অধ্যায়-৬
সমবায় সমিতি
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন১ মধ্যস্থব্যবসায়ীদের হাত থাকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কুমারখালীর তাঁতিরা ২০১২ সালে ৫০ জন সদস্য একত্রিত হয়ে একটি সমবায় সমিতি গঠন করেন। পরবর্তী তিন বছরে তাদের অর্র্জিত মুনাফার পরিমাণ যথাক্রমে ৬০,০০০, ৬৫,০০০ ও ৭৫,০০০ টাকা। তারা বিধিবদ্ধ নিয়ম অনুসারে ন্যূনতম হারে সঞ্চিতি তহবিল সংরক্ষণ করেন। তারা প্রতিটা তাঁতকল ১৫,০০০ টাকা দরে দুইটি তাঁতকল ক্রয়ের জন্য সংরক্ষিত তহবিল ব্যবহারের চিন্তা করছেন। [ঢা. বো. ১৭]
অ ক. সমবায়ের মূলমন্ত্র কী? ১
অ খ. সমবায়ের উপবিধি বলতে কী বোঝ? ২
অ গ. উদ্দীপকে তিন বছরের মোট মুনাফার সর্বোচ্চ কত পরিমাণ অর্থ সদস্যদের মধ্যে বণ্টিত হবে? নির্ণয় করো। ৩
অ ঘ. তুমি কি মনে করো সংরক্ষিত তহবিলের টাকা হতে দুটি তাঁতকল ক্রয়ের সমুদয় অর্থের সংস্থান হবে? যুক্তিসহ মতামত দাও। ৪
১ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক ‘একতাই বল’ সমবায়ের মূলমন্ত্র।
খ সমবায় সমিতির পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়ম-কানুন যে দলিলে লেখা থাকে তাকে সমবায় উপবিধি (ইু-ষধংি) বলে।
এটি সমবায়ের মূল বা প্রধান দলিল। এর ওপর ভিত্তি করে সমবায় সমিতি গঠিত ও পরিচালিত হয়। এর বাইরে কোনো কাজ করা সমিতির সদস্যদের জন্য বৈধ নয়। উপবিধি বহিভর্‚ত কোনো বিষয়ের উদ্ভব হলে তা সমবায় নিবন্ধকের অনুমতি নিয়ে সমবায় আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী সমাধান করতে হয়।
গ উদ্দীপকে গঠিত সমবায় সমিতিটির তিন বছরের অর্জিত মুনাফা হলো ৬০,০০০ টাকা, ৬৫,০০০ টাকা ও ৭৫০০০ টাকা। তারা বিধিবদ্ধ নিয়ম অনুসারে ন্যূনতম হারে সঞ্চিতি তহবিল সংরক্ষণ করেন। এর মধ্যে সমবায় আইনানুযায়ী ১৫% সংরক্ষিত তহবিল এবং ৩% উন্নয়ন তহবিলে চাঁদা হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। এ ১৮% বাদে বাকি ৮২% মুনাফা সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রতি সদস্য তার ক্রয়কৃত শেয়ার অনুপাতে মুনাফা পাবে।
সুতরাং সদস্যদের বণ্টনযোগ্য মুনাফার পরিমাণ হবেÑ
তিন বছরে অর্জিত মোট মুনাফা (৬০,০০০ + ৬৫০০০ + ৭৫,০০০) টাকা
= ২,০০,০০০ টাকা
বাদ: ১৫% সংরক্ষিত তহবিল (২,০০,০০০ ১৫%) = ৩০,০০০ টাকা
বাদ: ৩% উন্নয়ন তহবিল (২,০০,০০০ ৩%) = ৬,০০০ টাকা
বণ্টনযোগ্য মোট মুনাফা হবে = ১,৬৪,০০০ টাকা।
সদস্যদের বণ্টনযোগ্য মোট মুনাফার পরিমাণ ১,৬৪,০০০ টাকা।
ঘ আমি মনে করি, সংরক্ষিত তহবিলের টাকা হতে দুটি তাঁতকল ক্রয়ের সমুদয় অর্থের সংস্থান হবে।
সমবায় সমিতির অর্জিত মুনাফার সম্পূর্ণই সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হয় না। আইনানুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে অর্জিত মুনাফার ন্যূনতম ১৫% সংরক্ষিত তহবিলে এবং ৩% উন্নয়ন তহবিলে চাঁদা হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।
উদ্দীপকের কুমারখালীর তাঁতিরা একটি উৎপাদন সমবায় সমিতি গঠন করে তারা সমিতির অর্জিত মুনাফার ১৫% সংরক্ষিত তহবিলে জমা রাখেন। পরে ১৫,০০০ টাকা দরে দুইটি তাঁতকল ক্রয়ের জন্য সংরক্ষিত তহবিল ব্যবহারের চিন্তা করছেন। তাঁতকল ক্রয়ের জন্য মোট (১৫,০০০২) বা ৩০,০০০ টাকা প্রয়োজন।
সংরক্ষিত তহবিলে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায়Ñ(৬০,০০০ + ৬৫,০০০ + ৭৫,০০০) ১৫% = ৩০, ০০০ টাকা। তাদের তাঁতকল কেনার জন্যও ৩০,০০০ টাকা প্রয়োজন। সুতরাং এ সংরক্ষিত তহবিলের টাকা হতেই তারা ২টি তাঁতকল ক্রয়ের সমুদয় অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
মমমপ্রশ্ন২ ঢাকার মিরপুর এলাকায় ‘মেঘনা সমবায় সমিতি’ ও ‘আশার আলো’ নামে দুটি সমবায় সমিতি রয়েছে। মেঘনা সমবায় সমিতির সদস্যরা তাদের তৈরি করা খেলনাসামগ্রী একত্র করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে। এতে অত্র এলাকার মানুষের আয় বেড়েছে। অপরদিকে আশার আলো সমবায় সমিতির সদস্যরা তাদের প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য সরাসরি কোম্পানি থেকে কিনে এনে নিজেরা ভাগ করে নেয়।
[রা. বো., কু. বো., চ. বো. ১৭]
অ ক. ট্রেডমার্ক কী? ১
অ খ. আচরণে অনুমিত অংশীদার বলতে কী বোঝায়? ২
অ গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ‘আশার আলো’ কোন ধরনের সমবায় সমিতি? ব্যাখ্যা করো। ৩
অ ঘ. অত্র এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মেঘনা সমবায় সমিতির ভ‚মিকা বিশ্লেষণ করো। ৪
২ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক কোনো প্রতিষ্ঠান বা এর পণ্যের স্বাতন্ত্র্যতা প্রকাশ করার জন্য যে বিশেষ চিহ্ন, প্রতীক, শব্দ বা লোগো ব্যবহার করা হয় তাকে ট্রেডমার্ক বলে।
খ কোনো ব্যক্তি আচরণের মাধ্যমে নিজেকে কোনো ব্যবসায়ের অংশীদার হিসেবে পরিচয় দিলে ঐ ব্যক্তিকে আচরণে অনুমিত অংশীদার বলে।
অংশীদারি আইনের ২৮(ক) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ব্যবসায়ের অংশীদার না হয়েও যদি মৌখিক কথাবার্তা বা অন্য কোনো আচরণের দ্বারা নিজেকে ব্যবসায়ের অংশীদার বলে পরিচয় দেয় তবে তাকে আচরণে অনুমিত অংশীদার বলে। এ ধরনের অংশীদারের আচরণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তৃতীয় পক্ষ কোনো প্রকার ঋণ দিলে তার জন্য আচরণে অনুমিত অংশীদার দায়ী থাকেন।
গ উদ্দীপকে বর্ণিত ‘আশার আলো’ ভোক্তা সমবায় সমিতির অন্তর্ভুক্ত।
পণ্য ক্রয়ে সুবিধা পাওয়ার জন্য একই এলাকার সমশ্রেণির কয়েক জন ভোক্তা মিলে ভোক্তা সমবায় সমিতি গঠন করেন। এ সমিতির মাধ্যমে তারা ন্যায্যমূল্যে উন্নতমানের পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ করতে পারেন। আবার, সমিতি থেকে অর্জিত মুনাফাও তারা ভোগ করতে পারেন। এ ধরনের সমিতিতে সদস্যদের বার্ষিক ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য অনুপাতে সদস্যদের মাঝে অর্জিত মুনাফা বণ্টিত হয়।
উদ্দীপকের ঢাকার মিরপুর এলাকায় ‘আশার আলো’ নামে একটি সমিতি রয়েছে। এর সদস্যরা তাদের প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য সরাসরি কোম্পানি থেকে কিনে এনে নিজেরা ভাগ করে নেন। ভোক্তারা তাদের আর্থিক সাশ্রয়ের জন্য এ সমিতি পরিচালনা করছেন। তারা সমিতি থেকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য ক্রয় করেন। এসব বৈশিষ্ট্য ভোক্তা সমবায় সমিতির কার্যক্রমের আওতায় পড়ে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের ‘আশার আলো’ ভোক্তা সমবায় সমিতির অন্তর্ভুক্ত।
ঘ অত্র এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ‘মেঘনা সমবায় সমিতি’ গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে।
কোনো এলাকায় একই ধরনের ক্ষুদ্র উৎপাদনকারীগণ তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অধিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে বিক্রয় সমবায় সমিতি গঠন করেন। এর ফলে মধ্যস্থব্যবসায়ীদের দৌরাÍ্য কমিয়ে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
উদ্দীপকে উলেখ্য, ঢাকার মিরপুরে ‘মেঘনা সমবায় সমিতি’ নামে একটি সমিতি রয়েছে। এর সদস্যরা তাদের তৈরি খেলনা সামগ্রী একত্র করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করেন। সমিতিটি বিক্রয় সমবায় সমিতির অন্তর্ভুক্ত।
এরূপ সমিতি গঠনের ফলে কোনো মধ্যস্থব্যবসায়ীর সাহায্য ছাড়াই তারা ন্যায্য দামে পণ্য বিক্রয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। এতে তারা অধিক লাভবান হচ্ছেন। ফলে সদস্যদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটছে। তাছাড়া সমিতির সাফল্য দেখে এলাকার অন্যান্য লোকজনও এ ধরনের সমিতি গঠনে আগ্রহী হয়। এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এভাবে সমিতিটি অত্র এলাকায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখে।
মমমপ্রশ্ন৩ পাবনার বিলালসহ ৫০ জন তাঁতি মিলে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেন। তিন বছরে তাদের মূলধন দাঁড়ায় ২০ লক্ষ টাকা। চতুর্থ বছরে মোট মুনাফা ১,০০,০০০ টাকা হতে ৩৫,০০০ টাকা তাদের সংরক্ষিত তহবিলে এবং ১৫,০০০ টাকা উন্নয়ন তহবিলে জমা করেন। অবশিষ্ট টাকা সদস্যরা নিজেদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে নিলেন। [দি. বো. ১৭]
অ ক. সমবায়ের ‘উপবিধি’ কাকে বলে? ১
অ খ. সমবায় সমিতিতে ‘একতাই বল’ ধারণাটি ব্যাখ্যা করো। ২
অ গ. উদ্দীপকে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানটি কোন ধরনের সমবায় সমিতি? ব্যাখ্যা করো। ৩
অ ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিভিন্ন তহবিলে টাকা সংরক্ষণের পরিমাণ যাচাই করো। ৪
৩ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক যে দলিলে সমবায় সমিতির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কাজ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়ম-কানুন উলেখ থাকে তাকে সমবায় সমিতির উপবিধি (ইু-খধংি) বলে।
খ ‘একতাই বল’ এ মৌলিক নীতির ওপর ভিত্তি করে সমবায় সমিতি গঠিত হয়। এ নীতির মূল বিষয় হলো সদস্যদের মধ্যে একতা বজায় রাখা।
দরিদ্র ও সমমনা ব্যক্তিরা নিজেদের সীমিত সামর্থ্যকে একত্রিত করে সমবায় গঠন করে। তাই সফলতা লাভে সব অবস্থায়ই এর সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয়। সমবায় সমিতি সমাজের দুর্বল শ্রেণিকে ঐক্যবদ্ধ করে পারস্পরিক সহযোগিতায় পথ চলার নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এতে তাদের মধ্যে একতা প্রতিষ্ঠা হয়ে সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। এটিই একতাই বল নীতির মূল ভাষ্য।
গ উদ্দীপকে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদক সমবায় সমিতি।
কতিপয় উৎপাদক নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উৎপাদন ও বিক্রয় কাজকে অধিকতর ফলপ্রসূ করতে উৎপাদক সমবায় সমিতি গড়ে তোলে। মহাজন ও মধ্যস্থব্যবসায়ী থেকে রক্ষা পেতে ক্ষুদ্র উৎপাদকরা এরূপ সমিতি গঠন করে থাকে।
উদ্দীপকে উলিখিত, পাবনার বিলালসহ ৫০ জন তাঁতি মিলে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। চতুর্থ বছরের মুনাফা থেকে তারা সংরক্ষিত তহবিল এবং উন্নয়ন তহবিলে অর্থ জমা করেন। অবশিষ্ট অর্থ সদস্যরা নিজেদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে নেন। এ সমিতির মাধ্যমে তারা মধ্যস্থব্যবসায়ীদের দৌরাÍ্য ছাড়াই ন্যায্যদামে উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করে লাভবান হতে পারছেন। তারা নিজেদের অর্থনৈতিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে সমিতি গড়ে তুলেছেন। তাদের এ সমিতির কার্যক্রম উৎপাদক সমবায় সমিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং উদ্দীপকে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদক সমবায় সমিতির আওতাভুক্ত।
ঘ সমবায়ের অর্জিত মুনাফার সবটুকু সদস্যদের মধ্যে বণ্টিত হয় না। সমবায় আইন অনুসারেই বাধ্যতামূলকভাবে এর ন্যূনতম ১৫% সংরক্ষিত তহবিলে এবং ৩% সমবায় উন্নয়ন তহবিলে চাঁদা হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। অবশিষ্ট মুনাফা সদস্যরা নিজেদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে নেয়।
উদ্দীপকে বর্ণিত বিভিন্ন তহবিলে টাকা সংরক্ষণের পরিমাণ হবেÑ
১৫% সংরক্ষিত তহবিল (১,০০,০০০ ১৫%) = ১৫,০০০ টাকা
যোগ: ৩ % উন্নয়ন তহবিল = (১,০০,০০০ ৩%) = ৩,০০০ টাকা
সঞ্চিতি তহবিল (১৫% + ৩%) বা ১৮% = ১৮,০০০ টাকা
এখানে, সংরক্ষিত তহবিলে জমার পরিমাণ নির্ণয় হয়েছে ১৫,০০০ টাকা এবং উন্নয়ন তহবিলে জমার পরিমাণ ৩,০০০ টাকা। কিন্তু উদ্দীপকে দেওয়া আছে, সংরক্ষিত তহবিলে তারা ৩৫,০০০ টাকা এবং উন্নয়ন তহবিলে ১৫,০০০ টাকা জমা করেন। সুতরাং বলা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সমবায় সমিতির আইনানুযায়ী সঠিকভাবে হিসাব সংরক্ষণ করেনি।
মমমপ্রশ্ন৪ দোহাজারীর আলুচাষি নাসির আরও ৪০ জন আলুচাষি নিয়ে একটি সমবায় সমিতি গঠন করেন। তাদের উদ্দেশ্য হলো প্রয়োজনীয় সার, বীজ, কীটনাশক ক্রয় এবং আলু সংরক্ষণ ও বিক্রয়ে সুবিধা লাভ করা। উক্ত সমবায় গঠনের চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে সমবায় নিবন্ধক তার সিল ও স্বাক্ষরযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল নাসিরকে প্রদান করেন। উক্ত দলিলে সমিতির মোট শেয়ার সংখ্যা ১,০০০ উলেখ আছে। নাসির ২০০ শেয়ার ক্রয় করেন। আগামী নির্বাচনে সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার জন্য তিনি আরও শেয়ার ক্রয়ের পরিকল্পনা করছেন। [সি. বো. ১৭]
অ ক. সমবায় সমিতির উপবিধি কী? ১
অ খ. জাতীয় সমবায় সমিতি বলতে কী বোঝায়? ২
অ গ. সদস্যদের প্রকৃতির ভিত্তিতে উদ্দীপকের সমবায় সমিতির ধরন ব্যাখ্যা করো। ৩
অ ঘ. নাসির আরও শেয়ার ক্রয় করতে পারবে কি? যুক্তিসহ মতামত দাও। ৪
৪ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক যে দলিলে সমবায় সমিতির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কাজ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়ম-কানুনের বিষয় উলেখ থাকে তাকে সমবায় সমিতির উপবিধি (ইু-খধংি) বলে।
খ সমবায় সমিতির সর্বোচ্চ পর্যায়ের সমিতিকে বলে জাতীয় সমবায় সমিতি।
সাধারণত কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতিগুলোই এর সদস্য হয়ে থাকে। ১০ বা ততোধিক কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির মাধ্যমে জাতীয় সমবায় সমিতি গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধির সমন্বয়ে এরূপ সমিতির নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।
গ সদস্যদের প্রকৃতি বিচারে উদ্দীপকের সমিতিটি উৎপাদক সমবায় সমিতি।
কতিপয় উৎপাদক নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উৎপাদন ও বিক্রয় কার্যকে অধিকতর ফলপ্রসূ করতে উৎপাদক সমবায় সমিতি গড়ে তোলেন। মহাজন ও মধ্যস্থব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পরিত্রাণ পেতে ক্ষুদ্র উৎপাদকরা এরূপ সমিতি গঠন করে থাকেন। এ সমিতির মাধ্যমে উৎপাদকগণ পণ্যের উপযুক্ত মূল্য পেয়ে থাকেন।
উদ্দীপকের দোহাজারীর নাসির আরও ৪০ জন আলুচাষি নিয়ে একটি সমবায় সমিতি গঠন করেন। তাদের সমিতির উদ্দেশ্য হলো আলু চাষে প্রয়োজনীয় সার, বীজ, কীটনাশক ক্রয় এবং আলু সংরক্ষণ ও বিক্রয়ে সুবিধা লাভ করা। এ সমিতির মাধ্যমে তারা মধ্যস্থব্যবসায়ীদের দৌরাÍ্য ছাড়াই ন্যায্যদামে উৎপাদিত আলু বিক্রয় করে লাভবান হতে পারেন। তারা নিজেদের অর্থনৈতিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে এ সমিতি গড়ে তোলেন। তাদের এ কার্যক্রম উৎপাদক সমবায় সমিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সমিতিটি উৎপাদক সমবায় সমিতির আওতাভুক্ত।
ঘ আইনানুযায়ী সমবায় সমিতির একজন সদস্য সর্বোচ্চ ১৫ শেয়ার ক্রয় করতে পারেন, তাই উদ্দীপকের নাসিরের পক্ষে আর শেয়ার ক্রয় করা সম্ভব নয়।
সমবায় সমিতির সদস্যদের মধ্যে যেন কোনো বৈষম্য সৃষ্টি না হয় সেজন্য অবাধে শেয়ার ক্রয়ের সুযোগ দেওয়া হয় না। কেননা অর্থনৈতিক সমতা বিধানের জন্যই সমবায়ের সৃষ্টি। ফলে সব সদস্যর সমান অধিকার বজায় থাকে।
উদ্দীপকের দোহাজারীর নাসির আরও ৪০ জন আলুচাষি মিলে একটি উৎপাদক সমবায় সমিতি গড়ে তোলেন। উক্ত সমিতির উপবিধিতে (ইু-খধংি) মোট শেয়ার সংখ্যা ১,০০০টি উলেখ আছে। ইতোমধ্যে নাসির ২০০টি অর্থাৎ মোট শেয়ারের ১৫ ভাগ শেয়ার ক্রয় করেছেন।
সমবায় সমিতি ধন বৈষম্য হ্রাস ও সদস্যদের সমঅধিকার প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। এতে প্রত্যেক সদস্য একটি মাত্র ভোট দিতে পারেন। আর একজন সদস্য মোট শেয়ারের সর্বোচ্চ ১৫ শেয়ার ক্রয় করতে পারেন, উদ্দীপকের নাসিরও ১৫ শেয়ারই ক্রয় করেছেন। তাই আগামী নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার জন্য অতিরিক্ত শেয়ার ক্রয়ের ইচ্ছা থাকলেও তিনি তা ক্রয় করতে পারবেন না।
মমমপ্রশ্ন৫ রফিক পেশায় একজন রিকশা-ভ্যানচালক। স্বল্প আয়ের লোক বিধায় সংসার চালাতে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়। অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে কয়েকজন বন্ধু মিলে ভ্যানচালক সমবায় সমিতি গঠন করেন। তারা দৈনিক ভিত্তিক চাঁদা দিয়ে সঞ্চয় জমা করেন এবং জমাকৃত টাকা ব্যবসায়িক কাজে লাগিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হন। সমিতি অল্পদিনে ৩৫টি ভ্যান গাড়ি নিজস্ব অর্থায়নে ক্রয় করে। সমিতির সদস্য সংখ্যা এখন ৮৩ জন। [য. বো. ১৭]
অ ক. সমবায়ের মূল উদ্দেশ্য কী? ১
অ খ. ভোক্তা সমবায় সমিতি বলতে কী বোঝায়? ২
অ গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সমবায় সমিতি সদস্যদের প্রকৃতি বিচারে কোন ধরনের? ব্যাখ্যা করো। ৩
অ ঘ. বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে রফিকের উদ্যোগ উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো। ৪
৫ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক সমবায়ের মূল উদ্দেশ্য হলো সদস্যদের আর্থিক কল্যাণসাধন করা।
খ একই এলাকার কতিপয় ভোক্তা ন্যায্যমূল্যে পণ্য ক্রয়ে সুবিধা পাওয়ার জন্য নিজেদের প্রচেষ্টায় যে সমিতি গঠন করে তাকে ভোক্তা সমবায় সমিতি বলে।
এ সমিতির মাধ্যমে ভোক্তারা একটি সমবায় বিপণি গঠন করে তা পরিচালনা করে। এতে একদিকে যেমন নিজেদের জন্য ন্যায্য মূল্যে উন্নতমানের পণ্য ক্রয় করা যায়। অন্যদিকে এ বিপণি হতে অর্জিত মুনাফাও সদস্যরা ভোগ করতে পারে। এরূপ বিপণিতে পণ্য বিক্রয় থেকে সমবায় সদস্য ছাড়া সাধারণ ভোক্তারাও কম দামে পণ্য ক্রয়ের সুবিধা পেতে পারে।
গ উদ্দীপকে বর্ণিত সমবায় সমিতিটি সদস্যদের প্রকৃতি বিচারে শ্রমজীবী সমবায় সমিতির অন্তর্ভুক্ত।
বিভিন্ন ধরনের শ্রমজীবী মানুষ তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ও নিজেদের শ্রমস্বার্থ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে শ্রমজীবী সমবায় সমিতি গড়ে তোলেন। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের অর্থনৈতিক কল্যাণসাধন করতে পারেন।
উদ্দীপকের রফিক পেশায় একজন রিকসা-ভ্যানচালক। স্বল্প আয়ের লোক বিধায় সংসার চালাতে মহাজনের কাছ থেকে তাকে মাঝে মধ্যে ঋণ নিতে হয়। এ অবস্থা উত্তরণের লক্ষ্যে কয়েকজন বন্ধু মিলে ভ্যানচালক সমবায় সমিতি গঠন করেন। তারা এ সমিতিতে দৈনিক ভিত্তিক চাঁদা দিয়ে সঞ্চয় করেন। শ্রমজীবী মানুষেরা নিজেদের আর্থিক কল্যাণের জন্যই মূলত এরূপ সমিতি গড়ে তোলেন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের সমিতিটি সদস্যদের প্রকৃতি বিচারে শ্রমজীবী সমবায় সমিতির আওতায় পড়ে।
ঘ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে রফিকের সমবায় সমিতি গঠনের উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সমবায় সমিতি গড়ে তোলার মাধ্যমে স্বল্পবিত্তসম্পন্ন ও অসহায় মানুষ নিজেদের আর্থিক কল্যাণসাধন করতে পারেন। সমিতির মাধ্যমে সদস্যদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে ওঠে। দারিদ্র্য ও বেকারত্ব হ্রাসে সমবায় সমিতি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে।
উদ্দীপকের রফিক তার কয়েকজন ভ্যানচালক শ্রমিক বন্ধু নিয়ে একটি সমবায় সমিতি গঠন করেন। সেখানে তারা দৈনিক ভিত্তিতে তাদের আয় থেকে সঞ্চয় করেন। এভাবে জমাকৃত অর্থ দিয়ে তারা ৩৫টি ভ্যানগাড়ি নিজস্ব অর্থায়নে ক্রয় করেন। এতে একদিকে তাদের যেমন সম্পদ বাড়ে, অন্যদিকে আরও ভ্যানগাড়ি ক্রয়ের মাধ্যমে অধিক মুনাফা অর্জনের ব্যবস্থা হয়েছে।
সমিতির মাধ্যমে তাদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় থাকে। তারা নিজেদের আর্থিক কল্যাণসাধনের সুযোগ পায়। এছাড়া সঞ্চিত অর্থ থেকে তারা প্রয়োজনে ঋণ নিতে পারেন। শ্রমিকদের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কেনা ভ্যানগাড়ি চালানোর জন্য আরও শ্রমিক নিয়োগের ফলে অন্যান্য শ্রমিকদেরও পারিবারিক আয়ের একটি ব্যবস্থা হয়েছে। সার্বিকভাবে এরূপ সমিতি সমাজের মানুষ ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
মমমপ্রশ্ন৬ মুন গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা তাদের নিজেদের কল্যাণার্থে কারখানা গেইটের সামনে একটি দোকান স্থাপন করে। এ দোকানের মালিক এবং ক্রেতা তারাই । তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি ব্যবসায়টি চালায়। প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিনিয়োগ যাই হোক না কেন প্রত্যেকের অংশগ্রহণ থাকে সমান। তারা তাদের সংগঠন থেকে বিবিধ সহায়তা পেয়ে থাকে। [ব. বো. ১৭]
অ ক. সমবায় সমিতির ‘উপবিধি’ কী? ১
অ খ. বহুমুখী সমবায় সমিতি বলতে কী বোঝ? ২
অ গ. ‘সব অংশীদারের সমান অংশগ্রহণ’ এতে সমবায়ের কোন নীতিটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ই ঘ. সংগঠনটি থেকে শ্রমিকেরা কী কী সুবিধা পাচ্ছে বলে তুমি মনে করো? তোমার মতামত দাও। ৪
৬ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক যে দলিলে সমবায় সমিতির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কার্য পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়ম-কানুনের বিষয় উলেখ থাকে তাকে সমবায় সমিতির উপবিধি (ইু-খধংি) বলে।
খ একাধিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে সমবায় সমিতি গঠিত হয় তাকে বহুমুখী সমবায় সমিতি বলে।
বহুমুখী সমবায় সমিতি সাধারণত উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয়, ঋণদান ইত্যাদি বিভিন্নমুখী উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য গঠিত হয়। একে বহু উদ্দেশক সমবায় সমিতিও বলা হয়। আমাদের দেশে অধিকাংশ সমবায় সমিতিই বহুমুখী সমবায় সমিতি হিসেবে গঠিত ও পরিচালিত হয়।
গ ‘সকল অংশীদারের সমান অংশগ্রহণ’Ñএতে সমবায়ের ‘সাম্যতা’ নীতিটি প্রতিফলিত হয়েছে।
সমবায় সমিতি সাম্যের নীতিতে প্রতিষ্ঠিত। সদস্যগণ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক যে ধরনের মর্যাদাই ভোগ করুক না কেনো সমবায়ের ক্ষেত্রে সবাই সমান মর্যাদার অধিকারী। সমিতির কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে সকলের অধিকারই সমান।
উদ্দীপকের মুন গার্মেন্টসের শ্রমিকরা নিজ উদ্যোগে একটি সমবায় বিপণি গঠন করে। তারা নিজেদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি দিয়ে বিপণিটি পরিচালনা করে। প্রতি তিন বছর অন্তর এখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিনিয়োগ যাই হোক না কেন প্রত্যেক সদস্যের অংশগ্রহণ সমান থাকে। এতে সবার সমান ভোটাধিকার রয়েছে। ফলে প্রত্যেক সদস্য মাত্র একটি ভোটই দিতে পারে। কোনো সদস্য একাধিক শেয়ার ক্রয় করলেও সে একটি ভোটই দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এটি সাম্যের নীতির আওতায় পড়ে। সুতরাং উদ্দীপকে সব অংশীদারের সমান অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাম্যের নীতিটিই প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ সমবায় সংগঠনটি থেকে শ্রমিকরা নিজেদের আর্থিক উন্নয়নের প্রয়োজনীয় সুবিধা পাচ্ছে।
নিজেদের অর্থনৈতিক কল্যাণের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমবায় সংগঠন গড়ে তোলা হয়। তুলনামূলকভাবে কমবিত্তসম্পন্ন মানুষ নিজেদের স্বার্থেই সংঘবদ্ধ হয়ে সমঅধিকারের ভিত্তিতে এ ধরনের সংগঠন গড়ে তোলে।
উদ্দীপকের মুন গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা নিজেদের কল্যাণার্থে যে সমবায় বিপণি গঠন করেছে তার মালিক এবং ক্রেতা তারাই । এখান থেকে সাধারণ ক্রেতারাও ন্যায্যমূল্যে পণ্য ক্রয় করতে পারছে। যার ফলে বাজারজাতকরণে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাÍ্য কমছে। বিপণি মালিকরাও এতে লাভবান হচ্ছে।
নিজেদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি সমিতিটি পরিচালনা করে। এতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেখানে সদস্যদের বিনিয়োগ যা-ই হোক না কেন প্রত্যেকের অংশগ্রহণ সমান থাকে। একটির বেশি ভোট কেউ দিতে পারে না। ফলে তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় থাকে। পাশাপাশি সমিতির বার্ষিক ক্রয় অনুপাতে সদস্যরা মুনাফা পেয়ে থাকে। এভাবে তাদের আর্থিক কল্যাণসাধিত হয়। উক্ত সমিতি থেকে শ্রমিকরা এ সুবিধাগুলো পাচ্ছে।
মমমপ্রশ্ন৭ তোমার এলাকার ১০০ জন কৃষক পণ্য উৎপাদন, ক্রয় ও বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ‘সততা’ নামের একটি সমবায় সমিতি গঠন করে। সমিতিতে তাদের প্রত্যেকের শেয়ার সমান। ২০১৫ সালে উক্ত সমিতি ১০ লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন করে। সমবায় আইন অনুযায়ী তারা অর্জিত মুনাফা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে। [ঢা. বো. ১৬]
অ ক. সমবায় সমিতির উপবিধি কী? ১
খ. সমবায় সমিতির সাম্যের নীতিটি ব্যাখ্যা করো। ২
গ. উদ্দীপকে উলিখিত সংগঠনটি কোন প্রকারের সমবায় সমিতি? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. ‘সততা’ সমিতির প্রত্যেক সদস্যের প্রাপ্ত মুনাফা নির্ণয় করো। ৪
৭ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক যে দলিলে সমবায় সমিতির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কাজ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়ম-কানুন উলেখ থাকে তাকে সমবায় সমিতির উপবিধি (ইু-খধংি) বলে।
খ সমবায় সমিতি সাম্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত। সমবায়ের সব সদস্যই সমান মর্যাদার অধিকারী। এটিই সমবায় সমিতির সাম্যের নীতি।
সমবায়ের সদস্যরা সামাজিক, অর্থনৈতিক বা পারিবারিকভাবে যে যেমনই হোক না কেন, সবাই এখানে সমান মর্যাদার অধিকারী। সমবায়ে কোনো সদস্য যেই পরিমাণ শেয়ার মূলধনের মালিক হোক না কেন, সাম্যের নীতিতে সবাই একটি মাত্র ভোটের অধিকারী।
গ উদ্দীপকে উলিখিত সংগঠনটি হলো বহুমুখী সমবায় সমিতি।
একাধিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কোনো সমবায় সমিতি গঠিত হলে তাকে বহুমুখী সমবায় সমিতি বলে। এটি উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয়, ঋণ দান ইত্যাদি বিভিন্নমুখী উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়।
উদ্দীপকে আমার এলাকায় ১০০ জন কৃষক পণ্য উৎপাদন, ক্রয় ও বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ‘সততা’ নামের একটি সমবায় সমিতি গঠন করে। সমিতিতে তাদের প্রত্যেকের শেয়ার সমান। অর্থাৎ কৃষকরা এ সমিতির মাধ্যমে তাদের কৃষিপণ্য উৎপাদন, ক্রয় এবং ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয় করবে। এ সমিতির সাহায্যে কৃষকদের নানাবিধ উদ্দেশ্য অর্জিত হবে। অর্থাৎ মাত্র একটি উদ্দেশ্যের জন্য সমিতিটি গঠিত হয়নি। তাই বলা যায়, উলিখিত সমবায় সমিতি হলো বহুমুখী সমবায় সমিতি।
ঘ ‘সততা’ সমিতির প্রত্যেক সদস্যের প্রাপ্ত মুনাফা নির্ণয়ে সমবায় আইন অনুসরণ করতে হবে।
সমবায় সমিতিকে বাধ্যতামূলকভাবে মুনাফার ন্যূনতম ১৫% সংরক্ষিত তহবিলে এবং ৩% সমবায় উন্নয়ন তহবিলে জমা রাখতে হয়। অর্থাৎ অর্জিত মুনাফার ১৮% জমা রেখে বাকি অর্থ শেয়ার অনুপাতে বণ্টন করা হয়।
‘সততা’ সমবায় সমিতির সদস্য ১০০ জন। সমিতিতে তাদের প্রত্যেকের শেয়ার সমান। তাই অর্জিত মুনাফা থেকে সবাই সমান হারে মুনাফা পাবে। সমিতিটি ২০১৫ সালে ১০ লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন করে। সমবায় আইন অনুযায়ী তারা অর্জিত মুনাফা ১৮% জমা রেখে বাকি মুনাফা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে।
অর্থাৎ সমবায় আইন অনুযায়ী সমিতিটি অর্জিত ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে জমা রাখবে
আবার, ১০,০০,০০০ ১৮১০০ % = ১,৮০,০০০ টাকা
১০,০০,০০০ ১,৮০,০০০ = ৮,২০,০০০ টাকা মুনাফা সব সদস্যদের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হবে।
মোট সদস্য ১০০ হওয়ায় প্রত্যেকে মুনাফা পাবে
৮,২০,০০০ ১০০ = ৮,২০০ টাকা
অর্থাৎ সততা সমিতির প্রত্যেক সদস্যর প্রাপ্ত মুনাফা ৮,২০০ টাকা করে।
মমমপ্রশ্ন৮ বংশালের ২০ জন জুতা প্রস্তুতকারী কারখানার মালিক মিলে আইনগত সত্তাবিশিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। প্রতিষ্ঠানটি গত তিন বছর যাবৎ যথাক্রমে ৬,০০,০০০ টাকা, ৮,০০,০০০ টাকা ও ৯,০০,০০০ টাকা মুনাফা অর্জন করে। অর্জিত মুনাফা বিধিমোতাবেক সঞ্চিতি তহবিলে রেখে অবশিষ্ট টাকা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেয়। তারা নিজেদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য আফতাব নগরে এককালীন ১০,০০,০০০ টাকা প্রদান করে কিস্তিতে একটি প্লট কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। [রা. বো., চ. বো. ১৬]
অ ক. রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় কী? ১
খ. ব্যবসায়ের আইনগত সত্তা কেন প্রয়োজন? ব্যাখ্যা করো। ২
গ. প্রকৃতি বিচারে প্রতিষ্ঠানটি কোন ধরনের সমবায় সমিতি? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. তুমি কি মনে করো সঞ্চিতি তহবিল হতে আবাসন সমস্যা সমাধান সম্ভব? উদ্দীপকে বিবেচনায় যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করো। ৪
৮ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক রাষ্ট্র বা সরকার কর্তৃক স্থাপিত ও পরিচালিত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, যার মূল উদ্দেশ্য জনকল্যাণ। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় বলে।
খ বৈধতার সাথে ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন আইনের বিষয় মেনে চলায় ব্যবসায়ের যে দিক ফুটে ওঠে তাকে ব্যবসায়ের আইনগত সত্তা বলে।
আইনগত সত্তার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা বৈধভাবে ব্যবসায় করতে পারে। এর ফলে উদ্ভাবক কোনো কিছু উদ্ভাবনের জন্য একচ্ছত্র অধিকার পায় এবং সুবিধা ভোগ করে। আইনগত সত্তা বজায় থাকলে অসাধু ব্যবসায়ীরা অন্যের ব্যবসায়ের সত্তা নকল করে মুনাফা অর্জন করতে পারে না। ফলে দেশ, ভোক্তা ও প্রকৃত ব্যবসায়ীর উন্নতি হয়। তাই ব্যবসায়ের আইনগত সত্তা প্রয়োজন।
গ উদ্দীপকে প্রকৃতি বিচারে প্রতিষ্ঠানটি মালিক সমবায় সমিতির অন্তর্গত।
মালিক শ্রেণির মানুষ নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য মালিকানা সংশ্লিষ্ট স্বার্থরক্ষায় যে সমবায় সমিতি গড়ে তোলে তাকে মালিক সমবায় সমিতি বলে। বাড়ির মালিক, দোকান মালিক ও পরিবহন মালিকরা এ ধরনের সমবায় সমিতি গঠন করে।
উদ্দীপকে বংশালের ২০ জন জুতা প্রস্তুতকারী কারখানার মালিক মিলে আইনগত সত্তাবিশিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। প্রতিষ্ঠানটি পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জন করে। অর্জিত মুনাফা বিধি অনুযায়ী সঞ্চিতি তহবিলে রেখে অবশিষ্ট টাকা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেন। গঠিত এ সমিতিটি জুতা প্রস্তুতকারী কারখানার মালিকদের সমন্বয়ে গঠিত। এ সমিতিতে শুধু জুতা কারখানার মালিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় স্থান পায়। তাই বলা যায়, মালিকগণ নিজেদের স্বার্থ অর্জনের জন্য মালিক সমবায় সমিতি গড়ে তুলেছে।
ঘ আমি মনে করি, সঞ্চিতি তহবিল হতে আবাসন সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
সমবায় সমিতির আইন অনুযায়ী সমবায় সমিতির ১৫% সাধারণ সঞ্চিতি তহবিলে জমার রাখার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। বাকি অর্থ এর মালিকগণ মুনাফা হিসেবে শেয়ার অনুপাতে নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেয়। সঞ্চিতি তহবিলের জমাকৃত অর্থ দিয়ে ব্যবসায় সম্প্রসারণ করতে পারে।
উদ্দীপকে প্রতিষ্ঠানটি গত তিন বছরে যথাক্রমে ৬,০০,০০০ টাকা, ৮,০০,০০০ টাকা এবং ৯,০০,০০০ টাকা মুনাফা অর্জন করে। তিন বছরের মোট মুনাফা হয় ৬,০০,০০০ + ৮,০০,০০০ + ৯,০০,০০০ বা ২৩,০০,০০০ টাকা। মুনাফার বিধি অনুযায়ী ১৫% সঞ্চিতি তহবিলে সংরক্ষণ করে। সুতরাং সঞ্চিতির পরিমাণ ২৩,০০,০০০ ১৫% = ৩,৪৫,০০০ টাকা।
উলেখ্য ২০ জন মালিক নিজেদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য আফতাব নগরে এককালীন ১০,০০,০০০ টাকা প্রদান করে কিস্তিতে প্লট কেনার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাদের সঞ্চিত মোট অর্থ আছে ৩,৪৫,০০০ টাকা, যা প্লট কেনার জন্য (১০,০০,০০০ ৩,৪৫,০০০) বা ৬,৫৫,০০০ টাকা কম। তাই আমি মনে করি, সঞ্চিত তহবিল হতে আবাসন সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।
মমমপ্রশ্ন৯ মি. শহিদুলের রাজশাহীতে পাঁচটি আমবাগান আছে। মৌসুমে আম এলাকার বাজারে বিক্রয় করে তেমন মূল্য পান না। তাই আরও ২০ জন আমবাগানের মালিককে সাথে নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তুললেন। এ সংগঠনের মাধ্যমে তারা বাগানের আম একত্রিত করে এবং ট্রাক ভাড়া করে ঢাকার আড়তে বিক্রয়ের জন্য নিজেদের উদ্যোগে নিয়ে আসে। এতে তারা আমের ভালো দাম পায়। মি. শহিদুল আম সংগ্রহ ও পরিবহন কাজের জন্য সংগঠনে পাঁচজন কর্মী নিয়োগ দেয়। [দি. বো. ১৬]
অ ক. সমবায় সমিতির উপবিধি কী? ১
খ. সমবায় সমিতির সাম্যের নীতি ব্যাখ্যা করো। ২
গ. উদ্দীপকে মি. শহিদুলের সমবায় সমিতিটি কোন ধরনের? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. মি. শহিদুলের সমবায় সমিতিটি দেশের অর্থনীতিতে যে ভ‚মিকা রাখছে উদ্দীপকের আলোকে তার যথার্থতা মূল্যায়ন করো। ৪
৯ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক যে দলিলে সমবায় সমিতির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কাজ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়ম-কানুন উলেখ থাকে তাকে সমবায় সমিতির উপবিধি (ইু-খধংি) বলে।
খ সমবায় সমিতি সাম্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত। সমবায়ের সব সদস্যই সমান মর্যাদার অধিকারী। এটিই সমবায় সমিতির সাম্যের নীতি।
সমবায়ের সদস্যরা সামাজিক, অর্থনৈতিক বা পারিবারিকভাবে যে যেমনই হোক না কেন, সবাই এখানে সমান মর্যাদার অধিকারী। সমবায়ে কোনো সদস্য যেই পরিমাণ শেয়ার মূলধনের মালিক হোক না কেন, সাম্যের নীতিতে সবাই একটি মাত্র ভোটের অধিকারী।
গ মি. শহিদুলের সমবায় সমিতিটি একটি উৎপাদক সমবায় সমিতি।
কতিপয় উৎপাদক নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য উৎপাদন ও বিক্রয় কাজকে অধিক ফলপ্রসূভাবে পরিচালনার জন্য যে সমবায় সমিতি গড়ে তোলে তাকে উৎপাদন সমবায় সমিতি বলে। সাধারণত মধ্যস্থব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ ধরনের সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
উদ্দীপকে মি. শহিদুল একজন আমবাগান মালিক। তিনি আরও ২০ জন আমবাগানের মালিকের সাথে একটি সংগঠন গড়ে তুললেন। এ সংগঠনের মাধ্যমে তারা বাগানের আম একত্রিত করে এবং ট্রাক ভাড়া করে ঢাকার আড়তে আম এনে বিক্রি করেন। ফলে তারা আমের ভালো দাম পান। মি. শহিদুলের এ সংগঠনটি গড়ে তোলার মাধ্যমে তারা উৎপাদিত আমের বিক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সহজ ও কার্যকরভাবে করতে সক্ষম হচ্ছেন। এতে তারা আমের ভালো দামও পাচ্ছেন। তাই বলা যায়, মি. শহিদুল ও উৎপাদকগণের সম্মিলিত সমবায় সমিতিটি হলো উৎপাদক সমবায় সমিতি।
ঘ মি. শহিদুলের সমবায় সমিতিটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে।
উৎপাদক সমবায় সমিতি গড়ে তোলার মাধ্যমে কৃষি ও অন্যান্য পণ্যের উৎপাদকগণ তাদের পণ্যের কার্যকর বাজারজাতকরণে সক্ষম হন। এতে তারা মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের দৌরাÍ্য থেকে রক্ষা পান এবং অধিক মুনাফা অর্জনে সক্ষম হন।
মি. শহিদুলের সমবায় সমিতির মাধ্যমে আমবাগান মালিকরা তাদের আম একত্রিত করে ট্রাক ভাড়া করে ঢাকায় নিয়ে আসতে পারছেন। ঢাকার বাজারে আম বিক্রি করে তারা ভালো দাম পান এবং অধিক মুনাফা অর্জন করেন।
উদ্দীপকে মি. শহিদুলের সমবায় সমিতির মাধ্যমে আম বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জনের ফলে তারা ব্যবসায় সম্প্রসারণের সক্ষম হবেন। এতে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এছাড়া সদস্যরা তাদের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করায় দেশের মোট বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়বে। তাই বলা যায়, মি. শহিদুলের সংগঠনটি প্রত্যক্ষভাবে সদস্যদের এবং পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে।
মমমপ্রশ্ন১০ মায়ানীর কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে একটি সমবায় সমিতি গঠন করে। সমিতি কৃষকদের উন্নত বীজ সরবরাহের পাশাপাশি ধান বিপণনে সহায়তা ও প্রয়োজনে গৃহনির্মাণে ঋণ প্রদান করে। গত তিন বছরে তাদের অর্জিত মুনাফার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৫০,০০০, ৮০,০০০ ও ১,০০,০০০ টাকা। [কু. বো. ১৬]
অ ক. সমবায় সমিতির সংজ্ঞা দাও। ১
খ. ‘একতাই বল’ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো। ২
গ. উদ্দীপকে উলিখিত সমিতির উদ্দেশ্যভিত্তিক প্রকৃতি বর্ণনা করো। ৩
ঘ. গত তিন বছরে তাদের সঞ্চিতি তহবিলের ন্যূনতম জমার পরিমাণ কত? ব্যাখ্যা করো। ৪
১০ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক পারস্পরিক অর্থনৈতিক কল্যাণের লক্ষ্যে সমমনা ও সমশ্রেণিভুক্ত ব্যক্তিবর্গ সমঅধিকারের ভিত্তিতে মিলিত হয়ে যে সংগঠন গড়ে তোলে তাকে সমবায় সমিতি বলে।
খ ‘একতাই বল’ এ মৌলিক নীতির ওপর সমবায় প্রতিষ্ঠিত। এ নীতির মূল বিষয় হলো সদস্যদের মধ্যে একতা বজায় রাখা।
দরিদ্র ও সমমনা ব্যক্তিরা নিজেদের সীমিত সামর্থ্যকে একত্রিত করে সমবায় গঠন করে। তাই সফলতা লাভে যেকোনো অবস্থাতেই এর সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয়। সমবায় সমাজের দুর্বল শ্রেণিকে ঐক্যবদ্ধ করে পারস্পরিক সহযোগিতায় পথ চলার নতুন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে তাদের মধ্যে একতা প্রতিষ্ঠা হয়ে সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। এটিই সমবায়ের একতাই বল নীতির মূল ভাষ্য।
গ উদ্দীপকে উলিখিত সমিতিটি একটি বহুমুখী সমবায় সমিতি।
একাধিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কোনো সমবায় সমিতি গঠিত হলে তাকে বহুমুখী সমবায় সমিতি বলে। বহুমুখী সমবায় সমিতি উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয়, ঋণদান ইত্যাদি উদ্দেশ্যে গঠিত হতে পারে।
উদ্দীপকে মায়ানীর কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে একটি সমবায় সমিতি গঠন করে। সমিতি কৃষকদের উন্নত বীজ সরবরাহের পাশাপাশি ধান বিপণনে সহায়তা ও প্রয়োজনে গৃহনির্মাণে ঋণ প্রদান করে। অর্থাৎ উক্ত সমবায় সমিতির উদ্দেশ্য সীমিত নয়। যেকোনো বৈধ উপায়ে সদস্যদের অর্থনৈতিক কল্যাণ নিশ্চিত করাই হলো এ সমবায়ের কাজ।
ঘ উদ্দীপকের সমবায় সমিতির গত তিন বছরে অর্জিত মুনাফার ১৮% সঞ্চিতি তহবিলে জমা হবে। এক্ষেত্রে সমিতিটির বিগত তিন বছরে মোট মুনাফা হয়েছে (৫০,০০০ + ৮০,০০০ + ১,০০০০০) টাকা বা ২,৩০,০০০ টাকা।
অতএব, সঞ্চিতির পরিমাণ হবে = মোট মুনাফা ১৮১০০ %
= ২৩০০০০ ১৮১০০ %
= ৪১,৪০০ টাকা।
সুতরাং গত তিন বৎসরে সমিতির সঞ্চিতির পরিমাণ হবে ৪১,৪০০ টাকা।
মমমপ্রশ্ন১১ মধ্যস্থব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে পদ্মাপাড়ের জেলেরা মাছের ন্যায্য মূল্যের জন্য একটি সমবায় সমিতি গঠন করে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাদের অর্জিত মুনাফার পরিমাণ ছিল নিæরূপÑ
বছর ২০১২ ২০১৩ ২০১৪ ২০১৫
মুনাফা ২০,০০০ টাকা ২৫,০০০ টাকা ৩০,০০০ টাকা ৩৫,০০০ টাকা
তারা বিধিবদ্ধ ন্যূনতম হারে সংরক্ষিত ও উন্নয়ন তহবিল সংরক্ষণ করে। তহবিলের টাকা হতে তারা ২৫,০০০ টাকা মূল্যের একটি নতুন ফ্রিজ ক্রয়ের জন্য চিন্তা করছে। [সি. বো. ১৬]
অ ক. সমবায় সমিতি কী? ১
খ. সমবায়ের সাম্যের নীতি বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো। ২
গ. পদ্মাপাড়ের জেলেরা কোন ধরনের সমবায় সমিতি গঠন করেছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. তহবিলের টাকায় তারা কি ফ্রিজ ক্রয় করতে পারবে? যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করো। ৪
১১ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক পারস্পরিক অর্থনৈতিক কল্যাণের লক্ষ্যে সমমনা ও সমশ্রেণিভুক্ত ব্যক্তিবর্গ সমঅধিকারের ভিত্তিতে মিলিত হয়ে যে সংগঠন গড়ে তোলে তাকে সমবায় সমিতি বলে।
খ সমবায় সমিতি সাম্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত। সমবায়ের সব সদস্যই সমান মর্যাদার অধিকারী। এটিই সমবায় সমিতির সাম্যের নীতি।
সমবায়ের সদস্যরা সামাজিক, অর্থনৈতিক বা পারিবারিকভাবে যে যেমনই হোক না কেন, সবাই এখানে সমান মর্যাদার অধিকারী। সমবায়ে কোনো সদস্য যেই পরিমাণ শেয়ার মূলধনের মালিক হোক না কেন, সাম্যের নীতিতে সবাই একটি মাত্র ভোটের অধিকারী।
গ পদ্মাপাড়ের জেলেরা উৎপাদক সমবায় সমিতি গঠন করেছে।
কতিপয় ক্ষুদ্র শিল্পের মালিক বা উৎপাদকের পারস্পরিক আর্থিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে ও বৃহদায়তন উৎপাদনের সুবিধা ভোগ করার জন্য তাদের সীমিত সামর্থ্যকে একত্রিত করে উৎপাদক সমবায় সমিতি গঠন করে। কাঁচামাল ক্রয় থেকে শুরু করে বিক্রয় পর্যন্ত মধ্যস্থব্যবসায়ীদের শোষণ, নিপীড়ন ও বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা পেতে এ সমবায় সমিতি গঠন করা হয়।
উদ্দীপকে পদ্মাপাড়ের জেলেরা মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা ও মাছের ন্যায্যমূল্য পেতে সমবায় সমিতি গঠন করে। এ সমিতি গঠন করার ফলে সদস্যরা সঠিকভাবে মৎস্য উৎপাদন ও ক্রয়-বিক্রয় কার্যসম্পাদন করতে পারবে। তারা মধ্যস্থব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের মাধ্যমে মাছের ন্যায্যমূল্য পাবে। এতে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থারও পরিবর্তন ঘটবে। তাই বলা যায়, পদ্মাপাড়ের জেলেরা উৎপাদন সমবায় সমিতি গঠন করেছে।
ঘ উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, জেলেরা তহবিলের টাকায় ফ্রিজ ক্রয় করতে পারবে না।
সমবায় সমিতির অর্জিত মুনাফার সম্পূর্ণই সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হয় না। আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে অর্জিত মুনাফার ন্যূনতম ১৫% সংরক্ষিত তহবিলে এবং ৩% সমবায় উন্নয়ন তহবিলে চাঁদা হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।
পদ্মাপাড়ের জেলেরা উৎপাদক সমবায় সমিতি গঠন করেছে। তারা তাদের অর্জিত মুনাফার ন্যূনতম ১৮% সংরক্ষিত ও উন্নয়ন তহবিলে জমা রাখে। অর্থাৎ সংরক্ষিত তহবিলে ১৫% ও উন্নয়ন তহবিলে ৩% সংরক্ষণ করে। সুতরাং ২০১২ হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাদের তহবিলের পরিমাণ দাঁড়ায়
= (২০০০০ + ২৫০০০ + ৩০০০০ + ৩৫০০০) ১৫১০০ %
= ১১০০০০ ১৫১০০ %
= ১৬,৫০০ টাকা।
অতএব তহবিলের টাকার পরিমাণ ১৬,৫০০ টাকা। কিন্তু তারা ফ্রিজ ক্রয়ের চিন্তা-ভাবনা করছে ২৫,০০০ টাকার। যেখানে আরও ৮,৫০০ টাকা ঘাটতি রয়েছে। সুতরাং তহবিলের টাকায় তারা ফ্রিজ ক্রয় করতে পারবে না।
মমমপ্রশ্ন১২ জামিল একটি তাঁতি সমবায় সমিতির সদস্য। অন্যদের তুলনায় সে বিত্তবান। সমবায়ের ১০ লক্ষ টাকা শেয়ার মূলধনের মধ্যে জামিলের একার মূলধনই ২ লক্ষ টাকা। জামিল চায় মূলধন বাড়িয়ে সমবায়ের কর্তৃত্ব নিতে। কিন্তু নির্বাচনের সময় সবারই এক ভোট হওয়ায় তার চিন্তা কোনো কাজে আসেনি। সমবায়টির বার্ষিক মুনাফা হয়েছিল ২ লক্ষ টাকা। জামিলকে দেওয়া হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। সে আরও বেশি পাবে ভেবেছিল। তাই সে ক্ষুব্ধ। [য. বো. ১৬]
অ ক. উৎপাদক সমবায় সমিতি কী? ১
খ. সমবায় সমিতিতে মুনাফা কীভাবে বণ্টিত হয়? ২
গ. জামিল ইচ্ছা করলেই কি শেয়ার মূলধন বাড়াতে পারত? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. জামিলের কম মুনাফা পাওয়া কি যুক্তিযুক্ত? মতের সপক্ষে যুক্তি দাও। ৪
১২ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক বিভিন্ন ধরনের পণ্যের উৎপাদকরা পণ্য বিক্রয় সুবিধা পেতে যে সমবায় সমিতি গড়ে তোলেন তাকে উৎপাদক সমবায় সমিতি বলে।
খ সমবায় সমিতির মুনাফা সমবায় আইন অনুযায়ী বণ্টন করা হয়।
একটি সমবায় সমিতি নিয়মিত কার্যক্রমের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে। অর্জিত মুনাফার ১৫% সংরক্ষিত তহবিলে এবং ৩% সমবায় উন্নয়ন তহবিলে জমা রাখতে হয়। অবশিষ্ট মুনাফা সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপবিধি মোতাবেক সদস্যদের মধ্যে শেয়ার অনুপাতে বণ্টন করে দেওয়া হয়।
গ জামিল ইচ্ছা করলেই শেয়ার মূলধন বৃদ্ধি করতে পারত না।
মূলধনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশকে শেয়ার বলে। সমবায় সমিতির মোট মূলধনের ক্ষুদ্র অংশকে শেয়ারে বিভক্ত করে সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।
উদ্দীপকে জামিল একটি তাঁতি সমবায় সমিতির সদস্য। তার সমিতির মোট শেয়ারের পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকা। বাংলাদেশে প্রচলিত সমবায় আইন অনুযায়ী একজন সদস্য মোট শেয়ারের এক-পঞ্চমাংশের বেশির মালিক হতে পারবে না। তাঁতি সমবায় সমিতিটির মোট মূলধনের ৫ ভাগের ১ ভাগ, অর্থাৎ ১০ লক্ষ ৫ = ২ লক্ষ টাকার বেশি শেয়ার কোনো সদ্য ক্রয় করতে পারবে না। জামিল ইতিমধ্যে ২ লক্ষ টাকার শেয়ার ক্রয় করেছে। তাই সে শেয়ার মূলধন বৃদ্ধি করতে চাইলেও আইনের কারণে পারবে না।
ঘ জামিল কম মুনাফা পাওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।
সমবায় সমিতির অর্জিত মুনাফার সম্পূর্ণ অংশ সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হয় না। ২০০১ সালের আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে অর্জিত মুনাফার ন্যূনতম ১৫% সংরক্ষিত তহবিল এবং ৩% সমবায় উন্নয়ন তহবিলে চাঁদা হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়।
উদ্দীপকের জামিল মোট শেয়ার মূলধনের ৫ ভাগের ১ ভাগ শেয়ারের মালিক হওয়ায়, মুনাফাও ৫ ভাগের ১ ভাগ পাবে। তাদের বার্ষিক মুনাফা হয় ২,০০,০০০ টাকা। এ মুনাফা থেকে সংরক্ষিত তহবিল ও সমবায় উন্নয়ন তহবিলের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে (২,০০,০০০ ১৮%) = ৩৬,০০০ টাকা। আর বাকি টাকা (২,০০,০০০ ৩৬,০০০) = ১,৬৪,০০০ টাকা সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
তাহলে জামিল মুনাফা পাবে = (১,৬৪,০০০ ৫) = ৩২,৮০০ টাকা। কিন্তু তাকে দেওয়া হয়েছে ৩২,০০০ টাকা। সে এটা নিয়ে ক্ষুব্ধ। কেননা তাকে ৮০০ টাকা কম দেওয়া হয়েছে। সমবায় আইন অনুযায়ী জমিলের ৮০০ টাকা মুনাফা কম পাওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।