নবম-দশম শ্রেণির ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং দ্বাদশ অধ্যায় ব্যাংক ও গ্রাহক সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

দ্বাদশ অধ্যায়
ব্যাংক ও গ্রাহক

 ব্যাংক ও গ্রাহক
ব্যাংকিং ব্যবসায়ে লিপ্ত ব্যক্তি, কর্পোরেশন অথবা কোম্পানিকে ব্যাংকার বলা হয়। তেমনি গ্রাহক বলতে ঐ ব্যক্তিকেই বোঝায়, যিনি ব্যাংকের যেকোনো ধরনের হিসাব অথবা অন্যান্য সেবার মাধ্যমে ঐ ব্যাংকের সাথে যুক্ত থাকেন। ব্যাংক ও গ্রাহকের আস্থা, সততা, নিষ্ঠা এবং বিশ্বাসের ওপর টিকে থাকে। কারণ সততা, নিষ্ঠা এবং বিশ্বাসের অভাব ব্যাংক ও গ্রাহকের আস্থায় ফাটল ধরায়।
 ব্যাংক ও গ্রাহক সম্পর্কের ধরন
১. ডেটর-ক্রেডিটর সম্পর্ক ৪. বন্ধক দাতা-বন্ধক গ্রহীতা সম্পর্ক
২. চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক ৫. ব্যাংক গ্রাহকের প্রতিনিধি।
৩. ব্যাংক গ্রাহকের অছি
 গ্রাহকের প্রতি ব্যাংকের দায়িত্ব
১. অর্থ ফেরত ৪. সুদের আদান-প্রদান ও সেবার ফি
২. হিসাবের গোপনীয়তা ৫. সুবিধাজনকভাবে ঋণ পরিশোধের সুযোগ প্রদান।
৩. আমানতকারীর নির্দেশ পালন
 ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের দায়িত্ব
১. সততা ৩. সুদ আদায়
২. ঋণ পরিশোধ ৪. সতর্কতার সাথে চেক অঙ্কন।
 ব্যাংক হিসাবের গোপনীয়তা এবং এ সংক্রান্ত তথ্য
১. দেউলিয়া ঘোষণা ৬. যুদ্ধজনিত কারণে শত্রæতা
২. মক্কেল মানসিক ভারসাম্য হারালে ৭. সম্পূর্ণ জের স্থানান্তর
৩. গারনিশি অর্ডার জারি করা হলে ৮. মৃত্যুজনিত কারণে
৪. ব্যাংকের নিজস্ব সিদ্ধান্ত ৯. দীর্ঘকালীন লেনদেন চালু না রাখা।
৫. মক্কেলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত

অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বহুদিন ধরে চেষ্টা করে আবেদ তার বন্ধু রফিককে ব্যাংকে হিসাব খোলার ব্যাপারে রাজি করাতে সক্ষম হয়নি, কারণ নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও হারে সুদ পাওয়া যায় বলে রফিক সর্বদা তার অর্থকড়ি স্থানীয় পৌরসভা কর্তৃক পরিচালিত সমিতিতে রাখে। কিন্তু গত কয়েক মাস পূর্বে তাদের ব্যবসার কিছু নতুন শাখায় প্রচুর মালামাল ও সাজসজ্জা সরঞ্জাম ক্রয়ে তাৎক্ষণিক অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় আবেদ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তুলে আনে। কিন্তু রফিক তার ফুলপুর পৌর সমিতির কোষাধ্যক্ষকে বহু অনুরোধ করে দরখাস্ত দিয়েও সময়মতো টাকা তুলতে ব্যর্থ হয়।
ক. ব্যাংকিং ব্যবসায় লিপ্ত ব্যক্তিকে কী বলে?
খ. হুকুম চেক কী তা ব্যাখ্যা কর।
গ. আবেদের তাৎক্ষণিকভাবে টাকা তুলতে পারার কারণগুলো বর্ণনা কর।
ঘ. আবেদ ও রফিকের দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনটিতে টাকা রাখাকে তুমি অধিক যুক্তিযুক্ত বলে মনে কর।
 ১নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ব্যাংকিং ব্যবসায়ে লিপ্ত ব্যক্তিকে ব্যাংকার বলে।
খ. হুকুম চেক হচ্ছে এমন এক ধরনের চেক যেখানে গ্রাহকের আদেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট প্রাপককে ব্যাংকের হিসাবের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। এ ধরনের চেকে নগদে অর্থ পরিশোধের কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের চেককে দাগকাটা চেকও বলা হয়।
গ. আবেদ ব্যাংকে টাকা রেখেছিল বলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবসায়ের প্রয়োজনে সে টাকা তুলতে পেরেছিল।
ব্যাংক ও গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাসই ব্যাংকিং ব্যবসায়ের মূলমন্ত্র। ব্যাংকিং ব্যবসায়ের মূলনীতি অনুযায়ী গ্রাহকের স্বার্থরক্ষা করা ব্যাংকের অবশ্যই পালনীয় কর্তব্য। উদ্দীপকে আবেদ একজন ব্যবসায়ী। তার ব্যবসায়ের কিছু নতুন শাখায় প্রচুর মালামাল ও সাজসজ্জার সরঞ্জামের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে অর্থের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে তার ব্যাংকে হিসাব থাকায় সাথে সাথেই সে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ব্যবসায়ের ব্যয় মেটাতে পেরেছে। কেননা ব্যাংক গ্রাহকের টাকা চাহিবামাত্র ফেরত দিতে বাধ্য থাকে। সাধরণত ব্যবসায়ীরা চলতি হিসাবে টাকা রাখে, যাতে ব্যবসায়ীরা যেকোনো প্রয়োজনে যখন ইচ্ছা তখনই টাকা তুলতে পারে। এতে ব্যাংকের অনুমতির প্রয়োজন হয় না। সুতরাং আবেদ চাওয়ামাত্র ব্যাংক অর্থ প্রদানে বাধ্য ছিল বলেই সে টাকা তুলতে সমর্থ হয়েছে।
ঘ. আবেদ ও রফিকের দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আবেদের প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ ব্যাংকে টাকা জমা রাখাই আমি অধিক যুক্তিযুক্ত মনে করি।
ব্যাংক অর্থ নিয়ে ব্যবসায় করে। তাই যে কোনো সময় গ্রাহকের সেবা প্রদানে তারা সর্বদা সম্মত থাকে। ব্যাংক গ্রাহকের টাকা চাহিবামাত্র পরিশোধে বাধ্য থাকে। কিন্তু সমিতি বা অন্য অনার্থিক প্রতিষ্ঠানে সেটি সম্ভব নয়। ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক থাকে যা কখনো অবহেলা করা হয় না।
উদ্দীপকের আবেদ ব্যাংকে টাকা জমা রাখে কিন্তু তার বন্ধু রফিক স্থানীয় এক সমিতিতে টাকা জমা রাখে। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় এবং কম হারে সুদ পাওয়া যায় বলে ব্যাংকে জমা না রেখে রফিক স্থানীয় পৌরসভা কর্তৃক পরিচালিত ফুলপুর পৌর সমিতিতে টাকা জমা রাখে। সে একজন ব্যবসায়ী বলে তার যখন তখন টাকা প্রয়োজন হতে পারে। এ রকমই এক প্রয়োজনের সময় সে সমিতির কোষাধ্যক্ষকে বহু অনুরোধ করে দরখাস্ত দিয়েও সময়মতো টাকা তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে তার ব্যবসায়ে সে প্রয়োজনীয় টাকা বিনিয়োগ করতে পারেনি। কিন্তু আবেদ ব্যাংকে টাকা জমা রাখে। তাই ব্যবসায়ের সাজসজ্জা ও সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য অর্থের প্রয়োজন হলে সে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বিনিয়োগ করতে পেরেছে, যা বিভিন্ন রকম বিধিনিষেধের কারণে রফিক পারেনি।
ব্যাংক আবেদের প্রতিনিধি হিসেবে দেনা পরিশোধ ও পাওনা আদায় করে, যা রফিকের পৌর সমিতি বা অন্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অসম্ভব। সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, অর্থাৎ ব্যাংক ও সমিতি দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাংকে টাকা রাখাকে আমি যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি।

প্রশ্ন-২  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মি. সুজয় একজন চাকরিজীবী। তিনি তাঁর ছেলেকে একটি চেক দিয়ে ব্যাংকে পাঠিয়ে ১০,০০০ টাকা উত্তোলন করেন। তিনি টাকাগুলো গুণে ৫০০ টাকার একটি নোট বেশি দেখতে পান। তখন মি. সুজয় ব্যাংকে গিয়ে ম্যানেজারের সাথে দেখা করে ৫০০ টাকা ফেরত দিয়ে আসেন। [স. বো. ’১৫]
ক. দেশের নোট ও মুদ্রা প্রচলনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত একমাত্র প্রতিষ্ঠান কোনটি? ১
খ. চেকে দাগ কাটা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. মি. সুজয় তাঁর ছেলেকে কী ধরনের চেক দিয়েছেন? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. গ্রাহক হিসেবে ব্যাংকের প্রতি মি. সুজয়ের দায়িত্ব মূল্যায়ন কর। ৪
 ২নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের নোট ও মুদ্রা প্রচলনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত একমাত্র প্রতিষ্ঠান।
খ. বাহক চেক বা হুকুম চেকের অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তার জন্য চেকে দাগ কাটা হয়। দাগকাটা চেকের টাকা যে কেউ উত্তোলন করতে পারে না। যাকে চেকটি প্রদান করা হবে ওই ব্যক্তি কেবল তার ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমেই চেকের টাকা উত্তোলন করতে পারে। তাই গ্রাহকের অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদানে চেকে দাগ কাটা হয়।
গ. মি. সুজয় তাঁর ছেলেকে বাহক চেক দিয়েছেন।
বাহক চেক এমন এক ধরনের চেক যা উপস্থাপন করলে ব্যাংক চেকের বাহককে নগদ অর্থ দিতে বাধ্য থাকে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ ধরনের চেক বহন করে ব্যাংকে উপস্থাপন করবে ব্যাংক তাকেই উক্ত চেকের অর্থ পরিশোধে বাধ্য থাকিবে। উদ্দীপকের মি. সুজয় তাঁর ছেলেকে একটি চেক দিয়ে ব্যাংকে পাঠায় টাকা উত্তোলন করার জন্য। তাঁর ছেলে ঐ চেক নিয়ে ব্যাংকে গেলে ব্যাংক তাকে চেকে উল্লিখিত টাকা প্রদান করে। এ চেকের বৈশিষ্ট্যগুলো বাহক চেকের ধারক। এ চেকের মাধ্যমে বাহক ব্যক্তি চাহিবামাত্র যেকোনো সময় ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারে। ব্যাংকও ঐ চেকের অর্থ নগদে প্রদান করতে বাধ্য।
সুতরাং, উদ্দীপকের উল্লিখিত চেকটি বাহক চেক।
ঘ. গ্রাহক হিসেবে ব্যাংকের প্রতি মি. সুজয়ের দায়িত্ব পালন তাঁর সততার পরিচয়।
ব্যাংকের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সততার পরিচয় দেয়া গ্রাহকের একটি পরম দায়িত্ব। হিসাব খোলা থেকে শুরু করে সর্বাবস্থায় সঠিক তথ্য প্রদান করা গ্রাহকের অবশ্য কর্তব্য। উদ্দীপকের মি. সুজয় ব্যাংক থেকে দেওয়া অতিরিক্ত ৫০০ টাকা ব্যাংকে ফেরত দিয়ে ব্যাংকের প্রতি তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। তার এই দায়িত্ববোধ তার প্রতি ব্যাংকের আস্থা বৃদ্ধি করবে। ব্যাংকের সাথে তার আন্তরিকতা আরও ঘনিষ্ঠ হবে। ফলে তিনি যখন কোনো কাজ নিয়ে ব্যাংকে যাবেন ব্যাংকও তার প্রতি অধিক দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হবে। তাছাড়া গ্রাহক মি. সুজয় যদি সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেন ও সততার পরিচয় দেন তবে ব্যাংকটি সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারবে। তিনি সঠিক পদ্ধতিতে চেক প্রস্তুত এবং লেনদেন পরিচালনা করলে ব্যাংকের কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে। মোটকথা ব্যাংক ঝামেলাহীনভাবে তার কার্যাবলি সম্পন্ন করতে পারে, যদি ব্যাংক গ্রাহকরা ব্যাংকের প্রতি সহায়ক হন।
পরিশেষে বলা যায়, গ্রাহক হিসেবে ব্যাংকের প্রতি মি. সুজয়ের দায়িত্ব পালন ব্যাংকটির পরিচালনা ও সফলতায় ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে।

প্রশ্ন-৩  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব রশিদ একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি প্রতিদিন ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন করে থাকেন। তার ন্যাশনাল ব্যাংকে একটি ব্যাংক হিসাব আছে। ন্যাশনাল ব্যাংক রশিদের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন দেনা-পাওনা পরিশোধ ও আদায় করে থাকে। রশিদ বন্ধকি সম্পত্তির বিপরীতে ব্যাংকটি থেকে প্রয়োজনমতো ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। ব্যাংক গ্রাহকের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকায় ব্যাংকটির সফলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক. ব্যাংকে যার হিসাব থাকে তাকে কী বলে? ১
খ. ‘ব্যাংক গ্রাহকের অছি।’ ব্যাখ্যা কর। ২
গ. ন্যাশনাল ব্যাংক তার গ্রাহক জনাব রশিদের প্রতি কোন ধরনের দায়িত্ব পালন করবে তা বর্ণনা কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকের ব্যাংকটির সফলতায় ব্যাংক-গ্রাহক সুসম্পর্কের অবদান গুরুত্বপূর্ণ-এর যথার্থতা নিরূপণ কর। ৪
 ৩নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ব্যাংকে যার হিসাব থাকে তাকে গ্রাহক বা মক্কেল বলে।
খ. ব্যাংক অনেক সময় তাদের গ্রাহকের সম্পত্তি যথা: স্বর্ণালঙ্কার, দলিলপত্র ইত্যাদি সংরক্ষণের মাধ্যমে তাদের অছি হিসেবে কাজ করে থাকে। এটিও একটি আইনগত কিন্তু ভিন্ন ধরনের সম্পর্ক তাই বলা যায় ব্যাংক গ্রাহকের অছি।
গ. ন্যাশনাল ব্যাংক তার গ্রাহক জনাব রশিদের প্রতি প্রতিনিধিত্বমূলক দায়িত্ব পালন করবে।
ব্যাংক গ্রাহকের পক্ষে দেনা পরিশোধ ও পাওনা আদায়ের মাধ্যমে গ্রাহকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকে। ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনেও গ্রাহকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। উদ্দীপকে জনাব রশিদ ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন গ্রাহক। সাধারণভাবে ন্যাশনাল ব্যাংক জনাব রশিদের মতো সকল গ্রাহকের টাকা চাহিবামাত্র ফেরত দিতে বাধ্য থাকে। তবে এটা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পাদন করে থাকে। গ্রাহকের নির্দেশ ছাড়া ব্যাংকটি গ্রাহকের হিসাবের তথ্য প্রকাশ করে না। ন্যাশনাল ব্যাংক তার মক্কেলের বা আমানতকারীর নির্দেশ অনুযায়ী আমানতের অর্থ ব্যবহার করে। ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণগ্রহীতাকে যথাযথ সুবিচার করে। অর্থাৎ ন্যাশনাল ব্যাংক তার গ্রাহক জনাব রশিদের অর্থ ফেরত, হিসাবের গোপনীয়তা নির্দেশ পালন, সুদের আদান-প্রদান ও সেবার ফি, সুবিধাজনকভাবে ঋণ পরিশোধের সুযোগ প্রদানের কাজ সম্পাদন করে তার প্রতি দায়িত্ব পালন করবে।
ঘ. ন্যাশনাল ব্যাংকটির সফলতায় ব্যাংক গ্রাহক সুসম্পর্কের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যাংক ও গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাসই ব্যাংকিং ব্যবসায়ের মূলমন্ত্র। এই সম্পর্ক সততা, নিষ্ঠা ও বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে তৈরি হয় এবং এই সম্পর্কের অবনতি ক্ষতিকর ব্যবসায়িক পরিণত টেনে আনে।
উদ্দীপকে ন্যাশনাল ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। এর ফলে গ্রাহকরা ব্যাংকটির ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারেন এবং তারা ব্যাংকটি সুনাম ছড়িয়ে দেন। ব্যাংকটির ওপর আস্থা থাকায় গ্রাহকরা বেশি পরিমাণ আমানত সংরক্ষণ করে থাকেন এবং অন্যদেরকেও এ ব্যাংকে আমানত রাখার জন্য উৎসাহিত করেন। এভাবে ব্যাংকটিতে লেনদেন চলে যা ব্যাংকটির মুনাফা বৃদ্ধি ঘটায়। ব্যাংকিং ব্যবসায়ে সফলতা ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যাংকার ও গ্রাহক সম্পর্ক। ব্যাংক বিভিন্ন উপায়ে জনাব রশিদের মতো সকল গ্রাহকের স্বার্থরক্ষা করে থাকে। গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক মুনাফা অর্জন করছে। অর্থাৎ ব্যাংক-গ্রাহক সুসম্পর্কের কারণে ব্যাংকটি গ্রাহকদের নিকট থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ পান, যা তাদেরকে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে এগিয়ে যেতে অবদান রাখে। সুতরাং বলা যায়, ন্যাশনাল ব্যাংকের সফলতায় ব্যাংক গ্রাহক সুসম্পর্কের অবদান গুরুত্বপূর্ণ” উক্তিটি যথার্থ।
প্রশ্ন-৪  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ব্যাংকে হিসাব খুললে সুদ খেতে হবে এ ধারণায় বশবর্তী হয়ে আমির কোনোদিনও ব্যাংক হিসাব খুলেননি। বরং এলাকায় সমবায় সমিতিতে সদস্য হয়েছেন। অন্যদিকে তার ভাই হালিম এলাকায় স্বপ্নচ‚ড়া ব্যাংকে হিসাব খুলে অর্থ লেনদেন করেন। মায়ের চিকিৎসার জন্য হঠাৎ অর্থের প্রয়োজন হলে আমির তাগাদা দিয়ে সমিতি হতে অর্থ না পেলেও হালিম সাথে সাথে নগদ অর্থ তুলে মায়ের চিকিৎসা করাতে পেরেছেন।
ক. দলিলপত্র সংরক্ষণে ব্যাংকের কোন দায়িত্ব প্রকাশ পায়? ১
খ. ঋণ প্রদানের ফলে ব্যাংকের সাথে গ্রাহকের সৃষ্ট সম্পর্কটি ব্যাখ্যা কর। ২
গ. হালিম সাথে সাথে অর্থ উত্তোলন করতে পেরেছেন কেন? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. আমির ও হালিমের অর্থ জমা রাখার মাধ্যম দুটির মধ্যে কোনটি ভালো? মতামত দাও। ৪
 ৪নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. দলিলপত্র সংরক্ষণে ব্যাংকের অছি মূলক দায়িত্ব প্রকাশ পায়।
খ. ঋণ প্রদানের ফলে ব্যাংকের সাথে গ্রাহকের ডেটর-ক্রেডিটর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যাংক গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে অন্য কোনো গ্রাহককে ঋণ হিসেবে প্রদান করে। এর মাধ্যমে ব্যাংক গ্রাহকের মধ্যে ডেটর-ক্রেডিটর সম্পর্ক স্থাপন হয়।
গ. হালিম সাথে সাথে অর্থ উত্তোলন করতে পেরেছে কারণ ব্যাংক হিসাব হতে দ্রæত অর্থ উত্তোলন করা যায়।
সাধারণভাবে ব্যাংক গ্রাহকের টাকা চাহিবামাত্র ফেরত দিতে বাধ্য থাকে। চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবে যদি টাকা জমা থাকে তবে গ্রাহক চেক লিখে টাকা তুলতে পারে। এ ব্যাপারে ব্যাংকের অনুমতির প্রয়োজন নেই। উদ্দীপকে হালিম স্বপ্নচ‚ড়া ব্যাংকে অর্থ রাখার ফলে স্বপ্নচ‚ড়া ব্যাংক হালিমের অর্থ যেকোনো সময় ফেরত দানে বাধ্য রয়েছে। স্বপ্নচ‚ড়া ব্যাংক হতে হালিমের অর্থ উত্তোলনের পূর্বে ব্যাংকের কোনো পূর্বানুমতির প্রয়োজন নেই। চেক জমা দেয়ার সাথে সাথেই স্বপ্নচ‚ড়া ব্যাংক হালিমের অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য। এছাড়া ব্যাংক সাধারণত গ্রাহককে সহজে এবং দ্রæত অর্থ স্থানান্তর ও উত্তোলনের সুযোগ দেয়ায় হালিম সাথে সাথে ব্যাংক হতে অর্থ উত্তোলন করতে পেরেছে।
ঘ. আমির ও হালিমের অর্থ জমা রাখার মাধ্যম দুটির মধ্যে ব্যাংক ভালো।
প্রতিটি মানুষই চায় তার অর্থ বা সম্পদাদি নিরাপদে সংরক্ষিত থাকুক। এক্ষেত্রে অনেকেই ব্যাংকের আশ্রয় নেয়। অথবা বিভিন্ন সমিতি, আর্থিক সংস্থা প্রভৃতির আশ্রয়ও অনেকে নিয়ে থাকেন। উদ্দীপকে আমির তার অর্থ এলাকার সমবায় সমিতিতে রেখেছেন অপরদিকে হালিম তার অর্থ স্বপ্নচ‚ড়া ব্যাংকে হিসাব খুলে জমা রেখেছেন। এক্ষেত্রে আমিরের জমাকৃত মাধ্যমটি অর্থ জমা রাখার ক্ষেত্রে কম নিরাপদ কারণ সমিতির অন্য সদস্যরা তার সাথে প্রতারণা করতে পারে বা সমিতিতে লোকসান হতে পারে। অপরদিকে হালিমের জমাকৃত মাধ্যমটি অর্থ জমা রাখার ক্ষেত্রে অধিক নিরাপদ। ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে জমাকৃত অর্থ নিরাপদে রাখার যাবতীয় ঝুঁকি ব্যাংক গ্রহণ করে। তাছাড়া আমিরের জমাকৃত মাধ্যমটি হতে অর্থ উত্তোলনে একটি জটিল প্রক্রিয়া। অপরদিকে হালিমের অর্থ জমাকৃত মাধ্যমটিতে সহজেই তিনি অর্থ উত্তোলন করতে পেরেছেন। এতে অর্থ উত্তোলনে জটিলতা নেই বললেই চলে।
সুতরাং, হালিমের অর্থ জমা রাখার মাধ্যম ব্যাংক আমিরের অর্থ জমা রাখার সমিতির তুলনায় অনেক ভালো।
প্রশ্ন-৫  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব মহসিন একজন পুস্তক ব্যবসায়ী। তিনি প্রতিদিনই ব্যাংকের সাথে লেনদেন করে থাকেন। মহসিন এক লক্ষ টাকার একটি বাহক চেক লিখে ব্যবসায়ী ক্লায়েন্ট মিজানকে প্রদান করলে ব্যাংক তা প্রত্যাখ্যান করে। তারপর মহসিন দ্বিতীয় আরেকটি চেক প্রস্তুত করে মিজানকে দিলে ব্যাংক উক্ত অর্থ পরিশোধ করে দেয়।
ক. সবচেয়ে নিরাপদ চেক কোনটি? ১
খ. গ্রাহক চেক প্রস্তুতে কীভাবে সতর্কতা অবলম্বন করবে ব্যাখ্যা কর। ২
গ. জনাব মহসিনের দেয়া চেক ব্যাংক প্রত্যাখ্যান করেন কেন? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. জনাব মহসিনের দ্বিতীয় চেকটির ক্ষেত্রে চাহিবামাত্র অর্থ ফেরত দিতে ব্যাংক বাধ্য থাকার কারণ বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৫নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. সবচেয়ে নিরাপদ চেক হলো দাগকাটা চেক।
খ. একজন গ্রাহককে চেক প্রস্তুতে যথেষ্ট সতর্কতা ও নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। অন্যথায় তা ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে থাকে। কারণ চেকে কাটা ছেঁড়া লেখার মধ্যে কোনো অসামঞ্জস্য থাকলে ব্যাংক টাকা প্রদান করে না। তাই গ্রাহক চেক প্রস্তুতের সময় সঠিক স্বাক্ষর, সঠিক তারিখ ও টাকার পরিমাণ লেখার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
গ. মহসিন সাহেবের দেয়া চেকটি ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণ হচ্ছে চেকটি যথাযথভাবে প্রস্তুত করা হয়নি।
বাহক চেকের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি এ ধরনের চেক বহন করে ব্যাংকে উপস্থাপন করবে ব্যাংক তাকেই উক্ত চেকের অর্থ পরিশোধে বাধ্য থাকে। তবে চেকের অর্থ বাহককে পরিশোধের আগে ব্যাংক এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নেয় যে গ্রাহক চেকটি যথাযথভাবে প্রস্তুত করেছে। চেকে উপস্থাপিত তথ্যে কোনো ভুল বা কাটাছেঁড়া থাকলে ব্যাংক চেকের অর্থ পরিশোধ করা থেকে বিরত থাকে। উদ্দীপকে চেকের অর্থ পরিশোধের জন্য যেসব শর্তসমূহ বিদ্যমান সেগুলো কোনোটির ত্রæটি থাকায় জনাব মহসিন কর্তৃক দেয়া বাহক চেকটি ব্যাংক প্রত্যাখ্যান করেছে। ব্যাংক চেকের টাকা পরিশোধের শর্তসমূহ হচ্ছে চেকে সঠিক স্বাক্ষর, সঠিক তারিখ ও ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ চেকে লিখিত টাকার বেশি হতে হবে। সুতরাং জনাব মহসিন কর্তৃক ব্যবসায়ী ক্লায়েন্ট মিজানকে প্রথমবার দেয়া চেকটিতে উপরে উল্লিখিত শর্তসমূহ যথাযথভাবে মানা হয়নি, যে কারণে চেকটি ব্যাংক প্রত্যাখ্যান করেন।
ঘ. জনাব মহসিন দ্বিতীয় চেকটি সঠিকভাবে ও নিয়মনীতি অনুসরণ করে লেখার কারণে চাহিবামাত্র অর্থ প্রদানে ব্যাংক বাধ্য ছিল।
ব্যাংক গ্রাহকদের অর্থের মাধ্যমে ব্যবসায় করে থাকে। গ্রাহকরা যে অর্থ জমা দেয় ব্যাংক পরবর্তীতে এ জমাকৃত অর্থ অন্যত্র বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জন করে। তবে গ্রাহক কর্তৃক উত্থাপিত চেকের অর্থ চাহিবামাত্র ফেরত দিতে ব্যাংক বাধ্য থাকে। কারণ ব্যাংকিং ব্যবসায়ের মূলনীতি হচ্ছে গ্রাহকের সেবা বা স্বার্থরক্ষা করা। এ স্বার্থরক্ষার জন্যই ব্যাংক বিভিন্ন সময় গ্রাহকের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের কার্য সম্পাদন করে বা সেবা প্রদান করে থাকে। উদ্দীপকে জনাব মহসিন প্রথম চেকটি ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখান হলে আরেকটি চেক প্রস্তুত করে মিজানকে প্রদান করেন। এক্ষেত্রে তিনি সঠিকভাবে তারিখ, টাকার পরিমাণ অঙ্কে ও কথায়, ব্যাংকে সংরক্ষিত স্বাক্ষর প্রদান করে চেকটি প্রস্তুত করেন। অর্থাৎ জনাব মহসিন চেকটি সঠিকভাবে প্রস্তুত করায় চেকে উল্লিখিত অর্থ মিজানকে পরিশোধ করতে ব্যাংক বাধ্য থাকে।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে বলতে পারি, ব্যাংক তার গ্রাহকের সঠিকভাবে প্রস্তুতকৃত চেকের অর্থ চাহিবামাত্র দিতে বাধ্য।
প্রশ্ন-৬  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

উপরিউক্ত চেকটি ব্যাংককে প্রদর্শন করলে ব্যাংক কর্মকর্তা উক্ত হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা থাকায় মেহেদীকে সাথে সাথে অর্থ ফেরত দেয়।
ক. ব্যাংকার কে? ১
খ. ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যকার ডেটর-ক্রেডিটর সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর। ২
গ. মেহেদীর ব্যবহৃত চেকটি কোন ধরনের? বর্ণনা দাও। ৩
ঘ. চাহিবামাত্র অর্থ ফেরত দিতে উদ্দীপকের ব্যাংকটির বাধ্য থাকার যৌক্তিকতা কী? মতামত দাও। ৪
 ৬নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ব্যাংকিং ব্যবসায়ে লিপ্ত ব্যক্তিকে ব্যাংকার বলা হয়।
খ. গ্রাহক যখন ব্যাংকে টাকা জমা দেয় তখন ব্যাংক ডেটর ও ব্যাংকের কাছে গ্রাহক ক্রেডিটর হয়। অন্যদিকে গ্রাহক যখন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে বা ঋণ গ্রহণ করে তখন ব্যাংক ক্রেডিটর ও ব্যাংকের কাছে গ্রাহক ডেটর হয়। এমনভাবে লেনদেনের মাধ্যমে ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে ডেটর-ক্রেডিটর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
গ. উদ্দীপকে মেহেদীকে প্রদত্ত চেকটি হলো বাহক চেক।
যে কোনো ব্যক্তি বা বাহক ব্যাংকে উপস্থাপন করে যে চেকের অর্থ সংগ্রহ করতে পারে তাই বাহক চেক। বাহক চেকে প্রাপকের নামের শেষে অথবা বাহককে শব্দদ্বয় লেখা থাকে। উদ্দীপকের মেহেদী যে চেকটি উপস্থাপন করেছে সেখানে প্রাপকের নামের জায়গায় নিজের নাম এবং শেষে অথবা বাহককে শব্দদ্বয় লেখা রয়েছে। তাছাড়া চেকটি ব্যাংক উপস্থাপন করার পর ব্যাংক কর্মকর্তা উক্ত হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা থাকায় মেহেদীকে সাথে সাথে চেকের টাকা পরিশোধ করেছে। মেহেদীর ব্যবহৃত চেকের বৈশিষ্ট্য এবং মেহেদীর টাকা উত্তোলনের ধরন বাহক চেকের অনুরূপ। তাই বলা যায়, চাহিবামাত্র যেকোনো সময় অর্থ উত্তোলনের সুবিধাযুক্ত মেহেদীর ব্যবহৃত চেকটি একটি বাহক চেক।
ঘ. মেহেদীর উপস্থাপিত চেকটি সঠিকভাবে লেখার কারণে ব্যাংক চেকের অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য থাকে।
ব্যাংকিং ব্যবসায়ের অন্যতম মূলনীতি হলো গ্রাহক সেবা বা গ্রাহকের স্বার্থরক্ষা। এ গ্রাহক সেবার আলোকেই ব্যাংক বিভিন্ন সময় গ্রাহকের পক্ষে নানান ধরনের কার্য সম্পাদন করে থাকে। উদ্দীপকের প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকের প্রতি বেশ কিছু দায়িত্ব পালন করে থাকে। মেহেদীর মতো গ্রাহকরা অর্থ জমাদানের ফলে এবং পরবর্তীতে এ অর্থ অন্যত্র বিনিয়োগ করে প্রাইম ব্যাংক মুনাফা অর্জন করে। তাই সাধারণভাবে প্রাইম ব্যাংক তার গ্রাহক অর্থাৎ মেহেদীর টাকা চাহিবামাত্র ফেরত দানে বাধ্য। ব্যাংক হিসাবে উত্তোলনকৃত সমপরিমাণ অর্থ জমা থাকা, চেকের স্বাক্ষর, তারিখ প্রভৃতি বিষয় সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মেহেদী যথাযথভাবে অনুসরণ করেছে। ফলে চাহিবামাত্রই প্রাইম ব্যাংক মেহেদীর অর্থ প্রদান করেছে।
সুতরাং, মূলত গ্রাহকদের প্রতি নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্যই প্রাইম ব্যাংক মেহেদীর মতো গ্রাহকদের জমাকৃত অর্থ চাহিবামাত্র ফেরত দানে বাধ্য।
প্রশ্ন-৭  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ক. গ্রাহকের পরম দায়িত্ব কী? ১
খ. হিসাবের গোপনীয়তা বলতে কী বোঝ? ২
গ. উদ্দীপকের চিত্রে কোন ধরনের চেক দেখানো হয়েছে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. লেনদেনের নিরাপত্তা বিধানে উদ্দীপকের অঙ্কিত চেকটিই সবচেয়ে উত্তম বলে তুমি কি মনে কর? মতামত দাও। ৪
 ৭নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ব্যাংকের সাথে গ্রাহকের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সততার পরিচয় দেয়াই গ্রাহকের পরম দায়িত্ব।
খ. গ্রাহকের পক্ষে কাজ করার জন্য ব্যাংক বিভিন্ন প্রকার নীতি অনুসরণ করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো হিসাবের গোপনীয়তার নীতি। কারণ গ্রাহকের নির্দেশ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ, আইনগত অনুমতি অথবা আদালতের নির্দেশ ছাড়া ব্যাংক গ্রাহকের হিসাব সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করতে পারে না। এটিই হিসাবের গোপনীয়তা।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত চেকটি হলো দাগকাটা চেক।
বাহক চেক বা হুকুম চেকের উপরে সাধারণত বামপার্শ্বে কিছু লিখে বা না লিখে আড়াআড়িভাবে দুটি রেখা অঙ্কন করলে তাকে দাগকাটা চেক বলে। বিভিন্ন ধরনের চেকের মধ্যে অন্যতম একটি হলো দাগকাটা চেক। উদ্দীপকের চেকটির বা কোণায় আড়াআড়িভাবে দুইটি দাগ টানা এবং তাকে অ/ঈ ঢ়ধুবব কথাটি লেখা আছে। এ থেকে বোঝা যায় চেকটিকে দাগকাটা চেটে রূপান্তর করা হয়েছে। চেকটি দাগকাটা হওয়ায় শুধুমাত্র শিমুলের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমেই এ চেকের অর্থ সংগ্রহ করা যাবে। এ ধরনের চেক বাহক বা হুকুম চেক হতে অধিক নিরাপদ। এ ধরনের চেকটিতে শিমুল অধিক নিরাপত্তা ছাড়াও চেকের মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা, প্রতারণা ও জালিয়াতি রোধ, কম খরচ প্রভৃতি সুবিধা পাবেন। বড় অংকের লেনদেনের ক্ষেত্রে দাগকাটা চেক টাকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সর্বাধিক নিরাপত্তা দান করে।
ঘ. আমি মনে করি লেনদেনের নিরাপত্তা বিধানে উদ্দীপকের অঙ্কিত দাগকাটা চেকটিই সবচেয়ে উত্তম।
যে চেকের বাম কোণায় আড়াআড়িভাবে দুটি দাগ টানা থাকে তাকে দাগকাটা চেক বলে। দাগকাটা চেকের দাগের ভিতরে ব্যাংকের নাম ও শাখা উল্লেখ করা যায়। ব্যাংক হিসাব ব্যতীত এ চেকের অর্থ উত্তোলন করা যায় না। উদ্দীপকের প্রস্তুতকৃত চেকটি দাগকাটা চেক যা ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত নিরাপদ। কারণ বাহক ও হুকুম চেকের অসুবিধা দূর এবং অর্থ লেনদেনের অধিক নিরাপত্তার আলোকেই দাগকাটা চেকের উদ্ভব। এ চেকের টাকা শুধুমাত্র প্রাপকের ব্যাংক হিসাবে প্রদত্ত হয় তাই অন্য কেউ এর অর্থ উত্তোলন করতে পারে না বা চেকটি অন্য হিসাবে স্থানান্তর করা যায় না। এর মাধ্যমে প্রতারণা ও জালিয়াতি রোধ করা যায়। এরূপ চেক হারিয়ে বা চুরি হয়ে গেলেও এর অর্থ হারানোর ঝুঁকি থাকে না। অপরদিকে ব্যাংকও এ চেকের অর্থ প্রকৃত প্রাপক ছাড়া অর্থ স্থানান্তরের সুযোগ দেয় না এবং এ ব্যাপারে ব্যাংক সর্বাধিক সতর্ক থাকে।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, নিরাপত্তা বিধানে দাগকাটা চেকই সবচেয়ে উত্তম।
প্রশ্ন-৮  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সুমন হোসেন ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন ভিআইপি মর্যাদার গ্রাহক। এজন্য তিনি তার বৈদেশিক বাণিজ্যের যাবতীয় কাজ ও দেনা পরিশোধ, পাওনা আদায় ইত্যাদি শুধুমাত্র এ ব্যাংকের মাধ্যমেই করে থাকেন। তবে স¤প্রতি ন্যাশনাল ব্যাংকটি সুমন হোসেনের সাথে সম্পর্কের পরিসমাপ্তি করেছে। কারণ বেশ কয়েকটি মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে বিদেশি অবৈধ পণ্য আনার অভিযোগ তুলেছে এবং এ ব্যাপারে সরকার মামলার প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
ক. কিসের মাধ্যমে ব্যাংক ও গ্রাহকের চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়? ১
খ. দেউলিয়া বলতে কী বোঝ? ২
গ. বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল ব্যাংকের সাথে সুমন হোসেনের সম্পর্কটি কী ছিল? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. ব্যাংকের সাথে সুমন হোসেনের সম্পর্কের পরিসমাপ্তির কারণটি বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৮নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. হিসাব খোলার মাধ্যমে ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
খ. কোনো ব্যক্তি বা গ্রাহকদের সম্পদের চেয়ে ঋণের পরিমাণ বেশি হলে এবং ঐ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণ পরিশোধে অসমার্থ্য হলে তাকে দেউলিয়া বলে। তবে কেউ চাইলেই নিজেকে দেউলিয়া বলে ঘোষনা করতে পারে না। কাউকে দেউলিয়া বলে ঘোষণা দেয়ার অধিকার একমাত্র আদালতেই আছে।
গ. বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল ব্যাংকের সাথে সুমন হোসেনের যে সম্পর্ক ছিল তা হলো ব্যাংক গ্রাহকের প্রতিনিধি।
ব্যাংক তার গ্রাহকের সাথে গড়ে তোলা সম্পর্কের আলোকেই তার ব্যাংকিং কাজ পরিচালনা এবং উদ্দেশ্য অর্জন করে থাকে। গ্রাহকের পক্ষে দেনা পরিশোধ ও পাওনা আদায়ের মাধ্যমে ব্যাংক গ্রাহকের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে থাকে। এই কাজ করার কারণে তাদের মধ্যে একটি সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। উদ্দীপকে ব্যাংক গ্রাহকের প্রতিনিধি এই সম্পর্কের কারণেই ন্যাশনাল ব্যাংক তার ভিআইপি মর্যাদার গ্রাহক সুমন হোসেনের যাবতীয় লেনদেন সম্পন্ন করেছে। এক্ষেত্রে ন্যাশনাল ব্যাংকটি সুমন হোসেনের পক্ষ হয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে অন্য ব্যবসায়ীদের অর্থ প্রদান করেছে এবং প্রয়োজনে সুমন হোসেনের হয়ে অন্য ব্যবসায়ীদের কাছ হতে অর্থ সংগ্রহও করেছে। অর্থাৎ অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে সুমন হোসেনের প্রত্যক্ষ ভ‚মিকা না রেখে ব্যাংক প্রতিনিধি হিসেবে সহায়তা করেছে।
ঘ. ন্যাশনাল ব্যাংকের সাথে সুমন হোসেনের সম্পর্কে পরিসমাপ্তির কারণটি হলো ব্যাংকের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।
ব্যাংক ও গ্রাহকের সম্পর্ক তৈরি হয় বিশ্বাসের আলোকে। যখন কোনো পক্ষ এ বিশ্বাস ভঙ্গ করে তখন তাদের মধ্যে সম্পর্কের পরিসমাপ্তি আবশ্যক হয়ে যায়। মক্কেল যদি তার চুক্তি অনুযায়ী সততার নীতি মেনে না চলে বা প্রতারণার আশ্রয় নেয় সেক্ষেত্রে ব্যাংক মক্কেলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে।
উদ্দীপকে ন্যাশনাল ও সুমন হোসেনের সম্পর্ক তৈরি হয়ে বিশ্বাসের আলোকে। কারণ ব্যাংক ও গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাসই ব্যাংকিং ব্যবসায়ের মূলমন্ত্র। ন্যাশনাল ব্যাংক তার মক্কেল সুমন হোসেনের বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে পেরেছিল বলেই তার সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনেই তার পক্ষ হয়ে ব্যাংকিং লেনদেন সম্পন্ন করত। এক্ষেত্রে ন্যাশনাল ব্যাংকটি যখন জানতে পারলো সুমন হোসেন ব্যাংকিং লেনদেন সম্পন্ন করে অবৈধ পণ্যের মূল্য আদায় এবং পরিশোধ করেন তখন ন্যাশনাল ব্যাংক বুঝতে পারল সুমন হোসেন ব্যাংকিং চুক্তি অনুযায়ী সততার নীতি মেনে চলে নি। তাই ন্যাশনাল ব্যাংক নিজস্ব সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সুমন হোসেনের সাথে সম্পর্ক পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছে।
সুতরাং বলা যায়, সুমন হোসেন চুক্তি ভঙ্গ করায় ন্যাশনাল ব্যাংকটি তাই নিজস্ব সিদ্ধান্তে গ্রাহক সুমন হোসেনের সাথে সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছে।
প্রশ্ন -৯ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রাহাত একজন জাহাজ ব্যবসায়ী। তিনি বিভিন্ন দেশে পণ্য পরিবহনের সাথে জড়িত আছেন। এশিয়া ব্যাংকে তার একটি চলতি হিসাব আছে। এই চলতি হিসাবের মাধ্যমে তিনি তার সকল ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পাদন করেন। তিনি বিভিন্ন উৎস হতে ঋণ গ্রহণ করে জাহাজ ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করলেন। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল এবং তিনি ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে তার সবকটি জাহাজ সমুদ্রে ডুবে গেলে তিনি ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে গেলেন। এর ফলে এশিয়া ব্যাংকের সাথে তার সম্পর্কের অবসান ঘটল।
ক. ব্যাংক ও গ্রাহকের সম্পর্ক কিসের ভিত্তিতে গড়ে উঠে? ১
খ. কোনটি ব্যাংকের সাথে গ্রাহকের সম্পর্ক গড়ে তোলে? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. রাহাতের সাথে ব্যাংকের সম্পর্কের অবসান ঘটার কারণ ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. এশিয়া ব্যাংকের সাথে রাহাতের সম্পর্ক সম্ভাব্য আরও যেসব কারণে পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে তা বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৯নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ব্যাংক ও গ্রাহকের সম্পর্ক আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়ে উঠে।
খ. গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব ব্যাংকের সাথে গ্রাহকের সম্পর্ক গড়ে তোলে। গ্রাহক যখন ব্যাংকে হিসাব খোলে তখন গ্রাহকের ব্যাংকের প্রতি কিছু দায়বদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অপরদিকে ব্যাংকেরও গ্রাহকের প্রতি কিছু দায়িত্বের সৃষ্টি হয়। এভাবেই ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে ব্যাংক হিসাব সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
গ. রাহাতের সাথে ব্যাংকের সম্পর্কের অবসান ঘটার কারণ হলো দেউলিয়া ঘোষণা।
ব্যাংক ও গ্রাহকের সম্পর্ক বিশ্বাসের। তবে নানান কারণে ব্যাংকার ও গ্রাহকের মধ্যে সম্পর্কের অবসান ঘটতে পারে। তার মধ্যে একটি হলো গ্রাহক আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হলে তাদের সম্পর্কের অবসান ঘটে। উদ্দীপকের রাহাত একজন জাহাজ ব্যবসায়ী। এশিয়া ব্যাংকে তার হিসাব রয়েছে যার মাধ্যমে তিনি ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পাদন করেন। তিনি বিভিন্ন উৎস হতে ঋণ গ্রহণ করে জাহাজ ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করলেন। ব্যবসায়ের অর্জিত মুনাফা দ্বারা তিনি ঋণ পরিশোধ করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে তার সবকটি জাহাজ ডুবে গেলে তিনি ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে যান। এ অবস্থায় তার দায় বেড়ে যাওয়ায় তিনি ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পাড়েন এবং আদালত তাকে দেউলিয়া ঘোষণা করে। এর ফলে ব্যাংকের সাথেও সম্পর্কের অবসান ঘটে। অর্থাৎ দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার কারণেই ব্যাংকের সাথে রাহাতের সম্পর্কের অবসান ঘটে।
ঘ. উদ্দীপকে রাহাত আদালত কর্তৃক দেউলিয়া বলে ঘোষিত হওয়ায় এশিয়া ব্যাংকের সাথে তার সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। এই কারণটি ছাড়া এশিয়া ব্যাংকের সাথে রাহাতের সম্পর্ক সম্ভাব্য আরও যেসব কারণে পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে তা হলো বিশ্বাস ভঙ্গ, নৈতিকতার বিপর্যয় ও আইনের পরিপন্থী কোনো কিছু করা। ব্যাংক ও গ্রাহকের সম্পর্ক নানান কারণে অবসান ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যাংক বা মক্কেল যে কেউ সিদ্ধান্ত নিয়ে সম্পর্কের অবসান ঘটায়। রাহাত এশিয়া ব্যাংকের একজন গ্রাহক। কোনো কারণে যদি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে তিনি যদি তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তবে এশিয়া ব্যাংকের সাথে তার সম্পর্কের অবসান ঘটতে পারে। আদালত যদি কোনো কারণে রাহাতের ওপর গারনিশি অর্ডার জারি করে তবে এশিয়া ব্যাংক রাহাতের হিসাব বন্ধ করে দিতে পারে। এশিয়া ব্যাংক যদি মনে করে রাহাত সততার নীতি মেনে চলছে না, তা হলেও রাহাতের সাথে তার সম্পর্কের অবসান ঘটাতে পারে। গ্রাহক হিসেবে রাহাত নিজেও যে কোনো কারণে এশিয়া ব্যাংকের হিসাব বন্ধ করে দিতে পারেন। যুদ্ধজনিত কোনো কারণে রাহাত এবং এশিয়া ব্যাংক পরস্পর বিপরীত অংশে অবস্থান নিলেও তাদের সম্পর্কের অবসান ঘটতে পারে।
পরিশেষে বলা য়ায়, উপরিউক্ত কারণ ছাড়াও জের স্থানান্তর বা রাহাতের মৃত্যুজনিত কারণেও এশিয়া ব্যাংকের সাথে তার সম্পর্কের অবসান ঘটতে পারে।

প্রশ্ন-১০  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মি. আলাউলের শেয়ার বাজারে প্রায় ৩ কোটি টাকার শেয়ার এবং তার স্ত্রীর প্রায় ১০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার আছে। মি. আলাউল নিক ব্যাংক লি.এর নিকট স্বর্ণ ও শেয়ার দলিল সংরক্ষণ করেন। এ ধরনের সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকের আইনগত অনুমোদন আছে। [সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, পটুয়াখালী]
ক. গ্রাহক কে? ১
খ. ব্যাংক ও গ্রাহকের আস্থা কিসের ওপর টিকে থাকে? ২
গ. নিক ব্যাংকের সাথে মি. আলাউলের সম্পর্কের ধরনটি কী? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. নিক ব্যাংকের সাথে মি. আলাউলের সম্পর্কটিকে কী আইনগত বলা যাবে? তোমার মতামত দাও। ৪
 ১০নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের যেকোনো ধরনের হিসাব বা অন্যান্য সেবার মাধ্যমে ঐ ব্যাংকের সাথে যুক্ত থাকে তাকে গ্রাহক বলে।
খ. ব্যাংক ও গ্রাহকের আস্থা সততা, নিষ্ঠা ও বিশ্বাসের ওপর টিকে থাকে। আর এসব গুণাবলির অভাব ব্যাংক ও গ্রাহকের আস্থায় ফাটল ধরায়। তাই উভয় পক্ষকে হিসাব খোলা থেকে শুরু করে সর্বাবস্থায় সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে।
গ. নিক ব্যাংকের সাথে মি. আলাউলের সম্পর্কের ধরনটি হলো ব্যাংকটি এখানে আলাউলের অছি হিসেবে কাজ করছে।
ব্যাংক অনেক সময় তাদের গ্রাহকের মূল্যবান সম্পত্তি যেমন স্বর্ণালঙ্কার, দলিলপত্র ইত্যাদি সংরক্ষণ করার দায়িত্ব পালন করে। গ্রাহকের পক্ষে ব্যাংকের এরূপ মূল্যবান সম্পদ সংরক্ষণ করার মাধ্যমে ব্যাংক গ্রাহকের অছি হিসেবে কাজ করে। উদ্দীপকে অছি হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে নিক ব্যাংক তার গ্রাহক মি. আলাউলের স্বর্ণ ও দলিল সংরক্ষণ করছে। ব্যাংকটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে এ কাজটি করে। মূল্যবান এ সম্পদসমূহ সংরক্ষণের মাধ্যমে গ্রাহক অর্থাৎ মি. আলাউলকে যেমন নিরাপত্তা দিয়ে থাকে অন্যদিকে গ্রাহকের আস্থা অর্জন এবং এর বিনিময়ে প্রয়োজনীয় মুনাফাও অর্জন করে থাকে। মূলত ব্যাংকিং উদ্দেশ্য অর্জনের জন্যই নিক ব্যাংক তার গ্রাহকদের সাথে এ ধরনের সম্পর্ক অর্জন করে।
ঘ. মি. আলাউল ও নিক ব্যাংকের সম্পর্কটি আইনগত বলে আমি মনে করি।
ব্যাংক গ্রাহকের অর্থ, মূল্যবান গহনা ইত্যাদির নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। ব্যাংকের এই কাজকে গ্রাহকের অছি হিসাবে গণ্য করা হয়। এ ধরনের সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকে আইনগত অনুমোদন থাকে। কারণ ব্যাংক মূলত তার গ্রাহকদের সাথে যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে তা আইনগতভাবেই করে থাকে। উদ্দীপকে মি. আলাউলের সাথে ব্যাংকের সম্পর্কটির ধরন ভিন্ন। এ সম্পর্কের আওতায় আইনগতভাবে শুধুমাত্র বৈধ সম্পত্তিগুলোই নিক ব্যাংক সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকে। গ্রাহকের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে মূল্যবান সম্পত্তি সংরক্ষণে ব্যাংক গ্রাহককে লকার সুবিধা প্রদান করে থাকে। তাছাড়া ব্যাংক হিসাব খোলার মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থের নিরাপদ সংরক্ষণ ও সহজে অর্থ লেনদেন করা। আর হিসাব খোলার মধ্য দিয়ে আইনগতভাবে নিক ব্যাংক ও মি. আলাউলের মধ্যে একটি চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের সৃষ্টি হয় যার কারণে নিক ব্যাংক তার গ্রাহক মি. আলাউলের জমাকৃত টাকা চাহিবামাত্র ফেরত দিতে বাধ্য থাকে। সুতরাং, সফলতা এবং ব্যাংকিং সুবিধা অর্জনের জন্য প্রতিটি ব্যাংকেরই উচিত গ্রাহককে নিক ব্যাংকের মতো আইনগতভাবে গ্রাহকদের এ ধরনের সুবিধা প্রদান করা।
প্রশ্ন-১১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রিয়াজ তার ব্যাংকিং হিসাবে ৫০,০০০ টাকা জমা রাখেন। রিয়াজ ৭০,০০০ হাজার টাকার একটি বাহক চেক প্রস্তুত করে নিলয়কে প্রদান করলে ব্যাংক তা অমর্যাদা করে। এরপর রিয়াজ দ্বিতীয় আরেকটি চেক প্রস্তুত করে নিলয়কে দিলে সে অর্থ ব্যাংক পরিশোধ করে দেয়।
[মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর]
ক. হস্তান্তরযোগ্য বিনিময় বিল কোনটি? ১
খ. কোন কোন ক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবের অবসান ঘটে? ২
গ. রিয়াজের দেয়া চেক ব্যাংক অমর্যাদা করে কেন? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. পরবর্তীতে নিলয়কে দেয়া রিয়াজের চেকটি ব্যাংক পরিশোধ করে দেয়ার জন্য রিয়াজের পদক্ষেপটি কী ছিল? বিশ্লেষণ কর। ৪
 ১১নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. চেক হলো হস্তান্তরযোগ্য বিনিময় বিল।
খ. ব্যাংক ও গ্রাহকের সম্পর্ক বিশ্বাসের। তাই গ্রাহক বিশ্বাস ভঙ্গ, নৈতিকতার বিপর্যয় ও আইনের পরিপন্থী কোনো কিছু করলে এ সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে। তাছাড়া গ্রাহক আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হলে; আদালত কর্তৃক গ্রাহকের ওপর গারনিশি অর্ডার জারি করা হলো ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের বাধ্যতামূলক অবসান ঘটে।
গ. রিয়াজের দেয়া চেকটি ব্যাংক কর্তৃক অমর্যাদা হওয়ার কারণ হলো রিয়াজ চেকটি সঠিকভাবে প্রস্তুত করেনি।
আমানতকারী কর্তৃক কোনো চেক ব্যাংকে উত্থাপিত হওয়ার পর চেক পরিশোধের শর্তসমূহের অনুপস্থিতিতে ব্যাংক চেককে অমর্যাদা বা প্রত্যাখ্যান করে থাকে। চেকের অর্থ পরিশোধের একটি শর্ত হলো গ্রাহকের হিসাবে চেকে উল্লিখিত পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ থাকতে হবে। উদ্দীপকের রিয়াজের হিসাবে টাকা রয়েছে ৫০ হাজার কিন্তু সে চেকে উল্লেখ করেছে ৭০ হাজার, যা ব্যাংক দিতে বাধ্য নয়। ফলে চেকটি অমর্যাদা হয়। অর্থাৎ চেক এমন একটি বিনিময় বিল যা চাহিবামাত্র অর্থ পরিশোধে ব্যাংক সদা প্রস্তুত থাকে তবে এক্ষেত্রে চেক প্রস্তুতে গ্রাহককে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত বেশ কিছু নিয়মনীতি মানতে হয়। এসব নিয়মের একটি হলো গ্রাহককে তার জমাকৃত অর্থ উত্তোলনের জন্যই চেক প্রস্তুত করতে হয়। জমাকৃত অর্থের চেয়ে বেশি অর্থ উত্তোলনের জন্য চেক প্রস্তুত করা হলে ব্যাংক তা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানায়। তবে চলতি হিসাবে জমাতিরিক্ত উত্তোলনের সুযোগ থাকে।
ঘ. নিলয়কে দেয়া রিয়াজের চেকটি ব্যাংক পরিশোধ করে দেয়ার জন্য রিয়াজের পদক্ষেপটি ছিল অর্থের পরিমাণ সঠিকভাবে লেখা। অর্থাৎ সঠিকভাবে চেক প্রস্তুত করা।
ব্যাংক কর্তৃক চেকের অর্থ প্রদানের অস্বীকৃতিকে অমর্যাদা বলে। অমর্যাদাকৃত চেক ব্যাংকের গ্রাহক তার ভুল শুধরে আবার উত্থাপন করলে ব্যাংক অর্থ পরিশোধে বাধ্য থাকে। উদ্দীপকে রিয়াজের ব্যাংক হিসাবে অর্থ ছিল ৫০ হাজার টাকা কিন্তু তিনি নিলয়কে দেয়া চেকে উল্লেখ করেছেন ৭০ হাজার টাকা। ব্যাংক কর্তৃক চেকটি অমর্যাদা হলে রিয়াজ তার ভুলটি বুঝতে পারেন এবং অর্থের পরিমাণ সংশোধন করেন তার জমাকৃত অর্থের আওতাভুক্ত টাকার অঙ্কের চেক নিলয়কে প্রদান করে। সংশোধনীমূলক এ পদক্ষেপের ফলে ব্যাংকও নিলয়কে অর্থ প্রদানে বাধ্য হয়। অর্থাৎ চেক ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখ্যান হয়ে এলে রিয়াজ সঠিকভাবে আরেকটি চেক প্রস্তুত করে নিলয়কে প্রদান করেন বিধায় ব্যাংক তাকে অর্থ পরিশোধ করেছে।
সুতরাং রিয়াজ নিলয়ের পাওনা পরিশোধ করতে নিজের ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত অর্থের বিপরীতে সমপরিমাণ অর্থ উল্লেখ করে নতুনভাবে চেক প্রস্তুত করেন।

 জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 
প্রশ্ন \ ১ \ ব্যাংক কাদের আছি হিসেবে কাজ করে?
উত্তর : ব্যাংক গ্রাহকের অছি হিসেবে কাজ করে।
প্রশ্ন \ ২ \ ‘এন্ড কোং’-শব্দটি কোন চেকে লেখা থাকে?
উত্তর : ‘এন্ড কোং’-শব্দটি দাগকাটা চেকে লেখা থাকে।
প্রশ্ন \ ৩ \ ব্যাংকিং ব্যবসার মূলনীতি কী?
উত্তর : ব্যাংকিং ব্যবসার মূলনীতি হলো গ্রাহকের স্বার্থরক্ষা করা।
প্রশ্ন \ ৪ \ ব্যাংক কার নির্দেশ ছাড়া গ্রাহকের হিসাব সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করতে পারে না?
উত্তর : গ্রাহকের নির্দেশ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ, আইনগত অনুমতি অথবা আদালতের নির্দেশ ছাড়া ব্যাংক গ্রাহকের হিসাব সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করতে পারে না।
প্রশ্ন \ ৫ \ ব্যাংকের সাথে গ্রাহকের সততার পরিচয় দেয়া গ্রাহকের কিরূপ দায়িত্ব?
উত্তর : ব্যাংকের সাথে গ্রাহকের সততার পরিচয় দেয়া ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের পরম দায়িত্ব।
প্রশ্ন \ ৬ \ চেক কী?
উত্তর : চেক হচ্ছে একটি হস্তান্তরযোগ্য বিনিময় বিল যা আমানতকারী কর্তৃক ব্যাংকের ওপর লিখিত আদেশ।
প্রশ্ন \ ৭ \ চেক কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর : সাধারণত চেক দুই প্রকার যথা : ক. বাহক চেক খ. হুকুম চেক।
প্রশ্ন \ ৮ \ কখন ব্যাংক গ্রাহকের বিশ্বাসের সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে?
উত্তর : বিশ্বাস ভঙ্গ, নৈতিকতার বিপর্যয় ও আইনের পরিপন্থী কোনো কিছু করলে ব্যাংক-গ্রাহকের সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে।
প্রশ্ন \ ৯ \ গারনিশি অর্ডার জারি করে কে?
উত্তর : গারনিশি অর্ডার আদালত কর্তৃক জারি করা হয়।
প্রশ্ন \ ১০ \ গ্রাহক যখন ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেয় তখন তা কোন হিসাবে লিপিবদ্ধ হবে?
উত্তর : গ্রাহক যখন ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেয় তখন তা ক্রেডিটর হিসাবে লিপিবদ্ধ হবে।
প্রশ্ন \ ১১ \ কোন হিসাবের টাকা চেক লেখে উত্তোলন করা যায়?
উত্তর : সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবের টাকা চেক লেখে উত্তোলন করা যায়।
প্রশ্ন \ ১২ \ কখন ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকে?
উত্তর : চাহিবামাত্র ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ মক্কেলের মৃত্যু ঘটলে ব্যাংক হিসাবের কী ঘটবে?
উত্তর : মক্কেলের মৃত্যু ঘটলে ব্যাংক হিসাব বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন \ ১৪ \ চেকের প্রস্তুতকারী কে?
উত্তর : চেকের প্রস্তুতকারী হলো ব্যাংক গ্রাহক।
প্রশ্ন \ ১৫ \ বন্ধকি ঋণের মাধ্যমে ব্যাংকের সাথে মক্কেলের কোন ধরনের সম্পর্ক সৃষ্টি করে?
উত্তর : বন্ধকি ঋণের মাধ্যমে ব্যাংকের সাথে মক্কেলের দাতা ও গ্রহীতার সম্পর্ক সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন \ ১৬ \ ব্যাংকের ওপর গ্রাহকের লিখিত আদেশের দলিল কী?
উত্তর : ব্যাংকের ওপর গ্রাহকের লিখিত আদেশের দলিল হলো চেক।
প্রশ্ন \ ১৭ \ যুদ্ধজনিত কারণে ব্যাংকার মক্কেলের সম্পর্কের কী ঘটে?
উত্তর : যুদ্ধজনিত কারণে ব্যাংকার মক্কেলের সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে।
প্রশ্ন \ ১৮ \ দীর্ঘকালীন লেনদেন চালু না রাখলে মক্কেলের হিসাব কী হয়?
উত্তর : দীর্ঘকালীন লেনদেন চালু না রাখলে মক্কেলের হিসাব বন্ধ হয়ে যায়।

 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 
প্রশ্ন \ ১ \ ‘ব্যাংক ও গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাসই ব্যাংকিং ব্যবসায়ের মূলমন্ত্র’ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ব্যাংক ও গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাসই ব্যাংকিং ব্যবসায়ের মূলমন্ত্র, যা ব্যাংকিং ব্যবসার ভিত্তিমূল। এই সম্পর্ক সততা, নিষ্ঠা ও বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে তৈরি হয় এবং এই সম্পর্কের অবনতি ক্ষতিকর ব্যবসায়িক পরিণতি ডেকে আনে।
প্রশ্ন \ ২ \ ‘ব্যাংক ও তার গ্রাহকের মধ্যে ডেটর-ক্রেডিটর সম্পর্ক বিদ্যমান’ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ব্যাংক ও তার গ্রাহকের মধ্যে ডেটর-ক্রেডিটর সম্পর্ক বিদ্যমান। গ্রাহক যখন ব্যাংকের কাছে টাকা জমা দেয়, তখন ব্যাংক ডেটর এবং গ্রাহক ক্রেডিটর হয়, আবার বিপরীত সম্পর্ক বিরাজ করে, যখন ব্যাংকের কাছ থেকে গ্রাহক ঋণ নেয়।
প্রশ্ন \ ৩ \ ‘ব্যাংক চাহিবামাত্র গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকে।’ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : হিসাব খোলার মাধ্যমে আইনগতভাবে ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এতে করে ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে কিছু অধিকার ও দায়িত্ব সৃষ্টি হয়। এই চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের কারণেই ব্যাংক তার গ্রাহকের জমাকৃত টাকা চাহিবামাত্র ফেরত দিতে বাধ্য থাকে।
প্রশ্ন \ ৪ \ চেককে হস্তান্তরযোগ্য ঋণের দলিল বলা হয় কেন?
উত্তর : চেক সাধারণভাবে অর্পণের দ্বারা অনেকটা নগদ অর্থের মতোই হস্তান্তর করা হয়ে থাকে বলে চেককে হস্তান্তরযোগ্য ঋণের দলিল বলা হয়। এর মাধ্যমে আমানতকারী চেকের বাহককে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের জন্য ব্যাংককে নির্দেশ দেয়। এছাড়া চেক সব সময়ই ঋণের প্রমাণ হিসেবে আদালতে গৃহীত হয়। এজন্য চেককে হস্তান্তরযোগ্য ঋণের দলিল বলা হয়।
প্রশ্ন \ ৫ \ আমানতকারী বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : যিনি ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন তিনিই আমানতকারী। ব্যাংক হিসাব খোলার মাধ্যমে গ্রাহক ব্যাংকে টাকা জমা রেখে আমানতকারী হিসেবে পরিচিত পান।

প্রশ্ন \ ৬ \ সম্পত্তি ক্রোক-এর ধারণা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কোনো গ্রাহক সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ গ্রহণ করলে এবং পরবর্তীতে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক গ্রাহকের সম্পত্তির ওপর আইনগত যে দখল নেয় তাকে সম্পত্তি ক্রোক বলে। গ্রাহক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ক্রোককৃত সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাংক তার পাওনা আদায় করে। তবে এ ব্যবস্থা ব্যাংকের জন্য অধিক ঝামেলাপূর্ণ।
প্রশ্ন \ ৭ \ হস্তান্তরযোগ্য বিনিময় বিল সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : প্রস্তুতকারক কর্তৃক স্বাক্ষরিত যে দলিল অবাধে হস্তান্তরিত হয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির কার্যে ব্যবহৃত হয় তাকে হস্তান্তরযোগ্য বিনিময় বিল হয়। চেক, বিনিময় বিল, পে-অর্ডার ইত্যাদি হস্তান্তরযোগ্য ঋণের দলিলের কয়েকটি উদাহরণ।
প্রশ্ন \ ৮ \ গারনিশি অর্ডার বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : আদালত কর্তৃক জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা যার মাধ্যমে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় লেনদেন বন্ধ করা হয় তাকে গারনিশি অর্ডার বলে। আদালত কোনো ব্যক্তির ওপর গারনিশি অর্ডার জারি করলে ঐ ব্যক্তি আইনগতভাবে সাময়িক সময়ের জন্য তার ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারেন না। তবে ব্যাংক গ্রাহকের তহবিল থেকে পাওনাদারকে অর্থ পরিশোধ করতে পারবে।
প্রশ্ন \ ৯ \ চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক বলতে কী বোঝ?
উত্তর : হিসাব খোলার মধ্য দিয়ে আইনগতভাবে ব্যাংক ও গ্রাহকের একটি চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। এতে করে দুই পক্ষেরই কিছু অধিকার ও দায়িত্ব সৃষ্টি হয় এবং এ চুক্তির কারণে ব্যাংক তার আমানতকারীর জমাকৃত টাকা চাহিবামাত্র ফেরত দিতে বাধ্য।
প্রশ্ন \ ১০ \ ব্যাংকের অর্থ ফেরতের দায়িত্ব বলতে কী বোঝ?
উত্তর : বাংকের অর্থ ফেরতের দায়িত্ব বলতে চাহিবামাত্র আমানতকারীকে তার আমানতের অর্থ ফেরত দেয়াকে বোঝায়। তবে এটা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পাদন হতে হবে।
প্রশ্ন \ ১১ \ ব্যাংকের ওপর গ্রাহকদের অনাস্থা সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ব্যাংককে নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমন হতে হবে যাতে তা গ্রাহকদের আমানত ও সেই সাথে নিজ সম্পদের নিরাপদ সংরক্ষণ সমর্থ হয়। এক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম ঘটলে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর গ্রাহকদের অনাস্থার সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন \ ১২ \ গ্রাহক চেক অঙ্কনে কীভাবে সতর্কতা অবলম্বন করবে?
উত্তর : চেক লিখে ব্যাংক উপস্থাপন করলে ব্যাংক টাকা দিতে বাধ্য থাকে। গ্রাহক চেক অঙ্কন করার সময় তারিখ, টাকার পরিমাণ ও স্বাক্ষর প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ চেকে কাঁটা, ছেড়া কিংবা লেখার মধ্যে কোনো অসামাঞ্জস্য থাকলে ব্যাংক টাকা পরিশোধ করে না।

 

Leave a Reply