এইচএসসি বাংলা রক্তে আমার অনাদি অস্থি সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

রক্তে আমার অনাদি অস্থি
দিওলয়ার

গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
এ দেশের মাটি আমার শরীরে মাংসের মতো
কেউ চাইলেই
আমার শরীর থেকে মাংস কেটে দিতে পারি না।
এ দেশের নদীর জল, আমার শিরা উপশিরায় প্রবাহিত
প্রতিটি রক্তকণিকার মতো
আমি এ নদীগুলোর অধিকার ছেড়ে দিতে পারি না।
এ দেশের বাতাস, আমার প্রতিটি বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস।
কেউ চাইলেই
আমার নিঃশ্বাসের বাতাসে বারুদের গন্ধ ছড়াতে পারে না।
আমরা তা কিছুতেই দিতে পারি না…।
ক. “রক্তে আমার অনাদি অস্থি” কবিতায় কবির ক্রোধকে কিসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
খ. ‘বিদেশে জানে না কেউ’ কথাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের মূলভাবের সঙ্গে ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার মূলভাবের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবির অভিব্যক্তি উদ্দীপকে সার্থকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে কিনা বিশ্লেষণ কর। ১



১ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবির ক্রোধকে বঙ্গোপসাগরের ভয়াল ঘূর্ণির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

 বাঙালি জাতিসত্তার শোণিত এবং অস্থি কবি নিজের সত্তায় ধারণ করেছেন। বহমান জীবন এখানে বাধাহীন নয়। প্রবহমান নদীর বাঁকে বাঁকে পাতা রয়েছে মৃত্যুর ফাঁদ। কিন্তু কবি একথা জানাতে ভোলেন না যে, তিনি তাঁর স্বপ্নকে বিশাল বঙ্গোপসাগরের শক্তির কাছে আমানত রেখেছেন। এই শক্তিই সাগরের ঘূর্ণ্যমান ভয়াল জলরাশির মতো তাঁর ক্রোধকে শক্তিমান করেছে। আর এই ক্রোধ কেবল কবির একার নয়, সমগ্র জনগোষ্ঠীর সম্পদে পরিণত হয়েছে। এ কারণে বিদেশি নরদানবের আগ্রাসন এ জনগোষ্ঠীকে দমাতে পারে না। বিদেশিরা হয়ত জানে না যে, আবহমান ছুটে চলা নদীর মতোই কবি নিজের অস্তিত্বে ধারণ করে আছেন ঐ জাতিসত্তার শোণিত ও অস্থি।

 উদ্দীপকের মূলভাবের সাথে ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার মূলভাবের সাদৃশ্য বিদ্যমান।
 বাঙালি জাতির জীবনে বার বার পরাধীনতার গ্লানি আসলেও তাদের সংগ্রামী চেতনাশক্তি দিয়ে সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। এই সংগ্রামী চেতনাকেই কবি তার সত্তায় ধারণ করেছেন।
 উদ্দীপকে কবি বলেছেন তাঁর দেশের মাটিতে কেউ অনাকাক্সিক্ষতভাবে প্রবেশ করলে কিংবা জাতীয় জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে আসলে জাতি সেটা মেনে নিবে না। বাংলার নদী এ জাতির রক্তের মতো বিধায় কেউ চাইলেই এর অধিকার ছেড়ে দেয় না। কবির এই চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায়। কবি সেখানে বলেছেন তিনি তার ক্রোধরূপ সংগ্রামী চেতনাকে বঙ্গোপসাগরের কাছে আমানত রেখেছেন। যে ক্রোধে বিদেশি নরদানবেরা পরাস্ত হতে বাধ্য। এখানেই উভয় ক্ষেত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।

 হ্যাঁ, ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার কবির অভিব্যক্তি উদ্দীপকে সার্থকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে ।
 দেশকে, দেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের পবিত্র কর্তব্য। দেশ মায়ের সমান। সেই দেশমাতার কোনো ক্ষতি, কোনো সন্তানই সহ্য করতে পারে না, সহ্য করা উচিত নয়।
 উদ্দীপকে এবং আলোচ্য কবিতায় কবির দেশপ্রেম এবং জাতীয় চেতনা পরিলক্ষিত হয়। ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় গভীর দেশপ্রেম ও জাতীয় চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। নদীমাতৃক এই দেশকে কবি ভালোবেসেছেন নিজের রক্তের মতো, সত্তার মতো, জীবনের মতো। কবি বলেছেন জাতির অস্তিত্বকে তিনি নিজের অস্তিত্বে অনুভব করেন। এই চেতনার প্রতিফলন লক্ষ করা যায় উদ্দীপকের কবির চেতনায়ও।
 উদ্দীপকের কবি তার নিজের দেশের একবিন্দুও কারও কাছে বিলাতে চান না। কাউকে এই দেশের সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করতে দিতে পারেন না। কবির এই জাতীয় চেতনা, দেশপ্রেম, জাতিপ্রেম ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার কবির চেতনায় সার্থকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
 অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বিস্তীর্ণ এপারে
অসংখ্য মানুষের
হাহাকার শুনেও, নিঃশব্দে নীরবে
ও গঙ্গা…. তুমি বইছো কেন?…
ব্যক্তি যদি ব্যক্তিকেন্দ্রিক
সমষ্টি যদি ব্যক্তিত্ব রহিত
তবে নিঠুর সমাজকে ভাঙ না কেন?….
ক. ‘মারণ বেলা’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘বহমান জীবন বাধাহীন নয়’ কবি কেন একথা বলেছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কোন বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি কবিতার সম্পূর্ণ চেতনাকে ধারণ করে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও। ১



২ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘মারণ বেলা’ শব্দের অর্থ বিনাশ কাল।

 নদীর গতিময়তার শক্তির কথা বোঝাতে কবি উক্ত কথাটি বলেছেন।
 যে নদী তার স্রোত হারায় তাকে শত শত শৈবাল এসে ঘিরে ধরে এবং এক সময় নদীকে অচল করে দেয়। তাই নদীর গতি বা স্রোতই তার জীবন। কবিও নদীর গতির শক্তির কথা বলেছেন, যা মানুষের জীবনেও সমানভাবে প্রয়োজনীয়। কারণ, বহমানতার সামনে কোনো কিছু বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

 উদ্দীপকে ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবির মানবিক চেতনার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
 মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। অথচ, মানুষ নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অন্যের ক্ষতি করতে দ্বিধাবোধ করে না। উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে মানবিকতার মহৎ দিক।
 উদ্দীপকে কবি বলেছেন মানুষের হাহাকার শোনার পরও গঙ্গা কেন বয়ে চলেছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক মানবসমাজকে নদী কেন ভাঙছে না। এই মানবিক চেতনা উপলব্ধি করি ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায়। কবি এখানে নদীমাতৃক বাংলাদেশের বন্দনা করেছেন এবং গণমানবের শিল্পী হিসেবে নিজের প্রতিশ্র“তি ও প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। কবি গণমানবের বিচিত্র জীবনের রূপ এঁকেছেন তুলি হাতে, যা উদ্দীপকের কবির চেতনায় প্রতিফলিত হয়েছে।

 না, উদ্দীপকটি ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার সমগ্র চেতনাকে ধারণ করে না।
 পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা প্রভৃতি নদীর স্রোতধারায় বাংলার প্রকৃতি তথা বাঙালির জনজীবন গতিশীল ও সমৃদ্ধ। তাই নদী ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।
 ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবি নদীমাতৃক বাংলাদেশের বন্দনা করেছেন এবং গণমানুষের শিল্পী হিসেবে নিজের প্রত্যয় ও প্রতিশ্র“তি ঘোষণা করেছেন। কবি বলেছেন, এই বাংলা জীবনরূপ নদী নিরন্তর বয়ে চলেছে। গণশিল্পীর তুলি হাতে কবি সে বিচিত্র জীবনের রূপকার। কবির এই মানবিকতাবোধের সাথে মিল আছে উদ্দীপকের কবির চেতনার সাথে। তিনিও মানবতার জয়গান গেয়েছেন এবং সকল স্বার্থান্বেষী চেতনাকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন।
 তবে এই বিষয়টিই ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার একমাত্র বিষয় নয়। কবি নদীর অবদান বর্ণনার পাশাপাশি বাঙালির সংগ্রামী চেতনা সৃষ্টিতে নদীর প্রভাব এবং সেই শক্তি দ্বারা বিদেশি হানাদারদের প্রতিহত করার শপথ ব্যক্ত করেছেন, যা উদ্দীপকে নেই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি কবিতার সম্পূর্ণ চেতনা ধারণ করেনি, আংশিক ধারণ করেছে মাত্র।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সজলের জন্ম মেঘনা পাড়ের এক ছায়াসুনিবিড় গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই সে নদীকে কাছ থেকে দেখে আসছে। তার জীবনের মহৎ উপলব্ধিগুলো সে নদীর কাছ থেকে পেয়েছে। জীবন চলার শক্তি হিসেবে, প্রেরণা হিসেবে নদীর উদারতাকে, ভালোবাসাকে অনুভব করেছে। নদীর গতিতে সে মনুষ্যত্বের চেতনা উপলব্ধি করে।
ক. দিলওয়ার কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
খ. “কত বিচিত্র জীবনের রং” বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের সজলের সাথে কবিতার কার সাদৃশ্য বিদ্যমান?
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করেছে।” মন্তব্যটির যৌক্তিকতা তুলে ধর। ১



৩ নং প্রশ্নের উত্তর

 দিলওয়ার ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।

 “কত বিচিত্র জীবনের রং” বলতে কবি জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা নানা অনুভূতি, উপলব্ধিকে বুঝিয়েছেন।
 সারা জীবনে মানুষ নানা ঘটনা, নানা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। জীবনের নানা পর্ব তাকে অতিক্রম করতে হয়। আর এসব পার করতে গেলে সে নানা অভিজ্ঞতা অর্জন করে, নানা রঙে সে রঙিন হয়। “কত বিচিত্র জীবনের রং” -বলতে কবি এমন ভাবকেই বুঝিয়েছেন।

 উদ্দীপকের সজলের সাথে ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার কবির সাদৃশ্য রয়েছে।
 বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশের অভ্যন্তরে জালের মতো বিছিয়ে রয়েছে হাজারো নদী। এই নদীর দানে বাংলাদেশ সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা। সহজ-সরল উদার এদেশের মানুষ।
 উদ্দীপকের সজলও নদীর স্নেহ ছায়ায় বেড়ে উঠেছে। জীবনের সমস্ত চেতনাকে পরিপক্ব করেছে এই নদীর কাছ থেকে প্রাপ্ত উপলব্ধি থেকে। এই নদী তাকে করেছে মহৎ উদার। সজলের মতো কবিতার কবিও এই একই চেতনাকে ধারণা করেছেন। তিনিও পদ্মার কাছে যৌবন চেয়েছেন, যমুনার কাছে প্রেম চেয়েছেন। উভয় চরিত্রে এখানেই সাদৃশ্য রয়েছে।

 “উদ্দীপকটি কবিতাটির সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করেছে।”  আমার মতে মন্তব্যটি অযৌক্তিক।
 পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-সুরমা বাংলাদেশের প্রধান নদী। এসব নদীর স্রোতধারায় এবং নদীর পানিতে বয়ে আসা পলিতে এদেশের মাটি হয়েছে উর্বর। তাইতো এখানে সোনা ফলে, এদেশে সোনার মানুষ জন্মে।
 উদ্দীপকে দেখা যায়, নদীর অবদানের কথা। সজলের জন্ম নদীর স্রোতধারায় এবং নদীর পানিতে বয়ে আসা পলিতে এদেশের মাটি হয়েছে উর্বর। তাইতো এখানে সোনা ফলে, এদেশে সোনার মানুষ জন্মে।
 উদ্দীপকে দেখা যায়, নদীর অবদানের কথা। সজলের জন্ম নদীর তীরে এবং ছোটবেলা থেকেই নদীর স্নেহছায়ায় বড় হয়েছে। নদীর গতিতে উপলব্ধি করেছে মনুষ্যত্বের চেতনা। কবিতাতেও কবি সেই ভাবকে তুলে ধরেন। তবে এটি কবিতার একমাত্র ভাব নয়।
 ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবি নদীমাতৃক বাংলাদেশের বন্দনা করেছেন। গণমানবের শিল্পী হিসেবে নিজের প্রত্যয় ও প্রতিশ্র“তি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এ ভাবই কবিতার একমাত্র ভাব নয়।
 কবিতায় কবি আরও বর্ণনা করেছেন এই বাংলায় জীবন রূপ নদী যেন নিরন্তর বয়ে চলেছে। গণশিল্পীর তুলি হাতে সেই বিচিত্র জীবনের তিনি রূপকার। কবিতায় কবির ক্রোধ প্রকাশিত হয়েছে বিদেশি অত্যাচারীদের উপর। এসব বিষয় উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি। তাই সংগত কারণেই বলতে পারি, প্রশ্নের মন্তব্যটি অযৌক্তিক।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সাবু কল্পনার চোখে যেন সামনে দেখতে পায় :
খাকি উর্দি পরা কতকগুলো সিপাই তার সামনে। আর সে তাদের লাথি মেরে মেরে ফুটবলের মতো গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অসীম আক্রোশে তার রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে। সেই সব দুঃশাসন কখনও দেখেনি সে, সেই সব জানোয়ার কখনও দেখেনি সে; যারা তার দেশের মানুষকে বন্যার দিনের মতো, পিঁপড়ের মতো ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে জুলুমের দাপটে।
ক. ‘নরদানব’ শব্দের অর্থ কী?
খ. নরদানবদের আগ্রাসন বাঙালিদের দমন করতে পারে না কেন?
গ. উদ্দীপকের ‘খাকি উর্দি পরা সেপাইদের’ ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার কাদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের সাবু ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার কবির একটি বিশেষ চেতনাকে ধারণ করেছে।” মন্তব্যটি বিচার কর। ১



৪ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘নরদানব’ শব্দের অর্থ নরপশু।

 বাঙালির অদম্য সংগ্রামী চেতনার কারণেই বিদেশি নরদানবদের আগ্রাসন বাঙালিদের দমাতে পারে না।
 বাঙালি জাতি সংগ্রামী জাতি। বাঙালির জাতীয়তাবোধের কাছে কোনো অত্যাচারী ক্ষমা পায়নি। কারণ বাঙালিরা দেশের সম্মান রক্ষার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করে না। এই চেতনা নদীর স্রোতের মতোই অদম্য। এজন্য বিদেশি নরদানবদের আগ্রাসন বাঙালিদের দমন করতে পারে না।

 উদ্দীপকের খাকি পোশাক পরা সৈনিকেরা কবিতার বিদেশি দখলদারিদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
 বাঙালি জাতি বার বার বিদেশি অপশক্তির দ্বারা শোষিত, নির্যাতিত হয়ে আসছে। পাকিস্তান জন্মের পর থেকে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের উপর নানা রকম অত্যাচার চালিয়ে আসছে। যার বিরুদ্ধে বাঙালি প্রতিবাদ সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জন করে।
 উদ্দীপকের খাকি পোশাক পরা সৈনিকেরা বাঙালিদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। কিন্তু বীর বাঙালি তাদের সকল অত্যাচার ধূলিসাৎ করে দেয় অদম্য সাহস আর বীরত্বে। কবিতাতেও বিদেশিদের কথা বলা হয়েছে। তাদের প্রতি কবির স্বজনদের প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের সেপাইদের সাথে কবিতার বিদেশিদের সাদৃশ্য রয়েছে।

 উদ্দীপকের সাবু ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার একটি বিশেষ চেতনাকে ধারণ করেছে। সেটি হলো সংগ্রামী চেতনা।
 অত্যাচারীরা চিরকালই ভীরু থাকে। যদি তারা শক্তিশালীও হয় তবুও সমগ্র জাতি যদি একতাবদ্ধ হয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাহলে কোনো শক্তি দ্বারা সে-সংগ্রামকে দমন করা যায় না।
 উদ্দীপকের সাবুর মাঝে সেই সংগ্রামী চেতনার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। সে চোখের সামনে কল্পনার দৃষ্টিতে দেখতে পায় যে, অত্যাচারী সেসব পাকিস্তানি সৈন্যদের লাথি মেরে গড়িয়ে দিচ্ছে। যারা দেশের মানুষদের মারছে, সে তাদের চরমভাবে শাস্তি দিচ্ছে। এই চেতনাটি লক্ষ করি কবিতার কবির মাঝে।
 ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবি বিদেশিদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যে ক্ষোভ তিনি বঙ্গোপসাগরের ভয়াল ঘূর্ণির সাথে তুলনা করেছেন। তাঁর স্বজনদেরও ক্ষোভ রয়েছে বিদেশিদের প্রতি, যা নদীর ঘূর্ণ স্রোতের মতোই ভয়ানক। সেজন্য বিদেশিরা বাঙালিদের দমাতে পারে না। কবির এই সংগ্রামী ও সাহসী চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে উদ্দীপকের সাবুর মাঝে। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সাগর দুহিতা নদীমাতৃক বাংলাদেশ। এ দেশের বহতা নদীগুলো এ দেশের আত্মা এ বহতা নদী। যৌবন তারুণ্য ও প্রেমের প্রতীক। সাগরে মেশার পর নদীগুলো অজেয় শক্তির অধিকারী হয়। নদীকে বাঁধা দিলে নদী ফুঁসে ওঠে। চারপাশ ডুবিয়ে ফেলে।
ক. ‘উদ্ভিন্ন উল­াস’ কবি দিলওয়ারের রচিত কোন ধরনের গ্রন্থ?
খ. জীবনরূপ নদী নিরন্তর বয়ে যাচ্ছে কেন?
গ. উদ্দীপকটিতে কবিতার কোন বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে?
ঘ. “উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার সম্পূর্ণ বিষয় উঠে আসেনি।” মন্তব্যটি যাচাই কর। ১



৫ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘উদ্ভিন্ন উল­াস’ কবি দিলওয়ার রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ।

 জীবনরূপ নদী নিরন্তর বয়ে চলেছে বিশাল বঙ্গোপসাগরের বুকে মিলিত হয়ে অসীম হয়ে অসীম শক্তি অর্জন করবে বলে।
 নদী গতিতেই তার জীবনের স্পন্দন প্রকাশ করে। চলতে চলতে নদী সাগরে গিয়ে মেশে। তখন যেন তার পরিতৃপ্তি। সাগরে মেশার পর সে অসীম শক্তিতে বলীয়ান হয়। মানুষের জীবনও সংগ্রামের গতিতে ছুটতে পারলে একদিন সকল অপশক্তি দূরীভূত হবে। এজন্যই জীবনরূপ নদী নিরন্তর বয়ে চলে।

 উদ্দীপকটিতে নদীমাতৃক বাংলাদেশের মানুষের জনজীবনের উপর নদীর প্রভাবের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।
 বাংলাদেশ ও নদী নিরবচ্ছিন্ন বন্ধনে বাঁধা। নদীকে ছাড়া বাংলাদেশের প্রকৃতি তথা রূপকে কল্পনা করা যায় না। নদীই বাংলার প্রকৃতির অপরূপ শোভা দান করতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে।
 উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ ও বাঙালির জনজীবনে নদীর অপরিসীম প্রভাবের বিষয়টি। কবি এখানে বলেছেন, পদ্মার কাছ থেকে তিনি যৌবন প্রাপ্তির আশা করেন। যে যৌবন-চেতনা সমস্ত জড়তা দূরীভূত করতে পারবে। যমুনার কাছে তিনি চান প্রেম। সুরমার পানিবাহিত পলিমাটিতে যেন গলিত সোনা রয়েছে যা বাংলাকে করেছে উর্বর। মূলত এ ভাবটি ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার প্রধান একটি বিষয়, যেখানে নদীকে বাঙালি জনজীবনের সাথে মিশিয়ে নিয়ে জীবন চালাতে চান কবি।
 উদ্দীপকটিতে নদীমাতৃক বাংলাদেশে মানুষের জনজীবনের উপর নদীর প্রভাবের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।
 বাংলাদেশও নদী নিরবচ্ছিন্ন বন্ধনে বাঁধা। নদীকে ছাড়া বাংলাদেশের প্রকৃতি তথা রূপকে কল্পনা করা যায় না। নদীই বাংলার প্রকৃতির অপরূপ শোভা দান করতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে।
 উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ ও বাঙালির জনজীবনে নদীর অপরিসীম প্রভাবের বিষয়টি। কবি এখানে বলেছেন পদ্মার কাছ থেকে তিনি যৌবন প্রাপ্তির আশা করেন। যে যৌবন-চেতনা সমস্ত জড়তা দূরীভূত করতে পারবে। যমুনার কাছে তিনি চান প্রেম। সুরমার পানিবাহিত পলিমাটিতে যেন গলিত সোনা রয়েছে, যা বাংলাকে করেছে উর্বর। মূলত এ ভাবটি ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার প্রধান একটি বিষয়, যেখানে নদীকে বাঙালি জনজীবনের সাথে মিশিয়ে নিয়ে জীবন চালাতে চান কবি।

 ‘উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার সম্পূর্ণ বিষয় উঠে আসেনি।’ মন্তব্যটি যথার্থ।
 নদীমাতৃক দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। বাংলার এই যে অপরিমেয় রূপেশ্বর্য এর পেছনে রয়েছে নদীর অবদান। ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় এই নদীর বন্দনা করা হয়েছে।
 উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে বাংলার জনজীবন ও বাংলার প্রকৃতিতে নদীর অবদানের কথা বা প্রভাবের কথা। কবি এই নদীর কাছ থেকে যৌবনশক্তি, প্রেমশক্তি ও মাটির উর্বরাশক্তি আশা করেন। তবে এটিই কবিতার একমাত্র বিষয় নয়।
 ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবি দিলওয়ার সাগরদুহিতা নদীমাতৃক বাংলাদেশের বন্দনা করেছেন এবং গণমানবের শিল্পী হিসেবে নিজের প্রত্যয় ও প্রতিশ্র“তি ঘোষণা করেছেন। কবি বলেছেন, এ বাংলার জীবনরূপ যেসব নদী নিরন্তর বয়ে চলেছে, গণশিল্পীর তুলি হাতে সেই বিচিত্র জীবনের তিনিই রূপকার। তবে প্রবহমান জীবন এখানে বাধাহীন নয়। কবি নিজের স্বপ্ন ও শক্তিকে সাগরের ভয়াল ঘূর্ণিরত শক্তির কাছে জমা রেখেছেন। যে-ক্রোধ ও শক্তি সমগ্র জনগোষ্ঠীর আশাতে পরিণত হয়েছে কবিতার এসব বিষয় উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
এই মধুমতি ধানসিঁড়ি নদীর তীরে
নিজেকে হারিয়ে যেন পাই ফিরে ফিরে
একনীল ঢেউ কবিতার প্রচ্ছদ পটে।….
এই পদ্মা এই মেঘনা, এই হাজার নদীর অববাহিকায়
এখানে রমণীগুলো নদীর মত
নদীও নারীর মতো কথা কয়।
ক. কবির ক্রোধ কেমন?
খ. কবি পদ্মার কাছে যৌবন চেয়েছেন কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার সাথে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ?
ঘ. ‘উদ্দীপকে কবিতার সমস্ত ভাব প্রতিফলিত হয়নি।’ মন্তব্যটি যাচাই কর। ১



৬ নং প্রশ্নের উত্তর

 কবির ক্রোধ ভয়াল ঘূর্ণির মতো।

 পদ্মার যৌবন শক্তিতে নিজেকে তথা জাতিকে উজ্জীবিত করার জন্য কবি পদ্মার কাছে যৌবন চেয়েছেন।
 কবি নদীর প্রবহমানতায় নিজের তথা বাঙালির জীবনকে গতিশীল করতে চান। তিনি নদীর গতিতে জীবনের গতির স্বরূপ উপলব্ধি করেছেন। তাই তিনি পদ্মার কাছে যৌবনের শক্তি চেয়েছেন, যে-শক্তিতে শক্তিমান হয়ে জাতি সমগ্র বাধা অতিক্রম করতে পারবে।

 উদ্দীপকটি ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার নদীর সৌন্দর্য বর্ণনা ও জনজীবনে নদীর অবদান ও প্রভাব বর্ণনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
 কবি নদীকে ভালোবেসেছেন। নদীকে নিজের জীবনের সাথে তথা বাঙালি জাতির জীবনের সাথে মিশিয়ে নিয়েছেন। কারণ তিনি নদীর মাঝে জীবনের গতির স্বরূপ উপলব্ধি করেছেন।
 উদ্দীপকেও প্রকাশিত হয়েছে নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীর অবস্থান, অবদান ও জাতীয় জীবনে এর প্রভাবের কথা। এখানকার মানুষও নদীর মতো কথা বলে। এই নদীর মাঝেই নিজেকে হারিয়ে আবার ফিরে ফিরে পাওয়া যায়। কবিতাতেও নদীর এই অবদানের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। তাই বলা যায়, নদীর অবদানের কথা বর্ণনার সাথে উভয় ক্ষেত্রে সাদৃশ্য রচনা করেছে।

 ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবি নদীমাতৃক বাংলাদেশের বন্দনা করেছেন। বাংলা ও বাঙালি জীবনে নদীর প্রভাব ও অবদান সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে।
 উদ্দীপকেও এই নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীর অবদান ও বাঙালি জনজীবনে এর প্রভাবের কথা বর্ণিত হয়েছে। এই নদীর মাঝে কবি নিজেকে হারিয়ে আবার ফিরে ফিরে পান। এখানকার মানুষগুলোও নদীর মতো কথা বলে। কবিতাতেও এ ভাবটি প্রতিফলিত হয়েছে, তবে এটি কবিতার একমাত্র ভাব নয়।
 ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় বাংলাদেশের নদীর প্রভাব ও নদীর বন্দনা করা হয়েছে।
 কবি বলেছেন, এই বাংলায় জীবনরূপ যেসব নদী নিরন্তর বয়ে চলেছে, গণশিল্পীর তুলি হাতে সেই বিচিত্র জীবনের তিনি রূপকার। কবি একথাও বলেছেন, তিনি তার স্বপ্নকে বিশাল বঙ্গোপসাগরের শক্তির কাছে জমা রেখেছেন। এই শক্তিই সাগারের ঘূর্ণয়মান ভয়াল জলরাশির মতো তার শক্তিকে শক্তিমান করেছে। কবিতার এসব ভাব উদ্দীপকে উঠে আসেনি। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সংগ্রামী বাঙালি সংগ্রাম করে এসেছে আবহমানকাল থেকে। বনের বাঘ, নদীর কুমির, পাহাড় থেকে নেমে আসা অজগর, বিষাক্ত সাপ, সর্বনাশা বন্য, ঘূর্ণিঝড় আর বহিরাগত হানাদারদের সাথে লড়াই করে এদেশের মানুষ টিকে আছে। সামনের দিকে মাথা তুলে জোর কদমে এগিয়ে চলছে।
ক. কবি দিলওয়ার কোন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন?
খ. ঘূর্ণ্যমান ভয়াল জলরাশির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে কবিতার কোন বিষয় আলোচিত হয়েছে?
ঘ. উদ্দীপকটিতে কবিতার সমগ্র বিষয় প্রতিভাত হয়েছে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও। ১



৭ নং প্রশ্নের উত্তর

 কবি দিলওয়ার সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

 ঘূর্ণ্যমান ভয়াল জলরাশি দ্বারা কবি বাঙালির সংগ্রামী চেতনার শক্তিকে বুঝিয়েছেন।
 বাঙালি জীবন সংগ্রামী জীবন। আবহমানকাল ধরে বাঙালি বহিঃশত্র“ ও প্রকৃতির বিরূপ পরিস্থিতির সাথে সংগ্রাম করে টিকে আছে। বহিঃশত্র“র অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাঙালি বার বার সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে। এ সংগ্রামের শক্তি বঙ্গোপসাগরের ভয়াল জলরাশির মতোই।

 উদ্দীপকে বাঙালির সংগ্রামী চেতনার শক্তির বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। বাঙালি জাতি বীরের জাতি। সকল অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালিরা আজীবন সংগ্রাম করে আসছে। তাদের এই সংগ্রামী শক্তির কাছে বিদেশি শক্তি বার বার পরাজিত হয়েছে।
 কবিতাটিতেও বাঙালির সেই সংগ্রামী শক্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। এখানে কবি বলেছেন, তিনি তাঁর প্রাণ স্বপ্নকে বঙ্গোপসাগরের ভয়াল ঘূর্ণির কাছে আমানত হিসেবে রেখেছেন। কবিতায় এই ভাবটি বিস্তারিত রূপে বর্ণিত হয়েছে। কবিতায় কবি এই শক্তি বা ক্রোধকে জাতির চেতনার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন, যাতে বিদেশি শক্তিরা বাঙালিদের দমাতে না পারে।

 না, উদ্দীপকে ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার সমগ্র বিষয় প্রতিভাত হয়নি। আংশিক বিষয়ের প্রতিফলন রয়েছে মাত্র।
 বাঙালি জীবনের সাথে, বাংলাদেশের প্রকৃতির সাথে নদী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জীবনাচরণ, জাতির চেতনা প্রভৃতির উপর নদীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে।
 উদ্দীপকে বাঙালির চেতনার সংগ্রামী রূপের বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে দেখা যায়, কবি তাঁর স্বপ্ন ও চেতনাকে বঙ্গোপসাগরের বিশালতার কাছে আমানত রেখেছেন। সে শক্তি ক্রোধে রূপান্তরিত হয়ে ভয়ানক রূপ ধারণ করে বিদেশিদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে। কবিতায় এই বিষয়টি একমাত্র বিষয় নয়। এখানে আরও বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে।
 ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবি সাগরদুহিতা নদীমাতৃক বাংলাদেশের বন্দনা করেছেন। কবি গণমানুষের শিল্পী হিসেবে নদীর অবদানের কথা স্বীকার করেছেন অকপটে। তিনি পদ্মা, যমুনা, সুরমা, কর্ণফুলি প্রভৃতি নদীর অবদানের কথা তুলে ধরেছেন। বাংলার জীবনরূপ নদী নিরন্তর বয়ে চলেছে, গণশিল্পীর তুলি হাতে সেই বিচিত্র জীবনেরই তিনি রূপকার। এসব ভাব উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি। তাই বলতে পারি, উদ্দীপকে কবিতার সমগ্র বিষয় প্রতিভাত হয়নি।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা
ও আমার দুই চোখে দুই জলের ধারা
মেঘনা যমুনা।…
এপার ওপার কোন পাড়ে জানি না
ও আমি সবখানেতে আছি।
গাঙের জলে ভাসিয়ে ডিঙা
ও আমি পদ্মাতে হই মাঝি।
ক. ‘হেম’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘গণমানবের তুলি’ দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতা কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি কবিতার আংশিক ভাব ধারণ করেছে মাত্র।” মন্তব্যটি বিচার কর। ১



৮ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘হেম’ শব্দের অর্থ সোনা।

 ‘গণমানবের তুলি বলতে দেশের মাটির কাছাকাছি যারা থাকে, তাদের শিল্পীসত্তাকে বোঝানো হয়েছে।
 কবি দিলওয়ার গণমানুষের কবি। তিনি খুব কাছ থেকে সাধারণ মানুষের জীবনাচরণ লক্ষ করেছেন। তাই কবি এই নদীমাতৃক বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনে নদীর প্রভাব বর্ণনা করতে গিয়ে উক্ত কথাটি বলেছেন তাদের চেতনার স্বরূপ তুলে ধরতে।

 উদ্দীপকের সাথে ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার বাঙালি জীবনে নদীর অবদান ও প্রভাব বর্ণনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
 বাংলাদেশকে ‘নদীর দেশ’ বললে ভুল বলা হবে না। কারণ এদেশের প্রায় সবকিছুই নদীর অবদানের উপর নির্ভরশীল। তাইতো কবিতায় দেখা যায়, নদীকে কবি ‘মা’ বলে সম্বোধন করেছেন।
 ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবি পদ্মা, যমুনা, সুরমা, কর্ণফুলি নদীর অবদানের কথা, বাঙালি তথা কবির নিজের জীবনে নদীর প্রভাবের কথা বর্ণনা করেছেন। উদ্দীপকেও নদীকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে কবির জীবনে তথা জাতির জীবনে নদীর প্রভাবের কথা তুলে ধরেছেন। এদিক দিয়ে উভয় ক্ষেত্রেই সাদৃশ্য রয়েছে।

 “উদ্দীপকটি ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার আংশিক ভাব ধারণ করেছে মাত্র।” মন্তব্যটি যথার্থ।
 নদীমাতৃক দেশের মানুষের জীবনের উপর নদনদী নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে। জাতির চেতনার সাথে মিশে যায় নদীর অবদান, উদারতা, সৌন্দর্য। আমরা বাঙালিরা নদীর কাছে ঋণী। আমাদের জীবনে নদীর অবদানের কোনো শেষ নেই।
 উদ্দীপকে নদীকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে তার অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন কবি। চোখের জলের ধারার সাথে তিনি নদীর স্রোতধারাকে মেশাতে চান। এ বিষয়টি ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতাতেও প্রতিফলিত হয়েছে। তবে এটিই কবিতার একমাত্র ভাব নয়।
 ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবি সাগরদুহিতা নদীমাতৃক বাংলাদেশের বন্দনা করেছেন এবং গণমানুষের শিল্পী হিসেবে নিজের প্রত্যয় ও প্রতিশ্র“তি ঘোষণা করেছেন। কবি নদীর গতির কাছ থেকে চেতনা শক্তি অর্জন করে কবির স্বপ্ন ও শক্তিকে বিশাল বঙ্গোপসাগরের কাছে আমানত রেখেছেন। সে ক্রোধ ভয়াল রূপ নিয়ে বিদেশিদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করবে এবং সমগ্র জাতির মাঝে সে ক্রোধ শক্তিরূপে সঞ্চারিত হবে। কবিতার এসব বিষয় উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

ক জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
১. কবি দিলওয়ার কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : কবি দিলওয়ার ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
২. ‘ঐকতান’ কবি দিলওয়ারের কোন ধরনের রচনা?
উত্তর : ‘ঐকতান’ কবি দিলওয়ারের রচিত কাব্যগ্রন্থ।
৩. ‘হেম’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘হেম’ শব্দের অর্থ সোনা।
৪. ‘নিরবধি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘নিরবধি’ শব্দের অর্থ -বিরামহীন।
৫. কবি দিলওয়ারের পুরো নাম কী?
উত্তর : কবি দিলওয়ারের পুরো নাম ‘দিলওয়ার খান’।
৬. দিলওয়ারের প্রথম কাব্যগ্রন্থ কোনটি?
উত্তর : দিলওয়ারের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘জিজ্ঞাসা’।
৭. কবি দিলওয়ারের রচিত ‘জিজ্ঞাসা’ কাব্যগ্রন্থটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
উত্তর : কবি দিলওয়ারের রচিত ‘জিজ্ঞাসা’ কাব্যগ্রন্থটি ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত হয়।
৮. ‘মারণ বেলা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : মারণ বেলা’ শব্দের অর্থ -বিনাশ কাল।
৯. কবি দিলওয়ার ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কীসের বন্দনা করেছেন?
উত্তর : কবি দিলওয়ার ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় সাগরদুহিতা ও নদীমাতৃক বাংলাদেশের বন্দনা করেছেন।
১০. কবি দিলওয়ার কী হিসেবে নিজের পরিচয় ব্যক্ত করেছেন?
উত্তর : কবি দিলওয়ার গণমানবের শিল্পী হিসেবে নিজের পরিচয় ব্যক্ত করেছেন।
১১. দিলওয়ার কীসের রূপকার?
উত্তর : দিলওয়ার বিচিত্র জীবনের রূপকার।
১২. প্রবহমান নদীর বাঁকে বাঁকে কী পাতা রয়েছে?
উত্তর : প্রবহমান নদীর বাঁকে বাঁকে মৃত্যুর ফাঁদ পাতা রয়েছে।
১৩. কবি দিলওয়ার তাঁর স্বপ্নকে কার কাছে আমানত রেখেছেন?
উত্তর : কবি তাঁর স্বপ্নকে বঙ্গোপসাগরের কাছে আমানত রেখেছেন।
১৪. ‘অনাদি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘অনাদি’ শব্দের অর্থ -আদিহীন।
১৫. ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে?
উত্তর : ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতাটি ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে।
১৬. ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতাটি কত সালে প্রথম প্রকাশিত হয়?
উত্তর : ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতাটি ১৯৮১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়।

১৭. ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতাটি কয় মাত্রায় রচিত?
উত্তর : ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতাটি ছয় মাত্রায় রচিত।
১৮. কবি কার কাছে যৌবন প্রত্যাশা করেন?
উত্তর : কবি পদ্মার কাছে যৌবন প্রত্যাশা করেন।
১৯. কবি রক্তে যে অনাদি অস্থি- তা কারা জানে না?
উত্তর : কবি রক্তে অনাদি অস্থি- তা বিদেশের কেউ জানে না।
২০. কবি কার কাছে প্রেম প্রত্যাশা করেন?
উত্তর : কবি যমুনার কাছে প্রেম প্রত্যাশা করেন।
২১. ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কার কাজল বুকের পলিতে গলিত হেম?
উত্তর : সুরমার কাজল বুকের পলিতে গলিত হেম।
২২. ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় চারদিকে কী খেলা করে?
উত্তর : চারদিকে বিচিত্র জীবনের রং খেলা করে।
২৩. ‘প্রাণের জাহাজ’ বোঝাই আছে কোথায়?
উত্তর : প্রাণের জাহাজ’ বোঝাই আছে নরদানবের মুখে।

খ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
১. কীভাবে কবি তাঁর ক্রোধকে শক্তিমান করেছেন? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : সমুদ্রের বিশাল ঘূর্ণ্যমান জলরাশি দেখে কবি তাঁর ক্রোধকে শক্তিমান করেছেন।
কবি বিদেশি নরদানবের আগ্রাসন দেখে ক্ষুব্ধ। তিনি চান বাঙালি জাতি যেন তাদের নিজস্ব অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখে। কিন্তু মানুষরূপী নরপশুরা অত্যাচার, নির্যাতন নিপীড়ন করে বাঙালিদের অধিকার বঞ্চিত করতে চায়। তা দেখে কবি ক্ষুব্ধ। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি যেমন সবকিছু ভেঙে গুড়িয়ে দেয়, কবিও চান বিপক্ষ শক্তিকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে। তাই কবি সমুদ্রের ঘূর্ণ্যমান ভয়াল জলরাশির মতো তার ক্রোধকে শক্তিমান করেছেন।
২. ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় দেশের প্রতি কবির যে মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার মূলভাবে দেশের প্রতি কবির মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে।
কবি বাংলার মাটি, নদী প্রকৃতিকে দেখে গভীরভাবে এর সৌন্দর্য অনুভব করেছেন। তিনি বিভেদমুক্ত কল্যাণী পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন। বাঙালিকে যারা পরাধীন করে রাখতে চায়, কবি তাদের প্রতি প্রচণ্ড ক্রুব্ধ। তিনি চান বাঙালিরা যেন তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। কবি দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসেন তাদের প্রতি কবি আস্থাবান।
৩. ‘গণমানবের তুলি’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : ‘গণমানবের তুলি’ বলতে শিল্পী জনতার তুলিকে বুঝিয়েছেন।
‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবি গণমানবের শিল্পী হিসেবে নিজের পরিচয় জ্ঞাপন করেছেন। কারণ কবি বাংলাদেশের নদীগুলো দেখেন। নদীর যে বিচিত্র খেলা, নদী পাড়ের মানুষের জীবনের রঙের ছবি তিনি তাঁর কল্পনার রং এ আঁকেন। সাধারণ মানুষের বিচিত্র জীবনের ছবি আঁকেন বলে কবি নিজেকে গণমানবের শিল্পী মনে করেন।
৪. কবি বঙ্গোপসাগরের কাছে তাঁর প্রাণের স্বপ্নকে রেখেছেন?- কীভাবে?
উত্তর : বঙ্গোপসাগরের বিশালতার সঙ্গে ঐক্যসূত্র অনুভব করে কবি বঙ্গোপসাগরের কাছে তাঁর প্রাণের স্বপ্নকে রেখেছেন।
সাগর যেমন বিশাল, কবির স্বপ্নও তেমনি বিশাল। নিজের অস্তিত্ব ও বাঙালি জাতিসত্তাকে বিদেশি আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষা করার স্বপ্ন কবির। কবি চান দেশ তথা জাতিও এ স্বপ্নকে ধারণ করুক। বিদেশিরা বুঝতে পারুক বঙ্গোপসাগর যেমন বিশাল, বাঙালি জাতির স্বপ্নও তেমনি বিশাল।
৫. পদ্মা সুরমা মেঘনা যমুনা
অশেষ নদী ও ঢেউ
রক্তে আমার অনাদি অস্থি
বিদেশে জানে না কেউ!
-উদ্ধৃত চরণগুলো দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : কবি তাঁর স্বদেশের নদীগুলো দ্বারা নিজের জাতির অস্তিত্বের যে সত্তা প্রকাশ করেছেন, তা আলোচ্য চরণগুলো দ্বারা রূপায়িত করেছেন।
কবি পরদেশী শত্র“র হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য সমগ্র জনগোষ্ঠীকে একসঙ্গে করতে চেয়েছেন যেন তাদের মিলিত শক্তিকে দিয়ে শত্র“কে ঘায়েল করা যায়। এ কারণে বিদেশি নরদানবের আগ্রাসন এ জনগোষ্ঠীকে দমাতে পারে না। বিদেশিরা হয়তো জানে না যে, আবহমান ছুটে চলা নদীর মতই কবি নিজের অস্তিত্বকে ধারণ করে আছেন, যা ঐ জাতিসত্তার শোণিত অস্থি।

 

 

Leave a Reply