নবম-দশম শ্রেণির ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং দশম অধ্যায় বাণিজ্যিক ব্যাংক ও তার পরিচিতি সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

দশম অধ্যায়
বাণিজ্যিক ব্যাংক ও তার পরিচিতি

 বাণিজ্যিক ব্যাংক
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে যে প্রতিষ্ঠান অর্থ ও অর্থের মূল্য পরিমাপযোগ্য বা সেবা লেনদেন করে থাকে তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলা হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংক একটি মুনাফাভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা অর্থের লেনদেন ও আদান-প্রদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে থাকে। ব্যাংকটি মুনাফা অর্জনের জন্য গঠিত হলেও এটি বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি সম্পাদন করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে চেক, হুন্ডি, বিনিময় বিলের প্রচলন করে।
 বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য
১. মুনাফা অর্জন ৮. কর্মসংস্থান সৃষ্টি
২. মূলধন গঠন ৯. ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাসকরণ
৩. বিনিময়ের মাধ্যম ১০. সঞ্চয় প্রবণতা সৃষ্টি
৪. জনকল্যাণ ১১. নিরাপত্তা
৫. ঋণ নিয়ন্ত্রণের সহযোগিতা ১২. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা
৬. পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহযোগিতা ১৩. শিল্প ও বাণিজ্যিক উন্নয়ন
৭. সম্পদের সুষম বণ্টন ১৪. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।
 বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলি
ক. প্রধান কার্যাবলি :
১. আমানত গ্রহণ ও সুদ প্রদান ৬. নোট ইস্যু
২. মূলধন গঠন ৭. অছি হিসেবে কাজ
৩. ঋণ মঞ্জুর ও সুদ গ্রহণ ৮. আমদানি-রপ্তানি সাহায্য
৪. ঋণ আমানত সৃষ্টি ৯. সরকারের কোষাগার হিসেবে কাজ করে
৫. বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি ১০. বিনিময় বিল ভাঙানো।
খ. বিশেষ ও অন্যান্য কার্যাবলি :
১. মূলধন বিনিয়োগ ৬. কর্মসংস্থান
২. অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভ‚মিকা ৭. ঋণ নিয়ন্ত্রণ
৩. অর্থ স্থানান্তর ৮. কৃষি উন্নয়ন
৪. অর্থের নিরাপত্তা প্রদান ৯. শিল্পোন্নয়ন
৫. পরামর্শ দান ১০. আঞ্চলিক উন্নয়ন।
 বাণিজ্যিক ব্যাংকের তহবিলের উৎস
১. পরিশোধিত মূলধন ৩. আমানত
২. সংরক্ষিত তহবিল ৪. ধার গ্রহণ।
 বাণিজ্যিক ব্যাংকের আয়ের উৎসসমূহ
১. ঋণের সুদ ৭. প্রতিনিধিত্ব
২. বিনিয়োগ ৮. শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে মধ্যস্থতা
৩. বিল বাট্টাকরণ ৯. বৈদেশিক বিনিময়
৪. ব্যাংক ড্রাফট, ট্রাভেলারস চেক হতে প্রাপ্ত কমিশন ১০. আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য
৫. যোগাযোগ ১১. প্রত্যয়পত্র
৬ লকার ভাড়া ১২. অছি।
 বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যায়ের খাতসমূহ
১. আমানতকারীর আমানতের উপর সুদ প্রদান ৮. অফিস ঘর ও গুদাম ঘরের ভাড়া
২. কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রদত্ত ধারের উপর সুদ প্রদান ৯. শুল্ক ও কর
৩. অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক হতে গৃহীত ঋণের উপর সুদ প্রদান ১০. বিমা প্রিমিয়াম
৪. কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা ও বোনাস প্রদান ১১. যোগাযোগ খরচ যেমন : ডাক, তার, টেলিফোন, টেলেক্স, ফ্যাক্স, সুইফট ইত্যাদি।
৫. পরিচালক ও ব্যবস্থাপকের ভাতা ১২. বিজ্ঞাপন খরচ
৬ নিরীক্ষকের বিল ১৩. কর্মীদের প্রশিক্ষণ খরচ।
৭. অনাদায়ী ঋণের মামলা-মোকাদ্দমার খরচ

অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মিসেস শীলা রোজারিও প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকের উচ্চপদে আসীন বিধায় তিনি তার দুই প্রতিবেশী মোঃ আরাফ ও মৃদুল শেখকে তাদের ব্যবসা ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। মৃদুল শেখ পাটের একজন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী এবং মোঃ আরাফের ব্যবসাটি হলো আবাসন প্রকল্পের, যেখানে কিনা তার বেশ বড় অংকের ঋণের প্রয়োজন হয়। সে জন্যই তারা মিসেস শীলা রোজারিওর শরণাপন্ন হন। তিনি বললেন যে, এভাবেই আমরা চেষ্টা করি দেশের মানুষদেরকে সেবা প্রদান করতে, জনগণের সেবাই তো আমাদের কাজ।
ক. কোনটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মৌলিক উদ্দেশ্য?
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংক কিসের মাধ্যমে আমানত সৃষ্টি করে-ব্যাখ্যা কর।
গ. মিসেস শীলার কার্যাবলির ধরন বিবেচনায় তিনি কোন ব্যাংকের কর্মকর্তা তা বর্ণনা কর।
ঘ. জনগণের সেবাদানই মূলত আমাদের কাজ-মিসেস শীলা রোজারিওর এই উক্তিটিকে মূল্যায়ন কর।
 ১নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. বাণিজ্যিক ব্যাংকের মৌলিক উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন।
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে আমানত সৃষ্টি করে। ঋণ গ্রহণের সময় ঋণগ্রহীতাকে ব্যাংকের সাথে একটি হিসাব খুলতে হয়। ঋণের অর্থ ঐ হিসাবে জমা বা ক্রেডিট করা হয়। এরপর ঋণগ্রহীতা যত পরিমাণ টাকা সেই হিসাব থেকে উত্তোলন করে সেটা ঐ হিসাবে ডেবিট করা হয়। এভাবে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে আমানত সৃষ্টি করে।
গ. মিসেস শীলার কার্যাবলির ধরন বিবেচনায় তিনি বাণিজ্যিক ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা।
বাণিজ্যিক ব্যাংক একটি মুনাফাভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা অর্থের লেনদেন ও আদান-প্রদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ হলো ঋণদান করা। ঋণদানের মাধ্যমে অর্জিত সুদই বাণিজ্যিক ব্যাংকের আয়ের মূল উৎস। উদ্দীপকে মিসেস শীলা ব্যাংকের ঋণদান কর্মসূচির সাথে জড়িত কর্মকর্তা। তিনি তার দুই প্রতিবেশী মোঃ আরাফ ও মৃদুল শেখকে তাদের ব্যবসায় ক্ষেত্রে ঋণদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করেন। মৃদুল শেখ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী বলে তাকে প্রত্যয়নপত্র খোলার সুযোগ করে দিয়ে তার ব্যবসায় করাকে সহজ করেছেন। এছাড়া মোঃ আরাফের ব্যবসায়টি আবাসন প্রকল্পের হওয়ায় তার জন্য মিসেস শীলা বড় ধরনের ঋণের ব্যবস্থা করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ প্রদান করে না, বাণিজ্যিক ব্যাংকই জনগণকে ঋণ প্রদান করতে পারে। মিসেস শীলা যেহেতু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে আবাসন খাতে ঋণ প্রদান করেছেন সেহেতু তার ব্যাংকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক নির্দ্বিধায় বলা যায়।
ঘ. ‘জনগণের সেবাদানই মূলত আমাদের কাজ’ উক্তিটির মাধ্যমে মিসেস শীলা রোজারিও তার ব্যাংকের কাজকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
বাণিজ্যিক ব্যাংককে মুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান মনে করা হলেও এটি কেবল মুনাফা অর্জনই করে না, বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কার্যাদি সম্পাদন করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশের শিল্প, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন রকম সেবা প্রদান করে থাকে। সেবা প্রদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জনই ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য। উদ্দীপকে মিসেস শীলা বাণিজ্যিক ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে তার প্রতিবেশী দুই ব্যবসায়ীকে প্রত্যয়নপত্র ইস্যু ও ঋণদান করে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করেছেন। এছাড়াও তার ব্যাংক আর্থিক লেনদেন ও দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির মাধ্যম হিসাবে চেক, হুন্ডি, বিনিময় বিল, প্রত্যয়নপত্র, পে-অর্ডার ইত্যাদির প্রচলন করেও জনগণের সেবা প্রদান করে। আবার মক্কেলের অর্থ, মূল্যবান দলিল ও সম্পদের নিরাপত্তা এবং মক্কেলের সম্পদের অছি হিসেবেও তাদের সেবা দিয়ে থাকে।
ব্যাংকটি জনগণকে এসব সেবা প্রদান করে কারণ ব্যাংকটি জনগণের অর্থেই পরিচালিত হয়। আর জনগণের সন্তুষ্টির ওপরই তার সাফল্য অনেকটা নির্ভরশীল।
সুতরাং, ব্যাংকের সেবাদান সম্পর্কে মিসেস রোজারিওর উক্তিটিই যথার্থ।
প্রশ্ন-২  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
স্কুলশিক্ষিকা জনাব শায়লা শবনম বর্তমান সামাজিক অবস্থার কথা চিন্তা করে তার গহনাসমূহ ও মূল্যবান দলিলপত্র নিয়ে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ কামনা করেন। সেখানে তাকে যে পরামর্শ দেয়া হয় তা তিনি গ্রহণ করেন। তিনি জমি ক্রয়ের জন্য নগদ অর্থ নিয়ে সাভার যাওয়ার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন।
ক. ঋণগ্রহীতাকে ব্যাংকের সাথে ঋণগ্রহণের সময় কী খুলতে হয়?
খ. সংরক্ষিত তহবিল কী? বর্ণনা কর।
গ. শায়লা শবনম তার মূল্যবান দলিলপত্র ও গহনার জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান কী ভ‚মিকা রাখতে পারে? আলোচনা কর।
 ২নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ঋণগ্রহীতাকে ব্যাংকের সাথে ঋণগ্রহণের সময় একটি হিসাব খুলতে হয়।
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংকের তহবিল সংগ্রহের একটি অন্যতম উৎস হলো সংরক্ষিত তহবিল। প্রতি বছর মুনাফার একটি অংশ শেয়ারহোল্ডার বা মালিকগণের মধ্যে বণ্টন না করে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখা হয় তাকে সংরক্ষিত তহবিল বলে। এই অর্থ ভবিষ্যতে মূলধন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
গ. শায়লা শবনম তার মূল্যবান দলিলপত্র ও গহনার জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগণের অর্থের নিরাপত্তার সাথে সাথে তাদের মূল্যবান সম্পদের সংরক্ষণ করার দায়িত্ব নিয়ে থাকে। এই উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক তার গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রকার মূল্যবান সম্পদ, গহনা, দলিলপত্র ইত্যাদি জমা রাখে এবং নিরাপদে সংরক্ষণ করে থাকে। অর্থাৎ ব্যাংক ভাড়ার বিনিময়ে তার গ্রহাকদের লকার গ্রাহক সেবা প্রদান করে থাকে। উদ্দীপকের শায়লা শবনম বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে লকার এক্ষেত্রে লকার নিয়ে তার মূল্যবান দলিলপত্র ও গহনা লকারে জমা রাখতে পারেন। এক্ষত্রে লকার থেকে কোনো কিছুর সামান্য ক্ষতি হলে ব্যাংক তার দায়ভার গ্রহণ করে। ফলে সম্পদের নিরাপত্তার জন্য লকারের মতো নির্ভরযোগ্য স্থান খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই শায়লা শবনমের জন্য তার মূল্যবান দলিলপত্র ও গহনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের লকার ভাড়া নেওয়াই উত্তম হবে।
ঘ. অর্থ ছিনতাই নামক দুর্ঘটনা এড়াতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তারক্ষীর ভ‚মিকা রাখতে পারে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো অর্থের নিরাপত্তা দেয়া। জনগণের সঞ্চিত অর্থ জমা রাখার মাধ্যমে ব্যাংক এ নিরাপত্তা দান করে। উদ্দীপকে শায়লা শবনম নগদ অর্থ বহন করার ফলে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। এক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক এগিয়ে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে শায়লা শবনম ব্যাংক হিসাব খোলার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে পারবেন। ব্যাংকে হিসাব থাকলে তিনি পাওনাদারকে সরাসরি নগদে অর্থ প্রদান না করে চেক প্রদানের মাধ্যমে পাওনা পরিশোধ করতে পারবেন। আবার, ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের সাহায্যে তিনি সাভারের যে কোনো ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করার সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। এতে করে তাকে নগদ অর্থ বহন করার প্রয়োজন হবে না, যা ছিনতাই নামক দুর্ঘটনা ঘটায় সম্ভাবনা দূর করবে। তাছাড়া ব্যাংকের আধুনিক ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবা নিয়েও তিনি এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে পারবেন।
সুতরাং, শায়লা শবনমকে দুর্ঘটনাটি এড়াতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অর্থের নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে।

প্রশ্ন-৩  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব হাসান একজন আমদানিকারক। তিনি তাঁর এলাকায় ‘মেঘলা’ ব্যাংকের সহায়তায় সহজেই ব্যবসায়িক কার্য পরিচালনা করেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ব্যাংকের শাখা রয়েছে। যেখানে প্রচুর লোক কর্মরত। ব্যাংকটি জনাব হাসানের মত ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করে। [স. বো. ’১৫]
ক. বাণিজ্যিক ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস কী? ১
খ. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমদানিকারকদের পক্ষে ব্যাংক কী ইস্যু করে? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. ‘মেঘলা ব্যাংক’ জনাব হাসানকে কোন ধরনের সহায়তা প্রদান করে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ‘মেঘলা ব্যাংক’ এর শাখাগুলোর ভ‚মিকা মূল্যায়ন কর। ৪
 ৩নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. বাণিজ্যিক ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস ঋণের সুদ।
খ. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমদানিকারকদের পক্ষে ব্যাংক প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করে। প্রত্যয়নপত্র বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত হয়। ব্যাংক কর্তৃক বৈদেশিক বাণিজ্যে রপ্তানিকারককে আমদানিকারকের পক্ষ থেকে অগ্রিম অর্থ প্রদানের ব্যবস্থাই হলো প্রত্যয়নপত্র।
গ. ‘মেঘলা ব্যাংক’ জনাব হাসানকে বৈদেশিক বিনিময় সম্পর্কিত সেবা সহায়তা করে।
বাণিজ্যিক ব্যাংক একটি দেশের সার্বিক অর্থনীতি তথা শিল্প, বাণিজ্য, পরিবহন, যোগাযোগ, গৃহনির্মাণ শিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতি তথা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। উদ্দীপকের জনাব হাসান আমদানিকারক হিসেবে ‘মেঘলা ব্যাংক’ এর মাধ্যমে সহজেই বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেন করে থাকে। আমদানিকারক হিসেবে জনাব হাসানের দেশি মুদ্রা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ও রপ্তানিকারকের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে দেশি মুদ্রায় রূপান্তর করা প্রয়োজন। যা মেঘলা ব্যাংক তাদের সহায়তা প্রদান করে থাকে। আবার ‘মেঘলা ব্যাংক’ প্রত্যয়ন পত্র বা খবঃঃবৎ ড়ভ পৎবফরঃ (খঈ) এর মাধ্যমে ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যে রপ্তানিকারককে আমদানিকারকের পক্ষ থেকে অগ্রিম অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা করে। ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে তাদের মনোনীত মেঘলা ব্যাংক দুই পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ব্যবসায় বাণিজ্যে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখে। আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যাদি সম্পাদন ও উপদেশ প্রদান করা মেঘলা ব্যাংকের একটি প্রতিনিধিমূলক কার্য।
ঘ. দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ‘মেঘলা ব্যাংক’ এর শাখাগুলো শিল্প, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন রকম সেবা প্রদান করে। বাণিজ্যক ব্যাংকের শাখাগুলো একটি দেশের সার্বিক অর্থনীতি তথা শিল্প, বাণিজ্য, পরবিহন যোগাযোগ গৃহনির্মাণ শিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতি তথা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। উদ্দীপকের মেঘলা ব্যাংক-এর শাখাগুলো মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে সমগ্র দেশ জুড়ে ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালনা করছে। তাই ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখাগুলো জনাব হাসানের মত বিভিন্ন গ্রাহকদের বৈদেশিক বিনিময় সম্পর্কিত সেবা প্রদান করার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করছে এবং বিশেষায়ন ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হয়েছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঋণদান ও বিনিয়োগও মেঘলা ব্যাংকের শাখাগুলো তাদের গ্রাহকদের সেবা প্রদান করছে। গ্রাহকদের পক্ষ হয়ে তাদের বিল বাট্টাকরণ করে নির্দিষ্ট গ্রাহকদের ব্যাংকিং সুবিধাও এই ব্যাংকের শাখাগুলো প্রদান করে। অর্থাৎ এরূপ ব্যাংকের শাখাগুলোর মাধ্যমে সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তথাপি ব্যাংকের শাখাগুলো অর্থনীতি তথা শিল্প, বাণিজ্য, পরিবহন, যোগাযোগ, গৃহনির্মাণ শিক্ষা প্রভৃতির ব্যাপক অগ্রগাতিতে সাহায্য করে থাকে। অর্থনীতিকে সক্রিয় রাখতে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এরূপ বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাগুলোর গুরুত্ব অত্যধিক।
সুতরাং বলা যায়, মেঘলা ব্যাংকের শাখাগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে।

প্রশ্ন-৪  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রাহেলা একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি ব্যাংকটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জেনে সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। রাহেলা দেখতে পেলেন যে, ব্যাংকটি বিভিন্ন ধরনের সেবা ও জনকল্যাণমূলক কাজ করলেও মুনাফা অর্জনকেই মৌলিক উদ্দেশ্য হিসেবে গণ্য করে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ এখানে গৌণ। অর্থের আদান-প্রদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে রাহেলার ব্যাংকটি সফলতা লাভ করেছেন।
ক. ব্যাংক বলতে আমরা কোন ব্যাংককে বুঝি? ১
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংককে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. রাহেলার ব্যাংকটি যেসব উদ্দেশ্য অর্জনে কাজ করছে সেগুলো বর্ণনা কর। ৩
ঘ. রাহেলার দৃষ্টিতে “মুনাফা অর্জনই বাণিজ্যিক ব্যাংকের মৌলিক উদ্দেশ্য।” বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৪নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ব্যাংক বলতে আমরা বাণিজ্যিক ব্যাংককে বুঝি।
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংক অর্থের লেনদেন ও আদান-প্রাদনে নিয়োজিত থাকে বলে এটিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলা হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগণের নিকট হতে সঞ্চিত অর্থ আমানত হিসাবে গ্রহণ করে, সেই অর্থ ঋণগ্রহীতাদের বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ হিসাবে প্রদান করে।
গ. রাহেলার ব্যাংকটি মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি জনকল্যাণে কাজ করছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক মুনাফা অর্জন, বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি, মূলধন গঠন, জনকল্যাণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহযোগিতা প্রদান, সম্পদের সুষম বণ্টন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ইত্যাদি উদ্দেশ্য অর্জনে কাজ করে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে নিয়োজিত থাকে। উদ্দীপকের রাহেলার ব্যাংকটির মৌলিক উদ্দেশ্যই মুনাফা অর্জন। তার ব্যাংক বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে চেক, হুন্ডি, বিনিময় বিল প্রচলন করে। জনগণের অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চয় হিসেবে গ্রহণ করে বিনিয়োগের জন্য মূলধন গঠনের উদ্দেশ্য রাহেলার ব্যাংকটি কাজ করে। ব্যাংকটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটিয়ে পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। পরোক্ষভাবে এসব কাজের মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি জনকল্যাণ করে থাকে।
ঘ. রাহেলার কর্মরত ব্যাংকটি অর্থের আদান-প্রদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করছে, বিধায় ব্যাংকটির মৌলিক উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন।
বাণিজ্যিক ব্যাংক এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত ও পরিচালিত হয়ে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে। সাধারণত আমরা ব্যাংক বলতে বাণিজ্যিক ব্যাংককেই বুঝে থাকি। উদ্দীপকে রাহেলা যে ব্যাংকে কর্মরত এটি মূলত জনগণের নিকট থেকে আমানত সংগ্রহ করে উচ্চ সুদে ঋণ প্রদান করে। এখানে মুনাফা অর্জনের স্বার্থই জড়িত। ব্যাংকটি ব্যবসায় বাণিজ্যে সহযোগিতা এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার দ্বারা মুনাফা অর্জন করে। তাছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংক কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয় যে বিনা পয়সায় সেবা দিবে। যেখানে মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা থাকে সেখানেই বাণিজ্যিক ব্যাংক অর্থ বিনিয়োগে এগিয়ে যায়। এতে বোঝা যায়, মুনাফা অর্জনই বাণিজ্যিক ব্যাংকের মৌলিক উদ্দেশ্য। তাছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংক অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোগে গঠিত হয়। তাই অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্যোক্তারাও মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে।
সুতরাং, বাণিজ্যিক ব্যাংকের মৌলিক উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে রাহেলার দৃষ্টিভঙ্গিটি সঠিক।
প্রশ্ন -৫ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জহির সাহেব আমদানি-রপ্তানির ব্যবসায় করেন। গত মাসে তিনি নতুন এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ক্রয়ের প্রস্তাব পেলেন। কিন্তু নতুন ক্রেতা বলে জহির সাহেব সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন। এমন সময় ব্যাংক থেকে নিশ্চয়তা পেয়ে তিনি রপ্তানি করতে সম্মত হলেন।
ক. খঈ কে ইস্যু করে? ১
খ. বিল বাট্টাকরণে গ্রাহকের কীভাবে লাভবান হয়? ২
গ. ব্যাংকের কোন ধরনের নিশ্চয়তা পেয়ে জহির সাহেব রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নিলেন? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. জহির সাহেবের সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার কারণ বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৫নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. খঈ বা খবঃঃবৎ ড়ভ ঈৎবফরঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক ইস্যু করে।
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংক গ্রাহকের পক্ষ হয়ে বাট্টার বিনিময়ে গ্রাহককে বিল ভাঙানোর সুযোগ প্রদান করে। এর ফলে গ্রাহকের অর্থে চাহিদা পূরণ হয়, আবার ব্যবসায়িক লেনদেনও দ্রæত হয়। প্রাপ্য বিলের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই গ্রাহক ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে বলে এতে ব্যবসায়িক গতিশীলতাও বৃদ্ধি পায়। এভাবেই বিনিময় বিল বাট্টাকরণে গ্রাহক লাভবান হয়।
গ. ব্যাংকের প্রত্যয়নপত্র বা খবঃঃবৎ ড়ভ ঈৎবফরঃ- এর নিশ্চয়তা পেয়ে জহির সাহেব পণ্য রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রত্যয়নপত্র বা খবঃঃবৎ ড়ভ পৎবফরঃ (খঈ)-এর মাধ্যমে ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যে রপ্তানিকারককে আমদানিকারকের পক্ষ থেকে অগ্রিম অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা করে। প্রত্যয়নপত্র এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে আমদানি ও রপ্তানিকারকের মধ্যে আর্থিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে তাদের মনোনীত ব্যাংক দুই পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখে।
উদ্দীপকে জহির সাহেব আমদানি-রপ্তানির ব্যবসায় করেন। নতুন এক আমদানিকারক পণ্য ক্রয়ের অর্ডার দিলে তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন। তখন ব্যাংক খঈ-এর মাধ্যমে তাকে এই মর্মে নিশ্চয়তা দেয় যে নতুন ক্রেতা যদি জহির সাহেবকে অর্থ প্রদান না করে তবে ব্যাংক জহির সাহেবকে অর্থ প্রদান করবে। এভাবে খঈ-ইস্যু করার মাধ্যমে ব্যাংক জহির সাহেব এবং আমদানিকারকের মধ্যে লেনদেন ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করতে সহায়তা করে।
সুতরাং, জহির সাহেব ব্যাংকের খঈ-এর মাধ্যমে তার পণ্যের মূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পেয়ে পণ্য রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিলেন।
ঘ. জহির সাহেবের সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার কারণ বিক্রয়ের অর্থ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা।
আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীরা একে অপরের সাথে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করে। ব্যাংক নানাভাবে ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে। তার মধ্যে একটি হলো প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যে রপ্তানিকারককে আমদানিকারকের পক্ষ থেকে অগ্রিম পণ্য মূল্য পাবার নিশ্চয়তা প্রদান করে। উদ্দীপকে জহির সাহেব আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় করেন। তিনি নতুন এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ক্রয়ের প্রস্তাব পেয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকেন। কারণ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান নতুন হওয়ায় পণ্য বিক্রয়ের অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নেই। এছাড়া ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান অন্য দেশের হওয়ায় জহির রহমানের পক্ষে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমেও অর্থ আদায় সম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠানটির সাথে পূর্বের কোনো ধরনের লেনদেন না থাকায় তাদের অর্থ পরিশোধ সামর্থ্য এবং কোম্পানি হিসেবে পর্যাপ্ত সুনাম রয়েছে কিনা সে সম্পর্কেও জহির সাহেবের অভিজ্ঞতা নেই।
সুতরাং বলা যায়, জহির সাহেবের সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার মূল কারণ বিক্রিত পণ্যের অর্থ প্রাপ্তির অনিশ্চিয়তা।
প্রশ্ন -৬ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব আমির একজন ব্যাংকার। তিনি তার ব্যাংক থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ দিতে চান। বেশি পরিমাণে ঋণ দিতে পারলে তার ব্যাংকের মুনাফা বেশি হতো। কিন্তু ইচ্ছা করলেই অনুমতি ব্যতীত বেশি ঋণ দিতে পারেন না। অবশ্য এতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা হয়।
ক. ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড কোন ধরনের ব্যাংক? ১
খ. ট্রাভেলারস চেক বলতে কী বোঝ? ২
গ. জনাব আমিরের ব্যাংকটিকে অধিক ঋণ প্রদানে কার অনুমতি নিতে হবে? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. জনাব আমিরের ব্যাংকটি কম ঋণদানের মাধ্যমে সরকারকে কীভাবে সহায়তা প্রদান করে? বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৬নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক।
খ. ব্যাংক ভ্রমণকারীকে বিদেশে ভ্রমণে সুবিধা প্রদান করার জন্য ট্রাভেলারস চেক ইস্যু করে। এ চেকের মাধ্যমে গ্রাহক বিদেশে নির্দেশিত এক বা একাদিক শাখা হতে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। ভ্রমণকারী নিজেই শুধুমাত্র অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু এ দলিলের মাধ্যমে গ্রাহক কোনো ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পাদন করতে পারে না।
গ. জনাব আমিরের ব্যাংকটিকে অধিক ঋণ প্রদানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কাজ আমানত গ্রহণ ও ঋণদান। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংক যদি অধিক পরিমাণে ঋণ সরবরাহ করে তাহলে বাজারে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ব্যাংক হারনীতি, খোলাবাজার নীতি, জমার হার পরিবর্তন, নৈতিক পরোচনা ইত্যাদি মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে। উদ্দীপকে জনাব আমিরের ব্যাংকটি একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। তাই ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে তালিকাভুক্ত হয়ে যাবতীয় ব্যাংকিং কাজ সম্পাদন করে। অর্থাৎ তালিকাভ‚ক্ত হওয়ায় ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মনীতি আদেশ নির্দেশ মানতে বাধ্য। ঋণদানের ক্ষেত্রে জনাব আমিরের ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। তাই অতিরিক্ত ঋণদানের ক্ষেত্রে তার ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। অন্যথায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ব্যাংকের প্রতি যে কোনো শাস্তিমূলক প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
সুতরাং, তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক হওয়ায় জনাব আমিরের ব্যাংককে অধিক ঋণ প্রদানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে।
ঘ. জনাব আমিরের ব্যাংকটি কম ঋণদানের মাধ্যমে সরকারকে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সহায়তা প্রদান করে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। এর পাশাপাশি বানিজ্যিক ব্যাংকসমূহ দেশ ও সরকারের কল্যাণে নানা রকম কাজ করে। উদ্দীপকে জনাব আমিরের ব্যাংকটি একটি তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। এ ব্যাংকটি তাদের মোট আমানতের একটি নির্দিষ্ট অর্থ জমা রেখে বাকিটা ঋণ দেয়। ইচ্ছা থাকলেও তার ব্যাংকটি অধিক পরিমাণে ঋণ দিতে পারে না কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা রকম বিধি নিষেধ আছে। কারণ বাজারে অর্থের সরবরাহ বেশি হলে মুদ্রাস্ফীতি ব্যয় বেড়ে যায় ফলে পণ্যের দামও বেড়ে যায়। আবার সরকারের বড় বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অধিক অর্থের প্রয়োজন হয়। যা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে মেটানো সম্ভব নয়। ফলে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণের সহায়তা নিয়ে থাকে। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিদের্শনা মানার ফলে ব্যাংকটি ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয় এবং সরকারও উপকৃত হয়।
সুতরাং, জনাব আমিরের ব্যাংকটি কম ঋণদানের মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি রোধ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারকে সহায়তা প্রদান করে।
প্রশ্ন-৭  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
পূবালী ব্যাংক প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়ে আসছে। ব্যাংকটি অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো নিত্য নৈমিত্তিক কার্যাবলি সম্পাদন করে। ব্যাংক জনগণের নিকট থেকে আমানত সংগ্রহ করে বিভিন্ন খাতে ঋণ হিসেবে বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে। পূবালী ব্যাংক ঋণ প্রদানের সময় আধুনিক কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ঋণ আমানত সৃষ্টি করে। ব্যাংকের প্রধান কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হওয়ায় পূবালী ব্যাংক একটি সফল ব্যাংক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে।
ক. বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংক কোনটি? ১
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংককে মুনাফাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন? ২
গ. পূবালী ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কীভাবে তহবিল সংগ্রহ করে তা বর্ণনা কর। ৩
ঘ. পূবালী ব্যাংকের ঋণ আমানত সৃষ্টির কৌশলটি বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৭নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংক।
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ব্যাংক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে অর্থ ও অর্থের মূল্যে পরিমাপযোগ্য বা সেবা লেনদেন প্রদান করে। যেহেতু বাণিজ্যিক ব্যাংকের সকল কার্যক্রম মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয় তাই মুনাফাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বলা হয়।
গ. পূবালী ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থ উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে প্রাথমিক ও প্রধান উৎস হচ্ছে পরিশোধিত মূলধন। যা মালিকগণের মূলধন ও শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও প্রতিবছর মুনাফার একটি অংশ শেয়ারহোল্ডার বা মালিকগণের মধ্যে বণ্টন না করে ভবিষ্যতে মূলধন হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান বাহ্যিক উৎস হচ্ছে আমানত যা জনগণের সঞ্চিত অর্থ বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। পূবালী ব্যাংকের প্রাথমিক ও প্রধান উৎস হচ্ছে পরিশোধিত মূলধন। এই ব্যাংকের মালিকগণ নিজেরা মূলধন সরবরাহ করে। তারা মুনাফার একটি অংশ মালিকদের মধ্যে বণ্টন না করে ভবিষ্যতে মূলধন হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হচ্ছে আমানত। জনগণের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সঞ্চয়গুলো বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে একত্রিত করে মূলধন গঠন করে এই ব্যাংক। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করেও তহবিল গঠন করে থাকে।
ঘ. ঋণ নগদ প্রদান না করে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রদান করে পূবালী ব্যাংক ঋণ আমানত সৃষ্টি করে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণগ্রহীতাকে ঋণ গ্রহণের সময় ঐ ব্যাংকে একটি হিসাব খুলতে হয়। ঋণের অর্থ সেই হিসাবে জমা বা ক্রেডিট করা হয়। এরপর ঋণগ্রহীতা যত পরিমাণ টাকা সেই হিসাব থেকে উত্তোলন করে, সেটা ঐ হিসাবে ডেবিট করা হয়। এভাবে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে আমানতের সৃষ্টি করে। পূবালী ব্যাংক ঋণ প্রদানের সময় ঋণগ্রহীতাকে একটি ব্যাংক হিসাব খুলতে বলে। ঋণ গ্রহীতাকে কখনো নগদ অর্থ প্রদান করা হয় না। পূবালী ব্যাংক ঋণ গ্রহীতার ব্যাংক হিসেবে ঋণের টাকা জমা করে দেন। এক্ষেত্রে ঋণের টাকা ব্যাংক হিসাবে ক্রেডিট করা হয়। ঋণ গ্রহীতাকে ঋণের টাকা উত্তোলনের জন্য চেক বই প্রদান করা হয়। এরপর ঋণ গ্রহীতা যত পরিমাণ টাকা সেই হিসাব থেকে উত্তোলন করে সেটা ঐ হিসাবে ডেবিট করা হয়। এভাবে ব্যাংকটি ঋণের মাধ্যমে আমানত সৃষ্টি করে। ন্যূনতম জমার অর্থ ব্যাংক এক্ষেত্রে পুনরায় ঋণ হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারে।
আধুনিক ও অভিনব পন্থায় পূবালী ব্যাংক প্রাপ্ত আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ তারল্য সঞ্চিতি হিসেবে সংরক্ষণ করে বাকিটা ঋণ দেয়। ব্যাংকটি ঋণ সরাসরি না দিয়ে ঋণগ্রহীতার আমানত হিসেবে স্থানান্তরপূর্বক পুনরায় উক্ত আমানত থেকে নতুন ঋণের সৃষ্টি করে। সুতরাং বলা যায়, পূবালী ব্যাংক মধ্যস্থ ব্যবসায়ী হিসেবে আমানত গ্রহণ ও ঋণদানের ক্ষেত্রে তার কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে।
প্রশ্ন-৮  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বাংলাদেশ ব্যাংক হতে অনুমোদন নিয়ে এবং তালিকাভুক্ত হয়ে ইউনিক ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করেছিল। সারাদেশে বর্তমানে ৪২টি শাখা রয়েছে। ব্যাংকের উদ্বোধনকালে ব্যাংকের চেয়ারম্যান শাকিব আনযুম বলেন, আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহকদের অর্থের নিরাপত্তা প্রদান করার মধ্য দিয়ে মুনাফা অর্জন করব।
ক. আমানত গ্রহণ কী? ১
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংক কীভাবে মূলধন গঠন করে? ২
গ. ইউনিক ব্যাংক যে ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করেছে তা বর্ণনা কর। ৩
ঘ. ইউনিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শাকিব আনযুমের উক্তিটির মধ্য দিয়ে ইউনিক ব্যাংকের চ‚ড়ান্ত উদ্দেশ্যটি বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৮নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. আমানত গ্রহণ হলো জনগণ বা গ্রাহকদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়গুলোকে বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে সংগ্রহ করা।
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূলধন গঠনের প্রাথমিক ও প্রধান উৎস হচ্ছে পরিশোধিত মূলধন। ব্যাংকটি অংশীদারি কারবার প্রতিষ্ঠান হলে মালিকগণ নিজেরা মূলধন সরবরাহ করে আর যৌথ মূলধনী হলে শেয়ার ইস্যু করে মূলধন গঠন করে। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগণের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সঞ্চয়গুলো বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে একত্রিত করে মূলধন গঠন করে।
গ. ইউনিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক হতে অনুমোদন নিয়ে এবং তালিকাভুক্ত হয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করেছে।
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে জনগণের নিকট হতে আমানত সংগ্রহ করে এবং পরবর্তীতে তা ঋণদান করে যে ব্যাংক তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে। বাণিজ্যিক ব্যাংক হলো অর্থ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অন্যতম পথিকৃৎ। উদ্দীপকের ইউনিক ব্যাংকটি সারাদেশে ৪২টি শাখার মাধ্যমে জনগণের আমানত সংগ্রহ করছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমানতকৃত অর্থ বিনিয়োগও করছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে এ ব্যাংকটি পে-অর্ডার, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ইত্যাদির মাধ্যমে বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টিতেও ভ‚মিকা রাখছে। তাছাড়া, বিল বাট্টাকরণ, অবলেখন, সেবা প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রেও বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে ইউনিক ব্যাংক তাদের কাজ পরিচালনা করছে।
সুতরাং, ইউনিক ব্যাংকটি বাংলাদেশের ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ঘ. ইউনিক ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য যে কাজই করুক না কেন ব্যাংকটির চ‚ড়ান্ত উদ্দেশ্য মূলত মুনাফা অর্জন।
বাণিজ্যিক ব্যাংক গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন মেয়াদে আমানত গ্রহণ করে লাভজনক খাতে বিনিয়োগ ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহকদের অর্থের নিরাপত্তা প্রদান করার মধ্য দিয়ে মুনাফা অর্জন করে। মূলত মুনাফা অর্জনের জন্যই বাণিজ্যিক ব্যাংক তার যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। উদ্দীপকে ইউনিক ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বলেছেন তারা গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহকদের অর্থের নিরাপত্তা প্রদান করার মধ্য দিয়ে মুনাফা অর্জন করবে। অর্থাৎ ইউনিক ব্যাংকের চ‚ড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন। মূলত এ উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্য নিয়েই ইউনিক ব্যাংক তার ৪২টি শাখার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঋণ হিসেবে দিচ্ছে। আর আমানত গ্রহণ এবং ঋণদানের ক্ষেত্রে সুদের হারের পার্থক্যই হলো ইউনিক ব্যাংকের মুনাফা। এছাড়াও গ্রাহকদের নানান ধরনের ব্যাংকিং সেবা যেমন : দলিলপত্র সংরক্ষণ, বন্ড, সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়, অর্থ স্থানান্তর প্রভৃতির দ্বারাও ইউনিক ব্যাংক মুনাফা অর্জন করছে।
সুতরাং, আমানতকারীগণকে প্রদত্ত সুদ ও ঋণগ্রহীতার নিকট হতে প্রাপ্ত সুদের পার্থক্যের মাধ্যমে ইউনিক ব্যাংকটি মুনাফা অর্জন করে থাকে এবং এটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন-৯  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আঞ্জুম ব্যাংকের শাখা সমগ্র দেশজুড়ে বিস্তৃত। কিন্তু এর মধ্যে দিলকুশা শাখাটি দক্ষতার সাথে শুধুমাত্র বৈদেশিক বিনিময় সম্পর্কিত সেবা প্রদান করে আসছে। মুনতাসির এ ব্যাংকের একজন গ্রাহক। তিনি চিংড়ি রপ্তানি করেন। তাই তার ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় সেবা তিনি আঞ্জুম ব্যাংক থেকেই গ্রহণ করেন। [মতিঝিল মডেল, স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা]
ক. ‘জনকল্যাণ’ বাণিজ্যিক ব্যাংকের কোন ধরনের উদ্দেশ্য? ১
খ. সঞ্চয় প্রবণতা বলতে কী বোঝ? ২
গ. আঞ্জুম ব্যাংক কীভাবে মুনতাসিরকে তার ব্যবসায়ে সহায়তা প্রদান করবে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. আঞ্জুম ব্যাংকের ব্যবসায়ের সাথে কোন নীতির সামঞ্জস্যতা প্রকাশ পেয়েছে? বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৯নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ‘জনকল্যাণ’ বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরোক্ষ উদ্দেশ্য।
খ. সঞ্চয় প্রবণতা হলো ব্যয় কমিয়ে নগদ অর্থ ভবিষ্যতের জন্যে জমা করা। জনগণ দৈনন্দিন কাজকর্মে তাদের অর্জিত অর্থ ব্যয় করে। তাদের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা সৃষ্টি করার মাধ্যমে ব্যয় কমিয়ে ভবিষ্যতের জন্য জমা করানো বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের একটি উদ্দেশ্য।
গ. আঞ্জুম ব্যাংকের দিলকুশা শাখার মাধ্যমে মুনতাসিরকে বৈদেশিক বিনিময় সম্পর্কিত সেবা প্রদান করে তার ব্যবসায়ে সহায়তা প্রদান করবে।
আমদানিকারকদের দেশি মুদ্রাকে বৈদেশিক মুদ্রায় ও রপ্তানিকারকদের বৈদেশিক মুদ্রাকে দেশি মুদ্রায় রূপান্তর করতে হয়। এরূপ মুদ্রা রূপান্তর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অন্যতম কাজ। আবার প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যে রপ্তানিকারককে আমদানিকারকের পক্ষ থেকে অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেয়। উদ্দীপকে মুনতাসির একজন রপ্তানিকারক। তিনি তার রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য আঞ্জুম ব্যাংক হতে সেবা গ্রহণ করতে পারে। আঞ্জুম ব্যাংক মুনতাসিরের চিংড়ি রপ্তানির জন্য তার আমদানিকারকের সাথে বা আমদানিকারকের ব্যাংকের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করতে পারে এবং মুনতাসিরের পক্ষ থেকে আঞ্জুম ব্যাংক এবং আমদানিকারকের পক্ষ থেকে তার মনোনীত ব্যাংক একত্রে মিলে সংশ্লিষ্ট দুইপক্ষের অর্থাৎ মুনতাসিরের ও আমদানিকারকের স্বার্থরক্ষার মাধ্যমে বৈদেশিক ব্যবসায়-বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে।
ঘ. আঞ্জুম ব্যাংকের ব্যবসায়ের সাথে বিশেষায়নের নীতির সামঞ্জস্যতা প্রকাশ পেয়েছে।
যুগের সাথে সাথে বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন সাধন হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকে আধুনিকায়ন ও বিশেষায়ন দ্রæত স¤প্রসারিত হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্য, ঋণদান, নোট ইস্যু ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাংক বিশেষায়নের নীতি অনুসরণ করে থাকে। ফলে কার্যের দক্ষতা ও মান বৃদ্ধি পায়। উদ্দীপকে আঞ্জুম ব্যাংকটি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে সমগ্র দেশজুড়ে ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালনা করছে। ব্যাংকটি এর দিলকুশা শাখার মধ্যদিয়ে গ্রাহকদের বৈদেশিক বিনিময় সম্পর্কিত সেবা প্রদান করার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করছে। আঞ্জুম ব্যাংক তার গ্রাহকদের বৈদেশিক বিনিময় সম্পর্কিত সেবা প্রদান করার মাধ্যমে বিশেষায়ন তরান্বিত করতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে ব্যাংকটির দিলকুশা শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দক্ষতার সাথে এ সেবা প্রদান করে গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
সুতরাং, বিশেষায়নের নীতিকে অনুসরণ করে আঞ্জুম ব্যাংক তার গ্রাহকদের ব্যতিক্রমধর্মী সেবা প্রদান করে মুনাফা অর্জন করছে।
প্রশ্ন-১০  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
নগদ টাকা দিয়ে আমরা কেনাবেচা করি। চেক দিয়ে কেনাবেচা হয়। ক্রেডিট কার্ড নির্দিষ্ট দোকানে কেনাবেচায় ব্যবহৃত হয়। এভাবে নতুন নতুন উপায়ে লেনদেন চলছে। মি. আলম অনেক টাকা খুলনায় নিয়ে যাবেন। ব্যাংক ড্রাফট করে নিয়েছেন। এরপরে আবার অনেক টাকা নিতে হবে। এবার আর ব্যাংক ড্রাফট লাগেনি। চেক বই নিয়ে গিয়েই টাকা উঠিয়েছে। তিনি এখন অঞগ কার্ডও ব্যবহার করেন। তাই চেকেরও আর প্রয়োজন হচ্ছে না। [বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়]
ক. শাখা ব্যাংক কী? ১
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রথম ও প্রধান কাজ কী? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. মি. আলমকে অর্থ স্থানান্তরে সহায়তা করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের কোন ধরনের কাজ? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. মি. আলমের পরবর্তী সময়ে টাকা পেতে যে ব্যাংকিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে তার কার্যকারিতা বিশ্লেষণ কর। ৪
 ১০নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. একটি প্রধান অফিসের অধীনে দেশে-বিদেশে শাখা স্থাপন করে যে ব্যাংক ব্যাংকিং কার্যাবলি সম্পাদন করে ওঠে তাকে শাখা ব্যাংক বলে।
খ. বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো আমানত গ্রহণ করা। বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমানত চলতি, সঞ্চয়ী, স্থায়ী হিসাবের মাধ্যমে সংগ্রহ করে। এরূপ আমানত পরবর্তীতে বিভিন্ন লাভজনক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে। সঞ্চয়ী ও স্থায়ী হিসাবের আমানতকারীদের জমার অর্থের ওপর ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করে থাকে। চলতি হিসাবে সুদ প্রদান করা না হলেও সেখানে কিছু সুবিধা দেওয়া হয়।
গ. মি. আলমকে অর্থ স্থানান্তরে সহায়তা করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি বিশেষ সেবামূলক কাজ।
এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ প্রেরণ করাকে অর্থ স্থানান্তর বলা হয়। ব্যাংক তার গ্রাহকদের পক্ষে ব্যাংকের এক শাখা থেকে অন্য শাখায় কিংবা অন্য ব্যাংকের যে কোনো শাখায় খুব দ্রæততার সাথে টাকা পাঠিয়ে থাকে। এমনকি ব্যাংক তার বিনিময় মাধ্যমের সাহায্যে দেশের বাহিরেও অর্থ স্থানান্তর করে থাকে। উদ্দীপকে মি. আলমের মতো গ্রাহকরা নিরাপত্তার জন্যই বিভিন্ন ব্যাংকের সহায়তা নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যাংকসমূহ মূলত ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, চেক, ভ্রমণকারীর চেক, অঞগ কার্ড ইত্যাদি দলিল ইস্যু করে এবং অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা দিয়ে এরূপ কার্য সম্পাদন করে থাকে। এসব সেবামূলক কাজের জন্য গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাংকের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়, যা ব্যাংকের জন্য অত্যন্ত লাভজনক।
ঘ. মি. আলমের পরবর্তী সময়ে টাকা পেতে যে ব্যাংকিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে তা হলো ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং।
কম্পিউটার এবং ইলেকট্রনিক দ্রব্যাদির সাহায্যে যে ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়া হয় তাকে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং বলা হয়। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ইলেকট্রনিক পণ্য ও সেবার মাধ্যমে এ ব্যবস্থায় ২৪ ঘণ্টা ব্যাংকিং সেবা সরবরাহ করা হয়। উদ্দীপকে মি. আলম প্রথমে ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে খুলনায় টাকা নিয়ে গেলেও পরবর্তী সময়ে দেখা যায় যে টাকা উত্তোলনের জন্য তিনি অঞগ কার্ড ব্যবহার করেছেন, যা ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং পদ্ধতির আওতাভুক্ত। দ্রæত এবং কম সময় ব্যয় করার লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এর প্রবর্তন করা হয়েছে। মি. আলমের মতো তথা সব ধরনের ব্যস্ত মানুষের জীবনের সাথে সমন্বয় করে চালু করা এই ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাটি মানুষের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম।
সুতরাং, মি. আলমের মত সকল গ্রাহক ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করেছে বিধায় গ্রাহক সন্তুষ্টি বিধানের মধ্য দিয়ে ব্যাংকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত হচ্ছে।
প্রশ্ন-১১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রেইনবো ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত একটি ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রবৃদ্ধির হার সন্তোষজনক। ব্যাংকটি মক্কেলদের বিশ্বস্ততা খুব অল্প দিনেই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। রেইনবো ব্যাংক শাখা স¤প্রসারণের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদান করে মক্কেলদের আমানতের নিরাপত্তা ও আস্থা অর্জনের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে।
[নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়]
ক. বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে কে? ১
খ. সুনামের নীতি বলতে কী বোঝায়? ২
গ. রেইনবো ব্যাংক কী কী উদ্দেশ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. মক্কেলদের আমানতের নিরাপত্তার মধ্যে রেইনবো ব্যাংক কোন নীতিটি পালন করছে? বিশ্লেষণ কর। ৪
 ১১নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি করে বাণিজ্যিক ব্যাংক।
খ. উন্নত ব্যবস্থাপনা, দক্ষ পরিচালনা, গোপনীয়তা রক্ষা এবং সেবামূলক কাজের মাধ্যমে বাজারে সুনাম সৃষ্টি করার জন্য যে নীতি অনুসরণ করা হয় তাকে সুনামের নীতি বলা হয়। সুনাম যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্যতম সম্পদ। ব্যাংক ব্যবসায়ের জন্য তা আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বাণিজ্যিক ব্যাংক সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, দক্ষ সেবা ও আমানতের ওপর সর্বোচ্চ সুদ বা মুনাফা প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে সুনাম অর্জনের চেষ্টা চালায়।
গ. রেইনবো ব্যাংক মক্কেলদের আমানতের নিরাপত্তা ও আস্থা অর্জনের উদ্দেশ্যের মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের জন্য সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
নানান ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যাংক প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। একটি ব্যাংকের যত উদ্দেশ্য থাকুক না কেন মুনাফা অর্জনই তাদের মৌলিক উদ্দেশ্য। গ্রাহকের অর্থ, মূল্যবান সম্পত্তি ইত্যাদির নিরাপত্তা প্রদান করা ও ব্যাংকের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। ব্যাংক গ্রাহকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে তাদের ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। উদ্দীপকে রেইনবো ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন। ব্যাংকটি যে কাজই করুক না কেন মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে তা সম্পাদন করে। আমানত সংগ্রহ এবং ঋণদান ও ব্যাংকটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। গ্রাহকের আর্থিক নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যেই ব্যাংকটি জনগণের আস্থা অর্জনে সবসময় কাজ করে। গ্রাহকের সাথে লেনদেন সুবিধাজনক উপায়ে করতে ব্যাংকটি বিভিন্ন ধরনের বিনিময় মাধ্যম যেমন : ব্যাংক ড্রাফট, অঞগ বুথ প্রভৃতি সৃষ্টি করছে।
সুতরাং, রেইনবো ব্যাংকটি মূলত গ্রাহক সন্তুষ্টির মাধ্যমেই তার উদ্দেশ্য অর্জনে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
ঘ. মক্কেলদের আমানতের নিরাপত্তার মাধ্যমে রেইনবো ব্যাংক নিরাপত্তার নীতিটি পালন করছে।
ব্যাংক ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি গ্রাহকের অর্থ ও ঋণ হিসাবে প্রদত্ত অর্থের নিরাপত্তা বিধান। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাংককে ঋণ প্রদানের সময় ঋণগ্রহীতার আর্থিক সচ্ছলতা ও সততা বিচার করে এবং পর্যাপ্ত জামানত গ্রহণ করে। উদ্দীপকের রেইনবো ব্যাংক মক্কেলদের অর্থের যথাযথ নিরাপত্তা প্রদান করছে। নিরাপত্তা নীতির আওতায় ব্যাংকটি ঋণদানের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার আর্থিক সচ্ছলতা এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে পর্যাপ্ত জামানত সংগ্রহ করছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ গ্রাহকদের চাহিবামাত্রই ফেরত দানে সক্ষম হচ্ছে।
তাছাড়া ব্যাংকটি গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে নিরাপত্তা নীতিটির যথাযথ পালনের মাধ্যমেই। এক্ষেত্রে আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে জনগণ রেইনবো ব্যাংককে বিবেচনা করেছে। কারণ ব্যাংকটি বিভিন্ন রকমের দলিলের প্রচলন করে বিনিময়ের নিরাপদ ও সহজ মাধ্যম সৃষ্টি করে চলেছে।
সুতরাং, রেইবো ব্যাংক মক্কেলদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তার সকল কার্যক্রমে নিরাপত্তার নীতি মেনে চলছে।

 জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 
প্রশ্ন \ ১ \ যুগের সাথে আধুনিকায়ন ঘটেছে কোনটির?
উত্তর : যুগের সাথে আধুনিকায়ন ঘটেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের।
প্রশ্ন \ ২ \ ব্যাংক বলতে আমরা কাকে বুঝি?
উত্তর : ব্যাংক বলতে আমরা বাণিজ্যিক ব্যাংককেই বুঝি।
প্রশ্ন \ ৩ \ বাণিজ্যিক ব্যাংক কেন গঠিত হয়?
উত্তর : বাণিজ্যিক ব্যাংক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়।
প্রশ্ন \ ৪ \ বাণিজ্যিক ব্যাংক কিসের প্রসার ঘটিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে?
উত্তর : বাণিজ্যিক ব্যাংক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন \ ৫ \ ব্যাংক কয় ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে?
উত্তর : ব্যাংক দুই ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে।
প্রশ্ন \ ৬ \ বাণিজ্যিক ব্যাংক কী একত্রিত মূলধন গঠন করে?
উত্তর : জনগণের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সঞ্চয়গুলো বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে একত্রিত করে মূলধন গঠন করে।
প্রশ্ন \ ৭ \ কোন ব্যাংক পরোক্ষভাবে মুদ্রা প্রচলন করে?
উত্তর : বাণিজ্যিক ব্যাংক পরোক্ষভাবে মুদ্রা প্রচলন করে।
প্রশ্ন \ ৮ \ প্রত্যয়নপত্র কী?
উত্তর : প্রত্যয়নপত্র হলো ব্যাংক কর্তৃক বৈদেশিক বাণিজ্যে রপ্তানিকারককে আমদানিকারকের পক্ষ থেকে অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদান।
প্রশ্ন \ ৯ \ ব্যাংক কীভাবে জনগণের অর্থের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে?
উত্তর : ব্যাংক জনগণের অর্থ জমা রাখার মাধ্যমে অর্থের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে।
প্রশ্ন \ ১০ \ মুদ্রা বাজারের নিয়ন্ত্রক কোন ব্যাংক?
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা বাজারের নিয়ন্ত্রক।
প্রশ্ন \ ১১ \ ব্যাংকের তহবিল সংগ্রহের প্রাথমিক উৎস কোনটি?
উত্তর : ব্যাংকের তহবিল সংগ্রহের প্রাথমিক উৎস হচ্ছে পরিশোধিত মূলধন।
প্রশ্ন \ ১২ \ সংরক্ষিত তহবিল কী?
উত্তর : কোম্পানির মুনাফার যে অংশ শেয়ার হোল্ডার বা মালিকগণের মধ্যে বণ্টন না করে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখা হয় তাকে সংরক্ষিত তহবিল বলে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ ই-ব্যাংকিং কী?
উত্তর : ইলেকট্রনিক যন্ত্রের সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্রæততার সাথে নির্ভুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার নামই ই-ব্যাংকিং।
প্রশ্ন \ ১৪ \ ভবিষ্যতে মূলধন হিসেবে ব্যবহৃত হয় কোনটি?
উত্তর : ভবিষ্যতে মূলধন হিসেবে ব্যবহৃত হয় সংরক্ষিত তহবিল।
প্রশ্ন \ ১৫ \ অংশীদারি ব্যাংক কী?
উত্তর : অংশীদারি আইনের ভিত্তিতে যে ব্যাংক গঠিত ও পরিচালিত হয় তাকে অংশীদারি ব্যাংক বলে।
প্রশ্ন \ ১৬ \ লকার ভাড়ার বিপরীতে ব্যাংক কী আদায় করে?
উত্তর : লকার ভাড়ার বিপরীতে ব্যাংক সার্ভিস চার্জ আদায় করে।
প্রশ্ন \ ১৭ \ অর্থের লেনদেন ও আদান-প্রদানের সাথে কে জড়িত?
উত্তর : অর্থের লেনদেন ও আদান-প্রদানের সাথে বাণিজ্যিক ব্যাংক জড়িত।
প্রশ্ন \ ১৮ \ প্রত্যয়নপত্র কোন বাণিজ্যে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর : প্রত্যয়নপত্র বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন \ ১৯ \ বাণিজ্যিক ব্যাংকের তহবিলের উৎস কয় প্রকার?
উত্তর : বাণিজ্যিক ব্যাংকের তহবিলের উৎস দুই প্রকার।
প্রশ্ন \ ২০ \ ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস কোনটি?
উত্তর : ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস হলো ঋণের সুদ।
প্রশ্ন \ ২১ \ আমানত গ্রহণ ব্যাংকের কোন ধরনের কার্যাবলি?
উত্তর : আমানত গ্রহণ ব্যাংকের প্রধান কার্যাবলি।
প্রশ্ন \ ২২ \ চেক কিসের মাধ্যম?
উত্তর : চেক বিনিময়ের মাধ্যম।
প্রশ্ন \ ২৩ \ ব্যাংক হিসাব কত প্রকার?
উত্তর : ব্যাংক হিসাব তিন প্রকার।
প্রশ্ন \ ২৪ \ বেশি সুদ প্রদান করা হয় কোন হিসাবে?
উত্তর : বেশি সুদ প্রদান করা হয় স্থায়ী হিসাবে।
প্রশ্ন \ ২৫ \ ব্যাংক কাকে সুদ প্রদান করে?
উত্তর : ব্যাংক আমানতকারীকে সুদ প্রদান করে।
প্রশ্ন \ ২৬ \ ‘অছি’ হিসেবে কাজ করে কে?
উত্তর : ‘অছি’ হিসেবে কাজ করে বাণিজ্যিক ব্যাংক।

 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 
প্রশ্ন \ ১ \ বিনিময়ের মাধ্যম বলতে কী বোঝ?
উত্তর : পণ্য দ্রব্য বা সেবা কর্মের বিনিময় মূল্য হিসেবে যেগুলো ব্যবহৃত হয় তাকে বিনিময়ের মাধ্যম বলা হয়। আর্থিক লেনদেন ও দেনা-পাওনা নিষ্পত্তিতে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে চেক, হুন্ডি, বিনিময় বিল, প্রত্যয়নপত্র, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদির ব্যবহার করে থাকে।
প্রশ্ন \ ২ \ বাণিজ্যিক ব্যাংক কীভাবে ঋণ আমানত সৃষ্টি করে?
উত্তর : বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের সময় ঋণগ্রহীতাকে ব্যাংকের সাথে একটি হিসাব খুলতে হয়। ঋণের অর্থ সেই হিসাবে জমা বা ক্রেডিট করা হয়। এরপর ঋণগ্রহীতা যত পরিমাণ টাকা সেই হিসাব থেকে উত্তোলন করে, সেটা ওই হিসাবে ডেবিট করা হয়। এভাবে ব্যাংক ঋণ আমানত সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন \ ৩ \ সংরক্ষিত তহবিল বলতে কী বোঝ?
উত্তর : বাণিজ্যিক ব্যাংক অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকÑ এই দুই ধরনের উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে। সংরক্ষিত তহবিল হলো এক প্রকার অভ্যন্তরীণ উৎস। যে বছর অধিক মুনাফা হয় সে বছর মুনাফার একটি অংশ শেয়ারহোল্ডার বা মালিকগণের মধ্যে বণ্টন না করে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখা হয় তাকে সংরক্ষিত তহবিল বলে। এই অর্থ ভবিষ্যতে মূলধন হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন \ ৪ \ ‘বাণিজ্যিক ব্যাংক মক্কেলদের পক্ষে বিভিন্ন প্রকার প্রতিনিধিমূলক লেনদেন করে।’ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বাণিজ্যিক ব্যাংক মক্কেলের পক্ষে বিভিন্ন প্রকার প্রতিনিধিমূলক লেনদেন করে থাকে। যেমন : চেক বা বিলের অর্থ আদায় বা পরিশোধ অর্থাৎ গ্রাহকের পক্ষে দেনা পরিশোধ ও পাওনা আদায়ের মাধ্যমে প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। এসব কাজের জন্য ব্যাংক কমিশন আদায় করে, যা তাদের আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে।
প্রশ্ন \ ৫ \ কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা প্রচলনের একচ্ছত্র অধিকার ভোগ করে কেন?
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ বাজার ও ব্যাংক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকার ও অন্যান্য ব্যাংকের বাংকার হিসেবে কাজ করে। এ ব্যাংক ঋণদান ও ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দেশের মুদ্রাবাজার ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের আর্থিক অবস্থার ভারসাম্য রেখে নোট ও মুদ্রা প্রচলন করে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা প্রচলনের একচ্ছত্র অধিকার ভোগ করে।
প্রশ্ন \ ৬ \ মুদ্রাবাজারের অভিভাবক বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : মুদ্রাবাজার বলতে মুদ্রা এবং মুদ্রা ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত সংস্থার সমষ্টিকে বোঝায়। একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুদ্রাবাজারের অভিভাবক বলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাবাজার গঠন, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়া মুদ্রাবাজারের প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং পরামর্শের মাধ্যমে মুদ্রামান সংরক্ষণ করার কাজটিও মুদ্রাবাজারের অভিভাবক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক করে থাকে।
প্রশ্ন \ ৭ \ ঋণ আমানত সম্পর্কে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ঋণ থেকে যে আমানত সৃষ্টি হয় তাকে ঋণ আমানত বলা হয়। ব্যাংক জনগণকে ঋণ প্রদান করে তা ঋণ গ্রাহকের হিসাবে আমানত হিসেবে জমা করে।
প্রশ্ন \ ৮ \ মূলধন গঠন ব্যাংকের কোন ধরনের কার্যাবলি? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মূলধন গঠন ব্যাংকের প্রধান কার্যাবলি। বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগণের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সঞ্চয়গুলো বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে একত্রিত করে মূলধন গঠন করে থাকে।
প্রশ্ন \ ৯ \ অর্থনৈতিক মন্দা-এর ধারণা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেলে এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেলে দেশটির অর্থনীতির যে অবস্থার সম্মুখীন হয় তাকে অর্থনৈতিক মন্দা বলে। এ সময় দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক মন্দা একটি দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে সম্পূর্ণভাবে দুর্বল করে দেয়।
প্রশ্ন \ ১০ \ ঋণনীতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে নির্ধারিত নিয়ম, পরিমাণ, সুদের হার ও পদ্ধতি ইত্যাদি উল্লেখ করে নির্দেশনা প্রদান করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত এ নির্দেশনাকে ঋণনীতি বলে। ঋণনীতির আলোকে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ তাদের ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে।

Leave a Reply