সেই অস্ত্র
আহসান হাবীব
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সবারে বাসিব ভালো, করিব না আত্মপর ভেদ
সংসারে গড়িব এক নতুন সমাজ
মানুষের মাঝে কভু রবে না বিচ্ছেদÑ
সর্বত্র মৈত্রীর ভাব করিবে বিরাজ।
………………………….
হিংসা দ্বেষ রহিবে না কেহ কারে করিবে না ঘৃণা
পরস্পরে বাঁধি দিব প্রীতির বন্ধনে
বিশ্বজুড়ে এক সুরে বাজিবে গো মিলনের বীণা
মানব জাগিবে নব জীবন স্পন্দনে।
ক. “সেই অস্ত্র” কবিতায় বর্ণিত নগরটির নাম কী?
খ. “লক্ষ লক্ষ মানুষকে করবে না পঙ্গুÑবিকৃত।”Ñ উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. কবিতাংশের প্রথম স্তবকে “সেই অস্ত্র” কবিতার কোন ভাবের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “কবিতাংশের দ্বিতীয় স্তবক যেন কবি-ভাবনার চূড়ান্ত প্রতিফলন”Ñ মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর। ১
২
৩
৪
১ নং প্রশ্নের উত্তর
কবিতায় বর্ণিত নগরীর নাম ট্রয় নগরী।
প্রশ্নোক্ত চরণে ভালোবাসাহীন বিদ্বেষপূর্ণ পৃথিবীতে যুদ্ধের অনিবার্য ক্ষতি সম্পর্কে কবির উৎকণ্ঠার প্রকাশ ঘটেছে।
মানুষ যদি অপর মানুষের প্রতি হিংসা, লোভ, ঈর্ষা থেকে মুক্ত না থাকে তবে পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসবে। কবি এই বিপর্যয় আশঙ্কায় ভীত। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার স্মৃতি দ্বারা তাড়িত হয়েছেন। তাই তিনি আণবিক বোমার আঘাতে মৃত কিংবা প্রজন্ম-পরম্পরায় পঙ্গুত্ববরণকারী মানুষদের প্রতি সমবেদনার চেতনার ভাবটি প্রকাশ করেছেন চরণটিতে।
কবিতাংশের প্রথম স্তবকে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় মানবসমাজের সকলের প্রতি ভালোবাসার ভাবের প্রতিফলন ঘটেছে।
ভালোবাসা দ্বারা পৃথিবীর সকল অজেয় ক্ষেত্রকে জয় করা সম্ভব। ভালোবাসার শক্তি অসীম। মানুষের মাঝে এই ভালোবাসার মিলন মেলা বসাতে পারলে পৃথিবীর অর্ধেক সমস্যার সমাধান হতো। অথচ মানুষ এই সহজ সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে না বা করে না। এজন্য সারা পৃথিবীতে এত অশান্তি, যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই আছে।
উদ্দীপকে কবি সবাইকে ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করেছেন। নিজের আত্মপ্রসাদে বিভোর হয়ে আপনপর ভেদাভেদ না করে এক নতুন সমাজ গঠন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। মানুষের মাঝে কোনো বিচ্ছেদ ভাব কবি কামনা করেন নি। সর্বত্র একটা মৈত্রীর ভাব বিরাজ করবে এটাই কবি প্রত্যাশা করেন। এই ভাবটি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতাতেও পরিলক্ষিত হয়। কবিতায় কবি এমন অস্ত্র ফিরিয়ে দিতে বলেছেন, যে অস্ত্রের আঘাতে মাঠে আগুন জ্বলবে না। খাঁ খাঁ করবে না গৃহস্থালি, নক্ষত্র খচিত আকাশ থেকে আগুন ঝরবে না। সে অস্ত্র ভালোবাসার। কবি ভালোবাসা দিয়েই এই বিশ্বের সমস্ত হিংসা হানাহানি বন্ধ করতে চান। মানুষের মাঝের জাত্যভিমানের দেয়াল ভেঙে ফেলতে চান। ঘৃণা বিদ্বেষ দূর করে সবাইকে ভালোবাসার মাধ্যমে এক সুখী ও সমৃদ্ধশালী পৃথিবী গঠন করতে চান। কবিতার এই ভাবটিই উদ্দীপকের প্রথম স্তবকে প্রতিফলিত হয়েছে।
কবিতাংশের দ্বিতীয় স্তবক যেন কবির ভাবনার চূড়ান্ত প্রতিফলনÑ মন্তব্যটি যথার্থ।
মানুষের প্রতি যখন ভালোবাস-বোধের সৃষ্টি হয় তখন চিত্তজগৎ মহৎ হয়। সেই মহৎ চেতনা মানবসমাজের কল্যাণ বয়ে আনে। এটি মানুষকে সব ধরনের অমঙ্গল থেকে পরিত্রাণের পথ বাতলে দেয়। কিন্তু আমাদের এই মানবসমাজে হিংসা আর স্বার্থপরতার করাল গ্রাসে অনেকেই মানবিকতাশূন্য হয়ে পড়েছে। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসাই পারে একটি বৈষম্যহীন অহিংস মানবসমাজ গড়তে।
উদ্দীপকের কবি এমন সমাজেরই প্রত্যাশা করেন যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। কেউ কাউকে ঘৃণা করবে না। পরস্পরকে প্রীতির বন্ধনে বেঁধে এখানেই স্বর্গ রচনা করবে। সেই জগৎ সংসারে জাগবে নব জীবনের স্পন্দন। উদ্দীপকের এই শেষোক্তভাবে যেন ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবির ভাবনার চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটেছে।
‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবি ভালোবাসা নামের অস্ত্রকে আবারও এই মানবসমাজে ফিরে পেতে চেয়েছেন। কবির কাছে ভালোবাসা কেবল আবেগ কিংবা অনুভূতির দ্যোতনা জাগায় না। এটি মানুষকে অশান্তি, অমঙ্গল থেকে পরিত্রাণের পথ দেখায়। তাই বলা যায়, প্রশ্নোলিখিত মন্তব্যটি যথার্থ।
অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
পৃথিবীকে সুন্দর রাখতে হলে প্রকৃতির সাবলীল গতিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। বর্তমান পৃথিবীতে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা, তার অন্যতম কারণ হলো প্রকৃতির বুকে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক নির্যাতন। যেমনÑ রাসায়নিক অস্ত্র কারখানা, চুলি ও অস্ত্র উৎক্ষেপণ পরীক্ষা।
ক. ভালোবাসার অস্ত্র উত্তোলিত হলে অরণ্য কী হবে?
খ. অরণ্য আরো সবুজ হওয়া বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত প্রকৃতির সাবলীলতার কথার সাথে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবির আকাক্সক্ষার সাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. “বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক কর্মযজ্ঞের কারণেই বর্তমান প্রকৃতি এত বেশি বিপর্যস্ত”Ñ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর। ১
২
৩
৪
২ নং প্রশ্নের উত্তর
ভালোবাসার অস্ত্র উত্তোলিত হলে অরণ্য আরো সবুজ হবে।
অরণ্য আরো সবুজ হওয়ার আবশ্যকতা অনুভব করার কারণ হলো পৃথিবীর পরিবেশকে আরো সুন্দর, সতেজ ও বসবাস উপযোগী করা।
প্রাণিকুলের জীবন নির্ভর করে উদ্ভিদের ওপর। সবুজ উদ্ভিদ না থাকলে পৃথিবীতে কোনো প্রাণীই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে না। কিন্তু বর্বর মানসিকতার মানুষ গাছপালা কেটে পৃথিবীকে ক্রমশ মরুভূমি বানিয়ে ফেলছে। কবি এ মরুকরণের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে চান। এজন্যই কবি অরণ্য আরো সবুজ হওয়া, অর্থাৎ আরো উদ্ভিদের উৎপাদন আবশ্যক বলে মনে করেন।
‘সেই অস্ত্র’ কবিতা ও উদ্দীপকে অরণ্যের বৃদ্ধি কামনা করা হয়েছে, যা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ।
পৃথিবীর ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ উদ্ভিদ রাখা প্রয়োজন। উদ্ভিদের নিয়ত নিধন মানব সভ্যতাকে দিনে দিনে ভয়াবহ অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্রমশ বেড়ে চলছে।
উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে উদ্ভিদের হার কমে যাওয়ায় পৃথিবীতে প্রাকৃতিক জটিলতা দিনদিন বেড়েই চলছে। মানুষ বিভিন্নভাবে বৃক্ষ নিধন করছে। রাসায়নিক কর্মকাণ্ডে উদ্ভিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু এ কাজ কেউ বন্ধ করছে না। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি এ জন্য হাহাকার করেছেন। সবুজের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় তিনি অরণ্যকে আরো সবুজ করে তোলাার দাবি জানিয়েছেন। কারণ অরণ্য যত ধূসর হবে, যত নি®প্রভ হবে, পৃথিবী ও প্রাণিকুল ততই বিপন্নতার দিকে এগিয়ে যাবে। এদিক বিবেচনায় বলা যায়, উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার মাঝে আকাক্সক্ষাগত সাদৃশ্য রয়েছে।
‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে প্রশ্নোলিখিত উক্তিটির যৌক্তিকতা বিচার করা যুক্তিযুক্ত।
মানুষ নতুন নতুন আবিষ্কার করছে। বিজ্ঞানের উৎকর্ষে নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে। সেই সাথে ধ্বংসযজ্ঞও থেমে নেই। বিজ্ঞানের কল্যাণেই মানুষ তৈরি করছে নতুন নতুন মৃত্যুবাণ, যা শুধু মানুষকে নয়, পরিবেশ প্রকৃতিকেও ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।
রাসায়নিক কর্মকাণ্ডের ভয়াবহতা উদ্দীপকের আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বর্তমানে অস্ত্র-কারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তির প্রভাব পরিবেশে ব্যাপক হারে পড়ছে। দিনদিন নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য, ফলে সবুজ অরণ্য আরো নি®প্রভ হয়ে যাচ্ছে। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি এ দিকটি নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন, তিনি আরো সবুজ অরণ্য দাবি করেন। যা মানব অস্তিত্বের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি বর্তমান পৃথিবীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ঘৃণ্য অস্ত্রের কথা বলেছেন। এগুলো হলো মানুষের মনের পঙ্কিলতা থেকে সৃষ্ট অস্ত্র, মানবতাবোধ না থাকায় প্রকাশিত হচ্ছে পাশবিকতা; এই পাশবিকতার চূড়ান্ত রূপ বাস্তবায়ন করতেই মানুষ বানাচ্ছে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক অস্ত্র।
হাইড্রোজেন বোমা, নিউক্লিয়ার বোমা বা এ জাতীয় অস্ত্র তৈরির জন্য সৃষ্ট রাসায়নিক চুলি পরিবেশের জন্য খুব বেশি হুমকিস্বরূপ। বস্তুত, বর্তমান পৃথিবীর হিংস্র মানুষগুলো রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা চালাচ্ছে, যা প্রশ্নোক্ত উক্তির সত্যতা প্রমাণ করে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আসুন, চিরচেনা পৃথিবীতে
মানবতার সুর ধরি।
ঝঙ্কার তুলি বিবেকের তারে,
বীণায় বাজাই ভালোবাসার কবিতা।
ক. সেই অমোঘ অস্ত্র কী?
খ. ‘সভ্যতার প্রতিশ্র“তি’ বলতে কী বোঝ?
গ. “আমাকে সেই অস্ত্র ফিরিয়ে দাও, সভ্যতার সেই প্রতিশ্র“তি”Ñ লাইনটির সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ. “উদ্দীপকের কবি ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবি একই মানসিতার অধিকারী” Ñমন্তব্যটির সত্যতা প্রমাণ কর। ১
২
৩
৪
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
সেই অমোঘ অস্ত্র হলো ভালোবাসা।
সভ্যতার প্রতিশ্র“তি বলতে মানুষের মানবিকতাবোধকে বোঝানো হয়েছে।
মানুষ সমাজে, রাষ্ট্রে বাস করার জন্য বহুযুগ ধরে চর্চা করে আসছে এবং ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে, মানুষ সামাজিক প্রাণী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু ভালোবাসার কারণেই। বস্তুত, যেকোনো সভ্যতা বা সমাজ সৃষ্টির প্রথম শর্ত হলো সহমর্মিতা, ভালোবাসা ও পরোপকারী মনোভাব। এগুলো না হলে কোনো সভ্যতাই সৃষ্টি হতো না।
“আমাকে সেই অস্ত্র ফিরিয়ে দাও, সভ্যতার সেই প্রতিশ্র“তি”Ñ চরণটির সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য রয়েছে।
ভালোবাসা মানুষের জীবনে এক মৌলিক প্রয়োজনীয় উপকরণ। ভালোবাসা ব্যতিরেকে সভ্যতা চর্চা করা আদৌ সম্ভব নয়। আবেগের বহিঃপ্রকাশ দুরূহ ও জানার আকাক্সক্ষা প্রায় নিঃশেষ হয়ে পড়ে। কারণ ভালোবাসা ছাড়া কোনো কিছুই তার সুন্দর রূপ মেলে ধরে না। কবি তাই মানবতার সুর তুলতে বলেছেন, বিবেকের কাছে আত্মজিজ্ঞাসায় নিমগ্ন হতে বলেছেন। কারণ এর মাধ্যমেই সৃষ্টি হবে ভালোবাসার কবিতা।
‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি এ ভালোবাসাকে সভ্যতার প্রতিশ্র“তি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সভ্যতার প্রাচীন প্রতিশ্র“তি হলো ভালোবাসা, যা প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। এ ভালোবাসার জন্য কবি জোর দাবি প্রকাশ করেছেন। কারণ ভালোবাসা ছাড়া মানবতা স্ফুরিত হবে না। অর্থাৎ, প্রশ্নোক্ত চরণটির সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য বিদ্যমান।
উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতা পাঠে দুই কবির মানসিকতায় চমৎকার সামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়। কারণ দুজনেই ভালোবাসার জন্য জোর দাবি তুলেছেন।
ভালোবাসা মানে মনের সুকুমার বৃত্তির নান্দনিক রূপ। আর সুকুমার বৃত্তি আছে বলেই মানুষ সভ্য ও সুন্দর। যার মনে সুকুমার বৃত্তিগুলো কাজ করে না, তার আর পশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সভ্যতায় শান্তি সৌন্দর্য বাড়াতে মনের এই সুকুমার বৃত্তির চর্চা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি প্রয়োজন।
ভালোবাসাকে জাগিয়ে তোলার জন্য উদ্দীপকের কবি মানুষের প্রতি উদাত্ত আহŸান জানিয়েছেন। চিরচেনা এই পৃথিবীতে মানবতাবোধকে জাগিয়ে তোলা আজকের সবচেয়ে জোরালো দাবি। বিবেকের কাছে এ প্রশ্ন সবচেয়ে আবেদনময়ী। যদি মানবতার চর্চা বাড়ে, তবে জাগবে ভালোবাসা। এ ভালোবাসা প্রাপ্তির জন্য হাহাকার ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবির কণ্ঠে আরো জোরালোভাবে ধ্বনিত হয়েছে।
‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি ভালোবাসাকে সভ্যতার প্রতিশ্র“ত অস্ত্র ও সৌন্দর্য সৃষ্টির একমাত্র অস্ত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এ অস্ত্র করায়ত্ত করতে পারলেই কবি পৃথিবীর যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। পৃথিবীতে যত অন্যায়, নিপীড়ন সব হচ্ছে ভালোবাসাহীন নিষ্ঠুরতার ফলাফল। যদি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলা যায়, তবে জাগবে মানবতা, জাগবে সৌন্দর্য, যা উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবিদ্বয়ের কণ্ঠে সমানভাবে প্রকাশ পেয়েছে। অর্থাৎ, দুজনেই একই মানসিকতার ধারক।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
গ্রিক এবং ট্রয় নগরীর যুদ্ধ-ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। ট্রয় নগরীর প্রতি ইঞ্চি মাটিতে মিশে আছে লাখ সৈনিকের রক্ত, অসংখ্য আহত ঘোড়ার হাহাকার, অগণিত মায়ের পুত্র শোকের আর্তনাদ আর জাতি-বিদ্বেষের পরিণাম।
ক. জাত্যাভিমানকে বার বার পরাজিত করতে কী প্রয়োজন?
খ. “বার বার বিধ্বস্ত হবে না ট্রয় নগরী”Ñ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় ট্রয় নগরীর ধ্বংসের ইতিহাসের যে ইঙ্গিত রয়েছে তার সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “আমাদের হিংস্র মানসিকতাই ট্রয়ের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত”Ñ উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে বিচার কর। ১
২
৩
৪
৪ নং প্রশ্নের উত্তর
জাত্যাভিমানকে বার বার পরাজিত করতে ভালোবাসা প্রয়োজন।
“বার বার বিধ্বস্ত হবে না ট্রয় নগরী” বলতে বিভিন্ন সভ্যতার পতনকে বোঝানো হয়েছে, যার পেছনে দায়ী একমাত্র মানুষ।
সভ্যতা গড়ে তোলার জন্য অনেক শতাব্দীর প্রয়োজন হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্মের নিরন্তর প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে এক একটি সভ্যতা। অথচ অল্পক্ষণেই তা ধ্বংস করা যায়। কোনো এক প্রজন্মের মানুষের ভয়াল হানাহানিতে শেষ হতে পারে হাজার বছরের পুরনো সভ্যতা। শুধু ট্রয় নয়, পৃথিবীতে এমন অনেক সভ্যতাই মানুষের নিষ্ঠুরতায় হারিয়ে গেছে।
‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় ট্রয় নগরীর ধ্বংসের ইতিহাসের যে ইঙ্গিত রয়েছে তার সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য রয়েছে।
ট্রয় এক সুবিশাল নগরীর নাম। প্রাচীনকালে এ নগরীতে উন্নতির জোয়ার বয়ে গিয়েছিল। মানুষ ছিল প্রবল শৌর্য-বীর্যের অধিকারী। কিন্তু তাদের মনে ভালোবাসার চেয়ে হিংস্রতা বেশি ছিল। ফলে গ্রিক নগরীর সাথে যুদ্ধ বাঁধলে ট্রয় নগরী ধুলোয় মিশে যায়।
উদ্দীপকের ট্রয় ও গ্রিকের ঐতিহাসিক যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। ট্রয়ের ভয়াবহ পতনের কথা আজো ইতিহাসের পাতায় নৃশংসতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। শুধু ট্রয় নয়, অসংখ্য গ্রিক সেনারও প্রয়াণ ঘটেছিল এ যুদ্ধে। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতাতেও কবি এই ঐতিহাসিক নৃশংসতাকে চিিহ্নত করেছেন। এর মধ্য দিয়ে কবি মূলত ধ্বংস হয়ে যাওয়া সকল সভ্যতার কথাই বলেছেন। অর্থাৎ, উদ্দীপকে বর্ণিত যুদ্ধ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার সভ্যতার পতনের দিকটিতে সুন্দরভাবে উপমিত হয়েছে।
“আমাদের হিংস্র মানসিকতাই ট্রয়ের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত”Ñ উক্তিটির প্রমাণ উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে।
মানুষের চরিত্রে হিংস্রতা রয়েছে। এ হিংস্রতা যার চরিত্রে সুপ্ত, সুকুমার বৃত্তির চর্চা সেই বেশি করে, কিন্তু যার চরিত্রে হিংস্রতা প্রকট, সে শুধু অনর্থক ঝামেলা তৈরি করে। মানুষের রক্ত ঝরাতে তার কোনো কষ্ট হয় না। মূলত পৃথিবীর যাবতীয় অন্যায় ও ধ্বংসের পেছনে এই হিংস্রতাই দায়ী।
উদ্দীপকে গ্রিক ও ট্রয়ের ঐতিহাসিক যুদ্ধ এবং এর ভয়াবহতা পাওয়া যায়। এ যুদ্ধে গ্রিকদের কাছে ট্রয় পরাজিত হয়েছিল। গ্রিকরা ভয়াবহ ক্রোধে ট্রয় নগরীকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। সভ্যতার এই পতনের কথা ‘সেই অস্ত্র’ কবিতাতেও পাওয়া যায়। কবি ট্রয় নগরীর পতনের উদ্যোগের মাধ্যমে মূলত পৃথিবীর আগে অনেক সভ্যতার পতনের দিকটাই ইঙ্গিত করেছেন।
সভ্যতা সৃষ্টি হয় ভালোবাসার টানে, সৌন্দর্যের আকাক্সক্ষায়। আর ধ্বংস হয় ঘৃণা আর হিংসার কারণে। একেকটা সভ্যতা সৃষ্টির জন্য অনেক শতাব্দী ব্যয় করতে হয়েছে। বহু প্রজন্মের মানুষের শ্রমের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে সভ্যতা। কিন্তু ক্রোধ আর হিংস্রতার সামনে কোনোকিছুই টিকে থাকে না। হাজার বছরের সুনিপুণ সৃষ্টি নিমিষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ঠিক যেভাবে ট্রয় ধ্বংস হয়েছে, যেভাবে আরো অনেক সভ্যতা এ পৃথিবী থেকে বিলীন হয়েছে এবং এ ধ্বংসের ধারাবাহিক ইতিহাসের পেছনে আমাদের হিংস্র মানসিকতাই দায়ী।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
‘বংশে বংশে নাহিকো তফাত
বনেদি কে আর গর-বনেদি
দুনিয়ার সাথে গাঁথা বুনিয়াদ
দুনিয়া সবারি জন্ম বেদি।’
ক. কে অবিনাশী অস্ত্রের প্রত্যাশী?
খ. “আমি সেই অবিনাশী অস্ত্রের প্রত্যাশী”Ñ এখানে ‘অবিনাশী’ অস্ত্র বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. “যে অস্ত্র মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে না”Ñ লাইনটির সাথে উদ্দীপকের “বংশে বংশে নাহিকো তফাত”Ñ লাইনের সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “মানুষ মানুষের জন্য” উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে উক্তিটির যৌক্তিকতা বিচার কর। ১
২
৩
৪
৫ নং প্রশ্নের উত্তর
কবি অবিনাশী অস্ত্রের প্রত্যাশী।
“আমি সেই অবিনাশী অস্ত্রের প্রত্যাশী”, বাক্যে ‘অবিনাশী অস্ত্র’ বলতে ভালোবাসাকে বোঝানো হয়েছে।
অস্ত্র মানেই ধ্বংস করাÑ বিনাশ করা। ‘অবিনাশী অস্ত্র’ মানে যে-অস্ত্রের ধ্বংস করার ক্ষমতা নেই। এ অস্ত্র হলো ভালোবাসা, ভালোবাসা শুধু সৃষ্টি করে। মানুষকে সৌন্দর্যের মন্ত্র শেখায়, পরিবেশকে আপন করে নিতে উদ্বুদ্ধ করে। কবি এজন্যই অবিনাশী অস্ত্র অর্থাৎ ভালোবাসার প্রত্যাশী। একমাত্র ভালোবাসাই পারে পৃথিবীকে আসন্ন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে।
“যে অস্ত্র মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে না”Ñ এ লাইনের সাথে উদ্দীপকের “বংশে বংশে নাহিকো তফাত”Ñ লাইনের মিল রয়েছে।
পৃথিবীতে অসংখ্য জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষ রয়েছে। কিন্তু এই জাতি, ধর্ম বা বর্ণ সবই মানুষের সৃষ্টি। এর মাধ্যমে মানুষ নিজেদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছে। বস্তুত সকল মানুষ সমান। সকলের দেহে একই রক্তের চলাচল রয়েছে।
উদ্দীপকে মানুষের মধ্যে সকল প্রকার ভেদাভেদকে অস্বীকার করা হয়েছে। উদ্দীপকের কবির মতে বংশের পার্থক্য বলতে কিছুই নেই। বনেদি বলে মানুষকে আলাদা করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ সবাই এই পৃথিবীর বুকে জন্মেছে। এই সাম্যের গান ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবির কণ্ঠেও রূপকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। কবির ভালোবাসা চাওয়ার একমাত্র কারণ হলো পৃথিবীতে বিরাজমান সমস্ত পার্থক্য নিরসন করে মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও সহমর্মিতা জাগিয়ে তোলা। অর্থাৎ, কবিতার এ দিকটির সাথে উদ্দীপকের “বংশে বংশে নাহিকো তফাত”Ñ লাইনটির সাদৃশ্য রয়েছে।
“মানুষ মানুষের জন্য”Ñ উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে উক্তিটির যৌক্তিকতা বিচারের দাবি রাখে।
মানুষ সংসারে একা বাস করতে পারে না। জীবনের সমস্ত মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণের ক্ষেত্রেই একজন অন্যজনের মুখাপেক্ষী। এই মুখাপেক্ষিতা সরলভাবে স্বীকার করার নামই ভালোবাসা, আর অস্বীকার করার মাধ্যমে সৃষ্ট অনাচারের নাম হিংসা।
উদ্দীপকের কবি পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে একই কাতারে বন্দি করেছেন। কবির মতে, পৃথিবীর কেউ বনেদি বা গর-বনেদি নয়, সবাই মানুষ। এই পৃথিবীর মাটি সকলের জন্মস্থান, এর মাধ্যমে মূলত কবি পৃথিবীর মানুষের মনে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা ও মানবতাবোধকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবিও ভালোবাসার ব্যাপ্তির মাধ্যমে পৃথিবীতে মানবতার জয়গান গাওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবিকণ্ঠে ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে। কারণ বর্তমান পৃথিবীতে শুধু অস্থিরতা, শুধুই হানাহানি। ফলে ধীরে ধীরে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে। পৃথিবী ও মানুষকে এই আসন্ন ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারে একমাত্র ভালোবাসা, এর মধ্য দিয়ে মানুষ সহমর্মিতাবোধ সৃষ্টি করবে, পৃথিবীতে নেমে আসবে শান্তি। মানুষ মানুষের জন্য সহায়ক হবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত উক্তিটি সঠিক ও যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অধিক মুনাফার লোভে অপর্যাপ্ত পরিসরে অসংখ্য মানুষকে কাজ করতে বাধ্য করে একশ্রেণির ক্ষমতাবান ও ধনিক শ্রেণির মানুষ। সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি এই লোভের পরিণাম কেই জাতির সামনে তুলে ধরেছে।
ক. ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় আধিপত্যের প্রতি মানুষের কী রয়েছে?
খ. ‘পৃথিবীর যাবতীয় অস্ত্র’ বলতে কী বোঝ?Ñ ব্যাখ্যা কর।
গ. “মানব বসতির বুকে মুহূর্তের অগ্ন্যুৎপাত”Ñ চরণটির সাথে উদ্দীপকের রানা প্লাজার পতনের বিষয়টি তুলনা কর।
ঘ. “রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি মূলত লোভের কারণেই সংঘটিত হয়েছে”Ñ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে উক্তিটির সাদৃশ্য নির্ধারণ কর। ১
২
৩
৪
৬ নং প্রশ্নের উত্তর
‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় আধিপত্যের প্রতি মানুষের লোভ রয়েছে।
‘পৃথিবীর যাবতীয় অস্ত্র’ বলতে পৃথিবীর সেই সকল অস্ত্রকে বোঝানো হয়েছে, যেগুলো সৃষ্টি হয় শুধু ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টির জন্যই।
প্রাগৈতিহাসিক সময়ে মানুষ অস্ত্র তৈরি করেছিল আত্মরক্ষার জন্য। ধীরে ধীরে সভ্যতার উৎকর্ষ যত ঘটেছে অস্ত্রও তত আগ্রাসী হয়ে পড়েছে। এখন অস্ত্র তৈরি হয় শুধু ধ্বংসের জন্য। নিরপরাধকে আঘাত করার জন্য। পৃথিবীর এই ভয়াবহ অস্ত্রসমূহের কারণে মানবজাতি দারুণভাবে বিপদাপন্ন।
“মানববসতির বুকে মুহূর্তের অগ্নুৎপাত”Ñ লাইনটির সাথে উদ্দীপকের রানা প্লাজার পতনের সাদৃশ্য রয়েছে।
পৃথিবীতে সামান্য পরিমাণ মানুষ খুবই ধনী। আর বিপুলসংখ্যক মানুষ গরিব ও সাধারণ। এই সাধারণ মানুষগুলোর জীবনাচারও সাধারণ। কিন্তু এদের শান্তিভাব বজায় থাকে না। ধনিক শ্রেণির লোভের আগুনে এসব সাধারণ মানুষের সুখের নীড় ঝলসে যায়।
উদ্দীপকে ধনিক শ্রেণির লোভের পরিণাম ও জনসাধারণের ভাগ্যের নির্মম পরিণতি পাওয়া যায়। যার উদাহরণ হলো রানা প্লাজা মালিকের লোভের আগুনে কর্মরত অসংখ্য মানুষ ভবন ধসে মারা যায়। অথচ তারা এজন্য কোনোভাবেই দায়ী নয় এবং প্রস্তুতও ছিল না। এ আকস্মিক মৃত্যুবাণকেই ‘সেই অস্ত্র’ “কবিতায় ‘মানব বসতির বুকে মুহূর্তের অগ্ন্যুৎপাত” হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে, যা উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্য।
‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি মূলত লোভের কারণেই সংঘটিত হয়েছে’Ñ উক্তিটি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে যৌক্তিক হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
লোভ হলো বাড়তি প্রাপ্তির মানসিক প্রণোদনা এবং এই প্রাপ্তি অবশ্যই আসে অন্যায় সংঘটনের মাধ্যমে। মানুষের মনে লোভ জাগলে সে সহজেই অন্যায় করতে পারে। অন্যের মৌলিক অধিকার হরণ করতে পারে। মূলত যাদের অন্তরে লোভ থাকে, তারা পশুর মতোই হিংস্র।
উদ্দীপকে রানা প্লাজার ট্র্যাজেডির কথা পাওয়া যায়। এটা মূলত পোশাক শিল্পের ঘটনা, যেখানে অপ্রতুল পরিবেশে অধিক লোকবল নিয়োগ করে অন্যায়ভাবে অধিক উৎপাদনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। দুর্বল স্থাপনা হওয়ার কারণে হঠাৎ করেই রানা প্লাজা ধসে পড়ে এবং সেখানে কর্মরত অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে বলা যায়, এর জন্য দায়ী হলো মালিক পক্ষের লোভ।
‘সেই অস্ত্র’ কবিতাটি মূলত হিংসা নয়, ভালোবাসার কবিতা। এখানে কবি বিপন্ন পৃথিবীকে বাঁচাতে ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করেছেন। ভালোবাসা থাকলে পৃথিবীতে আর অনাচার ঘটবে না; বরং ঘরে ঘরে বিরাজ করবে সুখের বাতাস। মূলত ভালোবাসা না থাকার কারণেই মানুষ লোভী হয়। অন্যের অধিকার আর জীবন নিয়ে খেলা করে। যদি রানা প্লাজার মালিক পক্ষ লোভী না হতো, তবে এ দুর্ঘটনা হতো না, যা প্রশ্নোক্ত উক্তির যথার্থতা নিশ্চিত করে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
১৯৭১ সাল, বাংলার বুকে মৃত্যুর তাণ্ডব, হন্তারকের কালো থাবায় ছোপ ছোপ রক্ত। ভূলুণ্ঠিত বাংলার সৌন্দর্য-সম্ভ্রম। দিগন্তে দিগন্তে আগুনের কালো ধোঁয়া। মৃত্যুর তাণ্ডবে থমকে আছে দখিনা বাতাস। সেখানে ফুলের সৌরভ নেই। শুধু লাশের গন্ধ, শুধু কচি প্রাণের ভীষণ চিৎকার।
ক. ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কোথায় নক্ষত্র খচিত থাকে?
খ. কী কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ পঙ্গু-বিকৃত হয়?Ñ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সাথে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার মানুষের সৃষ্ট হিংস্রতার সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. ‘সেই অস্ত্র’ কবিতা ও উদ্দীপকে যে ভয়াবহতা প্রকাশ পেয়েছে, তার অন্যতম কারণ হলো ভালোবাসার ঘাটতিÑ এ বিষয়ে তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৭ নং প্রশ্নের উত্তর
‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় আকাশে নক্ষত্র খচিত থাকে।
মানব বসতির বুকে হঠাৎ অগ্ন্যুৎপাত তথা মানুষের সৃষ্ট অনাচারের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ পঙ্গু-বিকৃত হয়।
ক্ষমতার লোভে পৃথিবীর ক্ষমতাসীনরা প্রতিনিয়ত লড়াই করছে। যুদ্ধ করে দিগন্ত জ্বালিয়ে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে মৃত্যুর মহামারী ছড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু ক্ষমতালোভী প্রভুদের অনাসৃষ্টিতে অসংখ্য সাধারণ শান্তিকামী জীবন অশান্তিতে ভরে যাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এ জন্যই পঙ্গু-বিকৃত হচ্ছে।
‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় মানুষের হিংস্রতার যে রূপ প্রকাশ পেয়েছে, তার সাথে উদ্দীপকের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সাদৃশ্য রয়েছে।
আধিপত্য ও ক্ষমতার লোভে মানুষ যুদ্ধ করে, রাজ্য বিস্তারের লোভে অন্য রাজ্যের জনসাধারণের জীবনে বইয়ে দেয় রক্তের স্রোত। এর উপমা মানব ইতিহাসে অসংখ্যবার রচিত রয়েছে।
উদ্দীপকে ১৯৭১ সালের ভয়াবহতার কথা আলোকিত হয়েছে। এদেশের বুকে সে সময় নেমে এসেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। রাতের আঁধারে তারা শহরের বুকে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছিল। অগণিত মানুষের লাশে সারাদেশ ভরে গিয়েছিল। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি এই হিংস্রতার কথা উলেখ করেছেন। কবির মতে, যুদ্ধ লক্ষ লক্ষ মানুষকে পঙ্গু আর বিকৃত করে, যা উদ্দীপকের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টি করে।
‘সেই অস্ত্র’ কবিতা ও উদ্দীপকে যে ভয়াবহতা প্রকাশ পেয়েছে, তার অন্যতম কারণ হলো ভালোবাসার ঘাটতিÑ এ বিষয়ে আমি ঐকমত্য পোষণ করি।
যুদ্ধ কিংবা দাঙ্গা এসব আসে হিংস্রতা থেকে। হিংস্রতা ভালোবাসার সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান করে। যেখানে ভালোবাসা আছে, সেখানে কখনোই হিংস্রতা থাকতে পারে না।
উদ্দীপকে ১৯৭১ সালে এদেশে ঘটে যাওয়া বর্বরতার চিত্র ফুটে উঠেছে। পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদাররা রাতের অন্ধকারে এদেশের বুকে শ্বাপদের মতো নেমে এসেছিল। ঘন অন্ধকারে মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত দেশে মৃত্যুর স্রোত বইয়ে দিল। এ ভয়াবহতা ‘সেই অস্ত্র’ কবিতাতেও পাওয়া যায়। কবি যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখিয়েছেন পঙ্গু আর বিকৃত মানুষের আর্তচিৎকারে।
‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি ভালোবাসার ব্যাপ্তি ঘটানোর জন্য সকলের কাছে করুণ আবেদন করেছেন। কবির মতে একমাত্র ভালোবাসাই পারে এ পৃথিবী থেকে সমস্ত পঙ্কিলতা আর যুদ্ধ দূর করতে। এই সূত্র থেকে বলা যায়, যদি পশ্চিম পাকিস্তানি মানুষের মনে মানবতার প্রতি ন্যূনতম ভালোবাসা থাকত, তবে তারা ১৯৭১ সালে বর্বরতা চালাত না। এর দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, সকল যুদ্ধ সংঘটনের একমাত্র কারণ হলো ভালোবাসাহীনতা।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপের ফলে সৃষ্ট প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়, আইলা, সিডর যে ভয়াবহ আঘাত হানে সুন্দরবন তার বুক দিয়ে প্রথম চরম ধাক্কাগুলো প্রতিহত করে, গোটা দেশকে সুরক্ষা দেয়। সকল প্রকার দূষণকে হজম করে সে আমাদের জন্য অক্সিজেন ও নির্মল বাতাস সরবরাহ করে। আর বাংলাদেশের বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য নদ-নদী আমাদের সুরক্ষা দেয় বন্যার কবল থেকে মুক্ত রেখে। আমাদের স্বার্থেই এগুলো রক্ষা করা তাই আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য।
ক. কবি কেমন নদী দেখতে চান?
খ. “অরণ্য হবে আরও সবুজ” বলতে কবি কী নির্দেশ করেছেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কোন বিষয়টি তুলে ধরে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘ সেই অস্ত্র’ কবিতার সম্পূর্ণ ভাবকে মূর্ত করে তোলে।”Ñমন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর। ১
২
৩
৪
৮ নং প্রশ্নের উত্তর
কবি কলোলিত নদী দেখতে চান।
“অরণ্য হবে আরও সবুজ” বলতে কবি গাছপালা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাকে নির্দেশ করেছেন।
জীবনধারণের জন্য মানুষের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গাছের মাধ্যমেই সরবরাহ হয়। অথচ এই মানুষই প্রতিনিয়ত একের পর এক গাছ ধ্বংস করে চলেছে নিজের ব্যক্তিস্বার্থের তাগিদে। অপরপক্ষে গাছপালা বৃদ্ধির মাধ্যমে যেমন একদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে তেমনি মানুষের স্বাভাবিক জীবন হবে সুরক্ষিত। আলোচ্য কথাটি দিয়ে কবি এটিই নির্দেশ করেছেন।
উদ্দীপকটি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার প্রকৃতি রক্ষার অপরিহার্যতার বিষয়টিকে তুলে ধরে।
বিনষ্ট করো না এবং অতিরিক্ত চেয়ো নাÑ এটা প্রকৃতির আইন। আর তাই সুযোগসন্ধানী মানুষ প্রকৃতিকে যত ধ্বংস করেছে প্রকৃতি ততটাই মানুষের প্রতি বিরূপ প্রভাব নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমানে প্রকৃতিকে রক্ষা করা মানুষের জন্য অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সুন্দরবন বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে প্রতিহত করে আমাদের দেশকে সুরক্ষা দিয়ে আসছে। আমাদের জন্য সরবরাহ করছে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন। আর নদীগুলো বন্যার প্রকোপকে অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতির এসব উপাদানকে রক্ষা করা মানুষের জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি পৃথিবীতে ভালোবাসা ব্যাপ্ত করে প্রকৃতিকে আরও সুন্দর করে তুলতে চান। কলোলিত নদীর পাশাপাশি অরণ্যকে তিনি দেখতে চান আরও সবুজরূপে। কারণ এগুলোই মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনে একটা বড় ভূমিকা পালন করে। মূলত উদ্দীপকটি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার প্রকৃতি রক্ষার প্রয়োজনীয়তাকেই গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেছে।
“উদ্দীপকটি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার সম্পূর্ণ ভাবকে মূর্ত করে তোলে।”Ñ মন্তব্যটি যথার্থ নয়।
ভালোবাসার মাধ্যমেই জগৎকে সুন্দর করে তোলা যায়। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, প্রাণিজগতের প্রতি ভালোবাসা কিংবা মানুষের প্রতি ভালোবাসাই মানুষকে যথার্থ জীবনযাপনে সাহায্য করে। এই ভালোবাসার প্রতিদানও মানুষ কোনো না কোনোভাবে পেয়ে যায়। উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতা উভয়ক্ষেত্রে এই ভাব প্রকাশ পেলেও ব্যাপকতার পার্থক্য দেখা যায়।
উদ্দীপকে মানবজীবনে প্রকৃতির বিশেষ ভূমিকাকে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে সুন্দরবন একদিকে মানুষকে ঝড় থেকে রক্ষা করছে অন্যদিকে অক্সিজেন আর নির্মল বাতাস দিয়ে সাহায্য করছে প্রতিনিয়ত। এমনকি নদীগুলো মানুষকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করে চলেছে নীরবে। এজন্য প্রকৃতিকে ভালোবেসে রক্ষা করার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। কিন্তু ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার কথা একদিকে যেমন বলা হয়েছে অন্যদিকে তেমনি মানুষের প্রতি ভালোবাসার সমান আকাক্সক্ষাও প্রকাশ পেয়েছে। এ কবিতায় কবি ভালোবাসার অস্ত্র প্রয়োগ করে প্রকৃতি ধ্বংসকারী অস্ত্রকে ধ্বংস করতে চান। যুদ্ধকে থামিয়ে দেয়ার জন্য তাঁর কাছে ভালোবাসাই মুখ্য। এমনকি মানুষকে এক কাতারে বন্দি করার জন্য কবির কাছে ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই।
উদ্দীপকে শুধু প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার ভাবটিকে তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় প্রকৃতি ছাড়াও সমগ্র মানুষের মধ্যে ভালোবাসাকে ব্যাপ্ত করার ভাব রপ্ত করা হয়েছে। এজন্য বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আংশিক ভাবকে ধারণ করে, সম্পূর্ণটি নয়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ইসরাইল ও ফিলিস্তিন অধ্যুষিত একটি অঞ্চল গাজা। এই অঞ্চলটি দখল করার জন্য ইসরাইল প্রতিনিয়ত পশুর মতো নির্বিচারে মানুষ মারছে। সন্ত্রাস দমনের নামে তারা গুলি ছুঁড়ছে, বোমা ফেলছে একের পর এক। কিছু সামরিক লোকের সাথে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে অসহায় নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সর্বশ্রেণির মানুষ। আবার বেঁচে থেকেও বোমার আঘাতে কাউকে বা বরণ করে নিতে হচ্ছে পঙ্গুত্ব। তাই জাতিসংঘ দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে আসছে।
ক. নক্ষত্রখচিত আকাশ থেকে কী ঝরে?
খ. “মানব বসতির বুকে মুহূর্তের অগ্ন্যুৎপাত” বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কোন বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “যুদ্ধকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের প্রত্যাশা আর ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবির প্রত্যাশা যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।”Ñমন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর। ১
২
৩
৪
৯ নং প্রশ্নের উত্তর
নক্ষত্রখচিত আকাশ থেকে আগুন ঝরে।
“মানববসতির বুকে মুহূর্তের অগ্ন্যুৎপাত” বলতে কোনো জনবসতিপূর্ণ স্থানে বোমা নিক্ষেপের ফলে যে ধবংসলীলা সৃষ্টি হয়Ñ কবি তাকেই বুঝিয়েছেন।
মানুষ মানুষেরই জন্য। আবার এই মানুষই অন্য মানুষের ধ্বংসের কারণ। নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন আর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এই ক্ষমতাধররা বোমা মেরে জনবসতি পরিণত করে ধ্বংসস্তূপে। আলোচ্য কথাটি দিয়ে কবি এটিই বুঝিয়েছেন।
উদ্দীপকের সাথে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানুষের অসহায়তার বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ।
যুদ্ধ সবসময়ই ভয়ঙ্কর। আর এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সবচেয়ে বেশি শিকার হতে হয় বেসামরিক অসহায় মানুষগুলোকে। উদ্দীপক ও ‘ সেই অস্ত্র’ কবিতায় এই বিষয়টিই যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
উদ্দীপকে ‘গাজা’ নামক অঞ্চলটিতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইসরাইল যুদ্ধ শুরু করেছে। তারা নির্বিচারে গুলি ছুঁড়ছে, বোমা নিক্ষেপ করছে। সেই গুলি আর বোমার আঘাতে যতজন সামরিক লোক নিহত হচ্ছে তার চেয়ে বহুগুণে মৃত্যুবরণ করছে অসহায় বেসামরিক মানুষ। আর যারা বেঁচে থাকছে তাদের মেনে নিতে হচ্ছে মানবেতর জীবন। ঠিক একইভাবে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় মানুষের জীবন মুহূর্তের মধ্যে নির্বাপিত হয়ে যাচ্ছে। সেখানে আকাশ থেকে আগুন ঝরে পড়ার মতো করে বোমা পড়ছে, মানুষ মরছে। আর তারই সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষকে বরণ করতে হচ্ছে পঙ্গুত্ব কিংবা বিকৃতি। বস্তুত যুদ্ধ নামের ধ্বংসলীলার মধ্যে সাধারণ মানুষের অসহায়তার এই বিষয়টিতে উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
যুদ্ধকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের প্রত্যাশা আর ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবির প্রত্যাশা যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।” Ñমন্তব্যটি যথার্থ।
কেউ যুদ্ধ করে মুক্তির জন্য, কেউ বা আবার আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধে নেমে পড়ে। কিন্তু কারণ যাই হোক, যুদ্ধে দুই পক্ষকেই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। তাই এই যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাউকে না কাউকে পালন করতে হয় অগ্রণী ভূমিকা।
উদ্দীপকে অশান্ত গাজা অঞ্চলে মানুষের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। যুদ্ধের করাল গ্রাসের সামনে বসে মানুষকে যেন মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয়। পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থেকে কাউকে আবার পরনির্ভরশীল হয়ে দিনাতিপাত করতে হয়। অশান্তির বুকে শান্তির বিস্তার ঘটাতে জাতিসংঘ তাই কাজ করে চলেছে। ঠিক তেমনি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবিও ভালোবাসা নামক শান্তির বাণীতে মানব বসতির বুকে মুহূর্তের অগ্ন্যুৎপাত বন্ধ করতে চান। কারণ সেখানেও নাগাসাকি, হিরোশিমার মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ বোমার আঘাতে হয়ে পড়েছে পঙ্গু, বিকৃত। কবি তাই চান না আকাশ থেকে আর কোনো বোমা পড়–ক কিংবা ট্রয় নগরীর মতো অন্য কোনো অঞ্চল ধ্বংস হোক। এজন্য তিনি পৃথিবীতে ভালোবাসা ব্যাপ্ত করতে চান।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে মানুষের মধ্যে শুভবোধ জাগিয়ে জাতিসংঘ শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং ‘ সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি ভালোবাসার অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধাবসান ঘটিয়ে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান। এই বিবেচনায় বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি সঠিক ও যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কমলবাবু আর রহিম মিয়া একই গ্রামের দুইজন বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে তারা একে-অপরকে সাহায্য করে এসেছে নিঃস্বার্থভাবেই। অথচ তাদের ছেলেমেয়েরা তুচ্ছ সব ঘটনা নিয়ে এখন প্রায়ই জড়িয়ে পড়ে ধর্মীয় বিবাদে। শুরু হয় হিংসা, বিদ্বেষ, জাত্যভিমান আর অহংকারের বাড়াবাড়ি। আরও পরে আড়তের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ভেদাভেদ সূচিত হয় ভাইয়ে ভাইয়ে। তারা এখন শুধু বসবাস সূত্রে দূরে নয়, মনের দিক দিয়েও একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
ক জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
১. কবি আহসান হাবীব কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : আহসান হাবীব পিরোজপুরের শংকরপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
২. ‘ছায়া হরিণ’ আহসান হাবীবের কী ধরনের রচনা?
উত্তর : ‘ছায়া হরিণ’ আহসান হাবীবের কাব্যগ্রন্থ।
৩. কবি আহসান হাবীব কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : কবি আহসান হাবীব ১৯৮৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
৪. সেই অস্ত্র উত্তোলিত হলে নদী আরো কী হবে?
উত্তর : সেই অস্ত্র উত্তোলিত হলে নদী আরো কলোলিত হবে।
৫. সেই অস্ত্র উত্তোলিত হলে কোথায় আগুন জ্বলবে না?
উত্তর : সেই অস্ত্র উত্তোলিত হলে ফসলের মাঠে আগুন জ্বলবে না।
৬. মানব বসতির বুকে কোথা থেকে আগুন ঝরবে না?
উত্তর : নক্ষত্রখচিত আকাশ থেকে মানব বসতির বুকে আগুন ঝরবে না।
৭. কোনটি লক্ষ লক্ষ মানুষকে পঙ্গু-বিকৃত করবে না?
উত্তর : মুহূর্তের অগ্ন্যুৎপাত লক্ষ লক্ষ মানুষকে পঙ্গু-বিকৃত করবে না।
৮. আমাদের চেতনাজুড়ে কারা আর্তনাদ করবে না?
উত্তর : আমাদের চেতনাজুড়ে পঙ্গু-বিকৃত মানুষেরা আর্তনাদ করবে না।
৯. ‘সেই অস্ত্র’ উত্তোলিত হলে বার বার কী বিধ্বস্ত হবে না?
উত্তর : ‘সেই অস্ত্র’ উত্তোলিত হলে বার বার বিধ্বস্ত হবে না ট্রয় নগরী।
১০. কবি কীসের প্রত্যাশা করেন?
উত্তর : কবি অবিনাশী অস্ত্রের প্রত্যাশা করেন।
১১. কোন অস্ত্র আধিপত্যের লোভকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়?
উত্তর : অবিনাশী অস্ত্র আধিপত্যের লোভকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।
১২. ‘সেই অস্ত্র’ মানুষকে বিচ্ছিন্ন না করে কী করে?
উত্তর : ‘সেই অস্ত্র’ মানুষকে বিচ্ছিন্ন না করে সমাবিষ্ট করে।
খ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
১. “পাখিরা নীড়ে ঘুমোবে”Ñ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পরিবেশ যদি শান্ত থাকে তাহলে পাখিরা নিজেদের নীড়ে ঘুমোবে।
মানুষের সৃষ্ট কাজে বনের গাছপালা ধ্বংস হওয়ার সাথে সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশও বিনষ্ট হচ্ছে। নিরুপদ্রব বাসস্থানের অভাব দেখা দিচ্ছে বন্য প্রাণিগুলোর। তাই মানুষের মধ্যে যদি ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তাহলে মানুষ ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকবে এবং শান্তিময় পরিবেশে পাখিরা তাদের নীড়ে ঘুমাতে পারবে।
২. “যে অস্ত্র উত্তোলিত হলে পৃথিবীর যাবতীয় অস্ত্র হবে আনত”Ñ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : ভালোবাসা নামক অস্ত্রটি উত্তোলিত হলে পৃথিবীর ধ্বংসের জন্য যে অস্ত্রগুলো সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলো ব্যবহারের পরিসমাপ্তি ঘটবে।
প্রাচীনকালে মানুষ আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করেছিল। কিন্তু এখন মানুষ ক্ষমতা আর আধিপত্য বিস্তারের জন্যই অস্ত্রের ব্যবহার করে। আর এ সকল অস্ত্রের কারণে মানবজাতি ও পৃথিবী দুইই বিপন্ন। তাই ভালোবাসা নামক অস্ত্রটি আনার কথা বলা হয়েছে।
৩. “মুহূর্তের অগ্ন্যুৎপাত লক্ষ লক্ষ মানুষকে করবে না পঙ্গু-বিকৃত”Ñ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : হঠাৎ সৃষ্ট কোনো বিপদে মানুষকে কোনো পঙ্গুত্ব এবং বিকৃতির শিকার হতে হবে না, এটাই বলা হয়েছে এখানে।
পৃথিবীর মানুষের ক্ষমতার প্রতি লোভ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই আছে। আর এসব মানবসৃষ্ট দুর্যোগে সাধারণ মানুষের ক্ষয়-ক্ষতিই হয় বেশি। তাই যদি ভালোবাসা নামক অস্ত্রটি ব্যবহার করে এই বিকৃত মানসিকতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তাহলে হঠাৎ কোনো দুর্যোগেরও সৃষ্টি হবে না এবং লক্ষ লক্ষ লোক হতাহতও হবে না। সমাজে শান্তিময় অবস্থা বিরাজ করবে।
৪. “যে ঘৃণা বিদ্বেষ অহংকার এবং জাত্যভিমানকে করে বার বার পরাজিত”Ñ চরণটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : প্রশ্নোলিখিত চরণটি দ্বারা ভালোবাসা নামক অস্ত্রটিকে বোঝানো হয়েছে।
মানুষ অন্যকে ছোট করার জন্যই বৈষম্য সৃষ্টি করে। আর বৈষম্য কখনোই কোনো ভালো ফলাফল আনয়ন করেনি। তাই আমাদের উন্নতির জন্য মনের সমস্ত পঙ্কিলতা দূর করতে হবে। আর ভালোবাসা নামক অস্ত্রটিই ঘৃণা, বিদ্বেষ, অহংকার এবং জাত্যভিমানকে বার বার পরাজিত করে-সেটিই এখানে বলা হয়েছে।
৫. “যে অস্ত্র মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে না; বরং করে সমাবিষ্ট”Ñ এখানে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : এখানে ভালোবাসাকে বোঝানো হয়েছে। কেননা, একমাত্র ভালোবাসাই মানুষকে দূর হতে কাছে নিয়ে আসে।
পরস্পর ভালোবাসাহীনতার কারণে মানুষে-মানুষে হানাহানির পরিমাণ বেড়ে গেছে। এজন্য কবি ভালোবাসা নামক অস্ত্রটির আনয়নের কথা বলেছেন। কেননা, পৃথিবীকে আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে ভালোবাসা নামক এই অমোঘ অস্ত্রটিই। এজন্যই বলা হয়েছে যে, এটি মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে না; বরং সমাবিষ্ট করে।