নবম-দশম শ্রেণির রসায়ন দ্বিতীয় অধ্যায় পদার্থের অবস্থা জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক
নবম-দশম/এসএসসি রসায়ন দ্বিতীয় অধ্যায় পদার্থের অবস্থা এর পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি,জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো। এসএসসি রসায়ন দ্বিতীয় অধ্যায় পদার্থের অবস্থা পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি পদার্থ : যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, যার ভর আছে, জায়গা দখল করে এবং যার জড়তা আছে, তাকে পদার্থ বলে। টেবিল, চেয়ার, মাটি, পানি, বাতাস ইত্যাদি পদার্থের উদাহরণ। পদার্থের অবস্থাভেদ : প্রকৃতিতে পদার্থ তিন অবস্থায় থাকতে পারে। যথা : ১. কঠিন, ২. তরল ও ৩. গ্যাসীয়। সাধারণ তাপমাত্রায় তামা, লোহা, কাঠ প্রভৃতি কঠিন পদার্থ; পারদ, পানি, দুধ প্রভৃতি তরল পদার্থ এবং অক্সিজেন, নাইট্রোজেন প্রভৃতি হলো গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থ। আবার অবস্থা বিশেষে নির্দিষ্ট কোনো পদার্থ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় থাকতে পারে। যেমন : বরফ, পানি ও জলীয়বাষ্প হলো যথাক্রমে পানির কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা। কঠিন পদার্থ : সাধারণ অবস্থায় যেসব পদার্থের নির্দিষ্ট আকার এবং আয়তন থাকে, তাদের কঠিন পদার্থ বলে। যেমন : পাথর, লবণ, লোহা, বরফ ইত্যাদি। কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য : ১. নির্দিষ্ট তাপ ও চাপে কঠিন পদার্থের আকার ও আয়তন সর্বদা নির্দিষ্ট থাকে। ২. তাপ প্রয়োগে সাধারণত কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয়। যেমন : বরফকে উত্তপ্ত করলে তা গলে পানিতে পরিণত হয়। ব্যতিক্রম : ন্যাপথালিন, আয়োডিন, কর্পূর, নিশাদল প্রভৃতি কঠিন পদার্থ তাপের প্রভাবে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় এবং শীতল করলে বাষ্প থেকে কঠিন অবস্থায় ফিরে আসে। একে ঊর্ধ্বপাতন বলে। ৩. প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগেও কঠিন পদার্থের আয়তনের বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয় না। ৪. কঠিন পদার্থের দৃঢ়তা থাকে। বাইরের থেকে বল প্রয়োগ না করলে কঠিন পদার্থের আকার ও আয়তনের বিকৃতি ঘটানো যায় না। তরল পদার্থ : সাধারণ অবস্থায় যেসব পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট কিন্তু আকার নির্দিষ্ট নয়, তাদের তরল পদার্থ বলে। যেমন : পানি, তেল, দুধ প্রভৃতি তরল পদার্থ। তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্য : ১. নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে তরল পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট থাকে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার থাকে না। যখন যে পাত্রে রাখা হয়, তখন সেই পাত্রের আকার ধারণ করে। ২. তাপমাত্রা বাড়ালে তরলের আয়তন বাড়ে। তরলের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়াতে থাকলে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছে তরল বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে। ৩. তরলের তাপমাত্রা ক্রমশ কমালে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এসে তরল কঠিনে পরিণত হয়। ৪. তরলের অণুসমূহ স্থান পরিবর্তন করতে পারে। এজন্য তরল পদার্থের কোনো নির্দিষ্ট আকার থাকে না। গ্যাসীয় পদার্থ : সাধারণ অবস্থায় যে পদার্থের নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন থাকে না, তাকে গ্যাসীয় পদার্থ বলে। যেমন : বায়ু, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি গ্যাসীয় পদার্থ। গ্যাসীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য : ১. গ্যাসীয় পদার্থের কোনো নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই। গ্যাস বর্ণহীন বলে তা দেখা যায় না। ২. গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ যত কমই হোক না কেন, তা যে পাত্রে রাখা হবে সে পাত্রের পুরো স্থান দখল করে থাকে। ৩. গ্যাসীয় পদার্থের অণুসমূহের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি, তাই আকর্ষণ শক্তি অনেক কম, ফলে তারা প্রায় মুক্তভাবে চলাচল করে। ৪. একই তাপমাত্রা ও চাপে সমআয়তন সব গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু থাকে। পদার্থের রূপান্তর বা অবস্থার পরিবর্তন : অবস্থাবিশেষে নির্দিষ্ট কোনো পদার্থ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় থাকতে পারে। যেমন : বরফ, পানি ও জলীয় বাষ্প একই পদার্থ। তাপ বাড়িয়ে বা কমিয়ে এদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো যায়। সাধারণ তাপমাত্রায় পানি একটি তরল পদার্থ। পানিকে ঠাণ্ডা করলে 0°C ঈ তাপমাত্রায় তা বরফে পরিণত হয়। এই বরফে তাপ দিলে তা আবার পানিতে পরিণত হয়। পুনরায় ১০০°C ঈ তাপমাত্রায় পানি জলীয়বাষ্পে রূপান্তরিত হয়। জলীয় বাষ্পকে ঠাণ্ডা করলে তা পুনরায় পানিতে পরিণত হয়। এভাবে তাপের পরিবর্তন করে পদার্থকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তর বা পরিবর্তন করা যায়। কণার গতিতত্ত¡ : সকল পদার্থই ক্ষুদ্রতম কণিকা দ্বারা তৈরি এবং তা কঠিন, তরল অথবা গ্যাসীয় এই তিন অবস্থার যেকোনো একটি অবস্থায় থাকে। সকল অবস্থায় পদার্থের কণাসমূহ গতিশীল থাকে। আন্তঃআণবিক দূরত্ব : পদার্থ মাত্রই অনেক অণুর সমষ্টি। অণুগুলো একত্রে পাশাপাশি থাকে। পাশাপাশি থাকার কারণে এগুলোর মধ্যে কিছু ফাঁকা জায়গা থেকে যায়। দুটি অণুর মধ্যবর্তী এরূপ ফাঁকা জায়গা বা দূরত্বকে আন্তঃআণবিক দূরত্ব বলে। আন্তঃআণবিক শক্তি : প্রত্যেক পদার্থের অণুসমূহ পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এ আকর্ষণ শক্তিকে আন্তঃআণবিক শক্তি বলা হয়। আকর্ষণের পরিমাণ বস্তুর প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। কঠিন পদার্থের আন্তঃআণবিক শক্তি সবচেয়ে বেশি। এজন্যই অণুগুলো পরস্পরের খুব কাছাকাছি এবং দৃঢ়ভাবে অবস্থান করে। তাই নড়াচড়া করলেও স্থানান্তরিত হতে পারে না। তরল পদার্থের আন্তঃআণবিক শক্তি কঠিন পদার্থের তুলনায় কম। সেজন্য অণুগুলো কিছুটা দূরে অবস্থান করে এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে। বায়বীয় পদার্থের আন্তঃআণবিক শক্তি সবচেয়ে কম। সেজন্যই অণুগুলো বেশ দূরে দূরে অবস্থান করে এবং কোনো আবদ্ধ পাত্রে না রাখলে তা চারদিকে মুক্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাপন : কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বস্তুর স্বতঃস্ফ‚র্ত ও সমভাবে পরিব্যাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। ব্যাপন প্রক্রিয়ায়- ১. পদার্থের অণুগুলো বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ২. ব্যাপন গ্যাসে-গ্যাসে, তরলে-তরলে, তরলে-গ্যাসে, কঠিনে-তরলে এবং কঠিনে-গ্যাসে ঘটতে পারে। ৩. সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের সময় প্রয়োজনীয় গ্যাসের আদান-প্রদান ব্যাপনের মাধ্যমে ঘটে। নিঃসরণ : সরু ছিদ্র পথ দিয়ে কোনো গ্যাসের অণুসমূহের উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে নিঃসরণ বলা হয়। উচ্চচাপের প্রভাবে এটি একটি গ্যাসীয় দ্রæত প্রক্রিয়া। এটি ছিদ্র পথে অর্থাৎ নিয়ন্ত্রিত পথে ঘটে। দহন : কোনো পদার্থকে বাতাসে অক্সিজেনের উপস্থিতিতে পোড়ালে তাকে দহন বলে। সকল দহনেই তাপশক্তি নির্গত হয়। মোমের জ্বলন বা দহনের ফলে ঈঙ২(ম) ও ঐ২ঙ (ম) এবং এর সাথে আরও উৎপাদিত হয় তাপ ও আলো। গলন : কোনো কঠিন পদার্থের তরলে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে গলন বলে। গলন চলাকালীন পদার্থের তাপমাত্রা স্থির থাকে। গলনাংক : যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ গলে তরলে পরিণত হতে শুরু করে সেই নির্দিষ্ট তাপমাত্রাকে ওই কঠিন পদার্থের গলনাংক বলে। যেমন : ০ঈ তাপমাত্রায় বরফ গলে পানিতে পরিণত হয়। সুতরাং বরফের গলনাংক ০ঈ। স্ফুটন : কোনো তরল পদার্থের বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে স্ফুটন বলে। স্ফুটন চলাকালীন অবস্থায় পদার্থের তাপমাত্রা স্থির থাকে। স্ফুটনাংক : যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো তরল ফুটতে থাকে এবং বাষ্পে পরিণত হতে থাকে, সেই নির্দিষ্ট তাপমাত্রাকে ওই তরল পদার্থের স্ফুটনাংক বলে। যেমন : পানির স্ফুটনাংক ১০০ঈ। অর্থাৎ ১০০ঈ তাপমাত্রায় পানি ফুটতে থাকে এবং বাষ্পে পরিণত হয়। সুপ্ততাপ : যখন কোনো পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন চলতে থাকে তখন পদার্থ যে তাপ গ্রহণ বা বর্জন করে তা ঐ পদার্থের তাপমাত্রার কোনো পরিবর্তন ঘটায় না। এই তাপকে সুপ্ততাপ বলে। সুপ্ততাপ গ্রহণ করে কঠিন পদার্থ তরলে ও তরল পদার্থ গ্যাসীয় পদার্থে এবং সুপ্ততাপ বর্জন করে গাসীয় পদার্থ তরলে ও তরল পদার্থ কঠিনে পরিণত হয়। ঊর্ধ্বপাতন : যে প্রক্রিয়ায় কোনো কঠিন পদার্থ তাপের প্রভাবে তরল অবস্থাপ্রাপ্ত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে
নবম-দশম শ্রেণির রসায়ন দ্বিতীয় অধ্যায় পদার্থের অবস্থা জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক Read More »