সপ্তম অধ্যায় বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ ও প্রশাসন ব্যবস্থা অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে জেনে রাখি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ : পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সরকারব্যবস্থার মতো বাংলাদেশ সরকারের তিনটি বিভাগ আছে। সেগুলো হচ্ছে : ১. শাসন বিভাগ ২. আইন বিভাগ ও ৩. বিচার বিভাগ। শাসন বিভাগ : শাসন বিভাগকে নির্বাহী বিভাগও বলা হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের শাসনকার্য তথা নিত্যদিনকার প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজ পরিচালনা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং রাষ্ট্রের সার্বিক সিদ্ধান্ত এবং সুবিধাসমূহ বাস্তবায়ন করে যে বিভাগ তাকে শাসন বিভাগ বলে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ : বাংলাদেশ সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। সরকারের যে বিভাগ আইন অনুসারে বিচার কাজ পরিচালনা। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সুপ্রিম কোর্ট, অধস্তন আদালত এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল নিয়ে গঠিত। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি : সংসদীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। প্রজাতন্ত্রের সকল কাজ তার নামে পরিচালিত হয়। তার হাতে কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। কিন্তু তবু দেশের সরকার গঠন, শাসন পরিচালনা, আইন প্রণয়ন, অর্থ সংক্রান্ত, বিচার, প্রতিরক্ষা ও ক‚টনীতি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কাজ তিনি সম্পাদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি : প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে ১. শাসন বিষয়ক ও নির্বাহী ক্ষমতা, ২. আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা, ৩. সংসদ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, ৪. অর্থবিষয়ক ক্ষমতা, ৫. রাষ্ট্রীয় কাজের সমন্বয়ে প্রধানমন্ত্রী, ৬. জাতির মুখপাত্র হিসেবে প্রধানমন্ত্রী, ৭. দলের নেতা হিসেবে। আইন বিভাগ : সরকারের তিনটি বিভাগের একটি হচ্ছে আইন বিভাগ। আইন বিভাগ আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োজনবোধে প্রচলিত আইনের সংশোধন বা রদবদল করে থাকে। আইন বিভাগের একটি অংশ হলো আইনসভা বা পার্লামেন্ট। আইনসভা আইন প্রণয়ন করে। আইনসভা নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের নিয়ে কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে মনোনীত সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়। আইনসভা প্রণীত আইন রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মতি লাভের পর কার্যকর হয়। প্রত্যেক রাষ্ট্রের আইনসভা রয়েছে এবং এসব আইনসভা বিভিন্ন নামে পরিচিত। বাংলাদেশের আইনসভার নাম জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশের আইনসভা এক কক্ষ বিশিষ্ট। বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো : বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো স্তরভিত্তিক। এর দুটি প্রধান স্তর আছে। প্রথম স্তরটি হলো কেন্দ্রীয় প্রশাসন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের দ্বিতীয় স্তরটি হলো মাঠ প্রশাসন। মাঠ প্রশাসনের প্রথম ধাপ হলো বিভাগীয় প্রশাসন। দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলার পর আছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। কেন্দ্রীয় প্রশাসন : সেক্রেটারীয়েট বা সচিবালয় বাংলাদেশ প্রশাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রে অবস্থিত যা শাসন ব্যবস্থার স্নায়ুকেন্দ্র স্বরূপ। সরকারি যাবতীয় সিদ্ধান্ত সর্বপ্রথম সচিবালয়ে গৃহীত হয়। সাধারণত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও তার বিভাগসমূহের অফিসগুলোকে যৌথভাবে সচিবালয় বলে। প্রধামন্ত্রীর পছন্দানুযায়ী প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে একজন মন্ত্রী নিযুক্ত হন। মন্ত্রী হলেন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও মন্ত্রণালয়ের প্রধান। মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তথা প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন একজন সচিব। স্থানীয় প্রশাসন : স্থানীয় শাসন বলতে স্থানীয় পর্যায়ের বিভাগীয়/জেলা এবং উপজেলা শাসন ব্যবস্থাকে বোঝায়। প্রশাসনের সুবিধার্থে এর সৃষ্টি। এ প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় শাসন ও নিয়ন্ত্রণকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, রাজস্ব আদায় ও সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নই এর মুখ্য উদ্দেশ্য। এ ব্যবস্থায় স্থানীয় শাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিবৃন্দ সরকারের এজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য। যেমন : আমাদের দেশে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসক এবং থানা/উপজেলা নির্বাহী অফিসার। বিভাগীয় প্রশাসন : কেন্দ্রের পরেই বাংলাদেশে বিভাগীয় প্রশাসনের স্থান। বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে ৭টি বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ১. ঢাকা বিভাগ, ২. চট্টগ্রাম বিভাগ, ৩. রাজশাহী বিভাগ, ৪. খুলনা ভিাগ, ৫. বরিশাল বিভাগ, ৬. সিলেট বিভাগ ও ৭. রংপুর বিভাগ। বিভাগীয় প্রশাসনের শীর্ষে অবস্থান করেন বিভাগীয় কমিশনার। একজন অতিরিক্ত কমিশনার এবং কমিশনারের ব্যক্তিগত সহকারীসহ বহুসংখ্যক কর্মচারী বিভাগীয় প্রশাসনে কর্মরত থাকেন। সিটি কর্পোরেশন : মহানগর এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং উন্নয়নের জন্য সিটি কর্পোরেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। প্রত্যেক সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত সংখ্যক ওয়ার্ডে বিভক্ত থাকে। একজন মেয়র, নির্ধারিত ওয়ার্ডের সমানসংখ্যক কাউন্সিলর এবং নির্ধারিত ওয়ার্ডের এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যক সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর নিয়ে সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়। ইউনিয়ন পরিষদ : গড়ে ১০-১৫টি গ্রাম নিয়ে একটি ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত। এর একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, নয়জন নির্বাচিত সাধারণ সদস্য ও তিনজন নির্বাচিত মহিলা সদস্য (সংরক্ষিত আসনে) রয়েছেন। একটি ইউনিয়ন ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে একজন করে ৯টি ওয়ার্ড থেকে ৯ জন সাধারণ সদস্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। উপজেলা পরিষদ : আমাদের দেশে থানা/উপজেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক স্তর। একজন চেয়ারম্যান, দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান (এদের মধ্যে একজন হবেন মহিলা) এবং উপজেলার আওতাধীন ইউনিয়ন পরিষদসমূহের চেয়ারম্যানবৃন্দ, পৌরসভার (যদি থাকে) মেয়র এবং তিনজন মহিলা সদস্যের সমন্বয়ে উপজেলা পরিষদ গঠিত হয়। জেলা পরিষদ : ২০০০ সালের জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদ গঠিত হবে একজন চেয়ারম্যান, পনেরোজন সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনে ৫ জন মহিলা সদস্যদেরকে নিয়ে। এরা সবাই পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হবেন একটি নির্দিষ্ট জেলার অধীনে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, কমিশনারবৃন্দ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের ভোটে। এই পরিষদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর ১. এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা আছে এমন দেশের উদাহরণ নিচের কোনটি? ক যুক্তরাষ্ট্র খ যুক্তরাজ্য গ ভারত বাংলাদেশ নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ২ ও ৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও : হৃদয় তার প্রবাসী বন্ধুকে জানায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সরকারি বিলের পৃষ্ঠপোষকতা, অর্থবিষয়ক কাজ, দলের নেতা, সংসদবিষয়ক ক্ষমতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন ও ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। ২. জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে হৃদয় প্রদত্ত কোন তথ্যটি সঠিক? র. সরকারি বিলের পৃষ্ঠপোষকতা করা রর. বার্ষিক বাজেট অনুমোদন ররর. সংসদ সদস্যদের অধিকার সংরক্ষণ নিচের কোনটি সঠিক? ক র ও রর খ রর ও ররর র ও ররর ঘ র, রর ও ররর ৩. উপরোক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বলা হয়- সরকার প্রধান খ নির্বাহী প্রধান গ সংসদ প্রধান ঘ দলীয় প্রধান জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন \ ১ \ প্রশাসন পরিচালনা কয় ধরনের? উত্তর : প্রশাসন পরিচালনা দুই ধরনের। প্রশ্ন \ ২ \ আইনসভা কাদের নিয়ে গঠিত? উত্তর : নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আইনসভা গঠিত। প্রশ্ন \ ৩ \ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার নাম কী? উত্তর : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার নাম হচ্ছে কংগ্রেস। প্রশ্ন \ ৪ \ প্রধানমন্ত্রীকে নিযুক্ত করেন কে? উত্তর : প্রধানমন্ত্রীকে নিযুক্ত করেন রাষ্ট্রপতি। প্রশ্ন \ ৫ \ কার অধ্যাদেশ জারি করার ক্ষমতা রয়েছে? উত্তর : রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করার ক্ষমতা রয়েছে। প্রশ্ন \ ৬ \ কার ভাষণের ওপর সংসদ আলোচনা করে? উত্তর : রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সংসদ আলোচনা করে। প্রশ্ন \ ৭ \ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে? উত্তর : বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশ্ন \ ৮ \ বাংলাদেশের সরকার প্রধান কে? উত্তর : বাংলাদেশের সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশ্ন \ ৯ \ সংসদীয় ব্যবস্থায় কে মন্ত্রীদের নিয়োগ ও তাদের দপ্তর