নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ দ্বাদশ অধ্যায় সফল উদ্যোক্তাদের জীবনী থেকে শিক্ষণীয় সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

দ্বাদশ অধ্যায়
সফল উদ্যোক্তাদের জীবনী থেকে শিক্ষণীয়

জহুরুল ইসলাম (১৯২৮-১৯৯৫) : বাংলাদেশের শিল্প জগতে জহুরুল ইসলাম একটি পরিচিত নাম। তিনি ১৯২৮ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার ভাগলপুরে জš§গ্রহণ করেন। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য ১৯৪৮ সালে সিএন্ডবি ডিপার্টমেন্টের ওয়ার্ক সরকার পদে মাত্র সাতাত্তর টাকা বেতনের চাকরি নেন। তিনি কিছুদিন পর ঐ বিভাগে নি¤œমান সহকারী বা লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক পদ লাভ করেন। আড়াই বছর পর ১৯৫১ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন এবং বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড নামে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করে তিন-চার হাজার টাকার মতো সামান্য পুঁজি নিয়ে তিনি সম্পূর্ণভাবে ব্যবসায় শুরু করেন। কঠোর পরিশ্রম ও ব্যবসায়ের প্রতি একাগ্রতা ও আন্তরিকতা তাঁকে ধীরে ধীরে একজন সার্থক ব্যবসায় উদ্যোক্তা ও অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিণত করে। তিনি ১৯৬০ সালের দিকে চট্টগ্রামে একটি টিম্বার কারখানা ও ঢাকার জিঞ্জিরায় একটি গøাস কারখানা স্থাপন করেন। ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের আবাসন চাহিদা মেটাতে ১৯৬৪ সালে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ইসলাম গ্রæপ অব কোম্পানিজ নামে পরিচিত, যা ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আওতায় রয়েছে ইস্টার্ন হাউজিং লি., নাভানা লি., মিলনার্স লি., এসেনশিয়াল প্রোডাক্ট লি.; ঢাকা ফাইবার্স লি.; ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল লি., নাভানা স্পোর্টস লি., ঢাকা রিরোলিং মিলস্ লি., আফতাব অটোমোবাইলস লি., আফতাব ডেইরি ইত্যাদি। ১৯৯৫ সালের ১৯ অক্টোবর এই কর্মবীরের জীবনাবসান হয়।
স্যামসন এইচ চৌধুরী (১৯২৬-২০১২) : বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্যের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় নাম স্কয়ার গ্রæপের চেয়ারম্যান, জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব স্যামসন এইচ চৌধুরী। তার জš§ ১৯২৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলায়। পিতার পেশার কারণে ছোটবেলা থেকেই তিনি ঔষধ নিয়ে নাড়াচাড়া করতেন। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে তিনি ফার্মেসি বা ঔষধের দোকানকেই ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করেন। গ্রামের বাজারে দিলেন একটি ছোট দোকান। ১৯৫৮ সালে তিনি ঔষধ কারখানা স্থাপনের একটি লাইসেন্স পান। তিনিসহ আরও তিন বন্ধু মিলে প্রত্যেকের ২০,০০০ টাকা করে মোট ৮০,০০০ টাকায় ১২ জন শ্রমিক নিয়ে স্থাপন করেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৩০,০০০ শ্রমিক কর্মরত। শুধু ওষুধ শিল্প নয়, এ শিল্পগ্রæপের ব্যবসায় স¤প্রসারিত হয়েছে প্রসাধন সামগ্রী, টেক্সটাইল, কৃষিপণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও মিডিয়ায়। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে স্কয়ারের পণ্য। ওষুধের গুণগতমান দেশে বিদেশে স্বীকৃত। পৃথিবীর ৫০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে স্কয়ারের ওষুধ। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ শিল্পোদ্যোক্তা তাঁর সাফল্যের ভিত্তি হিসেবে ধৈর্য, অধ্যবসায় ও সততাকেই মূল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি ৮৬ বছর বয়সে এ কীর্তিমানের জীবনাবসান হয়।
শাহিদা বেগম গৃহবধূ থেকে উদ্যোক্তা : বরিশালের লিবার্টি জেন্টস টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী শাহিদা বেগম। শাহিদা বেগম বাস করেন বরিশাল শহরে। স্বামীর টেইলারিং ব্যবসায় আর চার মেয়ে নিয়ে তার দিনগুলো ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই তার স্বামী অসুস্থ হন। ১৯৯৭ সালে তার স্বামী তাদের সবাইকে রেখে চলে যান পরপারে। শাহিদা যেন চোখে অন্ধকার দেখেন। শাহিদার সামান্য গহনাই সম্বল ছিল। গহনা বিক্রি করে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েই ব্যবসায়টি শুরু করেন। দোকানের কর্মচারীরাও তখন ছিল ২ জন। তাদের কাছে টেইলারিং শেখেন। আত্মবিশ্বাস ও কঠিন মনোবল নিয়ে তিনি পুরো পরিস্থিতি সামলে নিয়ে একটি আধুনিক জেন্টস টেইলার্স গড়ে তোলেন। এভাবেই তিনি সাধারণ গৃহবধূ থেকে পুরোপুরি ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। তিনি ২০০৮ সালে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে পুরস্কার পেয়েছেন।
 আজাদ প্রোডাক্টসের মালিক আবুল কালাম আজাদ : জীবনের প্রথম ব্যবসায় শুরু করেছিলেন মাত্র ৪৫০ টাকা পুঁজি নিয়ে। ধীরে ধীরে সে ব্যবসায় পরিণত হয়েছে বিশাল প্রতিষ্ঠানে। আজকে তিনি দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আজাদ প্রোডাক্টসের কর্ণধার। নাম আবুল কালাম আজাদ। ১৯৭০ সালের কথা। এসএসসি পরীক্ষার পর বাবার সঙ্গে বাজারে গিয়েছিলেন পাটের বিনিময়ে ইলিশ মাছ ও কাঁঠাল কিনতে। সেখানে নারিকেল বিক্রি করে লাভবান হবার সুযোগ দেখে খালাত ভাইয়ের সহায়তায় মাত্র ৪৫০ টাকা মূলধন নিয়ে ব্যবসায় শুরু করলেন। এটিই ছিল তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ছোট নৌকা করে এক হাট থেকে অন্য হাটে নারিকেল আনা নেওয়া করতেন। একসময় আরও কিছু করার আশায় গ্রাম থেকে শহরে পাড়ি জমালেন। শুরু হলো কষ্টের জীবন। বায়তুল মোকাররমের সামনে পোস্টার বিক্রি করতে দেখে নিজেও সে রকম একটি পরিকল্পনা করলেন। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করে শুরু করে দিলেন ছোট পরিসরের ব্যবসায় ‘আজাদ পোস্টার হাউস’। এল রহমান জুয়েলার্সের সামনে একটি খাম্বার সাথে ঝুলিয়ে বিক্রি করতেন পোস্টার। সেদিনের সেই ভ্রাম্যমান দোকান পরিণত হলো বিশাল আজাদ প্রডাক্টসে। আবুল কালাম আজাদের মতে, তার সাফল্যের পেছনে আছে কঠোর পরিশ্রম ও মায়ের দোয়া। তাই নিজের মাসহ পৃথিবীর সকল মায়েদের শ্রদ্ধা জানাতে ২০০৩ সাল থেকে প্রচলন করেছেন ‘রতœগর্ভা মা অ্যাওয়ার্ড।
 লুৎফা সানজিদা : সংগ্রামময় জীবনে সফল উদ্যোক্তা : লুৎফা সানজিদা সংগ্রামময় জীবনে সফল উদ্যোক্তা। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের হালিশহরের অনিন্দ্য বুটিক এবং পার্লারের মালিক লুৎফা সানজিদা, যিনি মাত্র ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসায় শুরু করে আজ কোটিপতির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন বুটিক ও পার্লার। সংগ্রামই তার জীবনের মূলমন্ত্র। এক কাজিনের নিকট থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার নিয়ে ১৯৮৯ সালে তিনি চকভিউ মার্কেটে একটি শোরুম দিয়েছিলেন। সেটিই ছিল তার জীবনের ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। শুরু থেকেই দোকানটিতে বেচাকেনা ভালো হতো। ১৯৯৫ সালে তিনি চট্টগ্রামের মাইডাস থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সে আরেকটি শোরুম দেন। ব্যবসায় জমে ওঠে। পরিবারে সচ্ছলতা আসতে থাকে। ২০০৪ সালে তিনি একটি বিউটি পার্লার দেন। তিনি প্রতিবন্ধী নারী, স্বামী পরিত্যক্তা ও নির্যাতিতা নারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করেন।
 বগুড়ার নায়েব আলী : চরম হতাশা ও দুর্ভোগের পরও শ্রম, মেধা ও সামান্য পুঁজির সমন্বয় ঘটিয়ে ভাগ্য উন্নয়ন সম্ভব এটা প্রমাণ করেছেন বগুড়ার যুবক নায়েব আলী। জমিজমা বেচে আর ঋণ করে ভাগ্য ফেরাতে বিদেশ গিয়ে আদম ব্যাপারির প্রতারণায় সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন তিনি। এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ এ উপাদানটির কথা মাথায় রেখে নায়েব আলী পরিকল্পনা নেন হাঁস পালনের। পাশের গ্রাম থেকে কিনে আনেন ৩০টি হাঁসের বাচ্চা। মাত্র এক হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ২০০৯ সালে তিনি নিজ গ্রামে গড়ে তোলেন হাঁসের খামার। বর্তমানে তিনি এক হাজার হাঁসের খামারের মালিক। দু’বছর আগে বিদেশ যাওয়ার জন্যে যে অর্থ ঋণ করেছিলেন, খামারের আয় থেকে সে অর্থ পরিশোধ করে দিয়েছেন এবং কিছু জায়গা জমিও কিনেছেন। এছাড়া হাঁসের খামার গড়ে ওঠার কারণে খাদ্য, শামুক ও হাঁসের ডিম বিক্রির মাধ্যমে আরও ১০ জনের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হয়েছে।

অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
এম. কম পাস করার পর জনাব ইশরাক একটি ঔষধ কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। চাকরির নিয়মকানুন, অন্যের অধীনে কাজ করা ইত্যাদি ভালো না লাগায় চাকরি ছেড়ে নিজেই উদ্যোগ গ্রহণ করে একটি ঔষধের ব্যবসায় শুরু করেন। পরবর্তীতে পরিশ্রম, সততা, নিষ্ঠা ইত্যাদি পুঁজি করে ‘রাজ ফার্মা’ নামে একটি ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
ক. ‘স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস’Ñএর প্রতিষ্ঠাতা কে?
খ. ঝুঁকি বলতে কী বুঝায়? বর্ণনা কর।
গ. উদ্যোক্তার কোন গুণটি ইশরাককে উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করেছে? বর্ণনা কর।
ঘ. ‘রাজ ফার্মা’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইশরাকের বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। মূল্যায়ন কর।
 ১নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ‘স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস’Ñএর প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরী।
খ. আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং ব্যবসায়িক জীবনের অনিশ্চয়তার যে অংশটুকু পরিমাপ করা যায় তাকে ঝুঁকি বলে। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। এই অনিশ্চয়তার কারণে ক্ষয়-ক্ষতি, আপদ-বিপদ বা হারানোর যে আকাক্সক্ষা থাকে তাকে ঝুঁকি বলে। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেও এটা ব্যতিক্রম নয়। ব্যবসায়ের বিভিন্ন স্তরে বিশেষ করে বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন আনার যে অনিশ্চয়তা থেকে যায় সেটা থেকেই ঝুঁকির উদ্ভব ঘটে।
গ. উদ্যোক্তার যে গুণটি ইশরাককে উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করেছে তা হলো ‘স্বাধীনচেতা মনোভাব’।
একজন সফল উদ্যোক্তার কতগুলো গুণ থাকে। এসব গুণের মধ্যে স্বাধীনচেতা মনোভাবের গুণটি অন্যতম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তি কখনোই অন্যের অধীনে কাজ করতে আগ্রহী নয়। নিজ মেধা ও পরিশ্রম দ্বারা নিজেই নিজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। উদ্দীপকের ইশরাক একজন স্বাধীনচেতা উদ্যমী যুবক। এম. কম পাস করার পর জনাব ইশরাক চাকরি শুরু করলেও চাকরির ধরাবাঁধা নিয়ম কানুন এবং অন্যের অধীনস্থতা তার ভালো লাগেনি। তাই কিছু দিনের মধ্যেই তিনি চাকরি ছেড়ে দিলেন এবং নিজেই শুরু করলেন ওষুধের ব্যবসায়। নিজ চেষ্টা, সাধনা, পরিশ্রম, সততা আর নিষ্ঠার বিনিময়ে এক সময় প্রতিষ্ঠা পেলেন একজন বড় ব্যবসায়ী হিসেবে। তাই বলা যায়, ইশরাকের স্বাধীনচেতা মনোভাবই তাকে বড় হতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে।
ঘ. ‘রাজ ফার্মা’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইশরাকের পরিশ্রম, সততা ও নিষ্ঠাসহ একজন সফল উদ্যোক্তার অন্যান্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠেছে।
একজন প্রকৃত উদ্যোক্তা বহুবিদ গুণের অধিকারী হন। যার সম্মিলন ঘটানোর মাধ্যমে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর আসনে উপনীত হতে পারেন। উদ্দীপকে ‘রাজ ফার্মার’ প্রতিষ্ঠাতা ইশরাকের মধ্যে উদ্যোক্তার বিভিন্ন ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ঘটেছে। ইশরাকের উদ্যোগের ফলে ‘রাজ ফার্মা’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নতুন সম্পদ সৃষ্টি করেছেন। ইশরাক সমস্ত ঝুঁকি বহন করে পরিশ্রম, সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করেছেন। যার ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়ে উঠতে পেরেছেন। অর্থাৎ একজন সফল উদ্যোক্তার বিভিন্ন ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ইশরাকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং, ইশরাকের মধ্যে একজন সফল উদ্যোক্তার বিভিন্ন গুণাবলি অন্তর্নিহিত ছিল যা তার ‘রাজ ফার্মা’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে প্রকাশ লাভ করেছে।
প্রশ্ন-২  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
কালিকচ্ছ গ্রামের শ্যামল সামান্য টং দোকান দিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছিলেন। দিন-রাত খেটে তিলে তিলে তিনি ব্যবসায়টি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সদা হাস্যময় শ্যামল কখনো ক্লান্তির কাছে হার মানেননি। তার প্রতিদিনের কাজের ব্যস্ততা এলাকার সবাইকে মুগ্ধ করত। আজ তিনি এলাকার স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তার হাত প্রসারিত।
ক. ইস্টার্ন হাউজিং কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
খ. বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলতে কী বোঝায়Ñ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্যোক্তার কোন গুণটি থাকায় শ্যামল আজ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীÑ বিশ্লেষণ কর।
ঘ. ‘ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ উদ্যোক্তার একটি বড় গুণ’ উদ্দীপকের আলোকেÑ উক্তিটি মূল্যায়ন কর।
 ২নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ১৯৬৪ সালে ইস্টার্ন হাউজিং প্রতিষ্ঠিত হয়।
খ. বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা ঈওচ বলতে এমন একজন উদ্যোক্তাকে বোঝায় যিনি দেশের বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জাতীয় আয় বৃদ্ধিসহ সামগ্রিকভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। দেশের সফল উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে সরকার প্রতি বছর ঈওচ নির্বাচন করে থাকেন। ঈওচ মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ব্যবসায়-বাণিজ্য ছাড়াও দেশ ভ্রমণ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিশেষ কতগুলো সুবিধা ভোগ করতে পারেন।
গ. উদ্যোক্তার ‘কঠোর পরিশ্রম’ গুণটি থাকায় শ্যামল আজ একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
‘কঠোর পরিশ্রম’ উদ্যোক্তার লক্ষ্যে পৌঁছার কাজকে সহজ করে। পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবনের উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করা যায়। তাই যেকোনো কার্যফল কিংবা সৌভাগ্যের পিছনে জড়িত থাকে কঠোর শ্রম আর সাধনা। উদ্দীপকে শ্যামল একসময় সামান্য একজন টং দোকানদার ছিলেন। সামান্য টং দোকান বলে তিনি তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটিকে কখনো অবহেলা করেননি। তিলে তিলে গড়ে তোলা এই ছোট্ট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি অবিরাম শ্রম দিয়েছেন। প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করলেও ক্লান্তির কাছে তিনি কখনো হার মানেননি। জীবনযুদ্ধে প্রতিকূল অবস্থায় থেকেও তিনি সব সময় হাস্যময় থাকতেন। কাজের প্রতি তার আগ্রহ ও একাগ্রতা দেখে এলাকাবাসীও মুগ্ধ হতো। তার এই কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
ঘ. একজন সফল উদ্যোক্তা ব্যবসায় বাণিজ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা একজন উদ্যোক্তার আবশ্যকীয় কাজ না হলেও এটি তার সামাজিক প্রতিপত্তি ও মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে উদ্যোক্তা সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে প্রকৃত একজন আদর্শ ব্যবসায়ী ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে আবিভ‚ত হতে পারেন। উদ্দীপকের সামান্য টং দোকানদার শ্যামল তার কঠোর পরিশ্রম দ্বারা একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর তিনি তার অতীতের দিনগুলোকে ভুলে যাননি। তাই যেকোনো ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেই তিনি সেখানে অংশ নেন। এ গুণটি সকল আদর্শ উদ্যোক্তার মধ্যেই বিদ্যমান। যার সুষ্ঠু প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন।
সুতরাং বলা যায়, ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ উদ্যোক্তার একটি বড় গুণ।

প্রশ্ন-৩  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
স্বল্পশিক্ষিত মিটুল জেলা শহরে একটি মোবাইল সার্ভিসিং-এর দোকানে স্বল্প বেতনে ৫ বছর মনোযোগসহকারে কাজ দেখে ও শিখে। পরবর্তীতে সে গ্রামে এসে একটি দোকান দেয়। প্রথমে আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতদের মোবাইল কম মজুরিতে মেরামত করে। সুনাম ছড়িয়ে পড়লে তার কাজের পরিধি ও মুনাফা বেড়ে যায়। ২ জন কর্মচারী নিয়ে বাতিল হওয়া মোবাইল ব্যাটারি দ্বারা সে চার্জলাইট তৈরি করে বিক্রি করতে শুরু করে। এখন ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবসায়ের পাশাপাশি গ্রামের অসহায় ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের চার্জার লাইট বিনামূল্যে বিতরণ শুরু করছে।
ক. বরিশালের লিবার্টি জেন্টস টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী কে? ১
খ. প্রাক্কলিত নগদান প্রবাহ বিবরণী কী? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. ৫ বছর স্বল্প বেতনের কর্মচারী হিসেবে কাজ করায় মিটুলের মধ্যে উদ্যোক্তার কোন গুণাবলি ফুটে উঠেছে তা বর্ণনা কর। ৩
ঘ. মিটুলের মধ্যে উদ্যোক্তার যেসব বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়Ñ তা মূল্যায়ন কর। ৪
 ৩নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. বরিশাল লিবার্টি জেন্টস টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী শাহিদা বেগম।
খ. যে বিবরণীতে নির্দিষ্ট সময়ে কী পরিমাণ নগদ আসছে এবং কী পরিমাণ ব্যয় হচ্ছে তা সংরক্ষণ করা হয় তাকে নগদানপ্রবাহ বিবরণী বলা হয়। সুষ্ঠুভাবে ব্যবসায় পরিচালনার জন্য ব্যবসায় উদ্যোক্তার নগদপ্রবাহ বিবরণী প্রাক্কলন করা প্রয়োজন। এই বিবরণী দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে সংরক্ষণ করা হয়। নগদানপ্রবাহ বিবরণী তৈরি করার ফলে উদ্যোক্তা তার ব্যবসায়ের নগদের প্রকৃত অবস্থা জানতে পারে।
গ. ৫ বছর স্বল্প বেতনের কর্মচারী হিসেবে কাজ করায় মিটুলের মধ্যে নিজের অভিজ্ঞতা ও অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার গুণাবলি ফুটে উঠেছে।
একজন উদ্যোক্তা নানা ধরনের গুণাবলির অধিকারী হয়ে থাকেন। তার মধ্যে নিজের অভিজ্ঞতা ও অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ উদ্যোক্তার একটি বিশেষ গুণ। যা তাকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে সহায়তা করে। উদ্দীপকের স্বল্পশিক্ষিত মিটুল একটি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে স্বল্প বেতনে ৫ বছর কর্মচারী হিসেবে মনোযোগ সহকারে কাজ শিখে। এই কাজ তার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে। পরবর্তীতে সে নিজ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায় স্থাপন ও পরিচালনা করে নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তাই বলা যায়, উদ্যোক্তা হিসেবে মিটুলের মধ্যে নিজের অভিজ্ঞতা ও অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা ও তা প্রয়োগ করার ক্ষমতা রয়েছে।
ঘ. মিটুলের মধ্যে একজন সফল উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্যাবলি পরিলক্ষিত হয়।
একজন উদ্যোক্তার কিছু বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি থাকে যা তাকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সহায়তা করে। একজন উদ্যোক্তার প্রধান গুণসমূহ হলো আত্মবিশ্বাস, স্বাধীনচেতা মনোভাব, উদ্যম, সাহস, সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী শক্তি, কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা, নেতৃত্বদানের যোগ্যতা, কৃতিত্ব অর্জনের আকাক্সক্ষা ইত্যাদি। উদ্দীপকের স্বল্পশিক্ষিত মিটুল একটি মোবাইল সার্ভিসিং-এর দোকানে মনোযোগ সহকারে কাজ শিখায় তার মধ্যে নিজের অভিজ্ঞতা ও অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজের কর্মক্ষেত্রে সেই শিক্ষার প্রয়োগ করে একটি দোকান দেয়। তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সীমিত সম্পদের মধ্যে পরিকল্পনা তৈরি করেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে বাধাগুলো আগে থেকে অনুমান করেন এবং সেগুলো মোকাবিলার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি তার উদ্ভাবনী শক্তির বলে মোবাইল ব্যাটারি দ্বারা চার্জ লাইট তৈরি করেন। যা শিল্প উদ্যোগের নব দিগন্ত উন্মোচন করে। তিনি নিজের ক্ষমতা ও সিদ্ধান্তের প্রতি এত আস্থাশীল যে, নির্র্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অবিরাম কাজ করেন।
সুতরাং বলা যায়, মিটুলের মধ্যে একজন উদ্যোক্তার গুণাবলির বিকাশ ঘটেছিল বলেই তিনি স্বল্পশিক্ষিত হয়েই সফল হতে পেরেছিলেন।

প্রশ্ন -৪ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ব্যবসায় প্রতিভা, কঠোর পরিশ্রম, দূরদর্শিতা ও সৃজনশীলতার সমন্বয়ে গঠিত জনাব জহুরুল ইসলাম বাংলাদেশের ব্যবসায়-শিল্প-বাণিজ্য জগতে একটি অতি পরিচিত নাম। তিনি কন্ট্রাক্টর হিসেবে ব্যবসায় জগতে প্রবেশ করেন। কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে ঢাকার আশেপাশের জমির দাম বাড়বে তা তিনি বুঝতে পারেন। তাই তিনি ঢাকার আশেপাশে বহু জমি ক্রয় করেছিলেন যা পরবর্তীতে তাকে লাভবান করে। ব্যবসায়ের সফলতার পাশাপাশি তিনি ব্যাংকিং, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ক্রীড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনহিতকর কাজ করে গেছেন। বেসরকারি উদ্যোগে দেশের সর্ববৃহৎ মেডিকেল কলেজ তিনিই স্থাপন করেছেন।
ক. প্রতিবেদন কী? ১
খ. উদ্যোক্তা কীভাবে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে? ২
গ. জমি ক্রয় বিষয়টির মাধ্যমে জহুরুল ইসলামের কোন গুণটি ফুটে ওঠেছে? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে জহুরুল ইসলামের গুণাবলি অনুসরণ করা উচিত। তুমি কি একমত? ৪
 ৪নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বাজার গবেষণার পর সংগৃহীত তথ্যাবলি সংক্ষিপ্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ উপস্থাপনকে প্রতিবেদন বলে।
খ. স্থানীয় সম্পদকে কাজে লাগাতে অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে জনকল্যাণে নিয়োজিত করা ব্যবসায়ের অন্যতম উদ্দেশ্য। জল, স্থল ও পাতালে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ ছড়িয়ে রয়েছে। এসব সম্পদ সংগ্রহকরণ, উৎপাদন ও বণ্টনের মাধ্যমে এগুলোকে জনগণের সেবায় লাগানোর জন্য উদ্যোক্তা ব্যবসায় গঠন করেন।
গ. জমি ক্রয় বিষয়টির মাধ্যমে জহুরুল ইসলামের দূরদর্শিতার গুণটি ফুটে ওঠেছে।
দূরদর্শিতা বলতে বোঝায় সঠিক পূর্বানুমান। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তা ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা অনুমান করে থাকেন এবং সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করেন। উদ্দীপকের জহুরুল ইসলাম ঢাকা শহরের আশেপাশে বহু জমি ক্রয় করেছিলেন। কেননা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে ভবিষ্যতে ঢাকার আশেপাশে এক সময় বসতি বাড়বে এবং একই সঙ্গে বাড়বে জমির চাহিদা। পরবর্তীতে তার পূর্বাণুমান সঠিক হয় এবং তিনি লাভবান হন। তাই বলা যায়, সফল উদ্যোক্তার দূরদর্শিতার ফলেই জহুরুল ইসলাম ঢাকার আশেপাশে জমি ক্রয় করেছিলেন।
ঘ. সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে জহুরুল ইসলামের গুণাবলি অনুসরণ করা উচিত বলে আমি মনে করি।
জনাব জহুরুল ইসলাম বাংলাদেশের একজন অন্যতম সফল উদ্যোক্তা। তার এ সফলতার মূল কারণগুলোর মধ্যে সাফল্য লাভের তীব্র আকাক্সক্ষা, ঝুঁকি গ্রহণের মনোভাব, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সাহস, আত্মবিশ্বাস, সততা, নিষ্ঠা, দূরদর্শিতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। উদ্দীপকে জহুরুল ইসলাম স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেন। তার কঠোর পরিশ্রম, ব্যবসায়ের প্রতি একাগ্রতা ও আন্তরিকতা তাকে ধীরে ধীরে একজন সার্থক উদ্যোক্তা ও অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত করে। যে কোনো উদ্যোক্তা তাকে অনুসরণ করলে সহজেই সফল হতে পারবে। কারণ উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যতগুলো গুণ প্রয়োজন তার প্রায় সবগুণই জহুরুল ইসলামের মধ্যে রয়েছে। তিনি নিজেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ নানান জনহিতকর কাজেও অন্তর্ভুক্ত করে গেছেন।
সুতরাং, সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে জহুরুল ইসলামের গুণাবলিসমূহ অনুসরণের বিকল্প নেই।

প্রশ্ন-৫  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আবির হোসেন বাংলাদেশের একজন সফল উদ্যোক্তা। নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময় জহুরুল ইসলামের জীবনী পড়ে তার মনে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন জেগেছিল। তখন থেকেই তিনি তার জীবনে জহুরুল ইসলামের গুণাবলিগুলো সমন্বয় ঘটাতে সদা সচেষ্ট থেকেছেন। প্রথম জীবনে তিনি মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নিজ এলাকায় একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর চালু করেছিলেন। তারপর কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্রতা দিয়ে তিনি তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটিকে বড় করে তোলেন। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৩০টি জেলার বিভিন্ন স্থানে তার এই ডিপার্টমেন্টাল স্টোরটির শাখা চালু রয়েছে।
ক. ঢাকা রিরোলিং মিলস্ লিঃ কোন গ্র“পের আওতায় পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান? ১
খ. ব্যবসায় উদ্যোগ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. আবির হোসেন জহুরুল ইসলামের জীবনী পড়ে তার সফলতা লাভের কোন কারণগুলো জানতে পেরেছিলেন? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. আবির হোসেনের পঠিত জীবনী পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর। ৪
 ৫নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ঢাকা রিরোলিং মিলস্ লিঃ ইসলাম গ্র“পের আওতায় পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান।
খ. সাধারণভাবে ব্যবসায় উদ্যোগ বলতে ব্যবসায় বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের কার্যক্রমকে বোঝায়। ব্যাপক অর্থে নতুন ব্যবসায় শুরু অথবা নতুন পণ্য ধারণা, প্রযুক্তি বা বাজার, উদ্ভাবন এবং তাকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা অর্জনে যাবতীয় প্রয়াস ব্যবসায় উদ্যোগ নামে পরিচিত। তাই উদ্যোক্তা কর্তৃক নতুন কোনো ব্যবসায় শুরুর জন্য দায়িত্ব ও ঝুঁকি গ্রহণপূর্বক উপকরণাদি সংগ্রহ ও সংহত করার ছোট বড় যে কোনো ধরনের উদ্যোগ বা আয়োজনকে ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ হিসেবে গণ্য করা হয়।
গ. আবির হোসেন জহুরুল ইসলামের সফলতা লাভের যে মূল কারণগুলো জানতে পেরেছিলেন তা হলো-সাফল্য লাভের তীব্র আকাক্সক্ষা, ঝুঁকি গ্রহণের মনোভাব, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সাহস, আত্মবিশ্বাস, কাজ করার দৃঢ়তা, সততা, নিষ্ঠা, দূরদর্শিতা।
একজন উদ্যোক্তাকে সফল হতে হলে কতগুলো বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলির অধিকারী হতে হয়। একজন দক্ষ উদ্যোক্তার মধ্যে এমন কতগুলো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান যা সহজে তাকে সাধারণ মানুষ থেকে পৃথক করে দেয়। উদ্দীপকের আবির হোসেন নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় জহুরুল ইসলামের জীবনী পড়ে জানতে পেরেছিলেন যে, জনাব জহুরুল ইসলাম স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেন। তার কঠোর পরিশ্রম, ব্যবসায়ের প্রতি একাগ্রতা ও আন্তরিকতা তাকে ধীরে ধীরে একজন সার্থক উদ্যোক্তা ও অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত করে। কাজের সততা ও গুণগত মান ভালো হওয়ার কারণে তিনি অনেক বড় ধরনের নির্মাণ কাজের সুযোগ পান। তিনি কাজের মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন তা পরবর্তীতে কাজে লাগিয়েছেন। তার দুরদর্শিতা তাকে বড় ধরনের শিল্প স্থাপন ও আবাসিক গৃহনির্মাণে উদ্বুদ্ধ করেছে। যার ফলে তিনি ব্যবসায়িকভাবে একজন সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছেন। জহুরুল ইসলামের এসব গুণাবলি আবির হোসেনকে উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করেছে।
ঘ. আবির হোসেন সফল উদ্যোক্তাদের জীবনী পাঠ করেন। যা তার মতো উদ্যোক্তাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উদ্যোক্তাগণের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাজারো উদ্যোক্তা সামান্য ব্যবসায় দিয়ে জীবন শুরু করে কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে এক সময় বড় ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। উদ্দীপকের আবির হোসেনের উদ্যোক্তাদের জীবনী পাঠে সফল উদ্যোক্তাদের মধ্যে জহুরুল ইসলাম, স্যামসন এইচ চৌধুরী, জুবের আলী, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ ব্যক্তির কথা ওঠে এসেছে। তারা সততা, পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাসের কারণে সফল হতে পেরেছেন। তারা কোনো কাজকে ছোট মনে করেননি। যখন যেখানে প্রয়োজন কাজের তাগিদে ছুটে গিয়েছেন। আর আজ তাই তারা সফলতার শীর্ষে পৌঁছতে পেরেছেন। জহুরুল ইসলামের জীবনী পাঠ করে আমরা জানতে পারি কীভাবে স্বল্প পুঁজিকে কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বৃহৎ মূলধনে পরিণত করা যায়। আরও জানতে পারি আত্মবিশ্বাস ও দূরদর্শিতা একজন মানুষকে কতখানি সফলতা এনে দিতে পারে। অন্যদিকে স্যামসন এইচ চৌধুরীর জীবনী হতে জানতে পারি পরিশ্রম, সততা, সাহস, উদ্যম, সৃজনশীলতা, মূল্যবোধ, ধৈর্য, অধ্যবসায় ও শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে কীভাবে ছোট ব্যবসাকে অনেক বড় ব্যবসায়ে পরিণত করা যায়। সফল ব্যক্তিদের জীবনী অধ্যয়নের ফলে উপর্যুক্ত গুণাবলি সম্পর্কে জানতে পারি যা আমাদের জীবনে প্রয়োগের মাধ্যমেও আমরা ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সফল হতে পারি। অতএব, সফল উদ্যোক্তাদের জীবনী পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রশ্ন-৬  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
১৯৯২ সালে খাদ্য অধিদপ্তরে নিম্নমানের সহকারী পদে যোগদানের ভিতর দিয়ে বিপুল ঘোষের কর্মজীবন শুরু হলেও ঘোষ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মধ্যে তার ব্যবসায় জগতে প্রবেশ ঘটে। ছোট এই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটিকে বৃহৎ আকার দিতে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যান। তিনি তার দূরদর্শিতা দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন ঢাকা-আরিচা রোডের দুই পাশে সাভার এলাকায় এক সময় প্রচুর শিল্প কারখানা ও বসতি গড়ে উঠবে। তাই তিনি সাভার এলাকায় বেশ কিছু জমি কিনে শিল্প কারখানা ও আবাসিক গৃহনির্মাণ করেন। আবাসিক গৃহগুলো বিক্রি করে তিনি প্রচুর টাকা মুনাফা লাভ করেন। এই মুনাফার অর্ধেক অংশ দিয়ে তিনি দুইটি দাতব্য চিকিৎসালয় ও একটি যুব ক্রীড়া সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন। সমাজের সবার নিকট তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি।
ক. বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দেশের সর্ববৃহৎ মেডিকেল কলেজ কোনটি? ১
খ. উদ্যোক্তা কীভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে? ২
গ. বিপুল ঘোষের জীবনীর সাথে কোন সফল উদ্যোক্তার জীবনীর মিল রয়েছে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. উক্ত সফল উদ্যোক্তার ব্যবসায়িক দূরদৃষ্টি ছিল অত্যন্ত তীক্ষèÑ উক্তিটি মূল্যায়ন কর। ৪
 ৬নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দেশের সর্ববৃহৎ মেডিকেল কলেজ হলো জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
খ. উদ্যোক্তা নিজের প্রচেষ্টা ও দক্ষতা দিয়ে ব্যবসায় সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। নতুন ব্যবসায় সংগঠনে উদ্যোক্তা তার নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বেকার লোকদের নিয়োগ করে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়। এভাবে ব্যবসায় সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উদ্যোক্তা নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।
গ. বিপুল ঘোষের জীবনীর সাথে জহুরুল ইসলামের জীবনীর মিল রয়েছে।
জহুরুল ইসলাম ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা মানুষ। মাত্র তিন-চার হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে সে বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড নামে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসার জগতে প্রবেশ করেন। তারপর কঠোর পরিশ্রম, সততা, অভিজ্ঞতা আর দূরদর্শিতা দিয়ে তিনি একের পর এক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন যা বর্তমানে ইসলাম গ্র“প অব কোম্পানি নামে পরিচিত। ব্যবসায় বাণিজ্য ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, ব্যাংকিং, কৃষি, ক্রীড়াক্ষেত্র সকল ক্ষেত্রে তার অবদান অপরিসীম। উদ্দীপকের বিপুল ঘোষও তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরে নিম্নমানের সহকারী পদে যোগ দিয়ে। কিন্তু স্বাধীনচেতার কারণে তিনি নিয়মবদ্ধ চাকরি জীবনে স্থির হতে পারেননি। ঘোষ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা শুরু করে তিনি ব্যবসায় শুরু করেন এবং অক্লান্ত পরিশ্রম দ্বারা তিনি তার প্রতিষ্ঠানকে বৃহদাকার দান করেন। প্রতিষ্ঠানের অর্জিত মুনাফা দ্বারা দাতব্য চিকিৎসালয় এবং যুব ক্রীড়া সংস্থা প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তিনি সমাজসেবায় অংশগ্রহণ করেন। তাই বলা যায়, চাকরির মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু, স্বাধীনচেতা মনোভাবের কারণে চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় শুরু, কঠোর পরিশ্রম ও দূরদর্শিতা দ্বারা ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিপুল ঘোষের জীবনীর সাথে সফল উদ্যোক্তা জহুরুল ইসলামের জীবনীর হুবহু মিল রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে আলোচনাকৃত সফল উদ্যোক্তা জহুরুল ইসলামের ব্যবসায়িক দূরদৃষ্টি ছিল অত্যন্ত তীক্ষè।
বাংলাদেশের ব্যবসায় ও শিল্পজগতে যে কয়জন উদ্যোক্তা সফলতার পরিচয় দিয়েছেন তন্মধ্যে জনাব জহুরুল ইসলামের নাম উলে­খযোগ্য। কাজে একাগ্রতা আর অধ্যবসায় থাকলে যে কেউ যে সফল উদ্যোক্তা হতে পারে তার বাস্তব উদাহরণ তিনি। তাছাড়া তিনি একজন ভবিষ্যৎ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোক্তা ছিলেন। কেননা পারিবারিক আর্থিক অসচ্ছলতার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে তিনি এত বড় শিল্পোদ্যোক্তা হতে পারতেন না; যদি না তার মধ্যে ব্যবসায়িক দূরদৃষ্টির বিষয়টি উপস্থিত থাকত। তিনি সরকারি সামান্য সিএন্ডবি’র কর্মচারী থেকে অতি দ্রুত একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। প্রথম দিকে কন্ট্রাক্টরি ব্যবসায় শুরু করে কাজের গুণগত মান রক্ষা এবং যথাসময়ে কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে সবার নজর কাড়েন তিনি। তারপর থেকে আর পিছনে তাকাননি। একের পর এক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে থাকেন। বাজারে নেই এমন পণ্য কিংবা চাহিদা এখনও সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে এমন সব প্রকল্প নিয়ে সামনে এগোতে থাকলেন। যা তার ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক দূরদৃষ্টির প্রমাণ বহন করে।
সুতরাং বলা যায়, জনাব জহুরুল ইসলামের ব্যবসায়িক দূরদৃষ্টি ছিল অত্যন্ত তীক্ষèÑ উক্তিটি যথার্থ।
প্রশ্ন-৭  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
খুলনার আলম স¤প্রতি একটি পত্রিকায় দেখতে পেলেন যে তার জেলাসহ বেশ কয়েকটি জেলাতে প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাবে ব্যাপকহারে গাভী মারা যাচ্ছে। তিনি নিজস্ব চিন্তা এবং শ্রম দ্বারা নিজের জমিতে এমন এক প্রকার ঘাস আবিষ্কার করলেন যা গাভীর শরীরের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী এবং অধিক ফলনশীল। মাঠ পর্যায়ে তার উৎপাদিত ঘাসের চাহিদা দেখে তিনি এর উৎপাদন বাড়িয়ে দিলেন এবং সারাদেশে সরবরাহের চিন্তা করলেন। বিদেশি প্রতিষ্ঠান ‘গজচ’ ২০১২ সালের সেরা উদ্যোক্তা হিসেবে আলমকে স্বীকৃতি এবং ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করল।
ক. আফতাব অটোমোবাইলস লি.-এর উদ্যোক্তা কে? ১
খ. ঈওচ কীভাবে নির্বাচন করা হয়? ২
গ. কোন গুণটির কারণে আলম গাভীর খাদ্য আবিষ্কার করতে পেরেছেন? বর্ণনা দাও। ৩
ঘ. তুমি কি মনে কর ‘গজচ’ কর্তৃক স্বীকৃতি আলমকে তার কাজে সফল হতে আরও সাহায্য করবে? বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৭নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. আফতাব অটোমোবাইলস লি.-এর উদ্যোক্তা জহুরুল ইসলাম।
খ. ঈওচ হলো ঈড়সসবৎপরধষষু ওসঢ়ড়ৎঃধহঃ চবৎংড়হ। দেশে লক্ষ লক্ষ উদ্যোক্তা রয়েছে। বেসরকারি খাতে এসব উদ্যোক্তার মধ্যে যারা শিল্প স্থাপন, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি এবং জাতীয় অর্থনীতিতে সর্বাধিক অবদান রাখে তাদের মধ্য থেকে প্রতি বছর ঈওচ নির্বাচন করা হয়।
গ. উদ্যোক্তা আলম তার সৃজনশীলতা গুণটির কারণে গাভীর খাদ্য উৎপাদন করতে পেরেছেন।
উদ্যোক্তা হলো যিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। উদ্যোক্তার বহুবিধ গুণাবলির মধ্যে একটি হলো সৃজনশীলতা। সৃজনশীলতা গুণটির মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা নতুন নতুন চিন্তা, ধারণা, পণ্যের উন্নয়ন ঘটায়। উদ্দীপকে গাভী মারা যাওয়ার বিষয়টি খুলনার আলমকে ভাবিয়ে তোলে। পরবর্তীতে তিনি নিজের বুদ্ধি ও শ্রম দ্বারা গাভীর জন্য কার্যকরী খাবার উৎপাদন করতে পেরেছেন। এই খাবার গাভীর শরীরের জন্য কার্যকরী এবং অধিক ফলনশীল। মূলত তার মধ্যে সৃজনশীলতা গুণটি বিদ্যমান থাকার কারণেই তিনি গাভীর খাদ্য আবিষ্কার করতে পেরেছেন।
ঘ. ‘গজচ’ কর্তৃক স্বীকৃতি আলমকে তার কাজে সফল হতে আরও বেশি সাহায্য করবে বলে আমি মনে করি।
একজন উদ্যোক্তাকে উদ্ভাবিত বিষয়টি সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যায়। আর এ সফলতার কারণে অনেক সময় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিও পেয়ে থাকেন। উদ্দীপকে আলম নিরলস পরিশ্রম করে এক প্রকার ঘাস উৎপাদন করেছেন, যা গাভীর মৃত্যুর হার হ্রাস করতে সাহায্য করে। এর স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ‘গজচ’ হতে স্বীকৃতি এবং ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। এর মাধ্যমে আলম তার কাজে আরও মনোযোগী হবেন এবং গাভীর জন্য নতুন নতুন আরও কোনো খাদ্য আবিষ্কার করা যায় কি না তা নিয়ে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হবেন। এরূপ স্বীকৃতি ভবিষ্যতে তার কাজে সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিবে।
পরিশেষে বলা যায়, আলমের মতো উদোক্তাদের উৎসাহিত এবং তাদের কাজে সফল হওয়ার জন্য সরকারি এবং বেসরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন।
প্রশ্ন-৮  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সহিদ নিজের কিছু জমানো টাকা দিয়ে ছোট আকারে গাছের চারা উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করে। শ্রমিক প্রয়োজন হওয়ায় সে দুইজন আত্মীয়কে নিয়োগ দেয়। মাস ছয়েকের মধ্যেই সে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। কারণ গাছের চারা উৎপাদনে পর্যাপ্ত মান রক্ষিত হয়নি। পরবর্তীতে সে আবার নতুন করে গাছের চারা উৎপাদন শুরু করে। এ সময় সে ব্যাংক হতে অর্থ ঋণ নেয়। নার্সারিটি বড় আকারের হওয়ায় বেশ কয়জন অভিজ্ঞ শ্রমিককে সে তার অধীনে নিয়োগ দেয়। শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে এবার সে আত্মীয়তার সম্পর্ক বা ব্যক্তিগত পরিচয় বিষয়টি বিবেচনায় নেয়নি। ১ বছর পর দেখা গেল তা উৎপাদিত চারা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেল।
ক. ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল লি.-এর উদ্যোক্তা কে? ১
খ. ভ্রাম্যমান দোকান বলতে কী বোঝায়? ২
গ. গাছের চারা উৎপাদনের সফলতায় কোন গুণটি সহিদকে সহায়তা করেছে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. আত্মকর্মসংস্থানের কোন বিষয়টি পরবর্তীতে সহিদকে সফলভাবে গাছের চারা উৎপাদনে অনেকাংশ সাহায্য করেছে? মতামত দাও। ৪
 ৮নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল লি.-এর উদ্যোক্তা জহুরুল ইসলাম।
খ. ভ্রাম্যমাণ দোকান বলতে খুব অল্প সময় বা একদিনের কম সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত দোকানকে বোঝায়। সাধারণত যারা ফেরি করে ব্যবসায় করে তারা ভ্রাম্যমাণ দোকানের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসায় কার্য চালিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী তার সুবিধামতো যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে দোকান বসিয়ে ব্যবসায় করতে পারেন। আচার, চটপটি, বই, পেপার প্রভৃতি আমাদের দেশে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে বিক্রি হয়ে থাকে।
গ. গাছের চারা উৎপাদনের সফলতায় সহিদকে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষাগ্রহণ গুণটি সহায়তা করেছে।
একটি ব্যবসায় স্থাপনের ধারণা চি‎িহ্নতকরণ থেকে শুরু করে ব্যবসায়টি স্থাপন ও সফলভাবে যিনি পরিচালনা করেন তিনি স্বতন্ত্র কতগুলো গুণের অধিকারী হয়ে থাকেন। তার মধ্যে একটি হলো ব্যর্থতা থেকে শিক্ষাগ্রহণ। এ গুণটির মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা তার অতীত ব্যর্থতা থেকে ভবিষ্যতের সাফল্যের পথ খুঁজে নেয়। উদ্দীপকে সহিদের প্রথম বার উৎপাদিত গাছের চারার মান ভালো না হওয়ায় সেগুলো গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। কিন্তু অন্য সবার মতো সহিদ হতাশ হয়ে থেমে যায়নি। সে নিজের ইচ্ছাতে অতীতের এ অভিজ্ঞতা থেকে কীভাবে গাছের চারা উৎপাদন করলে সফল হওয়া যায় সে পন্থা খুঁজে বের করে পরবর্তীতে গাছের চারা উৎপাদনে মনোযোগী হয়েছে এবং সর্বোপরি সে তার বিনিয়োগকৃত ক্ষেত্রে সর্বাধিক সাফল্য পেয়েছে। তাই বলা যায়, ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা লাভই সহিদকে নার্সারি ব্যবসায় সফলতা এনে দিয়েছে।
ঘ. আত্মকর্মসংস্থানে বিবেচ্য সঠিক কর্মী নির্বাচন বিষয়টি পরবর্তীতে সহিদকে সফলভাবে গাছের চারা উৎপাদনে অনেকাংশে সহায়তা করেছে।
নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকেই আত্মকর্মসংস্থান বলে। আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী ব্যক্তির সফলতার জন্য বিভিন্ন বিষয় বা ক্ষেত্র বিবেচনা করা উচিত। এদের মধ্যে অন্যতম একটি হলো সঠিক কর্মী নির্বাচন। উদ্দীপকে সহিদ আত্মকর্মসংস্থানকারী একজন যুবক। সে প্রথমে তার ব্যবসায়ে ব্যর্থ হলেও পরবর্তীতে ঠিকই সফল হয়েছে। এক্ষেত্রে তার সফলতায় তার অধীনে নিয়োগকৃত কর্মীদের অভিজ্ঞতার বিষয়টি ছিল অন্যতম। কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সহিদ বক্তিগত বা আত্মীয়তার সম্পর্ককে প্রাধান্য দেয়নি। সঠিক কর্মী নির্বাচনের ফলে এবং কর্মীরা অভিজ্ঞ হওয়ায় সে গাছের চারা উৎপাদনের কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছে। তার পক্ষে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী গাছের চারার মান বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। এতে সহিদের ব্যবসায়টি সফলতার মুখ দেখতে পেরেছে।
সুতরাং বলা যায়, উদ্যোক্তাকে ব্যবসায় সফলতা পাওয়ার জন্য অবশ্যই সঠিক কর্মী নির্বাচন করতে হয়।
প্রশ্ন-৯  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
‘মাই মিল্ক’ কোম্পানি ০-৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য গুঁড়ো দুধ উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠান। জনাব মামুন উক্ত প্রতিষ্ঠানের একজন মার্কেটিং রিপ্রেজেন্টিটিভ ছিলেন। পণ্যের গুণগত মান নিম্নমানের হওয়ায় কোম্পানিটি সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়ায় তিনি চাকরিচ্যুত হন। এই ঘটনাটি তার ছেলে মাহফুজকে প্রবলভাবে আলোড়িত করে। তাই মাহফুজ বড় হয়ে জনগণকে উন্নতমানের পণ্য সরবরাহ করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়। গুঁড়ো দুধ সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকায় পড়াশোনা শেষ করেই তিনি ‘বেস্ট চয়েজ’ নামে একটি গুড়ো দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চালু করেন। পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখতে গিয়ে তার উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়েছিল বহুগুণ। কোটা প্রতি তার মুনাফার পরিমাণ খুব সামান্য হলেও পণ্যের গুণগত কারণে বিক্রয় বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাই অল্প সময়েই তিনি তার কাক্সিক্ষত মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
ক. সংসারের প্রয়োজনে পার্টটাইম চাকরি করতেন কে? ১
খ. ‘রতœগর্ভা মা অ্যাওয়ার্ড’ কাকে এবং কেন দেওয়া হয়? ২
গ. উদ্দীপকের মাহফুজের সাথে বাংলাদেশের যে উদ্যোক্তার মিল রয়েছে তার বিশেষ অর্জনগুলো বর্ণনা কর। ৩
ঘ. উক্ত উদ্যোক্তা সম্পর্কে বলা হয় “ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত এমন কোনো কাজ নেই যা তাকে করতে হয়নি।” তোমার মতামত দাও। ৪
 ৯নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. সংসারের প্রয়োজনে পার্টটাইম চাকরি করতেন নারী উদ্যোক্তা লুৎফা সানজিদা।
খ. প্রতিবছর উলে­খযোগ্য সংখ্যক সফল মাকে ‘রতœগর্ভা মা অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। যে মায়েদের কমপক্ষে তিনজন সন্তান বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ও প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে তাদেরকে রতœগর্ভা মা অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। পৃথিবীর সকল মা’সহ নিজের মাকে শ্রদ্ধা জানাতে ২০০৩ সালে রতœগর্ভা মা অ্যাওয়ার্ড প্রচলন করা হয়।
গ. উদ্দীপকের মাহফুজের সাথে বাংলাদেশের সফল উদ্যোক্তা স্যামসন এইচ চৌধুরীর মিল রয়েছে।
স্যামসন এইচ চৌধুরী স্কয়ার গ্রæপের প্রতিষ্ঠাতা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখার জন্য তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। দেশের বেসরকারি খাতে শিল্পস্থাপন, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জাতীয় আয় বৃদ্ধিসহ সামগ্রিকভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য সরকার ২০১০ সালে ৪২ জন ব্যক্তিকে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ঈড়সসবৎপরধষ ওসঢ়ড়ৎঃধহঃ চবৎংড়হ-ঈওচ) নির্বাচন করে। স্যামসন এইচ চৌধুরী ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ব্যক্তি। তিনি দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর ১৮ জনের মধ্যে একজন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। জনাব স্যামসন এইচ চৌধুরী ২০০০ সালে দৈনিক ডেইলি স্টার ও ডিএইচএল প্রদত্ত বিজনেস ম্যান অব দি ইয়ার এবং ১৯৯৮ সালে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের দৃষ্টিতে বিজনেস এক্সিকিউটিভ অব দি ইয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ঘ. উক্ত উদ্যোক্তা তথা স্যামসন এইচ চৌধুরী সম্পর্কে যে মন্তব্যটি করা হয়েছে তা সঠিক বলে আমি মনে করি।
স্কায়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-এর প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরী ছিলেন তার প্রতিষ্ঠানের মালিক-ম্যানেজার, হিসাবরক্ষক, টাইপিস্ট, কেরানি, শ্রমিক ও মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ। অর্থাৎ উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সব কাজই তিনি করেছেন। কারণ তিনি মাত্র ১২জন শ্রমিক নিয়ে স্থাপন করেছিলেন এই স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। কঠোর পরিশ্রম, সততা ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে তিনি তার সেই ছোট উদ্যোগকে আজ বিশাল স্কয়ার গ্র“প অব ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত করেছেন। বর্তমানে সেখানে ৩০,০০০ শ্রমিক কাজ করে। এত লোকের কর্মস্থল হওয়া সত্তে¡ও কারখানায় কখনো শ্রমিক অসন্তোষ দেখা যায়নি। কারণ তিনি তার কারখানায় শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলেছিলেন। তিনি তার কাজের প্রতিটি স্তরে সর্বোচ্চ মূল্যবোধ ও নৈতিকতার চর্চা করতেন। মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করতেন। তিনি ভাবতেন যে, মালিক ও শ্রমিকের যৌথ প্রয়াসই ব্যবসায় সাফল্যের চাবিকাঠি।
প্রশ্ন-১০  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। এই প্রবাদ বাক্যটির প্রমাণ হলো চট্টগ্রামের আলী হোসেন। তিনি তার মায়ের তিনটি গরু দিয়ে আলী ডেইরি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসায় জগতে পা রেখেছিলেন। তারপর অক্লান্ত পরিশ্রম দ্বারা তিনি তার ডেইরি ফার্মকে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ডেইরি ফার্মে পরিণত করেছেন। বর্তমানে তার ডেইরি ফার্মের দুধ সারাদেশে প্যাকেটজাত করে সরবরাহ করা হচ্ছে। এই সফলতা লাভ করার জন্য তাকে বিভিন্ন আর্থিক ও সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা করে নিরলসভাবে কাজ করতে হয়েছে। তিনি তার এলাকায় বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী করতে একটি আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছেন। যেখানে বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
ক. নায়েব আলী কত সালে নিজ গ্রামে হাঁসের খামার গড়ে তোলেন? ১
খ. ব্যবহারিক শিক্ষা বলতে কী বোঝ? ২
গ. আলী হোসেনকে কেন পরিশ্রমী উদ্যোক্তা বলা যায়? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. আলী হোসেনের স্থাপিত প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট তার সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ-মতামত দাও। ৪
 ১০নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. নায়েব আলী ২০০৯ সালে নিজ গ্রামে হাঁসের খামার গড়ে তোলেন।
খ. যে শিক্ষার মাধ্যমে তাত্তি¡ক শিক্ষাকে বাস্তবে তুলে ধরা হয় তাকে ব্যবহারিক শিক্ষা বলে। মূলত কেইস স্টাডি হলো ব্যবহারিক শিক্ষার প্রধান মাধ্যম। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বাস্তব অবস্থা বা গবেষণার মাধ্যমে এরূপ শিক্ষা গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে শিল্প প্রতিষ্ঠান বা বিভিন্ন সৃজনশীল ব্যবসায় পরিদর্শন ব্যবহারিক শিক্ষার সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
গ. আলী হোসেন তার পরিশ্রমের গুণেই নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন বিধায় তাকে একজন পরিশ্রমী উদ্যোক্তা বলা যায়।
একজন সফল উদ্যোক্তা কতগুলো বিশেষ গুণের অধিকারী হয়ে থাকেন। এসব গুণাবলির বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমেই তিনি তার ব্যবসায়ের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হন। উদ্দীপকের আলী হোসেন একজন দক্ষ উদ্যোক্তা। তিনি তার ডেইরি ফার্মের ব্যবসায়টি শুরু করেছিলেন মাত্র তিনটি গরু দিয়ে। তারপর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ধৈর্যসহকারে বিভিন্ন আর্থিক ও সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা করে তিনি তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ডেইরি ফার্মে রূপান্তর করেছেন। অর্থাৎ তার সফলতা লাভের পিছনে মূল যে কারণটি রয়েছে তা হলো তার কঠোর পরিশ্রম। তাই তাকে নিঃসন্দেহে একজন পরিশ্রমী উদ্যোক্তা বলা যায়।
ঘ. আলী হোসেনের স্থাপিত প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট তার সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ বলে আমি মনে করি।
দেশের সামাজিক উন্নয়নে একজন উদ্যোক্তার ভ‚মিকা অপরিসীম। তিনি তার সৃজনশীলতা ও মানবিক গুণাবলি দ্বারা সমাজের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকেন। তার এসব উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের অশেষ কল্যাণ সাধিত হয়। উদ্দীপকের আলী হোসেন একজন সফল উদ্যোক্তা। তার এলাকার বেকার যুবকরাও যাতে একদিন তার মতো সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হয়ে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখতে পারে সেজন্য তিনি তার নিজ এলাকায় একটি আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে বেকার যুবকরা বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরাই নিজেদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। এভাবে দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে আলী হোসেন তার এলাকার তথা সমাজের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে আলী হোসেনের মতো সকল সফল উদ্যোক্তাদের উচিত সমাজের উন্নয়নে কাজ করা।
প্রশ্ন-১১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রংপুরের পীরগাছার নূর মোহাম্মদ বাংলাদেশের একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি তার গ্রামে ঘুরে ঘুরে মাটির খেলনা বিক্রি করতেন। তারপর নিজ কর্ম প্রচেষ্টায় ভাগ্য ফেরাতে তিনি মাত্র ১২০০ টাকা সম্বল নিয়ে গ্রাম থেকে শহরে এসে পোস্টারের ব্যবসায় শুরু করেছিলেন। জীবনের সীমাহীন কষ্ট আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কাছে হার না মেনে সকল বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। মায়ের দোয়া আর অনুপ্রেরণা সবসময় তাকে সাহস যোগিয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠা লাভের পর তিনি ‘শ্রেষ্ঠা মা অ্যাওয়ার্ড’ প্রচলন করেন।
ক. উদ্যোক্তার বিশেষ গুণ কোনটি? ১
খ. ‘রতœগর্ভা মা অ্যাওয়ার্ড’-এর উদ্দেশ্য বর্ণনা কর। ২
গ. নূর মোহাম্মদের সাথে বাংলাদেশের কোন সফল উদ্যোক্তার মিল রয়েছে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. তুমি কি মনে কর, নূর মোহাম্মদের জীবন নবীন উদ্যোক্তাদের জন্য প্রেরণাদায়ী? মতামত দাও। ৪
 ১১নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. উদ্যোক্তার বিশেষ গুণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করা।
খ. মায়ের অবদানকে শ্রদ্ধা জানানো ‘রতœগর্ভা মা অ্যাওয়ার্ড’-এর অন্যতম উদ্দেশ্য। আজাদ প্রোডাক্টস এর প্রতিষ্ঠাতা আবুল কালাম আজাদ ২০০৩ সালে এই অ্যাওয়ার্ড প্রচলন করেন। যে মায়েদের কমপক্ষে তিনজন সন্তান বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ও প্রতিষ্ঠিত তাদেরকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। সন্তানের বড় হওয়া এবং সুশিক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা মুখ্য। আর তাই মায়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোও এই পুরস্কারের অন্যতম উদ্দেশ্য।
গ. নূর মোহাম্মদের সাথে বাংলাদেশের সফল উদ্যোক্তা আবুল কালাম আজাদের মিল রয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ে যে কয়জন সফল উদ্যোক্তা রয়েছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন আবুল কালাম আজাদ।
আবুল কালাম আজাদ জীবনের প্রথম ব্যবসায় শুরু করেছিলেন মাত্র ৪৫০ টাকা পুঁজি নিয়ে। তিনি খালাত ভাইয়ের সহায়তায় ছোট নৌকায় করে এক হাট থেকে অন্য হাটে নারিকেল আনা-নেওয়া করতেন। এক সময় তিনি আরও বড় হওয়ার আশায় দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে পাড়ি জমালেন ঢাকায়। ঢাকায় আসার পর শুরু হলো তার অবর্ণনীয় কষ্টের দিন। কিন্তু তিনি দমে যাননি। কঠোর পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তার বলে একের পর এক নানান প্রতিক‚লতা মোকাবিলা করতে লাগলেন। এক সময় বায়তুল মোকাররমের সামনে পোস্টার বিক্রি করতে দেখে তিনিও শুরু করলেন এ ব্যবসায়। এল রহমান জুয়েলার্স-এর সামনে খাম্বার সাথে ঝুলিয়ে পোস্টার বিক্রি দেখে অনেকে নানানা মন্তব্য করলেও পিছপা হননি। আস্তে আস্তে তিনি নিজস্ব মেধা আর যোগ্যতার বলে এ ছোট্ট উদ্যোগকে রূপদান করলেন একটি বিশাল প্রতিষ্ঠানে। তাই নূর মোহাম্মদের উদ্যোক্তা হিসেবে যেসব বৈশিষ্ট্য, তা আবুল কালাম আজাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ঘ. আমি মনে করি, নূর মোহাম্মদের জীবন নবীন উদ্যোক্তাদের জন্য প্রেরণাদায়ী।
যেকোনো সফল উদ্যোক্তাদের জীবনী নবীন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা দান করে। হাজারো উদ্যোক্তা সামান্য ব্যবসায় দিয়ে জীবন শুরু করে কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে এক সময় বড় ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। উদ্দীপকে নুর মোহাম্মদ একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি তার ভাগ্য ফেরাতে নিজ কর্ম প্রচেষ্টায় ১২০০ টাকা সম্বল নিয়ে শহরে এসে পোস্টারের ব্যবসায় শুরু করেন। জীবনের সীমাহীন কষ্ট আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কাছে তিনি কখনও হার মানেননি। তিনি সকল বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে সফলতা অর্জন করেন। মূলত তিনি তার সততা, পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাসের কারণে সফল হতে পেরেছেন। তিনি কোনো কাজকে ছোট মনে করেননি। যখন যেখানে প্রয়োজন কাজের তাগিদে ছুটে গিয়েছেন। তার জীবনী জানার ফলে উপর্যুক্ত গুণাবলি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নবীন উদ্যোক্তা তাদের জীবনে প্রয়োগ করে সফলতা অর্জন করতে পারবে।
সুতরাং বলা যায়, নূর মোহাম্মদের জীবন নবীন উদ্যোক্তাদের জন্য আদর্শ।
প্রশ্ন-১২  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
শামীমা আলীগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ব্যবসায় উদ্যোগ পড়ান। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের বেকার যুবকরা কীভাবে নিজের আর্থিক পরিবর্তন আনতে পারেন তার উদাহরণ হিসেবে তিনি বগুড়ায় নায়েব আলীর জীবনী আলোচনা করেন। নায়েব আলী তার ভাগ্য ফেরাতে জমিজমা বিক্রি করে ঋণ নিয়ে বিদেশ গিয়ে আদম ব্যাপারির প্রতারণায় সর্বস্বান্ত হন। সবকিছু হারালেও তিনি তার ধৈর্য হারাননি। পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সহায়তায় তিনি তার এলাকায় একটি হাঁসের খামার দেন। দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজ করে ছয় মাসের মধ্যেই তিনি একজন আদর্শ হাঁস খামারি হিসেবে পরিচিতি পান। বর্তমানে সারা দেশের বেকার যুবকদের জন্য তিনি এক অনুকরণীয় আদর্শ।
ক. কত সালে স্যামসন এইচ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন? ১
খ. উদ্যোক্তাদের এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে পুরস্কার দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর। ২
গ. নায়েব আলীর সফলতা লাভের কারণ কী? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. নায়েব আলীর মতো একজন সফল উদ্যোক্তার সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় কোন কোন প্রশ্ন সন্নিবেশিত করা যেতে পারে বলে তুমি মনে কর? ৪
 ১২নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি স্যামসন এইচ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।
খ. উদ্যোক্তারা দৃঢ় মনোবল এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করেন। তাই তাদেরকে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখতে আগ্রহী করে তুলতে এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এসএমই পুরস্কার ছাড়াও উদ্যোক্তারা তাদের স্বীকৃতি স্বরূপ সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার পেয়ে থাকেন।
গ. নায়েব আলীর সফলতা লাভের পিছনে তার যে গুণগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে তা হলো তার ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তা।
আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে বিদেশ গমন আমাদের দেশের অধিকাংশ যুবকের কাছেই একটি লোভনীয় ব্যাপার। বিদেশ গমনের মাধ্যমে অনেক যুবক নিজের ভাগ্য উন্নয়ন করতে পারলেও অনেকেই আবার দালালের খপ্পরে পড়ে হয়েছেন সর্বস্বান্ত। উদ্দীপকের নায়েব আলী অনেক আশা নিয়ে নিজের জমিজমা বিক্রি করে এবং ঋণ নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন বিদেশে। উদ্দেশ্য ছিল নিজের আর্থিক অবস্থার একটু উন্নতি করা। পরিবারের লোকজনদের নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করা। কিন্তু ঘটনা ঘটল এর উল্টো। তিনি প্রতারিত হয়ে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসলেন দেশে। কিন্তু সামান্য লেখাপড়া জানা ২৭ বছরের যুবক নায়েব আলী এতে একেবারে ভেঙে পড়েননি। তিনি ধৈর্য আর বুদ্ধিকে সম্বল করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতায় পাশের গ্রাম থেকে ৩০টি হাঁসের বাচ্চা কিনে এনে শুরু করেন হাঁস পালন। তার গ্রামের বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে পুকুর ও খালবিল হওয়ায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি স্বাবলম্বী হয়ে উঠলেন। তাই বলা যায়, নায়েব আলীর ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তাই তাকে সাফল্য এনে দিয়েছিল।
ঘ. উদ্যোক্তারা অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটান। তাই তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় এটা কখনই ভাবা ঠিক হবে না যে তারা আমাদের যেকোনো ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত আছেন। অত্যন্ত ভেবে চিন্তে পূর্বে থেকে তাদের জন্য প্রশ্ন তৈরি করে রাখতে হবে। তাছাড়া উদ্যোক্তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ একটি মনস্তাত্তি¡ক বিষয়। তাই নায়েব আলীর মতো যেকোনো সফল উদ্যোক্তার সাক্ষাৎকার গ্রহণের ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী যেসব প্রশ্ন করতে পারেন সেগুলো নিচে উলে­খ করা হলো :
 আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা কী?
 প্রাথমিক মূলধনের পরিমাণ ও উৎসসমূহ কী ছিল?
 একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি এ ব্যবসায়টি কেন বেছে নিয়েছেন?
 কর্মীদের প্রেষণাদানের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করেন?
 ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কিত সরকারি সাহায্য সহায়তাগুলো কি আপনি যথার্থ মনে করেন?
 একজন সফল উদ্যোক্তার কী কী গুণ থাকা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
 দেশের শিক্ষার্থী এবং নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
পরিশেষে বলা যায়, উদ্যোক্তা এবং প্রতিষ্ঠানের ধরন বিবেচনায় উপর্যুক্ত প্রশ্নগুলোর কিছুটা পরিবর্তন বা পরিবর্ধন হতে পারে। এক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী নিজের বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে যথার্থ ও যৌক্তিক প্রশ্নাবলির মাধ্যমে সাক্ষাৎকারের সফল পরিসমাপ্তি টানবেন।

 জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 
প্রশ্ন \ ১ \ জহুরুল ইসলাম কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : জহুরুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার ভাগলপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন \ ২ \ কত সালে ইসলাম গ্র“প অব কোম্পানিজ প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর : ১৯৬৫ সালে ইসলাম গ্র“প অব কোম্পানিজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন \ ৩ \ স্যামসন এইচ চৌধুরীর মাতার নাম কী?
উত্তর : স্যামসন এইচ চৌধুরীর মাতার নাম লতিফা চৌধুরী।
প্রশ্ন \ ৪ \ বর্তমান স্কয়ার গ্র“প অব ইন্ডাস্ট্রিতে কতজন শ্রমিক কর্মরত আছে?
উত্তর : বর্তমান স্কয়ার গ্র“প অব ইন্ডাস্ট্রিতে ৩০,০০০ জন শ্রমিক কর্মরত আছে।
প্রশ্ন \ ৫ \ কোন অর্থবছরে স্কয়ার গ্র“প বছরের সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছিল?
উত্তর : ২০০৯-১০ অর্থবছরে স্কয়ার গ্র“প বছরের সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছিল।
প্রশ্ন \ ৬ \ শাহিদা বেগম কোন প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী?
উত্তর : শাহিদা বেগম বরিশালের লিবার্টি জেন্টস টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী।
প্রশ্ন \ ৭ \ আবুল কালাম আজাদ কত টাকা নিয়ে প্রথম ব্যবসায় শুরু করেছিলেন?
উত্তর : আবুল কালাম আজাদ মাত্র ৪৫০ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছিলেন।
প্রশ্ন \ ৮ \ লুৎফা সানজিদা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছিলেন?
উত্তর : লুৎফা সানজিদা মাইডাস প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছিলেন।
প্রশ্ন \ ৯ \ ২০০৯ সালে কে নিজ গ্রামে হাঁসের খামার গড়ে তোলেন?
উত্তর : ২০০৯ সালে বগুড়ায় নায়েব আলী নিজ গ্রামে হাঁসের খামার গড়ে তোলেন।
প্রশ্ন \ ১০ \ লুৎফা সানজিদার জীবনের মূলমন্ত্র কী?
উত্তর : লুৎফা সানজিদার জীবনের মূলমন্ত্র হলো সংগ্রাম।
প্রশ্ন \ ১১ \ পাবনার বিখ্যাত অন্নদা গোবিন্দ লাইব্রেরির পৃষ্ঠপোষক কে?
উত্তর : পাবনার বিখ্যাত অন্নদা গোবিন্দ লাইব্রেরির পৃষ্ঠপোষক হলেন স্কয়ার গ্র“পের চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী।
প্রশ্ন \ ১২ \ ২০০৮ সালে এসএমই ফাউন্ডেশন কাকে পুরস্কৃত করেছিল?
উত্তর : ২০০৮ সালে এসএমই ফাউন্ডেশন বরিশালের শাহিদা বেগমকে পুরস্কৃত করেছিল।

 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 
প্রশ্ন \ ১ \ জহুরুল ইসলামের সমাজসেবামুলক প্রতিষ্ঠানসমূহের নাম লিখ।
উত্তর : জহুরুল ইসলাম একজন সমাজসংস্কারক, সফল সংগঠক ও ব্যবস্থাপকের মডেল। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে নিজ উদ্যোগে বাজিতপুরে ৩৫০ শয্যার জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করেন, যা দেশের সর্ববৃহৎ মেডিকেল কলেজ। তাছাড়া তিনি বহু অনাথ আশ্রম, শিশু প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, স্কুল ও নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রশ্ন \ ২ \ জহুরুল ইসলামের ব্যবসায়ের সূচনা হয় কীভাবে?
উত্তর : ১৯৪৮ সালে পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য জহুরুল ইসলাম মাত্র ৭৭ টাকা বেতনে সি অ্যান্ড বি ডিপার্টমেন্টে চাকরি নেন। ১৯৫১ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড নামের একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করেন। মাত্র তিন-চার হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে এ ব্যবসায় শুরু করেন এবং কঠোর পরিশ্রম, সততা, একাগ্রতা ও আন্তরিকতা দিয়ে নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা ও ধনাঢ্য ব্যক্তিতে রূপান্তরিত করেন।
প্রশ্ন \ ৩ \ স্যামসন এইচ চৌধুরী ফার্মেসিকে কেন ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করেন?
উত্তর : স্যামসন এইচ চৌধুরী স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি তার শিক্ষাজীবন শেষ করে ফার্মেসিকেই ব্যবসায় হিসেবে গ্রহণ করেন। কারণ তার বাবা ছিলেন আউটডোর ডিসপেনসারি মেডিকেল অফিসার। পিতার পেশার কারণে ছোটবেলা থেকেই তিনি ওষুধ নিয়ে নাড়াচাড়া করতেন। ওষুধের প্রতি এই আগ্রহই তাকে পরবর্তীতে ফার্মেসিকে ব্যবসায় হিসেবে গ্রহণ করতে উৎসাহী করে তোলে।
প্রশ্ন \ ৪ \ ‘কোনো কাজই ছোট বলে অবহেলা করা উচিত নয়’-এ উক্তিটির আলোকে স্যামসন এইচ চৌধুরীর কর্মকাণ্ড ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : স্যামসন এইচ চৌধুরী জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে কাজকে সঠিকভাবে সম্পাদন করেছেন। কোনো কাজকে তিনি ছোট বলে অবহেলা করতেন না। স্যামসন এইচ চৌধুরী সম্পর্কে শোভা অধিকারী বলেন একাধারে তিনি ছিলেন মালিক, ম্যানেজার, হিসাবরক্ষক, টাইপিস্ট, কেরানি, শ্রমিক ও মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভ। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত এমন কোনো কাজ নেই যা তাকে করতে হয়নি। আর এভাবেই তিনি তার জীবনে সফলতা অর্জন করতে পেরেছেন।
প্রশ্ন \ ৫ \ স্কয়ার ফার্মসিউটিক্যালস এর প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে লিখ।
উত্তর : স্কয়ার ফার্মসিউটিক্যালস একটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৮ সালে মাত্র ৮০,০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্ণধার স্যামসন এইচ চৌধুরী মাত্র ১২ জন শ্রমিক নিয়ে শুরু করেন ওষুধ তৈরির কাজ। প্রথমে তৈরি করেন রক্ত পরিশোধনের এস্টল সিরাপ। সেদিনের ছোট্ট স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস আজ পরিণত হয়েছে বিশাল স্কয়ার গ্র“প অব কোম্পানিতে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ কর্মরত রয়েছে।
প্রশ্ন \ ৬ \ শাহিদা বেগম কীভাবে উদ্যোক্তা হয়ে উঠলেন?
উত্তর : পরিবারের কাজকর্ম ব্যতীত অন্য কোনো কাজে অভিজ্ঞতা না থাকায় শাহিদা বেগম স্বামীর মৃত্যুতে বিপাকে পড়ে যান। অবশেষে তিনি নানান বাধাবিপত্তি সত্তে¡ও স্বামীর টেইলারিং ব্যবসায়টি পুনরায় চালু করে। নিজের গহনা বিক্রি করে দুইজন কর্মচারীর সহযোগিতায় নেমে পড়লেন ব্যবসায়ে। শুরুতে পরিবারের লোকজন তার এ কাজটি ভালোভাবে নেয়নি। তাই বলে তিনি থেমে যাননি। দৃঢ় মনোবল আর কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে শাহিদা বেগম একজন উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছিলেন।
প্রশ্ন \ ৭ \ উদ্যোক্তাকে ব্যবসায়ের নেতা বলা হয় কেন?
উত্তর : যে ব্যক্তি নিজস্ব উদ্যোগে কোনো ব্যবসায় বা প্রকল্প গ্রহণ ও পরিচালনা করেন, তিনিই উদ্যোক্তা। একজন উদ্যোক্তার মধ্যে নেতৃত্বের

গুণাবলি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। উদ্যোক্তা তার সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী শক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন এবং উন্নয়নে গতিশীলতা আনয়ন করেন। তই উদ্যোক্তাকে ব্যবসায়ের নেতা বলা হয়।
প্রশ্ন \ ৮ \ সুযোগের সদ্ব্যবহার করা উদ্যোক্তার জন্য কেন প্রয়োজন?
উত্তর : ব্যবসায়ে সফলতা লাভের অন্যতম মূলমন্ত্র হচ্ছে সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। ব্যবসায়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অবস্থা বিদ্যমান থাকে। আর ব্যবসায়ে সুযোগ সবসময় আসে না। সুযোগ পেলেই তাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা উদ্যোক্তার একটি বিশেষ গুণ। সুযোগকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং ব্যবসায়িক সাফল্য লাভ করা সম্ভব হয়। তাই দ্রুততম সময়ে ব্যবসায়ীক লক্ষ্য অর্জন করার জন্য সুযোগের সদ্ব্যবহার করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন \ ৯ \ লুৎফা সানজিদার সামাজিক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দাও।
উত্তর : লুৎফা সানজিদা চট্টগ্রামের বন্দর নগরী হালি শহরের একজন সংগ্রামী নারী উদ্যোক্তা। সামাজিক দায়িত্ব পালন করাকে জীবনের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে মনে করেন তিনি। আর তাই তিনি সব সময় দুখী মানুষদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। আর এ লক্ষেই তিনি সমাজের প্রতিবন্ধী নারী, স্বামী পরিত্যক্তা ও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন।
প্রশ্ন \ ১০ \ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কোন যুবকদের প্রশিক্ষণ ও ঋণদান করে?
উত্তর : যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বেকার জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করে। যুবকরা যাতে নির্ভুলভাবে এবং সফলভাবে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে স্বাবলম্বী হতে পারে সেজন্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রশিক্ষণ প্রদান করে। পাশাপাশি যোগ্যতাসম্পন্ন, আত্মবিশ্বাসী এবং কঠোর পরিশ্রমী যুবকদের ঋণদান করার মাধ্যমে তাদের পুঁজির সংস্থান করে।
প্রশ্ন \ ১১ \ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নায়েব আলীর ভ‚মিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : নায়েব আলী ২৭ বছরের বিদেশ ফেরত একজন উদ্যমী যুবক। বিদেশ থেকে নিঃস্ব হয়ে ফেরত এসেও তিনি দমে না গিয়ে পাশের গ্রাম থেকে মাত্র ৩০টি হাঁসের বাচ্চা নিয়ে শুরু করেন হাঁসের খামার। অল্পদিনের মধ্যেই হয়ে উঠেন স্বাবলম্বী। খামারের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় দু’জন নিয়মিত কর্মচারীর সাথে আনুষঙ্গিক কাজের জন্য রাখলেন আরও দশজন। এভাবে তার খামারে ১২ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হলো। তিনি হরিহারা গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের বেকার যুবকদেরও হাঁসের খামারের মাধ্যমে নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন।

 

Leave a Reply