নবম দশম রসায়ন ৮ম অধ্যায় রসায়ন ও শক্তি জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

নবম দশম/এসএসসি রসায়ন অষ্টম অধ্যায় রসায়ন ও শক্তি এর পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি,জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো।

এসএসসি রসায়ন অষ্টম অধ্যায় রসায়ন ও শক্তি

রসায়ন ও শক্তি পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি

⇒ রাসায়নিক বন্ধন : যে আকর্ষণী বল দ্বারা অণুতে পরমাণুগুলো পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে তাকে রাসায়নিক বন্ধন বলা হয়। যৌগে বিভিন্ন মৌলের পরমাণু মোটামুটি দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকে।

⇒ আন্তঃআণবিক শক্তি : প্রত্যেক পদার্থের অণুসমূহ পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এ আকর্ষণ শক্তিকে আন্তঃআণবিক শক্তি বলা হয়। কঠিন পদার্থের আন্তঃআণবিক শক্তি সবচেয়ে বেশি। তরল পদার্থের আন্তঃআণবিক শক্তি কঠিন পদার্থের তুলনায় কিছুটা কম। বায়বীয় পদার্থের আন্তঃআণবিক শক্তি সবচেয়ে কম।

⇒ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শক্তির রূপান্তর : রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপ উৎপন্ন বা শোষিত হয়। কয়লা পোড়ালে তাপ পাওয়া যায়। চুনকে পানিতে রাখলে পানি গরম হয়ে ওঠে। এসব বিক্রিয়ায় তাপ উৎপাদিত হয়। আবার অক্সিজেন গ্যাসের নিঃশব্দ বিদ্যুৎ ক্ষরণে যে ওজোন গ্যাস উৎপন্ন হয় তাতে তাপ শোষিত হয়। বাতাসের নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাসের সংযোগে নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হওয়ার সময় তাপ শোষিত হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপশক্তির এরূপ পরিবর্তনকে শক্তির রূপান্তর বলা হয়।

⇒ বিক্রিয়া তাপ : কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরিবর্তিত তাপকে বিক্রিয়া তাপ বলে।

⇒ দহন তাপ : ১atm চাপে কোনো যৌগিক বা মৌলিক পদার্থের ১ mole সম্পূর্ণরূপে অক্সিজেনে দহনকালে তাপশক্তির যে পরিবর্তন হয় তাকে ওই পদার্থের দহন তাপ বলা হয়। দহনের সময় পদার্থের অণুর বন্ধনসমূহ ভাঙে। এ কারণেই দহনে সর্বদা শক্তি নির্গত হয়। যেমন- ১ mole অর্থাৎ ১৬ম মিথেনকে অক্সিজেনে পোড়ালে ৮৯০ kJ তাপ নির্গত হয়। সুতরাং, মিথেনের দহন তাপ হচ্ছে ৮৯০ kJ/mole।
CH4(g) + ২O2 (g) → CO2(g) + ২H2O (g) ; ΔH = – ৮৯০kJ

⇒ দ্রবণ তাপ : কোনো পদার্থের এক মোলকে যথেষ্ট পরিমাণ দ্রাবকে দ্রবীভ‚ত করলে তাপের যে পরিবর্তন হয় তাকে সে পদার্থের দ্রবণ তাপ বলা হয়। দ্রাবকের পরিমাণের ওপর দ্রবণ তাপ কিছুটা নির্ভর করে। সাধারণত দ্রাবকের পরিমাণ এতটা বেশি রাখা হয় যেন দ্রবণকে খুব লঘু বলে ধরা যায়।

⇒ বিক্রিয়ায় তাপশক্তির পরিবর্তন : বিক্রিয়ায় তাপশক্তির পরিবর্তনকে ΔH সংকেত দ্বারা প্রকাশ করা হয়। ΔH চিহ্ন দ্বারা বিক্রিয়া তাপোৎপাদী না তাপহারী তা বোঝা যায়। আধুনিক রীতি অনুযায়ী যদি বিক্রিয়ায় তাপ উৎপাদিত হয় তবে ΔH ঋণাত্মক। বিক্রিয়ায় তাপ শোষিত হলে ΔH ধনাত্মক। ΔH এর একক kJ ধরা হয়। ΔH এর মান পদার্থের অবস্থা, তাপমাত্রা ও চাপের ওপর নির্ভরশীল। বিক্রিয়ায় তাপশক্তির পরিবর্তন মাপার জন্য প্রমাণ তাপমাত্রা ও চাপ ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রমাণ তাপমাত্রা ২৫0C বা ২৯৮K এবং প্রমাণ চাপ ১ atm।

⇒ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপশক্তির পরিবর্তনের কারণ : যেকোনো বস্তুর অণুতে বিভিন্ন পরমাণু বা আয়নের মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন বিদ্যমান। এ সকল বন্ধন শক্তির আধার। এ শক্তিকে রাসায়নিক শক্তি বলা হয়। একটি বন্ধন ভাঙতে শক্তি যোগান দিতে হয়। আবার ঐ বন্ধন সৃষ্টি হলে সেই শক্তি নির্গত হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো পরমাণু সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না। তাদের মধ্যকার বন্ধন ভাঙে এবং নতুন বন্ধন গড়ে। এ বন্ধন ভাঙা ও গড়ায় সর্বমোট যে শক্তির পরিবর্তন হয় সেটাই বিক্রিয়ায় তাপ ও অন্যান্য শক্তির পরিবর্তন হিসেবে দেখা যায়। যদি বন্ধন ভাঙতে কম পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় এবং নতুন বন্ধন সৃষ্টিতে অধিক পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় তাহলে বিক্রিয়ায় এ দুই শক্তির পার্থক্যের সমপরিমাণ শক্তি নির্গত হবে। অপরদিকে, বন্ধন ভাঙতে যদি অধিক পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় তবে বিক্রিয়ায় দুই শক্তির পার্থক্যের সমান পরিমাণ শক্তি শোষিত হবে।
বন্ধন ভাঙার প্রয়োজনীয় শক্তি > বন্ধন সৃষ্টিতে নির্গত শক্তি ⇒ তাপহারী বিক্রিয়া
বন্ধন ভাঙার প্রয়োজনীয় শক্তি < বন্ধন সৃষ্টিতে নির্গত শক্তি ⇒ তাপোৎপাদী বিক্রিয়া

⇒ জীবাশ্ম জ্বালানি : অতীত যুগের জীবের দেহাবশেষ জীবাশ্মে পরিণত হয় এবং সৃষ্ট জীবাশ্ম কঠিন বা তরল আকারে খনি থেকে তুলে জ্বালানিরূপে ব্যবহার করা হয়। এই জ্বালানিকে জীবাশ্ম জ্বালানি বা খনিজ জ্বালানি বলে। কয়লা, পেট্রোল, কেরোসিন, ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি কয়েকটি জীবাশ্ম জ্বালানির নাম।

⇒ বিদ্যুৎ পরিবাহী : যেসব পদার্থ বিদ্যুৎ পরিবহনে সক্ষম বা যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তাদের বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ বলে। যেমন : তামা, সোনা, রুপা, অ্যালুমিনিয়াম, গ্রাফাইট, গ্যাস কার্বন ইত্যাদি। বিদ্যুৎ পরিবাহী দুই প্রকারের- ধাতব পরিবাহী ও তড়িৎ বিশ্লেষ্য।

⇒ ধাতব পরিবাহী : যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহনের সময় কোনোরূপ রাসায়নিক পরিবর্তন হয় না তাদেরকে ধাতব পরিবাহী বলে। তামা, রুপা, অ্যালুমিনিয়ামসহ সকল ধাতু ও গ্রাফাইট এ ধরনের পরিবাহী।

⇒ তড়িৎ বিশ্লেষ্য : কতকগুলো পদার্থ গলিত বা পানিতে দ্রবীভ‚ত অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন করে এবং বিদ্যুৎ পরিবহনকালে পদার্থগুলো বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন পদার্থ উৎপন্ন করে। এ জাতীয় পদার্থকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য বলে। এসিড, ক্ষার ও লবণের জলীয় দ্রবণ উত্তম তড়িৎ বিশ্লেষ্যের উদাহরণ। যেমন : H2SO4, HCl, NaOH, KOH, NaCl, CuSO4, AgNO3 ইত্যাদি।

⇒ তড়িৎ অবিশ্লেষ্য : যেসব যৌগ জলীয় দ্রবণে বা গলিত অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে না তাদের তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। বিশুদ্ধ পানি, চিনির জলীয় দ্রবণ, গিøসারিন, অ্যালকোহল, বেনজিন, কেরোসিন প্রভৃতি বিদ্যুৎ পরিবহন করে না। তাই এরা তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ।

⇒ বিদ্যুৎ অপরিবাহী : যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না সেগুলোকে বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থ বলে। যেমন : কাঠ, কাচ, মোম, কয়লা, গন্ধক, চিনি, রবার, অ্যাবোনাইট ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ চলাচল করতে পারে না। তাই এগুলো বিদ্যুৎ অপরিবাহী।

⇒ তড়িৎ বিশ্লেষণ : যে প্রক্রিয়ায় গলিত বা দ্রবীভ‚ত অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করে পদার্থটির রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন পদার্থ উৎপন্ন করা হয় তাকে তড়িৎ বিশ্লেষণ বলে। যেমন : NaCl একটি তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ। দ্রবীভ‚ত অবস্থায় এর মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করলে এতে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে এবং Na+ ক্যাটায়ন এবং Cl- অ্যানায়ন উৎপন্ন হয়।

তড়িৎ বিশ্লেষণ কোষ : কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করতে হলে পদার্থটিকে গলিত বা পানিতে দ্রবীভ‚ত অবস্থায় একটি পাত্রের মধ্যে নেয়া হয়। সাধারণভাবে এ ধরনের পাত্রকে তড়িৎ বিশ্লেষণ কোষ বা ভোল্টামিটার বলা হয়। তড়িৎ বিশ্লেষণ কোষ বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে।

⇒ তড়িৎদ্বার : তড়িৎ বিশ্লেষণ কোষে বা ভোল্টামিটারে তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণের মধ্যে দুটি সুপরিবাহী ধাতব পাত বা দণ্ড (যেমন : প্লাটিনাম বা কপার) ডুবিয়ে রাখা হয়। এ তড়িৎ পরিবাহী পাত বা দণ্ড দুটিকে তড়িৎদ্বার বলে। এ পাত বা দণ্ড দুটির একটি ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তের সঙ্গে এবং অপরটি ঋণাত্মক প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। তড়িৎদ্বার হিসেবে প্লাটিনাম এবং কপারের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া আয়রন, নিকেল, গ্রাফাইট ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।

⇒ অ্যানোড : যে তড়িৎদ্বারটি ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং যার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎপ্রবাহ ব্যাটারি থেকে তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে প্রবেশ করে তাকে অ্যানোড বলে।

⇒ ক্যাথোড : যে তড়িৎদ্বারটি ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং যার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎপ্রবাহ তড়িৎ বিশ্লেষ্য থেকে পুনরায় ব্যাটারিতে ফিরে যায় তাকে ক্যাথোড বলে।

তড়িৎ বিশ্লেষণের আয়নীয় ব্যাখ্যা : গলিত অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের অণুগুলো আপনা থেকে ভেঙে দুটি বিপরীত তড়িৎগ্রস্ত কণায় বিয়োজিত হয়ে যায়। এরূপ তড়িৎগ্রস্ত কণাগুলোকে আয়ন বলে। পজেটিভ তড়িৎগ্রস্ত কণাগুলোকে ক্যাটায়ন আর নেগেটিভ তড়িৎগ্রস্ত কণাগুলোকে অ্যানায়ন বলে। কোনো মৌল বা মূলকের যোজনী যত আয়ন ঠিক তত একক আধান বর্তমান থাকে। দ্রবণে বা গলিত অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ সামগ্রিকভাবে তড়িৎ নিরপেক্ষ থাকে। আয়নগুলোকে দ্রবণ বা গলিত অবস্থায় পৃথক করা যায় না বা আলাদাভাবে সংগ্রহ করা যায় না।

⇒ তড়িৎ রাসায়নিক শ্রেণি : তড়িৎ ধনাত্মকতার ক্রমহ্রাসমান মান অনুযায়ী ক্যাটায়নগুলোকে এবং তড়িৎ ঋণাত্মকতার ক্রমহ্রাসমান মান অনুযায়ী অ্যানায়নগুলোকে সাজিয়ে যে তালিকা পাওয়া যায় সেই তালিকাকে তড়িৎ রাসায়নিক শ্রেণি বলে।

ইলেকট্রোপ্লেটিং : তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় লোহা, তামা, পিতল প্রভৃতি ধাতু বা ধাতু সংকরের তৈরি দ্রব্যের ওপর নিকেল, জিংক, সিলভার, গোল্ড, ক্রোমিয়াম প্রভৃতি ধাতুর প্রলেপ দেওয়াকে ইলেকট্রোপ্লেটিং বলা হয়। ধাতুর তৈরি জিনিসপত্রকে জলবায়ু এবং বায়ুর অক্সিজেনের প্রকোপ থেকে রক্ষা করা এবং সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলাই ইলেকট্রোপ্লেটিংয়ের উদ্দেশ্য।

গ্যালভানিক কোষ : যে তড়িৎ রাসায়নিক কোষে তড়িৎদ্বার দ্বারা বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে, অর্থাৎ বিক্রিয়া সংঘটনের জন্য বাইরে থেকে শক্তির দরকার হয় না এবং রাসায়নিক শক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে পরিণত হয়, তাকে গ্যালভানিক কোষ বলে। এই কোষে তড়িৎদ্বার দুটিকে তারের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়। ফলে অ্যানোড থেকে ক্যাথোডে ইলেকট্রন প্রবাহ শুরু হয়।

⇒ তড়িৎ রাসায়নিক কোষ : যে কোষে তড়িৎ প্রবাহের মাধ্যমে রাসায়নিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা যায় তাকে তড়িৎ রাসায়নিক কোষ বলে। একে গ্যালভানিক কোষও বলা হয়। যে কোষে তড়িৎ বিশ্লেষণ করা হয় তাকে তড়িৎ বিশ্লেষণ কোষ বলে। তড়িৎ রাসায়নিক কোষ বিভিন্ন ক্ষুদ্রাংশ (লবণ সেতু, তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণ) নিয়ে গঠিত।

⇒ ড্রাইসেল : ড্রাইসেল এক ধরনের গ্যালভানিক কোষ। একে ব্যাটারিও বলা হয়। ড্রাইসেল সাধারণত টর্চলাইট জ্বালাতে, রেডিও বাজাতে, টিভির রিমোট চালাতে, বাচ্চাদের খেলনা চালাতে ব্যবহৃত হয়। ড্রাইসেলে অ্যানোড হিসেবে ছোট জার (কৌটা) ব্যবহৃত হয়। কৌটাটি MnO2 ও তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রব দ্বারা পূর্ণ থাকে। তড়িৎ বিশ্লেষ্য হিসেবে কাই ব্যবহৃত হয়। কাইকে ঘন করার জন্য স্টার্চ দেওয়া হয়। কৌটাটি কাই দ্বারা পূর্ণ করে মাঝখানে ক্যাথোড হিসেবে MnO2 এর ভারী আবরণ যুক্ত কার্বন দণ্ড ব্যবহৃত হয়। ড্রাইসেল থেকে ১.৫ ভোল্ট তড়িৎ বিভব পাওয়া সম্ভব।

⇒ নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া : নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় একটি বড় নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে ভেঙে ছোট ছোট নিউক্লিয়াসে পরিণত হয় এবং এ সময় প্রচুর শক্তি আলোকরশ্মি হিসেবে নির্গত হয়। একে তেজস্ক্রিয়তা বলে। এক্ষেত্রে মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ৮৩- এর বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয়। যেমন : ইউরেনিয়াম ২৩৮(U) ভেঙে থোরিয়াম ২৩৪Th উৎপন্ন হয়। এভাবে বড় নিউক্লিয়াস ভেঙে ছোট নিউক্লিয়াস তৈরির প্রক্রিয়াকে নিউক্লিয়ার ফিসন বলা হয়। আবার ছোট ছোট নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে বড় নিউক্লিয়াস তৈরি হতে পারে। এ প্রক্রিয়াকে নিউক্লিয়ার ফিউসন বলে।

⇒ গ্রিন হাউজ গ্যাস : যেসব গ্যাস ভূপৃষ্ঠের তাপের একটি বড় অংশ আটকে রাখে এবং বায়ুমণ্ডলের তাপ বৃদ্ধি করে সেসব গ্যাসকে গ্রিন হাউজ গ্যাস বলে। CO2, NO, CH4, CFC কয়েকটি গ্রিন হাউজ গ্যাস।

⇒ ওজোনস্তর : বায়ুমণ্ডলের স্ট্রাটোস্ফিয়ারের নিচের দিকে ওজোন গ্যাসের একটি ঘনস্তর আছে। এ ঘনস্তরকে ওজোনস্তর বলে। ওজোনস্তর সূর্যের তেজস্ক্রিয় রশ্মি আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমাদের রক্ষা করে। বর্তমানে গ্রিন হাউজ গ্যাসগুলোর জন্য ওজোনস্তরে ছিদ্র দেখা গেছে।

⇒ অতিবেগুনি রশ্মি : সূর্যের আলো থেকে নির্গত ক্ষতিকর অদৃশ্যমান রশ্মিকে অতিবেগুনি রশ্মি বলে। ওজোনস্তর সূর্যের আলোর ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে অতিবেগুনি রশ্মি আসতে বাধা প্রদান করে।

⇒ গ্রিন হাউজ প্রভাব : বায়ুমণ্ডলে CO2, NO, CH4, CFC ইত্যাদি গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গেলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়াকে গ্রিন হাউজ প্রভাব বলে।

⇒ এসিড বৃষ্টি : শিল্প-কারখানা, যানবাহন, ইটের ভাটা ইত্যাদি থেকে বায়ু দূষণকারী বিভিন্ন গ্যাস যেমন : CO2, SO2, CO, N2 ইত্যাদি উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে SO2 গ্যাসটি বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়। পরে এই SO2-এর সাথে মেঘের জারণ ঘটে। এই মেঘ থেকে যে বৃষ্টি হয় তাকে এসিড বৃষ্টি বলে।

 

এসএসসি রসায়ন ৮ম অধ্যায় জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন \ ১ \ রাসায়নিক তাপ পরিবর্তনের পরিমাণকে কী এককে প্রকাশ করা হয়?
উত্তর : রাসায়নিক তাপ পরিবর্তনের পরিমাণকে ১ জুল বা ১ kJ এককে প্রকাশ করা হয়।
প্রশ্ন \ ২ \ রাসায়নিক বিক্রিয়ার তাপ পরিবর্তন কী কী বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর : রাসায়নিক বিক্রিয়ার তাপ পরিবর্তন তাপমাত্রা ও চাপের ওপর নির্ভর করে।
প্রশ্ন \ ৩ \ শুষ্ক কোষ কাকে বলে?
উত্তর : তরল তড়িৎবিশ্লেষ্যের পরিবর্তে পেস্ট হিসেবে এবং শুষ্ক ইলেকট্রোলাইট ব্যবহার করে যে কোষ গঠন করা হয় তাকে শুষ্ক কোষ বলে।
প্রশ্ন \ ৪ \ বন্ধন শক্তি কাকে বলে?
উত্তর : কোনো পদার্থের এক মোল পরিমাণে বিদ্যমান কোনো নির্দিষ্ট বন্ধনকে ভেঙে মুক্ত পরমাণু বা মূলকে পরিণত করতে যে পরিমাণ তাপশক্তির প্রয়োজন হয় তাকে ঐ পদার্থের বন্ধন শক্তি বলা হয়।
প্রশ্ন \ ৫ \ তাপ রাসায়নিক সমীকরণের প্রমাণ তাপমাত্রা ও চাপ কত?
উত্তর : তাপ রাসায়নিক সমীকরণে প্রমাণ তাপমাত্রা ২৫0C বা ২৯৮ক এবং প্রমাণ চাপ ১ atm বায়ুচাপ।
প্রশ্ন \ ৬ \ ড্যানিয়াল কোষে ব্যবহৃত দ্রবণ দুটি কী কী?
উত্তর : ড্যানিয়াল কোষে ZnSO4 ও CuSO4 এ দ্রবণ দুটি ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন \ ৭ \ বিদ্যুৎ প্রবাহ কী?
উত্তর : কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে আয়ন বা ইলেকট্রনগুলোর একটি নির্দিষ্ট দিকে সঞ্চালিত হওয়ার ঘটনাকে বিদ্যুৎ প্রবাহ বলে।
প্রশ্ন \ ৮ \ তড়িৎবিশ্লেষ্য কোষ কী?
উত্তর : যে পাত্রে তড়িৎবিশ্লেষণ প্রক্রিয়া চালনা করা হয় তাকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ বলে।
প্রশ্ন \ ৯ \ গ্যালভানিক কোষ তৈরির প্রধান দুটি সক্রিয় উপাদান কী?
উত্তর : গ্যালভানিক কোষ তৈরির প্রধান দুটি সক্রিয় উপাদান হলো কপার দণ্ড এবং জিঙ্ক দণ্ড।
প্রশ্ন \ ১০ \ দুটি বিদ্যুৎ পরিবাহী এবং দুটি বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থের নাম লেখ।
উত্তর : দুটি বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের নাম : রুপা ও অ্যালুমিনিয়াম।
দুটি বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থের নাম : কাঠ ও কাচ।
প্রশ্ন \ ১১ \ দুটি তড়িৎবিশ্লেষ্য ও দুটি তড়িৎঅবিশ্লেষ্য পদার্থের নাম লেখ।
উত্তর : দুটি তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের নাম : সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) ও কপার সালফেট (CuSO4)
দুটি তড়িৎঅবিশ্লেষ্য পদার্থের নাম : বিশুদ্ধ পানি ও চিনির জলীয় দ্রবণ।
প্রশ্ন \ ১২ \ তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থকে কোন অবস্থায় থাকতে হবে?
উত্তর : তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থকে পানিতে দ্রবীভ‚ত বা গলিত অবস্থায় থাকতে হবে।
প্রশ্ন \ ১৩ \ অর্ধকোষ কী?
উত্তর : দুটি তড়িৎদ্বার এবং তড়িৎবিশ্লেষ্যের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কোষ গঠিত হয়। এ ধরনের কোষের এক একটি তড়িৎদ্বার এবং তড়িৎ বিশ্লেষ্যের যুগলকে অর্ধকোষ বলা হয়।
প্রশ্ন \ ১৪ \ উদ্ভিদ কোন প্রক্রিয়ায় শক্তি সঞ্চয় করে?
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়।
প্রশ্ন \ ১৫ \ বিশুদ্ধ জ্বালানি কাকে বলে?
উত্তর : যা পোড়ানোর ফলে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক পদার্থ তৈরি হয় না, তাকে বিশুদ্ধ জ্বালানি বলে।
প্রশ্ন \ ১৬ \ ‘ফটোক্যামিক্যাল ধোঁয়া কাকে বলে?
উত্তর : যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মাধ্যমে যে বিষাক্ত গ্যাসের ধোঁয়ার সৃষ্টি করে তাকে ফটোক্যামিক্যাল ধোঁয়া বলে।
প্রশ্ন \ ১৭ \ ফুয়েল সেলের সবচেয়ে ভাল জ্বালানি কী?
উত্তর : ফুয়েল সেলের সবচেয়ে ভালো জ্বালানি হলো হাইড্রোজেন গ্যাস।
প্রশ্ন \ ১৮ \ নিউক্লিয়ার ফিসন কী?
উত্তর : যে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় বড় নিউক্লিয়াস ভেঙে ছোট ছোট নিউক্লিয়াস তৈরি হয়, তাকে নিউক্লিয়ার ফিসন বলে।
প্রশ্ন \ ১৯ \ কত তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন পরমাণু থেকে হিলিয়াম পরমাণু তৈরি হয়?
উত্তর : ১৫ মিলিয়ন 0C।
প্রশ্ন \ ২০ \ কোন গ্যাসকে গ্রিন হাউজ গ্যাস বলে?
উত্তর : কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসকে গ্রিন হাউজ গ্যাস বলে।
প্রশ্ন \ ২১ \ বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরকে ছাঁকনি বলা হয়?
উত্তর : বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরকে ছাঁকনি বলা হয়।
প্রশ্ন \ ২২ \ Ultraviolet ray কী?
উত্তর : সূর্যের আলোতে উপস্থিত অতিবেগুনি রশ্মিকে টষঃৎধারড়ষবঃ ৎধু বলে।
প্রশ্ন \ ২৩ \ সেলুলোজ কী?
উত্তর : উদ্ভিদ দেহের উপাদানসমূহকে সেলুলোজ বলে।
প্রশ্ন \ ২৪ \ নিউক্লিয়ার শিকল বিক্রিয়া কী?
উত্তর : নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া যখন শিকলের ন্যায় চলতে থাকে তাকে নিউক্লিয়ার শিকল বিক্রিয়া বলে।
প্রশ্ন \ ২৫ \ ফিসন বিক্রিয়া কোন প্রকৃতির?
উত্তর : ফিসন বিক্রিয়া হলো তাপ উৎপাদী বিক্রিয়া।
প্রশ্ন \ ২৬ \ বাণিজ্যিকভাবে লোহার পরিবর্তে কোনটি ব্যবহৃত হয়?
উত্তর : বাণিজ্যিকভাবে লোহার পরিবর্তে ইস্পাত ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন \ ২৭ \ হাইড্রোজেন পোড়ালে কী হয়?
উত্তর : হাইড্রোজেনকে পোড়ালে পরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ও তাপ উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন \ ২৮ \ লিথিয়াম ব্যাটারিতে কোনটি ব্যবহৃত হয়?
উত্তর : লিথিয়াম ব্যাটারিতে লিথিয়াম কোবাল্ট অক্সাইড (LiCoO2) ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন \ ২৯ \ ড্যানিয়াল কোষ কী ধরনের কোষ?
উত্তর : ড্যানিয়াল কোষ এক ধরনের গ্যালভানিক কোষ।
প্রশ্ন \ ৩০ \ তড়িৎবিশ্লেষ্য কোষ কী?
উত্তর : যে কোষে তড়িৎবিশ্লেষণ করা হয় তাকে তড়িৎবিশ্লেষ্য কোষ বলে।
প্রশ্ন \ ৩১ \ অপরিবাহী পদার্থ কী?
উত্তর : যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে না, তাদেরকে অপরিবাহী পদার্থ বলে।
প্রশ্ন \ ৩২ \ ইথানলকে কী বলা হয়?
উত্তর : ইথানলকে জৈব জ্বালানি বলা হয়।
প্রশ্ন \ ৩৩ \ গ্যালভানিক কোষের অপর নাম কী?
উত্তর : গ্যালভানিক কোষের অপর নাম ভোলটায়িক কোষ।
প্রশ্ন \ ৩৪ \ গ্রিন হাউজ গ্যাস কোনটি?
উত্তর : CO2 কে গ্রিন হাউজ গ্যাস বলা হয়।

এসএসসি রসায়ন ৮ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন \ ১ \ পানির তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোডে এবং অ্যানোডে কী কী গ্যাস উৎপন্ন হয় এবং এদের অনুপাত কত?
উত্তর : পানির তড়িৎ বিশ্লেষণে ক্যাথোডে হাইড্রোজেন গ্যাস এবং অ্যানোডে অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।
একই তাপমাত্রা ও চাপে ক্যাথোডে দুই আয়তন হাইড্রোজেন গ্যাস এবং অ্যানোডে এক আয়তন অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। সুতরাং, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন গ্যাসের আয়তনের অনুপাত ২ ঃ ১।
প্রশ্ন \ ২ \ অ্যানোড ও ক্যাথোড কী?
উত্তর : তড়িৎবিশ্লেষণ কোষের ধনাত্মক তড়িৎদ্বারকে অ্যানোড আর ঋণাত্মক তড়িৎদ্বারকে ক্যাথোড বলে। অ্যানোডে বিদ্যুৎ প্রবাহ ব্যাটারি থেকে তড়িৎবিশ্লেষ্যের মধ্যে প্রবেশ করে। আর, ক্যাথোডে বিদ্যুৎপ্রবাহ তড়িৎ বিশ্লেষ্য থেকে ব্যাটারিতে ফিরে যায়।
প্রশ্ন \ ৩ \ ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন কী?
উত্তর : গলিত অবস্থায় তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের অণুগুলো ভেঙে দুটি বিপরীত তড়িৎগ্রস্ত কণায় বিয়োজিত হয়ে যায়। পজিটিভ তড়িৎগ্রস্ত কণাগুলোকে ক্যাটায়ন আর নেগেটিভ তড়িৎগ্রস্ত কণাগুলোকে অ্যানায়ন বলে। Na+, Cu++, Ca++ আয়নগুলোকে ক্যাটায়ন। আর Cl-, SO4- -, S– আয়নগুলোকে অ্যানায়ন বলা হয়।
প্রশ্ন \ ৪ \ তড়িৎ রাসায়নিক কোষ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : রাসায়নিক ক্রিয়ার সাহায্যে যে যন্ত্র দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন করা যায় তাকে তড়িৎ রাসায়নিক কোষ বলে।
দুটি ইলেকট্রোড বা তড়িৎদ্বারকে একই বা দুটি ভিন্ন তড়িৎবিশ্লেষ্যের দ্রবণে নিমজ্জিত করে তড়িৎ রাসায়নিক কোষ প্রস্তুত করা হয়।
প্রশ্ন \ ৫ \ পদার্থের দহন তাপে সর্বদা শক্তি নির্গত হয় কেন?
উত্তর : ১atm চাপে কোনো যৌগিক বা মৌলিক পদার্থের ১ mole সম্পূর্ণরূপে অক্সিজেনে দহন করলে তাপশক্তির যে পরিবর্তন হয়, তাকে সে পদার্থের দহন তাপ বলা হয়। যেমন :
i. CH4(g) + ২O2 (g) → CO2(g) + ২H2O (g) ; ΔH = -৮৯০ kJ
ii. H2(g) + ১২ O2 (g) → H2O (l) ; ΔH = -২৪২ kJ
দহনের সময়ে বিক্রিয়ক পদার্থের অণুর বন্ধনসমূহ যেমন C-H, H-H ভাঙে, সাথে অক্সিজেন অণুর বন্ধনও O = O ভাঙে; কিন্তু একই সঙ্গে উৎপাদের শক্তিশালী C = O , ঙ-ঐ প্রভৃতি বন্ধনের সৃষ্টি হয়। এ কারণেই দহন তাপে সর্বদা শক্তি নির্গত হয়।
প্রশ্ন \ ৬ \ ২H2 + O2 = ২H2O + তাপ- এ বিক্রিয়াকে তাপোৎপাদী বিক্রিয়া কেন বলা হয়?
উত্তর : হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় পানি উৎপন্ন হয়। পানি একটি তাপোৎপাদী পদার্থ।
পানি এর মূল উপাদান হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের চেয়ে কম সক্রিয় এবং বেশি স্থায়ী। তাই পানি উৎপন্ন করতে বেশি তাপ শক্তির প্রয়োজন হয়। আর, এজন্য বিক্রিয়াটি একটি তাপোৎপাদী বিক্রিয়া।
প্রশ্ন \ ৭ \ H2 + I2 = ২HI – তাপ; এ বিক্রিয়াকে তাপহারী বিক্রিয়া কেন বলা হয়?
উত্তর : হাইড্রোআয়োডিক এসিড একটি তাপহারী পদার্থ। হাইড্রোআয়োডিক এসিড এর মূল উপাদান H2 এবং I2-এর চেয়ে বেশি সক্রিয় এবং কম স্থায়ী। তাই হাইড্রোআয়োডিক এসিড উৎপন্ন করতে অপেক্ষাকৃত কম তাপের প্রয়োজন হয়। আর, এজন্য বিক্রিয়াটি একটি তাপহারী বিক্রিয়া।
প্রশ্ন \ ৮ \ C(s) + O2(g) → CO2(g) ; ΔH = – ৩৯৪ kJ এ তাপ রাসায়নিক সমীকরণকে ভাষায় প্রকাশ কর।
উত্তর: প্রশ্নে উল্লিখিত বিক্রিয়ায় এক মোল কঠিন কার্বন সম্পূর্ণরূপে এক মোল অক্সিজেন গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে এক মোল কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে। একই সাথে এ সময়ে ৩৯৪ kJ তাপ নির্গত হয়।
প্রশ্ন \ ৯ \ তাপ রাসায়নিক সমীকরণে বিক্রিয়ক ও উৎপাদের অবস্থাসমূহ উল্লেখ করা হয় কেন?
উত্তর : তাপ রাসায়নিক সমীকরণে বিক্রিয়ক ও উৎপাদসমূহের অবস্থা (গ্যাসীয়, তরল বা কঠিন) উল্লেখ করা অতীব প্রয়োজন। কেননা, অবস্থাভেদে ΔH-এর মান পরিবর্তিত হতে পারে।
যেমন- ২H2(g) + O2(g) → ২H2O(l) ; ΔH = – ৫৭২kJ
এ বিক্রিয়ায় তরল পানি উৎপাদিত হতে যে তাপশক্তির পরিবর্তন হয় তা উল্লিখিত হয়েছে। কিন্তু, উক্ত বিক্রিয়ায় গ্যাসীয় পানি উৎপাদিত হলে আরও কম পরিমাণ তাপ নির্গত হবে।
যেমন- ২H2(g) + O2(g) → ২H2O(g) ; ΔH = – ৪৮৪kJ
সুতরাং, তাপ রাসায়নিক সমীকরণে বিক্রিয়ক ও উৎপাদের অবস্থাসমূহ উল্লেখ করা অতীব প্রয়োজন।
প্রশ্ন \ ১০ \ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপশক্তি উদ্ভব বা শোষিত হয় কোথা থেকে?
উত্তর : রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়কের অণুগুলোর বিভিন্ন পরমাণুর মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন বিদ্যমান। এসব বন্ধনই তাপশক্তির আধার। একটি বন্ধন ভাঙতে শক্তি যোগান দিতে হয়। আবার নতুন বন্ধন সৃষ্টি হলে সেই শক্তি নির্গত হয়। এ বন্ধন ভাঙা ও গড়ায় সর্বমোট যে শক্তির পরিবর্তন হয় সেটিই বিক্রিয়ায় তাপের উদ্ভব বা শোষণ হিসেবে দেখা দেয়।
প্রশ্ন \ ১১ \ NaCl-এর জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিশ্লেষণ করলে ক্যাথোডে ও অ্যানোডে কী গ্যাস নির্গত হয়?
উত্তর : NaCl-এর জলীয় দ্রবণে Na+, H+, Cl- এবং OH- আয়ন বর্তমান থাকে।
NaCl→ Na+ + Cl-
H2O→ H+ + OH-
Pt তড়িৎদ্বার ব্যবহার করে ঐ দ্রবণের মধ্যে তড়িৎ চালনা করলে ক্যাথোডে H+ এবং অ্যানোডে OH- আয়ন মুক্ত হয়।
কারণ H+ আয়নের তড়িৎ ঋণাত্মকতা Na+ আয়নের চেয়ে কম এবং OH- আয়নের তড়িৎ ঋণাত্মকতা Cl- আয়নের চেয়ে কম। তাই NaCl-এর জলীয় দ্রবণের তড়িৎ বিশ্লেষণ করলে ক্যাথোডে H2 এবং অ্যানোডে Cl২ নির্গত হয়।
প্রশ্ন \ ১২ \ ধাতব পরিবাহী এবং তড়িৎবিশ্লেষ্যের মধ্যে দুটি পার্থক্য উল্লেখ কর
উত্তর : ধাতব পরিবাহী এবং তড়িৎবিশ্লেষ্যের মধ্যে দুটি পার্থক্য নিম্নরূপ:
ধাতব পরিবাহী তড়িৎ বিশ্লেষ্য
i. ধাতব পরিবাহীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহনের সময় কোনোরূপ রাসায়নিক পরিবর্তন হয় না। i. গলিত বা পানিতে দ্রবীভ‚ত অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন করে এবং বিদ্যুৎ পরিবহনকালে পদার্থগুলো বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন পদার্থ উৎপন্ন করে।
ii. তাপমাত্রা বাড়ালে ধাতব পরিবাহীর বিদ্যুৎ পরিবাহিতা কমে যায়। ii. তাপমাত্রা বাড়ালে তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের বিদ্যুৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন \ ১৩ \ বিশুদ্ধ পানির তড়িৎবিশ্লেষণ করা সম্ভব নয় কেন?
উত্তর : বিশুদ্ধ পানি দুর্বল প্রকৃতির তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ। তাই বিশুদ্ধ পানি তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না।
বিশুদ্ধ পানির মোট অণুর অতি সামান্য অংশ বিয়োজিত হয় এবং স্বল্প পরিমাণে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) এবং হাইড্রোক্সিল আয়ন (OH-) উৎপন্ন হয়।
H2O⇔ H+ + OH-
কিন্তু পানিতে কয়েক ফোঁটা এসিড (H2SO4 বা HCl) বা ক্ষার দ্রবণ (NaOH বা KOH) মেশালে পানির তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা বাড়ে। ফলে পানির বেশিরভাগ অণুই H+ এবং OH- আয়নে বিযোজিত হয়ে যায়। তাই বিশুদ্ধ পানির তড়িৎবিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন \ ১৪ \ তড়িৎবিশ্লেষণে তড়িৎদ্বারের প্রয়োজন হয় কেন?
উত্তর : তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থে তড়িৎ পরিবহন করতে হলে দ্রবণের মধ্যে শ্রেণি সমবায়ে একটি বৈদ্যুতিক বর্তনী সম্পূর্ণ করতে হয়। দ্রবণের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করতে হলে দুটি ধাতব পাতের দরকার হয়। যার একটি দিয়ে বিদ্যুৎ কোষে প্রবেশ করে এবং অন্যটি দিয়ে বের হয়ে যায়। এ দুটি ধাতব পাতকে তড়িৎদ্বার বলা হয়। সুতরাং, তড়িৎ বিশ্লেষণে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালনা করতে অবশ্যই তড়িৎদ্বার লাগবে।
প্রশ্ন \ ১৫ \ লেকল্যান্স কোষে MnO2-এর কাজ কী?
উত্তর : লেকল্যান্স কোষে বিদ্যুৎ প্রবাহকালে অ্যামোনিয়া গ্যাস পানিতে দ্রবীভ‚ত হয় এবং দ্রবণ থেকে ধীরে ধীরে বাতাসে মিশে যায়। এর ফলে কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু ক্যাথোডে উৎপাদিত হাইড্রোজেন গ্যাস বুদবুদ আকারে অ্যানোডের গায়ে লেগে থাকতে চায়। এর ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ অসুবিধা দূর করার জন্য MnO2 ব্যবহার করা হয়। MnO2-এর সাথে H2 গ্যাস বিক্রিয়া করে পানি উৎপন্ন করে। এ কারণে কার্বনদণ্ডের উপরিভাগে H2 গ্যাসের প্রলেপ সৃষ্টি হতে পারে না।
২MnO2 + H2 → Mn২O3 + H2O
প্রশ্ন \ ১৬ \ তড়িৎবিশ্লেষণের ব্যবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ কর।
উত্তর : তড়িৎবিশ্লেষণের কতিপয় ব্যবহারিক প্রয়োগ নিম্নরূপ:
১. সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি তীব্র ধনাত্মক ধাতুর নিষ্কাশনে তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রয়োগ করা হয়।
২. কপার, সিলভার, তামা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুর বিশুদ্ধিকরণেও তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রয়োগ করা হয়।
৩. ক্লোরিন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, সোডিয়াম কার্বনেট প্রভৃতির শিল্পোৎপাদন ও তড়িৎবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে করা হয়।
৪. তড়িৎ মুদ্রাক্ষর বা ইলেকট্রো টাইপ প্রস্তুতিতে তড়িৎবিশ্লেষণ প্রয়োগ করা হয়।
৫. এক ধাতুর ওপর অপর ধাতুর প্রলেপ দেয়ার পদ্ধতি ইলেকট্রোপ্লেটিং তড়িৎবিশ্লেষণের সাহায্যে করা হয়।
প্রশ্ন \ ১৭ \ ড্যানিয়েল কোষে বিদ্যুৎ প্রবাহের সময় জিংক দণ্ড ক্ষয়প্রাপ্ত হয় আর কপার দণ্ড বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ড্যানিয়েল কোষে যে জিংক দণ্ড ব্যবহৃত হয় তা বিশুদ্ধ নয়। তাতে অন্যান্য ধাতুর মিশ্রণ থাকে। খাদ মিশ্রিত জিংক দণ্ড জিংক সালফেট দ্রবণে ডুবালে দ্রবণ ও খাদ মিলে ছোট ছোট স্থানীয় কোষ তৈরি হয়। এ স্থানীয় কোষগুলোতে যে তড়িৎ প্রবাহিত হয় তা মূল তড়িৎ প্রবাহের সাথে যুক্ত হয় না। জিংক দণ্ড ও কপার দণ্ড তার দিয়ে যুক্ত থাকলেও এসব স্থানীয় কোষে তড়িৎ প্রবাহ চলতে থাকে। ফলে অকারণে জিংক দণ্ড ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং দ্রবণের শক্তি কমে যায়। এতে করে কোষের কার্যকারিতা ক্রমশ হ্রাস পায়।
তড়িৎ কোষে রাসায়নিক ক্রিয়া শুরু হলে CuSO4 দ্রবণের Cu২+ আয়ন জিংক দণ্ড থেকে নির্গত দুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে কপার দণ্ডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
সুতরাং ড্যানিয়েল কোষে বিদ্যুৎ প্রবাহের সময় জিংক দণ্ড ক্ষয়প্রাপ্ত হয় আর কপার দণ্ড বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
প্রশ্ন \১৮\ Zn/ZnSO4।CuSO4/Cu এ কোষটির কোষ বিক্রিয়া লেখ।
উত্তর : Zn/ZnSO4।CuSO4/Cu কোষটির প্রতিটি অর্ধকোষ সংঘটিত বিক্রিয়াকে অর্ধকোষ বিক্রিয়া বলে। দুটি অর্ধকোষ বিক্রিয়াকে একত্রে যোগ করলে ঐ যোগফলকে কোষ বিক্রিয়া বলে। নিচে কোষটির কোষবিক্রিয়া উলি­খিত হলো :
অ্যানোডে বিক্রিয়া : Zn(s) → Zn২+(aq) + 2e– (জারণ)
ক্যাথোডে বিক্রিয়া : Cu২+(aq) + 2e– → Cu(s) (বিজারণ)
————————————-
কোষ বিক্রিয়া : Zn + Cu২+ খ Zn২+ + Cu (জারণÐবিজারণ)
Zn + CuSO4 ঔ ZnSO4 + Cu
প্রশ্ন \ ১৯ \ Zn/Zn২+ এবং Ag/Ag+ দ্বারা সেল গঠন করে সেলটির বিক্রিয়া লেখ।
উত্তর : Zn/Zn২+ এবং Ag/Ag+ দ্বারা একটি সেল বা কোষ গঠিত হয়। সুতরাং, Zn/Zn২+ হবে একটি অর্ধকোষ এবং অপর অর্ধকোষ হবে Ag/Ag+।
এক্ষেত্রে গঠিত কোষ বা সেলটি হবে : Zn/Zn২+ ।। Ag/Ag+
অ্যানোডে অর্ধকোষ বিক্রিয়া : Zn(s) → Zn২+(aq) + 2e– (জারণ)
ক্যাথোডে অর্ধকোষ বিক্রিয়া : ২Ag+(aq) + 2e– → ২Ag(s) (বিজারণ)
————————————-
সেল বা কোষ বিক্রিয়া : Zn(s) + ২Ag+(aq) খ Zn২+(aq) + ২Ag(s)
বা, Zn(s) + ২AgCl(aq) ঔ ZnCl২(aq) + ২Ag(s)
প্রশ্ন \ ২০ \ অবিশুদ্ধ জ্বালানি বলতে কী বুঝ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : যেসব জ্বালানির দহনে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক পদার্থ তৈরি হয় তাকে অবিশুদ্ধ জ্বালানি বলে।
এটি অবশ্যই সালফার ও নাইট্রোজেন যুক্ত হবে। এটি পোড়ালে SO2 ও NO2 সৃষ্টি হয়। SO2 থেকে সালফিউরিক এসিড তৈরি করে, যা এসিড বৃষ্টির সৃষ্টি করে। অবিশুদ্ধ জ্বালানি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রশ্ন \ ২১ \ জীবাশ্ম জ্বালানি কীভাবে সৃষ্টি হয় ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে সূর্য থেকে শক্তি তার দেহে সঞ্চয় করে। আলোকশক্তি ও বায়ুর CO2 মিলে উদ্ভিদ দেহে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক যৌগের সৃষ্টি হয়। উদ্ভিদ থেকে প্রাণিকুল এই শক্তি গ্রহণ করে। উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যুর পর এগুলো মাটিতে মিশে যায় এবং বহু বছর ধরে বিভিন্ন প্রক্রিয়া পরিবর্তিত হয়ে পেট্রোলিয়াম কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসরূপে ভূগর্ভে মজুদ হয়। এভাবে, জীবাশ্ম জ্বালানি সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন \ ২২ \ ব্যাটারির বর্জ্য পরিবেশে ফেলা উচিত নয় কেন?
উত্তর : ব্যাটারিসমূহ বিভিন্ন ধাতু ও ধাতব আয়নের তৈরি। এগুলো বিষাক্ত প্রকৃতির এবং ক্ষতিকারক। ব্যবহারের পর ব্যাটারির বর্জ্য পরিবেশে ফেললে, মাটি ও পানির সাথে যুক্ত হয়। ফলে, মাটি ও পানির ধাতব পদার্থের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এসব দূষিত মাটি ও পানিতে জন্মানো খাদ্য গ্রহণ করলে ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ তৈরি হয়। সুতরাং, ব্যাটারির বর্জ্য কোনোভাবেই পরিবেশে ফেলা উচিত নয়।

 

Leave a Reply