অধ্যায়-২: কেন্দ্রীয় ব্যাংক
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
মমমপ্রশ্ন১ ঢাকার ব্যাংকপাড়ায় একটি বড় ব্যাংক আছে যাকে অন্য ব্যাংকসমূহের মুরব্বি বলা হয়। ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয় আছে যা তার কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করে। সব কার্যালয়ে একটি নির্দিষ্ট কক্ষ থাকে যেখানে আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির জন্য প্রতিদিন সকল ব্যাংকের চেক, ড্রাফট ইত্যাদি এসে জমা হয়। [ঢা. বো. ১৭]
অ ক. ব্যাংক হার কী? ১
অ খ. ঋণ নিয়ন্ত্রণ বলতে কী বোঝায়? ২
অ গ. উদ্দীপকে যে ব্যাংকের কথা বলা হয়েছে সেটি সম্পর্কে আলোচনা করো। ৩
অ ঘ. উদ্দীপকে উলিখিত যে কার্যাবলির কথা উলেখ করা হয়েছে তা কি অন্যান্য ব্যাংক করতে পারে? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। ৪
১ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যে সুদের হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে বা প্রথম শ্রেণির সিকিউরিটিজ (শেয়ার, বন্ড) বাট্টা করে নেয় সেই হারকে ব্যাংক হার বলে।
খ ঋণের পরিমাণ কাম্য মাত্রায় বজায় রাখাকে ঋণ নিয়ন্ত্রণ বলে।
ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান স্ব-স্ব ক্ষেত্রে ঋণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। দেশের সামগ্রিক ঋণের পরিমাণ কাম্য মাত্রায় বজায় রাখার জন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায়িত্ব পালন করে থাকে। ব্যাংক ঋণ বাজারে অর্থ যোগানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তাই এই ঋণকে কাম্য মাত্রায় বজায় রাখতে ঋণ নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গ উদ্দীপকে আলোচিত ব্যাংকটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে সরকারি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত দেশের এক ও অনন্য ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানই হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ব্যাংক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করে।
উদ্দীপকে উলেখ্য ঢাকার ব্যাংকপাড়ায় একটি বড় ব্যাংক অবস্থিত, যাকে অন্য ব্যাংকসমূহের মুরব্বি বলা হয়। ব্যাংকটি ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়াও ব্যাংকটির প্রতিটি কার্যালয়ে অন্য ব্যাংকসমূহের মধ্যকার আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির জন্য প্রতিদিন চেক, ড্রাফট ইত্যাদি জমা হয়। অর্থাৎ ব্যাংকটি আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তিতে নিকাশঘরের দায়িত্ব পালন করে থাকে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ উদ্দীপকে উলিখিত ব্যাংকটির নিকাশঘর কার্যক্রম কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত হয় বিধায় তা অন্যান্য ব্যাংক পরিচালনা করতে পারে না।
নিকাশঘর হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির স্থান। নির্দিষ্ট এলাকায় অবস্থিত তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যকার চেক, ড্রাফট, বিল প্রভৃতি লেনদেন থেকে সৃষ্ট দায়-দেনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে পরিচালিত নিকাশঘর নিষ্পত্তি করে থাকে।
উদ্দীপকে উলেখ্য ঢাকার ব্যাংকপাড়ায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কার্যালয় স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মধ্যকার দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির কাজটিও মূলত এ ব্যাংকই করে থাকে।
অন্য ব্যাংকসমূহের মুরুব্বি নামে পরিচিত উদ্দীপকের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি নিকাশঘরের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই কাজটি সম্পাদনে একক অধিকারী প্রতিষ্ঠান। সুতরাং, উপরে উলিখিত নিকাশঘরের কাজটি অন্য ব্যাংকসমূহ করতে পারে না।
মমমপ্রশ্ন২ ঢাকার মতিঝিলে একটি ব্যাংক আছে যাকে অন্য ব্যাংকের অভিভাবক বলা হয়। ব্যাংকটি তার প্রধান কার্যালয় ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রতিটি কার্যালয়ে একটি নির্দিষ্ট কক্ষ আছে, যেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ড্রাফট এসে জমা হয় আন্তঃব্যাংকিং নিষ্পত্তির জন্য।
[রা. বো. ১৭]
অ ক. ঋণ নিয়ন্ত্রণ কী? ১
অ খ. ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার’Ñ ব্যাখ্যা করো। ২
অ গ. উদ্দীপকে উলিখিত ব্যাংকটি কোন ধরনের ব্যাংক তা আলোচনা করো। ৩
অ ঘ. উদ্দীপকে উলিখিত ব্যাংকের যে কার্যাবলির কথা উলেখ করা হয়েছে তা কি অন্যান্য ব্যাংক পালন করতে পারে? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। ৪
২ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ঋণ সৃষ্টির ক্ষমতা কাম্য মাত্রায় বজায় রাখাকে ঋণ নিয়ন্ত্রণ বলে।
খ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো প্রয়োজনে ঋণ নিতে ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা ভোগ করতে পারে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার বলা হয়।
সাধারণ জনগণ যেভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকে হিসাব খুলে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করেন, তেমনি তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে হিসাব খুলে লেনদেন করে। বাংলাদেশের প্রত্যেক তালিকাভুক্ত ব্যাংককে তাদের আমানতের ৫ ভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। বিনিময়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকিং সুবিধা পেয়ে থাকে।
গ উদ্দীপকে উলিখিত ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একটি দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি মুদ্রা প্রচলন; ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ; বৈদেশিক বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ; আর্থিক নীতির প্রণয়ন এবং সরকারের আর্থিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা প্রদান করে।
উদ্দীপকে ঢাকার মতিঝিলের একটি ব্যাংকের কথা বলা হয়েছে। ব্যাংকটি তার প্রধান কার্যালয় ছাড়াও অন্যান্য আঞ্চলিক কার্যালয়ে মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। অন্য ব্যাংকগুলো এই ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের দেনাপাওনা নিষ্পত্তি করে। তাই ব্যাংকটিকে অন্যান্য ব্যাংকের অভিভাবক বলা হয়। অর্থাৎ উলিখিত ব্যাংকটি অভিভাবকরূপে মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এরূপ অভিভাবকের দায়িত্ব শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকই পালন করতে পারে। সুতরাং উদ্দীপকে উলিখিত ব্যাংকটি হলো একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ঘ উদ্দীপকে উলিখিত ব্যাংকের নিকাশঘরের কার্যাবলি অন্যান্য ব্যাংক পালন করতে পারে না।
নিকাশঘর বলতে আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির স্থলকেই বোঝায়। এ নিকাশঘরের দায়িত্ব পালন করতে পারে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
উদ্দীপকে ঢাকার মতিঝিলে একটি ব্যাংকের কথা উলেখ করা হয়েছে। এই ব্যাংকটি অন্যান্য ব্যংকের অভিভাবক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে। অর্থাৎ ব্যাংকটি হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রতিটি কার্যালয়ে একটি নির্দিষ্ট কক্ষে অন্যান্য ব্যাংকের চেক, ড্রাফট এসে জমা হয়।
নিকাশঘর ব্যবস্থার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি তত্ত¡াবধানে আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করা হয়। এ ব্যবস্থায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন নিষ্পত্তি করতে পারে। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল ব্যাংকের ব্যাংকার হিসেবে এ কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যতীত অন্য কোনো ব্যাংকের এ দায়িত্ব পালন করার অধিকার নেই। সুতরাং, উদ্দীপকে উলিখিত কার্যাবলিসমূহ অন্যান্য ব্যাংক পালন করতে পারে না।
মমমপ্রশ্ন৩ কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি দেশের মুদ্রার প্রচলন ও মান নিয়ন্ত্রণ করে। এই ব্যাংক দেশের অনেক ব্যাংকের অভিভাবক হিসাবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। [কু. বো. ১৭]
অ ক. কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী? ১
অ খ. ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল কোন ব্যাংককে বলা হয় এবং কেন? ২
অ গ. কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি মুদ্রা প্রচলনসহ কী ধরনের সাধারণ কার্যাবলি সম্পাদন করে তা আলোচনা করো। ৩
অ ঘ. কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি দেশের অন্য ব্যাংকের জন্য কী ধরনের কার্যাবলি সম্পাদন করে বলে তুমি মনে করো? ৪
৩ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত দেশের এক ও অনন্য ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে।
খ ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল বলা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহ যেকোনো কারণেই তারল্য সংকটে বা আর্থিক সংকটে পড়তে পারে। এ সময় ব্যাংকগুলো যখন অন্য কোনো উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহে ব্যর্থ হয় তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ সরবরাহে এগিয়ে আসে। এ ধরনের ভ‚মিকা রাখে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থল বলা হয়।
গ উদ্দীপকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি মুদ্রা প্রচলনের পাশাপাশি, মুদ্রামান, সংরক্ষণ, ঋণ নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সাধারণ কার্যাবলি সম্পাদন করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো দেশের প্রধান ব্যাংক এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের অভিভাবক। দেশের মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যেই এই ব্যাংক গঠন করা হয়।
উদ্দীপকে একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে। ব্যাংকটি ঐ দেশের মুদ্রার প্রচলন ও মান নিয়ন্ত্রণ করে। আবার, ব্যাংকটি অনেক ব্যাংকের অভিভাবক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে। দেশে ঋণের পরিমাণ কাম্য স্তরে রাখার জন্যও ব্যাংকটি কাজ করে থাকে। ব্যাংক হার নীতি, খোলাবাজার নীতি ইত্যাদি কৌশল প্রয়োগ করে ব্যাংকটি বাজারে ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া মুদ্রার বিনিময় হার দেশের অনুক‚লে রাখার জন্য ব্যাংকটি বৈদেশিক মুদ্রার আগমন-নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পাদিত অন্যান্য সাধারণ কার্যাবলির মধ্যে উপরোক্ত কাজগুলো প্রধান।
ঘ উদ্দীপকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি অন্য ব্যাংকের জন্য ঋণ প্রদানকারী, ঋণের তদারককারী, নিকাশঘর এবং উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম একটি দায়িত্ব হলো অন্যান্য ব্যাংকের অভিভাবক হিসেবে কাজ করা।
উদ্দীপকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির দায়িত্ব হলো দেশের মুদ্রার প্রচলন ও মান নিয়ন্ত্রণ করা। এছাড়াও ব্যাংকটি দেশের অনেক ব্যাংকের অভিভাবক হিসেবে কাজ করছে।
অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি নিকাশঘরের দায়িত্ব পালন করে। নিকাশঘরে অন্য ব্যাংকসমূহ পারস্পরিক আন্তঃব্যাংকিং লেনদেন নিষ্পত্তি করতে পারে। আবার অন্যান্য ব্যাংকের আর্থিক সংকটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবেও কাজ করে থাকে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের ঋণতদারকী, ঋণ আদায়ে সহযোগিতা, উপদেশ ও পরামর্শ প্রদান করে। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে।
নিকাশঘর : নিকাশঘর হলো আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া। যেমন: প্রাইম ব্যাংকের একটি চেক যদি এবি ব্যাংক থেকে কোনো গ্রাহক সংগ্রহ করে তাহলে এই লেনদেনটি ব্যাংক দুইটি নিকাশ ঘরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করবে।
মমমপ্রশ্ন৪ বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছে দেশের জনগণ লাভজনক বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের পরিবর্তে ব্যাংকে অর্থ জমা রাখাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে অলস অর্থের পরিমাণ দ্রুত বাড়তে থাকে। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে বিভিন্ন ধরনের সরকারি বন্ড, সিকিউরিটিজ, বিল ইত্যাদি বিক্রয় করে। এতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেল। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকার সকল ব্যাংকের শাখাকে ৪০% কৃষি খাতে ঋণ দেয়ার জন্য নির্দেশনা জারি করে। [চ. বো. ১৭]
অ ক. নিকাশঘর কী? ১
অ খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কেন অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার বলা হয়? ২
অ গ. উদ্দীপকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১ম গৃহীত পদক্ষেপ ঋণ নিয়ন্ত্রণের কোন সংখ্যাÍক পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা করো। ৩
অ ঘ. কৃষকদের ঋণ প্রাপ্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নীতি ব্যবহার করছে তার যথার্থতা মূল্যায়ন করো। ৪
৪ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক ব্যাংকিং লেনদেন থেকে উদ্ভ‚ত আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনার নিষ্পত্তিস্থলই হলো নিকাশঘর।
খ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো প্রয়োজনে ঋণ নিতে ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা ভোগ করতে পারে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার বলা হয়।
সাধারণ জনগণ যেভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকে হিসাব খুলে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করেন, তেমনি তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে হিসাব খুলে লেনদেন করে। বাংলাদেশের প্রত্যেক তালিকাভুক্ত ব্যাংককে তাদের আমানতের ৫ ভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। বিনিময়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকিং সুবিধা পেয়ে থাকে।
গ উদ্দীপকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত প্রথম পদক্ষেপটি ঋণ নিয়ন্ত্রণের সংখ্যাÍক পদ্ধতির খোলাবাজার নীতির সাথে সম্পর্কিত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণের একটি সংখ্যাÍক কৌশল হলো খোলাবাজার নীতি। এ কৌশল অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক বন্ড, বিল, নোট সিকিউরিটিজ ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
উদ্দীপকে বাংলাদেশ ব্যাংক-এর পর্যবেক্ষণের কথা বলা হয়েছে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দেশের জনগণ লাভজনক খাতে বিনিয়োগের পরিবর্তে ব্যাংকে অর্থ জমা রাখছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে অলস অর্থের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে সরকারি বন্ড, সিকিউরিটিজ, বিল ইত্যাদি বিক্রয় করে। এতে অধিক আয়ের প্রত্যাশায় জনগণ ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় করে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণদান ক্ষমতা হ্রাস পায়। সুতরাং বলা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সকল সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করছে, যা খোলাবাজার নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ঘ উদ্দীপকে কৃষকদের ঋণ প্রাপ্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের বরাদ্দকরণ নীতিটি ব্যবহার করেছে।
ঋণের বরাদ্দকরণ নীতি হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণের গুণগত বা নির্বাচনমূলক পদ্ধতিগুলোর একটি। এ নীতি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ বিশেষ খাত চিহ্নিত করে ঋণের পরিমাণ কম-বেশি করা হয়ে থাকে।
উদ্দীপকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের কথা আলোচনা করা হয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সকল এলাকার সকল ব্যাংকের শাখাকে ৪০% কৃষিখাতে ঋণ দেয়ার জন্য নির্দেশনা জারি করে।
এখানে বিশেষ খাত হিসেবে কৃষিখাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যাংকের মোট ঋণের ৪০% কৃষিখাতের জন্য বরাদ্দ রাখায় এ কৌশলটিকে ঋণের বরাদ্দকরণ নীতি বলা যায়। এ নীতি প্রয়োগের ফলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে পর্যাপ্ত ঋণের ব্যবস্থা হবে। এখানেও কৃষিখাতকে গুরুত্ব দেয়ায় ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকার জনগণ সহজেই মন্দাবস্থা কাটিয়ে ওঠতে পারবে। সুতরাং, কৃষকদের এবং কৃষিখাতের উন্নয়নে ঋণ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতির ব্যবহার সম্পূর্ণ যৌক্তিক।
মমমপ্রশ্ন৫ বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের মুদ্রাবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে ব্যাংকটি তার সুদের হার ৫% থেকে বাড়িয়ে ৬% এ উন্নীত করে। তবুও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ব্যাংকটি ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কতকগুলো খাত সুনির্দিষ্ট করে দেন। এতে ঋণ সরবরাহ স্থিতিশীল হয়। [সি. বো. ১৭]
অ ক. নিকাশঘর কী? ১
অ খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থল বলা হয় কেন? ২
অ গ. বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম অবস্থায় ঋণ নিয়ন্ত্রণের কোন ধরনের সংখ্যাÍক পদ্ধতি ব্যবহার করেছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
অ ঘ. দ্বিতীয় পর্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ঋণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম গ্রহণ কতটুকু যৌক্তিক? উদ্দীপকের আলোকে তোমার মতামত দাও। ৪
৫ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক ব্যাংকিং লেনদেন থেকে উদ্ভ‚ত আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনার নিষ্পত্তিস্থলই হলো নিকাশঘর।
খ ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল বলা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহ যেকোনো কারণেই তারল্য সংকটে বা আর্থিক সংকটে পড়তে পারে। এ সময় ব্যাংকগুলো যখন অন্য কোনো উৎস হতে অর্থ সংগ্রহে ব্যর্থ হয় তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ সরবরাহে এগিয়ে আসে। এ ধরনের ভ‚মিকা রাখে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থল বলা হয়।
গ উদ্দীপকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম অবস্থায় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ঋণ নিয়ন্ত্রণের সংখ্যাÍক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে ব্যাংক হার নীতি ব্যবহার করেছে।
যে হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিল, সিকিউরিটি, ঋণপত্র প্রভৃতি বাট্টা করে তাকেই ব্যাংক হার বলে। উক্ত হারকে বাড়িয়ে বা কমিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়।
উদ্দীপকে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রণকারী। ব্যাংকটি দেশের মুদ্রাবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন ধরনের নীতি প্রয়োগ করে। সম্প্রতি দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে ব্যাংকটি তার প্রচলিত সুদের হার ৫% থেকে ৬% এ উন্নীত করে। অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে গৃহীত ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যাংক হারকে বাড়িয়েছে। যা ঋণ নিয়ন্ত্রণের সংখ্যাÍক পদ্ধতির ব্যাংক হার নীতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ব্যাংক হার পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে ঋণ প্রদান করে তার সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। সুদের হার বেশি হওয়ার কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ অতিরিক্ত ঋণ নিতে পারে না। ফলে তারাও বাজারে অতিরিক্ত ঋণ দিতে পারে না। এভাবে পরোক্ষভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে।
ঘ উদ্দীপকে দ্বিতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণে ঋণের বরাদ্দকরণ নীতি প্রয়োগ করেছে, যা ঋণের খাতকে নির্দিষ্ট করার মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ দানকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।
এ পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কিছু খাতে ঋণদানে বিধি-নিষেধ আরোপ করে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সীমাসহ ঋণদানে উৎসাহিত করে।
উদ্দীপকে উলেখ্য বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক হার নীতি প্রয়োগ করেও কাম্য সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। ফলে ব্যাংকটি তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণদানের ক্ষেত্রকে সুনির্দিষ্ট করে দেয়।
এখানে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর লাগামহীন ঋণ কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করতে ঋণের খাতকে বরাদ্দ করে দিয়েছে। যার ফলে সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও বাণিজ্যিক ব্যাংক কেবল নির্দিষ্ট খাতেই ঋণদানে বাধ্য, যা উদ্দীপকে উলিখিত পরিস্থিতিতে দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে।
ঋণ বরাদ্দকরণ নীতি: ধরা যাক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা জারি করল যে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ শিল্প খাতে যে ঋণ দেবে তার ৪০% দিতে হবে কৃষি খাতে। এখানে মূলত খাত অনুযায়ী এভাবে ঋণের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়।
মমমপ্রশ্ন৬ ‘ঈ’ ব্যাংকের অধীনে তালিকাভুক্ত হয়ে এবং ঐ ব্যাংকের অনুমতি গ্রহণ করে ‘উ’ ব্যাংক আমানত গ্রহণ এবং ঋণ প্রদান কার্যক্রম শুরু করে। সম্প্রতি গ্রাহকদের প্রয়োজনমত নগদ অর্থ সরবরাহ করতে ‘উ’ ব্যাংক ব্যর্থ হচ্ছে। [য. বো. ১৭]
অ ক. নিকাশঘর কী? ১
অ খ. বাণিজ্যিক ব্যাংক কীভাবে ঋণের মাধ্যমে আমানত সৃষ্টি করে? ব্যাখ্যা করো। ২
অ গ. উদ্দীপকে ‘ঈ’ ব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের কোন ব্যাংকের কার্যক্রম সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো। ৩
অ ঘ. ‘উ’ ব্যাংকের সমস্যা সমাধানে তোমার পরামর্শ কী? উদ্দীপকের আলোকে আলোচনা করো। ৪
৬ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক ব্যাংকিং লেনদেন থেকে উদ্ভ‚ত আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনার নিষ্পত্তিস্থলই হলো নিকাশঘর।
খ যে পদ্ধতি অবলম্বন করে বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণগ্রহীতাকে সরাসরি নগদে ঋণের অর্থ প্রদান না করে তা ঋণগ্রহীতার আমানত হিসাবে স্থানান্তর করে এবং উক্ত আমানত থেকে নতুন ঋণের সৃষ্টি করে তাকে ঋণ আমানত সৃষ্টি বলে।
ব্যাংক যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করে তখন সরাসরি নগদ অর্থ ঋণ হিসেবে প্রদান না করে ঋণগ্রহীতাকে তার নামে একটি আমানত হিসাব খোলার জন্য বলে এবং তাতে ঋণের অর্থ প্রদান করে। চেকের মাধ্যমে এই হিসাব থেকে ঋণগ্রহীতা অর্থ উত্তোলন করে। এভাবে প্রদত্ত ঋণ থেকে আমানতের সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ : মনে করি, ব্যাংকের তহবিল থেকে রহিমকে ১০,০০০ টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হলো। এ টাকা ব্যাংক নগদে প্রদান না করে রহিমের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে। এখন উক্ত আমানত থেকে বিধিবদ্ধ তারল্য অর্থাৎ পর্যাপ্ত নগদ জমা রেখে, মনে করি উক্ত অর্থের ২০% নগদ হিসেবে ব্যাংক তহবিলে জমা রেখে বাকি {১০,০০০ (১০,০০০ ২০%)} = ৮,০০০ টাকা অন্য কোনো গ্রাহককে ঋণ হিসাবে প্রদান করে। এভাবেই ব্যাংক মঞ্জুরকৃত ঋণ থেকে পুনরায় আমানত সৃষ্টি করে।
গ উদ্দীপকে ঈ ব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রম সাদৃশ্যপূর্ণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো একটি দেশের প্রধান ব্যাংক। মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রণ ও এর পরিচালনার দায়িত্ব মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপরই থাকে। দেশের সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের অভিভাবকের দায়িত্বও এই কেন্দ্রীয় ব্যাংকই পালন করে থাকে।
উদ্দীপকে ঈ ব্যাংকের অধীনে তালিকাভুক্ত হয়ে এবং ঐ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে উ ব্যাংক তার কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। অর্থাৎ ঈ ব্যাংক এখানে অভিভাবকের ভ‚মিকা পালন করছে। অন্যদিকে উ ব্যাংক হলো একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। বাংলাদেশে এরূপ বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের অভিভাবকত্ব পালন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, ঈ ব্যাংকের কার্যক্রম এর সাথে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমের মিল রয়েছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের অভিভাবক : বাণিজ্যিক ব্যাংকের আর্থিক সংকটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ঋণ দিয়ে এ সংকট দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ আদায়ে সাহায্য, ঋণ তদারকি ও উপযুক্ত পরামর্শ প্রদান করায় একে বাণিজ্যিক ব্যাংকের অভিভাবক বলা হয়।
ঘ উদ্দীপকে উ ব্যাংকের সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাংকটিকে অবশ্যই কাম্য পরিমাণ তারল্য সংরক্ষণ করতে হবে।
তারল্য বলতে ব্যাংক কর্তৃক গ্রাহকের অর্থ চাহিবামাত্র ফেরত প্রদানের সামর্থ্য ধরে রাখাকে বোঝায়। পর্যাপ্ত তারল্যের অভাবে ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
উদ্দীপকে উ ব্যাংকটি ঈ ব্যাংকের একটি তালিকাভুক্ত ব্যাংক। উ ব্যাংকটি ঈ ব্যাংকের অনুমতি নিয়েই আমানত গ্রহণ এবং ঋণ প্রদান কার্যক্রম শুরু করে। সম্প্রতি গ্রাহকদের প্রয়োজনমতো নগদ অর্থ সরবরাহ করতে উ ব্যাংকটি ব্যর্থ হচ্ছে।
অর্থাৎ তারল্যের নীতি সঠিকভাবে অনুসরণ না করায় উ ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে। সাময়িকভাবে ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ ঈ ব্যাংক হতে ঋণ নিয়ে তারল্য সমস্যার সমাধান করতে পারে। তবে ব্যাংকটিকে ভবিষ্যতে তার কার্যক্রম চালু রাখতে হলে অবশ্যই বাণিজ্যিক ব্যাংকের অন্যতম মূলনীতি ‘তারল্য নীতি’ মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংকটিকে সবসময় কাম্য পরিমাণ নগদ অর্থ সংরক্ষণ করতে হবে।
তারল্য নীতি : জনগণের কাছ থেকে সংগৃহীত আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ ব্যাংক নিজের কাছে জমা রাখে। যাতে আমানতকারী চাহিবামাত্র তার অর্থ পরিশোধ করা যায়, যা তারল্য নীতি নামে পরিচিত।
মমমপ্রশ্ন৭ তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সীমাহীন ঋণ দেয়ার কারণে দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে এখন ১% বেশি আমানতি টাকা জমা দিতে হচ্ছে। আর্থিক সচ্ছল বড় ব্যাংকগুলোর অনেকেই ইহা মানতে নারাজ। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকাশঘর সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে সকল তালিকাভুক্ত ব্যাংকই ইহা মানতে বাধ্য হচ্ছে। [ব. বো. ১৭]
অ ক. ব্যাংক হার নীতি কী? ১
অ খ. ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থল বলতে কী বোঝ? ২
অ গ. উদ্দীপকে ঋণ নিয়ন্ত্রণের কোন পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
অ ঘ. তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নিকাশঘর সুবিধা না পাওয়ার এত ভয় কেন? উদ্দীপকের আলোকে তা ব্যাখ্যা করো। ৪
৭ নং প্রশ্নের উত্তর অ
ক ব্যাংক হারের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলকে ব্যাংক হার নীতি বলে।
খ ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল বলা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহ যেকোনো কারণেই তারল্য সংকটে বা আর্থিক সংকটে পড়তে পারে। এ সময় ব্যাংকগুলো যখন অন্য কোনো উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহে ব্যর্থ হয় তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ সরবরাহে এগিয়ে আসে। এ কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থল বলা হয়।
গ উদ্দীপকে ঋণ নিয়ন্ত্রণের সাধারণ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত জমার হার পরিবর্তন নীতিটির কথা বলা হয়েছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের আমানতের একটি অংশ অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক এ জমার হার পরিবর্তন করে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলই হলো জমার হার পরিবর্তন নীতি।
উদ্দীপকে তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সীমাহীন ঋণ দেয়ার কারণে দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। তাই ঋণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের চেয়ে ১% বেশি আমানত জমা রাখছে। অর্থাৎ আগের তুলনায় ১% বেশি আমানতের অর্থ বাণিজ্যিক ব্যাংককে তারল্য হিসেবে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণদান ক্ষমতা কমবে। ফলে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এভাবে জমার হার পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ঋণ নিয়ন্ত্রণের এ পদ্ধতিকে জমার হার পরিবর্তন নীতি বলা হয়।
তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ব্যাংককে তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে।
ঘ উদ্দীপকে নিকাশঘর সুবিধা ব্যতীত গ্রাহক ধরে রাখা সম্ভব নয়। তাই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ বিষয়ে ভয়ে রয়েছে।
নিকাশঘর হলো আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির স্থল। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত¡াবধানে এ পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পারস্পরিক দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করে থাকে।
উদ্দীপকে ঋণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর জমার হার ১% বাড়ায়। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকাশঘর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারে এই ভয়ে সকল তালিকাভুক্ত ব্যাংকই এ সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য হচ্ছে।
নিকাশঘর সুবিধা বঞ্চিত হলে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো গ্রাহকের চেক, বিনিময় বিল ইত্যাদির মূল্য পরিশোধ করতে পারবে না। এতে ব্যাংকের ওপর গ্রাহক সন্তুষ্টি কমবে। ফলে ব্যাংকগুলোর গ্রাহকের সংখ্যাও কমতে পারে। আর এভাবে গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং গ্রাহকের সংখ্যা কমলে ব্যাংকের আমানত সংগ্রহের পরিমাণও কমতে থাকবে। যার ফলে ব্যাংকের মুনাফা কমবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এজন্যই নিকাশঘর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে চায় না।
জমার হার : বাণিজ্যিক ব্যাংককে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট হারে সম্পূর্ণ আমানতের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। এটিকেই জমার হার বলে।
মমমপ্রশ্ন৮ দেশে হঠাৎ করে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক খুবই উদ্বিগ্ন। ব্যাংকটি পরিপত্র জারি করেছে এখন থেকে তাদের থেকে ঋণ নিতে ব্যাংকগুলোকে ১% অধিক হারে অর্থাৎ ৬% হারে সুদ দিতে হবে। কিছু ব্যাংক এটা না মানায় দ্বিতীয় পরিপত্রে জমা সঞ্চিতি ১% বাড়িয়েছে। এতেও দু-একটা ব্যাংক কার্যকর সাড়া না দেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ঋণ সুবিধা স্থগিত করেছে। [দি. বো. ১৬]
ক. নিকাশঘর কী? ১
খ. খোলাবাজার নীতি বলতে কী বোঝায়? ২
গ. উদ্দীপকের ১ম জারিকৃত পরিপত্র ঋণ নিয়ন্ত্রণের কোন পদ্ধতির মধ্যে পড়ে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. ঋণ সুবিধা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়ার যৌক্তিকতা মূল্যায়ন করো। ৪
৮ নং প্রশ্নের উত্তর
ক ব্যাংকিং লেনদেন থেকে উদ্ভ‚ত আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনার নিষ্পত্তিস্থলই হলো নিকাশঘর।
পরিপত্র হলো সরকারি ঘোষণা বা বিজ্ঞপ্তি বা ইশতিহার।
খ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে খোলাবাজারে যে বন্ড, সিকিউরিটিজ, বিল, শেয়ার, ডিবেঞ্চার ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করে তাকে খোলাবাজার নীতি বলে।
বাজারে অর্থের সরবরাহ বেশি হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলাবাজারে জনগণকে শেয়ার, বন্ড, সিকিউরিটিজ ইত্যাদি ক্রয়ের আহŸান জানায়। আবার অর্থ সরবরাহ কম হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জনগণের কাছ থেকে শেয়ার, বন্ড, সিকিউরিটিজ ইত্যাদি ক্রয় করে। এতে ঋণের প্রবাহ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।
গ উদ্দীপকে উলিখিত ১ম জারিকৃত পরিপত্র ঋণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাংক হার পদ্ধতির মধ্যে পড়ে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত বিদ্যমান ব্যাংক হারের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিয়ে ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের কৌশলকে ব্যাংক হার নীতি বলে। বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংক হার ৫%।
দেশে হঠাৎ করে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিপত্রে জারি করে যে, এখন থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ১% বর্ধিত হারে সুদ প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ পূর্বে ব্যাংক হার ৫% থাকলেও এখন তা ৬% হারে কার্যকর হবে। এখানে ব্যাংক হার পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণ করছে। সুতরাং, ১ম জারিকৃত পরিপত্রটি ঋণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাংক হার নীতি পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত।
মুদ্রা সংকোচন : মুদ্রাবাজারে অর্থের অভাব দেখা দিলে মুদ্রা সংকোচনের সৃষ্টি হয়।
মুদ্রাস্ফীতি : মুদ্রাবাজারে অর্থের পরিমাণ বেশি হলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।
ঘ উদ্দীপকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণের প্রত্যক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ নীতির আলোকে ঋণ সুবিধা স্থগিত করেছে, যা যথার্থ হয়েছে।
কোনো তালিকাভুক্ত ব্যাংক প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করে ঋণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাকে প্রত্যক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ বলে। এক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ সুবিধা স্থগিত করে থাকে।
উদ্দীপকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ প্রদানে ব্যাংক হার ১% বাড়িয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ প্রদান করে। তবে কিছু ব্যাংক এ নির্দেশনা অমান্য করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বিতীয় দফায় জমার হার ১% বাড়ায়। এতেও দু-একটা ব্যাংক সাড়া না দেয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ঋণ সুবিধা স্থগিত করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য হিসেবে প্রত্যক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কাম্যস্তরে বা স্বাভাবিক রাখতে মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক এ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর ফলে আদেশ অমান্যকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারবে না, যা ঋণের কাম্যস্তর রক্ষা করবে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ সুবিধা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হয়েছে।
মমমপ্রশ্ন৯ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করাই বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য দরকার কৃষি, শিল্পসহ অর্থনীতির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতকে শক্তিশালীকরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকি ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী এবং ব্যাংকসমূহ গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সহজশর্তে ঋণ দিচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশের কৃষিখাত সবসময় অবহেলিত। প্রয়োজনীয় কৃষিঋণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবে দিন দিন কৃষিকাজ পেশা হিসেবে আকর্ষণ হারাচ্ছে, যা কাম্য কৃষি উৎপাদনকে ব্যাহত করছে। এ বাস্তব সমস্যা সম্পর্কে অবগত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি তার তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহকে তাদের মোট প্রদত্ত ঋণের একটি নির্দিষ্ট অংশ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কৃষকদের প্রদান করা বাধ্যতামূলক করে আদেশ জারি করেছে। [কু. বো. ১৬]
ক. নিকাশঘর কী? ১
খ. কোন ব্যাংককে মুদ্রাবাজারের অভিভাবক বলা হয় এবং কেন? ২
গ. উদ্দীপকে ঋণ নিয়ন্ত্রণের কোন ধরনের গুণগত পদ্ধতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে কৃষকদের জন্য ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশ জারির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো। ৪
৯ নং প্রশ্নের উত্তর
ক ব্যাংকিং লেনদেন থেকে উদ্ভ‚ত আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনার নিষ্পত্তি স্থলই হলো নিকাশঘর।
খ দেশের মুদ্রাবাজারকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মুদ্রামান সংরক্ষণ করে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুদ্রাবাজারের অভিভাবক বলা হয়।
সরকারের নিয়ন্ত্রণে ও মালিকানায় যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয় তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ব্যাংক দেশের স্বার্থে মুদ্রাবাজারের প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মুদ্রাবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রামান সংরক্ষণ করে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুদ্রাবাজারের অভিভাবক বলা হয়।
গ উদ্দীপকে ঋণ নিয়ন্ত্রণের গুণগত পদ্ধতি বলতে ঋণ বরাদ্দকরণ নীতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
বিশেষ খাত চিহ্নিত করে ঋণের পরিমাণ কম-বেশি করার নীতিকে ঋণের বরাদ্দকরণ নীতি বলে। এ নীতির ক্ষেত্রে যে সকল খাতে ঋণ দেয়া প্রয়োজন সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ বরাদ্দের নির্দেশ দেয়। আর যে সকল খাতে ঋণ কমানো উচিত সেক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে।
উদ্দীপকে উলেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা শক্তিশালী। ব্যাংকগুলো গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সহজ শর্তে ঋণ দিলেও কৃষি খাত সবসময় অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক তার তালিকাভুক্ত ব্যাংকসমূহকে তাদের প্রদত্ত ঋণের একটি নির্দিষ্ট অংশ কৃষকদের প্রদান করা বাধ্যতামূলক করে দেয়। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট খাতে ঋণ বরাদ্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। তাই এখানে ঋণ বরাদ্দকরণ নীতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
ঘ উদ্দীপকে কৃষকদের জন্য ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশ জারির যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম হলো ঋণের বরাদ্দকরণ নীতি। এর মাধ্যমে জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করা হয়। ঋণের বরাদ্দকরণ নীতি অনুযায়ী বিশেষ বিশেষ খাত চিহ্নিত করে ঋণের পরিমাণ কম-বেশি করা হয়।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো গার্মেন্টস ও শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু কৃষি খাতে ঋণ সুবিধার অভাবে পেশা হিসেবে এটি আকর্ষণ হারাচ্ছে। এ অবস্থা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর ওপর একটি আদেশ জারি করেছে। এ আদেশে ব্যাংকগুলোকে তাদের মোট প্রদত্ত ঋণের একটি নির্দিষ্ট অংশ কৃষকদের প্রদান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ঋণ নিয়ন্ত্রণে ঋণের বরাদ্দকরণ নীতি প্রয়োগের ফলে কোন কোন খাতে ঋণ প্রদান করতে হবে, সে সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সুস্পষ্ট নির্দেশ দেয়। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো স্বাধীনভাবে ঋণদান করতে পারে না। শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশিত খাতে ঋণদান করতে হয়। এতে ঋণের প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়। উদ্দীপকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষ আদেশের ফলে এখন থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে তাদের মোট বরাদ্দকৃত ঋণের একটি অংশ কৃষকদের প্রদান করতে হবে। ফলে কৃষকরা ঋণ পেয়ে উপকৃত হবেন। এতে কৃষি খাত শক্তিশালী এবং বাংলাদেশ সরকারের মূল লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে।
মমমপ্রশ্ন১০ বাংলাদেশ সরকার পাতাল রেল প্রকল্পের প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহের লক্ষ্যে তার প্রতিনিধিত্বকারী ব্যাংককে দায়িত্ব দেয়। ব্যাংকটি বাজারে ১২% হারে বন্ড ইস্যু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে [চ. বো. ১৬]
ক. নিকাশঘর কী? ১
খ. ঋণ নিয়ন্ত্রণ কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম কাজ? ২
গ. উদ্দীপকে প্রতিনিধিত্বকারী ব্যাংকটির নাম কী? এ ব্যাংকের অন্য কার্যাবলি ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. বন্ড ইস্যু করে মূলধন সংগ্রহ যুক্তিযুক্ত কি? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। ৪
১০ নং প্রশ্নের উত্তর
ক ব্যাংকিং লেনদেন থেকে উদ্ভ‚ত আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনার নিষ্পত্তিস্থলই হলো নিকাশঘর।
খ দেশের সামগ্রিক ঋণের পরিমাণ কাম্যমাত্রায় রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।
ঋণের অর্থ জোগানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো ব্যাংক। এটির জোগান কম হলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। আবার বেশি হলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। এই উভয় অবস্থা এড়িয়ে বাজারে ঋণের পরিমাণ কাম্যস্তরে রাখাই ঋণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য। অর্থাৎ মুদ্রাবাজারের অভিভাবক হিসেবে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম কাজ।
গ উদ্দীপকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যাংকটির নাম কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীনে পরিচালিত দেশের এক ও অনন্য ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানই হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বত্রই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক, প্রতিনিধি ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে থাকে।
উদ্দীপকে বাংলাদেশ সরকার পাতাল রেল প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহের লক্ষ্যে সরকার তার প্রতিনিধিত্বকারী ব্যাংককে মূলধন সংগ্রহের দায়িত্ব প্রদান করেছে। প্রতিটি দেশেই সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যাংক হিসেবে ঐ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্য পরিচালনা করে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ঋণের উৎস হিসেবে কাজ করে। সরকারের আর্থিক সংকটের সময় এ ব্যাংক সরকারকে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু সরকারের ব্যাংক হিসেবে কার্যাবলি সম্পাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, অন্যান্য কার্যসম্পাদনের মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও মুদ্রাবাজার কার্যকরভাবে পরিচালনার দায়িত্বও পালন করে। এ ব্যাংকটি অর্থনৈতিক গবেষণার স্বার্থে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করে। বিশ্লেষণকৃত তথ্যকে রিপোর্ট আকারে তৈরি ও প্রকাশনার ব্যবস্থাও কেন্দ্রীয় ব্যাংক করে থাকে।
ঘ উদ্দীপকে উলিখিত ব্যাংকটি মূলধন সংগ্রহের লক্ষ্যে বাজারে বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয়, যা যৌক্তিক হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ঋণের উৎস হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ স্থানান্তর এবং বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত তহবিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংগ্রহ ও জমা করে।
উদ্দীপকে বাংলাদেশ সরকার পাতাল রেল প্রকল্পের প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহের লক্ষ্যে তার প্রতিনিধিত্বকারী ব্যাংক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দায়িত্ব প্রদান করে। ব্যাংকটি বাজারে ১২% হারে বন্ড ইস্যু করার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়।
সরকারের আর্থিক সংকটের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন খাত থেকে ঋণ সংগ্রহেও এ ব্যাংক সরকারকে সহযোগিতা করে। প্রয়োজনে বন্ড, সিকিউরিটিজ ইত্যাদি বিক্রির ব্যবস্থা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলধনের জোগান দেয়। উদ্দীপকেও সরকারের বিশেষ প্রকল্পের প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২% হারে বন্ড ইস্যুর ব্যবস্থা করে মূলধন গঠনের চেষ্টা করেছে। তাই সরকারের ব্যাংক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার কর্তব্য পালন করেছে। সুতরাং, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য বন্ড ইস্যু করে মূলধন সংগ্রহ করার সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক হয়েছে।
মমমপ্রশ্ন১১ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থবাজারের ঋণ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। তাই ব্যাংকটি আর্থিক বাজার থেকে পূর্বের তুলনায় অধিক পরিমাণে বেসরকারি বন্ড, সিকিউরিটিজ এবং বিভিন্ন দলিলপত্র ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ঋণ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সফলতা লাভ করে।
[সি. বো.; রা. বো. ১৬]
ক. নিকাশঘর কী? ১
খ. কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুদ্রাবাজারের অভিভাবক বলা হয় কেন? ২
গ. উদ্দীপকের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণের কোন সংখ্যাÍক পদ্ধতি গ্রহণ করেছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. ঋণ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো। ৪
১১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক ব্যাংকিং লেনদেন থেকে উদ্ভ‚ত আন্তঃব্যাংকিং দেনা-পাওনার নিষ্পত্তিস্থলই হলো নিকাশঘর।
খ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মুদ্রার মান বজায় রাখে বলে একে মুদ্রাবাজারের অভিভাবক বলা হয়। দেশের প্রয়োজনীয় মুদ্রার প্রচলন, নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রাবাজার গঠন ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের মুদ্রার পরিমাণ ও ঋণের যথার্থতা মূল্যায়নের মাধ্যমে মুদ্রার ও ঋণের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে দেশের মুদ্রাবাজার ও মূল্যস্তর স্থিতিশীল রাখে।
গ উদ্দীপকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণে সংখ্যাÍক পদ্ধতি হিসেবে খোলাবাজার নীতি গ্রহণ করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। এ উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন খোলাবাজারে বিভিন্ন সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে তখন তাকে খোলাবাজার নীতি বলে।
উদ্দীপকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থবাজারের ঋণ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এ উদ্দেশ্যে ব্যাংকটি বাজার থেকে বেসরকারি বন্ড, সিকিউরিটিজ ইত্যাদি ক্রয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। খোলাবাজার নীতিতেও একইভাবে বাজার থেকে বন্ড, সিকিউরিটিজ ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে ঋণ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সুতরাং, উদ্দীপকের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণের যে সংখ্যাÍক পদ্ধতি গ্রহণ করেছে তা খোলাবাজার নীতির বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সাধারণ বা সংখ্যাÍক পদ্ধতি : ঋণের উদ্দেশ্য বা ব্যবহারের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আরোপ না করে সাধারণভাবে বাজারের ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলকেই সাধারণ বা সংখ্যাÍক পদ্ধতি বলে।
ঘ উদ্দীপকে ঋণ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতির প্রয়োজনে অর্থের পরিমাণ সংকোচন ও সম্প্রসারণ করে থাকে। এর উদ্দেশ্য হলো ঋণের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা।
উদ্দীপকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থবাজারে ঋণের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এ লক্ষ্যে ব্যাংকটি ঋণ নিয়ন্ত্রণের সংখ্যাÍক পদ্ধতি খোলাবাজার নীতি অনুসরণ করে। এ পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে ব্যাংকটি ঋণ নিয়ন্ত্রণে সফল হয়।
উদ্দীপকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে আর্থিক বাজার থেকে বেসরকারি বন্ড, সিকিউরিটিজ এবং বিভিন্ন দলিলপত্র ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। এখানে খোলাবাজার নীতি প্রয়োগ করা হয়েছে, যা ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত অর্থবাজারে ঋণ সরবরাহ অপর্যাপ্ত হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি বন্ড, সিকিউরিটিজ ইত্যাদি ক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ সরবরাহ বাড়ায়। আবার, বাজারে ঋণের আধিক্য দেখা দিলে ব্যাংকটি বেসরকারি বন্ড বা সিকিউরিটিজ বিক্রি করে। এতে বাজারে অর্থ তথা ঋণের সরবরাহ হ্রাস পায়। সুতরাং কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি বাজারে ঋণ সরবরাহের অপর্যাপ্ততা বা স্বল্পতা দূরীকরণে উলিখিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা যথার্থই যৌক্তিক হয়েছে।
মমমপ্রশ্ন১২ অশান্ত মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কারণে তেলের মূল্য অস্বাভাবিক বাড়ে। তেলের বাড়তি মূল্য মেটাতে সরকারের হিমশিম অবস্থা। দেশের অভ্যন্তরেও অর্থ সংকট সৃষ্টি হয়। অর্থ সংকট মোকাবিলায় দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচুর পরিমাণে কাগজি মুদ্রা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ে। দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থ সংকটের সমাধান হলেও দ্রব্যমূল্য একলাফে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। [য. বো. ১৬]
ক. মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে? ১
খ. ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক’ ব্যাখ্যা করো। ২
গ. দেশের অর্থবাজার সচল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কীভাবে অবদান রেখেছে উদ্দীপকের আলোকে তা ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনাবলির আলোকে, দেশের অভ্যন্তরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণ কী? কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখতে পারে? বিশ্লেষণ করো। ৪
১২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক মুদ্রার মূল্যমান হ্রাস বা কমে যাওয়ার কারণে দৈনন্দিন ব্যবহৃত দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিকে মুদ্রাস্ফীতি বলে।
খ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে প্রয়োজনে ঋণদান, সরকারের পক্ষে লেনদেন ও প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক।
এ ব্যাংকের মালিক, পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক হলো সরকার। এ ব্যাংক সরকারের পক্ষে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক লেনদেন সম্পাদন করে। এছাড়া সরকারের আর্থিক নীতি বাস্তবায়নেও এ ব্যাংক ভ‚মিকা পালন করে। এজন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরকারের ব্যাংক বলা হয়।
গ দেশের অর্থবাজার সচল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থের জোগান বাড়িয়ে বা কমিয়ে অর্থবাজার নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক অবদান রেখেছে।
দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় নোট ও মুদ্রা সরবরাহ করে। অতিরিক্ত নোট ও মুদ্রার প্রচলনে যেমন দেশে মুদ্রাস্ফীতি হয়, আবার চাহিদার চেয়ে কম মুদ্রার প্রচলনের ফলে বাজারে মুদ্রা সংকোচন দেখা দেয়।
উদ্দীপকে তেলের মূল্য বাড়ায় তেল আমদানি করতে গিয়ে দেশে অর্থসংকট দেখা দেয়। ফলে দেশের অর্থ ব্যবস্থা কিছুটা অচল হয়ে পড়ে। এ সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচুর পরিমাণে কাগজি মুদ্রা বাজারে ছাড়ে। এর ফলে বাজারে যে মুদ্রা সংকট দেখা দিয়েছে তা নিরসন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি বাজারে তখন নোট না ছাড়তো তাহলে যে সংকট অবস্থার তৈরি হয়েছিল সেটি আরও ব্যাপক হতো। এছাড়া বাজারে নতুন নোট ছাড়ার ফলে জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। তাই বলা যায়, দেশের অর্থবাজার সচল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
ঘ উদ্দীপকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নতুন কাগজি মুদ্রা ছাড়ায় দেশের অভ্যন্তরে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। এই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকই কেবল অবদান রাখতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের হয়ে দেশের অর্থবাজার নিয়ন্ত্রণ করে। বাজারে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে দ্রব্যমূল্য বাড়ে। আবার, অর্থের সরবরাহ কমে গেলে দ্রব্যমূল্য কমে। তাই দ্রব্যমূল্য কাম্যস্তরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে অর্থের জোগান নিয়ন্ত্রণ করে।
উদ্দীপকে উলেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ে। ফলে তেলের বাড়তি মূল্য পরিশোধ করতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে দেশের অভ্যন্তরে অর্থ সংকট সৃষ্টি হয়। এ সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে প্রচুর পরিমাণে কাগজি মুদ্রা ছাড়ে। এতে অর্থ সংকটের সমাধান হলেও দ্রব্যমূল্য কয়েক গুণ বাড়ে।
মধ্যপ্রাচ্য সংকটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলাবাজার নীতি ও ব্যাংক জমার হার নীতি অনুসরণ করে মুদ্রাস্ফীতি রোধ করে। যখন বাজারে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলাবাজারে বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্র, শেয়ার, বন্ড ইত্যাদি বিক্রি করে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে আসে। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের নগদ অবস্থা সংকুচিত হয় এবং মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা সম্ভব হয়। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ হ্রাস করার জন্য ব্যাংক হার বাড়ে। এ কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ জমার পরিমাণ কমে এবং মক্কেলদের প্রদত্ত আয়ের ওপর সুদের হার বাড়ে। এতে মক্কেলদের আয়ের পরিমাণ কমে যায়। ফলে মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা সম্ভব হয়। সুতরাং, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া উলিখিত পদক্ষেপগুলোর ফলে বাজারে অর্থের প্রবাহ কমে আসবে এবং দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।