ষষ্ঠ অধ্যায়
ব্যবসায় পরিকল্পনা
ব্যবসায় পরিকল্পনার ধারণা : ব্যবসায় পরিকল্পনা হলো একটি লিখিত দলিল। যার মধ্যে ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। ব্যবসায়ের লক্ষ্য, ব্যবস্থাপনার ধারা, অর্থায়নের উপায়, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয় ব্যবসায় পরিকল্পনায়। ব্যবসায় পরিকল্পনা কোনো ব্যবসায়ীকে তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে।
ব্যবসায় পরিকল্পনার গুরুত্ব : ব্যবসায় শুরু, সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও এর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যবসায় পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যবসায় পরিকল্পনার প্রধান প্রধান গুরুত্ব নি¤œরূপ :
ব্যবসায় পরিচালনার দিকনির্দেশনা
মূলধন সংগ্রহ ও বিনিয়োগ
সরকারি সুযোগ-সুবিধার সদ্ব্যবহার
সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা ইত্যাদি
ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রক্রিয়া : ব্যবসায়ের সাফল্য অনেকাংশ নির্ভর করে সঠিক প্রকল্প নির্বাচনের ওপর। প্রকল্প হচ্ছে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রণীত, পরিকল্পিত ও সুচিন্তিত কর্ম পদ্ধতি। অর্থাৎ একটি প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয়ে পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী পরিসমাপ্ত হয়।
প্রকল্প ধারণা চিিহ্নতকরণ : একজন উদ্যোক্তা তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে পণ্য বা সেবার চাহিদা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন। এ চাহিদার ওপর প্রকল্প নির্বাচন নির্ভর করে। পণ্যের ধারণা থেকেই প্রকল্পের সূত্রপাত হয়। প্রকল্প ধারণা চিিহ্নত করার সময় উদ্যোক্তার নিজের আগ্রহ ও চাহিদা আছে এমন পণ্য, বিদ্যমান পণ্যের অসুবিধা, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ ইত্যাদির দিকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
ধারণা মূল্যায়ন ও প্রকল্প নির্বাচন : একজন উদ্যোক্তা বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে কয়েকটি সম্ভাব্য ধারণা চিিহ্নত করে একটি তালিকা করেন। তালিকাবদ্ধ ধারণাগুলো বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে মূল্যায়ন করে ব্যবসায় প্রকল্প নির্বাচন করেন। দুইটি পদ্ধতির মাধ্যমে প্রকল্প নির্বাচন করা যায়। যেমন : ম্যাক্রোস্ক্রিনিং ও মাইক্রোস্ক্রিনিং।
ম্যাক্রোস্ক্রিনিং : ম্যাক্রোস্ক্রিনিং হলো এমন একটি পদ্ধতি যা কতগুলো প্রভাবক বা উপাদানের ভিত্তিতে ব্যবসায়ের ধারণাগুলো মূল্যায়ন করে একটি প্রকল্প নির্বাচন করা হয়। প্রভাবকগুলো হলো : জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক পরিবেশ, প্রাকৃতিক পরিবেশ, রাজনৈতিক পরিবেশ, সাংস্কৃতিক পরিবেশ, আইনগত পরিবেশ ইত্যাদি।
মাইক্রোস্ক্রিনিং : মাইক্রোস্ক্রিনিং পদ্ধতিতেও কতগুলো উপাদান বিবেচনা করে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। উপাদানগুলো হলো: বাজার চাহিদা, কারিগরি দিক, বাণিজ্যিক দিক, আর্থিক দিক, জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান ইত্যাদি।
ব্যবসায় প্রকল্প প্রতিবেদন প্রণয়ন : প্রতিবেদন প্রকল্প প্রণয়নের শেষ ধাপ। নির্বাচিত প্রকল্পটির সম্ভাবনা যাচাইয়ের তথ্যগুলোর ওপর ভিত্তি করেই প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়।
ক্ষুদ্র ব্যবসায় পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা : একটি ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন করার সময় যতœশীল হওয়া আবশ্যক। শিল্পোদ্যোক্তা নিজে অথবা প্রয়োজনে অন্য কোনো বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন করে থাকে। একটি সুষম ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় কতগুলো দিক নির্দেশনা অনুসরণ করে ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়।
ক্ষুদ্র ব্যবসায় পরিকল্পনার বিষয়বস্তু : ১. ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নাম, ২. ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা, ৩. উদ্যোক্তা বা উদ্যোক্তাগণের নাম, ৪. উদ্যোক্তা বা পরিচালকবৃন্দের পরিচিত, ৫. ব্যবসায়ের ধরন, ৬. পরিচালনার ধরন, ৭. মূলধনের পরিমাণ, ৮. বাজার জরিপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, ৯. মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা, ১০. প্রাক্কলিত বিবরণী ইত্যাদি।
প্রাক্কলিত নগদান প্রবাহ বিবরণী : একটি নির্দিষ্ট সময়ে কী পরিমাণ নগদ আসছে এবং কী পরিমাণ ব্যয় হচ্ছে তা সংরক্ষণ করা হয় প্রাক্কলিত নগদান প্রবাহ বিবরণীতে। এ বিবরণী দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
সম আয়-ব্যয় বিশে−ষণ : সম-আয়-ব্যয় ব্যবসায়ের এমন একটি অবস্থা যেখানে আয়-ব্যয় সমান হয়। অর্থাৎ যে পরিমাণ পণ্য বিক্রয় করলে মোট বিক্রয়মূল্য মোট ব্যয়ের সমপরিমাণ হয় তাকে সম-আয়-ব্যয় বলে। অর্থাৎ যে বিন্দুতে আয় ব্যয় সমান হয় তাকে সম-আয়-ব্যয় বা সমচ্ছেদ বিন্দু বলে।
আত্মবিশ্লেষণ পদ্ধতির ধারণা ও প্রক্রিয়া : আত্মবিশ্লেষণ পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে তার ব্যবসায় করার সক্ষমতা আছে কি না যাচাই করা হয়। কারণ ব্যবসায়ে ঝুঁকি বিদ্যমান। ফলে ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে সক্ষমতা যাচাই করে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-১ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বর্তমানে আমাদের দেশে নির্মাণ ও হাউজিং শিল্পের ব্যাপক চাহিদার কথা মাথায় রেখে বুয়েট থেকে সদ্য পাস করা জনাব আরিফ আরও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করেন। প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে তারা পুরো কর্মকাণ্ডের দীর্ঘমেয়াদি একটি ছক প্রণয়ন করেন। প্রাথমিক ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট মূলধন নিজেদের না থাকায় মূলধন সংগ্রহের বিকল্প উৎসও নির্ধারণ করেন।
ক. পণ্যের বাজার চাহিদা জানার উপায়কে কী বলে?
খ. ব্যবসায়ের যান্ত্রিক দিকটি বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকের আলোকে জনাব আরিফদের প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন ধরনের মূলধন প্রয়োজন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জনাব আরিফ ও তার বন্ধুরা প্রকল্প প্রণয়নের যথার্থ পথ অনুসরণ করেছেন-এ বিষয়ে তোমার মতামত দাও।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. পণ্যের বাজার চাহিদা জানার উপায়কে বাজার জরিপ বলে।
খ. ব্যবসায়ের যান্ত্রিক দিক বলতে মূলত ব্যবসায়ের কারিগরি দিককে বোঝায়। প্রকল্পের কারিগরি দিক যাচাই করা হয় প্রযুক্তিগত ও যান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে। এ ধরনের কাজের মধ্যে রয়েছে উৎপাদন প্রক্রিয়া, প্রযুক্তি নির্ধারণ, যন্ত্রপাতি নির্বাচন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সহজসাধ্যতা ইত্যাদি।
গ. জনাব আরিফদের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি বাহ্যিক উৎসের মূলধন প্রয়োজন।
যখন ব্যবসায়ে দীর্ঘমেয়াদি মূলধনের প্রয়োজন দেখা দেয় এবং উদ্যোক্তার পক্ষে নিজস্ব তহবিল থেকে এ মূলধন যোগাড় করা সম্ভব হয় না তখন তাদেরকে ব্যাংক ঋণ বা অন্যান্য বাহ্যিক উৎস থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে হয়। উদ্দীপকে জনাব আরিফ আরও কয়েকজনকে নিয়ে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করেন। প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে তারা পুরো কর্মকাণ্ডের দীর্ঘমেয়াদি একটি ছক প্রণয়ন করেন। প্রাথমিক ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট মূলধন না থাকায় তারা বাহ্যিক উৎস থেকে মূলধন সংগ্রহ করবেন। অর্থাৎ নিজেদের হাতে পর্যাপ্ত মূলধন না থাকায় জনাব আরিফদের দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি বাহ্যিক উৎসের মূলধন প্রয়োজন।
ঘ. জনাব আরিফ ও তার বন্ধুরা ব্যবসায়ের পরিকল্পনা প্রণয়নের যথার্থ পথ অনুসরণ করেছেন-এ কথাটি যথার্থ।
প্রকল্প হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, নির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রণীত, পরিকল্পিত ও সুচিন্তিত কর্ম পদ্ধতি। কেননা ব্যবসায় প্রকল্প গ্রহণে প্রথমে ধারণাগুলো চিহ্নিত করতে হয় এবং তারপর ধারণাগুলো মূল্যায়ন করে চ‚ড়ান্তভাবে বাছাই করতে হয়। উদ্দীপকে জনাব আরিফ ও তার কয়েকজন বন্ধু নির্মাণ ও হাউজিং শিল্পের ব্যাপক চাহিদা বিবেচনা করে একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। তাদের গৃহীত এই প্রকল্পটি বাস্তবসম্মত হয়েছে। কারণ বাংলাদেশে খুব দ্রæত গতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের আবাসন চাহিদাও চাড়ছে। তাই তারা যদি দক্ষভাবে তাদের এই প্রকল্প পরিচালনা করতে পারে তাহলে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবে। তাছাড়া প্রকল্পটি গ্রহণের পূর্বে তারা পুরো কর্মকাণ্ডের দীর্ঘমেয়াদি ছক তৈরি করেছেন যাকে পরিকল্পনা প্রণয়ন বলা হয়। আর এই পরিকল্পনার আলোকেই তারা প্রকল্পটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ তারা সঠিক প্রকল্পের জন্য সঠিক ও সময় উপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
সুতরাং বলা যায়, জনাব আরিফ ও তার বন্ধুরা বর্তমান বাজার চাহিদা নিরূপণ করে বাস্তবসম্মত প্রকল্প প্রণয়ণে যথার্থ পথ অনুসরণ করেছেন যা তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে।
প্রশ্ন-২ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব শাহেদ আনন্দ কনফেকশনারির মালিক। নিচে তার দোকানের বছর শেষের আয়-ব্যয়ের তথ্য ছকে উপস্থাপন করা হলো-
ব্যয় টাকা আয় টাকা
দোকান ভাড়ার এককালীন অগ্রিম ১,০০,০০০ পণ্য বিক্রয় ৫,১৬,০০০
কাঁচামাল ক্রয় ১,৫০,০০০
আসবাবপত্র ও সাজসজ্জা ১,০০,০০০
শ্রমিকের মজুরি ৫০,০০০
দোকান ভাড়া ৬০,০০০
কর্মচারীর বেতন ৩৬,০০০
বিদ্যুৎ বিল ১২,০০০
অন্যান্য খরচ ৮,০০০
.
ক. শিল্পের কাঁচামাল কোন পরিবেশ থেকে আসে?
খ. চলতি মূলধন বলতে কী বুঝায়? বর্ণনা কর।
গ. জনাব শাহেদের ব্যবসায়ে প্রাক্কলিত লাভ বের কর।
ঘ. বর্তমানে জনাব শাহেদের ব্যবসায়ের অবস্থা কি সন্তোষজনক? তোমার মতামত দাও।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. শিল্পের কাঁচামাল প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে আসে।
খ. ব্যবসায়ের দৈনন্দিন কার্যাবলি অথবা উৎপাদন কার্যাবলি পরিচালনা করার জন্য যে মূলধন প্রযোজন হয় তাকে চলতি মূলধন বলে। এরূপ মূলধনের সাহায্যে কোনো স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় বা অর্জন করা হয় না। তাই এই ধরনের মূলধনের মাধ্যমে যে উপযোগ সৃষ্টি হয় তা এক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। সাধারণত কাঁচামাল ক্রয়, কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল, জ্বালানি খরচ ইত্যাদি ব্যয় নির্বাহের জন্য চলতি মূলধন ব্যবহার করা হয়।
গ. জনাব শাহেদের ব্যবসায়ের প্রাক্কলিত লাভ বের করার জন্য প্রাক্কলিত আয়-ব্যয় বিবরণী প্রস্তুত করতে হবে। নিচে প্রাক্কলিত আয়-ব্যয় বিবরণী প্রস্তুতের মাধ্যমে জনাব শাহেদের ব্যবসায়ে প্রাক্কলিত লাভ নির্ণয় করা হলো :
জনাব শাহেদের
প্রাক্কলিত আয়-ব্যয় বিবরণী
(বাৎসরিক)
বিবরণ টাকা টাকা
প্রাক্কলিত আয় :
পণ্য বিক্রয়
৫,১৬,০০০
প্রাক্কলিত ব্যয় :
কাঁচামাল ক্রয়
শ্রমিকের মজুরি
দাকান ভাড়া
কর্মচারীর বেতন
বিদ্যুৎ বিল
অন্যান্য খরচ
১,৫০,০০০
৫০,০০০
৬০,০০০
৩৬,০০০
১২,০০০
৮,০০০
৩,১৬,০০০
প্রাক্কলিত লাভ ২,০০,০০০
অতএব, জনাব শাহেদের ব্যবসায়ে প্রাক্কলিত লাভ ২,০০,০০০ টাকা।
ঘ. আমার মতে বর্তমানে জনাব শাহেদের ব্যবসায়ের অবস্থা সন্তোষজনক।
ব্যবসায়ের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করলে সাফল্য অর্জন সহজতর হয় এবং ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা কমে আসে। অনেকে উৎসাহের সাথে ব্যবসায় শুরু করলেও সুষ্ঠু ব্যবসায় পরিকল্পনার অভাবে অনেক সময় সফল হতে পারেন না। উদ্দীপকে জনাব শাহেদের ব্যবসায়ের প্রাক্কলিত লাভের পরিমাণ হচ্ছে ২,০০,০০০ টাকা। তাছাড়া অগ্রিম দোকান ভাড়া দেওয়া আছে ১,০০,০০০ টাকা, আসবাবপত্র ও সাজসজ্জা বাবদ সম্পদ রয়েছে ১,০০,০০০ টাকা। তার ব্যবসায়ের স্থায়ী খরচের মধ্যে রয়েছে শ্রমিকের মজুরি ৫০,০০০ টাকা, দোকান ভাড়া ৬০,০০০ টাকা এবং কর্মচারীর বেতন ৩৬,০০০ টাকা। তাছাড়া চলতি ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ বিল ১২,০০০ টাকা এবং অন্যান্য খরচ ৮,০০০ টাকা। এসব তথ্যাদি পর্যালোচনা করলে সহজেই বোঝা যায় যে, জনাব শাহেদের ব্যবসায়ের বর্তমান অবস্থা খুবই সন্তোষজনক। তার ব্যবসায়ের প্রাক্কলিত আয়ের তুলনায় প্রাক্কলিত ব্যয় অনেক কম। তাছাড়া তার ব্যবসায়ের সম্পদের বিপরীতে মালিকের নিকট দায় ছাড়া অন্য কোনো বহির্দায় নেই যা তার ব্যবসায়ের জন্য ইতিবাচক।
সুতরাং বলা যায়, আর্থিক অবস্থা এবং ব্যবসায়ের অন্যান্য সকল বিষয় বিবেচনায় জনাব শাহেদের ব্যবসায়ের অবস্থা সন্তোষজনক।
প্রশ্ন-৩ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
চাষির ছেলে সাহেদ নদী ভাঙনে প্রায় নিঃস্ব। এমতাবস্থায় তার ব্যবসায়ী বন্ধু মাহফুজকে দেখে নিজের সঞ্চিত অর্থ এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে উপজেলা সদরে একটি তৈরি পোশাকের দোকান খোলেন। আনুমানিক লাভ হিসাব করে পণ্যের বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করেন এবং পরবর্তীতে তিনি সফলতা অর্জন করেন।
ক. কোনটি ব্যবসায় প্রকল্প প্রণয়নের শেষ ধাপ? ১
খ. ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের প্রতিচ্ছবি কী? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. জনাব সাহেদ ব্যবসায় স্থাপনে পরিবেশের কোন উপাদানকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন? ৩
ঘ. “সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত” ব্যবসায় সাফল্যের ভিত্তি উদ্দীপকের আলোকে মূল্যায়ন কর। ৪
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যবসায় প্রকল্প প্রণয়নের শেষ ধাপ হলো একটি সুন্দর প্রতিবেদন তৈরি করা।
খ. ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের প্রতিচ্ছবি হলো ব্যবসায় পরিকল্পনা। এটি একটি লিখিত দলিল যার মধ্যে ব্যবসায়ের লক্ষ্য, প্রকৃতি, ব্যবস্থাপনার ধারা, অর্থায়নের উপায়, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত উন্নয়নের সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়। কোন ব্যবসায় কোন দিকে অগ্রসর হবে ও কীভাবে ব্যবসায়ের সাফল্য অর্জন করা যাবে তার সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা ব্যবসায় পরিকল্পনায় পাওয়া যায়।
গ. জনাব সাহেদ ব্যবসায় স্থাপনে পরিবেশের অর্থনৈতিক উপাদানকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
দেশে বিরাজমান কার্যকর অর্থ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা, কৃষি ও শিল্পের অবদান, জনগণের সঞ্চয় ও বিনিয়োগ মানসিকতা, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ব্যবসায় পরিবেশের সুদৃঢ় অর্থনৈতিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। উদ্দীপকের সাহেদ তার ব্যবসায়ী বন্ধু মাহফুজকে দেখে ব্যবসায় স্থাপনে আগ্রহী হন। নিজের সঞ্চিত অর্থ এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে উপজেলা সদরে একটি তৈরি পোশাকের দোকান দেন। তিনি তার ব্যবসায় স্থাপনে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ, মূলধন, অর্থ ও ব্যাংকিং উপাদানের ওপর গুরুত্ব দেন। যা পরিবেশের অর্থনৈতিক উপাদানের অন্তর্ভুক্ত। তাই বলা যায়, ব্যবসায় স্থাপনের ক্ষেত্রে জনাব সাহেদ ব্যবসায় পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে পরিবেশের অর্থনৈতিক উপাদানকে অধিক গুরুত্ব দেন।
ঘ. সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে।
ব্যবসায় কোন দিকে স¤প্রসারণ করা উচিত হবে এবং কোন প্রকল্পটি অধিকতর লাভজনক হবে এবং ভবিষ্যতে কী পণ্য উদ্ভাবন করা উচিত ইত্যাদি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে ব্যবসায়ী তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না। উদ্দীপকের সাহেদ তার লক্ষ্যে পৌঁছতে বিভিন্ন রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আনুমানিক লাভ হিসাব করে পণ্যের সঠিক বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করেন। কাক্সিক্ষত মুনাফা অর্জনের আশায় বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি, মুনাফা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও মুনাফা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এভাবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় তিনি তার ব্যবসায়ে সফলতা অর্জন করেন।
সুতরাং উদ্দীপকের সাহেদের সাফল্যের কারণ বিশ্লেষণ করে বলা যায়- “সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত” ব্যবসায় সাফল্যের ভিত্তি।
প্রশ্ন-৪ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব মিলন একজন ব্যবসায় উদ্যোগের শিক্ষক। তিনি তার ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্যোক্তা হবার সক্ষমতা যাচাই করার জন্য আত্ম-বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন এবং উদ্যোক্তার গুণাবলি সম্পর্কিত ১৫টি প্রশ্ন সংবলিত একটি ফরম প্রদান করেন। ঐ ক্লাসের একজন ছাত্র জাফর ৯টি প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ এবং ৬টি প্রশ্নের উত্তর না প্রদান করে।
ক. প্রকল্পের বাণিজ্যিক দিক বিবেচনা করা হয় কোন পর্যায়ে? ১
খ. উদ্যোক্তা কীভাবে প্রকল্প নির্বাচন করে? ২
গ. উদ্দীপকের আলোকে জাফরের উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা বর্ণনা কর। ৩
ঘ. জনাব মিলনের উল্লিখিত বিষয়টির ব্যাখ্যা দাও। ৪
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রকল্পের বাণিজ্যিক দিক বিবেচনা করা হয় মাইক্রোস্ক্রিনিং পর্যায়ে।
খ. একজন সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তার প্রকল্প চিিহ্নতকরণ প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয় তার প্রকল্প ধারণা অনুভব করার সময় থেকেই। উদ্যোক্তা বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে কয়েকটি সম্ভাব্য ধারণা চিিহ্নত করে একটি তালিকা তৈরি করে। এ তালিকাবদ্ধ ধারণাগুলো বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে মূল্যায়ন করে একজন উদ্যোক্তা ব্যবসায় প্রকল্প নির্বাচন করে।
গ. জাফরের উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য তার আত্মবিশ্লেষণ প্রয়োজন যার মাধ্যমে তার ব্যবসায় সক্ষমতা যাচাই হয়ে যাবে।
আত্মবিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য একটি ফরমে একজন উদ্যোক্তার গুণাবলী সম্পর্কিত ১৫টি প্রশ্ন উল্লেখ করা হয়। উত্তরগুলি দুই ধরনের হয় হ্যাঁ বোধক এবং না বোধক। হ্যাঁ বোধক উত্তরের জন্য ১ নম্বর এবং না বোধক উত্তরের জন্য ০ নম্বর দেওয়া হয়। এভাবে প্রাপ্ত নম্বরের উপর বিবেচনা হয় ব্যক্তির ব্যবসায়ের সক্ষমতা। উদ্দীপকে উল্লেখ্য জাফরের দেয়া ১৫টি প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে ৯টি প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বোধক এবং ৬টি প্রশ্নের উত্তর না বোধক। অর্থাৎ ব্যবসায়ের সক্ষমতা যাচাইয়ে জাফরের স্কোর হলো ৯। সক্ষমতা যাচাইয়ে স্কোর যদি ৭-১১ এর মধ্যে হয় তাহলে বলা হয় উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা পরিপূর্ণ নয় কিন্তু এক্ষেত্রে চেষ্টা করলে উদ্যোগী হতে পারবে। তাই জাফরের স্কোর ৯ হওয়ায় সে চেষ্টা করলে সহজেই একজন উদ্যোক্তা হওয়ার যোগ্যতা রাখে।
ঘ. ব্যবসায়ে সফল হওয়ার জন্য যে কোনো ব্যক্তির ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে তার ব্যবসা করার সক্ষমতা আছে কিনা যাচাই করা প্রয়োজন। একটি ফরমে কিছু প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহের মাধ্যমে সক্ষমতা যাচাই করা যায় যা আত্মবিশ্লেষণ প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত। ব্যবসায়ের সাফল্য লাভ বা অকৃতকার্য হওয়ার ঝুঁকি আছে। ফলে ব্যবসায় শুরুর পূর্বে আত্ম-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সক্ষমতা যাচাই করে নিলে উদ্যোক্তার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবসায়ে অকৃতকার্য হওয়ার ঝুঁকিও হ্রাস পাবে। আত্ম-বিশ্লেষণের মাধ্যমে একজন নতুন উদ্যোক্তা অনুধাবন করতে পারবে তার মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার গুণাবলি আছে কি না। উদ্দীপকে জাফর তার নিজের সম্পর্কে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে একটি আত্ম-বিশ্লেষণমূলক ফরম পূরণ করেছে। সেখানে জাফরের স্কোর হয়েছে ৯। অর্থাৎ সে জানতে পেরেছে তার উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা এখনও পরিপূর্ণ নয়, কিন্তু চেষ্টা করলে সে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারবে।তাই জাফর আত্ম-বিশ্লেষণের মাধ্যমে বর্তমান অবস্থা জানতে পারায় সে ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় বিষয়সমূহ সহজেই গ্রহণ করতে পারবে। আর এভাবে তার দুর্বলতাসমূহ কাটিয়ে উঠতে পারলে সে ভবিষ্যতে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারবে।
পরিশেষে বলা যায়, জাফরের মতো উদ্যোক্তা হবার প্রত্যাশা লালনকারীদের জন্য আত্ম-বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক।
প্রশ্ন-৫ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রোকন এ বছর কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তিনি তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার জন্য তার কলেজের পাশে একটি লাইব্রেরী চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায়ের সাফল্যের বিষয়ে সে বেশ শঙ্কিত। তাই তিনি তার ব্যবসায়টিকে কোন দিকে অগ্রসর করবেন, কীভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করলে ব্যবসায়ের সাফল্য অর্জন করা যাবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা পেতে একটি ছক প্রণয়ন করলেন। ছক অনুসারে কাজ করে অবশেষে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেন। তিনি মনে করেন রাডার যেমন জাহাজ চালককে পথ নির্দেশনা দেয়, তেমনি ছকও তাকে ঠিক সেই ভাবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে।
ক. ব্যবসায় পরিকল্পনা কী? ১
খ. ‘ভালো পরিকল্পনা কাজের অর্ধেক সম্পন্ন করে।’-ব্যাখ্যা কর। ২
গ. রোকনের জীবনে সফলতার চাবিকাঠি কোনটি? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. রোকন উক্ত ছকের যে গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন তা নিজের মতো করে আলোচনা কর। ৪
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যবসায় পরিকল্পনা হলো ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের প্রতিচ্ছবি।
খ. পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যতে কী করতে হবে তার আগাম সিদ্ধান্ত গ্রহণ। পরিকল্পনায় ব্যবসায়ের লক্ষ্য, প্রকৃতি, ব্যবস্থাপনার ধারা, অর্থায়নের উপায়, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত উন্নয়নের সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়। একটি ব্যবসায় কোন দিকে অগ্রসর হবে ও কীভাবে ব্যবসায়ের সাফল্য অর্জন করা যাবে তার সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা ব্যবসায় পরিকল্পনা থেকে পাওয়া যায়। তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, একটি ভালো পরিকল্পনা কাজের অর্ধেক সম্পন্ন করে।
গ. রোকনের জীবনে সফলতার চাবিকাঠি হলো ব্যবসায় পরিকল্পনা, যা ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের প্রতিচ্ছবি ও নীল নকশা হিসেবে পরিচিত।
ব্যবসায়ের কতগুলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। সেই লক্ষ্যগুলোকে সফলভাবে অর্জন করতে হলে পরিকল্পনা যথাযথভাবে সম্পাদন করতে হয়। ব্যবসায় পরিকল্পনায় ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য, বর্তমান অবস্থান, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার রূপরেখা অর্থাৎ ব্যবসায়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়। আর একটি সঠিক পরিকল্পনা ব্যবসায়ীকে তার গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করে। উদ্দীপকে রোকন তার কলেজের পাশে লাইব্রেরি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই তিনি তার ব্যবসায়টিকে কোন দিকে অগ্রসর করবেন, কীভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করলে ব্যবসায়ের সাফল্য অর্জন করা যাবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা পেতে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করলেন। সেই পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করে তিনি সফল হন।
ঘ. রোকন উক্ত ছকের অর্থাৎ ব্যবসায় পরিকল্পনার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন।
ব্যবসায় পরিকল্পনায় ব্যবসায়ের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কখন, কী কাজ, কীভাবে এবং কত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে সে বিষয়ে দিক-নির্দেশনা থাকে। ফলে ব্যবসায় পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অন্যান্য কাজের দিক-নির্দেশনা প্রদান করে উদ্দেশ্যার্জনে সহায়তা করে থাকে। উদ্দীপকে ব্যবসায় পরিকল্পনা অর্থাৎ রোকনের ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে দিক-নির্দেশনা হিসেবে কাজ করেছে। ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য তিনি তার ব্যবসায়টিকে কোন দিকে অগ্রসর করবেন, কীভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করবেন সে বিষয়ে দিক-নির্দেশনা পেতে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে তিনি তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সকল দিক বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ করতে পেরেছেন। পরিকল্পনামাফিক কাজ করে তিনি ব্যবসায়ে সফলতা অর্জন করতে পেরেছেন। তাই তার কাছে ব্যবসায় শুরু, সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং এর অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যবসায় পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম।
সুতরাং বলা যায়, ব্যবসায় পরিকল্পনা রোকনের কাছে দিক-নির্দেশক দলিল হিসেবে কাজ করেছে।
প্রশ্ন-৬ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব সোহাগ একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি তার ব্যবসায়ের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি বিশেষ কার্য সম্পাদন করেন। যার ফলে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা অনেক সহজ হয়ে যায়। বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে টিকে থাকার জন্য তিনি ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করে ব্যবসায় স¤প্রসারণ করেছেন। ব্যবসায়ের যাবতীয় কার্যক্রম পূর্ব নির্ধারিত উপায়ে সম্পাদিত হওয়ায় ব্যবসায়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফলে দিন দিন তার ব্যবসায়ের সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক. পণ্যের ধারণা থেকে কীসের সূত্রপাত হয়? ১
খ. ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়নে তথ্যের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর। ২
গ. জনাব সোহাগ ব্যবসায়ের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে বিশেষ কার্যটি সম্পাদন করেছেন তা কী? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. জনাব সোহাগের প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায় পরিকল্পনা ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা মোকাবিলার কৌশল-এ বাক্যটির সাথে তুমি কি একমত? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও। ৪
৬নং প্রশ্নের উত্তর
ক. পণ্যের ধারণা থেকে প্রকল্পের সূত্রপাত হয়।
খ. ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়নে বিভিন্ন তথ্যের প্রয়োজন। এসব তথ্য উদ্যোক্তা বিভিন্ন উৎস যেমন : অর্থনৈতিক জরিপ, শিল্প জরিপ, আদমশুমারি রিপোর্ট, সরকারের পরিসংখ্যানগত বিভিন্ন রিপোর্ট, গবেষণা গ্রন্থ থেকে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকেন। সঠিক তথ্য সংগ্রহের ওপরই সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন নির্ভর করে।
গ. জনাব সোহাগ ব্যবসায়ের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে বিশেষ কার্যটি সম্পাদন করেছেন তা হলো ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন।
ব্যবসায় পরিকল্পনা হলো ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের প্রতিচ্ছবি। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ের লক্ষ্য, প্রকৃতি, ব্যবস্থাপনার ধারা, অর্থায়নের উপায়, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়। উদ্দীপকে জনাব সোহাগ ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনের জন্য কী কাজ করা হবে, কখন করা হবে, কীভাবে করা হবে, কার মাধ্যমে করা হবে ইত্যাদি বিষয়ে আগাম চিন্তা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ফলে তার পক্ষে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে ব্যবসায় পরিচালনা করা সহজ হয়েছে। আর ব্যবসায়ের যাবতীয় কার্যক্রম পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুসারে সম্পাদিত হওয়ায় ব্যবসায়ের সার্বিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে ছিল। যার ফলে দিনে দিনে ব্যবসায়ের উন্নতি হয়েছে এবং তার সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রিম চিন্তা-ভাবনা করে সেই অনুযায়ী কাজ করে সফলতা লাভ করার জন্য জনাব সোহাগের সম্পাদিত বিশেষ কার্যটি হলো পরিকল্পনা প্রণয়ন।
ঘ. ব্যবসায় পরিকল্পনা জনাব সোহাগের প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা মোকাবিলার কৌশল হিসেবে কাজ করেছে-এ বাক্যটির সাথে আমি একমত।
ব্যবসায় পরিকল্পনা হলো কোনো ব্যবসায়ীর ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের অগ্রিম চিন্তা-ভাবনা। যার মাধ্যমে ব্যবসায়ী তার ব্যবসায়ের সামগ্রিক কার্য পরিচালনা করে থাকে। ব্যবসায়ের কোন কাজ, কীভাবে এবং কত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে তা মূল্যায়নের জন্য ব্যবসায় পরিকল্পনা দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। উদ্দীপকে জনাব সোহাগ ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা গ্রহণ করায় কোন কাজ কখন, কীভাবে করা হবে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ হয়েছে। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় তিনি ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে জানতে পেরেছিলেন ব্যবসায় শুরু এবং পরিচালনা করার জন্য তার কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে এবং এই অর্থ সংগ্রহ করার জন্য তাকে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পূর্ব নির্ধারিত উপায়ে যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদিত হওয়ায় তিনি তার ব্যবসায়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন। ফলে ব্যবসায়ের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা রোধ করা সম্ভব হয়েছে এবং ব্যবসায়ের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, ব্যবসায় পরিকল্পনা ব্যবসায়ের সকল দিক বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ করে যা জনাব সোহাগের ব্যবসায়ে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে।
প্রশ্ন-৭ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব নজরুল নিজের ব্যবসায় সক্ষমতা যাচাইয়ের মাধ্যমে আকর্ষণীয় বাজার ও ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তার ভবিষ্যৎ চিন্তা-ভাবনা ব্যবসায় পরিচালনা সহজ করেছে এবং তিনি ব্যবসায়ে দিন দিন উন্নতি লাভ করেছেন।
ক. ব্যবসায়ীর দিক নির্দেশক দলিল কোনটি? ১
খ. বিপণন বলতে কী বোঝায়? ২
গ. মি. নজরুলের নিজের ব্যবসায় সক্ষমতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়াটি বর্ণনা কর। ৩
ঘ. মি. নজরুলের ব্যবসায়ের সাফল্যের নীলনকশাটি বিশ্লেষণ কর। ৪
৭নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যবসায়ীর দিক নির্দেশক দলিল হলো ব্যবসায় পরিকল্পনা।
খ. উৎপাদিত পণ্য উৎপাদনের স্থান থেকে ক্রেতার কাছে প্রেরণ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলিকে বিপণন বলে। একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নকালে পণ্যের বিপণনের নীতিমালা উল্লেখ করতে হয়। যার মধ্যে প্রস্তাবিত ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট ক্রেতা বা ভোক্তা, প্রতিযোগিতা, বাজার প্রভৃতির বিবরণ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এছাড়া বণ্টন সংক্রান্ত যেমন : এজেন্ট নিয়োগ, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা, নিজস্ব বিক্রয়কর্মী প্রভৃতি বিষয় পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত থাকে।
গ. জনাব নজরুল যেহেতু নিজের ব্যবসায় করার সক্ষমতা যাচাই করেছেন সেহেতু এ প্রক্রিয়াটি আত্মবিশ্লেষণ প্রক্রিয়া।
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে নিজের ব্যবসায় করার সক্ষমতা যাচাই করা হয় তাকে আত্মবিশ্লেষণ পদ্ধতি বলে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে কার মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট, কার মধ্যে এখনও পরিপূর্ণ সম্ভাবনা আসেনি আবার কার মধ্যে ইচ্ছাশক্তি তেমন তীব্র নয় তা নির্ণয় করা হয়। উদ্দীপকে জনাব নজরুল ইসলাম ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে তার ব্যবসায় করার সক্ষমতা আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য তিনি তার শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাসমূহ বিশ্লেষণ করেন। তিনি শারীরিকভাবে ব্যবসায় চালু করতে সক্ষম কিনা এবং ব্যবসায়ের ঝুঁকি গ্রহণ করার মতো মনোবল আছে কিনা, ব্যবসায়িক কার্য সম্পর্কে ধারণা আছে কিনা ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর পর্যালোচনা করেন। হ্যাঁ বোধক উত্তরের জন্য ১ নম্বর এবং না বোধক উত্তরের জন্য ০ নম্বর দেন। এরপর কত নম্বর হলো তা বের করেন। প্রাপ্ত নম্বর ১২ বা তার বেশি হলে উদ্যোক্তা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে এবং এর নিচে হলে সম্ভাবনা কম বলে ধরে নেন। এভাবেই তিনি তার সক্ষমতা যাচাই করেছেন।
ঘ. জনাব নজরুলের ব্যবসায়ের নীলনকশাটি হলো ব্যবসায় পরিকল্পনা।
একটি ব্যবসায় পরিচালনার জন্য যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাকে ব্যবসায় পরিকল্পনা বলে। ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন সব সমস্যার সমাধান এ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত থাকে। উদ্দীপকে জনাব নজরুল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। অর্থাৎ তিনি ব্যবসায়ের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কী কাজ, কখন, কীভাবে, কার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে ইত্যাদি বিষয়ে অগ্রিম চিন্তা করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যবসায় জগতে এরূপ অগ্রিম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা নীলনকশা প্রণয়ন হিসেবে বিবেচিত। এর মাধ্যমে তিনি পূর্ব থেকেই জানতে পারেন কীভাবে ব্যবসায়ে অর্থায়ন করতে হবে। এছাড়া বাজার ও প্রতিযোগী সম্পর্কে ধারণা এবং ব্যবসায়টি অধিকতর লাভজনক করার দিক-নির্দেশনা এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে। তাই ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় অনেক বেশি যতœবান হওয়া আবশ্যক। এ পরিকল্পনা উদ্যোক্তা নিজে কিংবা কোনো বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে তৈরি করতে পারেন। একটি সুষম ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হলে বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। কোনো অস্পষ্ট তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা উচিত নয়। ব্যবসায় পরিকল্পনার আকার সম্পর্কে কোনো ধরাবাধা নিয়েম নেই তবে যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত।
সুতরাং বলা যায়, জনাব নজরুলের ব্যবসায় পরিকল্পনাটি পরিকল্পিতভাবে সকল বিষয় বিবেচনা করে প্রণয়ন করেছেন এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন বলে ব্যবসায়ে সফলতা পেয়েছেন।
প্রশ্ন-৮ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
পড়াশোনা শেষ করে নাহিদ বাড়ির কাছের হাসপাতালের সামনে একটি ওষুধের দোকান দিলেন। দোকানটি তিনি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখেন এবং ক্রেতাদের প্রয়োজনকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেন। তাই অন্যান্য দোকানের চেয়ে এখানে ভিড় বেশি থাকে। তার চাচাতো ভাই আনোয়ার বিদেশ থেকে ফিরে নাহিদের সাফল্য দেখে তার দোকানের পাশে একটি জুয়েলারি শপ স্থাপন করেন। জাঁকজমকভাবে দোকানটি সজ্জিত করা হলেও ক্রেতার অভাবে আনোয়ারকে কিছু দিনের মধ্যে জুয়েলারি শপটি বন্ধ করে দিতে হয়।
ক. মূলধন বিনিয়োগের প্রস্তাবকে কী বলে? ১
খ. প্রকল্পের চলতি পুঁজি বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. নাহিদের ব্যবসায়ের সাফল্য লাভের কারণ কোনটি? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. আনোয়ার কোন কাজটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে না করায় তাকে ব্যবসায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে বলে তুমি মনে কর? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও। ৪
৮নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মূলধন বিনিয়োগের প্রস্তাবকে প্রকল্প বলে।
খ. প্রকল্পের চলতি পুঁজি বলতে একটি প্রকল্পে বা ব্যবসায়ে আবর্তন করে এমন সম্পদে বিনিয়োজিত অর্থকে বোঝায়। এরূপ পুঁজির পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুটি ধারণা বিদ্যমান মোট চলতি পুঁজি ও নিট চলতি পুঁজি। মোট চলতি পুঁজি দ্বারা সকল চলতি সম্পদকে বোঝায়। মোট চলতি পুঁজি থেকে মোট চলতি দায় বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাই নিট চলতি পুঁজি।
গ. নাহিদের ব্যবসায়ের সাফল্য লাভের অন্যতম কারণ হলো সঠিক প্রকল্প নির্বাচন করে পরিকল্পনামাফিক ব্যবসায় পরিচালিত করা।
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবসায় পরিচালনা করা হয়। ব্যবসায়ের মুনাফা অর্জন নিশ্চিত করতে উদ্যোক্তাকে উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত ব্যবসায় স্থাপন এবং পরিকল্পনামাফিক ব্যবসায় পরিচালনা করতে হয়। অর্থাৎ ব্যবসায়ের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে সঠিক প্রকল্প নির্বাচন এবং তা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ওপর। উদ্দীপকে নাহিদ হাসপাতালের সামনে ওষুধের দোকান স্থাপন করায় স্বাভাবিকভাবেই ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকে। কারণ হাসপাতালের রোগীদের ২৪ ঘণ্টাই ওষুধের প্রয়োজন পড়ে। নাহিদ তার দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখে বলে ক্রেতারা যে কোনো সময় ওষুধ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পেয়ে দোকানে ভিড় জমায়। ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে নাহিদের অধিক গ্রাহক থাকায় তার ব্যবসায়ের সফলতা অতি অল্প সময়ে নিশ্চিত হয়েছে। অর্থাৎ সঠিক স্থান ও সঠিক প্রকল্প নির্বাচন এবং তা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করায় নাহিদ তার ব্যবসায় সফল হয়েছেন।
ঘ. আনোয়ার প্রকল্প নির্বাচনের কাজটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে না করায় তাকে ব্যবসায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
ব্যবসায় পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই সফলতা অর্জন করা যায় না। সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপরই নির্ভর করে ব্যবসায় প্রকল্পের অস্তিত্ব। ব্যবসায়ের মুনাফা অর্জন নিশ্চিত করতে উদ্যোক্তাকে উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত ব্যবসায় স্থাপন করতে হয়। উদ্দীপকে জুয়েলারি শপটি প্রতিষ্ঠা করার সময় আনোয়ার প্রকল্প নির্বাচনকে গুরুত্ব প্রদান করেননি। তিনি তার জুয়েলারি শপটি কোনো অভিজাত এলাকায় স্থাপন না করে হাসপাতালের পাশে স্থাপন করেছেন। হাসপাতালের পাশে ওষুধের ব্যবসায় ভালো হলেও স্বর্ণের দোকানের ক্রেতা পাওয়া যায় না। কেননা হাসপাতালে রোগীরা যাবেন চিকিৎসার জন্য, গহনা ক্রয়ের জন্য নয়। আনোয়ার উপযুক্ত স্থানে ব্যবসায় স্থাপন না করায় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। তাই তিনি অনেক টাকা বিনিয়োগ করে জাঁকজমকভাবে দোকান সজ্জিত করলেও ক্রেতার অভাবে কিছু দিনের মধ্যেই জুয়েলারি শপটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।
সুতরাং বলা যায়, ক্রেতার অভাবে ক্রমাগত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আনোয়ার জুয়েলারি শপটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।
প্রশ্ন-৯ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
হীরন চন্দ্র দীর্ঘদিন বিদেশে কাটিয়ে দেশে ফিরলেন। এই দীর্ঘ সময়ে তার আর্থিক অবস্থায় বিরাট পরিবর্তন এলেও গ্রামের আর্থসামাজিক অবস্থার তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। গ্রামের কারো বাড়িতে টেলিভিশন না থাকায় তিনি গ্রামের বাজারে একটি টেলিভিশনের দোকান দিলেন। কিন্তু বছর যেতে না যেতেই তাকে আর্থিক ক্ষতির কারণে ব্যবসায় বন্ধ করে দিতে হলো।
ক. কোনটির বর্ণনায় টেকনিক্যাল শব্দ ব্যবহার না করাই ভালো? ১
খ. ব্যবসায় পরিকল্পনা বলতে কী বোঝায়? ২
গ. হীরন চন্দ্র ব্যবসায় স্থাপনে ম্যাক্রোস্ক্রিনিংয়ের কোন প্রভাবকটি যাচাই করেননি? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. ব্যবসায়ের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে হীরন চন্দ্রের করণীয় বিশ্লেষণ কর। ৪
৯নং প্রশ্নের উত্তর
ক. পণ্যের বর্ণনায় টেকনিক্যাল শব্দ ব্যবহার না করাই ভালো।
খ. ব্যবসায় পরিকল্পনা হলো ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের প্রতিচ্ছবি।
ব্যবসায় পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যবসায়ের লক্ষ্য, প্রস্তুতি, ব্যবস্থাপনার ধারণা, অর্থায়নের উপায়, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়। নতুন ব্যবসায় শুরু করা অথবা বর্তমান ব্যবসায় স¤প্রসারণ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবসায় পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়।
গ. হীরন চন্দ্র ব্যবসায় স্থাপনে ম্যাক্রোস্ক্রিনিং-এর অর্থনৈতিক পরিবেশ যাচাই করেননি।
ম্যাক্রোস্ক্রিনিং-এর প্রভাবকগুলো হলো জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আইনগত পরিবেশ। এই প্রভাবকগুলো বিশ্লেষণ করে প্রকল্প নির্বাচন করা হয়। এই প্রভাবকগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক পরিবেশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। উদ্দীপকে হীরন চন্দ্র দোকানের আশপাশে বসবাসকারী ভোক্তাদের আয়, সঞ্চয়, জীবনযাত্রার মান এবং পণ্যের চাহিদা যাচাই না করে গ্রামে টিভি বিক্রির দোকান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাদের গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। কিন্তু টিভি চালাতে বিদ্যুৎ প্রয়োজন। বিদ্যুতের বিকল্প খরচ অনেক বেশি। তাই বিদ্যুৎ না থাকায় গ্রামের লোকজন টেলিভিশন ক্রয়ে আগ্রহ দেখায়নি। ফলে হীরন চন্দ্রের পণ্যটির বাজার চাহিদা সৃষ্টি হয়নি। অর্থাৎ অর্থনৈতিক পরিবেশ যাচাই না করে ব্যবসায় স্থাপন করা হীরন চন্দ্রের উচিত হয়নি।
ঘ. ব্যবসায়ের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে হীরন চন্দ্রের করণীয় হলো ব্যবসায়ের স্থান পরিবর্তন করা অথবা পণ্য বা সেবার ধরন পরিবর্তন করা।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ-খাওয়াতে পারা উদ্যোক্তার অন্যতম গুণ। ব্যবসায়ের প্রয়োজনে উদ্যোক্তাকে ব্যবসায়ের গতিপথ পরিবর্তন করতে হয়। উদ্দীপকের চন্দ্র তার ব্যবসায়ের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দুইটি কাজ করতে পারেন। প্রথমত, ব্যবসায়ের স্থান পরিবর্তন। যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ আছে সেখানে ব্যবসায়টি স্থানান্তর করে তিনি পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, পণ্য বা সেবার ধরন পরিবর্তন করতে পারেন। তিনি টেলিভিশন ব্যবসায় বন্ধ করে ঐ এলাকায় যে সকল পণ্য বা সেবার চাহিদা আছে যে সকল পণ্য বা সেবার ব্যবসায় স্থাপন করতে পারেন। তাহলে বাজার চাহিদা সৃষ্টি হবে এবং ব্যবসায়ের উন্নতি নিশ্চিত হবে।
সুতরাং বলা যায়, ব্যবসায়ের অবস্থান অথবা পণ্য বা সেবার ধরন পরিবর্তন করে হীরন চন্দ্র বর্তমান প্রতিক‚ল অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে পারেন।
প্রশ্ন-১০ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব মিজান গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২০% সুদে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে নিজ গ্রামে একটি মুদি দোকান স্থাপন করেন। পরিচিতি লাভের জন্য তিনি কম মুনাফায় পণ্যসামগ্রী বিক্রি করায় তার দোকানের ক্রেতার সংখ্যা দ্রæত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বছর শেষে নিট লাভের পরিমাণ ৪০,০০০ টাকা দেখে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেন না।
ক. গাইডলাইন কী? ১
খ. জনসংখ্যাকে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক বলা হয় কেন? ২
গ. জনাব মিজানের ব্যবসায়ে মাইক্রোস্ক্রিনিং-এর কোন দিকটি যাচাই করা অধিক দরকার ছিল? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. জনাব মিজানের সন্তুষ্ট না হতে পারার কারণ বিশ্লেষণ কর। ৪
১০নং প্রশ্নের উত্তর
ক. গাইডলাইন হলো কিছু বিশেষ নিয়মকানুন যেগুলো অনুসরণ করে ব্যবসায় পরিচালিত হয়।
খ. একটি ব্যবসায়ের অস্তিত্ব, প্রকৃতি ও অগ্রগতি যে এলাকায় ব্যবসায়টি অবস্থিত সে এলাকার জনগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করে বলে জনসংখ্যাকে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক বলা হয়। জনসংখ্যা ব্যবসায়ের প্রতিটি ধাপে জড়িত। ম্যাক্রোস্ক্রিনিং পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হলো জনসংখ্যা। কারণ ব্যবসায় কর্তৃক প্রস্তুতকৃত পণ্য বা সেবা সামগ্রীর বাজারের আকার বর্তমান জনসংখ্যা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ও জন্ম-মৃত্যু দ্বারা প্রভাবিত হয়।
গ. জনাব মিজানের ব্যবসায়ে মাইক্রোস্ক্রিনিং-এর আর্থিক দিকটি যাচাই করা দরকার ছিল।
মাইক্রোস্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে বাজার চাহিদা, কারিগরি, বাণিজ্যিক ও আর্থিক দিক এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান ইত্যাদি দিক বিবেচনা করে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় নিরূপণ, অর্থায়নের ওপর মূলধন বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত সম্ভাব্য লাভ ইত্যাদি দিক যাচাই করা মাইক্রোস্ক্রিনিং-এর আর্থিক উপাদানের অন্তর্গত। উদ্দীপকের জনাব মিজান অর্থায়নের উপায় বিশ্লেষণ করলে কম খরচে অর্থায়ন করতে পারতেন। আর্থিক দিক বিবেচনা না করে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের নিকট থেকে অধিক সুদে ঋণ গ্রহণ করলেন। তাছাড়া তিনি মূলধন বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত সম্ভাব্য লাভ যাচাই না করেই পণ্য বিক্রয় করায় প্রত্যাশিত লাভ অর্জিত হয়নি। অর্থাৎ প্রকল্পের আর্থিক দিক সঠিকভাবে বিবেচনা করলে জনাব মিজান তার মুদি দোকান থেকে লাভবান হতে পারবেন।
ঘ. জনাব মিজান কাক্সিক্ষত মুনাফা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না।
ব্যবসায়ের মূল লক্ষ্য হলো মুনাফা অর্জন করা। মুনাফা অর্জিত হলে ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা সন্তুষ্ট হন। আর মুনাফা অর্জন করতে ব্যর্থ হলে অসন্তুষ্ট হন। উদ্দীপকে জনাব মিজান তার মুদি দোকান প্রকল্প থেকে প্রত্যাশিত মূলধন অর্জন করতে ব্যর্থ হন। সারা বছরে মোট তিনি ৪০ হাজার টাকা লাভ করেছেন। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের নিকট থেকে ২০% সুদে ২ লক্ষ ঋণ গ্রহণ করায় প্রতিবছর তাকে ৪০ হাজার টাকা সুদ প্রদান করতে হবে। প্রকল্প থেকে যে লাভ হয়েছে তা সুদের টাকা পরিশোধ করলেই শেষ হয়ে যাবে। মূলধন সংগ্রহের ব্যয় অধিক এবং প্রকল্পের আর্থিক দিক এর উপাদান সম্ভাব্য লাভ নিরূপণে ব্যর্থ হওয়াতে মিজান প্রকৃতপক্ষে লাভের মুখ দেখতে পাননি। তাছাড়া ব্যাংকের সুদে ঝুঁকির পরিমাণও বেশি রয়েছে।
তাই বলা যায়, মিজান বাণিজ্যিকভাবে লাভবান না হওয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না।
প্রশ্ন-১১ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
স্বল্প শিক্ষিত সজিব একটি নার্সারির মালিক। নার্সারি ব্যবসার মাধ্যমে তিনি স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন। কিন্তু গত আইলায় তার ব্যবসায়ে বেশ ক্ষতিসাধন হয়। এতে তার ব্যবসায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু স্থানীয় জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পূর্ণোদ্যমে আবার ব্যবসায় শুরু করেন এবং সফলতা অর্জন করেন।
ক. প্রকল্প কী? ১
খ. কীসের ওপর প্রকল্পের বাস্তবায়ন নির্ভর করে? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. সজিবের ব্যবসায়টি কোন পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. সজিবের ব্যবসায়ে সফলতার পেছনের মূল কারণ বিশ্লেষণ কর। ৪
১১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. পণ্য উৎপাদন বা সেবা প্রধানের উদ্দেশ্যে মূলধন বিনিয়োগের প্রস্তাবই হলো প্রকল্প।
খ. সঠিক পণ্য নির্বাচনের ওপরই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করে।
চাহিদা আছে এবং ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবে এমন পণ্য বা সেবাসামগ্রী চিিহ্নত করে একটি বাস্তবসম্মত প্রকল্প প্রণয়ন করতে পারলে ব্যবসায়ের সাফল্য অনেকটা নিশ্চিত হয়। এ কাজে দুর্বলতা থাকলে সাফল্য অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এবং সীমিত হয়ে যায়। তাই ব্যবসায়ের সাফল্যের পূর্বশর্ত হলো সার্থক পণ্য নির্বাচন এবং একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
গ. সজিবের ব্যবসায়টি ম্যাক্রোস্ক্রিনিং-এর অন্যতম উপাদান প্রাকৃতিক পরিবেশ দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে।
সঠিক ব্যবসায় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশে একটি বিরাট ভ‚মিকা পালন করে। তাই প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশের যথার্থতা যাচাই করা প্রয়োজন। প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যবসায়ের অনুক‚লে থাকলে তা সফলতা লাভের সম্ভাবনা বাড়ায় আর প্রতিক‚লে থাকলে প্রকল্পের সাফল্য লাভ দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। উদ্দীপকে সজিবের ব্যবসায়টি হলো নার্সারি ব্যবসায় যা প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। কারণ নার্সারির জন্য উঁচু, উর্বর ভ‚মি, পর্যাপ্ত সূর্যের আলো, বাতাস ও পানিসহ খোলামেলা জায়গা প্রয়োজন। সজিব নার্সারির জন্য অনুক‚ল প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্ধারণ করতে পেরেছেন বিধায় তিনি এ ব্যবসায়ের সফলতা লাভ করেন। যদিও আকস্মিক আইলায় তার ব্যবসায়ের বেশ ক্ষতিসাধন হয় এবং বন্ধের উপক্রম হয়। তথাপিও তিনি জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পূর্ণোদ্যমে ব্যবসায় করে সফলতা লাভ করেন।
ঘ. সঠিক প্রকল্প নির্বাচনই সজিবের ব্যবসায় সফলতার মূল কারণ।
ব্যবসায়ের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে ব্যবসায় বা উৎপাদনের জন্য যথার্থ পণ্য বা সেবা প্রদানের সামগ্রী নির্বাচনের ওপর। তাই ব্যবসায়ের সাফল্যের পূর্বশর্ত হলো সঠিক পণ্য বা সেবা চিিহ্নতকরণ এবং সুষ্ঠু প্রকল্প প্রণয়ন। উদ্দীপকে সজিব প্রকল্প হিসেবে নার্সারি ব্যবসায়কে নির্বাচন করেছেন। আর তার প্রকল্প নির্বাচন সঠিক ছিল বিধায় তিনি এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠতে পেরেছিলেন। কিন্তু গত আইলায় তার ব্যবসায়ের বেশ ক্ষতিসাধন হয়। এতে তার ব্যবসায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু তিনি জানেন আকস্মিক বাধা বা আইলার ভয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে লাভ হবে না; বরং নার্সারি ব্যবসায় পুনরায় শুরু করতে পারলে ক্ষতি পুষিয়েও লাভ অর্জন সম্ভব। তাই তিনি জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পুনরায় তার ব্যবসায়টি শুরু করেন। বর্তমানে নার্সারির চারার বেশ চাহিদা আছে। তাছাড়া ভবিষ্যতে এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়া হ্রাস পাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। এরূপ একটি বাস্তবসম্মত প্রকল্প নির্বাচন করার কারণেই সজিব তার ক্ষতি পুষিয়ে লাভ করতে অর্থাৎ সফলতা অর্জন করতে পারেন।
সুতরাং বলা যায়, সঠিক প্রকল্প নির্বাচনই সজিবের সফলতার মূল কারণ।
প্রশ্ন-১২ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব তৌফিক একজন আসবাবপত্র ব্যবসায়ী। ২০১৫ সালে তার ব্যবসায়ের প্রাক্কলিত আর্থিক বিবরণী নিম্নরূপ :
বিবরণ টাকা
দোকান ভাড়া (অগ্রিম) ১,০০,০০০
কাঠ ক্রয় ২,১০,০০০
বার্নিশ, লোহা, পেরেক ক্রয় ৪০,০০০
শিরিষ কাগজ ক্রয় ১০,০০০
বিদ্যুৎ খরচ ২২,০০০
কর্মচারীর বেতন ১,২০,০০০
দোকান ভাড়া ২০,০০০
খাট বিক্রয় ২,৪০,০০০
টেবিল বিক্রয় ২,১০,০০০
চেয়ার, সোফা বিক্রয় ২,৫০,০০০
ক. সামাজিক মূল্যবোধ কোন পরিবেশের উপাদান? ১
খ. ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা জানার মাধ্যমটি ব্যাখ্যা কর। ২
গ. ২০১৫ সালে জনাব তৌফিকের প্রাক্কলিত লাভ নির্ণয় কর। ৩
ঘ. বর্তমানে জনাব তৌফিকের ব্যবসায়ের অবস্থা কি সন্তোষজনক? তোমার মতামত দাও। ৪
১২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সামাজিক মূল্যবোধ সাংস্কৃতিক পরিবেশের উপাদান।
খ. ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা জানার মাধ্যমটি হলো আর্থিক অবস্থার বিবরণী। এটি এরূপ একটি বিবরণী যেখানে একটি নির্দিষ্ট তারিখের কোনো ব্যবসায়ের দায়-দেনা, মূলধন ও সম্পত্তি লিপিবদ্ধ করা হয়। অর্থাৎ এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট দিনের একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সার্বিক আর্থিক চিত্র তুলে ধরা হয়।
গ. তৌফিকের প্রাক্কলিত লাভ নির্ণয় করার জন্য প্রাক্কলিত আয় ব্যয় বিবরণী প্রস্তুত করা প্রয়োজন। নিচে প্রাক্কলিত আয়-ব্যয় বিবরণী প্রস্তুত করার মাধ্যমে জনাব তৌফিকের প্রাক্কলিত লাভ নির্ণয় করা হলো :
জনাব তৌফিক
প্রাক্কলিত আয়-ব্যয় বিবরণী
বিবরণ টাকা টাকা
প্রাক্কলিত আয় :
খাট বিক্রয়
টেবিল বিক্রয়
চেয়ার, সোফা বিক্রয়
মোট প্রাক্কলিত আয়
২,৪০,০০০
২,১০,০০০
২,৫০,০০০
৭,০০,০০০
প্রাক্কলিত ব্যয় :
কাঠ ক্রয়
বার্নিশ, লোহা, পেরেক ক্রয়
শিরীষ কাগজ ক্রয়
বিদ্যুৎ খরচ
কর্মচারীর বেতন
দোকান ভাড়া
মোট প্রাক্কলিত ব্যয়
প্রাক্কলিত লাভ (বাৎসরিক)
২,১০,০০০
৪০,০০০
১০,০০০
২২,০০০
১,২০,০০০
২০,০০০
৪,২২,০০০
২,৭৮,০০০
অতএব, ২০১৫ সালে জনাব তৌফিকের প্রাক্কলিত লাভ ২,৭৮,০০০ টাকা।
ঘ. বর্তমানে জনাব তৌফিকের ব্যবসার অবস্থা সন্তোষজক বলা চলে। কারণ তার প্রকল্পের প্রাক্কলিত আয় থেকে প্রাক্কলিত ব্যয়ের পরিমাণ কম হয়েছে। তাছাড়া তিনি পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করেছেন। পরিকল্পনা অনুসরণ করে কাজ করেছেন বলে তিনি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে পেরেছেন। এছাড়াও তিনি প্রকল্পের স্থায়ী মূলধন ও চলতি মূলধন একত্রে করে প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ণয় করেছেন। প্রকল্পের অর্থায়ন ও প্রকল্পের মোট ব্যয় সমান হতে হবে। প্রাক্কলিত লাভ নির্ণয় করে ব্যবসায়ের অবস্থা সহজেই তুলে ধরা যায়। জনাব তৌফিক প্রকল্প পরিকল্পনা প্রণয়নে অনুক‚ল ও প্রতিক‚ল তথ্য সঠিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন। ফলে তিনি একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নে সক্ষম হয়েছে। উক্ত পরিকল্পনা যথাযথভাবে অনুসরণ করায় তিনি ব্যবসায়ে মুনাফা অর্জন করতে পেরেছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজের জীবনকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, তেমনি দেশকেও শক্ত অর্থনীতির ওপর দাঁড় করানোর জন্য ভ‚মিকা রাখছেন। জনাব তৌফিক সঠিক প্রকল্প নির্বাচন, কঠোর পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন বলে তিনি সফলতা অর্জন করতে পেরেছেন।
সুতরাং বলা যায়, জনাব তৌফিকের ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা সন্তোষজনক।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ ব্যবসায়ের প্রধান উদ্দেশ্য কী?
উত্তর : ব্যবসায়ের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন।
প্রশ্ন \ ২ \ ব্যবসায় পরিকল্পনা কোন ধরনের দলিল?
উত্তর : ব্যবসায় পরিকল্পনা একটি লিখিত দলিল।
প্রশ্ন \ ৩ \ দালান নির্মাণের নীল নকশার সাথে তুলনা করা হয় কোনটিকে?
উত্তর : পরিকল্পনাকে দালান নির্মাণের নীল নকশার সাথে তুলনা করা হয়।
প্রশ্ন \ ৪ \ ব্যবসায় প্রকল্প প্রণয়নের প্রথম পদক্ষেপ কোনটি?
উত্তর : ব্যবসায় প্রকল্প প্রণয়নের প্রথম পদক্ষেপ হলো ধারণা চিহ্নিতকরণ।
প্রশ্ন \ ৫ \ জনসংখ্যা কোন পরিবেশের উপাদান?
উত্তর : জনসংখ্যা ম্যাক্রো পরিবেশের উপাদান।
প্রশ্ন \ ৬ \ ম্যাক্রোস্ক্রিনিং কী?
উত্তর : ম্যাক্রোস্ক্রিনিং হলো এমন একটি পদ্ধতি যা কতগুলো প্রভাবক বা উপাদানের ভিত্তিতে ব্যবসায়ের ধারণাগুলো মূল্যায়ন করে একটি প্রকল্প ধারণা নির্বাচন করতে সহায়তা করে।
প্রশ্ন \ ৭ \ ভোক্তার আয় কোন পরিবেশের উপাদান?
উত্তর : ভোক্তার আয় অর্থনৈতিক পরিবেশের উপাদান।
প্রশ্ন \ ৮ \ শিক্ষার হার কোন পরিবেশের উপাদান?
উত্তর : শিক্ষার হার সাংস্কৃতিক পরিবেশের উপাদান।
প্রশ্ন \ ৯ \ রাজনীতিবিদদের আচরণ কোন পরিবেশের উপাদান?
উত্তর : রাজনীতিবিদদের আচরণ রাজনৈতিক পরিবেশের উপাদান।
প্রশ্ন \ ১০ \ মাইক্রোস্ক্রিনিং কী?
উত্তর : মাইক্রোস্ক্রিনিং হলো বাজার চাহিদা, কারিগরি, বাণিজ্যিক ও আর্থিক দিক এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান ইত্যাদি দিক বিবেচনা করে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করার বিস্তারিত প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন \ ১১ \ জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান যাচাই করার মাপকাঠি কী?
উত্তর : জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান যাচাই করার মাপকাঠি হলো কর্মসংস্থানের সুযোগ, জাতীয় কোষাগারে কর প্রদানের পরিমাণ ইত্যাদি।
প্রশ্ন \ ১২ \ বিনিয়োগের জন্য কোন প্রকল্পটি নির্ধারণ করা হয়?
উত্তর : বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ও লাভজনক প্রকল্পটি নির্ধারণ করা হয়।
প্রশ্ন \ ১৩ \ প্রাক্কলিত আয় কী?
উত্তর : বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে যে আয় হয় তাকে প্রাক্কলিত আয় বলে।
প্রশ্ন \ ১৪ \ সম আয়-ব্যয় কী?
উত্তর : যে পরিমাণ পণ্য বিক্রয় করলে মোট বিক্রয়মূল্য মোট ব্যয়ের সম পরিমাণ হয় তাকে সম আয়-ব্যয় বলে।
প্রশ্ন \ ১৫ \ চিহ্নিত ধারণা মূল্যায়নের পদ্ধতি কয়টি?
উত্তর : চিহ্নিত ধারণা মূল্যায়নের পদ্ধতি দুইটি।
প্রশ্ন \ ১৬ \ পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণে কোনটি সহায়তা করে?
উত্তর : পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণে সম আয়-ব্যয় বিন্দু সহায়তা করে।
প্রশ্ন \ ১৭ \ আত্মবিশ্লেষণ কী?
উত্তর : আত্মবিশ্লেষণ হলো নিজের সক্ষমতা যাচাই।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন \ ১ \ বাজার চাহিদার ধারণা দাও।
উত্তর : একটি পরিকল্পিত পণ্যের যে সম্ভাব্য চাহিদা সেটিই বাজার চাহিদা। অর্থাৎ পণ্যটির জন্য বাজারে সম্ভাব্য কী পরিমাণ ক্রেতা সৃষ্টি হতে পারে সেটিই বাজার চাহিদা। বাজার জরিপ ও গবেষণার মাধ্যমে বাজার চাহিদা নিরূপণ করা যায়। বাজার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া স্থির করা হয়।
প্রশ্ন \ ২ \ পণ্য ধারণা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : একজন উদ্যোক্তা তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে কোনো পণ্য বা সেবা চাহিদা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন। এই চাহিদার ওপর নির্ভর করে তিনি প্রকল্প নির্বাচন করেন। অর্থাৎ একজন উদ্যোক্তা যে ধারণা থেকে নতুন সরবরাহের উদ্দেশ্যে ব্যবসায় প্রকল্প গ্রহণ করেন সেটিই পণ্য ধারণা। এই পণ্য ধারণা ব্যবসায়িক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন \ ৩ \ ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রয়োজন কেন?
উত্তর : ব্যবসায়ের প্রধান লক্ষ্য মুনাফা অর্জন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করলে সাফল্য সহজতর হয় এবং ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা কমে আসে। নতুন ব্যবসায় শুরু করা অথবা ব্যবসায় স¤প্রসারণের ক্ষেত্রে ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রয়োজন। মূলত ব্যবসায়ের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে পরিকল্পনা জড়িত থাকে।
প্রশ্ন \ ৪ \ বাণিজ্যিক লাভজনকতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : একটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচের উপাদান, বিক্রয়মূল্য, আনুমানিক লাভ ইত্যাদি বিবেচনা করে যে লাভজনকতা যাচাই করা হয় তাই বাণিজ্যিক লাভজনকতা। অর্থাৎ প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে সুবিধা প্রদান করবে কিনা তা যাচাই করাই হলো বাণিজ্যিক লাভজনকতা। প্রকল্পের বাণিজ্যিক লাভজনকতা না থাকলে সেটি গ্রহণ করা হয় না।
প্রশ্ন \ ৫ \ প্রকল্প প্রতিবেদন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : প্রতিবেদন বলতে রিপোর্ট বা বিবরণী পেশ করাকে বোঝায়। ব্যবসায় প্রকল্প প্রণয়নের শেষ ধাপ হলো একটি সুন্দর প্রতিবেদন তৈরি করা। নির্বাচিত প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের তথ্য থেকে শুরু করে সকল বিষয় লিখিতভাবে উপস্থাপন করাই হলো প্রকল্প প্রতিবেদন। প্রকল্প প্রতিবেদন থেকে প্রকল্প সম্পর্কিত আর্থিক ও অনার্থিক বিষয় জানা যায়।
প্রশ্ন \ ৬ \ জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক পরিবেশ কীভাবে ব্যবসায় কার্যাবলিকে প্রভাবিত করে?
উত্তর : একটি ব্যবসায়ের অস্তিত্ব, প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতি যে এলাকায় ব্যবসায়টি অবস্থিত সে এলাকার জনগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করে। ব্যবসায় কর্তৃক প্রস্তুতকৃত পণ্য বা সেবা সামগ্রী বাজারের আকার, বর্তমান জনসংখ্যা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ও জন্ম-মৃত্যু দ্বারা প্রভাবিত হয়। পণ্য বা সেবার চাহিদা ব্যবসায়টির চারদিকে বসবাসকারী ভোক্তাদের আয়, সঞ্চয়, খরচ করার প্রবণতা, জীবনযাত্রার মান ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত। প্রকল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এগুলোর প্রভাব যথাযথভাবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
প্রশ্ন \ ৭ \ প্রকল্পের কারিগরি দিক যাচাইয়ে কোন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে?
উত্তর : প্রকল্পের কারিগরি দিক যাচাই মাইক্রোস্ক্রিনিং-এর অন্যতম উপাদান। প্রকল্পের কারিগরি দিক যাচাই করা হয় প্রযুক্তিগত ও যান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে। এ ধরনের কাজের মধ্যে রয়েছে উৎপাদন প্রক্রিয়া, প্রযুক্তি নির্ধারণ, যন্ত্রপাতি নির্বাচন, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের প্রাপ্যতা, দক্ষ শ্রমিকের সহজলভ্যতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে সহজসাধ্যতা প্রভৃতি পরীক্ষা করা।
প্রশ্ন \ ৮ \ বাজার জরিপ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : বাজার জরিপ বলতে ভোক্তার বা গ্রাহকের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে পণ্যের চাহিদা এবং তার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাইকে বোঝায়। মূলত সঠিক পণ্য নির্বাচনের জন্য বাজার জরিপ করা হয়। এর মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে পণ্যের চাহিদা আছে কিনা, বাজারের আকার কী ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য জানা যায়।
প্রশ্ন \ ৯ \ আত্মবিশ্লেষণ পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : যে পদ্ধতিতে একজন উদ্যোক্তা নিজেকে যাচাই করেন তাকে আত্মবিশ্লেষণ পদ্ধতি বলে। যেকোনো ব্যক্তির ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে তার ব্যবসায় করার সক্ষমতা আছে কিনা তা যাচাই করা প্রয়োজন। এর প্রধান কারণ হলো ব্যবসায়ে সাফল্য লাভ বা অকৃতকার্য হওয়ার ঝুঁকি আছে। উদ্যোক্তা নিজেকে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে তার উদ্যোগ গ্রহণের কতটা সক্ষম আছে তা যাচাই করতে পারেন। নিজেকে বিশ্লেষণের এই পদ্ধতির নাম আত্মবিশ্লেষণ পদ্ধতি।
প্রশ্ন \ ১০ \ অস্পষ্ট তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন করা উচিত নয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বাস্তবসম্মত তথ্যের ভিত্তিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। তাই পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় সঠিক তথ্য লিপিবদ্ধ করতে হয়। কারণ, তথ্য যদি অস্পষ্ট হয়, তাহলে পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় স্পষ্ট তথ্য লিখতে হবে। যাতে কর্মীরা তা সহজে অনুসরণ করে কাজে সফলতা আনয়ন করতে পারে।
প্রশ্ন \ ১১ \ পণ্য নির্বাচন ও প্রকল্প নির্বাচনের মধ্যে দুইটি পার্থক্য লেখ।
উত্তর : পণ্য নির্বাচন ও প্রকল্প নির্বাচনের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। নিচে পণ্য ও প্রকল্প নির্বাচনের মধ্যকার দুটি পার্থক্য দেয়া হলো :
১. বাজার জরিপের মাধ্যমে পণ্য নির্বাচন করা হয়। অপরদিকে, সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে মাইক্রোস্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে প্রকল্প নির্বাচন করা হয়।
২. পণ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাজার জরিপ সাধারণত ভোক্তার বা গ্রাহকের পণ্যের চাহিদার ওপর করা হয়। পক্ষান্তরে, প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা সম্ভাব্য প্রকল্পের একটি তালিকা প্রস্তুত করে তা থেকে নির্বাচন করেন।