নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান অষ্টম অধ্যায় আমাদের সম্পদ
এসএসসি সাধারণ বিজ্ঞান অষ্টম অধ্যায় আমাদের সম্পদ পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি মাটি : মাটি হলো নানারকম জৈব ও অজৈব রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ। সাধারণত মাটিতে বিদ্যমান পদার্থসমূহকে চার ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এরা হলো খনিজ পদার্থ, জৈব পদার্থ, বায়বীয় পদার্থ ও পানি। মাটিতে বিদ্যমান খনিজ পদার্থসমূহ মিলে অজৈব যৌগ গঠিত হয়। হিউমাস : মাটিতে বিদ্যমান জৈব পদার্থ হিউমাস (ঐঁসঁং) নামে পরিচিত। হিউমাস আসলে অ্যামিনো এসিড, প্রোটিন, চিনি, অ্যালকোহল, চর্বি, তেল, লিগনিন, ট্যানিন ও অন্যান্য অ্যারোমেটিক যৌগের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ জটিল পদার্থ। এটি দেখতে অনেকটা কালচে রঙের হয়। হিউমাস তৈরি হয় মৃত গাছপালা ও প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে। বায়বায়ন : মাটিতে থাকা গ্যাসের সাথে বায়ুমণ্ডলে থাকা বাতাসের গ্যাসের বিনিময় হয় অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের গ্যাস মাটিতে যায় এবং মাটিতে থাকা গ্যাস বায়ুমণ্ডলে চলে আসে। এই প্রক্রিয়াকে মাটির বায়বায়ন (ঝড়রষ অবৎধঃরড়হ) বলে। অণুজীব : মাটি, পানি, বায়ু সর্বত্র এমন অনেক সূ² জীব আছে যাদেরকে খালি চোখে দেখা যায় না। এ সূ² জীবদেরকে অণুজীব (গরপৎড়-ঙৎমধহরংস) বলা হয়। অণুজীবের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, ভাইরাস, রিকেটসিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। মাটির গঠন : মাটির গঠন পরীক্ষা করে দেখা যায় যে মাটি ৪টি সমান্তরাল স্তরে বিভক্ত। প্রতিটি স্তরকে দিগবলয় বা হরাইজোন (ঐড়ৎরুড়হ) বলে। সবার উপরে যে স্তরটি থাকে তাকে বলে হরাইজোন অ (ঐড়ৎরুড়হ অ) বা টপ সয়েল (ঞড়ঢ় ংড়রষ)। মাটির দ্বিতীয় স্তরটিকে সাবসয়েল (ঝঁন ঝড়রষ) বা হরাইজোন ই (ঐড়ৎরুড়হ ই) বলে। মাটির তৃতীয় স্তরটিকে হরাইজোন ঈ (ঐড়ৎরুড়হ ঈ) বলে। এই স্তরের নিচে থাকে মূল শিলা যা খুবই শক্ত। মাটির প্রকারভেদ : মাটির গঠন, বর্ণ, পানি ধারণক্ষমতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে মাটিকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এরা হলো বালু মাটি, পলি মাটি, কাদামাটি এবং দোআঁশ মাটি। বালু মাটি : বালু মাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য পানি ধারণক্ষমতা খুবই কম। এতে বিদ্যমান মাটির কণার আকার সবচেয়ে বড় থাকে, কণাগুলোর মাঝে ফাঁকা জায়গা বেশি থাকে, ফলে বায়বায়ন অনেক বেশি হয়। এ মাটিতে অতি ক্ষুদ্র শিলা ও খনিজ পদার্থ থাকে। হিউমাস থাকলে এটি চাষাবাদের জন্য সহজসাধ্য, তবে যেহেতু এই মাটির পানি ধারণক্ষমতা কম, তাই পানি দিলে তা দ্রæত নিষ্কাশিত হয় এবং গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে উদ্ভিদে পানির স্বল্পতা দেখা যায়। তাই যে সকল ফসলাদিতে অনেক বেশি পানি লাগে সেগুলো বালু মাটিতে ভালো হয় না। পলি মাটি : পলি মাটির পানি ধারণক্ষমতা বালু মাটির চেয়ে বেশি। পলি মাটি খুবই উর্বর হয় আর মাটির কণাগুলো বালু মাটির কণার তুলনায় আকারেও ছোট হয়। পলি মাটির কণাগুলো ছোট হওয়ায় এরা পানিতে ভাসমান আকারে থাকে এবং একপর্যায়ে পানির নিচে থাকা জমিতে পলির আকারে জমা পড়ে। পলি মাটিতে জৈব পদার্থ ও খনিজ পদার্থ (যেমনÑ কোয়ার্টজ) থাকে। বালু মাটির মতো পলি মাটির কণাগুলোও দানাদার হয় এবং এতে উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান বেশি থাকে। কাদা মাটি : এই মাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য এটি প্রচুর পানি ধারণ করতে পারে। এটি অনেকটা আঠালো এবং হাত দিয়ে ধরলে হাতে লেগে থাকে। এই মাটির কণাগুলো খুব সূ² হয়, ফলে কণাগুলোর মধ্যকার রন্ধ্র খুব ছোট ও সরু। এই মাটিতে খনিজ পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি। দোআঁশ মাটি : এই মাটি বালু, পলি ও কাদা মাটির সমন্বয়েই তৈরি হয়। দোআঁশ মাটির একদিকে যেমন পানি ধারণক্ষমতা ভালো আবার প্রয়োজনের সময় পানি দ্রæত নিষ্কাশনও ঘটে। তাই চাষাবাদের জন্য দোআঁশ মাটি খুবই উপযোগী। মাটির ঢ়ঐ : মাটির গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড ঢ়ঐ। ঢ়ঐ মান জানা থাকলে মাটি এসিডিক, ক্ষারীয় না নিরপেক্ষ তা বোঝা যায়। বেশির ভাগ ফসলের ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ উৎপাদন পাওয়া যায় মাটির ঢ়ঐ নিরপেক্ষ হলে অর্থাৎ এর মান ৭ বা তার খুব কাছাকাছি হলে। তবে কিছু কিছু ফসল আছে, যেমনÑ আলু এবং গম মাটির ঢ়ঐ ৫-৬ হলে সর্বোচ্চ উৎপাদন দেয়। অন্যদিকে কিছু ফসল যেমনÑ যব ভালো উৎপাদন হয় মাটির ঢ়ঐ ৮ হলে । মাটি দূষণের কারণ ও ফলাফল : ১. শিল্প-কারখানা ও শহরাঞ্চলের গৃহস্থালির বর্জ্যে থাকা প্রোটিন বা অ্যামিনো এসিড ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা ভেঙে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস, সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাস ও ফসফরাসের অক্সাইড উৎপন্ন করে, যার কারণে মাটি দূষিত হয়ে পড়ে। এ ধরনের দূষণের ফলে ক্ষতিকর পদার্থ মাটি থেকে খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদেহে প্রবেশ করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। ২. পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বা অস্ত্র তৈরির কারখানা থেকে দুর্ঘটনা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে নিঃসৃত রেডন (জহ), রেডিয়াম (জধ), থোরিয়াম (ঞয), সিজিয়াম (ঈং), ইউরেনিয়াম (ট) ইত্যাদি তেজস্ক্রিয় পদার্থ শুধু যে মাটির উর্বরতাই নষ্ট করে তা নয়, এরা প্রাণিদেহেও ত্বক ও ফুসফুসের ক্যান্সার সৃষ্টি করে। এরাও খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে প্রাণীদেহে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করে। ৩. নদীভাঙনের ফলে নদীর পাড় ভাঙা, মাটি বা অন্য যেকোনোভাবে সৃষ্ট মাটি বা পানিতে অদ্রবণীয় পদার্থ পানির দ্বারা প্রবাহিত হয়ে এক পর্যায়ে গিয়ে কোথাও না কোথাও তলানি আকারে পড়ে। এই জাতীয় তলানি ফসলি জমির ওপর পড়লে তা জমির উপরিভাগ যা ফসল উৎপাদনে মূল ভ‚মিকা পালন করে, তার ওপর আস্তরণ সৃষ্টি করে। ৪. খনি থেকে জ্বালানি খনিজ পদার্থ বা তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণের সময় প্রচুর মাটি খনন করে সরিয়ে ফেলতে হয়। এতে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসলহানি যেমন ঘটে তেমনি মাটি দূষণের ফলে মাটির উর্বরতাও নষ্ট হয়ে যায়। মাটি সংরক্ষণের কৌশল : মাটি সংরক্ষণের অন্যতম কৌশল হলো মাটিতে বেশি করে গাছ লাগানো। মাটিতে তৃণগুল্ম ও দূর্বা বা অন্য যেকোনো ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ ও অন্যান্য গাছপালা থাকলে ভারী বৃষ্টিপাতও মাটির ক্ষয়সাধন করতে পারে না। ঘাস মাটি থেকে তুললে তা মাটির ক্ষয়সাধন করে। তাই ঘাস কাটার সময় একেবারে মাটি ঘেঁষে কাটা উচিত নয়। বনের গাছ কাটার ফলে অনেক সময় বিস্তীর্ণ এলাকা গাছশূন্য ও অনাচ্ছাদিত হয়ে পড়ে। কাজেই নতুন গাছ লাগানোর ব্যবস্থা না করে কোনোমতোই বনের গাছ কাটা যাবে না। রাসায়নিক সারের বদলে জৈব সার উত্তম, কারণ জৈব সারে থাকা উপাদান ও হিউমাস পানি শোষণ করতে পারে। রাসায়নিক সার মাটিতে বসবাসকারী উপকারী পোকামাকড় অণুজীব ধ্বংস করে, ফলে উর্বরতাও নষ্ট হয়ে যায়। একই জমিতে বারবার একই ফসল চাষ করলে উর্বরতা নষ্ট হয়। তাই একই জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা উচিত। মাটিতে অবস্থিত সাধারণ খনিজ : খনিজ লবণ, পেন্সিলের সিস, ট্যালকম পাউডার, চীনা মাটির থালা-বাসন ইত্যাদি হাজারো রকম জিনিস মাটি ও শিলা থেকে প্রাপ্ত খনিজ পদার্থ। বেশির ভাগ খনিজ পদার্থই কঠিন অবস্থায় পাওয়া যায়। এদের নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংযুক্তি থাকে। ধাতব খনিজ পদার্থের মধ্যে অন্যতম হলো লৌহ (ঋব), তামা (ঈঁ) বা কপার, সোনা (অঁ) ও রুপা (অম)। অধাতব খনিজ পদার্থের মধ্যে কোয়ার্টজ (ছঁধৎঃু), মাইকা (গরপধ), খনিজ লবণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। কয়লা, গ্যাস, পেট্রোল ইত্যাদি এগুলো জৈব খনিজ পদার্থ। খনিজ পদার্থের ভৌত ধর্ম : খনিজ পদার্থসমূহ সাধারণত দানাদার বা কেলাসাকার হয়। এক একটি খনিজের কঠিনতা একেক রকম। কঠিনতা অনুযায়ী
নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান অষ্টম অধ্যায় আমাদের সম্পদ Read More »