নবম দশম/এসএসসি রসায়ন ১১তম অধ্যায় খনিজ সম্পদ-জীবাশ্ম এর পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো। এসএসসি রসায়ন ১১তম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন -1 : নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : মার্চ-জুন মাসে বাংলাদেশে সংরক্ষণের অভাবে প্রচুর পরিমাণে আলু নষ্ট হয়। আলু থেকে নিচের বিক্রিয়ায় ইথানল উৎপন্ন করা যায়। স্টার্চ এনজাইম (ডায়াসটেজ ও ম্যালটেজ) ≡≡ H2O→ গøুকোজ এনজাইম (জাইমেজ)≡-→ ইথানল ক. পেট্রোলিয়ামের প্রধান উপাদান কী? খ. অ্যালকেন অপেক্ষা অ্যালকিন সক্রিয় কেন? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের বিক্রিয়া ব্যবহার করে আলু থেকে মিথেন প্রস্তুতির বর্ণনা দাও। ঘ. অতিরিক্ত আলুকে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ কর। ⇔ 1নং প্রশ্নের উত্তর ⇔ ক. পেট্রোলিয়ামের প্রধান উপাদান হাইড্রোকার্বন। খ. অ্যালকেন একক বন্ধন ও অ্যালকিন দ্বিবন্ধন দ্বারা গঠিত বলে অ্যালকেন অপেক্ষা অ্যালকিন সক্রিয়। অ্যালকেনসমূহ কার্বন-কার্বন ও কার্বন-হাইড্রোজেন শক্তিশালী একক সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে গঠিত। যা ভেঙে সহজে অন্য বন্ধন গঠন করে না বলে এরা সাধারণত অন্য মৌল বা যৌগের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। কারণে অ্যালকেনসমূহ কম সক্রিয় যৌগ। অন্যদিকে অ্যালকিনসমূহের অণুতে কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন বিদ্যমান। এ দ্বিবন্ধনের প্রথমটি সিগমা বন্ধন যা শক্তিশালী হলেও দ্বিতীয় বন্ধনটি প্রথম বন্ধন অপেক্ষা দুর্বল পাই () বন্ধন যার ভাঙন সহজেই ঘটে। এ কারণেই অ্যালকিন রাসায়নিকভাবে অ্যালকেন অপেক্ষা সক্রিয়। গ. উদ্দীপকের বিক্রিয়ায় স্টার্চ থেকে গøুকোজ ও গøুকোজকে জাইমেজ নামক এনজাইমের উপস্থিতিতে ইথানলে রূপান্তরিত করা হয়। আলুতে প্রচুর পরিমাণ স্টার্চ রয়েছে। এ স্টার্চ থেকে আমরা উদ্দীপকের বিক্রিয়া ব্যবহার করে ইথানল পেতে পারি। ইথানলকে এসিডযুক্ত পটাসিয়াম ডাইক্রোমেট অথবা পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্বারা জারিত করলে প্রথমে ইথান্যাল (অ্যাসিটালডিহাইড) ও পরে ইথানয়িক এসিড উৎপন্ন হয়। K2Cr2O7 + H2SO4→K2SO4 + Cr2(SO4)3 + H2O + [O] CH3CH2OH + [O]→CH3CHO + H2O ইথানল ইথান্যাল CH3CHO+[O]→CH3 COOH ইথানয়িক এসিড এভাবে উৎপন্ন ইথানয়িক এসিডকে NaOH এর সাথে মিশ্রিত করলে সোডিয়াম ইথানোয়েট উৎপন্ন হয়। CH3COOH + NaOH→CH3COONa + H2O সোডিয়াম ইথানয়েট এই সোডিয়াম ইথানয়েটকে (CH3COONa) সোডালাইম (NaOH + CaO এর মিশ্রণ) সহ উত্তপ্ত করলে মিথেন ( CH4) পাওয়া যায়। বিক্রিয়া : CH3COONa (NaOH + CaO) ≡ সোডালাইম →CH4 + Na2CO3(CaO) এভাবে আমরা আলু থেকে মিথেন ( CH4) প্রস্তুত করতে পারি। ঘ. আলু আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান খাদ্য। এটি শর্করা নামক পুষ্টিগুণের অন্যতম উৎস। এদেশে আলুর ফলনও হয় প্রচুর। বাংলাদেশের মানুষের শর্করা চাহিদা পূরণ করার পরও অনেক আলু রয়ে যায় প্রতিবছর। ফলে সংরক্ষণের অভাবে প্রচুর পরিমাণ আলু নষ্ট হয়ে যায়। অথচ অতিরিক্ত আলুর নানাবিধ ব্যবহার করা সম্ভব। বিশেষ করে আলু থেকে ইথানল, মিথেন ইত্যাদি গ্যাস তৈরি করে আমাদের প্রয়োজনীয় জ্বালানির চাহিদা মেটানো যায়। অর্থাৎ অতিরিক্ত আলুকে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার সম্ভব। অতিরিক্ত আলুতে বিদ্যমান স্টার্চ থেকে আমরা নিম্নলিখিত উপায়ে ইথানল প্রস্তুত করতে পারি। 2 (C6H10O5)হ + nH2O ডায়াসটেজ-→ C12H22O11 স্টার্চ মল্টোজ ম্যালটেজ এনজাইম মল্টোজকে গøুকোজে এবং জাইমেজ নামক এনজাইম গøুকোজকে ফারমেন্ট করে ইথানলে পরিণত করে। বিক্রিয়া : C12H22O11+ H2O ম্যালটেজ-→ C6H12O6 মল্টোজ গøুকোজ C6H12O6 জাইমেজ-→ CH3CH2OH + 2CO2 গøুকোজ ইথানল আলু থেকে এভাবে গাঁজন প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত ইথানল জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে মোটর ইঞ্জিন, বিমান, বাস, ট্রাক, কলকারখানায় বিকল্প জ্বালানিরূপে ব্যবহার করা যায়। পেট্রোলের সাথে (1০-2০%) ইথানল মিশ্রিত করে গ্যাসহোল (এধংড়যড়ষ) নামক জ্বালানি তৈরি করা যায় যাকে জ্বালানিরূপে ব্যবহার করা সম্ভব। CH3CH2OH + O2 → 2CO2 + 6H2O + তাপশক্তি। অ্যালকোহল থেকে আমরা প্রচুর তাপশক্তি পাই। আবার, ‘গ’ থেকে দেখা যায় আলু থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস মিথেনও উৎপাদন করা যায়। তাই অতিরিক্ত আলু থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প ব্যবহার করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশ্ন -2 : নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : পর্যায়ক্রমে একটি গ্যাসকে র থেকে ররর বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন পদার্থে পরিণত করা হয়। i. 2 CH4 15০০0C-→ HC ≡ CH + H2 ii. HC ≡ CH + HCl -→ CH2 = CHCl iii. nCH2 = CHCl ≡-→ – CH2 – CH । Cln ক. হাইড্রোকার্বন কাকে বলে? খ. বেনজিন অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন কেন? গ. রর নং বিক্রিয়াটি কোন ধরনের বিক্রিয়া? ব্যাখ্যা কর। ঘ. উদ্দীপকের প্রথম বিক্রিয়ক গ্যাসটির ব্যবহার বহুমুখীকরণের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ কর। ⇔ 2নং প্রশ্নের উত্তর ⇔ ক. হাইড্রোজেন ও কার্বন দ্বারা গঠিত দ্বিমৌল যৌগসমূহকে হাইড্রোকার্বন বলা হয়। খ. বেনজিন একটি ছয় সদস্যের সমতলীয় চক্রিয় যৌগ। এর অণুতে একান্তর দ্বিবন্ধন বিদ্যমান। অর্থাৎ, কার্বন-কার্বন একটি একক বন্ধন এবং একটি দ্বিবন্ধন থাকে। আমরা জানি, অ্যারোমেটিক যৌগসমূহ সাধারণত 5, 6 বা 7 সদস্যের সমতলীয় চক্রিয় যৌগ। এ কারণেই বেনজিন একটি অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন। গ. (রর) নং বিক্রিয়াটি একটি সংযোজন বিক্রিয়া। যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো যৌগ তার সরলতম উপাদানসমূহের প্রত্যক্ষ সংযোগে সৃষ্টি হয়, তাকে সংযোজন বিক্রিয়া বলা হয়। যেমন : উদ্দীপকে প্রদত্ত (রর) নং বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ : CH ≡ CH + HCl -→ H2C = CHCl (অ্যাসিটিলিন) (ভিনাইল ক্লোরাইড) এ বিক্রিয়ায় অ্যাসিটিলিনের (HC ≡ CH) সাথে HCl এর প্রত্যক্ষ সংযোগে ভিনাইল ক্লোরাইড (H2C = CHCl) উৎপন্ন হয়েছে। এখানে HCl এর ঐ+ ও Cl- অংশ দুটি ত্রিবন্ধনযুক্ত কার্বন দুটির প্রত্যেকটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ফলে ত্রিবন্ধনের একটি বন্ধন ভেঙে গিয়ে দ্বিবন্ধনে পরিণত হয়েছে। অতএব, (রর) নং বিক্রিয়াটি একটি সংযোজন বিক্রিয়া। ঘ. উদ্দীপকের প্রথম বিক্রিয়ক গ্যাসটি মিথেন ( CH4)। মিথেনের বহুমুখী ব্যবহার নিচে আলোচনা করা হলো : 1. মিথেনকে বায়ুর উপস্থিতিতে দহন করলে CO2, H2O ও প্রচুর পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন হয়, যা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 2. মিথেন থেকে প্রাপ্ত মিথাইল ক্লোরাইড (CH3Cl) শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য যেমন : অ্যালকোহল, অ্যালডিহাইড, জৈব এসিড প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়। ডাইক্লোরোমিথেন (CH2Cl2) রং শিল্পে দ্রাবক হিসেবে, ক্লোরোফরম (CHCl3) কে চেতনানাশক হিসেবে এবং কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCl4) কে ড্রাইওয়াশের দ্রাবক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কারণ, টেট্রাক্লোরোমিথেন গ্রিজ ও ময়লাকে সহজে দ্রবীভ‚ত করতে পারে। 3. মিথেন থেকে অন্য সকল শ্রেণির জৈব যৌগ যেমন : অ্যালকিন, অ্যালকাইন, অ্যালডিহাইড, অ্যালকোহল, জৈব এসিড ইত্যাদি প্রস্তুত করা সম্ভব। 4. মিথেন থেকে উৎপন্ন মিথানল একটি বিষাক্ত পদার্থ। ঔষধ ও খাদ্যশিল্প ব্যতীত অন্য শিল্পে ব্যবহৃত রেকটিফাইড স্পিরিটে সামান্য মিথানল যোগে বিষাক্ত করা হয় যার নাম মেথিলেটেড স্পিরিট। এটি কাঠ এবং ধাতুর তৈরি আসবাবপত্র বার্নিশ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। 5. মিথানলকে (CH3OH) শক্তিশালী জারক দ্বারা জারিত করলে ফরমালডিহাইড উৎপন্ন হয় যার (3০-4০%) জলীয় দ্রবণকে ফরমালিন বলা হয় যা জৈব বস্তু সংরক্ষণ কাজে ব্যবহৃত হয়। 6. মিথেন ( CH4) থেকে প্রাপ্ত মিথান্যাল (HCHO) এর জলীয় দ্রবণকে অতি নিম্ন চাপে উত্তপ্ত করলে ডেরলিন (উবৎষরহ) নামক শক্ত পলিমার উৎপন্ন হয়। ডেরলিন পলিমার দিয়ে চেয়ার, ডাইনিং টেবিল, বালতি জাতীয় দ্রব্য তৈরি করা হয় যা পূর্বে কাঠ ও ধাতু দিয়ে তৈরি করা হতো। 7. ফরমালডিহাইড (মিথান্যাল) ও