নবম-দশম

নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ নবম অধ্যায় বিপণন সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

নবম অধ্যায় বিপণন  বিপণনের ধারণা : সাধারণ অর্থে পণ্যদ্রব্য বা সেবাসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের কাজকে বিপণন বলে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে বিপণনের ধারণা আরও ব্যাপক। পণ্যদ্রব্য বা সেবাসামগ্রী উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তা বা ব্যবহারকারীর নিকট পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সকল কাজকে বিপণন বা বাজারজাতকরণ বলে গণ্য করা হয়।  বিপণনের কার্যাবলি : বিপণন উৎপাদনকারী এবং ভোক্তার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। বিপণনের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার মালিকানাগত, স্থানগত ও সময়গত উপযোগ সৃষ্টি হয়। ক্রয়, বিক্রয়, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, প্রমিতকরণ, পর্যায়িতকরণ, মোড়কিকরণ, তথ্য সংগ্রহ ও ভোক্তা বিশ্লেষণ সবই বিপণনের কাজ। বিপণনের কার্যাবলি ব্যবসার জন্য খুবই সহায়ক।  বণ্টন প্রণালির ধারণা : বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে সবসময় উৎপাদনকারী সরাসরি ভোক্তার নিকট পণ্য পৌঁছতে পারে না। তখন যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেওয়া হয়, তারা মধ্যস্থ কারবারি হিসেবে পরিচিত। মধ্যস্থ কারবারি বা ব্যবসায়ীদের সাহায্যে পণ্য ক্রেতার নিকট পৌঁছনোর এ প্রক্রিয়াকেই বণ্টন প্রণালি বলা হয়। মধ্যস্থ ব্যবসায়ী হতে পারে কোনো খুচরা ব্যবসায়ী, পাইকার অথবা এজেন্ট।  বণ্টন প্রণালি ও বিভিন্ন পণ্যের বিপণন : পণ্য বা সেবার ধরন ও বৈশিষ্ট্যের ওপর বণ্টন প্রণালির ধরন নির্ভর করে। নিচে বিভিন্ন প্রকার পণ্যের বণ্টন প্রণালি দেখানো হলো-  বিজ্ঞাপনের ধারণা : বিজ্ঞাপন একটি মাধ্যম। বিজ্ঞাপন হচ্ছে পণ্য বা সেবাসামগ্রীর প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য একটি উপায় বা কৌশল। প্রতিদিন আমরা টিভি, রেডিও ও পত্রিকায় বিভিন্ন পণ্যের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখি ও শুনে থাকি। বিজ্ঞাপনের মাধ্যম খুব সহজেই ক্রেতাসাধারণকে পণ্য ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করা যায়। বিজ্ঞাপনের অন্যান্য মাধ্যম হচ্ছে লিফলেট, ম্যাগাজিন, পরিবহন, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, ইন্টারনেট ইত্যাদি।  বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন মাধ্যম : বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। পণ্যের চাহিদা, গুণাগুণ, মূল্য ও ক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে বিজ্ঞাপনের মাধ্যম নির্বাচন করতে হয়। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমগুলোর মধ্যে সংবাদপত্র, সাময়িকী, প্রচারপত্র, বিজ্ঞাপনীফলক, পোস্টার, টেলিভিশন, রেডিও, চলচ্চিত্র, পণ্য সজ্জা, মেলা, নমুনা, নিয়ন আলো, পরিবহন, বিজ্ঞাপন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।  বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব : বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক যুগে ছোট, মাঝারি, বড় যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পণ্যসামগ্রীর বিপণনের জন্য বিজ্ঞাপন খুবই কার্যকর মাধ্যম। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্যের মান, মূল্য ও ব্যবহারবিধি ক্রেতা বা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা হয়। ফলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়, উৎপাদন ও বিক্রয়ের পরিমাণ বাড়ে এবং মুনাফা বৃদ্ধি পায়।  বিক্রয়িকতার ধারণা : বিক্রয়িকতা বলতে বিক্রয়কর্মীর ক্রেতা আকর্ষণ করার কৌশল বা দক্ষতাকে বোঝায় যার মাধ্যমে সে সম্ভাব্য ক্রেতার নিকট পণ্য বা সেবাসামগ্রী বিক্রয় করতে সক্ষম হয়। বিক্রয়িকতার গুণে বিক্রেতা তার ব্যবসায় ও পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করে তাদেরকে স্থায়ী ক্রেতায় পরিণত করে।  আদর্শ বিক্রয়কর্মীর গুণাবলি : বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিক্রয় প্রসার ও সফলতা অর্জনে বিক্রয়কর্মীর ভ‚মিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রেতা ও ভোক্তাদের আকৃষ্ট ও প্রভাবিত করে স্থায়ী ক্রেতায় পরিণত করতে হলে একজন বিক্রয়কর্মীকে অনেকগুলো গুণের অধিকারী হতে হয়। একজন আদর্শ বিক্রয়কর্মী হতে হলে তার অবশ্যই সুদর্শন চেহারা, সুস্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস, তীক্ষè বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্যশীলতা, সততা ও বিশ্বস্ততা, মেলামেশার ক্ষমতা, মার্জিত ব্যবহার, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা, হিসাবে পারদর্শিতার মতো শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক গুণাবলি থাকা আবশ্যক। অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : শুভর দোকানের পাশে একই ধরনের আরও একটি দোকান গড়ে উঠায় বিক্রির পরিমাণ কমে যায়। বিক্রয় বাড়ানোর কৌশল হিসেবে শুভ দেখতে ভালো, সদালাপী এ রকম একজন বিক্রয়কর্মী নিয়োগ দেন। কিছুদিন পর তার দোকানে বিক্রির পরিমাণ আগের অবস্থায় ফিরে আসে। ক. কী দ্বারা পণ্যকে আকর্ষণীয় করা যায়? খ. প্রমিতকরণ কী? ব্যাখ্যা কর। গ. শুভ বিক্রয়কর্মী নিয়োগে কোন ধরনের বৈশিষ্ট্যের কথা বিবেচনা করেছেন। ঘ. বিক্রয় বৃদ্ধিতে শুভর গৃহীত পদক্ষেপটি মূল্যায়ন কর।  ১নং প্রশ্নের উত্তর  ক. মোড়কিকরণ দ্বারা পণ্যকে আকর্ষণীয় করা যায়। খ. প্রমিতকরণ বাজারজাতকরণের একটি অন্যতম কার্যাবলি। সাধারণত পণ্যের গুণাগুণ, আকার, রং, স্বাদ ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে পণ্যের মান নির্ধারণের কাজকে প্রমিতকরণ বলে। প্রমিতকরণের পর মানের ভিত্তিতে পণ্যমূল্য নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে পণ্যের বিপণন প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং বিক্রয়কার্যের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। গ. শুভ বিক্রয়কর্মী নিয়োগে বিক্রয়কর্মীর শারীরিক ও নৈতিক বৈশিষ্ট্যের কথা বিবেচনা করেছেন। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিক্রয় প্রসার ও সফলতা অর্জনে বিক্রয়কর্মীর ভ‚মিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন বিক্রয়কর্মীর শারীরিক ও নৈতিক বৈশিষ্ট্য সহজেই ক্রেতা বা ভোক্তাকে আকৃষ্ট করে তাকে স্থায়ী ক্রেতায় পরিণত করে। ফলে ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করা সহজ হয়। উদ্দীপকে শুভর দোকানের পাশে আরও একটি দোকান গড়ে ওঠায় তার দোকানের বিক্রয় কমে যায়। তাই তিনি তার দোকানে বিক্রয় বাড়ানোর জন্য একজন সুন্দর ও সদালাপী বিক্রয়কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন। সুন্দর চেহারা একজন বিক্রয়কর্মীর শারীরিক গুণ এবং সদালাপী তার নৈতিক গুণ। সুন্দর ও আকর্ষণীয় চেহারার বিক্রয়কর্মী সহজেই ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে। আর বিক্রয়কর্মী যদি সদালাপী হয় তাহলে সে ক্রেতার সাথে সহজেই মিশে তার চাহিদা পণ্য সরবরাহ করে তাকে স্থায়ী ক্রেতায় পরিণত করতে পারে। ফলে দোকানে স্থায়ী ক্রেতার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়। তাই ক্রেতা আকৃষ্ট করার মাধ্যমে দোকানের বিক্রয় বৃদ্ধি করতে শুভ বিক্রয়কর্মীর শারীরিক ও নৈতিক বৈশিষ্ট্যকে প্রাধান্য দিয়ে বিক্রয়কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন। ঘ. শুভ বিক্রয় বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে একজন আদর্শ বিক্রয়কর্মী নিয়োগের যে পদক্ষেপটি নিয়েছেন তা যথার্থ। বিক্রয়িকতা বলতে ক্রেতা আকর্ষণ করার কৌশল বা দক্ষতাকে বোঝায় যার মাধ্যমে বিক্রেতা সম্ভাব্য ক্রেতার নিকট পণ্য বা সেবা সামগ্রী বিক্রয় করতে সক্ষম হয়। একজন আদর্শ বিক্রয়কর্মী তার শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও অন্যান্য গুণাবলি কাজে লাগিয়ে ব্যবসায় ও পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করে তাদেরকে স্থায়ী গ্রাহকে পরিণত করেন। উদ্দীপকে, শুভ একজন খুচরা ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ের শুরুতে তার কোনো প্রতিযোগী না থাকায় তিনি একচেটিয়া ব্যবসায় করে পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার দোকানের পাশে আরেকটি সমজাতীয় পণ্যের দোকান চালু হওয়ায় তার দোকানের বিক্রয় কমে যায়। তাই তিনি তার দোকানে দেখতে ভালো এবং সদালাপী একজন আদর্শ বিক্রয়কর্মী নিয়োগ দেন। শুভর নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সুন্দর ও সদালাপী বিক্রয়কর্মী তার শারীরিক ও নৈতিক গুণ দ্বারা ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে তাদেরকে শুভর দোকানের স্থায়ী ক্রেতায় পরিণত করে। যার ফলে শুভর দোকানে ক্রেতার সমাগম এবং বিক্রয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং বলা যায় বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে শুভর আদর্শ বিক্রয়কর্মী নিয়োগদানের পদক্ষেপটি সঠিক ও যথার্থ হয়েছে। প্রশ্ন-২  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : বড় রাস্তার পাশে ‘আদর স্টোর’ নামে নতুন একটি দোকান আছে। কিন্তু কোনো কারণে দোকানটির বিক্রি ভালো নয়। স¤প্রতি দোকানের মালিক তার দোকানের পরিচিতি, সেবার ধরন, পণ্যের মান ও বিভিন্ন প্রকার পণ্যের নাম লিখিত একটি মুদ্রিত কাগজ পত্রিকার হকারের মাধ্যমে এলাকার বাসায় বাসায় পৌঁছে দিলেন। কিছুদিন পর দেখা গেল তার দোকানে ক্রেতার সমাগম ও বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক. বণ্টন প্রণালিতে সবশেষে কার অবস্থান? খ. পর্যায়িতকরণ কী? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকে আদর স্টোরের মালিক প্রচারের কোন মাধ্যমটি বেছে নিল? ব্যাখ্যা কর। ঘ. ‘মালিকের গৃহীত পদক্ষেপ বিক্রয় বৃদ্ধির অন্যতম কৌশল’ মতামত দাও।  ২নং প্রশ্নের উত্তর  ক. বণ্টন প্রণালিতে সবশেষে ভোক্তার অবস্থান। খ.

নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ নবম অধ্যায় বিপণন সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর Read More »

নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ অষ্টম অধ্যায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

অষ্টম অধ্যায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা  ব্যবস্থাপনার ধারণা : ব্যবস্থাপনা হচ্ছে অন্য লোকদের সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে কোনো কাজ করিয়ে নেওয়ার দক্ষতা ও কৌশল। আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক বলে পরিচিত হেনরি ফেওল (ঐবহৎর ঋধুড়ষ)-এর মতে, “ব্যবস্থাপনা হলো পূর্বানুমান ও পরিকল্পনা, সংগঠিতকরণ, নির্দেশনা, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণের সমষ্টি।”  ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি : পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পাদিত কার্যাবলিকে ব্যবস্থাপনা বলা হয়। প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার মানবিক ও অন্যান্য উপাদানকে দক্ষতার সাথে পরিচালনার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপনার আওতায় অনেকগুলো কাজ করতে হয়। ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি হলোÑ পরিকল্পনা প্রণয়ন, সংগঠিতকরণ, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনাদান, প্রেষণাদান, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণ।  পরিকল্পনার ধারণা : কোনো কাজ শুরু করার পূর্বে সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা বা আগাম সিদ্ধান্তই হলো পরিকল্পনা। আরো পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, কোনো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কী কাজ করতে হবে, কীভাবে করতে হবে, কখন করতে হবে, কোথায় করতে হবে, কত সময়ে কাজ শেষ হবে, এ সম্পর্কে অগ্রিম সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে পরিকল্পনা বলে। সঠিক পরিকল্পনা উদ্দেশ্য অর্জনকে সহজ করে।  সংগঠিতকরণের ধারণা ও গুরুত্ব : পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবসায়ের মানবিক ও বস্তুগত সকল প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং সম্পদ সংগ্রহ ও সমন্বিত করে সেগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্য কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা বণ্টন সংক্রান্ত কাজকে বলা হয় সংগঠন। সংগঠিতকরণের ফলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজতর হয়। প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা সহজ হয়। নিজেদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক সুদৃঢ় হওয়ার কারণে কাজের গতি বৃদ্ধি পায়।  নেতৃত্বের ধারণা : ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব বলতে উদ্দেশ্য অর্জনকে সামনে রেখে কাজ সম্পাদনে কর্মীদের উৎসাহিত করার গুণ ও কৌশলকে বোঝায়। যিনি নেতৃত্ব দেন তাকে নেতা বলা হয়। অন্যকে দিয়ে কাজ করানো একটি কষ্টসাধ্য বিষয়। তাই এমন কৌশল অবলম্বন করতে হয় যাতে করে অধীনস্তরা কথা শোনে। যে কৌশল অবলম্বন করে নির্বাহী কর্মীদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেন তাকে নেতৃত্ব বলে।  নেতৃত্বের প্রকারভেদ :  গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব  স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব  মুক্ত নেতৃত্ব  আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্ব  আদর্শ নেতার গুণাবলি : যিনি নেতৃত্ব দেন তাকে নেতা বলা হয়। নেতার কাজ হচ্ছে উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উৎসাহিত ও পরিচালনা করা। নেতৃত্বদানের কঠিন দায়িত্বশীল কাজটি সম্পাদনের জন্য একজন নেতার অনেকগুলো গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। একজন আদর্শ নেতার দৈহিক সামর্থ্য ও সুস্থতা, প্রখর ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা, সাহস ও সততা, পরিশ্রম ও সহনশীলতা, দায়িত্বশীলতা ও সহযোগিতা, সাংগঠনিক দক্ষতা, মানবিক সম্পর্ক অনুধাবন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, জেন্ডার সচেতনতা প্রভৃতি গুণাবলি থাকা প্রয়োজন।  ব্যবসায়ে অর্থায়নের ধারণা : সাধারণ অর্থে, ব্যবসায়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করাকে অর্থায়ন বলে। কিন্তু ব্যাপক অর্থে, ব্যবসায়ের আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ, অর্থ সংরক্ষণ, সংগৃহীত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার সংক্রান্ত সকল কার্যাবলিকে ব্যবসায় অর্থায়ন বলা হয়।  অর্থায়নের উৎস : যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ বা মূলধনের প্রয়োজন। এ অর্থ প্রয়োজন হয় ব্যবসায়ে শুরু করার জন্য, ব্যবসায় কার্যক্রম সচল রাখার জন্য এবং ব্যবসায় স¤প্রসারণের জন্য। ব্যবসায়ের এ মূলধন বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করার সুযোগ রয়েছে। অর্থায়নের উৎসগুলোর মধ্যে নিজস্ব তহবিল, আত্মীয়স্বজন, বাণিজ্যিক ব্যাংক, সমবায় ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিঃ, ব্যাংক অব স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমার্স লিঃ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উল্লেখযোগ্য। অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : “হাসি-খুশী নকশী ঘর” জামালপুরের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এর স্বত্বাধিকারী জনাব মাহিন অনেক ভেবেচিন্তে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেন। প্রয়োজনে কর্মীদের পরামর্শ দেন। দীর্ঘমেয়াদে সফলতা বজায় রাখার নিমিত্তে নকশিকাঁথা ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরির জন্য দক্ষ কারিগরের গুরুত্ব বিবেচনা করে তিনি কর্মী নিয়োগ দেন এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। ক. আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক কে? ১ খ. “প্রেষণা দান” বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর। ২ গ. উদ্দীপকে বর্ণিত জনাব মাহিনের কাজটি কী বর্ণনা কর। ৩ ঘ. “হাসি-খুশি নকশী ঘর” স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হওয়ার পিছনের কারণ বিশ্লেষণ কর। ৪  ১নং প্রশ্নের উত্তর  ক. আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হেনরি ফেওল। খ. প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীবৃন্দের কার্যক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে তাদের অনুপ্রাণিত, উৎসাহিত ও প্ররোচিত করার প্রক্রিয়াই হলো প্রেষণা। এই প্রক্রিয়া কর্মীদের ইচ্ছাশক্তিকে উৎসাহিত করে তাদের লক্ষ্যের দিকে তাড়িত করে। প্রেষিত কর্মী উৎসাহিত হয়ে কর্মে সন্তুষ্টি লাভ করে এবং নিজেই কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয়। গ. উদ্দীপকে বর্ণিত জনাব মাহিনের কাজটি হলো ব্যবস্থাপনা। ব্যবস্থাপনা বলতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যাবলি অর্জনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, সংগঠিতকরণ, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণাদান, সমন্বয়সাধন এবং ব্যবসায়ের সর্বস্তরে অবিরাম নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে বোঝায়। দূরদর্শী কাণ্ডারি যেমন তার তরীর গতি নিয়ন্ত্রণ করে তাকে গন্তব্যে নিয়ে যায়, তেমনি দক্ষ ব্যবস্থাপক ও তার সংগঠনরূপ তরীটিকে শত ঝঞ্ঝা ও প্রতিক‚লতার মধ্য দিয়ে লক্ষ্যপানে নিয়ে যায়। উদ্দীপকে জামালপুরের “হাসি-খুশি নকশী ঘর” এর স্বত্বাধিকারী জনাব মাহিন ভেবে-চিন্তে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেন। প্রয়োজনে কর্মীদের পরামর্শ প্রদান করেন এবং প্রতিষ্ঠানে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে কর্মী নিয়োগ ও যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তার সম্পাদিত এসকল কার্যাবলি সকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানেই ব্যবস্থাপকের কার্যাবলি হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই জনাব মাহিনের কাজটি অবশ্যই ব্যবস্থাপনা। ঘ. জামালপুরের “হাসি-খুশি নকশী ঘর” স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হওয়ার পিছনে মূল কারণ হলো এর স্বত্বাধিকারী অর্থাৎ জনাব মাহিনের দক্ষ ব্যবস্থাপনা। দক্ষ ব্যবস্থাপনার ওপর সকল প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে। দক্ষ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে নানাবিধ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণ কার্য সম্পাদন করেন। তাকে ব্যবস্থাপনার উল্লিখিত কার্যাদি সম্পাদন করতে বহুবিধ ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। একজন ব্যবস্থাপক তার এই ভ‚মিকা যতটা দক্ষতার সাথে পালন করতে পারেন তার প্রতিষ্ঠান ততটা সাফল্যের সাথে পরিচালিত হয়। উদ্দীপকে জনাব মাহিন একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক। তিনি অনেক ভেবে চিন্তে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেন। তাছাড়া তিনি কর্মীদের প্রয়োজনে পরামর্শ দেন। দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানের সফলতা বজায় রাখার নিমিত্তে তিনি নকশি কাঁথা ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরির জন্য দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেন এবং তাদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তার এরূপ দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য “হাসি-খুশি নকশী ঘর” তার ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছে। তার সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। সুতরাং বলা যায়, জামালপুরের “হাসি-খুশি নকশী ঘর”-এর সাফল্যের পিছনে মূলকারণ হলো এর স্বত্বাধিকারী জনাব মাহিনের সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা। প্রশ্ন-২  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : ইয়াফী ও শাফী দুই বন্ধু। তাদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি অবস্থিত। ইয়াফী ব্যবসায় পরিচালনা করতে গিয়ে কর্মীদের সাথে আলোচনা করে তাদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শাফী কর্মীদের উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন এবং এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন নয়। কর্মীদের অসন্তোষের কারণে শাফীর ব্যবসায়টি ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়। ক. যিনি নেতৃত্ব দেন তাকে কী বলে? ১ খ. “জেন্ডার সচেতনতা” কী? ব্যাখ্যা কর। ২ গ. ইয়াফী কোন ধরনের নেতা? বর্ণনা কর। ৩ ঘ. ‘কর্মীদের উপর প্রভাব বিস্তারের অক্ষমতাটি শাফীর ব্যর্থতার কারণ’ মূল্যায়ন কর। ৪  ২নং প্রশ্নের উত্তর  ক. যিনি নেতৃত্ব দেন তাকে নেতা বলে। খ. জেন্ডার

নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ অষ্টম অধ্যায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর Read More »

নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ সপ্তম অধ্যায় বাংলাদেশের শিল্প সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

সপ্তম অধ্যায় বাংলাদেশের শিল্প  শিল্পের প্রকারভেদ : সাধারণত ব্যাপক মূলধনী সামগ্রী ব্যবহার করে কারখানাতে কাঁচামাল বা প্রাথমিক দ্রব্যকে মাধ্যমিক বা চ‚ড়ান্ত দ্রব্যে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে শিল্প বলা হয়। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে শিল্পের ভ‚মিকা রয়েছে। ব্যাপক অর্থে শিল্প দুই প্রকার। উৎপাদনমুখী শিল্প ও সেবা শিল্প। এসব শিল্পকে কুটির, বৃহৎ মাঝারি ও ক্ষুদ্র এই চার ভাগে ভাগ করা যায়।  কুটির শিল্প : কুটির শিল্প বলতে পরিবারের সদস্যদের প্রাধান্য বিশিষ্ট সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৫ লক্ষ টাকার নিচে এবং পারিবারিক সদস্য সমন্বয়ে সর্বোচ্চ জনবল ১০-এর অধিক নয়। সাধারণত স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, ভাই-বোন ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সহায়তায় কুটির শিল্প পরিচালিত হয়।  বাংলাদেশের কুটির শিল্পের উপযুক্ত ক্ষেত্র : নানা রকমের কুটির শিল্প আমাদের দেশকে করেছে সমৃদ্ধ। বিভিন্ন অঞ্চলের কুটির শিল্প এত বেশি সুনাম অর্জন করেছে, যার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সে অঞ্চলের কুটির শিল্পের নামে পরিচিতি লাভ করেছে। যেমনÑ রাঙামাটি কুটির শিল্প, মণিপুরি কুটির শিল্প, কুমিল্লার খদ্দর ইত্যাদি। পাটজাত শিল্প, বাঁশ ও বেত শিল্প, মৃৎ শিল্প, তাঁত ও বস্ত্র শিল্প, খাদ্য ও সহায়ক শিল্প, হস্ত শিল্প, ঝিনুক শিল্প, ক্ষুদ্র ইস্পাত ও প্রকৌশল শিল্প, কেমিক্যাল শিল্প ইত্যাদি বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কুটির শিল্প।  ক্ষুদ্র শিল্প : উৎপাদনমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে ‘ক্ষুদ্র শিল্প’ বলতে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য, প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা কিংবা যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ২৫-৯৯ জন শ্রমিক কাজ করে। সেবামূলক শিল্পের ক্ষেত্রে ‘ক্ষুদ্র শিল্প’ বলতে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য, প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৫ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা কিংবা যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ১০-২৫ জন শ্রমিক কাজ করে।  মাঝারি শিল্প : উৎপাদনমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে ‘মাঝারি শিল্প’ বলতে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য, প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১০ কোটি টাকা থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০০-২৫০ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। সেবামূলক শিল্পের ক্ষেত্রে ‘মাঝারি শিল্প’ বলতে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য, প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১ কোটি টাকা থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত কিংবা যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ৫০-১০০ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে।  বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবদান : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। দেশের ৯৬ ভাগ শিল্পই কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের আওতাভুক্ত। স্বল্প মূলধন, স্থানীয় র্কাঁচামাল, ব্যক্তিগত নৈপুণ্য, সৃজনশীলতা, পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে মহিলাদের কর্মশক্তি ব্যবহার করে এ জাতীয় শিল্পগুলো গড়ে ওঠে। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য লালন ও বিকাশে এবং সারাবিশ্বে তা ছড়িয়ে দিতেও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।  কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে করণীয় : কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে করণীয়গুলো হলোÑ কাঁচামালের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ, বাজারের নৈকট্য, শ্রমিকের পর্যাপ্ত যোগান, পরিবহনের সুযোগ-সুবিধা, স্থানীয় ও বৈদেশিক চাহিদার ওপর গুরুত্বারোপ, পুঁজির সহজলভ্যতা এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধার সহজলভ্যতা।  বৃহৎ শিল্প : উৎপাদনমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে ‘বৃহৎ শিল্প’ বলতে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৩০ কোটি টাকার অধিক কিংবা যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ২৫০ জনের অধিক শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। সেবামূলক শিল্পের ক্ষেত্রে ‘বৃহৎ শিল্প’ বলতে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১৫ কোটি টাকার অধিক কিংবা যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ১০০ জনের অধিক শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে।  বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় বৃহৎ শিল্প : ক্স খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ক্স তৈরি পোশাক শিল্প ক্স জনশক্তি রপ্তানি ক্স ভেষজ ওষুধ শিল্প ক্স জাহাজ নির্মাণ ও পরিবেশসম্মত জাহাজ ভাঙা শিল্প ক্স চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ক্স নবায়নযোগ্য শক্তি (সোলার পাওয়ার, উইন্ড মিল) ক্স হাসপাতাল ও ক্লিনিক ক্স পর্যটন শিল্প ক্স অটোমোবাইল ক্স আইসিটি পণ্য ও আইসিটি ভিত্তিক সেবা ক্স বায়ুগ্যাস প্রকল্প অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : রাশিক ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে পাট চাষের জন্য বিখ্যাত ঢাকা বিভাগের ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর গ্রামে একটি পাট ও পাটজাতশিল্প স্থাপন করেন। তার বন্ধু রাফি সমপরিমাণ বিনিয়োগ করে একই ধরনের শিল্প স্থাপন করলেন রাজশাহী অঞ্চলে যেখানে আখ চাষ বেশি হয়। নির্দিষ্ট সময় পরে রাশিকের শিল্প প্রতিষ্ঠানটি রাফির প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি মুনাফা করে। ক. ব্যাপক অর্থে শিল্পকে কয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে? খ. সেবা শিল্প বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর। গ. বিনিয়োগের মাপকাঠিতে রাশিকের ব্যবসায়টি কোন ধরনের? বর্ণনা কর। ঘ. রাশিকের শিল্প প্রতিষ্ঠানটিতে অধিক মুনাফা হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ কর।  ১নং প্রশ্নের উত্তর  ক. ব্যাপক অর্থে শিল্পকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। খ. যে শিল্পে যন্ত্রপাতি কিংবা স্থায়ী সম্পদ বা মেধা সম্পদের ব্যবহারের মাধ্যমে সেবামূলক কার্য সম্পাদিত হয় তাকে সেবা শিল্প বলে। মৎস্য আহরণ, নির্মাণ শিল্প ও হাউজিং, অটোমোবাইল সার্ভিসিং, বিনোদন শিল্প, হর্টিকালচার, ফুল চাষ, দুগ্ধ ও পোলট্রি উৎপাদন এবং বিপণন, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, পর্যটন ও সেবা ইত্যাদি সেবা শিল্পের অন্তর্গত। এ ধরনের শিল্পগুলো মূলত বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে। গ. বিনিয়োগের মাপকাঠিতে রাশিকের ব্যবসায়টি একটি মাঝারি শিল্প। উৎপাদনমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে মাঝারি শিল্প বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য, প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১০ কোটি টাকা থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০০-২৫০ জন শ্রমিক কাজ করে। উদ্দীপকের জনাব রাশিক ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর গ্রামে একটি পাট ও পাটজাত শিল্প স্থাপন করেছেন। বিধায় বিনিয়োগের মাপকাঠিতে তার ব্যবসায়টি মাঝারি শিল্পের আওতাভুক্ত। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে রাশিকের মতো শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত মাঝারি শিল্পগুলো বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। ঘ. কাঁচামালের সহজলভ্যতার কারণে রাশিকের শিল্প প্রতিষ্ঠানটিতে অধিক মুনাফা অর্জিত হয়েছে। যে জাতীয় কাঁচামাল যেখানে বেশি সেখানে ঐ জাতীয় শিল্পগুলো বেশি গড়ে ওঠে। কারণ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সহজেই পাওয়া যায়। ফলে কম খরচে ও সহজে অধিক উৎপাদন সম্ভব হয়। রাশিক পাট চাষের জন্য বিখ্যাত ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর গ্রামে একটি পাট ও পাটজাত শিল্প স্থাপন করেন। ফলে রাশিকের প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের প্রাপ্তি সহজলভ্য হয়। কিন্তু রাশিক তার বন্ধু রাফি রাজশাহী অঞ্চলে পাট ও পাটজাত শিল্প স্থাপন করেন। সেখানে আখের উৎপাদন বেশি। ফলে রাফিকে তার প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহে অধিক পরিবহন ব্যয় ও সময় অপচয় করতে হয়। তাছাড়া কাঁচামালের প্রাপ্তিতেও অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এতে উৎপাদন ও মুনাফা হ্রাস পায়। উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণের ওপর ঐ প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে। কাঁচামালের সহজলভ্যতার কারণে দক্ষতার সাথে প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়। রাশিক তার

নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ সপ্তম অধ্যায় বাংলাদেশের শিল্প সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর Read More »

নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ ষষ্ঠ অধ্যায় ব্যবসায় পরিকল্পনা সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

ষষ্ঠ অধ্যায় ব্যবসায় পরিকল্পনা  ব্যবসায় পরিকল্পনার ধারণা : ব্যবসায় পরিকল্পনা হলো একটি লিখিত দলিল। যার মধ্যে ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। ব্যবসায়ের লক্ষ্য, ব্যবস্থাপনার ধারা, অর্থায়নের উপায়, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয় ব্যবসায় পরিকল্পনায়। ব্যবসায় পরিকল্পনা কোনো ব্যবসায়ীকে তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে।  ব্যবসায় পরিকল্পনার গুরুত্ব : ব্যবসায় শুরু, সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও এর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যবসায় পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যবসায় পরিকল্পনার প্রধান প্রধান গুরুত্ব নি¤œরূপ :  ব্যবসায় পরিচালনার দিকনির্দেশনা  মূলধন সংগ্রহ ও বিনিয়োগ  সরকারি সুযোগ-সুবিধার সদ্ব্যবহার  সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা ইত্যাদি  ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রক্রিয়া : ব্যবসায়ের সাফল্য অনেকাংশ নির্ভর করে সঠিক প্রকল্প নির্বাচনের ওপর। প্রকল্প হচ্ছে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রণীত, পরিকল্পিত ও সুচিন্তিত কর্ম পদ্ধতি। অর্থাৎ একটি প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয়ে পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী পরিসমাপ্ত হয়।  প্রকল্প ধারণা চি‎িহ্নতকরণ : একজন উদ্যোক্তা তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে পণ্য বা সেবার চাহিদা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন। এ চাহিদার ওপর প্রকল্প নির্বাচন নির্ভর করে। পণ্যের ধারণা থেকেই প্রকল্পের সূত্রপাত হয়। প্রকল্প ধারণা চি‎িহ্নত করার সময় উদ্যোক্তার নিজের আগ্রহ ও চাহিদা আছে এমন পণ্য, বিদ্যমান পণ্যের অসুবিধা, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ ইত্যাদির দিকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।  ধারণা মূল্যায়ন ও প্রকল্প নির্বাচন : একজন উদ্যোক্তা বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে কয়েকটি সম্ভাব্য ধারণা চি‎িহ্নত করে একটি তালিকা করেন। তালিকাবদ্ধ ধারণাগুলো বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে মূল্যায়ন করে ব্যবসায় প্রকল্প নির্বাচন করেন। দুইটি পদ্ধতির মাধ্যমে প্রকল্প নির্বাচন করা যায়। যেমন : ম্যাক্রোস্ক্রিনিং ও মাইক্রোস্ক্রিনিং।  ম্যাক্রোস্ক্রিনিং : ম্যাক্রোস্ক্রিনিং হলো এমন একটি পদ্ধতি যা কতগুলো প্রভাবক বা উপাদানের ভিত্তিতে ব্যবসায়ের ধারণাগুলো মূল্যায়ন করে একটি প্রকল্প নির্বাচন করা হয়। প্রভাবকগুলো হলো : জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক পরিবেশ, প্রাকৃতিক পরিবেশ, রাজনৈতিক পরিবেশ, সাংস্কৃতিক পরিবেশ, আইনগত পরিবেশ ইত্যাদি।  মাইক্রোস্ক্রিনিং : মাইক্রোস্ক্রিনিং পদ্ধতিতেও কতগুলো উপাদান বিবেচনা করে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। উপাদানগুলো হলো: বাজার চাহিদা, কারিগরি দিক, বাণিজ্যিক দিক, আর্থিক দিক, জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান ইত্যাদি।  ব্যবসায় প্রকল্প প্রতিবেদন প্রণয়ন : প্রতিবেদন প্রকল্প প্রণয়নের শেষ ধাপ। নির্বাচিত প্রকল্পটির সম্ভাবনা যাচাইয়ের তথ্যগুলোর ওপর ভিত্তি করেই প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়।  ক্ষুদ্র ব্যবসায় পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা : একটি ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন করার সময় যতœশীল হওয়া আবশ্যক। শিল্পোদ্যোক্তা নিজে অথবা প্রয়োজনে অন্য কোনো বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন করে থাকে। একটি সুষম ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় কতগুলো দিক নির্দেশনা অনুসরণ করে ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়।  ক্ষুদ্র ব্যবসায় পরিকল্পনার বিষয়বস্তু : ১. ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নাম, ২. ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা, ৩. উদ্যোক্তা বা উদ্যোক্তাগণের নাম, ৪. উদ্যোক্তা বা পরিচালকবৃন্দের পরিচিত, ৫. ব্যবসায়ের ধরন, ৬. পরিচালনার ধরন, ৭. মূলধনের পরিমাণ, ৮. বাজার জরিপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, ৯. মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা, ১০. প্রাক্কলিত বিবরণী ইত্যাদি।  প্রাক্কলিত নগদান প্রবাহ বিবরণী : একটি নির্দিষ্ট সময়ে কী পরিমাণ নগদ আসছে এবং কী পরিমাণ ব্যয় হচ্ছে তা সংরক্ষণ করা হয় প্রাক্কলিত নগদান প্রবাহ বিবরণীতে। এ বিবরণী দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।  সম আয়-ব্যয় বিশে−ষণ : সম-আয়-ব্যয় ব্যবসায়ের এমন একটি অবস্থা যেখানে আয়-ব্যয় সমান হয়। অর্থাৎ যে পরিমাণ পণ্য বিক্রয় করলে মোট বিক্রয়মূল্য মোট ব্যয়ের সমপরিমাণ হয় তাকে সম-আয়-ব্যয় বলে। অর্থাৎ যে বিন্দুতে আয় ব্যয় সমান হয় তাকে সম-আয়-ব্যয় বা সমচ্ছেদ বিন্দু বলে।  আত্মবিশ্লেষণ পদ্ধতির ধারণা ও প্রক্রিয়া : আত্মবিশ্লেষণ পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে তার ব্যবসায় করার সক্ষমতা আছে কি না যাচাই করা হয়। কারণ ব্যবসায়ে ঝুঁকি বিদ্যমান। ফলে ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে সক্ষমতা যাচাই করে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : বর্তমানে আমাদের দেশে নির্মাণ ও হাউজিং শিল্পের ব্যাপক চাহিদার কথা মাথায় রেখে বুয়েট থেকে সদ্য পাস করা জনাব আরিফ আরও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করেন। প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে তারা পুরো কর্মকাণ্ডের দীর্ঘমেয়াদি একটি ছক প্রণয়ন করেন। প্রাথমিক ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট মূলধন নিজেদের না থাকায় মূলধন সংগ্রহের বিকল্প উৎসও নির্ধারণ করেন। ক. পণ্যের বাজার চাহিদা জানার উপায়কে কী বলে? খ. ব্যবসায়ের যান্ত্রিক দিকটি বর্ণনা কর। গ. উদ্দীপকের আলোকে জনাব আরিফদের প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন ধরনের মূলধন প্রয়োজন? ব্যাখ্যা কর। ঘ. জনাব আরিফ ও তার বন্ধুরা প্রকল্প প্রণয়নের যথার্থ পথ অনুসরণ করেছেন-এ বিষয়ে তোমার মতামত দাও।  ১নং প্রশ্নের উত্তর  ক. পণ্যের বাজার চাহিদা জানার উপায়কে বাজার জরিপ বলে। খ. ব্যবসায়ের যান্ত্রিক দিক বলতে মূলত ব্যবসায়ের কারিগরি দিককে বোঝায়। প্রকল্পের কারিগরি দিক যাচাই করা হয় প্রযুক্তিগত ও যান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে। এ ধরনের কাজের মধ্যে রয়েছে উৎপাদন প্রক্রিয়া, প্রযুক্তি নির্ধারণ, যন্ত্রপাতি নির্বাচন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সহজসাধ্যতা ইত্যাদি। গ. জনাব আরিফদের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি বাহ্যিক উৎসের মূলধন প্রয়োজন। যখন ব্যবসায়ে দীর্ঘমেয়াদি মূলধনের প্রয়োজন দেখা দেয় এবং উদ্যোক্তার পক্ষে নিজস্ব তহবিল থেকে এ মূলধন যোগাড় করা সম্ভব হয় না তখন তাদেরকে ব্যাংক ঋণ বা অন্যান্য বাহ্যিক উৎস থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে হয়। উদ্দীপকে জনাব আরিফ আরও কয়েকজনকে নিয়ে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করেন। প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে তারা পুরো কর্মকাণ্ডের দীর্ঘমেয়াদি একটি ছক প্রণয়ন করেন। প্রাথমিক ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট মূলধন না থাকায় তারা বাহ্যিক উৎস থেকে মূলধন সংগ্রহ করবেন। অর্থাৎ নিজেদের হাতে পর্যাপ্ত মূলধন না থাকায় জনাব আরিফদের দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি বাহ্যিক উৎসের মূলধন প্রয়োজন। ঘ. জনাব আরিফ ও তার বন্ধুরা ব্যবসায়ের পরিকল্পনা প্রণয়নের যথার্থ পথ অনুসরণ করেছেন-এ কথাটি যথার্থ। প্রকল্প হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, নির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রণীত, পরিকল্পিত ও সুচিন্তিত কর্ম পদ্ধতি। কেননা ব্যবসায় প্রকল্প গ্রহণে প্রথমে ধারণাগুলো চিহ্নিত করতে হয় এবং তারপর ধারণাগুলো মূল্যায়ন করে চ‚ড়ান্তভাবে বাছাই করতে হয়। উদ্দীপকে জনাব আরিফ ও তার কয়েকজন বন্ধু নির্মাণ ও হাউজিং শিল্পের ব্যাপক চাহিদা বিবেচনা করে একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। তাদের গৃহীত এই প্রকল্পটি বাস্তবসম্মত হয়েছে। কারণ বাংলাদেশে খুব দ্রæত গতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের আবাসন চাহিদাও চাড়ছে। তাই তারা যদি দক্ষভাবে তাদের এই প্রকল্প পরিচালনা করতে পারে তাহলে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবে। তাছাড়া প্রকল্পটি গ্রহণের পূর্বে তারা পুরো কর্মকাণ্ডের দীর্ঘমেয়াদি ছক তৈরি করেছেন যাকে পরিকল্পনা প্রণয়ন বলা হয়। আর এই পরিকল্পনার আলোকেই তারা প্রকল্পটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ তারা সঠিক প্রকল্পের জন্য সঠিক ও সময় উপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। সুতরাং বলা যায়, জনাব আরিফ ও তার বন্ধুরা বর্তমান বাজার চাহিদা নিরূপণ করে বাস্তবসম্মত প্রকল্প প্রণয়ণে যথার্থ পথ অনুসরণ করেছেন যা তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে। প্রশ্ন-২  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : জনাব শাহেদ আনন্দ কনফেকশনারির মালিক।

নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ ষষ্ঠ অধ্যায় ব্যবসায় পরিকল্পনা সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর Read More »

নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ পঞ্চম অধ্যায় ব্যবসায়ের আইনগত দিক সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

পঞ্চম অধ্যায় ব্যবসায়ের আইনগত দিক  ব্যবসায়ের আইনগত দিক : ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ থাকে যেমন : কপিরাইট, পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক ইত্যাদি। এগুলো ব্যবসায় উদ্যোগের গবেষণার ফসল এবং ব্যবসায়ের অতিমূল্যবান সম্পদ। এসব সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সব দেশেই আইনগত বিধিবিধান রয়েছে। এগুলো সম্পর্কে ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। আইনকানুন সম্পর্কে ধারণা ব্যবসায়ের আইনগত সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।  লাইসেন্স : যেকোনো ব্যবসায় শুরু করার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয় বা নিবন্ধন করতে হয়। অনুমোদন বা নিবন্ধন করার পদ্ধতি বিভিন্ন রকমের। একক মালিকানা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যদি এর অবস্থান পৌর এলাকার ভিতরে হয় তাহলে পৌর কর্তৃপক্ষের এবং পৌর এলাকার বাইরে হলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। বাংলাদেশে অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়।  যৌথ মূলধনী কোম্পানি নিবন্ধন : কোম্পানি আইন অনুসারে বাংলাদেশ যৌথ মূলধনী ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে কোম্পানির নিবন্ধকের ভ‚মিকা পালন করেন রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি। প্রবর্তকগণ কোম্পানি আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় দলিলসহ ফি প্রদান করে নিবন্ধকের নিকট আবেদন করেন। দলিলাদি ও প্রমাণপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলে নিবন্ধক নিবন্ধনপত্র ইস্যু করেন।  ফ্রানসাইজিং : বর্তমানে ফ্রানসাইজিং পদ্ধতিতে ব্যবসায় স্থাপন ও পরিচালন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কোনো খ্যাতনামা কোম্পানির নাম ব্যবহার এবং এর পণ্য তৈরি, বিক্রি বা বিতরণ করার অধিকারকে ফ্রানসাইজিং বলে। ফ্রানসাইজিং ব্যবসায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো :  ফ্রানসাইজর ও ফ্রানসাইজিং এর মধ্যে চুক্তিপত্র।  ব্র্যান্ডেড পণ্য বা সেবা।  পণ্য বা সেবা স্বীকৃত মান ও প্রক্রিয়া অনুযায়ী হচ্ছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য ফ্রানসাইজার কর্তৃক মনিটরিং।  ফ্রানসাইজ চুক্তি : ফ্রানসাইজিং ব্যবসায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ফ্রানসাইজং চুক্তি যা ফ্রানসাইজি ও ফ্রানসাইজারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। পুঁজির পরিমাণ, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ব্যবস্থাপনায় সাহায্য, ফ্রানসাইজ এলাকা ইত্যাদি ভেদে চুক্তির ধারাগুলো বিভিন্ন রকম হতে পারে। চুক্তিপত্রের শর্তাবলি যদি উভয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হবে।  মেধাসম্পদ : মনন ও মেধা দ্বারা সৃষ্ট কাজই মেধাসম্পদ। ব্যবসায়, শিল্পে বা বাণিজ্যে প্রয়োগ উপযোগী আবিষ্কার, সাহিত্য ও শিল্পকর্ম, নকশা, প্রতীক, নাম ইত্যাদি মেধাসম্পদের অন্তর্ভুক্ত। শিল্প বা ব্যবসায় উদ্যোক্তার মেধাসম্পদ বলতে ঐসব মূল্যবান সম্পদকে বোঝায় যা সে দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা চালিয়ে উদ্ভাবন করেছে। এসব সম্পদের মধ্যে পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক এবং কপিরাইট অন্যতম।  পেটেন্ট : পেটেন্ট হলো এক ধরনের মেধাসম্পদ। পেটেন্টের মাধ্যমে এরূপ আবিষ্কারের জন্য আবিষ্কারককে তার স্বীকৃতিস্বরূপ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একচেটিয়া মালিকানা প্রদান করা হয়। পেটেন্ট করার প্রধান উদ্দেশ্য হলো শিল্পোদ্যোক্তার পরিশ্রমলব্ধ উদ্ভাবন নকল বা অন্য কোনো উপায়ে তৈরি বা বিক্রি করে যাতে কেউ আর্থিক সুবিধা অর্জন না করতে পারে তার ব্যবস্থা করা।  পণ্য প্রতীক/ ট্রেডমার্ক : ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কোনো পণ্যকে অন্যের অনুরূপ বা অভিন্ন পণ্য হতে স্বতন্ত্র করার লক্ষ্যে ব্যবহৃত প্রতীককে ট্রেডমার্ক বলে। ঠিক একই উদ্দেশ্যে সেবার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রতীককে সার্ভিস মার্ক বলে। ডিভাইস, ব্রান্ড, শিরোনাম, লেবেল, টিকিট, নাম, স্বাক্ষর, শব্দ, অক্ষর, প্রতীক, সংখ্যা যুক্ত উপাদান, রঙের সমন্বয় বা এগুলোর যে কোনো রূপ সমন্বয় প্রতীকের অনুর্ভুক্ত হবে।  ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজনীয়তা : কোনো প্রতীক বা মার্কের রেজিস্ট্রেশন ঐ পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে প্রতীকটি ব্যবহারের বিষয়ে রেজিস্টার্ড মালিককে একচ্ছত্র স্বত্ব বা অধিকার প্রদান করে। রেজিস্টার্ড মালিকের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঐ প্রতীকটি ব্যবহার করতে পারবে না। আইন দ্বারা এ অধিকার সুরক্ষিত। এ অধিকার লঙ্ঘিত হলে মালিক আদালতে মামলা করে এর প্রতিকার পায়।  ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা : ট্রেডমার্কের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয় ৭ বছরের জন্য। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে আবেদন করলে ১০ বছরের জন্য নবায়ন করা যায়। অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত পুনঃপুন নবায়ন করা যায় ট্রেডমার্ক।  কপিরাইট : কপিরাইট একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ যা রক্ষা করার ব্যবস্থা না করলে এর স্বত্বাধিকারী বা মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, কবিতা, জাতীয় সাহিত্যকর্ম, চিত্রকর্ম, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, ভাস্কর্য কপিরাইট দ্বারা সংরক্ষিত হয়। ব্রান্ডের পণ্য, খেলার তারকাদের নাম প্রভৃতি কপিরাইট চুক্তির মাধ্যমে বিপণন করা যায়। প্রকৃতপক্ষে কপিরাইট চুক্তি পণ্য বাজারজাতকরণের একটি জনপ্রিয় উপায়।  বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন : কোনো বিশেষ পণ্য উৎপাদন, বিপণন বা সেই বিশেষ পণ্যটিকে বাজারে প্রচলিত পণ্য থেকে আলাদা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন বা বিএসটিআইর অনুমোদন নিতে হয়। নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে এবং প্রয়োজনীয় ফি জমা দিয়ে পণ্য প্রতীক বা ট্রেডমার্ক নিবন্ধিকরণ করা যেতে পারে। পণ্যের মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্ধারিত মান অনুযায়ী সেই সকল পণ্য উৎপাদন বা সার্টিফিকেট থেকে বাধ্যতামূলকভাবে সনদপত্র বা সার্টিফিকেট নিতে হয়।  বিমা : যে চুক্তির মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি কর্তৃক নির্দিষ্ট প্রিমিয়ামের বিনিময়ে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বিষয় সম্পত্তি সম্পর্কিত কোনো ঘটনাজনিত ক্ষতির বা ঘটনার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয় তাকে বিমাচুক্তি বলে। উক্ত ক্ষতিপূরণের জন্য বা নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের জন্য যে পক্ষ স্বীকৃত হয় তাকে বিমাকারী এবং যার ক্ষতিপূরণের জন্য বা যাকে অর্থ প্রদানের জন্য উক্ত চুক্তি সম্পাদিত হয় তাকে বিমাগ্রহীতা বলে।  ব্যবসায়ে বিমার প্রয়োজনীয়তা : বিমা ব্যবসায়ের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। বিমাকারী প্রতিষ্ঠান না থাকলে ঝুঁকির আশঙ্কায় অনেক ব্যবসায়ীকে প্রাথমিক পর্যায়েই তাদের ব্যবসায় বন্ধ করে দিতে হতো। তাই ব্যবসায়ের ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা ও বিরাজমান অশ্চিয়তা দূর করে ব্যবসায়কে নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনার জন্য বিমার প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি।  বিমার প্রকারভেদ : বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার বিমার প্রচলন হয়েছে। এর মধ্যে চার প্রকার বিমা সর্বাধিক প্রচলিত। (১) জীবন বিমা, (২) নৌ বিমা (৩) অগ্নি বিমা এবং (৪) দুর্ঘটনা বিমা। বর্তমানকালে মানুষ ক্রমশই বিমার সুবিধা উপলব্ধি করায় উপরিউক্ত চার প্রকার বিমা ছাড়াও আরো কয়েক শ্রেণির বিমার প্রচলন হয়েছে।  জীবন বিমা : যে বিমা চুক্তির মাধ্যমে বিমাকারী বিমা কিস্তির বিনিময়ে বিমা গ্রহণকারী ব্যক্তিকে বা তার নির্বাচিত ব্যক্তি বা উত্তরাধিকারীকে একটি বিশেষ সময়ের পরে বা বিমাগ্রহিতার মৃত্যুতে বিমাকৃত অর্থ প্রদান করে থাকে সেই বিমা চুক্তিকে জীবন বিমা বলে।  অগ্নি বিমা : যে বিমা চুক্তির মাধ্যমে বিমাগ্রহীতা ব্যক্তিকে অগ্নিজনিত ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দান করা হয় তাকে অগ্নি বিমা বলে।  নৌ বিমা : যে বিমায় নদী ও সামুদ্রিক যাত্রা থেকে সৃষ্ট ঝুঁকির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয় তাকে নৌ বিমা বলা হয়।  দুর্ঘটনা বিমা : ব্যক্তির জীবন বা সম্পত্তি বিনাশের ঝুঁকি দুর্ঘটনা বিমার আওতাভুক্ত। এ জাতীয় বিমার শর্তানুসারে নির্দিষ্ট প্রিমিয়ামের পরিবর্তে আশঙ্কিত দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতি সংঘটিত হলে বিমাকারী বিমাগ্রহিতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : বার্ষিক পরীক্ষার পর ইসমাম হাতিয়া থেকে ঢাকায় বেড়াতে এলো। কলেজ পড়–য়া মামাতো ভাইয়ের সাথে চিড়িয়াখানা, নভোথিয়েটার, জাতীয় জাদুঘরসহ বিভিন্ন দর্শনীয় এলাকা ঘুরে বেড়াল। ইসমাম লক্ষ করল তার ভাই যেখানে যায়, সেখানে একই নামে একটি রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করে। কারণ জিজ্ঞাসা করে সে জানতে পারল এটি একটি বিদেশি রেস্টুরেন্ট। বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে এটির শাখা আছে। তবে এ জাতীয় ব্যবসায় এখনও বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা

নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ পঞ্চম অধ্যায় ব্যবসায়ের আইনগত দিক সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর Read More »

নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ চতুর্থ অধ্যায় মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায় সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

চতুর্থ অধ্যায় মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায়  একমালিকানা ব্যবসায় : সাধারণভাবে একজন ব্যক্তির মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়কে একমালিকানা ব্যবসায় বলে। একক মালিকানায় পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ব্যবসায় কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এ জন্য এটিকে সবচেয়ে প্রাচীনতম ব্যবসায় সংগঠন বলা হয়। একমালিকানা ব্যবসায়ে মালিকই সর্বেসর্বা। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের মুনাফা যেমন একাই ভোগ করবেন, তেমনি সকল দায়ভার তিনি একাই বহন করবেন।  একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য : ১. একক মালিকানা, ২. সহজ গঠন, ৩. স্বল্প মূলধন, ৪. ব্যবসায়ের আয়তন, ৫. একক ঝুঁকি, ৬. আইনগত সত্তা, ৭. পরিচয় ও তত্ত¡াবধান, ৮. লাভ-লোকসান বণ্টন, ৯. স্থায়িত্ব ইত্যাদি।  একমালিকানা ব্যবসায়ের সুবিধা : ১. সহজ গঠন, ২. মালিকের স্বাধীনতা, ৩. মুনাফা ভোগ, ৪. সুষ্ঠু ব্যবস্থা, ৫. অবচয় হ্রাস, ৬. আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ প্রদর্শন, ৭. দ্রæত সিদ্ধান্ত, ৮. গোপনীয়তা, ৯. অবস্থান ও সুবিধা, ১০. নমনীয়তা ইত্যাদি।  একমালিকানা ব্যবসায়ের অসুবিধাসমূহ : ১. মূলধনের স্বল্পতা, ২. অসীম দায়, ৩. ব্যক্তিগত সামর্থ্যরে সীমাবদ্ধতা, ৪. অধিক ব্যক্তিগত ঝুঁকি, ৫. বৃহদায়তন ব্যবসায়ে অনুপযুক্ত, ৬. আইনগত স্বীকৃতির অবস্থা, ৭. স্থায়িত্বের অভাব ইত্যাদি।  একমালিকানা ব্যবসায়ের উপযোগী ক্ষেত্রসমূহ : ১. ছোট হোটেল, ২. লণ্ড্রি, ৩. মুদি দোকান, ৪. ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, ৫. কৃষি ও পচনশীল দ্রব্যের ব্যবসায়, ৬. প্রত্যক্ষ সেবামূলক (সেলুন, দরজিগিরি) ইত্যাদি।  অংশীদারি ব্যবসায় : একমালিকানা ব্যবসায়ের বিভিন্ন অসুবিধা দূর করার প্রয়োজনেই সময়ের সিঁড়ি বেয়ে আগমন ঘটে অংশীদারি ব্যবসায়ের। অর্থাৎ একমালিকানা সংগঠনের সীমিত আয়তন ও ক্ষেত্র, স্বল্প পুঁজি এবং পরিমিত ব্যবস্থাপনা দক্ষতার বাধা অপসারিত হয়ে গঠিত হয় দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সমন্বিত মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা এবং সরবরাহকৃত অধিক পুঁজির ব্যবসায়। অংশীদারি ব্যবসায় ১৯৩২ সালের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুযায়ী সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন অংশীদার হতে পারবে। তবে ব্যাংকিং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা ১০-এর বেশি হবে না। অংশীদারি ব্যবসায় লিখিত বা মৌখিক উভয়ই হতে পারে। লিখিত চুক্তিকে চুক্তিপত্র (উববফ) বলা হয়। আর তাই ভবিষ্যৎ ভুল বোঝাবুঝি, মনোমালিন্য, বিরোধ এবং মামলা এড়ানোর জন্য চুক্তি লিখিত এবং নিবন্ধিত হওয়া ভালো।  অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য : ১. চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক, ২. সহজ গঠন, ৩. সদস্য সংখ্যা, ৪. মূলধন সরবরাহ, ৫. সীমাহীন দায়, ৬. আইনগত সত্তা, ৭. চ‚ড়ান্ত সদ্বিশ্বাস, ৮. লাভ-লোকসান বণ্টন, ৯. পরিচালনা ১০. স্থায়িত্ব ইত্যাদি।  অংশীদারি সংগঠনের চুক্তিপত্র : যে দলিলে অংশীদারি ব্যবসায়ের গঠন, উদ্দেশ্য, পরিচালনা পদ্ধতি, অংশীদারের অধিকার ও দায়িত্ব প্রভৃতি লিপিবদ্ধ থাকে তাকে অংশীদারি ব্যবসায়ের চুক্তিপত্র বলে।  অংশীদারি চুক্তিপত্রের বিষয়বস্তু : ১. অংশীদারদের নাম ও ঠিকানা, ২. অংশীদারদের সংজ্ঞা, ৩. ব্যবসায়ের প্রকৃতি ও সময়কাল, ৪. ব্যবসায়ের মোট মূলধন ও পরিশোধ পদ্ধতি, ৫. হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষণ পদ্ধতি। ৬. লাভ-লোকসান বণ্টনের অনুপাত ও পদ্ধতি, ৭. অংশীদার গ্রহণ ও বহিষ্কার নিয়মাবলি, ৮.ব্যবসায়ের বিলোপসাধন ইত্যাদি।  অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন : অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বলতে সরকার কর্তৃক নিয়োজিত নিবন্ধক অফিসে ব্যবসায়ের নাম তালিকাভুক্তকরণকে বোঝায়। বাংলাদেশের অংশীদারি আইনে ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে নিবন্ধিত অংশীদারি ব্যবসায় অনিবন্ধিত অংশীদারি ব্যবসায় থেকে অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করে থাকে।  অংশীদারের প্রকারভেদ : ১. সাধারণ অংশীদার, ২. ঘুমন্ত অংশীদার, ৩. নামমাত্র অংশীদার, ৪. আপাতদৃষ্টিতে অংশীদার, ৫. সীমিত অংশীদার, ৬. আচরণে অনুমিত অংশীদার।  অংশীদারি ব্যবসায়ের বিলোপসাধন : ১. সকলে একমত হয়ে, ২. বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, ৩. বিশেষ কোনো ঘটনার কারণে, ৪. বাধ্যতামূলক বিলোপসাধন, ৫. আদালতের আদেশে।  যৌথ মূলধনী ব্যবসায় : যৌথ মূলধনী ব্যবসায় আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট ও পরিচালিত হয়। সর্বপ্রথম কোম্পানি আইন পাস হয় ব্রিটেনে ১৮৪৪ সালে, যা ‘ঞযব ঔড়রহঃ ঝঃড়পশ ঈড়সঢ়ধহু অপঃ ১৮৪৪’ নামে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশশাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম কোম্পানি আইন পাস হয় ১৮৫০ সালে। ১৯১৩ সালে ভারতীয় কোম্পানি আইন আবার নতুন করে পাস হয়। স্বাধীন বাংলাদেশেও অনেক বছর ধরে ১৯১৩ সালের কোম্পানি আইন চালু ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল কোম্পানি আইন ১৯৯৪ সালের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। যৌথ মূলধনী কোম্পানিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সদস্য সংখ্যা ২ জন এবং সর্বোচ্চ ৫০ জন এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৭ জন এবং সর্বোচ্চ সংখ্যা শেয়ার দ্বারা সীমাবদ্ধ। এ ধরনের ব্যবসায় সংগঠন সাধারণত চিরন্তন অস্তিত্বসম্পন্ন হয়ে থাকে।  কোম্পানি ব্যবসায় সংগঠনের গুরুত্ব : ১. বৃহদাকার প্রতিষ্ঠান, ২. সঞ্চয় বৃদ্ধি ও পুঁজি গঠন, ৩. ঝুঁকি বণ্টন ও উদ্যোগ গ্রহণ, ৪. কর্মসংস্থান, ৫. বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি, ৬. সরকারের আয়ের উৎস।  কোম্পানির বৈশিষ্ট্য : ১. স্বেচ্ছামূলক প্রতিষ্ঠান, ২. আইনের সৃষ্টি, ৩. কৃত্রিম সত্তা, ৪. স্থায়িত্ব, ৫. সীমাবদ্ধ দায়, ৬. সদস্য সংখ্যা, ৭. শেয়ার হস্তান্তরযোগ্যতা ইত্যাদি।  যৌথমূলধনী ব্যবসায়ের প্রকারভেদ : যৌথ মালিকানাধীনে যত রকমের ব্যবসায় সংগঠন আছে তার মধ্যে কোম্পানির সংগঠন সবচেয়ে বেশি পরিচিত। বাংলাদেশের কোম্পানি সংগঠনগুলোকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে ক. প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি খ. পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি।  কোম্পানি ব্যবসায়ের গঠনপ্রণালি : ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোম্পানি গঠনে চারটি পর্যায় রয়েছে : ১. উদ্যোগ গ্রহণ (প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে ২-৫০ জন এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে সর্বনিম্ন ৭ জন উদ্যোগ নিতে হয়।) ২. দলিলপত্র প্রস্তুত (সংঘ স্মারক ও সংঘবিধি), ৩. নিবন্ধন, ৪. কার্যারম্ভ।  সমবায় সমিতি : সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত কৃষক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, চাকরিজীবী, শ্রমিক প্রভৃতি শ্রেণির লোকজন নিজেদের কল্যাণের লক্ষ্যে সমবায় আইন অনুযায়ী স্বেচ্ছায় যে ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তোলে তাকে সমবায় সমিতি বলে। সমবায়ের শাব্দিক অর্থ সম্মিলিত বা যৌথভাবে কাজ করা। এর মূলমন্ত্র হলো ‘সকলের তরে সকলে কাজ করা’। অর্থাৎ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা ও চিন্তা থেকেই সমবায়ের উৎপত্তি। পুঁজিবাদী সমাজের সৃষ্ট বিভিন্ন বৈষম্য ও দুরবস্থা থেকে মুক্তির প্রয়াসে বিভিন্ন দেশে সমবায় সংগঠন গড়ে ওঠে।  সমবায় সংগঠনের বৈশিষ্ট্য : ১. স্বেচ্ছাপ্রণোদিত সংগঠন, ২. সদস্য সংখ্যা, ৩. গঠন, ৪. পুঁজি সরবরাহ, ৫. পৃথক সত্তা, ৬. শেয়ার হস্তান্তর, ৭. উদ্দেশ্য, ৮. গণতন্ত্র, ৯. দায়িত্বের প্রকৃতি, ১০. মুনাফার বিভাজন।  প্রকারভেদ : ১. কৃষি সমবায় সমিতি, ২. মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি, ৩. শ্রমজীবী সমবায় সমিতি, ৪. মৃৎ শিল্পী সমবায় সমিতি, ৫. তাঁতি সমবায় সমিতি, ৬. ভ‚মিহীন সমবায় সমিতি, ৭. বিত্তহীন সমবায় সমিতি, ৮. মহিলা সমবায় সমিতি, ৯. অটোরিক্সা, অটোটেম্পো, ট্যাক্সিক্যাব, মোটর, ট্রাক, ট্যাঙ্ক-লরি চালক সমবায় সমিতি, ১০. হকার্স সমবায় সমিতি ইত্যাদি।  গঠনপ্রক্রিয়া : বাংলাদেশে ২০০১ সালের সমবায় আইনে সমবায় সংগঠন গঠন করতে চাইলে তিনটি পর্যায়ে সমবায় সমিতির গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। যেমন : ১. উদ্যোগ গ্রহণ পর্যায়, ২. নিবন্ধন পর্যায়, ৪. কার্যারম্ভ পর্যায়।  সমস্যা ও সম্ভাবনা : বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ কৃষি ও গ্রামভিত্তিক বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। তারা বেশিরভাগই স্বল্প ও নিম্ন আয়ের ফলে তারা বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত, প্রাচীন চাষাবাদ পদ্ধতি, মূলধনের স্বল্পতা, উন্নত সার, বীজ ও কীটনাশকের

নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ চতুর্থ অধ্যায় মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায় সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর Read More »

নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ তৃতীয় অধ্যায় আত্মকর্মসংস্থান সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

তৃতীয় অধ্যায় আত্মকর্মসংস্থান  আত্মকর্মসংস্থানের ধারণা : নিজের দক্ষতা ও গুণাবলি দ্বারা নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলা হয়। নিজস্ব পুঁজি অথবা ঋণ করা, স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্ম প্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থাই আত্মকর্মসংস্থান। জীবিকা অর্জনের বিভিন্ন পেশার মধ্যে আত্মকর্মসংস্থান একটি জনপ্রিয় পেশা। বিভিন্ন খুচরা বিক্রয়, রেডিও, টেলিভিশন মেরামত, হাঁস-মুরগি, মৌমাছি চাষ ইত্যাদি আত্মকর্মসংস্থানের আওতার্ভুক্ত।  আত্মকর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা : বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এদেশে কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে বেকারের সংখ্যা বেশি। বেকারত্ব নিরসনে আত্মকর্মসংস্থান হলো একমাত্র উপায়। নিজের চাহিদা পূরণের জন্য আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে ব্যক্তি শুধু স্বাবলম্বী হতে পারে তা-ই নয়, তার পরিবার, সমাজ এমনকি দেশেরও আর্থিক উন্নয়ন সাধিত হয়। এ কারণেই আত্মকর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।  বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ও লাভজনক ক্ষেত্র : বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থানের বিভিন্ন লাভজনক ক্ষেত্র রয়েছে। এর মধ্যে হস্তচালিত তাঁত, মৃৎশিল্প, বাঁশ, বেত, পাট ও কাঠের সামগ্রী তৈরি, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খামার, সবজি চাষ, এপিকালচার, সেরিকালচার, টেইলারিং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয় : আত্মকর্মসংস্থানের বিভিন্ন লাভজনক ও উপযুক্ত ক্ষেত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক পণ্য বাছাই, মূলধন, পণ্যের চাহিদা, অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা, ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচন, ঝুঁকি পরিমাপ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করতে হয়।  আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধকরণে করণীয় : আমাদের দেশে বেকার যুব সমাজ অনেকেই আত্মকর্মসংস্থান সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা অনেকেই হাঁস-মুরগি পালন, ডেইরি ফার্ম, মৌমাছি চাষ প্রভৃতি কাজকে সম্মানজনক মনে করে না। ফলে তারা নিজেরা কোনো কর্মে নিয়োজিত হতে পারছে না। তাই স্বল্প পুঁজি এবং প্রবল আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে বেকারদের আত্মকর্মসংস্থান করার জন্য করণীয় কাজগুলো হলো :  কাজ সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান,  সহজ শর্তে ঋণদান,  বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রচলন,  কর্মমুখী শিক্ষার প্রচলন,  ট্রেড প্রশিক্ষণ কোর্স চালু,  উৎসাহ প্রদান,  সৃজনশীলতার প্রশংসা করা,  কর্মশালা করানো ইত্যাদি।  আত্মকর্মসংস্থানে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা : যেকোনো উদ্যোগ গ্রহণের পূর্বে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে সুফল পাওয়া যায়। বৃহৎ বা ক্ষুদ্র যে শিল্পই হোক না কেন আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত। অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মীরাই পারে একটি প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে। তাই নিজে প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা খুবই প্রয়োজন। সম্পদের সদ্ব্যবহার, অপচয় ও দুর্ঘটনা হ্রাস, কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি ইত্যাদিতে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।  আত্মকর্মসংস্থানে সহায়ক প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশের বেকার সমস্যা নিরসনে ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত রয়েছে। এদের মধ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পলি­ উন্নয়ন বোর্ড, নট্রামস, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইত্যাদি উলে­খযোগ্য। অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন-১  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : ঐশী, সাদী ও সামী তিন বন্ধু স¤প্রতি বি কম পাস করেছে। তারা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছিল। ঐশী ও সাদী এম কম-এ ভর্তির চিন্তা করছে। সামী এখনও সিদ্ধান্ত চ‚ড়ান্ত করতে পারেনি। কারণ তার বাবার ইচ্ছা সে মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে চলে যাক। কিন্তু মেধাবী সামী চায় দেশেই কিছু করতে। এজন্য সে হাঁস-মুরগি পালনের উপর দু’মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এতে তার মনোবল বেড়ে যায়। বিদেশ যাবার টাকা দিয়ে সে বাড়িতে হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করে। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করে নিজের চেষ্টায় আজ সে স্বাবলম্বী। ক. জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান শতকরা কতভাগ? খ. বাংলাদেশে বেকার সমস্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে কেন? ব্যাখ্যা কর। গ. সামীর হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা কোন ধরনের কাজের অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা কর। ঘ. স্বাবলম্বী হবার পেছনে কোন গুণটি সামীকে বেশি প্রভাবিত করেছে বলে তুমি মনে কর। বিশ্লেষণ কর।  ১নং প্রশ্নের উত্তর  ক. জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান শতকরা ২০ ভাগ। খ. বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের জনসংখ্যা খুব দ্রæত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার কারণে নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন করে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই কম। আর এসব সমস্যার কারণেই বাংলাদেশে বেকার সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। গ. সামীর হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের অন্তর্ভুক্ত। নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। অর্থাৎ আত্মকর্মসংস্থান নিজস্ব পুঁজি অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্ম প্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের এক প্রকার ব্যবস্থা। উদ্দীপকে মেধাবী সামী নিজস্ব চিন্তার মাধ্যমে নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের জন্য উদ্যোগী হয়ে হাঁস-মুরগি পালনের ওপর দু মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এতে তার মনোবল বেড়ে যায়। সে তার বিদেশ যাবার টাকা দিয়ে নিজ বাড়িতে হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করে। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের প্রচেষ্টায় সে আজ স্বাবলম্বী হয়েছে। যেহেতু হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামী নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে সেহেতু তার এ কাজটি আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের অন্তর্ভুক্ত। ঘ. আমি মনে করি, সামীর প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগানোর দক্ষতাই তাকে স্বাবলম্বী হতে বেশি প্রভাবিত করেছে। যেকোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের পাশাপাশি জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োজন। আর জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক। প্রশিক্ষণ কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতাকে বহুগণে বাড়িয়ে দেয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা নিজেকে অভিজ্ঞ ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা লাভ করে। অর্জিত প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সে নির্দিষ্ট লক্ষ্য পানে এগিয়ে যায় এবং সফল হয়। উদ্দীপকের সীমার ইচ্ছা ছিল আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া। এজন্য সে হাঁস-মুরগি পালনের উপর দু’মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এতে তার মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়, ফলে সে প্রশিক্ষণ জ্ঞান প্রয়োগ করে বিদেশ যাবার টাকা দিয়ে বাড়িতে হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করে এবং নিজ চেষ্টায় আজ সে স্বাবলম্বী হতে পেরেছে। সুতরাং বলা যায়, সামী প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করে নিজের চেষ্টায় আজ স্বাবলম্বী হতে পেরেছে। প্রশ্ন-২  নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও : রাঙ্গামাটির স্কুল শিক্ষক মামাপ্রæ মারমা স্থানীয় তাঁতী মেরিনা মারমাকে তাঁতে বোনা পণ্য-সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দেন। ব্যাপক চাহিদার কথা চিন্তা করে মেরিনা পাহাড়ি মেয়েদের পোশাক ‘থামি’ তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করে এবং দ্রæত উন্নতি লাভ করে। মেরিনার কারণে বেশ কয়েকটি মেয়ের কর্মসংস্থান হয়েছে। তার জেলায় বিগত তিন বছর যাবত তিনি সেরা নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। ক. দেশের মোট শ্রমশক্তির কত অংশ যুবক-যুবতী? খ. আত্মকর্মসংস্থানের একটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর। গ. মেরিনার দ্রæত উন্নতিতে কোন বিষয়টি ভ‚মিকা রেখেছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. ‘মামাপ্রæ মারমার পরামর্শ প্রতিপালনই মেরিনা চাকমার জীবনে এত স্বীকৃতি এনে দিয়েছে’ উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।  ২নং প্রশ্নের উত্তর  ক. দেশের মোট শ্রমশক্তির এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে যুবক-যুবতী। খ. আত্মকর্মসংস্থানের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। যার মাধ্যমে দেশ থেকে বেকারত্ব হ্রাস করা যায়। কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে শ্রমজীবী ও চাকরিজীবী লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কর্মসংস্থানের চাহিদা যে হারে বৃদ্ধি পায় সে হারে কর্মসংস্থানের সংখ্যা বৃদ্ধি

নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ তৃতীয় অধ্যায় আত্মকর্মসংস্থান সৃজনশীল ও জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর Read More »

Scroll to Top