এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
জীবনানন্দ দাশ
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
১. এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার কোথায় এমন ধূম্র পাহাড়
কোথায় এমন হরিৎক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে
এমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে।
২. আঁখি মেলে তোমার আলো
প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ওই আলোতে নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে।
ক. জীবনানন্দ দাশের কাব্যবৈশিষ্ট্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী বলে আখ্যায়িত করেছেন?
খ. “জলাঙ্গীরে দেয় অবিরল জল”Ñকথাটির দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের উভয় অংশে কোন বিশেষ দিকটি “এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে” কবিতায় অনুপস্থিত তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “স্বদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধের কারণে এখানকার প্রতিটি জিনিস কবির চোখে অপরূপ সৌন্দর্য জাগানিয়া।” উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে মন্তব্যটির যৌক্তিকতা দেখাও। ১
২
৩
৪
১ নং প্রশ্নের উত্তর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘চিত্ররূপময়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা কবি নদীমাতৃক বাংলার নদী-নালার স্রোতধারার প্রাণৈশ্বর্যকে বোঝাতে চেয়েছেন।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশে জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় ১৩০টি নদ-নদী। এগুলোর মধ্যে প্রধান হলোÑ পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী প্রভৃতি। এসব নদী ছাড়াও জলে পরিপূর্ণ হয় এদেশের অসংখ্য খাল-বিল, ডোবা নালা। তারা ফিরে পায় তাদের স্রোতধারার প্রাণৈশ্বর্য ও রূপ-সৌন্দর্য। প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা কবি মূলত এদেশের নদ-নদীর স্রোতধারার ঐশ্বর্যকে বোঝাতে চেয়েছেন।
উদ্দীপকের উভয় অংশে স্বদেশের বুকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার বিশেষ দিকটি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় অনুপস্থিত।
দেশ ও দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতিটি মানুষের আত্মার সম্পর্ক। তাই মানুষ তার স্বদেশকে ভালোবাসে অন্তরের অন্তস্থল থেকে। স্বদেশের প্রতিটি জিনিসই তার কাছে পায় অসীম মর্যাদা।
উদ্দীপকের উভয় অংশে স্বদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ প্রকাশ পেয়েছে। কেননা, এখানে স্বদেশের প্রতিটি জিনিসই পেয়েছে অনন্য মর্যাদা। স্বদেশের পাহাড়-প্রকৃতি, নদ-নদী সবকিছুই কবির কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনে হয়েছে। স্বদেশের প্রতি এমন মমত্ববোধের কারণে কবি তাঁর জন্মভূমির বুকেই শেষ-নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চেয়েছেন। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবি গভীরভাবে তাঁর মাতৃভূমিকে ভালোবেসেছেন। তাইতো স্বদেশের সবকিছুই তাঁর কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনে হয়েছে। স্বদেশের রূপ-সৌন্দর্যের মাঝে তিনি খুঁজে পেয়েছেন প্রাণৈশ্বর্য। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের উভয় অংশে স্বদেশের বুকে শেষ-নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাওয়ার বিশেষ দিকটি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় অনুপস্থিত।
“স্বদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধের কারণে এখানকার প্রতিটি জিনিস কবির চোখে অপরূপ সৌন্দর্য জাগানিয়া।”Ñ উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে মন্তব্যটি যৌক্তিক।
প্রতিটি মানুষের মধ্যে তাঁর স্বদেশের প্রতি রয়েছে গভীর ভালোবাসা, যা মানুষের মনে আনে প্রশান্তির জোয়ার। স্বদেশের প্রতি এমন গভীর মমত্ববোধের কারণে স্বদেশের প্রতিটি বস্তু মানুষের কাছে পায় বিশেষ মর্যাদা।
উদ্দীপকে জন্মভূমির প্রতি গভীর মমত্ববোধের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। কবির চোখে তাঁর দেশের নদী, পাহাড়, প্রকৃতি, আকাশ সবকিছুই যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ। ধান খেতে বাতাসের এমন খেলা পৃথিবীর আর কোথাও যেন খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই কবি এমন ঐশ্বর্যমণ্ডিত দেশে জন্মে গর্বিত। তাঁর চোখে অসাধারণ সুন্দর এই দেশ যা সারা পৃথিবীর মধ্যে অনন্য। প্রকৃতির সৌন্দর্যের এমন লীলাক্ষেত্র পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এদেশের চিরসবুজ প্রকৃতি, নদ-নদী পাহাড় যেন সৌন্দর্যের প্রতীক। প্রকৃতি ও প্রাণির মধ্যে রয়েছে অসীম সংহতি।
স্বদেশের প্রতি প্রতিটি মানুষের থাকে গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ। এ ভালোবাসা ও মমত্ববোধের কারণেই স্বদেশের সবকিছু মানুষের চোখে হয়ে ওঠে পৃথিবী-শ্রেষ্ঠ- যা উদ্দীপক ও কবিতায় ফুটে উঠেছে। এজন্যই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত
মন্তব্যটি যথার্থ হয়েছে।
অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা;
তাহার মাঝে আছে দেশ একÑ সকল দেশের সেরা;
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা;
এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধূম্র পাহাড়;
কোথায় এমন হরিৎক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে।
এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে।
পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখী; কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি,
গুঞ্জরিয়া আসে অলি পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়েÑ
তারা ফুলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে।
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যেÑ আমার জন্মভূমি।
ক. পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল কী?
খ. “এই পৃথিবীতে এক স্থান আছেÑ সবচেয়ে সুন্দর করুণ”Ñএখানে কোন স্থানের কথা বলা হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের কবির জন্মভূমি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার কিসের প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “প্রকৃতিপ্রেম থেকে উৎসারিত স্বদেশপ্রেমই উদ্দীপকের কবিতাংশ ও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার মূল ভাবনা।”Ñ মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর। ১
২
৩
৪
২ নং প্রশ্নের উত্তর
শঙ্খচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল।
“এই পৃথিবীতে এক স্থান আছেÑ সবচেয়ে সুন্দর করুণ”Ñ এখানে বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে।
আমাদের এই বাংলার মানুষ অভাবগ্রস্ত হলেও প্রাকৃতিক সম্পদ আর প্রকৃতির রূপে বাংলা ঐশ্বর্যশালী। বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতোটাই মনোরম যে, পৃথিবীর কোথাও এমন স্থান খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলার প্রতিটি তুচ্ছ উপাদানে কবি অপরূপ সৌন্দর্যের আভা দেখতে পান। তাই বলা যায়, এই পৃথিবীতে “এক স্থান আছেÑ সবচেয়ে সুন্দর করুণ”Ñ তাহলো আমাদের রূপসী বাংলা।
উদ্দীপকের কবির জন্মভূমি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে।
আমাদের এই বাংলাদেশ প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সাগর, নদী, পাহাড়, পশু-পাখি, ফুলে-ফসলে ঘেরা আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রকৃতির ভুবনমোহিনী সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত ও মুগ্ধ করে।
উদ্দীপকে বর্ণিত দেশটি পৃথিবীর সকল দেশের চেয়ে সেরা: এমন স্নিগ্ধ নদী আর ধূম্র পাহাড় আর কোথাও নেই। এখানকার বাতাস ধানের খেতের ওপর যেভাবে ঢেউয়ের খেলার সৃষ্টি করে তা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। পাখির কলরবে এখানকার প্রকৃতি সদা কলোলিত; ফুলের ওপর ভ্রমর আর মৌমাছির গুঞ্জন আমাদের চিত্তকে আন্দোলিত করে। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় যে স্থানের কথা বলা হয়েছে তার সবুজ ডাঙা মধুক‚পী ঘাসে অবিরল। কর্ণফুলী, পদ্মার অবিরল জলের ধারা আর শঙ্খচিল, ল²ীপেঁচার অস্ফুট তরুণ চঞ্চলতা প্রকৃতিতে এক মোহনীয় আবেশ সৃষ্টি করে। এখানে সন্ধ্যার অন্ধকার বাতাসে সুদর্শন উড়ে যায় আর বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে ধানের খেত যেন হলুদ শাড়ির মতো রূপসীর গায়ে লেগে থাকে। নীল বাংলার ঘাসে আর ধানের ভেতরে যে অপার সৌন্দর্য তা সত্যিই অপরূপ রূপের প্রতীক। উদ্দীপকেও বলা হয়েছে, সকল দেশের রানি হলো আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। তাই বলা যায়, এই ভাবটি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবির প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেরই প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রশ্নোলিখিত মন্তব্যটি সঠিক ও যথার্থ।
জন্মভূমির অবারিত সৌন্দর্যই একজন মানুষের মনের গহিনে স্বদেশের প্রতিমূর্তি গড়ে দেয়। প্রকৃতির অপার রূপমুগ্ধতাই দেশবাসীর মনের ভেতরে সৃষ্টি করে দেশপ্রেম।
উদ্দীপকের কবি তাঁর প্রিয় জন্মভূমির রূপবৈচিত্র্যে পুরোপুরি মুগ্ধ। কবি এই বসুন্ধরাকে ধনধান্য পুষ্পভরা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আর এই বসুধার মাঝে একটি দেশ আছে যেটি অন্যান্য দেশের তুলনায় সেরা। কেননা, সেই দেশটি স্বপ্ন দিয়ে তৈরি হয়েছে এবং স্মৃতি দিয়ে ঘেরা রয়েছে। দেশটি কবির মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বাংলার স্নিগ্ধ নদী, ধূম্র পাহাড়, ধানের খেত, পাখির কলকাকলি কবির মনে দোলা দিয়ে যায়।
‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাতেও কবি তাঁর জন্মভূমির অপার সৌন্দর্যের নিটোল বর্ণনা উপস্থাপন করেছেন। কবি ‘জীবনানন্দ দাশ’ নীল বাংলার ঘাসে আর ধানের ভেতরে যে সৌন্দর্য দেখেছেন তা এককথায় অপূর্ব। তিনি পাকা ধানের খেতকে দেখেছেন রূপসীর শরীরের উপরে থাকা হলুদ শাড়ির মতো। কবি তাঁর বাংলা মায়ের প্রতিটি তুচ্ছ উপাদানকেও ভালোবাসেন বলে কবিতায় তাদের স্থান দিয়েছেন। স্বদেশের প্রতি কবির গভীর ভালোবাসা আছে বলেই তিনি তাঁর দেশের প্রকৃতি বন্দনা করেছেন। উদ্দীপকের কবিতার ক্ষেত্রেও বিষয়টি সমানভাবে উঠে এসেছে। পরিশেষে বলা যায়, প্রকৃতিপ্রেম থেকে উৎসারিত স্বদেশপ্রেমই উদ্দীপকের কবিতাংশ ও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার মূল ভাবনাÑ মন্তব্যটি যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
স্বাভাবিক ব্যস্ততাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চার দিনের জন্য আমরা চলে গেলাম ভ্রমণে। সঙ্গে ছিল বন্ধু রাফি ও শাফি। এই সময় কক্সবাজারে পর্যটকের আনাগোনা খুব কম। তাই সমুদ্র আর পাহাড়কে যেন আমরা নিজের মতো করেই পেলাম। নিত্যদিনের রুটিন ভেঙে সকালে ঘুম থেকে উঠে সারাদিন শুধু ঘোরা আর দেখা। সমুদ্রের ঢেউ ভেঙে ভেসে বেড়ানো, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভেজা- সবই ছিল তুলনাহীন আনন্দের উচ্ছ¡াস।
সন্ধ্যায় ঝিঁঝি পোকার সঙ্গে পালা দিয়ে তিন বন্ধুর গান ধরা। সবই ছিল ‘ইচ্ছে পূরণ’ গল্পের মতোই। ওহ! সবুজ পাতার ফাঁকে ভোরের দোয়েল কীভাবে শিস দেয় সেটাও আমরা দেখেছি আর শুনেছি।
বন্ধু রাফি সবকিছুতেই যেন খুঁজে পেল নতুন এক বাংলাদেশ। ওর মতে, ‘এই বাংলাদেশ তো আমার সেই বাংলা। যেখানে সাম্পান ভাসে সাগরে। মাঝি গান গাইতে গাইতে ছুটে যায় মাঝ-দরিয়ায়। নানা পাখি আর ফুলের সমারোহে এই তো সোনার বাংলা, যাকে দেখে শুধু মুগ্ধতাই বাড়ে ।’
ক. কবির চোখে পৃথিবীর সুন্দরতম স্থান কোনটি?
খ. “সবুজ ডাঙা ভরে আছে মধুক‚পী ঘাসে অবিরল;”Ñচরণটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’Ñকবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের শেষ চরণে রাফির অনভূতিতে যেন কবি জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতি চেতনারই প্রতিফলন ঘটেছে।”Ñ মূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
কবির চোখে পৃথিবীর সুন্দরতম স্থান হলো তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশ।
প্রশ্নোলিখিত চরণটি দিয়ে চিরসবুজ বাংলার প্রকৃতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত চিরসবুজ এক দেশ। এদেশের যেখানে তাকাই সেখানেই যেন সবুজ প্রকৃতি দ্বারা বেষ্টিত। যার সৌন্দর্য মানুষের সৌন্দর্যপিপাসু মনের তৃষ্ণা নিবারণ করে। এই চিরসবুজ বাংলা গাছপালা, বন-জঙ্গল, ফুলে ফুলে, ঘাস-পাতায় ভরপুর-প্রশ্নোক্ত চরণটি দ্বারা এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।
“উদ্দীপকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় ফুটে ওঠা দিকটি হলো, বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ।
প্রকৃতি তার আপন রূপ-রস-গন্ধ দিয়ে সর্বদা সৌন্দর্য ছড়ায়।
মানুষ প্রতিনিয়ত ছুটে যেতে চায় নিসর্গ প্রকৃতির মাঝে শুধু একটু আত্মতৃপ্তির আশায়। আর সেই প্রকৃতি যদি হয় মাতৃভূমির তবে সেই সৌন্দর্য তার কাছে হবে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ।
উদ্দীপকের তিন বন্ধু শহরের ব্যস্ততাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছুটে গেছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। সেখানে তারা উপভোগ করেছে সমুদ্রের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ঝিঁঝি পোকার ডাক আর বৃষ্টির পরশ। এছাড়া সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে দোয়েলের শিস দেয়া দেখে তারা মুগ্ধ হয়েছে। বাংলা-প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য তাদের মনকে প্রসন্ন করে তুলেছে। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাতেও কবি বাংলাকে পৃথিবীর সুন্দরতম স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেখানে সবুজ ডাঙা ভরে থাকে মধুকূপী ঘাসে, যেখানে রয়েছে হাজারো নদীর মিলনমেলা, সবুজের সমারোহ। এই বাংলার এমন অপরূপ সৌন্দর্য কবি-হৃদয়ে এনে দিয়েছে প্রশান্তি, তাই তো কবি বাংলা প্রকৃতির বন্দনা করেছেন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় বাংলার প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধতার দিকটি ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকের শেষ চরণে রাফির অনুভূতিতে যেন কবি জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতি চেতনারই প্রতিফলন ঘটেছে।” Ñমন্তব্যটি যথার্থ।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় মানুষের কাছে মাতৃভূমির সৌন্দর্য সবসময়ই অনন্য মর্যাদা পায়। তাই প্রত্যেক মানুষের মধ্যে স্বদেশের প্রকৃতি চেতনার মাধ্যমেই দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটে।
উদ্দীপকের শেষ চরণে রাফির বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধতার প্রগাঢ় প্রকাশ ঘটেছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়ে এর প্রকৃতি দেখে সে বলেছে, এই বাংলাদেশ আমার সেই বাংলা। যেখানে সাম্পান ভাসে সাগরে। মাঝি গান গাইতে গাইতে নৌকা বেয়ে চলে যায় মাঝ-দরিয়ায়। নানা পাখি আর ফুলের সমারোহে এই সোনার বাংলাকে দেখে শুধু মুগ্ধতাই বাড়ে। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবির বাংলা-প্রকৃতির প্রতি সৌন্দর্যমুগ্ধতার তীব্র অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে। তিনি এই বাংলার সুবজ প্রকৃতি, বনায়ন, নদী, পাখি, ঘাস সবকিছুতেই মুগ্ধ। তাইতো কবি রূপসী বাংলার পাকা ধানকে প্রকৃতির হলুদ শাড়ি পরার সাথে তুলনা করেছেন। কবির মতে বিশালাক্ষী দেবী এই বাংলাকে যে সৌন্দর্য বর দিয়েছেন তা পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার প্রকৃতিপ্রেমে মুগ্ধ। তাই তিনি নানা উপমা ও চিত্রকল্পের সাহায্যে এদেশের সৌন্দর্যকে তুলে ধরেছেন। যার প্রতিফলন ঘটেছে উদ্দীপকের রাফির মধ্যে। তাই সংগত কারণেই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ হয়েছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বাংলার চাঁদ নিত্য স্নিগ্ধ। বাংলার আকাশ নিত্য প্রসন্ন, বাংলার বায়ুতে চিরবসন্ত ও শরতের নিত্য মাধুর্য। বাংলার জল নিত্য-প্রাচুর্যে ও শুদ্ধতায় পূর্ণ। বাংলার মাটি নিত্য-উর্বর। এই মাটিতে নিত্য সোনা ফলে। এত ধান আর কোনো দেশে ফলে না। পাট শুধু একা বাংলার। এত ফুল, এত পাখি, এত গান, এত সুর, এত কুঞ্জ, এত ছায়া, এত মায়া আর কোথাও নাই।
ক. ল²ীপেঁচা কীসের গন্ধের মতো অস্ফুট তরুণ?
খ. “হলুদ শাড়ি লেগে থাকে রূপসীর শরীরের ‘পরÑ”চরণটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার কোন দিকটি উদ্দীপকের বাংলার প্রকৃতিতে দৃশ্যমান?”Ñ বিচার কর।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার মূল সুর যেন একই বৃন্তের দু’টি ফুল।”Ñমন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ল²ীপেঁচা ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট তরুণ।
প্রশ্নোক্ত চরণটি দিয়ে কবি কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের ধান পাকার মৌসুমে মাঠের সৌন্দর্যকে বুঝিয়েছেন।
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের মাঠ-ঘাট, প্রান্তর ধানসহ নানা ধরনের ফসলে ভরপুর। মাঠে মাঠে যখন ধান পাকে তখন যেন মাঠের প্রকৃতি হলুদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। এই হলুদ প্রকৃতিকে কবি তাঁর কবিতার রূপসীর শাড়িরূপে কল্পনা করেছেন, যা জড়িয়ে থাকে বাংলাদেশ নাম্নী রূপসীর শরীরে। মূলত কবি ধান পাকার মৌসুমে প্রকৃতির নবরূপে সজ্জিত হওয়াকেই বুঝিয়েছেন প্রশ্নোক্ত চরণে।
‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঐশ্বর্যের দিকটি উদ্দীপকে প্রকাশিত বাংলার প্রকৃতিতে দৃশ্যমান।
প্রকৃতির এক অপরূপ লীলানিকেতন আমাদের এই বাংলাদেশ। এখানে প্রকৃতি অকৃপণভাবে দাঁড়িয়ে আছে সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে। এখানে রয়েছে মাঠ ভরা ফুল-ফল, ফসলের সমারোহ। বাংলা প্রকৃতিতে ঋতু বিশেষে রয়েছে স্বতন্ত্র সৌন্দর্য।
উদ্দীপকে বাংলার প্রাকৃতির সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধতা ও বাংলার ঐশ্বর্যের বন্দনা করা হয়েছে। এই বাংলার চাঁদ নিত্য স্নিদ্ধ, আকাশ নিত্য প্রসন্ন, বাংলার বায়ুতে চিরবসন্ত ও শরতের নিত্য মাধুর্য ও শ্রী বিদ্যমান। এছাড়া বাংলার মাটি নিত্য উর্বর, যেখানে সবকিছুর চাষ করা সম্ভব। বাংলার মতো এমন প্রকৃতি ও ঐশ্বর্যমণ্ডিত দেশ আর নেই। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবি বাংলা-প্রকৃতিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বিষয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রয়েছে চিরসবুজ প্রকৃতি, আর ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জেগে থাকা অরুণ। আমাদের স্বপ্নে সোনার বাংলায় রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী ও প্রকৃতির চিরতরঙ্গিত খেলা। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার বাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্যদৃশ্যমান হয়ে আছে।
“উদ্দীপক ও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার মূল সুর যেন একই ধারায় প্রবাহিত”Ñ মন্তব্যটি আমি সমর্থন করি। কারণ উভয়ক্ষেত্রেই মাতৃভূমির বন্দনা ও স্বদেশপ্রেম উচ্চারিত হয়েছে।
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কাছে তার মাতৃভূমি অন্যান্য দেশের তুলনায় উত্তম। তাই মাতৃভূমির সবকিছুই তাকে মুগ্ধ করে। কেননা, স্বদেশের সৌন্দর্য মানব-হৃদয়কে যে তৃপ্তি দেয় তা আর অন্য কোনো দেশের পক্ষেই দেয়া সম্ভব নয়। তাই মানুষ স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাতৃভূমির বন্দনা করে।
উদ্দীপকে বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যের কথা বলা হয়েছে, যা মূলত স্বদেশপ্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। কেননা, স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই উদ্দীপকের লেখক বাংলার চাঁদ নিত্য স্নিগ্ধ, আকাশ নিত্য প্রসন্ন, বায়ুতে চিরবসন্ত ও শরতের নিত্য মাধুর্য ও শ্রীর কথা বলেছেন। কৃষিপ্রধান এই বাংলার প্রকৃতি সৌন্দর্য দিয়ে মোড়ানো, যা এক স্বর্গীয় লীলাভূমির সঙ্গে তুলনীয়। এমন স্নিগ্ধ রূপ যেন শুধু বাংলার একারই। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাতেও কবি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এদেশের প্রকৃতির বন্দনা করেছেন। কবির চোখে নদীবিধৌত এই দেশ যেন এক ভূস্বর্গ। এই রূপসী বাংলার সর্বত্র যে অপার সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে তা বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। কবিতায় কবি এমনই মত পোষণ করেছেন।
‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবির মধ্যে দেশপ্রেম বিদ্যমান রয়েছে। তাই তিনি এই দেশকে পৃথিবীর সুন্দরতম স্থান বলেছেন, যার প্রতিফলন ঘটেছে প্রদত্ত উদ্দীপকে। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি সমর্থনযোগ্য।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
রূপসী বাংলাদেশ। এখানে প্রকৃতি তার স্বাভাবিক বিন্যাস ও বৈচিত্র্যে সৌন্দর্যের এক অপরূপ ছবি এঁকেছে। এমন রৌদ্রদীপ্ত উজ্জ্বল দিন আর জ্যোৎস্নালোকিত স্নিগ্ধ রাত্রি আর কোথায় পাব? এমন দিগন্তজোড়া শ্যামল শোভা আর ছায়াঘন বনরাজির তুলনা কোথায়? কোথায় মেলে এমন তরঙ্গভঙ্গে উদ্বেল পদ্মা-মেঘন-যমুনা, কপোতাক্ষ-কর্ণফুলী, সুরমা-গোমতী অথবা হাকালুকি হাওর, চলন বিল? কোথায় দৃষ্টি কাড়ে কাজলকালো বিল আর দিঘির জলে ফুটে থাকা অযুত শাপলার সৌন্দর্য, বাতাসে দোল খাওয়া সরষে ফুলের ফুলকিমালা?
ক. সবুজ ডাঙা কীসে ভরে আছে?
খ. ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবি নদীর নাম উলেখ করেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের ‘রূপসী বাংলাদেশ’ উক্তিটিতে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার আভাসিত দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে নদীমাতৃক বাংলার যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তা ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার একটি বিশেষ ভাবার্থের দর্পণ।”Ñ মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর। ১
২
৩
৪
৫ নং প্রশ্নের উত্তর
সবুজ ডাঙা মধুক‚পী ঘাসে ভরে আছে।
‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় নদীমাতৃক বাংলার চিত্র বোঝাতে কবি নদীর নাম উলেখ করেছেন।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদ-নদী, যা এ দেশের প্রকৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ আর অর্থনীতিকে রেখেছে চাঙ্গা। এদেশের প্রধান প্রধান নদীর মধ্যে রয়েছে পদ্মা, মেঘনা, কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী প্রভৃতি। মূলত কবি নদীপ্রধান বাংলার চিত্র বোঝাতেই কবিতায় নদীর নাম উলেখ করেছেন।
উদ্দীপকের ‘রূপসী বাংলাদেশ’ উক্তিটিতে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের দিকটি আভাসিত।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক স্বর্গীয় লীলাভূমি। প্রত্যেক ঋতুতে এদেশের প্রকৃতি সজ্জিত হয় নানা রূপে। এই বাংলার রৌদ্রদীপ্ত দিন আর জ্যোৎস্নাশোভিত স্নিগ্ধ রাত্রির যে সৌন্দর্য তা পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
উদ্দীপকের ‘রূপসী বাংলাদেশ’ উক্তিটি দ্বারা বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই বাংলার প্রকৃতি তার আপন রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে ভাস্বর। এখানে রয়েছে দিগন্তজোড়া শ্যামল-শোভা আর ছায়াঘন বনরাজি, রয়েছে নদীমাতৃক বাংলার চিত্র। এছাড়া খাল-বিলে সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে ফুটে থাকা শাপলা, বাতাসে দোল খাওয়া সর্ষে ফুল-সবকিছুই মানুষকে মুগ্ধ করে। অপরদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবি তাঁর জন্মভূমি বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেখানে রয়েছে চিরসবুজ প্রকৃতি, পাকা ফসলের রং রূপসী বাংলার শরীরে হলুদ শাড়ির মতো লেগে থাকে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ‘রূপসী বাংলাদেশ’ উক্তিটিতে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার অপরূপ বাংলার প্রকৃতি বন্দনার দিকটি আভাসিত।
“উদ্দীপকে নদীমাতৃক বাংলার যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তা ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার একটি বিশেষ ভাবার্থের দর্পণ।”Ñ এই মন্তব্যটি যথার্থ।
বাংলাদেশের প্রকৃতি তার সৌন্দর্য প্রকাশে অকৃপণ আর এই সৌন্দর্যকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করেছে এদেশে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য নদ-নদী, যার সুশোভিত ঢেউ আর নির্মল পানি দেশের মানুষের মনকে করেছে আন্দোলিত।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য নদী। যার সুশোভিত ঢেউ মানব- হৃদয়ে প্রশান্তি বয়ে আনে। এদেশের প্রধান প্রধান নদীর মধ্যে রয়েছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী যা উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় নদীমাতৃক বাংলার বর্ণনার পাশাপাশি এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনাও দেয়া হয়েছে। নদীবিধৌত এদেশের জল অবিরল, পাকা ধানের খেতে রূপসী বাংলার মাঠ যেন হলুদ শাড়ি পরে থাকে। এই বিশাল পৃথিবীর বুকে কবির চোখে সবচেয়ে সুন্দর দেশ এই বাংলাদেশ।
কবিতায় কবি বাংলার প্রকৃতির বন্দনা করেছেন। কবির কাছে এ দেশ চিরসবুজ ও নদীবিধৌত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ, যার সৌন্দর্য যেন দেবী নিজ হাতে বর দিয়েছেন। কিন্তু উদ্দীপকে শুধু নদীমাতৃক বাংলার কথা বলা হয়েছে। তাই নিঃসন্দেহে এ কথা বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে
সার্থক জনম মাগো, তোমায় ভালোবেসে\
জানিনে তোর ধন-রতন
আছে কিনা রানির মতন
শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে।
ক. শঙ্খমালাকে বর দিয়েছেন কে?
খ. কবির চোখে এদেশ সবচেয়ে সুন্দর কেন?
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশের সঙ্গে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার বৈসাদৃশ্য চিিহ্নত কর।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার মধ্যে আংশিক বৈসাদৃশ্য থাকলেও মূল সুর এক ও অভিন্ন।”Ñমূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
৬ নং প্রশ্নের উত্তর
শঙ্খমালাকে বর দিয়েছেন বিশালাক্ষী দেবী।
কবি এদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন তাই এদেশ তাঁর চোখে সবচেয়ে সুন্দর।
এদেশ কবির মাতৃভূমি তাই এদেশের সবকিছু কবি-হৃদয়কে মুগ্ধ করে। তাঁর মতে, বাংলাদেশ প্রকৃতিদেবীর বরদানের জন্য এতটা সৌন্দর্যমণ্ডিত, যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এছাড়া কবির মধ্যে রয়েছে অপরিমেয় দেশপ্রেম, তাই তাঁর কাছে এদেশ সবচেয়ে সুন্দর।
উদ্দীপকের কবিতাংশের সঙ্গে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।
প্রতিটি মানুষ স্বদেশকে ভালোবাসে। স্বদেশের বৃক্ষরাজির ছায়ায় তারা প্রসন্নবোধ করে। মাতৃভূমির রূপ-সৌন্দর্যই হয়ে ওঠে সর্বশ্রেষ্ঠ। এক্ষেত্রে তারা মাতৃভূমির ধন-রতেœর আকর কিনা তা বিবেচনা করে না।
উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি তাঁর জন্মভূমির ঐশ্বর্য আছে কি-না জানতে চান না। তিনি দেখতে চান না এদেশ ধন-রতেœর আকর কি-না। কবি শুধু জানেন এদেশের ছায়ায় এসে তাঁর হৃদয় তৃপ্ত হয়। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবি তাঁর মাতৃভূমি বাংলাদেশের সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঐশ্বর্যের বন্দনা করেছেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম স্থান। যেখানে রয়েছে চিরসবুজ প্রকৃতি, নদীবিধৌত জনপদ, সোনালি ফসলের খেত, যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের কবিতাংশে জন্মভূমির ঐশ্বর্যের খোঁজ না করা হলেও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় স্বদেশের সেই ঐশ্বর্যপূর্ণ প্রকৃতির বন্দনা করা হয়েছেÑ এ বিষয়টিতেই উভয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
“উদ্দীপক ও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার মধ্যে আংশিক বৈসাদৃশ্য থাকলেও মূল সুর এক ও অভিন্ন।” Ñমন্তব্যটি যথার্থ।
স্বজাতির প্রতি, জন্মভূমির প্রতি, মাতৃভাষার প্রতি গভীর ও অকৃত্রিম মমত্ববোধই হলো স্বদেশপ্রেম। প্রতিটি মানুষের রয়েছে স্বদেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সীমাহীন আনুগত্য।
উদ্দীপকে কবি এদেশে জন্মগ্রহণ করে, এদেশকে ভালোবেসে সার্থকতা অনুভব করেন। তিনি জন্মভূমি ধন-সম্পদের আকর কি-না তা জানতে চান না। শুধু জানেন এদেশের ছায়ায় তাঁর আত্মা তৃপ্তি পায়, যা কবির স্বদেশপ্রেমেরই প্রগাঢ় প্রকাশ। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাতেও কবি স্বদেশের প্রকৃতির বন্দনা করেছেন। জন্মভূমি তাঁর কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম স্থান, যেখানে রয়েছে চিরসবুজ প্রকৃতি, নদীবিধৌত অঞ্চল। যার রূপসী প্রকৃতি পাকা ধানের মৌসুমে হলুদ শাড়িতে সজ্জিত হয়। কবির মতে, এই বাংলার মতো অপরূপ সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
উদ্দীপকে স্বদেশের ধন-রতেœর খোঁজ না করেই স্বদেশপ্রেমের বাণী উচ্চারিত হয়েছে। আর কবিতায় কবি স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বন্দনা করেছেন। তাই নিরঙ্কুশভাবে বলা যায়, প্রশ্নোলিখিত মন্তব্যটি সঠিক ও যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জাফলং পাহাড় বাংলাদেশের প্রাকৃতির সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। সেখানে ক’দিন আগে রাকিব ও রাসেল বেড়াতে গিয়ে বড় বেশি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেখতে পায়। সেখানকার পাহাড়, ঝরনা, চায়ের বাগান, নানা প্রজাতির গাছ ও সবুজ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য তাদের অভিনবত্বরূপে প্রাণের সঞ্চার করে। তারা সবচেয়ে বেশি বিস্মিত হয় তখন, যখন সূর্যের স্নিগ্ধ আলো পাহাড় থেকে অনাবিল সুখে গড়িয়ে পড়া ঝরনাকে মুক্তোর রূপ দেয়।
ক. ‘অস্ফুট’ শব্দের অর্থ কী?
খ. “সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ”Ñপঙ্ক্তিটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটির কোন দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটির এক-তৃতীয়াংশ ভাব উদ্দীপকে স্থান পেয়েছে।”Ñমন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৭নং প্রশ্নের উত্তর
‘অস্ফুট’ শব্দের অর্থ যা ফোটেনি, অর্থাৎ অবিকশিত।
প্রশ্নে উলিখিত চরণটি দ্বারা কবি ভোরবেলায় মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসা সূর্যের অস্ফুট প্রভাকে বুঝিয়েছেন।
বর্ষাকাল প্রকৃতির সৌন্দর্য হৃদয়ে লালন করে বাংলায় আসে। তখন সমস্ত আকাশ মেঘের পোশাক পরে। সেই মেঘের আড়ালে প্রাণোদ্দীপ্ত সূর্যের আলো আচ্ছন্ন হয়। মেঘের কঠিন পর্দা ছাপিয়ে অস্পষ্টভাবে অরুণ রাঙা করে তোলে আকাশকেÑ প্রশ্নোক্ত চরণ দ্বারা কবি এই দৃশ্যই এঁকেছেন।
উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকটি প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রকৃতির সেবাতেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিশালত্ব সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিক অনিন্দ্য সৌন্দর্যের সাথে সুন্দর হতে থাকে মানবের চপল মন। ফলে প্রকৃতির রূপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে মনের মণিকোঠায়।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে রাকিব ও রাসেলের জাফলং ভ্রমণের দৃশ্য। সেখানে গিয়ে তারা প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ যেমনÑ পাহাড়, ঝরনা, বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ ইত্যাদি দেখেছে। আকর্ষণীয় বিষয় হলো দেখে তাদের চপল মনে আনন্দের শিহরণ বয়ে গেছে। অনুরূপভাবেই ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটিতেও প্রাকৃতিক লীলা-বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যের বর্ণনা উঠে এসেছে। এখানে স্থান পেয়েছে সবুজ ডাঙা, মধুক‚পী ঘাসসহ কাঁঠাল, অশ্বত্থ, জারুল, হিজল ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপকরণের পাশাপাশি আরও রয়েছে মেঘের পর্দার আড়াল থেকে রাঙা অরুণ উঁকি দেয়ার অপরূপ দৃশ্য। সুতরাং স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত সৌন্দর্যই ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার সৌন্দর্যের দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে।
“এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটির এক-তৃতীয়াংশ ভাব উদ্দীপকে স্থান পেয়েছে।”Ñ মন্তব্যটি যুক্তিযুক্ত।
অপরূপ মহিমায় মহিমান্বিত বাংলা মায়ের রূপ। এমন বিশাল সৌন্দর্যের লীলাভূমি পৃথিবীতে খুব কমই আছে। ঋতুর পরিবর্তনে প্রাকৃতিক রূপের তথা পরিবেশের পরিবর্তন হয়; পরিবর্তন হয় বাংলার নদী, মাঠ, ঘাটের চিত্র ও বাঙালির মন।
উদ্দীপকে রাকিব ও রাসেলের জাফলং পাহাড়ে যাওয়ার বিষয়টিতে পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা সেখানে ঝরনা, নদী, চা-বাগান, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ইত্যাদি দেখে প্রকৃতির চেতনায় নিজেদেরও আবিষ্ট করেছে। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটিতেও প্রকৃতির রূপসৌন্দর্য উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে আরও বর্ণিত হয়েছে নারীর সৌন্দর্য, দেবতাদের দান, ল²ীপেঁচা ও শঙ্খচিলের কথা। বাংলাদেশের প্রেমময়ী রূপও এ কবিতাটিতে বণিত হয়েছে অসাধারণ শিল্পসৌন্দর্যে।
উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয় থেকে মাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকটিকে উপলব্ধি করা যায়। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটিতে শুধু এই দিকটিই প্রধান হয়ে ওঠেনি; স্বদেশপ্রেম, প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রতি মুগ্ধতা, মাতৃভূমিকে নিয়ে অহংকার প্রভৃতি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টিতে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে, কবিতাটির এক-তৃতীয়াংশের ভাব স্থান পেয়েছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
রায়হান সাহেব প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। বিশেষ করে তিনি বাংলাদেশের নদ-নদীর মনোরম দৃশ্যকে নিরঙ্কুশভাবে প্রত্যক্ষ করেন। নদীবক্ষে অথবা বালুকাময় নদী তীরে ঘুরে বেড়াতেই তিনি বেশি পছন্দ করেন। এমনি করে চলতে চলতে তিনি একদিন হাজির হলেন ঐশ্বর্যশালিনী পদ্মার তীরে। এখানে তিনি দু’চোখ ভরে দেখলেন পদ্মার অকৃপণ দানে সমৃদ্ধ দিগন্তবিস্তৃত ফসলের খেত ও জনপদগুলো, যা নদীপাড়ের অনির্বচনীয় দৃশ্যকে পূর্ণতা দান করেছে। তারই সাথে শালিক, শঙ্খচিলের আনাগোনা এবং চঞ্চলতা যেন নদীর হৃদস্পন্দন অনুভব করতে সহায়তা করছে। তিনি করুণাময়ের কাছে কৃতজ্ঞতা জানালেন এই বাংলার বুকে জন্মগ্রহণ করতে পেরেছেন বলে।
ক. কার শরীরে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে?
খ. “সেখানে বরুণ কর্ণফুলী ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীরে দেয় অবিরল জল”Ñএটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত পদ্মা নদীর চিত্রটি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার কোন দিককে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকে বর্ণিত রায়হান সাহেবের দৃষ্টিতে পদ্মা নদীর দৃশ্যটি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটির আংশিক ভাবকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে মাত্র, সম্পূর্ণ ভাবকে নয়।”Ñ মন্তব্যটির মূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
৮ নং প্রশ্নের উত্তর
রূপসীর শরীরে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে।
প্রশ্নোলিখিত চরণ দ্বারা কবি কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মার অফুরন্ত জলরাশি বাংলা প্রকৃতিতে সারাবছর সজীব রাখার বিষয়টি বুঝিয়েছেন।
হিন্দু পুরাণ অনুসারে জলের দেবতা হলেন বরুণ। বাংলাদেশের কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মাসহ বিভিন্ন নদী সারাবছরই নাব্য থাকেÑ এ বিষয়টিকে কবি জলের দেবতা বরুণের আশীর্বাদ হিসেবে দেখেছেন। তার আশীর্বাদেই এ নদীগুলোর অফুরন্ত জলধারা বাংলার ভূমি ও প্রকৃতির সমস্ত রুক্ষতা, মলিনতাকে দূরীভূত করে সজীব ও সতেজ রাখে। প্রশ্নোক্ত চরণটিতে এমন ভাবই প্রকাশিত হয়েছে।
উদ্দীপকে বর্ণিত পদ্মা নদীর চিত্রটি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার কর্ণফুলী, পদ্মা ও ধলেশ্বরীসহ বিভিন্ন নদীর বৈশিষ্ট্যের দিকটিকে নির্দেশ করে।
বাস্তব জীবনের সমস্ত কঠিনতাকে পাশ কাটিয়ে কিছু সময়ের জন্য মনের মুক্তি দিতে প্রকৃতির স্নিগ্ধ সংস্পর্শের প্রয়োজন অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। মনের সৃজনশীলতা বাড়াতে, জীবনকে সজীব-সতেজ রাখতে মানুষ প্রকৃতির মায়াঞ্জন চোখে মাখে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, প্রকৃতি প্রেমিক রায়হান সাহেব প্রকৃতির মায়াবী আকর্ষণে ঘরছাড়া হয়ে বাংলার নদী-মাঠ-প্রান্তরে ঘুরে বেড়ান। যার সূত্র ধরে তিনি হাজির হন পদ্মার তীরে। এখানে এসে তাঁর সমস্ত অনুভূতিকে একসঙ্গে করে পদ্মার বিশালতা ও তার অকৃপণ দানে সমৃদ্ধ প্রকৃতি ও দুই পাড়ের জনপদ দেখে বিস্মিত হন এবং এদেশে জন্মাতে পেরে গর্ববোধ করেন। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাতেও দেখা যায় কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মা নদীর অপরূপ শোভা। জলের দেবতা বরুণের আশীর্বাদে পুষ্ট হয়ে এ নদীগুলো সারাবছরই বাংলার প্রকৃতি ও জনপদকে সজীব ও সতেজ রেখেছে। উদ্দীপকে বর্ণিত চিত্রে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় নদীগুলোর বৈশিষ্ট্যের দিককেই নির্দেশ করা হয়েছে।
“উদ্দীপকের রায়হান সাহেবের দৃষ্টিতে দেখা পদ্মা নদীর দৃশ্যটি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার একটি দিককে ধারণ করেছে মাত্র, সম্পূর্ণ দিককে নয়।”Ñ মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রকৃতির স্নিগ্ধ কোমল রূপ মানুষকে কঠিন বাস্তবতার মাঝে বেঁচে থাকার আশার সঞ্চার করে। বাংলার রূপ-বৈচিত্র্য, মানুষের সরল কোমল স্বভাব সবই প্রকৃতির আশীর্বাদের ফসল।
উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে নদী তথা প্রকৃতির অপরিমেয় দানের বিষয়টি। রায়হান সাহেবের দৃষ্টিতে বাংলার প্রকৃতি ও জনপদের সমৃদ্ধির পেছনে পদ্মা নদীর ভূমিকাকে আমরা প্রত্যক্ষ করি। এখানে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের খেত, সমৃদ্ধশালী জনপদ সবই পদ্মার কাছে ঋণী। প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য এই পদ্মাকে ঘিরেই রচিত হয়েছে। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায়ও উপস্থাপিত হয়েছে নদীর দৃশ্য। কিন্তু তার সাথে বাংলার প্রকৃতির অন্যান্য চিত্রও বর্ণিত হয়েছে।
‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় শুধু নদীর সৌন্দর্যই প্রকাশিত হয়নি, কবি এখানে বাংলাদেশকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও করুণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বাংলার বিভিন্ন প্রকারের গাছপালার বর্ণনা, ভোরের মেঘাচ্ছন্ন আকাশে সূর্যের অস্পষ্ট আভা, গাছপালা, ঘাস, গোধূলি আকাশের হলুদাভ মেঘের অনির্বচনীয় রূপ, স্বদেশকে শঙ্খমালা নামে কাল্পনিক প্রিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করা, বিশালাক্ষী দেবীর বর প্রভৃতি বিষয় উঠে এসেছে যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
ক জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
১. ‘করুণ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘করুণ’ শব্দটির অর্থ বেদনাপূর্ণ।
২. সবচেয়ে সুন্দর করুণ স্থানটি কোথায় আছে?
উত্তর : সবচেয়ে সুন্দর করুণ স্থানটি আছে এই পৃথিবীর এক স্থান তথা বাংলাদেশে।
৩. এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর করুণ স্থানের নাম কী?
উত্তার : এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর করুণ স্থানের নাম বাংলাদেশ।
৪. ‘অবিরল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : অবিরল শব্দের অর্থ নিবিড়, ঘন, নিরন্তর।
৫. কী ভরে আছে মধুক‚পী ঘাসে?
উত্তর : সবুজ ডাঙা ভরে আছে মধুক‚পী ঘাসে।
৬. সবুজ ডাঙা ভরে আছে কোন ঘাসে?
উত্তর : সবুজ ডাঙা ভরে আছে মধুক‚পী ঘাসে।
৭. ‘মধুক‚পী’ কী?
উত্তর : মধুক‚পী এক ধরনের ঘাস।
৮. কবিতায় কোন রঙের ডাঙা আছে?
উত্তর : কবিতায় সবুজ রঙের ডাঙা আছে।
৯. ‘অশ্বত্থ’ কীসের নাম?
উত্তর : ‘অশ্বত্থ’ একটি গাছের নাম।
১০. ‘অরুণ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘অরুণ’ শব্দের অর্থ সূর্য।
১১. কোন সময়ের মেঘে নাটার রঙের মতো অরুণ জেগেছে?
উত্তর : ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো অরুণ জেগেছে।
১২. কীসের রঙের মতো অরুণ জাগছে?
উত্তর : নাটার রঙের মতো অরুণ জাগছে।
১৩. বারুণী কোন সাগরের বুকে থাকে?
উত্তর : বারুণী গঙ্গা সাগরের বুকে থাকে।
১৪. গঙ্গা সাগরের বুকে কে থাকে?
উত্তর : গঙ্গা সাগরের বুকে থাকে বারুণী।
১৫. বারুণী কে?
উত্তর : বারুণী জলের দেবতা বরুণের স্ত্রী।
১৬. ভোরের কীসে নাটার রঙের মতো অরুণ জাগছে?
উত্তর : ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো অরুণ জাগছে।
১৭. জলের রাজা কে?
উত্তর : জলের রাজা বরুণ।
১৮. ‘জলাঙ্গী’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : জলাঙ্গী শব্দের অর্থ জলাশয় বা জলধারণকারী।
১৯. ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কয়টি নদীর নাম উলেখ আছে?
উত্তর : ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় তিনটি নদীর নাম উলেখ আছে।
২০. ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কী সাগরের নাম উলেখ আছে?
উত্তর : গঙ্গা সাগরের নাম উলেখ আছে।
২১. কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী ও পদ্মা জলাঙ্গীরে কে অবিরল জল দেয়?
উত্তর : কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী ও পদ্মা জলাঙ্গীরে বরুণ অবিরল জল দেয়।
২২. ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কয়টি সাগরের নাম উলেখ আছে?
উত্তর : ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় একটি সাগরের নাম উলেখ আছে।
২৩. পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল কী?
উত্তর : পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল শঙ্খচিল।
২৪. শঙ্খচিল কীসের মতো হাওয়ায় চঞ্চল?
উত্তর : শঙ্খচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল।
২৫. ‘চঞ্চল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘চঞ্চল’ শব্দের অর্থ অস্থির/চালু।
২৬. শঙ্খচিল পানের বনের মতো কীসে চঞ্চল?
উত্তর : শঙ্খচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল।
২৭. শঙ্খচিল কীসের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল?
উত্তর : শঙ্খচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল।
২৮. ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট কী?
উত্তর : ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট ল²ীপেঁচা।
২৯. ল²ীপেঁচা কীসের গন্ধের মতো অস্ফুট?
উত্তর : ল²ীপেঁচা ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট?
৩০. ‘অস্ফুট’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘অস্ফুট’ শব্দের অর্থ ফোটেনি/ অবিকশিত।
৩১. কীসের শাখা নুয়ে থাকে অন্ধকারে ঘাসের ওপর?
উত্তর : লেবুর শাখা নুয়ে থাকে অন্ধকারে ঘাসের ওপর।
৩২. লেবুর শাখা নুয়ে থাকে কীসের ওপর?
উত্তর : লেবুর শাখা নুয়ে থাকে ঘাসের ওপর।
৩৩. ‘নুয়ে থাকা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘নুয়ে থাকা’ শব্দের অর্থ ঝুলে থাকা।
৩৪. লেবুর কী নুয়ে থাকে অন্ধকারে?
উত্তর : লেবুর শাখা নুয়ে থাকে অন্ধকারে।
৩৫. সুদর্শন কী?
উত্তর : সুদর্শন এক ধরনের গোবরে পোকা।
৩৬. অন্ধকার বাতাসে কী উড়ে যায় ঘরে?
উত্তর : অন্ধকারে বাতাসে সুদর্শন উড়ে যায় ঘরে।
৩৭. অন্ধকারে সন্ধ্যার বাতাসে সুদর্শন কোথায় উড়ে যায়?
উত্তর : অন্ধকারে সন্ধ্যার বাতাসে সুদর্শন তার ঘরে উড়ে যায়।
৩৮. কার শরীরে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে?
উত্তর : রূপসীর শরীরে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে?
৩৯. রূপসীর শরীরের ওপর কোন রঙের শাড়ি লেগে থাকে?
উত্তর : রূপসীর শরীরের ওপর হলুদ রঙের শাড়ি লেগে থাকে।
৪০. রূপসীর শরীরে হলুদ কী লেগে থাকে?
উত্তর : রূপসীর শরীরে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে।
৪১. শঙ্খমালা কে?
উত্তর : শঙ্খমালা একটি মেয়ে।
৪২. ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় ‘বর’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘বর’ শব্দের অর্থ আশীর্বাদ।
৪৩. ‘বিশালাক্ষী’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘বিশালাক্ষী’ শব্দের অর্থ আয়তলোচনযুক্তা।
৪৪. কে বর দিয়েছিলেন?
উত্তর : বিশালাক্ষী বর দিয়েছিলেন।
৪৫. ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় বর্ণিত বাংলার রং কেমন?
উত্তর : ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় বর্ণিত বাংলার রং নীল।
৪৬. শঙ্খমালা নীল বাংলার কোথায় জন্মেছিল?
উত্তর : শঙ্খমালা নীল বাংলার নদী আর ঘাসে জন্মেছিল।
৪৭. পৃথিবীর নদী ঘাসে কাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না?
উত্তর : পৃথিবীর নদী ঘাসে শঙ্খমালাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
৪৮. বিশালাক্ষী কে?
উত্তর : বিশালাক্ষী স্বর্গীয় দেবী।
৪৯. ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটির কবি কে?
উত্তর : ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটির কবি জীবনানন্দ দাশ।
৫০. কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মসাল কোনটি?
উত্তর : কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মসাল ১৮৯৯।
খ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
১. পৃথিবীর স্থানটি সবচেয়ে সুন্দর করুণ কেন?
উত্তর : সবুজ শ্যামল অপরূপ সৌন্দর্যের আধার বাংলাদেশে দারিদ্র্য, হতাশা, অসহায়ত্ব ইত্যাদি রয়েছে বলে এটি সুন্দর করুণ।
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ প্রাকৃতিক পরিবেশে খুবই মনোমুগ্ধকর। আশাহীনতার মাঝে আশা জাগায়, অসৌন্দর্যের মাঝে সৌন্দর্যের মহিমা দান করে। আবার সুন্দর সবুজ রং ফ্যাকাশে করতে দারিদ্র্য, হতাশা, নিরাশা, শোক ও দুঃখ ইত্যাদি এসে বিরাজ করে। তাই পৃথিবীর এ স্থানটি সবচেয়ে সুন্দর করুণ।
২. ‘বিশালাক্ষী কীভাবে বর দিয়েছিল?
উত্তর : বিশালাক্ষী অত্যন্ত স্নেহ, মায়া, সৌন্দর্য ও শ্যামলিমা দিয়ে বর দিয়েছিল।
স্বর্গীয় সৌন্দর্যে গড়া বিশালাক্ষী বাংলাদেশকে স্নেহের, মায়ার, কোমলত্বের পরশে বর দিয়েছিলেন। ফলে এ দেশটি অসাধারণ সৌন্দর্য আর শ্যামলিমায় রঙিন পরিবেশ নিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। দেবীর আশীর্বাদপুষ্ট এ দেশটি পূর্ণিমা রাতের চাঁদের স্নিগ্ধ আলোর মতো মায়ার বন্ধন তৈরি করে সবার মাঝে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশকে স্নেহ, মায়া ও প্রেম দ্বারা বিশালাক্ষী বর দিয়েছিলেন।
৩. বিশালাক্ষী বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : বিশালাক্ষী বলতে এমন নারীকে বোঝায়, যিনি আয়তলোচনাযুক্ত পরমা সুন্দরী।
স্বর্গীয় দেবী বা আয়তলোচনা যিনি পৃথিবীর সৌন্দর্যের আধার। তার কোমল পরশ, মায়াবী স্নিগ্ধ রূপ আর টানা টানা চোখের চাহনি সবকিছুই মানুষকে বিমোহিত করে। বাংলাদেশও তার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পৃথিবীতে। মায়াময়ী, প্রেমময়ী, স্নেহময়ী নারীই বিশালাক্ষী।
৪. কীভাবে মধুক‚পী ঘাসে সবুজ ডাঙা ভরে আছে?
উত্তর : শ্যামলময়ী বাংলাদেশের মধুক‚পী ঘাসে অত্যন্ত স্নিগ্ধের সাথে সবসময় সবুজ ডাঙা ভরে থাকে।
শ্যামলী বাংলাদেশের রূপ অনন্যসাধারণ। সবুজ সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ এ দেশকে দিয়েছে অভিনব প্রাণ, অজানা সৌন্দর্যের শিহরণ। সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পরিবেশকে আরও চমৎকার রূপ দান করে মধুক‚পী ঘাসে সবুজ ডাঙা পরিপূর্ণ হওয়ার মধ্য দিয়ে। মূলত এভাবেই মধুক‚পী ঘাসে সবুজ ডাঙা ভরে থাকে।
৫. কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল ইত্যাদি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল ইত্যাদি বৃক্ষকে উলেখ করে কবি বৃক্ষশোভিত বাংলাদেশকে বুঝিয়েছেন।
রূপময়ী বাংলাদেশে রয়েছে অসংখ্য গাছ, যেমনÑ কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল ইত্যাদির সমাহার। এসব বৃক্ষ একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশকে অনেকটা শঙ্কামুক্ত করছে। কবি এখানেই বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তায় বৃক্ষশোভিত বাংলাদেশের বর্ণনা দিয়েছেন।
৬. নাটার রঙের মতো অরুণ জাগে কেন?
উত্তর : মেঘের আড়াল থেকে সূর্যের দীপ্তি প্রকাশের জন্য নাটার রঙের মতো অরুণ জাগে।
ছয় ঋতুর এই বাংলাদেশ বিভিন্ন ঋতুতে বিচিত্র রূপ ধারণ করে। বর্ষাকালে আকাশে মেঘের পর্দা ভেসে বেড়ায়। ভোরের আকাশে সূর্য উঠলে অনেক সময় মেঘ স্নিগ্ধ আলোকে বাধা দিতে থাকে। তখন সে সূর্যের আলো আরও সুন্দররূপে আবির্ভূত হয়, যাকে কবি নাটার রঙের সাথে তুলনা করেছেন।
৭. গঙ্গাসাগরের বুকে বারুণী থাকার কারণ কী?
উত্তর : বরুণের স্ত্রী বারুণী জলদেবী বলে গঙ্গাসাগরের বুকে অবস্থান করেন।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও মহিমা দান করে নদীর নান্দনিক নয়নাভিরাম দৃশ্য। গঙ্গাসাগরের বুকে আশীর্বাদরূপিণী হয়ে অবস্থান করেন বারুণী। তিনি জলদানে জলাঙ্গীগুলোকে প্রাণবন্ত বা উদ্দীপ্তময় করে রাখেন। বারুণী জলদাত্রী হয়ে গঙ্গাসাগরের বুকে অবস্থান করেন।
৮. কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মা, জলাঙ্গীরে বরুণের অবিরল জল দেয়ার কারণ কী?
উত্তর : জলের দেবতা বরুণ করুণাময় হয়ে কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মা, জলাঙ্গীরে জল দিয়েছেন।
নদীবহুল দেশ বাংলাদেশ। এদেশে কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মা, জলাঙ্গী প্রভৃতি নদী রয়েছে। নদীর সৌন্দর্য পরিস্ফুটিত হয় মূলত জলরাশির পূর্ণতা দ্বারা। নদীকে প্রাণবন্ত ও উজ্জীবিত রাখতে জলদেবতা বরুণের আশীর্বাদ অনস্বীকার্য। নদীসমূহকে সৌন্দর্যচেতনাতে উদ্দীপ্ত রাখতে বরুণ জল দান করে থাকেন।
৯. শঙ্খচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল কীভাবে?
উত্তর : বাংলাদেশের আকাশে অসংখ্য শঙ্খচিলের আপন মনে গান গেয়ে উড়ে বেড়ানোর দিকটি কবি তুলে ধরেছেন।
প্রকৃতির চোখ-ধাঁধানো সৌন্দর্যে বাংলার নীল আকাশ উদ্ভাসিত হয় সে সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিতে। শঙ্খচিল এখানে উড়ে বেড়ায়। তবে সবচেয়ে বেশি শঙ্খচিলকে নদীর ওপরের আকাশে উড়ে বেড়াতে দেখা যায় হাওয়ায় চঞ্চল হয়ে ঠিক পানের বনের মতোই। কবি এভাবেই বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন।
১০. ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট, তরুণ ল²ীপেঁচা বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : সৌন্দর্যে ঘেরা বাংলাদেশের অন্যতম ফসল ধানের অপ্রকাশিত গন্ধকে ল²ীপেঁচার সাথে তুলনা করাকে বোঝানো হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যকে আরও প্রাণবন্ত করে থাকে সোনারূপী ফসল। এ ফসল থেকে সতেজ, কোমল, প্রাণচঞ্চল এবং অবিকশিত গন্ধ বের হয়। এ গন্ধকে কবির মনে হয় যেন ল²ীপেঁচারই গন্ধ। ল²ীপেঁচার অনিন্দ্য সৌন্দর্যকে উদ্ভাসিত করতেই কবি এই প্রসঙ্গ এনেছেন বলে মনে হয়।
১১. লেবুর শাখা ঘাসের ওপর কেন নুয়ে থাকে?
উত্তর : লেবুর শাখার ঘাসের ওপর নুয়ে থাকার কারণ নিসর্গের মায়াময় শোভাকে আরও রূপ দান করা।
প্রকৃতির অনেক সৌন্দর্যই বাংলাদেশে প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গাছ ও লতাপাতার মাধ্যমে। সন্ধ্যার অন্ধকারে যখন লেবুর শাখা হেলে পড়ে সবুজ ঘাসে, তখন প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়। ঐ বিষয়টিকে উপস্থাপন করতেই কবি লেবুর শাখাকে ঘাসের ওপর নুয়ে পড়ার দিকটি বর্ণনা করেছেন।
১২. সুদর্শন বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : সুদর্শন বলতে এক ধরনের গুবরে পোকাকে বোঝানো হয়েছে। সুদর্শন পোকাও বাংলার রূপটিকে ফুটিয়ে তুলতে সহায়তা করছে। সুদর্শনের বাস গোবরের ঢিবিতে। এটি প্রকৃতির মায়া ও বেঁচে থাকার জন্য সারাটি দিন বাইরে থাকে। আবার এটি সন্ধ্যার অন্ধকারের সিক্ত বাতাসে তার প্রিয় ঘরটিতেই ফিরে যায়, ঠিক যেন বাংলা মায়ের চঞ্চল চপল ছোট ছেলেমেয়েদের মতো।
১৩. অন্ধকারের সন্ধ্যার বাতাসে সুদর্শন কেন উড়ে যায়?
উত্তর : অন্ধকারের সন্ধ্যার বাতাসে সুদর্শন নীড়াশ্রয়ে উড়ে যায়। নীড় প্রতিটি প্রাণির জন্য নিরাপদ স্থান। সাধারণত সারাদিনের শ্রান্ত-ক্লান্ত শরীরকে শান্তি দিতে স্নিগ্ধ আবহ তৈরি করে থাকে এটি। সুদর্শন একটি গুবরে পোকা যেটি সারাদিন প্রকৃতির আলো-বাতাসে ঘুরে বেড়ায়। অন্ধকারের আভাসই তাকে মৃদু বাতাসে প্রকৃতির স্বাদ নিতে নীড়ে ফিরে আসতে উৎসাহিত করে।
১৪. ‘জলাঙ্গী’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : জলাঙ্গী বলতে জলধারণ করার পাত্র বা অবয়ব অথবা যেখানে জলরাশির অবস্থান তাকেই বোঝায়।
নদীর বিচিত্র সৌন্দর্য বাংলাদেশকে যেমন প্রাণবন্ত করে থাকে, তেমনি এ দেশের মানুষের মনে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। জলাঙ্গী হলো মূলত জলের আধার বাংলাদেশের অসংখ্য নদীই তার প্রমাণ বহন করে থাকে। ছোট-বড় অনেক নদীতেই পানির পরিপূর্ণতা বা টইটম্বুর ভাব লক্ষ করা যায়। মূলত জলাঙ্গী দ্বারা জলরাশির অবস্থানকেই বোঝায়।
১৫. গঙ্গা সাগরের পরিচয় তুলে ধর।
উত্তর : ভারতের যে-নদীটি গঙ্গা নামে পরিচিত-সেটিই আমাদের এখানে পদ্মা নদী নামে পরিচিত।
গঙ্গা সাগর পৃথিবীর অন্যতম নদী, যেটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুবই মনোমুগ্ধকর। এটিই বাংলাদেশে পদ্মা নদী নামে পরিচিতি। এ সাগরের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিদ্যমান, যা মানুষকে বিভিন্নভাবে সচেতন করে থাকে এবং নতুনত্ব সৃষ্টিতে সৃজনশীলতা দেখায়। এই গঙ্গা সাগরই আমাদের অহংকার, যা বাংলায় পদ্মা নামে পরিচিত।