এইচএসসি বাংলা আমার পথ সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
আমার পথ কাজী নজরুল ইসলাম লেখক পরিচিতি নাম ও উপাধি প্রকৃত নাম : কাজী নজরুল ইসলাম। ডাক নাম : দুখু মিয়া উপাধি : বিদ্রোহী কবি জন্ম পরিচয় জন্ম তারিখ : ২৫ মে, ১৮৯৯; ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬। জন্মস্থান : পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রাম। পিতৃ ও মাতৃ পরিচয় পিতার নাম : কাজী ফকির আহমেদ। মাতার নাম : জাহেদা খাতুন। প্রাথমিক শিক্ষা : গ্রামের মক্তব থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক শিক্ষা : প্রথমে রাণীগঞ্জের সিয়ারসোল স্কুল,পরে মারখুন উচ্চ ইংরেজি স্কুল, অতঃপর ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এক বছর পর তিনি পুনরায় নিজের গ্রামে ফিরে যান এবং ১৯১৫ সালে পুনরায় রাণীগঞ্জ সিয়ারসোল রাজ স্কুলে ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এ স্কুলে নজরুল ১৯১৫ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত একটানা অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। কর্মজীবন দারিদ্র্যের কারণে প্রথম জীবনে তিনি কবিয়াল, লেটো গানের দলে ও রুটির দোকানে কাজ করেন। ১৯১৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে পত্রিকা সম্পাদনার চাকরি নেন। তাছাড়া গ্রামোফোন রেকর্ডের জন্যে গানলেখা, সুরারোপ এবং সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত করেন। জীবনের শেষ তিন দশক নজরুল নির্বাক ও কর্মহীন ছিলেন। সাহিত্য সাধনা নজরুলের সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়। তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনাবলি হচ্ছেÑ কাব্যগ্রন্থ : অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, ভাঙার গান, সাম্যবাদী, সর্বহারা, ফণি-মনসা, জিঞ্জির, সন্ধ্যা, প্রলয় শিখা, দোলনচাঁপা, ছায়ানট, সিন্ধু-হিন্দোল, চক্রবাক, নতুন চাঁদ, ঝিঙেফুল, চন্দ্রবিন্দু ইত্যাদি। উপন্যাস : বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা ইত্যাদি। প্রবন্ধগ্রন্থ : রাজবন্দীর জবানবন্দী, যুগ-বাণী, ধূমকেতু, রুদ্র-মঙ্গল, দুর্দিনের যাত্রী ইত্যাদি। গল্পগ্রন্থ : ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা, পদ্মগোখরা, জিনের বাদশা ইত্যাদি। নাটক : ঝিলিমিলি, আলেয়া, পুতুলের বিয়ে, মধুমালা, রক্তকমল, মহুয়া, জাহাঙ্গীর, কারাগার ইত্যাদি। জীবনীগ্রন্থ : মরুভাস্কর (হযরত মুহাম্মদ (স)-এর জীবনীগ্রন্থ)। অনুবাদ : রুবাইয়াত-ই-হাফিজ, রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম, কাব্যে আমপারা। গানের সংকলন : বুলবুলি, চোখের চাতক, চন্দ্রবিন্দু, নজরুল গীতি, সুরলিপি, গানের মালা, চিত্তনামা ইত্যাদি। সম্পাদিত পত্রিকা : ধূমকেতু, লাঙ্গল, দৈনিক নবযুগ। পুরস্কার ও সম্মাননা ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’, ভারত সরকার কর্তৃক ১৯৬০ সালে ‘পদ্মভ‚ষণ’ পদক, রবীন্দ্রভারতী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট উপাধি এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। বিশেষ কৃতিত্ব বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নাগরিকত্ব এবং জাতীয় কবির মর্যাদা লাভ। জীবনাবসান মৃত্যু তারিখ ও স্থান : ২৯ আগস্ট, ১৯৭৬ ঢাকার পিজি হাসপাতাল। সমাধি স্থান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণ। গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। আবদুল মালেক সারাটি জীবন শিক্ষকতা করেছেন, গড়েছেন আলোকিত মানুষ। অবসর গ্রহণের পর তিনি গড়ে তুলেছেন ‘তারুণ্য’ নামে সেবা-সংগঠন। বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি পথশিশুদের শিক্ষাদান, দুর্নীতি-বিরোধী অভিযান, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করেন তিনি। অনেকে তাঁর কাজের প্রশংসা করেন আবার নিন্দা ও কটূক্তি করতেও ছাড়েন না কেউ কেউ। তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন ‘মনেরে আজ কহ যে ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে।’ ক. কাজী নজরুল ইসলামের মতে কোনটি আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়? খ. কবি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন কেন? গ. উদ্দীপকে আবদুল মালেকের মাধ্যমে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের যে বাণী উচ্চারিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর। ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশের বক্তব্য চেতনায় ধারণ করে আলোকিত পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব। প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর। ১ ২ ৩ ৪ ১ নং প্রশ্নের উত্তর পরনির্ভরতা আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়। সমাজের অনিয়মকে ভেঙে ফেলতে কবির যে অবস্থান, তার প্রেক্ষিতে তিনি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন। সমাজের প্রচলিত, পুরাতন নিয়মকে ভেঙে নতুনকে প্রতিষ্ঠা করা খুব সহজ নয়। এতে প্রতিনিয়ত সমাজরক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়, নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। এসব জেনেও কবি তাঁর বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। সকল অন্যায়, অবিচার আর অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। তাই তিনি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন। উদ্দীপকের আবদুল মালেকের মাধ্যমে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের সত্য পথের পথিক হওয়ার বাণী উচ্চারিত হয়েছে। নিজের অন্তরের সত্যকে যারা উপলব্ধি করতে পারে তারাই প্রকৃত মানুষ। তারা সমাজ, দেশ ও জাতির মঙ্গল প্রত্যাশী। এ প্রত্যাশা থেকেই তারা সমাজের কুসংস্কার, মিথ্যা আর ভণ্ডামির মূলোৎপাটন করতে চান। সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চান সত্য ও মনুষ্যত্বকে। ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বলেছেন সত্য পথের কথা। সত্য প্রকাশে তিনি নির্ভীক, অসংকোচ। সত্যের তেজেই তিনি অন্যায়কে ধ্বংস করতে চান। তিনি জাগ্রত করতে চান মনুষ্যত্ববোধকে, মানুষের মূল্যবোধকে। উদ্দীপকের আবদুল মালেকও এ সত্য পথের বাণী উচ্চারণ করেছেন, হৃদয়-সত্যের আলোতে আলোকিত হয়ে সমাজকল্যাণে এগিয়ে এসেছেন। উদ্দীপকের কবিতাংশের বক্তব্য চেতনায় ধারণ করে আলোকিত পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব-মন্তব্যটি সঠিক। সত্য তার আপন দীপ্তি ও শক্তিতে ভাস্বর। সত্যের পথই জীবনের প্রকৃত পথ। সত্যের সুন্দর ও নির্মম উভয় রূপই আছে। সত্যের নির্মমতার ভয়ে মিথ্যাকে গ্রহণ করলে সে-মিথ্যাই ধ্বংস ডেকে আনে। তাই সত্য যেমনই হোক তাকে গ্রহণ করতে হবে, হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক তাঁর অন্তরের সত্যকে উন্মোচিত করেছেন। তিনি জানেন এ সত্য যত নির্মমই হোক না কেন, এ সত্যই তাঁকে পথ দেখাবে। এ সত্যের আলোতেই তাঁর হৃদয় আলোকিত হয়ে উঠবে। তিনি এটা বিশ্বাস করেন যে, সত্যের দম্ভ যাদের মধ্যে রয়েছে তারাই কেবল অসাধ্য সাধন করতে পারেন। উদ্দীপকের কবিতাংশেও এই বিষয়েরই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সত্য যেমনই হোক তাকে স্বীকার করার, হৃদয়ে ধারণ করার শক্তি থাকতে হবে। যাদের হৃদয় সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত তারাই আলোকিত পৃথিবী গড়ে তুলতে পারবেন। যারা সত্য পথের সাধক তারা সমাজে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে চান। সমাজে সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে গোটা পৃথিবী আলোকিত হয়ে উঠবে। আর এ বিচারেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা যায়। অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। সক্রেটিস বলেছেন, ‘শহড়ি ঃযুংবষভ’; সেজন্য আত্মপরিচয় জানা ব্যক্তি সত্যের শক্তিতে ভাস্বর। সে সত্যকে দ্বিধাহীনচিত্তে হাজারবার সালাম জানাতে পারে; কিন্তু মিথ্যাকে মিথ্যার শক্তিতে বলীয়ান শয়তানকে কখনো কুর্নিশ করে না। সত্যই তার পথপ্রদর্শক। সত্যের আলোয় সে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। সত্য থেকে এক পা বিচ্যুত হলে সে নিজ মনুষ্যত্ব হারাবে। ক. অতিরিক্ত বিনয় মানুষকে কী করে? খ. মেয়েলি বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক অনেক ভালো-কেন? গ. উদ্দীপকের লেখকের ভাবনার সঙ্গে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের ভাবনার তুলনামূলক আলোচনা কর। ঘ. “উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের চেতনাগত ঐক্য থাকলেও উদ্দীপকটি প্রবন্ধের সম্পূর্ণ ভাবার্থ নয়।”Ñউক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর। ১ ২ ৩ ৪ ২ নং প্রশ্নের উত্তর অতিরিক্ত বিনয় মানুষকে ছোট করে। নিজের সত্যকে অস্বীকার করে অতিরিক্ত বিনয় প্রদর্শন মেয়েলি বিনয়। তার থেকে আত্মবিশ্বাস ও সততার বলিষ্ঠ স্বীকৃতি প্রদর্শন করে পৌরুষকে জাহির করা, যাকে বলা যেতে পারে অহংকারের পৌরুষ, তা অনেক ভালো। মেয়েলি বিনয় দুর্বলতার নামান্তর; তার চেয়ে নিজেকে চিনে আপনার সত্যকে আপনার গুরু, পথপ্রদর্শক কাণ্ডারি বলে জানা অনেক ভালো। কেউ কেউ এটাকে অহংকার বলে মনে করতে পারে।
এইচএসসি বাংলা আমার পথ সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর Read More »