এইচএসসি বাংলা মাসি-পিসি সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

মাসি-পিসি
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

লেখক পরিচিতি
নাম সাহিত্যিক নাম : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
পিতৃপ্রদত্ত নাম : প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম পরিচয় জন্ম তারিখ : ১৯ মে, ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৫ বঙ্গাব্দের ৬ জ্যৈষ্ঠ)
জন্মস্থান : দুমকা শহর, সাঁওতাল পরগনা, বিহার অধুনা : ভারত।
পৈতৃক নিবাস : মালবাদিয়া, বিক্রমপুর, মুন্সিগঞ্জ, বাংলাদেশ।
পিতৃ-পরিচয় পিতার নাম : হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়
পেশা : অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার, সেটেলমেন্ট বিভাগ, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট
মাতার নাম : নীরদাসুন্দরী দেবী।
স্ত্রী স্ত্রীর নাম : কমলা দেবী।
শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক : ম্যাট্রিক (১৯২৬), মেদিনীপুর জেলা, স্কুল, ভারত।
উচ্চ মাধ্যমিক : আইএসসি (১৯২৮) ওয়েন্সলিয় মিশন কলেজ, বাঁকুড়া, ভারত।
বিএসসি (অসমাপ্ত) বিষয় : গণিত কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ।
পেশা/কর্মজীবন সহ-সম্পাদক : বঙ্গশ্রী পত্রিকা। নবারুণ পত্রিকা।
পাবলিসিটি অ্যাসিস্ট্যান্ট : ন্যাশনাল ওয়ার ফ্রন্টের প্রভিন্সিয়াল অর্গানাইজার দপ্তর।
যুগ্ম সম্পাদক : প্রগতি লেখক সংঘ।
রাজনীতি : ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান (১৯৪৪)
সাহিত্য-কর্ম প্রথম গল্প : অতসীমামী (১৯৩৫)
উপন্যাস : ‘জননী’ (১৯৩৫) দিবারাত্রির কাব্য (১৯৩৫), পুতুলনাচের ইতিকথা (১৯৩৬), পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৩৬), শহরতলী (১৯৪০), অহিংসা (১৯৪১), শহর বাসের ইতিকথা (১৯৪৬), চতুষ্কোণ (১৯৪৮), সোনার চেয়ে দামী (১৯৫১), স্বাধীনতার স্বাদ (১৯৫১), ইতিকথার পরের কথা (১৯৫২), আরোগ্য (১৯৫৩), ‘হরফ (১৯৫৪), হলদু নদী সবুজ বন (১৯৫৬)।
গল্পগ্রন্থ : অতসীমামী ও অন্যান্য গল্প (১৯১৫), প্রাগৈতিহাসিক (১৯৩৭), (১৯৩৮), সরীসৃপ (১৯৩৯), আজ-কাল-পরশুর গল্প (১৯৪৬), মাটির মাশুল (১৯৪৮), ছোট বকুল পুরের যাত্রী (১৯৫০)। ফেরিওয়ালা (১৯৫৩), শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৫০)।
নাটক : ভিটেমাটি (১৯৪৬); প্রবন্ধ গ্রন্থ : লেখকের কথা।
শেষ জীবন রোগে আক্রান্ত : ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মৃগী রোগে আক্রান্ত।
মৃত্যু ৩ ডিসেম্বর, ১৯৫৬ সাল, কলকাতা ।

গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ষাটোর্ধ্ব বিধবা ফাতেমা বেগম। নিঃসন্তান এ বৃদ্ধার আপন বলতে কেউ নেই। একদিন প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে হঠাৎ তিনি একটি মেয়েকে রাস্তায় কাঁদতে দেখেন। বৃত্তান্ত শুনে তিনি মেয়েটিকে নিয়ে আসেন এবং স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মেয়েটিকে মাতৃস্নেহে আশ্রয় দেন স্বামীপক্ষ খবর পেয়ে তাকে নিয়ে যেতে চান। মেয়েটি কোনোভাবেই যেতে ইচ্ছুক নন। বৃদ্ধাও মেয়েটিকে যেতে দেননি। এতে তাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। মৃত্যুর পূর্বে বৃদ্ধা মেয়েটিকে সমুদয় সম্পত্তি দান করে যান।
ক. ‘ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয় ’ -উক্তিটি কার?
খ. ‘যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি’উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের মেয়েটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির সাথে কীভাবে সঙ্গতিপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি ও উদ্দীপকের বৃদ্ধা কি একসূত্রে গাঁথা- মন্তব্যটি যাচাই কর। ১



১ নং প্রশ্নের উত্তর

 প্রশ্নোক্ত উক্তিটি পিসির।

 ষড়যন্ত্র করে আহ্লাদিকে গোকুল তুলে নিতে আসলে মাসি-পিসি তাদের কৌশলে প্রতিহত করে পরবর্তী আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত থাকার বিষয়টিকে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের লেখক প্রদত্ত উক্তি দ্বারা বুঝিয়েছেন।
 গোকুল আহ্লাদিকে অনৈতিকভাবে পেতে চায়। মাসি-পিসিকে সে ছলে-বলে-কৌশলে বশীভ‚ত করতে না পেরে কানাই চৌকিদারের মাধ্যমে মাসি-পিসিকে কাছারি বাড়ি পাঠিয়ে তার গুণ্ডা-বাহিনী দিয়ে তুলে নেওয়ার ফাঁদ পাতলে সংসার-অভিজ্ঞ মাসি-পিসি তা বুঝতে পারে এবং বঁটি ও রামদার ভয় দেখিয়ে এবং প্রতিবেশীদের ডেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়। গুণ্ডা বাহিনী তাদের ঘরে আগুন দিতে পারে ভেবে জল ও ভেজা কাঁথার ব্যবস্থা করে রাখে, হাতের কাছে রাখে বঁটি আর দা। এভাবেই মাসি গুণ্ডাবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

 অত্যাচারী স্বামীর সংসার না করার ব্যাপারে অটল সিদ্ধান্তে থাকার বিষয়ে উদ্দীপকের মেয়েটির সাথে মাসি-পিসি গল্পের আহ্লাদির সাদৃশ্য রয়েছে।
 প্রদত্ত উদ্দীপকের মেয়েটি স্বামীর অত্যাচারের শিকার নিঃসন্তান বৃদ্ধার আশ্রয়ে মাতৃøেহে থাকতে পেয়ে শত ঝামেলা সত্তে¡ও স্বামীর বাড়িতে যায়নি।, তেমনি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদিকে তার স্বামী খেতে দিত না, ঝাঁটা দিয়ে পেটাতো, কলকে পোড়া দিয়ে ছ্যাঁকা দিত, সোজা কথায় অত্যাচারীর মত ব্যবহার করত। সে মাসি-পিসির আশ্রয়ে আসতে পেরে তাদের পরম স্নেহে থেকে স্বামীর মামলার এবং গোকুল বাহিনীর ভয়ে ভীত হয়ে স্বামীর ঘরে যায়নি।
 দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ আর পিছু সরতে পারে না, মানুষ সবসময় শন্তিতে বাস করতে চায়। উদ্দীপকের মেয়েটি ও ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদিও অত্যাচারীর নির্মম হাত থেকে বাঁচার জন্য স্বামীর ঘরে না গিয়ে ভয়শূন্য স্থান বেছে নিয়েছে। তাই বলা যায়, উভয় চরিত্র এই ক্ষেত্রে সাদৃশ্যপূর্ণ।

 ‘মাসি-পিসি’ গল্পের বিধবা মাসি-পিসি ও উদ্দীপকের বিধবা বৃদ্ধা একই সূত্রে গাঁথা।’-মন্তব্যটি যথার্থ।
 আহ্লাদির বাবার অভাবের সংসারে মাসি-পিসি বোঝাস্বরূপ। আহ্লাদি স্বামীর ঘরে অত্যাচারিত হয়ে কোনোরকমে ফিরে এলে মাসি-পিসির সেবা-যতেœই আহ্লাদি বেঁচে যায়। লোভী স্বামী জগু মামলার ভয় দেখায়। এতে মাসি-পিসি না দমে কৈলেশকে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দেন। বদচরিত্রের গোকুল আহ্লাদির সভ্রম কৌশলে ছিনিয়ে নিতে চাইলে মাসি-পিসি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার সাথে প্রতিহত করেন এবং আহ্লাদির নির্ঝঞ্ঝাট জীবন নিশ্চিত করেন।
 মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। অত্যাচারিত, অবহেলিত মানুষকে বাঁচানো মানুষের সাধারণ ধর্ম। উদ্দীপকের ফাতেমা বেগম এবং আমার পঠিত ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি নারীজাতির ত্রাণকর্তারূপে কাজ করে অত্যাচারিত নারীদের চোখ খুলে দিয়েছেন। মানুষের বিপদে এগিয়ে আসতে গেলে অনেক কষ্ট সইতে হয়। তারপরেও মানুষ এগিয়ে আসে। মাসি-পিসির সঙ্গে মাসি-পিসি এবং উদ্দীপকের ফাতেমা বেগম জনকল্যাণের দিক থেকে একই সূত্রে গাঁথা-একথা সুনিশ্চিত করে বলা যায়।
 অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
হাসু ও মায়মুনকে নিয়ে ভেসেই চলছিল জয়গুন। কিন্তু নিজের চেষ্টায় অক‚ল পাথারে সে ক‚ল পায়। লজ্জাশরম বিসর্জন দিয়ে সে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজে। তাকে বাঁচতে হবে। ছেলেমেয়েকে বাঁচাতে হবে। এই সংকল্প নিয়ে আকালের পাঁচ বছর সে লড়াই করে আসছে।
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস কোথায়?
খ. আহ্লাদিকে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে যেতে হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের জয়গুনের সাথে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসির কোন দিক দিয়ে সাদৃশ্য রয়েছে?
ঘ. সাদৃশ্য থাকলেও জয়গুন গল্পের মাসি-পিসির সমগ্র বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে পারেনি।মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। ১



২ নং প্রশ্নের উত্তর

 মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস ঢাকার বিক্রমপুরে।

 স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আহ্লাদিকে স্বামীর ঘর ছেড়ে যেতে হয়।
 আহ্লাদির বিয়ে হয় নেশাখোর পাষণ্ড জগুর সাথে। জগু কারণে-অকারণে আহ্লাদিকে মারধর করে। নেশার টাকা জোগাড় না হলে আহ্লাদিকে ঘরের খুঁটির সাথে বেঁধে অত্যাচার করে। লাথি, চড়, বাড়ি এমন কোনো মাধ্যম নেই যার দ্বারা জগু আহ্লাদির উপর অত্যাচার করেনি। যার জন্য তাকে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসতে হয়।

 উদ্দীপকের জয়গুনের সাথে মাসি-পিসির জীবন-সংগ্রামের সাদৃশ্য রয়েছে।
 যে পরিশ্রম করাকে ভয় পায় না, সে যে-কোনোভাবে বিপদ থেকে পরিত্রাণ পায়। কর্মবিমুখ লোক জীবন-চলার পথে পদে পদে বিপদে পড়ে। আর যারা যেকোনো পরিস্থিতিতে যে-কোনো কাজ করতে প্রস্তুত থাকে তারা যে-কোনো বিপদ থেকে উদ্ধার পায়। উদ্দীপকের জয়গুণের মাঝে দেখি জীবন-সংগ্রামে জয়ী হওয়ার প্রচেষ্টা চালানোর প্রবণতা। দারিদ্র্যের নাগপাশে আটকা পড়ে সন্তান নিয়ে ভেসে যাচ্ছিল, সেখান থেকে নিজের চেষ্টায় লজ্জাশরম বিসর্জন দিয়ে কাজে নেমে পড়ে। মাসি-পিসির মাঝেও দেখি জীবনসংগ্রামে টিকে থাকার প্রবণতা। তাইতো তারা মন্বন্তরের সময় হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে না থেকে লাজলজ্জা পরিত্যাগ করে সবজির ব্যবসায় নামে। উভয়ক্ষেত্রে এখানেই সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

 কিছু সাদৃশ্য থাকলে উদ্দীপকে জয়গুন মাসি-পিসির সম্পূর্ণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করেনি।
 সংসার সমুদ্র বিপদসংকুল। এর কোণে কোণে যেমন বৈচিত্র্য-রোমান্স লুকানো আছে তেমনি আছে বিপদ। সেখান থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে চেষ্টার পাশাপাশি থাকতে হবে বুদ্ধিমত্তা ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা।
 উদ্দীপকের জয়গুণকে জীবন-সংগ্রামে যুদ্ধরত অবস্থায় আমরা দেখতে পাই। তার মাঝে রয়েছে মাতৃত্বের ¯েœহময়ী রূপ এবং জীবন-সংগ্রামে টিকে থাকার মানসিকতা। কিন্তু এটিই মাসি-পিসির সমগ্র রূপ নয়। এছাড়াও মাসি-পিসিকে আমরা অন্যভাবেও দেখতে পাই গল্পের জমিনে।
 মাসি-পিসি বিধবা, অসহায়, আশ্রয়হীনা। তবু তারা বেঁচে থাকার তীব্র ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে জীবন-সংগ্রামে নেমে পড়ে। নিজেদের অস্তিত্ব টেকানোই শুধু নয়, স্বামী-পরিত্যক্তা আহ্লাদিকে তারা ভালো রাখতে চায়। সমস্ত বিপদ থেকে উদ্ধার করতে চায়। এজন্য তারা প্রতিবাদী হয় সমাজের মুখোশধারী জানোয়ারদের বিরুদ্ধে। পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি থেকে সন্তানতুল্য আহ্লাদিকে বাঁচাতে, তারা এই পুরুষশাসিত সমাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মাসি-পিসির এ রূপটি উদ্দীপকের জয়গুণের মাঝে প্রকাশিত হয়নি। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মা তাকে জেরা করলেন। দেখলাম সে ভারি চাপা। মার প্রশ্নের ছাঁকা জবাব দিল, নিজে থেকে একটি কথা বেশি কইল না। সে বলল, তার নাম মমতা। আমাদের বাড়ি থেকে খানিক দূরে জীবনময়ের গলি, গলির ভেতরে সাতাশ নম্বর বাড়ির একতলায় সে থাকে। তার স্বামী আছে আর একটি ছেলে। স্বামীর চাকরি নেই চারমাস, সংসার আর চলে না, সে তাই পর্দা ঠেলে উপার্জনের জন্য বাইরে এসেছে। এই তার প্রথম চাকরি। মাইনে? সে তা জানে না। দুবেলা রেঁধে দিয়ে যাবে কিন্তু খাবে না।
ক. মাসি-পিসি কীভাবে শহরে যেতেন?
খ. মাসি-পিসির জমানো টাকা কেন খরচ হয়ে গিয়েছিল?
গ. উদ্দীপকের মমতা ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসির কোন বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেছে? আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও। ১



৩ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘মাসি-পিসি’ সালতি বেয়ে শহরে যেতেন।

 দুর্ভিক্ষের সময় খাবার কিনতে মাসি-পিসিদের জমানো রুপোর টাকা আধুলি সিকি খরচ হয়ে গিয়েছিল।
 মাসি-পিসিরা আহ্লাদির বাবার বাড়িতে আশ্রিতা। ওদিকে দেশে মন্বয়ন্তর। কোথাও কোনো কাজ নেই, খাবার নেই, সামর্থ্যও নেই। তাই তারা তাদের জমানো টাকা দিয়ে কোনোরকমে খাবার কিনে খেয়ে বেঁচেছে। এজন্য তাদের জমানো রুপোর টাকা আধুলি সিকি খরচ হয়ে গিয়েছিল।

 আর্থিক দীনতায় পড়ে স্বজনদের ও নিজের অস্তিত্ব রক্ষার প্রচেষ্টার দিক দিয়ে মমতাদির বৈশিষ্ট্যের সাথে মাসি-পিসির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য রয়েছে।
 দারিদ্র্যের কষাঘাত যখন আসে তখন মানুষের কোনো দিকের ঠিক থাকে না। সমস্ত লজ্জা, ভয়, আত্মসম্মান তখন মেকি, ফাঁকি মনে হয়। যে-কোনো উপায়ে অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন তখন বড় হয়ে ওঠে।
 উদ্দীপকের মমতাদি ভদ্র ঘরের সন্তান বা বৌ হয়েও দারিদ্র্যের চাপে পড়ে পরের বাড়ি কাজ করতে আসে। লজ্জা বা আত্মসম্মান তখন তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। স্বামী-সন্তান নিয়ে উপার্জনহীন সংসারে টিকতে না পেরে চাকরানির কাজ শুরু করেছে। গল্পে মাসি-পিসি চরিত্রের মমতাদির এই বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন দেখি। মন্বয়ন্তের সময় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা এবং আহ্লাদির জীবন বাঁচাতে তারা লজ্জাশরম ত্যাগ করে শহরে গিয়ে সবজির ব্যবসা করে। যা উভয় ক্ষেত্রে সাদৃশ্য রচনা করেছে।

 না, উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে না।
 ‘মাসি-পিসি’ গল্পটি নির্যাতনের শিকার একটি অসহায় মেয়ের জীবনকাহিনি। গল্পের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে নানা বৈচিত্র্যময় ঘটনা। উদ্দীপকে যার মাত্র একটি বিষয় প্রকাশিত করতে দেখা যায়।
 উদ্দীপকে দেখা যায়, জীবন-সংগ্রামে লিপ্ত এক নারীকে যে উপার্জনহীন সংসারে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য সমস্ত লজ্জাশরম পরিত্যাগ করে ভদ্র ঘরের মেয়ে হয়েও পরের বাড়ি চাকরানির কাজ নেয়। এটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের একটি মাত্র দিক। যা মাসি-পিসির জীবনধারণের প্রচেষ্টার মাঝে লক্ষ করা যায়।
 উপরিউক্ত বিষয় ছাড়া ‘মাসি-পিসি’ গল্পে অন্যান্য ভাবেরও অবতারণা ঘটেছে। আহ্লাদি নামক স্বামীর নির্যাতনের শিকার এক তরুণীর করুণ জীবনকাহিনি বর্ণিত হয়েছে গল্পে। যেখানে একে-একে উঠে এসেছে এই পুরুষশাসিত ঘুনেধরা সমাজের নানারকম অসঙ্গতির দিক। এ সমাজে নারীর অবস্থান তাদের প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি, দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী চিত্র, অত্যাচারী স্বামী, লালসায় উন্মত্ত জোতদার, গুণ্ডা-বদমাশদের আচরণ, দু’জন বিধবার দায়িত্বশীল ও মানবিক জীবন-যুদ্ধ অন্যায়ের প্রতিবাদ ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সম্পূর্ণভাব ধারণ করেনি।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
পিসি বলে, ‘এত রাতে মেয়েনোককে কাছারিবাড়ি ডাকতে কত্তার নজ্জা করে না কানাই?
কানই ফুঁসে ওঠে, ‘না যদি যাও ঠাকরুনারা ভালোয় ভালোয়, ধরে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাবার হুকুম আছে কিন্তু বলে রাখলাম।
মাসি বঁটিটা বাগিয়ে ধরে দাঁতে দাঁত কামড়ে বলে, বটে? ধরে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাবে? এসো। কে এগিয়ে আসবে এসো। বঁটির এক কোপে গলা ফাঁক করে দেব।
পিসি বলে, আয় না বজ্জাত হারামজাদারা, এগিয়ে আয় না? কাটারির কোপে গলা কাটি দু-একটার।
মাসি বলে, শোনো কানাই, এ কিন্তু এর্টি নয় মোটে। তোমাদের সাথে মেরা মেয়েনোক পারব না জানি কিন্তু দুটো-একটাকে মারব জখম করব ঠিক।
পিসি বলে, মোরা নয় মরব। ’
ক. মাসি পিসিকে ডাকতে কে আসে?
খ. মাসি-পিসি কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করত?
গ. উদ্দীপকটিতে ‘মাসি-পিসি’ চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে?
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সমগ্র ভাবটি ধারণ করেছে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও। ১



৪ নং প্রশ্নের উত্তর

 মাসি-পিসিকে ডাকতে আসে কানাই।

 অন্যের বাড়িতে কাজ করে, শহরে শাকপাতা-ফলমূল বিক্রি করে মাসি পিসি কোনোমতে জীবন ধারণ করে।
 মাসি-পিসি আহ্লাদির পিতার আশ্রায় আছে বহুদিন থেকেই। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর তারা নিতান্ত অসহায় হয়ে পড়ে। নিজেদের ভরণ-পোষণের জন্য এবং স্বামী পরিত্যাক্ত আহ্লাদির জন্য তারা ধান ভেনে, কাঁথা সেলাই করে, ডালের বড়ি বেচে, হোগলা গেঁথে গ্রাম থেকে শাকসবজি ফলমুল শহরে নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করে কোনোরকমে জীবিকা নির্বাহ করেন।

 উদ্দীপকে মাসি-পিসি চরিত্রের প্রতিবাদী ও আত্মরক্ষার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
 এ সংসারে প্রত্যেকে জিততে চায়। এজন্য একে-অন্যকে ঠকানোর জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। যে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারে না, তারা কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করলে অন্যায়কারী কখনো কাউকে নিস্তার দেয় না।
 উদ্দীপকে মাসি-পিসির প্রতিবাদী মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। সমাজের শোষক জমিদারের হুকুমে কানাই মাসি-পিসিকে অন্যায়ভাবে তুলে নিতে আসে। তাদের এই কু-মতলবকে মাসি-পিসি প্রতিহত করতে বন্ধপরিকর হয়। তারা কানাইকে চ্যালেঞ্জ করে। কাটারি বঁটি নিয়ে তারা যুদ্ধের জন্য তৈরি হয়। তাদের এই আচরণ এই জুলুমবাজ সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে, কু-মতলব চরিতার্থ করতে চায় যে সব মানুষরূপী জানোয়ারেরা তাদের রিরুদ্ধে মাসি-পিসি তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তাদের মাঝে প্রতিবাদী চেতনার পরিচয় মেলে।

 উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সমগ্র ভাবকে ধারণ করেনি।
 স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার পিতৃমাতৃহীন এক তরুণীর করুণ জীবনকাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছে ‘মাসি-পিসি’ গল্পটি অন্যদিকে উদ্দীপকে শুধু মাসি-পিসির প্রতিবাদী চেতনা প্রকাশ পেয়েছে।

 উদ্দীপকটিতে দেখা যায়, মাসি-পিসিকে জমিদারের হুকুমে তুলে নিতে আসে কানাই। তখন মাসি-পিসি কানাইয়ের কু-মতলব বুঝতে পেরে কাছারিতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। কানাই জবরদস্তি করলে তারা এর প্রতিবাদ করে এবং কানাইকে মারার জন্য দা, বঁটি উঁচিয়ে শাসায়। অবস্থা বেগতিক দেখে কানাই সরে পড়ে। মাসি-পিসির এ আচরণে এই ঘুণেধরা সমাজের বিরুদ্ধে অসহায় নারীর প্রতিবাদী চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। তবে এ বিষয়টিই ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাব নয়।
 ‘মাসি-পিসি’ গল্পটি স্বামীর নির্যাতনের শিকার পিতৃমাতৃহীন এক অসহায় তরুণীর জীবনকাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছে। আহ্লাদি নামক ঐ তরুণীর মাসি-পিসি দুজনেই বিধবা। তারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি বিরূপ সমাজ থেকে আহ্লাদিকে রক্ষার যে বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী সংগ্রাম পরিচালনা করেছে তা সত্যিই বিরল। দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী স্মৃতি, জীবিকা নির্বাহের কঠিন সংগ্রাম, নারী হয়ে যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবেলা করার মানসিকতা এ গল্পের বৈচিত্র্যময় দিক। এসব দিক উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সম্পূর্ণভাব ধারন করেনি।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আহারে। এরে মাইয়াডারে মাইরা ফালইস না। ওরে ও পাষাইণ্যা, দরজা খোল, মারিস না আর মারিস না, জাহান্নামে যাইবি, মারিস না। বাইরে থেকে দু’হাতে ঝাঁপিটাকে ঠেলছে ফকিরের মা। আবুল একবার তাকাল সেদিকে, কিন্তু ঝাঁপি খুলল না।
বউ মারায় একটা পৈশাচিক আনন্দ পায় আবুল। মেরে মেরে এর আগে দু’-দুটো বউকে প্রাণে শেষ করে দিয়েছে সে। প্রথম বউটা ছিল এ গাঁয়েরই মেয়ে। আয়েশা। একটু বেঁটে, একটু মোটা আর রঙের দিক থেকে শ্যামলা। অপূর্ব সংযম ছিল মেয়িটির। আশ্চর্য শান্ত স্বভাব। কত মেরেছে ওকে আবুল। কোনোদিন একটু শব্দও করেনি। একটা সামান্য প্রতিবাদ নেই।
[তথ্যসূত্র : হাজার বছর ধরে -জহির রায়হান]
ক. মস্ত কাটারিটা দেখতে কীসের মতো ছিল?
খ. আহ্লাদিকে জগু কেন মারধর করে?
গ. উদ্দীপকের আবুল ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? – ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের আয়েশা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি একই পরিস্থিতির শিকার।”মন্তব্যটি যাচাই কর। ১



৫ নং প্রশ্নের উত্তর

 মস্ত কাটারিটা দেখতে রামদা’র মতো ছিল।

 নেশার টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে টাকা জোগাড় করার লোভে জগু আহ্লাদিকে মারধর করতো।
 পাষণ্ড জগু নেশা করে। কিন্তু সব-সময় নেশার জিনিস কেনার টাকা তার কাছে থাকে না। সে সংসার এবং স্ত্রীর প্রতিও উদাসীন। নেশার ঘোরে থেকে সে তার স্ত্রী আহ্লাদির ওপর নির্যাতন চালায়। বউয়ের ওপর চড়াও হয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় বউকে খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে মারধর করে।

 উদ্দীপকের আবুল ‘মাসি-পিসি’ গল্পের জগু চরিত্রের প্রতিনিধি।
 আমাদের এই পুরুষশাসিত সমাজে স্ত্রীরা বা নারীরা চরমভাবে নিগৃহীত, নির্যাতিত হয়। তাদের কোনো মুল্যায়ন করে না পাষণ্ড পুরুষেরা। তারা কারণে-অকারণে নারীর ওপর অত্যাচার চালিয়ে পুরুষত্বের মর্যাদা রক্ষা করতে চায়।
 উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, আবুল নামের এক পাষণ্ডকে, যে তার স্ত্রীকে অমানুষের মতো নির্যাতন করে। ঘরের দরজা বন্ধ করে বৌকে মারে এবং পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করে। আবুলের মতো এক পাষণ্ডকে আমরা দেখতে পাই ‘মাসি-পিসি’ গল্পের জগুর চরিত্রের মাঝে। জগুও তার বউকে কারণে অকারণে মারপিট করে। নেশার টাকা জোগাড় করতে না পেরে বৌকে বেঁধে রেখে পেটায়। এই জগু চরিত্রের প্রতিনিধি উদ্দীপকের আবুল।

 “উদ্দীপকের আয়েশা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি একই পরিস্থিতির শিকার।”মন্তব্যটি যথার্থ।
 আমাদের সমাজব্যবস্থায় নানা অসংগতির মাঝে নারী-নির্যাতন অন্যতম একটা ঘৃণিত বিষয়। এই পুরুষশাসিত সমাজে এ বিষয়টি অহরহ ঘটে চলেছে। এর প্রতিকার করার যেন কেউ নেই।
 উদ্দীপকেও দেখি এমনই একটা চিত্র-যা ‘মাসি-পিসি’ গল্পেও পরিলক্ষিত হয়। উদ্দীপকে আয়েশা নামের মেয়েটি স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে পারে না। তবু সে মুখ ফুটে কিছু বলে না। এটাকে যেন তার ভাগ্য বলে মেনে নেয়। সমাজের ঘৃণিত পরিস্থিতির শিকার এই আয়েশার মতো ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি।
 আহ্লাদি পিতৃমাতৃহীন অসহায় এক তরুণী। তার বিয়ে হয় নেশাখোর জগুর সাথে। জগু সংসারের প্রতি উদাসীন এবং কারণে-অকারণে বউকে অত্যাচার করে। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আহ্লাদি বাবার বাড়ি চলে আসে। সমাজ এর কোনো বিহিত করে না। এ সমাজে নারীরা এভাবেই অবমূল্যায়িত হয়ে আসছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের আয়েশা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি একই পারিস্থিতির শিকার।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কাজের শেষে বাড়িতে ফিরে আসে লায়লা। ভাঙা খাটে ক্লান্ত দেহখানি এলিয়ে দেয়। দেহের চাইতে তার মনটা বেশি ক্লান্ত। মনটা আজ তার কেমন কেমন করছে। রহিমা খালা রান্না-বান্না করছে। অন্যদিন এ কাজটা সেই নিজেই করে। আজ কেন জানি এতে মন বসছে না। হঠাৎ মনের আয়নায় ফেলে আসা অতীত ছায়া ফেলে। তার একটা সংসার ছিল ছোট একটি সাজানো ঘর ছিল। হঠাৎ একদিন কালবৈশাখীর ঝড় এলো। বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য স্বামী আমজাদ লাথি মেরে ঘর থেকে বের করে দেয়। তারপর রহিমা খালার হাত ধরে শহরে আসে। গার্মেন্ট চাকরি নেয়। তারা অঙ্গভরা যৌবন তার শত্র“। বাইরে পা রাখলে বেহায়া পুরুষগুলো তাকিয়ে থাকে। মাঝে-মাঝে আবার ঘর বাঁধতে সাধ জাগে।
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখিত গল্পের সংখ্যা কত?
খ. মাসি-পিসি রোজগারের জন্য কী উপায় খোঁজে?
গ. উদ্দীপকে মাসি-পিসি চরিত্রে কোন ভাবের প্রকাশ ঘটেছে?Ñ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের আহ্লাদি আমাদের এই পুরুষশাসিত সমাজের নির্যাতিত নারীদের প্রতিনিধি।”মন্তব্যটি যাচাই কর। ১



৬ নং প্রশ্নের উত্তর

 মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখিত গল্পের সংখ্যা প্রায় তিন’শ।

 মাসি-পিসি জীবন চালাতে হিমশিম খায়। দুর্ভিক্ষের জন্য কোথাও রোজগার নেই। তাই তারা বেঁচে থাকার জন্য ভিন্ন উপায়ে রোজগারের চিন্তা-ভাবনা করে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় গ্রাম থেকে তরিতরকারি ফলমূল কিনে নিয়ে শহরে গিয়ে বিক্রি করে কিছু রোজগার করবে এবং এটা ভেবেই তারা এ কাজে হাত দেয়।

 উদ্দীপকে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসির মাঝে মাতৃস্নেহের প্রকাশ লক্ষণীয়।
 নারীর চরম সার্থকতা তার মাতৃত্বে। নিঃসন্তান হলেও সন্তানের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের সহজাত ইচ্ছা তাদের মাঝে থেকেই যায়। মাসি-পিসির আচরণে সেই মাতৃøেহের ভাবটি প্রকাশ পেয়েছে।
 উদ্দীপকে দেখা যায়, সারাদিন খাটুনির পর বাড়ি ফিরে রান্নাবান্না সারতে লেগে যায়। সন্তানের মতো আহ্লাদিকে তারা কোনো কষ্ট করতে দিতে নারাজ। উপরন্তু এই কদর্য সমাজের নানা প্রকার কুৎসিত লোকের কু-দৃষ্টি থেকে আহ্লাদিকে রক্ষা করার চেতনা তাদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়। মা সন্তানকে যেমন আগলে রাখে, মাসি-পিসিও আহ্লাদিকে সেভাবে আগলে রাখতে চায়, øেহ ভালোবাসায় সিক্ত করতে চায়।

 উদ্দীপকের আহ্লাদি এই পুরুষশাসিত সমাজের নির্যাতিত নারীদের প্রতিনিধি।
 নারীপুরুষ উভয়ের অবদানে সমাজ টিকে থাকে। অথচ নারীরা এই সমাজে কোনো মূল্যায়ন পায় না। পুরুষেরা তাদের নিজেদের ভোগের সামগ্রী ভাবে। এজন্যই আমাদের সমাজ বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে পারছে না।
 উদ্দীপকে দেখা যায় সমাজের পুরুষের দ্বারা নিমর্মভাবে নির্যাতিতা নারীর প্রতিচ্ছবি। যে স্বামীর অত্যাচারে টিকতে না পেরে অসহায়ের মতো বাপের বাড়ি চলে আসে। কিন্তু এখানেও এসে সে শান্তিতে থাকতে পারে না। সমাজের কুরুচিপূর্ণ কিছু পুরুষ তাকে নোংরা চোখে দেখে। তাকে অন্যায়ভাবে পেতে চায়।
 আহ্লাদির এই অবস্থা আমাদের এই পুরুষশাসিত সমাজের এক চরমতম লজ্জাজনক দিক। আহ্লাদি এ সমাজে নির্যাতিত এক অসহায় নারী। সে অবস্থার শিকার হয়ে চরম হীনম্মন্যতায় ভোগে। নিজেকে নর্দমার নোংরা কীট মনে করে। ব্যভিচারী পুরুষের চোখ তাকে স্বস্তিতে থাকতে দেয় না। একে তো স্বামী দ্বারা নির্যাতিতা উপরন্ত মাসি-পিসির কাছে এসেও তার নিস্তার নেই। তাই সে মনে করে, মাসি-পিসিকে গঞ্জনা দেওয়ার চেয়ে অত্যাচারী স্বামীর কাছে ফিরে গিয়ে লাথি ঝাঁটা খাওয়া ভালো। মূলত তার এই মনোভাব সমাজের অন্যান্য নারীদের চেতনাকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ইউরোপের জ্ঞানগুরু প্লেটো মিসর ভ্রমণকালে মাথায় করে তেল বেচে খরচ জোগাড় করতেন। যে কুড়ে, আলসে, ঘুষখোর ও চোর, সেই হীন। ব্যবসা বা ছোট স্বাধীন কাজে মানুষ হীন হয় না- হীন হয় মিথ্যা চতুরতা ও প্রবঞ্চনায়। পাছে জাত যায়, সম্মান নষ্ট হয়- এই ভয়ে পরের গলগ্রহ হয়ে মাসের পর মাস কাটিয়ে দিচ্ছ? সম্মান কোথায়, তা তুমি টের পাওনি।
[তথ্যসূত্র :উদ্যম ও পরিশ্রম- মোহাম্মদ লুৎফর রহমান।
ক. শকুনরা উড়ে এসে কোথায় বসেছে?
খ. জগু কেন মামলা করতে চাইল?
গ. উদ্দীপকের প্লেটোর মাঝে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন বিষয়ের সাদৃশ্য রয়েছে?Ñ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “মিল থাকলেও প্লেটোর তেল বিক্রি এবং মাসি-পিসির শাকসবজি বিক্রির উদ্দেশ্যগত ভিন্নতা রয়েছে।”মন্তব্যটি যাচাই কর। ১



৭ নং প্রশ্নের উত্তর

 শকুনরা উড়ে এসে পাতাশূন্য শুকনো গাছটার উপরে বসেছে।

 জগু তার বৌ আহ্লাদিকে ফিরিয়ে আনার জন্য মামলা করতে চাইল।
 জগুর অত্যাচারে ঘর ছেড়ে চলে আসে আহ্লাদি। তারপর জগু তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে এসেছে তার শ্বশুরের রেখে যাওয়া সম্পত্তির লোভে। কিন্তু মাসি-পিসি আহ্লাদিকে পাঠাতে নারাজ। তা ছাড়া আহ্লাদিও যেতে রাজি নয়। আহ্লাদিকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য জগু মামলা করতে চায়।

 উদ্দীপকের প্লেটোর সাথে মাসি-পিসির জীবনধারণের জন্য যেকোনো কাজ করে টিকে থাকার বিষয়টির সাদৃশ্য রয়েছে।
 জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে মানুষ যেকোনো কাজ করতে বাধ্য হয়। তখন যদি আত্মসম্মানের ভয়ে কাজ করা থেকে বিরত থাকে, তবে সে টিকে থাকতে পারে না। বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ সবকিছুই করতে পারে।
 উদ্দীপকের প্লেটোর মাঝে দেখি এই চেতনার প্রতিফলন। তিনি মিশরে ভ্রমণকালে মাথায় করে তেল বিক্রয় করে খরচ জোগাড় করতেন। তিনি কোনো কাজকে ছোট ভাবেননি, লজ্জা করেননি। এই একই চেতনার প্রতিফলন দেখি ‘মাসি-পিসি’ গল্পে মাসি-পিসির মধ্যে। তারা বেঁচে থাকার তাগিদে লাজ-সরমের তোয়াক্কা না করে সবজি ব্যবসায় নেমে পড়ে এবং জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়। লোকচক্ষুর ভয়ে বসে থাকে না। উভয় ক্ষেত্রে এখানেই সাদৃশ্য দৃশ্যমান।

 প্লেটোর তেল বিক্রি এবং মাসি-পিসির সবজি বিক্রির মাঝে মিল থাকলেও উদ্দেশ্যগত পার্থক্য বা ভিন্নতা রয়েছে। মন্তব্যটি যথার্থ।
 সংসারে বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ নানারকম কাজ করে। কোনো কাজ ছোট বা হীন ভেবে যদি তা করা থেকে বিরত থাকা হয়, তবে নিজের প্রয়োজন মিটবে না এবং জীবনটা হুমকির মুখে পড়বে।
 উদ্দীপকের প্লেটো এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পে মাসি-পিসির কাজের মাঝে সাদৃশ্য থাকলেও কাজের উদ্দেশ্যগত ভিন্নতা রয়েছে। প্লেটো মিশর ভ্রমণকালে রাস্তার খরচ জোগাড়ের জন্য মাথায় করে তেল বিক্রি করতেন। তিনি সচ্ছন্দে চলাফেরার জন্য একাজ করেছিলেন। এই কাজের উদ্দেশ্যগত ভিন্নতা রয়েছে মাসি-পিসির সবজি বিক্রি করার ক্ষেত্রে।
 মাসি-পিসি নিঃসম্বল, অসহায়। বেঁচে থাকার অন্য কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য তারা ঘরের বাইরে যেতে বাধ্য হন। নিজেদের ভরণপোষণ এবং আশ্রিত আহ্লাদিকে বাঁচিয়ে রাখতে তারা গাঁ থেকে শাকসবজি ফলমূল কিনে শহরে গিয়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাদের এ ব্যবসা অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। জীবিকা নির্বাহের কঠিন সংগ্রামে তারা এ পথে নামেন। এটা যদি তারা না করতেন, তবে না খেয়ে মরতে হতো। কিন্তু উদ্দীপকের প্লেটোকে তেলের ব্যবসা না করলে আর যাই হোক না খেয়ে মরতে হতো না। তাই বলা যায়, উভয় কাজে উদ্দেশ্যগত ভিন্নতা রয়েছে, যা প্রশ্নের মন্তব্যকে যথার্থ প্রতিপন্ন করেছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জামাল : আবে চাষা আবু, তোর ভাত খাওয়া শেষ হলো। জলদি কর, না হয় ঘরে ঢুকে তোর গলার মধ্যে লাঠি ঢুকিয়ে দেব।
আবু : বললাম যে চারটে খেয়ে নিই। যেখানে যেতে বলবে, যাব। এত গলাবাজি কর কেন পেয়াদাজী।
জামাল : নখরামি রাখ। চল। …
আবু : ছাড়। গায়ে হাত দিও না। আমি কি চুরি করেছি, আমি কি জমিদারের ঘরে আগুন দিয়েছি?
জামাল : খরবদার আর একটাও ফালতু কথা বলবি না। ছোট মালিকের হুকুম তোকে তুরন্ত হাজির হতে হবে। …
আবু : কি, এতখানি কথা। জমিদারের কুত্তাÑ (আবি দাওয়া থেকে দা তুলে নিল।)
[তথ্যসূত্র : জমিদার দর্পণ- মীর মশারফ হোসেন
ক. কানাইয়ের সাথে কতজন পেয়াদা এসেছিল?
খ. ঈষৎ তন্দ্রার ঘোরে আহ্লাদি শিউরে ওঠে কেন?
গ. উদ্দীপকের জামাল ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি?Ñ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করে কি?তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও। ১



৮ নং প্রশ্নের উত্তর

 কানাইয়ের সাথে তিন জন পেয়াদা এসেছিল।

 সংসারে নিজের অবস্থান, অত্যাচারী স্বামীর ঘরে ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে সে শিউরে উঠেছিল।
 আহ্লাদি যদিও সবকিছু মেনে নিয়ে আবারও অত্যাচারী স্বামীর ঘরে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু যখন সে ভাবে স্বামীর অত্যাচারের কথা এবং মাসি-পিসিকে ছেড়ে থাকার কথা, তখন সে ভয়ে শিউরে ওঠে। তার দুই পাশে মাসি-পিসিকে না নিয়ে শুলে ঘুম আসে না। তাই এই পরিস্থিতির ব্যতিক্রম চিন্তায় সে ভয়ে শিউরে ওঠে।

 উদ্দীপকের জামাল ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কানাই চরিত্রের প্রতিনিধি।
 এ সমাজে অনেক লোক আছে যারা নিজ স্বার্থের জন্য ক্ষমতাধরদের পা-চাটা কুকুরে পরিণত হয়। নিজেদের ব্যক্তিত্ব বলে এদের কিছু থাকে না। প্রভুর কথায় এরা সাধারণ মানুষের উপর জুলুম করে।
 উদ্দীপকের জামাল এ ধরনের একজন মানুষ। সে জমিদারের হুকুমে চাষি আবুকে ডাকতে আসে এবং অমানবিক আচরণ করে। প্রভুর মনোরঞ্জনের জন্য সমস্ত মানবিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে দুর্বলের উপর নির্যাতন চালানোর চেষ্টা করে। এমনই একটা চরিত্র ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কানাই। সেও তার প্রভুর হুকুমে অন্যায় কাজ করতে দ্বিধা করে না। রাতের বেলায় মাসি-পিসিকে বাড়ির বার করে আহ্লাদিকে গোকুলের হাতে তুলে দেয়ার কুৎসিত উদ্দেশ্যে মাসি-পিসির উপর জুলুম করে।

 না, উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করে না।
 ‘মাসি-পিসি’ গল্পটিতে স্বামী দ্বারা অত্যাচারিত পিতৃমাতৃহীন এক অসহায় তরুণীর জীবনকাহিনি বর্ণিত হয়েছে গভীর মমতায়। লেখক এ গল্পে সমাজের নানা অসংগতির দিক তুলে ধরেছেন অসামান্য শিল্প-কুশলতায়। উদ্দীপকের বিষয়টি এর একটি মাত্র ভাবকে ধারণ করেছে।
 উদ্দীপক দেখা যায়, এক মানুষরূপী প্রভুভক্ত কুকুরের কুৎসিত আচরণ জামাল পেয়াদার মাঝে। যে কিনা জমিদারের হুকুমে সাধারণ চাষিদের উপর জুলুম, নির্যাতন করে। ‘মাসি-পিসি’ গল্পে এ দৃশ্য দেখতে পাই কানাই যখন ‘মাসি-পিসিকে’ জোর করে তুলে নিতে চায় তার মালিকের হুকুমে। তবে এ বিষয়টি গল্পের একটি মাত্র দিক। এর পাশাপাশি গল্পে অন্যান্য বিষয়ও উঠে এসেছে।
 গল্পটিতে একে একে তুলে ধরা হয়েছে দুন নিঃস্ব বিধবার জীবন যুদ্ধের চিত্র। মাসি-পিসি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে, স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় আহ্লাদিকে এ সমাজের বিরূপ পরিস্থিতিতে বাঁচিয়ে রাখতে নিরন্তর সংগ্রাম করে চলেছে। এ বিষয়টিই গল্পটিকে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। এই পুরুষ শাসিত সমাজের অত্যাচারী স্বামী, কুরুচিপূর্ণ মানুষ, লোলুপ জোতদার, দারোগা, গুণ্ডা-বদমাশদের আক্রমণ থেকে সন্তানত‚ল্য আহ্লাদিকে বাঁচাতে অসহায় দুই বিধবার দায়িত্বশীল ও মানবিক জীবন যুদ্ধের চিত্র লেখকের অসামান্য শিল্প দক্ষতার জন্য বাস্তব রূপে আমাদের সামনে উঠে এসেছে। এসব বিষয় উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি মাসি-পিসি গল্পের সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করেনি।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ধনীকন্যা তাহেরাকে বিয়ে দেয় অপেক্ষাকৃত দরিদ্র নাফিজের সাথে। এজন্য তাহেরা নাফিজকেই দোষ দেয় এবং তাকে সহ্য করতে পারে না। নাফিজ সৎ, হৃদয়বান এবং স্ত্রীকে সে প্রাণাধিক ভালোবাসে। তাহেরা একে স্রেফ ন্যাকামি মনে করে এবং বাবার টাকার অহংকারে নাফিজের ঘর করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে।
ক. ‘পদ্মানদীর মাঝি’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোন ধরনের সাহিত্যকর্ম?
খ. আহ্লাদি কেন স্বামীর ঘরে যেতে চায় না?
গ. উদ্দীপকের নাফিজের সাথে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের জগুর বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. উদ্দীপকের তাহেরা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির স্বামীর ঘর ছাড়ার কারণ এক নয়।”মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর। ১



৯ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘পদ্মানদীর মাঝি’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।

 পাষণ্ড স্বামীর অত্যাচার, নির্যাতনের ভয়ে আহ্লাদি স্বামীর ঘরে যেতে চায় না।
 আহ্লাদির স্বামী জগু নেশাখোর, লম্পট। তার মধ্যে কোনো মানবিকতার ছোঁয়া নেই। সে অমানুষের মতো আহ্লাদিকে নির্যাতন করে। লাথি, ঝাঁটা, কলকেপোড়া ছ্যাঁকা, খুঁটির সাথে বেঁধে প্রহার করা -এভাবেই সে স্ত্রীকে নির্যাতন করে। যার জন্য আহ্লাদি স্বামীর ঘর ছাড়তে বাধ্য হয় এবং অত্যাচারের ভয়ে আবারও সেখানে যেতে চায় না।

 উদ্দীপকের নাফিজের সাথে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের জগুর বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
 এ সমাজে নানা ধরনের লোকজন বাস করে। কেউবা মহৎ হৃদয়ের অধিকারী হয়, কেউবা বিবেকহীন অমানুষে পরিণত হয়। ভালোমন্দ উভয় মিলে কোনোভাবে টিকে আছে আমাদের এই সমাজ। আমরা চাই মানুষের মাঝে অন্তত মানবিকতাটুকু বিদ্যমান থাক।
 উদ্দীপকের নাফিজ একজন হৃদয়বান সৎ ছেলে। কিন্তু তার এই সততার কোনো মূল্যায়ন সে পায় না। ধন-দৌলতের দাঁড়িপাল­ায় তার সততা মূল্য পায় না। তাইতো স্ত্রীকে ভালোবাসলেও প্রতিদানে শুধু অপমানই জোটে তার ভাগ্যে। এই নাফিজের ঠিক বিপরীত চরিত্র ‘মাসি-পিসি’ গল্পের জগু। সে লম্পট, মাতাল, চরিত্রহীন। স্বামী হয়ে স্ত্রীর উপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। আবার শ্বশুরের সম্পত্তির প্রতি লোভ করে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চায়। এমনই ঘৃণ্য চরিত্রের অধিকারী সে। এখানেই নাফিজের সাথে জগু চরিত্রের বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

 “উদ্দীপকের তাহেরার এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির স্বামীর ঘর ছাড়ার কারণ এক নয়। ”মন্তব্যটি যথার্থ।
 বিচিত্র মানুষের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে আমাদের সমাজ-সংসার। এখানে একেক জনের একেক রকম মূল্যবোধ, চেতনা, জীবনদর্শন। একজনে যা আশা করে, স্বপ্ন দেখে অন্যজন সেটা অবহেলার দু’পায়ে মাড়িয়ে চলে যায়। এজন্যই জীবন এত বিচিত্র।
 উদ্দীপকে তাহেরা ধনীকন্যা। বিয়ে হয় অপেক্ষাকৃত দরিদ্র নাফিজের সাথে, যা তাহেরা মেনে নিতে পারে না। তাই টাকার অহংকারে স্বামীর আন্তরিক ভালোবাসাকে সে পদদলিত করে। এক সময় তাকে ত্যাগ করে বাবার বাড়ি চলে যায়। ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদিকেও বাবার বাড়ি ফিরে আসতে হয়, তবে সেটা অন্য কারণে।
 ‘মাসি-পিসি’ গল্পটি এই আহ্লাদির জীবনকাহিনি নিয়ে রচিত। সে স্বামী-পরিত্যক্তা পিতৃমাতৃহীন নিঃস্ব। স্বামী তাকে দিনের পর দিন অত্যাচার করতো। লাথি, ঝাঁটা, কলকেপোড়া ছ্যাঁকা খেয়ে তাকে স্বামীর ঘর ছাড়তে বাধ্য হতে হয় এবং অসহায় মাসি-পিসির আশ্রয়ে এসে উঠতে হয়। তার এই বাবার বাড়ি আসার কারণ আর উদ্দীপকের তাহেরার বাবার বাড়ি আসার কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাহেরা স্বামীকে অপমান করে, স্বামীর ভালোবাসাকে টাকার অহংকারে অস্বীকার করে চলে আসে। অন্যদিকে আহ্লাদি স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়ি ফিরে আসে। তাই বলা যায়, তাহেরা এবং আহ্লাদির বাবার বাড়ি ফিরে আসার কারণ এক নয়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সাবিনা ও রেহানা দুই বোন। দুজনেরই স্বামী মারা যাওয়ার পর ভাইয়ের কাছে এসে আশ্রয় নেয়। ভাইয়ের দরিদ্র সংসারে তারা নিজেদের বোঝা মনে করে, তাই জীবিকার ভিন্ন পথ খোঁজ করে এবং পেয়েও যায়। গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁস-মুরগির ডিম কিনে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে, যা আয় করে তা ভাইয়ের হাতে তুলে দেয়। ক্রমে তাদের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসে।
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কত বছর বয়সে প্রথম গল্প ‘অতসীমামী’ রচনা করেন?
খ. রাতের বেলা কানাই পেয়াদা নিয়ে আসে কেন?
গ. উদ্দীপকের সাবিনা ও রেহানা ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আংশিক ভাব ধারণ করেছে মাত্র।”মন্তব্যটি বিচার কর। ১



১০ নং প্রশ্নের উত্তর

 মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ বছর বয়সে প্রথম গল্পগন্থ ‘অতসীমামী’ রচনা করেন।

 মাসি-পিসিকে কাছারি বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য কানাই রাতের বেলা আসে।
 কানাই রাতের বেলা এসে হাঁক দেয় মাসি-পিসিকে তাদের কাছারি বাড়ির দারোগা বাবুর সামনে হাজির হবার জন্য। কিন্তু তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। কাছারি বাড়ির কথা বলে মাসি-পিসিকে বাড়ি থেকে বের করতে পারলে তারা অসহায় আহ্লাদিকে গোকুলের হাতে তুলে দিতে পারবে। এজন্য কানাই তিনজন পেয়াদা নিয়ে রাতের বেলা মাসি-পিসির বাড়িতে আসে।

 উদ্দীপকের সাবিনা ও রেহানা ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসির জীবন সংগ্রামের বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
 এ জগতে টিকে থাকার জন্য মানুষকে নিরন্তর লড়াই করতে হয়। যে লড়াইয়ে জয়লাভ করে তার অস্তিত্ব বজায় থাকে আর যে পরাজিত হয় সে নিষ্ঠুর বাস্তবতার শিকার হয়ে কালের অতল গর্ভে তলিয়ে যায়। উদ্দীপকের সাবিনা ও রেহানা এবং গল্পের মাসি-পিসিকে দেখা যায় জীবন-যুদ্ধে লিপ্ত হতে।
 উদ্দীপকের সাবিনা ও রেহানা স্বামী মারা যাওয়ার পর গরিব ভাইয়ের সংসারে আশ্রয় নেয়। একসময়ে নিজেদের বোঝা মনে করে নিজেরাই জীবন-যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গল্পে মাসি-পিসিকেও দেখা যায় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নামতে। দেশের মন্বন্তরের সময় নিজেদের ভরণপোষণ এবং অসহায় আহ্লাদিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তারা জীবন-যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এখানেই উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য বিদ্যমান।

 “উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আংশিক ভাব ধারণ করেছে মাত্র।মন্তব্যটি যথার্থ।
 উত্থান-পতন বিচিত্র মানবজীবনের একটা অংশ। মানুষের জীবন সবসময় একভাবে যায় না। কখনো সুখ, কখনো দুঃখের ভেতর দিয়ে জীবনটা অতিবাহিত হয়। এজন্য দুঃখের সময় শক্ত হাতে পরিস্থিতির মোকাবেলা করলে সুখের সময় আসবেই। তার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া বাঞ্ছনীয়।
 উদ্দীপকে সাবিনা ও রেহানা চরম দুঃখের দিনে হাল না ছেড়ে জীবন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সামাজিক বাধা উপেক্ষা করে ডিমের ব্যবসা করে ভাইয়ের সংসারে তথা নিজেদের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। ‘মাসি-পিসি’ গল্পেও মাসি-পিসির এধরনের প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। তবে এ বিষয়টি গল্পের একমাত্র বিষয় নয়।
 ‘মাসি-পিসি’ গল্পে বর্ণিত হয়েছে স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার পিতৃমাতৃহীন অসহায় এক তরুণীর জীবনকাহিনি। যার শেষ আশ্রয় মাসি-পিসি। আশ্রয়দাতা তারা নিঃস্ব, বিধবা। জীবন যুদ্ধে তারাও বিপর্যস্ত। তবে তারা হাল ছাড়েনি। এই নিষ্ঠুর সমাজে কারো কাছে কোনো সহযোগিতা বা সহানুভ‚তি না পেয়ে নিজেরাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় নেমে পড়ে কাজে। সাথে সাথে তারা এই ঘুণে ধরা সমাজের কুদৃষ্টি থেকে সন্তানতুল্য আহ্লাদিকে রক্ষা করে। এজন্য তাদের নিরন্তর বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। গল্পে আরও বর্ণিত হয়েছে অত্যাচারী স্বামীর আচরণ, লালসায় উন্মাত্ত জোতদারের লোলুপতা ইত্যাদি। এদের কাছ থেকে আহ্লাদিকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে মাসি-পিসির দায়িত্বশীল ও মানবিক জীবন যুদ্ধ বর্ণিত হয়েছে। এর মাঝের একটি বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয় উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

 

ক জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
১. আহ্লাদি কোন পর্যন্ত ঘোমটা টেনে দেয়?
উত্তর : আহ্লাদি সিঁথির সিঁদুর পর্যন্ত ঘোমটা টেনে দেয়।
২. কী উপলক্ষে মাসি-পিসি উপোস ছিল?
উত্তর : শুক্লপক্ষের একাদশী উপলক্ষে মাসি-পিসি উপোস ছিল।
৩. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত প্রথম গল্পের নাম কী?
উত্তর : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত প্রথম গল্পের নাম ‘অতসীমামী’।
৪. ‘মাসি-পিসি’ গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়?
উত্তর : ‘মাসি-পিসি’ গল্পটি ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
৫. মাসি-পিসি কী পণ করেছে?
উত্তর : মাসি-পিসি আহ্লাদিকে জগুর ঘরে ফেরত না পাঠানোর পণ করেছে।
৬. কার শ্বাশুড়ি-ননদ বাঘের মতো ছিল?
উত্তর : আহ্লাদির মাসির শ্বাশুড়ি-ননদ বাঘের মতো ছিল।
৭. আহ্লাদির জমিজমার সিকিভাগ ছাড়া বাকিটা কার দখলে গেছে?
উত্তর : আহ্লাদির জমিজমার সিকিভাগ ছাড়া বাকিটা গোকুলের দখলে গেছে।
৮. আহ্লদিকে পাওয়ার জন্য কে হাল ছাড়েনি?
উত্তর : আহ্লাদিকে পাওয়ার জন্য গোকুল হাল ছাড়েনি।
৯. কীভাবে আহ্লাদির বাবা, মা, ভাই মারা গিয়েছিল?
উত্তর : কলেরায় আক্রান্ত হয়ে আহ্লাদির বাবা, মা ও ভাই মারা গিয়েছিল।
১০. আহ্লাদির পিসির স্বভাব বদলেছিল কখন?
উত্তর : ছেলে হওয়ার পর আহ্লাদির পিসির স্বভাব বদলেছিল।
১১. কখন কৈলেশের স্বভাব বিগড়ে যায়?
উত্তর : হাতে দুটো পয়সা এলে কৈলেশের স্বভাব বিগড়ে যায়।
১২. মাসি-পিসির চিৎকারে কে দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়?
উত্তর : মাসি-পিসির চিৎকারে কানাই চৌকিদার দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়।
১৩. কৈলেশের কাছে কোন ব্যাপারটি প্যাঁচালো মনে হয়েছিল?
উত্তর : কৈলেশের কাছে আহ্লাদির গর্ভবতী হওয়ার ব্যাপারটি প্যাঁচালো মনে হয়েছিল।
১৪. ‘সোমত্ত মেয়া’ বলে কাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে?
উত্তর : ‘সোমত্ত মেয়া’ বলে আহ্লাদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
১৫. ভালোয় ভালোয় না গেলে কানাই মাসি-পিসিকে কীভাবে কাছারিবাড়ি নিয়ে যাবার হুকুমের কথা বলে?
উত্তর : ভালোয় ভালোয় না গেলে কানাই মাসি-পিসিকে ধরে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাবার হুকুমের কথা বলে।
১৬. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস কোথায়?
উত্তর : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস বিক্রমপুরে।

খ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
১. বুড়ো রহমানের চোখ ছলছল করে কেন?
উত্তর : মেয়ের কথা মনে হওয়ায় বুড়ো রহমানের চোখ ছলছল করে।
আহ্লাদির চেয়ে বয়সে ছোট মেয়েটাকে রহমান বিয়ে দিয়েছিল। অবুঝ মেয়েটা শ্বশুরবাড়ি না যাওয়ার জন্য খুব কেঁদেছিল। কিন্তু তার ভালোর জন্যই তাকে জোর জবরদস্তি করে শ্বশুরবাড়ি পাঠায় রহমান। সেখানে গিয়ে অল্পদিন পরেই মেয়েটা মারা যায়। একই সমস্যার শিকার আহ্লাদিকে দেখে মেয়ের কথা মনে হওয়ায় রহমানের চোখ ছলছল করে।
২. জগু মাসি-পিসির বিরুদ্ধে মামলা করবে কেন?
উত্তর : আহ্লাদিকে ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য জগু মাসি-পিসির বিরুদ্ধে মামলা করবে।
পাষণ্ড স্বামীর অত্যাচার থেকে আহ্লাদিকে রক্ষা করার জন্য মাসি-পিসি তাকে নিজেদের কাছে রাখে। আহ্লাদির স্বামী জগু বার বার তাকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেতে চাইলেও মাসি-পিসি যেতে দেয় না। এতে জগুর মনে হয় যে, তার বিয়ে করা বউকে মাসি-পিসি বদ মতলবে আটকে রেখেছে এবং তাকে দিয়ে পয়সা-কামাচ্ছে। এজন্যই সে মাসি-পিসির বিরুদ্ধে মামলা করবে।

Share to help others:

Leave a Reply