রেইনকোট
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
লেখক পরিচিতি
নাম আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
জন্ম ও পরিচয় জন্ম তারিখ : ১২ জানুয়ারি, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে।
জন্মস্থান : গোটিয়া, সাঘাটা, গাইবান্ধা।
পিতৃ পরিচয় পিতার নাম : বি. এম ইলিয়াস।
মাতার নাম : মরিয়ম ইলিয়াস।
শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক : ম্যাট্রিক (১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে), বগুড়া জিলা স্কুল।
উচ্চমাধ্যমিক : ইন্টারমিডিয়েট (১৯৬১), ঢাকা কলেজ।
উচ্চতর : বিএ সম্মান, বাংলা (১৯৬৩); এমএ (১৯৬৪), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কর্মজীবন ও পেশা প্রভাষক : করটিয়া সাদত কলেজ, টাংগাইল; জগন্নাথ কলেজ, ঢাকা।
সহযোগী অধ্যাপক : বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ কলেজ।
উপপরিচালক : প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
অধ্যাপক : বাংলা বিভাগ, ঢাকা কলেজ।
সাহিত্য সাধনা গল্পগ্রন্থ : অন্য ঘরে অন্যস্বর, খোঁয়ারি, দুধভাতে উৎপাত, দোজখের ওম, জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল।
উপন্যাস : চিলে কোঠার সেপাই, খোয়াবনামা।
প্রবন্ধ গ্রন্থ : সংস্কৃতির ভাঙা সেতু।
পুরস্কার ও সম্মাননা হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৭), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), প্রফুল কুমার সরকার স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৬), সাদাত আলী আকন্দ পুরস্কার (১৯৯৬), কাজী মাহবুব উলাহ স্বর্ণপদক ইত্যাদি।
ইন্তেকাল মৃত্যু তারিখ : ৪ জানুয়ারি, ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে।
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. “রেইনকোট” গল্পে মিলিটারি ক্যাম্প কোথায় স্থাপন করা হয়?
খ. দেশে একটা কলেজেও শহিদ মিনার অক্ষত নেই।
গ. চিত্রে “রেইনকোট” গল্পের যেদিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. চিত্রিত দিকটি “রেইনকোট” গল্পের খণ্ডাংশ মাত্র-বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
১ নং প্রশ্নের উত্তর
কলেজের জিমন্যাশিয়ামে।
শহিদ মিনার বাঙালি জাতির স্বাধিকার চেতনার উৎস এবং পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী বলেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশের সব কলেজ থেকে শহিদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে।
১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনে শহিদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়েছিল শহিদ মিনার, যা চিরকালই বাঙালির স্বাধিকার চেতনার উৎস। এছাড়া পাক-সরকার শহিদ মিনারকে পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী মনে করত। তাই পাকিস্তানকে বাঁচাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সব কলেজ থেকে শহিদ মিনার ভেঙ্গে দিয়েছিল ।
চিত্রে ‘রেইনকোট’ গল্পের পাকিস্তানিদের বর্বরতার দিকটি ফুটে উঠেছে।
শোষকশ্রেণির মানুষেরা চিরকালই অসহায়-দুর্বলের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে নির্মম নির্যাতন চালায়। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সামান্যতম মানবতার ছোঁয়ামাত্র দেখা যায় না। বরং মধ্যযুগীয় কায়দায় তারা দুর্বলের ওপর চালায় নির্মম নির্যাতন, যা সহ্য করা ছাড়া দুর্বলের আর কিছুই করার থাকে না।
চিত্রে পাকিস্তান সেনাদের বর্বর অত্যাচারের দিকটি প্রত্যক্ষ করা যায়। তারা পাঁচজন মিলে একজন নিরীহ মানুষের ওপর চালিয়েছে নির্মম নির্যাতন। শুধু তাই নয়, তারা তাকে শেয়াল-কুকুরের মতো টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে যায়। অন্যদিকে ‘রেইনকোট’ গল্পেও নুরুল হুদার জবানিতে পাকিস্তানিদের বর্বরতার কথা বর্ণিত হয়েছে। মিলিটারিদের নির্যাতনের ভয়ে সে নিজেই নানা সময় পালিয়ে বেড়িয়েছে নানা স্থানে। এছাড়া তার মতো হাজারো অসহায় বাঙালির ওপর পাকিস্তানিবাহিনী চালিয়েছিল অত্যাচারের স্টিম রোলার। সুতরাং বলা যায়, চিত্রে ‘রেইনকোট’ গল্পের পাকিস্তানিদের বর্বর অত্যাচারের দিকটি ফুটে উঠেছে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বহুমুখী উপস্থাপন বর্তমান। উদ্দীপকে বর্ণিত মুক্তিযুদ্ধের যে চিত্র রয়েছে তা গল্পটির খণ্ডাংশ।
‘রেইনকোট’ গল্পে লেখক নুরুল হুদার চিন্তারাজি এবং অন্যান্য চরিত্রের কথোপকথনের মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি সামগ্রিক চিত্র উন্মোচনের প্রয়াস চালিয়েছেন। যদিও লেখকের মূল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অর্থাৎ, একজন মুক্তিযোদ্ধার ব্যবহৃত রেইনকোট কীভাবে ভীরু, দুর্বলচিত্ত, পলায়নপর রসায়নের শিক্ষক নুরুল হুদাকে একজন মানসিক যোদ্ধায় পরিণত করেÑসেটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন লেখক। অন্যদিকে উদ্দীপকের বর্ণনায় আমাদের যুদ্ধের একটি খণ্ড চিত্র রয়েছে।
উদ্দীপকে পশ্চিম, থেকে আসা পাকিস্তানি নরঘাতকদের অগ্নিসংযোগ এবং নরহত্যার বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে। পাকিস্তানি- বাহিনী এদেশের গ্রামে গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছিল। মার কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে চালিয়েছিল গণহত্যা, এমনকি পিতার সামনে মেয়েকে কেটে রক্তস্নান করেছে। অর্থাৎ, উদ্দীপকের মূল লক্ষ্য অগ্নিসংযোগ এবং গণহত্যার বিষয়টিতে নিবিষ্ট, যা ‘রেইনকোট’ গল্পটিতে আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে।
‘রেইনকোট’ গল্পটিতে মুক্তিযুদ্ধের যে বহু বিচিত্র চিত্র রয়েছে উদ্দীপকে তা মেলে না। উদ্দীপকে আছে কেবল গল্পে বর্ণিত পাকবাহিনীর নরহত্যার বিষয়টি। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পটির খন্ডাংশ সম্পূর্ণ নয়।”
অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ছোট্ট শুভ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ক্রিকেট খেলায় হাত ধরে মাঠে ঢোকার সুযোগ পায়। জাতীয় সঙ্গীত পর্ব সমাপ্ত হলে শচীন অটোগ্রাফসহ নিজের ক্যাপটি শুভকে উপহার দেন। উপহারটি পেয়ে শুভ বিস্মিত হয়ে যায়। সে সিদ্ধান্ত নেয় বড় হয়ে একজন ক্রিকেটার হবে।
ক. নুরুল হুদাকে রেইনকোটটি কে পরতে বলে?
খ. রেইনকোট খুলে ফেললেও নুরুল হুদার শরীরে তার ওম লেগে থাকার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের শুভ এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদার ভাবনার মাঝে বৈসাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপকের শুভর কাছে ক্যাপ এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদার কাছে রেইনকোট জীবনের পালাবদলকারী চেতনার প্রতীক হিসেবে দেখা দিয়েছে।”Ñ উক্তিটির স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর। ১
২
৩
৪
২ নং প্রশ্নের উত্তর
আসমা পরতে বলে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয় বলে রেইনকোট খুলে ফেললেও নুরুল হুদার শরীরে তার ওম লেগে থাকে।
‘রেইনকোট’ গল্পে বৃষ্টির দিনে নুরুল হুদা কলেজের উদ্দেশে যাওয়ার সময় স্ত্রী আসমা তাকে মিন্টুর রেইনকোটটি পরে যেতে বলেন। মিন্টু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার রেইনকোট নুরুল হুদাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করে। তাইতো পাকসেনাদের অত্যাচারের একপর্যায়ে যখন তার শরীর থেকে রেইনকোটটি খুলে ফেলে তখনও তার মনে হয়, রেইনকোটের ওম তার শরীরে লেগে আছে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদা মিন্টুর রেইনকোটের সংস্পর্শে এসে চিন্তা-চেতনায় একজন মানসিক মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত হয়েছেন। উদ্দীপকের শুভও শচীনের ক্যাপ পেয়ে নির্ধারণ করেছে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
‘রেইনকোট’ গল্পে মিন্টুর রেইনকোট পরার পর নানারকমের ভাবনা আসে নুরুল হুদার মনে। হানাদারবাহিনীর নির্যাতন এবং রাজাকারদের বর্বরতার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ পায় তার সেই ভাবনার আড়ালে। এভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি ঘৃণা এবং মিন্টুর মতো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সহানুভূতি তাকে ক্রমান্বয়ে মানসিক যোদ্ধায় পরিণত করে। তাই পাকিস্তানিদের নির্যাতন সহ্য করেও তিনি বলেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। উদ্দীপকে শুভও শচীনের ক্যাপটি উপহার পেয়ে ক্রিকেটার হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
উদ্দীপকের শুভ এবং গল্পের নুরুল হুদা উভয়ই একটি বিশেষ বস্তুকে কেন্দ্র করে নতুন চেতনায় উজ্জীবিত হয়েছে। কিন্তু নুরুল হুদা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মতো একটা সংগ্রামী চেতনায় জেগে উঠেছে, যেখানে শুভর জাগরণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক, সে বড় হয়ে একজন ক্রিকেটার হতে চেয়েছে।
‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদার পরিহিত রেইনকোট যেমন জীবনের পালাবদলকারী চেতনার প্রতীক। তেমনি উদ্দীপকে শচীনের ক্যাপটিও শুভর চেতনার পালাবদল ঘটিয়েছে।
‘রেইনকোট’ গল্পে মিন্টুর রেইনকোট নুরুল হুদাকে একজন ভীরু দুর্বলচিত্ত মানুষ থেকে সাহসী মানুষে পরিণত করেছে। তিনি পরিণত হয়েছেন মানসিক যোদ্ধায়। স্বীকার করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি। অর্থাৎ, একজন মুক্তিযোদ্ধার রেইনকোট তার ভাবনায় এনেছে নতুন চেতনা। শচীনের ক্যাপও এমন পালাবদল এনেছে শুভর ভাবনায়।
উদ্দীপকের ছোট্ট শুভ সুযোগ পায় টেন্ডুলকারের হাত ধরে মাঠে প্রবেশের। জাতীয় সঙ্গীত পর্বের পর শচীন তাকে ক্যাপ উপহার দিলে শুভর চেতনায় পালাবদল ঘটে। সে সিদ্ধান্ত নেয় বড় হয়ে ক্রিকেটার হবে। অর্থাৎ, এতদিন শুভ যা ভেবেছিল নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে, ক্যাপটি সেই ভাবনাকে আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে। উদ্দীপকের শুভর কাছে শচীনের ক্যাপ যেমন, গল্পের নুরুল হুদার কাছে মিন্টুর রেইনকোট টিও তেমন।
দুটি জিনিস নুরুল হুদা ও শুভর জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। পরিবর্তন এনেছে তাদের জীবনে। একজন হয়েছে মানসিক যোদ্ধা, আর একজন হবে ভবিষ্যৎ ক্রিকেটার। অর্থাৎ, এই দুটি জিনিস তাদের জীবনের পালাবদলকারী চেতনার প্রতীক হিসেবে দেখা দিয়েছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কীসে কী হইল, পশ্চিম হতে নরঘাতকেরা আসি
সারা গাঁও ভরি আগুন জ্বালায়ে হাসিল অট্টহাসি।
মার কোল হতে শিশুরে কাড়িয়া কাটিল সে খান খান
পিতার সামনে মেয়েরে কাটিয়া করিল রক্তস্নান।
ক. কারা ঢাকা শহরে বাজার পোড়ায়, বস্তিতে আগুন লাগিয়ে মানুষ মারে?
খ. ‘এসব হলো ইনটার্নাল অ্যাফেয়ার।’Ñ কথাটি কী নির্দেশ করে?
গ. উদ্দীপকে এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে বর্ণিত পাকবাহিনীর নির্যাতনের একটি তুলনামূলক বর্ণনা দাও।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পটির আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে, স¤পূর্ণ নয়।”Ñ উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। ১
২
৩
৪
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
মিলিটারি প্রত্যেকদিন ঢাকা শহরে বাজার পোড়ায়, বস্তিতে আগুন লাগিয়ে মানুষ মারে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর ‘রেইনকোট’ গল্পের ‘এসব হলো ইনটার্নাল অ্যাফেয়ার’ কথাটিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে হেনরি কিসিঞ্জার তথা মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিকে নির্দেশ করে।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে মার্কিনিদের পক্ষপাতিত্ব ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রতি। যখন পাকিস্তানি বাহিনী বর্বরতম অত্যাচার শুরু করে, মানুষ মেরে সাফ করে দেয়, বাড়িঘর, গ্রাম, বাজারহাট জ্বালিয়ে দেয়Ñ তখন মার্কিনিদের তেমন কোনো মাথাব্যথা দেখা যায়নি। বরং কিসিঞ্জার সাহেব পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘এসব হলো পাকিস্তানের ইনটার্নাল অ্যাফেয়ার।’
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাত্রি থেকে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত পাকিস্তানিবাহিনী এদেশীয় মানুষদের ওপর ইতিহাসের ঘৃণ্য ও বর্বরতম অত্যাচার চালায়। ‘রেইনকোট’ গল্প এবং আলোচ্য উদ্দীপকে এই নির্যাতনের পরিচয় মেলে।
‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদার চিন্তার মধ্য দিয়ে পাকবাহিনীর বহুমুখী নির্যাতনের পরিচয় মেলে। পাকিস্তানি বাহিনী এদেশের শহিদ মিনার ভেঙেছে, চালিয়েছে সা¤প্রদায়িক নির্যাতন, গুলি করে মানুষ হত্যা, বাড়িঘর, গ্রাম, বাজারহাট জ্বালিয়ে দেওয়া, লুট করা এবং নারীদের ধর্ষণ করা ছিল তাদের বর্বরতম অত্যাচারের বিভিন্ন দিক। কিন্তু উদ্দীপকে মূলত পাকবাহিনীর অগ্নিসংযোগ এবং মানুষ হত্যার বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে।
উদ্দীপকে পাকবাহিনীকে নরঘাতকরূপে চিিহ্নত করা হয়েছে। এই নরঘাতকরা সারা গ্রাম ভরে আগুন জ্বালিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে। অন্যদিকে তারা মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে খান খান করেছে, আর পিতার সামনে মেয়েকে কেটে করেছে রক্তস্নান। অর্থাৎ, গল্পে পাকবাহিনীর নির্যাতনের যে বহুমুখী চিত্র রয়েছে উদ্দীপকে তার দুটি দিক অগ্নিসংযোগ এবং নরহত্যার বিষয়টিকে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বহুমুখী উপস্থাপন বর্তমান। উদ্দীপকে বর্ণিত কবিতাংশে মুক্তিযুদ্ধের যে চিত্র রয়েছে তা গল্পটির আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে।
‘রেইনকোট’ গল্পে লেখক নুরুল হুদার চিন্তারাজি এবং অন্যান্য চরিত্রের কথোপকথনের মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি সামগ্রিক চিত্র উন্মোচনের প্রয়াস চালিয়েছেন। যদিও লেখকের মূল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অর্থাৎ, একজন মুক্তিযোদ্ধার ব্যবহৃত রেইনকোট কীভাবে ভীরু, দুর্বলচিত্ত, পলায়নপর রসায়নের শিক্ষক নুরুল হুদাকে একজন মানসিক যোদ্ধায় পরিণত করেÑসেটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন লেখক। অন্যদিকে উদ্দীপকের বর্ণনায় আমাদের যুদ্ধের একটি খণ্ড চিত্র রয়েছে।
উদ্দীপকে পশ্চিম, থেকে আসা পাকিস্তানি নরঘাতকদের অগ্নিসংযোগ এবং নরহত্যার বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে। পাকিস্তানি- বাহিনী এদেশের গ্রামে গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছিল। মার কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে চালিয়েছিল গণহত্যা, এমনকি পিতার সামনে মেয়েকে কেটে রক্তস্নান করেছে। অর্থাৎ, উদ্দীপকের মূল লক্ষ্য অগ্নিসংযোগ এবং গণহত্যার বিষয়টিতে নিবিষ্ট, যা ‘রেইনকোট’ গল্পটিতে আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে।
‘রেইনকোট’ গল্পটিতে মুক্তিযুদ্ধের যে বহু বিচিত্র চিত্র রয়েছে উদ্দীপকে তা মেলে না। উদ্দীপকে আছে কেবল গল্পে বর্ণিত পাকবাহিনীর অগ্নিসংযোগ এবং নরহত্যার বিষয়টি। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পটির আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে সম্পূর্ণ নয়।”
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মালেক মেম্বার একজন রাজাকার। যুদ্ধের সময় সে নিজের গ্রামে মিলিটারি ডেকে এনে অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যা করিয়েছে। এছাড়া মিলিটারিকে সন্তুষ্ট রাখতে আশপাশের গ্রাম থেকে সুন্দরী মেয়েদের ধরে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছে ক্যাম্পে।
ক. প্রিন্সিপালের পিওনের নাম কী?
খ. মিলিটারি প্রাদুর্ভাবের পর পিওনকে দেখে সবাই তটস্থ থাকত কেন?
গ. যুদ্ধের সময় মালেক মেম্বারের কর্মকাণ্ড এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে বর্ণিত রাজাকারদের কর্মকাণ্ডের তুলনা কর।
ঘ. মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন, মিলিটারিকে সহযোগিতা করে রাজাকাররা দেশদ্রোহী ও নরঘাতকের পরিচয় দিয়েছে।” ‘রেইনকোট’ গল্প এবং উদ্দীপকের আলোকে মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিচার কর। ১
২
৩
৪
৪ নং প্রশ্নের উত্তর
ইসহাক মিয়া।
যুদ্ধ শুরুর পর প্রিন্সিপালের পিওন ইসহাক-এর ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে তাকে দেখে সবাই তটস্থ থাকত।
‘রেইনকোট’ গল্পে পিওন ইসহাক মিয়া উর্দু বলা শুরু করে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। লেখকের ব্যঙ্গাত্মক বর্ণনায় ‘ইসহাক নিজেই এখন মিলিটারির কর্নেল বললেও চলে।’ খোদ কর্নেল উপস্থিত থাকলে তার ক্ষমতা কমে আসে সত্য কিন্তু ক্যাপ্টেনের নিচে নামানো যাবে না এবং ইসহাক মিয়ার এই ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে মিলিটারি প্রাদুর্ভাবের পর তাকে দেখলে সবাই তটস্থ থাকত।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা দেশদ্রোহী এবং পাক-মিলিটারির সহযোগীরূপে দেখা দিয়েছিল। ‘রেইনকোট’ গল্পে বর্ণিত রাজাকাররা এবং উদ্দীপকের মালেক মেম্বার সেই রাজাকারদেরই প্রতিনিধি।
‘রেইনকোট’ গল্পে রাজাকারার পশ্চিম পাকিস্তানিদের দালালরূপে দেখা দিয়েছে। তারা মহলায় মহলায় ঘুরে সুন্দরী মেয়েদের ধরে সেনা ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়েছে। প্রিন্সিপাল ও ইসহাকও রাজাকারে পরিণত হয়ে উর্দু ভাষায় কথা বলেছে। পাকবাহিনীকে সহযোগিতা করেছে।
নুরুল হুদার চেতনাস্রোত থেকে জানতে পারি, এক সর্দার গোছের রাজাকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে। সে কি না ট্রাক ট্রাক মাল লুট করে নিজের মেয়ের বাড়িতে পাঠায়। উদ্দীপকে মালেক মেম্বারও যুদ্ধের সময় গ্রামে মিলিটারি ডেকে এনে অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যা করেছে। এছাড়াও গল্পে বর্ণিত রাজাকারদের মতো সে আশেপাশের গ্রাম থেকে সুন্দরী মেয়েদের ধরে ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়েছে। পরিশেষে বলা যায়, ‘রেইনকোট’ গল্পের সমষ্টিগতভাবে রাজাকাররা যেসব কর্মকাণ্ড করেছে এক মালেক মেম্বার রাজাকারের কর্মে তার বিশাল অংশ প্রতিফলিত হয়েছে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে রাজাকারদের দেশদ্রোহী, লুটতরাজ এবং দালাল চরিত্রের পরিচয় মেলে। উদ্দীপকেও আছে তাদের নরঘাতী ও দেশদ্রোহী রূপের পরিচয়।
‘রেইনকোট’ গল্পে রাজাকারদের বহুমুখী কর্মকাণ্ডের পরিচয় মেলে। তারা উর্দু ভাষায় কথা বলে ক্ষমতা অর্জন করে। যুদ্ধের সময় গ্রামে মিলিটারি ডেকে এনে গ্রামবাসীর ওপর নির্যাতন চালায়। মিলিটারির কাছ থেকে বন্দুক নিয়ে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে দেশদ্রোহীর পরিচয় দেয়। এমনকি মহলায় ঘুরে পাকবাহিনীর জন্য সুন্দরী মেয়েদের ধরে মিলিটারি ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়।
উদ্দীপকের মালেক মেম্বার যেন গল্পে বর্ণিত রাজাকারদের প্রতিনিধি। সে যুদ্ধের সময় গ্রামে মিলিটারি ডেকে এনে অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যা করেছে। এছাড়া পাকিস্তানি-মিলিটারিকে সন্তুষ্ট করতে আশেপাশের গ্রামের মেয়েদের ধরে পৌঁছে দিয়েছে ক্যাম্পে। মালেক মেম্বার একাধারে দেশদ্রোহী ও নরঘাতক। ‘রেইনকোট’ গল্পে রাজাকারদের যে পরিচয় আমরা পেয়েছি তাতে তারা যে মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন এবং পাকবাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। উদ্দীপকের রাজাকার মালেক মেম্বার এর থেকে ব্যতিক্রম নয়।
সুতরাং একথা অনস্বীকার্য যে, মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন, মিলিটারিকে সহযোগিতা করে রাজাকাররা দেশদ্রোহী ও নরঘাতকের পরিচয় দিয়েছে। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটির যৌক্তিকতা রয়েছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সেলিনা হোসেন-এর ‘যুদ্ধ’ উপন্যাসে নিখিল ও সরলা অত্যাচারিত হিন্দু স¤প্রদায়ের প্রতিনিধি। যুদ্ধের সময় হিন্দুদের বেছে বেছে নির্যাতন করা হয়। জীবন বাঁচানোর জন্য নিখিল ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত হয়। টুপি মাথায় দিয়ে নামাজ পড়ে সে। মনে অসহনীয় বেদনা থাকলেও কালেমা সবসময় মুখস্থ রাখে।
ক. রাস্তায় বেরুলে নুরুল হুদা সবসময় ঠোঁটের ওপর কী রেডি রাখে?
খ. নুরুল হুদা অনেক সুরা মুখস্থ করেছে কেন?
গ. উদ্দীপকের নিখিল ও ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদার জীবন বাস্তবতার তুলনা কর।
ঘ. “জীবন বাস্তবতার সাদৃশ্য থাকলেও উগ্র সা¤প্রদায়িক প্রবণতা নিখিলের জীবনকে বেশি বিপন্ন করেছে।”Ñ উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্প অনুযায়ী উক্তিটির যথার্থতা নির্ণয় কর। ১
২
৩
৪
৫ নং প্রশ্নের উত্তর
পাঁচ কালেমা রেডি রাখে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নুরুল হুদা যুদ্ধের সময় নিজেকে মুসলিম হিসেবে প্রমাণ করতে অনেক সুরা মুখস্থ করে।
‘রেইনকোট’ গল্পে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সা¤প্রদায়িক ইস্যুতে পরিচালনা করার নীলনকশা ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসররা সেদিন বেছে বেছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের হত্যা করেছিল। এমনকি মিলিটারি চেকপোস্টে যাত্রীদের গোপন জায়গা তলাসি করে হিন্দুদের হত্যা করা হতো। মুসলিমদেরও কালেমা, সুরা পাঠ করিয়ে রেহাই দিত। নুরুল হুদা পাকবাহিনীর এই সা¤প্রদায়িক ইস্যু থেকে বাঁচতে অনেক সুরা মুখস্থ করে।
‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদা পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার, কিন্তু এই নির্যাতন সা¤প্রদায়িকতার জন্য নয়। অন্যদিকে উদ্দীপকে নিখিলের ওপর যে নির্যাতন চলেছে তা সা¤প্রদায়িকতায় দুষ্ট।
‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধা; তিনি নিজে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার অভিযোগে অভিযুক্ত। ফলে তাকে সেনা ক্যাম্পে তলব করে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। কিন্তু নুরুল হুদা মানসিক শক্তি হারায়নি, কারণ তিনি সা¤প্রদায়িকতার শিকার নন। কিন্তু উদ্দীপকের নিখিল সা¤প্রদায়িকতার শিকার হয়।
নিখিল অত্যাচারিত হিন্দু স¤প্রদায়ের প্রতিনিধি। ফলে তার ওপর ছিল সাম্প্রদায়িক রাজনীতির খড়্গ। যুদ্ধের সময় হিন্দুদের বেছে বেছে নির্যাতন করা শুরু হলে নিখিল ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত হয়। বুকে ধর্মত্যাগের অসহ্য বেদনা নিয়ে টুপি মাথায় কলেমা মুখস্থ রাখার মতো প্রহসনের শিকার হয়। গল্পের নুরুল হুদাকে নির্যাতনের শিকার হতে হলেও এমন সাম্প্রদায়িকতার শিকার হতে হয়নি। এ কারণে শারীরিক নির্যাতনের সময়ও তিনি নিজেকে মানসিক যোদ্ধা ভেবে তৃপ্ত থাকেন। কিন্তু উদ্দীপকের নিখিলের বাস্তবতা ভিন্ন।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদা পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হলেও উদ্দীপকের নিখিলের জীবনের সঙ্গে সা¤প্রদায়িকতার বিষয় যুক্ত হওয়ায় সে হয়ে পড়েছে আরও বিপন্ন।
শ্যালক স্বয়ং বীর-মুক্তিযোদ্ধা এবং কলেজে কুলির ছদ্মবেশে যে মুক্তিবাহিনী প্রবেশ করেছিল তাদের সঙ্গেও নুরুল হুদার সম্পর্ক রক্ষার অভিযোগ রয়েছে। তাই নুরুল হুদার ওপর মানসিক নির্যাতন নেমে আসে। কিন্তু উদ্দীপকের নিখিল এমন শারীরিক নির্যাতন সহ্য না করলেও সা¤প্রদায়িক নির্যাতন তাকে আরও বেশি অসহায় করে তুলেছে।
নুরুল হুদা মানসিকভাবে বিপন্ন না হয়ে এবং নিজেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্পর্কিত ভেবে গর্ববোধ করেছেন। কিন্তু নিখিল, যে-কিনা অত্যাচারিত হিন্দু স¤প্রদায়ের প্রতিনিধিÑ জীবন বাঁচানোর তাগিদে ধর্ম ত্যাগ করেছে। আপন ধর্মত্যাগ সকল মানুষের জন্যই বেদনার। নিখিল এই বেদনায় হয়েছে পর্যুদস্ত। বুকে অসহ্য বেদনা নিয়ে সে নামাজ পড়ে, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সবসময় কলেমা মুখস্থ রাখে। বস্তুত যুদ্ধকালীন সা¤প্রদায়িক হামলা তাকে বিপন্ন করেছে।
নুরুল হুদা শারীরিকভাবে নির্যাতিত হলেও মানসিকভাবে বিপন্ন হয়নি। নিখিলও যুদ্ধকালীন নির্যাতনের শিকার তবে সা¤প্রদায়িক প্রবণতা তাকে মানসিকভাবে বিপন্ন করেছে, ধর্মান্তরিত করেছে। সে নুরুল হুদার থেকেও বেশি বিপন্ন বেশি অসহায়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
তারামন বিবি ১১ নম্বর সেক্টরের একজন নারী-মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মুহিব হাবিলদারের কাছে প্রশিক্ষণ নেন। আজিজ মাস্টারের ক্যাম্পে তিনি মুক্তিবাহিনীর জন্য রান্নার দায়িত্ব পালন করেন। এর সঙ্গে পুরুষ যোদ্ধাদের পাশাপাশি সরাসরি যুদ্ধেও অংশ নেন।
ক. স্টেনগানওয়ালা ছোকরার দল নৌকা ভরে কী নিয়ে আসে?
খ. ‘এদিককার মানুষ চোখে খালি নৌকা দেখে, নৌকা ভরা অস্ত্র।’Ñ উক্তিটিতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের তারামন বিবির সঙ্গে ‘রেইনকোট’ গল্পের মিন্টুর চরিত্র তুলনা কর।
ঘ. ‘নারী ও পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার সম্মিলিত চেষ্টায় আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে।’Ñ উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্প অবলম্বনে উক্তিটি যাচাই কর। ১
২
৩
৪
৬ নং প্রশ্নের উত্তর
অস্ত্র নিয়ে আসে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে ‘এদিককার মানুষ চোখে খালি নৌকা দেখে, নৌকা ভরা অস্ত্র।’Ñ উক্তিটিতে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতাকে বোঝানো হয়েছে।
মিলিটারি লাগার পর নুরুল হুদা চারবার বাসা পরিবর্তন করে। সবশেষ বাসাটি শহর থেকেও দূরে বলা যায়। বাসার পূর্বদিকে চোখে পড়ে বিল আর ধানক্ষেত। এই বিল দিয়ে নৌকায় করে মুক্তিবাহিনী অস্ত্র নিয়ে আসে, যে অস্ত্র শহরের যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। মুক্তিবাহিনী বার বার এমনভাবে অস্ত্র নিয়ে এলে তা সাধারণ মানুষের চোখও এড়ায় না। এদিককার মানুষ তাই খালি নৌকা দেখে, নৌকা ভরা অস্ত্র।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে মিন্টু একজন সম্মুখ-যুদ্ধের যোদ্ধা। মিন্টুর মতো উদ্দীপকের তারামন বিবিও নারী হয়ে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছে।
নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টু জুন মাসের ২৩ তারিখে যুদ্ধের উদ্দেশে রওনা দেয়। নুরুল হুদার চিন্তাস্রোতে ধরা পড়ে মিন্টুর সাহসিকতা। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে তিনি হয়তো কোথাও কোনো নদীর তীরে ওঁৎ পেতে বসে থাকেন। উদ্দীপকের তারামন বিবিও এমন সাহসিক এক নারীযোদ্ধা।
পাকিস্তানি বাহিনী হয়তো গ্রাম জ্বালিয়ে কয়েকশ মানুষ মেরে লাশগুলো গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে। মিন্টু স্টেনগান তাক করে থাকে ঐ মিলিটারিগুলোর দিকে। এ থেকে বোঝা যায়, মিন্টু একজন সাহসী ও সম্মুখযুদ্ধের যোদ্ধা। উদ্দীপকের তারামন বিবিও ১১ নম্বর সেক্টরের একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা। নারী হয়েও তিনি ক্যাম্পে রান্না করার পাশাপাশি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। মিন্টু ও তারামন দুজনই যোদ্ধা এবং অকুতোভয়। কিন্তু তারামন বিবিকে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়ার আগে নিজের পরিস্থিতির সঙ্গে কম যুদ্ধ করতে হয়নি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কেবল পুরুষের বিজয় গাথা নয়, এদেশের নারীর ত্যাগ ও বীরত্বও স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল। এমন বক্তব্যের সমর্থন মেলে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ গল্প এবং আলোচ্য উদ্দীপকে।
‘রেইনকোট’ গল্পে স্বাধীনতার জন্য পুরুষের বীরত্ব এবং নারীর ত্যাগকে দেখানো হয়েছে। মিন্টু ও তার সহযোদ্ধাদের বীরত্বও গল্পের একটি প্রান্ত। এছাড়াও পাকবাহিনীর এবং রাজাকারদের দ্বারা এদেশের নারীদের নির্যাতন করার ইঙ্গিতও রয়েছে এ গল্পে, যা চিিহ্নত করে স্বাধীনতার জন্যে নারীর ত্যাগ। অন্যদিকে উদ্দীপকে নারীর ত্যাগ নয়, বীরত্ব প্রদর্শিত হয়েছে।
উদ্দীপকে তারামন বিবি যুদ্ধের সময়ের ‘বীরাঙ্গনা’ নন, বরং তিনি বীর নারী-মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একদিকে যেমন সেনা ক্যাম্পে রান্না করে মুক্তিবাহিনীকে সেবা করেছেন, অন্যদিকে পুরুষদের সঙ্গে একযোগে যুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বের পরিচয দিয়েছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে কেবল পুরুষরাই যুদ্ধ করেননি, নারীদেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তারামন বিবিই তার প্রমাণ।
‘রেইনকোট’ গল্পে নারীর ত্যাগ, পুরুষের বীরত্ব এবং উদ্দীপকে তারামন বিবির বীরত্ব প্রমাণ করে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে নারী-পুরুষ সকলের অংশগ্রহণ ছিল। তাই বলা যায়, ‘নারী ও পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার সম্মিলিত চেষ্টায় আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে।’Ñ উক্তিটি যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ব্রিটিশরা ভারতের শাসনভার গ্রহণ করলে অনেক বাঙালি বাংলা ছেড়ে ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। ভাষা শিক্ষার জন্য তারা এমনটি করেছিল তা নয়। মূলত বেশিরভাগ লোকই ইংরেজি শিখেছিল রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য।
ক. আকবর সাজিদ কোন বিষয়ের অধ্যাপক?
খ. প্রিন্সিপাল আফাজ আহমদ আজকাল আকবর সাজিদকে তোয়াজ করেন কেন?
গ. বিদেশি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে আফাজ আহমদ এবং উদ্দীপকে বর্ণিত বাঙালিদের দৃষ্টিভঙ্গির সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “স্বার্থের কারণে মানুষ মাতৃভাষাকে ত্যাগ করার মতো কাজ অনায়াসে করতে পাারে।”Ñ উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্প অবলম্বনে উক্তিটির যথার্থতা নির্ণয় কর। ১
২
৩
৪
৭ নং প্রশ্নের উত্তর
আকবর সাজিদ উর্দুর অধ্যাপক।
আখতারুজ্জামন ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে প্রিন্সিপাল আফাজ আহমদ উর্দু শিখে নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদকে তোয়াজ করতে শুরু করেন।
উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদ জাতিতে পশ্চিম পাকিস্তানি এবং উর্দুভাষী বলে প্রিন্সিপাল আফাজ আহমদ যুদ্ধের শুরুতে আকবর সাজিদকে তোষামোদি শুরু করেন। সাজিদের কাছ থেকে বিভিন্ন শব্দের উর্দু অর্থ জানতে তার প্রবল আগ্রহ। অর্থাৎ, আকবর সাজিদকে করা প্রিন্সিপালের এই তোয়াজে স্পষ্টতই স্বার্থচিন্তা জড়িত। বস্তুত উর্দু ভাষা জানার মাধ্যমে নিজের স্বার্থরক্ষার লক্ষে প্রিন্সিপাল উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদকে তোয়াজ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমাদের দেশের অনেক বুদ্ধিজীবী বিদেশি ভাষা উর্দু শিখতে চেয়েছিলেন কেবলমাত্র স্বার্থরক্ষার তাগিদে। ‘রেইনকোট’ গল্পের আফাজ আহমদ এবং উদ্দীপকে বর্ণিত বাঙালিদের মধ্যেও এমন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে।
‘রেইনকোট’ গল্পে প্রিন্সিপাল উর্দু শিখতে চেয়েছিল অন্য একটি ভাষা শিক্ষার আগ্রহ থেকে নয়, বরং তার উর্দু শিক্ষার উদ্দেশ্য স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্য। এ কারণে যুদ্ধ শুরু হলে তিনি উর্দুচর্চায় মনোযোগ দেন এবং উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদকে বিশেষভাবে তোয়াজ করা শুরু করেন। উদ্দীপকে বর্ণিত বাঙালিদের দৃষ্টিভঙ্গি এর থেকে ব্যতিক্রম নয়।
উদ্দীপকে ব্রিটিশদের ভারত শাসনভার গ্রহণ করার সময় থেকে এদেশের অনেক বাঙালির বাংলা ছেড়ে ইংরেজিতে কথোপকথনের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে। এটি সত্যি যে, তখন অনেকেই একটি বিদেশি ভাষা জানার আগ্রহে ইংরেজি চর্চা শুরু করেছিল, কিন্তু এমন অনেকে ছিল যারা ভাষা শিক্ষার জন্য নয়, বরং ইংরেজি শিখে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, আফাজ আহমদ এবং উদ্দীপকে বর্ণিত বাঙালিদের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার ক্ষেত্রে একই রকম স্বার্থকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে।
“মানুষ স্বভাবতই মাতৃভাষাকে ভালোবাসলেও এমন অনেক মানুষ আছে, যারা স্বার্থের কারণে মাতৃভাষাকে ত্যাগ করার মতো কাজ অনায়াসে করতে পারে।” এমন কথার প্রমাণ মেলে আলোচ্য উদ্দীপক এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে।
‘রেইনকোট’ গল্পে প্রিন্সিপাল আফাজ আহমদ এবং তার পিওন ইসহাক মিয়ার মাতৃভাষা বাংলা। তারা সাধারণ অবস্থায় বাংলায় কথা বলে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ইসহাক মিয়া মাতৃভাষা বাংলা ছেড়ে দিয়ে উর্দু বলা শুরু করেন। তিনি কলেজে স্থাপিত ক্যাম্পের মিলিটারিদের সঙ্গে উর্দুতে কথা বলেন, নিজের স্বার্থ সন্ধান করেন। অন্যদিকে প্রিন্সিপালও উর্দুতে সঠিকভাবে কথা বলার নানা চেষ্টায় লিপ্ত হন। উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদের কাছ থেকে জেনে নিতে চান বিভিন্ন বাংলা শব্দের উর্দু অর্থ।
‘রেইনকোট’ গল্পের মতো উদ্দীপকেও দেখা যায়, ব্রিটিশ আমলে অনেক বাঙালি বাংলা ছেড়ে শুধু রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগের আকাক্সক্ষায় ইংরেজি বলা শুরু করে। তাদের এই ইংরেজি চর্চার পিছনে ভাষা শিক্ষার কোনো আগ্রহ ছিল না। বস্তুত স্বার্থের কারণে সেদিন তারা মাতৃভাষাকে ত্যাগ করেছিল। ‘রেইনকোট’ গল্প এবং আলোচ্য উদ্দীপক উভয়ক্ষেত্রেই দেখা যায়,মানুষ মাতৃভাষাকে ত্যাগ করে অন্য ভাষা চর্চা শুরু করেছে কোনো শুভ-চিন্তা থেকে নয়। বরং এর পিছনে ক্রিয়াশীল ছিল ব্যক্তিগত স্বার্থ।
পরিশেষে উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্প অবলম্বনে ‘স্বার্থের কারণে মানুষ মাতৃভাষাকে ত্যাগ করার মতো কাজ অনায়াসে করতে পারে।’Ñ উক্তিটি যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
একেবারে দিনে-দুপুরে এমন একটি কাণ্ড নিজের চোখের সামনে সংঘটিত হওয়ার পরেও তা বিশ্বাস হতে চায় না। রাজধানীরও রাজধানী যে পল্টন-রমনা, সেই পল্টনে চারদিকে চার-পাঁচটি আর্মি চেকপোস্টের কড়া নজরদারি এড়িয়ে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে বিচ্ছুগুলো কয়েকটি হ্যান্ডগ্রেনেড ছুঁড়ে গেল। আর্মি অফিসার ও তাদের পরিবার-পরিজন এখানকার মার্কেটে নিয়মিত কেনাকাটা করে। এ ধরনের নিরাপত্তা জোনে গেরিলা বিচ্ছুগুলো অবিশ্বাস্যভাবে বোমা হামলা চালিয়ে গেল। গত রাতের শেষের দিকে তারা সিদ্ধিরগঞ্জ, ডেমরা, গাবতলীর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও পাওয়ার স্টেশনগুলোয় তুমুল হামলা চালায়। এরা কীভাবে এসব অবিশ্বাস্য দুঃসাহসী অপারেশন চালায়?
ক. নুরুল হুদার মেয়ের বয়স কত?
খ. কথক কেন বললেন, “এই বৃষ্টির মেয়াদ আলা দিলে পুরো তিন দিন।”
গ. উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পের কোন দিকটিকে ইঙ্গিত করে?
ঘ. ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবে উদ্দীপকের গেরিলা বিচ্ছুগুলোর কর্তব্যকর্মকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়।Ñ মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর। ১
২
৩
৪
৮ নং প্রশ্নের উত্তর
নুরুল হুদার মেয়ের বয়স আড়াই বছর।
মঙ্গলবার ভোরে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় প্রচলিত প্রবাদে আস্থা জ্ঞাপন করে লেখক উপর্যুক্ত কথা বললেন।
বৃষ্টির স্থায়িত্ব সম্পর্কে প্রচলিত একটি প্রবাদে বলা হয়েছে, “শনিতে সাত মঙ্গলে তিন, আর সব দিন দিন। এটা হলো জেনারেল স্টেটমেন্ট। স্পেসিফিক ক্ল্যাসিফিকশনে বলা হয়েছে, “মঙ্গলে ভোর রাতে হইল শুরু, তিন দিন মেঘের গুরুগুরু।” সুতরাং মঙ্গলের ভোর রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কথক বললেন, “এই বৃষ্টির মেয়াদ আলা দিলে পুরো তিন দিন।”
উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পের মুক্তিযোদ্ধা গেরিলাদের কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত আর্মি ক্যাম্পসংলগ্ন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও প্রিন্সিপালের কোয়ার্টারে হামলার দিকটিকে ইঙ্গিত করে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী বাংলাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার লক্ষ্যে লুণ্ঠনে মেতে ওঠে এবং হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে এদেশে রক্তের নদী বইয়ে দেয়। কিন্তু এদেশের নানা শ্রেণি-পেশার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা পাকিস্তানি হায়েনাদের এ আক্রমণের সমুচিত জবাব দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন গেরিলা দল হানাদার বাহিনীকে আক্রমণে আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রাজধানীরও রাজধানী যে পল্টন-রমনা সেই পল্টনের চারদিকে চার-পাঁচটি আর্মি চেকপোস্টের কড়া নজরদারি এড়িয়ে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলারা সশস্ত্র হামলা চালায়। এ রকম একটি নিরাপত্তা জোনে হামলা করে নির্বিঘেœ বেরিয়ে যাওয়া একটি অবিশ্বাস্য ঘটনার মতো মনে হয়। এমনই একটি অবিশ্বাস্য অপারেশন পরিচালনা ‘রেইনকোট’ গল্পেও দেখা যায়। শহরের মাঝখানে অবস্থিত কলেজের সামনের দেয়াল ঘেঁষে ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমার উড়িয়ে দিয়ে সেখান থেকে অনেকখানি পথ ও নানা স্থাপনা এড়িয়ে আর্মি ক্যাম্পের কোল ঘেঁষে প্রিন্সিপাল সাহেবের কোয়ার্টারে সফলভাবে গ্রেনেড হামলাকে কথক বলেছেন ভয়াবহ কাণ্ড ও অবিশ্বাস্য।
‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবে উদ্দীপকের গেরিলা বিচ্ছুগুলোর কর্তব্যকর্মকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়।”Ñ প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অমানুষিক নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড এবং ধ্বংসলীলায় পরিণত হয় বাংলার মাটি। ওরা আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা জন্ম-মৃত্যুর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একসাথে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে এবং হাতে অস্ত্র তুলে নেয়, গড়ে তোলে মুক্তিযোদ্ধা দল ও গেরিলা বাহিনী।
উদ্দীপকে আমরা দেখি, রাজধানী শহরের প্রাণকেন্দ্র পল্টনস্থ বায়তুল মোকাররম মার্কেটে চার-পাঁচটি আর্মি চেকপোস্টের নজরদারি এড়িয়ে গেরিলারা সফল বোমা হামলা চালিয়ে নিরাপদে চলে যায়। দিনেদুপুরে এমনই নিরাপত্তা জোনে আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা বিচ্ছুদের চলে যাওয়াটা নিজ চোখে দেখার পরেও লেখকের অবিশ্বাস্য মনে হয়। উদ্দীপকের অনুরূপ ‘রেইনকোট’ গল্পেও দেখা যায়, শহরের মাঝখানে অবস্থিত কলেজ সংলগ্ন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার এবং নানা স্থাপত্য পাড়ি দিয়ে আর্মি ক্যাম্পসংলগ্ন প্রিন্সিপালের গেটে গ্রেনেড ছুঁড়ে দিয়ে নির্বিঘেœ চলে যায়। গেরিলাদের এ অপারেশন সংবাদটি কথকের কাছে অবাক কাণ্ড ও অবিশ্বাস্য ঠেকে। উদ্দীপকের সাথে ‘রেইনকোট’ গল্পের এ সাদৃশ্য ছাড়াও গল্পে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা বিচ্ছুগুলোর কর্তব্যকর্মকে নানাভাবে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
‘রেইনকোট’ গল্পটি একটি মুক্তিযুদ্ধনির্ভর গল্প। এ গল্পে কথক নিজে মুক্তিযুদ্ধে শরিক হতে না পারলেও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা মুক্তিযোদ্ধাদের নানা অপারেশন সংবাদে মনে মনে উৎফুল হয়েছেন, গর্বিত হয়েছেন। ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবে উদ্দীপকের গেরিলা বিচ্ছুদের কর্তব্যকর্মকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আজগরের মা দু’মাস আগেও মহলার এর-ওর বাসায় ঝিয়ের কাজ করে চলেছে আর আজগর সরকার মঞ্জিলের বিড়ির কারখানায় বিড়ি বাঁধার কাজ করেছে। পঁচিশে মার্চের কালরাতের পর শহরে আর্মি নামায় সবকিছু পাল্টে গেছে। বিহারি আজগর এখন মোগলটুলির ইজারাদার না হলেও ফৌজদার বনে গেছে। এদেশের মাটিতে জন্ম হলেও তার মুখে এখন বাংলা কথা শোনাই যায় না। তার উর্দুর তোড়ে কুমিলা হাইস্কুলের উর্দু শিক্ষক সরফরাজ আলী পর্যন্ত হিমশিম খান। এ মাটির কুলাঙ্গার আজগর মুক্তিদের খুঁজে বের করে সার্কিট হাউসের আর্মি ক্যাম্পে পৌঁছে দিতে বড় তৎপর ছিল।
ক. কার জন্য নুরুল হুদাকে এক্সট্রা তটস্থ থাকতে হয়?
খ. পিয়নকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছা করেছিল কেন?
গ. উদ্দীপকের আজগর ‘রেইনকোট’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের আজগররাই ’৭১-এ এদেশের লাখো জনতা হত্যায় ইন্ধন যুগিয়েছিল।”Ñ বক্তব্য বিষয়ের যথার্থতা নিরূপণ কর। ১
২
৩
৪
৯ নং প্রশ্নের উত্তর
মিন্টুর জন্য নুরুল হুদাকে এক্সটা তটস্থ থাকতে হয়।
পিয়নের মুখ দর্শনে পাকিস্তানি মিলিটারির ভয় কেটে যাওয়ায় তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছা করেছিল।
দরজায় প্রবল কড়া নাড়ার শব্দে কথক হানাদার ঘাতক পাকিস্তানি মিলিটারির হানা দেয়ার আতঙ্কে শিউরে উঠলেন। মুসলমান রীতি অনুসারে চরম বিপদের সমযে পড়া “আলাহুম্মা ইন্না আন্তা সুবহানাকা ইন্তি কুন্তু মিনাজ জোয়ালেমিন”ও পড়ে ফেলেনে। দুরু দুরু বুকে দরজা খুলে কথক দেখতে পান হানাদার ঘাতক নয়, প্রিন্সিপালের পিয়ন। এমন পরিস্থিতিতে কথকের পিয়নকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছা করেছিল।
উদ্দীপকের আজগর ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক মিয়ার চরিত্রের প্রতীক।
’৭১-এর পঁচিশে মার্চ মধ্যরাতের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আবহমান গ্রামবাংলার শান্তসংহত জীবনকে তছনছ করে দেয়। তাদের এ ঘৃণ্য কাজে এদেশে জন্মগ্রহণকারী, এদেশের আলোÑহাওয়া-জল-অন্নে প্রতিপালিত কিছু দুরাচার, গাদ্দার পশু সৈন্যদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
উদ্দীপকের আজগর এমনই এক দুরাচারী গাদ্দারের জীবন্ত প্রতিমূর্তি। এদেশে বাস করে এদেশের মানুষের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে মহলার কাজের ঝি’র ছেলে মহলার ফৌজদার বনে যায়। বাংলায় জন্ম নেয়া তার মুখে পঁচিশে মার্চের পর থেকে উর্দুর তোড়ে স্কুল-কলেজের উর্দুর শিক্ষকরাও হিমশিম খান। এ কুলাঙ্গার এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। উদ্দীপকের আজগরের অনুরূপ ‘রেইনকোট’ গল্পে প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক মিয়াও পঁচিশে মার্চের পর থেকে বাংলা জবান একেবারে ভুলে গেছে। তার উর্দুর তোড়ে স্বয়ং প্রিন্সিপালও গলদঘর্ম হয়ে পড়েন। সুতরাং উদ্দীপকের আজগর ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক মিয়া চরিত্রের প্রতিচ্ছবি।
“উদ্দীপকের আজগররাই ’৭১-এ দেশের লাখো জনতা হত্যার ইন্ধন জুগিয়েছিল।” প্রশ্নোক্ত এ মন্তব্যটি ঐতিহাসিকভাবে যথার্থ।
১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলায় প্রবেশ করে শান্তিপ্রিয় নিরস্ত্র মানুষের ঘরবাড়ি এবং বিভিন্ন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের এ ঘৃণ্য কাজের দোসর ছিল এদেশেরই কতিপয় কুলাঙ্গার।
উদ্দীপকে আজগর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কর্মকাণ্ডের পর এলাকায় কাজের ঝির ছেলে থেকে ফৌজদার বনে যায়। বাংলায় জন্ম নিয়েও সে বাংলা জবান ভুলে অবিরাম উর্দু বোলচাল ছাড়তে থাকে। এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিতে সে সদাসচেষ্ট। এমনই আরেকটি চরিত্র হলো ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক মিয়া। মিলিটারি আসার পর থেকে সে নিজেই একজন কর্নেল বনে গেছে। উর্দু বোলচাল ছাড়া বাংলা জবানে সে এখন আর কথা বলে না। মিলিটারির প্রাদুর্ভাবের পর থেকে তাকে দেখে কলেজের সবাই তটস্থ। উদ্দীপকের আজগর এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের ইসহাক মিয়ারা এ জাতির কুলাঙ্গার ।
এ দেশ, এ জনপদ সম্পূর্ণ অচেনা পাকিস্তানি পশুদের কাছে, তাদের পথ-ঘাট চিনিয়ে দিয়ে বাংলার কিছু কুলাঙ্গার দুরাচারাই বাংলার, বাঙালির সমূহ সর্বনাশ করেছিল। উদ্দীপকের আজগর ‘রেইনকোট’ গল্পের ইসহাক মিয়াদের মতো গাদ্দারদের কারণেই প্রফেসর নুরুল হুদা, প্রফেসর আবদুস সাত্তার মৃধার মতো শত সহস্র দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী নির্মম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি তাই যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
শিবলির বড় ভাই একজন শহিদ বুদ্ধিজীবী। ’৭১-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঁচিশে মার্চের কালরাতে যে ক্র্যাকডাউন হয়েছিল, তার জন্য পাকিস্তানি বর্বর হানাদারদের তিনি কখনো ক্ষমা করেননি। পাকিস্তানি রাষ্ট্রের মৃত্যুর জন্য এর সামরিক বাহিনীই যে দায়ী তা খোলাখুলি বলতেন। দু-একজন হিতাকাক্সক্ষী প্রাণটা বাঁচাতে মুখ বুজে থাকতে বললেও পাকিস্তানি জুলুম ও অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি ছিলেন সোচ্চার। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে তিনি তাদের ভূয়সী প্রশংসাও করতেন। ১৯৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাাকিস্তানি হানাদারদের এদেশীয় দোসররা তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাঁর ক্ষত-বিক্ষত লাশ পাওয়া গিয়েছিল।
ক. ইসহাক কোন বিষয়ের প্রফেসরের বাড়ির দিকে রওনা হলো?
খ. মিলিটারি আক্রমণের পর থেকে ‘রেইনকোট’ গল্পের কথক চারবার বাড়ি পাল্টালেন কেন?
গ. উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপাল সাহেবের মধ্যকার বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্পের শহিদ বুদ্ধিজীবীর মতো শত-সহস্র শহিদ বুদ্ধিজীবীর ত্যাগে আমরা কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এ বিষয়ে তোমার মতামত দাও। ১
২
৩
৪
১০ নং প্রশ্নের উত্তর
ইসহাক জিওগ্রাফির প্রফেসরের বাড়ির দিকে রওনা হলো।
প্রতিবেশী ও মিলিটারির কাছে শ্যালক মিন্টুর মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের কথা আড়াল করতেই মিলিটারি আক্রমণের পর থেকে ‘রেইনকোট’ গল্পের কথক চারবার বাড়ি পাল্টালেন।
মিন্টু কথকের বাড়িতে থেকেই মানুষ। যুদ্ধের শুরুতেই সে সীমান্ত পার হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। বিষয়টি অবরুদ্ধ ঢাকায় আটকাপড়া কথকের জন্য হয়েছে ভয়াবহ বিপদের। হানাদার বাহিনী ব্যাপারটি জানলেই কথককে তথ্য বের করার নামে নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করবে। এ কারণে হানদার মিলিটারি ও প্রতিবেশীর কাছে শ্যালকের যুদ্ধে গমনের তথ্য আড়াল করতে কথক চারবার বাসা পাল্টালেন।
উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপাল সাহেবের মধ্যে বিস্তর বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।
বাংলার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশের গৌরব বলে বিবেচিত বুদ্ধিজীবীরাও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি। কিন্তু বাঙালি জাতি একসময় রুখে দাঁড়ায়, যদিও কিছু দুর্বলচিত্তের লোক হানাদারদের তোয়াজ করে বেঁচে থাকার পথ বেছে নেয়।
উদ্দীপকে শিবলির বড় ভাই একজন শহিদ বুদ্ধিজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক পঁচিশে মার্চের কালরাতে ক্র্যাকডাউনের জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে কখনো ক্ষমা করেননি। পাকিস্তানি জুলুম ও অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি ছিলেন সোচ্চার। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল তিনি তাদের ভূয়সী প্রশংসা করতেন। উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাইয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের হলো ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপাল সাহেব। এ প্রিন্সিপাল সাহেব পাকিস্তানের জন্য দিনরাত দোয়া-দরুদ পড়ে, সময় নেই অসময় নেই আলাহর দরবারে কান্নাকাটি করে এবং সময় করে কলিগদের গালাগালিও করে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি এ প্রিন্সিপাল মিলিটারির বড়কর্তাদের কাছে সবিনয়ে নিবেদন করেছিল পাকিস্তানকে যদি বাঁচাতে হয় তো সব স্কুল-কলেজ থেকে শহিদ মিনার হটাও। এসব ব্যাপারে উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপাল সাহেবের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লক্ষ প্রাণের দান। এই লক্ষ প্রাণের মধ্যে শহিদ-বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগ ছিল অতি মূল্যবান এক মহৎকর্ম।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী আতর্কিতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে শান্ত-স্নিগ্ধ বাংলায় অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলা ও বাঙালির জনজীবন তছনছ করে দেয়। দেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীরাও তাদের নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি।
উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই একজন শহিদ বুদ্ধিজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদে ছিলেন সোচ্চার। দু-একজন হিতাকাক্সক্ষী প্রাণটা বাঁচাতে মুখ বুজে থাকতে বললেও অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি যেমন সোচ্চার ছিলেন, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে তাদের ভূয়সী প্রশংসাও করতেন। ১৯৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাইয়ের, মতো এমনই সৎ-সাহসী-নির্র্ভীক-দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী আমরা ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রফেসর নুরুল হুদা, প্রফেসর আবদুস সাত্তার মৃধার মাঝে দেখতে পাই।
‘রেইনকোট’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রফেসর নুরুল হুদার মধ্যে সত্যিকার দেশপ্রেম, নির্ভীকতা ও দুঃসাহস ফুটে ওঠে পাকিস্তানি হানাদারদের শত নির্যাতনের মুখেও মুক্তিযোদ্ধাদের আস্তানার তথ্য না দেওয়ায়। তেমনি উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রফেসর নুরুল হুদা, প্রফেসর আবদুস সাত্তার মৃধাদের মতো শত-সহস্র বুদ্ধিজীবীর আত্মত্যাগে আমরা কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
ক জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
১. ‘রেইনকোট’ গল্পটির রচয়িতা কে?
উত্তর : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
২. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : ১৯৪৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
৩. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কোন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : গোটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
৪. ইসহাক কোন বিষয়ের প্রফেসরের বাড়ির দিকে রওনা হলো?
উত্তর : জিওগ্রাফির প্রফেসরের বাড়ির দিকে রওনা হলো।
৫. কাকে দেখে কলেজের সবাই তটস্থ?
উত্তর : ইসহাক মিয়াকে দেখে।
৬. কোন মাসের শুরু থেকে ইসহাক বাংলা বলা ছেড়ে দিয়েছে?
উত্তর : এপ্রিল মাসের শুরু।
৭. কে দিনরাত উর্দু বলে?
উত্তর : ইসহাক মিয়া।
৮. কে পাকিস্তানিদের জন্য দিনরাত দোয়া-দরুদ পড়ছে?
উত্তর : কলেজের প্রিন্সিপাল।
৯. আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের পিতৃপ্রদত্ত নাম কী?
উত্তর : আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস।
১০. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : ১৯৯৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
১১. কাকে জড়িয়ে ধরে নুরুল হুদার চুমু খেতে ইচ্ছা করছে?
উত্তর : পিওনকে।
১২. রেডিও, টেলিভিশনে হরদম কী বলছে?
উত্তর : হরদম বলছে সিচ্যুয়েশন নর্মাল।
১৩. নুরুল হুদার স্ত্রীর নাম কী?
উত্তর : আসমা।
১৪. ‘মিন্টু কার ভাই?
উত্তর : আসমার ভাই।
১৫. কার জন্য নুরুল হুদাকে এক্সট্রা তটস্থ থাকতে হয়?
উত্তর : মিন্টুর জন্য।
১৬. নুরুল হুদা কতবার বাড়ি পাল্টায়?
উত্তর : চারবার বাড়ি পাল্টায়।
১৭. নুরুল হুদার মেয়ের বয়স কত?
উত্তর : আড়াই বছর।
১৮. নুরুল হুদার ছেলের বয়স কত?
উত্তর : পাঁচ বছর।
১৯. কোথাকার হাফের বেশি জায়গা স্বাধীন?
উত্তর : রংপুর-দিনাজপুরের হাফের বেশি জায়গা স্বাধীন।
২০. মসজিদের ছাদ থেকে কে পড়ে গিয়েছিল?
উত্তর : মুয়াজ্জিন সাহেব পড়ে গিয়েছিল।
২১. কে জুমার নামাজটা নিয়মিত পড়ে?
উত্তর : নুরুল হুদা।
২২. নুরুল হুদা কোন বিষয়ের লেকচারার?
উত্তর : নুরুল হুদা কেমিস্ট্রির লেকচারার।
২৩. উর্দুর প্রফেসরের নাম কী?
উত্তর : উর্দুর প্রফেসরের নাম আকবর সাজিদ।
২৪. কাদের ঠিকানা নুরুল হুদার জানা আছে?
উত্তর : মিসক্রিয়ান্টদের।
২৫. ‘মিসক্রিয়ান্ট’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : দুষ্কৃতিকারী।
২৬. আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ কোনটি?
উত্তর : ‘জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল’।
২৭. ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসটির রচয়িতা কে?
উত্তর : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
২৮. ‘রেইনকোট’ গল্পের কথক কে?
উত্তর : নুরুল হুদা।
২৯. ‘রেইনকোট’ গল্পের রেইনকোটটি কার?
উত্তর : রেইনকোটটি মিন্টুর।
৩০. নুরুল হুদাকে কে ডেকে পাঠিয়েছে?
উত্তর : প্রিন্সিপাল ডেকে পাঠিয়েছে।
খ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
১. ‘ক্যাপ্টেনের এদিকে তাকে ঠেলা মুশকিল’Ñ কেন?
উত্তর : ‘ক্যাপ্টেনের এদিকে তাকে ঠেলা মুশকিল’Ñ মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসহাক মিয়ার দাপট খুব বেশি বেড়ে যাওয়ায় এ কথা বলা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসহাক মিয়া পাকিস্তানিদের পক্ষ অবলম্বন করায় তার দাপট খুব বেড়ে গিয়েছিল। সে নিজেকে কর্নেলের মতো ক্ষমতাবান ভাবতে শুরু করে। তাই তাকে কর্নেল বা লেফটেন্যান্ট কর্নেল বা ক্যাপ্টেন ভাবা যায়। কিন্তু ক্যাপ্টেনের নিচের পদে তাকে ভাবা যায় না।
২. নুরুল হুদাকে এক্সট্রা তটস্থ থাকতে হয় কেন?
উত্তর : মিন্টু মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে বলে নুরুল হুদাকে এক্সট্টা তটস্থ থাকতে হয়।
নুরুল হুদা অত্যন্ত ভীরু প্রকৃতির মানুষ। সে দেশকে খুব ভালোবাসে কিন্তু ভয়ে প্রকাশ করতে পারে না। তাই তার শালা মিন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধাএকথা ‘হানাদার’ বাহিনী জানতে পারলে তাকে খুব বিপদে পড়তে হবে, এই ভয়ে সে সবসময় তটস্থ থাকে।
৩. ‘রেইনকোট’ গল্পে ‘মিসক্রিয়ান্ট’ শব্দটি কেন ব্যবহার করা হয়েছে?
উত্তর : ‘রেইনকোট’ গল্পে মুক্তিযোদ্ধাদের বোঝাতে ‘মিসক্রিয়ান্ট’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
‘মিসক্রিয়ান্ট’ শব্দের আভিধানিক অর্থ দুষ্কৃতিকারী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার ও তার সেনাবাহিনী এ শব্দটি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ব্যবহার করেছে। আর এ বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে ‘রেইনকোট’ গল্পে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
৪. নুরুল হুদা কেন চারবার বাড়ি পাল্টায়?
উত্তর : নুরুল হুদার সাথে মুক্তিবাহিনীর আঁতাত রয়েছে একথা গোপন রাখার জন্য নুরুল হুদা চারবার বাড়ি পাল্টায়।
নুরুল হুদার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এ খবরটি কেউ যদি হানাদার বাহিনীকে জানিয়ে দেয় এ ভয়ে সে চারবার বাড়ি পাল্টায়। যাতে আশপাশের কেউ তাকে চিনতে না পারে।
৫. ইসহাক মিয়ার দাপট বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পক্ষ অবলম্বন করায় ইসহাক মিয়ার দাপট বেড়ে গিয়েছিল।
ইসহাক মিয়া ছিল পাকিস্তানিদের দোসর। সে অবাধে চলাফেরা করত এবং সব সময় উর্দুতে কথা বলত। আর পাকিস্তানিদের দোসর হওয়ায় সবাই তাকে খুব ভয় পেত।
৬. প্রিন্সিপাল কেন দিন-রাত দোয়া-দরুদ পড়তো?
উত্তর : প্রিন্সিপাল পাকিস্তানিদের জন্য দিনরাত দোয়া দরুদ পড়ত।
পাকিস্তানিদের জন্য প্রিন্সিপাল পাাকিস্তানিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সে সবসময় তাদের মঙ্গল কামনা করত। আর তাদের জয়ের জন্য দিনরাত দোয়া-দরুদ পড়ত।
৭. নুরুল হুদা কেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাটের নিচে শুয়েছিলেন?
উত্তর : মিলিটারিদের ভয়ে নুরুল হুদা পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাটের নিচে শুয়েছিলেন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশবাসীর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল। প্রাণ বাঁচাতে নিরুপায় মানুষগুলো নানা কৌশল অবলম্বন করেছিল। আর তাই নুরুল হুদা রাতভর ট্যাংকের হুঙ্কার, মেশিনগান আর স্টেনগানের প্রচণ্ড শব্দে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাটের নিচে শুয়েছিলেন। আতঙ্কিত হয়ে, জীবন রক্ষার জন্য।
৮. ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নুরুল হুদা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান কেন?
উত্তর : ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নুরুল হুদা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান, কারণ তাকে দেখতে অনেকটা মিন্টুর মতো লাগছিল।
মিন্টু ছিল মুক্তিযোদ্ধা। তাই নুরুল হুদাকে যদি দেখতে তার মতো লাগে তাহলে সে খুব বিপদে পড়বে। তাই ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে যখন সে দেখে তাকে নিজেকে মিন্টুর মতো দেখতে লাগে, তখনই নূরুল হুদা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান।
It is great information