আঠারো বছর বয়স
সুকান্ত ভট্টাচার্য
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সুজন ও সাধন সহপাঠী। দুজনেই লেখাপড়ায় বেশ ভালো। স্কুল জীবন পার হতে না হতেই সুজন মিশে যায় কিছু অসৎ বন্ধুর সাথে। লেখাপড়ার পাঠ চুকে যায় ওখানেই। তার নাম শুনলে মানুষ আঁতকে উঠে। অপর দিকে সাধন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। ভাষা আন্দোলন শুরু হলে সে তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, মিছিলে সে নেতৃত্ব দেয়। সংগঠিত করে সহপাঠীদের, আর প্রতিজ্ঞা করে জীবন দিয়ে হলেও মাতৃভাষার মান রক্ষা করবেই।
ক. কোন বয়সে দুঃসাহসেরা উঁকি দেয়?
খ. ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলো’ একথা দিয়ে সুকান্ত ভট্টাচার্য কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের সুজনের মাঝে “আঠারো বছর বয়স” কবিতার ফুটে ওঠা দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘নানা সমস্যাপীড়িত আমাদের দেশে তারুণ্য ‘যৌবনশক্তি’ যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়’ এ বক্তব্য উদ্দীপক ও “আঠারো বছর বয়স” কবিতায় যেভাবে ফুটে উঠেছে তা বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
১ নং প্রশ্নের উত্তর
আঠারো বছর বয়সে দুঃসাহসেরা উঁকি দেয়।
‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে’ এ কথা দিয়ে আঠারো বছর বয়সের দুর্বার গতিশীলতাকেই কবি বোঝাতে চেয়েছেন।
দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে আঠার বছর বয়সের যৌবনপ্রাপ্ত তরুণরাই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। কেননা, তাদের গতি দুর্বার, তারা লক্ষ্যে অবিচল, প্রতিজ্ঞায় অটল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটুও দ্বিধা করে না বিপদ মোকাবেলায়। দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য বাষ্পের গতি নিয়ে স্টিমারের মতো এ বয়সীরা এগিয়ে যায়। জীবন উৎসর্গ করে হলেও তারা লক্ষে পৌঁছাতে সচেষ্ট হয়। দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা, জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সেই বৈশিষ্ট্য।
উদ্দীপকের সুজনের মাঝে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার ‘এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে/ এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো’র দিকটি ফুটে উঠেছে।
বয়ঃসন্ধিকাল মানুষের জীবনের এক চরম পরীক্ষার অধ্যায়। এ শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মনোজগতেও তার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। এ প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক বা নেতিবাচক দুটোই হতে পারে। ভালো-মন্দ নানা ধরনের মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে নানা তত্ত¡, নানা মতবাদ, নানা পরামর্শে এ সময় বিভ্রান্তি ঘটতে পারে যার ফল ভয়াবহ।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় যৌবনে পদার্পণের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কথা বলেছেন কবি। সমাজ জীবনের নানা বিকার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের অভিঘাতে ভয়ংকর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছেন। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা জটিলতায় এ সময় সচেতন ও সচেষ্টভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে পদস্খলন হতে পারে। জীবনে নেমে আসতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। উদ্দীপকেও আমরা যৌবনে পদার্পণের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সুফল ও কুফল দেখতে পাই। সুজন ও সাধন দুজনেই লেখাপড়ায় বেশ ভালো। কিন্তু স্কুলজীবন পার না হতেই সুজন মিশে যায় কিছু অসৎ বন্ধুর সাথে। লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে সে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে। তার নাম শুনলে মানুষ আঁতকে ওঠে। অন্যদিকে সাধন হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোর মেধাবী ছাত্র। এভাবে আমরা দেখি, ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার নেতিবাচক অর্থাৎ ক্ষতিকর দিকটি উদ্দীপকের সুজনের মাঝে ফুটে উঠেছে।
‘নানা সমস্যাপীড়িত আমাদের দেশে তারুণ্য ‘যৌবনশক্তি’ যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়’ এ ইতিবাচক আশাবাদ দেশ ও জাতির জন্য অবশ্যই কল্যাণকর।
দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে তারুণ্যদীপ্ত মানুষই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিপদ মোকাবেলায়। পরনির্ভরতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নেয়। নতুন জীবনের, নিত্য নতুন করণীয় সম্পাদনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের জন্য দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের স্বপ্ন সফল করার দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যায়।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় দেশ ও জাতির প্রগতি ও অগ্রগতিকে নিশ্চিত করার জন্য তারুণ্যশক্তির প্রত্যাশা করা হয়েছে। আমাদের দেশ নানা সমস্যাপীড়িত। মৌলিক সমস্যাগুলো এখনও প্রবলভাবে রয়ে গেছে। এছাড়া বন্যা, নদীভাঙন, ঝড়, জলোচ্ছ¡াসের কাছে এ দেশের মানুষ এখনও বিপন্ন। অথচ, আমাদের রয়েছে বিপুল তারুণ্যশক্তি। দুর্যোগ ও দুর্বিপাক মোকাবেলার জন্য তাদের রয়েছে অদম্য প্রাণশক্তি। তারা তাদের শক্তি, উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি ও কল্যাণব্রত দিয়ে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। আমাদের সমস্যাপীড়িত দেশে তারা হয়ে উঠতে পারে জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি।
উদ্দীপকের সাধনও ইতিবাচক তারুণ্যশক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলন শুরু হলে সে তাতে সক্রিয়ভাবে যোগ দেয়। মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সহপাঠীদের সংগঠিত করে, নেতৃত্ব দেয় এবং প্রতিজ্ঞা করে জীবন দিয়ে হলেও মাতৃভাষার মান রক্ষা করবে। সাধন নিজের দেশ ও মানুষের সমস্যার গুরুত্ব দিয়ে এবং মিছিলের নেতৃত্ব গ্রহণ করে জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হওয়ার আকাক্সক্ষা প্রমাণ করেছে। সুতরাং উদ্বৃতিতে যে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে, আঠারো বছর বয়সী তরুণেরা তা সফল করবে।
অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
তমালের বয়স আঠারো। নিজেকে আজকাল একটু তার বড় বড় মনে হচ্ছে। আগে কেউ কিছু বললে চুপ করে শুনত; আজকাল যেন কথা বলতে শিখেছে, আত্মসম্মানবোধ জেগেছে। এই তো সেদিন ছোট চাচার সামনে যা করল, রীতিমতো সারা বাড়ি তোলপাড় হয়ে গেছে। তমাল একান্নবর্তী পরিবারের ছেলে। ছোটচাচা প্রতিদিন সকালের নাস্তা সেরে খবরের কাগজ নিয়ে বসেন আজও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তমাল চাচার কাছে আন্তর্জাতিক পাতাটি চাইতে গেলে চাচা জোরে এক ধমক বসালেন, “আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর নিতে চায়, ভাগ এখান থেকে” বলে ছোটচাচা সিগারেটে আগুন ধরালেন। তমাল আর থাকতে পারল না, ‘‘চাচা, আপনিতো প্রথম পাতা পড়ছেন, তা হলে ভিতরের একটি পাতা দিতে আপত্তি করছেন কেন? আর এখানে ছোট বাচ্চারা খেলছে, আপনি সবার সামনে সিগারেট টানছেন কেন? জানেন, আপনার চেয়ে এতে ওদের ক্ষতি বেশি হবে?”
চাচা তো রেগে আগুন। যাচ্ছেতাই বলে ভর্ৎসনা করল তমালকে। কিন্তু আশ্চর্য! তমালের চোখ দিয়ে এক ফোটা জলও বের হলো না, বরং মনে হলো প্রতিবাদটাই শ্রেয়।
ক. কোন সময় বা বয়স বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে?
খ. “আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ” -কেন?
গ. এত ভর্ৎসনার পরও তমাল কাঁদলো না কেন? ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার আলোকে আলোচনা কর।
ঘ. “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”- উক্তিটির মধ্যে আঠারো বছর বয়সের অশ্র“হীন প্রতিবাদশক্তির প্রকাশ ঘটেছে। – সত্যতা নিরূপণ কর। ১
২
৩
৪
২ নং প্রশ্নের উত্তর
‘আঠারো বছর বয়স’ বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
আঠারো বছর বয়স জীবনের জন্য এক যুগসন্ধিক্ষণ। এ সময় আসে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি ও নানা ধরনের ঝুঁকি। তাই কবি এ বয়সকে দুঃসহ বলেছেন।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় মানবজীবনের আঠারো বছর বয়সটিকে দুঃসহ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এই বয়সে মানুষ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে। অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে এই বয়সেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয় তরুণকে। আত্মনির্ভরশীলতার তাড়না তাকে এ সময় অস্থির করে তোলে। স্পর্ধিত সাহসে এই বয়সেই স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ঝুঁকি নেয় সে । এদিক থেকে তাকে এক কঠিন সময়ের দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়। জীবনকে আর আগের মতো ধরাবাধা ছকে বেঁধে রাখা যায় না। বরং উন্মাতাল আবেগে সবকিছু ছাড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তাই বলা হয়েছে ‘আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ’।
তমালের ছোটচাচা তাকে অনেক ভর্ৎসনা করল, কিন্তু তারপরও সে কাঁদল না, কেননা তার মনে হয়েছে সে যেটা করেছে সেটা সঠিক।
এখানে চাচা শুধু ভুল বুঝে তাকে ভর্ৎসনা করেছে, গালমন্দ করেছে। এখানে অন্যায়টা চাচার, তার নয়। সুতরাং এ বিষয়ে তার কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। বরং এই কষ্টটুকু সহ্য করার সাহস ও প্রত্যয় নিয়েই সে প্রতিবাদ করেছিল।
আঠারো বছর বয়সের ধর্মই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম করা। এ বয়সে অন্যায় দেখলে অবশ্যই প্রতিবাদ করবে, তাতে যতোই অবমাননা জুটুক কপালে। তা ছাড়া তার মধ্যে যে আত্মসম্মানবোধ জেগেছে তাতে ছোট চাচার রাগ ও কটু কথায় সে কাঁদতে পারে না। আঠারো বছর বয়স কবিতায় কবিও আঠারোর তরুণদের এই বৈশিষ্ট্যের কথা ব্যক্ত করেছেন। কারো কাছে মাথা নত না করে নিজের দুরন্ত প্রকাশ আঠারোর বৈশিষ্ট্য। আর এ প্রকাশের পথে সকল কষ্টই হাসিমুখে সহ্য করে আঠারোর তরুণ।
“আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”- উক্তিটির মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন যে, এ বয়সে মানুষ দুর্মর যৌবনের আলোকচ্ছটায় আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। স্বাধীনভাবে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায়।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা” কথাটি এজন্য বলা হয়েছে যে শৈশব-কৈশোরের পরনির্ভরতার দিনগুলোতে যে কান্না ছিল, এই বয়সের স্বভাব বৈশিষ্ট্য তা মুছে ফেলে সচেতনভাবে। এ বয়সে নিজের মর্যাদা ও শক্তি সম্বন্ধে সচেতনতা একজন তরুণকে জীবনের সকল কষ্ট ও প্রতিবন্ধকতাকে অগ্রাহ্য করতে শেখায়।
যৌবনের চির উন্মাদনায় এই বয়স কাঁদতে জানে না। শঙ্কাহীন উদ্দাম গতিতে নবসৃষ্টির আনন্দে সকল বাধা তুচ্ছ করে এগিয়ে চলে এ বয়সের তরুণ। জীবনের নানা কর্মে সংগ্রামে তার মন্ত্র হয়- উড় ড়ৎ ফরব. এমন অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হবার পর তার কাঁদার অবকাশ নেই। তাই কবি বলেছেনÑ“আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”।
‘আঠারো বছর বয়স’ সকল বাধাবিপত্তি অগ্রাহ্য করে ক্রমাগত এগিয়ে যায় সাফল্যের দিকে। কোনো ব্যর্থতাই এ বয়সকে দমিয়ে রাখতে পারে না। এ বয়স মানুষকে দাঁড় করিয়ে দেয় তারুণ্যখচিত যৌবনের মুখোমুখি, যা কোমল করুণ কান্নার নয়, চির বিদ্রোহের। সুতরাং, বলা যায়, “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”- উক্তিটির মধ্যে আঠারো বছর বয়সের অশ্র“হীন প্রতিবাদশক্তির প্রকাশ ঘটেছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
প্রতিদিনের মতো আজও কলেজে যাচ্ছিল রায়ান। রাস্তা পার হতে হবে, সিগনাল লাগাই ছিল। একটি ছোট বাচ্চা রাস্তা পার হবার জন্য দৌড় দিল, কাঁধে তার স্কুল ব্যাগ। এমন সময় সবুজ সিগনাল জ্বলে উঠল। রায়ান এ পাড়ে বসে দেখছিল। রায়ান একটি গাড়ি ওভারটেক করে দৌঁড়ে ছেলেটিকে কোলে তুলে নিল। পিছন থেকে একটি চলন্ত গাড়ি দ্রুত ব্রেক কষলেও রায়ানকে এসে আঘাত করে। বাচ্চাটা রক্ষা পেল বটে কিন্তু সে গাড়ির আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর সে নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় আবিষ্কার করল। চারদিকে সাংবাদিকেরা ঘিরে বসেছে, কেউ ফটো তুলছে আর সেই ছোট্ট ছেলেটি তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। সাংবাদিকদের দেখে বিরক্ত হলেও ছোট্ট শিশুটিকে দেখে তার ঠোঁটে মুখে হাসি ফুটে উঠল।
ক. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার রচয়িতার মৃত্যুসাল কত?
খ. ‘রক্তদানের পুণ্য’ কথাটির অর্থ লিখ।
গ. “প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য”- উক্তির আলোকে রায়ানের আত্মত্যাগের বিষয়টি মূল্যায়ন কর।
ঘ. ‘আঠারো বছর বয়সে তরুণরা কীসের শপথে আত্মাকে সঁপে দেয়’Ñ কবিতার ভাব অবলম্বনে আলোচনা কর। ১
২
৩
৪
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার রচয়িতা সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯৪৭ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রয়াণ লাভ করেন।
‘রক্তদানের পুণ্য’ কথাটির অর্থ হলো মানুষ ও সমাজের কল্যাণে জীবনদান। রক্তদান একটি মহাপুণ্যের কাজ। আঠারো বছর বয়স রক্ত দিয়ে পুণ্য আনতে জানে।
অন্যের কল্যাণে যে নিজের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করতে পারে, সেই প্রকৃত মানুষ। তরুণ বয়সে এটা সম্ভব হয়। এ বয়সে তরুণরা মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করে। জীবনের সার্থকতা খুঁজে নেয় অন্যের উপকার সাধনের মাঝে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রায়ান নামের এক তরুণ নিজের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে একটি শিশুর জীবন বাঁচিয়েছে। তার এই আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা তার মাঝে অপরের কল্যাণে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেবার উদার আকাক্সক্ষার প্রকাশ ঘটেছে।
এখানে রায়ান নিজের কর্তব্যবোধ থেকেই সে ছেলেটিকে বাঁচানোর জন্য গিয়েছে। কেউ তাকে উদ্বুদ্ধ করে নি। সেও নিজের জীবনের কথা চিন্তা করেনি। আর তার এই মহৎ কাজের পেছনে প্রেরণা যুগিয়েছে তার বয়স। এই যে নিজের জীবন দিয়ে অন্যকে নতুন জীবন পাইয়ে দেবার প্রবণতা, এটা কেবল আঠারো বছর বয়সেই দেখানো সম্ভব।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি এ বিষয়টিকেই প্রকাশ করেছেন “প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য”- উক্তির মাধ্যমে। আঠারো বছর বয়স তারুণ্যের সুদীপ্ত সময়। এ সময় তরুণ নিজের জীবন নিয়ে চিন্তা করে না। অন্যের কল্যাণে নিজের জীবন আত্মাহুতি দেয়।
আঠারো বছর বয়সে তরুণরা মানবতার কল্যাণ শপথে আত্মাকে সঁপে দেয়।
আঠারো বছর বয়স নিজেকে পরের তরে বিলিয়ে দেয়ার সুবর্ণ সময়। এ বয়সে মানুষের মনে তারুণ্যের আগুন জ্বলজ্বল করে। এসময় প্রাণের মূল্য অতি তুচ্ছ মনে হয়। কর্তব্য এবং দায়িত্ববোধটাই সামনে বড় হয়ে দাঁড়ায়।
আঠারো বছর বয়স অজয়কে জয় করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এ বয়সে যেমন প্রাণ দিতে দ্বিধান্বিত হয় না, তেমনি কল্যাণ চিন্তা করে অনাচার রোধে প্রাণ নিতেও পিছপা হয় না। এ বয়স পরের তরে নিজেকে উৎসর্গ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
প্রকৃতপক্ষে আঠারো বছর বয়স বলতে কবি এমন একটি অবস্থাকে নির্দেশ করেছেন যেটা শুধু বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এমন একটি মূল্যবোধ জাগ্রত হওয়া যেখানে কর্তব্যবোধ প্রাণের মায়াকে অতিক্রম করে যেতে পারে। নিজের স্বার্থচিন্তা পিছু ডাকলেও তা তুচ্ছ করা যায়। তাই এ বয়স পরকে আপন করা, নিজেকে পরের কল্যাণে সঁপে দেয়ার শপথ গ্রহণে উদ্দীপ্ত হয়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অনিক এসএসসিতে গোল্ডেন ফাইভ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। শহরে সেরা একটা কলেজে সে ভর্তি হয়। স্কুলে সে সেরা ছাত্র ছিল, কলেজেও সে অবশ্যই সেরা হবে।
এক রকম অহংকারবোধ থেকে সে পড়াশুনায় কিছুটা অমনোযোগী হলো। মিশুক প্রবৃত্তির কারণে অল্প দিনেই তার বেশকিছু বন্ধু জুটে গেল কলেজে। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় সে খুব একটা ভালো করতে পারল না। ভাবল তাতে কি, ফাইনালে সে-ই প্রথম হবে। বাসার সবাই দেখে ছেলে সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে অনলাইনে পড়াশুনা করছে। কিন্তু মূলত অনিক সারাদিন ফেসবুকে বসে বন্ধুদের সাথে গল্প করে। কলেজের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সে ইন্টারনেটের কুফলগুলোই আয়ত্ত করতে থাকে। প্রথম বর্ষ পরীক্ষার ফলাফল সে এতটাই খারাপ করল যে, বাসায় জানাতে সাহস পেল না। এভাবে দিনাতিপাত করার পর অনিক এইচএসসি পরীক্ষা দিল এবং যখন ফল প্রকাশিত হলো, তখন সকলে অনিকের আসল রূপ চিনল। সে কোনো উচ্চ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারল না।
ক. কোন বয়স ভীরু আর কাপুরুষ নয়?
খ. আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর কেন?
গ. অনিক পরীক্ষায় খারাপ ফল করল কেন? ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা অবলম্বনে বর্ণনা কর।
ঘ. “দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার”- উক্তিতে আঠারো বছর বয়সের কী নেতিবাচক দিকের প্রকাশ ঘটেছে? আলোচনা কর। ১
২
৩
৪
৪ নং প্রশ্নের উত্তর
আঠারো বছর বয়স ভীরু আর কাপুরুষ নয়।
আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর, কেননা এ বয়সে সঠিক নির্দেশনা না পেলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
আঠারোর মূলশক্তি হচ্ছে তার গতি, স্পর্ধা এবং ঝুঁকি নেবার মানসিকতা। কিন্তু এ ঝুঁকি যদি অবিবেচনাপ্রসূত হয়, তাহলে তা জীবনের জন্য কল্যাণকর ও সৃষ্টিশীল না হয়ে বরং অকল্যাণকর ও ধ্বংসাত্মক হয়। এ যেন তলোয়ারের ধার ধরে হাঁটার মতো বিষয়। এ কারণেই আঠারো বছর বয়সকে ভয়ংকর বলা হয়েছে।
অনিক পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল করতে ব্যর্থ হলো, কারণ সে নিয়মিত পড়াশুনা করেনি।
উদ্দীপকে উলিখিত অনিক বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর গল্পগুজব করেই সে দিনাতিপাত করেছে। তার অভিভাবকগণও তাকে সঠিক নির্দেশনা দেয়া থেকে বিরত ছিল। অনিক বুঝে উঠতে পারেনি কোন কাজ তার জন্য শ্রেয়। তাই সে কালের স্রোতে গা ভাসিয়েছে এবং পরিণতিতে ফল খারাপ করেছে।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি এ বয়সের যে নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেছেন তার মধ্যে অনিকের পরিণতির ইঙ্গিত রয়েছে। এ কবিতায় আঠারো বছর বয়সকে বলা হয়েছে ভয়ংকর। সুতরাং, যদি এ বয়সে একজন তরুণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়, তার তারুণ্য শক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারে, তাহলে তার পরিণতি হতে পারে অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক। অনিকের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। আঠারোর গঠনমূলক শক্তি নয়, বরং আঠারোর ভয়ংকর দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে তার জীবনে।
আঠারো বছর বয়স মানুষের যৌবনের প্রারম্ভের কাল। এ সময় জীবনতরীর হাল শক্ত করে ধরতে হয় এবং সুচিন্তিত উপায়ে ভবনদীতে তরী বাইতে হয়।
আঠারো বছর বয়স এমন একটি সময় যে সময় তরুণরা সঠিক নির্দেশনা পেলে সঠিক পথে চলতে পারে। আবার ভুল নির্দেশনা পেলে বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এ বয়সের উষ্ণ রক্তের তেজে ন্যায়-অন্যায় চিন্তা না করে ঝুঁকি গ্রহণকে শ্রেয় মনে হয়। ফলে যেকোনো সময় দুর্যোগ নেমে আসতে পারে জীবনে।
আঠারো বছর বয়স জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় যেভাবে বীজ বপন করা হবে, ভবিষ্যতে ঠিক তেমন ফল পাওয়া যাবে। অর্থাৎ এ সময় কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সঠিক পথে জীবন পরিচালিত করতে না পারলে জীবন মাঝিবিহীন তরীতে পরিণত হবে।
‘আঠারো বছর বয়স’ জীবনের দুর্যোগময় মুহূর্ত। সে দুর্যোগে যেহেতু সুচিন্তিত বিবেচনাবোধের চেয়ে আবেগ আর শক্তিই প্রাধান্য পায়, সেহেতু জীবনের কঠিন বাস্তবতায় একজন তরুণের পক্ষে সঠিক দিকে জীবনতরী পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এটাই আঠারো বছর বয়সের অন্যতম নেতিবাচক দিক। কবি এ বিষয়টিই ফুটিয়ে তুলেছেন, “এ বয়সে দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার”- পঙ্ক্তিটির মাধ্যমে। অর্থাৎ, এ বয়সে সঠিক পথে জীবন পরিচালিত করা খুবই কঠিন।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষক হিসেব যোগদান করেছে। একসময় সে এই বিভাগের শ্রেষ্ঠ ছাত্র ছিল, আজ জনপ্রিয় শিক্ষক। ছাত্র অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে যে খারাপ দিকগুলো তাকে ব্যথিত করত, আজ শিক্ষক হবার পর সে খারাপ জিনিসগুলো দূর করার জন্য মরিয়া।
মামুন নতুন নতুন কাজে হাত দেয়, আর আস্তে আস্তে বুঝতে পারে এখানে সফল হওয়া কতটা কঠিন ব্যাপার। সবকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হাতে। ব্যর্থতার গ্লানি তাকে পেয়ে বসে। মামুন মনে মনে ভাবে, শুভ কাজের চিন্তা করা যতটা কঠিন, সে চিন্তাকে বাস্তবে রূপদান তার তুলনায় সহস্রগুণ বেশি কঠিন। তারপরও থেমে থাকে না মামুন। তার সাধ্য অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যায়। নতুন কর্মোদ্দীপনায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ক. কবি বাংলাদেশের কল্যাণ কামনায় কোন বয়সের আবির্ভাব প্রত্যাশা করেছেন?
খ. ‘আঠারো বছর বয়স’ বলতে কী শুধু বয়সকে বোঝানো হয়েছে?
গ. একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে জাতির প্রত্যাশা কী? আঠারো বছর বয়সের কোন চেতনা তাকে তাঁর উদ্দেশ্য সাধনে সহায়তা করতে পারে বলে মনে কর তুমি? কোন ভাবনাটি তাঁর থাকা আবশ্যক বলে তুমি মনে কর?
ঘ. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা অবলম্বনে তারুণ্যের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো সংক্ষেপে তুলে ধর। কোনটির ওপর কবি গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি? ১
২
৩
৪
৫ নং প্রশ্নের উত্তর
বাংলাদেশের কল্যাণ কামনায় কবি বাংলার বুকে আঠারো বছর বয়সের আবির্ভাব প্রত্যাশা করেছেন।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় আঠারো বছর বলতে কেবল বয়সকেই বুঝানো হয়নি। বরং এই বয়সের চেতনা পুরো বয়সে প্রতিফলিত করে সফলতা লাভের প্রয়াসকে বোঝায়।
না, আঠারো বছর বয়স বলতে এ কবিতায় শুধু বয়সকেই বুঝানো হয়নি। বরং একটি চেতনাকে বুঝানো হয়েছে। আঠারোর চেতনা আটাশিতেও মানুষ ধারণ করতে পারে যদি সে মুক্ত চেতনার মানুষ হয়। তাই কবিতায় ‘আঠারো বছর বয়স’ বলতে তারুণ্যকে নির্দেশ করা হয়েছে। এই তারুণ্য বয়সের ফ্রেমে সীমাবদ্ধ নয়।
শিক্ষকেরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর, জাতির বিবেক। আর একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ক্ষেত্রে এ কথাটি আরো সত্য। তাই তাঁর কাছে জাতির প্রত্যাশাও অনেক। জাতি তাঁর কাছে দেশ ও সমাজ পরিচালনার দিকনির্দেশনা প্রত্যাশা করে।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় চিরযৌবনের প্রমুক্ত চেতনার যে রূপটি ফুটে উঠেছে, তা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়। একজন শিক্ষক সকল ভয়-ভীতি রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে জাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
শিক্ষকরা সর্বদা সমাজে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সত্যের পথে সংগ্রামে ব্রতী হন। মিথ্যাকে ভয় না করে তিনি সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। তিনি জাতির আদর্শের ধারক। তাই এমন কোনো খারাপ গুণ তাঁর মাঝে থাকা উচিত নয়, যার জন্য জাতিকে কলঙ্কিত হতে হয়। তিনি সকল অশুভ চেতনার বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে মানবতার জয়গান করবেন, এটাই তাঁর কাছে সকলের প্রত্যাশা। তাই তাঁর কর্মজীবনে আসা সকল অনৈতিক বাধা অতিক্রম করতে আঠারোর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছান।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেছেন এবং ইতিবাচক দিকের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। তাঁর কাছে ইতিবাচক দিকটিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। কেননা, এ দিকটিতে রয়েছে তারুণ্যের শুভ, সুন্দর ও মঙ্গলময় প্রতিচ্ছবি।
ইতিবাচক দিক : আঠারো বছর বয়সের তারুণ্য পরনির্ভরশীলতা পরিহার করে মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে চলার ঝুঁকি নেয়। এই বয়সেই মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী হয়। দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য এই বয়সেই অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয় উদ্ধত তরুণ। এ বয়সেই সুন্দর, শুভ কল্যাণের জন্য রক্তমূল্য দিতে শেখে দুর্মর তারুণ্য। চারপাশের অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ-নিপীড়ন দেখে প্রাণবন্ত তারুণ্য ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আঠারো বছর বয়সে।
নেতিবাচক দিক : আঠারো বছরের তারুণ্যকে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা জটিলতাকে অতিক্রম করতে হয়। এই সময় দক্ষতার সাথে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে তার পদস্খলন ঘটে। জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। ফলে অজস্র ব্যর্থতা এসে তাকে গ্রাস করে।
মূলত ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারোর জয়গান গেয়েছেন। তাঁর মতে ‘আঠারো’ জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন, কঠোর গদ্যে আনো,
পদ-লালিত্য ঝঙ্কার মুছে যাক
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো!
প্রয়োজন নেই, কবিতার স্নিগ্ধতাÑ
কবিতা, তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়!
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝল্সানো রুটি\
ক. সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম এবং মৃত্যু সাল লেখ।
খ. কবি আঠারো বছর বয়সকে দুঃসহ বলেছেন কেন?
গ. অনুচ্ছেদের ‘কঠোর গদ্য’ এবং ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার ‘আঠারো বছর বয়স’ এই দুইয়ের মাঝে সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. অনুচ্ছেদে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার কোন ভাবটি প্রতিফলিত হয়েছে? Ñব্যাখ্যা কর। ১
২
৩
৪
৬ নং প্রশ্নের উত্তর
সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে মাত্র একুশ বছর বয়সে তাঁর অকালমৃত্যু হয়।
আঠারো বছর বয়সে মানুষ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে। এ সময় তাকে নানা বাধা ও ঝুঁকি অতিক্রম করতে হয়। তাই কবি আঠারো বছর বয়সকে দুঃসহ বলেছেন।
তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর অসাধারণ কবিতা ‘আঠারো বছর বয়স’ Ñএ তরুণদের আঠারো বছর বয়সটিকে দুঃসহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা, আঠারো বছর বয়স মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন সময়। এ সময়টি হলো কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের সিঁড়ি। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সেই তাকে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয়। ফলে এ বয়সেই উত্তেজনার প্রবল আবেগ ও উচ্ছ¡াসে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়। এদিক থেকে তাকে এক কঠিন দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়। তাই কবি আঠারো বছর বয়সকে দুঃসহ বলেছেন।
অনুচ্ছেদে ‘কঠোর গদ্য’ বলতে কঠিন তীব্র সংগ্রামকে নির্দেশ করা হয়েছে, যেখানে কবিতার কোমলতার কোনো স্থান নেই। কবি ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় জড় নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পিছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন, কল্যাণ ও সেবাব্রত, উদ্দীপনা ও চলার দুর্বার গতিকে আহŸান করেছেন। এদিক থেকে অনুচ্ছেদে উদ্ধৃত কঠোর গদ্য ও আঠারো বছর বয়স কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।
গদ্যের অভিব্যক্তির মধ্যে আছে কাঠিন্য, ছন্দহীন জীবনের রূপ, আবেগহীন ভাষা। কবি সেই কঠোর গদ্যকে প্রার্থনা করেছেন ঠিক যেমন প্রার্থনা করেছেন কবি আঠারো বছর বয়সকে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায়। এ বয়স মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন পর্যায়। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে মানুষ এ বয়সে। এ বয়সেই অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয় তাকে।
এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মাহুতির মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া ও আঘাত-সংগ্রামের মধ্যে রক্তশপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন ও কল্যাণব্রত এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য কবি প্রত্যাশা করেছেন নানা সমস্যাপীড়িত আমাদের দেশে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়। তাই বলা যায় ‘কঠোর গদ্য’ আর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার ‘আঠারো বছর’ একই অর্থে ব্যবহৃত।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন। তিনি তারুণ্যের কঠোর, সাহসী, উদ্দীপ্ত, দুর্বার রূপটি ফুটিয়ে তুলেছেন কবিতায়। অনুচ্ছেদেও এই ভাবটি ব্যক্ত হয়েছে।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের অনেক ইতিবাচক দিক তুলে ধরেছেন। এ বয়সে নানা দুঃসাহসী স্বপ্ন, কল্পনা ও উদ্যোগ মানুষের মনকে ঘিরে থাকে। এ বয়স মানুষকে অসীম সাহসী ও দুর্বিনীত করে তোলে। সকল অন্যায়-অত্যাচার আর জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষকে প্রতিবাদী করে তোলে। দুর্বিনীত যৌবনে পদার্পণ করে বলে এ বয়সে মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী হয়। জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায় স্বাধীনভাবে, আর চারপাশের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ-পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ ইত্যাদি দেখে প্রাণবন্ত তরুণেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
অনুচ্ছেদে কবি মহাজীবনে কবিতার কোমলতা, স্নিগ্ধতা, আবেগময়তাকে পরিহার করে, গদ্যের কঠোর রূপ প্রত্যাশা করেছেন । যেন গদ্যের কাঠিন্যের মতোই আঠারো বছর বয়স দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা, জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে পথ চলে। এ বয়সই ভাঙতে পারে প্রচলিত সমাজের সংকীর্ণতার দেয়াল, দূর করতে পারে ক্ষুধার গোঙানি।
তারুণ্য চির-নতুনের বার্তাবাহক। এ বয়সে তরুণদের মনে উদয় হয় নানা দুঃসাহসী স্বপ্ন, কল্পনা ও উদ্যোগের। তাদের তাজা রক্ত উন্মুক্ত হয়ে ওঠে ছুটন্ত ঘোড়ার মতো। এ বয়সে কোনো বাধাকেই সে বাধা মনে করে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়ায় সমস্ত বাধা মোকাবেলায়। পথের সকল জীর্ণতা ও শীর্ণতাকে পরিহার করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই তার ধর্ম। পরাজয়ের বেদনায় অশ্র“ময় কান্না এ বয়সের ধর্ম নয়। অজানাকে জানবার জন্য সে প্রাণ দিতেও দ্বিধাবোধ করে না। দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের সংগ্রামে সে হয়ে ওঠে প্রতিবাদী। এমন কি, প্রতিবাদের পদাঘাতে এ বয়স পাথর-পরিমাণ বাধা ভাঙতে উদ্যত হয়।
তাইতো কবির ভাষ্যÑ
“আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা।”
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আমরা দুর্বল নিরীহ বাঙালি। এই বাঙালি শব্দে কেমন সুমধুর তরল-কোমল ভাব প্রকাশিত হয়। আহা! এই অমিয়াসিক্ত বাঙ্গালি কোন বিধাতা গড়িয়াছিলেন? কুসুমের সৌকুমার্য্য, চন্দ্রের চন্দ্রিকা, মধুর মাধুরী, যূথিকার সৌরভ, সুপ্তির নীরবতা, ভূধরের অচলতা, নবনীর কোমলতা, সলিলের তরলতা এক কথায় বিশ্বজগতের সমুদয় সৌন্দর্য এবং স্নিগ্ধতা লইয়া বাঙালি গঠিত হইয়াছে! আমাদের নামটি যেমন শ্র“তিমধুর তদ্রূপ আমাদের সমুদয় ক্রিয়াকলাপও সহজ-সরল।
ক. আঠারো বছর বয়স কবিতায় ‘আঠারো’ শব্দটি কতবার ব্যবহৃত হয়েছে?
খ. “এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়” Ñকথাটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. অনুচ্ছেদের ‘দুর্বল নিরীহ বাঙালি’র সাথে কবিতার ‘বিরাট দুঃসাহসেরা’র মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর।
ঘ. অনুচ্ছেদের ভাববস্তুর সাথে কবিতার ভাববস্তুর তুলনা কর। ১
২
৩
৪
৭ নং প্রশ্নের উত্তর
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় আঠারো শব্দটি নয় বার ব্যবহৃত হয়েছে।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন। তরুণরা কখনো ভীরু বা কাপুরুষ হয় না। উত্তেজনার প্রবল ও দুরন্ত চঞ্চলতায় এ জীবন থাকে উজ্জ্বল। তারা কোনো বাধা বিপত্তিকেই ভয় পায় না। কবি সে কথা বোঝাতেই বলেছেন আঠারো বছর বয়স ভীরু, কাপুরুষ নয়।
‘আঠারো বছর বয়স’ ভীরু ও কাপুরুষ নয়। কারণ আঠারো বছর বয়সে মানুষ কৈশোর অতিক্রম করে যৌবনে প্রবেশ করে এবং এ সময় আত্মবলে বলিয়ান হয়ে ওঠে। তখন সে কোনো বাধাই মানতে চায় না। অজানাকে জানার জন্য সে প্রাণ দিতেও প্রস্তুত থাকে এবং সব বাধা বিপত্তিকে দুমড়ে-মুচড়ে ছুটন্ত ঘোড়ার মতো চলে সম্মুখপানে। সমাজের শোষণ ও নির্যাতন দেখে সে কাপুরুষের মতো ঘরে বসে থাকে না। তাই কবি আঠারো বছর বয়সকে ‘ভীরু ও কাপুরুষ নয়’ বলেছেন।
অনুচ্ছেদে বাঙালি জাতিকে দুর্বল, ভীরু আর অলস বলা হয়েছে। কিন্তু ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় ‘বিরাট দুঃসাহসেরা’ বলতে নির্ভিক, অকুতোভয়, সাহসী তরুণদের নির্দেশ করা হয়েছে।
কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার, প্রবল আবেগ ও উচ্ছ¡াসে জীবনে ঝুঁকি নেয়ার। কবি আঠারো বছর বয়সকে দেশের স্বাধীনতা ও মানবকল্যাণে প্রাণ বিসর্জন দেয়ার উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন। এ বয়সেই তরুণ স্বপ্ন দেখে নব নব অগ্রগতি সাধনের। পক্ষান্তরে বৃদ্ধ, ভীরু ও কাপুরুষেরা দুহাত গুটিয়ে ঘরের কোণে বসে থাকে। এমনকি, তারা সর্বক্ষণ প্রাণের ভয়ে থাকে শঙ্কিত।
অনুচ্ছেদের ‘দুর্বল নিরীহ বাঙালি’ কথাটি শ্লেষ আর ব্যঙ্গাত্মক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। বাঙালিরা যে দুর্বল, ভীরু আর অলস সে কথাই এখানে বর্ণিত হয়েছে। পক্ষান্তরে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার বিরাট দুঃসাহসেরা বলতে নির্ভীক, অকুতোভয়, সাহসী তরুণদের নির্দেশ করা হয়েছে, যারা অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে চলতে জানে, যারা দুঃসাহসী স্বপ্ন দেখতে জানে। এরাই দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে এগিয়ে এসেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিপদ মোকাবেলায়। প্রাণ দিয়েছে অজানাকে জানবার জন্য, প্রাণ দিয়েছে দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের সংগ্রামে। সুতরাং, অনুচ্ছেদের দুর্বল নিরীহ বাঙালি এবং কবিতার বিরাট দুঃসাহসেরা সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে।
বাঙালি জাতি যেমন দুর্বল ও নিরীহ, তেমনি তাদের ক্রিয়াকলাপও সহজসরল। অপরদিকে আঠারো বছর বয়সের তরুণেরা সকল জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে পথ চলে। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সের বৈশিষ্ট্য।
অনুচ্ছেদে বাঙালির নরম, কোমল, ভীরু, দুর্বল রূপটিকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় তরুণ সমাজের কঠিন, কঠোর, সাহসী, শক্তিধর রূপের বর্ণনা করা হয়েছে। আঠারো বছর বয়স বহু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত। তাঁরা জড় নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পিছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন দেখে। দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে এ বয়সের মানুষই এগিয়ে আসে। তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে জীবনের সমস্ত বিপদ মোকাবেলা করে। প্রাণ দেয় অজানাকে জানার জন্য।
অনুচ্ছেদে বাঙালি জাতিকে কুসুমের সৌকুমার্য, যূথিকার সৌরভ ইত্যাদি উপমায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু কবি ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় তারুণ্যের জয়গান করেছেন। কবির মতে, এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত-সংঘাতের মধ্যে রক্তশপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। পাশাপাশি সমাজজীবনের নানা অবিচার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের বিরুদ্ধে এ বয়স আবার হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর। বিকৃতি ও বিপর্যয়ের অজস্র আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত ও নিঃশেষিত হতে পারে সহস্র প্রাণ।
অদম্য এ বয়সের আছে সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্বিপাক মোকাবেলা করার অদম্য প্রাণশক্তি। ফলে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি দুর্বার বেগে এগিয়ে যায় প্রগতির পথে, যা অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ বিপরীত ভাবকে নির্দেশ করে। কবির ভাষায়Ñ
“এ বয়স যেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে।”
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বল বীরÑ
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির।
………………………………………………….
আমি চিরদুর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহাপ্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস।
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বির,
আমি দুর্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
ক. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটির প্রকাশকাল কত?
খ. আঠারো বছর বয়স মাথা নোয়াবার নয় কেন?
গ. অনুচ্ছেদের ‘দুর্বিনীত’ এবং কবিতার ‘দুঃসাহস’ শব্দ দুটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার ভাববস্তু অনুচ্ছেদে প্রতিফলিত। Ñব্যাখ্যা কর। ১
২
৩
৪
৮ নং প্রশ্নের উত্তর
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হয়।
আঠারো বছর বয়সে তরুণেরা ঝুঁকি নেয় স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচার। তাই আঠারো বছর বয়স মাথা নোয়াবার নয়।
আঠারোর উদ্দামতায় ঋদ্ধ যুবকরা কখনো মাথা নত করে না। কারণ, এ বয়সে সে হয়ে ওঠে আত্মপ্রত্যয়ী। সে পথ চলে দুর্বার গতিতে। তাঁরা জড়-নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পেছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন দেখে। তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমস্ত বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে। সংকটকে উপড়ে ফেলে, সমস্যার পাহাড়কে তুচ্ছ ভেবে তরুণরা পা বাড়ায় সামনে। উদ্ধত ও দুর্বিনীত সত্যে তাঁরা মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। তাই আঠারো বছর বয়স মাথা নোয়াবার নয়।
অনুচ্ছেদে ‘দুর্বিনীত’ অর্থ যে বিনীত নয় অর্থাৎ যে মাথা নোয়াবার নয়। আর কবিতার ‘দুঃসাহস’ বলতে তরুণদের অত্যধিক সাহস বা অন্যায় সাহসকে বোঝানো হয়েছে।
অনুচ্ছেদে ‘দুর্বিনীত’ বলতে কোনো এক বীরের বিনীত না হওয়াকে বুঝিয়েছেন। আর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি ‘দুঃসাহস’ বলতে তরুণদের কারো কাছে মাথা নত না করে সাহসের সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াকে বুঝিয়েছেন। এ বয়সে থাকে ঝঞ্ঝার গতিবেগ। শপথের মাধ্যমে এ বয়স অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুঃসাহস নিয়ে।
অনুচ্ছেদে কবি বিদ্রোহী কোনো বীরের বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায়ও তরুণের বিদ্রোহী দুঃসাহসী রূপ অভিব্যক্তি পেয়েছে। এ বয়সে নানা দুঃসাহসী স্বপ্ন, কল্পনা ও উদ্যোগ তরুণদের মনকে ঘিরে ধরে। দুর্বিনীত যৌবনে পদার্পণ করে বলে এ বয়সে মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী হয়। জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায় স্বাধীনভাবে। চারপাশের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ দেখে প্রাণবন্ত তরুণেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আর তাই দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে এ বয়সের মানুষই এগিয়ে আসে সবচেয়ে বেশি। তাই কবি বলেছেনÑ
“এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।”
অনুচ্ছেদে কবি কোনো এক বীরের বীরত্বপূর্ণ পথ চলা নির্দেশ করেছেন। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি উদ্দামতা ঋদ্ধ তরুণদের দুঃসাহসের সাথে পথ চলাকে নির্দেশ করেছেন।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটিতে কবি তারুণ্যের অনেকগুলো ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। এ বয়সে মানুষ হয়ে ওঠে দুঃসাহসী ও দুর্বিনীত। এ বয়স মানুষকে সকল অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী করে তোলা। এ বয়সে তরুণেরা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে সমস্ত ভয়কে জয় করে। তারা জড় নিশ্চল ও প্রথাবদ্ধ জীবনকে পিছনে ফেলে নতুন জীবন রচনা করে।
অনুচ্ছেদে কোনো এক বীরের দুঃসাহসিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে। সে প্রচণ্ড সাহসিকতার সাথে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কোনো বাধাকেই সে বাধা মনে করে না। পাহাড়সম অন্যায়-অত্যাচারের কাছেও সে মাথা নত করে না, মহাপ্রলয়ের সময়ও সে নটরাজ সাইক্লোনের মতো সমস্ত অন্যায়-অত্যাচারকে ধ্বংস করে দেয়। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায়ও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন। তার মতে, নিঃসঙ্কোচ আত্মপ্রকাশই তারুণ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাই শত প্রতিক‚লতার মধ্যে আঠারো বছর বয়সের তরুণেরা মাথা নত করে না। এবং এ সময় পাথর সমান বাধা তারা পদাঘাতে ভেঙে চুরমার করে দেয়।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন; জয়গান করেছেন তারুণ্যের। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার, প্রবল আবেগ ও উচ্ছ¡াসে জীবনের ঝুঁকি নেবার সময়। এ বয়স অদম্য দুঃসাহসে সকল বাধা-অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার। এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত-সংঘাতের মধ্যে রক্তশপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। অদম্য এ বয়সে আছে সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্বিপাক মোকাবেলা করার অদম্য প্রাণশক্তি। ফলে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি দুর্বার বেগে এগিয়ে যায় প্রগতির পথে।
অনুচ্ছেদটিতেও তারুণ্যের এই দীপ্ত-শক্তির প্রকাশ ঘটেছে। তাইতো কবি বলেছেনÑ
“আমি দুর্বার
আমি ভেঙে করি সব চুরমার।”
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
যৌবনে মানুষের সমস্ত ইন্দ্রিয় সজাগ ও সবল হয়ে ওঠে এবং সৃষ্টির মূলে যে প্রেরণা আছে মানুষ সেই প্রেরণা তার সকল অঙ্গে সকল মনে অনুভব করে। দেহ ও মনের অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধের ওপর মানবজীবন প্রতিষ্ঠিত হলেও দেহমনের পার্থক্যের ওপরেই আমাদের চিন্তারাজ্য প্রতিষ্ঠিত। দেহের যৌবনের সঙ্গে মনের যৌবনের একটা যোগাযোগ থাকলেও দৈহিক যৌবন ও মানসিক যৌবন স্বতন্ত্র। এই মানসিক যৌবন লাভ করতে পারলেই আমরা তা সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
ক. ‘ঝড়’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি নির্দেশ কর।
খ. “পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে” Ñলাইনটি দিয়ে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কী বোঝানো হয়েছে?
গ. অনুচ্ছেদে ‘সৃষ্টির মূলে প্রেরণা’ আর কবিতার ‘এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে’ এই দুইয়ের মাঝে সম্পর্ক নির্দেশ কর।
ঘ. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় দেহের যৌবন, না মনের যৌবনের কথা বলা হয়েছে? অনুচ্ছেদ ও ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা কর । ১
২
৩
৪
৯ নং প্রশ্নের উত্তর
‘ঝড়’ শব্দটি এসেছে ‘ঝঞ্ঝা’ থেকে। ঝড় < ঝঞ্ঝা।
“পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে” Ñলাইনটি দিয়ে কবি মূলত অসীম দুঃসাহসের সাথে তরুণের পথ চলাকে নির্দেশ করেছেন। এ বয়সে তারা সকল প্রতিক‚লতা অতিক্রম করে এগিয়ে চলে সামনের দিকে।
আঠারো বছর বয়স চলার পথে থেমে যায় না, দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা ও জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে পথ চলে। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সের বৈশিষ্ট্য। এ বয়স দৈহিক ও মানসিক দিক দিয়ে অফুরন্ত প্রাণ শক্তির অধিকারী। তাই শত বাধা, বিপত্তি তাদের চলার পথকে রুদ্ধ করতে পারে না।
কোনো কিছুর সৃষ্টির মূলে রয়েছে প্রেরণা। আর এই প্রেরণার উৎস হচ্ছে তারুণ্য। আঠারো বছর বয়সে মানুষ তারুণ্য শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠে। ফলে এ সময়ই তারা নতুন নতুন আবিষ্কারে মেতে ওঠে।
সৃষ্টি সব সময়ই নতুনত্বের প্রতীক, তারুণ্যের প্রতীক। যিনি সৃষ্টিশীল, তিনি চির-তরুণ। ভীরু, দুর্বল, সংকীর্ণমনারা কখনো সৃষ্টি নামক উজ্জ্বল পাতায় নাম লেখাতে পারে না। অনুচ্ছেদেও সে কথাই বলা হয়েছে। যৌবনে মানুষের সৃষ্টিশীল সত্তাটি জেগে ওঠে।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাতেও যৌবনের সম্ভাবনার দিকটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তরুণ বয়স কোনো বাধা মানে না, অকুতোভয় এ বয়সটি সমস্ত প্রতিক‚লতা, প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সাফল্যের পথে এগিয়ে যায়। পৃথিবী, সমাজ, রাষ্ট্রকে কল্যাণকর নতুন সৃষ্টি উপহার দেয়। তারুণ্য স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সেইসব স্বপ্ন
বাস্তবায়নে, নিত্য নতুন কাজ সম্পাদনের জন্য নতুন শপথে বলীয়ান হয়ে সে এগিয়ে যায় দৃঢ় পদক্ষেপে। কবির ভাষায়Ñ
“বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী
এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।”
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি মনের যৌবন নয়, দেহের যৌবনের কথাই ব্যক্ত করেছেন।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার প্রবল আবেগ ও উচ্ছ¡াসে জীবনের ঝুঁকি নেবার সময়। এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত-সংঘাতের মধ্যে রক্ত-শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া।
অনুচ্ছেদে লেখক বলেছেনÑ “দেহের যৌবনের সাথে মনের যৌবনের একটা যোগাযোগ থাকলেও দৈহিক যৌবন ও মানসিক যৌবন স্বতন্ত্র।” তার মতে মানসিক যৌবনের কোনো বয়স নাই। এটা যেকোনো বয়সে অর্জন করা যায় এবং এটা অর্জন করতে পারলে তখন দৈহিক যৌবনের মতোই নতুন নতুন আবিষ্কারে মেতে ওঠে মন। কিন্তু কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় দৈহিক যৌবনের কথা ব্যক্ত করেছেন। তার মতে, এ বয়সের আছে সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্বিপাক মোকাবেলা করার অদম্য শক্তি। ফলে তারুণ্য আর যৌবন-শক্তি এগিয়ে যায় প্রগতির পথে।
দেহের যৌবনের সাথে মনের যৌবনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি দেহের যৌবন অর্থাৎ আঠারো বছর বয়সের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। এ বয়সের ইতিবাচক, নেতিবাচক উভয় দিকই রয়েছে। কিন্তু কবির প্রত্যাশা ইতিবাচক। এ বয়স দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা, জরা-জীর্ণতাকে অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে পথ চলে। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সের বৈশিষ্ট্য, যা মানসিক যৌবনকেই নির্দেশ করে। জড় নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পেছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন দেখে। কল্যাণ, সেবাব্রত, উদ্দীপনা, সাহসিকতা, চলার দুর্বার গতি Ñএসবই দৈহিক যৌবনের বৈশিষ্ট্য। কবির তাই প্রার্থনাÑ
“এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।”
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
হিমেল আঠারো বছরের এক দুর্দান্ত যুবক, সে সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে। নিজের মধ্যে সে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করছে। ইদানিং তার মন অত্যন্ত অস্থির থাকে। সে কারও কথা মানতে চায় না। তার বাবাÑমা না চাওয়া সত্তে¡ও সে এখনই নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। তার বাবা চায় সে আর কিছুদিন পর তার ব্যবসা দেখুক। কিন্তু হিমেল তার বাবার কথা মানতে নারাজ। তাই প্রায়ই সে তার বাবার সাথে এ বিষয় নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে। সে বাবার কাছ থেকে টাকা না নিয়ে নিজে আয় করতে চায়।
ক. দৈনিক পত্রিকা ‘স্বাধীনতা’র কিশোর সভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
খ. এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে। কোন বয়স এবং কী করে?
গ. উদ্দীপকের হিমেল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ী কেন? ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
ঘ. উদ্দীপকে হিমেলের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার যে ইঙ্গিত পরিলক্ষিত হয় তার স্বরূপ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
১০ নং প্রশ্নের উত্তর
দৈনিক পত্রিকা ‘স্বাধীনতা’র কিশোর সভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য।
তারুণ্যের একটা স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য হলোÑ তারা আপনার তালে মুক্ত জীবনানন্দে ছুটে বেড়ায়। পৃথিবীকে নতুন ছাঁচে ঢেলে সাজানোর জন্য জাতিÑধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন পৃথিবীর মিথ্যাকে, অসত্যকে পেছনে ঠেলে নব উদ্যমে উদ্বুদ্ধ হয় সত্যের সন্ধানে। কারণ একমাত্র তারুণ্যই পারে সমাজের গতানুগতিকতায় পরিবর্তন আনতে। তারা পারে বিশ্বসৃষ্টিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে। সর্বোপরি, মুক্ত মানসিকতার স্বাক্ষর রাখতে। জীবনের গতিধারায় তরঙ্গসংকুল পথ পরিক্রমায় তারুণ্যই বীর বিক্রমে প্রথম এগিয়ে আসে। বিপদের মুখে এ বয়সই পালন করে অগ্রণী ভ‚মিকা। ত্যাগ ও মহিমার দ্বারা এ পৃথিবীকে মধুময় করে তোলা এ বয়সের পক্ষেই সম্ভব।
দীর্ঘদিনের পরনির্ভরশীলতার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে আত্মনির্ভশীলতার আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে হিমেল দৃঢ় প্রত্যয়ী। কোনো তরুণই নিজেকে পরনির্ভরশীলতার বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে চায় না। এটি তার স্বাধীনচেতা মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় খুব সুন্দরভাবে তরুণদের দুর্বিনীত এ বৈশিষ্ট্যটি উপস্থাপন করেছেন। এ সময় তরুণেরা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে স্বাধীনভাবে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়াতে চায়। শৈশব কৈশোরের পরনির্ভরতার অসহায় ক্রন্দন মুছে ফেলতে উদ্যোগী হয়। যার নিশ্চিত প্রতিফলন আমরা উদ্দীপকের হিমেলের মধ্যে দেখতে পাই। অন্যান্য তরুণদের মতোই সে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার অদম্য ইচ্ছা পোষণ করে। সে নিজে অর্থ উপার্জন করতে চায়। তারুণ্যের এ সময় হিমেল তার জীবনকে নিজের কষ্টের উপার্জন দিয়ে অতিবাহিত করার জন্য দৃঢ়প্রত্যয়ী। তার মধ্যে যৌবনের প্রাণশক্তি ও সাহসিকতার প্রতিফলন দেখা যায়, সে মাথা উচু করে বাঁচার আগ্রহ প্রকাশ করে। আর এ আগ্রহ প্রকাশের মূলমন্ত্র সে পায় তার বয়স থেকে কেননা আঠারো বছর অত্যন্ত দুর্দান্ত সময়। শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত তরুণদের মধ্যে কর্মক্ষম হওয়ার যোগ্যতা, স্পৃহা, সুযোগ কোনোটাই থাকে না। কিন্তু যখন সে জীবনের কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে যৌবনের সিঁড়িতে আরোহণ করে তখন সে বিবেকের তাড়া অনুভব করে। তার মধ্যে কর্মক্ষম হওয়ার ইচ্ছা জাগে। অনুরূপ ইচ্ছা হিমেলের মধ্যেও জাগতে দেখা যায়। অন্যান্য তরুণদের মতো সেও তারুণ্যের স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট্য হৃদয়ে ধারণ করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠে। তাই সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়।
উদ্দীপকের হিমেলের আত্মনির্ভর হওয়ার যে ইঙ্গিত পরিলক্ষিত হয় তা তার তারুণ্যের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য তথা আত্মা-প্রত্যয়ী হয়ে স্বাধীনভাবে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ানোর অভিপ্রায়েরই পরিণতি। কারণ সে আঠোরো বছর বয়সের কলেজ পড়–য়া এক দুরন্ত যুবক। সে সাহসী, আত্মপ্রত্যয়ী, দুর্বিনীত ও উদ্দমÑউচ্ছ¡ল এক তরুণ। সে তার নিজের জীবনকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে গড়ে তুলতে চায়। হিমেল কর্মক্ষম হতে চায় তার নিজের জন্য, তার পরিবারের জন্য। তাই হিমেলের মতো তুরুণমনের এ ব্যাকুলতাকে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় ‘স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি’ চরণটি দ্বারা প্রকাশ করেছেন। এ বয়সেই তরুণরা অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার ঝুঁকি গ্রহণ করে। তরুণেরা স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিত্যÑনতুন কর্তব্য সম্পাদনের জন্য নব নব শপথে বলীয়ান হয়ে তারা এগিয়ে যায় সামনে। তেজোদীপ্ত দুঃসাহসে ভরা আঠারো বছর বয়সে হিমেলও দুর্বিনীত যৌবনে পর্দাপণ করে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠেছে। সে কারও উপর আত্মনির্ভরশীল হতে রাজি নয়। শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত সে কর্মক্ষম হওয়ার যোগ্যতা অর্জন না করলেও এখন সে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার মতো যোগ্য মনে করে। সে আর তার বাবার আয় করা অর্থে নিজেকে পরিপুষ্ট করতে চায় না। সে জানে আত্মনির্ভরশীল হওয়া এত সহজ নয়। এজন্য তাকে নানা প্রতিক‚লকতার সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু তার মধ্যে এখন তারুণ্যের উদ্দীপনা, দেহ ও মনে দুরন্তপনা আছে। তাই সে সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সামনে অগ্রসর হতে দৃঢ়প্রত্যয়ী। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার যে সুখ তা হিমেল আস্বাদন করতে চায়। তার বিবেক তাকে তাড়া দেয় সামনে এগিয়ে যেতে। বাধা-বিপত্তি থাকবেই কিন্তু তার জন্য হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে হিমেল রাজি নয়। সে শত বিপর্যয় ডিঙিয়ে নিজেকে একজন কর্মক্ষম ব্যক্তিতে পরিণত করতে চায়। সে চায় আত্মনির্ভরশীল হয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে। এভাবে হিমেল কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় বর্ণিত তারুণ্যের বৈশিষ্ট্যকে নিজের মধ্যে প্রতিফলন ঘটাতে চায়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ঝাঁকড়া চুলের নজরুল স্যারকে সবাই যৌবনের অনুপম অভিযাত্রী বলে অভিহিত করেন। শিক্ষক লাউঞ্জে বসে কথা হয় তার সাথে। দৃপ্ত কণ্ঠে বললেন- যৌবন বা তারুণ্যের সময়টা জীবনের স্বর্ণসময়। ভীরুতা বা কাপুরুষতা এ সময়ে থাকে না মানুষের। উদ্দাম এর গতিÑসত্য ও সুন্দরের পক্ষে। চলার পথে থেমে যায় না এর বিজয়পথ। তরুণেরা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে থাকে নিঃসংশয়। অতঃপর নিশ্চুপ নজরুল স্যার। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেনÑযৌবনের এই ধর্ম, তারুণ্যের এই গতি যদি থাকতো আমাদের এই দেশের সর্বত্র তাহলে বেশ হতো।
ক. আঠারো বছর বয়স বাঁচে কোন শক্তির সাথে মোকাবেলা করে?
খ. বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণীÑএ কথার অর্থ কী?
গ. উদ্দীপক অবলম্বনে তরুণ বয়সের রেখাচিত্র অঙ্কন কর।
ঘ. দেশের জন্য তারুণ্য আজ বড্ড বেশি প্রয়োজনÑএই মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর। ১
২
৩
৪
১১ নং প্রশ্নের উত্তর
আঠারো বছর বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ের সাথে মোকাবেলা করে।
জীর্ণ, পুরাতন, অনগ্রসর, অনালোকিত যা কিছুÑসবকিছুকে অপসারণ করে নতুনকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করা তরুণের কাজ। এ কাজ করতে যেয়ে নানামুখী সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় তাকে। নানা মন্দশক্তি এসে বাধা সৃষ্টি করে তাদের। অপশক্তি চায় তাদের অপপ্রয়াস অব্যাহত রাখতে। সেখানে বাধা সৃষ্টি করে শুভ, কল্যাণ, সত্য ও সুন্দরের পূজারী তরুণ। ফলে অসুন্দরের পৃষ্ঠপোষকের সাথে সুন্দরের প্রতিপালকের সংঘাত লাগে। সৃষ্টি হয় বিপদের পরিস্থিতি। প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর তরুণ, অসম সাহসী, দৃপ্ত পদক্ষেপে অসুন্দর অপসারণের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এইজন্য বলা হয়েছে- বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী।
প্রদত্ত উদ্দীপকে নজরুল স্যারের মিতভাষণে তরুণ বয়সের বৈশিষ্ট্য উঠে এসেছে। কৈশোরের সীমা পার হলেই যে বয়সটা পায় মানুষ, সেটা তারুণ্য। কৈশোরে একজন মানুষ যে সম্পদ পায়Ñদেহ ও মনে, তার পবিত্র আমেজটুকু তরুণ বয়সেও বিদ্যমান থাকে। কৈশোরের নিয়ন্ত্রিত আবেগ তারুণ্যে এসে হয় বাধা বন্ধনহীন। প্রাণাবেগে তারুণ্য এগিয়ে যায় সামনের দিকে। প্রচণ্ড তার গতি, অপরিমেয় তার শক্তি। প্রখর তার দীপ্তি, প্রচণ্ড তার আবেগ। এ সময়টা জীবনের স্বর্গসময়। এ সময়ের সোনার ফসলের সুফল সারাজীবন ধরে ভোগ করে মানুষ। সারাজীবনের বাকি দিনগুলো পৌরুষ সহকারে চলতে গেলে যে প্রাণশক্তি প্রয়োজন হয় তার মূল নিহিত তারুণ্যে। এ বয়সে ভীরুতা বা কাপুরুষতা ভর করে না মন ও মননে, চেতনা ও চৈতন্যে। সাহসিকতার পুরস্কারস্বরূপ প্রশংসিত হয় বলে ভীরুতা ঠাঁই পায় না তাদের মনে। তারুণ্য কল্যাণকামী বলে তাদের পক্ষপাত সত্য ও সুন্দরের প্রতি। কোন প্রতিবন্ধকতা স্তব্ধ করে দিতে পারে না তরুণের চলার পথ। লক্ষ্য যেহেতু মহৎ, লক্ষ্য অর্জনের উপায়ও মহৎ; সুতরাং মলিনতা থাকে না চলার পথে। মহৎ কোনো উদ্দেশ্যের ফল কখনো অসুন্দর হতে পারে না। এত আত্মবিশ্বাস তাদের থাকে এজন্য লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি সম্পর্কে নিঃসংশয় তরুণেরা। এ রকম তারুণ্য জাতিসত্তার ভরসার স্থলÑ। দেশের জন্য এ রকম তারুণ্যই দরকার।
কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য যখন ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি রচনা করেন তখন ভারতবর্ষ পরাধীন। এত বড় একটা উপমহাদেশ। অথচ তাকে শাসন, শোষণ করছে বিদেশি বেনিয়া কয়েকজন তস্কর। পরাধীনতার এই বেদনা সহ্য করতে পারেননি রাজনৈতিক কবি সুকান্ত। এজন্য প্রত্যাশা করতেন এমন কিছু সেনানীর যারা পারবে দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করতে। রক্ত দানের পুণ্য প্রত্যাশী যে তরুণ, সে রকম ত্যাগী তরুণের প্রত্যাশা করেছেন কবি। যারা অসম সাহসিকতায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, প্রাণ প্রাচুর্যে যারা ধনী, যারা কোন মন্দশক্তির কাছে মাথা নোয়ায় না, পথের বাধা যারা অনায়াসে পার হয়ে যায়Ñদুঃসময়ে যারা চোখের জল ফেলে নাÑ তারাই প্রত্যাশিত দেশের জন্য। তরুণ, প্রাণের স্বাভাবিক আবেগে শপথ দীপ্ত হয়, সত্য ও সুন্দরের জন্য আত্মবলি দেয়। এরকম তরুণ দেশের জন্য খুব বেশি দরকার। যারা অন্যতম এক সুন্দরÑএক অনন্য সত্য। দেশের জন্য তরুণরাই পারে আত্মোৎসর্গের মহিমায় ঋদ্ধ হয়ে কিছু করতে। কিছু নেতিবাচক দিক আছে তারুণ্যের। তবু একথাটা তো ঠিকÑতারুণ্য তবু নতুন কিছু করে। এই কিছু অন্তত করার জন্য দেশে এমন তরুণকে চায়। সুকান্তের সময় পার হয়েছে। অনেক তরুণের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ভারতবর্ষ তথা বাংলাদেশ স্বাধীন। এখন আবার তরুণদের প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। চারদিকে অন্ধকার, অন্যায়, অসত্য, দুর্নীতির কালো থাবা। দেশের ভাবমূর্তি আজ বিপন্ন। দেশের চিরচেনা ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথ ধরেছে। নানাবিধ সঙ্কীর্ণতা আজো বাংলাদেশের অলিন্দ নিলয়ে। এইসব ক্ষত দূর করার জন্যÑসত্য সুন্দরের প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার ত্যাগ, দরকার শ্রম। দরকার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা। সবার উপরে দরকার দেশপ্রেম। এসবের জন্য তরুণের দরকার আজ সবচেয়ে বেশি। কিছু তরুণ বিপথগামী, পথভ্রষ্ট। তাদেরকেও স্বাভাবিক জগতে ফিরিয়ে এনে দেশের জন্য উপযুক্ত করে তোলা দরকার। এজন্য দরকার তারুণ্যের জোর।
ক জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
১. আমরা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে কোন যুগের বিদ্রোহী কবি বলতে পারি?
উত্তর\ আমরা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে রবীন্দ্র-নজরুলোত্তর যুগের বিদ্রোহী কবি বলতে পারি।
২. কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের অকালমৃত্যু হয় কত বছর বয়সে?
উত্তর\ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের অকালমৃত্যু হয় ২১ বছর বয়সে।
৩. আঠারো বছর বয়স কী কারণে কালো?
উত্তর\ সচেতন ও সচেষ্ট হয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষে জীবন পরিচালনা করতে না পারার হাজারো ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাসে আঠারো বছর বয়স যেন এক কালো অধ্যায় রচনা করে।
৪. কবির মতে আঠারো বছর বয়স বেদনায় কেমন করে কাঁপে?
উত্তর\ কবির মতে আঠারো বছর বয়স বেদনায় থরথর করে কাঁপে।
৫. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সবকিছুর পরও কীসের জয়ধ্বনি শুনতে পান?
উত্তর\ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সবকিছুর পরও আঠারোর জয়ধ্বনি শুনতে পান।
৬. কোন সময় বা বয়স বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে?
উত্তর\ আঠারো বছর বয়স বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
৭. শপথের কোলাহলে কারা আত্মাকে সমর্পণ করে?
উত্তর\ যারা আঠারো বছর বয়সী তরুণ, তারাই শপথের কোলাহলে আত্মাকে সমর্পণ করে।
৮. কোন সময় হাল ঠিকমতো রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে?
উত্তর\ দুর্যোগের সময় হাল ঠিকমতো রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
৯. আঠারো বছরের তরুণেরা কীসের মতো চলে?
উত্তর\ আঠারো বছরের তরুণেরা বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে।
১০. ‘পূর্বাভাস’ কী ধরনের রচনা?
উত্তর\ ‘পূর্বাভাস’ একটি কাব্যগ্রন্থ।
১১. আঠারো বছর বয়সে কীসের ঝুলি শূন্য থাকে না?
উত্তর\ আঠারো বছর বয়সে প্রাণ দেয়া-নেয়ার ঝুলিটা শূন্য থাকে না।
১২. কোন বয়সে অবিশ্রান্ত আঘাত আসে?
উত্তর\ আঠারো বছর বয়সে অবিশ্রান্ত আঘাত আসে।
১৩. আঠারো বছর বয়স কী জানে না?
উত্তর\ আঠারো বছর বয়স কাঁদতে জানে না।
খ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
১. কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে সুকান্ত ভট্টাচার্য কেন আঠারো বছর বয়সকে নির্ধারণ করেছেন?
উত্তর\ কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারো বছর বয়সকে তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
আঠারো বছর বয়স হচ্ছে কৈশোর থেকে তারুণ্যে পদার্পণের উপযুক্ত সময়। এই বয়সেই মানুষ নিজেকে বুঝতে শেখে, শাণিত করে তোলে নিজের অভিজ্ঞতাকে। এ বিষয়টি যেমন প্রবল উত্তেজনার, আবেগ ও উচ্ছ¡াসে ভরপুর, তেমনি এ সময়টি দুঃসাহসিক ঝুঁকি নেবার ক্ষেত্রেও উপযুক্ত বয়স। তাই এই বয়সের অদম্য সাহসী তরুণ যখন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবে, তখন দ্রুতগতিতে দেশের উন্নয়ন ঘটবে। পুরনো ও জরাজীর্ণতাকে ভেঙে ফেলে একটি নতুন সমাজ, একটি নতুন পৃথিবী গড়ে তুলতে তাই আঠারো বছর বয়সী তরুণের বিকল্প নেই। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য উলিখিত বিষয় বিবেচনা করেই আঠারো বছর বয়সকে কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
২. কোন বয়সকে মানবজাতির উত্তরণকালীন বয়স বলা হয় এবং কেন?
উত্তর\ ‘আঠারো বছর বয়স’ হচ্ছে কৈশোর থেকে যৌবনে রূপান্তরিত হওয়ার সময়। তাই আঠারো বছর বয়সকে মানবজাতির উত্তরণকালীন সময় বলা হয়।
শৈশব ও কৈশোরের ছেলেখেলা ভুলে মানুষ ক্রমান্বয়ে পরিণত হতে থাকে। ‘আঠারো বছর বয়স’ হচ্ছে মানুষের যৌবনে পদার্পণের সময়। এই সময়ে মানুষের দৈহিক ও মানসিক গঠনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়। মানুষের মনোজাগতিক পৃথিবীতে এক ধরনের নীরব বিপ্ল¬ব সাধিত হয়। মানুষ হয়ে ওঠে সাহসী, আবেগী ও প্রবল উত্তেজনাসম্পন্ন। আর এই পুরো পরিবর্তনটির সূত্রপাত হয় আঠারো বছর বয়সে। এ সময়ে মানুষ ক্রমান্বয়ে অভিজ্ঞ ও মেধাসম্পন্ন হয়ে ওঠে। শৈশব কৈশোরের কাঁচা-মন এই বয়সে এসে আবেগ ও সাহসে ভরপুর হয়ে ওঠে। ফলে এই সময়কে মানবজাতির উত্তরণকালীন সময় বলা হয়।
৩. ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে’-কারা? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর\ ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো’ চলে তরুণেরা।
তরুণেরা হচ্ছে দুর্বার গতির প্রতীক। তারা প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। দুঃসাহসিক প্রত্যয়ে জীবনের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে একমাত্র তারুণ্যের পক্ষেই সম্ভব বিজয় ছিনিয়ে আনা। তাই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের দুর্বার গতিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে উপমা হিসেবে বাষ্পের বেগ ও স্টিমার শব্দগুলোর সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। তার মতে, তরুণরা যেন স্টিমারের গতিবেগের মতোই বাতাসের বেগে ছুটে চলে। জীবন ও জগতের কল্যাণ ও অকল্যাণকর উভয় ক্ষেত্রেই তরুণেরা তার এই গতিকে কাজে লাগাতে পারে। তবে কবির মতে, তরুণেরা এই গতিশক্তিকে শুধু কল্যাণকর কাজেই প্রয়োগ করবে।
৪. কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা অনুযায়ী তারুণ্যের আত্মত্যাগ কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর\ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা অনুযায়ী তারুণ্যের আত্মত্যাগ হওয়া উচিত কল্যাণকর ও দেশসেবামূলক কাজে।
তারুণ্য এক অসীম এবং দুর্নিবার প্রাণশক্তির প্রতীক। তরুণেরা তার এই প্রাণশক্তিকে যেমন ধ্বংসাত্মক কাজে লাগাতে পারে তেমনি কল্যাণকর কাজেও লাগাতে পারে। দুর্বার গতিসম্পন্ন দুঃসাহসিক তরুণ ইতিবাচক ও নেতিবাচকÑ দুই ক্ষেত্রেই তার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে। কিন্তু কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতে, তরুণেরা কেবল দেশসেবামূলক ও কল্যাণকর কাজের ক্ষেত্রেই আত্মত্যাগ করবে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি এই শুভবোধকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি। সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হয়েই তরুণেরা তার সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। তাই তারুণ্যের আত্মত্যাগ হবে কেবল শুভ ও সুন্দর কাজে।
৫. কীভাবে আঠারো বছর বয়স জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে?
উত্তর\ ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই ‘আঠারো বছর বয়স’ জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।
হাজারো ইতিবাচক গুণের সমষ্টি হয়ে ‘আঠারো বছর বয়স’ এক বিশাল শক্তির প্রতীক হয়ে মানবজীবনের চলার পথে ভূমিকা রাখে। জড়, নিশ্চল, ব্যর্থ, জীর্ণ, পুরনো ও প্রথাবদ্ধ জীবনকে পায়ে ঠেলে নতুন জীবনের পথে এগিয়ে চলে ‘আঠারো বছর বয়স’। নতুন স্বপ্নে উদ্দীপিত হয়ে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হয়ে আঠারো বছর বয়সী তরুণেরা তাদের উদ্দীপনা, সাহসিকতা ও চলার দুর্বার গতিকে যথোপযুক্তভাবে প্রয়োগ করতে পারে। আর এভাবেই সে হয়ে উঠতে পারে জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি। ‘আঠারো বছর বয়স’-এর ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোকে কাজে লাগানোর মাধ্যমেই জাতীয় জীবনকে সচল করে তোলা সম্ভব।