নেকলেস
লেখক পরিচিতি
নাম প্রকৃত নাম : গী দ্য মোপাসাঁ
ছদ্মনাম : ঐবহৎর-জবহৎর-অষনবৎঃ-এুঁ ফব গধঁঢ়ধংংধহঃ
জন্ম পরিচয় জন্ম তারিখ : ৫ আগস্ট, ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ
জন্মস্থান : নর্মান্ডি, ফ্রান্স।
বংশ পরিচয় পিতার নাম : গুস্তাভ দ্যা মোপাসাঁ
মাতার নাম : লরা লি পয়টিভিন
শিক্ষাজীবন নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল, ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দ।
সাহিত্য-অভিভাবক পারিবারিক বন্ধু ঔপন্যাসিক গুস্তাভ ফ্লবেয়ার।
পেশা/কর্মজীবন সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চা। কাব্যচর্চা দিয়ে শুরু, গল্পকার হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন। তাঁর বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষতার তুলনা বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে বিরল। অসাধারণ সংযম ও বিস্ময়কর জীবনবোধে তাঁর রচনা তাৎপর্যপূর্ণ।
মৃত্যু ৬ জুলাই, ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দ।
অনুবাদক পরিচিতি
নাম পূর্ণেন্দু দস্তিদার।
জন্ম পরিচয় জন্ম তারিখ : ২০ জুন, ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দ।
জন্মস্থান : ধলঘাট, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
বংশ পরিচয় পিতার নাম : চন্দ্রকুমার দস্তিদার
মাতার নাম : কুমুদিনী দস্তিদার
পেশা/ কর্মজীবন আইনজীবি, লেখক ও রাজনীতিবিদ।
বিশেষ কর্ম মাষ্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে অংশ গ্রহণ ও কারাবরণ।
প্রকাশিত গ্রন্থ ‘কবিয়াল রমেশ শীল’, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামে’, ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’।
অনুবাদ : ‘শেখভের গল্প’ ‘মোপাসাঁর গল্প’।
মৃত্যু ৯ মে, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ (মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ভারতে যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন।)
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মেধাবী রুবিনার বাবা খুব সামান্য বেতনে চাকরি করেন। তার সহপাঠীরা সকলেই অবস্থাপন্ন পরিবারের। সহপাঠীদের পোশাক, জীবনাচরণের সঙ্গে রুবিনার কিছুতেই খাপ খায় না। তবু তা নিয়ে সে মোটেই হীনমন্যতায় ভোগে না। তার ধনী সহপাঠীরাও রুবিনার বাহ্যিক চাকচিক্যের চেয়ে তার মেধাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। নিজের কঠোর পরিশ্রমে রুবিনা পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করে। আজ তিনি একজন বড় কর্মকর্তা।
ক. বন্দুক কিনতে মসিঁয়ে কত ফ্রঁাঁ সঞ্চয় করেছিল?
খ. মাদাম লোইসেল আমন্ত্রণ-লিপিখানা টেবিলের উপর নিক্ষেপ করেন কেন?
গ. রুবিনার সঙ্গে মাদাম লোইসেলের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি বর্ণনা কর।
ঘ. পারস্পরিক সাদৃশ্য থাকা সত্তে¡ও জীবন পরিণতিতে দুজনের জীবন ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত।Ñ উক্তিটি বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
১ নং প্রশ্নের উত্তর
চারশ ফ্রঁাঁ সঞ্চয় করেছিল।
শিক্ষামন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার মতো কোনো ভালো পোশাক বা জড়োয়া গহনা মাদাম লোইসেলের ছিল না বলে আমন্ত্রণ লিপিখানা টেবিলের উপর নিক্ষেপ করে।
রুবিনার সঙ্গে মাদাম লোইসেলের সাদৃশ্যপূর্ণ দিক হলো কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা।
পরিশ্রমই মানুষের জীবনে সাফল্য বয়ে আনে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই নিজ শক্তি সম্পর্কে মানুষ সজাগ হয়। এর মধ্যদিয়ে মানুষ দুঃখ, যন্ত্রণাকে জয় করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায়।
‘নেকলেস’ গল্পে প্রথম জীবনে মাদাম লোইসেল একজন উচ্চাভিলাষী নারী ছিল। কিন্তু ভাগ্য তাকে এই উচ্চাভিলাষী জীবনের আকাক্সক্ষা থেকে বিচ্যুত করেছে। সংসারে যখন প্রবল দারিদ্র্য উপস্থিত, তখন সে তাকে জয় করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে। শেষ পর্যন্ত সে সফল হয়েছে। উদ্দীপকের রুবিনাও কঠোর পরিশ্রমী। নিজের দারিদ্র্য নিয়ে সে কখনো হীনæ্যতায় ভোগে না; বরং কঠোর পরিশ্রম করে সফলতার দিকে ধাবিত হয়।
কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতায় সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের রুবিনার সাফল্য ও মাদাম লোইসেলের সাফল্য ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত।
দুঃখ, দারিদ্র্য ব্যর্থতাকে জয় করার একমাত্র উপায় হলো পরিশ্রম। আলস্য জীবনের করুণ পরিণতিকেই ডেকে আনে। পক্ষান্তরে পরিশ্রম বয়ে আনে সৌভাগ্য ও সফলতা।
‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেল দারিদ্র্য ও দেনার দায় থেকে মুক্তির জন্য কঠোর পরিশ্রম শুরু করে। তারা বাসা বদল করে, দাসীকে বিদায় করে, ঘরের সবকাজ সে একে করে। এভাবে দশ বছর পর তারা তাদের দেনা পরিশোধ করে এবং কিছু সঞ্চয়ও করতে সমর্থ হয়। উদ্দীপকের রুবিনাও কঠোর পরিশ্রমী। নিজের মেধা ও পরিশ্রমই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ দিয়েই শেষ পর্যন্ত সে সফল হয়।
উদ্দীপকের রুবিনা ও ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল উভয়েই পরিশ্রমী। রুবিনা নিজ পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয় আর মাদাম লোইসেল দেনার দায় থেকে মুক্তি পায় এই পরিশ্রমের বিনিময়ে। তার সাদৃশ্য থাকলেও তাদের জীবন পরিণতি ভিন্ন।
অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মিরাজ সাহেব ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে হারিয়ে ফেললেন সমস্ত বিষয় সম্পত্তি। এমনকি তাদের রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িও উঠল নিলামে। কিন্তু সাহস ও মনোবল দিয়ে তিনি টিকে রইলেন কঠোর পরিশ্রম করে। শুরু করলেন নতুন ব্যবসা। শোধ করতে লাগলেন ব্যাংক ঋণ। এত বড় বিপদে একমাত্র মনোবল ও সাহসই তাঁকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
ক. লোইসেল ও তার স্ত্রী ঋণ শোধের জন্য কত বছর কষ্ট করেছিল?
খ. ‘সামান্য একটি বস্তুতে কী করে একজন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে আবার বাঁচতেও পারে।’Ñ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সিরাজ সাহেবের মনোভাব কীভাবে ‘নেকলেস’ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে? Ñব্যাখ্যা কর।
ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও ‘নেকলেস’ গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উদ্দীপকে উপস্থিত।”Ñ বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
২ নং প্রশ্নের উত্তর
লোইসেল ও তার স্ত্রী ঋণ শোধের জন্য দশ বছর কষ্ট করেছিল।
সামান্য একটি বিষয় মানুষের জীবনের উত্থান-পতনের কারণ হতে পারে।
লোভ-লালসা, প্রভৃতি খারাপ রিপু দ্বারা তাড়িত হয়ে মানুষ নিজের ধ্বংসের পথ সুগম করে। এসব খারাপ পথ পরিহার করে সততা, ন্যায়, নিষ্ঠা, দৃঢ়তার সাথে অগ্রসর হলে মানুষের যেকোনো কাজে বিজয় সুনিশ্চিত। এজন্যই বলা হয়েছে যে, সামান্য একটি বস্তুতে একজন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে আবার বাঁচতেও পারে। কেননা, অন্যায়ের পথ মানুষের ধ্বংস সাধন করে আর ন্যায়ের পথ মানুষের উন্নতি ঘটায়।
মি. লোইসেলের গহনাটি ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে উদ্দীপকের মিরাজ সাহেবের মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে।
মানুষের জীবনে বড় হওয়া এবং পৃথিবীতে ভালোভাবে টিকে থাকার জন্য মনোবল ও সাহস থাকা খুব জরুরি। এ দুটি থাকলে মানুষ যেকোনোভাবে জীবনের সমস্ত দুর্দশা কাটিয়ে উঠে উন্নতির পথে অগ্রসর হতে পারে।
উদ্দীপকের মিরাজ সাহেবের দুর্দিনে মনোবল অটুট রেখে সব কিছু নতুন করে শুরু করার মতো উদ্যম দেখানো হয়েছে। তিনি তার এই মনোবলের জন্যই বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তা ছাড়াও সমস্ত সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যাওয়ার মতো সাহসও পেয়েছিলেন। তেমনি মাদাম লোইসেলের বান্ধবীর হারটি নতুন করে কিনে দিয়ে মি. লোইসেল বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। সে সময় যদি তিনি মনোবল ও সাহসের মাধ্যমে পথ না চলতেন তাহলে সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারতেন না। দেরি হলেও সমস্ত দুঃখ কষ্টকে পেছনে ফেলে মি. লোইসেলের সামনে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে উদ্দীপকের মিরাজ সাহেবের মনোভাব তুলে ধরা হয়েছে।
প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও নতুন করে সব কিছু শুরু করার বিষয়টি উদ্দীপক ও ‘নেকলেস’ গল্প দু’জায়গাতেই উপস্থিত, আর এখানেই উদ্দীপক ও ‘নেকলেস’ গল্পের মিল রয়েছে।
‘নেকলেস’ গল্পে বান্ধবীর হারিয়ে যাওয়া হারটি ফেরত দেয়ার পরিস্থিতি না থাকলেও লোইসেল পরিবার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। নিজেদের যা ছিল তা ছাড়া কিছু ঋণও করে। কিন্তু কোনোক্রমেই নিজেদের আত্মমর্যাদা তারা ভূলুণ্ঠিত হতে দেন নি। এই ঘটনার পর ঋণ পরিশোধের জন্য লোইসেল পরিবারকে অনেক কষ্ট করতে হয়। জীবনের বিলাসিতা বর্জন করে তারা নিজেকে শুধু কাজে মনোনিবেশ করে। আর এভাবে এক সময় তারা তাদের সমস্ত ঋণ পরিশোধ করে, কিছু সঞ্চয় করতেও সমর্থ হয়। শুধু অটুট মনোবলের কারণেই তারা এ অসাধ্য সাধন করতে পেরেছিল।
উদ্দীপকে দেখা যায়, অনেক ধনী থাকা সত্তে¡ও মিরাজ সাহেব ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে সমস্ত বিষয়-সম্পত্তি হারিয়ে ফেলেন। তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি হারিয়েও অসম্ভব মনের শক্তিতে নতুন করে আবার ব্যবসা শুরু করলেন। সততা ও নিষ্ঠার সাথে কঠোর পরিশ্রম করলে যে অসাধ্যকেও সাধন করা সম্ভব, সেটি উদ্দীপকের মিরাজ সাহেব এবং ‘নেকলেস’ গল্পের মি. লোইসেলকে দেখলে বোঝা যায়।
দৃঢ় মনোবল, সততা, সাহস এবং কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতার মতো ভালো গুণগুলোর সন্নিবেশ ঘটেছে উদ্দীপকের মিরাজ সাহেব ও ‘নেকলেস’ গল্পের মি. লোইসেলের মধ্যে। এ গুণগুলোর কারণেই তারা প্রচণ্ড বিপদের মুখোমুখি হয়েও সেখান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পেতে সফল হয়। মনের দৃঢ়তার মাধ্যমে দুঃসময়গুলোর মুখোমুখি হওয়ার দৃঢ়তা উদ্দীপক ও ‘নেকলেস’ গল্পে দেখা যায়। এজন্যই বলা হয়েছে যে, “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও ‘নেকলেস’ গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উদ্দীপকে উপস্থিত।”
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
দৈন্য যদি আসে আসুক লজ্জা কিবা তাহে?
মাথা উঁচু রাখিস
সুখের সাথী মুখের পানে যদি না চাহে,
ধৈর্য ধরে থাকিস।
ক. “নিয়তির ভুলেই যেন এক কেরানির পরিবারে তার জন্ম হয়েছে।”Ñকার?
খ. মাদাম লোইসেল কেন তার ধনী বান্ধবীর সাথে দেখা করতে চাইত না?
গ. উদ্দীপকের ভাবনার সাথে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেলের ভাবনার বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. ‘নেকলেস’ গল্পের প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের অংশটুকুর যৌক্তিকতা তুলে কর। ১
২
৩
৪
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
এখানে ‘তার’ বলতে মাদাম লোইসেলকে বোঝানো হয়েছে।
মাদাম লোইসেল গরিব হওয়ায় তার ধনী বান্ধবীর সাথে সে দেখা করতে চাইতেন না।
মাদাম লোইসেল ছিলেন উচ্চাকাক্সক্ষী মানসিকতার অধিকারী। কিন্তু তার ভালো জামা-কাপড় বা গহনা ছিল না। অথচ এগুলোই ছিল তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু। ধনী বান্ধবীর সাথে দেখা হলে তার সাথে নিজের তুলনা করলে মাদাম লোইসেলের কাছে নিজের গরিবি হাল আরও বেশি করে মূর্ত হয়ে উঠত। বান্ধবীর সাথে দেখা হওয়ার পর বিরক্তি, দুঃখ, হতাশা ও নৈরাশ্যে সমস্ত দিন ধরে তিনি কাঁদতেন। এ কারণেই মাদাম তার ধনী বান্ধবীর সাথে দেখা করতে চাইতেন না।
উদ্দীপকের ভাবনার সাথে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেলের ভাবনার যথেষ্ট বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
দরিদ্রতা মানুষের লজ্জার কোনো বিষয় নয়। বরং কেউ যদি এ অবস্থায়ও তার মাথা উঁচু রেখে চলে তবে তার সফলতা অনিবার্য। সুখ সবার কাম্য হলেও কখনো কখনো এটা মানুষের সঙ্গী না হয়ে অধরা থেকে যায়। যদি সুখের দেখা কেউ সহজে না পায় তবে তার উচিত ধৈর্য ধরে থাকা, কারণ ধৈর্যের ফল সুমিষ্ট হয়।
উদ্দীপকে দীনতাকে লজ্জার বিষয় না ভেবে মাথা উঁচু করে রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেল তার নিজের দীনতায় লজ্জিত। এছাড়াও উদ্দীপকে সুখ না আসলে ধৈর্য ধরার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু মাদাম লোইসেল ধৈর্য ধরতেও আগ্রহী নন। তার ধারণা সুখ, শান্তি, আভিজাত্য এসব কিছু তার কাছে এসে ধরা দেয়ার কথা ছিল। আর এ কারণে তিনি মিথ্যা আভিজাত্য দেখাতে গিয়ে নিজের জীবনে বিপদ ডেকে আনেন। এ বিষয়গুলোই উদ্দীপকের ভাবনার সাথে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেলের ভাবনার বৈসাদৃশ্য নিরূপণ করে।
‘নেকলেস’ গল্পের প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের অংশটুকু অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত।
মানুষ যদি তার সঠিক অবস্থা থেকে লজ্জিত হয় তবে তার পতন নিশ্চিত। বরং লজ্জিত না হয়ে যদি নিজের অভাবগ্রস্ত অবস্থাতেও মাথা উঁচু করে বাঁচা যায় তবে সেটি হয় খাঁটি মানুষের মতো বেঁচে থাকা। আর এ সময় যে ধৈর্য ধারণ করে সঠিকভাবে কাজ করতে সমর্থ হয় সে-ই সুখের স্পর্শ লাভ করে।
‘নেকলেস’ গল্পে দেখা যায় যে, মাদাম লোইসেল তার দরিদ্র জীবনের প্রতি অত্যন্ত বিরক্ত এবং হতাশ, এ জীবন তার কাছে একেবারেই কাম্য নয়। সে চায় ধনীদের মতো বিলাসিতা। এছাড়াও সে ভাবত যে, তার জন্ম হয়েছে ধনীদের মতো জীবনযাপন করার জন্য। এ সকল হঠকারী চিন্তায় সর্বদা নিমগ্ন থেকে মাদাম লোইসেল নিজের পরিবারের বিপদ ডেকে আনে এবং এর জন্য তাদের প্রায় দশ বছর এ বিপদের বোঝা বহন করে চলতে হয়।
‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল যদি তার নিজের পরিস্থিতিতে লজ্জিত না হয়ে ধৈর্য ধারণ করতেন তবে তার জীবনে এত বড়ো বিপর্যয় ঘটতো না। এজন্যই ‘নেকলেস’ গল্পের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্দীপকের অংশটুকু অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের কখান হাড়
সাক্ষী দেছে অনাহারে কদিন গেছে তার।
মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ রাশি
থাপরেতে নিবিয়ে গেছে দারুণ অভাব আসি
পরনে তার শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস
সোনালি তার গার বরণের করছে উপহাস।
ক. দীর্ঘদিন পর মাদাম ফোরস্টিয়ারের সাথে মাদাম লোইসেলের কোথায় দেখা হয়েছিল?
খ. মাদাম ফোরস্টিয়ার কেন মাদাম লোইসেলকে চিনতে পারলেন না?
গ. উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের একটি বিষয়ের প্রতিফলন ঘটলেও সমগ্রতা ধারণ করেনি।” উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও। ১
২
৩
৪
৪ নং প্রশ্নের উত্তর
চামপস্ Ñএলিমিস এ দেখা হয়েছিল।
দশ বছর পর দেখা হওয়ার পর মাদাম লোইসেলকে খুব সাধারণ দেখাচ্ছিল বলে মাদাম ফোরস্টিয়ার তাকে চিনতে পারলেন না।
মাদাম ফোরস্টিয়ারের হারিয়ে যাওয়া জড়োয়া গহনা ফেরত দিতে গিয়ে মাদাম লোইসেলকে ভয়াবহ দারিদ্র্য জীবনের মুখোমুখি হতে হয়। তাদের অবস্থা ঠিক হতে প্রায় দশ বছর লেগে যায়। আর এ দিনগুলো মাদাম লোইসেল কোনো কাজের লোক ছাড়াই সংসারের সমস্ত কাজ করেছেন। গরিব গৃহস্থ ঘরের অমার্জিত মেয়ের মতো অপরিপাটি চালচলনে মাদাম লোইসেলকে অনেক বয়স্কা লাগে। দশ বছরে মাদাম লোইসেলের এ ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে মাদাম ফোরস্টিয়ার তাকে চিনতে পারেন নি।
বান্ধবীর নেকলেস ফিরিয়ে দেয়ার পর মাদাম লোইসেলের সামনে যে পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছিল সে দিকটিই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।
মানুষের জীবনে যখন অভাবের আগমন ঘটে, তখন তার সমস্ত অবস্থার পরিবর্তন একত্রে সংঘটিত হয়। ঠিকতো খেতে না পাওয়ায় শরীরের হাড় দেখা যায়, মুখের হাসিও মলিন দেখায়। তা ছাড়া পরিধানের জন্য ভালো পোশাক না পাওয়াকে অভাবের দিকটিই নির্দেশ করে। তেমনি বান্ধবীর গহনা ফেরত দিতে গিয়ে মাদাম লোইসেলের পরিবার অভাবের মধ্যে পড়ে। সমস্ত কাজের লোককে বিদায় দিয়ে নিজে সংসারের সমস্ত কাজ করায়, সাধারণ পোশাক, অবিন্যস্ত চুলে মাদাম লোইসেলকে দেখে গৃহস্থ ঘরের মেয়ে বলে মনে হয় এবং বয়সের তুলনায় তাকে অনেক বেশি বয়স্কা লাগে।
‘নেকলেস’ গল্পে গরিব হয়ে যাওয়ার পর মাদাম লোইসেলের সার্বিক যে অবস্থা হয়েছিল সেটির সাথে উদ্দীপকের মিল রয়েছে। তাই বলা যায় যে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল যে দীনহীন অবস্থার মধ্যদিয়ে কালাতিপাত করেছিলেন সে দিকটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।
উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের একটি বিষয়ের প্রতিফলন ঘটলেও সমগ্রতা ধারণ করেনিÑ কথাটি সঠিক।
‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেলের হঠকারী চিন্তা-ভাবনার জন্য তাকে এবং তার স্বামীকে সমস্যায় পড়তে হয় এবং এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তাদের জীবনের দশ বছর অতি পরিশ্রমে ব্যয় হয়ে যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায় যে, পেট ভরে খেতে না পাওয়া এবং অনাহারের কারণে মানুষের বুকের হাড় বেরিয়ে যায়। মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেছে এবং শতছিন্ন বস্ত্র তার গায়ের রঙকে উপহাস করছে। এ বিষয়টি ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেলের অবস্থার সাথে দারুণভাবে মিলে যায়। বান্ধবীর হারানো হার ফিরিয়ে দিতে গিয়ে যে ঋণ নিয়েছিল সেটা পরিশোধ করতে গিয়ে মাদাম লোইসেলেরও একই অবস্থা হয়েছিল। অভাবগ্রস্ত হলে মানুষের কী অবস্থা হয় সেটি উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে, আর এটির সাথে মাদাম লোইসেলের কষ্টকর জীবনের মিল পাওয়া যায়। কিন্তু এ উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পে সমগ্রতা ফুটে ওঠেনি। কেননা, এটি শুধু ফলাফলের বর্ণনা দিয়েছে কিন্তু এর মধ্যে কর্মের বর্ণনা অনুপস্থিত।
মাদাম লোইসেলের উচ্চাকাক্সক্ষা এবং নিজেকে ধনী হিসেবে উপস্থাপিত করার যে চেষ্টা ছিল সেটির প্রতিফলন এ উদ্দীপকে অনুপস্থিত। উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের একটি বিষয়ের প্রতিফলন ঘটলেও সমগ্রতা ধারণ করে নি।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
চুরির দায়ে চাকরি হারানোর পর দুবছর পেরিয়েছে। তবুও কাজের অভাব হয় নি সাকিবের। মিথ্যে সাক্ষ্যের কারণে দুবছরে পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করার রায় হয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভাবের সংসার হলেও রাতদিন পরিশ্রম করে সাকিব ও তার স্ত্রী উভয়ে মিলে এ অসাধ্যকে সাধন করেছে।
ক. হারটি খুঁজতে গিয়ে পরদিন সকাল কয়টার দিকে লোইসেল বাড়ি ফিরে এলো?
খ. “ঐ জড়োয়া গহনা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা আমার করতে হবে।” উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের সাকিবের সঙ্গে ‘নেকলেস’ গল্পের মি. লোইসেলের সাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের পাত্র-পাত্রী যেন মাদাম ও তার স্বামী লোইসেলের মানসিকতার প্রতিচ্ছবি।”Ñউক্তিটি বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৫ নং প্রশ্নের উত্তর
হারটি খুঁজতে গিয়ে পরদিন সকাল সাতটার দিকে লোইসেল বাড়ি ফিরে এলো।
“ঐ জড়োয়া গহনা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে”Ñ মি. লোইসেল, তার স্ত্রীর হারটি হারিয়ে ফেলা প্রসঙ্গে এ কথাটি বলেছিল।
বল-নাচের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে বান্ধবীর জড়োয়া গহনা হারিয়ে ফেলে মাদাম লোইসেল। সমস্ত পথ খোঁজার পর না পেয়ে লোইসেল পুলিশের কাছে এবং গাড়ির অফিসে গিয়েছিল। এছাড়াও পুরস্কার ঘোষণা করে একটা বিজ্ঞাপনও দিয়ে এসেছিল। এরপরও এক সপ্তাহ কেটে যাওয়ায় কোনো সাড়া না পেয়ে সমস্ত আশা ত্যাগ করে লোইসেল বলেছিল যে, ওই জড়োয়া গহনা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।
উদ্দীপকের সাকিবের সঙ্গে ‘নেকলেস’ গল্পের মি. লোইসেলের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায় যে, সামান্য বেতনভুক্ত কর্মচারী সাকিবের চুরির দায়ে চাকরি চলে যায়। তা ছাড়া মিথ্যা মামলায় দুই বছরের মধ্যে তাকে পাঁচ লাখ টাকা শোধও করতে হয়। সামান্য আয়ের মানুষ হওয়া সত্তে¡ও দিনরাত পরিশ্রম করে সে এবং তার স্ত্রী মিলে টাকা পরিশোধ করেছে। অত্যন্ত সৎ মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের পক্ষেই এটা সম্ভব।
উদ্দীপকে নিজের দোষ না থাকলেও শাস্তি মাথা পেতে নিয়ে সমস্ত টাকা পরিশোধ করেছে সাকিব ও তার স্ত্রী। ‘নেকলেস’ গল্পেও জড়োয়া গহনাটি মাদাম লোইসেলের গলা থেকে হারিয়ে যাওয়ায় সেটি খুঁজে বের করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায় মি. লোইসেল। কিন্তু যখন তার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তখন তিনি তার পুরো জমানো টাকা এবং বেশকিছু টাকা ঋণ নিয়ে দেখতে একই রকম আর একটি হার কিনে তার স্ত্রীর বান্ধবীকে ফেরত দেয়ার কথা বলে। উদ্দীপকের সাকিবের এবং ‘নেকলেস’ গল্পের মি. লোইসেলের চরিত্রে যে সততা বিদ্যমান সেটিই তাদের কর্মকাণ্ডে ফুটে উঠেছে এবং তাঁদের দুজনার মধ্যে এ সাদৃশ্যটিই প্রতীয়মান হয়।
‘প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের পাত্র-পাত্রী যেন মাদাম ও তার স্বামী লোইসেলের মানসিকতার প্রতিচ্ছবি”Ñ উক্তিটি যথার্থ।
‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল বান্ধবীর হারটি কোনো ক্রমেই খুঁজে পাচ্ছে না। তখন তিনি বলেন যে, হারটি বানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। হারটি বানাতে গিয়ে তারা তাদের জমানো সমস্ত টাকা শেষ করে ফেলে এবং কিছু টাকা অতিরিক্ত সুদে ঋণও নেয়। সে সুদ এবং ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে তাদের জীবনযাত্রার মান বহু নিচে নেমে যায়। কিন্তু তবুও মি. লোইসেল এবং তার স্ত্রী কষ্টের কাছে পরাস্ত হয়। সততার কারণে মাদাম লোইসেল ও মি. লোইসেল বহু কষ্ট সহ্য করে। এত টাকার একটা জিনিস ফেরত দিতে গিয়ে তাদের জীবনে কষ্টের শেষ থাকে না।
উদ্দীপকে দেখা যায় যে, সাকিব সামান্য বেতনভুক্ত কর্মচারী হলেও তার মধ্যে সততার কোনোরূপ অভাব নেই। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় তাকে শুধু শুধু পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এমনিতেই অভাবগ্রস্ত পরিবার তার উপর এতগুলো টাকা দুবছরের মধ্যে পরিশোধ করতে গিয়ে সাকিব এবং তার স্ত্রীকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। অসম্ভব সততা এবং মনের জোর থাকায় কাজটি করতে পেরেছে সাকিব এবং তার স্ত্রী।
সৎ ও দৃঢ় মানসিকতার কারণে অসাধ্যকে সাধন করায় এ কথা বলা হয়েছে যে, “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের পাত্র-পাত্রী যেন মাদাম ও তার স্বামী লোইসেলের মানসিকতার প্রতিচ্ছবি”।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
‘নেকলেস’ গল্পটি পড়ানো শেষে বাংলা বিভাগের শিক্ষক অনিন্দ্য চৌধুরী ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেনÑ
“প্রয়োজনীয়তা যেমন উদ্ভাবনের জনক
তেমনি উচ্চাকাক্সক্ষা ও বিলাসিতা ধ্বংসের জননী।”
ক. বল-নাচে যাওয়ার জন্য মাদাম লোইসেল কার কাছ থেকে হারটি ধার নিয়েছিল?
খ. হারটি হারিয়ে গেলে সেটি কেনার পর মাদাম লোইসেল ও তার স্বামী কীভাবে ঋণ পরিশোধ করেছিল?
গ. উদ্দীপকটি কীভাবে ‘নেকলেস’ গল্পের সাথে সম্পর্কিত?Ñ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উচ্চাকাক্সক্ষা ও বিলাসিতা ধ্বংসের জননী”Ñউক্তিটি ‘নেকলেস’ গল্পের পরিণতির সাথে যেন একসূত্রে গাঁথা।Ñ মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর। ১
২
৩
৪
৬ নং প্রশ্নের উত্তর
বল-নাচে যাওয়ার জন্য মাদাম লোইসেল মাদাম ফোরস্টিয়ারÑএর কাছ থেকে হারটি ধার নিয়েছিল।
হারটি হারিয়ে গেলে সেটি কেনার পর মাদাম লোইসেল ও তার স্বামী অনেক কষ্ট করে ঋণ পরিশোধ করেছিল।
পাওনাদারের ঋণ পরিশোধের জন্য তারা কম টাকায় একটা বাসা ভাড়া করেছিল এবং দাসীদেরকে বিদায় করে দিয়েছিল। সাধারণ পরিবারের মেয়েদের মতো সংসারের সমস্ত কাজ করতে লাগলো মাদাম লোইসেল। অপরদিকে মাদাম লোইসেলের স্বামীও অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য সন্ধ্যাবেলাতেও কাজ করতো। এভাবে দশ বছর অমানুষিক পরিশ্রম করে মাদাম লোইসেল ও তার স্বামী ঋণ পরিশোধ করেছিল।
উদ্দীপক এবং ‘নেকলেস’ গল্পের মূল বক্তব্য প্রায় একই হওয়ায় উদ্দীপক এবং গল্পটি পরস্পর সম্পর্কিত।
মানুষের আকাক্সক্ষার কোনো শেষ নেই। কিন্তু নিজের ক্ষমতার কথা চিন্তা করে মানুষকে কোনো কিছু পাওয়ার আশা করা উচিত। সেক্ষেত্রে নিজেকে কিছুটা হলেও পতন হতে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
উদ্দীপকে উচ্চাকাক্সক্ষা ও বিলাসিতাকে ধ্বংসের জননী বলা হয়েছে। ‘নেকলেস’ গল্পেও এ বিষয়টিই উপস্থাপিত হয়েছে। মাদাম লোইসেল তার উচ্চাকাক্সক্ষাকে চরিতার্থ করতে গিয়ে তার স্বামীর জমানো টাকা শেষ করে ফেলে। পরবর্তীতে যখন নেকলেসটা হারিয়ে যায় তারা তাদের সমস্ত সম্পদ শেষ করে দিয়ে বান্ধবীকে নেকলেসটা ফেরত দেয় এবং তাদের কষ্টকর জীবন অতিবাহিত করতে থাকে। নিজের বর্তমান পরিস্থিতির চেয়ে অধিক করতে গিয়ে তারা যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে সে কথাটিই উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়েছে। নিজের প্রয়োজনের অধিক কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়ার বিষয়টি উদ্দীপকের সাথে ‘নেকলেস’ গল্পের সম্পর্ক নির্দেশ করে।
উচ্চাকাক্সক্ষা ও বিলাসিতা ধ্বংসের জননী’Ñ উক্তিটি ‘নেকলেস’ গল্পের পরিণতির সাথে যেন একসূত্রে গাঁথাÑ মন্তব্যটি যথার্থ।
‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল উচ্চাকাক্সক্ষী ছিলেন। তিনি চাইতেন সুন্দর ঘরে থাকবেন, ভালো জামা-কাপড় পরবেন, ভালো ভালো খাবার-দাবার খাবেন। তার মধ্যে বিলাসিতা করার ইচ্ছা ছিল প্রবল। প্রয়োজনীয়তা বিষয় পূরণ হওয়ার পরও এ উচ্চাকাক্সক্ষা এবং বিলাসী মনোভাবের জন্য তার নিজেকে সর্বদা অসুখী মনে হতো।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে যে, প্রয়োজন মানুষকে অনেক কিছু আবিষ্কার করতে শেখায়। যেমনÑ প্রয়োজনেই মানুষ আগুন, অস্ত্রসহ বিভিন্ন জিনিসের উদ্ভাবন করেছে। তেমনি উদ্দীপকে আরো বলা হয়েছে যে, উচ্চাকাক্সক্ষা ও বিলাসিতা ধ্বংসের জননী। আর এর যথার্থ প্রমাণ পাওয়া যায় ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল ছিলেন অত্যন্ত উচ্চাকাক্সক্ষী। তিনি ভাবতেন যে, তার জন্ম হয়েছে ধনীদের মতো অর্থাৎ বিলাসিতার মধ্যদিয়ে জীবনযাপন করার জন্য। এসব কথা চিন্তা করে তিনি সর্বদা দুঃখী ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে থাকতেন। নিজেকে ধনী প্রমাণিত করতে নাচের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য অন্যের কাছে থেকে গহনা চেয়ে নিয়ে এসে পরেন। অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে গহনাটি মাদাম লোইসেল হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে বান্ধবীকে হারটি ফেরত দিতে গিয়ে তাদের সমস্ত জমানো টাকা খরচ হয়ে উল্টো তারা আরো ঋণী হয়ে যায় এবং অবস্থার উন্নতি করার জন্য প্রায় দশ বছর মাদাম লোইসেল ও তার স্বামীকে প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হয়। ‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেল যদি নিজেকে বড় প্রমাণিত করতে না চাইতেন তাহলে তারা এ সমস্যায় পতিত হতেন না।
সুতরাং বলা যায়, “উচ্চাকাক্সক্ষা বিলাসিতা ধ্বংসের জননী”Ñ উক্তিটি ‘নেকলেস’ গল্পের পরিণতির সাথে যেন এক সূত্রে গাঁথাÑ মন্তব্যটি এ কারণেই যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আনন্দময়ী বিদ্যানিকেতনের প্রবীণ শিক্ষক ‘কর্মদোষে ফল লাভ’ গল্পটি পড়ানো শেষে ছাত্রদের দুটি উপদেশ দেন।
উপদেশÑ১. উচ্চাকাক্সক্ষা বশবর্তী হয়ে এমন কাজ করো না, যা তোমাদের বিপদে ফেলতে পারে।
উপদেশÑ২. সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারলেই নিজেকে সুখী ভাবা যায়।
ক. ‘নেকলেস’ গল্পে নিয়তির ভুলে কার জন্ম হয়েছিল কেরানির পরিবারে?
খ. মাদাম লোইসেলের মনে সর্বদা দুঃখ বিরাজ করতো কেন?
গ. উদ্দীপকের ২ নম্বর উপদেশ ‘নেকলেস’ গল্পের কোন দিকটির ইঙ্গিত বহন করে?Ñব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের উপদেশ দুটি ‘নেকলেস’ গল্পের চেতনাকেই ধারণ করে।”Ñ উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও। ১
২
৩
৪
৭ নং প্রশ্নের উত্তর
মাদাম লোইসেলের জন্ম হয়েছিল কেরানির পরিবারে।
দরিদ্রের মতো জীবনযাপন করতে হচ্ছে বলে মাদাম লোইসেলের মনে সর্বদা দুঃখ বিরাজ করতো।
মাদাম লোইসেল সুন্দরী তরুণী হওয়া সত্তে¡ও তার বিয়ে হয়েছে এক দরিদ্র কেরানির সাথে। ধারণা ছিল যতসব সুরুচিপূর্ণ ও বিলাসিতার বস্তু আছে সেগুলোর জন্যই তার জন্ম। নিজের উচ্চাকাক্সক্ষার ফল বাস্তবায়ন হচ্ছে না দেখে মাদাম লোইসেলের মনে সর্বদা দুঃখ বিরাজ করতো।
উদ্দীপকের ২ নম্বর উপদেশটি মাদাম লোইসেলের পরিবারের দুরবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে।
মানুষের জীবনে আকাক্সক্ষা বা সাধের শেষ নেই। একটার পর একটা আকাক্সক্ষা এসে হাজির হয়। কিন্তু যে সকল ইচ্ছা বা আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন করা নিজের পক্ষে সম্ভব নয়। সেসব আকাক্সক্ষা ঝেড়ে ফেলাই অবশ্য কর্তব্য। কেননা, কোনো কিছু পাওয়ার আগ্রহ থাকলেও নিজের সামর্থ্যরে কথা বিবেচনা করে সে অনুযায়ী চললে তাতে কল্যাণ হয়। তেমনি মাদাম লোইসেল যদি নিজের অবস্থার কথা বিবেচনা করে পথ চলতো তবে তাকে এতটা খারাপ পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করতে হতো না এবং এতটা কষ্টকর জীবনযাপনও করতে হতো না।
উদ্দীপকের মানুষের অবস্থা এবং আকাক্সক্ষাকে সমন্বয় সাধন করে চলার কথা বলা হয়েছে। ‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেল অধিক উচ্চাকাক্সক্ষার বশবর্তী হয়ে এ দুটি বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন না করায় যে বিপদে পতিত হয়েছে উদ্দীপকের ২ নম্বর উপদেশ সে দিকটির প্রতিই ইঙ্গিত করে।
উদ্দীপকের উপদেশ দুটি ‘নেকলেস’ গল্পের চেতনাকেই ধারণ করে।Ñ উক্তিটি যথাযথ।
‘নেকলেস’ গল্পে উচ্চাকাক্সক্ষার বশবর্তী হয়ে মাদাম লোইসেল নিজেও পরিবারকে বিপদে ফেলেন। তিনি যদি তার সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে চলতে পারতেন, তবে তাকে এত বড় সমস্যার মধ্যে পড়তে হতো না।
উচ্চাকাক্সক্ষার বশবর্তী হয়ে মানুষ তার স্বাভাবিক কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে অস্বাভাবিক আচরণও করে থাকে। যেমনÑ তিনি যে একজন দরিদ্র কেরানির স্ত্রী এ কথা জেনেও একমাত্র প্রবল উচ্চাকাক্সক্ষার কারণে তিনি নিজেকে অসুখী ভাবতে থাকে। শুধু তাই নয়, তিনি তার আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা না করেই বল-নাচ অনুষ্ঠানের জন্য একটা ড্রেস তৈরি করে। এরপরও তার আকাক্সক্ষার সমাপ্তি ঘটে না। সে তার স্বামীকে গহনার কথা বললে তার স্বামী তাকে গহনা হিসেবে ফুলের কথা বলে। কিন্তু মাদাম লোইসেল যুক্তি দেখায় যে এতে তাকে অপমানজনক লাগবে। অবশেষে সে অনুষ্ঠানে পরার জন্য বান্ধবীর কাছ থেকে গহনা ধার করে নিয়ে আসে। আর এ গহনাটি হারানোর মধ্যদিয়ে তার জীবনে করুণ অধ্যায়ের সূচনা ঘটে।
‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল যদি নিজের রিপুকে বশ করে নিজের বর্তমান পরিস্থিতিতে খুশি থাকতেন তাহলে তাকে কঠিন বিপদের মধ্যদিয়ে দিন অতিবাহিত করতে হতো না। মূলত মাদাম লোইসেল উচ্চাকাক্সক্ষার বশবর্তী হওয়ায় এবং সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় না ঘটিয়ে চলার জন্যই কষ্টের জীবনে পদার্পণ করতে বাধ্য হয়। অতএব “উদ্দীপকের উপদেশ দুটি ‘নেকলেস’ গল্পের চেতনাকেই ধারণ করে।”Ñ উক্তিটি যথাযথ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
“হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীস্টের সম্মান।”
ক. ‘নেকলেস’ গল্পটিতে কে দরিদ্র জীবনের ভয়াবহতা বুঝতে পারে?
খ. দারিদ্র্যের মধ্যে দীর্ঘদিন দিনাতিপাত করায় মাদামের অবস্থা কেমন হয়েছিল?
গ. কবিতাংশে কবির ভাবনার সঙ্গে মাদাম লোইসেলের ভাবনার বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. “উদ্দীপকের চেতনার বিষয়টি মাদাম লোইসেলের মধ্যে থাকলে তার পরিণতি হতো ভিন্ন”Ñমন্তব্যটি মূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
৮ নং প্রশ্নের উত্তর
নেকলেস গল্পটিতে মাদাম লোইসেল দরিদ্র জীবনের ভয়াবহতা বুঝতে পারে।
দারিদ্র্যের মধ্যে দীর্ঘদিন দিনাতিপাত করায় মাদামের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়েছিল।
বান্ধবীর জড়োয়া গহনা হারিয়ে ফেলার পর সেটা ফেরত দেয়ার জন্য মাদাম লোইসেল এবং তার স্বামী ঋণ নেয়। ঋণ পরিশোধের জন্য তার স্বামী সন্ধ্যাতেও কাজ করত আর মাদাম তার বাসার সব কাজের লোককে বিদায় দিয়ে সংসারের যাবতীয় কাজ নিজেই করা শুরু করে। ময়লা কাপড়-চোপড় পরা আর অবিন্যস্ত চুলে তাকে বয়স্কা লাগে। কাজ করতে করতে তার হাতগুলো লাল, শক্ত, কর্মঠ ও অমার্জিত মেয়ের মতো হয়ে গেছে। দশ বছর দারিদ্র্যের মধ্যে দিনাতিপাত করায় মাদাম লোইসেলকে দেখে বিশ্বাস করা কঠিন যে তিনি এক সময় চমৎকার সুন্দরী ছিলেন।
উদ্দীপকের কবির ভাবনার সঙ্গে মাদাম লোইসেলের ভাবনার বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
কবির মতে, দারিদ্র্য মানুষকে মহান করে তোলে। সোনা যেমন আগুনে পুড়িয়ে খাঁটি করা হয়, তেমনি দরিদ্রতার কষ্ট মানুষকে সঠিকপথে পরিচালিত এবং খাঁটি মানুষ হতে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে মানুষ সর্বোচ্চ সম্মানিত আসনে উপবিষ্ট হতে পারে।
উদ্দীপকে দারিদ্র্যকে অনেক বড় করে দেখানো হলেও ‘নেকলেস’ গল্পে দেখা যায় যে, মাদাম লোইসেল তার দারিদ্র্য অবস্থাকে ঘৃণা করে। মাদাম লোইসেল সুন্দরী হওয়ায় তিনি ভাবতেন যে সমস্ত বিলাসিতা করার জন্যই তার জন্ম হয়েছে। কিন্তু তার বিয়ে হয়েছে এক দরিদ্র কেরানির সাথে, যার ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, চলাফেরা, এমনকি পোশাক-আশাকও নিতান্ত গরিব মানুষের মতো। এ বিবর্ণ জীবনকে মাদাম লোইসেল ঘৃণা করত। ধনীদের মতো চলাফেরা করার উচ্চাকাক্সক্ষা ছিল তার। আর এখানেই উদ্দীপকের কবির ভাবনার সাথে মাদাম লোইসেলের ভাবনার বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।
উদ্দীপকের চেতনার বিষয়টি মাদাম লোইসেলের মধ্যে থাকলে তার পরিণতি এতটা খারাপ হতো না।
‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল অতি উচ্চাকাক্সক্ষী হওয়ায় তিনি সুখী ছিলেন না। দরিদ্র কেরানির ঘরে স্ত্রী হিসেবে এসে তার জীবনকে মনে হতো বিবর্ণ। সর্বদা তিনি মনে মনে ধনী লোকের মতো জীবনযাপন করার স্বপ্ন দেখতেন।
উদ্দীপকে দেখা যায় যে, অভাবের স্বরূপ এবং এটা হতে উত্তরণের পথ আর এটা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত হতে সাহায্য করে। কিন্তু ‘নেকলেস’ গল্পে দেখা যায় যে মাদাম লোইসেল দরিদ্র কেরানির সাথে বিয়ে হওয়ায় সুখী নয়। তিনি এ দরিদ্র অবস্থার কারণে ব্যথিত। তার ধারণা ছিল যে, এ গরিবি হালে জীবন কাটানোর জন্য তার জন্ম নয়। সর্বদা তিনি স্বপ্ন দেখতেন অনেক ধনী হওয়ার। কিন্তু তার কাছে বিলাসী কোনো ফ্রক বা জড়োয়া গহনা ছিল না। এ সব বিষয় তাকে সর্বদা বিরক্তি, দুঃখ এবং হতাশার মধ্যে ডুবিয়ে রাখতো। এরপর বল-নৃত্যের আমন্ত্রণ পেয়ে সেখানে সেজেগুজে যাওয়ার জন্য বান্ধবীর কাছ থেকে গহনা ধার করে নিয়ে আসে এবং সেটি হারিয়ে ফেলে। তারপর সে গহনাটি কিনে দিতে গিয়ে তাদের ঋণ নিতে হয়েছিল। সেটা থেকে মুক্ত হতে তার পরিবারের দশ বছর লেগে যায়।
নিজের অবস্থার প্রতি মাদাম লোইসেলের যদি সম্মানবোধ থাকতো তাহলে সে অন্যের বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হতো না। এজন্যই বলা হয়েছে যে, “উদ্দীপকের চেতনার বিষয়টি যদি মাদাম লোইসেলের মধ্যে থাকতো তাহলে তার পরিণতি ভিন্ন হতো।”
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সাকী, শিখি, সাথী খুব ভালো বন্ধু। সাথীর বিয়েতে সাকী ও শিখিকে নিমন্ত্রণ করেছে সাথী। বিয়ের দিন সাকী ও শিখি যে যার সাধ্যমতো উপহার সামগ্রী নিয়ে সাথীদের বাড়িতে উপস্থিত হয়। সাথীর মা-বাবা বিয়েতে মেয়েকে হীরার অলংকার দিয়েছে। শ্বশুর-শাশুড়ি আরও অনেক গহনা দিয়েছে। সাথীকে একেবারে পরীর মতো লাগছিল। বিয়ে বাড়ি থেকে বাসায় গিয়ে শিখির সে কী কান্না, কারণ সে জানে এরকম চাইলেও সে কোনোদিনই পাবে না।
ক. মাদার লোইসেলের ‘কনভেন্ট’-এর সহপাঠিনী কেমন ছিল?
খ. লোইসেল কেন তার সহপাঠিনীর সাথে দেখা করতে অনীহা প্রকাশ করত?
গ. উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘শিখি ও লোইসেলের মধ্যে নিয়তিকে মানতে না পারার ভাবনা বিদ্যমান রয়েছে।”Ñউক্তিটি ‘নেকলেস’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৯ নং প্রশ্নের উত্তর
মাদার লোইসেলের কনভেন্ট-এর সহপাঠিনী ধনী ছিল।
লোইসেলের সহপাঠিনী ধনী ছিল তাই সে দেখা করতে অনীহা প্রকাশ করত।
পৃথিবীতে শ্রেণিভেদ রয়েছে। লোইসেল এক দরিদ্র কেরানি পরিবারে জন্ম নেয়। দরিদ্র পরিবারের জন্ম হলেও সে দারিদ্র্যকে মেনে নিতে পারেনি। ধনী সহপাঠিনীর সাথে দেখা করতে গেলে নিজের অবস্থান আরও বেশি প্রকাশ হয়ে পড়ত, আর তাই লোইসেল কনভেন্ট-এর সহপাঠিনীর সাথে দেখা করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করত।
উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের অন্যের অবস্থান নিজের থেকে ভালো হওয়াতে যে মনোবেদনা সেটি প্রকাশ পেয়েছে।
পৃথিবীতে উঁচু-নীচুর সহাবস্থান রয়েছে। নিয়তির কারণেই কেউ উঁচু ঘরে জন্ম নেয় আবার কারও আশ্রয় হয় নীচু পরিবারে। কিন্তু শুধু জন্মগত অবস্থানের কারণে মানুষ তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে না এটা অনেকেই সহজে মেনে নিতে পারে না।
উদ্দীপকে তিনজন বান্ধবীর মধ্যে সাথীর বিয়েতে অপর দুই বান্ধবী সাকী ও শিখিকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু সাকী ও শিখি খুশি মনে বিয়েতে উপস্থিত হলেও ধনী পরিবারের মেয়ে হওয়ার কারণে সাথীর বিয়ের আয়োজন দেখে শিখির খুব কষ্ট হয়। কারণ শুধু দরিদ্র হওয়ার কারণে সে এরকম পাবে না। এ বিষয়টি মেনে নিতে না পেরেই বাসায় এসে কান্না করেছে। ‘নেকলেস’ গল্পে লোইসেলও নিজের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়ার ব্যাপারটি মেনে নিতে পারে নি, আর তাই ধনী বান্ধবীর সাথে দেখা করে বাসায় ফিরে কাঁদতে শুরু করেছে।
শিখি ও লোইসেলের মধ্যে নিয়তিকে মানতে না পারার ভাবনা বিদ্যমান রয়েছেÑ উক্তিটি যথার্থ।
নিয়তির কারণে ইচ্ছা না থাকলেও অনেক কিছুই ঘটে যায়। পৃথিবীতে শ্রেণিভেদের প্রথা বিদ্যমান। আর নিয়তির কারণেই কারও জন্ম ধনীর ঘরে কেউ বা দরিদ্রের ঘরে। নিয়তির ব্যাপারটা অনেকেই সহজে মেনে নিতে পারে না।
উদ্দীপকে শিখি, সাকী ও সাথী তিনজন খুব ভালো বন্ধু। সাথীর বিয়ে উপলক্ষে সাকী ও শিখি নিমন্ত্রণ পেয়েছে। দুজনেই নিজেদের সাধ্যমতো বিয়েতে উপস্থিত হলেও সাথীর জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে দরিদ্র শিখির কষ্টের কারণ হয়েছে। ‘নেকলেস’ গল্পের লোইসেল নিয়তির কারণে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছে। আর তাই রূপ, গুণ সবকিছু থাকা সত্তে¡ও সে অনেক কিছু পায় না। ধনী বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গিয়ে শুধু জন্মগত পার্থক্যের কারণে এ রকম বঞ্চনা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি।
‘নেকলেস’ গল্পের লোইসেল নিজের অবস্থান ধনী বান্ধবীর সাথে মেলাতে না পেরে কষ্ট পেয়েছে। কারণ সে জানে শুধু দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণে সে এসব কিছুই পাবে না। আর লোইসেলের এ কষ্টটা আমরা উদ্দীপকের শিখির মধ্যেও প্রত্যক্ষ করি। তাই বলা যায়, মন্তব্যটি যথার্থ হয়েছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সায়মা দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। তার সখীদের সাথে নদীর ঘাটে বাসন মাজতে, জল আনতে যায়। মাহবুব চৌধুরীর বাংলোতে ফুল আনতে যায়। প্রতিদিনের মতো ফুল আনতে গিয়ে মাহবুব চৌধুরীর সুদর্শন, শিক্ষিত ছেলে দেখে তার মনে প্রণয় আকাক্সক্ষা জাগে কিন্তু কাউকে কিছু না বলে বাবার পছন্দ করা দরিদ্র এক পাত্রকেই বিয়ে করে নেয়। কারণ সে জানে তার স্বপ্ন কোনোদিন পূরণ হওয়ার নয়।
ক. লোইসেলের কেমন পরিবারে জন্ম হয়েছে?
খ. লোইসেল কেরানির সঙ্গে বিবাহ স্বীকার করেছিল কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের কোন বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “আশা থাকলেও মানুষ সবকিছু পায় না।” এ চিরন্তন সত্যটি উদ্দীপকের সায়মা ও ‘নেকলেস’ গল্পের লোইসেলের জীবনে প্রতীকায়িত হয়েছেÑ মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর। ১
২
৩
৪
১০ নং প্রশ্নের উত্তর
লোইসেলের এক কেরানি পরিবারে জন্ম হয়েছে।
কেরানির পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণে ধনী বা বিশিষ্ট লোকের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কোনো উপায় না থাকাতে কেরানির সঙ্গে বিবাহ স্বীকার করে নিয়েছিল।
নিয়তির কারণে মানুষের অনেক স্বপ্নই অপূর্ণ থেকে যায়। লোইসেল সুন্দরী তরুণী হলেও কেরানি পরিবারে জন্ম নেয়াটা পরিচিত হওয়ার, প্রশংসা পাওয়ার, প্রেম লাভ বা ধনী লোকের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কোনো উপায় ছিল না। তাই শিক্ষা পরিষদ অফিসের সামান্য এক কেরানির সঙ্গে বিবাহ সে স্বীকার করে নেয়।
নিজের অবস্থানের কারণে অনেকেই তার ইচ্ছা পূরণ করতে পারে না। উদ্দীপকের এ বিষয়টি ‘নেকলেস’ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে।
সবকিছু থাকা সত্তে¡ও শুধু নিয়তির কারণে মানুষের অনেক স্বপ্নই অপূর্ণ থেকে যায়। আর তা মেনে নেয়া সবার জন্যই সহজসাধ্য হয়ে ওঠে না। আর এখান থেকে মানুষের মনে কষ্টের জন্ম হয়।
উদ্দীপকের সায়মা দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় সবকিছু স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছে। কিন্তু ধনীর পুত্রকে নিয়ে তার যে প্রণয় আকাক্সক্ষা জেগেছে শুধু গরিব হওয়ার কারণে যে তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না তা সে বুঝতে পেরেই নীরব থেকেছে। ‘নেকলেস’ গল্পের লোইসেল সুন্দরী হওয়া সত্তে¡ও আনন্দ বা আশা ছিল না। কারণ, প্রশংসা, প্রেম লাভ বা বিশিষ্ট লোকের সঙ্গে বিয়ে করার উপায় না থাকাতে বাবার পছন্দের দরিদ্র পাত্রকেই বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।
‘আশা থাকলেও মানুষ সবকিছু পায় না’-বাক্যটি সঠিক ও যথার্থ।
প্রত্যেক মানুষই স্বপ্ন দেখে। প্রতিনিয়ত নানা কারণে মানুষের স্বপ্ন ভেঙে যায়। আর এ স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার অন্যতম একটি কারণ দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া। নিয়তির কাছে মানুষ যেন পুতুল মাত্র।
উদ্দীপকের সায়মা সখীদের সাথে মিলেমিশে ভালোই ছিল। কিন্তু ধনীর পুত্রকে নিয়ে তার যখন স্বপ্ন শুরু হয়, তার পরক্ষণেই সে বুঝতে পারে এ স্বপ্ন কখনো পূরণ হওয়ার নয়। এজন্য নিজের পছন্দের কথা কাউকে বলার প্রয়োজনই মনে করেনি। ‘নেকলেস’ গল্পের লোইসেলের অনেক স্বপ্ন ছিল পরিচিত হওয়ার, প্রশংসা পাওয়ার, প্রেমলাভ করার কিন্তু শুধু নিয়তির কারণে কেরানি পরিবারে জন্ম নিয়ে তার সকল আশা পূর্ণ হয়নি।
‘নেকলেস’ গল্পের লোইসেলের মনে অনেক আশা ছিল, কিন্তু দরিদ্র হওয়ার কারণে তার আশা অপূর্ণ থেকেছে। নিয়তির কারণে সুন্দরী তরুণী হওয়া সত্তে¡ও সে তার যোগ্য, পছন্দমতো পাত্র বেছে নেয়ার সুযোগ পায়নি। উদ্দীপকের সায়মাও একজনকে পছন্দ করেছে কিন্তু নিষ্ফল প্রণয় নিবেদন হবে জেনে কাউকে কিছু না বলেই বাবার পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করেছে। আশাহতের এ ব্যাপারটি উদ্দীপক ও ‘নেকলেস’ গল্পে বিদ্যমান। এসব আলোচনায় প্রমাণ হয় মন্তব্যটি যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
নাদিয়া ও মিলি একই ক্লাসে পড়ে। মিলিকে দেখে নাদিয়ার শৈশবে ফেলে আসা নূপুরের কথা মনে হয়। এজন্য মিলি দরিদ্র হওয়া সত্তে¡ও ধনীর কন্যা নাদিয়া মিলিকে বন্ধু করে নেয়। নাদিয়া জন্মদিনে মিলিকে নিমন্ত্রণ জানালে মিলি নাদিয়াদের বাড়িতে উপস্থিত হয়। নাদিয়াদের বাড়িতে গিয়ে মিলি অবাক হয়ে যায়, সে যেমন স্বপ্ন দেখে নাদিয়াদের বাড়ির অবস্থা ঠিক তেমনি।
ক. লোইসেলের ধারণা কী?
খ. লোইসেলের দুঃখ হতো কেন?
গ. উদ্দীপকের মিলি ‘নেকলেস’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করেÑ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল ও উদ্দীপকের মিলি নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি।Ñউক্তিটির যথার্থতা বিচার কর। ১
২
৩
৪
১১ নং প্রশ্নের উত্তর
লোইসেলের ধারণা যত সব সুরুচিপূর্ণ ও বিলাসিতার বস্তু আছে, সেগুলোর জন্যই তার জন্ম হয়েছে।
লোইসেল আশা করত সব ভালোকিছু সে পাবে, আর এ আশার সাথে যখন না পাওয়ার দ্ব›দ্ব হতো এ ব্যাপারটাই তখন তাকে দুঃখ দিত।
চাওয়ার সাথে পাওয়ার ইচ্ছা মানুষের সহজাত। লোইসেল কেরানি পরিবারে জন্ম নিলেও তার বিলাসি জীবনের স্বপ্ন ছিল আর এসব যখন পূর্ণ হতো না, তখন লোইসেল দুঃখ পেত।
উদ্দীপকের মিলি ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে।
মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সাথে দ্ব›েদ্ব যখন আশা পূর্ণ হয় না, তখন মানুষের কষ্ট হয়। আর এ পাওয়ার পথে যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায় নিয়তি, সেটা মেনে নেয়া সত্যিই কষ্টকর।
উদ্দীপকের মিলির সাথে নাদিয়ার বন্ধুত্ব হয়। নাদিয়ার জন্মদিনে মিলি নিমন্ত্রণ পেয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছে। ধনী নাদিয়াদের বাড়ি গিয়ে মিলি অবাক হয়ে যায়। কারণ, মিলি স্বপ্ন দেখে নাদিয়াদের বাড়ির সবকিছুর মতো তারও হবে। ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল ভাবতো তার থাকবে প্রাচ্য-চিত্র-শোভিত, উচ্চ ব্রোঞ্জ-এর আলোকমণ্ডিত পার্শ্বকক্ষ। আরও ধনীদের বাড়ির নানান সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল ও উদ্দীপকের মিলি নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনিÑ উক্তিটি যথার্থ হয়েছে।
আশা মানুষকে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। সংসারের শত প্রতিকূলতার মাঝেও মানুষ স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকে। আর এই স্বপ্ন পূরণের ব্যর্থতাই মানুষকে আবার নানারকম কষ্ট দেয়।
উদ্দীপকে ধনী নাদিয়ার সুবাদে মিলি তার বন্ধুত্ব লাভের সুযোগ পেয়েছে। মিলি দরিদ্র হলেও বন্ধুত্বের সুবাদে নাদিয়ার জন্মদিনে নিমন্ত্রণ পেয়েছে। সবার মতো মিলিরও স্বপ্ন ছিল। তার সে স্বপ্ন পূরণ বান্ধবী নাদিয়ার ক্ষেত্রে হয়েছে। তার নিজের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল নিয়তির কারণে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছে। কিন্তু সেও অন্যদের মতো নিজের মাঝে স্বপ্নকে লালন করেছে। আর তার সে স্বপ্ন বরাবরই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।
‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল স্বপ্ন দেখে ধনীদের মতো বেঁচে থাকার, স্বপ্ন পুরুষকে বিয়ে করার, সুন্দর ঐশ্বর্যময় বাড়ি তার ভেতরের আসবাবপত্র। কিন্তু তার স্বপ্ন কখনও পূরণ হয়নি। তেমনি উদ্দীপকের মিলিও স্বপ্ন দেখে নাদিয়াদের বাড়ির অবস্থার মতো তাদের বাড়ির অবস্থা হবে। সেটাও অপূর্ণ থেকে গেছে মিলির কাছে। স্বপ্নকে ছুঁতে পারেনি লোইসেল ও মিলি। এসব আলোচনায় বলা যায়, উক্তিটি যথার্থ হয়েছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কাসেমের বস মশিউর রহমান তাঁর বাড়িতে পার্টির আয়োজন করেছেন মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে। অফিসের সবাইকে তিনি নিমন্ত্রণ কার্ড পাঠিয়েছেন। কার্ড পেয়ে কাসেম মহাখুশি এত বড় অনুষ্ঠানে সপরিবারে নিমন্ত্রণ পেয়ে। কিন্তু কাসেমের স্ত্রী কিছুতেই খুশি হতে পারল না। কারণ, বড় পার্টিতে যাওয়ার জন্য সে নিজের যা আছে তা পরে যেতে রাজি নয়। অনেক চেষ্টা করেও কাসেম রাজি করাতে পারল না। তাই কাসেমের ইচ্ছা সত্তে¡ও তার স্ত্রীর জন্য সেখানে যাওয়া হলো না।
ক. নিজ বাসগৃহে মসিঁয়ে ও মাদাম লোইসেলের উপস্থিতি কামনা করেন কেন?
খ. মঁসিয়ে লোইসেল নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে গেল কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘নেকলেস’ গল্পের কোনদিককে ইঙ্গিত করে? বুঝিয়ে লেখ।
ঘ. আংশিক মিল থাকলেও উদ্দীপকের সাথে ‘নেকলেস’ গল্পে যথেষ্ট বৈসাদৃশ্যও রয়েছেÑ মূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
১২ নং প্রশ্নের উত্তর
জনশিক্ষামন্ত্রী ও মাদাম জর্জ রেমপাননু নিজ বাসগৃহে মসিঁয়ে ও মাদাম লোইসেলের উপস্থিতি কামনা করেন।
মঁসিয়ে লোইসেল স্ত্রীকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে সে আতঙ্কে নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে গেল।
মসিঁয়ে লোইসেল আনন্দিত হয়ে জনশিক্ষামন্ত্রী ও মাদাম জর্জের কার্ডটি লোইসেলকে দিয়েছিল। ভেবেছিল এত বড় অনুষ্ঠানে যাওয়ার নিমন্ত্রণ কার্ড পেয়ে তার স্ত্রী খুব খুশি হবে। কিন্তু এর পরিবর্তে কার্ডটি পেয়ে সে তার স্ত্রীকে কাঁদতে দেখেছে। তাই সে নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে গেল।
উদ্দীপকে ‘নেকলেস’ গল্পের বিলাসী ভাবনার দিকটিকে ইঙ্গিত করে।
স্বপ্নবিলাসী মানুষ বাস্তবতার সম্মুখীন হতে ভয় পায়। নিজের অবস্থান থেকে সুখী হওয়ার চেষ্টা না করে অন্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টায় থাকে। এসব মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না।
উদ্দীপকে কাসেম বসের বাড়িতে পার্টির নিমন্ত্রণ পেয়ে খুশি হয়ে খবরটি স্ত্রীকে দিতে এসেছিল। কিন্তু কাসেমের স্ত্রী খুশি হতে পারেনি। সে নিজের অবস্থানে খুশি নয়, অন্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়। সে তাই পার্টিতে যাওয়ার জন্য নিজের যা আছে তা পরেই সন্তুষ্ট হতে পারবে না। ‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেলের স্বামী খুশি মনে কার্ড দিলেও সে খুশি হতে পারেনি। বিলাসী মনের মাদাম লোইসেল পার্টিতে আর দশজন ধনীর দুলালীদের মতো সাজগোজ করে যাওয়ার আশা পোষণ করে।
আংশিক মিল থাকলেও উদ্দীপকের সাথে ‘নেকলেস’ গল্পের যথেষ্ট বৈসাদৃশ্য রয়েছেÑ উক্তিটি সঠিক হয়েছে।
স্বপ্নের পথ বেয়ে মানুষের এগিয়ে চলা আর সেখানেই বাস্তবতার মুখোমুখি, তখন অনেক কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও উপায় সবসময় হয়ে ওঠে না। তারপরও মানুষ সাধ্যমতো চেষ্টা করে।
উদ্দীপকের কাসেম তার বসের কাছ থেকে পার্টির নিমন্ত্রণ পেয়েছিল। আর তাতেই কাসেম খুশি হয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে পার্টিতে যাওয়ার আশা পোষণ করেছিল। কিন্তু তার স্ত্রী ভালো সাজ-পোশাক নেই বলে কাসেমের সাথে যেতে রাজি হয় নি। অন্যদিকে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল স্বামীর হাত থেকে কার্ডটি পড়ে খুব হতাশ হয়েছে। কারণ সে তার কমমূল্যের সাজ-পোশাক পরে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতে পারবে না। মাদাম লোইসেলের ইচ্ছা ধনী মেয়েদের মতো সাজ-পোশাক পরে অনুষ্ঠানে যাওয়া। তাই অনেক কষ্ট করে সবকিছু জোগাড় করে তবেই বল-নাচের দিন উপস্থিত হয়েছে।
‘নেকলেস’ গল্পে মাদাম লোইসেলের প্রথমে নিজের সাজ-পোশাক পরে যাওয়ার অনিচ্ছা থাকলেও স্বামীর সহায়তায় ধনীদের মতো করে যেতে পেরেছে বল-নাচের দিন। কিন্তু উদ্দীপকের কাসেমের স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে কোনোরকম সহায়তা পায়নি, তাই নিজের সাজ-পোশাক পরে অনুষ্ঠানে যেতেও রাজি হয়নি। এসব আলোচনা প্রেক্ষিতে বলা যায়, মন্তব্যটি যথার্থ হয়েছে।
ক জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
১. মাদাম লোইসেলের কয়জন ভৃত্য থাকবে বলে তিনি কল্পনা করেন?
উত্তর : দুইজন ভৃত্য থাকবে বলে তিনি কল্পনা করেন।
২. মাদাম লোইসেলের ভৃত্যগুলো দেখতে কেমন থাকবে?
উত্তর : ভৃত্যগুলো দেখতে মোটাসোটা থাকবে।
৩. লোইসেলের সন্ধ্যাভোজের টেবিলটা কোন আকৃতির ছিল?
উত্তর : গোল আকৃতির ছিল।
৪. সন্ধ্যাভোজে মাদাম লোইসেল তাঁর স্বামীর কোন দিকে বসেন?
উত্তর : তাঁর স্বামীর বিপরীত দিকে বসেন।
৫. খামটি ছিঁড়ে মাদাম লোইসেল কী বের করেন?
উত্তর : একখানা ছাপানো কার্ড বের করেন।
৬. পোশাক কেনার জন্য মাদাম লোইসেল কত ফ্রাঁ চেয়েছিলেন?
উত্তর : চারশত ফ্রাঁ চেয়েছিলেন।
৭. লোইসেলের বন্ধুরা কী শিকার করতে গিয়েছিল?
উত্তর : ভরতপক্ষী শিকার করতে গিয়েছিল?
৮. লোইসেলের কার সাথে শিকারে যোগ দেয়ার ইচ্ছা?
উত্তর : তাঁর বন্ধুদের সাথে।
৯. লোইসেল মাদাম লোইসেলকে কী ফুল দিয়ে সাজতে বলেছিলেন?
উত্তর : গোলাপ ফুল দিয়ে সাজতে বলেছিলেন।
১০. দু তিনটি গোলাপের দাম কত ছিল?
উত্তর : দশ ফ্রাঁ।
১১. মাদাম লোইসেলের বান্ধবীর নাম কী?
উত্তর : মাদাম ফোরস্টিয়ার।
১২. বাক্সটি খুলে মাদাম লোইসেল প্রথমে কী দেখলেন?
উত্তর : কয়েকটি কঙ্কন দেখলেন।
১৩. বল-নাচের অনুষ্ঠানে সবাই কাকে লক্ষ করেছিল?
উত্তর : মাদাম লোইসেলকে লক্ষ করছিল।
১৪. মাদাম ফোরস্টিয়ার গোপন কক্ষ থেকে কী বের করলেন?
উত্তর : জড়োয়া গহনার বাক্স বের করলেন।
১৫. শিক্ষামন্ত্রী কার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছিলেন?
উত্তর : লোইসেলের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছিলেন।
১৬. হতাশ হয়ে লোইসেল দম্পতি কোন দিকে হাঁটে?
উত্তর : বিন নদীর দিকে হাঁটে।
১৭. কতদিন পর লোইসেল দম্পতি হারের আশা ত্যাগ করলেন?
উত্তর : এক সপ্তাহ পর।
১৮. হীরার হারটি বিক্রি না করার জন্য লোইসেল কাকে অনুরোধ করেন?
উত্তর : স্বর্ণকারকে অনুরোধ করেন।
১৯. চুক্তিমতো হারটি ফেরত দিলে লোইসেল কত ফ্রাঁ পাবে?
উত্তর : চৌত্রিশ হাজার ফ্রাঁ ফেরত পাবে।
২০. অতিরিক্ত আয়ের জন্য মি. লোইসেল কী করতেন?
উত্তর : ব্যবসায়ীর খাতা ঠিক করতেন।
২১. মাদাম লোইসেলকে গল্পে অন্য কী নামে ডাকা হয়েছে?
উত্তর : মাতিলদা নামে ডাকা হয়েছে।
২২. নকল হারটির দাম কত?
উত্তর : পাঁচশত ফ্রাঁর কাছাকাছি।
২৩. চামপস এলিসিস এ মাদাম লোইসেল কোন দিন ঘুরছিলেন?
উত্তর : রবিবার দিন ঘুরছিলেন?
২৪. সন্ধ্যাভোজে মাদাম লোইসেল কীসের পাখনা খাবেন বলে কল্পনা করেন?
উত্তর : মুরগির পাখনা খাবেন বলে কল্পনা করেন।
২৫. মাদাম লোইসেলের সন্ধ্যাভোজে কী মাছ থাকবে?
উত্তর : গোলাপী রং এর রোহিত মাছ থাকবে।
২৬. ‘নেকলেস’ গল্পটির লেখক কে?
উত্তর : গী দ্য মোপাসাঁ।
২৭. মাদাম লোইসেলের বৈঠকখানায় কী পর্দা ঝুলবে?
উত্তর : পুরানো রেশমি পর্দা ঝুলবে।
২৮. কার গৃহে লোইসেল দম্পতি নিমন্ত্রণ পায়?
উত্তর : শিক্ষামন্ত্রীর গৃহে।
২৯. বল-নাচের অনুষ্ঠানে কার জয়জয়কার ছিল?
উত্তর : মাদাম লোইসেলের জয়জয়কার ছিল।
৩০. কাকে দেখলে এখন বয়স্কা মনে হয়?
উত্তর : মাদাম লোইসেলকে।
খ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
১. অতিরিক্ত পরিশ্রম মাদাম লোইসেলের শরীরে কেমন প্রভাব ফেলে?
উত্তর : অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে মাদাম লোইসেলকে বয়স্কা মনে হতো।
মাদাম লোইসেল গরিব দুঃস্থ ঘরের শক্ত, কর্মঠ ও অমার্জিত মেয়ের মতো হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর চুল অবিন্যস্ত ও ঘাঘড়া একপাশে মোচড়ানো থাকতো। দশ বছর পর মাদাম ফোরস্টিয়ারের সঙ্গে তাঁর দেখা হলে ফোরস্টিয়ার তাকে চিনতেই পারেননি।
২. মাদাম লোইসেল দুর্দশার জন্য ফোরস্টিয়ারকে দায়ী করলেন কেন?
উত্তর : ফোরস্টিয়ারের কাছ থেকে ধার নেয়া হারটি হারিয়েই মাদাম লোইসেল দুর্দশায় পড়েন। তাই তিনি ফোরস্টিয়ারকে দুর্দশার জন্য দায়ী করেছিলেন।
মাদাম লোইসেল বল নাচের অনুষ্ঠানে যাবার জন্য ফোরস্টিয়ারের কাছ থেকে একটি হীরার হার ধার নিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে তিনি হারটি হারিয়ে ফেলেন। হারটির মূল্য পরিশোধ করতে তিনি দাসীকে বিদায় করে দিয়েছিলেন এবং বাসা পরিবর্তন করে নিচু ছাদের কামরা ভাড়া নিয়ে ছিলেন।
৩. মাদাম লোইসেলকে ফুল দিয়ে সাজতে বলার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : লোইসেলের কাছে মণিমুক্তা বা দামি পাথর কিনে দেয়ার টাকা ছিল না বলে তিনি মাদাম লোইসেলকে ফুল দিয়ে সাজতে বলেছিলেন।
লোইসেল ছিলেন শিক্ষা পরিষদ অফিসের সামান্য কেরানি। তাঁর পক্ষে মাদাম লোইসেলকে দামি অলঙ্কার কিনে দেয়া সম্ভব ছিল না। তাই বল-নাচের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য মাদাম লোইসেলকে তিনি ফুল দিয়ে সাজতে বলেছিলেন।
৪. মাদাম লোইসেলের কী জন্য জন্ম হয়েছে বলে তিনি মনে করতেন?
উত্তর : মাদাম লোইসেলের ধারণা বিলাসী জীবনযাপন ও মণিমুক্তার আতিশয্যের জন্যই তাঁর জন্ম হয়েছিল।
সাধারণ পরিবারে তাঁর জন্ম হয়েছিল। অলঙ্কারের প্রতি তাঁর মোহ ছিল। কিন্তু তাঁর কাছে দামি ফ্রক বা জড়োয়া গহনা বলতে কিছুই ছিল না। অথচ সে সব ছিল তাঁর প্রিয় বস্তু। তিনি কল্পনায় সে গুলোর ছবি আঁকতেন।
৫. লোইসেল দম্পতি নদীর দিকে হাঁটছিলেন কেন?
উত্তর : বাড়ি যাওয়ার গাড়ি না পেয়ে লোইসেল দম্পতি বিন নদীর দিকে হাঁটছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষ করে রাস্তায় পৌঁছে তাঁরা কোনো গাড়ি পেলেন না। রাস্তায় অনেক দূর খোঁজ করেও কোনো সুফল হয়নি। হতাশ হয়ে কাঁপতে কাঁপতে তাঁরা বিন নদীর দিকে হাঁটতে থাকেন।
৬. লোইসেলের মুখ ম্লান হয়ে গিয়েছিল কেন?
উত্তর : পোশাক কেনার জন্য মাদাম লোইসেল চারশত ফ্রাঁ চাওয়ায় লোইসেলের মুখ ম্লান হয়ে গিয়েছিল।
বল-নাচে যোগ দেয়ার জন্য মাদাম লোইসেল নতুন পোশাক কিনতে চেয়েছিলেন। লোইসেল চারশত ফ্রাঁ সঞ্চয় করেছিলেন বন্দুক কেনার জন্য। মাদাম লোইসেলের পোশাক কিনলে তাঁর বন্দুক কেনা হবে না। লোইসেলের আশা ভঙ্গ হয়েছিল।
৭. প্যালেস রয়েলে হারটি লোইসেল চুক্তিতে কেনেন কেন?
উত্তর : হারানো হারটি ফেরত পেলে ক্রয়কৃত হারটি ফেরত দেয়ার উদ্দেশ্যে লোইসেল চুক্তিতে হারটি ক্রয় করেন।
প্যালেস রয়েল থেকে কেনা হরটির দাম ছিল ছত্রিশ হাজার ফ্রাঁ। বাবার মৃত্যুর পর প্রাপ্ত আঠারো হাজার ফ্রাঁ আর বাকি টাকা ধার করে লোইসেল হারটি কেনেন। ফেব্র“য়ারি মাসের মধ্যে হারানো হারটি পেলে ক্রয়কৃত হারটি ফেরত দিয়ে তাঁরা চৌত্রিশ হাজার ফ্রাঁ ফেরত পেতে পারতো।
৮. হীরার হারটি ধার পেয়ে মাদাম লোইসেল কেমন আবেগ দেখালেন?
উত্তর : হীরার হারটি ধার পেয়ে মাদাম লোইসেল সবেগে তাঁর বান্ধবীর গলা জড়িয়ে ধরলো। পরম আবেগে তাকে বুকে ধরলেন। মাদাম লোইসেলের অলঙ্কারের প্রতি মোহ ছিল। অর্থ সঙ্কটের কারণে তিনি তাঁর আশা পূর্ণ করতে পারছিলেন না। পরম আরাধ্য বস্তুকে হাতে পেয়ে তিনি তাঁর সবটুকু আবেগকে যেন প্রকাশ করেছিলেন।
৯. লোইসেলের নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মাদাম লোইসেলকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে লোইসেল নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন।
মাদাম লোইসেল থিয়েটার দেখতে যাওয়ার জন্য একটা পোশাক ব্যবহার করতেন। বল-নাচের অনুষ্ঠানে মাদাম লোইসেলকে লোইসেল সে পোশাক পরে যেতে বলেছিল। এতে মাদাম লোইসেরের দুচোখ বেয়ে অশ্র“ গড়িয়ে পড়তে থাকে।
১০. মাদাম লোইসেল অসুখী ছিলেন কেন?
উত্তর : মাদাম লোইসেলের কল্পনার জগৎ ও বাস্তবতার জগৎ বৈসামাঞ্জস্যপূর্ণ ছিল বলে তিনি অসুখী ছিলেন।
লোইসেলের উচ্চাকাক্সক্ষা তাকে অসুখী করে তুলেছিল। তিনি তাঁর ধনী বান্ধবীর সাথে নিজের তুলনা করতেন। ধনী বান্ধবীর সঙ্গে তিনি দেখা করতে চাইতেন না। তিনি নিজেকে গরিব মনে করতেন। অথচ তাঁর কল্পনার রাজ্যটি ছিল বিশাল।
১১. মাদাম লোইসেলের কল্পনার রাজ্যটি কেমন ছিল?
উত্তর : মাদাম লোইসেলের কল্পনার রাজ্যটি ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ।
তিনি কল্পনা করতেন তাঁর বৈঠকখানায় থাকবে রেশমি পর্দা, আসবাবপত্রগুলো থাকবে চমৎকার চিত্র শোভিত। ঘরে থাকবে আরাম কেদারা। সন্ধ্যাভোজনে অপূর্ব খাদ্য হিসেবে থাকবে গোলাপী রং এর রোহিত মাছ অথবা মুরগির পাখনা। বিকেলে বন্ধুদের সাথে গল্পগুজবের জন্য থাকবে আলাদা একটি কক্ষ। মোটাসোটা দুজন ভৃত্য থাকবে তাঁর বাড়িতে।
১২. হীরার হারটি দেখে মাদাম লোইসেলের অভিব্যক্তি কেমন ছিল?
উত্তর : হীরার হারটি দেখে অদম্য কামনায় মাদাম লোইসেলের বুক দুরু দুরু করে।
হারটি তুলে নিতে গিয়ে তাঁর হাত কাঁপে। তিনি তাঁর পোশাকের উপর দিয়ে সেটা গলায় তুলে নেন। আনন্দে বিহŸল হয়ে যান। তিনি তারপর উদ্বেগ ভরা কণ্ঠে মাদাম ফোরস্টিয়ারকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি ঐ খানা আমায় ধার দেবে? শুধু এটা?”