নবম-দশম শ্রেণির বাংলা অভাগীর স্বর্গ
অভাগীর স্বর্গ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লেখক পরিচিতি : নাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জন্ম পরিচয় জন্ম তারিখ : ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই সেপ্টেম্বর। জন্মস্থান : পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রাম। শিক্ষা আর্থিক সংকটের কারণে এফ.এ শ্রেণিতে পড়ার সময় ছাত্রজীবনের অবসান ঘটে। ব্যক্তিজীবন কৈশোরে অস্থির স্বভাবের কারণে তিনি কিছুদিন ভবঘুরে জীবনযাপন করেন। ১৯০৩ সালে ভাগ্যের অন্বেষণে বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) যান এবং রেঙ্গুনে (বর্তমান ইয়াংগুন) অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের অফিসে কেরানি পদে চাকরি করেন। এখানেই তাঁর সাহিত্যসাধনার শুরু হয়। সাহিত্যিক পরিচয় মূল পরিচয় কথাসাহিত্যিক হিসেবে। উপন্যাস ও গল্প রচনার পাশাপাশি তিনি কিছু প্রবন্ধ রচনা করেন। বাংলা সাহিত্যের সর্বাধিক জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক। উল্লেখযোগ্য রচনা উপন্যাস : বিরাজ বৌ, দেবদাস, পরিণীতা, পল্লিসমাজ, বৈকুণ্ঠের উইল, শ্রীকান্ত, চরিত্রহীন, দত্তা, গৃহদাহ, দেনা পাওনা, পথের দাবী, শেষ প্রশ্ন। গল্পগ্রন্থ : বড়দিদি, রামের সুমতি, বিন্দুর ছেলে, মেজদিদি, পণ্ডিতমশাই, ছবি। পুরস্কার ১৯২০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক এবং ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি লাভ করেন। মৃত্যু ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই জানুয়ারি কলকাতায়। বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর ১. কোন নদীর তীরে শ্মশান ঘাট অবস্থিত? ছ ক. শঙ্খ খ. গরুড় গ. গড়াই ঘ. পদ্মা ২. রসিক বেল গাছটি কী কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিল? চ ক. অভাগীর শবদাহ খ. ঘরবাড়ি তৈরি গ. রান্নার কাঠ সংগ্রহ ঘ. কাঙালীর জন্য উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও : তর্করতœ কহিলেন ধার নিবি শুধবি কীভাবে? গফুর বলিল, যেমন করে পারি শুধব বাবা ঠাকুর, তোমাকে ফাঁকি দেব না। ৩. তর্করতœ অভাগীর স্বর্গ গল্পের কোন্ চরিত্রের প্রতিনিধি? ঝ ক. ঠাকুর দাস মুখুয্যে খ. রসিক দুলে গ. দারোয়ানজী ঘ. অধর ৪. এই প্রতিনিধিত্বের কারণ হলো Ñ র. উভয়েই জমিদারের প্রতিনিধি রর. জমিদারের গোমস্তা ররর. জমিদার ও ব্রাহ্মণ নিচের কোনটি সঠিক? চ ক. র খ. রর গ. ররর ঘ. রর ও ররর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর এই নিষ্ঠুর অভিযোগে গফুর যেন বাক্রোধ হইয়া গেল। ক্ষণেক পরে ধীরে ধীরে কহিল, কাহন খানেক খড় এবার ভাগে পেয়েছিলাম। কিন্তু গেল সনের বকেয়া বলে কর্তামশায় সব ধরে রাখলেন? কেঁদে কেটে হাতে পায়ে পড়ে বললাম, বাবু মশাই, হাকিম তুমি, তোমার রাজত্ব ছেড়ে আর পালাব কোথায়? আমাকে পণদশেক বিচুলি না হয় দাও। চালে খড় নেই। বাপ বেটিতে থাকি, তাও না হয় তালপাখার গোঁজাগাঁজা দিয়ে এ বর্ষাটা কাটিয়ে দেব, কিন্তু না খেতে পেয়ে আমার মহেশ যে মরে যাবে। ক. কাঙালীর বাবার নাম কী? ১ খ. ‘তোর হাতের আগুন যদি পাই, আমিও সগ্যে যাব’ উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। ২ গ. উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের যে সমাজচিত্রের ইঙ্গিত রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো। ৩ ঘ. কাঙালীর সঙ্গে উদ্দীপকের গফুরের সাদৃশ্য থাকলেও কাঙালী সম্পূর্ণরূপে গফুরের প্রতিনিধিত্ব করে না Ñ মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো। ৪ ১ এর ক নং প্র. উ. ক্ষ কাঙালীর বাবার নাম রসিক বাঘ। ১ এর খ নং প্র. উ. ক্ষ ‘তোর হাতের আগুন যদি পাই, আমিও সগ্যে যাব’Ñ মা গভীর ধর্মবিশ্বাস থেকে কাঙালীকে এ উক্তিটি করেছিল। মুখুয্যে বাড়ির গৃহকর্ত্রীর মৃত্যুর পর সৎকারের দৃশ্য দেখে অভাগীর ভেতরে এক ধরনের ভাবানুভ‚তির সৃষ্টি হয়। মৃতের শবযাত্রার আড়ম্বরতা ও সৎকারের ব্যাপকতা দেখে অভাগী বিস্মিত হয়। ভাবে, তার মৃত্যুর সময় স্বামীর পায়ের ধূলি নিয়ে মৃত্যুর পর পুত্র কাঙালী মুখাগ্নি করলে সেও স্বর্গে যাবে। তাই অভাগী তার সেই শেষ ইচ্ছার কথাই সন্তানের কাছে বলে। ১ এর গ নং প্র. উ. ক্ষ উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে বর্ণিত সামন্তবাদী সমাজচিত্রের ইঙ্গিত রয়েছে। ‘অভাগীর স্বর্গ’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অসামান্য সৃষ্টি। এখানে অভাগী ও কাঙালীর জবানিতে বর্ণভেদ প্রথা ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত মানুষের গভীর আর্তনাদ ও সমাজপতিদের নির্মম নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে। নীচু জাতের দরিদ্র অভাগীর মৃত্যুর পর তার সৎকারের জন্য সামান্য একটু কাঠ তারা পায়নি। কাঙালী জমিদারের গোমস্তা অধর রায়ের কাছে গেলে তাকে সেখান থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। অন্য সমাজপতিররাও করে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য। এভাবে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে বারবার সমান্তবাদী সমাজের নির্মমতা প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকের গফুর দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত। যেখানে বাপ-বেটির অন্ন জোটে না সেখানে অবলা প্রাণী মহেশকে খাওয়াবে কী? মহেশকে বাঁচানোর জন্য পণদশেক বিচুলির জন্য গফুর কর্তামশাইয়ের পায়ে পড়ে কাকুতি মিনতি করেছে। এই কর্তাবাবুদের প্রবল প্রতিপত্তি থাকা সত্তে¡ও গফুরদের কষ্টে ও বুকফাটা আহাজারিতে তাদের প্রাণ কাঁদেনি। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য সে সমাজে সুস্পষ্ট দেয়াল তুলে দিয়েছিল। এই বৈষম্যপূর্ণ সমাজের চিত্র ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে আরো বিস্তৃতভাবে আলোচিত হয়েছে। তাই বলা যায়, সামন্তবাদের নির্মম রূপ উদ্দীপকের সাথে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের সমাজব্যবস্থাকে সাদৃশ্যময় করে তুলেছে। ১ এর ঘ নং প্র. উ. ক্ষ কাঙালী ও গফুর উভয়েই শোষিত শ্রেণির প্রতিনিধি হলেও উভয়ের হৃদয়-বেদনার মাঝে গুণগত পার্থক্য রয়েছে। ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কাঙালী নিম্নবর্ণের হওয়ার কারণে সমাজপতিরা তার মৃত মায়ের সৎকারে কাঠ ব্যবহার করতে দেয়নি। অভাগী ছেলের হাতের আগুন পেয়ে স্বর্গে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা নিম্নবর্ণের হওয়ার কারণে কাঙালী বারবার ধরনা দিয়েও একটু কাঠ জোগাড় করতে পারেনি। শেষমেশ নদীর চরে অভাগীকে পুঁতে ফেলতে হয়েছে। এতে কাঙালীর কিশোর হৃদয়ে কঠিন আঘাত লেগেছে। উদ্দীপকে দরিদ্র গফুর ভাগে যেটুকু খড় পেয়েছিল কর্তামশাই গতবারের পাওনার অজুহাতে তা কেড়ে নিয়েছে। বাপ-বেটি না হয় তালপাখার গোঁজাগাজাঁ দিয়ে বর্ষাটা কাটিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু মহেশের কী হবে? মহেশ যে না খেয়ে মরে যাবে। এই মানসিক দুর্ভাবনায় আচ্ছন্ন গফুর। দরিদ্র ও মুসলমান হওয়ার কারণেই তার প্রতি জমিদারদের এমন ব্যবহার। সে সমাজে যেন তার মতো গরিবের বাঁচবার অধিকারই নেই। ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কাঙালীকে মৃত মায়ের সৎকারের জন্য কাঠ দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে গলাধাক্কা । এমন অত্যাচার করা হয়েছে শুধু নীচু জাতের মানুষ হওয়ার অজুহাতে। মাতৃহারা আশ্রয়হীন একটি শিশুর কাকুতি মিনতি সমাজপতিদের মনে কোনো আবেদন সৃষ্টি করেনি। অন্যদিকে গরিব মুসলমান হওয়ার কারণে কর্তাবাবুরা নানা ছুতানাতায় গফুরকে বঞ্চিত করেছে। তবে এখানে গফুর ও কাঙালীর মধ্যে মানসিক যন্ত্রণা ও বেদনার গুণগত পার্থক্য বিদ্যমান। একজন মায়ের সৎকারে কাঠ জোগাড় করতে পারেনি অন্যজন একটি অবোধ প্রাণীর জন্য খড় সংগ্রহ করতে পারেনি। একজনের মাঝে লক্ষ করা যায় মাতৃভক্তি, অন্যজনের মাঝে প্রাণীপ্রীতি। দশ বছরের মা-মরা মেয়ে রাবেয়া গৃহকর্মীর কাজ করে নিজের এবং অসুস্থ বাবার অন্ন সংস্থান করে। চিকিৎসার অভাবে রাবেয়াকে ছেড়ে একদিন বাবা ইহধাম ত্যাগ করেন। দাফন কাফনের খরচ এবং কবরের জায়গা না থাকায় রাবেয়া গাঁয়ের মোড়লের সহযোগিতা চেয়ে খালি হাতে ফিরে আসে। অনন্যোপায় হয়ে বাবার মৃতদেহের পাশে বসে কাঁদতে থাকে। প্রতিবেশী মনসুর এ খবর পেয়ে রাবেয়ার পাশে দাঁড়ায় এবং যাবতীয় ব্যবস্থা করে। ক. গ্রামের শ্মশানটি কোন নদীর তীরে অবস্থিত? ১ খ. “তোর হাতের আগুন যদি পাই বাবা, বামুন মার মত আমিও সগ্যে যেতে পাবো।”Ñ উক্তিটি বুঝিয়ে লেখো। ২ গ. উদ্দীপকে মনসুর এবং ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের গোমস্তা অধর রায় একে অন্যের বিপরীতÑ ব্যাখ্যা করো। ৩ ঘ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা বিষয়টি ছাড়াও ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে অন্যান্য বিষয়ের আলোচনা রয়েছেÑ মন্তব্যটি বিশ্লেষণ
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা অভাগীর স্বর্গ Read More »