প্রথম অধ্যায়
ব্যবসায় পরিচিতি
ব্যবসায়ের ধারণা : মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যবসায় বলে। পরিবারের সদস্যদের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা, হাঁস-মুরগি পালন করা, সবজি চাষ করাকে ব্যবসায় বলা যায় না। কিন্তু যখন কোনো কৃষক মুনাফার আশায় ধান চাষ করে বা সবজি ফলায় তা ব্যবসায় বলে গণ্য হবে। তবে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই ব্যবসায় বলে গণ্য হবে যদি সেগুলো দেশের আইনে বৈধ ও সঠিক উপায়ে পরিচালিত হয়। ব্যবসায়ের সাথে জড়িত পণ্য বা সেবার অবশ্যই আর্থিক মূল্য থাকতে হবে।
ব্যবসায়ের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ : সামাজিক কার্যক্রম হিসেবে মানবসভ্যতা ও ব্যবসায় অতি সুপ্রাচীনকাল হতেই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ মানবসভ্যতার অগ্রগতি ও স¤প্রসারণে ব্যবসায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে। দ্রব্য বিনিময়ের স্থলে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণ-রৌপ্যের মুদ্রা ও পরবর্তীকালে কাগজি মুদ্রার প্রচলন হয়। ব্যবসায়ের ক্রমবিকাশের এ ধারাকে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক এ তিন পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়।
ক. প্রাচীন যুগ : প্রাচীন যুগের ব্যবসায়ের প্রধান উপকরণগুলো ছিল কৃষিজাত পণ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য, প্রত্যক্ষ শ্রম ও সেবা। এজন্য কামার, কুমার, তাঁতি, ছুঁতার প্রভৃতি শ্রেণির ব্যবসায়ীদের আবির্ভাব ঘটে। এ যুগে হস্তশিল্প ও কুটির শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি ঘটে।
খ. মধ্যযুগ : বিনিময় মাধ্যম হিসেবে মুদ্রার প্রচলন হতে শিল্প বিপ্লবের আগ পর্যন্ত সময়কে ব্যবসায়ের মধ্যযুগ ধরা হয়। এ যুগের প্রথমে একমালিকানা ব্যবসায় এবং শেষের দিকে অংশীদারি ব্যবসায়ের উদ্ভব হয়।
গ. আধুনিক যুগ : এ পর্যায়ে একমালিকানা ও অংশীদারি ব্যবসায়ের পাশাপাশি যৌথমূলধনী ও রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে। এর ফলে পণ্যের বাজার স¤প্রসারিত হয় এবং উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাগণ তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। আধুনিক ব্যবসায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো : বৃহদায়তন ও ব্যাপক উৎপাদন, তীব্র প্রতিযোগিতা ও প্রচার, আন্তর্জাতিক বাজার ও পুঁজির প্রাধান্য, বৈজ্ঞানিক উৎপাদন পদ্ধতি ও পরিচালনা ইত্যাদি।
ব্যবসায়ের আওতা ও প্রকারভেদ : ব্যবসায়ের পরিধি বা আওতা বলতে সাধারণত ব্যবসায়ের স্বাভাবিক কার্যক্ষেত্রকেই বোঝায়। মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে মানুষের বস্তুগত ও অবস্থাগত অভাব মিটানোর জন্য পণ্য-দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন, সংগ্রহ ও বণ্টন এবং এদের সহায়ক যাবতীয় কাজ আধুনিক ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত। আধুনিক ব্যবসায়কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ক. শিল্প, খ. বাণিজ্য, গ. প্রত্যক্ষ সেবা।
ক. শিল্প : শিল্প হলো উৎপাদনের প্রক্রিয়া বিশেষ। এর কাজ হলো প্রকৃতি হতে প্রাপ্ত সম্পদসমূহ উত্তোলন, শোধন ও প্রস্তুতকরণ। অর্থাৎ শিল্প বলতে পণ্যের রূপগত পরিবর্তন সাধন করে নতুন নতুন উপযোগ সৃষ্টি করাকে বোঝায়। শিল্পকে প্রধানত পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। (১) প্রজনন শিল্প, (২) নিষ্কাশন শিল্প, (৩) নির্মাণ শিল্প, (৪) উৎপাদন শিল্প, (৫) সেবা শিল্প।
খ. বাণিজ্য : ব্যবসায়ের অন্যতম প্রধান শাখা হলো বাণিজ্য। এর প্রধান কাজ হলো শিল্পে উৎপাদিত পণ্য-দ্রব্যসমূহ বণ্টন করা এবং বণ্টনকালে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করে ভোগকারীদের নিকট পণ্য পৌঁছে দেয়া। অর্থাৎ উৎপাদন ও ভোগকারীদের নিকট পণ্য দ্রব্য এবং সেবাদি বিনিময় বা আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াকে সমন্বিতভাবে বাণিজ্য বলে। পণ্য বিনিময়কালে সৃষ্ট ব্যক্তি, স্থান, কাল, ঝুঁকি ও মূলধনগত সমস্যাদি বাণিজ্য যথাক্রমে ট্রেড, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, বিমা ও ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে দূর করে থাকে।
গ. প্রত্যক্ষ সেবা : অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী প্রভৃতি পেশাজীবীরা বিভিন্ন রকম সেবাকর্ম অর্থের বিনিময়ে প্রদান করে থাকে। এ সকল সেবাকর্ম বা বৃত্তি প্রত্যক্ষ সেবা হিসেবে পরিচিত। তাই সকল প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সেবাকর্ম অর্থাৎ ডাক্তারি ক্লিনিক, আইন চেম্বার, প্রকৌশলী ফার্ম, প্রচার, গবেষণা, পরিবহন, বিমা, পেশা ইত্যাদি ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত। কারণ ব্যবসায়ের প্রতি ক্ষেত্রেই কমবেশি এ কাজগুলো সম্পাদন করতে হয়।
ব্যবসায়ের গুরুত্ব : আধুনিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে সাথে দ্রæত বিবর্তন এসেছে সমাজব্যবস্থায়। ফলে বেড়েছে মানুষের বিভিন্নমুখী চাহিদা। অধিকন্তু জীবিকার্জনের সবচেয়ে স্বাধীন ও সহজতম উপায় হলো ব্যবসায়। মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় যাবতীয় চাহিদা পূরণ ছাড়াও ব্যবসায় জাতীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে। ব্যবসায়ের মাধ্যমে সম্পদের যথার্থ ব্যবহার সহজ হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। ব্যবসায়ের ফলে সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়, মূলধন গঠিত হয় ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।
ব্যবসায় পরিবেশ : সাধারণত যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে ব্যবসায় গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে ব্যবসায়ের পরিবেশ বলে। ব্যবসায়ের পরিবেশ কেবল সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রাকৃতিক অবস্থার দ্বারাই প্রভাবিত হয় না, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড দ্বারাও প্রভাবিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ ব্যবসায়ের পরিবেশ আলোচনাকালে স্থানীয় ভ‚প্রকৃতি, জলবায়ু, নদনদী, বনভ‚মি, প্রাকৃতিক সম্পদ, জনবসতি ও জনপ্রকৃতি এবং সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অবস্থা ও উপাদানসমূহ বিবেচনায় আনতে হয়।
অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-১ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আঁখিতারা গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্র নাফিসের বাবা গ্রামের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন পল্লি চিকিৎসক। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি মানসম্মত ঔষধও বিক্রি করেন। গ্রামে বিভিন্ন রোগের ঔষধের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্তে¡ও কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি সব ধরনের ওষুধ ক্রয় করতে পারেন না। সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে ওষুধ কোম্পানির এজেন্টরাও প্রয়োজনীয় ঔষধ সময়মতো পৌঁছাতে পারেন না। অন্যদিকে দোকানে সংরক্ষণের সুব্যবস্থা না থাকায় অনেক ওষুধ নষ্ট হয়ে যায়।
ক. ব্যবসায়ের প্রধান উদ্দেশ্য কী?
খ. শিল্প বলতে কী বোঝায়? উদাহরণ দাও।
গ. নাফিসের বাবার ব্যবসায়টি কোন ধরনের? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. নাফিসের বাবার পক্ষে এলাকাবাসীর চাহিদামাফিক ওষুধ সরবরাহ করতে না পারার কারণ কোনটি বলে তুমি মনে কর। তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যবসায়ের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন।
খ. প্রকৃতিতে প্রাপ্ত বা উৎপাদিত কাঁচামালকে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রূপগত পরিবর্তনের সাহায্যে মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্যে পরিণত করার কাজই হলো শিল্প। এটি উৎপাদনের মূল বাহন। এর কাজ হলো প্রকৃতি হতে প্রাপ্ত সম্পদসমূহ উত্তোলন, শোধন ও প্রস্তুতকরণ। কৃষিকাজ, খনিজ সম্পদ উত্তোলন, পশুপালন, মৎস্য আহরণ ইত্যাদি শিল্পের আওতাভুক্ত।
গ. নাফিসের বাবার ব্যবসায়টি প্রত্যক্ষ সেবামূলক ব্যবসায়।
যে ব্যবসায়ে সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা হয় তাকে সেবামূলক ব্যবসায় বলে। সকল প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সেবাকর্ম অর্থাৎ, আইনবৃত্তি, ডাক্তারি, প্রচার, গবেষণা, পরিবহন, বিমা ইত্যাদি ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত। কারণ ব্যবসায়ের প্রতি ক্ষেত্রেই কমবেশি এ কাজগুলো সম্পাদন করতে হয়। উদ্দীপকে নাফিসের বাবা একজন পল্লি চিকিৎসক। তিনি অর্থের বিনিময়ে এলাকার মানুষদের চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন। এর মাধ্যমে একদিকে তিনি অর্থ উপার্জন করছেন অন্যদিকে জনগণের সেবা করছেন। এছাড়া তিনি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যেই একজন পল্লী চিকিৎসক হিসেবে মানসম্মত ঔষধ বিক্রি করে থাকেন। এতে গ্রামের লোকদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও ওষুধ কেনার জন্য দূরে যেতে হয় না। নাফিসের বাবার যাবতীয় কার্যক্রমের উদ্দেশ্য যেহেতু সেবা প্রদান, তাই তার ব্যবসায়টিকে সন্দেহাতীতভাবে প্রত্যক্ষ সেবামূলক ব্যবসায় হিসেবে গণ্য করা যায়।
ঘ. নাফিসের বাবার পক্ষে এলাকাবাসীর চাহিদামাফিক ওষুধ সরবরাহ করতে না পারার কারণ অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।
পরিবহন বা যোগাযোগের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন স্থান হতে ভোগ্যস্থানে স্থানান্তরের দ্বারা স্থানগত সমস্যা সমাধান করা হয়। অর্থাৎ পরিবহনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা দেশ-বিদেশের নানা স্থানে পণ্যসামগ্রী নিয়ে যেতে সক্ষম হন। উদ্দীপকের নাফিসের বাবা একজন পল্লি চিকিৎসক হিসেবে আঁখিতারা গ্রামে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত। তিনি চিকিৎসার পাশাপাশি গ্রামের মানুষের নিকট ওষুধ বিক্রয় করেন। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিক‚লতার জন্য নাফিসের বাবা গ্রামের লোকজনের চাহিদামাফিক সব ধরনের রোগের জন্য মানসম্মত ওষুধ সরবরাহ করতে পারেন না।এর প্রধান কারণ সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব। আঁখিতারা গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ার কারণে ওষুধ কোম্পানির এজেন্টরা নিয়মিতভাবে নাফিসের বাবাকে ওষুধ সরবরাহ করতে পারেন না। আবার, নাফিসের বাবার দোকানে ওষুধ সংরক্ষণের সুব্যবস্থা না থাকায় পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করলে অনেক সময় মেয়াদোত্তীর্ণ ও অন্যান্য কারণে ওষুধ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে দেখা যায় প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাবে তিনি গ্রামের মানুষদের চাহিদামাফিক মানসম্মত ওষুধ প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছেন।
সুতরাং বলা যায়, পরিবহন ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ার ফলেই নাফিসের বাবার পক্ষে এলাকাবাসীর চাহিদামাফিক ওষুধ সরবরাহ সম্ভব হয় না।
প্রশ্ন-২ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বাংলাদেশ একসময় ব্যবসায়-বাণিজ্যে সারাবিশ্বে সুপরিচিত ছিল। এ দেশে এমন একটি বস্ত্র তৈরি হতো যার খ্যাতি দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদীর আবহাওয়া ও জলীয়বাষ্প সে বিখ্যাত বস্ত্রটির সুতা তৈরিতে সহায়ক ছিল। সাথে ছিল শ্রমিক ও কারিগরদের আন্তরিক পরিশ্রম ও সৃজনশীলতা। বর্তমানে ব্যবসায়িক পরিবেশের সবগুলো উপাদানের উন্নয়ন ঘটাতে পারলে ব্যবসায়-বাণিজ্যের অধিক প্রসার ঘটবে এবং ফিরে আসবে অতীত গৌরব।
ক. কোন বস্ত্রের জন্য বাংলাদেশের খ্যাতি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল?
খ. ব্যবসায়িক পরিবেশ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. কোন পরিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে উদ্দীপকে উল্লিখিত শ্রমিক ও কারিগরদের সৃজনশীলতা বিকাশ সম্ভব? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বর্তমানে দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে উদ্দীপকে উল্লিখিত ব্যবসায়ের কোন পরিবেশের উন্নয়ন জরুরি বলে তুমি মনে কর। তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মসলিন বস্ত্রের জন্য বাংলাদেশের খ্যাতি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।
খ. যেসব প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা ব্যবসায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হয় সেগুলোর সমষ্টিই ব্যবসায়িক পরিবেশ। ব্যবসায়ের পরিবেশ আলোচনাকালে স্থানীয় ভ‚প্রকৃতি, জলবায়ু, নদনদী, বনভ‚মি, প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, জনবসতি ও জনপ্রকৃতি এবং সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় আনতে হয়। কারণ একটি ব্যবসায়ের সাফল্য বা ব্যর্থতা কমবেশি এসব উপাদানের ওপর নির্ভরশীল।
গ. সামাজিক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে উদ্দীপকে উল্লিখিত শ্রমিক ও কারিগরদের সৃজনশীলতা বিকাশ সম্ভব।
সাধারণত একটি দেশের জনগণ, ধর্মীয় বিশ্বাস, ভোক্তাদের মনোভাব, মানবসম্পদ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত হয় সামাজিক পরিবেশ। আর সমাজের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসায় গড়ে ওঠে। উদ্দীপকে উল্লিখিত মসলিন কাপড়ের শ্রমিক ও কারিগরদের সৃজনশীলতার জন্য সামাজিক পরিবেশের উন্নয়ন প্রয়োজন। সামাজিক পরিবেশের অন্যতম উপাদান শিক্ষা ব্যবস্থাকে দক্ষতা ও শ্রমনির্ভর করতে পারলে শ্রমিক ও কারিগররা পুরনো ঐতিহ্য মসলিন কাপড় সম্পর্কে গবেষণার মাধ্যমে তাদের সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারবে। পাশাপাশি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করে বস্ত্র শিল্পের প্রসার ঘটানো যাবে। কারণ অতীতে মসলিন কাপড় উৎপাদন করে এদেশের মানুষ তাদের প্রতিভা, পরিশ্রম ও সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখেছে। তাই বলা যায়, মসলিন কাপড়ের শ্রমিক ও কারিগরদের সৃজনশীলতার জন্য সামাজিক পরিবেশের উন্নয়ন প্রয়োজন।
ঘ. বর্তমানে দেশের ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে উদ্দীপকে উল্লিখিত ব্যবসায়ের রাজনৈতিক পরিবেশের উন্নয়ন জরুরি বলে আমি মনে করি।
ব্যবসায় পরিবেশের অন্যতম উপাদান রাজনৈতিক পরিবেশ। দেশের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির জন্য সুষ্ঠু ও সৃশৃঙ্খল রাজনৈতিক পরিবেশ অত্যাবশ্যক। উদ্দীপকে মসলিন কাপড়ের মতো বিখ্যাত বস্ত্র শিল্পের ব্যবসায়ের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে এই শিল্পের উন্নয়নের অনুক‚ল পরিবেশ আমাদের দেশে রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন, হরতাল , ধর্মঘট প্রভৃতি ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হচ্ছে না। ফলে বিদেশে প্রচুর চাহিদা থাকা সত্তে¡ও রাজনৈতিক পরিবেশের প্রতিক‚লতার কারণে মসলিন কাপড়ের ব্যবসায়টির প্রসার ঘটছে না। তাই আমি মনে করি দেশের ব্যবসায় বাণিজ্যের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসায় বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হলে দেশের সরকার, আন্তজার্তিক সম্পর্ক, শিল্প ও বাণিজ্য নীতিমালা, আইন-শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত রাজনৈতিক পরিবেশের উন্নয়ন ঘটানো একান্ত অপরিহার্য।
প্রশ্ন -৩ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
এসএসসি পাস হালিমা অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। অল্পদিনেই তারা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি সফল ব্যবসায়ে পরিণত হয়। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫০ জন নারী পুরুষ কাজ করে। তারা সুঁই-সুতা দিয়ে নকশি আঁকা কাপড়, হাতে কাজের শাড়ি, থ্রি পিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া ইত্যাদি তৈরি করে। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে হালিমা তার প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। হালিমা গ্রামের মহিলাদের কর্মী হিসেবে নিয়োগ করেন বলে গ্রামের মহিলাদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ও জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হয়েছে।
ক. এটিএম কার্ড প্রচলন হয় কোন যুগে? ১
খ. পণ্যের গুদামজাতকরণ প্রয়োজন কেন? ২
গ. হালিমার প্রতিষ্ঠানটি কোন ধরনের শিল্পের অন্তর্গত ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. হালিমার প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব মূল্যায়ন কর। ৪
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. এটিএম কার্ড প্রচলন হয় আধুনিক যুগে।
খ. গুদামজাতকরণ ব্যবসায়ের সময়গত প্রতিবন্ধকতা দূর করে। কিছু পণ্য আছে যেগুলো বছরের নির্দিষ্ট সময়ে জন্মায়, কিন্তু এগুলোর সারা বছরব্যাপী চাহিদা থাকে। এসকল পণ্য সংরক্ষণ না করলে বছরব্যাপী চাহিদা মেটানো যায় না। আবার সব উৎপাদিত পণ্য একই সময় ব্যবহৃত হয় না। এগুলো ভবিষ্যতে বিক্রয়ের জন্য রেখে দিতে হয়। তাই পণ্য গুদামজাতকরণের প্রয়োজন হয়।
গ. হালিমার প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদন শিল্পের অন্তর্গত।
মৌলিক বস্তুকে অথবা অর্ধপ্রস্তুত দ্রব্যসামগ্রীকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ উপযোগ সৃষ্টিকে উৎপাদন শিল্প বলে। এ শিল্পে শ্রম ও যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে কাঁচামালকে প্রক্রিয়াজাত করে চ‚ড়ান্ত পণ্যে রূপান্তর করা হয়। উদ্দীপকে হালিমা অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেন। তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সুঁই-সুতা দিয়ে নকশি আঁকা কাপড় হাতের কাজের শাড়ি, থ্রি পিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া ইত্যাদি তৈরি করে। অর্থাৎ শ্রম ও যন্ত্রের সাহায্যে তার প্রতিষ্ঠানে মানুষের ব্যবহার উপযোগী পোশাক তৈরি করা হয়। তাই বলা যায়, কাঁচামাল সংগ্রহ করে রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করে গ্রাহকের চাহিদানুযায়ী পণ্য তৈরিতে নিয়োজিত হালিমার প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদন শিল্পের অর্ন্তভ‚ক্ত।
ঘ. হালিমার প্রতিষ্ঠানটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে গণ্য হলেও ব্যবসায় যে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক তথা সামগ্রিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই গড়ে উঠেছে ছোট-বড় দোকান থেকে শুরু করে বিশাল শিল্প কারখানা। বর্তমান বিশ্বে ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। উদ্দীপকে হালিমা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করে তার নিজের জীবনের বেকারত্ব দূর করেছেন। তাছাড়া তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রায় ৫০ জন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। ফলে বেকার নারী-পুরুষ দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হয়েছে। হালিমার প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের ফলে তাদের যেমন বেকারত্বের অবসান হয়েছে তেমনি অর্থনৈতিক অবস্থারও পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে এলাকার সামাজিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
সুতরাং বলা যায়, হালিমার প্রতিষ্ঠানটি উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি দেশে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে।
প্রশ্ন-৪ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বাংলাদেশের একটি অন্যতম ফার্নিচার তৈরি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হলো অটবি। অটবি কোম্পানি ক্রেতাদের নিকট থেকে পণ্যমূল্য আদায়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং কার্ড গ্রহণ করে থাকে। ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুযোগ থাকায় অটবিতে অধিক গ্রাহকের সমাগম ঘটে। কোম্পানিটি আর্থিক সংকটের সময় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের সহায়তা গ্রহণ করে।
ক. ভোক্তাদের মনোভাব কোন পরিবেশের উপাদান? ১
খ. কীভাবে পণ্যের সময়গত উপযোগ সৃষ্টি হয়? ২
গ. অটবির লেনদেন সম্পাদনে ব্যবসায়ের কোন যুগের বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠেছে? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. অটবির মতো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ব্যাংকিং কার্যক্রমের ভ‚মিকা মূল্যায়ন কর। ৪
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ভোক্তাদের মনোভাব সামাজিক পরিবেশের উপাদান।
খ. গুদামজাতকরণের মাধ্যমে পণ্যের সময়গত উপযোগ সৃষ্টি হয়। উৎপাদনের সাথে সাথেই পণ্যদ্রব্য বিক্রি বা ভোগ করা হয় না। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পণ্যগুলোকে জমা করে রাখতে হয়। অর্থাৎ উৎপাদনের সময় হতে ভোগ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে পণ্যদ্রব্যগুলোকে গুদামজাত করে ব্যবসায়ে পণ্যের সময়গত উপযোগিতা সৃষ্টি করা হয়।
গ. অটবির লেনদেন সম্পাদনে ব্যবসায়ের আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।
শিল্প বিপ্লবের সময় হতে ব্যবসায়ের আধুনিক যুগ আরম্ভ হয়। এই সময়ে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটে। আর নতুন নতুন যন্ত্রপাতির আবিষ্কারের ফলে ব্যবসায় ক্ষেত্রে অদ্ভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়। উদ্দীপকের অটবি ফার্নিচার প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি ফার্নিচার তৈরি ও সরবরহকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ক্রেতাদের নিকট থেকে পণ্যমূল্য আদায়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে। এরূপ সেবার মধ্যে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড অন্যতম। আধুনিক যুগে ব্যবসায়-বাণিজ্য স¤প্রসারণের সাথে সাথে ব্যাংক ও বিমা ব্যবস্থার স¤প্রসারণ ঘটে ভোক্তা বা ক্রেতাদের সহযোগিতার জন্য। ক্রমবিকাশের এ ধারায় ক্রেতার জীবন যাত্রাকে আরও সহজ ও দ্রুত করতে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটানো হয়। এরই ফসল হিসেবে ব্যাংকিং সেবায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এরূপ প্রযুক্তির নতুন সংযোজন হলো ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড। যার মাধ্যমে ক্রেতা যেকোনো স্থান হতে তার চাহিদা মাফিক পণ্য ক্রয় করতে পারে ও অর্থ পরিশোধ করতে পারে।
ঘ. অটবির মতো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় আধুনিক ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাপক ভ‚মিকা পালন করছে।
বর্তমানে আধুনিকায়নের যুগে ব্যাংক ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছে। সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবা সবার নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকিং পণ্য ও সেবার আবির্ভাব ঘটেছে, যা ব্যাংকিং খাতকে আধুনিক এবং গতিশীল করেছে। উদ্দীপকে অটবি ফার্নিচার প্রতিষ্ঠানটি তাদের ক্রেতাদের নিকট হতে পণ্যের মূল্য আদায়ের জন্য ব্যাংকিং সেবার সবচেয়ে আধুনিক পণ্য ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে থাকে। ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এক ধরনের প্লাস্টিক কার্ড, যা ব্যাংক তার গ্রাহকের জন্য ইস্যু করে। এরূপ কার্ডের মাধ্যমে ক্রেতারা পণ্য কেনা-কাটা করতে পারে। এছাড়া অটবি প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সংকটে পড়লে ব্যাংক তাকে ঋণ প্রদান করে সহায়তা করে। আর ক্রেতাদের আর্থিক লেনদেনের সহযোগিতা করে থাকে। এভাবে অটবি প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যাংক আধুনিক ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করছে। শুধুমাত্র অটবি প্রতিষ্ঠানই নয়, এরূপ সকল ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক ব্যাংকিং সেবা প্রদানে নিয়োজিত রয়েছে। ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তির সেবা প্রদান করছে।
সুতরাং বলা যায়, অটবির মতো সকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভোক্তাসেবা বৃদ্ধিকরণে ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাপক ভ‚মিকা রাখছে।
প্রশ্ন-৫ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মি. জিয়া চট্টগ্রাম ইপিজেডে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাপন করেছেন। তিনি চীন হতে সুতা এবং কাপড় আমদানি করে পোশাক প্রস্তুত করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেন। মান ভালো হওয়ায় স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা তার তৈরি পোশাক কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ক. ব্যবসায়ের সাথে জড়িত পণ্য বা সেবার অবশ্যই কী থাকতে হবে? ১
খ. বিমা কীভাবে ব্যবসায়ের ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে? ২
গ. মি. জিয়া কীভাবে পণ্যদ্রব্যের রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করছেন? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. মি. জিয়ার রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ কর। ৪
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যবসায়ের সাথে জড়িত পণ্য বা সেবার অবশ্যই আর্থিক মূল্য থাকতে হবে।
খ. ব্যবসায়ের সাথে ঝুঁকি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ব্যবসায়িক কার্য সম্পাদনের সাথে জড়িত চাহিদা হ্রাস, পণ্য পচন, মূল্য হ্রাস, দুর্ঘটনা, চুরি, ডাকাতি প্রভৃতি কারণে ব্যবসায়ীকে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বিমা কোম্পানি নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রিমিয়ামের বিনিময়ে এসব ঝুঁকি বহন করে বিধায় বিমার মাধ্যমে ব্যবসায়ের ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করা যায়।
গ. মি. জিয়া সুতা ও কাপড়ের সমন্বয়ে পোশাক প্রস্তুত করে পণ্যদ্রব্যের রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করেছেন।
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পণ্য তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করে রং, রূপ, ইত্যাদির পবিরর্তন করে গ্রাহক ও ভোক্তার ব্যবহার উপযোগী পণ্য তৈরি করা হয় তাকে রূপগত উপযোগ বলা হয়। মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যবসায়ীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে এরূপ উপযোগ সৃষ্টি করে থাকেন। উদ্দীপকে মি. জিয়া একজন ব্যবসায়ী। তিনি চীন থেকে সুতা ও কাপড় আমদানি করেন। আমদানিকৃত সুতা ও কাপড় দ্বারা তিনি মেশিনের সাহায্যে পোশাক প্রস্তুত করেন। অর্থাৎ শ্রম ও যন্ত্রের সাহায্যে তিনি সুতা ও কাপড় দ্বারা মানুষের ব্যবহার উপযোগী পোশাক করেন। তাই বলা যায়, মি. জিয়া কাঁচামাল সংগ্রহ করে গ্রাহক ও ভোক্তার চাহিদানুযায়ী পণ্য তৈরি করে রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করছেন।
ঘ. মি. জিয়ার গার্মেন্টসের তৈরিকৃত পোশাকের মান ভালো হওয়ায় তার রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমান তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে তাল মিলিয়ে চলার জন্য পণ্যের মান উন্নয়ন, স¤প্রসারণ ও বিভিন্ন সহায়ক কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়। এসব কার্যাবলির মধ্যে পণ্যের উন্নত মান নিশ্চিতকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসম্মত পণ্য দেশীয় বাজারে সুনাম সৃষ্টি করে এবং বিদেশে বাজার স¤প্রসারণে সহায়তা করে। এর ফলে দেশ যেমন মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে তেমনি প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিদেশ থেকে সংগ্রহ করে দেশীয় বাজারে প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা পূরণ করতে পারে। উদ্দীপকের মি. জিয়া তৈরিকৃত উন্নত মানের পোশাক বিদেশি ক্রেতাদের নিকট রপ্তানি করে থাকেন। তার তৈরি পোশাকের প্রধান ক্রেতা ইউরোপের দেশসমূহ। পণ্যের গুণগত মান ভালো হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা তার গার্মেন্টসের তৈরিকৃত পোশাক ক্রয় করতে আগ্রহী হয়েছে। এভাবে নতুন ক্রেতার আগমন ঘটায় মি. জিয়ার পোশাক রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সুতরাং বলা যায়, মি. জিয়ার গার্মেন্টেসের তৈরিকৃত পোশাক উন্নতমানের হওয়ায় তার রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রশ্ন-৬ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব সুমন এর চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে একটি মুরগির ফার্ম আছে। তিনি মুরগির ফার্ম দিয়ে তার এলাকায় সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি তার ফার্মে উৎপাদিত ডিম বোয়ালখালী ছাড়াও চট্টগ্রাম সদরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রয় করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করতে চান। কিন্তু বোয়ালখালীর সাথে চট্টগ্রাম সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় তিনি তা করতে পারছেন না।
ক. পণ্যদ্রব্য উৎপাদন সংক্রান্ত কাজকে কী বলে? ১
খ. ব্যবসায়ের পণ্য বণ্টনকারী শাখাটি ব্যাখ্যা কর। ২
গ. জনাব সুমনের শিল্পটির ধরন বর্ণনা কর। ৩
ঘ. কোন ধরনের শিল্পের অভাবে সুমন প্রচুর মুনাফা অর্জন করতে পারছেন না? তোমার উত্তর বিশ্লেষণ কর। ৪
৬নং প্রশ্নের উত্তর
ক. পণ্যদ্রব্য উৎপাদন সংক্রান্ত কাজকে শিল্প বলে।
খ. ব্যবসায়ের পণ্য বণ্টনকারী শাখা হলো বাণিজ্য। ব্যবসায়ের এই শাখাটির কাজ হলো পণ্য ও সেবার বিনিময় সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন এবং বিনিময়কালে সৃষ্ট ব্যক্তি, স্থান, কাল, ঝুঁকি ও মূলধন সম্পর্কিত বাধাসমূহ অপসারণ করা। অর্থাৎ উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য ও সেবা ভোক্তাদের নিকট পৌঁছে দেয়াকে বাণিজ্য বলা হয়।
গ. জনাব সুমনের শিল্পটির ধরন হলো প্রজনন শিল্প।
যে শিল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত সামগ্রী পুনরায় সৃষ্টি বা উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয় তাকে প্রজনন শিল্প বলে। পশু ও হাঁস-মুরগি পালন, মাছের চাষ, ফুল চাষ ইত্যাদি প্রজনন শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। উদ্দীপকের জনাব সুমন মুরগির ফার্ম স্থাপন করেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে। ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা গ্রহণ করে এরূপ ফার্ম ব্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি বর্তমানে একজন সফল ব্যবসায়ী। মুরগির ফার্ম হতে ডিম সংগ্রহ করে তিনি তার এলাকায় ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বাজারজাতকরণ করেন। এছাড়া তিনি ডিম থেকে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করতে পারেন। যাতে পরবর্তীতে নতুন মুরগিতে রূপান্তর হবে। এগুলো তাকে নতুন মুরগি ক্রয় না করা থেকে বিরত রাখবে। তাই, জনাব সুমনের এরূপ উৎপাদনমূলক কাজকে প্রজনন শিল্প হিসেবে চিিহ্নত করা যায়।
ঘ. নির্মাণ শিল্পের অভাবে সুমন প্রচুর মুনাফা অর্জন করতে পারছেন না।
যে প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় তাকে নির্মাণ শিল্প বলে। অর্থাৎ নির্মাণ শিল্পের মাধ্যমে, রাস্তাঘাট, সেতু ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়। উদ্দীপকে জনাব সুমন চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর একজন সফল মুরগির ফার্ম ব্যবসায়ী। তিনি তার ফার্ম হতে উৎপাদিত মুরগির ডিম সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত ডিম তিনি তার এলাকায় বাজারজাতকরণ করে থাকেন। তিনি তার ফার্মের উৎপাদিত ডিম বোয়ালখালী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অর্থাৎ চট্টগ্রাম সদরে বিক্রি করে ব্যাপক মুনাফা অর্জন করতে চাচ্ছেন। কিন্তু বোয়ালখালী হতে চট্টগ্রাম সদরের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় তিনি তার ফার্মে উৎপাদিত ডিম চট্টগ্রাম সদরে নিয়ে বিক্রয় করতে পারছেন না। তাই অধিক পরিমাণে মুনাফাও অর্জন করতে পারছেন না।
সুতরাং বলা যায়, বোয়ালখালিতে নির্মাণ শিল্পের অভাব থাকায় জনাব সুমন অধিক পরিমাণে মুনাফা অর্জন করতে পারছেন না।
প্রশ্ন-৭ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
কাসেম একটি ফার্নিচার দোকানের মালিক। তিনি নিজে কাঠ কেটে চেয়ার, টেবিল ও খাটসহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র প্রস্তুত করেন। আসবাবপত্র প্রস্তুত করে নিজস্ব ভ্যানে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেন। কাসেম অনেক সময় বাকিতে পণ্য সরবরাহ করায় ক্রেতারাও তার প্রতি আস্থা রাখে। ফলে দিন দিন তার ব্যবসায়ের সফলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক. ব্যবসায় উৎপত্তির মূলে কী ছিল? ১
খ. প্রাচীন যুগকে প্রত্যক্ষ বিনিময়কাল বলা হতো কেন? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. কাসেম কোন ধরনের শিল্পের সাথে জড়িত? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. কাসেমের ব্যবসায়ে সফলতা লাভের কারণ বিশ্লেষণ কর। ৪
৭নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যবসায়ের উৎপত্তির মূলে ছিল মানুষের অভাববোধ।
খ. মানবসভ্যতার শুরু হতে প্রত্যক্ষ বিনিময় ব্যবস্থা পর্যন্ত সময়কে ব্যবসায়ের প্রাচীন যুগ বা প্রাথমিক যুগ হিসেবে ধরা হয়। তখন একজনের উদ্বৃত্ত পণ্য অন্যের উদ্বৃত্ত পণ্যের সাথে প্রত্যক্ষভাবে বিনিময় করা হতো। তাই অনেকেই ব্যবসায়ের প্রাচীন যুগকে প্রত্যক্ষ বিনিময়কাল অর্থাৎ ইধৎঃবৎ অমব বলে অভিহিত করত।
গ. উদ্দীপকে কাসেমের শিল্পটি উৎপাদন শিল্পের অন্তর্ভুক্ত।
যে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় শ্রম ও যন্ত্র ব্যবহার করে প্রাকৃতিক সম্পদের রূপান্তর ঘটিয়ে মানুষের ব্যবহারোপযোগী করে তোলা হয় তাকে উৎপাদন শিল্প বলে। এরূপ শিল্পে প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত সম্পদ ও কৃষিজাত দ্রব্যগুলোকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রং, রূপ ইত্যাদির পরিবর্তন করে মানুষের ভোগের উপযুক্ত করে তোলা হয়। উদ্দীপকে জনাব কাসেম একজন ফার্নিচার দোকানের মালিক। অর্থাৎ একজন ব্যবসায়ী। কারণ তিনি ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা গ্রহণ করে এরূপ ব্যবসায় হতে মুনাফা অর্জন করে থাকেন। তিনি ক্রেতাদের নিকট হতে পণ্যের অর্ডার নিয়ে থাকেন। অর্ডার অনুযায়ী তিনি নিজে কাঠ কেটে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের ব্যবহার উপযোগী চেয়ার, টেবিল ও খাটসহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র প্রস্তুত করেন। তার এরূপ কর্মটি উৎপাদন শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে জনাব কাসেম মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্য তৈরি করে থাকেন।
ঘ. জনাব কাসেম ভোক্তাদের সেবা প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করেছেন।
আধুনিক ব্যবসায়ের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো সেবা, শ্রম ও পণ্যদ্রব্য ক্রয়বিক্রয়, যোগান, উৎপাদন ও বণ্টনের মাধ্যমে ভোক্তাদের বিভিন্ন প্রকার চাহিদা পূরণ করা। ভোক্তার চাহিদা, রুচি ও আস্থা অর্জনের মাধ্যমে খুব সহজেই ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করা যায়। উদ্দীপকে জনাব কাসেম একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী। তিনি নিজে কাঠ কেটে ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী টেবিল, চেয়ার ও খাটসহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র প্রস্তুত করে থাকেন। প্রস্তুতকৃত আসবাবপত্র ক্রেতাদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে তিনি তার নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারি দিয়ে থাকেন। এছাড়া তিনি প্রয়োজন অনুসারে পরিচিত ক্রেতাদের বাকিতে পণ্য সেবা দিয়ে থাকেন। এ সকল কাজ সর্বদা তিনি ক্রেতাদের পছন্দ ও চাহিদা অনুসারে করে থাকে। তাই দোকানে সবসময় ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকেন। ফলে দিন দিন তার দোকানের সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তিনি অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারছেন।
সুতরাং বলা যায়, জনাব কাসেম ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা প্রদান করে ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করেছেন।
প্রশ্ন-৮ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব মিঠু গম থেকে উন্নতমানের আটা এবং ময়দা প্রস্তুত করেন। তার পণ্যটি নতুন হওয়ায় আশানুরূপ বিক্রয় হয় না। তাই তিনি বিক্রয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেন।
ক. নদী থেকে মাছ আহরণ কোন শিল্পের অন্তর্গত? ১
খ. ব্যবসায় পরিবেশের আইনগত উপাদান বলতে কী বোঝায়? ২
গ. মিঠুর প্রতিষ্ঠানটি কোন ধরনের শিল্প? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. মিঠু তার বিক্রয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবেন? মতামত দাও। ৪
৮নং প্রশ্নের উত্তর
ক. নদী থেকে মাছ আহরণ নিষ্কাশন শিল্পের অন্তর্গত।
খ. ব্যবসায় পরিবেশের যে উপাদানের সাহায্যে পরিবেশ সংরক্ষণ ও ভোক্তা আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং শিল্প ও বিনিয়োগবান্ধব আইন তৈরি করা হয় তাকে ব্যবসায় পরিবেশের আইনগত উপাদান বলে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও ভোক্তা আইনের সাহায্যে ব্যবসায় পরিবেশের মধ্যে সংঘটিত দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করা যায়। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের ব্যবসায় বাণিজ্যে উন্নতি নিশ্চিত করা যায়।
গ. জনাব মিঠুর প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদন শিল্পের অন্তর্ভুক্ত।
যে প্রক্রিয়ায় শ্রম ও যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে কাঁচামালকে প্রক্রিয়াজাত করে চ‚ড়ান্ত পণ্যে রূপান্তর করা হয় তাকে উৎপাদন শিল্প বলে। অর্থাৎ উৎপাদন শিল্পের মাধ্যমে কৃষিজাত দ্রব্যগুলোকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় রং, রূপ, আকার ইত্যাদির পরিবর্তন কর ভোগের জন্য উপযুক্ত করা হয়।উদ্দীপকের জনাব মিঠু গম থেকে উন্নতমানের আটা এবং ময়দা প্রস্তুত করেন। অর্থাৎ তিনি শ্রম ও যন্ত্রের সাহায্যে প্রকৃতি প্রদত্ত পদার্থের রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করে ব্যবহার উপযোগী পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করেন। এ কাজ উৎপাদন শিল্পের আওতাভ‚ক্ত। সুতরাং, মিঠু প্রাকৃতিক সম্পদ তথা কৃষিজাত পণ্য আহরণ, রূপান্তর এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে গমকে মানুষের ব্যবহার উপযোগী উন্নত মানের আটা ও ময়দা প্রস্তুত করায় মিঠুর প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদন শিল্পের আওতাভুক্ত।
ঘ. মিঠু তার বিক্রয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা বিজ্ঞাপন ও প্রচারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারেন।
বিজ্ঞাপন হচ্ছে পণ্য বা সেবা সামগ্রীর প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের একটি উপায় বা কৌশল। বিজ্ঞাপন বাজারে পণ্যর চাহিদা বৃদ্ধি করে অধিক বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে। উদ্দীপকে জনাব মিঠুর প্রতিষ্ঠানে গম থেকে উৎপাদিত উন্নত মানের আটা এবং ময়দা নতুন পণ্য হিসেবে আবির্ভাব হওয়ায় পণ্যগুলোর বিক্রয় আশানুরূপ হয়নি। কারণ অনেকেই এ পণ্য সম্পর্কে জানে না। তাই জনাব মিঠু তার নতুন পণ্যটির বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। বিক্রয় বৃদ্ধির পরিকল্পনায় বিজ্ঞাপন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। কারণ বিজ্ঞাপনের সাহায্যে ক্রেতা বা ভোক্তাদের জ্ঞান সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করা হয়। তাই জনাব মিঠু যদি তার পণ্যটির বিজ্ঞাপন দেন। তাহলে ভোক্তা বা ক্রেতারা ঐ পণ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে। কারণ সে বিজ্ঞাপনের সাহায্যে ক্রেতা ও জনগণের নিকট তার উৎপাদিত পণ্যের নাম, গুণাগুণ, শ্রেণি, মূল্য ইত্যাদি পরিচিত করে তুলতে পারবে। ফলে বাজারে তার পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হবে এবং বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে।
সুতরাং বলা যায়, মিঠু বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তার উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
প্রশ্ন-৯ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মুন্সিগঞ্জের নিজাম উদ্দিনের নিজস্ব জমি থাকা সত্তে¡ও শ্রীমঙ্গলে ১০ একর জমি লিজ নিয়ে চায়ের বাগান করেছেন। উৎপাদিত চা প্যাকেটজাত করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারদের সরবরাহ করেন। চা ব্যবসায়ে বেশ মুনাফা হওয়ায় ভালোই চলছিল। কিন্তু বর্তমান বাজেটে চা আমদানির ওপর আরোপিত ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করায় নিজাম উদ্দিন বেশ চিিন্তত।
ক. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কোন ব্যবসায়িক পরিবেশের উপাদান? ১
খ. ক্ষুদ্র বন্দর ও বৃহৎ বন্দরের ধারণা দাও। ২
গ. নিজাম উদ্দিন কেন শ্রীমঙ্গলে চা বাগান করেছেন? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. বাজেট নিয়ে নিজাম উদ্দিনের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ কর। ৪
৯নং প্রশ্নের উত্তর
ক. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সামাজিক পরিবেশের উপাদান।
খ. সংযোগস্থল হিসেবে বন্দরের মাধ্যমে এক দেশের সাথে অন্য দেশের সংযোগ স্থাপিত হয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পাদিত হয়। ক্ষুদ্র বন্দরের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্যিক পণ্য দ্রব্য আদান-প্রদান করা হয়। বৃহৎ বন্দরের মাধ্যমে বাইরে দেশের সাথে সংযোগ স্থাপন করে আন্তর্জাতিকভাবে পণ্যদ্রব্য আদান-প্রদান করা হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যের অধিকাংশই বন্দরের মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়।
গ. নিজাম উদ্দীন প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহের উপস্থিতির কারণে শ্রীমঙ্গলে চা বাগান করেছেন।
জলবায়ু, ভ‚প্রকৃতি, মৃত্তিকা, নদনদী, উদ্ভিজ্জ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদাদি নিয়ে ব্যবসায়ের প্রাকৃতিক পরিবেশে সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে বাংলাদেশের এক এক অঞ্চলে এক এক ধরনের কৃষিপণ্য ভালো উৎপাদিত হয়। উদ্দীপকে নিজামউদ্দিনের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে হওয়া সত্তে¡ও তিনি সিলেটের শ্রীমঙ্গল অঞ্চলে ১০ একর জমি লিজ নিয়ে চা বাগান করেছেন। দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য মুন্সিগঞ্জে চা চাষ ভাল হয় না। কারণ চা চাষের জন্য মুন্সিগঞ্জের প্রাকৃতিক পরিবেশ অর্থাৎ জলবায়ু ও মৃত্তিকা উপযুক্ত নয়। এক্ষেত্রে মুন্সিগঞ্জ অঞ্চলের চেয়ে শ্রীমঙ্গলে প্রাকৃতিক পরিবেশ চা চাষের জন্য অধিক উপযোগী। তাই বলা যায়, চা চাষের জন্য যে ধরনের ভ‚মি ও জলবায়ু প্রয়োজন তা শ্রীমঙ্গলে বিদ্যমান থাকায় নিজামউদ্দিন সেখানে চা বাগান করেছেন।
ঘ. চা আমদানির ওপর আরোপিত ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারে নিজামউদ্দিন বাজেট নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।
সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের মাধ্যমে আয় করে এবং সেই আয় দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করে থাকে। অনেক সময় আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার বিভিন্ন খাতের ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে। আবার কখনো কখনো ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করে থাকে। ফলে একজন ব্যবসায়ী তার ইচ্ছামাফিক ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করতে পারে না। উদ্দীপকে নিজাম উদ্দিন শ্রীমঙ্গল অঞ্চলে চা বাগান করেছেন। তিনি চা বাগান হতে চা উৎপাদন করে প্যাকেটজাতকরণের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রয় করে থাকেন। এরূপ কাজের মাধ্যমে তিনি প্রচুর পরিমাণে মুনাফা অর্জন করেন। কিন্তু হঠাৎ করে সরকার চা আমদানির ওপর আরোপিত ২০% সম্পূরক শুল্ক বর্তমান বাজেটে প্রত্যাহার করেন যাতে আমাদনিকারকরা সহজে সুলভ মূল্যে চা আমদানি করতে পারে। এরূপ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য দেশীয় চায়ের মূল্য হ্রাস পাবে। এতে নিজামউদ্দিনের মতো যারা চায়ের ব্যবসায় করেন, তারা চায়ের বাজার মূল্য সম্মুখীন হবেন। কারণ তাদের চায়ের মূল্য হ্রাস পাবে এবং এবং সে কারণে মুনাফার পরিমাপও কমে যাবে।
সুতরাং বলা যায়, বাজেটে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারে নিজাম উদ্দিন ব্যবসায়ে ক্ষতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ায় তিনি বাজেট নিয়ে উদ্বিগ্ন।
প্রশ্ন-১০ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব রফিক খুলনায় চিংড়ির পাইকারি ব্যবসায় শুরু করেন। ভালো চিংড়ি সংগ্রহ করে পাইকারি মূল্যে বিক্রি করেন এবং বিদেশেও রপ্তানি করেন। বিদেশে চিংড়ি মাছের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তিনি ব্যবসায় আরও স¤প্রসারণের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ক. কোন শিল্পের উৎপাদিত সামগ্রী পুনরায় উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয়? ১
খ. ব্যবসায়িক ঝুঁকি বলতে কী বোঝায়? ২
গ. জনাব রফিক খুলনায় চিংড়ি মাছের ব্যবসা স্থাপনে কোন পরিবেশের উপাদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. জনাব রফিকের ব্যবসায় স¤প্রসারণে ব্যাংক কী ভ‚মিকা রাখতে পারে? মূল্যায়ন কর। ৪
১০নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রজনন শিল্পের উৎপাদিত সামগ্রী পুনরায় উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয়।
খ. ব্যবসায়ের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধানকে ব্যবসায়িক ঝুঁকি বলে। ভবিষ্যৎ সর্বদাই অনিশ্চিত থাকে। ভবিষ্যতের এ অনিশ্চয়তাকে ঝুঁকি বলে। ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশা স্থির করে ব্যবসায় কার্য পরিচালনা করে থাকে। কার্যফল পরিমাপ করে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার মধ্যে একটি পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়।
গ. জনাব রফিক চিংড়ি মাছের ব্যবসায় স্থাপনে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
ব্যবসায়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ যাবতীয় দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ জলবায়ু, ভ‚প্রকৃতি, মৃত্তিকা, নদনদী, উদ্ভিদ, প্রাণীজ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদাদি নিয়ে ব্যবসায়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। জনাব রফিক খুলনায় চিংড়ি ব্যবসায় স্থাপন করেছেন মূলত চিংড়ি উৎপাদনের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবেচনা করে। খুলনার এলাকার পানি এবং জলবায়ু চিংড়ি চাষের উপযোগী বিধায় এখানে প্রচুর পরিমাণে চিংড়ি উৎপন্ন হয়। তাছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগেও এ এলাকায় চিংড়ির চাষ হয়। জনাব রফিক অন্যান্য চিংড়ি চাষিদের কাছ থেকে কম মূল্যে চিংড়ি সংগ্রহ করতে পারেন। তাই বলা যায়, জনাব রফিক প্রাকৃতিক পরিবেশ বিবেচনা করে খুলনায় চিংড়ি মাছ ব্যবসায় স্থাপন করেছেন।
ঘ. জনাব রফিকের ব্যবসায় স¤প্রসারণে ব্যাংক তাকে ঋণ প্রদান করে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে।
যেকোনো উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়নের পেছনে একটি বড় অবদান থাকে ব্যাংকের। কারণ ব্যাংকই দেশে ও বিদেশে ব্যবসায় বাণিজ্য গড়ে তোলার পেছনে সকল আর্থিক সমস্যা সমাধানে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ ব্যাংকিং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন শিল্প বাণিজ্য স্থাপন করতে ও তার সফলতার সাথে পরিচালনা করতে আগ্রহী হয়। উদ্দীপকে খুলনা জেলা চিংড়ি চাষের উপযুক্ত এলাকা হওয়ার কারণে জনাব রফিক সেখানে চিংড়ি মাছের পাইকারি ব্যবসায় শুরু করেন। তিনি ভালো চিংড়ি সংগ্রহ করে পাইকারি মূল্যে বিক্রয় করেন এবং বিদেশেও রপ্তানি করেন। বিদেশে চিংড়ির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তিনি তার ব্যবসায় আরও স¤প্রসারণ করতে চান। এ জন্য তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে ব্যাংক জনাব রফিককে সহজশর্তে ঋণ প্রদান করে তার ব্যবসায়কে স¤প্রসারণে সহযোগিতার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে। রফিক ব্যাংক থেকে ঋণ পেলে তার চিংড়ি ব্যবসায় দেশে ও বিদেশে ব্যাপকভাবে স¤প্রসারণ করতে পারবেন। ফলে দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা জাতীয় আয় বৃদ্ধি পাবে।
সুতরাং বলা যায়, জনাব রফিকের চিংড়ি ব্যবসায় স¤প্রসারণে ব্যাংক ঋণ সহায়তা প্রদান করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে।
প্রশ্ন-১১ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সাভারে ডেইরি ফার্মের বিস্তর প্রসার ঘটছে। সহজেই ব্যাংক ঋণ পাওয়া যাবে, তাই এ ফার্মের ওপর ভিত্তি করে মিঠু হোসেন দুগ্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠা করতে চান। এ শিল্পে বিনিয়োগ করার আগে তিনি সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। কিন্তু দেশের বর্তমান বাজেট মিল্ক ট্যাঙ্কার আমাদনিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ করায় মিঠু হোসেন বিনিয়োগ নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা-ভাবনা করছেন।
ক. কোনটি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সহজতর করে? ১
খ. ব্যবসায়ে অর্থসংস্থানজনিত প্রতিবন্ধকতা দূর করার উপায় লেখ। ২
গ. মিঠু হোসেন কোন ধরনের ব্যবসায়িক পরিবেশকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. তুমি কি মনে কর দুগ্ধ শিল্পে মিঠু হোসেনের বিনিয়োগ করা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও। ৪
১১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রযুক্তিগত উন্নয়ন উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সহজতর করে।
খ. ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য অর্থের প্রয়োজন। এ প্রয়োজনীয় অর্থ বা তহবিলের প্রবাহ বজায় রাখাই হলো অর্থসংস্থান। নির্দিষ্ট হারে সুদের বিনিময়ে ঋণ সরবরাহ করে। ব্যাংক ব্যবস্থা ব্যবসায়ের অর্থসংস্থানজনিত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সাহায্য করে।
গ. মিঠু হোসেন ব্যবসায়ের জন্য অর্থনৈতিক পরিবেশকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
ব্যবসায় সাধারণত এমন কতগুলো উপাদানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, যা ব্যবসায়ের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। উদ্দীপকে অনুক‚ল অর্থনৈতিক পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় মিঠু হোসেন তার দুগ্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠা করার জন্য সাভার এলাকা বাছাই করেছেন। কারণ, ব্যবসায়ের সমস্ত কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে ব্যবসায়ের অর্থনৈতিক পরিবেশ গঠিত। সাভারে মিঠু হোসেন ডেইরি ফার্ম হতে দুধ সংগ্রহ করে শিল্প স্থাপনের জন্য ব্যাংক ঋণকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ব্যাংক যে কোনো উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনা করতে সহজ শর্তে স্বল্প হার সুদে ঋণদান করে থাকে। এ শর্তের ওপর ভিত্তি করে মিঠু হোসেন দেশের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ব্যাংক ঋণ দিয়ে দুগ্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান। তাই বলা যায়, মিঠু হোসেন দুগ্ধ শিল্প স্থাপনে অর্থনৈতিক পরিবেশকে সবয়েয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।
ঘ. দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ দুগ্ধ শিল্পের অনুক‚লে না থাকায়। মিঠু হোসেনের জন্য দুগ্ধ শিল্পে বিনিয়োগ করা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না।
উন্নত বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রæততর হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে সুশৃঙ্খল, অনুক‚ল এবং স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা। অর্থাৎ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অস্থিতিশীল থাকলে কোনো ব্যবসায়ীই সফলতার সাথে ব্যবসায় করতে পারবে না। উদ্দীপকের মিঠু হোসেনের মূল উদ্দেশ্যই হলো মুনাফা অর্জন করা। এজন্য তিনি দুগ্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করছেন। কিন্তু বর্তমান আর্থিক বছরে সরকার বাজেট পাশ করেছে। এতে সরকার এরূপ শিল্পের ওপর আরোপিত শুল্ক ১০ হতে কমিয়ে ৩ শতাংশ করেছে। এর ফলে আমদানিকারকরা অতি সহজেই অন্য দেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে পারবে। কিন্তু এতে দেশের এরূপ শিল্পের ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। অর্থাৎ দেশীয় দুগ্ধ শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। অধিকন্তু আমদানি নির্ভর বাংলাদেশের পণ্য বাজার অতিস¤প্রতি মুক্তবাজার অর্থব্যবস্থা এবং চোরাকারবারির কারণে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় পতিত হয়েছে। ফলে দেশের যৎসামান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে মিঠু হোসেন তার বিনিয়োগ নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা-ভাবনা করছেন।
সুতরাং বলা যায়, মিঠু হোসেনের জন্য দুগ্ধ শিল্পে বিনিয়োগ করা সঠিক হবে না।
প্রশ্ন-১২ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব মেহেদী পণ্য আমদানি ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে তিনি ১০ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করবেন। কিন্তু দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য তিনি উদ্বিগ্ন। কারণ তিনি জানেন সঠিক সময়ে খেজুর আমদানি না করতে পারলে ব্যবসায় সফল হতে পারবেন না।
ক. সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ব্যবসায়ের কোন পরিবেশের উপাদান? ১
খ. পণ্য বিনিময় বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. জনাব মেহেদী কোন ব্যবসায় পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে আমদানি করেন? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি জনাব মেহেদীর ব্যবসায়ে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে বলে তুমি মনে কর? তোমার উত্তর বিশ্লেষণ কর। ৪
১২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ব্যবসায়ের অর্থনৈতিক পরিবেশের উপাদান।
খ. পণ্য বিনিময় বলতে পণ্যের আদান-প্রদানকে বোঝায়। অর্থের আবির্ভাবের পূর্বে বিনিময়ের সুনির্দিষ্ট মাধ্যম ছিল না। এজন্য মানুষ প্রয়োজনাতিরিক্ত পণ্য অন্যকে প্রদান করে তার প্রয়োজনীয় পণ্যটি সংগ্রহ করতেন। যেমন : একজন কৃষক তার উৎপাদিত ধান দিয়ে দর্জির নিকট থেকে কাপড় সংগ্রহ করতেন। পণ্যের বিনিময়ে পণ্য প্রদানের এ ব্যবস্থাকে পণ্য বিনিময় প্রথা বলা হয়।
গ. জনাব মেহেদী সামাজিক পরিবেশের উপাদান ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে খেজুর ব্যবসায় করেন।
মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার-আচরণ সামাজিক পরিবেশের আওতাভুক্ত। ধর্মীয় অনুশাসন ও সুপ্রাচীন সামাজিক ঐতিহ্যের প্রভাবে এ দেশের মানুষের রুচি ও মূল্যবোধ এবং জীবনযাত্রা প্রণালি যথেষ্ট উন্নত ও মানসম্পন্ন। কিন্তু ধর্মীয় কারণে কিছু ব্যবসায় প্রসার লাভ করে আবার কিছু ব্যবসায় বাধাগ্রস্ত হয়। উদ্দীপকে জনাব মেহেদী রমজানকে সামনে রেখে ১০ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করবেন। দেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার কারণে রমজান মাসে ইফতারের জন্য অন্যান্য উপকরণের সাথে খেজুর চাহিদা বেড়ে যায়। তাই অন্যান্য ব্যবসায়ীর মতো জনাব মেহেদী রমজান মাস উপলক্ষে ইফতার সামগ্রী হিসেবে খেজুর আমদানি করেন। তার আমদানি করা পণ্য সাধারণত দেশের জনগণ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভোগের জন্য ক্রয় করেন।
ঘ. দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি জনাব মেহেদীর ব্যবসায়ে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে আমি মনে করি।
রাজনৈতিক পরিবেশ যতবেশি প্রগতিশীল ও স্থিতিশীল হয় ব্যবসায়ও ততবেশি স¤প্রসারিত হয়। কারণ, দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের দ্বারা ব্যবসায়ের উন্নতি-অবনতি বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। একটি দেশে অনুক‚ল ব্যবসায়িক আবহ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যবসায় পরিবেশের জন্য সবগুলো উপাদান অনুক‚ল হওয়া সত্তে¡ও কেবলমাত্র প্রতিক‚ল রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায় পরিবেশ অকার্যকর ও বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। কারণ সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক পরিবেশ যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সুদীর্ঘ দিন থেকে এদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজমান। ফলে প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও এদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে না। উদ্দীপকে জনাব মেহেদী দেশের ভোগ্য পণ্যের চাহিদা মেটাতে পণ্য আমদানি করেন। বৈদেশিক বাণিজ্যে জড়িত থাকায় তিনি অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থায় সবসময় উদ্বিগ্ন থাকেন। কারণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ অর্থাৎ হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ ইত্যাদি তার পণ্য আমদানিতে বিঘœ ঘটায় এবং যথাসময়ে পণ্য পৌঁছাতে বাধা দেয়। ফলে তাকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
সুতরাং বলা যায়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অস্থিতিশীল পরিবেশ জনাব মেহেদীর ব্যবসায়ে নৈতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ ব্যবসায়ের মূল লক্ষ্য কী?
উত্তর : ব্যবসায়ের মূল লক্ষ্য হলো মুনাফা অর্জন।
প্রশ্ন \ ২ \ ব্যবসায় উদ্যোগের সাথে কীসের সম্পর্ক সর্বদা বিদ্যমান?
উত্তর : ব্যবসায় উদ্যোগের সাথে ঝুঁকির সম্পর্ক সর্বদা বিদ্যমান।
প্রশ্ন \ ৩ \ ব্যবসায়ের ক্রমবিকাশের ধারাকে কয়টি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়?
উত্তর : ব্যবসায়ের ক্রমবিকাশের ধারাকে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়।
প্রশ্ন \ ৪ \ শিল্প কী?
উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, কাঁচামালে রূপদান এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কাঁচামালকে মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্যে পরিণত করা হয় তাকে শিল্প বলা হয়।
প্রশ্ন \ ৫ \ বাণিজ্য কী?
উত্তর : ব্যবসায় বা শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল উৎপাদকের নিকট পৌঁছনো কিংবা শিল্পে উৎপাদিত পণ্য বা সেবা সামগ্রী ভোক্তাদের নিকট পৌঁছনোর কার্যাবলিকে বাণিজ্য বলে।
প্রশ্ন \ ৬ \ প্রত্যক্ষ সেবা কী?
উত্তর : অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত ডাক্তার, উকিল, প্রকৌশলীসহ পেশাজীবীরা বিভিন্ন রকম সেবাকর্ম অর্থের বিনিময়ে প্রদান করে থাকেন। এসব সেবাকর্ম বা বৃত্তি প্রত্যক্ষ সেবা হিসেবে পরিচিতি।
প্রশ্ন \ ৭ \ ব্যবসায়ের অর্থগত বাঁধা কীসের মাধ্যমে দূরীভ‚ত হয়?
উত্তর : ব্যবসায়ের অর্থগত বাধা ব্যাংকের মাধ্যমে দূরীভ‚ত হয়।
প্রশ্ন \ ৮ \ ব্যবসায়ের সকল শাখায় কীসের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে?
উত্তর : ব্যবসায়ের সকল শাখায় প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রশ্ন \ ৯ \ ব্যবসায়কে কোন ধরনের কর্মকাণ্ড বলা হয়?
উত্তর : ব্যবসায়কে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলা হয়।
প্রশ্ন \ ১০ \ ব্যবসায়ের সাথে জড়িত পণ্য বা সেবার কোনটি থাকতে হবে?
উত্তর : ব্যবসায়ের সাথে জড়িত পণ্য বা সেবার আর্থিক মূল্য থাকতে হবে।
প্রশ্ন \ ১১ \ ঝুঁকি কী?
উত্তর : মুনাফার প্রত্যাশা এবং বাস্তব প্রাপ্তির ঘাটতিকে ঝুঁকি বলা হয়।
প্রশ্ন \ ১২ \ ব্যবসায় সংগঠনের উদ্ভব ঘটে কোন যুগে?
উত্তর : ব্যবসায় সংগঠনের উদ্ভব ঘটে মধ্য যুগে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ বাজার ও শহর সৃষ্টি হয় কোন যুগে?
উত্তর : বাজার ও শহর সৃষ্টি হয় মধ্য যুগে।
প্রশ্ন \ ১৪ \ বিনিময় প্রথা কী?
উত্তর : দ্রব্যের বিনিময়ে দ্রব্যের লেনদেনকে বিনিময় প্রথা বলা হয়।
প্রশ্ন \ ১৫ \ শিল্পকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তর : শিল্পকে প্রধানত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রশ্ন \ ১৬ \ বাণিজ্য ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কত ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করে।
উত্তর : বাণিজ্য ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ছয় ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করে।
প্রশ্ন \ ১৭ \ বিজ্ঞাপন কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করে?
উত্তর : বিজ্ঞাপন তথ্যগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে।
প্রশ্ন \ ১৮ \ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে স্থানগত বাধা দূর করে কোনটি?
উত্তর : ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে স্থানগত বাধা দূর করে পরিবহন।
প্রশ্ন \ ১৯ \ প্রকৌশলী ফার্ম কোন ধরনের ব্যবসায়?
উত্তর : প্রকৌশলী ফার্ম প্রত্যক্ষ সেবামূলক ব্যবসায়।
প্রশ্ন \ ২০ \ ব্যবসায় পরিবেশ কী?
উত্তর : যেসব প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা ব্যবসায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হয় সেগুলোর সমষ্টিকে ব্যবসায় পরিবেশ বলে।
প্রশ্ন \ ২১ \ ব্যবসায়ের ঝুঁকিগত বাধা দূর করে কোনটি?
উত্তর : ব্যবসায়ের ঝুঁকিগত বাধা দূর করে বিমা।
প্রশ্ন \ ২২ \ প্রজনন শিল্প কী?
উত্তর : উৎপাদিত সামগ্রী পুনরায় সৃষ্টি বা উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হওয়াকে প্রজনন শিল্প বলে।
প্রশ্ন \ ২৩ \ কীসের আশায় ব্যবসায়ী অর্থ বিনিয়োগ করে?
উত্তর : মুনাফা অর্জনের আশায় ব্যবসায়ী অর্থ বিনিয়োগ কর।
প্রশ্ন \ ২৪ \ ব্যবসায়ের পণ্য বা সেবা বণ্টনকারী শাখা কোনটি?
উত্তর : ব্যবসায়ের পণ্য বা সেবা বণ্টনকারী শাখা হলো বাণিজ্য।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ মানুষ পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয় কেন?
উত্তর : মানুষ যেখানে বসবাস করে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার সমন্বয়ে পরিবেশ গড়ে ওঠে। মানুষের জীবন জীবিকা এ সকল পারিপার্শ্বিক অবস্থা দ্বারা নির্ধারিত হয়। পরিবেশের উপাদানগুলো মানুষের ওপর আচার-আচরণ, শিল্প সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি-প্রকৃতি কিরূপ হবে তা নির্দিষ্ট করে দেয়। এজন্যই পরিবেশের দ্বারা মানুষ আজš§ই প্রভাবিত হয়।
প্রশ্ন \ ২ \ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : সম্পদ ব্যবহার করে মুনাফা অর্জনের জন্য যখন কোনো কাজ করা হয় তখন সেটিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলে। অর্থাৎ যে কাজের সাথে অর্থ জড়িত সেটিই অর্থনৈতিক কমকাণ্ড। এরূপ কাজের মাধ্যমে আর্থিক মূল্যের স্থানান্তর ঘটে এবং আর্থিক মূল্যের প্রকাশ পায়।
প্রশ্ন \ ৩ \ ব্যবসায়ের ওপর ব্যবাসয়িক পরিবেশের প্রভাব কেমন?
উত্তর : ব্যবসায় পরিবেশ হলো ব্যবসায়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপাদানের সমষ্টি। এ সকল উপাদান অনুক‚লে না থাকলে ব্যবসায় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় না। ফলে মুনাফা অর্জন ব্যাহত হয়। অন্যদিকে ব্যবসায়ের পরিবেশ অনুক‚ল থাকলে ব্যবসায়িক সফলতা নিশ্চিত হয়।
প্রশ্ন \ ৪ \ একজন ব্যবসায়ী কীভাবে সামাজিক প্রতিপত্তি অর্জন করতে চায়?
উত্তর : ব্যবসায়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্দেশ্য বিদ্যমান। সামাজিক মর্যাদা ও প্রতিপত্তি লাভের উদ্দেশ্যে মানুষ ব্যবসায়ের পুঁজি বিনিয়োগ করে। অর্থ উপার্জন ও সমাজ সেবামূলক কাজে অর্থ ব্যয় করে একজন ব্যবসায়ী সামাজিক প্রতিপত্তি অর্জন করতে চায়।
প্রশ্ন \ ৫ \ উৎপাদন শিল্পের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তর : কাঁচামালকে প্রক্রিয়াজাত করে রূপগত উপযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করে তোলা উৎপাদন শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। উৎপাদন শিল্প নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় শ্রম ও যন্ত্রের ব্যবহার করে কৃষিজাত পণ্য বা প্রাকৃতিক সম্পদের রূপান্তর ঘটিয়ে মানুষের অভাব ও চাহিদা পূরণের জন্যে পণ্য উৎপাদন করে থাকে।
প্রশ্ন \ ৬ \ ব্যবসায় বাণিজ্যের সফলতা অর্থনৈতিক পরিবেশের ওপর কর্তটুকু নির্ভরশীল?
উত্তর : ব্যবসায় বাণিজ্যের সফলতা অর্থনৈতিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। ব্যবসায় প্রবর্তন ও পরিচালনার জন্য অর্থও ঋণ মূলধন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যে সমাজে অর্থ ও ঋণের সরবরাহ সহজ ও পর্যাপ্ত সে সমাজে ব্যবসায় বাণিজ্য স¤প্রসারিত হয়। তাছাড়া প্রাথমিক শিল্প, পরিবহন ও গৌণ উৎপাদন ব্যবস্থা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।
প্রশ্ন \ ৭ \ ব্যবসায়ে ঝুঁকি থাকে কেন?
উত্তর : ব্যবসায়ের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো ঝুঁকি। ঝুঁকি হলো প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির ব্যবধান। ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। পণ্য বা সেবার চাহিদা কেমন থাকবে তা পূর্বেই জানা যায় না। ব্যবসায়িক পরিবেশের বিপর্যয়মূলক প্রভাব আসবে কি না তাও পূর্বেই সঠিকভাবে জানা যায় না। এ সকল কারণে ব্যবসায়ে ঝুঁকি থাকে।
প্রশ্ন \ ৮ \ কাগজি মুদ্রার প্রচলন সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : সভ্যতার শুরুতে ব্যবসায় কর্মকাণ্ড পণ্য বিনিময়ের মধ্যে সীমিত ছিল। এক সময় বিনিময় কর্মকাণ্ডে মুদ্রার আবির্ভাব ঘটে। স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ধাতব মুদ্রা এ সময় ব্যবহৃত হতো। এ সকল মুদ্রা বহনে কষ্টসাধ্য হওয়ায় এবং এ সকল দ্রব্যের দুষ্প্রাপ্যতা কাগজি মুদ্রার প্রচলন ঘটায়।
প্রশ্ন \ ৯ \ মধ্যযুগের ব্যবসায় কর্মকাণ্ডের স্বরূপ লেখ।
উত্তর : ব্যবসায়ের ক্রমবিকাশে মধ্যযুগ অনন্য ভ‚মিকা পালন করে। এ সময় বিনিময়ের মাধ্যমে হিসেবে দুষ্প্রাপ্য শামুক, ঝিনুক, কড়ি ও পাথর ব্যবহৃত হতো। বিনিময়ের মাধ্যমে হিসেবে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ধাতব মুদ্রার প্রচলনও ছিল এ সময়। কিন্তু কাগজি মুদ্রার প্রচলনের পর বাজার ও শহর গড়ে ওঠে যা ব্যবসায় সংগঠনের উদ্ভব ঘটায়।
প্রশ্ন \ ১০ \ নিষ্কাশন শিল্পের স্বরূপ লেখ।
উত্তর : শিল্পের মাধ্যমে ভ‚গর্ভ, পানি বা বায়ু হতে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের কাজকে নিষ্কাশন শিল্প বলা হয়। এখানে মূল শর্ত হলো প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ। যেমন- নদী থেকে মাছ আহরণ, খনি থেকে খনিজ সম্পদ উত্তোলন, বন থেকে বনজ সম্পদ সংগ্রহ ইত্যাদি।
প্রশ্ন \ ১১ \ প্রাচীন যুগ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : যে যুগের মানুষ পশু শিকার, মৎস্য শিকার, ফলমূল আহরণ ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো তাকে প্রাচীন যুগ বলা হয়। এ যুগে মানুষ পণ্য বিনিময় করে তার প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করতো।
কিন্তু দ্রব্যের অবিভাজ্যতা, চাহিদার অসামঞ্জস্যতা এবং দ্রব্য বিনিময়ের সহজ মাধ্যম না থাকায় মানুষ সহজে দ্রব্য বিনিময় করে চাহিদা মেটাতে পারতো না।
প্রশ্ন \ ১২ \ প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের ধারণা দাও।
উত্তর : মানুষ সবকিছু সৃষ্টি করতে পারে না। যে সকল সম্পদ প্রকৃতি আপনা-আপনি সৃষ্টি করে এবং যেটি সৃষ্টিতে মানুষের কোনো অবদান থাকে না তাকে প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদ বলে। যেমন-গ্যাস, পানি, খনিজ তেল, বন প্রভৃতি। ব্যবসায়ের কাজ হলো এ প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের উপযোগ সৃষ্টি করে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা।
প্রশ্ন \ ১৩ \ ব্যবসায় টু ব্যবসায় বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : পণ্য বা সেবা শুধু ভোগের জন্যই ক্রয় করা হয় না বরং এটি পুনঃবিক্রয়ের জন্যও ক্রয় করা হয়। একজন ব্যবসায়ী অন্য ব্যবসায়ীর নিকট থেকে পণ্য ক্রয় করে ভোক্তাদের নিকট বিক্রয় করেন। আবার পণ্য উৎপাদনের জন্যও ব্যবসায়ীরা অন্য ব্যবসায়ীর নিকট থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করেন। এখানে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই ব্যবসায়ী। একটি ব্যবসায়ের সাথে অন্য ব্যবসায়ের যে আর্থিক লেনদেন সেটিই ব্যবসায় টু ব্যবসায়।
প্রশ্ন \ ১৪ \ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মানুষ নিজেকে নিয়োজিত রাখে কেন?
উত্তর : জীবিকা নির্বাহ ও মুনাফার আশায় মানুষ নিজেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রাখে। এছাড়া মানুষ অভাব পূরণের সামগ্রী সরবরাহের জন্য সব ধরনের অর্থনৈতিক কাজ সম্পাদন করা হয়। পণ্যদ্রব্য উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগের জন্যই মানুষ যাবতীয় অর্থনৈতিক কাজে নিয়োজিত হয়।
প্রশ্ন \ ১৫ \ ব্যবসায়ের প্রযুক্তিগত পরিবেশ সম্পর্কে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : শিল্প ও ব্যবসায় বাণিজ্যের উন্নতিতে দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী, উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়। যেসব দেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত পরিবেশে উন্নত তারা ব্যবসায় বাণিজ্যেও উন্নত। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সহজতর করে। ফলে উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ ও গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে ব্যবসায় পরিবেশের প্রযুক্তিগত উপাদানগুলো অনেক ক্ষেত্রেই অনুক‚ল।
প্রশ্ন \ ১৬ \ পণ্য বা সেবার আর্থিক মূল্য থাকতে হবে কেন?
উত্তর : ব্যবসায়ের সাথে জড়িত পণ্য বা সেবার অবশ্যই আর্থিক মূল্য থাকতে হবে। কারণ আর্থিক মূল্য না থাকলে সেটা শুধুই সেবা হিসেবে গণ্য হবে। ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সেবার মনোভাব থাকতে হবে এবং অবশ্যই তার আর্থিক মূল্য থাকবে। আর আর্থিক মূল্যযুক্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই ব্যবসায় হিসেবে গণ্য হবে।