নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ অষ্টম অধ্যায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

অষ্টম অধ্যায়
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা

ব্যবস্থাপনার ধারণা : ব্যবস্থাপনা হচ্ছে অন্য লোকদের সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে কোনো কাজ করিয়ে নেওয়ার দক্ষতা ও কৌশল। আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক বলে পরিচিত হেনরি ফেওল (ঐবহৎর ঋধুড়ষ)-এর মতে, “ব্যবস্থাপনা হলো পূর্বানুমান ও পরিকল্পনা, সংগঠিতকরণ, নির্দেশনা, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণের সমষ্টি।”
 ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি : পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পাদিত কার্যাবলিকে ব্যবস্থাপনা বলা হয়। প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার মানবিক ও অন্যান্য উপাদানকে দক্ষতার সাথে পরিচালনার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপনার আওতায় অনেকগুলো কাজ করতে হয়। ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি হলোÑ পরিকল্পনা প্রণয়ন, সংগঠিতকরণ, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনাদান, প্রেষণাদান, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণ।
 পরিকল্পনার ধারণা : কোনো কাজ শুরু করার পূর্বে সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা বা আগাম সিদ্ধান্তই হলো পরিকল্পনা। আরো পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, কোনো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কী কাজ করতে হবে, কীভাবে করতে হবে, কখন করতে হবে, কোথায় করতে হবে, কত সময়ে কাজ শেষ হবে, এ সম্পর্কে অগ্রিম সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে পরিকল্পনা বলে। সঠিক পরিকল্পনা উদ্দেশ্য অর্জনকে সহজ করে।
 সংগঠিতকরণের ধারণা ও গুরুত্ব : পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবসায়ের মানবিক ও বস্তুগত সকল প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং সম্পদ সংগ্রহ ও সমন্বিত করে সেগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্য কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা বণ্টন সংক্রান্ত কাজকে বলা হয় সংগঠন। সংগঠিতকরণের ফলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজতর হয়। প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা সহজ হয়। নিজেদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক সুদৃঢ় হওয়ার কারণে কাজের গতি বৃদ্ধি পায়।
 নেতৃত্বের ধারণা : ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব বলতে উদ্দেশ্য অর্জনকে সামনে রেখে কাজ সম্পাদনে কর্মীদের উৎসাহিত করার গুণ ও কৌশলকে বোঝায়। যিনি নেতৃত্ব দেন তাকে নেতা বলা হয়। অন্যকে দিয়ে কাজ করানো একটি কষ্টসাধ্য বিষয়। তাই এমন কৌশল অবলম্বন করতে হয় যাতে করে অধীনস্তরা কথা শোনে। যে কৌশল অবলম্বন করে নির্বাহী কর্মীদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেন তাকে নেতৃত্ব বলে।
 নেতৃত্বের প্রকারভেদ :
 গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব
 স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব
 মুক্ত নেতৃত্ব
 আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্ব
 আদর্শ নেতার গুণাবলি : যিনি নেতৃত্ব দেন তাকে নেতা বলা হয়। নেতার কাজ হচ্ছে উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উৎসাহিত ও পরিচালনা করা। নেতৃত্বদানের কঠিন দায়িত্বশীল কাজটি সম্পাদনের জন্য একজন নেতার অনেকগুলো গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। একজন আদর্শ নেতার দৈহিক সামর্থ্য ও সুস্থতা, প্রখর ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা, সাহস ও সততা, পরিশ্রম ও সহনশীলতা, দায়িত্বশীলতা ও সহযোগিতা, সাংগঠনিক দক্ষতা, মানবিক সম্পর্ক অনুধাবন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, জেন্ডার সচেতনতা প্রভৃতি গুণাবলি থাকা প্রয়োজন।
 ব্যবসায়ে অর্থায়নের ধারণা : সাধারণ অর্থে, ব্যবসায়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করাকে অর্থায়ন বলে। কিন্তু ব্যাপক অর্থে, ব্যবসায়ের আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ, অর্থ সংরক্ষণ, সংগৃহীত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার সংক্রান্ত সকল কার্যাবলিকে ব্যবসায় অর্থায়ন বলা হয়।
 অর্থায়নের উৎস : যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ বা মূলধনের প্রয়োজন। এ অর্থ প্রয়োজন হয় ব্যবসায়ে শুরু করার জন্য, ব্যবসায় কার্যক্রম সচল রাখার জন্য এবং ব্যবসায় স¤প্রসারণের জন্য। ব্যবসায়ের এ মূলধন বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করার সুযোগ রয়েছে। অর্থায়নের উৎসগুলোর মধ্যে নিজস্ব তহবিল, আত্মীয়স্বজন, বাণিজ্যিক ব্যাংক, সমবায় ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিঃ, ব্যাংক অব স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমার্স লিঃ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উল্লেখযোগ্য।

অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
“হাসি-খুশী নকশী ঘর” জামালপুরের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এর স্বত্বাধিকারী জনাব মাহিন অনেক ভেবেচিন্তে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেন। প্রয়োজনে কর্মীদের পরামর্শ দেন। দীর্ঘমেয়াদে সফলতা বজায় রাখার নিমিত্তে নকশিকাঁথা ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরির জন্য দক্ষ কারিগরের গুরুত্ব বিবেচনা করে তিনি কর্মী নিয়োগ দেন এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
ক. আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক কে? ১
খ. “প্রেষণা দান” বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত জনাব মাহিনের কাজটি কী বর্ণনা কর। ৩
ঘ. “হাসি-খুশি নকশী ঘর” স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হওয়ার পিছনের কারণ বিশ্লেষণ কর। ৪
 ১নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হেনরি ফেওল।
খ. প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীবৃন্দের কার্যক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে তাদের অনুপ্রাণিত, উৎসাহিত ও প্ররোচিত করার প্রক্রিয়াই হলো প্রেষণা। এই প্রক্রিয়া কর্মীদের ইচ্ছাশক্তিকে উৎসাহিত করে তাদের লক্ষ্যের দিকে তাড়িত করে। প্রেষিত কর্মী উৎসাহিত হয়ে কর্মে সন্তুষ্টি লাভ করে এবং নিজেই কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয়।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত জনাব মাহিনের কাজটি হলো ব্যবস্থাপনা।
ব্যবস্থাপনা বলতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যাবলি অর্জনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, সংগঠিতকরণ, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণাদান, সমন্বয়সাধন এবং ব্যবসায়ের সর্বস্তরে অবিরাম নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে বোঝায়। দূরদর্শী কাণ্ডারি যেমন তার তরীর গতি নিয়ন্ত্রণ করে তাকে গন্তব্যে নিয়ে যায়, তেমনি দক্ষ ব্যবস্থাপক ও তার সংগঠনরূপ তরীটিকে শত ঝঞ্ঝা ও প্রতিক‚লতার মধ্য দিয়ে লক্ষ্যপানে নিয়ে যায়। উদ্দীপকে জামালপুরের “হাসি-খুশি নকশী ঘর” এর স্বত্বাধিকারী জনাব মাহিন ভেবে-চিন্তে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেন। প্রয়োজনে কর্মীদের পরামর্শ প্রদান করেন এবং প্রতিষ্ঠানে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে কর্মী নিয়োগ ও যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তার সম্পাদিত এসকল কার্যাবলি সকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানেই ব্যবস্থাপকের কার্যাবলি হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই জনাব মাহিনের কাজটি অবশ্যই ব্যবস্থাপনা।
ঘ. জামালপুরের “হাসি-খুশি নকশী ঘর” স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হওয়ার পিছনে মূল কারণ হলো এর স্বত্বাধিকারী অর্থাৎ জনাব মাহিনের দক্ষ ব্যবস্থাপনা।
দক্ষ ব্যবস্থাপনার ওপর সকল প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে। দক্ষ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে নানাবিধ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণ কার্য সম্পাদন করেন। তাকে ব্যবস্থাপনার উল্লিখিত কার্যাদি সম্পাদন করতে বহুবিধ ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। একজন ব্যবস্থাপক তার এই ভ‚মিকা যতটা দক্ষতার সাথে পালন করতে পারেন তার প্রতিষ্ঠান ততটা সাফল্যের সাথে পরিচালিত হয়। উদ্দীপকে জনাব মাহিন একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক। তিনি অনেক ভেবে চিন্তে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেন। তাছাড়া তিনি কর্মীদের প্রয়োজনে পরামর্শ দেন। দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানের সফলতা বজায় রাখার নিমিত্তে তিনি নকশি কাঁথা ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরির জন্য দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেন এবং তাদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তার এরূপ দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য “হাসি-খুশি নকশী ঘর” তার ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছে। তার সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
সুতরাং বলা যায়, জামালপুরের “হাসি-খুশি নকশী ঘর”-এর সাফল্যের পিছনে মূলকারণ হলো এর স্বত্বাধিকারী জনাব মাহিনের সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা।
প্রশ্ন-২  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ইয়াফী ও শাফী দুই বন্ধু। তাদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি অবস্থিত। ইয়াফী ব্যবসায় পরিচালনা করতে গিয়ে কর্মীদের সাথে আলোচনা করে তাদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শাফী কর্মীদের উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন এবং এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন নয়। কর্মীদের অসন্তোষের কারণে শাফীর ব্যবসায়টি ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়।
ক. যিনি নেতৃত্ব দেন তাকে কী বলে? ১
খ. “জেন্ডার সচেতনতা” কী? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. ইয়াফী কোন ধরনের নেতা? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. ‘কর্মীদের উপর প্রভাব বিস্তারের অক্ষমতাটি শাফীর ব্যর্থতার কারণ’ মূল্যায়ন কর। ৪
 ২নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. যিনি নেতৃত্ব দেন তাকে নেতা বলে।
খ. জেন্ডার সচেতনতা হলো নারী কিংবা পুরুষের ক্ষেত্রে পক্ষপাতহীন থেকে তাদের উভয়ের ন্যায্য অধিকারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা। অর্থাৎ একজন নেতা তিনি নারী বা পুরুষ যেই হোন না কেন তাকে তার সহকর্মী নারী-পুরুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। তাকে অবশ্যই পক্ষপাতহীন হতে হবে। নারী-পুরুষের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মূল্যায়ন করতে হয়। তাদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন থেকে তাকে নেতৃত্ব দিতে হয়।
গ. ইয়াফী একজন গণতান্ত্রিক নেতা।
গণতান্ত্রিক নেতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সাথে আলোচনা করে, প্রয়োজনে পরামর্শ গ্রহণ করে এবং তথ্য সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এতে কর্মীরা গৃহীত সিদ্ধান্ত তাদের নিজেদের মনে করেন এবং তা বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালান। গণতান্ত্রিক নেতা কর্মীদের নিকট জবাবদিহিও করেন। উদ্দীপকে ইয়াফী ব্যবসায় পরিচালনা করতে গিয়ে কর্মীদের সাথে আলোচনা করে তাদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি
কর্মীদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে কর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব সহকারে বিচার বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণ করেন এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। এভাবে কর্মী সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে তিনি কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। তাই বলা যায়, ইয়াফী একজন প্রকৃত গণতান্ত্রিক নেতা।
ঘ. শাফীর কর্মীদের ওপর প্রভাব বিস্তারের অক্ষমতাটি স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্বের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।
স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব এমন এক ধরনের নেতৃত্ব যাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব নেতা ভোগ করে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে নেতা কারো সাথে আলাপ-আলোচনা বা পরামর্শ করেন না। কর্মীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয়। ফলে তারা স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে কাজ করতে না পারায় অসন্তুষ্ট হয়। উদ্দীপকের শাফী একজন স্বৈরতান্ত্রিক নেতা। তিনি নিজের মতো কর্মীদের ওপর কাজ চাপিয়ে দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কর্মীরা স্বতঃস্ফ‚র্ত ছিল না বলে তার পরিকল্পনা মাফিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়নি। কর্মীদের ওপর প্রভাব বিস্তারে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি কর্মীদের ক্ষমতা ও সামর্থ্য যথাযথভাবে ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের জন্য সফলতা বয়ে আনতে পারেননি। তাছাড়া তিনি কর্মীদের সাথে পরামর্শ না করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় তার প্রতি কর্মীদের নেতিবাচক মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে। তারা প্রতিষ্ঠানকে নিজের ভাবতে পারেননি। এর ফলে তাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে যা প্রতিষ্ঠানকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করেছে। কিন্তু শাফী যদি কর্মীদের মনোভাব অনুধাবন করে তাদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতেন তাহলে কর্মীরা উৎসাহবোধ করত এবং তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বতঃস্ফ‚র্ত থাকত। এতে তার প্রতিষ্ঠানটি সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছতে পারত।
সুতরাং বলা যায়, ‘কর্মীদের ওপর প্রভাব বিস্তারের অক্ষমতাটি শাফীর ব্যর্থতার কারণ’- উক্তিটি যথার্থ।

প্রশ্ন-৩  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রিপন ও শিপন দুই বন্ধু ২টি কারখানা স্থাপন করেন। রিপন কখন কোন কাজ কাকে দিয়ে করাবে তা নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেন। তিনি মাঝে মাঝে সরেজমিনে কারখানার কাজ দেখেন এবং মুনাফা বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মচারীদেরও কিছু পুরস্কারের ব্যবস্থা করেন। শিপনও সব কাজ ঠিকমতো করলেও মহিলা শ্রমিকদের তুলনামূলক কম মজুরি দেন। এতে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলে উৎপাদন কমতে থাকে। পরবর্তীতে শিপনের ব্যবসায় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
ক. নেতৃত্বকে কতভাগে ভাগ করা হয়েছে? ১
খ. অর্থায়ন বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. শিপনের মধ্যে আদর্শ নেতার কোন গুণটির অভাব রয়েছে তা বর্ণনা কর। ৩
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে জনাব রিপনকে একজন সফল ব্যবস্থাপক বলা যায়Ñ মতামত দাও। ৪
 ৩নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. নেতৃত্বকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
খ. সাধারণ অর্থে, ব্যবসায়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করাকে অর্থায়ন বলে।
ব্যাপক অর্থে, ব্যবসায়ের আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ, অর্থ সংরক্ষণ, সংগৃহীত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার সংক্রান্ত সকল কার্যাবলিকে ব্যবসায় অর্থায়ন বলা হয়। যেকোনো ব্যবসায়ের জন্য অর্থ বা মূলধন প্রয়োজন হয়। এ অর্থ প্রয়োজন হয় ব্যবসায় শুরু, কার্যক্রম সচল ও স¤প্রসারণের জন্য।
গ. শিপনের মধ্যে আদর্শ নেতার ‘জেন্ডার সচেতনতা’ গুণটির অভাব রয়েছে।
জেন্ডার সচেতনতা হলো নারী কিংবা পুরুষের ক্ষেত্রে পক্ষপাতহীন থেকে তাদের উভয়ের ন্যায্য অধিকারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা।
উদ্দীপকের শিপন ব্যবস্থাপনার সকল কাজ সঠিকভাবে করলেও মহিলা শ্রমিকদের তুলনামূলক কম মজুরি দেয়, যা আদর্শ নেতার গুণাবলির বিপরীত। একজন আদর্শ নেতা নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভ‚তিশীল হয়। তাদের কাজকে সমানভাবে মূল্যায়ন করে। এতে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যে সন্তোষভাব বজায় থাকে। শিপনের মধ্যে আদর্শ নেতার অনুপস্থিত থাকায় কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। ফলে কারখানার উৎপাদন কমে যায়।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে জনাব রিপনকে একজন সফল ব্যবস্থাপক বলা যায়।
পূর্বানির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পাদিত কার্যাবলিকে ব্যবস্থাপনা বলা হয়। অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা হলো পূর্বানুমান ও পরিকল্পনা, সংগঠিতকরণ কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণের সমষ্টি। আর যিনি এ কাজগুলো সম্পাদন করেন তিনি হলেন ব্যবস্থাপক। উদ্দীপকের রিপন পরিকল্পনার মাধ্যমে কখন কোন কাজ কাকে দিয়ে করাবেন তা নির্ধারণ করেন। তিনি সংগঠিতকরণ ক্ষমতার মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক সৃষ্টি করেন। প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কর্মীদের আদেশ-নির্দেশ প্রদান করেন। প্রেষণাদানের মাধ্যমে কর্মীদেরকে কাজের প্রতি আগ্রহী ও উৎসাহীত করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্য সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা তদারকী করেন। ফলে প্রতিষ্ঠানের সকল পরিকল্পনা যথাসময়ে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং প্রতিষ্ঠান তার লক্ষ্যে পৌঁছে।
পরিশেষে বলা যায়, জনাব রিপন যেহেতু তার ব্যবস্থাপকীয় গুণাবলি দ্বারা প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন সেহেতু নিঃসন্দেহে তিনি একজন সফল ব্যবস্থাপক।

প্রশ্ন -৪ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব আমান একজন দক্ষ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসায়কে সঠিক পরিকল্পনা মাফিক পরিচালনা করে সফলতা অর্জন করেন। কিন্তু তার ছোট ভাই জামান সঠিকভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারছেন না। তিনি তার ভাইকে উপদেশ দেন তার পথ অনুসরণ করতে। কারণ তিনি জানেন সঠিক পরিকল্পনা সাফল্যের ভিত তৈরি করে।
ক. কর্মীদের মতামত গ্রহণ না করা কোন ধরনের নেতৃত্ব? ১
খ. ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে একজন আদর্শ নেতার গুণাবলি লিখ। ২
গ. জনাব আমানের সফলতার কারণ উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. জনাব আমানের উপদেশটি কি তুমি যুক্তিযুক্ত বলে মনে কর? উত্তরের সপেক্ষে যুক্তি দাও। ৪
 ৪নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কর্মীদের মতামত গ্রহণ না করা স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব।
খ. ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব বলতে উদ্দেশ্য অর্জনকে সামনে রেখে কাজ সম্পাদনে কর্মীদের উৎসাহিত করার গুণ ও কৌশলকে বোঝায়। নেতৃত্বের জন্য একজন নেতাকে অবশ্যই পরিশ্রমী, সৎ এবং কর্মচারীদের পরিচালনা করতে দক্ষ হতে হবে। এছাড়া ব্যবসায়ের উন্নতির জন্য নেতাকে অবশ্যই আগ্রহী হতে হবে।
গ. জনাব আমানের সফলতার কারণ হলো সঠিক পরিকল্পনা।
পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যতে কী করা হবে তার পূর্বানুমান। কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তারপর সেই পরিকল্পনাকে দিক-নির্দেশনা হিসেবে ব্যবহার করে ধারাবাহিকভাবে ব্যবস্থাপনার অন্যান্য ধাপসমূহ যথাযথভাবে অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছতে হয়। তাই পরিকল্পনা যদি সঠিক না হয় তাহলে ব্যবস্থাপনার যাবতীয় কার্যাবলি ভুল পথে সম্পাদিত হয় এবং লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব হয়ে যায়। উদ্দীপকের জনাব আমান তার ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের জন্য সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি ও উপায় উপকরণের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করেন। কর্মী নিয়োগ দেয়; তাদের নির্দেশনা ও প্রেষণা দেন; তাদের সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ করেন। এতে করে প্রতিষ্ঠানের অপচয় ও ক্ষতি হ্রাস পায় এবং মুনাফা বৃদ্ধি পায়।
ফলে প্রতিষ্ঠান তার লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। তাই বলা যায়, জনাব আমান তার ব্যবসায়ের জন্য সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেছেন বলেই সফল হতে পেরেছেন।
ঘ. জনাব আমানের উপদেশটি সম্পূর্ণরূপে যুক্তিযুক্ত বলে আমি মনে করি।
প্রতিটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো মুনাফা অর্জন করা। কিন্তু প্রতিষ্ঠান গঠন করে পরিচালনা করলেই মুনাফা অর্জন করা যায় না। মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যবসায়ের যাবতীয় কার্যাবলি সঠিকভাবে সম্পাদন করতে হয়। আর তার জন্য প্রয়োজন একটি সঠিক পরিকল্পনা। উদ্দীপকে আমান সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে ব্যবসায়ে সফলতা লাভ করেছেন। অন্যদিকে জামান পরিকল্পনার অভাবে সঠিকভাবে ব্যবসায় করতে পারছেন না। যেহেতু পরিকল্পনার মাধ্যমেই আমান সফল তাই তিনি জামানকেও একই উপদেশ দেন। তিনি জানেন পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজে সাফল্য অর্জন করা যায় না। পরিকল্পনা হচ্ছে ব্যবস্থাপনার মুখ্য কাজ। পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থাপনার অন্য কার্যক্রমগুলো সম্পাদিত হয়। পরিকল্পনা একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দিক-নির্দেশনা দিয়ে তার গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করে। তাই যেকোনো ব্যবসায়ের লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে লক্ষ্য অর্জন করা কখনোই সম্ভব হবে না।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, জনাব আমানের প্রদত্ত পরামর্শটি পুরোপুরি সঠিক এবং যুক্তি যুক্ত।
প্রশ্ন -৫ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
‘আশা’ স্টোরের মালিক মানিক সাহেব তার দোকানে তৈরি পোশাক, কসমেটিকস, শিশুদের খাদ্যসহ নিজের তত্ত¡াবধানে বিভিন্ন প্রকার আচার তৈরি করে বিক্রয় করেন। দিন দিন তার আচারের খ্যাতি বৃদ্ধি পেতে থাকায় তিনি আচার তৈরি ও বিক্রির জন্য একটি আলাদা বিভাগ খোলার সিদ্ধান্ত নিলেন। নতুন কর্মী নিয়োগের পাশাপাশি একজনকে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব দিলেন। বছরব্যাপী কাঁচামাল সংগ্রহ, আচার তৈরি ও তা সংরক্ষরণ করার জন্য কর্মচারীদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দিলেন।
ক. নির্দেশনা কী? ১
খ. সমন্বয়সাধন বলতে কী বোঝায়? ২
গ. ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিকোণ থেকে মানিক সাহেবের কার্যাবলিকে কী বলা যায়? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে মানিক সাহেবের সম্পাদিত কার্যাবলির প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৫নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কর্মীদের কী কাজ করাতে হবে তার আদেশ এবং কীভাবে করাতে হবে তার নির্দেশ প্রদান করাই হলো নির্দেশনা।
খ. সমন্বয়সাধন ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। সমন্বয়সাধন প্রক্রিয়ায় ব্যবসায় সংগঠনের কর্মী, বিভিন্ন বিভাগ ও উপবিভাগের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সকলে মিলে একটি দলে পরিণত হয় যা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ সম্পাদনে সহায়তা করে।
গ. ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিকোণ থেকে মানিক সাহেবের কার্যাবলিকে সংগঠিতকরণ বলা যায়।
ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় সকল মানবিক ও বস্তুগত উপকরণ এবং সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্য কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা বণ্টন এবং আন্তঃসম্পর্ক তৈরির কার্যাবলিকে সংগঠিতকরণ বলা হয়। এটি ব্যবস্থাপনার দ্বিতীয় কাজ। অর্থাৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানকে সুসংগঠিত করাই হলো সংগঠিতকরণ। উদ্দীপকে মানিক সাহেবের তত্ত¡াবধানে তৈরি আচারের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি আচারের জন্য আলাদা বিভাগ খোলেন। আবার আলাদা বিভাগের জন্য ম্যানেজারও নিয়োগ করেন। তাছাড়া কাঁচামাল সংগ্রহ, আচার তৈরি ও তাদের সংরক্ষরণের সুবিধার্থে দায়িত্ব বণ্টন করে দেন। এসকল সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনার সংগঠিতকরণ প্রক্রিয়ায় করা হয়। যেহেতু পরিকল্পনা অনুযায়ী মানিক সাহেব তার ব্যবসায়ের মানবিক ও বস্তুগত সকল প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং সম্পদ সংগ্রহ ও সমন্বিত করে সেগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্য কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা বণ্টন করে দিয়েছেন সেহেতু তিনি ব্যবস্থাপনার সংগঠিতকরণের কার্যাবলি সম্পাদন করেছেন।
ঘ. মানিক সাহেবের সম্পাদিত সংগঠিতকরণ কার্যাবলি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজতর করেছে।
ব্যবসায়ের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবসায়ের সকল মানবিক ও বস্তুগত উপকরণ এবং সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হয়। ব্যবস্থাপনার সংগঠিতকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই কাজটি করা হয় বলে যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সংগঠিতকরণ কার্যাবলির গুরুত্ব অপরিসীম। উদ্দীপকে ‘আশা’ স্টোরের মালিক মানিক সাহেব তার ব্যবসায় সুনামের সাথে ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সংগঠনকরণমূলক কার্যাবলি সম্পাদন করেছেন। এর মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালন সহজ হয়েছে। নিজেদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক সুদৃঢ় হওয়ার কারণে তাদের কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলশ্রæতিতে প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে তার লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাচ্ছেন।
সুতরাং বলা যায়, মানিক সাহেবের প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে তার সম্পাদিত সংগঠিতকরণ কার্যাবলির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

প্রশ্ন-৬  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব পলাশ ৩ বছর পূর্বে স্বল্প মূলধন নিয়ে কাপড়ের ব্যবসায় শুরু করেছিলেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ব্যবস্থাপনা কার্যাবলি সম্পাদন করায় বর্তমানে তাঁর ব্যবসায়টি একটি বৃহদায়তন ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়িক কাজে সহযোগিতার জন্য তিনি কয়েকজন কর্মচারীও নিয়োগ দিয়েছেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে চলছে।
ক. মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে ব্যবস্থাপনার কীরূপ সম্পর্ক রয়েছে? ১
খ. কর্মীসংস্থান বলতে কী বোঝ? ২
গ. জনাব পলাশের ব্যবসায়িক সফলতা অর্জনের মূল কারণ কী? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. জনাব পলাশের সাফল্য প্রমাণ করে ব্যবস্থাপনা একটি দলগত প্রক্রিয়াবিশ্লেষণ কর। ৪
 ৬নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে ব্যবস্থাপনার সহ-সম্পর্ক রয়েছে।
খ. প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উপাদান হচ্ছে তার কর্মী বাহিনী। কর্মী বাহিনীকে ব্যবসায়ের অন্যতম মানবিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কার্য সম্পাদনের জন্য উপযুক্ত কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচন, নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ প্রদান, পদোন্নতি, বদলি, ছাঁটাই প্রভৃতি কাজ কর্মী সংস্থানের অন্তর্ভুক্ত।
গ. জনাব পলাশের ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জনের মূল কারণ দক্ষ ব্যবস্থাপনা।
ব্যবস্থাপনা বলতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যাবলি অর্জনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, সংগঠন, কর্মীসংস্থাপন, নির্দেশনা, প্রেষণাদান, সমন্বয়সাধন এবং ব্যবসায়ের সর্বস্তরের অবিরাম নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে বোঝায়। দক্ষ ব্যবস্থাপনার ওপর প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে।
উদ্দীপকে জনাব পলাশ ৩ বছর পূর্বে ব্যবসায় শুরু করেছিলেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কার্যাবলি অর্থাৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণ কার্যাবলি সম্পাদন করেছেন। ফলে তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বৃহদায়তন ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। তাই বলা যায়, জনাব পলাশের ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জনে তার দক্ষ ব্যবস্থাপনা ভ‚মিকা রেখেছে।
ঘ. জনাব পলাশ ও তার ব্যবসায়ের কর্মীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে আর এটিই হচ্ছে ব্যবস্থাপনা যা একটি দলগত প্রচেষ্টা।
ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে কাজ করে। ব্যবস্থাপক যেমন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে তেমনি ব্যবস্থাপকের কর্মকাণ্ড বা উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য সর্বাত্মকভাবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সাহায্য ও সহায়তা প্রদান করে থাকে। অর্থাৎ কাউকে বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানে লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব নয়। উদ্দীপকে জনাব পলাশ একজন কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি স্বল্প মূলধন নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেন এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ব্যবস্থাপনা কার্যাবলি সম্পাদন করে বর্তমানে তা বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। এই সফলতার জন্য সর্বাত্মকভাবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাকে সাহায্য ও সহায়তা প্রদান করেছিল। কিন্তু জনাব পলাশ যদি তার ব্যবস্থাপনা কার্যাবলি সঠিকভাবে সম্পাদন না করতেন কিংবা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে সহায়তা না করত তাহলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন করা কখনোই সম্ভব হতো না।
সুতরাং, জনাব পলাশের সাফল্য এটাই প্রমাণ করে যে ব্যবস্থাপনা একটি দলগত প্রক্রিয়া।

প্রশ্ন-৭  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব চন্দ্রন স্বল্প পুঁজি নিয়ে নিজ এলাকায় একটি জুয়েলারি দোকান দেন। দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে তার জুয়েলারি দোকানটি বর্তমানে বাংলাদেশের প্রথম সারির জুয়েলারি শপগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। তিনি তার প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মীদের নিয়োগ দেন এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে দক্ষ করে তোলেন। কর্মীদের নিয়োগ সঠিক নির্দেশনা দানসহ প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় নিয়ন্ত্রণমূলক কাজ তিনি দক্ষ হাতে সম্পাদন করে থাকেন। কারণ তিনি জানেন যে প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যপানে এগিয়ে নেওয়ার কার্যকর শক্তি হলো ব্যবস্থাপনা যা কতগুলো সম্পর্কযুক্ত কাজের একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
ক. নির্দেশনাকে কার সাথে তুলনা করা যায়? ১
খ. ব্যবসায়ের অর্থসংস্থান বলতে কী বোঝায়? ২
গ. জনাব চন্দ্রনের সম্পাদিত কার্যাবলির মূল উদ্দেশ্য বর্ণনা কর। ৩
ঘ. প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যপানে এগিয়ে নিতে জনাব চন্দ্রন যে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন তা বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৭নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. নির্দেশনাকে নেতৃত্বদানের সাথে তুলনা করা যায়।
খ. সাধারণভাবে ব্যবসায়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করাকে ব্যবসায়ের অর্থসংস্থান বলে। সব ধরনের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড অর্থের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। ব্যবসায়ে অর্থসংস্থান করতে না পারলে সঠিকভাবে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যায় না। আর তাই ব্যবসায়কে সচল রাখতে এবং ব্যবসায়ের স¤প্রসারণে অর্থসংস্থান অপরিহার্য।
গ. জনাব চন্দ্রনের সম্পাদিত কার্যাবলি তথা ব্যবস্থাপনা কার্যাবলির মূল উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন করা।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কিছু পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য থাকে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রতিষ্ঠান সামনের দিকে এগিয়ে যায়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষ্য হলো মুনাফা অর্জন। আর প্রতিষ্ঠানকে তার লক্ষ্যে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে সহায়তা করে ব্যবস্থাপনা। উদ্দীপকের জনাব চন্দ্রন একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী। অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মতো তার প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো মুনাফা অর্জন। এ লক্ষ্যে তিনি তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী নিয়োগ দেন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ করে তোলেন। কর্মীদের নির্দেশনা দানসহ প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যাবলি তিনি দক্ষ হাতে সম্পাদন করেন। তার সম্পাদিত এসব কার্যাবলি ব্যবস্থাপনা কার্যাবলির অন্তর্গত। আর এসব কার্যাবলি তিনি সম্পাদন করেন মুনাফা অর্জনের জন্য যা তার জুয়েলারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার মূল উদ্দেশ্য।
ঘ. প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যপানে এগিয়ে নিতে জনাব চন্দ্রন ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন।
ব্যবস্থাপনা হলো কতকগুলো কাজের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যা পূর্বানুমান ও পরিকল্পনা, সংগঠিতকরণ, নির্দেশনা, সমন্বয়সাধনও নিয়ন্ত্রণের সমষ্টি। ব্যাপক অর্থে ব্যবস্থাপনা একটি প্রক্রিয়া যার কার্যাবলি একটি নির্দিষ্ট নিয়মে একের পর এক সম্পাদিত হয়ে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। উদ্দীপকে জনাব চন্দ্রন প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যপানে এগিয়ে নিতে ব্যবস্থাপনার আওতায় অনেকগুলো কাজ সম্পাদন করেন। তিনি সর্বপ্রথম একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তারপর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সংগঠন, কর্মীসংস্থান, উৎসাহ প্রদান, বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভাগের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন এবং কাজ শেষে বা সময় শেষে নিয়ন্ত্রণ কার্য অথবা বিচ্যুতি নিরূপণ ও সংশোধনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এসব কার্যাবলি তিনি নির্দিষ্ট নিয়মে ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করেন।
সুতরাং বলা যায়, জনাব চন্দ্রন প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন।
প্রশ্ন-৮  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব ফয়সাল একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি তার সফলতা লাভের কারণ হিসেবে সঠিক পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দেন। তিনি মনে করেন সঠিক পরিকল্পনা যেকোনো কাজকে অর্ধেক এগিয়ে দেয়। জনাব ফয়সালের বন্ধু জনাব তপন একজন চাল ব্যবসায়ী। তিনি পরিকল্পনামাফিক কাজ না করায় তার ব্যবসায়ে দিন দিন অবনতি ঘটছে। তাই জনাব ফয়সাল তাকে পরিকল্পনামাফিক কাজ সম্পাদনের পরামর্শ দেন।
ক. ব্যবসায়ের অন্যতম মানবসম্পদ কোনটি? ১
খ. ব্যবস্থাপনার দ্বিতীয় কাজটি সম্পর্কে লেখ। ২
গ. জনাব ফয়সাল তার বন্ধুকে ব্যবস্থাপনার কোন কাজটি সঠিকভাবে সম্পাদনের পরামর্শ দিয়েছেন? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. জনাব ফয়সাল লক্ষ্য অর্জনে কোন বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন?Ñ বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৮নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ব্যবসায়ের অন্যতম মানবসম্পদ হলো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মী বাহিনী।
খ. ব্যবস্থাপনার দ্বিতীয় কাজটি হলো সংগঠিতকরণ।
ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় সকল মানবিক ও বস্তুগত উপকরণ এবং সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্য কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা বণ্টন এবং আন্তঃসর্ম্পক তৈরির কার্যাবলিকে সংগঠিতকরণ বলা হয়।
গ. জনাব ফয়সাল তার বন্ধুকে ব্যবস্থাপনার প্রথম কাজটি অর্থাৎ পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজটি সঠিকভাবে সম্পাদনের পরামর্শ দিয়েছেন।
পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের পূর্বনির্ধারিত নকশা। অর্থাৎ পরিকল্পনা হলো প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য নিরূপণ ও তা বাস্তবায়নে কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে, কখন ও কত সময়ের মধ্যে করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ের পূর্বনির্ধারিত প্রতিচ্ছবি। উদ্দীপকে জনাব ফয়সাল তার বন্ধুকে ব্যবস্থাপনা চক্রের পরিকল্পনার কাজটি সঠিকভাবে সম্পাদনের পরামর্শ দিয়েছে। তিনি মনে করেন সঠিক পরিকল্পনা যেকোনো কাজকে অর্ধেক এগিয়ে দেয়। পরিকল্পনা ব্যবসায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ব্যবসায়কে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করে এবং মিতব্যয়িতা অর্জনে সাহায্য করে। প্রতিষ্ঠানের সকল ব্যক্তি ও বিভাগের কাজে ভারসাম্য সৃষ্টি ও সমতা আনয়নে পরিকল্পনা সহায়তা করে। তাই জনাব ফয়সাল তার বন্ধু জনাব তপনকে ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করতে আদর্শ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে পরামর্শ দিয়েছেন।
ঘ. জনাব ফয়সাল লক্ষ্য অর্জনে পরিকল্পনার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন।
কোনো কাজ শুরু করার পূর্বে সে বিষয়ে বিশেষ চিন্তা-ভাবনা বা আগাম সিদ্ধান্তই হলো পরিকল্পনা। অর্থাৎ কোনো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কী কাজ করতে হবে, কখন করতে হবে, কোথায় করতে হবে, কত সময়ে কাজ শেষ হবে, এ সম্পর্কে অগ্রিম সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে পরিকল্পনা বলে। উদ্দীপকে জনাব ফয়সাল একজন সফল ব্যবসায়ী। তার এই সফলতার মূল কারণ তিনি সঠিক পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দেন। সঠিক পরিকল্পনা যেকোনো কাজকে অর্ধেক এগিয়ে দেয়। সঠিক পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে উদ্দেশ্য অর্জন সহজ হয়ে যায়। কারণ পরিকল্পনা হলো ব্যবস্থাপনার মুখ্য কাজ। পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করেই ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কার্যাবলি যথা : সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা ও নিয়ন্ত্রণ কার্যাবলি সম্পাদিত হয়। তাই পরিকল্পনা সঠিক না হলে ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কার্যাবলি লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে যথাযথ সহায়তা দানে ব্যর্থ হয়। এ কারণে দক্ষ ব্যবস্থাপকগণ সব সময় পরিকল্পনাকে ব্যবস্থাপনার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে গণ্য করে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সচেষ্ট থাকেন।
পরিশেষে বলা যায়, জনাব ফয়সাল একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক হিসেবে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে পরিকল্পনার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন।
প্রশ্ন-৯  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব মাহফুজ বাটা সু কোম্পানির ঈশ্বরদী থানার বিক্রয় ব্যবস্থাপক। তাকে সহায়তা করার জন্য দোকানে ৫ জন কর্মচারী রয়েছে। প্রতি বছরের শুরুতে তিনি একটি নির্দিষ্ট বিক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেন এবং বছর শেষে প্রকৃত বিক্রয়ের সাথে তার তুলনা করেন। গতবছর তার প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তাই তিনি তার প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করে ঐ একই পরিমাণ বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এ বছর কাজ শুরু করেন এবং ব্যবস্থাপনার কাজগুলো সম্পাদন করে আশানুরূপ ফল পান।
ক. দায়িত্ব ও ক্ষমতা বণ্টনের কাজকে কী বলে? ১
খ. স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব বলতে কী বোঝায়? ২
গ. জনাব মাহফুজ বছরের শুরুতে ব্যবস্থাপনার কোন কাজটি সম্পাদন করেছেন? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. জনাব মাহফুজের ব্যবস্থাপনার কাজগুলো সম্পাদন করার মধ্য দিয়ে ব্যবস্থাপনার যে বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তার যথার্থতা বিশ্লেষণ কর। ৪
 ৯নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. দায়িত্ব ও ক্ষমতা বণ্টনের কাজকে সংগঠিতকরণ বলে।
খ. স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব এমন এক ধরনের নেতৃত্ব যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব নেতা ভোগ করে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে তিনি কারো সাথে আলাপ-আলোচনা বা পরামর্শ করেন না। কখনো কখনো কর্মীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয়। কর্মীরা ফাঁকিবাজ, অলস, দায়িত্বহীন হলে এ ধরনের নেতৃত্ব কার্যকর ভ‚মিকা পালন করে। কিন্তু শিক্ষিত, সচেতন, দায়িত্বশীল কর্মীদের ক্ষেত্রে এটি ব্যর্থ হয়।
গ. জনাব মাহফুজ বছরের শুরুতে ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার প্রথম কাজটি অর্থাৎ পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজটি করেছেন।
পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের দিকনির্দেশনা। কোনো ব্যবসায় সংগঠনের পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভবিষ্যতে কী কাজ, কে, কীভাবে, কখন করবে তা নির্ধারণ করাই হলো পরিকল্পনা। উদ্দীপকের জনাব মাহফুজ বছরের শুরুতে বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন যা তাকে কার্যাবলি সম্পাদনে দিক- নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি তার এই লক্ষ্যমাত্রার ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ সংগঠিত করেন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনাদান, প্রেষণাদান, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণ কার্যাবলি সম্পাদন করেছেন। অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা কার্যাবলির দিক- নির্দেশনা পেতে জনাব মাহফুজ বছরের শুরুতে ব্যবস্থাপনার যে কাজটি সম্পাদন করেছেন তা হলো পরিকল্পনা।
ঘ. উদ্দীপকে জনাব মাহফুজের ব্যবস্থাপনার কাজগুলো সম্পাদন করার মধ্য দিয়ে ব্যবস্থাপনা যে একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া তা ফুটে উঠেছে।
পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কতিপয় সুসংবদ্ধ ও ধারাবাহিক কার্যক্রমকে ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া বলে। ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের যাবতীয় কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যায়।
জনাব মাহফুজ ঈশ্বরদী থানার বাটা সু কোম্পানির বিক্রয় ব্যবস্থাপক। তিনি প্রতিবছর বিক্রয়কার্য শুরু করার আগে তার প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন যা পরিকল্পনা হিসেবে গণ্য। তারপর সেই লক্ষ্যমাত্রাকে অর্জনের লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কার্যাদি যেমন : সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা ও নিয়ন্ত্রণ কার্যাদি সম্পাদন করেন। বছর শেষে তিনি তাদের প্রকৃত বিক্রয়কে লক্ষ্যমাত্রার সাথে তুলনা করেন। গত বছর তিনি তার বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করেন এবং ঐ একই পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এ বছর কাজ শুরু করেছিলেন। গত বছরের ন্যায় ব্যবস্থাপনার যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদন করে এ বছর তিনি আশানুরূপ ফল পান। অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা কাজগুলো তিনি ধারাবাহিকভাবে সম্পাদিত করেছেন।
সুতরাং বলা যায়, জনাব মাহফুজ তার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কার্যাবলিতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পেরেছেন বলেই এ বছর আশানুরূপ ফল পেয়েছেন।
প্রশ্ন-১০  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সায়েম ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি যশোর অঞ্চলে তাদের বিক্রয় কার্যক্রম স¤প্রসারণের লক্ষ্যে জনাব রিয়ানকে নিয়োগ দিলেন। জনাব রিয়ান কোম্পানির নির্ধারিত এলাকাগুলোতে কাজ করার জন্য প্রত্যেক কর্মীকে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নির্দিষ্ট করে দিলেন। তিনি কর্মীদের দায়িত্বের তুলনায় কর্তৃত্ব কম দিলেন এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রাখলেন। এতে কর্মীরা কাজ করতে গিয়ে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হলেন।
ক. কোনটির মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হয়? ১
খ. মুক্ত নেতৃত্ব বলতে কী বোঝায়? ২
গ. জনাব রিয়ান ব্যবস্থাপনার কোন কাজটি সম্পাদন করেছেন? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. যশোর অঞ্চলের কর্মীদের সমস্যা সমাধানে জনাব রিয়ানের কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে তুমি মনে কর? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও। ৪
 ১০নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হয়।
খ. মুক্ত নেতৃত্ব হচ্ছে এমন এক ধরনের নেতৃত্ব যেখানে নেতা তার অনুসারী বা অধীনস্তদের শুধু লক্ষ্য ও কার্যের সীমারেখা নির্ধারণ করে দেন এবং বিশেষ অনুরোধ ছাড়া তিনি কোনো নির্দেশনা প্রদান করেন না। মুক্ত নেতৃত্বে কর্মীরা অবাদ স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে। এখানে নেতা একজন পরামর্শকের ভ‚মিকা পালন করেন, কর্তৃত্ব আরোপ করেন না। এখানে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে ভালো আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক ও দলীয় কাজের ওপর।
গ. জনাব রিয়ান ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার সংগঠিতকরণ কাজটি সম্পাদন করেছেন।
সংগঠিতকরণ বলতে ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় সকল মানবিক ও বস্তুগত উপকরণ এবং সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্য কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা বণ্টন এবং আন্তঃসম্পর্ক তৈরির কার্যাবলিকে বোঝায়। সংগঠিতকরণের ফলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজতর হয়। প্রতিষ্ঠানের সকল-সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। উদ্দীপকে জনাব রিয়ানকে একজন ব্যবস্থাপক হিসেবে সায়েম ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে ব্যবসায় স¤প্রসারণের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বিক্রয় কার্যক্রম স¤প্রসারণের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কর্মী ও বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করার জন্য দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব বণ্টন করেন। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠানের উপকরণসমূহকে সংঘবদ্ধ করেন এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করেন। তাই জনাব রিয়ানের সম্পাদিত ব্যবস্থাপকীয় কাজটি হলো সংগঠিতকরণ।
ঘ. সায়েম ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির যশোর অঞ্চলের কর্মীদের সমস্যা সমাধানে জনাব রিয়ানের কর্মীদের দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের মধ্যে সমতা বিধান করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
কর্মীদের দ্বারা যথাযথভাবে কার্য সম্পাদন করতে তাদের প্রদত্ত দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের মধ্যে সমতা বিধান করা অপরিহার্য। কেননা কর্মীদের যদি কর্তৃত্ব বেশি আর দায়-দায়িত্ব কম দেওয়া হয় তাহলে তারা স্বৈরাচারী হয়ে পড়ে। আবার দায়িত্ব অপেক্ষা কর্তৃত্ব কম দিলে তাদের পক্ষে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এজন্য তাদেরকে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে তা যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কর্তৃত্বও দিতে হবে। উদ্দীপকের জনাব রিয়ান কোম্পানির নির্ধারিত এলাকাগুলোতে কাজ করার জন্য প্রত্যেক কর্মীকে যে পরিমাণ দায়িত্ব অর্পণ করেছেন সেই তুলনায় কর্তৃত্ব অনেক কম দিয়েছেন। ফলে তারা প্রয়োজনীয় কর্তৃত্বের অভাবে কার্য সম্পাদনে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। কর্মীদের এ সমস্যা সমাধানের জন্য জনাব রিয়ানকে কর্মীদের প্রদত্ত দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের মধ্যে সমতা আনতে হবে। কেননা কেবলমাত্র কর্মীদেরকে প্রদত্ত দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের মধ্যে সমতা নিশ্চিত করতে পারলেই তারা তাদের কার্যাদি যথাযথভাবে সম্পাদন করে প্রতিষ্ঠানকে তার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারবে।
সুতরাং বলা যায়, জনাব রিয়ান কর্মীদের প্রদত্ত দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের মধ্যে সমতা বিধানের মাধ্যমে তাদের বর্তমান সমস্যা সমাধান করতে পারবেন।
প্রশ্ন-১১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব আলম একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক। ইদানীং তার শরীর-স্বাস্থ্য ভালো যাচ্ছে না। তাই অন্যের ওপর তাকে নির্ভর করতে হয়। প্রতিষ্ঠানে উর্ধ্বতন ও অধস্তনদের মধ্যকার সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ঊর্ধ্বতনরা অধস্তনদের আদেশ দেয়, ভুল হলে বকাঝকা করে, ভয় দেখায়। প্রতিষ্ঠানে নতুন চালু করা একটি ইউনিটের জন্য তিনি সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত জনাব সফিককে দায়িত্ব দিয়েছেন। জনাব সফিক প্রতি মাসে তার ইউনিটের অধস্তন কর্মকর্তাদের সাথে সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। এই ইউনিটের সবার মধ্যে হৃদ্যতা ও কার্যফল দেখে সবাই হতবাক।
ক. শৃঙ্খলার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয় কোন নেতৃত্ব? ১
খ. যোগাযোগ বলতে কী বোঝায়? ২
গ. জনাব আলমের প্রতিষ্ঠানে ঊর্ধ্বতনদের গৃহীত নেতৃত্ব কোন ধরনের? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. জনাব সফিকের গৃহীত পদক্ষেপ কর্মীদের মধ্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে? বিশ্লেষণ কর। ৪
ল্ফল্প ১১নং প্রশ্নের উত্তর ল্ফল্প
ক. শৃঙ্খলার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয় আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্ব।
খ. যেকোনো প্রকার তথ্যের আদান-প্রদানকেই যোগাযোগ বলে।
এটি তথ্য স্থানান্তরের একটি প্রক্রিয়া। যোগাযোগের মাধ্যমে একজনের তথ্য, সংবাদ, ঘটনা, চিন্তা, মতামত ও মনোভাব অন্যকে জানানো হয়। যোগাযোগ একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। অর্থাৎ যোগাযোগ হলো ধারণা তথা আদেশ বা নির্দেশনা অন্যের নিকট এককভাবে তুলে ধরা যাতে সে এর অর্থ সঠিকভাবে বুঝতে পারে।
গ. জনাব আলমের শিল্প প্রতিষ্ঠানে ঊর্ধ্বতনদের গৃহীত নেতৃত্বের ধরন হলো স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব।
যে নেতৃত্ব কোনো জবাবদিহি না করে কেবল কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে কাজ আদায় করে তাই স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব। এই নেতৃত্বে কর্মীদের মতামত বা পরামর্শ ঊর্ধ্বতনরা গ্রহণ করেন না। তারা অধস্তনদের ভুল হলে বকাঝকা করে ও ভয় দেখায়। উদ্দীপকের জনাব আলমের প্রতিষ্ঠানে স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্বের ফলে কর্মীদের মধ্যকার সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছে। কারণ সকল সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করছে। ঊর্ধ্বতনরা সকল কাজে হস্তক্ষেপ করে কর্মীদের কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা সব সময় অধস্তনদের অতিরিক্ত কাজ করার জন্য চাপ দিচ্ছে এবং কোনো ভুল হলে ভয় দেখাচ্ছে। তাই তাদের গৃহীত নেতৃত্ব স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব।
ঘ. জনাব সফিকের গৃহীত পদক্ষেপ গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব যা কর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব এমন এক ধরনের নেতৃত্ব যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কেন্দ্রিভ‚ত না হয়ে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে বিকেন্দ্রিভ‚ত থাকে। নেতা এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে তার অধীনস্তদের সাথে আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এতে কর্মীরা গৃহীত সিদ্ধান্ত তাদের নিজেদের মনে করে এবং তা বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালান। উদ্দীপকে জনাব সফিক নতুন ইউনিটে যে নির্দেশনা পদ্ধতিটি ব্যবহার করেছেন তা প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গলজনক। তিনি ইউনিটের যাবতীয় বিষয় নিয়ে কর্মীদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তার প্রত্যক্ষ নির্দেশনা পেয়ে কর্মীদের মধ্যে নিজ উদ্যোগে কার্যসম্পাদনের মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সব সময় কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখেন বলে কর্মীদের সাথে তার মধ্যে হৃদ্যতা ও আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানে একটা সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং এর ফলশ্রæতিতে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুতরাং বলা যায়, জনাব সফিকের নতুন ইউনিটে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
প্রশ্ন-১২  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব তপন সোনামনি বেবী ফুডস লিমিটেড এর বিক্রয় ব্যবস্থাপক। এ বছর তিনি তার প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ২০% বৃদ্ধি করতে চান। এ লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিকট লিখিত নির্দেশনামা পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পর দেখা গেল বিক্রয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। পরবর্তীতে চাপ সৃষ্টি করেও কোনো কাজ না হওয়ায় তিনি সকল নির্বাহী কর্মকর্তাদের সভায় ডাকলেন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী বিক্রয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০% নির্ধারণ করলেন। নির্বাহী কর্মকর্তারা জনাব তপনের সাথে আলাপ-আলোচনা করে নিজেদের করণীয় ঠিক করলেন।
ক. কর্মীদের কাজের প্রতি উদ্দীপ্ত করার নাম কী? ১
খ. সঠিক পরিকল্পনা উদ্দেশ্য অর্জনকে সহজ করে ব্যাখ্যা কর। ২
গ. জনাব তপন প্রথমে কোন ধরনের নেতৃত্ব অনুসরণ করেছিলে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. জনাব তপন পরবর্তীতে যে নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন তা প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটুকু সহায়ক হবে বলে তুমি মনে কর। ৪
 ১২নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কর্মীদের কাজের প্রতি উদ্দীপ্ত করার নাম প্রেষণা।
খ. কোনো কাজ শুরু করার পূর্বে ঐ কাজ সম্পর্কে অগ্রিম সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে পরিকল্পনা বলে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য কী করতে হবে, কোথায় এবং কার দ্বারা করতে হবে তা আগে থেকেই পরিকল্পনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। ফলে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কার্য সম্পাদন অনেক সহজ হয়ে যায়। তাছাড়া পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব সঠিকভাবে বণ্টন করা যায়।
গ. জনাব তপন তার প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে প্রথমে স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব অনুসরণ করেছেন।
স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব এমন এক ধরনের নেতৃত্ব যাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক ক্ষমতা নেতা ভোগ করবে। এ ধরনের নেতৃত্বে নেতা শুধু আদেশ দেন কিন্তু কোনো জবাবদিহি করেন না। উদ্দীপকে জনাব তপন প্রতিষ্ঠানের সকল ক্ষমতা নিজের কাছে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ২০% বৃদ্ধি করার জন্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে তিনি নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে কোনোরূপ আলাপ-আলোচনা করেননি। তার এরূপ স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। ফলে তাদের কর্মস্পৃহা কমে কাজের মান খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাই প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
ঘ. জনাব তপন পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন যা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি।
গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব এমন এক ধরনের নেতৃত্ব সেখানে নেতা এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে তার অধীনস্তদের সাথে আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ ধরনের নেতৃত্ব সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বলে কর্মীরা কাজে উৎসাহ পায় এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিজেদের পূর্ণ ক্ষমতা ও প্রতিভা প্রয়োগ করে। ফলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সহজ হয়। উদ্দীপকে জনাব তপন প্রথমে স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহিত আলাপ-আলোচনা করে নতুন বিক্রয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেন ১০%। অর্থাৎ তিনি স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব ত্যাগ করে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব অনুসরণ করতে শুরু করেছেন। তার এ ধরনের নেতৃত্বে তিনি নির্বাহী কর্মকর্তাদের পরামর্শকে গুরুত্ব দেওয়ায় তারা তাদের প্রতিষ্ঠানকে আপন করে ভাবার সুযোগ পায় এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে নিজেদের কর্ম ক্ষমতার পূর্ণ প্রয়োগে উদ্দীপ্ত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, জনাব তপনের গৃহীত গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
প্রশ্ন-১৩  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব হাফিজ একটি মৃৎশিল্প কারখানার মালিক। নিজস্ব তহবিল এবং আত্মীয়স্বজনের ঋণ নিয়ে প্রয়োজনীয় মূলধনের ব্যবস্থা করে তিনি এই শিল্প কারখানাটি স্থাপন করেছিলেন। তার কারখানায় উৎপাদিত সকল পণ্যের মান ভালো হওয়ায় কিছু দিনের মধ্যেই চারদিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। ক্রেতাদের বর্ধিত চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে তিনি তার ব্যবসায় স¤প্রসারণ করতে চাচ্ছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় তিনি তা করতে পারছেন না। তার এক বন্ধুর পরামর্শে তিনি অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় স¤প্রসারণের কথা ভাবছেন।
ক. ব্যবস্থাপনার মৌলিক কাজ কয়টি? ১
খ. ব্যবস্থাপনাকে চলমান প্রক্রিয়া বলা হয় কেন? ২
গ. জনাব হাফিজের মূলধন সংগ্রহের কাজকে কী বলে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. অগ্রণী ব্যাংক থেকে জনাব হাফিজের ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা মূল্যায়ন কর। ৪
 ১৩নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ব্যবস্থাপনার মৌলিক কাজ ৭টি।
খ. ব্যবস্থাপনা হলো পূর্বানুমান ও পরিকল্পনা, সংগঠিতকরণ, নির্দেশনা, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণের সমষ্টি। সময়ের পরিবর্তনের সাথে মিল রেখে ব্যবস্থাপনার এ কাজগুলো ক্ষেত্রেও নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হয়। সময়ের সাথে সাথে ব্যবস্থাপনার এ কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। তাই ব্যবস্থাপনাকে একটি চলমান প্রক্রিয়া বলা হয়।
গ. জনাব হাফিজের মূলধন সংগ্রহের কাজকে অর্থায়ন বলে।
সাধারণ অর্থে অর্থায়ন বলতে ব্যবসায়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করাকে বোঝায়। ব্যাপক অর্থে, ব্যবসায়ের আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ, অর্থ সংরক্ষণ, গৃহীত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার সংক্রান্ত সকল কার্যাবলিকে অর্থায়ন বলে। উদ্দীপকের জনাব হাফিজ একটি মৃৎ শিল্প কারখানার মালিক। তিনি নিজস্ব সঞ্চয় এবং আত্মীয়স্বজনের ঋণ দ্বারা তার কারখানার জন্য মূলধনের সংস্থান করেছেন যাকে অর্থায়ন বলা হয়। অর্থায়নের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠানের সকল আর্থিক কার্যাবলি সম্পাদিত হয়। প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অনেকাংশে সঠিক অর্থায়নের ওপর নির্ভর করে। সুতরাং শিল্পকারখানা স্থাপন এবং তা পরিচালনার জন্য জনাব হাফিজ অর্থ সংগ্রহ করেছেন বলে তার এই কাজটিকে অর্থায়ন বলা যায়।
ঘ. অগ্রণী ব্যাংক থেকে জনাব হাফিজের ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্তে যৌক্তিকতা রয়েছে।
ব্যবসায় স্থাপন এবং পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মেয়াদে অর্থায়ন করার প্রয়োজন হয়। সকল সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ দিয়ে তাদের ব্যবসায়ে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা করে থাকে। উদ্দীপকে জনাব হাফিজ একজন মৃৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যের মান ভালো হওয়ায় অল্প সময়েই তার প্রতিষ্ঠানের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তার উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই বর্ধিত চাহিদা পূরণের জন্য তার ব্যবসায় স¤প্রসারণ করা প্রয়োজন। ব্যবসায় স¤প্রসারণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রয়োজন হয়। কিন্তু নিজস্ব তহবিল থেকে জনাব হাফিজের পক্ষে এরূপ অর্থায়ন করা সম্ভব না হওয়ায় তিনি বন্ধুর পরামর্শে অগ্রণী ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণের কথা ভাবছেন। অগ্রণী ব্যাংক একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। যা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য মূলধন সংগ্রহের প্রধান উৎস। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ ঋণদানের পাশাপাশি ব্যবসায় স¤প্রসারণ ও পরিচালনায় পরামর্শ ও সহযোগিতা করে থাকে।
সুতরাং, সবদিকে বিবেচনায় ব্যবসায় স¤প্রসারণের জন্য অগ্রণী ব্যাংক হতে জনাব হাফিজের ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্তটি যথার্থ ও যৌক্তিক হয়েছে।
প্রশ্ন -১৪ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব রূপলাল একজন উদ্যোক্তা। তিনি একটি ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করেন। কর্মী এবং গ্রাহকদের দৃষ্টিভঙ্গি, রুচি প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে তিনি ব্যবসায়িক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর ফলে প্রতিষ্ঠানে সঠিক ব্যক্তি সঠিক কাজটি পায়। তিনি তার সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদী।
ক. নেতার চেয়ে নেতার আদেশ বড় কোন নেতৃত্বে? ১
খ. ব্যবসায় সংগঠন বলতে কী বোঝায়? ২
গ. উদ্দীপকে জনাব রূপলালের ব্যবসায়িক নেতৃত্বের কোন গুণটি ফুটে উঠেছে? বর্ণনা কর। ৩
ঘ. তুমি কি মনে কর জনাব রূপলাল একজন আদর্শ নেতা? মতামত দাও। ৪
 ১৪নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. নেতার চেয়ে নেতার আদর্শ বড় আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্বে।
খ. প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন মানবিক ও বস্তুগত উপাদান সংগ্রহ, একত্রকরণ, দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নির্ধারণই হলো সংগঠন। অর্থাৎ সংগঠন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিভিন্ন উপাদান একত্রকরণ, দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রতিষ্ঠাকরণ ও সমন্বিতকরণ বোঝায়। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজতর হয়।
গ. উদ্দীপকে জনাব রূপলালের ব্যবসায়িক নেতৃত্বের মানবিক সম্পর্ক অনুধাবনের গুণটি ফুটে উঠেছে।
যিনি নেতৃত্ব দেন তাকে নেতা বলা হয়। নেতার কাজ হচ্ছে উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঠিকভাবে পরিচালনা করা। আর এই কাজটি যথাযথভাবে করার জন্য নেতাকে অনেকগুলো গুণের অধিকারী হতে হয়। একজন আদর্শ নেতার অন্যতম একটি গুণ হলো মানবিক সম্পর্ক অনুধাবনের ক্ষমতা। এর মাধ্যমে নেতা কর্মীর আশা, আকাক্সক্ষা, যোগ্যতা এবং গ্রাহকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও রুচি অনুধাবন করে সে অনুযায়ী ব্যবসায়িক পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হন। উদ্দীপকে জনাব রূপলাল কর্মী এবং গ্রাহকদের দৃষ্টিভঙ্গি, রুচি প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে ব্যবসায়িক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার এসব কাজের ভেতর দিয়ে তার মানবিক সম্পর্ক অনুধাবন ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তাই বলা যায়, জনাব রূপলাল তার মানবিক সম্পর্ক অনুধাবন গুণটি দ্বারা ব্যবসায়িক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
ঘ. জনাব রূপলাল একজন আদর্শ নেতা বলে আমি মনে করি।
নেতৃত্বদানের কঠিন দায়িত্বশীল কাজটি সম্পাদনের জন্য একজন নেতার অনেকগুলো গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। কেননা উপযুক্ত নেতৃত্ব একটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনকে সহজতর করে। তেমনি নেতার অযোগ্যতা প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। উদ্দীপকে জনাব রূপলালের কার্যাবলিতে একজন আদর্শ নেতার গুণাবলি ফুটে উঠেছে। কারণ আদর্শ নেতা হওয়ার জন্য যেসব গুণাবলি থাকা আবশ্যক জনাব রূপলালের মধ্যে তা বিদ্যমান। তিনি ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কর্মীদের সাথে পরামর্শ করে থাকেন। অর্থাৎ তার মধ্যে সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে। আদর্শ নেতার অন্যতম গুণ হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা, যা জনাব রূপলালের মধ্যে আছে। তাছাড়া তিনি তার সাফল্যের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী, যা আদর্শ নেতার অন্যতম গুণ। তার এ আত্মবিশ্বাসের কারণেই ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে তিনি পরিশ্রমী ও সহনশীল হতে পারেন। উপরিউক্ত গুণাবলির আলোকে জনাব রূপলালকে খুব সহজেই একজন সফল আদর্শ নেতা হিসেবে আখ্যাায়িত করা যায়।

প্রশ্ন-১৫  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জনাব আরিফ তিন বছর আগে লাভলী টেক্সটাইল মিলস এর ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি কারখানার সকল বিভাগের খোঁজখবর নেন এবং বিভাগসমূহের সমস্যা সমাধান করেন। তার নিরলস পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। নিচে জনাব আরিফের সম্পাদিত ব্যবস্থাপনা কার্যের (চক্রের) চিত্র দেয়া হলো :

ক. দলগত প্রক্রিয়া বলা হয় কোনটিকে? ১
খ. ব্যবস্থাপনা বলতে কী বোঝ? ২
গ. চিত্রের ব্যবস্থাপনা চক্রের ‘খ’ কীভাবে কাজ করে ব্যাখ্যা কর? ৩
ঘ. চিত্রে ‘ক’-এর কাজ জনাব আরিফের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ বলে তুমি মনে কর? ৪
 ১৫নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. দলগত প্রক্রিয়া বলা হয় ব্যবস্থাপনাকে।
খ. পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানবিক ও বস্তুগত উপকরণসমূহের কার্যকর ব্যবহারকল্পে গৃহীত প্রচেষ্টাই হলো ব্যবস্থাপনা। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য জনশক্তি ও অন্যান্য বস্তুগত উপাদান; যেমন : যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, অর্থ, পদ্ধতি ও বাজার প্রয়োজন হয়। এসকল উপায় উপকরণের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য একজন ব্যবস্থাপককে পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, সমন্বয়, প্রেষণা ও নিয়ন্ত্রণের কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়।
গ. চিত্রে ‘খ’ চি‎িহ্নত অংশটি হলো নির্দেশনা।
ব্যবস্থাপনা চক্রের চতুর্থ ধাপ হলো নির্দেশনা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কর্মীদের আদেশ-নির্দেশ প্রদান করাকে নিদের্শনা বলে। ব্যবস্থাপক কর্মীদের কোন কাজ কখন, কীভাবে সম্পন্ন করতে হবে তার নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন। যথার্থ নিদের্শনা দিতে পারলে কর্মীরা সর্বাধিক দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে। এ কারণে অনেকে নির্দেশনাদানকে নেতৃত্বদানের সাথে তুলনা করেছেন। উদ্দীপকে জনাব আরিফ প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কর্মীদের আদেশ-নির্দেশ প্রদান করেন। নিদের্শনার মাধ্যমে তিনি কারখানার সকল বিভাগগুলোর খোঁজখবর গ্রহণ করেন এবং তা হতে চি‎িহ্নত সমস্যাগুলো তিনি তত্ত¡াবধানের মাধ্যমে সমাধান করেন। তার সঠিক নির্দেশনার ফলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ জনাব আরিফ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যপানে কর্মীদের সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনা চক্রের ‘খ’ এর কাজটি সম্পাদন করেন।
ঘ. চিত্রে ‘ক’-এর কাজ তথা ব্যবস্থাপনা জনাব আরিফের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যবস্থাপনা চক্রের প্রথম কাজ হচ্ছে পরিকল্পনা প্রণয়ন। পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের দিক নির্দেশনা। কোনো ব্যবসায় সংগঠনের পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভবিষ্যতে কী কাজ, কে, কীভাবে, কখন করবে তা নির্ধারণ করাই হলো পরিকল্পনা। ব্যবসায় শুরু, সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও এর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যবসায় পকিল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম। উদ্দীপকে জনাব আরিফ ব্যবস্থাপক হিসেবে টেক্সটাইল মিলটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য ব্যবস্থাপনা চক্রটি অবলম্বন করেছেন। পরিকল্পনা তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যপানে এগিয়ে নিতে তিনি ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপ হিসেবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন। তারপর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যবস্থাপনার অন্যান্য কার্যাবলি তথা সংগঠিতকরণ কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা দান, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণ কার্যাবলি সম্পাদন করেছেন।

 জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 
প্রশ্ন \ ১ \ ব্যবস্থাপনা কী অর্জনের জন্য পরিচালিত হয়?
উত্তর : ব্যবস্থাপনা পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিচালিত হয়।
প্রশ্ন \ ২ \ কর্মী ছাঁটাই ব্যবস্থাপনার কোন কাজের অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর : কর্মী ছাঁটাই ব্যবস্থাপনার কর্মীসংস্থানের অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন \ ৩ \ কোনটি বাস্তবায়নে কর্মীদের আদেশ-নির্দেশ প্রদান করা হয়?
উত্তর : পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কর্মীদের আদেশ-নির্দেশ প্রদান করা হয়।
প্রশ্ন \ ৪ \ কোনটি কর্মীদের দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করে?
উত্তর : প্রেষণা কর্মীদের দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করে।
প্রশ্ন \ ৫ \ কোনো বিষয়ে আগাম চিন্তা-ভাবনা করাকে কী বলে?
উত্তর : কোনো বিষয়ে আগাম চিন্তা-ভাবনা করাকে পরিকল্পনা বলে।
প্রশ্ন \ ৬ \ সঠিকভাবে দায়িত্ব বণ্টনে কর্মচারীদের মধ্যে কী সৃষ্টি হয়?
উত্তর : সঠিকভাবে দায়িত্ব বণ্টনে কর্মচারীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন \ ৭ \ কোন ধরনের নেতৃত্বে নেতা কর্মীদের নিকট জবাবদিহি করেন?
উত্তর : গণতান্ত্রিক নেতৃত্বে নেতা কর্মীদের নিকট জবাবদিহি করেন।
প্রশ্ন \ ৮ \ কোন নেতার প্রতি কর্মীরা নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে?
উত্তর : স্বৈরতান্ত্রিক নেতার প্রতি কর্মীরা নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে।
প্রশ্ন \ ৯ \ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উৎসাহিত ও পরিচালনা করে কে?
উত্তর : প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উৎসাহিত ও পরিচালনা করে নেতা।
প্রশ্ন \ ১০ \ নেতা কিসের মাধ্যমে অন্যের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা অর্জন করে?
উত্তর : নেতা তার সততা ও সাহসিকতার মাধ্যমে অন্যের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা অর্জন করে।
প্রশ্ন \ ১১ \ ব্যবসায়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করাকে কী বলে?
উত্তর : ব্যবসায়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করাকে অর্থায়ন বলে।
প্রশ্ন \ ১২ \ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ কাজ কোনটি?
উত্তর : ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ কাজ হলো নিয়ন্ত্রণ।
প্রশ্ন \ ১৩ \ কর্মীরা প্রশ্ন করার সুযোগ পান কোন নেতৃত্বে?
উত্তর : কর্মীরা প্রশ্ন করার সুযোগ পান গণতান্ত্রিক নেতৃত্বে।
প্রশ্ন \ ১৪ \ আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্বে কোনটিকে বড় করে দেখা হয়?
উত্তর : আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্বে আদর্শকে বড় করে দেখা হয়।
প্রশ্ন \ ১৫ \ অর্থ সংগ্রহের প্রধান উৎস কোনটি?
উত্তর : অর্থ সংগ্রহের প্রধান উৎস হলো বাণিজ্যিক ব্যাংক।
প্রশ্ন \ ১৬ \ নেতা শুধু আদেশ করেন কোন নেতৃত্বে?
উত্তর : নেতা শুধু আদেশ করেন স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্বে।
প্রশ্ন \ ১৭ \ দায়িত্ব ও ক্ষমতা বণ্টনের কাজকে কী বলে?
উত্তর : দায়িত্ব ও ক্ষমতা বণ্টনের কাজকে সংগঠিতকরণ বলে।
প্রশ্ন \ ১৮ \ ব্যবস্থাপনার ধারণাটি জনপ্রিয়তা লাভ করে কোথা থেকে?
উত্তর : ব্যবস্থাপনার ধারণাটি জনপ্রিয়তা লাভ করে ব্যবসায় পরিচালনা পদ্ধতি থেকে।
প্রশ্ন \ ১৯ \ নেতা কর্মীদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিত থাকেন কোন ধরনের নেতৃত্বে?
উত্তর : নেতা কর্মীদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিত থাকেন মুক্ত নেতৃত্বে।
প্রশ্ন \ ২০ \ সংগঠনের চালিকা শক্তি কোনটি?
উত্তর : সংগঠনের চালিকা শক্তি হলো নির্দেশনা।
প্রশ্ন \ ২১ \ মুক্ত নেতৃত্বে সফলতা কিসের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর : মুক্ত নেতৃত্বে সফলতা নির্ভর করে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের ওপর।
প্রশ্ন \ ২২ \ মানব সভ্যতার মতোই পুরাতন কার ইতিহাস?
উত্তর : মানব সভ্যতার মতোই পুরাতন ব্যবস্থাপনার ইতিহাস।
প্রশ্ন \ ২৩ \ কোন নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধিক সময় লাগে?
উত্তর : মুক্ত নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধিক সময় লাগে।
প্রশ্ন \ ২৪ \ ‘প্রখর ব্যক্তিত্ব’ কার গুণাবলি?
উত্তর : ‘প্রখর ব্যক্তিত্ব’ আদর্শ নেতার গুণাবলি।

 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 
প্রশ্ন \ ১ \ ব্যবস্থাপনা বলতে কী বোঝ?
উত্তর : সংঘবদ্ধ মানবজীবনে ব্যবস্থাপনা এক অতি অপরিহার্য বিষয়। কয়েকজন ব্যক্তি যখন কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একত্রিত হয় তাদের সঠিকভাবে পরিচালনার প্রয়োজন পড়ে। আর একদল মানুষকে তাদের লক্ষ্যপানে এগিয়ে নেয়ার কার্যকর শক্তিই হলো ব্যবস্থাপনা। আরও ব্যাপক অর্থে, সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মূলে যে লক্ষ্য থাকে তা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত উপায়-উপকরণাদি সুষ্ঠু ব্যবহার বা পরিচালনা কার্যকেই ব্যবস্থাপনা বলে।
প্রশ্ন \ ২ \ হেনরি ফেওলের মতে ব্যবস্থাপনা বলতে কী বোঝ?
উত্তর : হেনরি ফেওল (ঐবহৎর ঋধুড়ষ) এর মতে, ‘ব্যবস্থাপনা হলো পূর্বানুমান ও পরিকল্পনা, সংগঠিতকরণ, নির্দেশনা, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণের সমষ্টি।’ অর্থাৎ পূর্বানুমান ও পরিকল্পনা, সংগঠিতকরণ, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণের সমষ্টিই ব্যবস্থাপনা।
প্রশ্ন \ ৩ \ পরিকল্পনা বলতে কী বোঝ?
উত্তর : ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার প্রথম ও প্রধান কাজ হলো পরিকল্পনা। পরিকল্পনা হলো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যাবলি নিয়ন্ত্রণ এবং তা অর্জনের জন্য ভবিষ্যতে কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে, কখন করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে আগাম কর্মসূচি নির্ধারণ করা যা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও বিচার-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে দাঁড় করানো একাধিক বিকল্প কর্মপন্থার মধ্য হতে বাছাই করা হয়।
প্রশ্ন \ ৪ \ প্রেষণা দান বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদেরকে সুষ্ঠুভাবে কার্য সম্পাদনের জন্য উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করার প্রক্রিয়াকে প্রেষণা বলে। একটি কোম্পানির লক্ষ্য বাস্তবায়নে নির্দেশনার পর প্রেষণা দান করা হয়। প্রেষণার ফলে কর্মীরা আগ্রহ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে প্রেষণার ফলে কর্মীরা মানসম্মত কাজ সম্পাদনে সক্ষম হয়। প্রেষণা দ্বারা কর্মীদেরকে নতুন নতুন কাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলা হয়।
প্রশ্ন \ ৫ \ নির্দেশনা বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কর্মীদের আদেশ-নির্দেশ প্রদান করাকে নির্দেশনা বলে। নির্দেশনাকে প্রশাসনের হৃদপিণ্ড বলা হয়। ব্যবস্থাপক কর্মীদের কোন কাজ কখন, কীভাবে সম্পন্ন করতে হবে তা নির্দেশনার মাধ্যমে প্রদান করে থাকেন। যথার্থ নির্দেশনা দিতে পারলে কর্মীরা সর্বাধিক দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে। অনেকে নির্দেশনা দানকে নেতৃত্বদানের সাথে তুলনা করেছেন। নির্দেশনা কার্যে সফলতা লাভ করতে হলে সার্বিক নির্দেশনা প্রক্রিয়ায় বিশেষ প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন। নির্দেশ দান ও তার বাস্তবায়নের সাথে নির্দেশনার নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।
প্রশ্ন \ ৬ \ কর্মীদের প্রেষণা দান প্রয়োজন কেন?
উত্তর : কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন চাকাকে সচল রাখে। কর্মীদের কাছ থেকে জোর করে কোনো কাজ আদায় করা যায় না। স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে কর্মীবাহিনীর নিকট থেকে কাজ আদায় করতে প্রেষণা দান প্রয়োজন। প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনের পরিমাণকে বৃদ্ধি করে।
প্রশ্ন \ ৭ \ মুক্ত নেতৃত্বের অসুবিধা উলে­খ কর।
উত্তর : নেতৃত্বের একটি অন্যতম প্রকার হলো মুক্ত নেতৃত্ব। এ নেতৃত্বের অন্যতম অসুবিধা হলো এরূপ নেতৃত্বে জবাবদিহিতা না থাকায় কর্মীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করে। ফলে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা যায়। এছাড়া এ প্রকার নেতৃত্বের ফলে প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলাবোধ থাকে না। যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ সময় সাপেক্ষ এবং সার্বিকভাবে কর্মীরা নিজে কাজ করতে পছন্দ করে না, প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বিরাট সমস্যা।
প্রশ্ন \ ৮ \ ব্যবসায় অর্থসংস্থানের উৎস শনাক্তকরণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : ব্যবসায় অর্থসংস্থান প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় খাত হলো উৎস শনাক্তকরণ। অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে অর্থসংস্থানের স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন উৎস অনুসন্ধান করা হয়। আর্থিক প্রথা থেকে এবং কোনো মেয়াদে অর্থ সংগ্রহ করা হবে তা বিবেচনা করাই হলো অর্থসংস্থানের উৎস শনাক্তকরণ।
প্রশ্ন \ ৯ \ আদর্শ নেতাকে পরিশ্রমী হতে হয় কেন?
উত্তর : পরিশ্রম যেকোনো কাজের মূল চাবিকাঠি। নেতাকে তার দায়িত্ব পালনের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। নেতা যদি অলস হন, কাজ না করেন, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যান তাহলে অধস্তনদের সঠিকভাবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই নেতাকে পরিশ্রমী হতে হবে।
প্রশ্ন \ ১০ \ আদর্শ নেতার সাংগঠনিক দক্ষতা গুণটি সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : আদর্শ নেতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ হলো সাংগঠনিক দক্ষতা। আদর্শ নেতা এ গুণটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সকল বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখে। কারণ এর মাধ্যমে তিনি কোন দায়িত্বের জন্য কে সবচেয়ে উপযোগী তা বাছাই এবং সে অনুযায়ী দায়িত্ব বণ্টন করতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু শৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার জন্যও এ গুণটি বিশেষ ভ‚মিকা রাখে।
প্রশ্ন \ ১১ \ ব্যবসায়ের অর্থায়ন জরুরি কেন?
উত্তর : ব্যবসায়ের মূল্য সঞ্চালনী শক্তি হলো অর্থ। অর্থকে উৎপাদনের প্রধান উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থ ছাড়া সম্পদ সংগ্রহ, উৎপাদন, বণ্টন কোনো কার্যই চলতে পারে না। ব্যবসায়ের রক্তসম এই অর্থের জোগান আসে অর্থায়নের মাধ্যমে। এজন্যই ব্যবসায়ে অর্থায়ন অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্ন \ ১২ \ আদর্শ নেতাকে কেন প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হতে হয়?
উত্তর : আদর্শ নেতার অন্যতম একটি গুণ হলো প্রখর ব্যক্তিত্ব। আদর্শ নেতা এ গুণটির আলোকে তার মার্জিত ব্যবহার, সম্মোহনী ক্ষমতা দ্বারা অপরকে আকর্ষণ করেন। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে ধীরস্থির হয়ে যেকোনো কাজে তার ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটান, যা সার্বিকভাবে তার কাজ ও দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। এজন্য আদর্শ নেতাকে প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হতে হয়।

 

Leave a Reply