এইচএসসি বাংলা আমার পথ সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

আমার পথ

কাজী নজরুল ইসলাম

লেখক পরিচিতি

নাম ও উপাধি প্রকৃত নাম : কাজী নজরুল ইসলাম।
ডাক নাম : দুখু মিয়া
উপাধি : বিদ্রোহী কবি
জন্ম পরিচয় জন্ম তারিখ : ২৫ মে, ১৮৯৯; ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬।
জন্মস্থান : পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রাম।
পিতৃ ও মাতৃ পরিচয় পিতার নাম : কাজী ফকির আহমেদ।
মাতার নাম : জাহেদা খাতুন।
প্রাথমিক শিক্ষা : গ্রামের মক্তব থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন।

শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক শিক্ষা : প্রথমে রাণীগঞ্জের সিয়ারসোল স্কুল,পরে মারখুন উচ্চ ইংরেজি স্কুল, অতঃপর ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এক বছর পর তিনি পুনরায় নিজের গ্রামে ফিরে যান এবং ১৯১৫ সালে পুনরায় রাণীগঞ্জ সিয়ারসোল রাজ স্কুলে ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এ স্কুলে নজরুল ১৯১৫ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত একটানা অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন।

কর্মজীবন দারিদ্র্যের কারণে প্রথম জীবনে তিনি কবিয়াল, লেটো গানের দলে ও রুটির দোকানে কাজ করেন। ১৯১৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে পত্রিকা সম্পাদনার চাকরি নেন। তাছাড়া গ্রামোফোন রেকর্ডের জন্যে গানলেখা, সুরারোপ এবং সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত করেন। জীবনের শেষ তিন দশক নজরুল নির্বাক ও কর্মহীন ছিলেন।

সাহিত্য সাধনা

 

নজরুলের সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়। তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনাবলি হচ্ছেÑ
কাব্যগ্রন্থ : অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, ভাঙার গান, সাম্যবাদী, সর্বহারা, ফণি-মনসা, জিঞ্জির, সন্ধ্যা, প্রলয় শিখা, দোলনচাঁপা, ছায়ানট, সিন্ধু-হিন্দোল, চক্রবাক, নতুন চাঁদ, ঝিঙেফুল, চন্দ্রবিন্দু ইত্যাদি।
উপন্যাস : বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা ইত্যাদি।
প্রবন্ধগ্রন্থ : রাজবন্দীর জবানবন্দী, যুগ-বাণী, ধূমকেতু, রুদ্র-মঙ্গল, দুর্দিনের যাত্রী ইত্যাদি।
গল্পগ্রন্থ : ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা, পদ্মগোখরা, জিনের বাদশা ইত্যাদি।
নাটক : ঝিলিমিলি, আলেয়া, পুতুলের বিয়ে, মধুমালা, রক্তকমল, মহুয়া, জাহাঙ্গীর, কারাগার ইত্যাদি।
জীবনীগ্রন্থ : মরুভাস্কর (হযরত মুহাম্মদ (স)-এর জীবনীগ্রন্থ)।
অনুবাদ : রুবাইয়াত-ই-হাফিজ, রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম, কাব্যে আমপারা।
গানের সংকলন : বুলবুলি, চোখের চাতক, চন্দ্রবিন্দু, নজরুল গীতি, সুরলিপি, গানের মালা, চিত্তনামা ইত্যাদি।
সম্পাদিত পত্রিকা : ধূমকেতু, লাঙ্গল, দৈনিক নবযুগ।

পুরস্কার ও সম্মাননা ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’, ভারত সরকার কর্তৃক ১৯৬০ সালে ‘পদ্মভ‚ষণ’ পদক, রবীন্দ্রভারতী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট উপাধি এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন।
বিশেষ কৃতিত্ব বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নাগরিকত্ব এবং জাতীয় কবির মর্যাদা লাভ।
জীবনাবসান মৃত্যু তারিখ ও স্থান : ২৯ আগস্ট, ১৯৭৬ ঢাকার পিজি হাসপাতাল।
সমাধি স্থান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণ।

গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আবদুল মালেক সারাটি জীবন শিক্ষকতা করেছেন, গড়েছেন আলোকিত মানুষ। অবসর গ্রহণের পর তিনি গড়ে তুলেছেন ‘তারুণ্য’ নামে সেবা-সংগঠন। বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি পথশিশুদের শিক্ষাদান, দুর্নীতি-বিরোধী অভিযান, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করেন তিনি। অনেকে তাঁর কাজের প্রশংসা করেন আবার নিন্দা ও কটূক্তি করতেও ছাড়েন না কেউ কেউ। তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন
‘মনেরে আজ কহ যে
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।’
ক. কাজী নজরুল ইসলামের মতে কোনটি আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়?
খ. কবি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকে আবদুল মালেকের মাধ্যমে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের যে বাণী উচ্চারিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশের বক্তব্য চেতনায় ধারণ করে আলোকিত পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব। প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর। ১



১ নং প্রশ্নের উত্তর

 পরনির্ভরতা আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়।

 সমাজের অনিয়মকে ভেঙে ফেলতে কবির যে অবস্থান, তার প্রেক্ষিতে তিনি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন।
 সমাজের প্রচলিত, পুরাতন নিয়মকে ভেঙে নতুনকে প্রতিষ্ঠা করা খুব সহজ নয়। এতে প্রতিনিয়ত সমাজরক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়, নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। এসব জেনেও কবি তাঁর বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। সকল অন্যায়, অবিচার আর অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। তাই তিনি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন।

 উদ্দীপকের আবদুল মালেকের মাধ্যমে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের সত্য পথের পথিক হওয়ার বাণী উচ্চারিত হয়েছে।
 নিজের অন্তরের সত্যকে যারা উপলব্ধি করতে পারে তারাই প্রকৃত মানুষ। তারা সমাজ, দেশ ও জাতির মঙ্গল প্রত্যাশী। এ প্রত্যাশা থেকেই তারা সমাজের কুসংস্কার, মিথ্যা আর ভণ্ডামির মূলোৎপাটন করতে চান। সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চান সত্য ও মনুষ্যত্বকে।
 ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বলেছেন সত্য পথের কথা। সত্য প্রকাশে তিনি নির্ভীক, অসংকোচ। সত্যের তেজেই তিনি অন্যায়কে ধ্বংস করতে চান। তিনি জাগ্রত করতে চান মনুষ্যত্ববোধকে, মানুষের মূল্যবোধকে। উদ্দীপকের আবদুল মালেকও এ সত্য পথের বাণী উচ্চারণ করেছেন, হৃদয়-সত্যের আলোতে আলোকিত হয়ে সমাজকল্যাণে এগিয়ে এসেছেন।

 উদ্দীপকের কবিতাংশের বক্তব্য চেতনায় ধারণ করে আলোকিত পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব-মন্তব্যটি সঠিক।
 সত্য তার আপন দীপ্তি ও শক্তিতে ভাস্বর। সত্যের পথই জীবনের প্রকৃত পথ। সত্যের সুন্দর ও নির্মম উভয় রূপই আছে। সত্যের নির্মমতার ভয়ে মিথ্যাকে গ্রহণ করলে সে-মিথ্যাই ধ্বংস ডেকে আনে। তাই সত্য যেমনই হোক তাকে গ্রহণ করতে হবে, হৃদয়ে ধারণ করতে হবে।
 ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক তাঁর অন্তরের সত্যকে উন্মোচিত করেছেন। তিনি জানেন এ সত্য যত নির্মমই হোক না কেন, এ সত্যই তাঁকে পথ দেখাবে। এ সত্যের আলোতেই তাঁর হৃদয় আলোকিত হয়ে উঠবে। তিনি এটা বিশ্বাস করেন যে, সত্যের দম্ভ যাদের মধ্যে রয়েছে তারাই কেবল অসাধ্য সাধন করতে পারেন। উদ্দীপকের কবিতাংশেও এই বিষয়েরই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সত্য যেমনই হোক তাকে স্বীকার করার, হৃদয়ে ধারণ করার শক্তি থাকতে হবে। যাদের হৃদয় সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত তারাই আলোকিত পৃথিবী গড়ে তুলতে পারবেন।
 যারা সত্য পথের সাধক তারা সমাজে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে চান। সমাজে সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে গোটা পৃথিবী আলোকিত হয়ে উঠবে। আর এ বিচারেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা যায়।
 অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সক্রেটিস বলেছেন, ‘শহড়ি ঃযুংবষভ’; সেজন্য আত্মপরিচয় জানা ব্যক্তি সত্যের শক্তিতে ভাস্বর। সে সত্যকে দ্বিধাহীনচিত্তে হাজারবার সালাম জানাতে পারে; কিন্তু মিথ্যাকে মিথ্যার শক্তিতে বলীয়ান শয়তানকে কখনো কুর্নিশ করে না। সত্যই তার পথপ্রদর্শক। সত্যের আলোয় সে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। সত্য থেকে এক পা বিচ্যুত হলে সে নিজ মনুষ্যত্ব হারাবে।
ক. অতিরিক্ত বিনয় মানুষকে কী করে?
খ. মেয়েলি বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক অনেক ভালো-কেন?
গ. উদ্দীপকের লেখকের ভাবনার সঙ্গে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের ভাবনার তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের চেতনাগত ঐক্য থাকলেও উদ্দীপকটি প্রবন্ধের সম্পূর্ণ ভাবার্থ নয়।”Ñউক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর। ১



২ নং প্রশ্নের উত্তর

 অতিরিক্ত বিনয় মানুষকে ছোট করে।

 নিজের সত্যকে অস্বীকার করে অতিরিক্ত বিনয় প্রদর্শন মেয়েলি বিনয়। তার থেকে আত্মবিশ্বাস ও সততার বলিষ্ঠ স্বীকৃতি প্রদর্শন করে পৌরুষকে জাহির করা, যাকে বলা যেতে পারে অহংকারের পৌরুষ, তা অনেক ভালো।
 মেয়েলি বিনয় দুর্বলতার নামান্তর; তার চেয়ে নিজেকে চিনে আপনার সত্যকে আপনার গুরু, পথপ্রদর্শক কাণ্ডারি বলে জানা অনেক ভালো। কেউ কেউ এটাকে অহংকার বলে মনে করতে পারে। আত্মবিশ্বাসের স্বীকৃতি এ অহংকারকে পৌরুষের অহংকার বলাই সংগত। মেয়েলি বিনয়ের চেয়ে এ পৌরুষের অহংকার অনেক অনেক ভালো।

 উদ্দীপকের লেখকের ভাবনার সঙ্গে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের ভাবনার গভীর সাদৃশ্য রয়েছে।
 মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে পারলে সে আপন সত্যের শক্তিতে বলীয়ান হিসেবে সমাজে উঁচু শিরে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে। তাকে কেউ মিথ্যার ঘোরে ফেলে বিভ্রান্ত করে স্বার্থ হাসিল করতে পারে না।
 উদ্দীপকে দেখা যায়, আত্মশক্তির জাগরণ ও মিথ্যার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের ফলে একজন মানুষ প্রকৃত মানবিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে পারে। তখন তার মধ্যে ফুটে ওঠে আত্মমর্যাদাবোধ। অন্যদিকে, ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে যথেষ্ট যুক্তি-তর্ক ও বলিষ্ঠতার সাথে মানুষের আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত করে সত্যের শক্তিতে পথ চলার কথা বলা হয়েছে। মানুষ যদি তার আপন শক্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করতে পারে, তাকে জগতের কোনো মিথ্যা শক্তি বা শয়তানের শক্তি পদানত করতে পারে না। এই দাবি নিয়ে সা¤প্রদায়িক ভেদাভেদের শয়তানি জারিজুরির মেকি খোলস উন্মোচন করাই ধূমকেতুর কাজ। তাই উদ্দীপকের লেখকের ভাবনার সঙ্গে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের ভাবনার গভীর সাদৃশ্য রয়েছে বলাই যুক্তিসংগত।

 “উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের চেতনাগত ঐক্য থাকলেও উদ্দীপকটি প্রবন্ধের সম্পূর্ণ ভাবার্থ নয়।”Ñ উক্তিটি যথার্থতার দাবিদার।
 মানুষের আপন পরিচয় পরিষ্কার হয়ে গেলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। তার ফলে সে নিজেকে অসীম শক্তির বাহক বলে মনে করে; তখন তাকে মিথ্যা দিয়ে অবনত করে রাখা যায় না। এ রকম আত্মমর্যাদাশীল ব্যক্তি, সাহসী মানুষ সমাজে, দেশে, জাতিতে বৃদ্ধি পেলে ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদের মিথ্যা দেয়াল রচনা করে সত্যের আলো থেকে তাদের দূরে রাখা যায় না।
 উদ্দীপকে বলা হয়েছে, আমরা যদি আমাদের তথা সমগ্র জাতির আত্মশক্তিকে আস্থায় আনতে পারি, সত্য-মিথ্যাকে জানতে পারি, তবে আপন আপন পরিচয় স্পষ্ট হয়ে যাবে। আত্মপরিচয় জানা ব্যক্তি সত্যের শক্তিতে ভাস্বর। সে মিথ্যাকে অভিবাদন জানায় না এবং মিথ্যার আধার শয়তানকে কুর্নিশও করে না। সত্যই তার পথপ্রদর্শক। সত্যের আলোতে সে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারে। আর ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে লেখক আত্মবিশ্বাসী আত্মপ্রত্যয়ী, সত্যের মশাল তাঁর হাতে। সেই আলোয় মিথ্যার কানাগলি তাঁর চোখের সামনে পরিষ্কার। নিজেকে চিনলে, নিজের সত্যকেই কর্ণধার ভাবলে নিজের শক্তির ওপর অটুট বিশ্বাস আসে।
 উদ্দীপকে আত্মবিশ্বাস ও আত্মপরিচয় জানা, সত্যকে জানা, সত্যের আলোয় আলোকিত হয়ে সত্যকে পথপ্রদর্শক করে কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। আর ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে নিজকে চেনা, আত্মশক্তির আবিষ্কার, তার লক্ষ, উদ্দেশ্য, তার পথচলা সম্পর্কে প্রবন্ধকার যুক্তিনিষ্ঠ ভাষায় বলিষ্ঠ চেতনাজাগানিয়া অনুষঙ্গ তুলে ধরেছেন। আরও বলা হয়েছে, দেশের যারা শত্র“, দেশের যা কিছু মিথ্যা, ভণ্ডামি, মেকি তা সব দূর করতে ‘ধূমকেতু’ হবে আগুনের সম্মার্জনা। অসা¤প্রদায়িক চেতনা, সত্যধর্ম-প্রাণধর্ম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে ফুটে উঠেছে। আর এসব কিছু প্রদত্ত উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ ও যৌক্তিকতার দাবিদার।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ জনতার সামনে বঙ্গবন্ধু বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রামÑ জয় বাংলা!” তার এ ভাষণে জাতির মরা গাঙে যেন ভরা জোয়ার এলো। তাতে জাত-পাতের ভেদাভেদ দূর হলো। হিন্দু-মুসলমান সবাই পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে নেমে পড়ল। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনল লাল-সবুজের রক্তরাঙা পতাকা, স্বাধীন বাংলাদেশ।
ক. ‘আগুনের ঝাণ্ডা’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘ধূমকেতু’ হবে আগুনের সম্মার্জনাকেন?
গ. উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের সাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের মূল সুর অভিন্ন”Ñ উক্তিটি কতটুকু যৌক্তিক? ‘আমার পথ প্রবন্ধের আলোকে আলোচনা কর। ১



৩ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘আগুনের ঝাণ্ডা’ শব্দটির অর্থ অগ্নি পতাকা।

 ‘ধূমকেতু’ হবে আগুনের সম্মার্জনাÑকারণ ‘ধূমকেতু’র আগুনের ঝাড়–তে মিথ্যা জাত-পাতের ভেদাভেদ, জাতীয় অন্তরায়, কুসংস্কারের জঞ্জাল জ্বলে-পুড়ে ভস্ম হয়ে যাবে।
 সম্মার্জনী বা ঝাড়– দিয়ে ঘরের আঙিনার যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা দূর করা হয়। অন্যায়, অসত্য, অসাম্য, মেকি ও ভণ্ডামিপূর্ণ পচা সমাজকে ‘ধূমকেতু’ প্রলয়ঙ্কর ধ্বংস সাধনে নতুন করে গড়বে বলে লেখক ‘ধূমকেতু’কে আগুনের সম্মার্জনী বলেছেন।

 উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে নিবিড় সাদৃশ্য রয়েছে বলা যায়।
 ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন আমিত্ব শক্তিকে চিনতে পারলে বা ব্যক্তির বিকাশে যাবতীয় অন্ধকার টুটে গিয়ে আলোর ঝরনাধারা প্রবাহিত হয়, জাতীয় জীবনেও তেমনটি ঘটে থাকে। তারপর তার কাক্সিক্ষত মুক্তি বা লক্ষ্য অর্জনে সে ছুটে চলে দুর্বার দুর্নিবার গতিতে।
 উদ্দীপকে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিস্মরণীয় ভাষণ কীভাবে কেমন করে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সোনালি মোহনায় সমবেত করেছিল তার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। আর ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম কলম সৈনিক হিসেবে পরাধীন ভারতের শক্তি সংগ্রামের ইশতেহার রচনা করেছেন। তাতে ফুটে উঠেছে ‘ধূমকেতু’ সম্পাদনা ও এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য। এদিক থেকে উভয় ব্যক্তির চেতনা একই রকম। তাই বলা যায়, উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে সাদৃশ্য বিদ্যমান।

 “উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের মূল সুর অভিন্ন।”-উক্তিটি অত্যন্ত যৌক্তিক।
 মানুষ পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে চায়। মানুষ আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা নিয়ে স্বাধীনভাবে সমাজে অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে।
 উদ্দীপকে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে ফুটে উঠেছে বাঙালি জাতির দীর্ঘ ইতিহাসে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অদম্য চেতনার কথা। “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।” এ ভাষণের মধ্যে রয়েছে জাতীয়তাবোধ, অসা¤প্রদায়িক চেতনাদীপ্ত পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার দৃঢ় চেতনা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক জাতি, হিন্দু-মুসলমান কেউ আলাদা নয়। অন্যদিকে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার মধ্য দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, মানব-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম। হিন্দু-মুসলমান মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোন খানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা এর অন্যতম উদ্দেশ্য।
 উদ্দীপকে ‘আমার পথ, প্রবন্ধে ফুটে উঠেছে সর্বপ্রকার কুসংস্কারের মুক্তি, আত্মবিশ্বাস প্রতিষ্ঠা, মিথ্যা দূরীকরণ, ধূমকেতুর ঝাড়– দিয়ে ঝেড়ে-মুছে জাতীয় জীবনের সব-রকম গ্লানি মুক্তির আশাবাদ। তাই উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের মূল সূর অভিন্নÑ উক্তিটি সঠিক ও যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আপসহীন সাংবাদিক শামসু মিয়া আল ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন, বাঙালির ওপর জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণ ও অসা¤প্রদায়িক দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে। সত্য প্রকাশের অদম্য স্পৃহা থেকেই আল-ইনসাফের সুদীর্ঘ পথ চলা।
ক. ‘ধূমকেতু’র আগুন কোন দিন নিভে যাবে?
খ. “অন্তরে যাদের এত গোলামির ভাব, তারা বাইরের গোলামি থেকে রেহাই পাবে কি করে?”-বুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপকের সাংবাদিক শামসুু মিয়ার সাথে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের কোন সাংবাদিকের মিল খুঁজে পাওয়া যায়?Ñ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “সংবাদপত্র জাতিগঠন ও স্বাধীনতা অর্জনে বিরাট ভূমিকা রাখে।”Ñ ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ১



৪ নং প্রশ্নের উত্তর

 ভুলের ওপর গোঁ ধরে যেদিন বসে থাকবে, ওই দিন ধূমকেতুর আগুন নিভে যাবে।

 পরাবলম্বন করে ভারতবাসীর বাঁচার মানসিকতা তাদের দাসত্বপ্রবণ ভিতু মনের পরিচয় বহন করে। তা দিয়ে নিজের মুক্তি যখন সম্ভবপর নয়, তখন সে ধরনের গোলাম শ্রেণির মানুষ দিয়ে বিদেশিদের গোলামির শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করা অসম্ভব।
 তাই কবির বক্তব্য, যারা মানসিকভাবে গোলামিকে মেনে নিয়েছে, তারা কীভাবে বাইরের গোলামি থেকে নিজেদের মুক্ত করবে?

 উদ্দীপকের সাংবাদিক শামসু মিয়ার সাথে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের লেখক সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলামের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
 আত্মশক্তিতে বলীয়ান মানুষ সত্যশক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে যে-কাজে হাত দেয়, তা সহজেই তার দ্বারা করা সম্ভব হয়। আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ-যার নিজের ওপর বিশ্বাস নেই, তার দ্বারা কোনো মানুষের কোনো কাজের প্রতি অটুট থাকা সহজ নয়।
 উদ্দীপকের সাংবাদিক শামসু মিয়া ‘আল-ইনসাফ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা বাঙালির আত্মমর্যাদা, স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন, জাতিগত আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ, অসা¤প্রদায়িক চেতনায় দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন নানা প্রতিক‚ল শক্তির বিরুদ্ধে। তার প্রতিষ্ঠিত আল-ইনসাফ ঐ আদর্শকে সমুন্নত রেখে সুদীর্ঘকাল পথপরিক্রমা করে চলেছে। ঠিক তেমনি মহৎ উদ্দেশ্য ও লক্ষ নিয়ে কবি, সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলাম জাতিগঠন ও ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্নে তাড়িত হয়ে ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা সম্পাদনার কাজে হাত দেন। এইসব ক্ষেত্রে উভয় সাংবাদিকের চরিত্রে মিল রয়েছে বলা যায়।

 “সংবাদপত্র জাতিগঠন ও স্বাধীনতা অর্জনে বিরাট ভূমিকা রাখে।”Ñমন্তব্যটি যথার্থ।
 সমাজের লোকদের সংবাদপত্র পাঠের মাধ্যমে সমাজসচেতনতা বৃদ্ধি পায় । আমরা প্রতিদিন সকালবেলা উঠে এককাপ গরম চায়ে মুখ লাগিয়ে একটি দৈনিক পত্রিকার ওপর চোখ বুলিয়ে নিই। দেশের ও বিশ্বের খবর সংবাদপত্রের পাতাতেই বেশি করে লেখা হয়, তা থেকেই দেশের মানুষ বেশি উপকৃত হয়।
 উদ্দীপকে সাংবাদিক শামসু মিয়ার ‘আল-ইনসাফ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ ও উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছে। বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে, স্বাধীনতা আন্দোলনে, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। সমাজ গঠনে, জাতির কল্যাণ কামনায় আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন সাংবাদিক শামসু মিয়া। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে একটি সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার সামনে রেখে ইনসাফের দীর্ঘপথ চলা। একই রকম ভাবে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের লেখক, সাংবাদিক, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন। স্বল্পসময়ের মধ্যে বাঙালির চেতনায় নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছিল সাংবাদিক, কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা। উদ্দীপক ও প্রবন্ধে সংবাদপত্র প্রকাশের অভিন্ন লক্ষ ও উদ্দেশ্য ফুটে উঠেছে।
 উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের পর্যালোচনা শেষে বলা যায়, সংবাদপত্র জাতিগঠন ও স্বাধীনতা অর্জনে বিরাট ভূমিকা রাখে। তাই মন্তব্যটি যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
নাজমুল হক একজন সমাজসেবক। তিনি সবসময় স্পষ্ট ভাষায় কথা বলেন এবং কাউকে পরোয়া করেন না। সত্য প্রতিষ্ঠায় তিনি কুণ্ঠাবোধ করেন না। তিনি মনে করেন; সত্য কথা শুনতে খারাপ লাগলেও তা জীবনের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।
ক. কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে কাকে সালাম-নমস্কার জানিয়েছেন?
খ. আপনার সত্যকে আপনার পথপ্রদর্শক বলে জানা অহংকার নয় কেন?
গ. উদ্দীপকে সত্যের যে চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে তা ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. নাজমুল হকের মনোভাবই পারে সত্য-সুন্দর পৃথিবী গড়তে।‘আমার পথ’ প্রবন্ধ অবলম্বনে উক্তিটির যৌক্তিকতা বিচার কর। ১



৫ নং প্রশ্নের উত্তর

 কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে নিজের সত্যকে সালাম-নমস্কার জানিয়েছেন।

 আপনার সত্য সব অসৎ শক্তিকে পরাজিত করে পূর্ণতার পথে এগিয়ে যায় বলে তাকে পথপ্রদর্শক বলে জানা আদৌ অহংকার নয়।
 আমাদের এদেশ কৃষিজ, খনিজ, জলজ-সম্পদে ভরপুর। ফলে বিদেশিরা এদেশের ওপর বার বার আক্রমণ করেছে। কিন্তু মানুষ যদি তার স্বদেশ, স্বজাতির কল্যাণ ও মুক্তির জন্য এগিয়ে আসে তাহলে তা দোষের কিছু নয়; বরং তা অহংকারের বিষয়।

 উদ্দীপকে সত্যের যে চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে তা ‘আমার পথ’ প্রবন্ধেও প্রতিফলিত হয়েছে।
 বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে যে সত্যের কথা বলেছেন তা হলো মানুষের ভেতরের ঐশ্বরিক শক্তি বা অসীম ক্ষমতা। একজন মানুষ যদি সাধনার দ্বারা এই সত্যকে জানতে পারে তাহলে পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাকে প্রতিহত করতে পারে না। চলার পথে যত বাধা-বিপত্তিই আসুক না কেন, কোনো শক্তিই তার এই পথ-চলায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে না। প্রাবন্ধিকের এই সত্যে প্রাবন্ধিককে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে।
 উদ্দীপকের নাজমুল হক ও প্রাবন্ধিক এই সত্যেরই পূজারি ছিলেন। তিনি সবসময় স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতেন। আর তার এই স্পষ্টবাদিতাই হলো তার ভেতরগত সত্য। এই সত্যের গুণেই তিনি একজন সমাজসেবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তাই উদ্দীপকে যে সত্য উপস্থাপিত হয়েছে তা হলো চিরকল্যাণকর, মঙ্গল ও সমাজের জন্য হিতকর। আর এ সত্যই ‘আমার পথ’ প্রবন্ধেরও মূল প্রতিপাদ্য।

 ‘নাজমুল হকের মনোভাবই পারে সত্য-সুন্দর পৃথিবী গড়তে’।-উদ্দীপকের এ উক্তিটি যৌক্তিক।
 স্পষ্টবাদিতা মানুষের অন্যতম ঐশ্বরিক ক্ষমতা। এই ক্ষমতা অর্জন করতে পারলে কোনো বাধা-বিপত্তিই তার চলার পথকে আটকাতে পারে না। যারা এই গুণে গুণান্বিত তারা সামনে এগিয়ে যান এবং এই অগ্রবর্তী পথিকের দ্বারা সমাজের কল্যাণ হয়। সমাজ থেকে দূর হয় সকল অন্যায়-অবিচার, অত্যাচার আর বৈষম্য।
 ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন বিদেশি শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য মানুষের সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি দরকার তা হলো আপন সত্যকে চেনা ও এর স্বরূপ উপলব্ধি করা। উদ্দীপকের নাজমুল হকও এই সত্যের দিশারী। তিনি একজন সমাজসেবক। তিনি মনে করেন সত্য কথা যতই অপ্রিয় হোক না কেন তা সমাজ ও সমাজের মানুষের জন্য মঙ্গলজনক। সমাজ সংস্কার করতে গিয়ে যদি মিথ্যার বেড়াজালে আবদ্ধ হয় তাহলে নাজমুল হক ঘুনে ধরা এ সমাজকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। তিনি মনে করেন সত্যই, সুন্দর আর এ মনোভাবই পারে একজন মানুষকে আলোর পথ দেখাতে।
 অতএব, সমাজের যারা অগ্রপথিক, যাদের দ্বারা সমাজ তথা রাষ্ট্র পরিচালিত হয় সে সব কর্ণধারকে বিদেশির দাসত্ব না করে নিজের দেশের কথা ভেবে নিজ ক্ষমতার বলেই দেশ পরিচালনা করতে হবে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
যারা ঘরের পাশে পাহাড়ের অজগর, বনের বাঘ নিয়ে বসবাস করে, তারা আজ নীরবে বিদেশির দাসত্ব করে। শুনে ভীষণ ক্রোধে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে ওঠে। সারা দেহমনে আসে প্রলয়ের কম্পন, সারা বক্ষ মন্থন করে আসে অশ্র“।
ক. বেশি বিনয় দেখাতে গিয়ে অনেক সময় কোনটি ঘটে?
খ. পরাবলম্বন কেন আমাদের নিষ্ক্রিয় করে তোলে?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের বৈসাদৃশ্য প্রমাণ কর।
ঘ. “সারা দেহমনে আসে প্রলয়ের কম্পন”Ñ উক্তিটি ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ১



৬ নং প্রশ্নের উত্তর

 বেশি বিনয় দেখাতে গিয়ে অনেক সময় নিজের সত্যকে অস্বীকার করে ফেলা হয়।

 পরাবলম্বনতা মানুষের সঞ্জীবনী শক্তি ও আত্মশক্তি ক্রমান্বয়ে বিনষ্ট করে ফেলে। নিজের সত্তাকে বিকিয়ে অন্যের গলগ্রহ হয়ে থাকলে মানুষ ধীরে ধীরে অলস ও কর্মবিমুখ হয়ে পড়ে। তার নিজের যে একটা অলৌকিক শক্তি আছে তা বিকাশে বাধাপ্রাপ্ত হয়। তখন মানুষ অন্যের দানে, দয়ায়, দাক্ষিণ্যে বেঁচে থাকে। পুরাতন-জরাজীর্ণ ধ্যানÑধারণা আর মিথ্যাকে সে আঁকড়ে ধরে কোনো রকমে বেঁচে থাকে। আসলে এ বাঁচায় কোনো কৃতিত্ব নেই।

 উদ্দীপকের সাথে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের যথেষ্ট অমিল লক্ষ করা যায়।
 বাঙালি ভুলে গেছে তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কথা, ভুলে গেছে তাঁদের আসল পরিচয়। তারা যে জ্বলে-পুড়ে মরবার জন্য প্রস্তুত কিন্তু মাথা নোয়াবার নয়, তা যেন আজ ভাবাও অবান্তর। দিনের পর দিন তাঁর সন্তানেরা মুখ বুজে সহ্য করছে বিদেশিদের পরাধীনতার শৃঙ্খল।
 উদ্দীপকে বর্ণিত বাঙালি একদিন ঘরের পাশে পাহাড়ের অজগর, বনের বাঘ নিয়ে বাস করেছে তারাই আজ নীরব, বিদেশির দাসত্ব করছে। আর এর জন্য বাঙালির আলস্য ও কর্মবিমুখতা দায়ী। এই দাসত্বের জন্য বাঙালি আজ সকলের চেয়ে ঘৃণ্য। শুনে ভীষণ ক্রোধে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে, সারা দেহমনে প্রলয়ের কম্পন আসে, সারা বুক বেয়ে অশ্র“ নামে। কিন্তু ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বলেছেন, মানুষের ভেতরে যে ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে তা যদি সে উপলব্ধি করে তাহলে ঐ ক্ষমতার বলে সে তার সামনের সমস্ত বাধা-বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারবে। প্রাবন্ধিক বলেছেন, যার অন্তরে ভয়, সে নিজেকে যেমন ভয় পায় তেমনি বাইরের সবকিছুতেই তার ভয়। যার মনে মিথ্যা সে নিজেকেও ভয় পায়। এখানেই প্রবন্ধের অমিল।

 বাঙালিরা নীরবে বিদেশিদের দাসত্ব করে বলেই সারা দেহমনে প্রলয়ের কম্পন আসে।
 বাঙালি যে সাহসী জাতি তা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। বাঙালি শুধু লাঠি দিয়েই তার স্বাধীনতাকে অক্ষুণœ রাখতে চেষ্টা করেছে। বাংলার তরুণরাই স্বাধীনতার জন্য অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, যা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে। কিন্তু সেই বাঙালিরা আজ পরদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে।
 উদ্দীপকে লক্ষণীয়, বাঙালি দিনের পর দিন পৃথিবীর লোককে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতো, সেই আজ সকলের দ্বারে ভিখারি। বাঙালিরা ঘরের পাশে পাহাড়ের অজগর আর বনের বাঘ নিয়ে বাস করলেও নীরবে বিদেশিদের দাসত্ব করছে। আর এ জন্যই ভীষণ ক্রোধে প্রাবন্ধিকের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে ওঠে, দেহমনে আসে প্রলয়ের কম্পন। প্রাবন্ধিক বলেছেন, বাঙালি তার নিজের সত্যকে ভালোভাবে চেনে না বলেই তার অন্তরে ঢুকে আছে ভয়, এই ভয়ের জন্য সে নিজের অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ। এই নিষ্ক্রিয়তা তাকে সত্যের পথ থেকে মিথ্যা নামক কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধকার পথে নিয়ে গেছে। আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে অর্থাৎ নিজের ওপর নিজের ভরসা আসে। তাই প্রাবন্ধিক বলেছেন, পরনির্ভরতা পরিহার করে নিজের শক্তি ও সামর্থ্যরে ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেই কেবল স্বাবলম্বী হওয়া যাবে।
 আলোচনার দ্বারপ্রান্তে এসে বলা যায়, মানুষ বাইরে যতই গোঁয়ার্তুমি বা স্বাধীন হওয়ার কথা মুখে বলুক না কেন, সে যতক্ষণ পর্যন্ত তার ভেতরের গলদ দূর করতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে পরাধীনই থাকবে। তাই অন্তরের দাসত্ব দূর করে নিজের ওপর দণ্ডায়মান হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম ফুটিয়ে তুলেছেন।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আজকাল শিক্ষিত বেকারদের মাঝে পরনির্ভরশীলতা বাড়ছে। তারা এর ওপর অটল বিধায় এ সংখ্যাটি কমানো সম্ভবপর নয়। কিন্তু নিজের সম্পর্কে জানলে তারা আর এ সমস্যার সম্মুখীন হতো না। পরের দিকে চেয়ে থাকার জন্য তাদের মন আজ মানসিক দাসত্বে পরিণত হচ্ছে। এ দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে না আসলে জাতীয় জীবনে মুক্তি সম্ভব নয়।
ক. বাংলাদেশের জাতীয় কবি কে?
খ. নিজেকে চিনলে আর কাউকে চিনতে বাকি থাকে না। প্রাবন্ধিকের এ মতামতটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকটি ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের শিক্ষিত বেকারদের মানসিক দাসত্ব পরিবর্তনে প্রয়োজন আত্মনির্ভরতা”Ñ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ কর। ১



৭ নং প্রশ্নের উত্তর

 বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

 মানুষ যদি তার নিজ সত্তাকে চিনতে পারে অর্থাৎ নিজ দেশের সংস্কৃতি ও ধর্মবোধ জাগ্রত করে তাহলে বাইরের কোনো অপশক্তিই তাদের গ্রাস করতে পারে না।
 এদেশের মানুষের মতো জ্ঞানশক্তি ও প্রেমশক্তি পৃথিবীর আর অন্য কোনো জাতির মধ্যে নেই। এদেশের মানুষ শত শত বছর ধরে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ধর্মবোধ জাগ্রত রেখে বসবাস করছে। নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য ও সোনার বাংলাকে স্বকীয় করার জন্য আত্মোৎসর্গ করতে তারা পিছপা হয়নি। তাই প্রাবন্ধিক বলেছেন, নিজেদের সংস্কৃতি, সভ্যতা, ঐশ্বর্য, ধর্মবোধ সম্পর্কে সচেতন থাকলে অন্যরা এদেশের সম্পদ লুট করতে পারত না।

 আমি মনে করি উদ্দীপকটি ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কারণ উদ্দীপকে যে পরনির্ভরশীলতা ও মানসিক দাসত্বের কথা বলা হয়েছে তা ‘আমার পথ’ প্রবন্ধেও ফুটে উঠেছে।
 পরনির্ভরশীলতা মানুষকে অমানুষ করে তোলে, মানুষকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হতে বাধা সৃষ্টি করে, তাঁকে নি®প্রাণ পুতুলের মতো করে পরের আজ্ঞাবাহী দাসে পরিণত করে। বহুকাল ধরে আমাদের সমাজের মানুষের অন্তরের উচ্চবৃত্তিগুলো বিনাশ হওয়ায় তাদের মস্তিষ্ক ও হৃদয় অন্যের দাস হয়ে পড়েছে।
 উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি, আজকাল আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকাররা পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু তাদের এ পরনির্ভরশীলতার প্রধান কারণ নিজের সম্পর্কে অচেতন হওয়া। প্রত্যেক মানুষের মাঝেই সুপ্ত প্রতিভা আছে কিন্তু মানুষ আত্মশক্তি দ্বারা তা বিকশিত করে না। যার ফলে পরের দিকে চেয়ে থেকে মনটাও দাসে পরিণত হয়েছে। ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক এ পরনির্ভশীলতা ও দাসত্বপনার কথা তুলে ধরেছেন। কিন্তু অলস ও কর্মবিমুখ মানুষ তা না করে ধীরে ধীরে পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যে-বাঙালি একদিন সারা পৃথিবীর লোককে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াত আজ তারা পথের ভিখারি। আর এ হীন অবস্থার জন্য লেখক তাদের আলস্যকে দায়ী করেছেন। সুতরাং পরনির্ভরতা ও দাসত্বপনার দিক থেকে উদ্দীপকের সাথে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি অবশ্যই সঙ্গতিপূর্ণ।

 “উদ্দীপকের শিক্ষিত বেকারদের মানসিক দাসত্ব পরিবর্তনে প্রয়োজন আত্মনির্ভরতা।”Ñপ্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।
 উদ্দীপকে শিক্ষিত যুবক বেকারদের পরনির্ভরশীলতার একমাত্র কারণ নিজ সম্পর্কে সচেতনতা। নিজের ভেতরের প্রতিভাকে জ্ঞানের দ্বারা উদ্ভাসিত করা। আলস্য ও কর্মবিমুখতা পদে পদে তাদের দাসত্বেকে পরিণত করেছে আর অন্যের দিকে চেয়ে থাকার জন্য তারা আত্মনির্ভরশীল হতে পারছে না।
 প্রাবন্ধিকের মতে, নিজেকে চিনলে নিজের সত্যকেই কর্ণধার মনে করে নিজের শক্তির ওপর অটুট বিশ্বাস জন্মে। এ বিশ্বাস থেকেই তার মধ্যে স্বাবলম্বিতা আসে। এ স্বাবলম্বিতাই পারে মানুষকে পরনির্ভরশীলতা থেকে দূরে রাখতে। আত্মনির্ভরতা যেদিন বাঙালির মাঝে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিনই বাঙালি পরনির্ভরশীলতার গ্লানি থেকে মুক্তি পাবে।
 অতএব, আত্মাকে চিনে, নিজের সত্যকে জেনে, নিজের শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার যে দম্ভ, এই দম্ভই শির উঁচু করে। তাই উদ্দীপকের শিক্ষিত বেকারদের মানসিক দাসত্ব পরিবর্তনে প্রয়োজন আত্মনির্ভরতাÑএ উক্তিটি যৌক্তিক।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মুসলমানদের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বলীয়ান করতে ১৯২৬ সালে বাংলায় ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ গড়ে ওঠে। এখান থেকে ‘শিখা’ নামের একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যেখানে স্লোগান ছিল ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বলবৎ থাকা একান্ত কাম্য।
ক. কী থাকলে মানুষের ধর্মের বৈষম্যের ভাব থাকে না?
খ. প্রাবন্ধিকের মতে, এদেশের নতুন জাত গড়ে উঠবে না কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের অমিলগুলো দেখাও।
ঘ. “জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব”Ñ উক্তিটির আলোকে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি বিশ্লেষণ কর। ১



৮ নং প্রশ্নের উত্তর

 কাজী নজরুল ইসলামের মতে, কেউ নিজের ধর্ম চিনলে সে অন্যের ধর্ম ঘৃণা করতে পারে না।

 প্রাবন্ধিকের মতে, এদেশের ধ্বংস না হলে নতুন জাত গড়ে উঠবে না।
 প্রাবন্ধিক মনে করেন, আমাদের মাতৃভূমি পৃথিবীর স্বর্গ। অতি প্রাচুর্য আমাদের বিলাসী, ভোগী করে শেষে অলস-বিমুখ জাতিতে পরিণত করেছে। আমাদের ঐশ্বর্য শত বিদেশি লুটে নিয়ে যায়, আমরা তার প্রতিবাদ তো করি না, উল্টো তাদের দাসত্ব করি¬Ñ এ লুণ্ঠনে তাদের সাহায্য করি।

 উদ্দীপকের সাথে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের অনেক বিষয়েই অমিল লক্ষ করা যায়।
 জ্ঞান সকল প্রকার অজ্ঞতা অন্ধকার দূর করে মানুষকে আলোর পথে নিয়ে যায়। নতুনের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা তাদের প্রেরণা জোগায়। কিন্তু যারা ভীরু, কাপুরুষ তারা জ্ঞানের আলো উদ্ভাবনে ভয় পায়, শঙ্কিত হয়। অন্ধকারের সাথেই তাদের সখ্য গড়ে ওঠে।
 উদ্দীপকে সমগ্র জনগোষ্ঠীর কথা ফুটে ওঠেনি, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ আরো জাতি-উপজাতি আছে, যা উপেক্ষিত হয়েছে। শুধু সমাজের একটি অংশ মুসলমানদেরকে সাহিত্য-সংস্কৃতিতে উদারমনা ও সচেতনভাবে অংশগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক অখণ্ড বাঙালির কথা তুলে ধরেছেন। উদ্দীপকে যেমন সাহিত্যে-সংস্কৃতিতে উদারমনা ও সচেতনভাবে অংশগ্রহণের কথা বলা হয়েছে, সেখানে প্রবন্ধে নজরুল বাঙালিদের সত্যের পথে চলার কথা বলেছেন, আর এ সত্যের পথ হলো আলো ও জ্ঞানের পথ। উদ্দীপকে যে ‘শিখা’ পত্রিকার কথা বলা হয়েছে তা ছিল একটি সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা। পক্ষান্তরে, ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে যে-পত্রিকার উলে­খ আছে তা হলো ‘ধূমকেতু’। ‘ধূমকেতু’ ছিল বিদ্রোহাত্মক একটি পত্রিকা। ‘শিখা’ পত্রিকার স্লোগান ছিল ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।” পক্ষান্তরে ‘ধূমকেতু’ ছিল আগুনের সমার্জ্জনা। যে-আগুনের শিখায় দেশের যারা শত্র“, যা কিছু মিথ্যা, ভণ্ডামি-মেকি তা দূর হবে। সুতরাং একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উদ্দীপকের সাথে প্রবন্ধের ক্রিয়াকলাপ ও অখণ্ডতার দিক থেকে অমিল লক্ষ করা যায়।

 “জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।”Ñ প্রশ্নোক্ত উক্তিটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
 মানুষ যখন আলো ও অন্ধকারকে সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে না তখন মরীচিকার পেছনে ছোটে। জ্ঞানের আলো থেকে আসে কল্যাণ, মহত্ত¡, সমৃদ্ধি ও জয়ের প্রেরণা। অন্যদিকে অজ্ঞতা থেকে আসে অশান্তি, হতাশা, ব্যর্থতা ও অমানিশার হাতছানি। উদ্দীপকে যে-জ্ঞানের কথা বলা হয়েছে তাকে জীবন-দর্শনের আলো হিসেবে অভিহিত করা হয়। তাই আলো যেখানে স্বল্প-সেখানে জ্ঞানের পরিধিও ক্ষীণ। আর মুক্তিও সেখানে অসম্ভব।
 ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক যে-সত্যের কথা বলেছেন তা হলো জ্ঞান বা আলো। এই জ্ঞান মানুষের মাঝে উদ্ভাসিত হলে তার চলার পথে কোনো বাধা-বিপত্তি আসলে সে অনায়াসে তা পরাহত করতে পারে। এ সত্যের পথ অতি সহজ নয়, বড়ই কণ্টকাকীর্ণ। এই পথেই মানুষ তার সকল বিভ্রান্তি ও অন্ধকার দূর করে পায় মুক্তির স্বাদ। কিন্তু মুক্তির জন্য হয় সাহসী; পথে যদি কোনো লোকলজ্জার ভয়, রাষ্ট্রের ভয় তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে তাহলে এই পথ চলায় বাঁধার সৃষ্টি হবে। প্রাবন্ধিক স্পষ্টই বলেছেন, সত্য হলো পূর্ণতার প্রতীক। এই পথের পথিকরা ভীরুদের কথা বিশ্বাস করে না। তারা আশায় বুক বেঁধে অন্ধকার ফেলে আলোর পথে এগোয়।
 অতএব, উদ্দীপকে যে-প্রাণের কথা বলা হয়েছে সেই জ্ঞান যদি মানুষের অন্তরে সম্পূর্ণ প্রস্ফুটিত না হয়, তাহলে সেখানে ভালো কিছু আশা করা যায় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত উক্তিতে যে সত্য ফুটে উঠেছে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের আলোকে তা অবশ্যই যৌক্তিক।

জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
১. কাজী নজরুল ইসলাম কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
২. কাজী নজরুল ইসলাম বর্ধমান জেলার কোন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
৩. কাজী নজরুল ইসলামের পিতার নাম কী?
উত্তর : পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ।
৪. কাজী নজরুল ইসলামের মাতার নাম কী?
উত্তর : মাতার নাম জাহেদা খাতুন।
৫. বাংলাদেশের বিদ্রোহী কবি বলা হয় কাকে?
উত্তর : বাংলাদেশের বিদ্রোহী কবি বলা হয় কাজী নজরুল ইসলামকে।
৬. বাংলাদেশের জাতীয় কবি বলা হয় কাকে?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলামকে।
৭. কাজী নজরুল ইসলাম কত খ্রিষ্টাব্দে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।
৮. কাজী নজরুল ইসলাম কত বছর বয়সে দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম ৪৩ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
৯. কাজী নজরুল ইসলাম কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
১০. কাজী নজরুল ইসলামের কবর কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে অবস্থিত।
১১. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক তাঁর পথ চলার আগে কাকে সালাম জানাচ্ছেন?
উত্তর : ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক তাঁর পথ চলার আগে ‘তাঁর সত্যকে’ সালাম জানাচ্ছেন।
১২. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের কোন ভয় প্রাবন্ধিককে বিপথে নিয়ে যাবে না?
উত্তর : রাজভয়-লোকভয় প্রাবন্ধিককে বিপথে নিয়ে যাবে না।
১৩. অন্তরে কোনো ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের ভয় না থাকলে বাইরের কোনো ভয়ই কিছু করতে পারে না?
উত্তর : অন্তরে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের মিথ্যার ভয় না থাকলে বাইরের কোনো ভয়ই কিছু করতে পারে না।
১৪. কে বাইরের ভয় পায়?
উত্তর : যার ভেতরে ভয় সে বাইরের ভয় পায়।
১৫. কাজী নজরুল ইসলাম এর মতে, কী চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনি একটা জোর আসে?
উত্তর : নিজেকে চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনি একটা জোর আসে।
১৬. অনেক সময় কী দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যকে অস্বীকার করে ফেলা হয়?
উত্তর : অনেক সময় বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যকে অস্বীকার করে ফেলা হয়।
১৭. অতিরিক্ত বিনয় মানুষকে কী করে?
উত্তর : অতিরিক্ত বিনয় মানুষকে ছোট করে।
১৮. গান্ধীজি তাঁর দেশবাসীকে কী শেখাচ্ছিলেন?
উত্তর : গান্ধীজি তার দেশবাসীকে স্বাবলম্বন শেখাচ্ছিলেন।
১৯. কাজী নজরুল ইসলামের মতে, অন্তরে কী থাকলে বাইরের গোলামি ভাব থেকে রেহাই পাওয়া যায় না?
উত্তর : অন্তরে গোলামির ভাব থাকলে বাইরের গোলামিভাব থেকে রেহাই পাওয়া যায় না।
২০. প্রাবন্ধিকের মতে, কী চিনলে আত্মনির্ভরতা আসে?
উত্তর : আত্মাকে চিনলে আত্মনির্ভরতা আসে।
২১. নজরুলের মতে, নিজে কী থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেও দেশ উদ্ধার হবে না?
উত্তর : নিজে থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেও দেশ উদ্ধার হবে না।
২২. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে কাকে নিজের ভগবান মনে করা ভণ্ডামি নয়?
উত্তর : নিজ আত্মাকে নিজের ভগবান মনে করা ভণ্ডামি নয়।
২৩. কী থাকলে মানুষের ধর্মের বৈষম্যের ভাব থাকে না?
উত্তর : আদম সত্যের মিল থাকলে মানুষের ধর্মের বৈষম্যের ভাব থাকে না।
২৪. নেতৃত্ব প্রদানের সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তিকে কী বলা হয়?
উত্তর : নেতৃত্ব প্রদানের সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তিকে কর্ণধার বলা হয়।
২৫. ‘কুর্নিশ’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর : ‘কুর্নিশ’ শব্দটির অর্থ অভিবাদন বা সম্মান প্রদর্শন।
২৬. কী করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়?
উত্তর : সমাজের নিয়ম পাল্টাতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
২৭. সমাজের নিয়ম পাল্টাতে গেলে কাদের আক্রমণের শিকার হতে হয়?
উত্তর : সমাজের নিয়ম পাল্টাতে গেলে সমাজ-রক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়।
২৮. ‘মেকি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : মেকি শব্দের অর্থ কপট।
২৯. ‘আগুনের ঝাণ্ডা’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর : ‘আগুনের ঝাণ্ডা’ শব্দটির অর্থ অগ্নিপতাকা।
৩০. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?
উত্তর : ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি ‘রুদ্র-মঙ্গল’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
৩১. কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমি’ ভাবনা বিন্দুতে কীসের উচ্ছ¡াস জাগায়।
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমি’ ভাবনা বিন্দুতে সিন্ধুর উচ্ছ¡াস জাগায়?
৩২. কাজী নজরুল ইসলাম মানুষকে আরেক মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে কী হয়ে উঠতে চেয়েছেন?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম মানুষকে আরেক মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে ‘আমরা’ হয়ে উঠতে চেয়েছেন।
৩৩. কোনটি কাজী নজরুল ইসলামের প্রাণ প্রাচুর্যের উৎস বিন্দু?
উত্তর : সত্যের উপলব্ধি কাজী নজরুল ইসলামের প্রাণ প্রাচুর্যের উৎস বিন্দু।

 অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
১. ‘আমার পথ দেখাবে আমার সত্য।’Ñ কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিককে তাঁর কর্ণধার পথ দেখাবে।
কর্ণধার বলতে প্রাবন্ধিক মানুষের ভেতরকার ঐশ্বরিক শক্তি বা অলৌকিক ক্ষমতাকে বুঝিয়েছেন। মানুষের মগজ ও মন পরম স্রষ্টার পরম শক্তি জ্ঞানশক্তি ও প্রেমশক্তিতে ভরপুর। প্রাবন্ধিকের বিশ্বাস সত্য সব অসৎ শক্তিকে পরাজিত করে মানুষকে পূর্ণতার পথে নিয়ে যায়। তাই প্রাবন্ধিকের সত্য বা ঐশীশক্তি বা সৎ শক্তি সকল প্রকার আলস্য কর্ম-বিমুখতা, পঙ্গুত্ব, নৈরাজ্য, অবিশ্বাস ও জরাজীর্ণতাকে পিছনে ফেলে তাকে ন্যায় ও সত্যের পথ দেখাবে।
২. কাজী নজরুল ইসলাম-এর মতে, দেশের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ কী?
উত্তর : আত্মনির্ভরতার অভাবই কাজী নজরুল ইসলামের মতে দেশের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ।
কাজী নজরুল ইসলাম মনে করেন, আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আমাদের আসবে, সেইদিনই আমরা স্বাধীন হব। কিন্তু আমরা নিজের প্রতি বিশ্বাস না রেখে গান্ধীজির মতো মহাপুরুষের ওপর নির্ভর করেছিলাম। বলে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন বিলম্বিত হয়েছিল। অর্থাৎ স্পষ্টত বোঝা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম আত্মনির্ভরতার অভাবকেই পরাধীনতার কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।
৩. ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।’ কেন?
উত্তর : বিদ্রোহী ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে অসা¤প্রদায়িক চেতনার কথা তুলে ধরেছেন।
আমরা সবাই একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। সবাই মিলে একই আকাশের তলে বসবাস করি, সবার রক্তই লাল, সৃষ্টিকর্তার আলো, বাতাস, খাদ্য উপভোগ করি। আবার আমরা সবাই একই সত্তার গুণগান করি। তাই ধর্মের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই। মানুষ হিসেবে আমরা একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি এজন্য প্রাবন্ধিকের কাছে ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম’।
৪. ‘আমি আছি’Ñ এই কথা না বলে সবাই বলতে লাগলাম ‘গান্ধীজি আছেন”Ñ উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : “আমি আছি’ এই কথা না বলে সবাই বলতে লাগলাম গান্ধীজি আছেন”-উক্তিটিতে আমরা যে গান্ধীজির আদর্শ ঠিকমতো বুঝতে পারি নি তা বোঝানো হয়েছে।
মহাত্মা গান্ধী জাতির অভিভাবকরূপে এদেশের মানুষদের স্বাবলম্বনের শিক্ষা দিচ্ছিলেন। প্রত্যেকটি মানুষকে শেখাচ্ছিলেন নিজের ওপর বিশ্বাস অটুট রাখতে। কিন্তু সেদিন আমরা তাঁর আদর্শ, তাঁর কথা ঠিক বুঝিনি। ফলে আমরা নিজের অস্তিত্বের ঘোষণা না করে বলেছিলাম, ‘গান্ধীজি আছেন’। আর নিজের পরিবর্তে গান্ধীজির ওপর নির্ভরশীলতার বিষয়টিই ব্যক্ত হয়েছে আলোচ্য উক্তিতে।
৫. অন্তরে মিথ্যার ভয় থাকলে প্রাবন্ধিক কেন বাইরের ভয়কে ভয় মনে করেন?
উত্তর : অন্তরে যদি ভণ্ডামি, ছলনা, দুর্বলতা থাকে তাহলে বাইরের যে-কোনো শক্তিই তাকে পরাজিত করে বলে প্রাবন্ধিক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
যে-বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর লোককে দিনের পর দিন নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে পারে তারাই আজ সকলের দ্বারে ভিখারি। এদেশের ঐশ্বর্য বিদেশিরা লুটে নিয়ে যায় তার প্রতিবাদ না করে বাংলাদেশের মানুষেরা তাদের গোপনে সাহায্য করে বলে প্রাবন্ধিক আলোচ্য উক্তির অবতারণা করেছেন।
৬. কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু-মুসলমানদের মিলনের অন্তরায়কে দূর করতে চেয়েছিলেন কেন?
উত্তর : মানব-ধর্মকে সবচেয়ে বড় ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করায় এবং হিন্দু-মুসলমানের মিলন প্রত্যাশায় কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায়কে দূর করতে চেয়েছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলাম আজীবন মানব-ধর্মে বিশ্বাসী। তাঁর কাছে মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোনখানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা এবং দেশব্যাপী মানব-ধর্ম তথা সব ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা। আর এই কারণেই তিনি হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় দূর করতে চেয়েছিলেন।
৭. ‘ভুলের মধ্য দিয়েই সত্যকে পাওয়া যায়।’বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : পৃথিবীতে যেমন অন্ধকার ভেদ করে আলো উদ্ভাসিত হয় তেমনি ভুলের পাহাড়ের মধ্য দিয়েই প্রকৃত সত্যের সন্ধান পাওয়া যায়।
মানুষ পৃথিবীতে ভ‚মিষ্ঠ হওয়ার পর এই পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধের দ্বারা আকৃষ্ট হয়। ইন্দ্রিয়ের দ্বারা সে প্রতিনিয়ত ভুল করে। সে ভুল যদি নিজের জ্ঞান দ্বারা সে নিজে উপলব্ধি করে তাহলে নিজেকে সংশোধন করা যায়। সংশোধিত হওয়ার পর সে তার প্রকৃত সত্য খুঁজে পায়। তাই এ কথা বলা যায় যে, মানুষ ভুল করে, সে ভুল আবার কখনো ফুল হয়ে ফুটে ওঠে।
৮. ‘যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে, যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।’Ñব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সুন্দরের পূজারি কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে মানব-ধর্মের কথা বলেছেন।
ধর্মে কোনো ভেদাভেদ বা বৈষম্য নেই। পৃথিবীতে প্রত্যেক ধর্মই সত্য। শুধু ধর্মের ক্রিয়াকলাপ বা আচার-অনুষ্ঠান এক এক ধর্মের এক এক রকম। যে তার নিজের ধর্মের বিধি-বিধান সঠিকভাবে দিব্যজ্ঞানে চিনতে পারে তার অন্য ধর্মের প্রতি কোনো বিদ্বেষ বা অবহেলা থাকতে পারে না। তাই নিজ ধর্মের স্বরূপ জানলে নিজ ধর্মের প্রতি বিশ্বাস স্থাপিত হয় এবং সেই-ই প্রকৃত সত্য জানতে পারে বলে তার অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণা থাকে না।

Share to help others:

Leave a Reply