নবম দশম শ্রেণির রসায়ন ১০ম অধ্যায় খনিজ সম্পদ ধাতু অধাতু

নবম দশম শ্রেণির রসায়ন 1০ম অধ্যায় খনিজ সম্পদ ধাতু অধাতু এর পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি,জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো।

এসএসসি রসায়ন 1০ম অধ্যায় খনিজ সম্পদ ধাতু অধাতু

পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি

⇒ ভূত্বকের উপাদান : পৃথিবীর উপরিভাগের মাটির আবরণ হলো ভূত্বক। ভূত্বক নানা প্রকার খনিজ উপাদানে গঠিত। অক্সিজেন 46%, সিলিকন 27%, অ্যালুমিনিয়াম 8%, আয়রন 5%, ক্যালসিয়াম 4%, পটাসিয়াম 3%, সোডিয়াম 3%, ম্যাগনেসিয়াম 2% এ উপাদানগুলো দ্বারা ভূত্বক গঠিত।

⇒ ধাতু : যেসব মৌলিক পদার্থ (1) উজ্জ্বল ও চকচকে, (2) সাধারণ অবস্থায় কঠিন, (3) ওজনে ভারী, (4) আঘাত করলে ধাতব শব্দ উৎপন্ন হয়, (5) তাপ ও বিদ্যুতের পরিবাহী সেসব মৌলিক পদার্থকে ধাতু বলে। যেমন : ক্যালসিয়াম, সোনা, রুপা, তামা ইত্যাদি। প্রায় সব ধাতুই সাধারণ অবস্থায় কঠিন থাকে। তবে পারদ ধাতু হলেও স্বাভাবিক অবস্থায় তরল।

⇒ অধাতু : যেসব মৌলিক পদার্থ (1) সাধারণ অবস্থায় কঠিন, তরল বা গ্যাসীয়, (2) ওজনে হালকা, (3) উজ্জ্বল বা চকচকে নয়, (4) সহজে ভেঙে যায়, (5) আঘাত করলে ধাতব শব্দ উৎপন্ন হয় না, (6) তাপ ও বিদ্যুতের অপরিবাহী সেসব মৌলিক পদার্থকে অধাতু বলে। যেমন : হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, সালফার, কার্বন ইত্যাদি। কার্বন এবং সালফার অধাতু হলেও কঠিন। কার্বন আবার তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী। আয়োডিন অধাতু হলেও চকচকে।

⇒ শিলা : শিলা মূলত যৌগিক পদার্থ। পৃথিবী যখন উত্তপ্ত অবস্থায় ছিল তখন পৃথিবীর মৌলিক পদার্থগুলো আলাদা ছিল। পৃথিবী ধীরে ধীরে শীতল হওয়ায় এ মৌলিক পদার্থগুলো মিলেমিশে দানা বেঁধে নানা রকম যৌগিক পদার্থ তৈরি করে। এসব দানাকে কেলাস বলে। এসব দানা চাপ বেঁধে শিলা গঠন করেছে।

⇒ আগ্নেয় শিলা : উত্তপ্ত তরল অবস্থা থেকে তাপ বিকিরণের ফলে শীতল ও কঠিন হওয়ার সময়ে পৃথিবীর অভ্যন্তরে যে শিলার সৃষ্টি হয় তাকে আগ্নেয় শিলা বলে। আগ্নেয় শিলা কেলাসিত এবং এ শিলার স্ফটিক দেখা যায়। এ শিলা সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না।
⇒ পাললিক শিলা : সমুদ্র, নদী বা হ্রদের তলদেশে স্তরে স্তরে পলি সঞ্চিত হয়ে জমাট বেঁধে যে শিলার সৃষ্টি হয় তাকে পাললিক শিলা বলে। এ শিলায় স্ফটিক থাকে না। হালকা ও সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। স্তরের মধ্যে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবাশ্ম পাওয়া যায়।

⇒ খনিজ : বিভিন্ন প্রকার শিলার গঠন উপাদানই খনিজ। খনিজ হচ্ছে একটি যৌগিক পদার্থ যার সৃষ্টি হয়েছে ভূত্বকে প্রাপ্ত দুই বা ততোধিক স্বাভাবিক মৌলিক উপাদানের রাসায়নিক সংযোগে। তবে এমন খনিজও আছে যা একটি মাত্র মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। যেমন : হীরা, সোনা, গন্ধক, তামা ইত্যাদি। প্রকৃতিতে হীরা ও সোনা মৌলিক অবস্থাতেই পাওয়া যায়। সালফার, তামা ইত্যাদি মৌলিক ও যৌগিক উভয় অবস্থাতেই পাওয়া যায়।

⇒ সক্রিয়তাক্রম : সবচেয়ে বেশি তড়িৎ ধনাত্মক ধাতুগুলো উপরে এবং তা অপেক্ষা কম সক্রিয় ধাতুকে নিচে বসিয়ে ধাতুর একটি সংখ্যাক্রম পাওয়া যায়। একে ধাতুসমূহের সক্রিয়তাক্রম বলা হয়। সক্রিয়তাক্রমের উপরের দিকের ধাতু পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক এবং অধিক সক্রিয়। এ ধাতুগুলো প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। এদের যৌগ থেকে তড়িৎ বিশ্লেষণ দ্বারা মুক্ত করা হয়। ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ক্রোমিয়াম ও আয়রন ধাতুসমূহ মধ্যম সক্রিয়। প্রকৃতিতে এরা অক্সাইড, কার্বনেট বা সালফাইড হিসেবে থাকে। এসব ধাতুকে কোক কয়লা বা কার্বন মনোক্সাইড দ্বারা বিজারিত করে নিষ্কাশন করা হয়। হাইড্রোজেনের নিচের ধাতুসমূহ যেমন কপার ও সিলভার কম সক্রিয় বলে প্রকৃতিতে তাদের মৌল অবস্থায় পাওয়া যায়। এগুলোর নিষ্কাশন সহজসাধ্য।

⇒ আকরিক : যেসব খনিজ থেকে লাভজনকভাবে ধাতু নিষ্কাশন করা যায় তাকে আকরিক বলে। যেমন : অ্যালুমিনিয়ামের আকরিক বক্সাইট (Al2O3, 2H2O), দস্তার আকরিক জিংক ব্লেন্ড (ZnS)।

⇒ ধাতু নিষ্কাশন : আকরিক থেকে মুক্ত ধাতু উৎপন্ন করার পদ্ধতিকে ধাতু নিষ্কাশন বলা হয়। ধাতু নিষ্কাশন প্রকৃতপক্ষে একটি বিজারণ প্রক্রিয়া।

⇒ তড়িৎ বিশ্লেষণের সাহায্যে ধাতু নিষ্কাশন : যে প্রক্রিয়ায় গলিত অথবা দ্রবীভ‚ত অবস্থায় কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে তড়িৎ চালনা করলে পদার্থটির রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে এবং নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন হয় তাদেরকে তড়িৎ বিশ্লেষণ বলা হয়। সবচেয়ে বেশি তড়িৎ ধনাত্মক ধাতু যেমন : পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম তড়িৎ বিশ্লেষণের সাহায্যে নিষ্কাশন করা হয়। এ পদ্ধতিতে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের অণুগুলো ভেঙে পজেটিভ এবং নেগেটিভ আয়নে পরিণত হয়। পজেটিভ আয়নকে ক্যাটায়ন এবং নেগেটিভ আয়নকে অ্যানায়ন বলা হয়। ক্যাটায়ন তড়িৎ রাসায়নিক কোষের ক্যাথোডের সংস্পর্শে এসে ইলেকট্রন গ্রহণ করে তড়িৎ নিরপেক্ষ পরমাণু বা মূলকে পরিণত হয়। অ্যানায়ন তড়িৎ রাসায়নিক কোষের অ্যানোডের সংস্পর্শে এসে ইলেকট্রন বর্জন করে তড়িৎ নিরপেক্ষ পরমাণু বা মূলকে পরিণত হয়।

⇒ কার্বন বিজারণের সাহায্যে ধাতু নিষ্কাশন : কার্বন বিজারণের সাহায্যে মধ্যম সক্রিয় ধাতু ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ক্রোমিয়াম ও আয়রন নিষ্কাশন করা হয়। সাধারণত ধাতুসমূহ প্রকৃতিতে অক্সাইড বা লবণ হিসেবে থাকে। এসব অক্সাইড বা লবণ আয়নিক যৌগ, যার মধ্যে ধাতু ক্যাটায়ন হিসেবে থাকে। অক্সাইড বা লবণ হতে ধাতু নিষ্কাশনের সময় ধাতু প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে তড়িৎ নিরপেক্ষ পরমাণুতে রূপান্তরিত হয়। আমরা জানি, ইলেকট্রন গ্রহণ হচ্ছে বিজারণ; কোনো বিজারক ইলেকট্রন প্রদান করে। যেমন : জিংক প্রকৃতিতে জিংক সালফাইড ZnS বা Zn2+S2-, জিংক কার্বনেট ZnCO3 বা Zn2+CO32-এবং জিংক অক্সাইড ZnS বা Zn2+O2- হিসেবে থাকে। নিষ্কাশনের প্রথম দিকের ধাপসমূহে তাদের জিংক অক্সাইডে রূপান্তরিত করা হয়। অতঃপর, কার্বন দ্বারা বিজারণ করে জিংক ধাতু মুক্ত করা হয়।

⇒ ধাতুসমূহের প্রধান আকরিক:

ধাতু আকরিকের নাম
Na খাবার লবণ (NaCl), সল্টপিটার (NaNO3), সাজিমাটি (Na2CO3)
Al বক্সাইট (Al2O3.2H2O), ডায়াস্পোর (Al2O3.H2O), কেওলিন (Al2O3. 2SiO2. 2H2O), ফেলস্পার (K2O2. Al2O3. 6SiO2)
Zn জিংক বেøন্ড (ZnS), ক্যালামাইন (ZnCO3), জিংকাইট (ZnS), ফ্রাঙ্কলিনাইট (ZnS. Fe2O3)
Ca চুনাপাথর (CaCO3), জিপসাম (CaSO4. 2H2O), ফসফোরাইট Ca3(PO4)2
Mg ডলোমাইট (MgCO3. CaCO3), ম্যাগনেসাইট (MgCO3), কাইসেরাইট (MgSO4.H2O)
Pb গ্যালেনা (PbS), আংলেসাইট (PbSO4), লেড ওকার (PbO)
Fe ম্যাগনেটাইট (Fe3O4), হেমাটাইট (Fe2O3), লিমোনাইট (Fe2O3.3H2O)
Cu চালকোসাইট (Cu2S), কপার পাইরাইটস (CuFeS2), কিউপ্রাইট (Cu2O), চেলকোসাইট (Cu2S)

⇒ সংকর ধাতু : দুই বা ততোধিক ধাতু সমসত্ত¡ বা অসমসত্ত¡ মিশ্রণে যে কঠিন পদার্থ তৈরি হয় তাকে সংকর ধাতু বলে। সংকর ধাতু তার উপাদান মৌলগুলো থেকে বেশি নমনীয়, ঘাতসহ এবং ক্ষয় কম হয়। ধাতু অপেক্ষা ধাতু সংকর অনেক বেশি ব্যবহার উপযোগী।

 

⇒ কয়েকটি সংকর ধাতুর নাম, উপাদান এবং ব্যবহার

সংকর ধাতু উপাদান ও শতকরা পরিমাণ ব্যবহার
পিতল বা ব্রাস Cu – 65%, Zn – 35% বাসনপত্র, মূর্তি, নল ইত্যাদি তৈরিতে
কাঁসা বা ব্রোঞ্জ Cu – 90%, Sn – 10% বাসনপত্র, মুদ্রা, মূর্তি প্রভৃতি প্রস্তুত করতে
স্টিল Fe – 99%, C – 1% ছুরি, কাঁচি, যানবাহন, জাহাজ, কৃষি যন্ত্রপাতি, ইঞ্জিন ইত্যাদি তৈরিতে
ডুরালামিন Al – 95%, Cu – 4%

Mg, Mn I Fe – 1%

বিমান ও মোটর গাড়ির বিভিন্ন অংশ এবং যন্ত্রাংশ তৈরিতে
স্টেইনলেস স্টিল Fe-74%, Cr-18%, Ni-8% রুপার মতো চকচকে এ ধাতু সংকর বাসনপত্র, ছুরি, কাঁচি প্রভৃতি তৈরিতে
নাইক্রোম Ni Ni – 60%, Fe – 25%, Cr – 15% বৈদ্যুতিক হিটার, বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি তৈরিতে
স্বর্ণ 24 ক্যারেট-100% Au; 21 ক্যারেট – 87.5% Au I 12.5% Cu; 22 ক্যারেট -91.67% Au I 8.33% Cu অলংকার তৈরিতে।

 

নবম দশম রসায়ন দশম অধ্যায় জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন \ 1 \ ধাতু কাকে বলে?
উত্তর : যে সকল পদার্থ ঘাতসহনীয়তা, নমনীয়তা, উজ্জ্বলতা, পরিবাহিতা, ধাতব শব্দ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, তাদের ধাতু বলে।
প্রশ্ন \ 2 \ প্রকৃতিতে ধাতু ও অধাতু সাধারণত কী হিসেবে অবস্থান করে?
উত্তর : প্রকৃতিতে ধাতু ও অধাতুসমূহ সাধারণত যৌগ হিসেবে অবস্থান করে।
প্রশ্ন \ 3 \ একটি মুক্ত ধাতুর উদাহরণ দাও।
উত্তর : একটি মুক্ত ধাতুর উদাহরণ হলো স্বর্ণ।
প্রশ্ন \ 4 \ একটি মুক্ত অধাতুর উদাহরণ দাও।
উত্তর : একটি মুক্ত অধাতুর উদাহরণ হলো সালফার।
প্রশ্ন \ 5 \ পাললিক শিলা কাকে বলে?
উত্তর : সিমেন্ট জাতীয় পদার্থ ক্যালসিয়াম কার্বনেট ক্ষুদ্র কণাকে শক্ত করে ধরে রাখার ফলে পাথরের ন্যায় যে শিলা উৎপন্ন হয়, তাকে পাললিক শিলা বলে।
প্রশ্ন \ 6 \ আগ্নেয় শিলা কী?
উত্তর : গলিত ম্যাMgা পুনরায় ঠাণ্ডা হয়ে যে কঠিন শিলায় পরিণত হয় তাকে আগ্নেয় শিলা বলা হয়।
প্রশ্ন \ 7 \ সিরামিক কারখানায় কোন ধরনের মাটি ব্যবহৃত হয়?
উত্তর : সিরামিক কারখানায় কেওলিন বা অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ মাটি ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন \ 8 \ কী কারণে শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়?
উত্তর : তাপমাত্রা, বৃষ্টি, কুয়াশা, ঝড়, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদির কারণে শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
প্রশ্ন \ 9 \ ধাতুর সক্রিয়তা ক্রম কী?
উত্তর : অধিকতর সক্রিয় ধাতুকে উপরে এবং তা অপেক্ষা কম সক্রিয় ধাতুকে নিচে বসিয়ে ধাতুর যে সংখ্যাক্রম পাওয়া যায়, তাকে ধাতুর সক্রিয়তা ক্রম বলে।
প্রশ্ন \ 1০ \ প্রকৃতিতে লেডের প্রধান আকরিক কী?
উত্তর : প্রকৃতিতে লেডের প্রধান আকরিক গ্যালেনা (PbS)।
প্রশ্ন \ 11 \ ধাতু নিষ্কাশন কী?
উত্তর : আকরিক থেকে তড়িৎ বিশ্লেষণ, কার্বন বিজারণ, তাপজারণ দ্বারা ধাতু মুক্ত করার পদ্ধতিকে ধাতু নিষ্কাশন বলে।
প্রশ্ন \ 12 \ ধাতুর তড়িৎ বিশোধন কী?
উত্তর : তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আকরিক থেকে ধাতুর নিষ্কাশন প্রক্রিয়াকে ধাতুর তড়িৎ বিশোধন বলে।
প্রশ্ন \ 13 \ স্মেল্টিং কী?
উত্তর : কোনো ধাতুর আকরিককে গলিয়ে তা থেকে ধাতুর নিষ্কাশন প্রক্রিয়াকে বলে স্মেল্টিং।
প্রশ্ন \ 14 \ গ্যালভানাইজিং কী?
উত্তর : লোহার তৈরি কোনো জিনিসের ওপর জিংক ও টিন দিয়ে প্রলেপ দেওয়াকে বলে গ্যালভানাইজিং।
প্রশ্ন \ 15 \ ইলেকট্রোপ্লেটিং কী?
উত্তর : বৈদ্যুতিক পদ্ধতিতে একটি ধাতুর ওপর অন্য ধাতুর প্রলেপ দেওয়াকে ইলেকট্রোপ্লেটিং বলে।
প্রশ্ন \ 16 \ ভালকানাইজিং কী?
উত্তর : রাবারের তৈরি জিনিসপত্র শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে রাবারের সাথে সালফার মিশানোকে ভালকানাইজিং বলে।
প্রশ্ন \ 17 \ তাপজারণ কী?
উত্তর : ঘনীকৃত আকরিককে তাপ দিয়ে অক্সাইড আকরিকে পরিণত করাকে তাপজারণ বলা হয়।
প্রশ্ন \ 18 \ ফ্রাশ পদ্ধতি কী?
উত্তর : খনি থেকে সালফার আহরণ প্রক্রিয়াকে ফ্রাশ পদ্ধতি বলে।
প্রশ্ন \ 19 \ বিরঞ্জক কী?
উত্তর : যেসব পদার্থ বায়ু বা পানির উপস্থিতিতে রঙিন বস্তুকে বর্ণহীন করতে পারে তাকে বিরঞ্জক বলে।
প্রশ্ন \ 2০ \ ওলিয়াম কী?
উত্তর : ধূমায়মান সালফিউরিক এসিডকে ওলিয়াম বলে।
প্রশ্ন \ 21 \ প্রকৃতিতে অ্যালুমিনিয়াম কী রূপে অবস্থান করে?
উত্তর : অ্যালুমিনিয়াম প্রকৃতিতে যৌগ হিসেবে অবস্থান করে।
প্রশ্ন \ 22 \ অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশনে ক্যাথোডে কী বিক্রিয়া সংঘটিত হয়?
উত্তর : অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশণে ক্যাথোডে বিজারণ বিক্রিয়া সংঘটিত হয়।

নবম দশম শ্রেণির রসায়ন 1০ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন \ 1 \ বাত্যাচুল্লি বলতে কী বোঝ?
উত্তর : লোহা নিষ্কাশনে ব্যবহৃত শতাধিক ফুট দীর্ঘ নলাকার কাঠামোকে বাত্যাচুল্লি বলে।
শতাধিক ফুট দীর্ঘ এ চুল্লির মাঝখানটি অপেক্ষাকৃত চওড়া, ইস্পাতের ভেতরের দিকে অগ্নিসহ মৃত্তিকার পুরু আস্তরণ দেয়া থাকে। চুল্লির নিচের অংশে ও এর চারদিকে কয়েকটি শক্ত ও মোটা নল থাকে যেগুলোকে টুইয়ের বলা হয়।
প্রশ্ন \ 2 \ হাইড্রোজেনকে কেন সক্রিয়তা সিরিজে স্থান দেওয়া হয়েছে?
উত্তর : হাইড্রোজেন ধাতু না হলেও এটি এসিডে ধনাত্মক আয়ন দেয় এবং এটি ইলেকট্রন ত্যাগী। হাইড্রোজেন বিজারণ ক্ষমতা হিসেবে সক্রিয়তা সিরিজে স্থান পেয়েছে।
প্রশ্ন \ 3 \ আকরিক মাত্রই খনিজ, কিন্তু সব খনিজ আকরিক নয় কেন?
উত্তর : আকরিক মাত্রই খনিজ কিন্তু সব খনিজ আকরিক নয়- কারণ আকরিক বলতে আমরা নির্দিষ্ট কোনো ধাতুর সেসব খনিজকে বুঝি যা থেকে সহজে এবং সুলভে ওই ধাতুটি নিষ্কাশন করা যায়। যেমন : অ্যালুমিনিয়ামের তিনটি খনিজ যথাক্রমে- বক্সাইট, ফেলস্পার এবং ডায়াস্পার। এদের মধ্যে কেবল বক্সাইট থেকেই সহজে ও কম ব্যয়ে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশন করা হয়ে থাকে- অর্থাৎ এ খনিজ তিনটির মধ্যে বক্সাইটই অ্যালুমিনিয়ামের আকরিক এবং অপর খনিজ দুটি অ্যালুমিনিয়ামের আকরিক নয়।
প্রশ্ন \ 4 \ ইস্পাত থেকে স্টেইনলেস স্টিল অধিক কার্যকরী কেন?
উত্তর : ইস্পাতকে সব কাজে ব্যবহার করা যায় না কারণ এতে মরিচা ধরে। কিন্তু ইস্পাতে যদি ক্রোমিয়াম ধাতু মিশ্রিত করা হয় তবে তা মরিচারোধী স্টেইনলেস স্টিলে পরিণত হয়। এ ইস্পাত বিশেষ গুণের অধিকারী হয়। স্টেইনলেস স্টিল উজ্জ্বল এবং এ দিয়ে ছুরি, কাঁচি প্রভৃতি তৈরি করা যায় যা ইস্পাত দিয়ে সম্ভব নয়।
প্রশ্ন \ 5 \ তড়িৎ বিশ্লেষণের সাহায্যে ক্যালসিয়াম ধাতু প্রস্তুতির মূলনীতি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : গলিত ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডের (CaCl2) তড়িৎ বিশ্লেষণের সাহায্যে Ca ধাতু মুক্ত করা হয়। একটি তড়িৎ বিশ্লেষণ কোষে গলিত CaCl2 নিয়ে এর মধ্যে তড়িৎদ্বার হিসেবে প্লাটিনাম দণ্ড এবং গ্রাফাইট দণ্ড ব্যবহার করা হয়। প্লাটিনাম দণ্ড ক্যাথোড হিসেবে আর গ্রাফাইট দণ্ড অ্যানোড হিসেবে কাজ করে। এখন গলিত CaCl2-এর মধ্যে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করলে Ca++ আয়নগুলো ক্যাথোডের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং আয়নগুলো ক্যাথোড থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ধাতব Ca এ পরিণত হয় এবং ক্যাথোডে জমা হয়। অপরদিকে, Cl- আয়নগুলো অ্যানোডের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং আয়নগুলো অ্যানোডে ইলেকট্রন ত্যাগ করে Cl পরমাণুতে পরিণত হয় এবং অ্যানোডে মুক্ত হয়।
ক্যাথোড বিক্রিয়া : CaCl2 Ca++ + 2Cl-
অ্যানোড বিক্রিয়া :
Ca2+ + 2ব- Ca; 2Cl– 2ব- = 2Cl = Cl2
প্রশ্ন \ 6 \ অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড থেকে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশনের সময় ক্রাইয়োলাইট কেন মিশানো হয়?
উত্তর : Al2O3 এর গলনাঙ্ক প্রায় 2০5০0C। এত উচ্চ তাপমাত্রায় Al2O3 গলানো যায় না। কিন্তু গলিত অবস্থা ছাড়া তড়িৎ বিশ্লেষণ করা যায় না। তাই Al2O3 এর সাথে ক্রায়োলাইট (Na3AlF6) খনিজ মিশানো হয়। Na3AlF6 এর গলনাঙ্ক 1০০০0C। Al2O3 এর সাথে Na3AlF6 মিশালে তা 9০০ – 95০0C-এ গলে যায়। অতঃপর এতে তড়িৎ বিশ্লেষণ চালানো হয়।
প্রশ্ন \ 7 \ বিজারক হিসেবে কার্বন ব্যবহৃত হয় কেন?
উত্তর : কার্বন প্রকৃতিতে সহজলভ্য ও সস্তা। কার্বন Zn, Pb ও Fe ধাতুগুলোর চেয়ে শক্তিশালী বিজারক। কার্বন এসব ধাতুকে সহজে প্রতিস্থাপিত করতে পারে। তাই বিজারক হিসেবে কার্বন ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন \ 8 \ সোডিয়াম ক্লোরাইড থেকে সোডিয়াম নিষ্কাশনের সময় CaCl2 কেন মিশানো হয়?
উত্তর : তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় যৌগকে প্রথমে গলাতে হয়। কিন্তু NaCl-এর গলনাঙ্ক 8০10C হওয়ায় তা গলানো খুবই ব্যয়বহুল। NaCl-এর সঙ্গে CaCl2 মিশালে এ মিশ্রণ 6০০0C-এ গলে যায়। এ কারণে CaCl2 মিশানো হয়।
প্রশ্ন \ 9 \ গ্রাফাইটকে অ্যানোড হিসেবে কেন ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : গ্রাফাইট আয়নের সঙ্গে কোনো বিক্রিয়া করে না এবং এটি বিদ্যুৎ সুপরিবাহী বলে তড়িৎ বিশ্লেষণে গ্রাফাইটকে অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্ন \ 1০ \ ধাতু নিষ্কাশনকে বিজারণ প্রক্রিয়া কেন বলা হয়?
উত্তর : সাধারণত ধাতুসমূহ প্রকৃতিতে ধাতুর অক্সাইড বা ধাতুর লবণ হিসেবে থাকে। এসব লবণ বা অক্সাইডসমূহ আয়নিক যৌগ, যাদের মধ্যে ধাতুসমূহ ক্যাটায়ন হিসেবে থাকে। এসব যৌগ থেকে ধাতু নিষ্কাশনের সময় ধাতুর আয়ন প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে তড়িৎ নিরপেক্ষ মুক্ত ধাতুতে পরিণত হয়। আধুনিক মতবাদ অনুযায়ী আমরা জানি ইলেকট্রন গ্রহণ হলো বিজারণ।
অতএব, ধাতু নিষ্কাশন একটি বিজারণ প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন \ 11 \ জিংক ধাতু যে কপার ধাতুর চেয়ে বেশি সক্রিয় তা কীভাবে বুঝবে?
উত্তর : কপার লবণের দ্রবণে জিংক ধাতু প্রবেশ করালে তা লবণ থেকে কপারকে প্রতিস্থাপন করে। কিন্তু জিংক লবণের দ্রবণে কপার ধাতু যোগ করলে তা লবণ থেকে জিংককে প্রতিস্থাপন করতে পারে না।
Zn + CuSO4 = ZnSO4 + Cu
Cu + ZnSO4 = বিক্রিয়া হয় না
সুতরাং, জিংক ধাতু কপার অপেক্ষা বেশি সক্রিয়।
প্রশ্ন \ 12 \ রসায়ন অধ্যয়নে সক্রিয়তা সিরিজের গুরুত্ব উল্লেখ কর।
উত্তর : রসায়ন অধ্যয়নে সক্রিয়তা সিরিজের গুরুত্ব উল্লেখ করা হলো :
1. সক্রিয়তা সিরিজ থেকে একটি ধাতু অন্যান্য কোনো ধাতু অপেক্ষা বেশি সক্রিয় তা সহজে জানা যায়। যেমন : সক্রিয়তা সিরিজের ওপরের দিকের ধাতু সোডিয়াম (Na) নিচের দিকের ধাতু অ্যালুমিনিয়াম (Al) অপেক্ষা বেশি সক্রিয়।
2. কোন কোন ধাতু প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যাবে তা এ ক্রম থেকে জানা যায়।
3. সক্রিয়তা ক্রম হতে ধাতুসমূহের নিষ্কাশন পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়।
প্রশ্ন \ 13 \ H2SO4 কে নিরুদকরূপে ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তর : পানির প্রতি তীব্র আসক্তি থাকার জন্য গাঢ় H2SO4 নিরুদকরূপে ব্যবহৃত হয়। এজন্য চিনি, কাগজ, স্টার্চ প্রভৃতি জৈব পদার্থের মধ্যে গাঢ় H2SO4 যোগ করলে H2SO4 পদার্থের অণু থেকে পানি শোষণ করে পদার্থটিকে বিযোজিত করে দেয়। ফলে প্রতিক্ষেত্রে এসব পদার্থ কালো কার্বনে পরিণত হয়।
C12H22O11 + [গাঢ় H2SO4] = 12C + 11H2O + [H2SO4]
প্রশ্ন \ 14 \ ক্লোরিনকে অধাতু বলা হয় কেন?
উত্তর : ক্লোরিন একটি অধাতু। কারণ-
i. সাধারণ তাপমাত্রায় ক্লোরিন মৌলটি গ্যাসীয়।
ii. ক্লোরিন ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়ন বা অ্যানায়ন (Cl-) উৎপন্ন করে।
iii. হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়ায় ক্লোরিন হাইড্রাইড যৌগ গঠন করে।
রা. অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়ায় Ag্লধর্মী অক্সাইড Cl2ঙ7 (হেপ্টাক্সাইড) উৎপন্ন করে।

 

 

Scroll to Top