবতে শুরু করি এদিন থেকেই। তাই ২৬শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস।
ঐতিহাসিক পটভ‚মি : স্বাধীনতা দিবসের গৌরব লাভের পেছনে রয়েছে বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর হতে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত বর্তমান বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের অধীন। তখন এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। এ দীর্ঘ সময় ধরে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক- সকল দিক দিয়েই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদেরকে শোষণ করে আসছিল। এর প্রতিবাদে বাঙালিরা রুখে দাঁড়ায়। ১৯৪৭-৭১ পর্যন্ত পুরোটা সময়ই বাঙালি তার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত থেকেছে, ঝরেছে অনেক রক্ত।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার সংগ্রামের ডাক দেন। এরপর আসে ২৫শে মার্চ কালো রাত। পাকিস্তানি হানাদাররা এ রাতে ঢাকা শহরে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানিদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং দেশকে শত্রæমুক্ত করার নির্দেশ দেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই সর্বস্তরের বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে। অনেক রক্তক্ষয়ের পর অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি ।
স্বাধীনতা দিবসের চেতনা : আমরা সবাই স্বাধীন একটি দেশের নাগরিক। স্বাধীনতা দিবসে এ বিষয়টি আমরা আরও ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারি। এ দেশের জন্য শহিদদের অবদানের মূল্য বুঝতে পারি। দেশের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হই।
উদ্যাপন : প্রতি বছর নানা আয়োজনে দেশের মানুষ এই দিনটি উদযাপন করে। সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো সভা, সেমিনার ইত্যাদির আয়োজন করে। স্কুলগুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সর্বস্তরের মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানায়।
উপসংহার : মুক্তির যে বার্তা আমরা ২৬শে মার্চ তারিখে পেয়েছিলাম তা পরিপূর্ণভাবে অর্জিত হয়েছে অনেক তাজা প্রাণ আর রক্তের বিনিময়ে। তাই এই অর্জনকে আমরা বৃথা যেতে দেব না। দেশকে ভালোবাসব, দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সদা সচেষ্ট থাকব।
বিজয় দিবস
সূচনা : কাল যেখানে পরাজয়ের কালো সন্ধ্যা হয়,
আজ সেখানে নতুন করে রৌদ্র লেখে জয়।
বাঙালির জাতীয় জীবনে ১৬ই ডিসেম্বর এক মহিমান্বিত দিন। এ দিনটি আমাদের বিজয় দিবস। দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রাম শেষে এই দিনেই আমরা চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা লাভে সক্ষম হই।
পটভ‚মি : ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের দীর্ঘ ২০০ বছরের শাসনের অবসান ঘটলে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। পাকিস্তান আবার দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান। বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ নতুন করে পরাধীন হয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হাতে। তাদের অত্যাচারে আমাদের মৌলিক অধিকারসমূহ ভুলুণ্ঠিত হয়। আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের ওপরও তারা আঘাত হানে। এমনকি আমাদের মুখের ভাষা পর্যন্ত কেড়ে নিতে চায়। বাংলার সংগ্রামী জনতা তাদের সমস্ত অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয় লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ এক ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু সমগ্র দেশবাসীকে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নেওয়ার আহŸান জানান। সেই রাতেই পাকিস্তানি হানাদাররা নিরীহ বাঙালির ওপর হামলা চালায়। অসংখ্য মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। তাদের সেই ধ্বংসযজ্ঞ চলে পরবর্তী নয় মাস ধরেই। সর্বস্তরের বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মুক্তিযোদ্ধাগণ দেশের ভেতরে ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকেন। তাঁরা পাক-হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রাণ বাজি রেখে যুদ্ধ করেন।
বিজয় দিবসের তাৎপর্য : দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিসংগ্রাম চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণের মুখে পাকবাহিনী দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর হানাদাররা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। ২৬শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলেও সেই দিনই আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয় নি। আমরা জয়লাভ করেছি ১৬ই ডিসেম্বরে। তাই ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস।
বিজয় দিবসের চেতনা : বিজয় দিবস আমাদের দেশপ্রেমকে শাণিত করে। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে লড়াই করার প্রেরণা পাই। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হই।
উপসংহার : লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা। ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের সেই গৌরবের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
একুশে ফেব্রæয়ারি
সূচনা : “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি?”
২১শে ফেব্রæয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৫২ সালের এ দিনটিতে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আন্দোলন করেছিল হাজার হাজার বাঙালি। ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ নাম না জানা অনেকে। তাই এই দিনটি আমাদের জন্য একই সাথে গৌরবের ও বেদনার।
একুশে ফেব্রæয়ারির প্রেক্ষাপট : ১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এক জনসভায় একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে বাংলার ছাত্র-জনতা আন্দোলনের ডাক দেয়। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রæয়ারি এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। দিনটিতে সর্বস্তরের বাঙালি সরকারি নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। পুলিশ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালালে নিহত হয় অনেকে। হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে গোটা দেশের ছাত্র-জনতা। আন্দোলন আরও তীব্র হয়। এর ফলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে পূর্ববাংলার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
শহিদ মিনার : প্রতি বছর ২১শে ফেব্রæয়ারি আমরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ২১শে ফেব্রæয়ারি শহিদ হওয়া আবুল বরকত যে স্থানে শহিদ হয়েছিলেন সেখানে ২৩শে ফেব্রæয়ারি একটি শহিদ মিনার নির্মিত হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতারাতি ইট দিয়ে স্মৃতিফলকটি গড়ে তোলেন। ২৬ তারিখ পুলিশ সেটি ভেঙে দেয়। অবশেষে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরে ১৯৫৭ সালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের কাজ শরু হয়। ১৯৬৩ সালে শহিদ আবুল বরকতের মা এটি উদ্বোধন করেন।
একুশের চেতনা : বায়ান্নর একুশে ফেব্রæয়ারিতে বাঙালি লড়াই করে তার অধিকার আদায় করেছে। তাই এ দিনটি আমাদের মাঝে অধিকার চেতনা নিয়ে আসে। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সূচনাও ঘটে ভাষা আন্দোলন থেকেই। তাই এ দিনে আমরা সুন্দর দেশ গড়ার প্রেরণা পাই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার সাহস পাই।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : একুশে ফেব্রæয়ারি আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এ দিনটি পৃথিবীর সব ভাষার মানুষ মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের।
একুশে ফেব্রæয়ারি পালন : প্রতি বছর নানা আয়োজনে এ দিনটি সরকারি ও বেসরকারিভাবে পালন করা হয়। সারা দেশের শহিদ মিনারগুলোতে ভোরবেলা শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো হয়। স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা এদিন খালি পায়ে হেঁটে শহিদ মিনারে গিয়ে ফুল দেয়।
উপসংহার : একুশ আমাদের অহংকার। এ দিনটি মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয়। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা দেশের জন্য কাজ করব।
বর্ষাকাল
সূচনা : সকাল দুপুর
টাপুর টুপুর
রিম-ঝিমা-ঝিম বৃষ্টি।
আকাশ উপুড়
ঝাপুর ঝুপুর
বন্ধ চোখের দৃষ্টি।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বর্ষা আসে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক সাজে। গ্রীষ্মের পরই বর্ষার আগমন ঘটে। আষাঢ়Ñশ্রাবণ এ দুই মাস মিলে বর্ষাকাল।
বর্ষার আবহাওয়া : বর্ষাকালে আকাশ ঢাকা থাকে কালো মেঘে। মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জনে প্রকৃতি থেমে থেমে শিউরে ওঠে। ঘন ঘন বৃষ্টি হয়। একটানা কয়েকদিন সূর্যের মুখ দেখা যায় না। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস বয়। বিদ্যুৎ চমকায়, কখনো প্রবল ঝড় হয়। টানা বর্ষণের ফলে অনেক সময় বন্যা হয়।
বর্ষার প্রকৃতি : বর্ষার আগমনে প্রকৃতি থেকে মুছে যায় গ্রীষ্মের ধূসর ক্লান্তি। গাছপালা যেন প্রাণ ফিরে পায়। মাঠ-ঘাট, খাল-বিল, ডোবা-পুকুর, নদী-নালা পানিতে ডুবে যায়। নদীতে ভেসে চলে পালতোলা নৌকা, ডিঙি আর কলা গাছের ভেলা। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক স্থানে লোকজনের চলাচলে খুবই সমস্যা হয়।
বর্ষার ফুল : বর্ষাকালে আমাদের ঝিলে-বিলে ফোটে পদ্ম, শাপলা, কলমিসহ কত ধরনের ফুল। ডাঙায় ফোটে কদম, হিজল, কেয়া, গন্ধরাজ, বেলি ইত্যাদি। মনে হয় চারদিক জুড়ে যেন তখন ফুলের মেলা বসে।
বর্ষার ফল : বর্ষাকালে এদেশে হরেক জাতের ফল পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ জাম, পেয়ারা, আমড়া, লটকন, আতা, বাতাবি লেবু ইত্যাদি।
বর্ষার অবদান : বর্ষাকালে প্রকৃতি যেন ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যায়। এ সময় নদীর পানির সাথে আসা পলিমাটি জমির উর্বরতা বাড়ায়। ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার : কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বর্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ঋতু। অতি বৃষ্টির কারণে বন্যা হওয়ার বিষয়টি বাদ দিলে বর্ষাকাল অবশ্যই আমাদের জন্য আশীর্বাদ।
মা
অথবা, আমার মা
অথবা, আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব
সূচনা : ‘হেরিলে মায়ের মুখ,
দূরে যায় সব দুখ।’
আমাদের সবার জীবনে ‘মা’ একটি মধুমাখা নাম। পৃথিবীতে তিনিই সন্তানের সবচেয়ে আপনজন। আমিও আমার মাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।
সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা : পৃথিবীতে মায়ের কাছে সবচেয়ে দামি তাঁর সন্তান। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সকল ভাবনা সন্তানদের নিয়ে। সন্তান কিসে ভালো থাকবে, নিরাপদ থাকবেÑ তিনি সবসময় কেবল সে ভাবনাই ভাবেন। মায়ের আশিস পেলে সন্তানের দুঃখ দূর হয়। মায়ের মমতা আমাদের চলার পথের পাথেয়।
আমার মা : আমার মা আমাকে অনেক স্নেহ করেন। সবসময় কাছে কাছে রাখেন। আমার অসুখ করলে মায়ের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। রাত-দিন জেগে তিনি আমার সেবা করেন। আমার খুশির জন্য যা যা করা দরকার তার সবই মা করেন।
বন্ধু হিসেবে মা : মা আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু। আমি মায়ের কাছে কোনো কিছুই গোপন করি না। তিনি আমার সব ভালো কাজে উৎসাহ দেন। মন্দ কাজ করলে বুঝিয়ে বলেন। কখনোই বকুনি দেন না। মায়ের কাছেই আমার যত আবদার।
অভিভাবক হিসেবে মা : মা আমাকে মানুষের মতো মানুষ হতে বলেন। তিনি আমার সেরা শিক্ষক। আমার পড়া তৈরিতে মা সাহায্য করেন। কঠিন বিষয়গুলো মা খুব সহজেই বুঝিয়ে দেন।
উপসংহার : মা-ই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। আমি মা-কে কষ্ট দিই না। নানা কাজে তাঁকে সাহায্য করি। সবসময় তাঁর কথামতো চলতে চেষ্টা করি।
আমার প্রিয় শিক্ষক
সূচনা : ছাত্রজীবনে যারা আমাদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে আলোর পথ দেখান তাঁরাই আমাদের শিক্ষক। বিশেষ কিছু গুণের কারণে কোনো কোনো শিক্ষক আমাদের মনে আলাদাভাবে স্থান করে নেন। হয়ে ওঠেন আমাদের প্রিয় শিক্ষক, প্রিয় মানুষ। আমারও তেমনি একজন প্রিয় শিক্ষক আছেন।
আমার প্রিয় শিক্ষক : আমার সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষকের নাম খন্দকার আকরাম হোসেন। স্কুলে তিনি আকরাম স্যার নামে সবার কাছে পরিচিত। তাঁর সততা, নিষ্ঠা ও ব্যক্তিত্ব তাঁকে সবার কাছে অনুসরণীয় করে তুলেছে।
প্রিয় হওয়ার কারণ : আকরাম স্যার আমাদের গণিত পড়ান। গণিতে আমি খুব দুর্বল ছিলাম। গণিত পরীক্ষার আগের দিন ভয়ে কাঁপতাম। আকরাম স্যারের ক্লাস করার পর থেকে সে সমস্যা কেটে গেছে। এটি ছাড়াও ছাত্রদের সাথে তিনি সেভাবে খোলামন নিয়ে মেশেন সেটিও আমাকে আকৃষ্ট করে।
পাঠদান পদ্ধতি : আকরাম স্যারের পাঠদান পদ্ধতি খুবই চমৎকার। তিনি কখনই দেরি করে ক্লাসে আসেন না। খুব সুন্দরভাবে ছাত্রদের অংকগুলো বুঝিয়ে দেন। কে কতখানি বুঝতে পারল সেটিও যাচাই করেন। কেউ না বুঝলে তাকে বকা দেন না। বোঝানোর ক্ষেত্রে নানা ধরনের উদাহরণ ব্যবহার করেন।
চারিত্রিক গুণাবলি : আকরাম স্যার খুব নম্র ও ভদ্র মানুষ। তাঁকে কখনোই রাগতে দেখা যায় না। কাউকে কোনো কাজ দেওয়ার আগে কীভাবে করতে হবে তা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন। ছাত্রছাত্রীদের তিনি নিজের সন্তানের মতোই স্নেহ করেন। এককথায়, একজন ভালো শিক্ষক ও ভালো মানুষ হওয়ার জন্য যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন, তার সবই তাঁর চরিত্রে রয়েছে।
উপসংহার : আকরাম স্যারকে আমি মন থেকে অনেক শ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি। তাঁকে অনুসরণ করে আমি নিজেকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
আমার জীবনের লক্ষ্য
সূচনা : একটি সফল ও সার্থক জীবন পাওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ। মানুষের জীবন ছোট কিন্তু তার কর্মক্ষেত্র অনেক বড়। এ ছোট জীবনে উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে হলে প্রত্যেক মানুষকে জীবনের শুরুতেই সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়।
লক্ষ্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা : জীবন গঠনের জন্য জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি। লক্ষ্যহীন জীবন হলো হালবিহীন নৌকার মতো। তাই লক্ষ্যস্থির না করলে সফলতা পাওয়া অসম্ভব। প্রতিটি মানুষকে জীবনের শুরুতে সঠিক চিন্তা ভাবনা করে লক্ষ্য ঠিক করে সেটাকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হবে।
আমার জীবনের লক্ষ্য : আমি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। আমার ইচ্ছা বড় হয়ে আমি একজন ক্রিকেটার হব।
লক্ষ্য নির্ধারণের কারণ : সাধারণত মানুষের জীবনের লক্ষ্য থাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক ইত্যাদি হওয়া। কিন্তু মানুষের যে কাজটি ভালো লাগে সেটির চর্চা অব্যাহত রাখলেই বেশি সফলতা পাওয়া যায়। ক্রিকেট খেলার প্রতি আমার ভালোলাগা অত্যন্ত প্রবল। ক্রিকেটারদের দেশপ্রেম, মনোবল ও সুশৃঙ্খল জীবন আমাকে অত্যন্ত আকর্ষণ করে। একারণেই আমি ক্রিকেটার হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছি। তাছাড়া বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেটে বাংলাদেশেরও একটি শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। তাই বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা এখন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারে।
লক্ষ্য পূরণে করণীয় : জীবনের লক্ষ্য পূরণে আমাকে এখন থেকেই মনোযোগী হতে হবে। শুধু ভালো ক্রিকেট খেললেই ভালো ক্রিকেটার হওয়া যায়। সেই সাথে পড়াশোনায়ও ভালো হওয়া প্রয়োজন। তাহলেই ক্রিকেটের সব আধুনিক দিকগুলো ঠিকঠাক বুঝতে পারব। এখন থেকেই ক্রিকেটের সব খুঁটিনাটির বিষয়ে আমাকে জানতে হবে। নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে।
উপসংহার : বাংলাদেশের ক্রিকেট অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। একজন আদর্শ ক্রিকেটার হয়ে আমি সে সম্ভাবনাকে সত্যে পরিণত করতে চাই। দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে চাই।
ছাত্রজীবন
অথবা, ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য
সূচনা : বিদ্যাশিক্ষার জন্য শিশুকাল থেকে শুরু করে যে সময়টুকু আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিবাহিত করি তাকেই ছাত্রজীবন বলে। ছাত্রজীবন হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। ভবিষ্যত জীবনের সফলতার জন্য এ সময় থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়।
ছাত্রজীবনের গুরুত্ব : ভবিষ্যৎ জীবনের সুখ, সমৃদ্ধি ও উন্নতির বীজ ছাত্রজীবনেই বপন করতে হয়। ছাত্রজীবনের সুশিক্ষাই ভবিষ্যৎ জীবনের পাথেয়। আমাদের জীবনে আত্মপ্রতিষ্ঠা ছাত্রজীবনের সাধনার ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল।
ছাত্রজীবনের কর্তব্য : অধ্যায়ন করাই ছাত্রজীবনের প্রথম ও প্রধান তপস্যা। ছাত্রসমাজই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। এজন্য ছাত্রদের অন্যতম কাজ হলো শিক্ষা-দীক্ষায় সমৃদ্ধ ও আদর্শ জীবন গঠন করা। ছাত্রসমাজকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত এবং শারীরিক শক্তিতে ও মানসিক দক্ষতায় বলীয়ান হতে হবে। যোগ্যতাসম্মন্ন ও চরিত্রবান ছাত্রদের জাতি গঠনে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
লক্ষ্য নির্ধারণ : লক্ষ্যহীন জীবন হালবিহীন জাহাজের মতো। ছাত্রজীবনেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে।
চরিত্র গঠন : চরিত্র মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। ছাত্রজীবনই চরিত্র গঠনের উপযুক্ত সময়। ছাত্রদের চরিত্র গঠনে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। সৎ পথে চলা, সত্য কথা বলা, লোভ-লালসা থেকে বিরত থাকা, খারাপ কাজ ও কুসঙ্গ থেকে দূরে থাকা, ছোটদের স্নেহ করা ও বড়দের শ্রদ্ধা করা ইত্যাদি ভালো গুণগুলো ছাত্রজীবনেই চর্চা করতে হবে।
খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য গঠন : পড়াশোনার পাশাপাশি শরীর গঠনের প্রতিও ছাত্রদের মনোযোগী হতে হবে। স্বাস্থ্য মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। সুস্থ শরীরেই সুস্থ মনের বাস। তাই ছাত্রজীবনে নিয়মিত খেলাধুলার মাধ্যমে স্বাস্থ্য গঠনে সচেষ্ট হতে হবে।
সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ : ছাত্রদের মানসিক বিকাশে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।এক্ষেত্রে যার যে কাজ ভালো লাগে সে কাজে মনোযোগ দিতে হবে। বিতর্ক চর্চা, আবৃত্তি চর্চা, বই পড়া, ভ্রমণ, ছবি তোলা, বিজ্ঞান চর্চা, লেখালেখি ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের বুদ্ধিবৃত্তিকে আরও তী² করে তোলা সম্ভব।
জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ : ছাত্ররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। তাই ছাত্রজীবনে সকলের উচিত জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা ছাত্রদের কর্তব্য।
উপসংহার : ছাত্রজীবনই জীবনের সবেচেয় গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এ সময় থেকেই ছাত্রদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে হবে। ছাত্ররাই ভবিষ্যতে দেশের সকল ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিবে। তাই নিজেদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারলেই দেশ ও জাতির জন্য তারা গৌরব বয়ে আনতে সক্ষম হবে।
মানুষের বন্ধু গাছপালা
অথবা, বৃক্ষরোপণ অভিযান
অথবা, গাছ লাগান-পরিবেশ বাঁচান
সূচনা : বৃক্ষ বা গাছপালা মানুষের অকৃত্রিম ও চিরস্থায়ী বন্ধু। মানব জাতির সামগ্রিক কল্যাণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের অবদান অসামান্য। এ ব্যাপারে সমগ্র বিশ্বই আজ সচেতন। বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আমাদের দেশেও ¯েøাগান উঠেছে, ‘গাছ লাগান-পরিবেশ বাঁচান’।
বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা : আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে গাছের মতো অবদান আর কারও নেই। গাছ থেকেই আমরা পাই জীবনধারনের জন্য খাদ্য, বস্ত্র তৈরির তুলা, বাসগৃহ ও আসবাবপত্র নির্মাণের প্রয়োজনীয় কাঠ ইত্যাদি। বৃক্ষ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন দেয় এবং বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। বৃক্ষ থেকে আমাদের জীবনরক্ষাকারী নানারকম ওষুধ তৈরি হয়। গাছপালা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে পৃথিবীকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচায়।
বাংলাদেশের বনাঞ্চল : একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্যে দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভ‚মি থাকা আবশ্যক। কিন্তু বাংলাদেশে বনভ‚মি আছে মাত্র ১৭ ভাগ। যেটুকু রয়েছে তাও দ্রæতগতিতে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী এবং লোভী বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের জন্য দায়ী।
বৃক্ষরোপণ অভিযান : গাছ না লাগিয়ে যদি কেবল কেটে ফেলা হয় তাহলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে। এজন্য বৃক্ষরোপণে সমাজের সকল স্তরের লোকজনকে উৎসাহিত করতে হবে।
আমাদের করণীয় : বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল করার জন্যে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। বাড়ির আশেপাশে খালি জায়গাগুলোতে যথাসাধ্য গাছ লাগাতে হবে। বড়দের পাশাপাশি শিশুদের এ ব্যাপারে এখন থেকেই সচেতন করে তুলতে হবে। একটি গাছ কাটার প্রয়োজন হলে আগে কমপক্ষে দুটি গাছ লাগাতে হবে।
উপসংহার : মানুষ ও প্রাণীকুলের সুরক্ষিত ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্যে বৃক্ষরোপণ অভিযান অত্যন্ত জরুরি একটি পদক্ষেপ। এ অভিযান সফল হলে আমাদের জীবন সমৃদ্ধ হবে। দেশ ভরে উঠবে সবুজের প্রশান্তিতে।
বিজ্ঞানের অবদান
অথবা, দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
সূচনা : বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। আজ বিজ্ঞান আমাদের কাছে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই অপরিহার্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটা মুহূর্তও বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া আমরা চলতে পারি না। এখন যে-কোনো ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত মানুষই বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত যাবতীয় কাজকর্মের মধ্যে বিজ্ঞানের অবদান লক্ষণীয়। বলা যায়, এখন বিজ্ঞানই মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের নিয়ন্ত্রক।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান : বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে মানুষের একটি মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। এখন প্রতি মুহূর্তে, প্রতি পদক্ষেপে সভ্য-মানুষ বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে জীবন-ধারণ করছে। এই যে বসে লিখছি- হাতের কলম ও কালি, লেখার কাগজ, এমনকি বসার জায়গাটিতে পর্যন্ত বিজ্ঞানের প্রভাব রয়েছে। আমাদের পথে-
ঘাটে, অফিস-আদালতে, স্কুল-কলেজে সব জায়গায়ই বিজ্ঞানের অবদান অসীম। শুধু তাই নয়, আমাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের এই প্রাথমিক প্রয়োজনটুকুও বিজ্ঞান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি কাজেই আমরা বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল।
শহুরে জীবনে বিজ্ঞান : শহুরে জীবনে মানুষ আর বিজ্ঞান অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শহরে আমাদের ঘুম ভাঙে এলার্মঘড়ির শব্দে। ঘুম থেকে উঠে দিনের শুরু করি টুথপেস্ট আর টুথব্রাশ দিয়ে। এরপর আছে সংবাদপত্র। তারপর গ্যাস অথবা হিটার কিংবা স্টোভে তাড়াতাড়ি রান্না করে খাই। রিক্সা, অটোরিক্সা, বাস, ট্রেন বা মোটরসাইকেলে চড়ে কর্মস্থলে পৌঁছাই। সিঁড়ির বদলে লিফটে উঠে শ্রেণিকক্ষে বা অফিসকক্ষে যাই। টেলিফোন, টেলিগ্রাম, ফ্যাক্স, ই-মেইল, ইন্টারনেট ইত্যাদির সাহায্যে দূর-দূরান্তে খবর পাঠাই। কম্পিউটারে কাজের বিষয় লিখে রাখি। ক্লান্ত দেহটাকে আরাম দেওয়ার জন্য এসি কিংবা ইলেকট্রিক পাখার নিচে বসিÑ এই ভাবেই সারাদিন বিজ্ঞানের সাহায্যে আমরা জীবন চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দিনের অবসন্নতা দূর করতে মিউজিক প্লেয়ার কিংবা টিভি চালিয়ে মনটাকে সতেজ রাখতে চেষ্টা করি। ছেলে-মেয়েরা কম্পিউটারে তাদের নোট রাখে; কখনো কখনো ভিডিও গেমস্ খেলে। এমনিভাবে জীবনের প্রতি পদক্ষেপেই বিজ্ঞানের অবদান অনুভব করি।
গ্রামীণ জীবনে বিজ্ঞান : যোগাযোগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদানের জন্য মানুষ আজ দূরকে করেছে নিকট প্রতিবেশী। বাস, রিক্সা, ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল সবই এখন গ্রামীণ জীবনের অংশ। ফলে বিজ্ঞান শহরজীবনকে অতিμম করে পৌঁছে গেছে গ্রামে। বর্তমানে গ্রাম্য জীবনেও বিজ্ঞানের উপর নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। টিভি, রেডিও, মোবাইল ফোন, টর্চ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক দ্রব্য, ট্রাক্টর ইত্যাদি এখন গ্রামীণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে। শহরের মানুষ যেমন নিজেদের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে বিজ্ঞানকে নিত্যসঙ্গী করেছে, তেমনি গ্রামের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষের জীবনেও ইলেকট্রিক হিটার, রান্নার গ্যাস, প্রেসার কুকার, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাবের অপকারিতা : দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা মানুষের অনেক ক্ষতি করেছে। যন্ত্রের উপর অতিরিক্ত নির্ভর করতে গিয়ে মানুষ পরিশ্রম-বিমুখ হয়ে উঠছে। মানসিক পরিশ্রমের তুলনায় শারীরিক পরিশ্রম কম করছে। ফলে মানুষ নানা জটিল রোগে আμান্ত হচ্ছে। মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষের জীবনে কৃত্রিমতা ঘনীভূত হচ্ছে। মানুষের স্নেহ, মায়া, মমতার মতো সদগুণগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়ছে। বিজ্ঞান-নির্ভর যন্ত্রশক্তির উপর অন্ধ আস্থা স্থাপন করতে গিয়ে মানুষ যান্ত্রিক হয়ে উঠছে।
উপসংহার : আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা প্রয়োজনীয় বস্তু আজ একেবারে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে বিজ্ঞান। সকাল থেকে সন্ধ্যা, আবার সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত যা কিছু আমাদের প্রয়োজনীয় তার সবই বিজ্ঞানের অবদান। বিজ্ঞান আজ আমাদের নিত্য সহচর। বিজ্ঞান আমাদের জীবন-যাপনকে করেছে সহজসরল। তবে দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব শুধু যে কল্যাণ করছে তা নয়, অনেক ক্ষতিও করছে। তাই বিজ্ঞানের অপব্যবহার না করে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।
নৌকাভ্রমণ
অথবা, একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
সূচনা : অবসর বিনোদনের একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম হলো ভ্রমণ। আমার কাছে এটিই সবচেয়ে পছন্দের মাধ্যম। এর মাধ্যমে বিনোদনের পাশাপাশি অনেক নতুন বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়। আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই এদেশে সব ঋতুতেই নৌকা ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করা যায়।
ভ্রমণের আয়োজন : স্কুলের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে। দীর্ঘদিনের পড়াশোনার চাপ আর মানসিক ধকল থেকে মুক্তি লাভের জন্য আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ভ্রমণে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ঠিক হলো নৌকায় চড়ে ভ্রমণের পাশাপাশি ছোটোখাটো বনভোজনও করব আমরা।
যাত্রা : নির্দিষ্ট দিনে সকাল বেলায় আমরা সবাই নদীর ঘাটে গিয়ে উপস্থিত হলাম। মাঝির কথামতো সবাই নৌকায় উঠলাম। সাথে নিলাম হালকা নাস্তা আর দুপুরে রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ও জিনিসপত্র। মাঝি নৌকা ছেড়ে দিল।
ভ্রমণের বর্ণনা : নৌকা প্রথমে কিছুক্ষণ ধীর গতিতে চলল। এরপর স্রোতের অনুকুলে আসা মাত্রই তরতর করে পানি কেটে এগিয়ে যেতে লাগল। নদীর বুকের শীতল বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে গেল। নদীতে ছোট-বড় অনেক রকমের নৌকা ছিল। অধিকাংশই ছিল জেলে নৌকা। মাঝে মাঝে বড় বড় ট্রলার আর লঞ্চও আসা-যাওয়া করছিল। নদীর তীরের সবুজ বন, ফসলের মাঠ, ছোট ছেলেমেয়েদের গোসলের দৃশ্য দেখে আমরা মুগ্ধ হলাম। নৌকার ভেতর আমরা সবাই মিলে হাসি আর আনন্দে মেতে রইলাম। কেউ গান গাইল, কেউ কৌতুক শোনাল, কেউ-বা শোনাল আবৃত্তি। দুপুরের একটু আগে নৌকাটি নদীর একটি বালুচরে এসে ভিড়ল। আমরা নৌকা থেকে নেমে প্রথমে রান্নার ব্যবস্থা করলাম। মাঝিকে রান্নাবান্নার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে সবাই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। নদীতে সাঁতার আর খুব দুষ্টুমি হলো। এরপর মাঝির রান্না করা খাবারগুলো মজা করে খেলাম। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তারপর ফেরার জন্য নৌকায় উঠে বসলাম। সন্ধ্যার দিকে নৌকা গ্রামের ঘাটে এসে পৌঁছাল। শেষ হলো আমাদের ভ্রমণ।
উপসংহার : সব মিলিয়ে ভ্রমণটি দারুন উপভোগ্য ছিল। সে দিনের স্মৃতি আমার অনেক দিন মনে থাকবে।
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল
অথবা, আমার প্রিয় ফুল
সূচনা : বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। এটি আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি ফুল। এদেশের পুকুর, দিঘি, খালবিল, ডোবা ইত্যাদি স্থানে শাপলা ফুটে থাকে। শাপলা আমার প্রিয় ফুল।
বিবরণ : শাপলা হলো একটি লতাগুল্ম ধরনের জলজ উদ্ভিদ। অর্থাৎ এটি পানিতে জন্মায় ও বেড়ে ওঠে। এরা সাধারণত স্রোতবিহীন জলাশয়ে জন্মে। এর মূলটি জলাশয়ের নিচে কাদার ভেতরে থাকে। গোড়া থেকে নল বা ডাঁটা বৃদ্ধি পেয়ে একসময় পানির ওপর ভেসে ওঠে। শাপলার পাতাগুলো গোলাকৃতির এবং বড় বড়। থালার মতো দেখতে পাতাগুলো পানিতে ভাসমান অবস্থায় থাকে। কুঁড়ি অবস্থায় শাপলা দেখতে অনেকটা কলার মোচার মতো। বর্ষার মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে শরৎকালের শেষ অবধি এ ফুল ফুটতে দেখা যায়। আমাদের দেশে সাদা, লাল ইত্যাদি রঙের শাপলা ফোটে। তবে সাদা রঙের শাপলাই আমাদের জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
সৌন্দর্য : সুগন্ধ না থাকলেও শাপলা দেখতে খুবই সুন্দর। বর্ষাকালে বিলে-ঝিলে ফুটে থাকা শাপলা দেখে মন ভরে যায়।
ব্যবহার : শাপলা ফুল দিয়ে শিশুরা মালা গাঁথে। এর ডাঁটা তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। শাপলার শেকড় বা শালুক পুড়িয়ে বা সিদ্ধ করে খাওয়া হয়।
উপসংহার : শাপলা আমাদের জাতীয় প্রতীক। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান।
বাংলাদেশের ষড়ঋতু
সূচনা : ‘সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভ‚মি।’
অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা বাংলাদেশের প্রকৃতি। ঋতুতে ঋতুতে বাংলার প্রকৃতি সেজে ওঠে নানা বৈচিত্র্যময় রূপে। আর তার গুণেই এদেশ সৌন্দর্যের দিক দিয়ে সকল দেশের রানি।
ঋতুর পরিচয় : বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রতি দুই মাসে একটি করে ঋতু বদল হয়। ঋতুগুলো হচ্ছেÑ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত।
গ্রীষ্ম : গ্রীষ্ম আমাদের দেশের প্রথম ঋতু। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এ দুই মাস মিলে গ্রীষ্ম ঋতু। এ সময় প্রচণ্ড গরম পড়ে। রৌদ্রের তাপ তখন অসহ্য লাগে। নদী-নালা, খাল-বিলের জল শুকিয়ে খা খা করে। কখনো কখনো এ ঋতুতে কালবৈশাখী ঝড় হয়।
বর্ষা : আষাঢ় ও শ্রাবণÑ এ দুই মাস মিলে বর্ষাকাল। তখন অবিরাম ধারায় বৃষ্টি পড়ে। কখনো হুড়মুড় করে মুষলধারে বৃষ্টি নামে। কখনো বা হয় ঝিরিঝিরি ইলশেগুঁড়ি। খাল-বিল, নদী-নালা পানিতে ভরে যায়।
শরৎ : বর্ষার পর আসে শরৎ। ভাদ্র ও আশ্বিনÑ এ দুই মাস মিলে শরৎ ঋতু। আকাশ তখন হয় ঘন নীল। তার গায়ে তুলোর মতো সাদা সাদা মেঘেরা ভেসে বেড়ায়। তখন চারপাশে শিউলি ও কাশফুলের অপূর্ব সমারোহ দেখা যায়।
হেমন্ত : শরতের পরই চুপি চুপি আসে লাজুক ঋতু হেমন্ত। সাথে করে আনে শীতের আগমনী বার্তা। ভোরবেলায় তখন শীত শীত লাগে। সোনালি পাকা ধানে গ্রামের মাঠগুলো ভরে ওঠে। কার্তিক ও অগ্রহায়ণÑ এ দুই মাস মিলে হেমন্তকাল।
শীত : পৌষ ও মাঘÑ এ দুই মাস মিলে শীতকাল। এ সময় হাড়কাঁপানো শীত অনুভ‚ত হয়। রাতের বেলা লেপ কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হয়। দিনের বেলাতেও গায়ে গরম কাপড় পরতে হয়। এ সময় ঘরে ঘরে পিঠাÑপায়েস ও খেজুরের রস খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।
বসন্ত : শীতের শেষে আসে বছরের শেষ ঋতু বসন্ত। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস মিলে এ ঋতু। এ সময় ফুরফুরে দখিনা বাতাস বয়। মন প্রাণ খুশিতে নেচে ওঠে। সবুজ পত্রপল্লব আর নানা রঙের ফুলে প্রকৃতি সতেজ রূপ ধারণ করে।
উপসংহার : বাংলাদেশের ছয়টি ঋতুর সৌন্দর্যই অতুলনীয়। ঋতুর এ বৈচিত্র্যই আমাদের প্রকৃতিকে করেছে অসামান্য সুন্দর।



Leave a Reply