নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ দ্বিতীয় অধ্যায় ব্যবসায় উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

দ্বিতীয় অধ্যায়
ব্যবসায় উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা

উদ্যোগ ও ব্যবসায় উদ্যোগ : মানুষ তার মৌলিক চাহিদাগুলো ও ইচ্ছাপূরণে সদা সচেষ্ট থাকে। এজন্য তার কাজ করার যে কর্মপ্রচেষ্টা তাই উদ্যোগ। আর ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ঝুঁকি নিয়ে যদি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে তা হলো ব্যবসায় উদ্যোগ। মনের সুপ্ত বাসনার বাস্তব রূপদানে উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। আর ব্যবসায়ের স¤প্রসারণে ব্যবসায় উদ্যোগ আবশ্যকীয়।
 উদ্যোগ ও ব্যবসায় উদ্যোগের মধ্যে পার্থক্য : উদ্যোগ যেকোনো বিষয়েই হতে পারে কিন্তু লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করাই হলো ব্যবসায় উদ্যোগ। ব্যবসায় উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন, কিন্তু অন্যান্য উদ্যোগের উদ্দেশ্য জনকল্যাণ।
 ব্যবসায় উদ্যোগের বৈশিষ্ট্য : ব্যবসায় উদ্যোগ এই ব্যবসায় স্থাপনের কর্ম উদ্যোগ। ঝুঁকি আছে জেনেও মুনাফা অর্জন করার উদ্দেশ্যে ব্যবসায় শুরু হয়। আর তাই এ দুইটি ব্যবসায় উদ্যোগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এছাড়া অন্যের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সম্পদ সৃষ্টি, দেশের আর্থিক উন্নয়ন ও সামাজিক দায়বদ্ধতা গ্রহণ করাও ব্যবসায় উদ্যোগের বৈশিষ্ট্য।
 ব্যবসায় উদ্যোক্তার গুণাবলি : একজন ব্যবসায় উদ্যোক্তার কিছু গুণাবলি থাকে যা তাকে ব্যবসায়ে সফলতা অর্জনে সহায়তা করে। একজন উদ্যোক্তার প্রধান গুণসমূহ হলো আত্মবিশ্বাস, স্বাধীনচেতা মনোভাব, উদ্যম, সাংগঠনিক ক্ষমতা, সাহস, অধ্যবসায়, সংবেদনশীলতা, একাগ্রতা, নমনীয়তা, সৃজনশীলতা, ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা, উদ্ভাবনী শক্তি, কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা, পুঁজি সংগ্রহের ক্ষমতা, নেতৃত্বদানের যোগ্যতা, কৃতিত্ব অর্জনের আকাক্সক্ষা, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতা, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণের মানসিকতা ইত্যাদি।
 আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যবসায় উদ্যোগের গুরুত্ব : বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের দেশের জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৫০ ভাগ আসে সেবা খাত থেকে, প্রায় ২০ ভাগ কৃষি খাত থেকে আর ৩০ ভাগ আসে শিল্প খাত থেকে। দেশের প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, পরনির্ভরশীলতা দূরীকরণ ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যবসায় উদ্যোগ একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখে।
 ব্যবসায় উদ্যোগ গড়ে ওঠার অনুক‚ল পরিবেশ : বাংলাদেশে মেধা, মনন ও দক্ষতার খুব বেশি ঘাটতি নেই। শুধুমাত্র ব্যবসায় উদ্যোগ গড়ে ওঠার অনুক‚ল পরিবেশের অভাব। আর এটি গড়ে ওঠার জন্য উন্নত অবকাঠামোগত উপাদান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, আর্থসামাজিক স্থিতিশীলতা, অনুক‚ল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পর্যাপ্ত পুঁজির প্রাপ্যতা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ অনুক‚ল পরিবেশে থাকা উচিত।
 ব্যবসায় উদ্যোগ ও ঝুঁকির সম্পর্ক : ব্যবসায় বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। কোনো ব্যবসায় ঝুঁকি বেশি, কোনো ব্যবসায় কম। ব্যবসায় ঝুঁকি বেশি হলে মুনাফা বেশি এবং ঝুঁকি কম হলে মুনাফা কম হয়। যেকোনো ব্যবসায় শুরুর পূর্বে ঝুঁকি পরিমাপ করা খুবই জরুরি। ঝুঁকি সঠিকভাবে নিরূপণ করতে না পারলে ব্যবসায় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।
 বাংলাদেশে ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নে বাধা : ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হন। এসব বাধার মধ্যে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, চাকরির প্রতি অধিক আগ্রহ, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার অপর্যাপ্ততা, প্রচার-প্রচারণার অভাব, প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানের অভাব, প্রশিক্ষণের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
 বাংলাদেশে ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নে বাধা দূরীকরণের উপায় : বাংলাদেশের ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নে বিরাজমান বাধাসমূহ দূরীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাধাসমূহ দূরীকরণে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তা হলো- কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, প্রচার-প্রচারণা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার, বিনিয়োগ পরামর্শ প্রদান, স্থায়ী ও চলতি পুঁজির যোগান, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ইত্যাদি।

অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মেহদাদ ও নুহাস দুই বন্ধু দশ বছর বিদেশে অবস্থান করে স¤প্রতি দেশে ফিরেছেন। তাদের আর বিদেশ যাবার ইচ্ছা নেই। মেহদাদদের এলাকা চিড়া-মুড়ি তৈরির জন্য বিখ্যাত। সে জন্য মেহদাদ গ্রামের দক্ষ কারিগরদের একত্রিত করে বৃহৎ আকারে মানসম্মত চিড়া-মুড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। এতে মেহদাদের উন্নতির পাশাপাশি কারিগরদেরও সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেল। অন্যদিকে নুহাস গ্রামের ঐতিহ্যকে লালনের উদ্দেশ্যে তার নিজ বাড়িতে একটি পাঠাগার ও সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিলেন। এলাকাবাসী তাদের কর্মকাণ্ডে খুশি।
ক. ম্যাটসুসিটা কোন দেশের কোম্পানি?
খ. ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. নুহাসের গ্রামে পাঠাগার ও সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা কোন ধরনের চিন্তা? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘মেহদাদের উদ্যোগ অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে’  উক্তিটি মূল্যায়ন কর।
 ১নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ম্যাটসুসিটা জাপানের কোম্পানি।
খ. যিনি লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনিই ব্যবসায় উদ্যোক্তা। অর্থাৎ যে ব্যক্তি দৃঢ় মনোবল ও সাহসিকতার সাথে ফলাফল অনিশ্চিত জেনেও ব্যবসায় স্থাপন করেন ও সফলভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করেন, তাকেই ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলা হয়। ব্যবসায় উদ্যোক্তা ব্যবসায়ের প্রাথমিক ঝুঁকি ও দায় দায়িত্ব বহন করেন।
গ. নুহাসের গ্রামে পাঠাগার ও সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা একটি জনকল্যাণমূলক চিন্তা।
সাধারণ অর্থে যেকোনো কাজের কর্মপ্রচেষ্টাই উদ্যোগ। অতএব উদ্যোগ যেকোনো বিষয়েই হতে পারে। ব্যবসায় উদ্যোগের উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন আর অন্যান্য উদ্যোগের উদ্দেশ্য জনকল্যাণ। উদ্দীপকে নুহাস একজন বিদেশ ফেরত যুবক। দেশে ফেরার পর তিনি নিজ গ্রামের বাড়িতে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ও গ্রামের ঐতিহ্য লালনের জন্য একটি পাঠাগার ও সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। পাঠাগার ও সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করা নুহাসের দৃঢ় মনোবল ও উদ্যোগ গ্রহণের ফসল। তিনি প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠা করছেন না। তাই এটি এক ধরনের জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ। নুহাসের এ জনহিতকর কাজের মাধ্যমে গ্রামের মানুষ এবং সমাজ যেমন উপকৃত হবে তেমনি এর মাধ্যমে সে তার গ্রামের ঐতিহ্যকে ধরতে রাখতে পারবে। তাই নুহাসের পাঠাগার ও সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা একটি জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ।
ঘ. মেহদাদের উদ্যোগ অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে বলে আমি মনে করি।
একজন উদ্যোক্তা নানা ধরনের গুণাবলির অধিকারী হয়ে থাকেন। এসব গুণাবলিসমূহ তাকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে সহায়তা করে। তাই এসব গুণাবলি অন্যসব মানুষের জন্য সব সময় অনুকরণীয়। উদ্দীপকে মেহদাদ একজন বিদেশ ফেরত যুবক। নিজ গ্রামে কিছু করবে বলে তিনি আর বিদেশ যেতে ইচ্ছুক নন। এর ফলশ্রæতিতে তিনি বৃহৎ আকারে চিড়া-মুড়ির কারখানা স্থাপন করেন। তার সাথে গ্রামের আরও দক্ষ শ্রমিক বা কারিগর নিয়োগ দিলেন। এতে তার ব্যবসায় সফলতার সাথে পরিচালিত হতে থাকল। ফলে মেহদাদ নিজেও যেমন আর্থিকভাবে সচ্ছল হলেন তেমনি কারিগরদের আর্থিক সচ্ছলতাও বৃদ্ধি পেল। মেহদাদ তার কাজের মাধ্যমে এটাই প্রমাণ করেছেন যে, উদ্যম ও ইচ্ছাশক্তি থাকলে সহজেই যে কেউ একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারে। একজনের গৃহীত উদ্যোগ দেশের এবং সমাজের জন্য উপকারী হতে পারে।
সুতরাং বলা যায়, মেহদাদ সম্পর্কে প্রশ্নের উক্তিটি নিঃসন্দেহে যথার্থ।
প্রশ্ন-২  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
কাজল ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকে। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে ছবি ও ব্যানার লিখে থাকে। তার নিখুঁত ও আকর্ষণীয় কাজ দেখে শিক্ষক ও বন্ধুবান্ধব সবাই প্রশংসা করে। পরীক্ষার পর কাজল একটি এনজিওর অনুরোধে কিছু পোস্টার ও ব্যানার তৈরি করে দেয়। এতে তার হাতে বেশ কিছু অর্থও আসে। তার উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে বৃহৎ পরিসরে কাজল তার কর্মকে এগিয়ে নিতে পারছে না। কাজল স্বপ্ন দেখে একদিন তার ‘কাজল আর্ট’-এর সুনাম ও পরিচিতি এলাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে।
ক. উদ্যোগের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
খ. উদ্যোগ ও ব্যবসায় উদ্যোগের মধ্যে পার্থক্য কী?
গ. উদ্দীপকের কাজলের মধ্যে উদ্যোক্তার কোন গুণটি পরিলক্ষিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কাজলদের মতো সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে দেশে বিশাল উদ্যোক্তা শ্রেণি তৈরি করা সম্ভব মূল্যায়ন কর।
 ২নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. উদ্যোগের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ঊহঃৎবঢ়ৎবহবঁৎংযরঢ়।
খ. যেকোনো কাজের কর্ম প্রচেষ্টাকেই উদ্যোগ বলে। উদ্যোগে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য বাধ্যতামূলক নয়। অপরদিকে ব্যবসায় উদ্যোগ বলতে কোনো কাজে ঝুঁকি আছে জেনেও মুনাফা লাভের আশায় কাজ করার প্রচেষ্টাকে বোঝায়। এর প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। অর্থাৎ, ব্যবসায় উদ্যোগের প্রদান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন কিন্তু অন্যান্য উদ্যোগের উদ্দেশ্য জনকল্যাণ।
গ. উদ্দীপকে কাজলের মধ্যে উদ্যোক্তার সৃজনশীলতার গুণটি পরিলক্ষিত হয়।
একজন উদ্যোক্তা নানান ধরনের গুণাবলির অধিকারী হয়ে থাকেন। এসব গুণাবলিসমূহ তাকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে সহায়তা করে। উদ্যোক্তার বিভিন্ন গুণের মধ্যে একটি হলো সৃজনশীলতা। উদ্দীপকে সৃজনশীলতা গুণের মাধ্যমে কাজল তার উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগান। যদিও কাজল এখন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা নন। তারপরও উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কাজল ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকে। এজন্য সে স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছবি ও ব্যানার লিখে থাকে। তার নিখুঁত ও আকর্ষণীয় কাজ দেখে শিক্ষক ও বন্ধুবান্ধব সবাই প্রশংসা করে। পরীক্ষার পর কাজল একটি এনজিওর অনুরোধে কিছু পোস্টার ও ব্যানার তৈরি করে দেয়। এতে তার হাতে বেশ কিছু অর্থ আসে। অর্থাৎ কাজল তার দক্ষতা ও উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়েছে বলেই তার মধ্যে উদ্যোক্তার সৃজনশীল গুণের বিকাশ ঘটেছে।
ঘ. কাজলদের মতো সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে দেশে বিশাল উদ্যোক্তা শ্রেণি তৈরি করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
আমাদের দেশে মেধা মনন ও দক্ষতার খুব বেশি ঘাটতি নেই। তবে উদ্যোগ উন্নয়নে বিরাজমান পরিবেশ সকল ক্ষেত্রে অনুক‚ল নয়। বেশ কিছু বাধার করণে এখানে উদ্যোগ উন্নয়ন কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। উদ্দীপকের কাজল ভালো ছবি আঁকে এবং ভবিষ্যৎ সাফল্য সম্পর্কে সে আশাবাদী। সে স্বপ্ন দেখেÑ ‘কাজল আর্ট’ নামে নিজের একটি প্রতিষ্ঠান হবে। যার খ্যাতি, সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু কিছু সমস্যা তার স্বপ্নকে বাধাগ্রস্ত করছে। যেমন : মূলধনের অভাব, প্রচারণার অভাব, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। বাংলাদেশের কাজলের মতো অনেক তরুণ উদ্যোক্তা রয়েছে যারা বিভিন্ন সমস্যা বা প্রতিক‚লতার জন্য সফলতা লাভ করতে পারছে না। তারা যদি সাহায্য সহযোগিতা পায় তবে তারাও একদিন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। এর মাধ্যমে দেশে যেমন নতুন নতুন উদ্যোক্তা শ্রেণি তৈরি হবে তেমনি দেশের ব্যাপক উন্নতিও হবে।
সুতরাং বলা যায়, কাজলের মতো উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রণোদনা বা সহায়তার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করে দেশে বিশাল উদ্যোক্তা শ্রেণি তৈরি করা সম্ভব।

প্রশ্ন -৩ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আবির যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে কম্পিউটার সার্ভিসিংয়ের উপর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে চাঁদপুরের নতুন বাজারে কম্পিউটার সার্ভিসিং সেন্টারের একটি দোকান দিলেন। নিয়মিত বিদ্যুৎ এবং যাতায়াত সুবিধা ভালো হওয়ায় দোকানের গ্রাহক সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। তবে স্থানীয় কিছু যুবক প্রতিনিয়তই চাঁদা দাবি করে তাকে হুমকি দিয়ে আসছে। এ পরিস্থিতিতে আবির ব্যবসায়টি অন্যত্র স্থানান্তরের কথা ভাবছেন।
ক. ব্যবসায় ঝুঁকি বেশি হলে লাভের সম্ভাবনা কেমন হয়? ১
খ. ব্যবসায় স্থাপন ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা ঝুঁকিপূর্ণ কেন? ২
গ. আবিরের ব্যবসায়ে সফলতায় অনুক‚ল পরিবেশের কোন উপাদানটি জড়িত? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. আবিরের ব্যবসায়ের প্রতিক‚ল দিকটি বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৩নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ব্যবসায় ঝুঁকি বেশি হলে লাভের সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
খ. একটি শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কেননা যেকোনো ব্যবসায় স্থাপন ও সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য সঠিক পরিকল্পনা, সঠিক ব্যবসায় নির্বাচন ও ঝুঁকি নিরূপণ করা প্রয়োজন। এ কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করা না হলে ব্যবসায় উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে এবং ব্যবসায় স্থাপন ও পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। তাই ব্যবসায় স্থাপন ও পরিচালনা করাকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বলা হয়।
গ. আবিরের ব্যবসায় সফলতায় অনুক‚ল পরিবেশের উন্নত অবকাঠামোগত উপাদানটি জড়িত।
যেকোনো এলাকায় ব্যবসায় স্থাপনের জন্য কতগুলো উপাদান অত্যাবশ্যকীয়। এসব উপাদানগুলোর একটি হলো উন্নত অবকাঠামোগত উপাদান। এই উপাদানের আওতাভুক্ত হলোÑ বিদ্যুৎ সুবিধা, গ্যাস সুবিধা, উন্নত রাস্তা-ঘাট, সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদি। এসব বিষয়গুলো ব্যবসায় গড়ে ওঠার পেছনে কাজ করে। উদ্দীপকে আবির চাঁদপুরে কম্পিউটার সার্ভিসিংয়ের দোকান স্থাপন করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত নতুন বাজারের দোকানটিতে নিয়মিত বিদ্যুৎ সুবিধা ভালো হওয়ায় ধারাবাহিকভাবেই তিনি সার্ভিসিংয়ের কাজ করতে পারেন। তাছাড়া নতুন বাজারের স্থানটিতে যাতায়াত সুবিধা ভালো হওয়ায় গ্রাহক এবং ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ত সকলের সাথেই যোগাযোগ করা সহজ হয়। এসব বিষয়সমূহ আবিরের ব্যবসায়কে উন্নত করেছে। তাই বলা যায়, আবিরের ব্যবসায়ের সফলতায় অবকাঠামোগত উপাদানটির ভ‚মিকা রয়েছে।
ঘ. আবিরের ব্যবসায়ের প্রতিক‚ল দিকটি হলো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুক‚ল থাকলে ব্যবসায় স্থাপন ও পরিচালনা সহজ হয়। অন্যদিকে অস্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যবসায় স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। উদ্দীপকে আবিরের চাঁদপুরের নতুন বাজারে কম্পিউটার সার্ভিসিং সেন্টারের একটি দোকান রয়েছে। তার ব্যবসায়ের সফলতার দৃষ্টিগোচর হওয়ায় এলাকার সন্ত্রাসী যুবকরা তার কাছে চাঁদা দাবি করতে শুরু করেছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত থাকলে স্থানীয় যুবকরা আবিরের নিকট চাঁদা দাবি করতে পারতো না। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাই পেতে আবির তার দোকনটি অন্যত্র স্থানান্তরের চিন্তা করছেন।
সুতরাং, নতুন বাজার এলাকায় আবিরের ব্যবসায়ের অবকাঠামোগত উপাদান বিদ্যমান থাকা সত্তে¡ও ঐ এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যবসায়ের জন্য প্রতিক‚ল হওয়ায় তাকে তার ব্যবসায় অন্যত্র স্থানান্তরের চিন্তা করতে হচ্ছে।

প্রশ্ন-৪  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মি. মাকসুদ ভ‚গোল বিষয়ের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে অন্যের অধীনে চাকরি না করে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে মৎস্য চাষের ওপর তিন মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজ এলাকার ৩টি পুকুর লিজ নিয়ে মাছের চাষ শুরু করেন। মাছের পোনা ভর্তি হাঁড়ি বহন, জাল টানা, মাছের খাদ্য বহন ইত্যাদি কাজ নিজ হাতে করতে তিনি খুব পছন্দ করেন। ফলে মজুরি সাশ্রয়ের সাথে সাথে তার ব্যবসায়েরও অনেক অগ্রগতি হয়েছে এবং আর্থিকভাবে তিনি লাভবান হয়েছেন।
ক. বাংলাদেশের মানুষ কোন পেশার ওপর নির্ভরশীল? ১
খ. উদ্যোক্তার উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয়মূল্য অনিশ্চিত কেন? ২
গ. উদ্যোক্তার কোন গুণ মি. মাকসুদকে আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করেছে? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. মি. মাকসুদের ব্যবসায়ে অগ্রগতির পিছনে মূল কারণটি বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৪নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. বাংলাদেশের মানুষ কৃষি পেশার ওপর নির্ভরশীল।
খ. প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কী হারে মূল্য নির্ধারণ করলে ক্রেতা পণ্য ক্রয়ে আকৃষ্ট হবে তা নির্ধারণ করা যায় না। তদুপরি উদ্যোক্তা যদি দীর্ঘমেয়াদি মুনাফার পরিবর্তে স্বল্প সময়ে প্রচুর মুনাফা করতে চান তাহলে উচ্চ হারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করতে হয়। কিন্তু ক্রেতা কখনও অধিক মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে চায় না। এজন্য উদ্যোক্তার নিকট উৎপাদন ব্যয় নির্দিষ্ট হলেও বিক্রয়মূল্য অনিশ্চিত।
গ. উদ্যোক্তার যে গুণটি মি. মাকসুদকে আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করেছে সেটি হচ্ছে ‘স্বাধীনচেতা মনোভাব’।
অন্যের অধীনে চাকরি করলে অনেক বেশি অর্থ উপার্জন করা গেলেও অনেক ক্ষেত্রে নিজের কোনো স্বাধীনতা থাকে না। কিন্তু নিজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা থাকে। উদ্দীপকে আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মি. মাকসুদ যেমন একাই সকল ঝুঁকি বহন করেন তেমনি লাভও তিনি একাই ভোগ করার সুযোগ পান। চাকরির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ও নিয়মিত আয় প্রবাহ থাকলেও আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। মি. মাকসুদ সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রচুর অর্থের মালিক হতে পেরেছেন। তাই বলা যায়, মি. মাকসুদের স্বাধীনচেতা মনোভাবই তাকে আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
ঘ. মি. মাকসুদের ব্যবসায়ে অগ্রগতির পিছনে মূল কারণটি হলো তার কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা।
একজন উদ্যোক্তা সবসময় শ্রমের প্রতি মর্যাদাশীল। তিনি সবসময় সব ধরনের কাজ করতে প্রস্তুত থাকেন এবং কোনো কাজকে ছোট করে দেখেন না। শ্রমের প্রতি মর্যাদা দেন বলেই একজন সফল উদ্যোক্তা সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে পারেন। উদ্দীপকে মি. মাকসুদ তার আত্মকর্মসংস্থান ক্ষেত্রে মাছের পোনা ভর্তি হাঁড়ি বহন, জালটানা, মাছের খাদ্য বহনের কাজ করতে কোনো লজ্জাবোধ করেননি। শিক্ষার গর্ব তাকে কর্মবিমুখ করেনি। কোনো কাজই ছোট নয়, সেটি মি. মাকসুদ তার কাজ দিয়ে প্রমাণ করেছেন। জীবিকা অর্জনের তাগিদে ব্যবসায়ের অগ্রগতি আনয়নের জন্য তিনি সকল কাজে নিজে সম্পৃক্ত থেকে করার চেষ্টা করেছেন। ফলে তার মজুরি সাশ্রয় হয়েছে, কাজে গতিশীলতা এসেছে এবং মুনাফা বেশি হয়েছে।
সুতরাং বলা যায়, মি. মাকসুদ কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা তার ব্যবসায়ের উপার্জন বৃদ্ধি করতে পেরেছেন।
প্রশ্ন-৫  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব কালাম তার বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে গরু-ছাগল পালনে অনেক সমস্যার কথা জেনেও একটি ডেইরি ফার্ম স্থাপন করলেন। কিছুদিন পর ফার্মে দুটি দামী গাভীর আকস্মিক মৃত্যুতে তিনি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলেন। এরপরও তিনি ফার্ম চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং একজন পশু চিকিৎসক নিয়োগ দিলেন। এতে তিনি সফলতা লাভ করেন।
ক. সফল উদ্যোক্তা কোন ধরনের নেতৃত্ব দানের অধিকারী হয়ে থাকেন? ১
খ. উদ্যোক্তার নমনীয়তা বলতে কী বোঝায়? ২
গ. উদ্যোক্তার কোন গুণটি জনাব কালামের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. জনাব কালামের সফলতার কারণ বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৫নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. সফল উদ্যোক্তা গতিশীল নেতৃত্ব দানের অধিকারী হয়ে থাকেন।
খ. উদ্যোক্তার নমনীয়তা বলতে বোঝায় পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলার যোগ্যতা। সমাজ সর্বদাই পরিবর্তনশীল। ব্যবসায় জগতে এ পরিবর্তন আরও গতিশীল। উদ্যোক্তাকে প্রতিনিয়তই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে হয়। পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর যোগ্যতাই উদ্যোক্তার নমনীয়তা।
গ. জনাব কালামের মধ্যে উদ্যোক্তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতা প্রতিফলিত হয়েছে।
একজন উদ্যোক্তা নানান ধরনের গুণাবলির অধিকারী হয়ে থাকে। এসব গুণাবলি তাকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে সহায়তা করে। উদ্যোক্তার বিভিন্ন গুণের মধ্য একটি হলোÑ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতা। এই গুণের অধিকারী উদ্যোক্তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে নিরলস শ্রম দেন এবং সাফল্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দিষ্ট কাজে নিয়োজিত থাকেন। উদ্দীপকে জনাব কালাম গরু-ছাগল পালনের অনেক সমস্যার কথা জেনেও লক্ষ্য অর্জনে নিরলস শ্রম দেন এবং ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস পরিহার করেন। তাছাড়া তিনি নিজের ক্ষমতা ও সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। তাই দুটি গাভীর আকস্মিক মৃত্যুতে তিনি দিশেহারা না হয়ে লক্ষ্য অর্জনের জন্য নতুনভাবে কাজশুরু করেন এবং ফলাফল অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত নিজেকে কাজে নিয়োজিত রাখেন। তাই বলা যায়, চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মাধ্যমে সাফল্য অর্জনের তীব্র আকাক্সক্ষা জনাব কালামের চরিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. জনাব কালাম তার উদ্যোক্তাসুলভ বৈশিষ্ট্যের কারণে সফলতা অর্জন করেছেন।
ব্যবসায় থেকে প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জনের জন্য উদ্যোক্তা ঝুঁকি গ্রহণ করেন। একজন সফল উদ্যোক্তা পূর্বেই ঝুঁকির সম্ভাব্য কারণ ও মাত্রা অনুমান করেন এবং সেগুলো মোকাবিলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কোনো কারণে প্রথমবার ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার কারণ খুঁজে দ্বিতীয়বার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন। কাজে সাফল্য অর্জনে তীব্র আকাক্সক্ষা তার চরিত্রের একটি বিশেষ দিক। উদ্দীপকে কালাম গরু-ছাগল পালনের সমস্যাকে ঝুঁকি হিসেবে মেনে নিয়ে ডেইরি ফার্ম স্থাপনে অগ্রসর হন। কারণ তিনি জানতেন মুনাফা ঝুঁকি গ্রহণের পুরস্কার। তাই ব্যবসায়ের শুরুতেই তিনি তার ব্যবসায়ের সম্ভাব্য ঝুঁকি, ঝুঁকির কারণ ও মাত্রা অনুমান করেন এবং সেগুলো মোকাবিলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। তাছাড়া তার মধ্যে সাফল্য লাভের তীব্র আকাক্সক্ষা থাকায় তিনি তার ফার্মের দুটি গভীর আকস্মিক মৃত্যুতেও ভেঙে পড়েননি। তিনি কাজের প্রতি অত্যন্ত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তাই তিনি একবার ব্যর্থ হয়েও তিনি নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন। ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিরলস শ্রম দেন। এছাড়াও দূরদৃষ্টি, সৃজনশীলতা, আত্মবিশ্বাস, সুযোগ-সুবিধার ব্যবহার ইত্যাদির গুণাবলি তার মধ্যে ছিল।
পরিশেষে বলা যায় যে, জনাব কামালের মধ্যে উদ্যোক্তাসুলভ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে তিনি তার ব্যবসায়ে সফলতা পান।
প্রশ্ন-৬  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রাশিদা বেগম ছিলেন গ্রামের দরিদ্র মহিলা। তিনি কুটির শিল্পের কাজ করে আজ আর্থিকভাবে সচ্ছল একজন নারী। তার আগ্রহ, সৃজনশীলতা ও কঠোর পরিশ্রম তাকে সচ্ছল হতে সহায়তা করেছে। বর্তমানে তিনি তার সঞ্চিত টাকা ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে একটি কুটির শিল্প স্থাপন করেছেন। এতে গ্রামের অসহায় মহিলারা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।
ক. প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যবসায়ে কোন পরিবেশ সৃষ্টি সম্ভব? ১
খ. উদ্যোক্তা কাকে বলে? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. রাশিদার কুটির শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে কোনটি তাকে সহায়তা করেছে? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. রাশিদা বেগমের আর্থিক সচ্ছলতা লাভে যে বিষয়টি অধিক ভ‚মিকা রেখেছে তা আলোচনা কর। ৪
 ৬নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যবসায়ের অনুক‚ল পরিবেশ সৃষ্টি সম্ভব।
খ. উদ্যোক্তা হলেন একজন ব্যক্তি যিনি কোনো কাজ করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ উদ্যোগ হতে পারে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে আবার সামাজিক বা মানবিক উদ্দেশ্যেও। উদ্যোক্তা তার সৃজনশীলতার মাধ্যমে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেন।
গ. রাশিদার কুটির শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ তাকে সহায়তা করেছে।
কুটির শিল্পের বিকাশ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক। তাই দেশের কুটির শিল্পের বিকাশ ঘটাতে ব্যাংক কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। উদ্দীপকের দরিদ্র মহিলা রাশিদা বেগম কুটির শিল্পের কাজ করে আজ আর্থিকভাবে একজন সচ্ছল নারী। তিনি কুটির শিল্পের কাজ করার মাধ্যমে অর্থ সঞ্চয় করেছেন। এই সঞ্চিত অর্থ ও ব্যাংক ঋণের সহায়তা নিয়ে তিনি নিজেই একটি কুটির শিল্পের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। অর্থাৎ বাণিজ্যিক ব্যাংকের দেয়া ঋণের কারণে রাশিদা বেগমের কুটির শিল্পটি স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। তা না হলে প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে তিনি তার কুটির শিল্পটি প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন না। তাই বলা যায়, রাশিদা বেগমের শিল্পটি স্থাপনে ব্যাংক ঋণ সহায়তা করেছে।
ঘ. রাশিদা বেগমের আর্থিক সচ্ছলতা লাভে তার উদ্যোক্তাসুলভ গুণাবলি অধিক ভ‚মিকা রেখেছে।
একজন উদ্যোক্তা তার সম্পাদিত বিভিন্ন কার্যাবলি দ্বারা নিজের সফলতা অর্জনের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করেন। তাই একজন উদ্যোক্তাকে কতগুলো বিশেষ গুণাবলির অধিকারী হতে হয়। একজন দক্ষ উদ্যোক্তার মধ্যে এমন কতগুলো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে যা সহজে তাকে সাধারণ মানুষ থেকে পৃথক করে দেয়। উদ্দীপকে রাশিদা বেগম একজন কুটির শিল্পের উদ্যোক্তা। তিনি কুটির শিল্পের কাজ করে নিজে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। এই সচ্ছলতার পিছনে তার যেসব গুণগুলো কাজ করেছে তা হলো আগ্রহ, সৃজনশীলতা ও কঠোর পরিশ্রম। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের সকল কাজ আগ্রহ নিয়ে করে থাকেন। এরূপ কাজে তিনি তার সৃজনশীলতা প্রয়োগ ঘটান। তাছাড়া তিনি সবসময় সব ধরনের কাজ করতে প্রস্তুত থাকেন এবং কোনো কাজকে ছোট করে দেখেন না।
সুতরাং বলা যায়, রাশিদা বেগমের উদ্যোক্তা সুলভ গুণাবলি তাকে আর্থিক সচ্ছলতা আনয়নে সহায়তা করেছেন।
প্রশ্ন-৭  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মিঠু তার পড়ালেখা শেষ করে চাকরি না পেয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী মেরামতের ৬ মাসের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি নিজ এলাকায় ঢাকার মিরপুরে ইলেকট্রনিক্স সার্ভিসিং সেন্টার খোলেন, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার থেকে মোবাইল সার্ভিসিংয়ে বেশি আয়ের সুযোগ আছে চিন্তা করে শহরের অভিজাত এলাকায় তার বন্ধু দিপুর দোকান থেকে এক মাসে শিক্ষানবিস হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজের এলাকায় নতুন আঙ্গিকে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে মিঠু বেশ স্বাবলম্বী।
ক. একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কিসের ফলাফল? ১
খ. উদ্ভাবন শক্তি বলতে কী বোঝায়? ২
গ. মিঠুর বেকারত্ব ঘুচাতে স্থানীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভ‚মিকা কী? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. ‘নতুন আঙ্গিকে শুরু করা কাজ মিঠুকে দ্রæত স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করেছে’ -উক্তিটি বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৭নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান উদ্যোগের ফলাফল।
খ. একজন উদ্যোক্তা যে শক্তিবলে নতুন পণ্য বা সেবা সৃষ্টি করেন তাকে উদ্ভাবনী শক্তি বলে। নতুন পণ্য বলতে বোঝায় এমন পণ্য বা সেবা যা কোনো উৎপাদক এর পূর্বে উৎপন্ন করেনি এবং যা কেউ ব্যবহার করেনি। উদ্ভাবনী শক্তিবলে একজন উদ্যোক্তা বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা খুঁজে বের করে সমাধান করেন যা পণ্য বা সেবারূপে ভোক্তাদের নিকট পৌঁছায়।
গ. মিঠুর বেকারত্ব ঘুচাতে স্থানীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রশিক্ষণ প্রদান করে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে।
যেকোনো কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করে সাফল্য লাভ করতে হলে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণ ব্যক্তি বা কর্মীর কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক এবং প্রয়োজনীয় জ্ঞান দান করে। ফলে প্রশিক্ষণার্থী কাজের প্রতি অধিক আগ্রহী হয়। তার দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং কর্মজ্ঞানের পরিধি বাড়ে। উদ্দীপকে মিঠু লেখাপড়া শেষ করে চাকরি না পাওয়ায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে ইলেকট্রনিক সামগ্রীর ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ৬ মাস প্রশিক্ষণ লাভের পর তিনি নিজ উদ্যোগে নিজ এলাকায় একটি সার্ভিসিং সেন্টার খোলেন। এর মাধ্যমে মিঠু নিজেকে স্বাবলম্বী করতে পেরেছেন। কারণ প্রশিক্ষণ ব্যক্তির ভেতর কাজে সফলকাম হওয়ার বাসনা জাগিয়ে তোলে বলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোক অধিক পরিমাণে ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে উৎসাহিত হয় এবং সাফল্য অর্জন করে। তাই বলা যায়, মিঠুকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে স্থানীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছে।
ঘ. নতুন আঙ্গিকে শুরু করা কাজ মিঠুকে দ্রæত স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করেছে উক্তিটি যথার্থ।
উদ্যোক্তা সাধারণত সমাজে আলাদা চিন্তা-চেতনার অধিকারী ব্যক্তিত্ব। তার চিন্তা-চেতনা, ভবিষ্যৎ অনুমান করার ক্ষমতা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ ও বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা, দূরদৃষ্টিশক্তি ইত্যাদি অন্য মানুষের চেয়ে একটু ভিন্ন। তিনি তার দূরদৃষ্টি দিয়ে বাজারে অব্যবহৃত সুযোগ খুঁজে বের করে তা কাজে লাগান। উদ্দীপকে মিঠু তার ইলেকট্রনিক সার্ভিসিং দোকানে টিভি, ফ্রিজ ও কম্পিউটার মেরামত করেন। কিন্তু টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার বা অন্যান্য সকল ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যের মধ্যে মোবাইল ফোনের ব্যবহার দেশে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষিত যুবক মিঠু তার দূরদৃষ্টি দিয়ে এ বিষয়টি অনুধাবন করে তার বন্ধুর মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকান থেকে ১ মাসের শিক্ষানবিস প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নতুন আঙ্গিকে কাজ শুরু করেন। অন্য যেকোনো ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যের তুলনায় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি বলে তাকে এখন আর কাজের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় না। সারাক্ষণ কাজ করে অধিক অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাওয়ায় তিনি কঠোর পরিশ্রম করে দ্রæত স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন।
সুতরাং বলা যায়, মোবাইল সার্ভিসিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে নতুন আঙ্গিকে শুরু করা কাজ মিঠুকে দ্রæত স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করেছে।
প্রশ্ন-৮  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মি. কাউসার তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মূলধন, কাঁচামালের প্রাপ্তি সমস্যা এবং চাঁদাবাজির সমস্যাকে অন্যতম অন্তরায় বলে মনে করেন যার ফলে তার ব্যবসায়ে প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জন অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান সঠিকভাবে করতে না পারায় তিনি তার ব্যবসায়ে কাক্সিক্ষত মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ হলেন।
ক. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে অন্যতম বাধা কোনটি? ১
খ. কৃতিত্ব অর্জনের আকাক্সক্ষা বলতে কী বোঝ? ২
গ. মি. কাউসারের ব্যবসায় প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জনের অনিশ্চয়তা দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. উদ্যোক্তার কোন গুণটির অভাবে মি. কাউসার ব্যবসায়ে কাক্সিক্ষত মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ হলেন? বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৮নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে অন্যতম বাধা হলো রাজনৈতিক অস্থিরতা।
খ. উদ্যোক্তার অন্যতম গুণ হলো কৃতিত্ব অর্জনের আকাক্সক্ষা। উদ্যোক্তা সবসময় সফলতা অর্জন করতে চান। এজন্যই তিনি ব্যবসায় বা শিল্পোদ্যোগ গ্রহণ করেন। ঝুঁকি আছে জেনেও তিনি সফলতা লাভ না করা পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন। কৃতিত্ব লাভের এ তীব্র ইচ্ছাই হলো উদ্যোক্তার কৃতিত্ব অর্জনের আকাক্সক্ষা।
গ. মি. কাউসারের ব্যবসায় প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জনের অনিশ্চয়তা দ্বারা ব্যবসায়িক ঝুঁকিকে বোঝানো হয়েছে।
যেকোনো ব্যবসায়ে মুনাফা অর্জনের অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। যে কোনো সময় যে কোনো কারণে পণ্য বা সেবার চাহিদা কমে যেতে পারে। এর ফলে অর্জিত মুনাফা কমে যেতে পারে। এই সম্ভাবনাই ব্যবসায়িক ঝুঁকি। উদ্দীপকের মি. কাউসার ব্যবসায়ে বিভিন্ন সমস্যার কারণে তার প্রত্যাশা অনুযায়ী মুনাফা অর্জন করতে পারছেন না। এ ধরনের অনিশ্চয়তা ব্যবসায়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যাকে ব্যবসায়িক ঝুঁকি বলা হয়। মি. কাউসারের ব্যবসায়ে মুনাফা অর্জনের অন্তরায় অর্থাৎ ঝুঁকিকে দূর করে প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই তিনি সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। কেননা, যে ব্যবসায়ে ঝুঁকির পরিমাণ যত বেশি সেই ব্যবসায়ে লাভের সম্ভাবনা তত বেশি থাকে। আবার যে ব্যবসায়ে ঝুঁকির পরিমাণ কম সেই ব্যবসায়ে লাভের পরিমাণও কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ঘ. পুঁজি সংগ্রহের ক্ষমতার অভাবে মি. কাউসার ব্যবসায়ে কাক্সিক্ষত মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ হলেন।
পুঁজি বা মূলধন একটি ব্যবসায়ের রক্ত প্রবাহের সাথে তুলনীয়। ব্যবসায়ে যথাযথ মূলধন বিনিয়োগ সম্ভব না হলে সে ব্যবসায় লাভের পরিবর্তে লোকসানের দিকে ধাবিত হয়। অর্থাৎ ব্যবসায়ের ধরন ছোট বা বড় যাই হোক না কেন এতে যদি কাম্য পরিমাণ মূলধন সরবরাহ করা না যায় তাহলে ঐ ব্যবসায় সাফল্য অর্জন করতে পারে না। উদ্দীপকে মি. কাউসার কাঁচামাল প্রাপ্তি ও চাঁদাবাজির সমস্যা দূর করতে পারলেও প্রয়োজনীয় মূলধন জোগাড় করতে না পারায় তিনি তার ব্যবসায়টি সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারেননি। পুঁজির সাথে কাঁচামালের মূল্য প্রদান, শ্রমিকের মজুরি প্রদান, জ্বালানি খরচ, পরিবহন খরচ, কারখানায় অন্যান্য খরচ, অফিস খরচ, প্রশাসনিক খরচ ও বিক্রয় খরচ জড়িত রয়েছে। পুঁজির অভাবে তিনি উপরিউক্ত কোনো কাজই যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারেননি। ফলে তার ব্যবসায় মুখ থুবড়ে পড়েছে।
সুতরাং বলা যায়, মি. কাউসারের ব্যবসায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহের ক্ষমতা কম থাকায় তিনি ব্যবসায়ের কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পাদন করতে না পারায় কাক্সিক্ষত মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ হলেন।
প্রশ্ন-৯  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মি. সাইমন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্যে গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সফরে আসেন। তিনি লক্ষ করেন বাংলাদেশের শিল্প কারখানাগুলোতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও অপর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের অভাবে উৎপাদন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া হরতাল, অবরোধ, শ্রমিক ধর্মঘট ও অসন্তোষের কারণে প্রায়ই শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়। তাই মি. সাইমন এদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন।
ক. ফোর্ড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতার নাম কী? ১
খ. একজন উদ্যোক্তাকে কেন জš§গত উদ্যোক্তা বলা হয়? ২
গ. উদ্দীপকে কোন উপাদানের অভাবে বাংলাদেশের শিল্প কারখানায় উৎপাদন কাজ ব্যাহত হচ্ছে? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. মি. সাইমনের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ হারানোর মূল কারণটি বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৯নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ফোর্ড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতার নাম হেনরি ফোর্ড।
খ. একজন মানুষ বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত গুণাবলি নিয়ে জš§গ্রহণ করেন। একজন ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তার মাঝে উদ্যোক্তা হওয়ার গুণাবলিটি জš§সূত্র থেকেই থাকে যা সে পরবর্তীতে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করার মাধ্যমে ব্যবসায় বা অন্যান্য ক্ষেত্রে তার এ গুণটির প্রতিফলন ঘটায় এবং সফলতা লাভ করে থাকে। তাই উদ্যোক্তাকে জš§গত উদ্যোক্তা বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে ব্যবসায় উদ্যোগ গড়ে ওঠার অনুক‚ল পরিবেশের উন্নত অবকাঠামোগত উপাদানের অভাবে বাংলাদেশের শিল্প কারখানায় উৎপাদন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যুৎ, গ্যাস ও যাতায়াত ব্যবস্থা হলো উন্নত অবকাঠামোগত উপাদান। এগুলো সঠিকভাবে সরবরাহ করা না হলে বা এগুলোর উন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে উৎপাদন কমে যাবে এবং শিল্প কারখানাগুলো লোকসানের দিকে ধাবিত হবে। উদ্দীপকে মি. সাইমন বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ বিশ্লেষণ করে লক্ষ করেন এদেশের শিল্প কারখানার অবকাঠামোগত অবস্থা খুবই খারাপ। ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে এখানকার কারখানার শ্রমিকরা দীর্ঘসময় উৎপাদনহীন অলস সময় কাটাতে বাধ্য হয়। ফলে উৎপাদন কম হয়। উৎপাদনের একক প্রতি স্থায়ী ব্যয় বৃদ্ধি পায়। একইভাবে গ্যাস সরবরাহ স্বল্প হওয়ার কারণে কারখানাগুলোর শক্তি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে উৎপাদন কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশে উপরে উল্লিখিত উপাদানগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
ঘ. মি. সাইমনের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ হারানোর মূল কারণটি হলো আর্থসামাজিক স্থিতিশীলতার অভাব।
একটি দেশের ব্যবসায় বাণিজ্য সেদেশে সামাজিক অবস্থার দ্বারা যেমন প্রভাবিত হয় তেমনি রাজনৈতিক অবস্থার দ্বারাও প্রভাবিত হয়ে থাকে। সাধারণত রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসায় বাণিজ্য এবং উদ্যোক্তার কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও দেশে উন্নত ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি হয় না। অনুন্নত ব্যবসায়িক পরিবেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ উৎসাহ নষ্ট করে ফেলে। উদ্দীপকে মি. সাইমন বাংলাদেশে এসে দেখলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শিল্পকারখানায় অবরোধ, ধর্মঘট, জ্বালাও পোড়াও চলতে থাকে। ফলে মালিকরা দিনের পর দিন কলকারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। এতে উৎপাদন ব্যাহত হয়। শ্রমিকদের বেতন কাঠামোর বৈষম্যের কারণে বিভিন্ন সময়ে শ্রমিক অসন্তোষসহ কর্মবিরতি চলতে থাকে যা সামাজিক অস্থিতিশীলতার বহিঃপ্রকাশ। এ হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও পোড়াও দৃশ্য ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা মি. সাইমন প্রত্যক্ষভাবে লক্ষ করে এদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
সুতরাং বলা যায়, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার কারণেই মি. সাইমন বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

প্রশ্ন-১০  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব সবুজ একজন শিক্ষিত ও কর্মঠ যুবক। তিনি সরকার পরিচালিত যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে বনসাই চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তিনি নিজ দায়িত্বে ঋণ নিয়ে নিজ এলাকায় একটি বনসাইর নার্সারি গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তিনি বনসাই চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন। বনসাই চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি দুইজন কর্মচারী নিয়োগ করে আরও একটি বনসাইয়ের নার্সারি স্থাপন করেছেন। তার সাফল্যের কারণে সরকার তাকে পুরস্কৃত করেছে। তার সফলতা দেখে এলাকার অনেক যুবক-যুবতী বনসাই চাষে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
ক. যেকোনো দেশের উন্নয়নে কোন খাত মুখ্য ভ‚মিকা পালন করে? ১
খ. আর্থিক ঝুঁকি বলতে কী বোঝ? ২
গ. জনাব সবুজের সফলতার মূল কারণগুলো বর্ণনা কর। ৩
ঘ. জনাব সবুজ তার এলাকায় আর্থসামাজিক উন্নয়নে কী ভ‚মিকা রাখছেন? বিশ্লেষণ কর। ৪
 ১০নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. যেকোনো দেশের উন্নয়নে শিল্পখাত মুখ্য ভ‚মিকা পালন করে।
খ. ব্যবসায় থেকে উদ্যোক্তা বছরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা আশা করেন। কিন্তু বাস্তবে এর চেয়ে কম মুনাফা অর্জিত হলে তাকে আর্থিক ঝুঁকি বলে। মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে আর্থিক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়।
গ. উদ্যোক্তাসুলভ গুণাবলি জনাব সবুজের সফলতার মূল কারণ।
উদ্যোক্তা এমন একজন ব্যক্তি যার স্বাধীন চিন্তাশক্তি আছে এবং উচ্চাকাক্সক্ষা আছে। উদ্যোক্তা তার উদ্যম পরিশ্রম, কর্মকুশলতা, বুদ্ধিমত্তা, ব্যক্তিত্ব প্রভৃতিকে কাজে লাগিয়ে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। অর্থাৎ স্বীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা সফলতা লাভ করে। উদ্দীপকে জনাব সবুজ বনসাই চাষের ওপর সরকার পরিচালিত যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যা তার বনসাই নার্সারির পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছে। জনাব সবুজ একজন শিক্ষিত ও পরিশ্রমী যুবক। তিনি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বনসাই চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি নিজ দায়িত্বে ঋণের ঝুঁকি নিয়ে বনসাই নার্সারি গড়ে তুলেছেন এবং সফলভাবে পরিচালনা করেছেন। এছাড়া জনাব সবুজের সাংগঠনিক ক্ষমতাবলে উৎপাদনের উপকরণগুলোর সুষ্ঠু সমন্বয় করে সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। তাই বলা যায়, জনাব সবুজ তার উদ্যোক্তাসুলভ গুণাবলির দ্বারা বনসাই চাষে সাফল্য অর্জন করেছেন।
ঘ. একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে জনাব সবুজ তার এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
একজন উদ্যোক্তা তার ব্যবসায় উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেন। উদ্যোক্তা কর্মীদের কাজে অনুপ্রাণিত করেন এবং জাতীয় অর্থনৈতিক কাজকর্মে অংশগ্রহণ করেন। অর্থাৎ উদ্যোক্তা ব্যক্তিগত জীবনের ও ব্যবসায়ের সাফল্যের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিকেও ত্বরান্বিত করেন। উদ্দীপকে জনাব সবুজ শিক্ষিত ও কর্মঠ একজন বনসাই নার্সারির মালিক। তিনি নার্সারিতে কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে এলাকার লোকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া তিনি তার বনসাই নার্সারির মাধ্যমে এলাকার প্রাপ্ত বনজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন। তার ব্যবসায়ের সাফল্য দেখে এলাকার তরুণ-তরুণীরা এ ব্যবসায়ে উদ্যোগী হয়ে আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহী হচ্ছে। তরুণ-তরুণীরা এ পেশায় এগিয়ে আসায় অদক্ষ জনগোষ্ঠী উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। এতে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির পাশাপাশি পরনির্ভরশীলতা দূর হচ্ছে। ফলে এলাকার অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
সুতরাং বলা যায়, জনাব সবুজ দেশে প্রাপ্ত সম্পদ ও জনশক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছেন।

 জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 
প্রশ্ন \ ১ \ ব্যবসায় উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য কোনটি?
উত্তর : ব্যবসায় উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন।
প্রশ্ন \ ২ \ সফল উদ্যোক্তা কীভাবে সিদ্ধান্ত নেন?
উত্তর : সফল উদ্যোক্তা বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন।
প্রশ্ন \ ৩ \ ব্যবসায় উদ্যোগের ফলাফল কী?
উত্তর : ব্যবসায় উদ্যোগের ফলাফল হলো একটি পণ্য বা সেবা।
প্রশ্ন \ ৪ \ ইচ্ছাশক্তি উদ্যোক্তার কোন বৈশিষ্ট্যের অন্তর্গত?
উত্তর : ইচ্ছাশক্তি উদ্যোক্তার মনস্তাত্তি¡ক বৈশিষ্ট্যের অন্তর্গত।
প্রশ্ন \ ৫ \ কারিগরি দক্ষতা কোন ব্যবসায় পরিবেশের উপাদান?
উত্তর : কারিগরি দক্ষতা রাজনৈতিক পরিবেশের উপাদান।
প্রশ্ন \ ৬\ অন্যের ওপর প্রভাব বিস্তার ক্ষমতা উদ্যোক্তার কোন ধরনের গুণ?
উত্তর : অন্যের ওপর প্রভাব বিস্তার ক্ষমতা উদ্যোক্তার একটি বিশেষ গুণ।
প্রশ্ন \ ৭ \ কোনো কাজের কর্মপ্রচেষ্টাকে কী বলা হয়?
উত্তর : কোনো কাজের কর্মপ্রচেষ্টাকে উদ্যোগ বলা হয়।
প্রশ্ন \ ৮ \ লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে কী বিনিয়োগ করতে হয়?
উত্তর : লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়।
প্রশ্ন \ ৯ \ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন কীসের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর : সঠিক পণ্য নির্বাচনের ওপর নির্ভর করে প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন।
প্রশ্ন \ ১০ \ উদ্যোক্তা কোন কাজ করতে বিশেষ আনন্দ পায়?
উত্তর : উদ্যোক্তা চ্যালেঞ্জমূলক কাজ করতে বিশেষ আনন্দ পান।
প্রশ্ন \ ১১ \ উদ্যোক্তা কে?
উত্তর : যিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনিই উদ্যোক্তা।
প্রশ্ন \ ১২ \ ব্যবসায় উদ্যোগ কী?
উত্তর : লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের কার্যক্রমকে ব্যবসায় উদ্যোগ বলে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ পরিমিত পরিমাণ ঝুঁকি কী?
উত্তর : অধিক লাভের সম্ভাবনা বা অধিক লোকসানের অনিশ্চয়তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কৌশলই হলো পরিমিত পরিমাণ ঝুঁকি।
প্রশ্ন \ ১৪ \ ব্যবসায় উদ্যোগের ফলাফল কী?
উত্তর : ব্যবসায় উদ্যোগের ফলাফল হলো একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান।
প্রশ্ন \ ১৫ \ ব্যবসায় উদ্যোগ আমাদের দেশের কীসের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে?
উত্তর : ব্যবসায় উদ্যোগ আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে।
প্রশ্ন \ ১৬ \ ২০১০ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী মোট জাতীয় আয়ের কতভাগ শিল্পখাত হতে আসে?
উত্তর : ২০১০ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী মোট জাতীয় আয়ের ৩০ ভাগ শিল্পখাত থেকে আসে।
প্রশ্ন \ ১৭ \ ব্যবসায় উদ্যোগের অন্যতম বাধা কী?
উত্তর : ব্যবসায় উদ্যোগের অন্যতম বাধা হলো অর্থসংস্থানের অপর্যাপ্ততা।
প্রশ্ন \ ১৮ \ ফোর্ড কোম্পানিটি কোন দেশের?
উত্তর : ফোর্ড কোম্পানিটি আমেরিকার।
প্রশ্ন \ ১৯ \ ব্যবসায় উদ্যোক্তা কে?
উত্তর : যিনি ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনিই ব্যবসায় উদ্যোক্তা।
প্রশ্ন \ ২০ \ উদ্যোক্তা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে চলতে পারে কোন গুণের বলে?
উত্তর : উদ্যোক্তা নমনীয়তার গুণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে চলতে পারে।
প্রশ্ন \ ২১ \ সাধারণ উদ্যোগের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর : সাধারণ উদ্যোগের উদ্দেশ্য জনকল্যাণ।
প্রশ্ন \ ২২ \ মাদরাসা স্থাপনের মাধ্যমে উদ্যোক্তা কোন দায়িত্ব পালন করেন?
উত্তর : মাদরাসা স্থাপনের মাধ্যমে উদ্যোক্তা সামাজিক দায়িত্ব পালন করেন।

 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 
প্রশ্ন \ ১ \ উদ্যোগ বলতে কী বোঝা? উদাহরণ দাও।
উত্তর : কোনো কাজ করার প্রাথমিক প্রচেষ্টাকে উদ্যোগ বলা হয়। উদ্যোগ ছাড়া কোনো কাজ সম্পন্ন হয় না। উদ্যোগের মাধ্যমে কাজের প্রতি মানুষ উদ্দীপ্ত হয়ে সেটি সম্পাদন করে। উদ্যোগের উদাহরণ হলো- লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, মসজিদ নির্মাণ, ব্যবসায় স্থাপন ইত্যাদি।
প্রশ্ন \ ২ \ উদ্যোক্তার সৃজনশীলতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : উদ্যোক্তার সৃজনশীলতা বলতে বোঝায় উদ্যোক্তা ব্যবসায়ের অগ্রগতি সাধনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন পন্থা আবিষ্কার করেন। উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ডিজাইন তৈরি করে সৃজনশীলতার পরিচয় দেন। নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র এবং পণ্যের নতুন নতুন ডিজাইন তৈরির উদ্যোক্তার সৃজনশীলতা। সফল উদ্যোক্তা সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে পারেন।
প্রশ্ন \ ৩ \ ব্যবসায় উদ্যোগ ও ঝুঁকির সম্পর্ক কীরূপ?
উত্তর : ব্যবসায় উদ্যোগ ও ঝুঁকির সম্পর্ক চিরন্তন। কম বা বেশি যা হোক প্রতিটি ব্যবসায় উদ্যোগে ঝুঁকি বিদ্যমান। যে ব্যবসায়ে ঝুঁকি বেশি তাতে লাভের সম্ভাবনাও বেশি এবং যে ব্যবসায়ে ঝুঁকি কম তাতে লাভের সম্ভাবনাও কম। ব্যবসায় উদ্যোগ ঝুঁকি ছাড়া কল্পনা করা যায় না।
প্রশ্ন \ ৪ \ উদ্যোক্তার উদ্ভাবনী শক্তি বলতে কী বোঝ?
উত্তর : উদ্যোক্তার উদ্ভাবনী শক্তি বলতে কাজের ক্ষেত্রে নতুন নতুন পন্থা আবিষ্কার করার ক্ষমতাকে বোঝায়। আবার পণ্যের নিত্য নতুন ব্যবহার আবিষ্কারও উদ্যোক্তার উদ্ভাবনী শক্তির ফলেই হয়ে থাকে। উদ্ভাবনী শক্তির বলেই উদ্যোক্তা তার ব্যবসায়ের ক্ষেত্র স¤প্রসারিত করতে পারেন এবং ব্যবসায়ে সাফল্য আনয়নে সক্ষম হন।
প্রশ্ন \ ৫ \ উদ্যোক্তার ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণের মানসিকতা কেন প্রয়োজন?
উত্তর : যে কোনো কাজে সব সময় সফলতা আসবে এমন নয় ব্যর্থতাও আসতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন উদ্যোক্তা ব্যর্থ হলে কেন ব্যর্থ হয়েছে, কীভাবে ব্যর্থ হয়েছে, ব্যর্থতার কারণ কী কী প্রভৃতি বিষয়সমূহ খুঁজে বের করা দরকার। পরবর্তীতে কাজে সফল হওয়ার জন্য বা নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করার জন্যে উদ্যোক্তার ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণের মানসিকতা প্রয়োজন।
প্রশ্ন \ ৬ \ চাকরিকে আত্মকর্মসংস্থান বলা হয় না কেন?
উত্তর : চাকরিকে আত্মকর্মসংস্থান বলা যায় না। কেননা নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলা হয়। যেখানে নিজেই পুঁজি বিনিয়োগ করে সকল ঝুঁকি বহন করা হয়। চাকরির ক্ষেত্রে ঝুঁকি গ্রহণ করার প্রয়োজন হয় না। এখানে অন্যের অধীনে কাজ করতে হয় এবং কোনো ধরনের মূলধন বা পুঁজি বিনিয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে না। সুতরাং, চাকরিকে আত্মকর্মসংস্থান বলা যাবে না।
প্রশ্ন \ ৭ \ শিল্পোদ্যোক্তা সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : উদ্যোক্তা এবং উদ্যোগ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যে ব্যক্তি দৃঢ় মনোবল ও সাহসিকতার সাথে ফলাফল অনিশ্চিত জেনেও শিল্প স্থাপন করেন এবং সফলভাবে তা পরিচালনা করেন তিনিই শিল্পোদ্যোক্তা। শিল্পোদ্যোক্তা হলেন শিল্পের মালিক এবং পরিচালক। তিনি নিজ যোগ্যতাবলে শিল্প প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রশ্ন \ ৮ \ বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে কেন?
উত্তর : যেকোনো ব্যবসায় উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ পুঁজি বা মূলধন। মূলধনের স্বল্পতার কারণে অধিকাংশ ব্যবসায় স্থাপন ও পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। সহজ শর্তে ঋণ পেয়ে মূলধনের যোগান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
প্রশ্ন \ ৯ \ উদ্যোক্তাকে নমনীয় হতে হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : নমনীয়তা হলো পরিবর্তনশীলতার যোগ্যতা। নমনীয়তা উদ্যোক্তার একটি প্রধান গুণ। ব্যবসায় পরিবেশে এবং পরিস্থিতি সবসময় একরকম থাকে না। প্রয়োজনবোধে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে চলার জন্য উদ্যোক্তাকে নমনীয় হতে হয়।
প্রশ্ন \ ১০ \ শিল্প উদ্যোগের নবদিগন্ত উšে§াচন হয় কীভাবে?
উত্তর : শিল্প উদ্যোগের নবদিগন্ত উšে§াচন করেন একজন শিল্পোদ্যোক্তা। তিনি উদ্ভাবনী শক্তির বলে উৎপাদন প্রক্রিয়া নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ এবং তা প্রয়োগ করে থাকেন। এর ফলে শিল্পোদ্যোগে নতুন দিগন্ত উšে§াচিত হয়। উদ্যোক্তার অন্যতম গুণাবলি হলো উদ্ভাবনী শক্তি এবং সৃজনশীলতা।
প্রশ্ন \ ১১ \ ঝুঁকি গ্রহণকে উদ্যোক্তার অন্যতম গুণ বলা হয় কেন?
উত্তর : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির তারতম্যই হচ্ছে ঝুঁকি। ব্যবসায়ে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। উদ্যোগ, সাহস ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে উদ্যোক্তা ঝুঁকিসম্পন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্রতী হন। উদ্যোক্তার সাফল্য অনিশ্চিত তা জেনেও উদ্যোগ গ্রহণ করে। তাই বলা হয়, ঝুঁকি গ্রহণ উদ্যোক্তার অন্যতম গুণ।
প্রশ্ন \ ১২ \ উদ্যোক্তা কীভাবে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করেন?
উত্তর : একজন উদ্যোক্তা অদক্ষ শ্রমিকদের বা জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করে। তাদের কাজ করতে উৎসাহ যোগায়। সফলভাবে কাজ করার প্রক্রিয়াও উদ্যোক্তা অদক্ষ শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে থাকেন এবং কাজের ক্ষেত্রে যেকোনো সমস্যা সমাধান করেন। এভাবেই উদ্যোক্তা দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি করেন।
প্রশ্ন \ ১৩ \ পরিমিত ঝুঁকি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : প্রত্যেকটি ব্যবসায় উদ্যোগে ঝুঁকি অপরিহার্য। ব্যবসায় উদ্যোগে কম, মাঝারি এবং বেশি ঝুঁকি থাকতে পারে। পরিমিত ঝুঁকি বলতে মাঝারি ধরনের ঝুঁকি গ্রহণকে বোঝায়। হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে যে ঝুঁকি গ্রহণ না করলেই নয় সে ঝুঁকিকে পরিমিত ঝুঁকি বলে। একজন সফল উদ্যোক্তা আগে থেকেই ঝুঁকি নিরূপণ করতে পারে।
প্রশ্ন \ ১৪ \ উদ্যোক্তার সাংগঠনিক ক্ষমতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : উৎপাদনের উপায় উপকরণগুলোর একত্রিকরণ এবং লক্ষ্যের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার যে যোগ্যতা বা দক্ষতা সেটিই উদ্যোক্তার সাংগঠনিক ক্ষমতা। উদ্যোক্তাকে একজন দক্ষ সংগঠক হতে হয়। ভ‚মি, শ্রম, মূলধন, যন্ত্রপাতি, বাজার ব্যবস্থা ইত্যাদি সুসংগঠিত করে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য তাকেই বাস্তবায়ন করতে হবে।
প্রশ্ন \ ১৫ \ উদ্যোক্তাকে জš§সূত্রেই উদ্যোক্তা বলা হয় কেন?
উত্তর : উদ্যোক্তা একজন অসাধারণ ব্যক্তি। যারা উদ্যোক্তা তারা জš§সূত্রেই অনেকগুলো ব্যক্তিগত গুণের অধিকারী হন। তাদের
সৃজনশীলতা এবং মননশীলতা অন্যদের থেকে পৃথক হয়, যা তাদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। নেৃতত্ব এবং উদ্যোগমূলক গুণাবলি মানুষ জš§গতভাবেই পেয়ে থাকে। তাই বলা হয়, উদ্যোক্তা জš§সূত্রেই উদ্যোক্তা।
প্রশ্ন \ ১৬ \ উদ্যোক্তা কী সৃষ্টি করা যায়? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মানুষ সৃষ্টিশীল প্রাণী। সৃজনশীলতা দিয়ে সে অনেক কিছু সৃষ্টি করে। উদ্যোক্তা কিছু ক্ষেত্রে সৃষ্টি করা যায়। বর্তমান সময়ে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা যায়। উপযুক্ত পরিবেশ মানুষকে সৃজনশীল করে। ফলে অনুক‚ল পরিবেশে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা সম্ভব হয়।
প্রশ্ন \ ১৭ \ উদ্যোক্তার কৃতিত্ব অর্জনের আকাক্সক্ষা গুণটি সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : কৃতিত্ব অর্জনের সুপ্ত বাসনাই একজন মানুষকে উদ্যোক্তায় পরিণত করে। উদ্যেক্তার কৃতিত্ব অর্জনের জন্য আকাক্সক্ষা প্রয়োজন। কারণ এ কৃতিত্ব অর্জনের আকাক্সক্ষা থাকলে একজন উদ্যোক্তা তার কাজে আগ্রহী হয় এবং সফলতা লাভে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকে। আর এসবের ফলে উদ্যোক্তা তার কাজে সহজেই কৃতিত্ব অর্জন করতে পারে।
প্রশ্ন \ ১৮ \ রাজনৈতিক সহিংসতা কীভাবে উদ্যোক্তার কাজ ব্যাহত করে?
উত্তর : ব্যবসায় উদ্যোগে রাজনীতির প্রভাব অনেক ব্যাপক। কেননা রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। ফলে উদ্যোক্তাগণ তাদের ব্যবসায়ের স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। এর ফলে ব্যবসায়ে অনেক লোকসান হয় এবং উদ্যোক্তার নতুন কিছু করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
প্রশ্ন \ ১৯ \ ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়। উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : উদ্যোক্তা নিজের অভিজ্ঞতা দ্বারা তার কার্য সম্পাদন করে থাকে। একজন ভালো উদ্যোক্তা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে। ফলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত জাতীয় আয় বৃদ্ধির জন্য সেসব প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। যাতে জাতীয় আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়। আর এভাবেই ব্যবসায় উদ্যোক্তার মাধ্যমে দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন \ ২০ \ ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নে বাধা দূরীকরণের ৩টি উপায় লেখ।
উত্তর : ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নে বাধা দূরীকরণের ৩টি উপায় নিচে দেওয়া হলো :
১. কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
২. দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার বাড়াতে হবে।

 

Leave a Reply