সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের মধ্যে হিসাব বা গণনা করার ধারণা সৃষ্টি হয়। শুরুতে গণনার কাজে মানুষ হাতের আঙ্গুলকে ব্যবহার করত। পরবর্তীতে আঙ্গুলে গণনার সীমাবদ্ধতা থেকে বের হয়ে পড়ে এবং শুরু হয় কাঠি, নুড়িপাথর, দড়ির গিট ইত্যাদি উপকরণের ব্যবহার। উন্নতির ধাপে ধাপে গণনার জগতে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করে। সাথে সাথে বিভিন্ন উপায়ে গণনার পদ্ধতিও চালু হয়।
সংখ্যা আবিষ্কারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
অনুমান করা হয় খৃস্টপূর্ব ৩২০০ সালে হায়ারোগিøফিক্স (Hieroglyphics) চিহ্ন বা সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বপ্রথম গণনার কাজে লিখিত সংখ্যা বা চিহ্নের প্রচলন শুরু হয়। এরপর শুরু হয় মেয়ান (Mayan) পদ্ধতি। তারা ব্যবহার করতো ২০ ভিত্তিক সংখ্যা এবং ৫ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি। খৃস্টপূর্ব ৩৪০০ সালে রোমানরা তাদের নিজস্ব বর্ণমালা ব্যবহারের মাধ্যমে রোমান (Roman) সংখ্যা পদ্ধতি চালু করে। খৃষ্টপূর্ব ৪০০০ সালের দিকে ভারতবর্ষে দশভিত্তিক সংখ্যার প্রচলন হয় এবং আরবের পÐিতেরা তাদের এ পদ্ধতির উপর ব্যাপক গবেষণা করে দশভিত্তিক সংখ্যা প্রকাশের কৌশল ও গণনার প্রবর্তন করেন। পরবর্তীতে তা আরব থেকে ইউরোপে প্রবেশ করে। খৃষ্টপূর্ব ৪০০ সালে গ্রিসে ২৭টি গ্রিক আলফাবেট নিয়ে ১০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি চালু হয়।
মিশরীয়রা হিসাবে ব্যালেন্স না থাকলে তাকে ‘নফর’ বা ‘শূন্য’ দিয়ে প্রকাশ করে। কোন কিছু নাই এরূপ বোঝাতে ভারতীয়রা সংস্কৃত শব্দ ‘শূন্য’ ব্যবহার করতো। ৬০০ সালের দিকে ঋণাত্বক সংখ্যা ব্যবহার করা হয় কারো ঋণ বোঝানোর জন্য। ভগ্নাংশ সংখ্যা প্রথম প্রবর্তন হয় মিশরে। তবে গ্রিক ও ভারতীয় গণিতবিদরা খৃষ্টপূর্ব অর্ধশতাব্দীতে ভগ্নাংশ সংখ্যার তত্ত¡ ও উপপাদ্য আবিষ্কার করেন। দার্শনিক এরিস্টটল সর্বপ্রথম অসীম (∝) এর সংকেত প্রচলন করেন।
প্রাচীন ভারতীয় গণিতবিদ পিংগালা (চরহমধষধ) শূন্য (“০”) আবিষ্কারের মাধ্যমে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে প্রথম বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির ধারণা দেন। সতের শতাব্দীতে গটফ্রেইড লিবনিজ (Gottfried Leibiz)) একটি আর্টিকেলে আধুনিক
বাইনারি সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে ০ এবং ১ ব্যবহার করেন। প্রখ্যাত ইংরেজ গণিতবিদ জর্জ বুল (George Boole) ১৮৫৪ সালে সত্য এবং মিথ্যা এ দুই যুক্তি বা লজিকের উপর ভিত্তি করে বুলিয়ান বীজগণিত রচনা করেন। বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হওয়ার পর সত্য এবং মিথ্যাকে যথাক্রমে বাইনারি ১ ও ০ দিয়ে পরিবর্তন করার মাধ্যমে কম্পিউটারে সমস্ত গাণিতিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়। ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির লজিক গেটে এ সংখ্যা পদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে। তাছাড়া সকল আধুনিক কম্পিউটারে বইনারি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
আরো পড়ুনঃ