নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ তৃতীয় অধ্যায় আত্মকর্মসংস্থান সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

তৃতীয় অধ্যায়
আত্মকর্মসংস্থান

আত্মকর্মসংস্থানের ধারণা : নিজের দক্ষতা ও গুণাবলি দ্বারা নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলা হয়। নিজস্ব পুঁজি অথবা ঋণ করা, স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্ম প্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থাই আত্মকর্মসংস্থান। জীবিকা অর্জনের বিভিন্ন পেশার মধ্যে আত্মকর্মসংস্থান একটি জনপ্রিয় পেশা। বিভিন্ন খুচরা বিক্রয়, রেডিও, টেলিভিশন মেরামত, হাঁস-মুরগি, মৌমাছি চাষ ইত্যাদি আত্মকর্মসংস্থানের আওতার্ভুক্ত।
 আত্মকর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা : বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এদেশে কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে বেকারের সংখ্যা বেশি। বেকারত্ব নিরসনে আত্মকর্মসংস্থান হলো একমাত্র উপায়। নিজের চাহিদা পূরণের জন্য আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে ব্যক্তি শুধু স্বাবলম্বী হতে পারে তা-ই নয়, তার পরিবার, সমাজ এমনকি দেশেরও আর্থিক উন্নয়ন সাধিত হয়। এ কারণেই আত্মকর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
 বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ও লাভজনক ক্ষেত্র : বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থানের বিভিন্ন লাভজনক ক্ষেত্র রয়েছে। এর মধ্যে হস্তচালিত তাঁত, মৃৎশিল্প, বাঁশ, বেত, পাট ও কাঠের সামগ্রী তৈরি, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খামার, সবজি চাষ, এপিকালচার, সেরিকালচার, টেইলারিং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
 আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয় : আত্মকর্মসংস্থানের বিভিন্ন লাভজনক ও উপযুক্ত ক্ষেত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক পণ্য বাছাই, মূলধন, পণ্যের চাহিদা, অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা, ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচন, ঝুঁকি পরিমাপ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করতে হয়।
 আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধকরণে করণীয় : আমাদের দেশে বেকার যুব সমাজ অনেকেই আত্মকর্মসংস্থান সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা অনেকেই হাঁস-মুরগি পালন, ডেইরি ফার্ম, মৌমাছি চাষ প্রভৃতি কাজকে সম্মানজনক মনে করে না। ফলে তারা নিজেরা কোনো কর্মে নিয়োজিত হতে পারছে না। তাই স্বল্প পুঁজি এবং প্রবল আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে বেকারদের আত্মকর্মসংস্থান করার জন্য করণীয় কাজগুলো হলো :  কাজ সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান,  সহজ শর্তে ঋণদান,  বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রচলন,  কর্মমুখী শিক্ষার প্রচলন,  ট্রেড প্রশিক্ষণ কোর্স চালু,  উৎসাহ প্রদান,  সৃজনশীলতার প্রশংসা করা,  কর্মশালা করানো ইত্যাদি।
 আত্মকর্মসংস্থানে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা : যেকোনো উদ্যোগ গ্রহণের পূর্বে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে সুফল পাওয়া যায়। বৃহৎ বা ক্ষুদ্র যে শিল্পই হোক না কেন আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত। অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মীরাই পারে একটি প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে। তাই নিজে প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা খুবই প্রয়োজন। সম্পদের সদ্ব্যবহার, অপচয় ও দুর্ঘটনা হ্রাস, কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি ইত্যাদিতে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।
 আত্মকর্মসংস্থানে সহায়ক প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশের বেকার সমস্যা নিরসনে ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত রয়েছে। এদের মধ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পলি­ উন্নয়ন বোর্ড, নট্রামস, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইত্যাদি উলে­খযোগ্য।

অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ঐশী, সাদী ও সামী তিন বন্ধু স¤প্রতি বি কম পাস করেছে। তারা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছিল। ঐশী ও সাদী এম কম-এ ভর্তির চিন্তা করছে। সামী এখনও সিদ্ধান্ত চ‚ড়ান্ত করতে পারেনি। কারণ তার বাবার ইচ্ছা সে মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে চলে যাক। কিন্তু মেধাবী সামী চায় দেশেই কিছু করতে। এজন্য সে হাঁস-মুরগি পালনের উপর দু’মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এতে তার মনোবল বেড়ে যায়। বিদেশ যাবার টাকা দিয়ে সে বাড়িতে হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করে। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করে নিজের চেষ্টায় আজ সে স্বাবলম্বী।
ক. জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান শতকরা কতভাগ?
খ. বাংলাদেশে বেকার সমস্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. সামীর হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা কোন ধরনের কাজের অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. স্বাবলম্বী হবার পেছনে কোন গুণটি সামীকে বেশি প্রভাবিত করেছে বলে তুমি মনে কর। বিশ্লেষণ কর।
 ১নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান শতকরা ২০ ভাগ।
খ. বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের জনসংখ্যা খুব দ্রæত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার কারণে নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন করে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই কম। আর এসব সমস্যার কারণেই বাংলাদেশে বেকার সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
গ. সামীর হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের অন্তর্ভুক্ত।
নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। অর্থাৎ আত্মকর্মসংস্থান নিজস্ব পুঁজি অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্ম প্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের এক প্রকার ব্যবস্থা। উদ্দীপকে মেধাবী সামী নিজস্ব চিন্তার মাধ্যমে নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের জন্য উদ্যোগী হয়ে হাঁস-মুরগি পালনের ওপর দু মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এতে তার মনোবল বেড়ে যায়। সে তার বিদেশ যাবার টাকা দিয়ে নিজ বাড়িতে হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করে। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের প্রচেষ্টায় সে আজ স্বাবলম্বী হয়েছে। যেহেতু হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামী নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে সেহেতু তার এ কাজটি আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের অন্তর্ভুক্ত।
ঘ. আমি মনে করি, সামীর প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগানোর দক্ষতাই তাকে স্বাবলম্বী হতে বেশি প্রভাবিত করেছে।
যেকোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের পাশাপাশি জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োজন। আর জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক। প্রশিক্ষণ কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতাকে বহুগণে বাড়িয়ে দেয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা নিজেকে অভিজ্ঞ ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা লাভ করে। অর্জিত প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সে নির্দিষ্ট লক্ষ্য পানে এগিয়ে যায় এবং সফল হয়। উদ্দীপকের সীমার ইচ্ছা ছিল আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া। এজন্য সে হাঁস-মুরগি পালনের উপর দু’মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এতে তার মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়, ফলে সে প্রশিক্ষণ জ্ঞান প্রয়োগ করে বিদেশ যাবার টাকা দিয়ে বাড়িতে হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করে এবং নিজ চেষ্টায় আজ সে স্বাবলম্বী হতে পেরেছে।
সুতরাং বলা যায়, সামী প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করে নিজের চেষ্টায় আজ স্বাবলম্বী হতে পেরেছে।
প্রশ্ন-২  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রাঙ্গামাটির স্কুল শিক্ষক মামাপ্রæ মারমা স্থানীয় তাঁতী মেরিনা মারমাকে তাঁতে বোনা পণ্য-সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দেন। ব্যাপক চাহিদার কথা চিন্তা করে মেরিনা পাহাড়ি মেয়েদের পোশাক ‘থামি’ তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করে এবং দ্রæত উন্নতি লাভ করে। মেরিনার কারণে বেশ কয়েকটি মেয়ের কর্মসংস্থান হয়েছে। তার জেলায় বিগত তিন বছর যাবত তিনি সেরা নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।
ক. দেশের মোট শ্রমশক্তির কত অংশ যুবক-যুবতী?
খ. আত্মকর্মসংস্থানের একটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
গ. মেরিনার দ্রæত উন্নতিতে কোন বিষয়টি ভ‚মিকা রেখেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘মামাপ্রæ মারমার পরামর্শ প্রতিপালনই মেরিনা চাকমার জীবনে এত স্বীকৃতি এনে দিয়েছে’ উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
 ২নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. দেশের মোট শ্রমশক্তির এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে যুবক-যুবতী।
খ. আত্মকর্মসংস্থানের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। যার মাধ্যমে দেশ থেকে বেকারত্ব হ্রাস করা যায়। কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে শ্রমজীবী ও চাকরিজীবী লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কর্মসংস্থানের চাহিদা যে হারে বৃদ্ধি পায় সে হারে কর্মসংস্থানের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় না। এর ফলে বেকার সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর এসব সমস্যা সমাধানে আত্মকর্মসংস্থান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
গ. মেরিনার দ্রæত উন্নতিতে সঠিক পণ্য নির্বাচনের বিষয়টি ভ‚মিকা রেখেছে।
ব্যবসার সঠিক পণ্য নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর ওপরই নির্ভর করে কোনো ব্যবসায় বা প্রকল্পের বাস্তবায়ন। সফলতার জন্য পণ্য নির্বাচনের পূর্বে বাজারে পণ্যটির চাহিদা ও গ্রহণযোগ্যতা নিরূপণ করতে হয়। উদ্দীপকে তাঁতি মেরিনা স্কুল শিক্ষক মামাপ্রæ মারমা থেকে তাঁতে বোনা পণ্য সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা পান। তাই তাঁতি মেরিনা তাঁতে বোনা পণ্যের ব্যাপক চাহিদার কথা চিন্তা করে পাহাড়ি মেয়েদের পোশাক ‘থামি’ তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করেন। চাহিদা আছে এবং ভবিষ্যতে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এমন পণ্য বা সেবা চিহ্নিত করে বাস্তবসম্মত একটি ব্যবসায় বা প্রকল্প গ্রহণ করতে পারলে ব্যবসায়ের সাফল্য অনেকটা নিশ্চিত। ব্যবসায়ে সফলতা লাভে সঠিক পণ্য নির্বাচনের গুরুত্ব অনুধাবন করে ব্যবসায় পরিচালনা করায় মেরিনা দ্রæত উন্নতি লাভ করেন। তাই বলা যায়, মেরিনার সঠিক পণ্য নির্বাচনই তার দ্রæত উন্নতিতে ভ‚মিকা রেখেছে।
ঘ. ‘মামাপ্রæ মারমার পরামর্শ প্রতিপালনই মেরিনা চাকমার জীবনে এত স্বীকৃতি এনে দিয়েছে’ উক্তিটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
যেকোনো ব্যক্তিই যেকোনো সময় আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশায় নিয়োজিত হতে পারে। তবে এ পেশায় সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনাও জরুরি। উদ্দীপকের তাঁতি মেরিনা মারমা রাঙামাটির স্কুল শিক্ষক মামাপ্রæ মারমার নিকট থেকে তাঁতে বোনা পণ্য-সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা পান। মামাপ্রæ মারমার পরামর্শ প্রতিপালন এবং ব্যাপক চাহিদার কথা বিবেচনা করে মেরিনা পাহাড়ি মেয়েদের পোশাক ‘থামি’ তৈরি ও বিক্রি করে উন্নতি লাভ করেন। তার এ সাফল্যের পেছনে যার অসাধারণ অবদান রয়েছে তিনি হলেন মামাপ্র“ মারমা। কারণ সঠিক সময়ে উপযুক্ত পরামর্শ একজন ব্যক্তির জীবনে সফল উদ্যোক্তার স্বীকৃতি আনতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। মেরিনার ক্ষেত্রে সে কাজটি করেছে মামাপ্রæ মারমা।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, ‘মামাপ্রæ মারমার পরামর্শ প্রতিপালনই মেরিনা চাকমার জীবনে এত স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।

প্রশ্ন-৩  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
শিক্ষিত যুবক নিপ্পন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। বার ঘণ্টা ডিউটি ও স্বল্প বেতন হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তিনি এখন বেকার। তাই তার বাবা তাকে বিদেশ পাঠাতে চাইলেও সে গ্রামেই একটা কিছু করতে চায়। তিনি স্থানীয় যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে মৎস্য চাষ ও হাঁস-মুরগির ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে নিজের সঞ্চিত টাকা দিয়ে মৎস্য ও হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুললেন। নিজস্ব মেধা, কঠোর পরিশ্রম আর সুযোগের সঠিক ব্যবহারের কারণে সাফল্য লাভ করেন এবং পরবর্তীতে জেলার সেরা উদ্যোক্তার সনদ পান।
ক. মোট জনসংখ্যার কত ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে? ১
খ. আত্মকর্মসংস্থান বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. নিপ্পন আত্মকর্মসংস্থান হিসেবে মৎস্য ও হাঁস-মুরগি খামারকে কেন পছন্দ করেছেন তা বর্ণনা কর। ৩
ঘ. নিপ্পনের মতো আমাদের দেশের যুবসমাজের নিকট আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব কতটুকু তা মূল্যায়ন কর। ৪
 ৩নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে।
খ. নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। ব্যাপকভাবে বলা যায়, নিজস্ব পুঁজি অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্মপ্রচেষ্টায় জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থাকে আত্মকর্মসংস্থান বলা হয়। জীবিকা অর্জনের বিভিন্ন পেশার মধ্যে আত্মকর্মসংস্থান একটি জনপ্রিয় পেশা।
গ. নিপ্পন আত্মকর্মসংস্থান হিসেবে মৎস্য ও হাঁস-মুরগি খামারের সুবিধাসমূহ বিবেচনা করেই মূলত মৎস্য ও হাঁস-মুরগি খামারকে পছন্দ করেছেন।
একজন শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত বেকার যুবক নিজস্ব স্বল্প পুঁজি কিংবা স্বল্প পরিমাণ ঋণ মূলধন নিয়ে সহজেই খামারের উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। মৎস্য ও হাঁস-মুরগি খামারের মাধ্যমে অধিক উপার্জন করা সম্ভব। এছাড়াও এটি একটি স্বাধীন পেশা যা নিজের ইচ্ছা, বুদ্ধি, পরিশ্রম দ্বারা সফল হওয়া যায়। উদ্দীপকে নিপ্পন চাকরি ছেড়ে দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের পেশা হিসেবে মৎস্য খামার ও হাঁস-মুরগির খামারকে বেছে নিলেন। তিনি দেখলেন এটি একটি স্বাধীন পেশা যা নিজের ইচ্ছা, বুদ্ধি, পরিশ্রম দ্বারা সফল হওয়া যায়। এতে অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে সফলতা অর্জন করা যায়। তাছাড়া হাঁস-মুরগি ও মৎস্য সমন্বিত খামার গড়ে তোলা যায়। মূলত এসব সুবিধা বিবেচনা করেই নিপ্পন আত্মকর্মসংস্থান হিসেবে মৎস্য ও হাঁস-মুরগি খামারকে পছন্দ করেছেন।
ঘ. নিপ্পনের মতো আমাদের দেশের যুবসমাজের নিকট বেকারত্ব লাঘবের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। এসব শিক্ষিত বেকার যুবকদের বেকারত্ব লাঘবে আত্মকর্মসংস্থান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। একজন বেকার যুবক নিজস্ব স্বল্প মূলধন নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। উদ্দীপকে শিক্ষিত যুবক নিপ্পন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। বেতনভিত্তিক চাকরিতে উপার্জন হয় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ যা তার চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়াও পরিশ্রম ও সময় অনেক বেশি ব্যয় করতে হয় এবং নিজস্ব মেধা বিকাশ করতে পারে না। তাই তিনি আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজ বেছে নেন। নিজের সঞ্চিত অর্থ, মেধা, পরিশ্রম আর সুযোগের সঠিক ব্যবহারের কারণে সফলতা লাভ করেন। আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজে অধিক উপার্জনের সম্ভাবনা অনিশ্চিত হলেও তা চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত। তাছাড়া আত্মকর্মসংস্থানের পেশায় একদিকে যেমন উদ্যোক্তার জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম হয় তেমনি অন্য লোকের চাকরির সংস্থান হয়। ফলে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। এতে সম্পদের সঠিক ও বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত হয়। কারণ আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প উদ্যোক্তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত ও তত্ত¡াবধানে পরিচালিত হয়। তাই নিপ্পনের মতো আমাদের দেশের যুব সমাজের নিকট আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রশ্ন -৪ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ইসলাম এস.এস.সি পাস করার পর একটি কোম্পানিতে চাকরি নেয়। কঠোর পরিশ্রম ও স্বল্প বেতন হওয়ায় সে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় চাকরি পেতে ব্যর্থ হয়। গ্রামে ফিরে উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে বাড়ির আশপাশে পতিত জমিতে সবজি চাষ শুরু করে। সবজি আবাদ করে সে বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে।
ক. মজুরি বা বেতনভিত্তিক কর্মসংস্থান কী? ১
খ. আমাদের দেশের যুব মহিলাদের উপযোগী আত্মকর্মসংস্থানের কয়েকটি ক্ষেত্র চিহ্নিত কর। ২
গ. ইসলাম নিজেকে কোন পেশায় নিয়োজিত করেছে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. বেকারত্ব ঘোচানোর জন্য ইসলামের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা মূল্যায়ন কর। ৪
 ৪নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কোনো প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে চাকরি করাই হলো মজুরি বা বেতনভিত্তিক কর্মসংস্থান।
খ. আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি নিজের কর্মসংস্থানের চিন্তা করে কাজে হাত দেন। আমাদের দেশের যুব মহিলাদের উপযোগী আত্মকর্মসংস্থানের কয়েকটি ক্ষেত্র হলো হস্তচালিত তাঁত, টেইলারিং, মাদুর বা ম্যাট তৈরি, এমব্রয়ডারি, পিঠা তৈরি, বেতের সামগ্রী তৈরি, সুতা কাটা, মোমের দ্রব্যাদি তৈরি, গৃহস্থালির দ্রব্যাদি তৈরি ইত্যাদি।
গ. ইসলাম নিজেকে আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশায় নিয়োজিত করেছে।
নিজের দক্ষতা ও গুণাবলির দ্বারা নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। অর্থাৎ নিজস্ব অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নূন্যতম ঝুঁকি নিয়ে আত্মপ্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। উদ্দীপকে ইসলাম যে চাকরি করতো তা কঠোর পরিশ্রম ও স্বল্প বেতন হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে ফিরে আসে। ইসলাম উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে বাড়ির আশপাশে পতিত জমিতে সবজি চাষ শুরু করে। সবজি চাষ করে সে বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হয়। অর্থাৎ ইসলাম নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করে। তাই ইসলামের পেশাটি আত্মকর্মসংস্থানের পর্যায় পড়ে।
ঘ. বেকারত্ব ঘোচানোর জন্য ইসলামের সিদ্ধান্তটি যথোপযুক্ত এবং যুযোপযোগী।
আমাদের দেশের প্রধান সমস্যাগুলোর একটি হলো বেকারত্ব। চাকরির সুযোগের তুলনায় চাকরির প্রার্থীর সংখ্যা বেশি থাকায় বাংলাদেশে বেকারত্বের হার বেশি। দেশের সীমিত সম্পদ কাজে লাগিয়ে সকল বেকারের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করা সম্ভব নয়। তাই এদেশে বেকারত্বের সমস্যা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এ সমস্যা দূরীকরণের একমাত্র পথ হলো আত্মকর্মসংস্থান। এটি একটি স্বাধীন পেশা। যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় নিজস্ব স্বল্প পুঁজি, চিন্তা, জ্ঞান, দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে এরূপ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে। উদ্দীপকে ইসলাম উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় চাকরি না পেয়ে গ্রামে ফিরে আসে। গ্রামে ফিরে উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে বাড়ির আশপাশে পতিত জমিতে সবজি চাষ করে বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন হয়েছে সামান্য পরিমাণে পুঁজি, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতা।
সুতরাং বলা যায়, বেকারত্ব ঘোচাতে ইসলামের সিদ্ধান্তটি যথোপযুক্ত এবং যুগোপযোগী।
প্রশ্ন -৫ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কিছু সংখ্যক বেকার যুবকদের নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করেন। সেমিনারে তিনি আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের ওপর আলোচনা করেন। তিনি চাকুরির বিকল্প পেশা হিসেবে আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন এবং এই পেশায় নিয়োজিত হতে সবাইকে উৎসাহ প্রদান করেন।
ক. কর্মসংস্থান কী? ১
খ. আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশা লাভজনক ও সম্মানজনক কেন? ২
গ. জেলা প্রশাসক কোন কারণে বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহ দেন? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. জেলা প্রশাসকের পরামর্শটি বেকার যুবকদের গ্রহণ করা উচিত কি না? মতামত দাও। ৪
 ৫নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. জীবিকা অর্জনের জন্য কোনো কাজে নিয়োজিত থেকে অর্থ উপার্জন করাই হলো কর্মসংস্থান।
খ. আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশা স্বল্প মূলধন নিয়ে শুরু করা যায় এবং এতে ঝুঁকি কম থাকে। ফলে অধিক মুনাফা বা আয়ের সুযোগ থাকে। অপরদিকে শিক্ষিত, অশিক্ষিত এবং বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে তারা মুক্ত হতে পারে। তাই আত্মকর্মসংস্থান একটি লাভজনক ও সম্মানজনক পেশা।
গ. চাঁদপুর জেলার জেলা প্রশাসক বেকারত্ব দূর করার জন্য বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের উৎসাহ দেন।
নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাই হলো আত্মকর্মসংস্থান। আত্মকর্মসংস্থান সম্মানজনক জীবিকা উপার্জনের একটি প্রক্রিয়া। এটি স্বল্প মূলধন নিয়ে শুরু করা যায় এবং ঝুঁকি কম থাকে। উদ্দীপকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কিছু সংখ্যক বেকার যুবকদের নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করেন। কারণ দেশ ও জাতির প্রাণশক্তি যুবক-যুবতীরা বেকারত্বের কষাঘাতে জর্জরিত। অনেক বেকার যুবক-যুবতী বেকারত্বের অভিশাপে হতাশ হয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে যুবক-যুবতীরা কাজে মনোনিবেশ করতে পারলে বেকারত্ব লাঘবের সাথে সাথে ব্যবসায় বাণিজ্যের যেমন উন্নতি হবে তেমনি তাদের মধ্যে নানা রকম অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। যার ফলে সমাজের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন তথা দেশ ও জাতির উন্নয়ন সাধিত হবে। এ কারণেই জেলা প্রশাসক বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের উৎসাহ দেন।
ঘ. নিজের এবং দেশের উন্নতির স্বার্থে জেলা প্রশাসকের পরামর্শ বেকার যুবকদের গ্রহণ করা উচিত।
কর্মসংস্থানের বিকল্প উৎস হিসেবে ব্যবসায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। তাছাড়া অনেক সময় আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে চাকরির চেয়ে বেশি পরিমাণ উপার্জন করা যায়। বেকার যুবকরা আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে নিজের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং সামাজিক কল্যাণ সাধন করতে পারে। আত্মকর্মসংস্থানে মনোনিবেশ করলে তাদের মধ্যে অপরাধ করার প্রবণতা কমে আসবে। তারা নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে ব্যবসায়-বাণিজ্য স¤প্রসারণের প্রচেষ্টা চালাবে। এমনকি আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা যায়। এর ফলে শহরমুখী জনস্রোত রোধ করা যায়। এছাড়া আত্মকর্মসংস্থান যুবসমাজকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে স্বেচ্ছামূলক কাজে উৎসাহিত করে। ফলে দেশ ও জাতি পায় কর্মচঞ্চল যুবসমাজ। এসব কারণেই চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক সেমিনারে বেকার যুবকদের চাকরির বিকল্প পেশা হিসেবে আত্মকর্মসংস্থানের পরামর্শ দেন।
সুতরাং বলা যায়, দেশ ও জাতির উন্নয়নে বেকার যুবকদের জেলা প্রশাসকের পরামর্শটি গ্রহণ করা উচিত।
প্রশ্ন -৬ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব ইমতিয়াজ সামান্য পুঁজি নিয়ে নিজ গ্রামে মুরগির খামার গড়ে তোলেন। পাশাপাশি একটি সবজির বাগান করে সেখান থেকেও কিছু আয়ের ব্যবস্থা করেন। তিনি বর্তমান চাকরি সংকটে চাকরির জন্য বসে না থেকে নিজেই নিজের কর্মসংস্থান গড়ে তুলে বেকারত্বের হাত থেকে মুক্ত পেয়েছেন।
ক. জাতীয় অর্থনীতিতে সেবা খাতের অবদান শতকরা কত ভাগ? ১
খ. চাকরির বিকল্প হিসেবে আত্মকর্মসংস্থানের জনপ্রিয়তা অর্জনের কারণ বর্ণনা কর। ২
গ. জনাব ইমতিয়াজের মুরগির খামার ও সবজি চাষ কী ধরনের কাজ? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. জনাব ইমতিয়াজের আত্মকর্মসংস্থানকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কী সঠিক ছিল? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। ৪
 ৬নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. জাতীয় অর্থনীতিতে সেবা খাতের অবদান শতকরা ৫০ ভাগ।
খ. চাকরি হলো পরাধীন পেশা। এক্ষেত্রে অন্যের অধীনে কাজ করতে হয়। অপরদিকে আত্মকর্মসংস্থান স্বাধীন পেশা। এক্ষেত্রে ব্যক্তিকে করো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, বেকার যুবকরা স্বল্প পুঁজি নিয়ে সম্মানের সাথে নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পার। তাছাড়া অনেক সময় আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে চাকরির চেয়ে বেশি পরিমাণ উপার্জন করা যায়। তাই চাকরির বিকল্প হিসেবে আত্মকর্মসংস্থান জনপ্রিয়।
গ. জনাব ইমতিয়াজের মুরগির খামার ও সবজি চাষ একটি আত্মর্কসংস্থানমূলক কাজ।
আত্মকর্মসংস্থান বলতে সাধারণত নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে বোঝায়। অর্থাৎ নিজস্ব পুঁজি অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্মপ্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের এক প্রকার ব্যবস্থা। উদ্দীপকে জনাব ইমতিয়াজ সামান্য পুঁজি নিয়ে নিজ গ্রামে মুরগির খামার গড়ে তোলেন। তাছাড়া তিনি একটি সবজির বাগান করে সেখান থেকেও কিছু আয়ের ব্যবস্থা করেন। অর্থাৎ জনাব ইমতিয়াজ মুরগির খামার ও সবজির চাষ করে নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। তাই বলা যায়, জনাব ইমতিয়াজের কাজটি আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজ।
ঘ. জনাব ইমতিয়াজ আত্মকর্মসংস্থানকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ খুবই সীমিত। তাই বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। এসব শিক্ষিত বেকার যুবকদের বেকারত্ব লাঘবে আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন বেকার যুবক নিজস্ব স্বল্প মূলধন নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। তাই চাকরির জন্য বসে না থেকে নিজেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত। উদ্দীপকের জনাব ইমতিয়াজও তাই করেছেন। তিনি সামান্য পুঁজি নিয়ে নিজ গ্রামে মুরগির খামার গড়ে তোলেন। তাছাড়াও তিনি একটি সবজি বাগানও করেন। সেখান থেকে তিনি আয়ের ব্যবস্থা করেন। এভাবে জনাব ইমতিয়াজ নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন।
সুতরাং, জনাব ইমতিয়াজের আত্মকর্মসংস্থানকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত হয়েছে।
প্রশ্ন-৭  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ডিগ্রি পাস আরিফ ভালো কোনো চাকরি লাভে ব্যর্থ হয়ে উপজেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয় থেকে কাপড় সেলাইয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে নিজস্ব চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে ৩ জন কর্মচারী নিয়ে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় একটি টেইলারির দোকান দেন। ব্যবসায়ে সাফল্যের কারণে ২ বছরের মধ্যে পল্টন ও গুলিস্তানে আরও দুটি শাখা চালু করেন এবং ১২ জন কর্মচারী নিয়োগ দেন।
ক. বাংলাদেশে মোট কর্মহীন লোকের সংখ্যা কত? ১
খ. যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কেন যুবকদের প্রশিক্ষণ ও ঋণদান করে? ২
গ. আরিফের কাজটির ধরন বর্ণনা কর। ৩
ঘ. বেকারত্ব দূরীকরণে আরিফের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা মূল্যায়ন কর। ৪
 ৭নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. বাংলাদেশে মোট কর্মহীন লোকের সংখ্যা ২৬ লক্ষ।
খ. যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বেকার জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করে। যুবকরা যাতে নির্ভুলভাবে এবং সফলভাবে আত্মকর্মসংস্থান করে স্বাবলম্বী হতে পারে সেজন্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রশিক্ষণ প্রদান করে। পাশাপাশি যোগ্যতাসম্পন্ন আত্মবিশ্বাসী এবং কঠোর পরিশ্রমী যুবকদের ঋণ দান করার মাধ্যমে পুঁজির সংস্থান করে।
গ. আরিফের কাজটি আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের অন্তর্ভুক্ত।
নিজের দক্ষতা ও গুণাবলি দ্বারা নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাই আত্মকর্মসংস্থান। অর্থাৎ নিজস্ব পুঁজি অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্মপ্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। উদ্দীপকের আরিফ চাকরি লাভে ব্যর্থ হয়ে যুব উন্নয়ন কার্যালয় থেকে কাপড় সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে নিজস্ব চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে নিউমার্কেট এলাকায় টেইলারির দোকান দেন এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ে সাফল্য অর্জন করেছেন। যেহেতু আরিফ নিজস্ব চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে টেইলারি দোকানটি দিয়েছে এবং নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।
সুতরাং, আরিফের কাজটি একটি আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজ।
ঘ. বেকারত্ব দূরীকরণে আরিফের সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশের ২৬ লক্ষ লোক কর্মহীন। বাংলাদেশ সরকার এবং অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এরূপ লক্ষ লক্ষ বেকারের চাকরির ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। তাই এদেশে আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশার কোনো বিকল্প নেই। আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশায় নিয়োজিত হওয়ার মাধ্যমে এদেশের বেকার যুবকরা নিজের ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে। উদ্দীপকে আরিফ সামান্য পুঁজি ও প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজস্ব চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশায় নিয়োজিত হওয়ার মাধ্যমে নিজের বেকারত্ব দূর করেছেন। তাছাড়া তিনি প্রথমে ২ জন এবং পরে ১২ জন কর্মচারীর কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি যেমন নিজের জীবন উন্নত করেছেন তেমনি দেশের বেকারত্ব হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আরিফের সাফল্য দেখে দেশের অনেক বেকার যুবক এগিয়ে আসলে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।
সুতরাং, বেকারত্ব দূরীকরণে আরিফের সিদ্ধান্তটি যথোপযুক্ত ছিল।
প্রশ্ন-৮  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আব্দুল মান্নান অল্প শিক্ষিত একজন বেকার যুবক। তিনি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি গবাদিপশুর খামার স্থাপন করেন। তিনি তার বাবার কাছ থেকে সামান্য পুঁজি নিয়ে এ কাজ শুরু করেন। এখন খামারটি থেকে তিনি বেশ লাভবান হচ্ছেন।
ক. যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কোন মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হয়? ১
খ. চাকরি বলতে কী বোঝায়? ২
গ. আব্দুল মান্নানের গবাদিপশুর খামার স্থাপন কোন ধরনের কাজের অন্তর্ভুক্ত? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. আব্দুল মান্নানের মতো ব্যবসায় সফল ব্যক্তিরাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে-বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৮নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হয়।
খ. কর্মসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হচ্ছে চাকরি। চাকরি বলতে বোঝায় কোনো প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট পরিমাণ মজুরি বা বেতন এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে মেধা বা শ্রম প্রদান করা। নিরাপত্তা, নিয়মিত আয় প্রবাহ, উচ্চপদে প্রমোশন এবং নিয়মিত সুযোগ-সুবিধা থাকায় চাকরি সকলের নিকট আকর্ষণীয়।
গ. আব্দুল মান্নানের গবাদিপশুর খামার স্থাপনের কাজটি আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক কাজের অন্তর্ভুক্ত।
আত্মকর্মসংস্থান হচ্ছে মজুরি বা বেতনভিত্তিক চাকরির বিকল্প পেশার অন্যতম উপায়। আত্মকর্মসংস্থান বলতে নিজস্ব পুঁজি অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্মপ্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থাকে বোঝায়। এ ধরনের কাজে আয়ের ধারাবাহিকতা অনিশ্চিত থাকলেও কারও কারও জন্য প্রচুর অর্থ উপার্জনের পথ সুগম করে দেয়। উদ্দীপকে আব্দুল মান্নান যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গবাদিপশুর মোটাতাজাকরণের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বাবার কাছ থেকে পুঁজি নিয়ে গবাদিপশুর খামার স্থাপন করেছেন। এতে করে তার নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। তিনি নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্মপ্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা করেছেন।
সুতরাং, আব্দুল মান্নান নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করেছেন বলে তার এ কাজটি আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজ।
ঘ. আব্দুল মান্নান আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে স্বাবলম্বী হয়েছেন যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তরান্বিত করবে।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। স্বল্পায়তনের এদেশটির জনসংখ্যা বিপুল। বিপুল এ জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মক্ষেত্র এখানে অপ্রতুল। এজন্য প্রয়োজন যথেষ্ট সংখ্যক দক্ষ ও সাহসী উদ্যোক্তা যারা কোনো ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে নিজেদেরকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারবে এবং দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। উদ্দীপকে আব্দুল মান্নান একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি গবাদি পশু মোটাতাজাকরণের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বল্প পুঁজি, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। তিনি জানতেন বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সহজ নয়। এদেশে অনেক বেকার রয়েছে যাদের চাকরির ব্যবস্থা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তিনি নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজের অর্থনৈতিক সংকটাপন্ন অবস্থা দূর করতে সক্ষম হয়েছেন। আব্দুল মান্নানের মতো উদ্যোক্তারা আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে যেমন নিজের জীবিকা অর্জনের সুব্যবস্থা করতে পারেন তেমনি এটির পরিধি বৃদ্ধি করে অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন। তার মতো সফল উদ্যোক্তারা নিয়মিত কর প্রদানের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে ভ‚মিকা রাখবে।
সুতরাং, ‘আব্দুল মান্নানের মতো ব্যবসায় সফল ব্যক্তিরাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে, উক্তিটি যথার্থ।
প্রশ্ন -৯ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মনসুর স্নাতক পাস করে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি না পেয়ে নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করার চিন্তা করেন। তিনি নিজস্ব পুঁজি নিয়ে হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ কাজে তাকে সহায়তা করার জন্য ৫ জন কর্মী নিয়োগ করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি সমাজের একজন সফল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পান।
ক. চাকরির বিকল্প পেশা কোনটি? ১
খ. অধিক উদ্যোক্তা প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্য কর। ২
গ. মনসুর আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হিসেবে হাঁস মুরগি পালন ও সবজি চাষকে কেন বেছে নিয়েছেন? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. মনসুরকে কী একজন উদ্যোক্তা বলা যায়? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও। ৪
 ৯নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. চাকরির বিকল্প পেশা হলো আত্মকর্মসংস্থান।
খ. যে সমাজ ও দেশে উদ্যোক্তার সংখ্যা বেশি সে সমাজ ও দেশ তত বেশি উন্নত। উদ্যোক্তার সংখ্যা বেশি হলে তারা বেকারত্ব হ্রাস করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। তাই কর্মসংস্থান ও জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দেশে অধিক উদ্যোক্তা প্রয়োজন।
গ. সহজ উদ্যোগ এবং লাভজনক তা বিবেচনা করে মনসুর হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি চাষের প্রকল্প বেছে নিয়েছেন।
আত্মকর্মসংস্থানমূলক ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে সাফল্য ও ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র নির্বাচনের ওপর। অর্থাৎ আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উপযুক্ত প্রকল্প বা ব্যবসায় বাছাই করা। উদ্দীপকে মনসুর আত্মকর্মসংস্থানের কাজে হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি চাষের ব্যবসায় বেছে নিয়েছেন। কেননা হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি চাষে বেশি পুঁজির প্রয়োজন নেই। তাই সামান্য পুঁজি নিয়েই তিনি এ দুটি প্রকল্প শুরু করতে পেরেছেন। হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি চাষে তেমন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়েই এটি শুরু করা যায়। এছাড়া প্রকল্প দুইটি লাভজনক। সারা বছরই হাঁস-মুরগি ও সবজির চাহিদা থাকে। এসব সুবিধা বিবেচনা করেই মনসুর আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হিসেবে হাঁস-মুরগির পালন ও সবজি বেছে নিয়েছেন।
ঘ. মনুসরকে একজন উদ্যোক্তা বলা যায় বলে আমি মনে করি।
নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। আত্মকর্মসংস্থানে অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকে না। কিন্তু আত্মকর্মসংস্থানকারী যখন অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে তখন তিনি উদ্যোক্তায় পরিণত হন। উদ্দীপকে মনসুর আত্মকর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি চাষের প্রকল্প গ্রহণ করেন। তার এ কাজে সহায়তা করার জন্য ৫ জন কর্মী নিয়োগ করেন। তার এ আত্মকর্মসংস্থানের সাথে ব্যবসায় উদ্যোগের নিবিড় সম্পর্ক আছে। একজন আত্মকর্মসংস্থানকারী ব্যক্তি তখনই একজন উদ্যোক্তায় পরিণত হবেন যখন তিনি নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সমাজের আরও কয়েকজনের কর্মসংস্থানের চিন্তা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এক্ষেত্রে মনসুর তার প্রকল্প দুটির মাধ্যমে নিজের ছাড়া আরও ৫জন লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, মনসুর একজন সফল উদ্যোক্তা।
প্রশ্ন -১০ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রফিক ১০ বছর বয়স থেকেই তার পিতার ব্যবসায় দেখাশোনা করে আসছেন এবং যথেষ্ট দক্ষ হয়েছেন। সেজন্য তিনি তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সফল হয়েছেন। পিতার আদেশও তাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
ক. আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয় কয়টি? ১
খ. আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র নির্বাচনে সুষ্ঠু ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়নের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। ২
গ. রফিক তার পিতার ব্যবসায় থেকে কোনটি অর্জন করেছেন? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. রফিকের ব্যবসায়ে সফলতার কারণটি বিশ্লেষণ কর। ৪
 ১০নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয় ১৩টি।
খ. ব্যবসায় সফলতা অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন। ব্যবসায়ে হাত দেয়ার পূবেই ব্যবসায়ের কাজ কখন এবং কীভাবে করা হবে তা অগ্রিম চিন্তা করে ঠিক করাই হচ্ছে পরিকল্পনা। ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দলিল হচ্ছে পরিকল্পনা। পরিকল্পনা প্রণয়ন যত বেশি হবে ব্যবসায় সফল হওয়ার নিশ্চয়তাও তত বেশি হবে। পরিকল্পনা অবশ্যই তথ্য ও উপাত্ত নির্ভর হতে হবে। আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে কর্মসংস্থানের চিন্তা করে।
গ. রফিক তার পিতার ব্যবসায় থেকে ব্যবসায় পরিচালনা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
কোনো বিশেষ কাজ যথার্থভাবে সম্পাদন করার স্বার্থে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়। দক্ষতা উদ্যোক্তাকে সফল হতে সাহায্য করে। উদ্দীপকে রফিক ১০ বছর বয়স থেকে পিতার ব্যবসায় দেখাশোনা করেন। এতে ব্যবসায় পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করে তিনি দক্ষ হবার সুযোগ পেয়েছেন। দক্ষতার বলেই তিনি তার ব্যবসায়কে সঠিকভাবে পরিচালিত করে সফলতা অর্জন করতে পেরেছেন। ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব নানামুখী বাধার সম্মুখীন হতে হয় সেগুলো কীভাবে সহজে মোকাবিলা করা যায় তা তিনি পিতার ব্যবসায় থেকে শিখেছেন। তাছাড়া তিনি বাবার ব্যবসায় থেকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার কৌশলও শিখেছেন। ফলে তিনি তার ব্যবসায় সহজে পরিচালনা করে লাভবান হতে পেরেছেন। এসবের পাশাপাশি অভিজ্ঞ পিতার নির্দেশও তাকে সহায়তা করেছে। তাই বলা যায়, রফিক তার পিতার ব্যবসায় হতে ব্যবসায় পরিচালনার পূর্ব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
ঘ. রফিকের ব্যবসায়ে সফলতার কারণটি হচ্ছে সঠিক ব্যবস্থাপনা। ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। কেননা সঠিক ব্যবস্থাপনা ব্যবসায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করে। উদ্দীপকে রফিক পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তার ব্যবসায়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মীকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। কর্মীদের যথাযথভাবে পরিচালনা করতে পারলে খরচ কম হয় এবং অধিক পণ্য উৎপন্ন করা যায়। এ গুণটির অভাবে অনেক ব্যবসায়ী তার ব্যবসায়ে সফলতা লাভ করতে ব্যর্থ হন। রফিক তার পিতার ব্যবসায় পরিচালনার পূর্ব অভিজ্ঞতা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যথাযথভাবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিচালনা করেন। অর্থাৎ সঠিক ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগ করে তিনি সফল হতে পেরেছেন।
পরিশেষে বলা যায়, রফিকের ব্যবসায় সক্ষমতার মূল কারণ অভিজ্ঞতালব্ধ সঠিক নির্দেশনা।
প্রশ্ন-১১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
স্থানীয় কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতা ও বাজারজাতকরণের কথা চিন্তা করে হান্নান সরকার কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকায় একটা মাটির টালি তৈরির কারখানা স্থাপন করেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী নিয়োগ এবং স্থানীয় ও আমদানিকৃত উন্নত যন্ত্রপাতি যৌথভাবে ব্যবহার করায় তিনি তার ব্যবসায়ে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হন।
ক. ব্যবসায় পরিচালনায় দিক নির্দেশনার দলিল কোনটি? ১
খ. আত্মকর্মসংস্থানকারীর ব্যবস্থাপনা কলাকৌশল প্রয়োজন কেন? ২
গ. হান্নান সরকার মাটির টালি তৈরির কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি বিবেচনা করেছেন? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. হান্নান সরকারের সফলতার কারণটি বিশ্লেষণ কর। ৪
 ১১নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ব্যবসায় পরিচালনায় দিকনির্দেশনার দলিল হলো ব্যবসায় পরিকল্পনা।
খ. সফলতা পেতে আত্মকর্মসংস্থানকারীর ব্যবস্থাপনা কলাকৌশল প্রয়োজন। কারণ উদ্যোক্তার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উপযুক্ত কলাকৌশল ব্যবসায়ে সফলতা লাভে সহায়তা করে। আত্মকর্মসংস্থানকারী ব্যক্তিকে সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করতে হয়। ব্যবস্থাপনা কলাকৌশল তাকে অযাচিত পরিস্থিতিতে দক্ষভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
গ. হান্নান সরকার মাটির টালি তৈরির কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচন বিষয়টি বিবেচনা করেছেন।
যেকোনো ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আত্মকর্মসংস্থানমূলক ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে সাফল্য ও ব্যর্থতা ব্যবসায়ের জন্য সঠিক স্থান নির্বাচনের ওপর অনেকটা নির্ভর করে। তাই ব্যবসায়ের জন্য স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাঁচামালের সহজলভ্যতা, বাজারজাতকরণের সুবিধা, অবকাঠামোগত সুবিধা প্রভৃতি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা প্রয়োজন। উদ্দীপকের হান্নান সরকার স্থানীয় কাঁচামালের সহজলভ্যতা ও বাজারজাতকরণের সুবিধার কথা চিন্তা করে কুষ্টিয়ার খাজানগরে মাটির টালি কারখানা স্থাপন করেছেন। অর্থাৎ তিনি ব্যবসায়ের জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন করেছেন। আর যে কোনো ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিক স্থানে ব্যবসায় স্থাপন করতে পারলে উদ্যোক্তা সহজেই তার ব্যবসায়ে সফলতা লাভ করতে পারেন। তাই তিনি স্থান নির্বাচনের বিষয়গুলো বিবেচনা করেই কুষ্টিয়ার খাজানগরে মাটির টালি তৈরির কারখানা স্থাপন করেছেন।
ঘ. হান্নান সরকারের সফলতার কারণ হচ্ছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী নিয়োগ এবং স্থানীয় ও আমদানিকৃত উন্নত যন্ত্রপাতির যৌথ ব্যবহার।
কোনো বিশেষ কাজ যথার্থভাবে সম্পাদন করার স্বার্থে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী নিয়োগ করা প্রয়োজন। ব্যবসায় পরিচালনার জন্য যেসব কর্মী নিয়োগ করা হবে তাদেরকে অবশ্যই যোগ্যতাসম্পন্ন এবং স্বীয় কাজে দক্ষ হতে হবে। তাছাড়া উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং প্রয়োজনবোধে স্থানীয় ও আমদানিকৃত প্রযুক্তির সংমিশ্রণ ব্যবসার সাফল্য অর্জনের পথ সুগম করে। উদ্দীপকের হান্নান সরকার তার ব্যবসায়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন এবং কর্মীরা যাতে খুবই দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারেন সেজন্য স্থানীয় ও আমদানিকৃত উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী নিয়োগ এবং উন্নত যন্ত্রপাতির যৌথ ব্যবহারে তার ব্যবসায় সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, হান্নান সরকারের ব্যবসায়ে সফলতা এসেছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী নিয়োগ এবং স্থানীয় ও আমদানিকৃত উন্নত যন্ত্রপাতির যৌথ ব্যবহার করার মাধ্যমে।
প্রশ্ন-১২  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
গ্রামের অসহায় মহিলা মিসেস আবিদা বেগম ৩ মাসের সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে প্রাপ্ত ঋণের টাকা দিয়ে একটি সেলাই মেশিন ক্রয় করেন। এক্ষেত্রে সফলতা পেয়ে তিনি একটি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের চিন্তা করলেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে চাঁদপুরের কাপড় বাজারের পাশে একটি ভাড়া করা বাড়িতে ‘আবিদা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বর্তমানে তিনি বেশ স্বাবলম্বী হয়েছেন।

ক. কোন সমাজ বা দেশ অর্থনৈতিকভাবে অধিক উন্নত? ১
খ. মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর। ২
গ. মিসেস আবিদা বেগম কোন ধরনের ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন তা বর্ণনা কর। ৩
ঘ. ‘সামান্য সহযোগিতাই মিসেস আবিদাকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করেছে’-তুমি কি একমত? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও। ৪
 ১২নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. যে সমাজ বা দেশে অধিক সংখ্যক উদ্যোক্তা গড়ে ওঠে সে সমাজ বা দেশ অর্থনৈতিকভাবে অধিক উন্নত।
খ. গ্রামের দুস্থ, শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মূল উদ্দেশ্য। তাই এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত মহিলাদের জন্য উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি উদ্যোগী মহিলাদের কারিগরি দক্ষতা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক কারিগরি ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।
গ. মিসেস আবিদা বেগম ‘গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসংস্থান প্রকল্প’’ থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন।
গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসংস্থান প্রকল্প পলি­ অঞ্চলের মহিলাদের বিভিন্ন পেশায় প্রশিক্ষণ দেয় এবং প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করে। শুধুমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরাই ঋণ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। উদ্দীপকে মিসেস আবিদা বেগম গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসংস্থান প্রকল্প থেকে ৩ মাসের সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সফলভাবে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে উক্ত প্রকল্প থেকে ঋণ পেয়ে সেলাই মেশিন কিনেন। আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হিসেবে আবিদা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেন। অর্থাৎ তাকে প্রশিক্ষণ শেষে ঋণ প্রদান করে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসংস্থান প্রকল্পের ভ‚মিকাই মুখ্য।
ঘ. ‘সামান্য সহযোগিতাই মিসেস আবিদাকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে’ -এই উক্তিটির সাথে আমি একমত।
বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তাকারী বেশ কিছু সংস্থা আছে। এসব সংস্থা ভ‚মিহীন, বিত্তহীন জনগণকে আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজ গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ, দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দান, ক্ষুদ্র ব্যবসায় স্থাপনের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান, ঋণ ব্যবহার তত্ত¡াবধান প্রভৃতি কার্যক্রমের মাধ্যমে দুস্থ লোকদের আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজম্যান্ট, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পলি­ উন্নয়ন বোর্ড, গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসংস্থানের প্রকল্প, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, নট্রামস উলে­খযোগ্য। উদ্দীপকে মিসেস আবিদা প্রথমে ‘গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসংস্থান প্রকল্প’ থেকে প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন ক্রয়ের জন্য ঋণ পেয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি গড়ে তুলেছিলেন আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। পরবর্তীতে নিজেকে অধিক স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য তিনি ‘বাংলাদেশ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের’ সহযোগিতা নিয়ে একটি ভাড়া করা বাড়িতে ‘আবিদা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করেন। গ্রামের মহিলাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে একদিকে তিনি যেমন সচ্ছলভাবে চলার পথ তৈরি করেছেন অন্যদিকে অসহায় মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরির পথ উš§ুক্ত করছেন। সরকার নিয়ন্ত্রিত দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া সহযোগিতাই আবিদাকে অসহায় জীবন থেকে মুক্ত করে প্রথমে আত্মকর্মসংস্থানকারী এবং তারপর একজন ভালো প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
সুতরাং বলা যায়, আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের ‘সামান্য সহযোগিতা মিসেস আবিদাকে তার বেকার জীবনের অবসান ঘটিয়ে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করেছে’।

প্রশ্ন-১৩  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
নোয়াখালীর সানজিদা ইসলাম স্নাতক পাস করে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পেয়ে স্থানীয় যুব উন্নয়ন কার্যালয় থেকে ফুল চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রথম বছর এক একর জমিতে ফুল চাষ করে ৫০ হাজার টাকা লাভ করেন। লাভের টাকা দিয়ে ফুল চাষ স¤প্রসারণ করার চিন্তা-ভাবনা করেন। ঢাকার একটি ফুল চাষের ওপর প্রশিক্ষণ কর্মশালায় যোগ দিয়ে তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফুলের বীজ সংগ্রহ করে ব্যবসায় স¤প্রসারণ করেন। তার কঠোর পরিশ্রম ও সুযোগের সদ্ব্যবহারে ৫ বছরে তার ব্যবসায় কয়েকগুণ বেড়ে গেল।
ক. পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পেশা কোনটি? ১
খ. নট্রামস সম্পর্কে লেখ। ২
গ. সানজিদা ইসলাম কীভাবে নিজের কর্মসংস্থান করেছেন? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. সানজিদা ইসলামের পেশাটির গুরুত্ব মূল্যায়ন কর। ৪
 ১৩নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পেশা হলো আত্মকর্মসংস্থান।
খ. নট্রামস শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও কম্পিউটার চালনার শিক্ষা দেওয়াই এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজ। এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেও বহু শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিয়েছে। অর্থাৎ এটি আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভ‚মিকা রাখে।
গ. সানজিদা ইসলাম আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজের কর্মসংস্থান করেছেন।
নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করা হলো আত্মকর্মসংস্থান। আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশার মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি নিজের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন নিজস্ব উদ্যোগ, কর্মঠ মনোভাব এবং দক্ষতা ও উদ্যোগী মনোভাব। উদ্দীপকের সানজিদা ইসলাম ফুল চাষের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তিনি তার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং উদ্যোগী মনোভাব দ্বারা প্রথম বছরেই ৫০ হাজার টাকা ব্যবসায়ে মুনাফা করেছেন। প্রচুর লাভ হওয়ায় তার সৃজনশীল চিন্তা দ্বারা তিনি পরবর্তীতে তার কার্যক্রম আরও স¤প্রসারিত করেছেন। মূলত সানজিদা ইসলাম নিজের প্রচেষ্টায় এবং শ্রম দিয়ে ফুল চাষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।
ঘ. সানজিদা ইসলামের পেশাটি অর্থাৎ আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের গুরুত্ব সর্বাধিক।
বাংলাদেশ একটি জনবহুল উন্নয়নশীল দেশ। দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা সরকার কিংবা ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় বেকার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। দেশের এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে বেকারত্ব দূর করার ক্ষেত্রে আত্মকর্মসংস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদ্দীপকের সানজিদা ইসলাম স্নাতক পাস করে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পেয়ে ফুল চাষের পেশাটির মাধ্যমে প্রথমেই তার নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছেন। তার ফুল চাষের এ ব্যবসায়টি থেকে তিনি মুনাফা পাচ্ছেন। এই মুনাফা তার নিজের এবং জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। ফুল চাষের মতো আদর্শ পেশাটির মাধ্যমে সানজিদা ইসলাম নিজের কর্মসংস্থান করায় এলাকার মানুষজন তাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। এছাড়া আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশাটির মাধ্যমে সানজিদা ইসলাম তার নিজের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করতে পেরেছেন। তাছাড়া ফুল চাষকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করায় সানজিদা ইসলাম ব্যবসায় স¤প্রসারণের মাধ্যমে অন্যের জন্যও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছেন।
সুতরাং বলা যায়, সানজিদা ইসলামের পেশাটি বেকার সমস্যা দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 
প্রশ্ন \ ১ \ আদমশুমারি ও গৃহ গণনা ২০১১-এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের লোকসংখ্যা কত?
উত্তর : আদমশুমারি ও গৃহ গণনা ২০১১-এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লক্ষ ১৮ হাজার ১৫ জন।
প্রশ্ন \ ২ \ দেশের মোট শ্রম শক্তির পরিমাণ কত?
উত্তর : দেশের মোট শ্রমশক্তির পরিমাণ ৫ কোটি ৬৭ লক্ষ।
প্রশ্ন \ ৩ \ মোট শ্রম শক্তির কত অংশ যুবক-যুবতী?
উত্তর : মোট শ্রম শক্তির এক-তৃতীয়াংশ যুবক-যুবতী।
প্রশ্ন \ ৪ \ আত্মকর্মসংস্থান কী?
উত্তর : নিজের দক্ষতা ও গুণাবলি দ্বারা নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে।
প্রশ্ন \ ৫ \ কর্মসংস্থানকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তর : কর্মসংস্থানকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রশ্ন \ ৬ \ কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস কোনটি?
উত্তর : কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হচ্ছে আত্মকর্মসংস্থান।
প্রশ্ন \ ৭ \ আয়ের সম্ভাবনা কোন পেশায় সীমিত?
উত্তর : আয়ের সম্ভাবনা চাকরির পেশায় সীমিত।
প্রশ্ন \ ৮ \ আত্মকর্মসংস্থান কোন ধরনের পেশা?
উত্তর : আত্মকর্মসংস্থান একটি স্বাধীন পেশা।
প্রশ্ন \ ৯ \ শহরমুখী জনস্রোত নিয়ন্ত্রণ করা যায় কোনটি দ্বারা?
উত্তর : শহরমুখী জনস্রোত নিয়ন্ত্রণ করা যায় আত্মকর্মসংস্থান দ্বারা।
প্রশ্ন \ ১০ \ কোনটি বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে মজুরি অনেক কম?
উত্তর : জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে মজুরি অনেক কম।
প্রশ্ন \ ১১ \ আত্মকর্মসংস্থানের মানসিকতা যুবসমাজকে কী করে?
উত্তর : আত্মকর্মসংস্থানের মানসিকতা যুবসমাজকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে।
প্রশ্ন \ ১২ \ ব্যবসায়ে সাফল্য লাভের অন্যতম পূর্বশর্ত কোনটি?
উত্তর : ব্যবসার জন্য সঠিক পণ্য নির্বাচন ব্যবসায়ে সাফল্য লাভের অন্যতম পূর্বশর্ত।
প্রশ্ন \ ১৩ \ আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মূলধন কী?
উত্তর : আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মূলধন হলো নিজের দক্ষতা।
প্রশ্ন \ ১৪ \ ব্যবসায় সফলতা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোনটি?
উত্তর : ব্যবসায় সফলতা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক ব্যবসা পরিকল্পনা প্রণয়ন।
প্রশ্ন \ ১৫ \ যুবসমাজ জীবিকা বলতে কাকে বুঝে থাকে?
উত্তর : যুবসমাজ জীবিকা বলতে চাকরিকে বুঝে থাকে।
প্রশ্ন \ ১৬ \ কর্মীর দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য কোনটি প্রয়োজন?
উত্তর : কর্মীর দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
প্রশ্ন \ ১৭ \ কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি পায় কোনটি দ্বারা?
উত্তর : কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি পায় প্রশিক্ষণের দ্বারা।
প্রশ্ন \ ১৮ \ প্রশিক্ষণ কাদের মনোভাবের উন্নতি সাধন করে?
উত্তর : প্রশিক্ষণ উদ্যোক্তা বা কর্মচারীদের মনোভাবের উন্নতি সাধন করে।
প্রশ্ন \ ১৯ \ বাংলাদেশ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট কোন মন্ত্রণালয়ের অধীন?
উত্তর : বাংলাদেশ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।
প্রশ্ন \ ২০ \ মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মূল উদ্দেশ্য কী?
উত্তর : বিশেষ করে গ্রামের দুস্থ শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত মহিলাদেরকে স্বকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মূল উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন \ ২০ \ নট্রামস কী?
উত্তর : নট্রামস শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত একটি প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
প্রশ্ন \ ২২ \ ব্র্যাক কী?
উত্তর : ব্র্যাক একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান।

 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 
প্রশ্ন \ ১ \ আত্মকর্মসংস্থান একটি স্বাধীন পেশা’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের জমিতে বা বাড়িতে ব্যবসায় শুরু করতে পারে। এতে করে তার আলাদা খরচ হয় না। বাড়তি চাপ সহ্য করতে হয় না। ব্যবসায়ে গোপনীয়তা রক্ষা হয়। অন্যের অধীনে চলতে হয় না। তাই বলা হয়, আত্মকর্মসংস্থান একটি স্বাধীন পেশা।
প্রশ্ন \ ২ \ বাংলাদেশে বেকার সমস্যা এত প্রকট কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর :বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেড়েই চলেছে। কিন্তু সে অনুপাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা এবং চাহিদার তুলনায় সীমিত কর্মসংস্থানের কারণে বাংলাদেশে বেকার সমস্যা এত প্রকট।
প্রশ্ন \ ৩ \ সকল ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে আত্মকর্মসংস্থানকারী বলা গেলেও সকল আত্মকর্মসংস্থানকারীকে ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলা যায় না ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ব্যবসায় উদ্যোগের সাথে আত্মকর্মসংস্থানের সম্পর্ক খুব নিবিড়। আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি নিজের কর্মসংস্থানের চিন্তা করে কাজে হাত দেন। একজন আত্মকর্মসংস্থানকারী ব্যক্তি তখনই একজন উদ্যোক্তায় পরিণত হবেন, যখন তিনি নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সমাজের আরও কয়েকজনের কর্মসংস্থানের চিন্তা নিয়ে কাজ শুরু করেন, ঝুঁকি আছে জেনেও এগিয়ে যান এবং একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সেক্ষেত্রে সকল ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে আত্মকর্মসংস্থানকারী বলা গেলেও সকল আত্মকর্মসংস্থানকারীকে ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলা যায় না।
প্রশ্ন \ ৪ \ আত্মকর্মসংস্থানের ১০টি উপযুক্ত ও লাভজনক ক্ষেত্রের নাম লিখ।
উত্তর : আত্মকর্মসংস্থানের উপর্যুক্ত ও লাভজনক ক্ষেত্রের নাম নিচে দেয়া হলো :
১. টেইলারিং, ২. পোশাক প্রস্তুতকরণ, ৩. কাঠের আসবাবপত্র তৈরি, ৪. পাটের ম্যাট তৈরি, ৫. আলুর চিপস তৈরি, ৬. বাইসাইকেল মেরামত, ৭. মোবাইল সার্ভিস সেন্টার, ৮. গবাদি পশু ও হাঁস মুরগির খামার, ৯. প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং, ১০. ফটোস্ট্যাট ব্যবসায় ইত্যাদি।
প্রশ্ন \ ৫ \ ‘আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা অসীম?’
উত্তর : আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে। কঠোর পরিশ্রম ও সুযোগের সঠিক ব্যবহার করে মুনাফা অর্জন করা যায়। আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ব্যক্তি অনেক চিন্তাভাবনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। অন্যান্য পেশায় আয়ের সম্ভাবনা সীমিত। কিন্তু আত্মকর্মসংস্থান থেকে প্রাপ্ত আয় প্রথম দিকে সীমিত ও অনিশ্চিত হলেও পরবর্তীকালে এ পেশা থেকে আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা অসীম।
প্রশ্ন \ ৬ \ কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস কী? বর্ণনা কর।
উত্তর : মানুষের জীবিকার্জনের জন্য কর্মসংস্থান অপরিহার্য। কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হলো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য নিম্ন, মধ্য ও উচ্চপর্যায়ে বহু কর্মীর প্রয়োজন হয়। তাছাড়া নিরাপত্তা, নিয়মিত আয়, প্রমোশন ও নিয়মিত সুযোগ-সুবিধা থাকায় চাকরি সকলের কাছে আকর্ষণীয়। দেশের কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হিসেবে তাই চাকরিকে সকলে বেছে নেয়। সুতরাং চাকরিই কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস।
প্রশ্ন \ ৭ \ উন্নয়নশীল দেশে আত্মকর্মসংস্থান গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তর : আত্মকর্মসংস্থান ছাড়া কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রত্যেক দেশেই সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। আত্মকর্মসংস্থান দ্বারাই ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যাকে নিরসন করা যায়। যেখানে সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম, সেখানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রশ্ন \ ৮ \ ‘প্রশিক্ষণ অপচয় ও দুর্ঘটনা হ্রাস করে।’ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : প্রশিক্ষিত কর্মীগণ অধিকতর দক্ষতা ও মিতব্যয়িতার সাথে কার্য সম্পাদন করতে পারে। এতে প্রতিষ্ঠানের কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে অপচয় হ্রাস পায়। প্রশিক্ষণ কর্মীদের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিবিধ কলাকৌশল সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। ফলে কারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহারসহ অন্যান্য দুর্ঘটনা এড়ানোও সহজ হয়। কর্মীর দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কার্য নির্বাহের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
প্রশ্ন \ ৯ \ বেকার কাকে বলা হয়? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : চাকরির অভাবই হলো বেকারত্ব। যিনি বেকারত্ব সমস্যার শিকার তাকেই বেকার বলা হয়। বেকার হলো একজন ব্যক্তি যার কর্মসংস্থানের কোনো উপায় নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩ কোটির বেশি যুবক-যুবতী বেকার। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে এ সকল বেকার যুবক-যুবতীর বেকারত্বের অবসান ঘটানো যায়।
প্রশ্ন \ ১০ \ উদ্যোক্তাকে ঝুঁকি গ্রহণ করতে হয় কেন?
উত্তর : সকল উদ্যোগে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। ঝুঁকি গ্রহণ ছাড়া নতুন কিছু সৃষ্টি করা যায় না। ব্যবসায় উদ্যোগের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন ঝুঁকি থাকে। এসব ঝুঁকি গ্রহণ এবং তা ন্যূনতমকরণের মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা তার উদ্যোগকে সফল করতে পারেন। এজন্যই উদ্যোক্তাকে ঝুঁকি গ্রহণ করতে হয়।
প্রশ্ন \ ১১ \ মৃৎশিল্পের ধারণা দাও।
উত্তর : শিল্প হলো উৎপাদনের বাহন। মৃৎ অর্থ মাটি। মাটি দ্বারা বিভিন্ন দ্রব্য তৈরির প্রক্রিয়াকে মৃৎশিল্প বলা হয়। মৃৎশিল্পে থালা-বাসন, পুতুল, খেলনা প্রভৃতি উৎপাদিত হয়। মাটির ওপর নির্ভর করেই মূলত এ শিল্প উৎপাদন কার্য অব্যাহত রাখে বলে এটিকে মৃৎশিল্প বলা হয়। এদেশের মৃৎশিল্প ঐতিহ্যগতভাবেই রয়েছে।
প্রশ্ন \ ১২ \ আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য কোন ধরনের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন?
উত্তর : আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবসায় অপরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ তথা ব্যবস্থাপনাবিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সাধারণত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সাধারণত প্রশিক্ষণ বলতে কোনো পেশা বা ব্যবসায় সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের জন্য হাতেকলমে শিক্ষাকে
বোঝায়। আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সাধারণত কোনো ব্যক্তি তার উদ্দিষ্ট কাক্সিক্ষত ব্যবসায় বা পেশা বিষয়ে জ্ঞান, দক্ষতা ও কৌশল অর্জন করে যে পেশা বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করতে ও তা সুদক্ষভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়।
প্রশ্ন \ ১৩ \ ব্যবসায় সফলতা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ব্যবসায় সফলতা অর্জনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন। ব্যবসায়ে হাত দেওয়ার আগেই ব্যবসার কাজ কখন এবং কীভাবে করা হবে তা অগ্রিম চিন্তা করে ঠিক করাই হচ্ছে পরিকল্পনা। ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা হচ্ছে

দিকনির্দেশনা দলিল। পরিকল্পনা প্রণয়ন যত বেশি সমৃদ্ধ হবে ব্যবসায়ে সফল হওয়ার নিশ্চয়তাও তত বেশি হবে।
প্রশ্ন \ ১৪ \ ব্যবসায় ঝুঁকি মোকাবিলার উপায় ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ব্যবসায়ের সাফল্য লাভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত হলো ব্যবসায় ঝুঁকি মোকাবিলার উপায় নির্ধারণ করা। ব্যবসায় সংক্রান্ত ঝুঁকি আগেই নিরূপণ করে তার মোকাবিলা করার কৌশল স্থির করে রাখলে অনিশ্চয়তাজনিত ক্ষতির হাত থেকে ব্যবসাকে রক্ষা করা যায়। কাজেই উপযুক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবসায় ঝুঁকি নিরূপণ ও তা মোকাবিলার উপায় নির্ধারণ ব্যবসায় সাফল্য লাভের অন্যতম শর্ত।
প্রশ্ন \ ১৫ \ বাংলাদেশ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট একটি প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বাংলাদেশ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে এটি আত্মকর্মসংস্থান ও উদ্যোগ উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। প্রধান প্রধান কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা, নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠাকরণ, মহিলা উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রভৃতি। সুতরাং এটি একটি প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
প্রশ্ন \ ১৬ \ যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কার্যক্রম ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। দেশের প্রতিটি থানায় এর কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে বেকার যুবক-যুবতীদের বিভিন্ন পেশায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যেমন : হাঁস-মুরগির খামার তৈরি, মৎস্য চাষ, সবজি বাগান, নার্সারি করা, সেলাইয়ের কাজ, কুটির শিল্পের কাজ, কম্পিউটার চালনা প্রভৃতি। এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষণার্থীরা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পায়।
প্রশ্ন \ ১৭ \ আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র নির্বাচনে সুষ্ঠু ব্যবস্থায় পরিকল্পনা প্রণয়নের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ব্যবসায় সফলতা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুষ্ঠু ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন। ব্যবসায়ে হাত দেওয়ার পূর্বেই ব্যবসার কাজ কখন এবং কীভাবে করা হবে তা অগ্রিম চিন্তা করে ঠিক করাই হচ্ছে পরিকল্পনা। ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা হচ্ছে দিকনির্দেশনা দলিল। পরিকল্পনা প্রণয়ন যত বেশি সমৃদ্ধ হবে ব্যবসায়ে সফল হওয়ার নিশ্চয়তাও তত বেশি হবে।

 

Leave a Reply