মহাজাগতিক কিউরেটর
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
লেখক পরিচিতি
নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
জন্ম পরিচয় জন্ম তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ।
জন্মস্থান : সিলেট শহর।
পৈতৃক নিবাস : নেত্রকোনা জেলা
পিতৃ-পরিচয় পিতার নাম : ফয়জুর রহমান আহমেদ।
শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক : এসএসসি (১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে) জিলা স্কুল, বগুড়া।
উচ্চমাধ্যমিক : এইচএসসি (১৯৭০) খ্রিস্টাব্দে, ঢাকা কলেজ।
উচ্চতর শিক্ষা : স্নাতক সম্মান (পদার্থ বিজ্ঞান), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ)। স্নাতকোত্তর (তাত্তি¡ক পদার্থবিজ্ঞান), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ)। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
পেশা/কর্মজীবন রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন; যুক্তরাষ্ট্র; অধ্যাপক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
সাতিহ্যকর্ম কিশোর উপন্যাস ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, এবং ‘আমি তপু’ অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। মহাকাশে মহাত্রাস, টুকুনজিল, নিঃসঙ্গ গ্রহচারী, একজন অতিমানবী, ফোবিয়ানের যাত্রীসহ অনেক পাঠকপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির তিনি ¯্রষ্টা।
পুরস্কার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০০৪ খ্রিষ্টাব্দ)।
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
একদিন সকালে কাজলের বাড়ির পাশে একটি বানর বিদ্যুৎ স্পষ্ট হয়ে মারা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই জায়গা অন্য বানরেরা ঘিরে ধরে যেন বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ফেলবে ওরা। ওই দিনই কলেজে যাবার পথে কাজল দেখল, কয়েকটি ছেলে একটি মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছে। আশে-পাশে অনেক মানুষ থাকলেও কেউ প্রতিবাদ করছেন না। কাজল সঙ্গের বন্ধুদের নিয়ে প্রতিরোধ করতে এগিয়ে গেল।
ক. ‘মহাজাগিতক কিউরেটর’ কোন জাতীয় রচনা?
খ. মহাজাগিতক কিউরেটরদ্বয়ের মানুষ বাদ দিয়ে নমুনা হিসেবে পিঁপড়া সংগ্রহের কারণ কী?
গ. উপগ্রহে থেকে যাওয়া তিনজনের কথা বিপ্লবদের মনে না পড়ার কারণটি ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের পিঁপড়া আর উপগ্রহের অদ্ভুত প্রাণিগুলো যেন একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ- তুমি কি মন্তব্যটির সাথে একমত? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর। ১
২
৩
৪
১ নং প্রশ্নের উত্তর
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পটি মানবকল্যাণধর্মী রচনা।
মহাজাগতিক কিউরেটরদ্বয় মানুষ বাদ দিয়ে শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান প্রাণির নমুনা হিসেবে পিঁপড়া সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। কেননা পিঁপড়া পৃথিবীর কারো কোনো ক্ষতি করে না।
পৃথিবীতে বুদ্ধিমান প্রাণি হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে মানুষ। এদের সামাজিক ব্যবস্থা আছে, শহর-বন্দর নগর তৈরি করেছে, চাষাবাদ ও পশুপালন করছে। কিন্তু এরা বাতাসের ওজোন স্তর দূষিত করেছে, গাছপালা কেটে সাবাড় করে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করেছে। নিউক্লিয়ার বোমা ফেলছে একে অন্যের ওপর। কিন্তু পিঁপড়া পরিশ্রমী, সুশৃঙ্খলা, সামাজিক সুবিবেচক ও পরোপকারী। পিঁপড়া পৃথিবীর কোনো ক্ষতি করে না। তাই কিউরেটরদ্বয় মানুষের পরিবর্তে পিঁপড়ার নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
মানুষের আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থবাদী ভাবনার কারণেই উপগ্রহে থেকে যাওয়া তিনজনের কথা বিপ্লবদের মনে পড়েনি।
মানুষ নিজেদের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণি মনে করলেও তারা আসলে সংকীর্ণমনা, স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক। নিজেদের প্রয়োজনে জঘন্য-হীন কাজ করতেও তারা এতটুকু দ্বিধা করে না। এমনকি অন্য অনেকের জীবন বিপন্ন হলেও তারা বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হয় না।
উদ্দীপকের বিপ্লব স্বপ্ন দেখে যে, সে তার পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে নভোযানে চলতে চলতে একসময় একটা উপগ্রহে গিয়ে থামে। তারা এটা দেখতে নেমে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পর ধারালো দাঁতওয়ালা অসংখ্য অদ্ভুত প্রাণি তাদেরকে আক্রমণ করে। তিনজন কোনোরকমে দৌড়ে গিয়ে নভোযানে উঠে। কিন্তু অন্য তিনজন ওখানেই রয়ে যায়। তাদের অবস্থা কী হবে এসব না ভেবেই ওরা চলে আসে। তারা এতটাই স্বার্থপর যে নিজেদের বাঁচাতেই ব্যস্ত ছিল। ওদের কথা মনেই পড়েনি। ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পেও দেখা যায়, মানুষ কতটা স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক। তারা নিজেদের ঘৃণ্য স্বার্থে একে অন্যের ওপর নিউক্লিয়ার বোমা ফেলে, যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সুতরাং, উপগ্রহে থেকে যাওয়া তিনজনের কথা বিপ্লবদের মনে না পড়ার কারণ মানুষের স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব।
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের পিঁপড়া আর উপগ্রহের অদ্ভুত প্রাণিগুলো যেন একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ- কথাটির সাথে আমি একমত পোষণ করি।
একই ধরনের বা সমপর্যায়ের বা একই বেশিষ্ট্যের প্রাণি পৃথিবীর মতো অন্য গ্রহে থাকা অস্বাভাবিক নয়। এরকম পৃথিবীর কিছু প্রাণির মধ্যেও দেখা যায়। আক্রান্ত হলে অন্যেরা তাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে পারস্পরিক আন্তরিকতা, দলবদ্ধতা ও পরোপকারিতার মনোভাব সক্রিয়, যাকে বলা হয়েছে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে দেখা যায়, অনন্ত জগতের কোনো এক গ্রহ থেকে আসা দুজন কিউরেটর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাণি পর্যবেক্ষণ করে পিঁপড়াকেই শ্রেষ্ঠ মনে করলো। কেননা পিঁপড়া দলবদ্ধ, সামাজিক, সুবিবেচক ও পরোপকারী। তারা আক্রান্ত হলে এক সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অন্যদিকে অন্য গ্রহের অদ্ভুত প্রাণিগুলোও সংঘবন্ধ, তারাও হুমকি মনে করেই অন্য গ্রহের প্রাণিদের আক্রমণ করছে। সমগোত্রীয়দের প্রতি তাদের প্রাণের টানেই তারা এটি করেছে। আবার বিপ্লবরা যখন তাদের একটা প্রাণিকে ধরে নিয়ে যায়, তখন তাকে উদ্ধার করার জন্য দলবেঁধে সবাই ছুটে আসে।
সুতরাং, পৃথিবীর পিঁপড়া আর ভিন্ন গ্রহের প্রাণির মধ্যে পারস্পরিক মমত্ববোধ, দায়িত্ববোধ এবং পরোপকারিতার দিক থেকে একই রকম অর্থাৎ মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ।
অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
পত্রিকায় প্রকাশ বরগুনার তালতলীর সুন্দরবচন অংশে এবং লাউয়াছড়ার সংরক্ষিত উদ্যানে একধরনের নির্মম হিংস্র মানুষ বিশেষ প্রক্রিয়ার বৃক্ষের গোড়া পুড়িয়ে বৃক্ষ হত্যা করছে।
ক. পৃথিবীতে কোন প্রাণি সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে?
খ. দেখেছ বাতাসে কত দূষিত পদার্থ?Ñ এর কারণ দর্শাও।
গ. উদ্দীপকের বৃক্ষ হত্যার সাথে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সম্পর্ক নির্ণয় কর।
ঘ. ‘মানুষ স্বেচ্ছা ধ্বংস সাধনে সাংঘাতিক সক্রিয়’- কথাটার সাথে একমত হলে, তোমার যুক্তি উপস্থাপন কর। ১
২
৩
৪
২ নং প্রশ্নের উত্তর
পৃথিবী মানুষ সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
‘দেখেছ বাতাসে কত দূষিত পদার্থ?Ñ কিউরেটরদের একজন পৃথিবীর বাতাসের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে, কেননা তা ভয়াবহ রকমের ক্ষতিকর।
বাতাস শুধু ধূলাবালি ধোঁয়ায় দূষিত নয়। এর সাথে মিশে আছে এমন তেজস্ক্রিয় পদার্থ, যা থেকে এমন রশ্মির বিকিরণ ঘটে, যা অস্বচ্ছ পদার্থের মধ্য দিয়ে দেখা যায়। এসব দূষিত ও তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাতাসের ওজোন স্তর ক্রমশ শেষ করে দিচ্ছে। অথচ ওজোন স্তর হলো বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে গ্যাসে পূর্ণ একটি বিশেষ স্তর, যা আমাদের সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। নির্মমভাবে বিস্তীর্ণ এলাকার গাছ কেটে ধ্বংস করার ফলে বাতাস ক্রমশ উষ্ণ ও দূষিত হয়েছে। দূষণ ও ওজোন স্তরের ক্ষতির জন্য মানুষই সম্পূর্ণভাবে দায়ী।
উদ্দীপকের বৃক্ষ হত্যার সাথে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কেননা বৃক্ষের সাথে প্রাণিসহ প্রকৃতির অনেক কিছু সম্পর্কিত।
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে কিউরেটরেরা বাতাসে দূষিত পদার্থ ও তেজস্ক্রিয় পদার্থের ভয়াবহ অবস্থান দেখে ভীষণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনে এমন সব কাজ করছে, যা পৃথিবীকে ধ্বংসের প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। বিশেষ করে পৃথিবীর বিস্তীর্ণ এলাকার গাছ ধ্বংস করার ফলে গাছের শিকড়, বাকলের রস, পাতা, ফুল ও ফল খেয়ে যেসব প্রাণি বাঁচে, সেগুলো ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে। কারণ পরাগায়নের অভাবে আগের মতো ফল ধরছে না। বনে যারা বাস করতো, তাদের অস্তিত্ব আজ নড়বড়ে হয়ে গেছে। এছাড়া জ্বালানি, আসবাবপত্র, ওষুধ-পথ্যের উৎস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গাছ কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ছেড়ে দিতো, যা প্রাণি বিশেষ করে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য দরকার। ফলে গাছকে কেন্দ্র করে যে জীবনচক্র তা ভেঙে প্রকৃতির পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
উদ্দীপকে নির্মমভাবে ও অভিনব উপায়ে সুন্দরবন ও লাউয়াছড়ায় সংরক্ষিত এলাকার বৃক্ষ ধ্বংস করেছে মানুষ নামের ঘৃণ্য পশুরা। তারা বিশেষ প্রক্রিয়ার গাছের গোড়া পুড়িয়ে বনভ‚মির কতক অংশ বৃক্ষশূন্য করেছে। আর বৃক্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট পোকা মাকড়, পাখি ও অন্যান্য প্রাণি দূরে সরে গেছে অথবা মৃত্যু ঘটেছে। শুধু তাই নয়, বাওয়ালি ও মৌয়ালিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এভাবেই নির্বিচারে বৃক্ষ ধ্বংসের মারাত্মক প্রভাবে প্রকৃতির ভারসাম্য ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
‘মানুষ স্বেচ্ছা ধ্বংস সাধনে সাংঘাতিক সক্রিয়’- কথাটার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত।
মানুষ তার ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মুর্খের মতো অবলীলায় যেসব অপকর্ম সাধন করে আসছে, তারই ফলে আজ পৃথিবী ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সামান্য অজুহাতে অস্ত্রনির্মাতা ও তাদের দোসররা নানা ধরনের ক্ষতিকর অস্ত্র বোমার বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। এ ধরনের ঘৃণ্য নিকৃষ্ট মানুষ সামান্য স্বার্থে বনের পর বন ধ্বংস করে চলেছে, হত্যা করছে কোটি কোটি বৃক্ষ, যা পৃথিবীর প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় নিয়োজিত ছিল। কলকারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য মাটি পানি বাতাস দূষিত ও নষ্ট করছে। আর এসব কারণে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্রমশ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উদ্দীপকে উলিখিত সংবাদটি এতোটাই দুঃখজনক যে, মানুষকে আর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণি বলা যায় না। কেননা তারাই বুদ্ধিহীন, অবিবেচক, মূর্খের মতো অভিনব উপায়ে অসংখ্য গাছ হত্যা করে প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট করছে। হিংস্র মানুষ বরগুনার তালতলীর সুন্দরবন অংশে এবং লাউয়াছড়ার সংরক্ষিত উদ্যানে বিশেষ প্রক্রিয়ায় গাছের গোড়া কেটে এবং গোড়া পুড়িয়ে হত্যা করেছে অসংখ্য গাছ। ফলে এখানকার প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে।
এভাবে বহু ধরনের ক্ষতিকর অপকর্মের হোতা মানুষ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে পৃথিবীকে ধ্বংস করার জন্য সাংঘাতিকভাবে সক্রিয় রয়েছে। নষ্ট মানুষ কোনো বিচার বিবেচনার ধার ধারে না, বিবেক বুদ্ধি দিয়ে ভালো-মন্দ ভাবে না কেবল নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থটুকুকে বড় মনে করে। কাজেই একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ‘মানুষ স্বেচ্ছা ধ্বংস সাধনে অর্থাৎ নিজেই নিজেদের ধ্বংস করতে সাংঘাতিক সক্রিয়-কথাটা যথার্থ ও বাস্তব সত্য।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সপ্তাহখানেক কোনো পত্রিকা দেখার সুযোগ হয়নি। আজ পুরনো কাগজগুলো নিয়ে বসলাম। প্রথমেই চোখে পড়লো ‘হিরোসিমা ও নাগাসাকি দিবসের ৫৯তম বার্ষিকী পালন’, ‘ফিলিস্তিনে স্কুল ও হাসপাতালে বোমাবর্ষণ’, ‘ইরাকে বোমাবর্ষণে শিশু ও নারীর মৃত্যু’।
ক. ‘না, মানুষকে নেওয়া ঠিক হবে না’ -কে বলল?
খ. মানুষ যুদ্ধ করে একজন আরেকজনকে ধ্বংস করছে কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের কোন অংশের সাথে সংগতিপূর্ণ ? আলোচনা কর।
ঘ. ‘হৃদপিণ্ডে কম্পন সৃষ্টি হওয়ার মতো ভয়াবহ খবর সব’- ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্প অনুসরণে বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
‘না মানুষকে নেওয়া ঠিক হবে না’- কথাটা বলেছে প্রথম কিউরেটর।
‘মানুষ যুদ্ধ করে একজন আরেকজনকে ধ্বংস করছে’ – কথাটা সঠিক। কারণ মানুষ নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু বোঝে না। অস্ত্র উৎপাদনকারী যুদ্ধবাজ মানুষ অস্ত্র বিক্রির তাগিদেই এক দেশের সাথে অন্য দেশের যুদ্ধ লাগিয়ে দেয়। তা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করে। এরা অর্থ খরচ করে নিজেদের লোককেই কোনো দেশের শীর্ষপদে বসায় যাতে তাদের স্বার্থে কাজ করে। আবার মাফিয়া চক্র পৃথিবীর মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে রাখার জন্য প্রয়োজনে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সাথে হাত মেলায়। তারপর সন্ত্রাসী চক্রের মদদে দেশে দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অস্ত্র ও মাদক বিক্রির সুযোগ করে নেয়। এভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। যুদ্ধ করে একজন আরেকজনকে, এক দেশ আরেক দেশকে ধ্বংস করে দেয়। ধ্বংস হয় সম্পদ, ধ্বংস হয় স্থাপনা, ধ্বংস হয় প্রাকৃতিক পরিবেশ। যুদ্ধের কারণে পৃথিবীও ধ্বংসের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের ওপর নিউক্লিয়ার বোমা ফেলে ধ্বংস করে দিয়েছিল। মৃত্যুবরণ করেছিল পঁচাত্তর হাজার মানুষ। তারই ৫৯তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। এখনও ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনের উপর বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে, তারা স্কুল এবং হাসপাতালও বাদ দিচ্ছে না। অন্যদিকে উত্তর ইরাকে আমেরিকান সেনাবাহিনীর বোমা বর্ষণে নিহত হয়েছে অনেক শিশু ও নারী।
উদ্দীপকটি ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের প্রায় শেষের দিকের সাথে সংগতিপূর্ণ, যেখানে পুরো গ্রহটি ধ্বংস করে ফেলার অবস্থা তৈরি হয়েছে ভয়াবহ যুদ্ধের কারণে।
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে আমরা কিউরেটরদ্বয়ের সংলাপের মাধ্যমে যুদ্ধের কারণে পৃথিবী ধ্বংসের ইঙ্গিত লাভ করি। একজন বলে কী আশ্চর্য! আমি ভেবেছিলাম এরা বুদ্ধিমান প্রাণি। আসলে এরা সচেতন বুদ্ধিমান নয়। সচেতনরা কখনো নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারে না। কিন্তু মানুষ একজন আরেকজনের উপর নিউক্লিয়ার বোমা ফেলছে। যুদ্ধ করে একে অন্যকে ধ্বংস করছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা এতই ব্যাপক যে হাজার হাজার মানুষ মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে। প্রকৃতিকে ভয়াবহভাবে দূষিত করেছে। যে কারণে স্বেচ্ছাধ্বংসকারী যুদ্ধবাজ হিসেবে কিউরেটরদ্বয় মানুষের নমুনা নেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
উদ্দীপকেও যুদ্ধের ভয়াবহতার ভয়ংকর চিত্র ফুটে উঠেছে। সপ্তাহখানেক কোনো পত্রিকা দেখার সুযোগ হয়নি লেখকের। আজ পুরনো কাগজগুলো দেখতে গিয়ে তিনি ভয়ানক চমকে উঠলেন।
‘হৃদপিণ্ডে কম্পন সৃষ্টি হওয়ার মতো ভয়াবহ খবর সব’- কথাটায় মানুষের যুদ্ধজাতীয় ভয়ংকর অপকর্মের ভয়াবহতারই প্রতিফলন হয়েছে।
আগেকার মতো যুদ্ধে এখন আর শারীরিক শক্তি, সাহস ও কৌশলের কোনো দাম নেই। এখনকার যুদ্ধ মুখোমুখি নয়, দূর বহু দূর থেকে। মানুষ তৈরি করেছে ভয়ংকর ক্ষতিকর বোমা, যা বহু দূর থেকে টার্গেট করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এর ধ্বংসাত্মক শক্তি অকল্পনীয়। সে কারণে এখনকার যুদ্ধ মারাত্মক ক্ষতিকর ও ভয়াবহ। পৃথিবীর বৃহৎ শক্তির কাছে যে অস্ত্র মজুদ আছে, তাতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পৃথিবীর পুরো এলাকা ধ্বংস করে দেয়া সম্ভব। অথচ মানুষের জন্য বা পৃথিবী রক্ষার জন্য কল্যাণকর কর্মকাণ্ডে তাদের মনোযোগ নেই।
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে বলা হয়েছে, মানুষ একে অন্যের ওপর তেজস্ক্রিয় বোমা ফেলছে। হত্যা করছে মানুষ, ধ্বংস করছে সভ্যতা, যা নিজেরাই নির্মাণ করেছে। যুদ্ধে এক দেশ অন্য দেশ ধ্বংস করে ফেলছে, প্রকৃতিকে করছে দূষিত। এর পাশাপাশি উদ্দীপকেও হত্যা ও ধ্বংসের প্রতিফলন রয়েছে। ফিলিস্তিনে স্কুল ও হাসপাতালেও বোমাবর্ষণ করে তা ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। ইরাকে বোমাবর্ষণে অসংখ্য নারী ও শিশু মৃত্যুবরণ করেছে। এসব হত্যা ও ধ্বংসের খবরে হৃদপিণ্ডে কম্পন সৃষ্টি হয়, শরীরও ভয়ে কাঁপতে থাকে।
উপর্যুক্ত আলোচনায় আমরা আধুনিক যুদ্ধে ব্যবহৃত ভয়াবহ অস্ত্রের বিকট শব্দে যেমন ভয়ে কাঁপতে থাকি, তেমনি এর প্রচণ্ড প্রভাবে নির্মম নির্বিচার মৃত্যুর খবরেও হৃৎপিণ্ড কাঁপতে থাকে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
‘মৌমাছি মৌমাছি/কোথা যাও নাচি নাচি
দাঁড়ও না একবার ভাই,
ওই ফুল ফোটে বনে/যাই মধু আহরণে
দাঁড়াবার সময় তো নাই।
ক. ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কী নেই?
খ. ‘কাজটি আরও কঠিন হয়ে গেল’- কেন?
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশের সাথে মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের কার সাদৃশ্য আছে, নির্ধারণ কর।
ঘ. ‘সুবিবেচনা ও পরোপকারিতার দিকে থেকে মৌমাছি আর পিঁপড়া সমার্থক’- কথাটির যথার্থতা বিচার কর। ১
২
৩
৪
৪ নং প্রশ্নের উত্তর
ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মাঝে কোনো বৈচিত্র্য নেই।
‘কাজটি আরও কঠিন হয়ে গেল’- কথাটা যথার্থ। কেননা সব প্রাণির গঠন একই রকম হলেও তার ভেতর থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বেছে বের করে নেওয়া সত্যিই কঠিন।
অনন্ত মহাজগৎ থেকে আগত মহাজাগতিক কাউন্সিলের দুজন কিউরেটর সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ পৃথিবীতে এসেছে। তারা বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্র ঘুরে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণিগুলোকে সংগ্রহ করে নিয়ে যাবে তাদের গ্রহে। পৃথিবীতে নানা প্রজাতির প্রাণির ভেতর থেকে যাচাই-বাছাই করে তারা শ্রেষ্ঠ প্রাণিটিকেই নিয়ে যাবে। তবে সমস্যা হলো, পৃথিবীর সব প্রাণির মূল গঠনটি ডিএনএ দিয়ে আর সব প্রাণির ডিএনএ একই রকম, সব একই বেস পেয়ার দিয়ে তৈরি। সবচেয়ে সহজ এবং সবচেয়ে জটিল প্রাণির গঠন একই রকম। প্রাণির বিকাশের নীলনকশা এই ডিএনএ দিয়ে তৈরি করে রাখা আছে। কোনো প্রাণির নীলনকশা সহজ, কোনোটির জটিল Ñএটুকুই পার্থক্য। এ কারণে এই গ্রহ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণি খুঁজে বের করা বেশ কঠিনই হবে।
উদ্দীপকের কবিতাংশের মৌমাছির সাথে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের পিঁপড়ার সাদৃশ্য আছে। কেননা পিঁপড়া ও মৌমাছি উভয়ে কঠোর পরিশ্রমী ও সুবিবেচক, তাই তারা খাবার জমিয়ে রাখে।
প্রথম কিউরেটর একটি প্রাণিকে পর্যবেক্ষণ করে আনন্দধ্বনি করে ওঠে। প্রাণিটি পিঁপড়া। এরাও সামাজিক প্রাণি, দল বেঁধে থাকে। এদের মধ্যে শ্রমিক সৈনিক সব আছে। বংশ বিস্তার, চাষাবাদ ও পশুপালনের ব্যবস্থাও আছে এদের। এরা অসম্ভব পরিশ্রমী, সুশৃঙ্খল এবং অত্যন্ত সুবিবেচক। আগে থেকেই তারা খাবার জমিয়ে রাখে আর বিপদে কখনো দিশাহারা হয় না। এরা ডাইনোসরের যুগ থেকে আজও বহাল তবিয়তে বেঁচে রয়েছে।
গল্পের পিঁপড়ার মতো উদ্দীপকের মৌমাছিও অসম্ভব পরিশ্রমী। তারা নিজেদের থাকার জন্য এবং খাদ্য সংরক্ষণের জন্য বিশাল মৌচাক তৈরি করে। তারপর নেচে নেচে উড়ে উড়ে বনের দিকে ছুটে যায়। বনে ফুটে আছে নানা রঙের ফুল, ফুলের ভেতর জমা আছে মধু। মৌমাছি ফুলে ফুলে উড়ে উড়ে শুঁড় দিয়ে ফুলের মধু চুষে নেয়। সেগুলো মৌচাকের বিশেষ খোপগুলোতে জমা করে। এ কারণে মৌমাছিকে শিশুরা ডেকেও পায় না। মধু আহরণ করতে যেতে হবে। তাই তার দাঁড়াবার সময় নেই। কাজেই দেখা গেল, উদ্দীপকের কবিতাংশের মৌমাছির সাথে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের পিঁপড়ার চমৎকার সাদৃশ্য আছে।
‘সুবিবেচনা ও পরোপকারিতার দিক থেকে পিঁপড়া আর মৌমাছি সমার্থক’Ñ কথাটা যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত।
ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীগুণীর কাজ। বর্তমান নিয়ে এমনভাবে কাজ করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে জটিল কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হয়। কেননা জ্ঞানীগুণী মানুষ যা কিছু করে তা ভবিষ্যতের কথা ভালোভাবে ভেবেই করে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তা ভাবে না বলেই নিজের সামান্য স্বার্থের তাগিদে বড় কোনো অপকর্ম করে বসে, যা পুষিয়ে নেওয়া অসম্ভব। তাতে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যায়, মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়ে যায় সুন্দর পৃথিবী।
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে ভবিষ্যতের ভাবনারত পিঁপড়ার কথা বলা হয়েছে। তারা মানুষের মতো ইচ্ছাকৃত ঝগড়া বিবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকে না। বরং জ্ঞানীদের মতো তারা সুশৃঙ্খল ও সুবিবেচক। তারা কঠোর পরিশ্রম করে বিশাল ও সুন্দর বাসস্থান তৈরি করে, খাদ্য জোগাড় করে আনে এবং সেগুলো নিরাপদ কক্ষে জমা করে রাখে ভবিষ্যতের জন্য। এ কারণে তারা বিপদে দিশেহারা হয় না। তাদের গায়ে প্রচণ্ড শক্তি, তারা নিজের শরীর থেকে দশগুণ বেশি জিনিস অনায়াসে নিয়ে যেতে পারে। আবার তারা পরোপকারী। অন্যকে বাঁচাবার জন্য তারা অকাতরে প্রাণ দেয়। কিছুমাত্র দ্বিধা করে না।
উদ্দীপকের মৌমাছিও সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে। দাঁড়িয়ে দুদণ্ড কথা বলার সময় তাদের নেই। কেননা ফুলের খোঁজে বনে বনে তাদের উড়ে উড়ে যেতে হয়। ফুল থেকে মধু আহরণ করে আবার ফিরে আসতে হয় তাদের মৌচাকে। কেননা ভবিষ্যতের জন্য মধু সঞ্চয় করে না রাখলে তারা মারাত্মক সংকটে পড়বে। সেটি বিবেচনায় নিয়েই তারা কাজ করে।
কাজেই সুবিবেচনা ও পরোপকারিতার দিক থেকে মৌমাছি আর পিঁপড়া সমার্থকÑ এ কথাটি যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত – এ সম্পর্কে কোনো দ্বিধা নেই।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
‘অন্ধকার হয়ে এলো, ভেবেছিলাম আমি একাকী, হঠাৎ পেছনে চেয়ে দেখি একটি কুকুর আমার পেছনে চলছে। বললাম, কী করে! যাবি আমার সঙ্গে? অন্ধকার পথটায় বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারবি। সে দূরে দাঁড়িয়ে ল্যাজ নাড়াতে লাগলো। বুঝলাম সে রাজি আছে। বললাম, তবে আয় আমার সঙ্গে।’
ক. ‘এটি একা একা থাকতে পছন্দ করে’-এটি কী?
খ. দ্বিতীয় কিউরেটর কুকুর নিতে চাইল কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের মিল কোথায়? আলোচনা কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকটিতে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের মূলভাব নেই’- কথাটার যথার্থতা বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৫ নং প্রশ্নের উত্তর
এটি একা একা থাকতে পছন্দ করে’-এটি হলো বাঘ।
দ্বিতীয় কিউরেটরের কুকুর খুব পছন্দ হয়েছে, তাই সে কুকুর নিতে চাইলো। কেননা কুকুর খুব প্রভুভক্ত ও একসাথে থাকতে পছন্দ করে।
মহাজাগতিক কিউরেটরদ্বয় পৃথিবীতে এসেছে পৃথিবীর অসংখ্য প্রজাতির ভেতর থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণি খুঁজে বের করে নিয়ে যাবে তাদের গ্রহে। এমন প্রাণি তারা সংগ্রহ করবে যারা সামাজিক দলবদ্ধ থাকে, পরিশ্রমী, সুশৃঙ্খল ও সুবিবেচক। যেসব প্রাণি পৃথিবী ও প্রকৃতির কোনো ক্ষতি করে না এবং নিজেদের মধ্যে কোনো ঝগড়া বিবাদও করে না। ভবিষ্যতে যাতে নিজেদের কোনো অসুবিধা বা সমস্যায় পড়তে না হয়, সেজন্য তারা খাদ্য ও আশ্রয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে দায়িত্ব পালন করে। কুকুর একসাথে থাকে এবং দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। তা ছাড়া তারা সহজেই পোষ মানে এবং খুব প্রভুভক্ত হয়।
উদ্দীপকের পোষমানা প্রভুভক্ত কুকুরের সাথে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের কুকুরের সুন্দর মিল রয়েছে।
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের দ্বিতীয় কিউরেটর কুকুরকে নেওয়ার ব্যাপারে মতামত জানতে চেয়ে নিজেই বলে, এরা একসাথে থাকে এবং দলবেঁধে ঘুরে বেড়ায়। অর্থাৎ এরা সামাজিক প্রাণি, দলনেতার সুশৃঙ্খল নিয়ন্ত্রণে এরা থাকে। কিন্তু প্রথম কিউরেটর বলল, মানুষ এদের পোষ মানানোর পর এরা নিজেদের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে। এখন এরা প্রভুর অনুগত ও বিশ্বস্ত ভক্ত। কুকুর এখন প্রভুর বাড়ি পাহাড়া দেয়, চোর তাড়ায়, শিশুদের আদর ভালোবাসা নেয়। পরিবর্তে যতেœ থাকে।
উদ্দীপকের অজানা-অচেনা কুকুরটি রাতের অন্ধকারে লেখকের পেছন পেছন চলছিল। লেখক একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। আসতে আসতে সন্ধ্যা পার হয়ে অন্ধকার নেমে এসেছে। লেখক ভেবেছিলেন তিনি একা। কিন্তু পেছনে তাকিয়ে দেখলেন একটা কুকুর তার সাথে পথ চলছে। লেখক তাকে আদর করে অন্ধকার পথটায় সাথে সাথে থেকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কথা বললে, সে দূরে দাঁড়িয়ে ল্যাজ নাড়তে লাগল। লেখক বুঝলেন সে রাজি আছে। লেখক তাকে ডাকলেন তবে আয় আমার সঙ্গে। ’ কাজেই উদ্দীপকের পোষমানা প্রভুভক্ত কুকুরের সাথে গল্পের কুকুরের চমৎকার মিল দেখতে পাওয়া যায়।
‘উদ্দীপকটিতে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের মূলভাব নেই’- কথাটা যথার্থ, সত্য ও যৌক্তিক।
কিউরেটর দুজন পৃথিবীতে এসেছে গঠনমূলক, বিজ্ঞানসম্মত ও কল্যাণকর মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। তারা পৃথিবী থেকে শ্রেষ্ঠ প্রজাতির নমুনা সংগ্রহ করবে, যে প্রজাতি বুদ্ধিমান, সুশৃঙ্খল, পরিশ্রমী, সামাজিক, সুবিবেচক ও কল্যাণকামী। অলস, বড়, অবিবেচক, ক্ষতিকর ও অকল্যাণ দৃষ্টিভঙ্গির নিম্ন পর্যায়ের বুদ্ধিমান কোনো কিছুকে তারা গুরুত্ব দেবে না।
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের মূলসুর মানব কল্যাণকামী ও সুবিবেচনাপ্রসূত দূরদৃষ্টির প্রতিফলন, যাতে পৃথিবী নামক সুন্দর গ্রহটি দূষণ ও তেজস্ক্রিয়তা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে পেতে পারে। কিউরেটরদের বিচারে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর বিনষ্টের জন্য দায়ী মানুষ। তারা লোভী, স্বার্থপর, অবিবেচক, হীনমনা, অকল্যাণকামী ও স্বেচ্ছা ধ্বংসকারী। এসব কারণে তারা বুদ্ধিমান প্রাণির পর্যায়ে পড়ে না। মানুষের বিপরীত গুণগুলো পিঁপড়ার আছে বলে পিঁপড়াই শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান প্রাণি। আর একটি বিষয় উদ্দীপকে অনুপস্থিত, তা হলো পৃথিবীর সব প্রাণির ডিএনএ একই রকম, সব একই বেস পেয়ার দিয়ে তৈরি।
উদ্দীপকে শুধু কুকুরে আনুগত্য, বিশ্বস্ততা ও প্রভুভক্তির পরিচয় ফুটে উঠেছে। লেখক সন্ধ্যার অন্ধকারে ফেরার সময় একটা কুকুর দেখতে পান তার পেছনে পেছনে হাঁটতে। তিনি কুকুরটাকে তাঁর সাথে নিয়ে যেতে চাইলে সে ল্যাজ নেড়ে সম্মতি জানায় এবং লেখক তাকে নিয়ে আসেন বাড়িতে। এই পোষমানা কুকুর তার মূল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে। পৃথিবীর প্রাণিগুলোর মূল বা খাঁটি বৈশিষ্ট্য ধরে রাখা খুব জরুরি। অথচ উদ্দীপকটিতে এসব বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বরং কুকুর তার মূল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে এখন শুধুই পোষমানা প্রাণি। কাজেই একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উদ্দীপকটিতে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের মূলভাব নেই।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
তাই আজ প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়,
মানুষ গড়ে তুলতে চাইছে প্রকৃতির সাথে মৈত্রীর বন্ধন।’
ক. ‘প্রজাতি’ শব্দটির অর্থ কী?
খ. ‘প্রাণিদের একটির ভিতরে আবার অত্যন্ত নিম্নশ্রেণির বুদ্ধির বিকাশ হয়েছে’-কথাটা বুঝিয়ে দাও।
গ. কবিতাংশের প্রথম চরণের সাথে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের কোনদিক থেকে সামঞ্জস্য আছে নির্ধারণ কর।
ঘ. ‘প্রকৃতির বান্ধব আর পৃথিবী বান্ধব মানুষ সকলেরই প্রত্যাশা’- কথাটার তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৬ নং প্রশ্নের উত্তর
‘প্রজাতি’ শব্দটির অর্থ প্রাণির বংশগত শ্রেণি।
‘উষ্ণ রক্তের স্তন্যপায়ী প্রাণিদের একটির ভিতরে আবার অত্যন্ত নিম্নশ্রেণির বুদ্ধির বিকাশ হয়েছে’Ñ কথাটার মধ্য দিয়ে মানুষকেই নিম্নশ্রেণির বুদ্ধিমান প্রাণি বলা হয়েছে।
বুদ্ধিমান প্রাণি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হয়। ভবিষ্যতের কথা ভেবেই তারা ইতিবাচক কাজে লিপ্ত হয়। তা ছাড়া তারা নিজেদের কোনো ক্ষতি হবে এরকম কোনো কাজ করে না। মানুষ বড় বড় শহর, নগর, বন্দর নির্মাণ করেছে, নিজেদের সভ্যতা গড়ে তোলার জন্য কত বড় আত্মত্যাগ করেছে। চাষাবাদ, পশুপালন করছে। নিজেদের সামাজিক জীবনও অতিবাহিত করছে। এগুলো সবই ইতিবাচক। কিন্তু গাছপালা কেটে সাবাড় করে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে, বাতাস মারাত্মকভাবে দূষিত করে ওজোন স্তর হ্রাস করছেÑ এসবই নেতিবাচক। অর্থাৎ মানুষ নিজেদের হীন স্বার্থে সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবীকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে-এটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এটা নিম্নশ্রেণির ক্ষতিকর প্রাণির কাজ। এজন্যই মানুষকে উষ্ণ রক্তের প্রাণিদের মধ্যে অত্যন্ত নিম্নশ্রেণির বুদ্ধিমান প্রাণি বলা হয়েছে।
কবিতাংশের প্রথম চরণের সাথে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের প্রকৃতির ওপর ক্ষতিকর আধিপত্য বিস্তারের দিক থেকে ঘনিষ্ঠ সামঞ্জস্য আছে।
মানুষের গতিময় চলার পথে প্রকৃতির যা কিছু প্রতিবন্ধক বা বাধা মনে হয়েছে, সে তা কেটে, উপড়ে, ধ্বংস করে তার পথ করে নিয়েছে। বিপুল অর্থ ও সম্পদের লোভে মারাত্মক ক্ষতিকর মাদকদ্রব্য বা ধ্বংসাত্মক অস্ত্র, সুদূরপ্রসারী অকল্যাণকর রাসায়নিক তেজস্ক্রিয় বোমাকে ব্যবহার করিয়ে পৃথিবীর ওপর আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণের শক্তি ও ক্ষমতা অর্জন করতে চেয়েছে। ভয়াবহ ক্ষতিকারক প্রতিযোগিতায় শামিল হয়ে সুন্দর পৃথিবীকে নিজের আয়ত্তে আনার পরিবর্তে ধ্বংসের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে, যা বুদ্ধিমান ও কল্যাণকামী মানুষের কাজ নয়, হিংস্র্র কোনো পশুর কাজ। ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে যে মানুষ সভ্যতা তুলতে আত্মত্যাগ করেছে, সেই মানুষই আবার বনের পর বন কেটে, যুদ্ধের দামামায় ভয়ংকর তেজিস্ক্রয় বোমা ফাটিয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করেছে আর বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের ভয়ানক ক্ষতি করে পৃথিবীকে বিপন্ন করে তুলেছে। পৃথিবী আজ হুমকি আর ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে বৃহৎ শক্তিগুলোর আধিপত্য বিস্তারের ঘৃণ্য ও হীন প্রতিযোগিতার প্রভাবে কাঁদছে।
মানুষের যেন আজ হুঁশ হয়েছে, মানুষ যেন বুঝতে পেরেছে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা ঘৃণার ও মানুষের অর্জনকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র। আর এর নেতিবাচক প্রভাবে পৃথিবী ধ্বংসের অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য অপরাধী।
‘প্রকৃতিবান্ধব আর পৃথিবীবান্ধব মানুষ আজ সকলেরই প্রত্যাশা’- এ আশাবাদ ইতিবাচক পৃথিবী গড়তে শুভ ও কল্যাণবোধের অনিবার্য সাফল্যের উদ্বোধন।
পৃথিবীজুড়ে আজ বৃহৎ ও মধ্যম শক্তিগুলোর আধিপত্যের হোলিখেলা। কে কার আগে দুর্বল অথচ সম্পদশালী দেশগুলো নিজের আয়ত্তে আনবে, দূর গ্রহের উপর স্থায়ী দখল নিতেও প্রতিযোগিতার শেষ নেই। অথচ আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতার ধারালো অস্ত্রের মুখে দাঁড়িয়ে কাঁদছে মারাত্মকভাবে আহত পিতৃমাতৃহীন অসহায় শিশু, হাহাকার করে কাঁদছে দরিদ্র নিঃস্ব মা, কাঁদছে সন্তান হারানো নিরুপায় পিতা, কাঁদছে স্বজন হারানো অগুণতি মানুষ, কাঁদছে সম্বলহীন, সম্পদহীন, আশ্রয়হীন অসংখ্য আহত, শোকাহত, উন্মাদপ্রায় জনতা।
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে বুদ্ধিমানের নামে মানুষের অধপতনের চিত্র দেখে বিষণœ হতাশ হই। বিস্তীর্ণ এলাকার বন কেটে ধ্বংস করে প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট করছে, বিষাক্ত দূষণে পরিবেশ বিপন্ন হয়েছে, আর সেই সাথে ওজোন স্তরের বিশাল ফাটল পৃথিবী ধ্বংসের ইঙ্গিত নিশ্চিত করেছে। এ সবই সংকীর্ণ ব্যক্তি স্বার্থে বা রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রহীন স্বার্থে পরিচালিত ও বাস্তবায়িত হয়েছে।
উদ্দীপকের কবিতাংশে আধিপত্যের বিরুদ্ধে তারই সচেতন বিপুল তীক্ষè প্রতিধ্বনি উচ্চারিত হয়েছে। এতদিনে মানুষের হুঁশ হয়েছে, ধ্বংসের কাছ থেকে শিখেছে নতুন বার্তাÑ আর প্রকৃতির সাথে বিরোধিতা নয়, এবার প্রকৃতির সাথে মৈত্রীর বন্ধন। কেননা বিশাল সুন্দর প্রকৃতি বাঁচলে পৃথিবী বাঁচবে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
‘চলে যাবেÑ তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণ পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমিÑ
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ক. ‘এটুকুই হচ্ছে পার্থক্য – কীসের?
খ. ‘গাছপালা নেওয়ারও প্রয়োজন নেই’Ñ কেন এ কথা বলা হয়েছে?
গ. “উদ্দীপকটি ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের আংশিক যথার্থ”Ñ তুলনামূলক আলোচনা করে বুঝিয়ে দাও।
ঘ. ‘পৃথিবীর সব মানুষের অঙ্গীকার হোক প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল’Ñ ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের আলোকে কথাটা মূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
৭ নং প্রশ্নের উত্তর
কোনো প্রাণির বিকাশের নীলনকশা সহজ, কোনোটির জটিলÑ এটুকুই হচ্ছে পার্থক্য।
‘গাছপালা নেওয়ার প্রয়োজন নেই’Ñ কথাটা যুক্তিযুক্ত ও বিজ্ঞানসম্মত।
মহাজাগতিক কিউরেটররা পৃথিবী থেকে বুদ্ধিমান সচল প্রাণির নমুনা নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে। তারা অচল বা জড় কেনো প্রাণি এখান থেকে নেবে না। পৃথিবীর গাছপালা যথেষ্ট উপকারী সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা এক জায়গায় স্থির থাকে, চলাফেরা করতে পারে না অর্থাৎ গতিশীল নয়। আর চলাফেরা করতে না পারলে কিউরেটররা তাকে বুদ্ধিমান বলে মনে করে না। গাছপালা নীরবে প্রকৃতিকে নানা দিক থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সেবা করে যায়, বিনিময়ে কিছুই চায় না। ত্যাগ ও সেবার দিক থেকে তারা মহান। কিন্তু কিউরেটররা এসব বুঝেও শুধু চলাফেরা করতে পারে না তাই বলেছেÑ গাছপালা নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
উদ্দীপকটি ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ- তথা আংশিক যথার্থ। কেননা গল্পের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির গুণাগুণ ও ধ্বংসাত্মক কাজের বিবরণ উঠে এসেছে কিন্তু উদ্দীপকে বিশ্বকে বাসযোগ্য করে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে।
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের পৃথিবীর বিভিন্ন প্রজাতির গুণাগুণের সাথে আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রাণি মানুষের অপকর্মের কথাও এসেছে, যা পৃথিবীকে ধ্বংসের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। গাছপালা নির্বিচারে কাটার জন্য প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, পরিবেশ দূষিত ও তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতির জন্য ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে পৃথিবীর প্রাণি ও উদ্ভিদ জগতের তা মারাত্মক হুমকি হয়ে গেছে। এমনকি সুন্দর পৃথিবী ধ্বংসেরও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। যার জন্য কেবল মানুষই দায়ী। মানুষ তার ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য পৃথিবীর ও মানুষের মহত্ব¡, স্বার্থের দিক তাকায়নি। এ কারণে ধীরে ধীরে সজীব পৃথিবীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
উদ্দীপকে পৃথিবীর ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য অঙ্গীকার করা হয়েছে। জীব ও প্রাণিজগৎ যাতে স্বাভাবিক থাকে, অন্যসব অনুষঙ্গ যাতে অটুট থাকে এবং পৃথিবীর দূষণ যাতে ক্রমশ কমে আসে, এমন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সুন্দর পৃথিবীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সচেষ্ট প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে। এ প্রজন্মের মানুষ দূষিত পরিবেশের শিকার হলেও আগামী প্রজন্মের শিশু যাতে বাসযোগ্য পৃথিবীতে সজীব ও সপ্রাণ থাকতে পারে, আমাদের সকলের সেই কর্মপ্রক্রিয়ায় অগ্রণী হওয়ার অঙ্গীকার ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। কাজেই উদ্দীপকটি গল্পের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণÑ এ কথা বলা যায়।
পৃথিবীর সব মানুষের অঙ্গীকার হোক ‘প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল’Ñ এ অঙ্গীকারে আশাবাদী ও শান্তিকামী মানুষকে নতুন উদ্দীপনায় প্রাণবন্ত করে তুলবে, এটা নিশ্চিত।
মানুষের মধ্যে যেমন মহৎ সৃজনীশক্তির সক্রিয়তা রয়েছে, তেমনি ক্ষতিকর বা ধ্বংসাত্মক অনুষঙ্গগুলো সরিয়ে নির্মল স্বাভাবিক পৃথিবী ফিরিয়ে আনার কৌশলী সক্রিয়তাও রয়েছে। মানুষ ইচ্ছে করলেই তার উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যা কিছু অপকর্ম করেছে, তা থেকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার বুদ্ধিমত্তা রাখে। মানুষই পারে পৃথিবী দূষণের সবকিছু বন্ধ করে, বনভ‚মি সৃষ্টি করে আবার ভারসাম্যপূর্ণ প্রাকৃতিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে। সেই অঙ্গীকারই ব্যক্ত হয়েছে উদ্দীপকে।
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে কিউরেটরদ্বয় পৃথিবীকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য মানুষকেই দায়ী করেছে। তারাই বনভ‚মি সাবাড় করে, পরিবেশ দূষিত করে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করেছে। প্রাণি ও জীবজগৎ বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তাই মানুষকেই এসব দূষণ থেকে মুক্ত করে স্বাভাবিক পৃথিবী গড়ে তুলতে হবেÑ এমন চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের অবিবেচনা ও অপরিণামদর্শিতার কারণেই পৃথিবী আজ বিপন্ন।
উদ্দীপকে পৃথিবীর দূষণের সমস্ত জঞ্জাল সরিয়ে পৃথিবীকে আবার বাসযোগ্য করে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত হয়েছে। বৃহৎ শক্তিগুলোকে পৃথিবী ধ্বংসের সমস্ত অনুষঙ্গগুলো নিষ্ক্রিয় করে সবুজ সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার অঙ্গীকার আজ সকলের জন্যই প্রযোজ্য।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
উদ্দীপক -১ : কেবল পরের হিত প্রেমলাভ যার
মানুষ তারেই বলি মানুষকে আর?
উদ্দীপক-২ : আর বিপদে কখনো দিলহারা হয় না। অন্যকে বাঁচানোর জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়ে যাচ্ছে।’
ক. ডাইনোসর কী?
খ. ‘পৃথিবী একসময় এরাই নিয়ন্ত্রণ করবে’- কথাটা বুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপক-১ এবং উদ্দীপক-২ এর মধ্যে কোনদিক থেকে সাদৃশ্য আছে? আলোচনা কর।
ঘ. ‘বিরূপ কর্মকাণ্ড নয়, পৃথিবী আর মানুষকে ভালোবাসাই বড় কাজ’ ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্প অনুসরণে কথাটা মূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
৮ নং প্রশ্নের উত্তর
ডাইনোসর লুপ্ত হওয়া বৃহদাকার প্রাগৈতিহাসিক প্রাণি।
‘পৃথিবী একসময় এরাই নিয়ন্ত্রণ করবে’Ñ মন্তব্য করেছে দ্বিতীয় কিউরেটর। কেননা পিঁপড়াকেই তারা সুবিবেচক ও বুদ্ধিমান প্রাণি মনে করেছে।
পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বুদ্ধি-বিবেচনা, শক্তি-সামর্থ্য, শৃঙ্খলা, ঐক্য, উৎপাদনশীলতা সৃজনশীলতা এবং শুভ ও কল্যাণবোধ থাকা অত্যাবশ্যক। শুধু পৃথিবী থেকে গ্রহণ করলেই হবে না, পৃথিবীর সবকিছু টিকিয়ে রাখার জন্য ত্যাগ স্বীকারও করতে হবে। প্রকৃতির জগতের ভারসাম্য রক্ষার জন্য যা কিছু করা দরকার, সেসব কৌশল উদ্ভাবন ও তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। পিঁপড়ার সেসব গুণাবলি আছে বলেই ধারণা কিউরেটরদের। মানুষ নিজেদের ধ্বংস করার পরও পিঁপড়া বেঁচে থাকবে এবং তারাই ভবিষ্যতে পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করবে।
উদ্দীপক-১ ও উদ্দীপক-২ এর মধ্যে পরকল্যাণে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের দিক থেকে চমৎকার সাদৃশ্য আছে।
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মানুষ সম্পর্কেও কিউরেটরদের ধারণা সন্তোষজনক নয়। কেননা তাদের উদ্ভাবনী শক্তি থাকলেও তার অনেকগুলোই তারা প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করার তথা পৃথিবী ধ্বংস করার কাজে ব্যয় করছে হীন স্বার্থে। কিন্তু পিঁপড়ার মধ্যে এ ধরনের কোনো নেতিবাচক কিছুর ইঙ্গিত নেই। বরং তাদের কাজকর্ম খুবই ভারসাম্যপূর্ণ। তারা সামাজিক, দল বেঁধে থাকে। তাদের মধ্যে শ্রমিক, সৈনিক আছে। বংশ বিস্তারের নিজস্ব পদ্ধতি আছে। তারা চাষাবাদ করতে পারে। তারা সুশৃঙ্খল, অসম্ভব পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল। সেই পিঁপড়া সুবিবেচক ও পরোপকারী। ঝগড়া-বিবাদ করে না, পৃথিবীর কোনো ক্ষতিও করে না। এমনকি কোনো বিপদে এরা দিশাহারাও হয় না। কিউরেটরদের ধারণা, ডাইনোসরের যুগ থেকে তারা বেঁচে আছে এবং মানুষ নিজেদের ধ্বংস করার পরও তারা বেঁচে থাকবে। একসময় পিঁপড়ারাই পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করবে।
গল্পের পিঁপড়াদের ত্যাগী ও কল্যাণকামী মনোভাবের কথা উদ্দীপক-১ এর মধ্যেও ব্যক্ত হয়েছে। উদ্দীপক-১ এ কবি নিশ্চিতভাবেই বলেছেন ‘মানুষ’ অভিধা পাওয়ার যোগ্য সেই যে মানুষকে ভালোবেসে মানুষের কল্যাণে নিজেকে অকাতরে নিবেদন করে। মানুষের যেমন কোনো ক্ষতি করে না, তেমনি প্রকৃতির কোনো ক্ষতি করে না তারা। কেবল উদার ও কল্যাণকামী মনোভাবের মধ্যেই তাদের বিচরণ। সুতরাং, উদ্দীপক-১ ও উদ্দীপক-২ এর মধ্যে আলোচিত মনোভাবের সুন্দর সাদৃশ্য আছে, এ কথা সহজেই বলা যায়।
‘বিরূপ কর্মকাণ্ড নয়, পৃথিবী আর মানুষকে ভালোবাসাই বড় কাজ’Ñ পৃথিবীর কল্যাণ ও ভারসাম্য রক্ষা করার মহত্তম স্বার্থে এ কথাটি যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত।
মনুষ্যবোধে উজ্জীবিত মানুষ মানবিক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সব শ্রেণির মানুষকে ভালোবাসবে, মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখবে। সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে, অভাব-অনটনে, সমস্যা-জটিলতায় একে অপরের জন্য এগিয়ে আসবে সহযোগিতা ও সহানুভ‚তি নিয়ে। একে অপরের সুখে আনন্দ করবে, বিপদে সাহায্য করবে। একে অপরের উপকার করবে, কল্যাণ চিন্তাকেই প্রাধান্য দেবে। তাহলেই মানুষের সমাজে তথা সারা পৃথিবীতে টিকে থাকবে সুখ ও শান্তি, এগিয়ে যাবে সমৃদ্ধির দিকে।
উদ্দীপক দুটোতে মানুষের এই গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের কথাই ব্যক্ত হয়েছে। কেননা নামে মানুষ হওয়ার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। অন্তরের মধ্যে মানুষের ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোর লালন এবং যাবতীয় কর্মকাণ্ডে তার কার্যকর প্রতিফলনের মধ্যেই ‘মানুষ’ নামের তাৎপর্য নিহিত। তাহলো, সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসা এবং তাদের মহত্তম কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা। এ জন্যই উদ্দীপক-১ এ কবি বলেছেন, কেবল পরের হিতে প্রেমলাভ যার সেই প্রকৃত মানুষ। ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্প থেকে সংকলিত উদ্দীপক-২ এ পিঁপড়ার মধ্যে মানবিক গুণ আরোপ করে বলা হয়েছে, অন্যের প্রাণ বাঁচানোর জন্য তারা অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করছে। তারা কোনো ক্ষতিকর বা বিরূপ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নয়। মানুষকেও তেমনি বিরূপ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থেকে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করতে হবে।
সুতরাং, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, ‘বিরূপ কর্মকাণ্ড নয়, পৃথিবী আর মানুষকে ভালোবাসাই বড় কথা’Ñ এ মন্তব্যই আজকের দিনে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
‘যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেইÑপ্রীতি নেই, করুণার আলোড়ন নেই, পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
ক. ‘প্রকৃতির এতটুকু ক্ষতি করেনি’- কারা?
খ. ‘এদের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আমি খুব নিশ্চিত নই’- কথাটা বুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের সম্পর্ক নির্ধারণ কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকটিতে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের কিয়দংশের ছাপ পড়েছে’Ñ ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্প অনুসরণে কথাটার যথার্থতা বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৯ নং প্রশ্নের উত্তর
প্রকৃতির এতটুকু ক্ষতি করেনি পিঁপড়া।
‘এদের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আমি খুব নিশ্চিত নই’ প্রথম কিউরেটর পাখির বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করেছে।
প্রথম কিউরেটরের পাখি খুব পছন্দ হয়েছে । কেননা এরা দেখতে সুন্দর, নানা আকারের, নানা বর্ণের। এদের দুটো পখা আছে এবং পাখা মেলে এরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারে, আকাশে উড়তে পারে। দ্বিতীয় কিউরেটরেরও পাখি পছন্দ হয়েছে এবং এই প্রাণিটি নেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে। কিন্তু প্রথম কিউরেটর এদের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। কেননা এদের বুদ্ধিমত্তার কোনো প্রমাণ তাদের নজরে আসেনি। তাই প্রথম কিউরেটর খোলামেলা বলেছেÑ‘এদের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আমি খুবই নিশ্চিত নই।’
উদ্দীপকের সাথে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের সাদৃশ্যগত সম্পর্ক রয়েছে। কেননা অনুচ্ছেদে ও গল্পে মানুষের নেতিবাচক দিকের প্রতি অঙুলি নির্দেশ করা হয়েছে।
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রাণি হলো মানুষ। কিউরেটরদের পর্যবেক্ষণে সে আলোড়ন যতটা ইতিবাচক তার চেয়ে অনেক বেশি নেতিবাচক। অর্থাৎ মানুষ সভ্যতা নির্মাণে যতটা উদ্ভাবন ও গঠনমূলক কাজ করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি নেতিবাচক কাজ করেছে সভ্যতা তথা পৃথিবী ধ্বংসসাধন করতে। নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে গোচরে বা অগোচরে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট এবং ওজোন স্তরের ক্রমশ ক্ষতি করে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে গেছে। মানুষ নিজেও আজ অকল্পনীয় হুমকির সম্মুখীন। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি অবস্থান করছে। কেননা এই সুন্দর পৃথিবীর প্রতি আর শান্তিকামী মানুষের প্রতি স্বার্থপর অবিবেচক মানুষের হৃদয়ে কোনো প্রেম, প্রীতি, করুণা নেই। কেবল আছে হিংসা লোভ-ক্রোধ আধিপত্য বিস্তারের ঘৃণ্য মানসিকতা।
উদ্দীপকের কবিতাংশেও মানুষের নির্মম ও নিষ্ঠুর মনোভাবের কথা ব্যক্ত হয়েছে। পৃথিবীর অনেক মানুষের হৃদয়ে অধিকাংশ মানুষের জন্য কোনো প্রেম নেই, প্রীতি নেই, করুণার আলোড়ন নেই। একই সাথে এই বিচিত্র সুন্দর পৃথিবীর জন্য তাদের কোনো মমতা বা ভালোবাসা নেই। যদি থাকত তাহলে তারা পৃথিবীকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারত না। আর মানুষকেও আসন্ন ভয়ংকর বিপদের মধ্যেও ফেলতে পারত না। অথচ তাদের মতো ঘৃণিত ও নিন্দিত মানুষের পরামর্শেই পৃথিবীকে চলতে হয়। এর চেয়ে অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। সুতরাং উদ্দীপকের সাথে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের সম্পর্ক খুবই নিবিড় ও সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘অনুচ্ছেদটিতে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের কিয়দংশের ছাপ পড়েছে’-কথাটি যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত। একটি মূল ঘটনা বা কাহিনিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য, তার বিকাশ ও পরিণতির প্রয়োজনে গল্পে নানা কিছুর অবতারণা থাকে এসব অনুষঙ্গের সহায়তা গল্পের মূল বিষয় বা কাহিনি এগিয়ে যায়। যার ফলে গল্প একটু বড় হয়। কিন্তু অনুচ্ছেদ একটি অনুষঙ্গের উপর নির্মিত বলে তা ছোট হয়।
‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে অনন্ত মহাজগৎ থেকে আগত মহাজাগতিক কাউন্সিলের দুজন কিউরেটর সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ অর্থাৎ পৃথিবীতে এসেছে। তাদের উদ্দেশ্য অসংখ্য প্রজাতির মধ্য থেকে তারা শ্রেষ্ঠ প্রজাতিটি বাছাই করে নিয়ে যাবে। এ পর্যায়ে তারা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে বড় প্রাণি হাতি ও তিমি, গাছপালা, সাপ, পাখি, বাঘ, কুকুর, হরিণ পর্যবেক্ষণ করে বুদ্ধিমত্তার কোনো পরিচয় পায়নি। আলোড়ন সৃষ্টিকারী মানুষের সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি তারা মানুষকে স্বেচ্ছাধ্বংসকারী প্রাণি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কারণ তারা প্রকৃতির বিপর্যয় ও পৃথিবীর মারাত্মক ক্ষতিসমূহের জন্য দায়ী। তাদের দৃষ্টিতে কেবল পিঁপড়াই ভারসাম্যপূর্ণ বুদ্ধিমান প্রাণি। কেননা তারা সামাজিক, উৎপাদনশীল, কঠোর পরিশ্রমী, সুশৃঙ্খল, শান্তিকামী ও সুবিবেচক। অন্যকে বাঁচানোর জন্য অকাতরে প্রাণ দেয়, কিন্তু প্রকৃতির কোনো ক্ষতি করে না। তাই কিউরেটরদ্বয় কয়েকটি পিঁপড়া নমুনা হিসেবে নিয়ে যায়।
অন্যদিকে উদ্দীপকের কবিতাংশের মানুষরূপী নরপশুদের মানুষ ও পৃথিবী ধ্বংসকারী অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কেননা তারা মানুষ নয়, মানুষের মানবিক বৈশিষ্ট্যাবলি তাদের মধ্যে নেই। তাদের হৃদয়ে প্রেম, প্রীতি, করুণার লেশমাত্র নেই। এজন্যই তারা মানবজাতি ধ্বংসের তথা সুন্দর প্রকৃতিবিশিষ্ট পৃথিবী ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ তাদের অঙুলি হেলনে পৃথিবী চলছে। এ বিষয়টি পুরো গল্পের একটি অংশ মাত্র।
অতএব একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উদ্দীপকটিতে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের কিয়দংশের ছাপ পড়েছে মাত্র’- কথাটা যথার্থ ও সার্থক।
জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
১. প্রাণিজগতে একটু পিছিয়ে পড়া প্রাণির নাম কী?
উত্তর : প্রাণিজগতে একটু পিছিয়ে পড়া প্রাণীর নাম হলো সরীসৃপ।
২. ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে কোন প্রাণি নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে?
উত্তর : কুকুর নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে।
৩. ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে কোন শ্রেণির প্রাণীর মাঝে স্বকীয়তা লোপ পেয়ে যাচ্ছে?
উত্তর : ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে গৃহপালিত প্রাণির মাঝে স্বকীয়তা লোপ পেয়ে যাচ্ছে।
৪. গাছপালা কী দিয়ে নিজের খাবার নিজেই তৈরি করে?
উত্তর : গাছপালা আলোকসংশ্লেষণ দিয়ে নিজের খাবার নিজেই তৈরি করে।
৫. সব প্রাণির জন্য মূল গঠনটি হচ্ছে কী দিয়ে?
উত্তর : সব প্রাণির জন্য মূল গঠনটি হচ্ছে ডিএনএ দিয়ে।
৬. ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে তৃণভোজী প্রাণী বলা হয়েছে কোন প্রাণিকে?
উত্তর : ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে তৃণভোজী প্রাণী বলা হয়েছে হরিণকে।
৭. জাদুঘরের তত্ত¡াবধায়ককে কী বলা হয়?
উত্তর : জাদুঘরের তত্ত¡াবধায়ককে কিউরেটর বলা হয়।
৮. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘সায়েন্স ফিকশন সমগ্র’ তৃতীয় খণ্ড কত সালে প্রকাশিত হয়?
উত্তর : মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘সায়েন্স ফিকশন সমগ্র’ তৃতীয় খণ্ড ২০০২ সালে প্রকাশিত হয়।
৯. পিঁপড়া নিজের শরীর থেকে কতগুণ বেশি জিনিস অনায়াসে নিয়ে যেতে পারে?
উত্তর : পিঁপড়া নিজের শরীর থেকে দশগুণ বেশি জিনিস অনায়াসে নিয়ে যেতে পারে।
১০. বাতাসের ওজোন স্তর শেষ হওয়ার পেছনে দায়ী কে?
উত্তর : বাতাসের ওজোন স্তর শেষ হওয়ার পেছনে দায়ী মানুষ।
১১. মানুষ কত বছর আগে জন্ম নিয়েছে?
উত্তর : মানুষ মাত্র দুই মিলিয়ন বছর আগে জন্ম নিয়েছে।
১২. পিঁপড়া কোন যুগ থেকে বেঁচে আছে?
উত্তর : পিঁপড়ারা সেই ডাইনোসরের যুগ থেকে বেঁচে আছে।
১৩. ওজোন স্তর আমাদের কী থেকে রক্ষা করে?
উত্তর : ওজোন স্তর আমাদের সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
১৪. লুপ্ত হওয়া বৃহদাকার প্রাগৈতিহাসিক প্রাণি বলা হয় কাকে?
উত্তর : লুপ্ত হওয়া বৃহদাকার প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী বলা হয় ডাইনোসরকে।
১৫. বুকে ভর দিয়ে চলে এমন প্রাণিকে কী বলা হয়?
উত্তর : বুকে ভর দিয়ে চলে এমন প্রাণীকে সরীসৃপ বলা হয়।
১৬. ‘আলোকসংশ্লেষণ দিয়ে নিজের খাবার নিজেই তৈরি করে নিচ্ছে।’Ñউক্তিটি দ্বারা কাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে?
উত্তর : ‘আলোকসংশ্লেষণ দিয়ে নিজের খাবার নিজেই তৈরি করে নিচ্ছে।’Ñউক্তিটি দ্বারা গাছপালাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
পৃথিবীর জীবজগতের মধ্যে উদ্ভিদ হলো উৎপাদক অর্থাৎ নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করতে পারে। শুধু সূর্যের আলোকের উপস্থিতিতে আলোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় এরা শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপন্ন করে যা দেহের বৃদ্ধি ঘটায়।
১৭. ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে অত্যন্ত সুবিবেচক প্রাণী কী?
উত্তর : ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে অত্যন্ত সুবিবেচক প্রাণী পিঁপড়া।
খ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
১. ‘এখানে প্রাণের বিকাশ হয়েছে।’Ñউক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : পৃথিবী নামক গ্রহে প্রাণের বিকাশ সম্পর্কেই ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।
দুজন মহাজাগতিক কিউরেটর সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ অর্থাৎ পৃথিবীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল। দেখতে দেখতে প্রথম প্রাণীটি হঠাৎ করেই বলে উঠল, এখানে প্রাণের বিকাশ রয়েছে।
২. ‘সবচেয়ে সহজ এবং সবচেয়ে জটিল প্রাণিটির একই রকম গঠন’Ñউক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘সবচেয়ে সহজ এবং সবচেয়ে জটিল প্রাণীটির একই রকম গঠন’Ñউক্তিটি দ্বারা সব প্রাণীর মূল গঠন ডিএনএ দ্বারা গঠিতÑএটাই বোঝানো হয়েছে।
পৃথিবীর সব প্রাণি একইভাবে তৈরি হয়েছে। সব প্রাণীর ডিএনএ একই রকম। সবগুলো একই বেস পেয়ার দিয়ে তৈরি। প্রাণিগুলোর নীলনকশা এই ডিএনএ দিয়ে তৈরি করে রাখা হয়েছে। কারো এই নীলনকশা সহজ, কারো জটিল এটুকুই হচ্ছে পার্থক্য।
৩. ব্যাকটেরিয়াকে নমুনা প্রাণী হিসেবে কেন পছন্দ হয়নি কিউরেটরদের?
উত্তর : মাত্রাতিরিক্ত ছোটো বিধায় কিউরেটরদের ব্যাকটেরিয়াকে নমুনা প্রাণী হিসেবে পছন্দ হয়নি।
মহাজাগতিক কাউন্সিল কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে দুজন কিউরেটর বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঘুরে পৃথিবীতে এসেছিল। সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী নির্বাচনের দায়িত্ব ছিল তাদের উপর। তাদের বিবেচনায় এক সময় ব্যাকটেরিয়া আসে। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত ছোটো আণুবীক্ষণিক প্রাণী। এদের খালি চোখে দেখা যায় না। সর্বোপরি এদের মধ্যে কোনো বৈচিত্র্যময়তা নেই। তাই কিউরেটররা ব্যাকটেরিয়াকে নমুনা প্রাণী হিসেবে পছন্দ করেনি।
৪. ‘প্রাণিজগতে সরীসৃপ একটু পিছিয়ে পড়া প্রাণী।’Ñউক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘প্রাণিজগতে সরীসৃপ একটু পিছিয়ে পড়া প্রাণী।’Ñউক্তিটি দ্বারা সরীসৃপদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত নয়Ñএ কথাই বলা হয়েছে।
সরীসৃপ প্রাণী সাধারণত শীতল রক্তবিশিষ্ট হয়। ঠাণ্ডার মাঝে এরা কেমন যেন স্থবির হয়ে পড়ে। তা ছাড়া সরীসৃপদের মধ্যে কোনো কোনো প্রজাতি যেমন সাপ বেশ কৌত‚হলোদ্দীপক হয়ে থাকে। এ সবকিছু চিন্তা করেই কিউরেটরদ্বয় বলেছিল প্রাণিজগতে সরীসৃপ একটু পিছিয়ে পড়া প্রাণী।
৫. “এদের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আমি খুব নিশ্চিন্ত নই’Ñউক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : “এদের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আমি খুব নিশ্চিন্ত নই’Ñউক্তিটি দ্বারা পাখির বুদ্ধিমত্তা যে কম তা বোঝানো হয়েছে।
মহাজাগতিক কাউন্সিল কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে দুজন কিউরেটর বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঘুরে পৃথিবীতে এসেছিল। সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী নির্বাচনের দায়িত্ব ছিল তাদের উপর। তাদের বিবেচনায় এক সময় পাখি আসে। কিন্তু পাখি আকাশে উড়তে পারলেও এদের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে কিউরেটরদ্বয় নিশ্চিন্ত নয়। তাই তারা পাখিকে সঙ্গে নিতে রাজি হলো না।
৬. ‘এদের দীর্ঘ সময় খেতে হয়’Ñউক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘এদের দীর্ঘ সময় খেতে হয়’Ñউক্তিটি দ্বারা তৃণভোজী প্রাণী হরিণকে বোঝানো হয়েছে।
মহাজাগতিক কাউন্সিল কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে দুজন কিউরেটর বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঘুরে পৃথিবীতে এসেছিল। সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী নির্বাচনের দায়িত্ব ছিল তাদের উপর। তাদের বিবেচনায় এক সময় হরিণ প্রাণীটি আসে। কিন্তু হরিণ হলো তৃণভোজী প্রাণী। বেশির ভাগ সময় এটি ঘাস, লতাপাতা খেয়ে কাটায়। তা ছাড়া নমুনা হিসেবে যদি হরিণকে সঙ্গে নেওয়া হয় তবে তার দীর্ঘ সময় খাওয়া দাওয়ার জন্য তাকে সংরক্ষণ করা কঠিন হবে কিউরেটরদ্বয় মনে করে।
৭. ‘তুমি কি সত্যিই বিশ্বাস করো মানুষ এই গ্রহের শ্রেষ্ঠ প্রাণী?’Ñউক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘তুমি কি সত্যিই বিশ্বাস করো মানুষ এই গ্রহের শ্রেষ্ঠ প্রাণী?’Ñউক্তিটি দ্বারা মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণার জন্য দুজন কিউরেটরের মধ্যে তর্ক চলছিল তা বোঝানো হয়েছে।
মানুষকে উচ্চশ্রেণির বুদ্ধিমান প্রাণী বলা হয়। কিন্তু তারপরও তারা তাদের নির্বুদ্ধিতার জন্য পরিবেশকে দূষিত করছে, গাছপালা কেটে উজাড় করছে বনভ‚মি। দুই বিলিয়ন বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেই তারা পৃথিবীকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তারপরও তারা কেমন করে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে। এই নিয়েই দুজন কিউরেটরের মধ্যে দ্বন্দ¡ চলছিল।