নবম-দশম/এসএসসি রসায়ন দ্বিতীয় অধ্যায় পদার্থের অবস্থা এর পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি,জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো।
এসএসসি রসায়ন দ্বিতীয় অধ্যায় পদার্থের অবস্থা
পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি
পদার্থ : যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, যার ভর আছে, জায়গা দখল করে এবং যার জড়তা আছে, তাকে পদার্থ বলে। টেবিল, চেয়ার, মাটি, পানি, বাতাস ইত্যাদি পদার্থের উদাহরণ।
পদার্থের অবস্থাভেদ : প্রকৃতিতে পদার্থ তিন অবস্থায় থাকতে পারে। যথা : ১. কঠিন, ২. তরল ও ৩. গ্যাসীয়। সাধারণ তাপমাত্রায় তামা, লোহা, কাঠ প্রভৃতি কঠিন পদার্থ; পারদ, পানি, দুধ প্রভৃতি তরল পদার্থ এবং অক্সিজেন, নাইট্রোজেন প্রভৃতি হলো গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থ। আবার অবস্থা বিশেষে নির্দিষ্ট কোনো পদার্থ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় থাকতে পারে। যেমন : বরফ, পানি ও জলীয়বাষ্প হলো যথাক্রমে পানির কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা।
কঠিন পদার্থ : সাধারণ অবস্থায় যেসব পদার্থের নির্দিষ্ট আকার এবং আয়তন থাকে, তাদের কঠিন পদার্থ বলে। যেমন : পাথর, লবণ, লোহা, বরফ ইত্যাদি।
কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য :
১. নির্দিষ্ট তাপ ও চাপে কঠিন পদার্থের আকার ও আয়তন সর্বদা নির্দিষ্ট থাকে।
২. তাপ প্রয়োগে সাধারণত কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয়। যেমন : বরফকে উত্তপ্ত করলে তা গলে পানিতে পরিণত হয়।
ব্যতিক্রম : ন্যাপথালিন, আয়োডিন, কর্পূর, নিশাদল প্রভৃতি কঠিন পদার্থ তাপের প্রভাবে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় এবং শীতল করলে বাষ্প থেকে কঠিন অবস্থায় ফিরে আসে। একে ঊর্ধ্বপাতন বলে।
৩. প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগেও কঠিন পদার্থের আয়তনের বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয় না।
৪. কঠিন পদার্থের দৃঢ়তা থাকে। বাইরের থেকে বল প্রয়োগ না করলে কঠিন পদার্থের আকার ও আয়তনের বিকৃতি ঘটানো যায় না।
তরল পদার্থ : সাধারণ অবস্থায় যেসব পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট কিন্তু আকার নির্দিষ্ট নয়, তাদের তরল পদার্থ বলে। যেমন : পানি, তেল, দুধ প্রভৃতি তরল পদার্থ।
তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্য :
১. নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে তরল পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট থাকে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার থাকে না। যখন যে পাত্রে রাখা হয়, তখন সেই পাত্রের আকার ধারণ করে।
২. তাপমাত্রা বাড়ালে তরলের আয়তন বাড়ে। তরলের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়াতে থাকলে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছে তরল বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে।
৩. তরলের তাপমাত্রা ক্রমশ কমালে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এসে তরল কঠিনে পরিণত হয়।
৪. তরলের অণুসমূহ স্থান পরিবর্তন করতে পারে। এজন্য তরল পদার্থের কোনো নির্দিষ্ট আকার থাকে না।
গ্যাসীয় পদার্থ : সাধারণ অবস্থায় যে পদার্থের নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন থাকে না, তাকে গ্যাসীয় পদার্থ বলে। যেমন : বায়ু, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি গ্যাসীয় পদার্থ।
গ্যাসীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য :
১. গ্যাসীয় পদার্থের কোনো নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই। গ্যাস বর্ণহীন বলে তা দেখা যায় না।
২. গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ যত কমই হোক না কেন, তা যে পাত্রে রাখা হবে সে পাত্রের পুরো স্থান দখল করে থাকে।
৩. গ্যাসীয় পদার্থের অণুসমূহের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি, তাই আকর্ষণ শক্তি অনেক কম, ফলে তারা প্রায় মুক্তভাবে চলাচল করে।
৪. একই তাপমাত্রা ও চাপে সমআয়তন সব গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু থাকে।
পদার্থের রূপান্তর বা অবস্থার পরিবর্তন : অবস্থাবিশেষে নির্দিষ্ট কোনো পদার্থ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় থাকতে পারে। যেমন : বরফ, পানি ও জলীয় বাষ্প একই পদার্থ। তাপ বাড়িয়ে বা কমিয়ে এদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো যায়। সাধারণ তাপমাত্রায় পানি একটি তরল পদার্থ। পানিকে ঠাণ্ডা করলে 0°C ঈ তাপমাত্রায় তা বরফে পরিণত হয়। এই বরফে তাপ দিলে তা আবার পানিতে পরিণত হয়। পুনরায় ১০০°C ঈ তাপমাত্রায় পানি জলীয়বাষ্পে রূপান্তরিত হয়। জলীয় বাষ্পকে ঠাণ্ডা করলে তা পুনরায় পানিতে পরিণত হয়। এভাবে তাপের পরিবর্তন করে পদার্থকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তর বা পরিবর্তন করা যায়।
কণার গতিতত্ত¡ : সকল পদার্থই ক্ষুদ্রতম কণিকা দ্বারা তৈরি এবং তা কঠিন, তরল অথবা গ্যাসীয় এই তিন অবস্থার যেকোনো একটি অবস্থায় থাকে। সকল অবস্থায় পদার্থের কণাসমূহ গতিশীল থাকে।
আন্তঃআণবিক দূরত্ব : পদার্থ মাত্রই অনেক অণুর সমষ্টি। অণুগুলো একত্রে পাশাপাশি থাকে। পাশাপাশি থাকার কারণে এগুলোর মধ্যে কিছু ফাঁকা জায়গা থেকে যায়। দুটি অণুর মধ্যবর্তী এরূপ ফাঁকা জায়গা বা দূরত্বকে আন্তঃআণবিক দূরত্ব বলে।
আন্তঃআণবিক শক্তি : প্রত্যেক পদার্থের অণুসমূহ পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এ আকর্ষণ শক্তিকে আন্তঃআণবিক শক্তি বলা হয়। আকর্ষণের পরিমাণ বস্তুর প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। কঠিন পদার্থের আন্তঃআণবিক শক্তি সবচেয়ে বেশি। এজন্যই অণুগুলো পরস্পরের খুব কাছাকাছি এবং দৃঢ়ভাবে অবস্থান করে। তাই নড়াচড়া করলেও স্থানান্তরিত হতে পারে না। তরল পদার্থের আন্তঃআণবিক শক্তি কঠিন পদার্থের তুলনায় কম। সেজন্য অণুগুলো কিছুটা দূরে অবস্থান করে এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে। বায়বীয় পদার্থের আন্তঃআণবিক শক্তি সবচেয়ে কম। সেজন্যই অণুগুলো বেশ দূরে দূরে অবস্থান করে এবং কোনো আবদ্ধ পাত্রে না রাখলে তা চারদিকে মুক্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্যাপন : কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বস্তুর স্বতঃস্ফ‚র্ত ও সমভাবে পরিব্যাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। ব্যাপন প্রক্রিয়ায়-
১. পদার্থের অণুগুলো বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
২. ব্যাপন গ্যাসে-গ্যাসে, তরলে-তরলে, তরলে-গ্যাসে, কঠিনে-তরলে এবং কঠিনে-গ্যাসে ঘটতে পারে।
৩. সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের সময় প্রয়োজনীয় গ্যাসের আদান-প্রদান ব্যাপনের মাধ্যমে ঘটে।
নিঃসরণ : সরু ছিদ্র পথ দিয়ে কোনো গ্যাসের অণুসমূহের উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে নিঃসরণ বলা হয়। উচ্চচাপের প্রভাবে এটি একটি গ্যাসীয় দ্রæত প্রক্রিয়া। এটি ছিদ্র পথে অর্থাৎ নিয়ন্ত্রিত পথে ঘটে।
দহন : কোনো পদার্থকে বাতাসে অক্সিজেনের উপস্থিতিতে পোড়ালে তাকে দহন বলে। সকল দহনেই তাপশক্তি নির্গত হয়। মোমের জ্বলন বা দহনের ফলে ঈঙ২(ম) ও ঐ২ঙ (ম) এবং এর সাথে আরও উৎপাদিত হয় তাপ ও আলো।
গলন : কোনো কঠিন পদার্থের তরলে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে গলন বলে। গলন চলাকালীন পদার্থের তাপমাত্রা স্থির থাকে।
গলনাংক : যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ গলে তরলে পরিণত হতে শুরু করে সেই নির্দিষ্ট তাপমাত্রাকে ওই কঠিন পদার্থের গলনাংক বলে। যেমন : ০ঈ তাপমাত্রায় বরফ গলে পানিতে পরিণত হয়। সুতরাং বরফের গলনাংক ০ঈ।
স্ফুটন : কোনো তরল পদার্থের বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে স্ফুটন বলে। স্ফুটন চলাকালীন অবস্থায় পদার্থের তাপমাত্রা স্থির থাকে।
স্ফুটনাংক : যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো তরল ফুটতে থাকে এবং বাষ্পে পরিণত হতে থাকে, সেই নির্দিষ্ট তাপমাত্রাকে ওই তরল পদার্থের স্ফুটনাংক বলে। যেমন : পানির স্ফুটনাংক ১০০ঈ। অর্থাৎ ১০০ঈ তাপমাত্রায় পানি ফুটতে থাকে এবং বাষ্পে পরিণত হয়।
সুপ্ততাপ : যখন কোনো পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন চলতে থাকে তখন পদার্থ যে তাপ গ্রহণ বা বর্জন করে তা ঐ পদার্থের তাপমাত্রার কোনো পরিবর্তন ঘটায় না। এই তাপকে সুপ্ততাপ বলে। সুপ্ততাপ গ্রহণ করে কঠিন পদার্থ তরলে ও তরল পদার্থ গ্যাসীয় পদার্থে এবং সুপ্ততাপ বর্জন করে গাসীয় পদার্থ তরলে ও তরল পদার্থ কঠিনে পরিণত হয়।
ঊর্ধ্বপাতন : যে প্রক্রিয়ায় কোনো কঠিন পদার্থ তাপের প্রভাবে তরল অবস্থাপ্রাপ্ত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে রূপান্তরিত হয় এবং ঐ বাষ্পকে ঠাণ্ডা করলে সরাসরি ঐ কঠিন পদার্থই পাওয়া যায়, সেই প্রক্রিয়াকে ঊর্ধ্বপাতন বলা হয়। ন্যাপথালিন, আয়োডিন, কর্পূর, কঠিন ঈঙ২, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (নিশাদল) ইত্যাদি ঊর্ধ্বপাতনযোগ্য পদার্থ।
দ্বিতীয় অধ্যায় পদার্থের অবস্থা জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ পদার্থের তিন অবস্থায় রূপান্তরের কারণ কী?
উত্তর : পদার্থের তিন অবস্থায় রূপান্তরের কারণ তাপের প্রভাব।
প্রশ্ন \ ২ \ পদার্থের কোন অবস্থায় আকর্ষণ বল বেশি?
উত্তর : পদার্থের কঠিন অবস্থায় আকর্ষণ বল বেশি।
প্রশ্ন \ ৩ \ বরফে তাপ দিলে কী হবে?
উত্তর : বরফে তাপ দিলে তা পানিতে পরিণত হবে।
প্রশ্ন \ ৪ \ জলীয়বাষ্পকে খুব বেশি ঠাণ্ডা করলে কী ঘটবে?
উত্তর : জলীয়বাষ্পকে খুব বেশি ঠাণ্ডা করলে একসময় পানি জমাট বেঁধে কঠিন বরফে পরিণত হবে।
প্রশ্ন \ ৫ \ কোনো আবদ্ধ তরল পদার্থে তাপ দিলে কী ঘটে?
উত্তর : কোনো আবদ্ধ তরল পদার্থে তাপ দিলে তা বাষ্পে পরিণত হবে।
প্রশ্ন \ ৬ \ গতিশক্তি কী?
উত্তর : পদার্থ যেসব অতিক্ষুদ্র কণার সমন্বয়ে গঠিত সেই কণাগুলো পরমশূন্য তাপমাত্রা ব্যতীত অন্য তাপমাত্রায় নড়াচড়া বা চলাফেরার ফলে পদার্থ এক ধরনের শক্তি লাভ করে। পদার্থের এই শক্তিকে গতিশক্তি বলে।
প্রশ্ন \ ৭ \ কোন ভৌত অবস্থায় আন্তঃকণা ফাঁকা স্থান বেশি?
উত্তর : বায়বীয় বা গ্যাসীয় অবস্থায় আন্তঃকণা ফাঁকা স্থান বেশি থাকে।
প্রশ্ন \ ৮ \ চাপে কোন পদার্থের আয়তন অধিক মাত্রায় সংকোচনশীল?
উত্তর : চাপে বায়বীয় পদার্থের আয়তন অধিক মাত্রায় সংকোচনশীল।
প্রশ্ন \ ৯ \ ১০০°C সে তাপমাত্রায় পানিতে তাপ দিলে কী ঘটবে?
উত্তর : পানির তাপমাত্রা স্থির থাকবে এবং পানি বাষ্পে পরিণত হবে।
প্রশ্ন \ ১০ \ ব্যাপন হার কী?
উত্তর : একক সময়ে কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বস্তু যতটুকু জায়গাজুড়ে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে তাকে ওই বস্তুর ব্যাপন হার বলে।
প্রশ্ন \ ১১ \ সিলিন্ডারে ভরে কোন গ্যাস বিক্রি করা হয়?
উত্তর : সিলিন্ডারে ভরে প্রোপেন ও বিউটেন গ্যাস বিক্রি করা হয়।
প্রশ্ন \ ১২ \ সিএনজিতে প্রধানত কোন গ্যাস থাকে?
উত্তর : সিএনজিতে প্রধানত মিথেন গ্যাস থাকে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপ কী?
উত্তর : 0°C বা ২৭৩°k তাপকে আদর্শ বা প্রমাণ তাপমাত্রা এবং ১ atm বা ৭৬০ mm চাপকে আদর্শ বা প্রমাণ চাপ বলা হয়।
প্রশ্ন \ ১৪ \ কাঁঠালের ত্বকের ছিদ্রপথে গন্ধ বের হয়ে আসাটা কী?
উত্তর : কাঁঠের ত্বকের ছিদ্রপথে গন্ধ বের হয়ে আসাটা নিঃসরণ।
প্রশ্ন \ ১৫ \ দহনের জন্য কী প্রয়োজন?
উত্তর : দহনের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন।
প্রশ্ন \ ১৬ \ মোমের দহনে কী উৎপন্ন হয়?
উত্তর : মোমের দহনে CO2, H2O ও তাপশক্তি উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন \ ১৭ \ তাপ প্রদানের বক্ররেখা বলতে কী বোঝ?
উত্তর : যে রেখাচিত্রের সাহায্যে পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন সাধারণত কঠিন থেকে তরল অবস্থা বা তরল থেকে গ্যাসীয় অবস্থা অথবা উভয়ই উপস্থাপন করা হয় তাকে তাপ প্রদানের বক্ররেখা বলা হয়।
প্রশ্ন \ ১৮ \ শীতলীকরণের বক্ররেখা কী?
উত্তর : যে রেখাচিত্রের সাহায্যে পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন সাধারণত গ্যাস থেকে তরল অবস্থা বা তরল থেকে কঠিন অবস্থা অথবা উভয়ই উপস্থাপন করা হয় তাকে শীতলীকরণের বক্ররেখা বলা হয়।
প্রশ্ন \ ১৯ \ যে তাপমাত্রায় কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয়, তাকে কী বলে?
উত্তর : যে তাপমাত্রায় কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয় তাকে ওই পদার্থের গলনাংক বলে।
প্রশ্ন \ ২০ \ যে তাপমাত্রায় তরল পদার্থ বাষ্পে পরিণত হয়, তাকে কী বলে?
উত্তর : যে তাপমাত্রায় তরল পদার্থ বাষ্পে পরিণত হয়, তাকে ঐ পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক বলে।
প্রশ্ন \ ২১ \ সুপ্ততাপ কী?
উত্তর : স্থির তাপমাত্রা ও চাপে কোনো পদার্থকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তন করতে যে পরিমাণ তাপের শোষণ বা উদগীরণ হয়, তাকে ঐ পদার্থের সুপ্ততাপ বলা হয়।
প্রশ্ন \ ২২ \ কর্পূর কী ধরনের পদার্থ?
উত্তর : কর্পূর ঊদ্বায়ী পদার্থ।
প্রশ্ন \ ২৩ \ তাপ দিলে তরল না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় এমন একটি পদার্থের নাম লেখ।
উত্তর : তাপ দিলে তরল না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় এমন একটি পদার্থ হলো কর্পূর।
প্রশ্ন \ ২৪ \ CNG কী?
উত্তর : CNG হলো অধিক চাপে সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (Compressed Natural Gas) যেটি যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন \ ২৫ \ কোন প্রক্রিয়ায় কঠিন পদার্থের মিশ্রণের উপাদানসমূহকে পৃথক করা সম্ভব?
উত্তর : গলন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কঠিন পদার্থের মিশ্রণের উপাদানসমূহকে পৃথক করা সম্ভব।
প্রশ্ন \ ২৬ \ উর্ধ্বপাতন কী?
উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে তা সরাসরি গ্যাসে পরিণত হয় এবং ঠাণ্ডা করলে সরাসরি কঠিন রূপান্তরিত হয়, তাকে উর্ধ্বপাতন বলে।
প্রশ্ন \ ২৭ \ মোমের বাষ্প কী?
উত্তর : মোমের দহনে সুতার অগ্রভাগে মোম যে গ্যাসীয় অবস্থা প্রাপ্ত হয়, তাকে মোমের বাষ্প বলে।
প্রশ্ন \ ২৮ \ ব্যাপন ও নিঃসরণ হার কীসের উপর নির্ভরশীল?
উত্তর : ব্যাপন ও নিঃসরণ হার বস্তুর ভর এবং ঘনত্বের উপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন \ ২৯ \ কোনটি গ্যাসীয় অণুর স্বতঃস্ফ‚র্ত গতিকে বাধা দেয়?
উত্তর : গ্যাসপাত্রের ছিদ্রপথ গ্যাসীয় অণুর স্বতঃস্ফ‚র্ত গতিকে বাধা দেয়।
প্রশ্ন \ ৩০ \ হাসপাতাল ব্যবহারের জন্য কোন গ্যাস সিলিন্ডারে ভরে রাখা হয়?
উত্তর : হাসপাতালে ব্যবহারের জন্য অধিক চাপে অক্সিজেন গ্যাস সিলিন্ডারে ভরে রাখা হয়।
দ্বিতীয় অধ্যায় পদার্থের অবস্থা অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ পানিতে তাপ দিলে তা বাষ্পে পরিণত হয় কেন?
উত্তর : আন্তঃআণবিক শক্তির কারণে পানিতে তাপ দিলে তা বাষ্পে পরিণত হয়।
আন্তঃআণবিক শক্তির কারণে পানির অণুগুলো পরস্পরের কাছাকাছি থাকে। কিন্তু পানিতে তাপ দিলে প্রথমে পানির অণুগুলো নিজ অবস্থানে থেকে কাঁপতে থাকে। তাপমাত্রা যত বাড়ে কম্পনও তত বাড়ে এবং একপর্যায়ে কম্পনশক্তি এত বৃদ্ধি পায় যে অণুগুলো আর স্থির অবস্থানে থাকতে পারে না এবং পরস্পর থেকে দূরে সরে যায় অর্থাৎ আন্তঃআণবিক শক্তি একেবারেই হ্রাস পায় এবং অণুগুলো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মুক্তভাবে চলাচল করতে থাকে, তখনই পানি আর তরল পানি থাকে না বরং বাষ্পে রূপান্তরিত হয়।
প্রশ্ন \ ২ \ পদার্থের বৈশিষ্ট্য কী কী?
উত্তর : পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো :
ক. পদার্থের ভর ও আয়তন আছে।
খ. তাপমাত্রা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।
গ. পদার্থের প্রতিটি কণা আন্তঃআণবিক শক্তি দ্বারা একে অপরকে আকর্ষণ করে।
ঘ. বল প্রয়োগে পদার্থ বাধা দেয়।
প্রশ্ন \ ৩ \ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের ওপর সমান চাপ দিলে কী ঘটে?
উত্তর : কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের ওপর সমান চাপ দিলে দেখা যায় কঠিন পদার্থের অণুগুলো ঘনিষ্ঠভাবে অবস্থান করায় এর আয়তনের কোনো পরিবর্তন হয় না। তরল পদার্থের অণুগুলোর আন্তঃআণবিক দূরত্ব হ্রাস পেতে থাকে। ফলে তরলের অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে কঠিনরূপ ধারণ করতে পারে। অন্যদিকে, গ্যাসীয় পদার্থের বিচ্ছিন্ন অণুগুলো পরস্পরের সন্নিকটে আসে। পর্যায়ক্রমে এটি তরল এবং অবশেষে কঠিন অবস্থাপ্রাপ্ত হয়।
প্রশ্ন \ ৪ \ “কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে” বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : কঠিন পদার্থের মধ্যে অণুগুলো পরস্পরের প্রচণ্ড আকর্ষণে একটা পিণ্ডের মধ্যে অত্যন্ত কাছাকাছি নিবিড়ভাবে থাকে। এই অণুগলোর মধ্যে বিশেষ কোনো ফাঁক থাকে না। কাজেই কঠিন পদার্থের আন্তঃআণবিক দূরত্ব খুবই কম, ফলে আন্তঃআণবিক শক্তি বেশি। এজন্য কঠিন পদার্থের ওপর প্রচণ্ড চাপ দিয়েও তার আকার বা আয়তনের পরিবর্তন করা যায় না। অর্থাৎ স্বাভাবিক অবস্থায় কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন উভয়ই আছে।
প্রশ্ন \ ৫ \ ‘হাইড্রোজেনের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল খুবই কম ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : হাইড্রোজেন গ্যাসীয় পদার্থ। গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক দূরত্ব এতই বেশি হয় যে, এদের মধ্যে কোনো আকর্ষণ নেই বললেই চলে। তাই গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলোর গতিবেগ খুব বেশি। এজন্য অণুগুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং সবসময় তীব্রবেগে এদিক ওদিক ইচ্ছামতো ছোটাছুটি করে বেড়ায়। অতএব, হাইড্রোজেনেরও আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল খুবই কম।
প্রশ্ন \ ৬ \ তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আকার নেই কেন?
উত্তর : তরল পদার্থের অণুগুলোর মধ্যকার আকর্ষণ কঠিন পদার্থের অণুগুলোর চেয়ে অনেক কম। এ কারণে তরল পদার্থের অণুগুলো পরস্পরের কাছাকাছি না থেকে দূরে দূরে অণুগুচ্ছ আকারে অবস্থান করে। এজন্য তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন থাকলেও নির্দিষ্ট আকার নেই।
প্রশ্ন \ ৭ \ তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে গ্যাসের চাপের সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পাত্রে আবদ্ধ গ্যাস পাত্রের দেয়ালে যে চাপ দেয় তাকে গ্যাসের চাপ বলা হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে গ্যাসের অণুসমূহের গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলে পাত্রের দেয়ালে গ্যাসের চাপ বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন \ ৮ \ বিভিন্ন অবস্থায় পদার্থের সংকোচনশীলতা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : শক্তিশালী আকর্ষণ বলের কারণে কঠিন অবস্থায় অণুসমূহ দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। ফলে এ অবস্থায় পদার্থের সংকোচনশীলতা নেই বললেই চলে। চাপে তরল পদার্থ স্বল্পমাত্রায় সংকোচনশীল এবং বায়বীয় পদার্থ অধিকমাত্রায় সংকোচনশীল।
প্রশ্ন \ ৯ \ গতিশক্তির সাথে পদার্থের অবস্থার পরিবর্তনের সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে অণুসমূহের গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলে পদার্থটি কঠিন থেকে তরলে পরিণত হয়। তরলকে আরও তাপ দিলে গতিশক্তি আরও বৃদ্ধি পেয়ে গ্যাসীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন \ ১০ \ পদার্থের আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি ও গতিশক্তি পরস্পর বিপরীতধর্মী ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পদার্থের আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি ও গতিশক্তি পরস্পর বিপরীতধর্মী। কোনো পদার্থে তাপ প্রয়োগ করা হলে এর আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি হ্রাস পায় এবং কণাগুলোর ছুটোছুটি বাড়তে থাকে অর্থাৎ এদের গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন \ ১১ \ ব্যাপন ও নিঃসরণের মধ্যে দুটি প্রধান বৈসাদৃশ্য লেখ।
উত্তর : ব্যাপন ও নিঃসরণের মধ্যে দুটি প্রধান বৈসাদৃশ্য হলো-
ক. ব্যাপন সাধারণ, সমবায়ুচাপে অণুসমূহের স্বতঃস্ফ‚র্ত মন্থর প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, নিঃসরণ উচ্চচাপের প্রভাবে গ্যাসীয় দ্রæত প্রক্রিয়া।
খ. নিঃসরণ শুধু সরু ছিদ্রপথে অর্থাৎ নিয়ন্ত্রিত পথে ঘটে। কিন্তু ব্যাপন সরু বা বিস্তৃত উভয় পথেই ঘটতে পারে।
প্রশ্ন \ ১২ \ হাইড্রোজেনের তুলনায় কার্বন ডাইঅক্সাইডের ব্যাপন সময় বেশি কেন?
উত্তর : ব্যাপন বস্তুর ভর ও ঘনত্বের ওপর নির্ভরশীল। বস্তুর ভর বেশি হলে ব্যাপনহার কম অর্থাৎ ব্যাপনের সময় বেশি হবে।
হাইড্রোজেনের (H2) আণবিক ভর H2 = 1 ´ 2 = 2। কার্বন ডাইঅক্সাইডের (CO2) আণবিক ভর = 12 + 16 ´ 2 = 44। সুতরাং হাইড্রোজেনের তুলনায় কার্বন ডাই অক্সাইডের ভর বেশি হওয়ায় এর ব্যাপন হার কম অর্থাৎ ব্যাপন সময় বেশি লাগবে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ তাপমাত্রা বাড়ালে ব্যাপনের হার বাড়ে কেন?
উত্তর : আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের কারণে তাপমাত্রা বাড়ালে ব্যাপনের হার বাড়ে।
একক সময়ে কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বস্তু যতটুকু জায়গাজুড়ে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে তাকে ওই বস্তুর ব্যাপন হার বলে। কোনো বস্তুর ব্যাপনের হার তার ভর ও আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের ওপর নির্ভরশীল। আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল কম হলে ব্যাপনের হার বেশি হয়, আর আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল বেশি হলে ব্যাপনের হার কম হয়। তাপমাত্রা বাড়ালে বস্তুর আন্তঃকণা আকর্ষণ বল কমে যায় বলে ব্যাপনের হার বাড়ে।
প্রশ্ন \ ১৪ \ নিঃসরণ ও ব্যাপনের ক্ষেত্রে চাপের প্রভাব কীরূপ?
উত্তর : নিঃসরণের ক্ষেত্রে চাপের প্রভাব বেশি। বাহ্যিক উচ্চ চাপের প্রভাবে পাত্রের সরু ছিদ্র পথ দিয়ে গ্যাস সজোরে বের হয়। একে নিঃসরণ বলে। বাহ্যিক চাপ ছাড়াও ছিদ্র পথ দিয়ে গ্যাস বের হতে পারে। তখন তাকে ব্যাপন বলা হয়। এজন্য ব্যাপনের ক্ষেত্রে বাহ্যিক চাপের প্রয়োজন নেই। তাই বলা যায়, নিঃসরণের ক্ষেত্রে চাপের প্রভাব বেশি।
প্রশ্ন \ ১৫ \ গ্যাসের ব্যাপনের হার কী কী বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
উত্তর : গ্যাসের ব্যাপনের হার প্রধানত গ্যাসের ঘনত্বের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া তাপমাত্রা ও চাপের উপরও নির্ভরশীল। গ্যাসের ঘনত্ব বেশি হলে ব্যাপনের হার কম হবে এবং ঘনত্ব কম হলে ব্যাপন বেশি হবে। অর্থাৎ যে গ্যাস যত ভারী হবে তার ব্যাপন বা নিঃসরণ হার তত কম হবে। যেমন : He (হিলিয়াম) ও H2 (হাইড্রোজেন) গ্যাসের মধ্যে He এর ব্যাপনের হার বেশি, কেননা- He এর ঘনত্ব H2 এর ঘনত্বের চেয়ে কম।
প্রশ্ন \ ১৬ \ কাপে ফুটানো পানির ক্ষেত্রে তাপের প্রভাবে ভৌত অবস্থার কীরূপ পরিবর্তন হয়?
উত্তর : সদ্য ফুটানো এক কাপ গরম পানিকে টেবিল রাখলে জলীয় বাষ্পের কণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
এই অবস্থায় যদি আরও তাপ প্রয়োগ করা হয় তবে একসময় কাপটি খালি হয়ে যায়, কিন্তু, স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে দিলে তা ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে যায়, আর জলীয়বাষ্পকে বের হতে দেখা যায় না।
প্রশ্ন \ ১৭ \ হিলিয়াম গ্যাসভর্তি বেলুন থেকে ছিদ্রপথে কীভাবে গ্যাস নিঃসারিত হয়?
উত্তর : হিলিয়াম গ্যাসভর্তি বেলুনে ছিদ্র থাকলে হিলিয়াম গ্যাসের অণুসমূহ ছিদ্রপথে বেরিয়ে পরে।
এক্ষেত্রে, যদি চাপ কাজ করে তবে গ্যাসীয় বস্তুর স্বতঃস্ফ‚র্ত ও সমভাবে পরিব্যাপ্ত হওয়ার কথা নয়। হিলিয়াম গ্যাসের চাপ বেলুনের ভেতরে এবং বাইরে সমান থাকেনা। বেলুনের ভেতরে চাপ বেশি থাকে। এভাবে, হিলিয়াম গ্যাসভর্তি বেলুনের সরু ছিদ্রপথে অণুসমূহ উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে নিঃসরণ প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে আসে।
আরো পড়ুন
- এসএসসি রসায়ন ২য় অধ্যায় সৃজনশীল
- এসএসসি রসায়ন ২য় অধ্যায় জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক
- এসএসসি রসায়ন ২য় অধ্যায় বহুনির্বাচনী