সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় অধ্যায়-দশ বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা
অধ্যায়-দশ বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন- ১ ল্ফল্ফ জাহিদ রক্ষণশীল পরিবারের একমাত্র সন্তান। নাসিমার সাথে জাহিদের বিয়েতে জাহিদের মা বাবা কিছু মূল্যবান উপহারসামগ্রী ও ব্যবসা করার জন্য ৫ লক্ষ টাকা নিতে চাইলে জাহিদ সেগুলো নিতে রাজি হয় নি। জাহিদ তাদেরকে বুঝিয়ে বললো যে, এগুলো গ্রহণ করা কিংবা এই প্রথাকে সমর্থন করা তার পক্ষে অসম্ভব। জাহিদের বাবা-মা নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেন। ক. এথেন্সে বিয়ের পর কনে স্বামীর ঘরে কি নিয়ে যেত? ১ খ. কন্যা সন্তানকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর। ২ গ. জাহিদের বাবা মায়ের প্রস্তাবটি আমাদের দেশের কোন প্রথাটিকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা কর। ৩ ঘ.উদ্দীপকের উল্লেখিত প্রথার রোধ কল্পে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে? তোমার মতামত দাও। ৪ ক এথেন্সে বিয়ের পর কনে স্বামীর ঘরে অর্থ-সম্পদ নিয়ে যেত। খ কেবল ছেলে সন্তান নয়, কন্যাসন্তানকেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কারণ, কন্যা উচ্চশিক্ষিত হলে যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার ও সচেতন হতে পারবে। মেয়েদেরকে উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারলে তাদের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে। তারা আত্মনির্ভরশীল হলে যৌতুকের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। তাই কন্যা সন্তানকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। গ জাহিদের বাবা-মায়ের প্রস্তাবটি আমাদের দেশের যে প্রথাটিকে ইঙ্গিত করে সেটি হলো ‘যৌতুক প্রথা’। সাধারণত বিয়ের সময় বর বা কনে বিপরীত পক্ষের কাছ থেকে যে অর্থ বা সম্পত্তি দাবি করে ও গ্রহণ করে তাকেই বলা হয় যৌতুক। এটি একটি সামাজিক কুপ্রথা। বাংলাদেশের অনেক সম্পদশালী মানুষ তাদের কন্যার বিয়েতে বিপুল অঙ্কের যৌতুক দেয়। ধনী পিতা-মাতার ধারণা যৌতুকের কারণে তাদের কন্যা স্বামীর ঘরে মাথা উঁচু করে থাকবে। উদ্দীপকে রক্ষণশীল জাহিদের পরিবার নাসিমার পরিবারের নিকট থেকে অর্থ-সম্পদ চেয়েছিল যা যৌতুক প্রথাকে নির্দেশ করে। কিন্তু জাহিদ সেগুলো নিতে অস্বীকার করে। সুতরাং কনের পক্ষে থেকে বিয়ের সময় যে সম্পদ বর পক্ষ গ্রহণ করে তাকে যৌতুক বলে। উদ্দীপকে সেটিই প্রমাণিত হয়েছে। ঘ উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রথাটি হলো ‘যৌতুক প্রথা’। এটি একটি ঘৃণিত সামাজিক ব্যাধি। তাই এটি প্রতিরোধে নানাধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় বলে আমি মনে করি। পণ্য ক্রয় করার মতোই যৌতুক নিয়ে কন্যাপক্ষ ও বরপক্ষের মধ্যে দরকষা কষি হয়ে থাকে। স্বচ্ছল পরিবারের জন্য এটি সাধারণ ব্যাপার হলেও দরিদ্র পরিবারের জন্য তা নিদারুণ কষ্টের ও বিড়ম্বনার। আর উদ্দীপকের জাহিদ যৌতুক প্রথার কুপ্রভাব সম্পর্কে অবগত। জাহিদের মতো আমাদেরকেও যৌতুক প্রথান বরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠতে হবে। যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে হবে, যাতে জনগণ এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। যৌতুকের দাবিদার যারা তাদের বিয়েতে অংশগ্রহণ হতে বিরত থাকতে হবে এবং সামাজিকভাবে তাদেরকে বর্জন করতে হবে। সংবিধানে মহিলাদের অধিকার রক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন এবং প্রণীত আইনের বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের সর্বত্র যৌতুকবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে হবে। নারীশিক্ষার বৃদ্ধি ঘটিয়ে তাদেরকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। পরিশেষে বলা যায়, যৌতুক একটি সামাজিক কুপ্রথা। এ ব্যাধি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। প্রশ্ন- ১ ল্ফল্ফ দরিদ্র দিনমজুর ফরিদের সাথে পপির বিয়ে হয়েছিল মাস চারেক আগে। দরিদ্র পিতা মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বিয়ের শর্ত অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল জামাইকে। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি জামাই ফরিদ। সে আরও টাকা আনার জন্য পপির ওপর নির্যাতন শুরু করে। অসহ্য নির্যাতনের কারণে শেষ পর্যন্ত পপির বাবা মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং তাকে একটি সেলাই মেশিন কিনে দেন। ক. কোনটিকে যৌতুক প্রথার মূল কারণ বলে মনে করা হয়? ১ খ. যৌতুক প্রথার কুফল থেকে কীভাবে মুক্ত হওয়া সম্ভব? ২ গ. উদ্দীপকে ফরিদ কেন যৌতুক নিয়েছিল? ব্যাখ্যা কর। ৩ ঘ.“সেলাই মেশিন ক্রয়ের পদক্ষেপটি পপির অসহায় অবস্থার অবসান ঘটাবে”- উক্তিটি মূল্যায়ন কর। ৪ ক দারিদ্র্যকে যৌতুক প্রথার মূল কারণ বলে মনে করা হয়। খ যৌতুক প্রথার কুফল থেকে মুক্ত হতে হলে আমাদের সচেতন হতে হবে। যৌতুক প্রতিরোধ করার জন্য প্রথমেই সচেতন করতে হবে পারিবারকে। যৌতুক দেয়া ও নেয়া থেকে নিজেদের বিরত থাকতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের প্রতিবেশীকেও এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজন হলে গ্রহণ করতে হবে আইনের আশ্রয়, পরিবারের কন্যা সন্তানসহ সবাইকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা দরকার। এভাবেই যৌতুক প্রথা প্রতিরোধ করা সম্ভব। গ উদ্দীপকের ফরিদ তার দরিদ্র অবস্থা ঘুচাতেই যৌতুক নিয়েছিল। বাংলাদেশে যৌতুক প্রথা একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। তবে দারিদ্র্যের কারণেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হয়। এদেশের অধিকাংশ বিবাহিত নারী সাংসারিক কাজে লিপ্ত থাকায় সে কোনো অর্থ উপার্জনে কোনো ভ‚মিকা রাখতে পারে না। তাই দারিদ্র্য পরিবারের স্বামী অতিরিক্ত ভরণপোষণের জন্য হিমশিম খেতে হয়। তাই সে স্ত্রীর পরিবার থেকে যৌতুক আদায়ের জন্য ক্রমাগত স্ত্রী ও তার পরিবারকে চাপ দেয়। দারিদ্র্যের কারণেই বরপক্ষ কনেপক্ষের কাছে অর্থ-সম্পদ দাবি করে। কনের পিতার অর্থ-সম্পদ ব্যবহার করেই বর প্রতিষ্ঠা লাভ করতে চায়। উদ্দীপকের দরিদ্র দিনমজুর ফরিদও এ কারণেই যৌতুক নিয়েছিল। ঘ উদ্দীপকের পপি যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হলে কোনো প্রতিকার না পেয়ে পপির বাবা মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসেন এবং একটি সেলাই মেশিন কিনে দেন। মেয়েকে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যেই পপির বাবা মেয়েকে সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছেন। সেলাই মেশিনের দ্বারা পোশাক তৈরি করে সে সহজেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। স্বামীর অনুগ্রহ ও নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে পপি পোশাক তৈরি করে পর নির্ভরশীলতা এড়াতে সক্ষম হবে। আন্তরিকতা ও পরিশ্রমী মনোভাবের মাধ্যমে আমাদের দেশে অসহায় অনেক মেয়েই এ ধরনের কাজের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তাই সেলাই মেশিন ক্রয়ের পদক্ষেপটি পপির অসহায় অবস্থার অবসান ঘটাবে- একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। প্রশ্ন- ২ ল্ফল্ফ ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন তাঁর একমাত্র উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে মিতার সাথে প্রতিবেশী লুৎফর রহমানের ইঞ্জিনিয়ার পুত্র রাজীবের বিয়ে দেন। বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই রাজীব ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য নগদ ৫০ লক্ষ টাকা নেয়ার জন্য মিতার উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে। আমজাদ সাহেব টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একদিন পারিবারিক কলহের জের ধরে রাজীবের হাতে নির্মমভাবে খুন হয় মিতা। [ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল, ঢাকা] ক. বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ‘যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইন’ কত সালে পাশ হয়? ১ খ. বাংলাদেশের অধিকাংশ বিবাহিত নারী কীরূপ জীবনযাপন করে? ২ গ. রাজিবের অপরাধের শাস্তি কোন আইনের আওতায় হতে পারে? ব্যাখ্যা কর। ৩ ঘ.মিতার মতো উচ্চশিক্ষিত মেয়েদের বাঁচাতে সামাজিক আন্দোলনই ফলপ্রসূ মতামত দাও। ৪ ক বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ‘যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইন’ ১৯৮০ সালে পাস হয়। খ বাংলাদেশের অধিকাংশ বিবাহিত নারী কেবল গৃহকর্মেই নিযুক্ত থাকে। ঘরের সব কাজ করলেও তার কোনো অর্থ উপার্জন হয় না। তারা স্বামীর সংসারে পরনির্ভরশীল জীবনযাপন করে। তাই এদেশের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বামীর নিগ্রহ ও নির্যাতন ভোগ করে। গ যৌতুকলোভী রাজিব তার স্ত্রী মিতাকে নির্মমভাবে খুন করে। রাজিবের অপরাধের শাস্তি ১৯৮৩ সালের আইনের আওতায় হতে পারে। ১৯৮৩ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন
সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় অধ্যায়-দশ বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা Read More »