নবম-দশম/এসএসসি রসায়ন দ্বিতীয় অধ্যায় পদার্থের অবস্থা এর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো।
এসএসসি রসায়ন রসায়ন দ্বিতীয় অধ্যায় পদার্থের অবস্থা সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন -১ নিচের চিত্র দেখে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. ব্যাপন কাকে বলে?
খ. বডি ¯েপ্রতে ব্যাপন বা নিঃসরণের কোনটি আগে ঘটে?
গ. তাপমাত্রা বাড়াতে থাকলে উদ্দীপকের কোন পদার্থটি সবার আগে বাষ্পীভ‚ত হবে? কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ক-পাত্রের উপাদান ও খ-পাত্রের উপাদানগুলোকে পৃথকীকরণে একই পদ্ধতির ব্যবহার সম্ভব কি না-যুক্তিসহ ব্যাখ্যা কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বস্তুর স্বতঃস্ফ‚র্ত ও সমভাবে পরিব্যাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে।
খ. বডি ¯েপ্রতে নিঃসরণ আগে ঘটে।
বডি ¯েপ্রতে বিদ্যমান উপাদানগুলোর চাপ ভেতর ও বাইরে সমান নয়। বডি ¯েপ্রর ভেতরে চাপ বেশি থাকে। চাপ দিলে সরু ছিদ্রপথে যখন গ্যাসের অণুসমূহ উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে বেরিয়ে আসে, তখন নিঃসরণ ঘটে। এরপর এর মধ্যে থাকা উপাদান চারপাশে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে অর্থাৎ পরে ব্যাপন হয়।
গ. উদ্দীপকের ক-পাত্রে আয়োডিন মিশ্রিত খাদ্য লবণ এবং খ-পাত্রে বালি ও গøুকোজের মিশ্রণ বিদ্যমান। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে উদ্দীপকে বিদ্যমান উপাদানগুলোর মধ্যে আয়োডিন সবার আগে বাষ্পীভ‚ত হবে।
যদি কোনো কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে তা তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে এবং ঠাণ্ডা করলে তরলে রূপান্তরিত না হয়ে সরাসরি কঠিন পদার্থে পরিণত হয়, তাকে ঊর্ধ্বপাতন বলে। উপাদানগুলোর মধ্যে খাদ্য লবণ, বালি ও গøুকোজকে তাপ দিলে সেগুলো প্রথমে তরলে পরিণত হবে। আরও তাপ দিলে বাষ্পে পরিণত হবে। কিন্তু আয়োডিনকে তাপ দিলে তা সরাসরি বাষ্পে রূপান্তরিত হয়। কারণ আয়োডিনের ঊর্ধ্বপাতন ঘটে।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায়, লবণ, বালি ও গøুকোজকে তাপ দিলে সেগুলো সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় না। কিন্তু আয়োডিনের ঊর্ধ্বপাতন ঘটে বলে তা সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। তাই বলা যায় তাপ বাড়াতে থাকলে সবার আগে বাষ্পীভ‚ত হবে আয়োডিন।
ঘ. কÑপাত্রের উপাদান ও খÑপাত্রের উপাদানগুলোকে একই পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথক করা সম্ভব নয়।
কÑপাত্রে আয়োডিন ও খাদ্য লবণের মিশ্রণকে ঊর্ধ্বপাতন পদ্ধতিতে এবং খ-পাত্রের বালি ও গøুকোজের মিশ্রণকে পরিস্রাবণ ও বাষ্পীভবন পদ্ধতিতে পৃথক করতে হবেফলে ক-পাত্রে তাপ দিলে আয়োডিন ঊর্ধ্বপাতিত হয়। এভাবে আয়োডিন ও খাদ্য লবণের মিশ্রণকে ঊর্ধ্বপাতন পদ্ধতিতে পৃথক করা হয়। ঊর্ধ্বপাতন প্রক্রিয়া-
উদ্দীপকে খ-পাত্রে গøুকোজ ও বালির মিশ্রণ আছে। যাদের কোনোটাই উদ্বায়ী নয়।
তাই ক-পাত্রের উপাদানগুলোর মতো ঊর্দ্ধপাতন পদ্ধতিতে বালি ও গøুকোজ পৃথক করা যায় না। এই মিশ্রণকে পরিস্রাবণ ও বাষ্পীভবন পদ্ধতিতে পৃথক করা হয়। বালি পানিতে অদ্রবণীয়। তাই গøুকোজ ও বালির মিশ্রণকে বিকারে নিয়ে পানি মিশ্রিত করে গøাস রড দিয়ে নেড়ে বালির সাথে মিশ্রিত গøুকোজকে সম্পূর্ণরূপে পানিতে দ্রবীভ‚ত করা হয়। অতঃপর, অপর একটি বিকারে ফিল্টারপেপার সজ্জিত ফানেলে গøুকোজ ও বালির মিশ্রণকে পৃথক করা হয়। ফিল্টার পেপারে থাকা বালি আলাদা করে নেওয়া হয়। পরিস্রুত দ্রবণকে বাষ্পীভবন করা হলে পানি বাষ্পাকারে উড়ে যায় এবং পরিস্রুতরূপে পাত্রে কঠিন গøুকোজের কেলাস অবশেষরূপে পাওয়া যায়। এভাবে পরিস্রাবণ ও বাষ্পীভবন পদ্ধতিতে গøুকোজ ও বালির মিশ্রণকে পৃথক করা হয়। এ ক্ষেত্রে
অতএব ক-পাত্রের উপাদানগুলো ও খ-পাত্রের উপাদানগুলো পৃথিকীকরণে পৃথক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। একই পদ্ধতি ব্যবহার সম্ভব নয়।
প্রশ্ন -২ : নিচের চিত্র দেখে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. নিঃসরণ কী?
খ. একই পদার্থের গলনাংক ও স্ফুটনাংক ভিন্ন কেন?
গ. উদ্দীপকের প্রক্রিয়াটি কোন ধরনের পরিবর্তন- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উৎপন্ন্ সাদা ধোঁয়া অ প্রান্তের কাছাকাছি উৎপন্ন হওয়ার যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সরু ছিদ্রপথে কোনো গ্যাসের অণুসমূহের উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে নিঃসরণ বলে।
খ. তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে একই পদার্থের গলনাংক ও স্ফুটনাংক ভিন্ন হয়।
যে তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয়, তাকে ঐ পদার্থটির গলনাংক বলে। আর, যে তাপমাত্রায় কোনো তরল পদার্থ গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হয়, তাকে ঐ পদার্থটির স্ফুটনাংক বলে। তাপ প্রয়োগে কঠিন পদার্থ প্রথমে তরলে পরিণত হয়, আরও তাপ প্রয়োগে গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হয়। যে তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয় সে তাপমাত্রায় কোনো তরল পদার্থ গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হয় না। আরও বেশি তাপমাত্রা প্রয়োজন।
গ. উদ্দীপকের প্রক্রিয়াটি একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।
যে পরিবর্তনে পদার্থের অণুসমূহের উপাদান ও অণুর গঠনে স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে এবং পদার্থসমূহ নিজেদের ধর্ম হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্মবিশিষ্ট অন্য পদার্থে পরিণত হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। প্রতিটি রাসায়নিক বিক্রিয়াতেই রাসায়নিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়।
উদ্দীপকে এসিড (HCl), ক্ষারক (NH3)-এর সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের (NH4Cl) সাদা ধোঁয়া সৃষ্টি করেছে।
NH3 + HCl = NH4Cl (সাদা ধোঁয়া)
এখানে NH3 ও HCl অণুসমূহ নিজেদের ধর্ম হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্মবিশিষ্ট NH4Cl যৌগে পরিণত হয়েছে। তাই উক্ত বিক্রিয়ায় যে পরিবর্তন হয়েছে, তা একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।
ঘ. উৎপন্ন সাদা ধোঁয়া A প্রান্তের কাছাকাছি উৎপন্ন হয়েছে। এর যৌক্তিক কারণ ব্যাপনের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়।
ব্যাপনের হার বস্তুর ভর ও ঘনত্বের উপর নির্ভরশীল। যে বস্তুর ভর ও ঘনত্ব যত বেশি তার ব্যাপনের হার তত কম।
HCl এর আণবিক ভর = 1+ 35.5 = 36.5
NH3 এর আণবিক ভর = 14+1×3 =17
যেহেতু HCl এর আণবিক ভর NH3 এর চেয়ে বেশি, তাই HCl এর ব্যাপনের হার কম হবে। HCl এর ব্যাপন NH3 এর চেয়ে কম হওয়ায় HCl কম দূরত্ব অতিক্রম করেছে। অপরদিকে, NH3 এর ব্যাপন বেশি হওয়ায় বেশি দূরত্ব অতিক্রম করেছে। তাই কঠিন সাদা বলয় HCl এর কাছে, কিন্তু NH3 থেকে দূরে উৎপন্ন হয়েছে।
প্রশ্ন -৩ : নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
(i) মোম + + O2(g) → A + B + শক্তি
(ii) H2(g) + O2(g) → B + শক্তি
ক. স্ফুটনাঙ্ক কী? ১
খ. আয়োডিনকে তাপ দিলে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় কেন? ২
গ. 0C তাপমাত্রায় ই যৌগের ভৌত অবস্থার কিরূপ পরিবর্তন ঘটে ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. (i) নং-এ ভৌত ও রাসায়নিক কিন্তু (ii) নং-এ শুধু রাসায়নিক পরিবর্তন হয়Ñবিশ্লেষণ কর। ৪
:ল্প ৩নং প্রশ্নের উত্তর :ল্প
ক. স্বাভাবিক চাপে (১ধঃস) যে তাপমাত্রায় কোনো তরল পদার্থ গ্যাসীয় অবস্থা প্রাপ্ত হয় সেই তাপমাত্রাকে সেই পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক বলে।
খ. আয়োডিন একটি ঊর্ধ্বপাতনযোগ্য পদার্থ হওয়ায় এটিকে তাপ দিলে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়।
যে সকল কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে তা সরাসরি গ্যাসে পরিণত হয় এবং শীতল করলে সরাসরি কঠিন হয় তাদেরকে উদ্বায়ী পদার্থ বলে। আয়োডিন এমনই একটি উদ্বায়ী পদার্থ। এজন্য আয়োডিনকে তাপ দিলে এটি কঠিন থেকে সরাসরি গ্যাসীয় অবস্থায় রূপান্তরিত হয় এবং শীতলীকরণে গ্যাসীয় অবস্থা থেকে কঠিনে পরিণত হয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ই যোগটি হলো পানি যেটি সাধারণত তরল অবস্থায় থাকে। 0C তাপমাত্রায় পানি বরফে অর্থাৎ কঠিন অবস্থায় রূপান্তরিত হয়।
তাপ কমানো হলে পদার্থের অণুগুলোর গতিশক্তি হ্রাস পায়, ফলে অণুগুলোর মধ্যে দূরত্ব হ্রাস পায়। এর ফলে আন্তঃকনা আকর্ষণশক্তি বৃদ্ধি পায়। পদার্থ যে সকল ছোট ছোট কণার সমন্বয়ে গঠিত। তারা যেকোনো তাপমাত্রায় নড়াচড়া বা চলাফেরা করতে পারে। ছোট ছোট কণাগুলোর নড়াচড়া বা চলাফেরার ফলে পদার্থ এক ধরনের গতিশক্তি লাভ করে। তাপ অপসারণের ফলে ছোট ছোট কণাগুলোর চলাচলের গতি হ্রাস পায়।
আবার, আন্তঃকণা আকর্ষণশক্তির প্রভাবে বস্তুর ক্ষুদ্রতম কণাগুলো একে অপরের সাথে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। এ শক্তি যখন বেশি হয় তখন বস্তুর ভৌত অবস্থা কঠিন হয়। এজন্য উদ্দীপকে 0C তাপমাত্রায় পানির অনুসমূহের আন্তঃকণা আকর্ষণশক্তি সর্বাধিক হয়। ফলে, 0C তাপমাত্রায় পানি বরফে পরিণত হয়। এরূপে 0C তাপমাত্রায় ই যৌগের ভৌত অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।
ঘ. যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের শুধু বাহ্যিক আকার বা অবস্থার পরিবর্তন হয় কিন্তু তা কোনো নতুন পদার্থে পরিণত হয় না, তাকে ভৌত বা অবস্থানগত পরিবর্তন বলে। আবার, যে পরিবর্তনে বস্তুর রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন হয় তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে।
উদ্দীপকের (i) নং বিক্রিয়াটিতে মোমবাতির দহন ঘটে। একটি মোমবাতি জ্বলার সময় উত্তাপে মোমের কিছু অংশ গলে যায়। এক্ষেত্রে, ভৌত পরিবর্তন সংঘটিত হয়। কিন্তু, অধিকাংশ মোম বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয়বাষ্প তৈরি করে। শেষোক্ত দুইটি বস্তু মোম ও অক্সিজেন থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। সুতরাং মোমবাতির দহন একটি রাসায়নিক পরিবর্তন। অর্থাৎ মোমবাতির দহনে ভৌত ও রাসায়নিক উভয় পরিবর্তন সংঘটিত হয়।
আবার, উদ্দীপকের (ii) নং বিক্রিয়াটিতে হাইড্রোজেন (H2) এবং অক্সিজেন (O2) পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের পদার্থ পানি (H2O) উৎপন্ন করে। এক্ষেত্রে, বস্তুর অণুর গঠনের পরিবর্তন হয়ে সম্পূর্ণ নতুন অণুর সৃষ্টি হয় এবং রাসায়নিক সংযুতির পরিবর্তন হয়। সুতরাং, এক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাসায়নিক পরিবর্তন হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকের (i) নং এ ভৌত ও রাসায়নিক কিন্তু (ii) নং এ শুধু রাসায়নিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়।
প্রশ্ন -৪ : নিচের লেখচিত্রটি দেখে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ঘটনা-১: পাকা কাঁঠালের গন্ধ ঘরের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়া।
ঘটনা-২: হাসপাতালের ব্যবহারের জন্য অধিক চাপে অক্সিজেন গ্যাস সিলিন্ডারের ভরে রাখ।
ক. মোম কী ধরনের যৌগ? ১
খ. ব্যাপন স্বতঃস্ফ‚তভাবে হয় কেন? ২
গ. উদ্দীপকের উল্লেখিত ঘটনা দুটির হার বস্তুর ভর ঘনত্বের উপর নির্ভরশীল-ব্যাখ্যা। কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ঘটনাদ্বয়ের ক্ষতিকর দিকগুলো বিশ্লেষণ কর। ৪
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মোম এক ধরনের হাইড্রোকার্বন তথা জৈব যৌগ।
খ. কোনো গ্যাসপাত্রে অণুসমূহ যখন সম্পূর্ণরূপে চাপমুক্ত হয়, তখন তা ব্যাপনে রূপান্তরিত হয়। এজন্য, ব্যাপন স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে ঘটে থাকে।
গ্যাসের অণুসমূহ ছিদ্রপথে বের হওয়ার সময় যদি চাপ কাজ করে তবে গ্যাসীয় বস্তু সমভাবে ও স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে পরিব্যপ্ত হতে পারে না। কেন না ছিদ্রপথ অণুর স্বতঃস্ফ‚র্ত গতিকে বাধা দেয়। ছিদ্র যত বড় হতে থাকে, স্বতঃস্ফ‚র্ততা তত বৃদ্ধি পেতে থাকে। যখন সম্পূর্ণ চাপমুক্ত হয় তখন ব্যাপনে রূপান্তরিত হয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ঘটনাদ্বয় দ্বারা যথাক্রমে ব্যাপন এবং নিঃসরণকে বোঝানো হয়েছে। ব্যাপন ও নিঃসরণ হার বস্তুর ভর ও ঘনত্বের উপর নির্ভরশীল।
কোনো বস্তুর ভর এবং ঘনত্ব যত বেশি হবে ব্যাপন ও নিঃসরণের হার তত হ্রাস পাবে। অনুরূপভাবে বস্তুর ভর এবং ঘনত্ব যত কম হবে ব্যাপন ও নিঃসরণের হার তত বেশি হবে।
গ্যাসের ব্যাপন সময় এর আণবিক ভর অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। যে গ্যাসের আণবিক ভর বেশি তার ব্যাপন সময় বেশি। সুতরাং, বলা যায় যে, উদ্দীপকের ঘটনাদ্বয় বস্তুর ভর ও ঘনত্বের উপর নির্ভরশীল।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ঘটনাদ্বয় তথা ব্যাপন এবং নিঃসরণের ক্ষতিকর দিকগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলোÑ
* ব্যাপনের ক্ষতিকর দিক :
র. কল-কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাসের ব্যাপনে পরিবেশের ক্ষতি হয়।
রর. পরিবেশে CO2-এর ব্যাপনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।
ররর. খোলা অবস্থায় রাখা ময়লা- আবর্জনার দুর্গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
* নিঃসরণের ক্ষতিকর দিক :
র. গ্যাসীয় পাত্রের ছিদ্র দিয়ে দ্রæত বিষাক্ত বা ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হতে থাকে।
রর. অতি দ্রæত গ্যাসের নির্গমনে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
প্রশ্ন -৫ নিচের চিত্রগুলো লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. শীতলীকরণ কী? ১
খ. মোমবাতির জ্বলনে পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন ব্যাখ্যা কর। ২
গ. a, b ও c অবস্থার পরিবর্তনে পানির শীতলীকরণের বক্ররেখা প্রদর্শন করে যে অবস্থা অপরিবর্তনশীল তা ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকের বিভিন্ন অবস্থার আন্তঃআণবিক শক্তির ক্রম বিশ্লেষণ কর। ৪
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যে প্রক্রিয়ায় তাপ অপসারণ করে গ্যাসকে তরলে ও তরলকে কঠিনে পরিণত করা হয়, তাকে শীতলীকরণ বলা হয়।
খ. মোমবাতি যখন জ্বলতে থাকে তখন পদার্থের তিনটি অবস্থাই একসাথে দেখা যায়।
মোম গলতে শুরু করলে সুতার অগ্রভাগের মোম গ্যাসীয় অবস্থা প্রাপ্ত হয়। এই গ্যাসটি জ্বলতে থাকে। জ্বলনের ফলে তাপে মোম গলতে থাকে। এভাবে মোম তরল অবস্থা প্রাপ্ত হয়। আবার নিচের দিকে যেখানে তাপ পৌঁছেনি সেখানে মোম গলে না বলে কঠিন অবস্থায় থাকে। অর্থাৎ মোমবাতির জ্বলনে পদার্থের তিনটি অবস্থারই পরিবর্তন ঘটে।
গ. উদ্দীপকে পানির তিনটি ভৌত অবস্থা দেখানো হয়েছে। a, bএবং c অবস্থা হলো যথাক্রমে কঠিন, তরল এবং বায়বীয়। পানির শীতলীকরণ বক্ররেখাটি হলো
পানির শীতলীকরণ বক্ররেখা থেকে দেখা যাচ্ছে, (বাষ্প + পানি) এবং (পানি + বরফ) অংশের রেখাদ্বয় সময়ের সাথে অপরিবর্তনশীল। অর্থাৎ ১০0C ও 0C অবস্থায় তাপ দিলেও তাপমাত্রার পরিবর্তন হয় না।
(বাষ্প + পানি) পানির স্ফুটনাংক ১০0C নির্দেশ করেছে। এই অবস্থায় সকল বাষ্প সুপ্ততাপ বর্জন করে একই তাপমাত্রার পানিতে পরিণত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত সকল বাষ্প তরল পানিতে পরিণত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাপমাত্রা স্থির থাকে।
(পানি + বরফ) পানির গলনাংক 0C নির্দেশ করে। এই অবস্থায় একই তাপমাত্রার পানি সুপ্ততাপ বর্জন করে একই তাপমাত্রার বরফে পরিণত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত পানি জমে বরফে পরিণত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাপমাত্রা স্থির থাকে।
ঘ. উদ্দীপকের বিভিন্ন অবস্থায় আন্তঃআণবিক শক্তির ক্রম তাদের আন্তঃআণবিক আকর্ষণের সাহায্যে বিশ্লেষণ করা যায়।
আমরা জানি, তাপমাত্রার পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে একটি পদার্থ তিনটি ভৌত অবস্থায় থাকতে পারে। কারণ, তাপমাত্রা পরিবর্তন করলে বস্তুর আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলও পরিবর্তন হয়। কঠিন বস্তুর আন্তঃআণবিক শক্তি সবচেয়ে বেশি, গ্যাসীয় বস্তুর সবচেয়ে কম আর তরল বস্তুর কঠিন এবং গ্যাসীয় বস্তুর মাঝামাঝি। কঠিন বস্তুকে উত্তপ্ত করলে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল কমে যাওয়ায় তা তরলে পরিণত হয়। একে আরো উত্তপ্ত করলে তা গ্যাসে পরিণত হয়। এ অবস্থায় আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল সবচেয়ে কম।
তাহলে উদ্দীপকের বরফে (অ-অবস্থা) আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল সবচেয়ে বেশি, পানিতে (ই-অবস্থা) বরফের চেয়ে কম এবং জলীয় বাষ্প (ঈ-অবস্থা) সবচেয়ে কম।
সুতরাং উদ্দীপকের বিভিন্ন অবস্থার আন্তঃআণবিক শক্তির ক্রম নিম্নরূপ :
A – অবস্থা > B- অবস্থা > C- অবস্থা
অর্থাৎ বরফ > পানি > জলীয় বাষ্প
প্রশ্ন -৬ : নিচের সমীকরণটি লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক অবস্থা খ অবস্থা গ অবস্থা
ক. সিএনজি কী? ১
খ. তাপমাত্রা বাড়ালে ব্যাপনের হার বাড়ে কেন? ২
গ. উদ্দীপকের ক, খ ও গ এ তিন অবস্থায় পদার্থের গতিশীলতা ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকের বিভিন্ন অবস্থায় তাপ প্রদানের বক্ররেখা এঁকে এর অবস্থাসমূহ ব্যাখ্যা কর। ৪
৬নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রাকৃতিক গ্যাসকে অধিক চাপ প্রয়োগে সংকুচিত করে যে জ্বালানি তৈরি করা হয়, তাকে সি এন জি বলে।
খ. তাপমাত্রা বাড়ালে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল কমে যায় বলে ব্যাপনের হার বাড়ে।
কোনো বস্তুর ব্যাপনের হার তার আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের ওপর নির্ভরশীল। তাপমাত্রা কম হলে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বেশি হয় এবং ব্যাপনের হার কম হয়। তাপমাত্রা বাড়ালে বস্তুর আন্তঃকণা আকর্ষণ বল কমে যায় বলে কণাগুলো বেশি করে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তাপমাত্রা বাড়ালে ব্যাপন বৃদ্ধি পায়।
গ. উদ্দীপকের ক নং চিত্রে অণুসমূহ খুব সন্নিকটে অবস্থান করে। তাই ক নং চিত্রটি বরফ (কঠিন)। খ নং চিত্রে অণুসমূহ পরস্পরের থেকে একটু দূরে অবস্থান করে। তাই এটি পানি (তরল)। গ নং চিত্রে অণুসমূহ পরস্পর থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। তাই এটি জলীয়বাষ্প (গ্যাসীয়)।
কণাসমূহ যত তাপ অর্জন করে তাদের গতিশক্তি তত বৃদ্ধি পেতে থাকে, এভাবে গতিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তঃআণবিক দূরত্ব বৃদ্ধি পায় ও আন্তঃআণবিক বল হ্রাস পায়। ফলে পদার্থটি কঠিন থেকে তরল এবং আরো তাপ প্রয়োগে তরল থেকে গ্যাসে পরিণত হয়।
অর্থাৎ কণার গতিশক্তি যত বৃদ্ধি পেতে থাকে পদার্থ তত কঠিন থেকে তরলে এবং তরল থেকে গ্যাসে পরিণত হওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকবে।
ঘ. উদ্দীপকে পানির তিনটি ভৌত অবস্থা দেখানো হয়েছে। ক, খ এবং গ অবস্থা হলো যথাক্রমে কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয় অবস্থা। বরফের গলনাঙ্ক 0C ও পানির স্ফুটনাঙ্ক ১০0C । এক্ষেত্রে তাপ প্রদানের বক্ররেখা নিচে অঙ্কিত হলো :
অঙ্কিত বক্ররেখা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ১0C তাপমাত্রার বরফকে তাপ প্রয়োগ করলে তাপমাত্রা বেড়ে তা 0C তাপমাত্রার বরফে (ক) পরিণত হয়। এরপর তাপ প্রদান করলে তাপমাত্রা না বেড়ে অবস্থার পরিবর্তনের জন্য গলনের আপেক্ষিক সুপ্ততাপ গ্রহণ করে 0C তাপমাত্রার বরফ থেকে 0C তাপমাত্রার পানিতে (খ) পরিণত হয়। এরপর আরও তাপ প্রদান করলে পানির তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। পানির তাপমাত্রা ১০0C হলে, সেটি বাষ্পীভবনের আপেক্ষিক সুপ্ততাপ গ্রহণ করে ১০0C তাপমাত্রার বাষ্পে (গ) পরিণত হয়। এরপর আরও তাপ প্রদান করলে ১০0C তাপমাত্রার জলীয়বাষ্প থেকে ১২0C তাপমাত্রার জলীয়বাষ্পে পরিণত করা হয়।
প্রশ্ন -৭ : নিচের চিত্র দেখে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. পদার্থের রূপান্তর কাকে বলে? ১
খ. পদার্থের এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় কীভাবে রূপান্তর হয়? ২
গ. তাপ প্রয়োগে উদ্দীপকের চিত্রের গলনাংক ও স্ফুটনাংক কি একই হয়? ৩
ঘ. আয়োডিন অথবা কাঠ দিয়ে পদার্থের তিনটি অবস্থান পরিবর্তন করা সম্ভব নয়- কারণ দর্শাও। ৪
৭নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো পদার্থের এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়ার ঘটনাকে পদার্থের রূপান্তর বলে।
খ. তাপ প্রয়োগে পদার্থের এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তর হয়।
তাপ প্রয়োগে কঠিন পদার্থ প্রথমে তরল এবং পরে গ্যাসীয় অবস্থায় পরিবর্তিত হয়। আবার তাপ নিষ্কাশনে গ্যাসীয় পদার্থ প্রথমে তরল এবং পরে কঠিন অবস্থায় রূপান্তরিত হয়। পদার্থের যে কোনো অবস্থান্তরের সময় তাপ প্রয়োগ বা নিষ্কাশন করতে হয়।
গ. উদ্দীপকের চিত্রের গলনাংক ও স্ফুটনাংক ভিন্ন হয়। চিত্রে পানির তিন অবস্থার রূপান্তর দেখানো হয়েছে।
1atm চাপে 0C তাপমাত্রায় বরফ গলে পানিতে পরিণত হয়। সুতরাং, বরফের গলনাংক 0C । আর, 1atm চাপে ১০0C তাপমাত্রায় পানি ফুটে জলীয়বাষ্পে পরিণত হয়। সুতরাং, পানির স্ফুটনাংক ১০0C ।
সুতরাং, তাপ প্রয়োগে উদ্দীপকের চিত্রের গলনাংক ও স্ফুটনাংক এক নয়।
ঘ. আয়োডিন ও কাঠ বিশেষ ধরনের পদার্থ বলে এগুলো দিয়ে পদার্থের তিনটি অবস্থায় পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
আয়োডিনের ক্ষেত্রে পদার্থের রূপান্তরের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা যায়। আয়োডিনের উপর তাপ প্রয়োগ করলে এটি তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি গ্যাসীয় অবস্থায় পরিণত হয়। আবার ঠাণ্ডা করলে এটি গ্যাসীয় অবস্থা থেকে সরাসরি কঠিন অবস্থায় আসে। পদার্থের এ ধরনের পরিবর্তনকে ঊর্ধ্বপাতন বলে।
আবার, কাঠ, কাগজ, কয়লা প্রভৃতি কঠিন পদার্থের ওপর তাপ প্রয়োগ করলে এদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে না- এসব পদার্থের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, ফলে নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়।
সুতরাং, পানি বা মোমের মতো পদার্থ নয় বলে আয়োডিন অথবা কাঠ দিয়ে পদার্থের তিনটি অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন -৮ : নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক্লান্ত লাভলি স্কুল থেকে এসে পানি চাইলে তার মা ঠাণ্ডা পানি আনতে গেলেন। তিনি ফ্রিজে পানি রাখতে গিয়ে ভুল করে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলেন। ফলে তা বরফে পরিণত হয়ে যায়। তিনি বের করে এই বরফ বাইরে রেখে দিলেন। কিছুক্ষণ পর তা পানিতে পরিণত হলো। কিন্তু ঐ ঠাণ্ডা পানি খেলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে ভেবে তা গরম করতে গিয়ে বাষ্পে পরিণত করে ফেললেন। লাভলি তার মাকে বলল, “মা, ক্লাসে স্যার বলেছিলেন আন্তঃআণবিক শক্তিই পানির এ তিন অবস্থার কারণ।”
ক. আন্তঃআণবিক শক্তি বলতে কী বুঝ? ১
খ. পদার্থের তিন অবস্থার মধ্যে দুটি পার্থক্য উল্লেখ কর। ২
গ. লাভলির মা পদার্থের বিভিন্ন অবস্থার যে পরিবর্তন ঘটালেন তা ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. কোনো পদার্থ কীভাবে কঠিন থেকে তরলে ও তরল থেকে গ্যাসীয় অবস্থার রূপান্তর হয়-তা উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা কর। ৪
৮নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো নির্দিষ্ট পদার্থের অণুসমূহ যে শক্তি দ্বারা পরস্পরকে আকর্ষণ করে, তাকে ঐ পদার্থের আন্তঃআণবিক শক্তি বলা হয়।
খ. পদার্থের তিন অবস্থার মধ্যে দুটি পার্থক্য :
কঠিন পদার্থ তরল পদার্থ গ্যাসীয় পদার্থ
১. কঠিন অবস্থায় পদার্থের আকার ও আয়তন নির্দিষ্ট। ১. তরল অবস্থায় পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট। ১. গ্যাসীয় অবস্থায় পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট নয়।
২. নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি আছে। ২. নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি নেই। পাত্রের আকার ও আকৃতি ধারণ করে। ২. নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি নেই। পাত্রের আকার ধারণ করে।
গ. লাভলির মা তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে পদার্থের বিভিন্ন অবস্থার পরিবর্তন ঘটালেন।
বরফ, পানি ও জলীয়বাষ্প একই পদার্থের তিনটি ভিন্ন রূপ। সাধারণ তাপমাত্রায় পানি একটি তরল পদার্থ। পানি ০ সে. তাপমাত্রায় বরফ। বরফকে তাপ প্রয়োগ করলে তা পানিতে পরিণত হয়। পানিকে তাপ দিলে তা আবার ১০০ সে. তাপমাত্রায় ফুটে জলীয়বাষ্পে পরিণত হয়।
লাভলির মা ফ্রিজ থেকে যে পানি বের করলেন তা হলো বরফ যা পানির কঠিনরূপ। ফ্রিজ থেকে বাইরে রাখায় বরফ তাপ পেয়ে গলে তরল পানিতে পরিণত হয়। এই পানিকে আবার গরম করার জন্য তাপ দেয়াতে তা জলীয়বাষ্পে পরিণত হয় তা পানির বায়বীয় রূপ। এভাবে তিনি তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে পানির অবস্থার পরিবর্তন ঘটালেন।
ঘ. তাপ প্রয়োগ করলে পদার্থের অণুগুলোর গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, ফলে অণুগুলোর মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। এর ফলে আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি হ্রাস পায়। পদার্থ যে সকল ছোট ছোট কণার সমন্বয়ে গঠিত, সে কণাগুলো যেকোনো তাপমাত্রায় নড়াচড়া বা চলাফেরা করতে পারে। ছোট ছোট কণাগুলোর নড়াচড়া বা চলাফেরার ফলে পদার্থ এক ধরনের শক্তি লাভ করে। পদার্থের এ শক্তিকে গতিশক্তি বলে। তাপ প্রয়োগের ফলে ছোট ছোট কণাগুলোর চলাফেরার গতি বৃদ্ধি পায় এবং সাথে সাথে গতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়।
অন্যদিকে, আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বস্তুর ক্ষুদ্রতম কণাগুলো একে অপরের সাথে আবদ্ধ থাকে। এ শক্তি অধিক হলে বস্তুর ভৌত অবস্থা কঠিন হয়। যেমন উদ্দীপকে লাভলিদের ফ্রিজে রাখা বরফের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি। অপেক্ষাকৃত কম হলে তরল যেমন পানি এবং আরও কম হলে গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে যেমন উদ্দীপকের জলীয়বাষ্প। অর্থাৎ পদার্থের আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি ও গতিশক্তি পরস্পর বিপরীতধর্মী।
চিত্র : কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় পদার্থের কণা
এখন কোনো পদার্থে তাপ প্রয়োগ করা হলে একদিকে ছোট ছোট কণাগুলোর দূরত্ব কিছুটা বৃদ্ধি পায়। ফলে আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি হ্রাস পায়। অন্যদিকে কণাগুলোর ছোটাছুটি বৃদ্ধি পায় বলে গতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পদার্থ কঠিন থেকে তরল এবং তরল থেকে গ্যাসীয় অবস্থায় রূপান্তরিত হয়।
প্রশ্ন -৯ : নিচের চিত্রগুলো লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. তরল পদার্থ কাকে বলে? ১
খ. ঐ২ঝ ও CO2 এর মধ্যে কোনটির ব্যাপনের হার বেশি? ২
গ. আয়োডিনকে তাপ দিলে উদ্দীপকের কী চিত্র পাওয়া যাবেব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকের ক, খ ও গ এর আন্তঃআণবিক শক্তির তুলনামূলক বিবরণ দাও। ৪
৯নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু আকার নেই, যখন যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের আকার ধারণ করে, তাদের তরল পদার্থ বলে।
খ. ঐ২ঝ এর ব্যাপনের হার বেশি।
ব্যাপনের হার বস্তুর ভর ও ঘনত্বের ওপর নির্ভরশীল। বস্তুর ভর বেশি হলে ব্যাপনের হার কমে যায়।
ঐ২ঝ এর আণবিক ভর = (১ ২) + ৩২ = ৩৪
এবং CO2 এর আণবিক ভর = ১২ + (১৬ ২) = ৪৪
যেহেতু, ঐ২ঝ এর ভর CO2 এর ভরের চেয়ে কম সেহেতু ঐ২ঝ এর ব্যাপনের হার বেশি হবে।
গ. উদ্দীপকের উল্লিখিত চিত্রের (ক) কঠিন, (খ) তরল এবং (গ) গ্যাসীয়। আমরা জানি, একই পদার্থ তাপমাত্রার ওপর ভিত্তি করে তিনটি ভৌত অবস্থায় থাকতে পারে। আর কিছু পদার্থ আছে যাদের উত্তপ্ত করলে সরাসরি তরল না হয়ে গ্যাসীয় অবস্থায় চলে যায়। এ ধরনের পদার্থকে উদ্বায়ী যৌগ বলে। উদ্বায়ী যৌগের তরল অবস্থা নেই। এখন উদ্দীপকের চিত্রে আয়োডিন ব্যবহার করলে (খ)-অবস্থা পাওয়া যাবে না। কারণ-আয়োডিন ঊর্ধ্বপাতিত যৌগ বলে এর তরল অবস্থা নেই। তাই (ক) ও (গ) দুটি চিত্র পাওয়া যাবে।
আয়োডিনের ক্ষেত্রে, কঠিন গ্যাসীয়
ঘ. উদ্দীপকে পদার্থের তিনটি ভৌত অবস্থা দেখানো হয়েছে। যথা- কঠিন (ক), তরল (খ) এবং গ্যাসীয় (গ)।
আমরা জানি, তাপমাত্রার ওপর ভিত্তি করে একই পদার্থ তিনটি ভৌত অবস্থায় থাকতে পারে। সাধারণত কঠিনকে তাপ দিলে তরল এবং তরলকে পুনরায় তাপ দিলে গ্যাসে পরিণত হয়।
কঠিন অবস্থায় কণাগুলোর আন্তঃকণা আকর্ষণ বল বেশি থাকায় কণাগুলোর গতিশক্তি কম। তরল অবস্থায় কণাগুলোর তা মাঝামাঝি কিন্তু গ্যাসীয় অবস্থায় কণাগুলোর আন্তঃকণা আকর্ষণ বল সবচেয়ে কম আর গতিশক্তি সবচেয়ে বেশি।
সুতরাং আন্তঃকণা শক্তির ক্রম হলো
(ক) কঠিন অবস্থা (খ) তরল অবস্থা (গ) গ্যাসীয় অবস্থা
অর্থাৎ ক (কঠিন) অবস্থায় আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি সবচেয়ে বেশি থাকে। খ (তরল) অবস্থায় আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি কঠিনের চেয়ে কম। গ্যাসীয় অবস্থায় আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি সবচেয়ে কম।
প্রশ্ন -১০ : নিচের চিত্রগুলো লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. কণার গতিতত্ত¡ কী? ১
খ. জলীয়বাষ্পকে যখন ঘনীভবন করা হয়, তখন কণাসমূহের ক্ষেত্রে কী ঘটে? ২
গ. উদ্দীপকের চিত্রসমূহের মধ্যে কোনটির আন্তঃআণবিক শক্তি সবচেয়ে বেশি এবং কেন? ৩
ঘ. ১, ২ ও ৩ নম্বর চিত্রের অণুসমূহের ভিন্ন ভিন্নভাবে উপস্থাপনের কারণ কী? ৪
১০নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যে তত্তে¡র মাধ্যমে কণাসমূহ কীভাবে কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় গতিশীল থাকে তা জানা যায় তাকে কণার গতিতত্ত¡ বলে।
খ. জলীয়বাষ্পকে যখন ঘনীভবন করা হয়, তখন কণাসমূহের তাপ নির্গত হয়।
পানি থেকে জলীয়বাষ্প তৈরি হওয়ার সময় পানির কণাসমূহ বাষ্পীভবনের যে সুপ্ততাপ গ্রহণ করে, জলীয়বাষ্প থেকে ঘনীভবনের মাধ্যমে আবার তরলে পরিণত হওয়ার সময় কণাসমূহ সেই তাপ নির্গত করে। অর্থাৎ জলীয়বাষ্পকে ঘনীভবন করলে পরিপার্শ্বে শক্তি (তাপশক্তি) নির্গত করে।
গ. ১, ২ ও ৩ নং চিত্র যথাক্রমে পদার্থের কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থের আন্তঃআণবিক দূরত্ব নির্দেশ করে। ১নং চিত্র অর্থাৎ কঠিন পদার্থের আন্তঃআণবিক শক্তি সবচেয়ে বেশি।
এতে অণুগুলো পরস্পরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে এবং নড়াচড়া করলেও স্থানান্তরিত হতে পারে না। অণুগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক দূরত্ব সবচেয়ে কম।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায়, ১নং চিত্রের আন্তঃআণবিক দূরত্ব কম। কিন্তু ২ ও ৩নং চিত্রের আন্তঃআণবিক দূরত্ব তুলনামূলকভাবে বেশি। আন্তঃআণবিক দূরত্ব যত বেশি হবে আন্তঃআণবিক শক্তি তত কমে যাবে। তাই বলা যায়, ১নং চিত্রের মধ্যে আন্তঃআণবিক শক্তি সবচেয়ে বেশি।
ঘ. পদার্থ কঠিন, তরল অথবা গ্যাসীয় হওয়ার কারণে বুঝানোর জন্যই ১, ২ ও ৩ নং চিত্রের অণুসমূহ ভিন্ন ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রত্যেক পদার্থ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরি। পদার্থের যে ক্ষুদ্রতম কণা স্বাধীনভাবে থাকে এবং যার মধ্যে পদার্থের সমস্ত ধর্ম বজায় থাকে তাকে অণু বলে। এ অণুগুলো পরস্পরের সঙ্গে নিরেটভাবে লেগে থাকে না। এদের মধ্যে অতি সামান্য দূরত্ব বা ফাঁক আছে। এ দূরত্ব বা ফাঁককে আন্তঃআণবিক দূরত্ব বলে। অণুগুলোর নির্দিষ্ট ভর আছে এবং এরা পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এ আকর্ষণকে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলে।
অণুগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক দূরত্ব যত কম হয়, আকর্ষণ বল তত বেশি হয়। আবার এ দূরত্ব যত বেশি হয় আকর্ষণ বল তত কম হয়। কঠিন পদার্থের আকর্ষণ বল সবচেয়ে বেশি। তরলের আকর্ষণ বল মাঝামাঝি। আর গ্যাসীয় পদার্থের আকর্ষণ বল সবচেয়ে কম। তাছাড়া পদার্থের অণুগুলো স্থির থাকে না- সবসময় কাঁপতে থাকে। এ কম্পনের জন্য অণুগুলোর মধ্যে পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার একটি সাধারণ প্রবণতা থাকে।
এজন্য ১নং, ২নং ও ৩নং চিত্রের অণুসমূহ ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
দ্বিতীয় অধ্যায় পদার্থের অবস্থা সৃজনশীল প্রশ্নব্যাংক
প্রশ্ন-২৫ :
ক. ঊর্ধ্বপাতন কী? ১
খ. ব্যাপন ও নিঃসরণের মধ্যে ২টি পার্থক্য লিখ। ২
গ. অধিক চাপে ও তাপে অ পদার্থটি সংকোচনশীল ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. উদ্দীপক থেকে বিশ্লেষণ করকঠিন পদার্থের ব্যাপন সম্ভব। ৪
প্রশ্ন-২৬ :
[শেরপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়]
ক. হিমাঙ্ক কী? ১
খ. পদার্থের ভৌত অবস্থার সাথে তাপমাত্রার সম্পর্ক কী রূপ? ২
গ. উদ্দীপকের ১নং লেখচিত্রে গঘ এবং ঙচ বরাবর তাপমাত্রা স্থির কেন? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত লেখচিত্রদ্বয় হতে সংশ্লিষ্ট পদার্থের ভৌত অবস্থার তুলনা কর। ৪
প্রশ্ন-২৭ : শিবলির জন্মদিনে তার বন্ধুরা অনেক বেলুন ফুলিয়ে তা দিয়ে বাসা সাজালে জন্মদিন উদযাপন শেষ হওয়ার পর শিবলির ছোট ভাই রফিক একটি বেলুনে সরু ছিদ্র করল এবং কিছুক্ষণ পর বেলুনটি চুপসে গেল।
ক. পদার্থ কী? ১
খ. নিঃসরণ কি স্বতঃস্ফ‚র্ত ঘটনা? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. রফিকের কাজের জন্য কী ঘটনা ঘটেছে ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. রফিক যদি অনেক বড় ছিদ্র করত তবে কী ঘটত? আলোচনা কর। ৪
প্রশ্ন-২৮ : আয়োডিন (ও২)-কে উত্তপ্ত করে তাপমাত্রার বিপরীতে সময়ের নিম্নরূপ লেখচিত্র পাওয়া যায়Ñ
ক. পদার্থ কী কী ভৌত অবস্থায় থাকতে পারে? ১
খ. তিনটি ভৌত অবস্থায় পদার্থের কণিকাসমূহের গতিশীলতা ব্যাখ্যা কর। ২
গ. উদ্দীপকের লেখচিত্রে ইঈ দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. অই এবং ঈউ বরাবর উল্লিখিত বস্তুর আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের তুলনামূলক আলোচনা কর। ৪
প্রশ্ন-২৯ : অনিন্দ্য একদিন শিক্ষকের সহায়তায় পরীক্ষাগারে লোহার তৈরি জিনিসে মরিচা পড়ার ঘটনা পরীক্ষা করছিল। এজন্য, সে একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে লোহার দণ্ড আংশিক ডুবালো। অন্য একটি পাত্রের তামা ও দস্তার সংকর দ্বারা তৈরি একটি চামচ পানিতে ডুবালো। প্রথম পাত্রটিতে বাদামী আস্তরণ পড়লেও দ্বিতীয়টিতে পড়েনি।
ক. সালোকসংশ্লেষণ কী? ১
খ. রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান পরস্পর নির্ভরশীল কেন? ২
গ. প্রথম পাত্রের পদার্থটি আস্তরণ পড়ার স্থান ও কারণ ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. দ্বিতীয় পাত্রের পদার্থটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন কি না নাÑ বিশ্লেষণ কর। ৪
আরো পড়ুন
Prosno bank Shomadhan lagbe
২৮ নং প্রশ্নের উত্তরটা হলে ভালো হতো