অনুচ্ছেদ
বাক্য মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম। কিন্তু সব সময় একটি বাক্যের মাধ্যমে মনের সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। এজন্য প্রয়োজন একাধিক বাক্যের। মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার জন্য পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত বাক্যের সমষ্টিই অনুচ্ছেদ। অনুচ্ছেদে কোনো বিষয়ের একটি দিকের আলোচনা করা হয় এবং একটি মাত্র ভাব প্রকাশ পায়। অনুচ্ছেদ রচনার ক্ষেত্রে কয়েকটি দিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। যেমন-
ক) একটি অনুচ্ছেদের মধ্যে একটি মাত্র ভাব প্রকাশ করতে হবে। অতিরিক্ত কোনো কথা লেখা যাবে না।
খ) সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো বাক্যের মাধ্যমে বিষয় ও ভাব প্রকাশ করতে হবে।
গ) অনুচ্ছেদটি খুব বেশি বড় করা যাবে না। লিখতে হবে একটি মাত্র প্যারায়। কোনোভাবেই একাধিক প্যারা করা যাবে না।
ঘ) একই কথার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ঙ) যে বিষয়ে অনুচ্ছেদটি রচনা করা হবে তার গুরুত্বপূর্ণ দিকটি সহজ-সরল ভাষায় সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে। অনুচ্ছেদের বক্তব্যে যেন স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রকাশ পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জাতীয় পতাকা
জাতীয় পতাকা একটি জাতির স্বাধীনতার প্রতীক। বিশ্বের প্রতিটি জাতির তাদের নিজস্ব জাতীয় পতাকা আছে। আমাদের দেশেরও একটি জাতীয় পতাকা আছে। এই একটি পতাকার জন্য আমাদের অনেক রক্ত বিসর্জন দিতে হয়েছে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর আমরা এই পতাকাটি অর্জন করি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় ঘন সবুজ রঙের ওপর একটি লাল বৃত্ত থাকে। দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থে এর অনুপাত ১০:৬। লাল বৃত্তটির ব্যাসার্ধ পাতাকার দৈর্ঘ্যরে এক-পঞ্চমাংশ। সবুজ রং তারুণ্যদীপ্ত প্রাণশক্তির জয়গান এবং বাংলাদেশের সবুজ মাঠ ও চিরহরিৎ উপক্রান্তীয় বনভূমিকে তুলে ধরে। লাল বৃত্তটি একটি নবগঠিত জাতির নতুন আশা ও আকাক্সক্ষা সমন্বিত একটি উদীয়মান সূর্যকে চিহ্নিত করে। জাতীয় পতাকা আমাদের গর্বের প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চূড়ায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিশেষ কিছু দিবসে এটি অর্ধনমিত রাখা হয়। আমাদের জাতীয় পতাকা রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে সর্বদা আমাদের জীবন উৎসর্গ করতে প্রেরণা দেয়। এটি প্রতিনিয়ত স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা মনে করিয়ে দেয়। এর মর্যাদা রক্ষায় আমাদের সদা সচেষ্ট থাকা উচিত।
বাংলা নববর্ষ [ঢা. বো. ১৫]
নববর্ষ সকল দেশের সকল জাতিরই আনন্দ উচ্ছ¡াস ও মঙ্গল কামনার দিন। পুরাতন বছরের জীর্ণতাকে ঝেড়ে ফেলে বছরের এই দিনটিতে নতুনকে আহŸান জানানো হয়। বাংলাদেশেও পয়লা বৈশাখে সকলের কল্যাণ প্রত্যাশা করে মহা ধুমধামের সাথে নববর্ষ উদ্যাপিত হয়। এটি বাংলাদেশের সর্বজনীন ও শ্রেষ্ঠ লোকউৎসব। প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল বাঙালি এই উৎসব পালন করে থাকে। বাঙালির জাতিসত্তা বিনির্মাণে এবং স্বাধীনতা অর্জনে নববর্ষের তাৎপর্যপূর্ণ ভ‚মিকা রয়েছে। সম্রাট আকবরের সময় বাংলা সনের গণনা শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। জমিদার ও নবাবেরা নববর্ষে পুণ্যাহ আয়োজন করতেন। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নববর্ষ পালন করায় সে আয়োজন দেশময় ছড়িয়ে পড়ে। সবার মুখে লেগে থাকে হাসি, গায়ে থাকে রঙিন জামা। নববর্ষে হালখাতা, বৈশাখী মেলা, ঘোড়দৌড় এবং বিভিন্ন লোকমেলার আয়োজন করে সাধারণ মানুষ। সংস্কৃতি সংগঠন ছায়ানট নববর্ষে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট আয়োজন করে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এতে আবহমান বাঙালির ঐতিহ্য উপস্থাপনের পাশাপাশি থাকে সমকালীন সমাজ-রাজনীতির সমালোচনাও। এছাড়াও নানা বর্ণিল আয়োজনে দিনটিকে বরণ করা হয়। এই দিনে প্রত্যেক বাঙালি নিজের, বন্ধুর, পরিবার ও দেশের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে। কোনো ধর্ম-গোত্র-শ্রেণির বন্ধনে বাঁধা পড়ে না বাংলা নববর্ষের উদ্যাপন। ফলে আমাদের জাতিগত সংহতি ও ঐক্য সুদৃঢ় হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ [ব. বো. ১৫]
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি অর্জন করে প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে যে স্বাধীনতা তাকে চিরসমুন্নত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের প্রেরণা জোগাবে চিরদিন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি লাভ করলেও প্রকৃত মুক্তি আসেনি বাঙালি জাতির। ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার ওপর আঘাত, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট, ৫৮ সালে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ৬৬ সালের ৬ দফা, ৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিকাশ লাভ করে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন। ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি শুরু করে। তখনই চূড়ান্ত স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু চূড়ান্ত ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহণের আহŸান জানান। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ২৫ই মার্চ মধ্যরাতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালায়। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের বর্বরতা চালায় দেশজুড়ে। বাংলারজনতা সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানিদের অত্যাচার রুখে দেয়। দীর্ঘ নয় মাস ধরে রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধ চলে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। ৩০ লক্ষ শহিদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরব, আমাদের চেতনা। এই চেতনাকে মনেপ্রাণে ধারণ করেই আমাদের জাতি গঠনে কাজ করতে হবে।
একুশে বইমেলা
একুশে ফেব্রæয়ারির সংগ্রামী চেতনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ফেব্রæয়ারি মাসজুড়ে বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম আয়োজন হলো মহান একুশে বইমেলা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ফেব্রæয়ারি মাসজুড়ে এ মেলা চলে। বইমেলা উপলক্ষে বই বিক্রেতা ও প্রকাশকরা নানা সাজে বইয়ের স্টল বা দোকান সাজিয়ে বসেন। এখানে বিভিন্ন ধরনের বইয়ের সমাহার ঘটে। বইমেলা উপলক্ষে প্রচুর নতুন বইমেলায় আসে। প্রতিষ্ঠিত লেখকদের পাশাপাশি নতুন লেখকদের বইও পাওয়া যায় এখানে। প্রতিদিন বইয়ের আকর্ষণে বই প্রেমিক মানুষেরা মেলা প্রাঙ্গণে ছুটে আসে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি লেখক, ভাষাবিদ ও বরেণ্য ব্যক্তিত্বরা বইমেলায় আসেন। লেখক ও পাঠকদের মিলনমেলায় রূপ নেয় এই মেলা। এটি বাংলা একাডেমির একটি মহৎ উদ্যোগ। এ বইমেলার ফলে পাঠকরা এক জায়গা থেকে তাদের পছন্দের বই কিনতে পারে। এছাড়া বই কেনার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহও তৈরি হয়। একুশের বইমেলা আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতিবোধ জাগ্রত করে। এ বইমেলা এখন আমাদের জাতীয় চেতনার সাথে সম্পৃক্ত।
প্রিয় শিক্ষক
সুন্দর এই পৃথিবীতে পিতা-মাতার বদৌলতে সন্তান জন্মলাভ করে ঠিকই কিন্তু সেই সন্তানের জীবনকে সার্থক এবং সফল করে তোলার পেছনে যাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি হলেন শিক্ষক। শিক্ষকের কাছে আমরা গ্রহণ করি জীবনের মূল্যবান পাঠ। জ্ঞানের পৃথিবীতে তিনি আমাদের দ্বিতীয়বার জন্মদান করেন। সুশিক্ষকের প্রভাব মানুষের জীবন চলার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যে শিক্ষক আমার হৃদয় মানসে ধ্রæবতারার মতো জেগে আছেন তিনি হলেন ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব বাবু হরিমন বিশ্বাস। তিনি আমাকে তাঁর সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। সবসময় আমার যতœ নিতেন। তাঁর পাঠদান পদ্ধতি ছিল অনেক চমৎকার। আমাদের পারিবারিক জীবনে তিনি ছিলেন সবচেয়ে আকাক্সিক্ষত অতিথি। তাছাড়া পাঠ্য বইয়ের বাইরেও আমি যাতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিষয় জানতে পারি সেজন্য তাঁর আগ্রহের অন্ত ছিল না। স্যার ছিলেন অনুভূতিপ্রবণ এক সুবিশাল ব্যক্তিত্ব। তিনি হৃদয় দিয়ে যা অনুভব করতেন তা সবার সামনে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতেন। তাই তিনি আজও আমার প্রিয় শিক্ষক এবং চিরদিন আমার জীবনাকাশে আদর্শের মূর্ত তারকা হয়েই প্রজ্জ্বলিত থাকবেন।
পিতাÑমাতা
সন্তানের নিকট পিতা-মাতার স্থান সবার ওপরে। পিতা-মাতার মতো প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন সন্তানের কাছে আর কেউ নেই। পিতাÑমাতাই সন্তানের সবচেয়ে বড় শুভাকাক্সক্ষী ও সবচেয়ে আপন। তাঁদের নিকট সন্তানরা এত বেশি ঋণী যে, এ ঋণ জীবনে শোধ করা সন্তানদের পক্ষে সম্ভব নয়। পিতা-মাতার কারণেই সন্তান এ পৃথিবীতে আসতে পারে। জন্মের পর মায়ের কোলই সন্তানের প্রধান আশ্রয়। সন্তানের লালনÑপালনের জন্য পিতা-মাতাকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়। সন্তান অসুস্থ হলে তাঁরা আহারÑনিদ্রা ভুলে তার পাশে বসে থাকেন। সর্বস্ব ব্যয় করে সন্তানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে থাকেন। নিজে না খেয়ে হলেও সন্তানের জন্য তাঁরা আহার জোগান। সন্তানের প্রতি পিতাÑমাতার ভালোবাসা নিঃস্বার্থ। মাতা-পিতা শৈশবে আমাদের লালন-পালন করেছেন, তেমনি বৃদ্ধ বয়সে তাঁদেরকে আদর যতেœর মধ্যে রাখা আমাদের কর্তব্য। আমাদের উচিত সর্বাবস্থায় পিতা-মাতাকে সুখী রাখার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করা। সন্তান যখন পিতা-মাতার মুখে হাসি ফোটাতে পারে, তখনই তার জীবন সার্থক হয়ে ওঠে।
শিক্ষাসফর
‘শিক্ষা সফর’ শব্দটি শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত। জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে দুটি মাধ্যম সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হলোÑ বই এবং ভ্রমণ। বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করলে মানুষ প্রত্যক্ষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। এ অভিজ্ঞতা সব সময় মানুষের মনে অ¤øান হয়ে থাকে। ছাত্রসমাজকে জ্ঞানের সংস্পর্শে নিয়ে যাওয়ার জন্যই বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষাসফরের আয়োজন করে থাকে। শিক্ষাসফরে একটি নির্দিষ্ট জায়গা পরিভ্রমণের মাধ্যমে অদেখাকে দেখা যায়, অজানাকে জানা যায় সফর মাত্রই রোমাঞ্চকর। আর তা যদি শিক্ষাকে কেন্দ্র করে হয় তবে তো কথাই নেই। আমাদের পাঠ্যশিক্ষার বিষয়টি শিক্ষাসফরের মাধ্যমে আরও পরিষ্কার হয়ে ধরা দেয় আমাদের কাছে। যেকোনো ঐতিহাসিক স্থান, জাদুঘর কিংবা বিশেষ কোনো স্মৃতিবিজড়িত স্থান পরিদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষা লাভের পথ সুগম হয়। বাস্তবিক জীবনবোধের সাথে পরিচিত হতে হলে শিক্ষাসফরকে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। শিক্ষাসফর আমাদের জীবনবোধের পরিধিকে বিস্তৃত করে জ্ঞানকে পরিপূর্ণতা দান করে। এতে দৃষ্টি উন্মীলিত হয় এবং মানুষ নব নব অভিযানে অংশ নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি একঘেয়েমি দূর করে বৈচিত্র্য এনে দিতে পারে শিক্ষাসফর। শিক্ষার পরিপূর্ণতা লাভে শিক্ষাসফর কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম।
স্বেচ্ছায় রক্তদান
মানুষ সামাজিক জীব। পরের কল্যাণে নিজে উৎসর্গ করে জীবনকে সার্থক করার সুযোগ কেবল মানুষই পায়। বর্তমান সময়ে স্বেচ্ছায় রক্তদান মানুষের কল্যাণ করার এক চমৎকার সুযোগ হয়ে ধরা দিয়েছে মানুষের কাছে। রক্ত মানবদেহের অপরিহার্য একটি উপাদান। রক্ত থাকলেই মানুষের দেহ সজীব ও সক্রিয় থাকে। কিন্তু রক্তের ঘাটতি হলেই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। সুস্থ ব্যক্তির স্বেচ্ছায় রক্তদানের বিনিময়ে যেকোনো মুমূর্ষু ব্যক্তির জীবন বেঁচে যেতে পারে। তাই স্বেচ্ছায় রক্তদানের মতো মহৎ কাজ আর নেই। বর্তমানে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে আগ্রহী করতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নানা ধরনের কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগঠন হলো ‘সন্ধানী’। ১৯৭৭ সাল থেকে। এখনও এটি জনস্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্œ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বাঁধন’-এর অন্তত ১০০টি শাখা রয়েছে। স্বেচ্ছায় রক্তদান করলে যেকোনো ব্যক্তি শারীরিকভাবেও সুস্থ থাকতে পারেন আবার তা অন্যের জীবনকেও বাঁচিয়ে তোলে। তাই স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে সবাইকে মানবতার কল্যাণে এগিয়ে আসবে হবে।
মহান বিজয় দিবস [দি. বো. ১৫]
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রাম শেষে এদিন আমাদের দেশ শত্রæমুক্ত হয়। পৃথিবীর মানচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তাই ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০-এর সাধারণ নির্বাচন ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর আমরা এই ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয় লাভ করি। তাই বাংলার আবালÑবৃদ্ধÑবণিতা মহাসমারোহে এদিনটি উদ্যাপন করে। এদিন বিভিন্ন অফিসÑআদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যগণ পতাকা উত্তোলন করেন এবং কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেন। সরকারিÑবেসরকারি ভবন ও দেশের প্রধান প্রধান সড়ককে জাতীয় পতাকায় সুশোভিত হয়। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা আর রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে কত ছাত্র, জনতা, কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী মানুষ। বিজয়ের আনন্দের মাঝে তাই জেগে ওঠে তাদের হারানোর বেদনা। মহান বিজয় দিবস শুধু জাতীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন নয়, এটি বাঙালির হৃদয় এবং সত্তার গভীরে প্রোথিত একটি অনন্য দিন। বিজয় দিবস স্বাধীনতাকামী বাঙালির পবিত্র চেতনার ধারক। বাঙালির হাজার বছরের সভ্যতা এবং সংস্কৃতির ইতিহাসে দ্যুতিময় এ মহান বিজয় দিবস চিরদিন সমুজ্জ্বলভাবে টিকে থাকবে। প্রতিবছর এ দিবসে আমরা আত্মসচেতন হই, প্রত্যয়ে দৃপ্ত হই, অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করি-রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এ স্বাধীনতাকে আমরা যেকোনো মূল্যে সমুন্নত রাখব।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি” -এ চরণ দ্বারা আমরা স্মরণ করি ভাষাশহিদদের যারা মাতৃভাষা বাংলার জন্য প্রাণ দিয়েছিল। এ দিনটি ইতিহাসের পাতায় অমরত্ব লাভ করেছে। বহু তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের মাতৃভাষার গৌরব রক্ষা করেছি। ১৯৪৭ সালের ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ‘পাকিস্তান’ সৃষ্টি হলেও পশ্চিম পাকিস্তান, পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের মাতৃভাষার মর্যাদা দিতে চায়নি। ১৯৪৮ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করেন। ছাত্ররা তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। এ প্রতিবাদ আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ১৯৫২ সাল পর্যন্ত প্রলম্বিত হয়। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রæয়ারি ছাত্রজনতা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গ করে মিছিলে মিছিলে রাজপথ প্রকম্পিত করে। প্রতিবাদী ছাত্রদের মিছিলে গুলি করা হলে শহিদ হন সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারসহ অনেকে। তাদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় মাতৃভাষার মর্যাদা। প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি সরকারিভাবে পালন করা হয়। আমরা শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে একুশের শহিদদের শ্রদ্ধা জানাই। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে একুশে ফেব্রæয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ২০০০ সালের ২১শে ফেব্রæয়ারি প্রথম আন্তর্জাতিকভাবে ১৮৮টি দেশে এ দিবস পালিত হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার স্বীকৃতির দাবিতে শহিদ হওয়ার ঘটনা শুধু ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রæয়ারিতেই ঘটেছিল। বাংলা ভাষার জন্য আত্মবিসর্জনের সে ঘটনা আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলা ভাষার কথা বাঙালিদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়।
অতিথি পাখি
অতিথি পাখি বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতি বছরই উষ্ণতার খোঁজে হাজার হাজার কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে এই পাখিরা আমাদের দেশে উড়ে আসে। শীতপ্রধান দেশে তাপমাত্রা অধিকাংশ সময়ই শূন্যের নিচে থাকে। এর পাশাপাশি তুষারপাত, তুষারঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও দেখা যায়। এ সময় প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ, হিমালয়ের আশপাশের কিছু অঞ্চল ইত্যাদি স্থান থেকে পাখিরা দল বেঁধে চলে আসতে থাকে অপেক্ষাকৃত কম ঠাণ্ডা অঞ্চলের দিকে। এই পাখিদেরকেই বলা হয় পরিযায়ী পাখি বা অতিথি পাখি। শীতের সময় অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে আমাদের নাটোরের চলনবিল অঞ্চলসহ কিছু জলাশয়। বাংলাদেশে আগত অতিথি পাখিদের মধ্যে অধিকাংশই আসে হিমালয়ের পাদদেশের তিব্বতের লাদখা থেকে সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে। এসব পাখির মধ্যে বালিহাঁস, বুনোহাঁস, চখাচখি, হেরন, সারস, ডাহুক, কাদাখোঁচা, গায়ক রেন পাখি, ডুবুরি পাখি, রাজসরালি, গ্যাডওয়াল, পিন্টেইল, নীলশীর, পিয়াং, চীনা, পান্তামুখী, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি উল্লেখযোগ্য। প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি প্রতিবছর আমাদের দেশে বেড়াতে আসে। কয়েক মাস কাটিয়ে বসন্তকালে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিলের দিকে যখন শীতপ্রধান অঞ্চলের বরফ গলতে থাকে তখন তারা নিজ দেশে ফিরে যায়। এই পাখিগুলো আমাদের জীববৈচিত্র্যের অনন্য বৈশিষ্ট্য সংযোজন করে। কিন্তু কতিপয় অসাধু পাখি শিকারি অতিথি পাখি শিকার করে বাঙালির অতিথিপরায়ণতার সুনামকে ক্ষুণœ করে। অতিথি পাখির জন্য বাংলাদেশকে অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
বর্ষণমুখর দিন
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে প্রকৃতি যখন নির্জীব হয়ে ওঠে তখন বর্ষা আসে প্রাণস্পন্দন নিয়ে। বর্ষণমুখর দিনে অনুভ‚তিপ্রবণ মানুষ আরও বেশি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে। বর্ষণস্নাত দিন এক মিশ্র অনুভ‚তি সৃষ্টি করে মানুষের মনে। এদিনে মানুষ ও প্রকৃতি যেন একে অপরের মাঝে বিলীন হয়ে যায়। প্রতিটি মানুষের কাছেই এদিনটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। তপ্ত তৃষিত পৃথিবীর বুকে বৃষ্টির স্পর্শ জাগায় রোমাঞ্চকর অনুভ‚তি। মানুষের মনেও তার প্রভাব পড়ে। প্রকৃতির বৃষ্টিস্নাত রূপ মানুষকে আবেগাপ্লুত করে তোলে। বর্ষণমুখর দিনে মানুষের মাঝে অজানা এক আলস্য এসেও যেন ভর করে। কোনো কাজ-কর্মে মন বসে না। বাইরে যেতেও ইচ্ছা করে না কারও। এ দিন ঘরে থেকে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যেতেই মন চায় অধিকাংশ মানুষের। আর তার সাথে যদি খাবার হিসেবে থাকে গরম খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ তবে তো কথাই নেই। বর্ষণমুখর দিনে আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। আকাশ কালো করে যখন চারদিক ছাপিয়ে বৃষ্টি নামে তখন প্রত্যেক মানুষের মনে এক শীতল অনুভ‚তির সৃষ্টি হয়। মাঠেÑঘাটে-প্রান্তরে সর্বত্র হুঙ্কার তুলে আসে প্রমত্ত বাদল। কর্মব্যস্ত মানুষকে এক পশলা শান্তির নির্যাস দিয়ে যায় যেন বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি। আর ঘরে অবস্থানরত মানুষের মনে একাকিত্বের করুণ সুর বেজে ওঠে। তাই বর্ষণমুখর দিন মানুষের মনে মিশ্র অনুভ‚তির সঞ্চার করে।
নারী শিক্ষা [কু. বো. ১৫]
শিক্ষা প্রতিটি মানুষের জন্মগত মৌলিক অধিকার। এক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অংশীদারিত্ব রয়েছে। নারী ও পুরুষ সমাজ নামক দেহের দুইটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। নারী শিক্ষিত হলে পরবর্তী প্রজন্মও শিক্ষিত হয়ে গড়ে ওঠে। তাই নেপোলিয়ন বলেছেন, “আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব।” বর্তমানে বাংলাদেশে নারী শিক্ষার যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। দেশের উন্নতিতে পুরুষের পাশাপাশি এখন নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সবার জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা থাকলেও মাধ্যমিক পর্যায়ে শুধু মেয়েদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত নারী শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে। নারী শিক্ষায় অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে সরকারের এ পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। শিক্ষকতায় এর মধ্যে ৬০ ভাগ শিক্ষিকাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পেশাগত শিক্ষায় এখন নারীর অংশগ্রহণ ৩৮ শতাংশ। সরকারের নানা উদ্যোগে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে বাংলাদেশ ‘রোল মডেল’ হিসেবে কাজ করছে। নারী শিক্ষায় বাংলাদেশ তুলনামূলক অগ্রগতি সাধন করলেও সার্বিক দিক বিবেচনায় তা এখনও পর্যাপ্ত নয়। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে নারী শিক্ষার প্রসারে। তবেই দেশ ও জাতির যথাযথ অগ্রগতি সাধিত হবে।
সড়ক দুর্ঘটনা [চ. বো. ১৫]
সা¤প্রতিককালের অন্যতম জাতীয় সমস্যা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। নিরাপদ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়ায় এটি। প্রতিদিনই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। পত্রিকা ওল্টালেই প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার বীভৎস সব খবর আমাদের চোখে পড়ে। সড়ক দুর্ঘটনার ফলে মানবসম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (এআরসি) গবেষণা অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। আহত হয় ৩৫ হাজার লোক। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার পেছনে রয়েছে নানা কিছু কারণ। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ সরু রাস্তা ও রাস্তায় ডিভাইডার না থাকা, পুরনো ও ত্রæটিপূর্ণ যানবাহন, উন্নতমানের ও টেকসই সড়কের অভাব, চালকের অদক্ষতা, ড্রাইভিং পেশার উৎকর্ষহীনতা, সনাতনি ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা, সড়ক নিরাপত্তায় সচেতনতার অভাব, বিকল্প যানবাহনের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকা, আইন প্রয়োগের অভাব, জনসচেতনতার অভাব, চালকের ওভারটেকিং করার প্রবণতা, রাস্তায় সড়কবাতি না থাকায় ইত্যাদি মনে রাখতে হবে যে, “একটি দুর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না”। তাই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
বই পড়া [য. বো. ১৫]
বই হলো জ্ঞানের আধার। জ্ঞান অর্জনের জন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বই পড়া সর্বাপেক্ষা উত্তম কাজ। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জ্ঞান বই পড়ার মাধ্যমেই আমরা পেয়ে থাকি। মানুষের মেধা ও মননের বিকাশ সাধনের অন্যতম মাধ্যম হলো বই। সকল কালের এবং সকল দেশের ঘটনা লিপিবদ্ধ রয়েছে বইয়ের প্রতিটি পাতায়। মানুষের জীবন নিরবচ্ছিন্ন সুখের আধার নয়। প্রতি মুহূর্তে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ায় নানা চিন্তায় মগ্ন থাকতে হয় মানুষকে। নির্মল আনন্দের উৎস খুঁজে পাওয়া বিরল। বই পড়ার মাধ্যমে আমরা সে নির্মল আনন্দের উৎসকে সহজেই খুঁজে পেতে পারি। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের বই পড়েই পাওয়া যায়। বই মানুষের সবচেয়ে উত্তম সঙ্গী। তবে বইয়ের পাতায় বিবৃত ইতিবাচক জ্ঞান তখনই মানুষ অর্জন করতে পারবে যখন সে একটি ভালো বই বেছে নেবে। বইয়ের নানা ধরন রয়েছে। বিশুদ্ধ জ্ঞান তখনই অর্জন করা যায় যখন সঠিক ও ভালো বইকে আমরা সঙ্গী হিসেবে বেছে নিই। বই আমাদেরকে নিঃস্বার্থভাবে উপকার করে। একটি বই কাল থেকে কালান্তরে জ্ঞান বিলিয়ে থাকে। মানুষকে স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলে। বই পড়ার মাধ্যমে নির্মল জ্ঞানের সন্ধান করাই জ্ঞানী ব্যক্তির কাজ। তাই সঠিক জ্ঞান ও জীবনপথের সন্ধান পেতে হলে উত্তম বই পড়া আবশ্যক।
সত্যবাদিতা [সি. বো. ১৫]
প্রকৃত মানুষ হতে হলে যেসব নৈতিক গুণ থাকা আবশ্যক তার মধ্যে সত্যবাদিতা অন্যতম। সত্যবাদিতা একটি পবিত্র গুণ। যে ব্যক্তি সত্য কথা বলে তার পক্ষে অন্যায় কাজ করা অসম্ভব। সত্য বললে মানুষের জীবনযাপন অনেক সহজ হয়ে যায় এবং সে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে দূরে থাকতে পারে। যে ব্যক্তি মিথ্যার আশ্রয় নেয় সে একটি চক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। একটি মিথ্যা লুকানোর জন্য তাকে আরও অনেক মিথ্যা বলতে হয়। ফলে সে অনবরত নানা পাপকাজে লিপ্ত হয়। ইচ্ছা না থাকা সত্তে¡ও তাকে মিথ্যা বলতে হয়। কিন্তু জীবনকে সুখ ও শান্তিময় করে তুলতে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। সত্য পথে থাকলেও নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় মানুষকে। তবুও কোনো অবস্থাতেই সত্যের পথ ত্যাগ করা সমীচীন নয়। সত্যবাদিতা মানুষকে সাফল্যের চূড়ায় আরোহণ করতে সাহায্য করে। শত বাধার সম্মুখীন হয়েও যে ব্যক্তি সত্যকে অবলম্বন করে পথ চলে সে সকলের কাছে প্রিয় হয়। তার ইহকাল ও পরকাল উভয়ই সুখের হয়। সত্যবাদিতার সাহায্যে কঠিন থেকে কঠিনতর কাজও সহজে সমাধান করা যায়। তাই সব অবস্থাতেই সত্যবাদিতাকে আশ্রয় করা উচিত।
বিদ্যালয়ের শেষ দিন [সি. বো. ১৫]
বিদ্যালয়ের প্রথম দিন এবং শেষ দিন দুটোই আমার কাছে বেশ স্মৃতিময় ও আবেগপূর্ণ। বিদ্যালয়ের শেষ দিন আমার কাছে স্মৃতির ডালা হিসেবে ধরা দেয়। আমাদের এসএসসি পরীক্ষার দ্বারপ্রান্তে ছিলাম তখন আমরা। আমাদের নির্বাচনি পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুদিন পরই ক্লাস বন্ধ হওয়ার ঘোষণা দিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ। তাই আমরা বিদ্যালয়ের শেষ দিনটি আনন্দের সাথে উদ্যাপন করার পরিকল্পনা করলাম। প্রথমেই আমরা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীরা শ্রেণিশিক্ষিকাকে সাথে নিয়ে কেক কাটলাম। আমাদের উদ্দেশে তিনি অনেক মূল্যবান উপদেশ দিলেন। এরপর আমাদের মধ্যে অনেকেই নিজের অনুভ‚তি ব্যক্ত করল। তার মধ্যে আমিও ছিলাম। দীর্ঘ সময় একই বিদ্যালয়ে কাটানোর পর ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট লাগছিল। আমরা সব বিভাগের ছাত্রীরা মিলে একসাথে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হলাম। সেখানে প্রধান শিক্ষিকা আমাদের উদ্দেশে অনেক কথা বললেন। এরপর আমরা বান্ধবীরা মিলে নাচ-গান করে বেশ হইচই করলাম। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব আমাদের। এতদিনের সান্নিধ্যের ছন্দপতনের ভয়ে সবাই বিষণœ হলাম। পরক্ষণেই আমাদের আবেগ যেন বাঁধ ভেঙে দিয়ে অশ্রæ হয়ে গড়িয়ে পড়ল। সবাই সবার সাথে এক আত্মিক বন্ধন অনুভব করলাম। আমার প্রিয় শিক্ষিকসহ রেহানা ম্যাডামকে আমরা দিনে একটি ফুলের ডালি, কার্ড, কলম, ডায়েরি ইত্যাদি উপহার দিলাম। তাঁদের সাথে ছবিও তুলে নিলাম। আজও আমার কাছে বিদ্যালয়ের সেই শেষ দিনটি বিশেষভাবে ধরা দেয়। এদিনটির কথা আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না।
পহেলা ফাল্গুন
বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন হিসেবে পরিচিত। বাংলার ষড়ঋতু পরিক্রমায় সবার শেষে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। ফাল্গুন ও চৈত্র, এ দুই মাস মিলে বসন্তকাল। শীতের শুষ্কতা আর জীর্ণতাকে ঘুচিয়ে নবীন আলোক বার্তা নিয়ে আসে ফাল্গুন। ১লা ফাল্গুন আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য দিন। এদিন সারাদেশে তারুণ্যের জোয়ার নামে। মেয়েরা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে সেজেগুজে বের হয়। মাথায় পরে রং-বেরঙের ফুলের মালা। ছেলেরাও পরে পাঞ্জাবি। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার, বিভিন্ন বয়সের মানুষ পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে উৎসবমুখর পরিবেশে বাইরে ঘুরতে বের হয়। পহেলা ফাল্গুনের উৎসব শহরেই বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে ঢাকায়। চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এদিন বকুলতলায় বসন্ত উৎসব পালন করে। দেশীয় সংস্কৃতিকে ধারণ করে সারাদিন গান চলতে থাকে। এ উৎসব ছড়িয়ে যায় শাহবাগ, পাবলিক লাইব্রেরি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত। এদিন মানুষে মানুষে শুভেচ্ছা ও কুশলাদী বিনিময় হয়ে থাকে। পহেলা ফাল্গুন আমাদের উৎসব ও ঐতিহ্যপ্রিয়তারই অনন্য নিদর্শন। বাঙালির জীবনে পহেলা ফাল্গুনের গুরুত্ব তাই অপরিসীম। এটি বাঙালির সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ সংস্কৃতির চেতনা আমাদের ধারণ ও লালন করতে হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বর্তমান সময়ে অত্যন্ত আলোচিত একটি বিষয়। উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এটি একটি সময়োচিত পদক্ষেপ। ডিজিটাল বাংলাদেশ কী, এ বিষয়কে বুঝতে হলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে একটি দেশ কীভাবে ডিজিটাল দেশে পরিণত হতে পারে। একটি দেশকে তখনই ডিজিটাল দেশ বলা যাবে যখন তা ই-স্টেটে পরিণত হবে। অর্থাৎ ওই দেশের যাবতীয় কাজ যেমনÑ সরকারব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি প্রভৃতি কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। তাই একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিজিটাল বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার। ২০২১ সালে পালিত হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সেই লক্ষ্যে এ সময়ের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। সাধারণভাবে বলতে গেলে একটি ডিজিটাল সমাজ নিশ্চিত করবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, যেখানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সমস্ত কর্মকাণ্ডে অনলাইন প্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত হবে। কার্যকর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি সুশাসিত সমাজব্যবস্থা নিশ্চিত করাই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। এক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী তথ্যপ্রযুক্তি কাঠামো গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ঘাটতির সমাধান, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কাঠামোর উন্নয়ন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রশিক্ষণ, ইংরেজি শিক্ষার ব্যবহারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্বায়ন সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি দ্রæত প্রসারের ফলে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছে ডিজিটাল উন্নয়নের চলমান প্রক্রিয়ায়। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নামক প্রকল্পের সাথে সাধারণ মানুষের যোগসূত্র তৈরি করতে হবে। তবেই উন্নত, আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনের এই স্বপ্ন পূরণ হবে।
সততা
সততা মানবচরিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি গুণ। সর্বদা সত্য কথা বলা, সৎপথে চলা এবং কোনো অন্যায় কাজে লিপ্ত না হওয়ার নামই সততা। এক কথায় সত্যের অনুসারী মানুষের সৎ থাকার গুণকে সততা বলা হয়। এই গুণ অর্জনের চেষ্টা ও চর্চা একজন মানুষকে পৌঁছে দিতে পারে মর্যাদা ও গৌরবের আসনে। নিষ্ঠার সঙ্গে নিরলস অনুশীলনের মাধ্যমে এই গুণ অর্জন করা যায়। আর এই গুণ যিনি অর্জন করতে পারেন তিনিই সমাজে আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে থাকেন। সততাকে তাই মানবচরিত্রের অলংকার বলা হয়। সততার সুফল শত ধারায় বিকশিত। জীবনকে সুন্দর, সফল ও সার্থক করার জন্য সৎ থাকার অভ্যাস করতে হয়। সৎগুণসম্পন্ন মানুষ কখনোই অন্যায় ও অবৈধ কাজে লিপ্ত থাকতে পারে না। সৎ লোক মাত্রই চরিত্রবান ও মহৎ হয়ে থাকে। তাই সে সবার বিশ্বাসভাজন ও শ্রদ্ধেয় হয়। সততা মানুষের নৈতিকতাকে সমুন্নত করে। সৎ ব্যক্তি কখনোই অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। একটি সমৃদ্ধ ও আদর্শ জীবন গড়ার জন্য সততার বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের উচিত ছাত্রজীবন থেকেই সৎ গুণগুলো অনুশীলন করা। তাহলেই তারা পরিবার ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে।
দুর্নীতি
জাতীয় জীবনে উন্নতির অন্যতম অন্তরায় দুর্নীতি। আমাদের জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রকোষ্ঠে দুর্নীতি এমনভাবে প্রবেশ করেছে যে, আজকাল একে এড়িয়ে আমাদের চলাই দায়। অফিস-আদালতে, পেশায়-নেশায়, ঘরে-বাইরে, রাজনীতি কিংবা ধর্মনীতি সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির সর্বগ্রাসী প্রভাব বিদ্যমান। দুর্নীতি যেন সভ্য সমাজে স্বাভাবিক বিষয়। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে পর পর বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দুর্নীতির কারণে বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে, সাহায্যের হাতও গুটিয়ে নিচ্ছে ধনী দেশগুলো। দুর্নীতির অবাধ বিস্তার সামাজিক ক্ষেত্রে নব্য ধনিকশ্রেণির সৃষ্টি করছে, জন্ম দিচ্ছে নানামুখী বৈষম্য। সন্ত্রাস নামক যে ভয়ংকর দানব সমাজকে নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে তার পেছনেও রয়েছে দুর্নীতির প্রভাব। দুর্নীতি জন্ম দিয়েছে মূল্যবোধহীনতা, যা সমাজকে অবক্ষয়ের অতলে ডুবিয়ে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দুর্নীতি এক দুরারোগ্য ব্যাধি, দুর্বিষহ অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। এর করাল গ্রাসে জাতীয় উন্নতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। মেধা ও পরিশ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না। বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। স্বনির্ভর জাতি গড়ে তোলার জন্য দুর্নীতি নামক এই অভিশাপকে রুখতে হবে এখনই। সকলের সম্মিলিত অঙ্গীকারই পারে এর প্রভাব কমিয়ে আনতে।
আমাদের লোকশিল্প
দেশি জিনিস দিয়ে দেশের মানুষের হাতে তৈরি শিল্পসম্মত দ্রব্যকেই লোকশিল্প বলা হয়। বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাপন ও গ্রামীণ ঐতিহ্যের সাথে লোকশিল্পের নিবিড় যোগাযোগ বিদ্যমান। নানা ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পে আমাদের দেশ সমৃদ্ধ। ঢাকাই মসলিন নিয়ে আজ অবধি আমরা গর্ববোধ করি। লুপ্তপ্রায় নকশিকাঁথা আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের স্মারক। আমাদের দেশের লোকশিল্প বিভিন্ন রূপে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে প্রাধান্য পেয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা, টাঙ্গাইল, সাহজাদপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এলাকার তাঁতশিল্প উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের জামদানি, খুলনার মাদুর, সিলেটের শীতল পাটি আমাদের সবার পরিচিত। বাংলাদেশের মৃৎশিল্পীদের তৈরি পোড়ামাটির কলস, হাঁড়ি, পাতিল, সানকি, ফুলদানি, পুতুলও আমাদের লোকশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গ্রামের ঘরে ঘরে শিকা, হাতপাখা, বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র, কাপড়ের পুতুলও আমাদের দেশের মানুষের রুচির পরিচায়ক। লোকশিল্প যেমন আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে তেমনি বিদেশি মুদ্রা উপার্জনেও অবদান রাখে। এর ভেতর দিয়ে দেশের অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব। তাই লোকশিল্পের সংরক্ষণ ও স¤প্রসারণের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
পরিবেশ দূষণ [ঢা. বো. ১৫]
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর। জীবনযাপন তাই এখন অনেক আধুনিক, অনেক সহজ। কিন্তু তা করতে গিয়ে মানুষ পরিবেশ ধ্বংসের নেতিবাচক দিকে লক্ষ রাখছে না। মানুষসহ অন্যান্য জীবজন্তু পরিবেশও প্রকৃতির অংশ। প্রকৃতির দানেই মানুষ নানা আঙ্গিকে নিজের জীবনকে সাজিয়ে তুলেছে। অথচ অবিবেচক মানুষদের কারণেই পরিবেশ আজ ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণ মূলত দুটি কারণে ঘটে। একটি হচ্ছে প্রাকৃতিক কারণ আর অন্যটি মানবসৃষ্ট কারণ। বর্তমান সময়ে পরিবেশ দূষণের পেছনে মানুষের ভ‚মিকাই সবচেয়ে বেশি। জনসংখ্যার বিস্ফোরণের কারণে প্রাকৃতিক সম্পদ- বায়ু, পানি, মাটির ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ছে। বনজ সম্পদ ধ্বংসে রীতিমতো উৎসব চলছে বিশ্বজুড়ে। ফলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাতাসে ধুলোবালি, কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া, কীটনাশক ইত্যাদির উপস্থিতি বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। কলকারখানার বর্জ্য, কীটনাশক ইত্যাদি পানিকে করে তুলেছে বিষাক্ত। হাজারো রকমের উৎকট শব্দের কারণে শব্দদূষণ ঘটছে। নষ্ট হচ্ছে মনের শান্তি। ক্ষতিকর রাসায়নিক ও যত্রতত্র আবর্জনা ফেলায় দূষিত হচ্ছে মাটি। এভাবে দূষিত হতে থাকলে একসময় পরিবেশের ভারসাম্য সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে এই বিশ্ব জীবের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব আজ মারাত্মক হুমকির মুখে। বিশ্বের পরিবেশবাদীরা চেষ্টা করছেন এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে। নেওয়া হচ্ছে নানামুখী পদক্ষেপ। উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ-এ দুয়ের মাঝে সমন্বয় সাধনের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে জনসংখ্যার বৃদ্ধি রোধ ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা ব্যাপক ভিত্তিতে তৈরি না হলে পরিবেশ দূষণ কমানো সম্ভব হবে না। পরিবেশ দূষণ যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সবারই ভ‚মিকা রাখা উচিত। সকলের সচেতনতাই আমাদের পরিবেশকে সুস্থ ও সুন্দর করে তুলতে পারে।
যানজট [দি. বো. ১৫]
যানজট বলতে বোঝায় যানবাহনের জট। রাস্তায় যানবাহন যখন স্বাভাবিক গতিতে চলতে না পেরে অস্বাভাবিক জটের সৃষ্টি করে তখন তাকেই আমরা যানজট বলে থাকি। যানজট জনবহুল এই বাংলাদেশের এক বিরাট সমস্যা। এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় শহরগুলোতে, বিশেষত রাজধানী ঢাকাতে। যানজটের সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার শহরাঞ্চলের প্রতিটি মানুষ। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে শহরগুলো প্রতিনিয়ত মানুষের ভিড় বেড়েই চলেছে। জনগণের প্রয়োজনের সাথে তাল মিলিয়ে যানবাহনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা তৈরি করছে যানজট। এছাড়া রাস্তার স্বল্পতা, অপ্রশস্ততা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, ট্রাফিক আইন অমান্য করাই হচ্ছে যানজটের অন্যতম কারণ। যানজটের ফলে নষ্ট হয় অসংখ্য কর্মঘণ্টা। প্রয়োজনীয় কাজগুলো যথাসময়ে করা সম্ভব হয় না। প্রায়ই ঘটে মারাত্মক সব দুর্ঘটনা। এভাবে যানজটের কারণে ব্যক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যানজট সমস্যা দূর করার জন্য অত্যন্ত কঠোরভাবে ট্রাফিক আইন পালন করাই হতে পারে এক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ। নগর উন্নয়নের জন্য পরিচালিত কর্মকাণ্ডগুলোও হওয়া উচিত সুপরিকল্পিত। শহরগুলোর যানজট সমস্যা সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কোনো বিকল্প নেই।
কম্পিউটার
বিবর্তনের সোপান বেয়ে আসে সভ্যতা। এর ফলে সৃষ্টি হয় নানা বিস্ময়কর জিনিস। বর্তমানে আমরা কম্পিউটারের যুগে উত্তীর্ণ হয়েছি। কম্পিউটার যুগ বলতে বোঝায় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যুগ। আর কম্পিউটার হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র, যা মানুষের মস্তিষ্কের বিকল্প। কম্পিউটার ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল কাজ অনুগত ভৃত্যের মতো হুকুম তামিল করতে সদা প্রস্তুত। কম্পিউটারের মাধ্যমে জীবনযাত্রার সকল পর্যায়ের অত্যন্ত জটিল কাজ খুব সহজেই সমাধান করা সম্ভব। কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটি কম্পিউটার এমন হিসাবÑনিকাশ করতে পারে যা একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গণিতজ্ঞের কয়েক বছর সময় প্রয়োজন হবে। দ্রæততম কম্পিউটারগুলো লক্ষ লক্ষ সমস্যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সমাধান করতে পারে। কোনো ধরনের ত্রæটি ছাড়াই এটি একই সময়ে অনেকগুলো কার্যক্রম চালাতে পারে। আজকাল কম্পিউটার বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি ব্যবসা চালাতে পারে, শিক্ষা প্রদান করতে পারে, বিমান চালাতে পারে, এমনকি সংগীত সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের উচিত দেশের উন্নয়নের জন্য কম্পিউটার প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। তাহলেই আমরা একটি প্রযুক্তিনির্ভর, বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক জাতি গড়তে পারব।
ইন্টারনেট
আধুনিক যোগাযোগের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির নাম ইন্টারনেট। তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামো ব্যবহার করে গড়ে ওঠা আন্তর্জাতিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো ইন্টারনেট। বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে বহুল আলোচিত ও সবচেয়ে গতিশীল যোগাযোগ ব্যবস্থা এটি। ইন্টারনেটকে বলা হয় নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেটের অবদানের ফলে এক যুগ আগে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যা ছিল অসম্ভব বা অকল্পনীয়, বর্তমানে তা চোখের পলকে সাধিত হচ্ছে। তথ্য আদান-প্রদান থেকে শুরু করে বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষের সাথে আড্ডা, সম্মেলন, শিক্ষা, বিপণন, অফিস ব্যবস্থাপনা, বিনোদন ইত্যাদি ইন্টারনেটের সাহায্যে করা যাচ্ছে। মাল্টিমিডিয়ার বিকাশের সাথে সাথে প্রতিদিন এর সম্ভাবনা আরো উজ্জ্বল হচ্ছে। এক দেশের মানুষ ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে অন্য দেশের চিকিৎসকের নিকট থেকে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এক দেশে বসে অন্য দেশে জিনিসপত্র কেনাকাটা সম্ভব হচ্ছে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে ঘরে বসেই কোনো শিক্ষার্থী বিশ্বের বড় বড় লাইব্রেরির শ্রেষ্ঠ বইগুলো পড়তে পারছে। অল্প খরচে পৃথিবীর এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে কথা বলা সম্ভব হচ্ছে। মানুষ তার জীবনকে অনেক আনন্দের সাথে উপভোগ করতে সক্ষম হচ্ছে ইন্টারনেটের কল্যাণেই। বাংলাদেশও এই প্রযুক্তিতে পিছিয়ে নেই। ইন্টারনেটের প্রতি মানুষের জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ব্যবহারে শিক্ষা, অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে আসছে আধুনিকতা। মোটকথা, ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যবহার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও যোগাযোগে সেতুবন্ধ সৃষ্টি করেছে।
শীতের সকাল
শীতের সকাল অন্যসব ঋতু থেকে আলাদা। কুয়াশার চাদরে মোড়া শীতের সকাল হাড় শীতল করা ঠাণ্ডা নিয়ে দেখা দেয়। এ সময় এক ফালি রোদ সকলের কাছে বহুল প্রতীক্ষিত হয়ে ওঠে। শীতের সকালে মানুষের মাঝে এক অজানা অলসতা ভর করে। লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকাতেই যেন তখন স্বর্গীয় সুখ অনুভ‚ত হয়। কুয়াশার অন্ধকারে সূর্যদেবতার দেখা পাওয়া ভার। তাই সকালের উপস্থিতি টের পাওয়াও কষ্টকর। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা শীতকেও দূরে সরিয়ে দেয়। তাই আড়মোড়া ভেঙে উঠতেই হয় সকলকে। নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। শীতের সকালে প্রকৃতি ও প্রাণীর মধ্যে এক ভিন্ন আমেজ লক্ষ করা যায়। মানুষ, জীবজন্তু, পাখ-পাখালি শীতের বেলায় সূর্যের প্রত্যাশায় প্রহর গুনতে থাকে। শীতের সকালের প্রকৃত আনন্দ গ্রামীণ জীবনেই খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলার গ্রামগুলোতে শীতের সকাল বেশ মনোরম হয়। গ্রামের মাঠে মাঠে শীতের প্রভাব বেশ চোখে পড়ে। শীতের কুয়াশা ভেদ করে নিজ নিজ গৃহপালিত প্রাণীদের নিয়ে বের হয় গ্রামের কর্মঠ মানুষেরা। সূর্যের দেখা পাওয়া মাত্রই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রোদ পোহাতে শুরু করে। গ্রামের মানুষেরা খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীতকালে উষ্ণতা খুঁজে ফিরে। শীতের সকালে গ্রামের সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত হলো পিঠা-পুলি খাওয়ার মুহূর্ত। গাছে গাছে খেজুরের রসের হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। এ রস দিয়ে নানা রকম পিঠা বানানো হয়। গ্রামীণ জীবনের আবেদন ইট-কাঠ-পাথরের শহুরে জীবনে পাওয়া যায় না। শহরে দেখা যায় বারান্দায় বসে রোদ পোহানোর দৃশ্য কিংবা গরম চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে খবরের কাগজ পড়ার দৃশ্য। লেপ জড়ানো কর্মব্যস্ত মানুষ নির্দিষ্ট সময়ের পরেও আরও একটু ঘুমিয়ে নিতে চায়। কিন্তু জীবিকার টানে তকে আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠতেই হয়। সর্বোপরি সকলের কাছেই শীতের সকাল হয়ে ওঠে বৈচিত্র্যময়।
বিশ্বায়ন
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। বিশ্বায়ন মূলত পারস্পরিক ক্রিয়া ও আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী একটি পদ্ধতি। বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান ও জনগণের মাঝে এটি সমন্বয় সাধন ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। এই পদ্ধতির চালিকাশক্তি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি। পরিবেশ, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক পদ্ধতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতি এবং মানবিক ও সামাজিক অগ্রগতি; সবকিছুর ওপরই এর সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ করা যায়। জাতীয় অর্থনৈতিক কাঠামোকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সাথে একীভ‚তকরণের প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে ‘বিশ্বায়ন’ শব্দটির অধিকতর ব্যবহার হয়ে থাকে। অনেকে এ প্রক্রিয়াকে নতুন হিসেবে উল্লেখ করে একে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে বহু পূর্ব থেকেই এ প্রক্রিয়াটি বিশ্ব জুড়ে চলমান রয়েছে। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারার মধ্যেই এর উৎস নিহিত ছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উদ্ভবের ফলে এর ক্ষেত্র অধিকতর প্রসারিত হয়। গত পঞ্চাশ বছরে এ প্রক্রিয়া সবচেয়ে বেশি গতি লাভ করেছে। বিশ্বায়নের ফলে বৈশ্বিক ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ সকলক্ষেত্রে অভ‚তপূর্ব বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এক দেশের পণ্য অন্য দেশে বসে সহজেই আমরা পেয়ে যাচ্ছি। প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থার কারণে পণ্যের দামও থাকছে হাতের নাগালে। তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের ফলে জ্ঞানার্জনের পথ হয়েছে প্রশস্ত। দারিদ্র্য, অজ্ঞানতা ও অপশাসন দূর করে বিশ্বকে একটি শান্তিপূর্ণ আবাসস্থল করার ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন একটি বড় সুযোগ। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের সব জাতি একযোগে এ সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। তবে ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি বিশ্বায়নের কিছু নেতিবাচক দিকও আমাদের চোখে পড়ে। তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকা দেশগুলো বিশ্বায়নকে নিজেদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এর ফলে হাতে গোনা কিছু পুঁজিপতিরা লাভবান হচ্ছে। গরিব হচ্ছে আরও গরিব। তবে বিশ্বায়নের ভালো দিকগুলোর উপযোগিতা অনস্বীকার্য। আমাদের উচিত এই ইতিবাচক দিকগুলোর প্রতি মনোযোগী হয়ে অর্থনৈতিকভাবে এবং মেধা ও মননে সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে আত্মনিয়োগ করা